সা’ঈদ ইবনু মুসায়্যাব (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধোঁকার বিক্রয় নিষেধ করেছেন। (সহীহ, ইমাম মুসলিম অন্য সনদে আবূ হুরাইরা থেকে বর্ণনা করেছেন ১৫১৩, তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত সনদটি মুরসাল)
মালিক (রহঃ) বলেনঃ ধোঁকা ও সংশয়ের বিক্রয় হচ্ছে এইরূপ- যেমন, এক ব্যক্তির জানোয়ার হারানো গিয়েছে কিংবা তার দাস পালিয়েছে, [সে এই অবস্থাতে উহা বিক্রয় করতে ইচ্ছুক হল] উহার মূল্য হচ্ছে পঞ্চাশ দীনার। আর এক ব্যক্তি বলল, আমি আপনার নিকট হতে ইহা ক্রয় করলাম বিশ দীনারের মূল্যে। অতঃপর যদি ক্রেতা উহা পায় তবে ত্রিশ দীনার বিক্রেতা হতে চলে যাবে। আর না পেলে বিক্রেতা ক্রেতা হতে কুড়ি দীনার (পূর্বেই) পকেটস্থ করেছে।
মালিক (রহঃ) বলেনঃ এতে অপর একটি ত্রুটি রয়েছে, তা এই, হারানো জানোয়ার [বা পলাতক দাস] যদি পাওয়াও যায় (তবুও) জানা যায়নি যে, উহাতে (কিছু) বৃদ্ধি হয়েছে না ঘাটতি হয়েছে, কিংবা উহাতে কোন দোষ জন্মেছে। এটা বড় রকমের ঝুঁকি।
মালিক (রহঃ) বলেনঃ আমাদের নিকট ফায়সালা এই, মাদী জানোয়ার এবং স্ত্রীলোকের পেটের বাচ্চা ক্রয় করাও ঝুঁকি এবং ধোঁকার মধ্যে গণ্য। কারণ পেটের বাচ্চা বের হবে কি হবে না জানা নাই। যদি বের হয় তবে জানা নাই যে, উহা সুন্দর হবে না কুশ্রী হবে? পূর্ণ হবে না অসম্পূর্ণ হবে? নর হবে না নারী হবে? এর প্রত্যেকটিই মূল্যের ব্যাপারে তারতম্য হওয়ার কারণ হয়। এইরূপ হলে, উহার মূল্য এই হবে, এইরূপ হলে উহার মূল্য অন্যরূপ হবে। [ইত্যাদি ইত্যাদি]
মালিক (রহঃ) বলেনঃ স্ত্রী জাতীয় পশুদেরকে বিক্রয় করে উহাদের গর্ভস্থ বাচ্চাদেরকে বিক্রয় হতে বাদ রাখা জায়েয নয়, ইহা এইরূপ- যেমন কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে বলল, আমার এই দুধাল বকরীর মূল্য হচ্ছে তিন দীনার, কিন্তু দুই দীনার মূল্যে তোমাকে প্রদান করিতেছি। উহার গর্ভস্থ বাচ্চা আমার জন্য থাকবে, ইহা মাকরূহ। কারণ ইহাতেও ধোঁকা রয়েছে।
মালিক (রহঃ) বলেনঃ যাইতুন তৈলের বিনিময়ে যাইতুন ফল বিক্রয় করা এবং তিল নিঃসৃত তৈলের বিনিময়ে তিল শস্য বিক্রয় করা। ঘি-এর বিনিময়ে পনির বিক্রয় করা জায়েয নয়। কারণ এতে ‘মুযাবানা’ প্রবেশ করে থাকে, আর এই কারণেও এটা না-জায়েয যে, যে ব্যক্তি শস্য হতে নিঃসৃত নির্দিষ্ট পরিমাণ বস্তুর বিনিময়ে শস্য ক্রয় করিতেছে এটা জানা নাই যে, উহা হতে সেই পরিমাণের কম উৎপন্ন হবে না বেশি উৎপন্ন হবে। কাজেই এটাও ধোঁকার অন্তর্ভুক্ত হল।
মালিক (রহঃ) বলেনঃ হাব্বুল-বান [১] [বান বা বকায়ন বৃক্ষের শস্য]-কে উহা ‘সলীখা’-র বিনিময়ে ক্রয় করাও নাজায়েয। কারণ এতে ধোঁকা রয়েছে। কারণ ‘সলীখা’ হচ্ছে হাব্বুল-বান হতে নিঃসৃত তৈল। তবে সুগন্ধ বান তৈলের বিনিময়ে হাব্বুল-বান ক্রয় করাতে কোন দোষ নেই। কারণ সুগন্ধ বানে অন্য দ্রব্য মিশান হয়েছে, উহাকে সুগন্ধযুক্ত করা হয়েছে। তাই উহা কেবল মাত্র হাব্বুল-বান নিঃসৃত ‘সলীখা’ রূপে অবশিষ্ট নেই।
মালিক (রহঃ) বলেনঃ এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির নিকট কোন সামগ্রী বিক্রয় করল এবং বলল যে, লোকসান সম্পর্কে ক্রেতার কোন দায়িত্ব নেই। [২] এটা জায়েয নয়। এটা ধোঁকার অন্তর্ভুক্ত, এর ব্যাখ্যা এই, সে যেন এই সামগ্রীতে যে লাভ অর্জিত হয় উহা তাকে (ক্রেতাকে) বিক্রয় চুক্তির মাধ্যমে দিয়েছে। যদি এই মাল খরিদ মূল্যে বা লোকসানে বিক্রয় করে তবে সে (ক্রেতা) কিছু পাবে না এবং তার শ্রম বৃথা যাবে। ইহা জায়েয নয়। (জায়েয তখন হবে যখন) ক্রেতা তার শ্রমের মজুরি পাবে শ্রম পরিমাণ। আর এই বস্তুতে যা লাভ লোকসান হবে, উহা বিক্রেতার প্রাপ্য হবে। ইহা তখন যখন সেই সামগ্রী বিক্রয় হয়ে যায় কিংবা ধ্বংস হয়। যদি উহা নষ্ট না হয় তবে উভয়ের মধ্যকার বেচাকেনা বাতিল হয়ে যাবে।
মালিক (রহঃ) বলেনঃ যদি এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির নিকট কোন মাল বিক্রয় করল স্পষ্টরূপে, অতঃপর ক্রেতা লজ্জিত হল অর্থাৎ খরিদ করে লজ্জিত এবং বিক্রেতার নিকট বলল- কিছু মূল্য কমিয়ে দিন। বিক্রেতা তা স্বীকার করল না এবং বলল- আপনি এই মাল বিক্রয় করুন, আপনার কোন লোকসান নাই। এটা জায়েয হবে। কারণ ইহা ধোঁকা নয় বরং এটা তার উপর হতে লাঘব করা হল। বেচাকেনা এই লাঘব করার শর্তের উপর অনুষ্ঠিত হয়নি। এটাই আমাদের নিকট ফয়সালা।