HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
হজে প্রদত্ত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ফাতাওয়া
লেখকঃ সাঈদ আব্দুল কাদির বাশানফার
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা আমার থেকে হজের কর্মকাণ্ড শিখে নাও, কারণ হতে পারে আমি এ বছরের পর তোমাদের সাথে সাক্ষাত করতে পারবো না, সে কারণে সাহাবায়ে কিরাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করে যাবতীয় বিষয় জেনে নিতে সচেষ্ট ছিলেন। এ প্রবন্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক প্রদত্ত ফতোয়াসমূহ জমা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে হজের অনেক মাসআলা জানা যাবে।
সকল প্রশংসার হকদার একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন শুধু তার ইবাদত করার জন্য এবং সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক মুহাম্মাদ, তার পরিবার, তার সকল সাথী ও তাদের অনুসারীদের ওপর।
অতঃপর আমরা সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, অর্থাৎ ইবাদত বলতে যা বুঝায় তার হকদার আল্লাহ তা‘আলা, আমরা বিনা মাধ্যমে সকল ইবাদত তাকে সোপর্দ করব, এটাই তাওহীদ। আমরা আরো সাক্ষ্য দেই যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নবী ও রাসূল, অর্থাৎ ইবাদতের অর্থ, সময়, পরিমাণ, পদ্ধতি ও আল্লাহর সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি যাবতীয় বিষয় আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে গ্রহণ করব, এটাই রিসালাতকে মেনে নেওয়া।
আল্লাহ তা‘আলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করার নির্দেশ প্রদান করে বলেন:
﴿أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَۖ فَإِن تَوَلَّوۡاْ فَإِنَّمَا عَلَيۡهِ مَا حُمِّلَ وَعَلَيۡكُم مَّا حُمِّلۡتُمۡۖ وَإِن تُطِيعُوهُ تَهۡتَدُواْ﴾ [ النور : ٥٤ ]
“তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর ও রাসূলের আনুগত্য কর। তারপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে সে শুধু তার ওপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য দায়ী এবং তোমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য তোমরা দায়ী। আর যদি তোমরা তার আনুগত্য কর তবে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হবে”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৫৪]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমার প্রত্যেক উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে তবে অস্বীকারকারী ব্যতীত, সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করেন অস্বীকারকারী কে? তিনি বলেন: যে আমার আনুগত্য করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হবে সেই অস্বীকারকারী”। [সহীহ বুখারী]
হজ ইসলামের পঞ্চম রুকন ও মহান এক ইবাদত। আমরা যদি আল্লাহর জন্য হজ সম্পাদন করি তাওহীদের দাবি পূরণ হবে, আর হজের যাবতীয় আমল যদি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ মোতাবেক আঞ্জাম দেই রিসালতের দাবি পূরণ হবে। বিদায় হজে সাহাবীগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখে হজ পালন করেন, তবুও কারো থেকে ভুল সংঘটিত হয়, কেউ সমস্যার সম্মুখীন হলে তার শরাণাপন্ন হন। তিনি তাদেরকে যে সংশোধনী ও সমাধান দিয়েছেন এখানে তাই আমরা অনুবাদ করে পেশ করছি, যা সংগ্রহ করেছেন সাঈদ ইবন আব্দুল কাদির বাশানফার “আল-মুগনি ফি ফিকহিল হাজ ওয়াল উমরাহ” গ্রন্থের শেষে।
কারো জন্য ফাতওয়ার অনুবাদ যথেষ্ট, কিন্তু এমন অনেক রয়েছে যাদের জন্য অনুবাদ যথেষ্ট নয়, তাই অস্পষ্ট কতক বিষয় স্পষ্ট করার জন্য টিকার সাহায্য গ্রহণ করেছি, যা থেকে পাঠকবর্গ ব্যাপকভাবে উপকৃত হবেন, ইনশাআল্লাহ। প্রশ্নোত্তর আকারে হওয়ায় সহজবোধ্য এবং অনায়াসে স্মৃতিতে ধারণযোগ্য হবে অভিজ্ঞতায় প্রমাণিত।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ফাতওয়ার পর ইমামদের মাযহাব ও মতবাদ জানার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন শুধু বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত কি-না সেটা যাচাই করা। ইমামগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করেই ইমাম হয়েছেন, ইমামগণকে সম্মান করব, কিন্তু তারা ভুলের ঊর্ধ্বে নয়, তাদের বিশুদ্ধটা গ্রহণ করব ও ভুলটা ত্যাগ করব এটাই কুরআন ও সুন্নাহর নীতি ও নির্দেশ। কোনো মাযহাব বা ইমামের কথায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ফাতওয়া ও আদর্শকে ত্যাগ করা সুন্নাহর সাথে বিদ্রোহ করার শামিল, যার পরিণতি ভয়াবহ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿فَلۡيَحۡذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنۡ أَمۡرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمۡ فِتۡنَةٌ أَوۡ يُصِيبَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ﴾ [ النور : ٦٣ ]
“অতএব যারা তার নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌঁছার ভয় করে”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৬৩]
বর্তমান আমাদের বিপর্যয় ও ফেতনার কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধাচরণ করা। অতএব নির্দিষ্ট ইমাম ও মাযহাবকে আদর্শ না মেনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদর্শ মানাই মুক্তির একমাত্র পথ। কারণ, প্রত্যেক ইমাম বা মাযহাব কোনো না কোনো ক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ বিচ্যুত হয়েছে, মুসলিম জাতি সেই ভুল ও বিচ্যুতি আঁকড়ে ধরেই একাধিক দল ও মাযহাবে বিভক্ত। ইমামগণ তাদের ইখলাস ও ইজতিহাদ দ্বারা সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সক্ষম হলে দু’টি সাওয়াব পান, অন্যথায় একটি সাওয়াব লাভ করেন। আমাদের চেষ্টা হবে তাদের সঠিক সিদ্ধান্ত মানা ও আদবের সাথে ভুলটা প্রত্যাখ্যান করা, তবে আমরা সঠিক পথের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবো। আল্লাহ তাওফিক দান করুন।
অনুবাদক
অতঃপর আমরা সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, অর্থাৎ ইবাদত বলতে যা বুঝায় তার হকদার আল্লাহ তা‘আলা, আমরা বিনা মাধ্যমে সকল ইবাদত তাকে সোপর্দ করব, এটাই তাওহীদ। আমরা আরো সাক্ষ্য দেই যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নবী ও রাসূল, অর্থাৎ ইবাদতের অর্থ, সময়, পরিমাণ, পদ্ধতি ও আল্লাহর সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি যাবতীয় বিষয় আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে গ্রহণ করব, এটাই রিসালাতকে মেনে নেওয়া।
আল্লাহ তা‘আলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করার নির্দেশ প্রদান করে বলেন:
﴿أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَۖ فَإِن تَوَلَّوۡاْ فَإِنَّمَا عَلَيۡهِ مَا حُمِّلَ وَعَلَيۡكُم مَّا حُمِّلۡتُمۡۖ وَإِن تُطِيعُوهُ تَهۡتَدُواْ﴾ [ النور : ٥٤ ]
“তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর ও রাসূলের আনুগত্য কর। তারপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে সে শুধু তার ওপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য দায়ী এবং তোমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য তোমরা দায়ী। আর যদি তোমরা তার আনুগত্য কর তবে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হবে”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৫৪]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমার প্রত্যেক উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে তবে অস্বীকারকারী ব্যতীত, সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করেন অস্বীকারকারী কে? তিনি বলেন: যে আমার আনুগত্য করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হবে সেই অস্বীকারকারী”। [সহীহ বুখারী]
হজ ইসলামের পঞ্চম রুকন ও মহান এক ইবাদত। আমরা যদি আল্লাহর জন্য হজ সম্পাদন করি তাওহীদের দাবি পূরণ হবে, আর হজের যাবতীয় আমল যদি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ মোতাবেক আঞ্জাম দেই রিসালতের দাবি পূরণ হবে। বিদায় হজে সাহাবীগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখে হজ পালন করেন, তবুও কারো থেকে ভুল সংঘটিত হয়, কেউ সমস্যার সম্মুখীন হলে তার শরাণাপন্ন হন। তিনি তাদেরকে যে সংশোধনী ও সমাধান দিয়েছেন এখানে তাই আমরা অনুবাদ করে পেশ করছি, যা সংগ্রহ করেছেন সাঈদ ইবন আব্দুল কাদির বাশানফার “আল-মুগনি ফি ফিকহিল হাজ ওয়াল উমরাহ” গ্রন্থের শেষে।
কারো জন্য ফাতওয়ার অনুবাদ যথেষ্ট, কিন্তু এমন অনেক রয়েছে যাদের জন্য অনুবাদ যথেষ্ট নয়, তাই অস্পষ্ট কতক বিষয় স্পষ্ট করার জন্য টিকার সাহায্য গ্রহণ করেছি, যা থেকে পাঠকবর্গ ব্যাপকভাবে উপকৃত হবেন, ইনশাআল্লাহ। প্রশ্নোত্তর আকারে হওয়ায় সহজবোধ্য এবং অনায়াসে স্মৃতিতে ধারণযোগ্য হবে অভিজ্ঞতায় প্রমাণিত।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ফাতওয়ার পর ইমামদের মাযহাব ও মতবাদ জানার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন শুধু বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত কি-না সেটা যাচাই করা। ইমামগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করেই ইমাম হয়েছেন, ইমামগণকে সম্মান করব, কিন্তু তারা ভুলের ঊর্ধ্বে নয়, তাদের বিশুদ্ধটা গ্রহণ করব ও ভুলটা ত্যাগ করব এটাই কুরআন ও সুন্নাহর নীতি ও নির্দেশ। কোনো মাযহাব বা ইমামের কথায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ফাতওয়া ও আদর্শকে ত্যাগ করা সুন্নাহর সাথে বিদ্রোহ করার শামিল, যার পরিণতি ভয়াবহ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿فَلۡيَحۡذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنۡ أَمۡرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمۡ فِتۡنَةٌ أَوۡ يُصِيبَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ﴾ [ النور : ٦٣ ]
“অতএব যারা তার নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌঁছার ভয় করে”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৬৩]
বর্তমান আমাদের বিপর্যয় ও ফেতনার কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধাচরণ করা। অতএব নির্দিষ্ট ইমাম ও মাযহাবকে আদর্শ না মেনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদর্শ মানাই মুক্তির একমাত্র পথ। কারণ, প্রত্যেক ইমাম বা মাযহাব কোনো না কোনো ক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ বিচ্যুত হয়েছে, মুসলিম জাতি সেই ভুল ও বিচ্যুতি আঁকড়ে ধরেই একাধিক দল ও মাযহাবে বিভক্ত। ইমামগণ তাদের ইখলাস ও ইজতিহাদ দ্বারা সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সক্ষম হলে দু’টি সাওয়াব পান, অন্যথায় একটি সাওয়াব লাভ করেন। আমাদের চেষ্টা হবে তাদের সঠিক সিদ্ধান্ত মানা ও আদবের সাথে ভুলটা প্রত্যাখ্যান করা, তবে আমরা সঠিক পথের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবো। আল্লাহ তাওফিক দান করুন।
অনুবাদক
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো কোন আমল সবচেয়ে উত্তম? তিনি বলেন:
«إِيمَانٌ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ» قِيلَ : ثُمَّ مَاذَا؟ قَالَ : «جِهَادٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ» قِيلَ : ثُمَّ مَاذَا؟ قَالَ : «حَجٌّ مَبْرُورٌ» .
“আল্লাহ ও তার রাসূলের ওপর ঈমান”। বলা হলো অতঃপর কী? তিনি বললেন: “আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা”। বলা হলো অতঃপর কি? তিনি বললেন: “মাবরুর হজ” [সহীহ বুখারী হাদীস নং ১৫১৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৬।]। [আহলে ইলমগণ মাবরুর হজের একাধিক অর্থ বর্ণনা করেছেন, সকল অর্থের সারমর্ম হচ্ছে: মাবরুর বলা হয় এমন হজকে, যার সকল বিধান যথাযথ পালন করা হয় এবং যে ইখলাস ও ইহসানের সাথে আদায় করার কথা সেভাবে আদায় করা হয়। কেউ বলেছেন: যে হজে কোনো পাপ সংগঠিত হয় না তাই মাবরুর হজ। কেউ বলেছেন: মাবরুর অর্থ খালিস, যে হজ খালিস আল্লাহর জন্য করা হয় তাই মাবরুর।কেউ বলেছেন: মাবরুর অর্থ মাকবুল অর্থাৎ কবুল হজ। মাকবুল হজের কতক আলামত: ১. হজের পর ভালো কাজে অধিক নিবেদিত হওয়া। ২. ইবাদতের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া। ৩. অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থায় ফেরা। ৪. হজ থেকে ফিরে পাপে লিপ্ত না হওয়া।হাসান বসরি রহ. বলেন: হাজীর দুনিয়া ত্যাগী ও আখিরাত মুখী হয়ে প্রত্যাবর্তন করা হজ কবুল হওয়ার আলামত। -অনুবাদক।]
«إِيمَانٌ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ» قِيلَ : ثُمَّ مَاذَا؟ قَالَ : «جِهَادٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ» قِيلَ : ثُمَّ مَاذَا؟ قَالَ : «حَجٌّ مَبْرُورٌ» .
“আল্লাহ ও তার রাসূলের ওপর ঈমান”। বলা হলো অতঃপর কী? তিনি বললেন: “আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা”। বলা হলো অতঃপর কি? তিনি বললেন: “মাবরুর হজ” [সহীহ বুখারী হাদীস নং ১৫১৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৬।]। [আহলে ইলমগণ মাবরুর হজের একাধিক অর্থ বর্ণনা করেছেন, সকল অর্থের সারমর্ম হচ্ছে: মাবরুর বলা হয় এমন হজকে, যার সকল বিধান যথাযথ পালন করা হয় এবং যে ইখলাস ও ইহসানের সাথে আদায় করার কথা সেভাবে আদায় করা হয়। কেউ বলেছেন: যে হজে কোনো পাপ সংগঠিত হয় না তাই মাবরুর হজ। কেউ বলেছেন: মাবরুর অর্থ খালিস, যে হজ খালিস আল্লাহর জন্য করা হয় তাই মাবরুর।কেউ বলেছেন: মাবরুর অর্থ মাকবুল অর্থাৎ কবুল হজ। মাকবুল হজের কতক আলামত: ১. হজের পর ভালো কাজে অধিক নিবেদিত হওয়া। ২. ইবাদতের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া। ৩. অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থায় ফেরা। ৪. হজ থেকে ফিরে পাপে লিপ্ত না হওয়া।হাসান বসরি রহ. বলেন: হাজীর দুনিয়া ত্যাগী ও আখিরাত মুখী হয়ে প্রত্যাবর্তন করা হজ কবুল হওয়ার আলামত। -অনুবাদক।]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন:
يَا رَسُولَ اللَّهِ، نَرَى الْجِهَادَ أَفْضَلَ الْعَمَلِ، أَفَلَا نُجَاهِدُ؟، قَالَ : «لَا، لَكنَّ أَفْضَلَ الْجِهَادِ حَجٌّ مَبْرُورٌ» .
“হে আল্লাহর রাসূল, আমরা তো জিহাদকে সর্বোত্তম আমল জ্ঞান করি, আমরা কি জিহাদ করবো না? তিনি বললেন: না, তোমাদের জন্য উত্তম জিহাদ মাবরুর হজ”। [সহীহ বুখারী হাদীস নং ১৫২০।]
يَا رَسُولَ اللَّهِ، نَرَى الْجِهَادَ أَفْضَلَ الْعَمَلِ، أَفَلَا نُجَاهِدُ؟، قَالَ : «لَا، لَكنَّ أَفْضَلَ الْجِهَادِ حَجٌّ مَبْرُورٌ» .
