মুকাতাবের ব্যাপারে অতি উত্তম কথা যা আমি শুনেছি তা এই যে মুকাতাবকে তার কর্তা মৃত্যু মুহূর্তে আযাদ করেছে তবে সেই অবস্থাতে (সেই মুহূর্তে) উহার মূল্য যা হয় তাই ধার্য করা হবে। অর্থাৎ যদি উহাকে বিক্রি করা হয় তবে কত মূল্য দাঁড়াবে তাই ধার্য মূল্য “বদলে কিতাবাত”-এর যা বাকী রয়েছে তার কম হয়, তবে উহা মৃত ব্যক্তির সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ মুতাবিক ধার্য করা হবে। মুকাতাবের জিম্মায় যে পরিমাণ দিরহাম অবশিষ্ট রয়েছে উহার প্রতি দৃষ্টি দেয়া হবে না। ইহা এইজন্য যে, মুকাতাবকে যদি হত্যা করা হয় তবে হত্যাকারী সেই হত্যার দিনের মূল্যই আদায় করবে। (অনুরূপ) মুকাতাবকে কেউ জখম করলে সে জখমের দিনের খেসারতই আঘাতকারী আদায় করবে। এই সব ব্যাপারে উহার কিতাবাত কত দিরহাম বা কতদিনের উপর হয়েছে সেদিকে লক্ষ্যে করা হবেনা। কারণ যতক্ষণ কিতাবাতের কিছু অর্থ অনাদায়ী থাকে ততক্ষণ সে ক্রীতদাস থাকে। আর “বদলে কিতাবাত” যা উহার জিম্মায় রয়েছে উহা যদি তার মূল্য হতে কম হয় তবে মৃত ব্যক্তির সম্পদের এক তৃতীয়াংশ হতে “বদলে কিতাবাত”-এর ব্যাপারে উহার জিম্মায় যে বকেয়া রয়েছে মাত্র সে পরিমাণই আদায় করা হবে। কারণ মৃত ব্যক্তি তার জন্য তার “বদলে কিতাবাত”-এর বকেয়া পরিমাণই রেখে গিয়েছে। ফলে উহা এমন ওসীয়্যতের মতো হয়েছে, যে ওসীয়্যত সেই (মৃত ব্যক্তি) উহার মুকাতাবের জন্য করেছে।
মালিক (র) বলেন এর ব্যাখ্যা এই, যদি মুকাতাবের মূল্য হয় এক হাজার দিরহাম এবং উহার কিতাবাত হতে বাকী রয়েছে মাত্র একশত দিরহাম, এমতাবস্থায় তার কর্তা তার জন্য একশত দিরহামের ওসীয়াত করেছে। উহা তার কর্তার সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ হতে আদায় করা হবে। এই ওসীয়্যতের দরুন মুকাতাব আযাদ হয়ে যাবে।
মালিক (র) বলেন এক ব্যক্তি তার গোলামকে মৃত্যুর সময় মুকাতাব করল, তবে ক্রীতদাসের মূল্য ধার্য করা হবে। তারপর কর্তার সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ যদি ক্রীতদাসের মূল্য পরিশোধের জন্য যথেষ্ট হয় তবে উহা জায়েয হবে।
মালিক (র) বলেন এর ব্যাখ্যা এই যে, (দৃষ্টান্তস্বরূপ) ক্রীতদাসের মূল্য হচ্ছে এক হাজার দীনার, তার কর্তা মৃত্যুর সময় তার সাথে মুকাতাব করল দুইশত দীনারের উপর, (অপর দিকে) তার কর্তার সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ হচ্ছে এক হাজার দীনার, তবে ইহা বৈধ। ইহা (এক প্রকারের) ওসীয়্যত যা তার (মুকাতাবের) জন্য (সম্পদের) এক-তৃতীয়াংশ করা হয়েছে। আর যদি (মুকাতাবের) কর্তা