আবদুল্লাহ্ ইবন উমার (রাঃ) তাঁর এক দাস বিক্রয় করলেন বারাআত [১] -এর শর্তে আটশত দিরহাম মূল্যে। অতঃপর ক্রেতা বললেন, আবদুল্লাহ্ ইবন উমার (রাঃ)-এর গোলামের মধ্যে একটি রোগ রয়েছে, আপনি আমার নিকট উহা চিহ্নিত করেননি। তারপর তারা উভয়ের বিবাদ নিয়ে উপস্থিত হলেন উসমান ইবন আফফান (রাঃ)-এর নিকট। ক্রেতা ব্যক্তি বললেন- তিনি আমার নিকট গোলাম বিক্রয় করলেন অথচ তার রয়েছে একটি রোগ যার কথা তিনি আমার নিকট বলেননি। আবদুল্লাহ্ বললেনঃ আমি গোলাম বিক্রয় করেছি বারাআত (দায়িত্বমুক্ত থাকা)-এর শর্তে। উসমান (রাঃ) ফয়সালা দিলেন, আবদুল্লাহ্ ইবন উমার (রাঃ) শপথ করে বলবে- ক্রেতার নিকট তিনি যে গোলাম বিক্রয় করেছেন তার মধ্যে কোন রোগ আছে বলে তিনি জানতেন না। আবদুল্লাহ্ (রাঃ) এইরূপ শপথ করতে অস্বীকৃতি জানালেন এবং গোলাম তিনি ফেরত গ্রহণ করলেন। অতঃপর উক্ত গোলাম সুস্থ হয়ে গেল। তারপর আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তাকে দেড় হাজার দিরহাম মূল্যে বিক্রয় করলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)
মালিক (রহঃ) বলেনঃ আমাদের নিকট সর্বসম্মত ফয়সালা হল এই, যে ব্যক্তি কোন দাসী ক্রয় করল এবং তার দ্বারা উহা অন্তঃসত্ত্বা হল, অথবা দাস ক্রয় করে উহাকে আযাদ করল এবং এই জাতীয় যে কোন প্রকার ক্ষমতা পরিচালনা [২] বা কার্য সম্পাদন করে যাতে সেই দাসী বা দাসকে আর ফেরত দেওয়া চলে না। অতঃপর (এই মর্মে) প্রমাণ উপস্থিত হয়েছে যে, বিক্রেতার কাছে থাকা কালে উহার মধ্যে খুঁত ছিল অথবা খুঁত প্রকাশিত হয়েছে বিক্রেতার স্বীকারোক্তির দ্বারা কিংবা অন্য কোন উপায়ে, [এইরূপ হয়ে থাকলে] তবে খুঁতসহ বিক্রয়ের দিন সেই দাস অথবা দাসীর কত মূল্য হতে পারে তা নির্ণয় করা হবে, তারপর ত্রুটি মুক্তাবস্থায় উহার যা মূল্য হবে এবং খুঁত অবস্থায় যা উহার মূল্য হতে পারে এতদুভয়ের মধ্যবর্তী ব্যবধানিক মূল্যের অর্থটি ক্রেতাকে ফেরত দিবে।
মালিক (রহঃ) বলেনঃ আমাদের কাছে সর্বসম্মত ফয়সালা এই, সেই ব্যক্তি সম্বন্ধে যে ব্যক্তি কোন ক্রীতদাস ক্রয় করেছে। অতঃপর উহা হতে এমন কোন খুঁত প্রকাশ পেয়েছে, [যে খুঁত প্রকাশ পাওয়ার দরুন] যাতে উহাকে বিক্রেতার নিকট ফেরত দেয়া যেতে পারে।
কিন্তু ক্রেতার নিকট (থাকাবস্থায়) অন্য নতুন খুঁত সৃষ্টি হয়েছে। যদি নব্যসৃষ্ট খুঁত যা ক্রেতার নিকট পয়দা হয়েছে উহা নষ্টকারী হয় যেমন (কোন অংশ) কর্তন করা কিংবা কানা হওয়া অথবা এই জাতীয় নষ্টকারক খুঁতসমূহ হতে অন্য কোন খুঁত। তবে দুই বিষয়ের যে কোন উত্তম বিষয়কে গ্রহণ করার ইখতিয়ার ক্রেতার থাকবে। যদি দাসের ক্রটিসহ যে দিন উহাকে ক্রয় করেছে সেই দিন যা মূল্য হতে পারে [এবং নিখুঁতঅবস্থায় উহার মূল্য হয় উভয়ের