“হে আল্লাহর রাসূল, আমরা তো জিহাদকে সর্বোত্তম আমল জ্ঞান করি, আমরা কি জিহাদ করবো না? তিনি বললেন: না, তোমাদের জন্য উত্তম জিহাদ মাবরুর হজ”। [সহীহ বুখারী হাদীস নং ১৫২০।]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করি:
«يَا رَسُولَ اللَّهِ، عَلَى النِّسَاءِ جِهَادٌ ؟ قَالَ : «نَعَمْ، عَلَيْهِنَّ جِهَادٌ لَا قِتَالَ فِيهِ، الْحَجُّ وَالْعُمْرَةُ» .
“হে আল্লাহর রাসূল, নারীদের ওপর কি জিহাদ আছে? তিনি বললেন: হ্যাঁ, তাদের ওপর জিহাদ আছে, তাতে মারামারি নেই, হজ ও উমরা” [আহমদ, হাদীস নং ২৩৯৪১; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৯০১; সহীহ ইবন খুযাইমাহ, হাদীস নং ২৮৭৭।]। [শিক্ষণীয় বিষয়: ২ ও ৩ নং ফাতওয়ার বিষয় এক, দু’টি প্রশ্নই করেছেন আম্মাজান আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা। ফাতওয়া দু’টি থেকে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়:ক. জিহাদের মর্যাদা, সাওয়াব ও ফযীলত নারী-পুরুষ সবার নিকট প্রসিদ্ধ ছিল।খ. ইসলামের প্রথম যুগে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সর্বোত্তম আমল ও ফযীলত লাভ করার ক্ষেত্রে আগ্রহী ছিল।গ. ইসলাম তার অনুসারীদের উপর সাধ্যাতীত দায়িত্ব অর্পণ করে না, নারীদের থেকে জিহাদ রহিত করা তার এক দৃষ্টান্ত।ঘ. মুসলিমরা বীরের জাতি। জান্নাতের জন্য তাদের নারীরাও নিজেকে উৎসর্গ করতে প্রস্তুত।ঙ. মাবরুর হজ ফযীলতপূর্ণ ও নারীদের জন্য জিহাদ সমতুল্য। -অনুবাদক।]
«يَا رَسُولَ اللَّهِ، عَلَى النِّسَاءِ جِهَادٌ ؟ قَالَ : «نَعَمْ، عَلَيْهِنَّ جِهَادٌ لَا قِتَالَ فِيهِ، الْحَجُّ وَالْعُمْرَةُ» .
“হে আল্লাহর রাসূল, নারীদের ওপর কি জিহাদ আছে? তিনি বললেন: হ্যাঁ, তাদের ওপর জিহাদ আছে, তাতে মারামারি নেই, হজ ও উমরা” [আহমদ, হাদীস নং ২৩৯৪১; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৯০১; সহীহ ইবন খুযাইমাহ, হাদীস নং ২৮৭৭।]। [শিক্ষণীয় বিষয়: ২ ও ৩ নং ফাতওয়ার বিষয় এক, দু’টি প্রশ্নই করেছেন আম্মাজান আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা। ফাতওয়া দু’টি থেকে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়:ক. জিহাদের মর্যাদা, সাওয়াব ও ফযীলত নারী-পুরুষ সবার নিকট প্রসিদ্ধ ছিল।খ. ইসলামের প্রথম যুগে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সর্বোত্তম আমল ও ফযীলত লাভ করার ক্ষেত্রে আগ্রহী ছিল।গ. ইসলাম তার অনুসারীদের উপর সাধ্যাতীত দায়িত্ব অর্পণ করে না, নারীদের থেকে জিহাদ রহিত করা তার এক দৃষ্টান্ত।ঘ. মুসলিমরা বীরের জাতি। জান্নাতের জন্য তাদের নারীরাও নিজেকে উৎসর্গ করতে প্রস্তুত।ঙ. মাবরুর হজ ফযীলতপূর্ণ ও নারীদের জন্য জিহাদ সমতুল্য। -অনুবাদক।]
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করেন, কোন হজ উত্তম? তিনি বলেন:
«الْعَجُّ وَالثَّجُّ»
“আজ্জু ও সাজ্জু”। তিরমিযী বলেনে হাদীসটি গরীব। আজ্জু অর্থ উচ্চস্বরে তালবিয়াহ পাঠ করা, আর সাজ্জু অর্থ কুরবানি করা। [‘আজ্জু’ এর আভিধানিক অর্থ উচ্চস্বরে আওয়াজ করা। হজের ক্ষেত্রে আজ্জু অর্থ উচ্চস্বরে তালবিয়াহ পাঠ করা। কতক আভিধানিক তালবিয়ার সাথে দো‘আ ও ফরিয়াদকে যুক্ত করেছেন, অর্থাৎ আজ্জু অর্থ হজে উচ্চস্বরে তালবিয়া, দুআ ও আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করা। আর ‘সাজ্জু’ এর আভিধানিক অর্থ প্রবাহিত করা। হজের ক্ষেত্রে সাজ্জু অর্থ হাদি ও কুরবানির পশুর রক্ত প্রবাহিত করা। এ দু’টি ইবাদত হজের প্রাণ। আজ্জু ইবাদত আঞ্জাম দিতে হয় মুখ দিয়ে আর সাজ্জু ইবাদত আঞ্জাম দিতে হয় তামাত্তু ও কিরান হজকারীর ছুরি দিয়ে। -অনুবাদক।]
«الْعَجُّ وَالثَّجُّ»
“আজ্জু ও সাজ্জু”। তিরমিযী বলেনে হাদীসটি গরীব। আজ্জু অর্থ উচ্চস্বরে তালবিয়াহ পাঠ করা, আর সাজ্জু অর্থ কুরবানি করা। [‘আজ্জু’ এর আভিধানিক অর্থ উচ্চস্বরে আওয়াজ করা। হজের ক্ষেত্রে আজ্জু অর্থ উচ্চস্বরে তালবিয়াহ পাঠ করা। কতক আভিধানিক তালবিয়ার সাথে দো‘আ ও ফরিয়াদকে যুক্ত করেছেন, অর্থাৎ আজ্জু অর্থ হজে উচ্চস্বরে তালবিয়া, দুআ ও আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করা। আর ‘সাজ্জু’ এর আভিধানিক অর্থ প্রবাহিত করা। হজের ক্ষেত্রে সাজ্জু অর্থ হাদি ও কুরবানির পশুর রক্ত প্রবাহিত করা। এ দু’টি ইবাদত হজের প্রাণ। আজ্জু ইবাদত আঞ্জাম দিতে হয় মুখ দিয়ে আর সাজ্জু ইবাদত আঞ্জাম দিতে হয় তামাত্তু ও কিরান হজকারীর ছুরি দিয়ে। -অনুবাদক।]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো, কিসে হজ ফরয করে? তিনি বললেন: “সম্বল ও সওয়ারী”। [এ প্রশ্নের উৎস কুরআনুল কারিমের একটি আয়াত, যেখানে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: “মানুষের উপর আল্লাহর জন্য কাবার হজ্জ করা ফরয, যে সেখান পৌঁছতে সক্ষম”। আয়াতে সক্ষমতা বলতে কি বুঝায় সেটা জানার জন্য জনৈক সাহাবী প্রশ্ন করেছেন। সক্ষমতার ব্যাখ্যায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৌলিক দু’টি বিষয় উল্লেখ করেছেন: ১. সম্বল তথা খাবার, পরিধেয় বস্ত্র ও থাকার ব্যয়ভারের মালিকানা। ২. বায়তুল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছার যানবাহন বা তার ভাড়ার মালিক হওয়া। এ দু’টি সক্ষমতা মানুষের উপর হজ ফরয করে।আহল ইলমগণ সম্বল ও সওয়ারীর ব্যাখ্যাস্বরূপ আরো কিছু শর্ত যোগ করেছেন, যেমন সাবালক হওয়া, শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হওয়া, ব্যক্তির ওপর যাদের ভরণপোষণ ওয়াজিব হজ থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত তাদের ভরণপোষণ দিতে সক্ষম হওয়া এবং ফিরে এসে অবশিষ্ট অর্থ ও সম্পত্তি দিয়ে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করার ক্ষমতা রাখা যেরূপ হজ করার পূর্বে ছিল। আর নারীর ক্ষেত্রে আরও একটি অতিরিক্ত শর্ত হচ্ছে, স্বামী বা অন্য কোনো মাহরাম সাথে থাকা জরুরি, যিনি তার সাথে হজ বা উমরার সফর সঙ্গী হবেন। এসব শর্তও দলীল দ্বারা প্রমাণিত। -অনুবাদক।] হাদীসটি ইমাম তিরমিযী ইবন উমার সূত্রে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন হাসান।
জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন: হে আল্লাহর রাসূল, আমার স্ত্রী হজের উদ্দেশ্যে বের হয়েছে, এ দিকে আমার নামও অমুক অমুক যুদ্ধে লিখা হয়েছে? তিনি বললেন: “যাও, তোমার স্ত্রীর সাথে হজ কর”। [পুরো হাদীস নিম্নরূপ, ইবন আব্বাস নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেন: «لا يخلون رجل بامرأة، ولا تسافرن امرأة وإلا معها محرم»، فقام رجل فقال : يا رسول الله اكتتبت في غزوة كذا وكذا، وخرجت امرأتي حاجة؟ قال : «اذهب فحج مع امرأتك» . “কোনো পুরুষ নারীর সাথে একাকীত্ব অবলম্বন করবে না এবং কোনো নারী মাহরাম ব্যতীত সফর করবে না, তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল: হে আল্লাহর রাসূল, আমার নাম অমুক অমুক যুদ্ধে লিখা হয়েছে, এ দিকে আমার স্ত্রীও হজের উদ্দেশ্যে বের হয়েছে? তিনি বললেন: যাও, তোমার স্ত্রীর সাথে হজ কর”। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)শাইখ ইবন বায রহ. বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিষেধাজ্ঞা “নারী কখনো মাহরাম ব্যতীত সফর করবে না” হজ ও গায়রে হজ সব সফরকে শামিল করে। অতএব সফরসঙ্গী পুরুষ মাহরাম ব্যতীত নারীর উপর হজ ফরয হবে না। কতক আহলে-ইলম বলেছেন: নারী নারীদের সাথে পুরুষ মাহরাম ব্যতীত হজ করতে পারবে যদি তাদের সাথে আমানতদার ব্যক্তিবর্গ থাকেন। তাদের এ কথার সপক্ষে কোনো দলিল নেই, বরং উল্লেখিত হাদিস তাদের বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করে”। মাজমু ফাতাওয়া ইবন বায: (১৬/৩৮০) -অনুবাদক।] ইবন আব্বাস থেকে বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করেন।
জনৈক নারী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন, আপনার সাথে হজ করার সমতুল্য কি? তিনি বললেন: “রমযানে ওমরা করা” [আহমদ।]। [হজের নির্দিষ্ট মাস ও দিন রয়েছে কিন্তু ওমরার তা নেই। ওমরা সারা বছর যখন ইচ্ছা করা যায়, তবে রমযান মাসের ওমরায় অনেক ফজিলত ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা অন্যান্য মাসের ওমরায় নেই। আবু মাকাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত মুসনাদে আহমদ ও ইবনে মাজার হাদিস থেকে জানি রমযানের ওমরা হজের সমপরিমাণ। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে আরো ব্যাখ্যাসহ হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক আনসারী নারীকে বলেন: “কিসে তোমাকে বাঁধা দিয়েছে আমাদের সাথে হজ করনি?” সে বলল: আমাদের দু’টি উট ছিল, একটির উপর অমুকের বাবা ও তার ছেলে যাত্রা করেছে। অপরটি আমাদের জন্য রেখে গেছে, আমরা তা দিয়ে কৃষি জমি সেচ করতাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: «فإذا كان رمضان اعتمري فيه، فإن عمرةً في رمضان حجة» .“যখন রমযান আসবে ওমরা কর, কারণ রমযানের ওমরা হজ”। নবীর সাথে হজ করতে না পারা নারীকে তিনি রমযানে ওমরা করার নির্দেশ দিচ্ছেন যেন হজের বরাবর সাওয়াব হাসিল হয়। এতে আশ্চর্যের কিছু নেই, কারণ রমযান মাস কল্যাণের মাস, তাই রমযানের ওমরা হজের সমান হওয়া অস্বাভাবিক নয়, তবে তার দ্বারা হজের ফরজ আদায় হবে না। এ জাতীয় ফজিলতের উদাহরণ, যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: «من قرأ " قل هو الله أحد " فقد قرأ ثلث القرآن» . متفق عليه .“যে সূরা ইখলাস পাঠ করল, সে কুরআনুল কারীমের এক তৃতীয়াংশ পাঠ করল”। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম) অনুরূপ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: «صلاة في مسجدي -أي المسجد النبوي- أفضل من ألف صلاة فيما سواه إلا المسجد الحرام، وصلاة في المسجد الحرام أفضل من مئة ألف صلاة فيما سواه» .“আমার মসজিদে এক সালাত অন্যান্য মসজিদে এক হাজার সালাত থেকে উত্তম মসজিদে হারাম ব্যতীত, আর মসজিদে হারামে এক সালাত অন্যান্য মসজিদে এক শো হাজার সালাত থেকে উত্তম”। (আহমদ ও ইবন মাজাহ)।এসব ফযীলতের অর্থ এটা নয় যে, নবীর মসজিদে এক সালাত এক হাজার সালাতের মোকাবিলায় যথেষ্ট, অতএব পরবর্তী এক হাজার সালাত না পড়লেও হবে, এরূপ অর্থ কেউ বুঝে না। রমযানের ওমরা হজের বরাবর অর্থ সাওয়াবের ক্ষেত্রে বরাবর, সুতরাং রমযানের ওমরা ফরয হজের মোকাবেলায় যথেষ্ট নয়। এ জাতীয় হাদীস দ্বারা উৎসাহ প্রদান ও আল্লাহর অনুগ্রহের পরিমাণ বুঝানো উদ্দেশ্য। হজ ওমরা থেকে উত্তম সন্দেহ নেই, রমযানের ওমরায় হজের সমপরিমাণ সাওয়াব আছে, কিন্তু হজের যে বৈশিষ্ট্য, ফযীলত ও মর্যাদা রয়েছে যেমন আরাফা ও রমির দো‘আ করা, নহর করা, ইত্যাদি ওমরাতে কোথায়? -অনুবাদক।]
উম্মে মা‘কাল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমার ওপর হজ ফরয। আবু মা‘কালের একটি উট আছে। তখন আবু মা‘কাল বললেন, সে সত্য বলেছে, আমি তা সদকা করে আল্লাহর রাস্তায় দিয়ে দিয়েছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু মা‘কালকে বললেন: “তুমি উটটি তাকে দিয়ে দাও যেন সে তার ওপর হজ করতে পারে, কারণ সেটাও আল্লাহর রাস্তায়”। আবু মা‘কাল তাকে উট দিয়ে দেন। সে আবার বলল: হে আল্লাহর রাসূল, আমি নারী, আমার বয়স বেড়ে গেছে এবং আমি অসুস্থ হয়ে পড়ছি। এমন কোনো আমল আছে যা হজের মোকাবেলায় হবে? তিনি বললেন: “রমযানের ওমরা হজের মোকাবেলায় যথেষ্ট”। [আবু দাউদ। হাদীসটির প্রথম অংশ এবং শেষাংশ বিশুদ্ধ। আমি একজন বৃদ্ধ... এ অংশটুকু দুর্বল। [সম্পাদক]]
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: জনৈক নারী তার এক বাচ্চাকে উঁচিয়ে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, তার কি হজ আছে? তিনি বলেন:
«نَعَمْ وَلَكِ أَجْرٌ » .