অন্য কোন সম্প্রদায়ের জন্য ভিন্ন ধরনের ওসীয়্যত করে থাকে, (অপরদিকে) এক-তৃতীয়াংশ সম্পদের মুকাতাবের মূল্যের অধিক মাল নাই, তবে মুকাতাবকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। কারণ কিতাবাত হচ্ছে আযাদী প্রদান করা। সুতরাং কিতাবাতের ওসীয়্যতকে ওসীয়্যতসমূহের মধ্যে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। অতঃপর অন্য সকল ওসীয়্যতকে মুকাতাবের “বদলে কিতাবাদ”-এর অন্তর্ভুক্ত করা হবে। যাদের জন্য ওসীয়্যত করা হয়েছে পছন্দ করলে যাদের জন্য ওসীয়্যত করা হয়েছে তাদের পক্ষে ওসীয়্যত পূর্ণ করবে এবং মুকাতাবের কিতাবাতের অর্থ তাদের প্রাপ্য হবে। তারা চাইলে এইরূপ করতে পারবে। আর তারা যদি এইরূপ করতে অস্বীকার করে এবং মুকাতাব ও মুকাতাবের সম্পদকে ওসীয়্যত যাদের জন্য করা হয়েছে তাদের নিকট সোপর্দ করে দেয়, এটাও তাদের জন্য বৈধ।
কারণ এক-তৃতীয়াংশ সম্পদ সেই মুকাতাবের মধ্যেই (অর্থাৎ তার নিকটই) রয়েছে। আর এটা এই জন্য যে, কোন ওসীয়্যত যা কোন ব্যক্তি করেছে তা সম্পর্কে তার ওয়ারিসগণ বলতে পারে, আমাদের মু’রিস [১] (কর্তা-ব্যক্তি-পরিবারের প্রধান) যা ওসীয়্যত করেছে উহা এক-তৃতীয়াংশের অধিক। এই ওসীয়্যতের দ্বারা তিনি তার অধিকার বহির্ভূত অতিরিক্ত সম্পদ গ্রহণ করেছেন। মালিক (র) বলেন- (এই অবস্থাতে) তার ওয়ারিসগণকে ইখতিয়ার দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, তোমাদের মুরুব্বী বা মু’রিস যে ওসীয়্যত করেছে, তোমরা সে বিষয়ে অবগত হয়েছ, (এখন) তোমরা যদি মৃত ব্যক্তির ওসীয়্যতকে যার জন্য তিনি ওসীয়্যত করেছেন সেই মতে কার্যকর করতে পছন্দ কর, (তবে ভাল কথা) নতুবা যাদের জন্য ওসীয়্যত করা হয়েছে তাদের উদ্দেশ্যে মৃত ব্যক্তির এক-তৃতীয়াংশ সম্পদ পূর্ণ ছেড়ে দাও।
মালিক (র) বলেন মৃত ব্যক্তির ওয়ারিসগণ ওসীয়্যত যাদের জন্য করা হয়েছে তাদের নিকট মুকাতাবকে সোপর্দ করে দেয় তবে “বদলে কিতাবাত” তাদের প্রাপ্য হবে, মুকাতাব যদি তার জিম্মায় কিতাবাতের অর্থ তাদের নিকট পরিশোধ করে তবে তারা ওসীয়্যত বাবদ তাদের অংশ অনুযায়ী বন্টন করে নিবে। আর মুকাতাব যদি অর্থ আদায়ে অপারগ হয় তবে সে উহাদের নিকট ক্রীতদাসরূপে থাকবে, ওয়ারিসগণের নিকট ফিরে যাবে না। কারণ তারা তাকে ছেড়ে দিয়েছে যখন ইখতিয়ার দেয়া হয়েছে তখন। আর এইজন্যও যে ওয়ারিসগণ যখন ওসীয়্যত গ্রহীতাদের নিকট মুকাতাবকে সোপর্দ করে তখন ওসীয়্যত গ্রহীতারা তাকে জামিন হিসেবে গ্রহণ করেছে। তাই ওসীয়্যত গ্রহীতাদের জন্য মুকাতাবের মৃত্যু হলে