মধ্যবর্তী ব্যবধানিক মূল্য] তা হতে বাদ দেওয়াকে তিনি পছন্দ করেন তবে (যেই পরিমাণ) অর্থ উহা হতে বাদ দেয়া হবে অথবা সে যদি পছন্দ করে তবে ক্রীতদাসের যেই পরিমাণ ক্ষতি তার কাছে থাকতে হয়েছে উহার খেসারত প্রদান করবে, অতঃপর গোলাম ফেরত দেয়া হবে (তিনি ইচ্ছা করলে এরূপ করা যাবে)। আর যদি ক্রীতদাস ক্রেতার নিকট মারা যায় তবে খুঁতসহ যেই দিন উহাকে বিক্রয় করা হয়েছিল সেই দিন উহার মূল্য কত ছিল তা নির্ণয় করা হবে, যদি ক্রয়ের দিন দোষ মুক্তাবস্থায় উহার মূল্য একশত দীনার থাকে, আর দোষসহ উহার মূল্য ক্রয়ের দিন আশি দীনার হয়, তবে ক্রেতার উপর হতে উভয় মূল্যের মধ্যে ব্যবধানিক মূল্য বাদ দেয়া হবে। মূল্য ধার্য করা হবে ক্রয়ের দিনেরই।
মালিক (রহঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি কোন দাসীকে উহাতে খুঁত পাওয়ার কারণে ফেরত দেয় (অথচ) সে উহার সাথে সহবাস করেছে। তবে দাসী যদি কুমারী হয় তবে (সহবাস করাতে) যতটুকু উহার মূল্য হতে কমেছে ততটুকু মূল্য তাকে আদায় করতে হবে আর যদি দাসী কুমারী না হয়, তবে উহার সাথে সঙ্গম করাতে ক্রেতাকে কিছু দিতে হবে না, কারণ সে উহার জামিনস্বরূপ ছিল।
মালিক (রহঃ) বলেনঃ আমাদের নিকট ইহা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত যে, যে ব্যক্তি কোন দাস বা দাসীকে অথবা কোন প্রাণীকে বিক্রয় করেছে বারাআতের শর্তে সে আহলে-মীরাস হোক বা আহলে-মীরাস ব্যতীত অন্য কেহ হোক, তবে সে বিক্রীত বস্তুতে যেকোন প্রকার দোষ পাওয়া যায় উহার দায়-দায়িত্ব হতে মুক্ত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু যদি কোন দোষ জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও গোপন করে থাকে তবে তার দায়িত্ব মুক্তির শর্ত করা কোন কাজে লাগবে না এবং তার বিক্রীত বস্তু তার দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে।
মালিক (রহঃ) বলেনঃ যেই দাসীকে দুইজন দাসীর বিনিময়ে বিক্রয় করা হয়েছে, অতঃপর দাসীদ্বয়ের একজনের মধ্যে এমন দোষ পাওয়া গিয়েছে যা সহ মালিকের নিকট ফেরত দেওয়া চলে। তবে সেই দাসীর মূল্য নির্ণয় করা হবে যেই ক্রীতদাসীকে দুই দাসীর বিনিময়ে বিক্রয় করা হয়েছিল। তারপর দেখতে হবে উহার মূল্য কত। অতঃপর দাসীদ্বয়ের মূল্য নির্ণয় করতে হবে যাদের একজনের মধ্যে দোষ পাওয়া গিয়েছে। উভয়ে সুস্থ ও নিখুঁত থাকলে কি মূল্য দাসীদ্বয়ের হতে পারে তা নির্ণয় করবে। অতঃপর যেই দাসীকে এতদুভয়ের বিনিময়ে বিক্রি করা হয়েছিল উহার মূল্যকে উভয় দাসীর মধ্যে উহাদের মূল্য অনুযায়ী বন্টন করে দেবে, যেন দাসীদ্বয়ের প্রত্যেকের উপর স্ব স্ব হিসসা বর্তিত হয়। নিখুঁত ও উত্তমার অংশে উহার মূল্য এবং অপর ত্রুটিযুক্ত অংশে তার মূল্য বর্তিত হবে। তারপর লক্ষ্য করা হবে ত্রুটিযুক্ত দাসীর দিকে এবং যেই পরিমাণ মূল্য উহার অংশে নির্ধারিত হল তা বিক্রেতা কর্তৃক ক্রেতাকে ফেরত দিতে হবে। যেই দিন ক্রেতা দাসীদ্বয়ের নিজ দখলে এনেছে উভয়ের সেই দিনের মূল্য নির্ণয় করবে।