“হ্যাঁ, তবে সাওয়াব তোমার”। [ছোট বাচ্চাদের হজ সহীহ, তবে ফরয হজের পক্ষে যথেষ্ট হবে না, বরং নফল হবে, সাবালক হওয়ার পর সামর্থ্যের মালিক হলে পুনরায় হজ করা জরুরি।শাইখ ইবন বায রহ. এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন: “হজের ক্ষেত্রে বাচ্চারাও বড়দের মত, বড়রা বাচ্চাদের হয়ে ইহরাম ও অন্যান্য কার্যাদি সম্পন্ন করবে যদি বাচ্চাদের বয়স সাত বছরের কম হয়। আর যদি সাত বছরের বেশী হয় তাদের ইহরাম শিখিয়ে দিবে, যেমন ছেলে হলে বলবে: সেলাই করা কাপড় খুলে ফেল, চাদর ও (সেলাই বিহীন) লুঙ্গি পর ও মাথা খোলা রাখ। বাচ্চা যদি সাত বছরের কম হয় একটি কাপড় পেঁচিয়ে মাথা খোলা রাখবে, জামা ও পায়জামা খুলে ফেলবে, কাপড় পেঁচিয়ে দিবে যেন সতর প্রকাশ না পায়। বাচ্চা বড় হলে বলবে, এটা কর ওটা কর ইত্যাদি। মেয়েদের ইহরাম তাদের চেহারায় শরীরে নয়, সে তার ইচ্ছামত স্বাভাবিক পোশাক পরিধান করবে”। ফতোয়া নুরুন আলাদদারব।বাচ্চা পাবে হজের সাওয়াব, মা-বাবা পাবে সাহায্য করার সাওয়াব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ “যে কোনো ভালো কাজ দেখাল তার জন্য রয়েছে কর্তার সমান সাওয়াব”। মুসলিম, হাদীস নং ৩৫০৯। -অনুবাদক।] ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
«نَعَمْ وَلَكِ أَجْرٌ » .
“হ্যাঁ, তবে সাওয়াব তোমার”। [ছোট বাচ্চাদের হজ সহীহ, তবে ফরয হজের পক্ষে যথেষ্ট হবে না, বরং নফল হবে, সাবালক হওয়ার পর সামর্থ্যের মালিক হলে পুনরায় হজ করা জরুরি।শাইখ ইবন বায রহ. এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন: “হজের ক্ষেত্রে বাচ্চারাও বড়দের মত, বড়রা বাচ্চাদের হয়ে ইহরাম ও অন্যান্য কার্যাদি সম্পন্ন করবে যদি বাচ্চাদের বয়স সাত বছরের কম হয়। আর যদি সাত বছরের বেশী হয় তাদের ইহরাম শিখিয়ে দিবে, যেমন ছেলে হলে বলবে: সেলাই করা কাপড় খুলে ফেল, চাদর ও (সেলাই বিহীন) লুঙ্গি পর ও মাথা খোলা রাখ। বাচ্চা যদি সাত বছরের কম হয় একটি কাপড় পেঁচিয়ে মাথা খোলা রাখবে, জামা ও পায়জামা খুলে ফেলবে, কাপড় পেঁচিয়ে দিবে যেন সতর প্রকাশ না পায়। বাচ্চা বড় হলে বলবে, এটা কর ওটা কর ইত্যাদি। মেয়েদের ইহরাম তাদের চেহারায় শরীরে নয়, সে তার ইচ্ছামত স্বাভাবিক পোশাক পরিধান করবে”। ফতোয়া নুরুন আলাদদারব।বাচ্চা পাবে হজের সাওয়াব, মা-বাবা পাবে সাহায্য করার সাওয়াব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ “যে কোনো ভালো কাজ দেখাল তার জন্য রয়েছে কর্তার সমান সাওয়াব”। মুসলিম, হাদীস নং ৩৫০৯। -অনুবাদক।] ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা খুতবায় বলেন: “হে লোক সকল, আল্লাহ তোমাদের ওপর হজ ফরয করেছেন, অতএব তোমরা হজ কর”। জনৈক ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল প্রত্যেক বছর? তিনি বললেন:
«لو قلت : نعم لوجبت ! ولما استطعتم ! ثم قال : ذروني ما تركتكم» .
“আমি যদি বলি হ্যাঁ, অবশ্যই ওয়াজিব হয়ে যাবে, কিন্তু তোমরা আদায়ে সক্ষম হবে না”। অতঃপর তিনি বলেন: “আমি যে ব্যাপারে তোমাদেরকে ছাড় দিয়ে রাখি সে ব্যাপারে তোমরা আমাকে চুপ থাকতে দাও...”। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
«لو قلت : نعم لوجبت ! ولما استطعتم ! ثم قال : ذروني ما تركتكم» .
“আমি যদি বলি হ্যাঁ, অবশ্যই ওয়াজিব হয়ে যাবে, কিন্তু তোমরা আদায়ে সক্ষম হবে না”। অতঃপর তিনি বলেন: “আমি যে ব্যাপারে তোমাদেরকে ছাড় দিয়ে রাখি সে ব্যাপারে তোমরা আমাকে চুপ থাকতে দাও...”। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খাসআম গোত্রীয় জনৈক নারী জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূল, বান্দার ওপর আল্লাহর ফরয হজ আমার বাবাকে বার্ধক্য অবস্থায় পেয়েছে, তিনি বাহনের উপর বসতে পারেন না, আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ করব? তিনি বললেন: “হ্যাঁ”। ইবন আব্বাস বলেন, এটা ছিল বিদায় হজের ঘটনা। [সহীহ বুখারী ও মুসলিম।]
জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন, আমার বোন মান্নত করেছিল হজ করবে, কিন্তু সে মারা গেছে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “যদি তার ওপর ঋণ থাকত তুমি কি পরিশোধ করতে”? সে বলল: হ্যাঁ, তিনি বললেন: “আল্লাহর ঋণও আদায় কর, তিনি পাওনার অধিক হকদার”। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বুখারী ও মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
জুহাইনাহ গোত্রীয় জনৈক নারী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন, আমার মা হজ করার মান্নত করেছেন, কিন্তু তিনি হজ করার পূর্বে মারা গেছেন, তার পক্ষ থেকে আমি কি হজ করব? তিনি বললেন: হ্যাঁ, তার পক্ষ থেকে হজ কর। তুমি কি ভেবেছ যদি তোমার মায়ের ওপর ঋণ থাকত তুমি পরিশোধ করতে? আল্লাহর হকও পরিশোধ কর, তিনি পাওনার অধিক হকদার”। ইবন আব্বাস থেকে বুখারী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
জনৈক নারী নিজের বাবা সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন, বাবা মারা গেছে কিন্তু হজ করে নি? তিনি বললেন: “তোমার বাবার পক্ষ থেকে হজ কর”। [১৫-২০নং ফতোয়া থেকে স্পষ্ট হল, নারীর পক্ষ থেকে নারী, অনুরূপ বাবা, ভাই, স্বামী, মামা, খালু এবং যাকে নারী আল্লাহর জন্য মহব্বত করে তার পক্ষ থেকে সে হজ করতে পারবে, যদি তাদের কেউ মারা যায়, অথবা হজ করতে অক্ষম হয়। অনুরূপ পুরুষরাও পুরুষ ও নারীর পক্ষ থেকে হজ করতে পারবে কোনো বাধা নেই। -অনুবাদক।] ইবন আব্বাস থেকে নাসাঈ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ব্যক্তিকে বলতে শুনেন, শুবরুমার পক্ষ থেকে লাব্বাইক। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেন, “তোমার পক্ষ থেকে হজ করেছো?” সে বলল: না, তিনি বললেন: “আগে তোমার পক্ষ থেকে হজ কর, অতঃপর শুবরুমার পক্ষ থেকে হজ কর” [আরনাউত: জামেউল উসূল: (৩/৪২২) গ্রন্থে এবং আলবানি মিশকাতের (২/৭৭৬) টিকায় হাদীসটি সহীহ বলেছেন। অনুবাদক।]। [আবু দাউদ ও ইবন মাজাহ।]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাহাবী উকবাহ জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমার বোন মান্নত করেছে খালি পায়ে হেঁটে বায়তুল্লাহ যাবে? তিনি বলেন: “সে যেন হেঁটে ও বাহনে চড়ে বায়তুল্লাহ যায়” [সহীহ বুখারী ও মুসলিম।]। [কতক আহলে-ইলম বলেছেন: কারো মান্নতে ইবাদত ও বৈধকর্ম দু’টি বিষয় থাকলে ইবাদত আঞ্জাম দেওয়াই যথেষ্ট, বৈধকর্ম করা জরুরি নয়। যেমন, এখানে বায়তুল্লাহ গমন ও হাঁটার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, খালি পায়ে হাঁটার অনুমতি দেওয়া হয় নি। কারণ, তা ইবাদত নয়। অতএব, ত্যাগ করার জন্য কাফফারাও নেই। -অনুবাদক।]