ওয়ারিসগণের কোন দায়িত্ব থাকবে না। আর যদি মুকাতাবের মৃত্যুর হয় কিতাবাতের অর্থ পরিশোধ করার পূর্বে এবং উহার জিম্মায় যে অর্থ রয়েছে তার অধিক মাল রেখে যায় তবে উহার মাল ওসীয়্যত গ্রহীতাদের জন্য হবে। আর যদি মুকাতাব কিতাবাতের অর্থ পরিশোধ করে থাকে তবে সে আযাদ হয়ে যাবে এবং তার উত্তরাধিকারিত্ব রুজূ করবে মু‘রিস-এর ‘আসাবা’-এর দিকে যিনি কিতাবাত সম্পাদন করেছিলেন।
মালিক (র) বলেন জনৈক মুকাতাবের নিকট “বদলে কিতাবাত” বাবদ তার কর্তা দশ হাজার দিরহাম পাবে। সে মৃত্যুর সময় মুকাতাবের জিম্মা হতে এক হাজার দিরহাম কমিয়ে দিল। মালিক (র) বলেন, মুকাতাবের মূল্য নির্ধারণ করা হবে। অতঃপর লক্ষ্য করা হবে এর মূল্য কত? যদি উহার মূল্য এক হাজার দিরহাম হয় তবে মুকাতাব হতে যা কমান হয়েছে উহা “বদলে কিতাবাত”-এর এক দশমাংশ [২] আর উহা মূল্যের দিক দিয়ে একশত দিরহাম [এর মতো [৩] ] এবং উহা (একশত দিরহাম হচ্ছে মূল্যের এক দশমাংশ, তাই উহা (মুকাতাব) হতে এক-দশমাংশ কমান হল যা মূল্যের হবে এক-দশমাংশ (১/১০) নগদ মূল্যে। এটা হচ্ছে এইরূপ যেমন মুকাতাব হতে সম্পূর্ণ “বদলে কিতাবাত” মাফ করে দেয়া হয়, যদি (কর্তা) এইরূপ করে তবে মৃত ব্যক্তির সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ হতে মুকাতাবের মূল্য এক হাজার দিরহাম ছাড়া আর কিছু হিসাব করা হবে না। [৪] আর যদি মুকাতাব হতে “বদলে কিতাবাতের” অর্ধেক মাফ করা হয় তবে মৃত ব্যক্তি সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ (মুকাতাবের) মূল্যের অর্ধেক হিসাব করা হবে। আর ইহা হতে কম বা অধিক হলে তবে সেই অনুপাতেই হিসাব করা হবে।
মালিক (র) বলেন কোন ব্যক্তি তার মুকাতাবের (বদলে কিতাবাত) দশ হাজার দিরহাম হতে এক হাজার দিরহাম তার মৃত্যুর সময় কমিয়ে দিয়ে থাকে, আর সে ইহা নির্দিষ্ট করেনি যে, এটা কিতাবাতের (কিস্তির) প্রথম ভাগে কমান হবে, কিম্বা শেষের দিকে কমান হবে। তবে প্রতিটি কিস্তি হতে “বদলে কিতাবাত”-এর এক-দশমাংশ করে কমাবে।
মালিক (র) বলেন এক ব্যক্তি তার মৃত্যুকালে তার মুকাতাব হতে এক হাজার দিরহাম কমিয়ে দিল। কিতাবাতের প্রথম ভাগ হতে কিম্বা শেষের দিক হতে। আর আসল কিতাবাত অনুষ্ঠিত হয়েছিল তিন হাজার দিরহামের উপর, তবে নগদ মূল্যে মুকাতাবের মূল্য নির্ধারণ করা হবে। অতঃপর সেই মূল্যকে (কিস্তিতে) বিভক্ত করা হবে। তারপর সেই মূল্য হতে কিতাবাতের প্রারম্ভের এক হাজারের জন্য উহার হিস্সা নির্ধারিত হবে উহার নির্ধারিত সময়ের যতটা নিকটে তা এবং উহার মূল্যের পার্থক্য বিবেচনা করে, অতঃপর দ্বিতীয় হাজারের