তাউস ইয়ামানী (র) থেকে বর্ণিতঃ
মুয়ায ইবনু জাবল (রা) ত্রিশটি গাভীতে এক একটি বৎসরের বাছুর এবং চল্লিশটি গাভীতে দুই বছর বয়সের একটি গাভী গ্রহণ করেছিলেন। ত্রিশের কম সংখ্যায় কিছুই তিনি নেননি। তখন তিনি বলেছিলেন, এই বিষয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে কোন নির্দেশ আমি শুনি নাই। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথে যদি পুনরায় সাক্ষাৎ ঘটে তবে এই সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে জেনে নিব। কিন্তু মুয়ায (রা) (ইয়ামন হতে ফিরে) আসার পূর্বেই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে গিয়েছিলেন। (সহীহ, আবূ দাঊদ ১৫৭৭, তিরমিযী ৬২৩, নাসাঈ ২৪৫০, ইবনু মাজাহ ১৮০৩, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন [সহীহ ও যয়ীফ সুনানে আবূ দাঊদ])
মালিক (র) বলেন, কারো বকরীসমূহ দুই বা ততোধিক একত্র করার পর যে সংখ্যায় হবে সেই অনুসারে এর যাকাত ধার্য হবে। তদ্রুপ কারো স্বর্ণ বা রৌপ্য যদি বিভিন্ন লোকের হাতে থাকে তবে সবগুলোকে একত্র করার পর যে পরিমাণ হবে সে হিসাবে এতে যাকাত ধার্য করা হবে।
মালিক (র) বলেন, কারো নিকট যদি ভেড়া অথবা বকরী একই পালে মিশ্রিত হয়ে থাকে তবে সবগুলো গণনা করে দেখা হবে। সবগুলো একত্রে যাকাত ধার্য হয় এমন সংখ্যায় উপনীত হলে যাকাত ধার্য হবে। কারণ এগুলো ‘গনম’ (বকরী) জাতীয় পশু। উমার ইবনু খাত্তাব (রা) তাঁর পূর্বে উল্লেখিত পত্রে উল্লেখ করেছেন, বকরীর সংখ্যা চল্লিশ হলে একটি বকরী যাকাত দিবে। সংখ্যায় ভেড়া অধিক হলে আর বকরী কম হলে যাকাতের বেলায় ভেড়া গ্রহণ করা হবে। আর বিপরীত হলে বকরী নেওয়া হবে। সংখ্যায় সমান হলে যাকাতগ্রহীতার ইখতিয়ার থাকবে যা ভাল মনে করে তাই গ্রহণ করবে।
মালিক (র) বলেন, তদ্রুপ আরবি বা বুখতী উট একত্রে মিলিয়ে যাকাত নেওয়া হবে। সংখ্যায় যা অধিক হবে তা হতেই যাকাত গ্রহণ করা হবে। আর সমসংখ্যক হলে এটা যাকাতগ্রহীতার ইখতিয়ারাধীন থাকবে।
মালিক (র) বলেন, গরু ও মহিষ একই সম্প্রদায়ভুক্ত বলে গণ্য। এতে উভয় জাতীয়কে একত্র করে যাকাত নেয়া উচিত। যে জাতীয় পশু সংখ্যায় অধিক হবে যাকাতে তাই গ্রহণ করা হবে। সমসংখ্যক হলে যাকাত গ্রহীতার ইখতিয়ারাধীন থাকবে। গাভী ও মহিষ উভয় দলই যদি নিসাব পরিমাণ থাকে তবে উভয় হতে আলাদা যাকাত লওয়া হবে।
মালিক (র) বলেন, নতুনভাবে যদি কেউ পশুর মালিক হয় তবে ঐ দিন পূর্ণ এক বৎসর অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত তাতে যাকাত ধার্য হবে না। তবে পূর্ব হতে যদি নিসাব পরিমাণ পশু (পাঁচটি উট বা ত্রিশটি গাভী বা চল্লিশটি বকরী) তার নিকট থাকে আর পরে সে ক্রয় বা হেবা বা উত্তরাধিকার সূত্রে আর কিছু পশুর মালিক হয় তবে পূর্বস্থিত পশুগুলির সহিত মিশ্রণ করে এগুলো যাকাত আদায় করতে হবে যদিও এগুলোতে পূর্ণ এক বৎসর অতিক্রান্ত হয়নি। পূর্বস্থিত পশুগুলির যাকাত আদায় করে দেওয়ার পর যদি এগুলো তার মালিকানায় এসে থাকে তবে পূর্বস্থিত পশুগুলোর পুনরায় যখন যাকাত দেবে তখন সেই সঙ্গে এগুলোরও যাকাত দেবে।
মালিক (র) বলেন, মাস’আলাটির উপমা হল, কেউ তার মালিকানাধীন রৌপ্যের যাকাত আদায় করে বাকি রৌপ্য দ্বারা অন্য কোন ব্যক্তির নিকট হতে পণ্যদ্রব্য কিনে নিল। বিক্রেতার উপর উক্ত পণ্যদ্রব্যের যাকাত প্রদান করা ওয়াজিব। কাজেই এই দ্বিতীয় ব্যক্তি যাকাত দেবে। এই অবস্থায় ক্রয়কারী লোকটি যেন অদ্য তার যাকাত আদায় করল আর বিক্রেতা যেন গতকাল তার যাকাত আদায় করেছে।
মালিক (র) বলেন, নিসাব পরিমাণ হতে কম বকরী কারো কাছে ছিল এবং পরে সে আরও কিছু বকরীর মালিক হল, এতে নিসাব পরিমাণের চাইতেও যদি তার বকরীর সংখ্যা অধিক হয়ে যায় তবুও পূর্ণ এক বৎসর অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত তাতে যাকাত ধার্য হবে না। কারণ যাকাতের বেলায় নিসাব পরিমাণ হতে কম দ্রব্য ধর্তব্য বলে গণ্য হয় না। নিসাব পরিমাণ হয়ে যাওয়ার পর ঐ জাতীয় যত পশু তার মালিকানায় আসবে, কম হোক বা বেশি হোক, সবগুলিরই যাকাত দিতে হবে।
মালিক (র) বলেন, নিসাব পরিমাণ পশু (উট, গরু, ছাগল) কারো কাছে ছিল, পরে আরও কিছু পশু যদি তার অধিকারে আসে তবে পূর্ণ নিসাবের সহিত এগুলোরও যাকাত প্রদান করতে হবে। আর এ ব্যাপারে আমি যা শুনেছি তন্মধ্যে এ মতটি আমার কাছে অধিক প্রিয়।
মালিক (র) বলেন, যে ধরনের পশু যাকাতে ধার্য করা হয়েছে সে ধরনের পশু যদি নিসাবের অধিকারী ব্যক্তির পশুপালে না থাকে, যেমন ধার্য হয়েছে এক বৎসর বয়সের উট আর ঐ ব্যক্তির পালে তা নেই, তবে দুই বৎসর বয়সের উট প্রদান করা হবে। আর দুই, তিন বা চার বৎসর বয়সের যাকাতে ধার্যকৃত উট পশুপালে পাওয়া না গেলে, সে ধরনের ক্রয় করে তা আদায় করা হবে। এটার জন্য মূল্য দ্বারা যাকাত প্রদান করা আমি পছন্দ করি না।
মালিক (র) বলেন, সেচ কার্যের বা হালের উট বা মহিষ নিসাব পরিমাণ হলে তাতেও যাকাত ওয়াজিব হবে।