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জনৈক নারী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়, যে খালি পায়ে ও খালি মাথায় হেঁটে বায়তুল্লাহ গমন করার মান্নত করেছে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নির্দেশ দেন: “সওয়ার হও, মাথায় কাপড় পরিধান কর এবং তিন দিন সিয়াম রাখ” [আবু দাউদ ও তিরমিযী। [দুর্বল সনদ]]। [হাফেয ইবন হাজার বলেন: উকবার বোন হাঁটতে সক্ষম ছিল, তাই তাকে তিনি কাফফারার কথা বলেন নি, কিন্তু আনাসের হাদীসে উল্লিখিত নারী হাঁটতে সক্ষম নয়, তাই তাকে বাহনে চড়ার নির্দেশ দেন ও কাফফারা আদায় করতে বলেন। কারণ, সে হাঁটার (ইবাদতের) মান্নত করেছে যা তার পক্ষে সম্ভব নয়, অতএব তার বিনিময়ে সে কাফফারা দিবে। -অনুবাদক।তবে শাইখ আলবানী বলেন, হাদীসটির সনদ দুর্বল। [সম্পাদক]]
জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমার বোন হেঁটে বায়তুল্লাহ গমন করার মান্নত করেছে অথবা বলেছেন: হেঁটে হজ করার মান্নত করেছে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “তোমার বোনের কষ্ট দিয়ে আল্লাহ কিছুই করবেন না, সে যেন সওয়ার হয়ে হজ করে এবং তার কসমের কাফফারা দেয়”। ইবনে আব্বাস থেকে আবু দাউদ হাদীসটি বর্ণনা করেন [তবে শাইখ আলবানী বলেন, তার সনদ দুর্বল। [সম্পাদক]]।
জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন, আমি হজের সফরে (বাহন) ভাড়া দেই, মানুষেরা বলে তোমার হজ নেই? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন কোনো উত্তর দিলেন না, অতঃপর নাযিল হলো:
﴿لَيۡسَ عَلَيۡكُمۡ جُنَاحٌ أَن تَبۡتَغُواْ فَضۡلٗا مِّن رَّبِّكُمۡۚ ١٩٨ ﴾ [ البقرة : ١٩٨ ]
“তোমাদের ওপর সমস্যা নেই যে, তোমরা তোমাদের রবের অনুগ্রহ অনুসন্ধান করবে”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৯৮] অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকট লোক পাঠিয়ে আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন এবং বললেন তোমার হজ আছে” [আবু দাউদ।]। [হজের সফরে ব্যবসা করার সুযোগ আছে যেমন যে চালক মক্কা, মদীনা, জেদ্দা, মিনা, আরাফাহ ও মুজদালিফার রাস্তায় ভাড়া খাটে এবং নিজেও হজের কার্যক্রম যথাযথ আঞ্জাম দেয় তার হজ শুদ্ধ। এটাই কুরআনুল কারীমের আয়াতের ব্যাখ্যা। অনুবাদক।]
﴿لَيۡسَ عَلَيۡكُمۡ جُنَاحٌ أَن تَبۡتَغُواْ فَضۡلٗا مِّن رَّبِّكُمۡۚ ١٩٨ ﴾ [ البقرة : ١٩٨ ]
“তোমাদের ওপর সমস্যা নেই যে, তোমরা তোমাদের রবের অনুগ্রহ অনুসন্ধান করবে”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৯৮] অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকট লোক পাঠিয়ে আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন এবং বললেন তোমার হজ আছে” [আবু দাউদ।]। [হজের সফরে ব্যবসা করার সুযোগ আছে যেমন যে চালক মক্কা, মদীনা, জেদ্দা, মিনা, আরাফাহ ও মুজদালিফার রাস্তায় ভাড়া খাটে এবং নিজেও হজের কার্যক্রম যথাযথ আঞ্জাম দেয় তার হজ শুদ্ধ। এটাই কুরআনুল কারীমের আয়াতের ব্যাখ্যা। অনুবাদক।]
জনৈক সাহাবী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূল আমরা কোত্থেকে ইহরাম বাঁধবো? তিনি বলেন: মদিনাবাসীরা যুল হুলাইফা থেকে, শামবাসীরা জুহফাহ থেকে, নাজদবাসীরা কারন থেকে ও ইয়ামানবাসীরা ইয়ালামলাম থেকে”। [মীকাতসমূহের পরিচিতি: যুল হুলাইফা: মক্কা থেকে ৪২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বর্তমান আবইয়ারে আলী নামে জায়গাটি পরিচিত। মদীনাবাসী ও এই পথ দিয়ে যারা মক্কায় আসেন যুল হুলাইফা তাদের মীকাত। জুহফাহ: এই স্থানটি বর্তমান পরিত্যক্ত হওয়ায় রাবেগ থেকে ইহরাম বাঁধা হয়। মক্কা থেকে রাবেগের দূরত্ব ১৮৬ কিলোমিটার। সৌদি আরবের উত্তরাঞ্চলীয় এলাকার লোকজন, পশ্চিম ও উত্তর আফ্রিকার লোকজন, লেবানন, সিরিয়া, জর্ডান ও ফিলিস্তিনিরা এই জায়গা থেকে ইহরাম বাঁধেন। কারনুল মানাযিল: এই জায়গার দ্বিতীয় নাম ‘আসসাইলুল কাবির’। মক্কা থেকে এর দূরত্ব ৭৮ কিলোমিটার। ইরাক, ইরান ও অন্যান্য উপসাগরীয় অঞ্চলের লোকদের মীকাত এই কারনুল মানাযিল। ইয়ালামলাম: মক্কা থেকে এর দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার। ইয়ামান, পাক, ভারত ও বাংলাসহ প্রাচ্য ও দূরপ্রাচ্য থেকে জলপথে আগমনকারীদের মীকাত এই ইয়ালামলাম। অনুবাদক।] তিরমিযী ইবন উমার থেকে হাদীসটি বর্ণনা শেষে বলেন, হাসান ও সহীহ।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খোযা‘আ গোত্রের নাজিয়া জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূল, যেসব হাদি অচল হয়ে যায় কি করব? তিনি বললেন: “জবেহ কর, অতঃপর তার পা রক্তে চুবিয়ে দাও এবং মানুষ ও তার মাঝ থেকে সরে দাঁড়াও, যেন তারা তা খেয়ে নেয়”। [তিরমিযী ও আবু দাউদ। আবু দাউদ নাজিয়াকে আসলামী গোত্রের বলেছেন।]
সুরাকাহ ইবন মালিক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের ওমরা, অপর বর্ণনায় এসেছে: আমাদের মুত‘আহ (তামাত্তু) এ বছরের জন্য না সর্বদার জন্য? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাতের আঙ্গুলসমূহ অপর হাতের আঙ্গুলে দাখিল করে বলেন: “ওমরা হজের মধ্যে প্রবেশ করেছে এ বছরের জন্য নয়, বরং সর্বদার জন্য”। এটা ছিল মারওয়া পাহাড়ের উপর। ইমাম মুসলিম বর্ণিত জাবের এর হাদীসের অংশ বিশেষ।
আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যখন ইয়ামান থেকে আগমন করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করেন: “কিভাবে তালবিয়াহ পাঠ করেছো?” তিনি বললেন: রাসূলুল্লাহর তালবিয়ার মতো তালবিয়া পাঠ করেছি। তিনি বললেন: “আমার সাথে হাদি রয়েছে তাই তুমি হালাল হবে না”। ইমাম মুসলিম বর্ণিত জাবের এর হাদীসের অংশ বিশেষ।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেন: “কীভাবে তালবিয়াহ পাঠ করেছো?” আবু মুসা বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তালবিয়ার মত তালবিয়া পাঠ করেছি। তিনি বললেন: “তুমি কি হাদি নিয়ে এসেছো?” আবু মুসা বলেন: না, তিনি বললেন: “তুমি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ কর, সাফা ও মারওয়ার সাঈ কর এবং হালাল হয়ে যাও”। মুসলিম বর্ণিত জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীসের অংশ বিশেষ।
সুরাকাহ ইবন মালিক মিদলাজি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন, -তখন তারা উসফান নামক স্থানে ছিলেন- হে আল্লাহর রাসূল, আমাদেরকে তাদের মত বুঝিয়ে বলুন, যারা আজকে জন্মগ্রহণ করেছে, অতঃপর তিনি বলেন: “আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের এই হজে ওমরা দাখিল করে দিয়েছেন। অতএব তোমরা যখন মক্কায় আস, তোমাদের থেকে যে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার সাঈ করবে হালাল হয়ে যাবে, তবে যার সাথে হাদি থাকবে সে ব্যতীত”। [আবু দাউদ।]
জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূল, আতর মাখা সুগন্ধিময় জুব্বা পড়ে যে ওমরার ইহরাম বেঁধেছে তার সম্পর্কে কী বলেন? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “আতর, যা তোমার শরীরে রয়েছে ধুয়ে ফেল, আর জুব্বা খুলে ফেল, অতঃপর হজে যেরূপ কর ওমরাতেও সেরূপ কর”। ইয়ালা ইবন উমাইয়া থেকে বুখারী ও মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
ধুবা‘আহ বিনতে যুবায়ের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমি হজ করতে চাই কিন্তু অসুস্থ? তিনি বললেন: হজ কর ও শর্ত কর, যেখানে আমাকে বাধাগ্রস্ত করা হয় সেখানে আমি থেমে যাবো”। [সাধারণ হালতে হজের শুরুতে শর্ত করার নিয়ম নেই, কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ কিংবা ওমরায় শর্ত করেন নি। হুদাইবিয়ার সময়ও বলেন নি বাধা যেখানে রুখে দিবে সেখানে আমার হজ সমাপ্ত হবে। কোনো সাহাবীকে তিনি শর্ত করার নির্দেশ করেননি। হ্যাঁ, যে নারী ফতোয়া চেয়েছে তাকে তিনি শর্ত করার পরামর্শ দেন, কারণ সে শঙ্কিত ছিল হয়তো রোগ বেড়ে গেলে হজ অপূর্ণ থেকে যাবে। অতএব, হজযাত্রী যদি রোগ, অর্থ-সঙ্কট, শত্রু বা কোনো কারণে হজ বা ওমরা পূর্ণ করার ব্যাপারে সন্দিহান হয় শর্ত করে নিবে, যেরূপ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন। সাহাবীদের মাঝে হজের শুরুতে শর্ত করার রেওয়াজ ছিল। ইমাম শাফে‘ঈ ও বায়হাকী সহি সনদে বর্ণনা করেন, সুওআইদ ইবন গাফলাহ বলেন: “উমর ইবনুল খাত্তাব আমাকে বলেন, হে আবু উমাইয়্যাহ, হজ কর ও শর্ত কর। কারণ, যেভাবে শর্ত করবে সেভাবে আবশ্যক হবে এবং তোমার ওপর আল্লাহর তাই পাওনা হবে যার তুমি শর্ত করবে”। মাজমুউল ফতোয়া: (৮/৩০৯)।ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এক ব্যক্তিকে বলেন: “হজ কর ও শর্ত কর এবং বল: হে আল্লাহ তোমার জন্য হজের ইচ্ছা করছি যদি সম্ভব হয়, অন্যথায় ওমরা করে ক্ষান্ত হবো”। বায়হাকি হাসান ও সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন। দেখুন: মাজমুউল ফতোয়া: (৮/৩০৯)।আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি উরওয়াকে বলেন: “তুমি যখন হজ কর ইস্তেসনা (শর্ত) কর কি? উরওয়া বলেন: কিভাবে করবো? তিনি বলেন, বল: হে আল্লাহ হজের দৃঢ় সংকল্প করেছি, যদি আপনি সহজ করেন হজ হবে, আর বাধার সম্মুখীন হলে ওমরা হবে”। বাণীটি বুখারী ও মুসলিমের ন্যায় সহীহ সনদে বায়হাকি ও শাফে‘ঈ বর্ণনা করেছেন।শর্ত করার ফায়দা: হজযাত্রী যদি শর্ত করে মক্কায় পৌঁছতে সক্ষম না হয় বাধার স্থানে হালাল হয়ে যাবে, হাদি, ফিদিয়া, সিয়াম, কাযা ও মাথামুণ্ডন ইত্যাদির প্রয়োজন নেই। শর্ত না করে বাধাগ্রস্ত হলে ‘মুহসার’ হবে, হারামের এলাকায় তার হাদি জবেহ করা জরুরি যদি সম্ভব হয়, আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ﴿ فَإِنۡ أُحۡصِرۡتُمۡ فَمَا ٱسۡتَيۡسَرَ مِنَ ٱلۡهَدۡيِۖ وَلَا تَحۡلِقُواْ رُءُوسَكُمۡ حَتَّىٰ يَبۡلُغَ ٱلۡهَدۡيُ مَحِلَّهُۥۚ ١٩٦ ﴾ [ البقرة : ١٩٦ ] “অতঃপর যদি তোমরা আটকে পড়, তবে যে পশু সহজ হবে (যবেহ কর), আর তোমরা তোমাদের মাথামুণ্ডন করো না, যতক্ষণ না পশু তার যথাস্থানে পৌঁছে”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৯৬] যদি হারামে জবেহ করা সম্ভব না হয় বাধাপ্রাপ্ত স্থানেই জবেহ ও মাথামুণ্ডন করা জরুরি, যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুদাইবিয়ায় করেছেন, যখন কাফেররা তাকে মক্কায় প্রবেশে বাধা দিয়েছিল। তিনি হাদি নহর শেষে মাথামুণ্ডন করেন, সাহাবীদের তার নির্দেশ দেন: «قوموا فانحروا ثم احلقوا» .“তোমরা দাঁড়াও, নহর কর, অতঃপর মাথামুণ্ডন কর”। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৭৩৪।শর্ত করার পর ওমরা বা হজ পূর্ণ করা সম্ভব না হলে কাযা করা জরুরি নয়, তবে হজ ফরয হলে কাযা করা জরুরি। আল্লাহ ভালো জানেন। -অনুবাদক।] আয়েশা সূত্রে বুখারী ও মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হয় মুহরিম কোনো কোনো প্রাণী হত্যা করতে পারবে? তিনি বললেন: “সাপ, বিচ্ছু ও ইঁদুর, কাক ঢিল ছুড়ে তাড়িয়ে দিবে হত্যা করবে না, আর কামড়ানো কুকুর ও চিল। [মুহরিমের পক্ষে শিকার করা বৈধ নয়, তবে এসব প্রাণী হত্যা করা বৈধ। অনুবাদক।] আবু দাউদ ও অন্যান্য মুহাদ্দিস আবু সা‘ঈদ থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন, হাজি কে? তিনি বলেন: “এলোমেলো চুল ও অপরিপাটি শরীর সম্পন্ন ব্যক্তি”। সে বলল, কোন হজ উত্তম? তিনি বলেন: “উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ করা ও কুরবানি করা”। সে বলল: “(হজ করার) রাস্তা (তথা সামর্থ্য) কী? তিনি বলেন: “সম্বল ও সওয়ারী”। তিরমিযী ইবন উমর থেকে বর্ণনা করেছেন [তবে এর সনদ দুর্বল। বিশেষ করে প্রথম অংশ। -সম্পাদক]।