মালিক (রহঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি দাস ক্রয় করল অতঃপর উহাকে ইজারাতে কাজে লাগাল, বড় ইজারাতে কিংবা [৩] কর মারফতে। তারপর সেই দাসে খুঁত পাওয়া গেল, যে খুঁতের কারণে উহাকে বিক্রেতার নিকট ফেরত দেওয়া যায়। (এইরূপ অবস্থা হলে) তবে সেই দাসকে খুঁতসহ ফেরত দিবে, ইজারা (লব্ধ অর্থ) ও কর [মারফত আদায়কৃত বস্তু] তার [ক্রেতার] প্রাপ্য হবে। অনুরূপ মতই পোষণ করতেন আমাদের (পবিত্র) শহরের (মদীনার) উলামা সম্প্রদায়। ইহা এইজন্য যে, (যেমন) এক ব্যক্তি একটি দাস খরিদ করল। সে দাস তার (ক্রেতার) উদ্দেশ্যে একটি গৃহ নির্মাণ করল। যে গৃহের নির্মাণ খরচ গোলামের মূল্য অপেক্ষা কয়েক গুণ বেশি হবে, অতঃপর সেই দাসের কোন দোষ পাওয়া গেল যে দোষের কারণে উহাকে বিক্রেতার নিকট ফেরত দেওয়া চলে। (এইরূপ পরিস্থিতির উদ্ভব হলে) তবে উহাকে (বিক্রেতার নিকট) ফেরত দিবে এবং গোলামের শ্রমের কারণে ক্রেতার উপর কোন মজুরী হিসাব করা হবে না।
অনুরূপ দাসের ইজারালব্ধ অর্থ ক্রেতা পাবে যদি অন্যের নিকট উহাকে ইজারা দিয়ে থাকে কারণ ক্রেতাই উহার জামিন। মালিক (রহঃ) বলেন, এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত।
মালিক (রহঃ) বলেনঃ আমাদের নিকট মাসআলা এই, এক ব্যক্তি এক দফাতে একসঙ্গে কয়েক জন দাসকে বিক্রয় করেছে। অতঃপর সেইসব দাসের মধ্যে একজন পাওয়া গিয়েছে চোরাইকৃত দাস কিংবা উহাদের এক জনের মধ্যে খুঁত পাওয়া গিয়েছে। মালিক (রহঃ) বলেন, এমতাবস্থায় দেখতে হবে- চোরাইকৃত দাস কিংবা যার মধ্যে খুঁত পাওয়া গিয়েছে সেই দাস যদি বিক্রীত দাসের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হয় অথবা অধিক মূল্যের হয় এবং ক্রেতা উহার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে সবাইকে ক্রয় করেছে, উহাতে রয়েছে শ্রেষ্ঠত্ব ও গুণ, সাধারণ লোকের ধারণায়। তবে এইরূপ বিক্রয় সম্পূর্ণ রদ করে দেয়া হবে। মালিক (রহঃ) বলেন, চোরাইকৃত গোলাম কিংবা যার মধ্যে দোষ পাওয়া গিয়েছে মামুলী ধরনের [বড় রকমের দোষ নয়], আর দাসদের মধ্যে সেই গোলাম অতি শ্রেষ্ঠও নয় এবং উহার উদ্দেশ্যে সবাইকে ক্রয়ও করা হয়নি। আর লোক-দৃষ্টিতে উহার বিশেষ কোন গুণও নাই। তবে ত্রুটিযুক্ত কিংবা চোরাইকৃত সেই ক্রীতদাসকেই বিক্রেতার নিকট ফেরত দেওয়া হবে; ক্রীতদাসদেরকে যেই মূল্যে খরিদ করা হয়েছে, হারাহারিভাবে এই দাসের যা মূল্য হবে সেই মূল্য অনুপাতে (অর্থ বাদ দিয়ে)।