‘ইকরামাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
শাদ্দাদ (রহঃ), আবূ উমামাহ্ ও ওয়াসিলাহ্ (রাঃ)–এর সাক্ষাৎ লাভ করেছে এবং সিরিয়ায় আনাস (রাঃ)-এর সাহচর্য লাভ করেছে এবং তার উচ্ছসিত প্রশংসা ও গুণগান করেছে। আবূ উসামাহ্ (রাঃ) বলেন, ‘আম্র ইবনু আবাসাহ্ আস্ সুলামী (রাঃ) বলেছেন, আমি জাহিলী যুগে ধারণা করতাম যে, সব লোকই পথভ্রষ্ট ও তাদের কোন ধর্ম নেই। তারা দেব-দেবীর পূজা করত। এ অবস্হায় আমি শুনতে পেলাম যে, মাক্কায় জনৈক ব্যক্তি বিভিন্ন বিষয় বর্ণনা করেছেন। আমি আমার বাহনে উপবিষ্ট হয়ে তাঁর নিকট এসে পৌঁছে দেখলাম যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজেকে জনসমাগম থেকে সরিয়ে রাখেন, তাঁর সম্প্রদায় তাঁকে অত্যাচার-নির্যাতন করে। আমি কৌশলে মাক্কায় তাঁর নিকট প্রবেশ করলাম।
আমি তাঁকে বললাম, আপনি কে? তিনি বলেনঃ আমি একজন নবী : আমি বললাম, নবী কি? তিনি বললেনঃ আল্লাহ আমাকে পাঠিয়েছেন। আমি বললাম, তিনি আপনাকে কোন্ জিনিস দিয়ে পাঠিয়েছেন? তিনি বলেন, তিনি আমাকে আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখতে, মূর্তিসমূহ চূর্ণ-বিচূর্ণ করতে, আল্লাহ এক ব‘লে –ঘোষণা করতে এবং তাঁর সাথে কোন কিছু শারীক না করতে পাঠিয়েছেন। আমি তাঁকে বললাম, এ ব্যাপারে আপনার সাথে কারা আছে? তিনি বলেনঃ স্বাধীন ও দাসেরা। বর্ণনাকারী বলেন, সেকালে তাঁর সাথে ছিলেন তাঁর ওপর ঈমান আনয়নকারী আবূ বকর (রাঃ), বিলাল (রাঃ) প্রমুখ। আমি বললাম, আমিও আপনার অনুসারী হতে চাই। তিনি বলেনঃ বর্তমান পরিস্হিতিতে তুমি তাতে সক্ষম হবে না। তুমি কি আমার অবস্হা এবং (ঈমান আনয়নকারী) অন্যদের অবস্হা দেখছ না? বরং তুমি তোমার পরিবারে ফিরে যাও, যখন তুমি শুনতে পাবে যে, আমি বিজয়ী হয়েছি তখন আমার নিকট এসো। বর্ণনাকারী বলেন, তাই আমি আমার পরিবারে ফিরে এলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনায় আগমন করলেন, আমি তখন আমার পরিবারের সাথে ছিলাম। তিনি মাদীনায় আসার পর থেকে আমি খবরাখবর নিতে থাকলাম এবং লোকজনের নিকট জিজ্ঞেস করতে থাকলাম। শেষে আমার নিকট ইয়াস্রিব- এর একদল লোক অর্থাৎ একদল মাদীনাহ্বাসী এলে আমি জিজ্ঞেস করলাম, যে ব্যক্তি মাদীনায় এসেছেন তিনি কি করেন? তারা বলেন, লোকজন অতি দ্রুত তাঁর অনুসারী হচ্ছে, অথচ তাঁর জাতি তাঁকে হত্যা করতে বদ্ধ পরিকর, কিন্তু তারা তাতে সক্ষম হয়নি।
