ইব্ন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ঈসা ইব্ন মারয়াম (আ)-এর পর এমন কয়েকজন বাদশাহ্ ছিলেন, যারা তাওরাত এবং ইঞ্জিলে পরিবর্তন সাধন করেন। তাদের মধ্যে এমন কিছু ইমানদার লোকও ছিলেন, যারা তাওরাত পাঠ করতেন। তখন তাদের বাদশাহদেরকে বলা হলো- এ সকল লোক আমাদেরকে যে গালি দিচ্ছে, এর চেয়ে কঠিন গালি আর কি হতে পারে? তারা পাঠ করেঃ যারা আল্লাহ্র নাজিলকৃত আহ্কাম দ্বারা মীমাংসা করে না, তারা কাফির।“ তাদের পড়ার মধ্যে থাকে এই আয়াত এবং ঐ সকল আয়াত, যাতে আমাদের কর্মকাণ্ডের দোষ প্রকাশ পায়। তাদেরকে আহবান করুন, তারা যেন আমরা যেরূপ পাঠ করি, সেরূপ পাঠ করে, আর আমরা যেরূপ ঈমান এনেছি, সেরূপ ঈমান আনে। বাদশাহ তাদের সকলকে ডেকে একত্রিত করলেন এবং তাদের সামনে পেশ করলেন যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে, যদিনা তারা তাওরাত ও ইঞ্জিল পাঠ ত্যাগ করবে, তবে ঐ সকল আয়াত ব্যতীত, যা পরিবর্তন হয়েছে। তারা বললোঃ এর দ্বারা তোমাদের উদ্দেশ্য কী ? আমাদেরকে আমাদের অবস্থার উপর ছেড়ে দাও। তাদের একদল বললঃ আমাদের জন্য একটি স্তম্ভ তৈরি কর, এরপর আমাদের তাতে চড়িয়ে দাও এবং আমাদেরকে এমন কিছু দান কর, যা দ্বারা আমরা আমাদের খাদ্য ও পানীয় উঠিয়ে নিতে পারি, তা হলে আমরা আর তোমাদের নিকট আসবো না। তাদের আর একদল বললঃ আমাদেরকে ছেড়ে দাও, আমরা পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াব এবং বন্য পশুর ন্যায় আহার ও পান করবো। আর এরপর যদি তোমাদের দেশে আমাদেরকে পাও, তবে আমাদেরকে হত্যা করো। তাদের আর একদল বললোঃ বনে জঙ্গলে আমাদের জন্য গির্জা তৈরী করে দাও। আমরা কূপ খনন করবো এবং তরি-তরকারি ফলাব, আমরা তোমাদের কাছেও আসবো না, এবং তোমাদের পাশ দিয়ে কোথাও যাব না। আর এমন কোন গোত্র ছিল না, যাতে তাদের আত্মীয়-স্বজন না ছিল। পরে তারা ঐরূপ করলো। তখন আল্লাহ্ তা’আলা আয়াত নাযিল করেনঃ তারা নিজেরা এমন বৈরাগ্য ঠিক করে নিয়েছিল। আমি তাদেরকে এর বিধান দিইনি। তারা ঐ দরবেশের হক পূর্ণ করেনি। অন্যান্য লোকেরা বলতে লাগলোঃ আমরাও তাদের ন্যায়, যেমন অমুক অমুক লোক করে থাকে, অমূক লোকের ন্যায় জঙ্গলে জঙ্গলে ভ্রমণ করবো, ঐরূপ গৃহ নির্মাণ করবো, যেমন অমূক লোকেরা করেছিল। অথচ তারা শিরকে পতিত ছিল, তারা যাদের অনুকরণ করছিল, তাদের ঈমান সম্বদ্ধেও অবহিত ছিল না। যখন আল্লাহ্ তা’আলা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে প্রেরণ করলেন, তখন তাদের মধ্যে কিছু লোক অবশিষ্ট ছিল। কেউ তো তার ইবাদতখানা হতে নেমে আসলো, ভ্রমণকারী তার ভ্রমণ হতে ফিরে আসলো, কেউ তার গির্জা হতে আসলো এবং তাঁর প্রতি ঈমান আনলো এবং তাকে বিশ্বাস করলো। তখন আল্লাহ্র প্রতি ঈমান আনয়ন কর, তা হলে তিনি তোমাদেরকে তাঁর রহমতের দ্বিগুণ দান করবেন, এক তো হযরত ঈসা (আ) -এর উপর ঈমান আনার দরুন এবং তাওরাত-ইঞ্জিলে বিশ্বাস স্থাপনের দরুন। আর দ্বিতীয়ত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর ঈমান আনা এবং তাঁকে সত্যবাদী জানার কারণে এবং তাঁকে সত্যবাদী বলে বিশ্বাস করার দরুন আল্লাহ্ তা’আলা এক আলো দান করবেন, যার আলোতে তোমরা চলাফেরা করবে, অর্থাৎ তা হলো কুরআন এবং তাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর অনুগমন অনুসরণ, যেন যে আহ্লে কিতাব তোমাদের মত হতে চায়; তারা যেন না বুঝে যে, তারা আল্লাহ্র অনুগ্রহ পাবে না।