জন্য (হিস্সা) (ঠিক করা হবে) যা প্রথম হাজারের সংলগ্ন রয়েছে উহার মূল্যের পার্থক্য অনুযায়ী, অতঃপর উহার সংলগ্ন হাজারের জন্য উহার মুল্যের পার্থক্য অনুযায়ী। সব শেষ অংশ প্রদান করা পর্যন্ত মুহূর্তের অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ের ব্যাপারকে ত্বরান্বিত বা দেরী করার বিষয়টির বিবেচনায় কিস্তির প্রতি হাজার উহার পরবর্তী হাজারের তুলনায় উত্তম ও শ্রেষ্ট বলে সাব্যস্ত হবে। কারণ পরবর্তী কিস্তির মূল্য মূল্যের দিক দিয়ে কম হবে। অতঃপর (কর্তা কর্তৃক যে এক হাজার দিরহাম কমান হয়েছে) মূল্য হতে সেই এক হাজারের পরিমাণ মৃত ব্যক্তির মালের এক-তৃতীয়াংশ হতে বাদ দেয়া হবে। উহার বৃদ্ধি অথবা ঘাটতির প্রতি লক্ষ্য রাখা হবে। যদি উহা কমে কিম্বা বৃদ্ধি পায় তবে উহা সেই অনুপাতেই হিসাব করা হবে।
মালিক (র) বলেন জনৈক ব্যক্তি অন্য এক ব্যক্তির জন্য তার মুকাতাবের এক-চতুর্থাংশের ওসীয়্যত করেছে এবং উহার এক-চতুর্থাংশ আযাদ করেছে। অতঃপর সেই ব্যক্তির মৃত্যু হয়, তারপর মুকাতাবও মারা যায়। তার জিম্মায় যে “বদলে কিতাবাত” বাকী রয়েছে, তা হতে অধিক মাল রেখে যায়। মালিক (র) বলেন, মুকাতাবের উপর ওয়ারিসগণের যা প্রাপ্য রয়েছে উহা দেয়া হবে ওয়ারিসগণকে এবং তাকে যার জন্য মুকাতাবের এক-চতুর্থাংশের ওসীয়্যত করা হয়েছে। ইহার পর যা অবশিষ্ট থাকে তা ইহারা ভাগ করে নিবে। এই অনুপাতে যার জন্য মুকাতাবের এক-চতুর্থাংশের ওসীয়্যত করা হয়েছিল সে পাবে অবশিষ্ট সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ, আর মুকাতাবের কর্তার ওয়ারিসগণের হবে দুই-তৃতীয়াংশ। কারণ মুকাতাবের উপর যতক্ষণ বদলে কিতাবাত বাকী ততক্ষণ পর্যন্ত সে গোলামই থাকে।
মালিক (র) বলেন, যে মুকাতাবকে তার কর্তা মৃত্যুকালে আযাদ করেছে, যদি মৃত ব্যক্তির এক-তৃতীয়াংশ সম্পদ উহার জন্য যথেষ্ট না হয় তবে এক-তৃতীয়াংশে যতটুকু সংকুলান হয় ততটুকু মুকাতাব হতে আযাদ হয়ে যাবে এবং মুকাতাব-এর “বদলে কিতাবাত” হতে সেই পরিমাণ কমিয়ে দেয়া হবে। যদি মুকাতাবের জিম্মায় থাকে পাঁচ হাজার দিরহাম আর উহার মূল্য হয় দুই হাজার দিরহাম নগদ মূল্যে। মৃত ব্যক্তির সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ হয় এক হাজার দিরহাম তবে উহার অর্ধেক আযাদ হবে এবং উহার কারণে কিতাবাতের অর্থের অর্ধেকও কমিয়ে দেয়া হবে।
মালিক (র) বলেন যে ব্যক্তি তার ওসীয়্যতে বলেছে আমার অমুক গোলাম আযাদ এবং অমুককে মুকাতাব করে দিও, মালিক (র) বলেন, আযাদীকে কিতাবাতের উপর অগ্রাধিকার দেয়া হবে।