অতএব, আমি মাদীনায় এসে তাঁর নিকট প্রবেশ করলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল ! আপনি কি আমাকে চিনতে পেরেছেন? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ, তুমি তো মাক্কায় আমার সাথে সাক্ষাৎ করেছিলে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম : হ্যাঁ। আমি আরো বললাম, হে আল্লাহর নবী! আল্লাহ আপনাকে যা শিখিয়েছেন এবং যে সম্পর্কে আমি সম্পূর্ণ অজ্ঞ তা আমাকে শিক্ষা দিন , আমাকে সলাত সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বলেনঃ ফজরের সলাত আদায় কর, অতঃপর সূর্য উদিত হয়ে উপরে না ওঠা পর্যন্ত সলাত থেকে বিরত থাক। কারণ সূর্য উদিত হওয়ার সময় শাইত্বনের দু ‘শিং–এর মাঝখান দিয়ে উদিত হয় এবং তখন কাফিররা সূর্যকে সাজদাহ্ করে। অতঃপর তীরের ছায়া তার সমান না হওয়া পর্যন্ত তুমি সলাত আদায় কর, কারণ এ সলাতে মালায়িকাহ্ উপস্হিত হন। অতঃপর সলাত থেকে বিরত থাক, কারণ তখন জাহান্নামকে উত্তপ্ত করা হয়। অতঃপর সূর্য যখন ঢলে যায় তখন থেকে সলাত আদায় কর, এবং আসরের সলাত আদায় করা পর্যন্ত মালাকগণ (ফেরেশতামন্ডলী) উপস্হিত থাকেন। অতঃপর সূর্য অস্তমিত হওয়া পর্যন্ত সলাত থেকে বিরত থাক। কারণ তা শাইত্বনের দু ‘শিং–এর মাঝখান দিয়ে অস্ত যায় এবং তখন কাফিররা সূর্যকে সাজদাহ্ করে।
বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী ! ওযূ সম্পর্কে আমাকে বলুন। তিনি বলেনঃ তোমাদের যে কোন ব্যক্তির নিকট ওযুর পানি পেশ করা হলে সে যেন কুলি করে, নাকে পানি দিয়ে তা পরিস্কার করে, এতে তার মূখমন্ডলের ও নাক গহবরের সমস্ত পাপ ঝরে যায়। অতঃপর যখন সে আল্লাহর নির্দেশ মতো মূখমন্ডল ধৌত করে, তখন পানির সাথে তার মূখমন্ডল থেকে, এমনকি দাড়ির আশপাশের সমস্ত পাপ ঝরে যায়। অতঃপর তার দু ‘হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়ার সাথে সাথে তার আঙ্গুলসমূহ থেকে পানির সাথে গুনাহসমূহ ঝরে যায়। অতঃপর সে যখন তার পদদ্বয় ধৌত করে তখন তার আঙ্গুলসমূহ দিয়ে তার পাপসমূহ ঝরে যায়। অতঃপর সে যদি দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করে, আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করে, তাঁর যথাযোগ্য মর্যাদা বর্ণনা করে এবং আল্লাহর জন্য নিজের অন্তরকে পৃথক করে নেয় তাহলে সে তার জন্মদিনের মতো গুনাহমুক্ত হয়ে যায়।
‘আম্র ইবনু ‘আবাসাহ্ (রাঃ) এ হাদীসে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহচর আবূ উমামাহ্ (রাঃ)-এর নিকট বর্ণনা করলে তিনি তাকে বলেন, হে ‘আম্র ইবনু ‘আবাসাহ্! লক্ষ্য করুন আপনি বলেছেন, এক স্হানেই লোকটিকে এত সাওয়াব দেয়া হবে! ‘আম্র (রাঃ) বলেন, হে আবূ উমামাহ্ ! আমি বার্ধক্যে পৌছে গেছি, আমার হাড়গোড় দূর্বল হয়ে গেছে এবং আমার মৃত্যু সন্নিকটে। এ অবস্হায় আল্লাহ ও রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি মিথ্যারোপে আমার কি ফায়দাহ্। আমি যদি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এ হাদীস একবার, দু ‘বার, তিনবার, এমনকি সাতবার গুণতাম তাহলে কখনো তা বর্ণনা করতম না, কিন্তু এর অধিক সংখ্যক বার তাঁর নিকট শুনেছি। (ই.ফা, ১৮০০.ই.সে. ১৮০৭)