উরওয়াহ ইবন মিদরাস নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমি জাবালে তাঈ থেকে এসেছি। আমার সওয়ারীকে দুর্বল ও আমার নফসকে আমি ক্লান্ত করে ফেলেছি। আল্লাহর কসম কোনো পাহাড় বাদ নেই যেখানে আমি ওকুফ করি নি, আমার কি হজ আছে? তিনি বলেন: “যে আমাদের এই (ফজরের) সালাতে হাযির হয়েছে ও প্রস্থান করা পর্যন্ত আমাদের সাথে থেকেছে, তার আগে দিন বা রাতে ‘আরাফার ময়দানে হাযির হয়েছে, তার হজ পূর্ণ হলো এবং সে ময়লা দূর করল”। [তিরমিযী, তিনি বলেন: হাদীসটি হাসান ও সহীহ।]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নজদের কতক লোক জিজ্ঞেস করল, তখন তিনি আরাফায় ছিলেন, হে আল্লাহর রাসূল, হজ কি? “তিনি একজন ঘোষণাকারীকে ঘোষণা করার নির্দেশ দিলেন যে, আরাফাই হজ। (১০ তারিখের, মুযদালিফার) রাতে যে ফজর উদয় হওয়ার আগে আরাফায় পৌঁছল সে হজ পেল। [‘আরাফায় অবস্থান করার মেয়াদ ৯ম তারিখ সূর্য ঢলে যাওয়ার পর থেকে মুযদালিফার রাতের শেষ সময় পর্যন্ত। যে ১০ম তারিখ সুবহে সাদিকের আগে আরাফায় পৌঁছল সে হজ পেল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য ঢলে যাওয়ার পর এক আযান ও দুই একামত দ্বারা জোহর ও আসর সালাত জোহরের সময় একত্র আদায় করে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত ‘আরাফায় অবস্থান করেন। -অনুবাদক।] মিনার দিন তিনটি, যে দু’দিনে দ্রুত করল তার পাপ নেই, আর যে তিন দিন দেরী করল তারও পাপ নেই” [তিরমিযী, নাসাঈ ও আবু দাউদ।]। [ইবনে উসাইমীন বলেন: “এ কথার অর্থ হজের জন্য আরাফায় অবস্থান করা জরুরি, যে আরাফায় অবস্থান করল না তার হজ হল না। আবার আরাফায় অবস্থান করাই হজের শেষ আমল নয়, বরং আরো কাজ বাকি থাকে, যেমন মুজদালিফায় অবস্থান, তাওয়াফে ইফাদাহ, সাফা ও মারওয়ার সাঈ, পাথর নিক্ষেপ ও মিনায় রাত যাপন করা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল আরাফায় অবস্থান করা। তাই আহলে ইলমগণ বলেছেন, যার ওকুফে আরাফা ছুটে গেল, তার হজ ছুটে গেল”। মাজমু ফতোয়া ইবন উসাইমীন: (২৩/২৪) অনুবাদক।]
মিনার দিনগুলোতে হাজীদের পানি পান করানোর উদ্দেশ্যে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যখন মক্কায় থাকার অনুমতি প্রার্থনা করেন, তিনি তাকে অনুমতি দেন। [ইবন বায রহ.-কে জিজ্ঞাসা করা হয়, কেউ যদি আরাফা থেকে মিনায় পৌঁছে প্রথম জামরায় কঙ্কর মেরে তাওয়াফ ও সাঈ করে, এবং আসর পর্যন্ত মক্কায় অবস্থান শেষে মিনায় গিয়ে হাদি জবেহ করে, মক্কায় অবস্থান করার কারণে তার উপর কিছু ওয়াজিব হবে কি? তিনি বলেন, না, কোনো সমস্যা নেই। যদি কেউ ঈদের দিন অথবা তাশরীকের দিনের বেলা মক্কায় বা নিজ বাড়ীতে বা নিজ সাথীদের নিকট অবস্থান করে কোনো সমস্যা নেই, উত্তম হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীদের আদর্শ মেনে মিনায় অবস্থান করা, যদি মিনায় থাকা সম্ভব না হয় বা কষ্টকর হয়, দিনে মক্কায় অবস্থান করে রাতে মিনায় চলে যাওয়া ও সেখানে রাত যাপন করা দোষের নয়”। মাজমু‘উল ফতোয়া: (১৭/৩৬৫) এরূপ এক প্রশ্নের উত্তরে ইবন উসাইমীন রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “তাশরীকের দিনগুলোয় মক্কা বা তার পার্শ্ববর্তী এলাকা-জেদ্দায় যাওয়া সমস্যা নয়, তবে উত্তম হচ্ছে দিন-রাত মিনায় অবস্থান করা, যেরূপ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবস্থান করেছেন”। ফতোয়া শাইখ ইবন উসাইমীন: (২৩/২৪১,২৪৩) অপর এক ফতোয়ায় তিনি বলেন: “আলিমগণ বলেন, রাতের অধিকাংশ সময় মিনায় অবস্থান করা ওয়াজিব”। ফতোয়া শায়খ ইবনে উসাইমীন: (২৩/২৪৪) অনুবাদক।]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা হিজর [কা‘বার রুকনে শামি ও রুকনে ইরাকির উত্তর পাশের ত্রিভুজ আকৃতির অংশকে ‘হিজর’ বলা হয়, বর্তমান যা অর্ধ গোলাকার বৃত্ত (বা দেয়াল) ঘেরা। ইবরাহীম ও ইসমাঈল আলাইহিমাস সালামের নির্মিত মূল কাবার অংশ হিজর। যখন আগুন লেগে ও প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে কা‘বার দেয়ালের অংশ বিশেষ ভেঙ্গে পড়ে, কুরাইশরা অবশিষ্ট দেয়াল ভেঙ্গে নতুনভাবে কাবা নির্মাণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করে, কিন্তু ইবরাহীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভিত্তির উপর নির্মাণ করার প্রয়োজনীয় হালাল অর্থ তাদের জোগাড় হয় নি। কারণ, তারা শর্ত করেছিল কাবার নির্মাণে হারাম অর্থ ব্যবহার করবে না, যেমন ব্যভিচারীর মোহর, সুদ ও অপরের হক ইত্যাদি, তাই উত্তর পাশের কিছু অংশ ছেড়ে কাবা নির্মাণ করা হয়, ছেড়ে দেওয়া অংশ পাথরের দেয়াল দিয়ে সাধারণের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়, যেন মানুষ বুঝে এটাও কাবার অংশ এবং তার বাইর দিয়ে তাওয়াফ করে। এ কারণে অত্র অংশকে হিজর বলা হয়, কারণ হিজর অর্থ নিষিদ্ধ করা। এটা ছিল নবুওয়াতের পূর্বের ঘটনা।আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন, “হিজর কাবার অংশ কি না? তিনি বলেন: হ্যাঁ, আয়েশা বলেন, তাহলে কেন তারা এটাকে কাবার অন্তর্ভুক্ত করে নি, তিনি বলেন: তোমার কওমের অর্থ সংকট হয়েছিল”। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫৮৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৩৩।আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেন: আমি আল্লাহর ঘরে সালাত আদায় করতে পছন্দ করি, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত ধরে হিজরে দাখিল করেন, এবং বলেন “হিজরে সালাত পড় যদি ঘরে প্রবেশ করতে চাও, কারণ এটাও ঘরের অংশ, তোমার কওম কাবা নির্মাণ করার সময় মূল ঘর থেকে হিজর বাইরে রেখে দেয়”। আবু দাউদ, হাদীস নং ২০২৮; তিরমিযী, হাদীস নং ৮৭৬; নাসাঈ, হাদীস নং ২৯১২। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যদি তোমার কওম শিরকি যুগের নিকটবর্তী না হত, আমি কাবা ভেঙ্গে (তার মেঝটি) মাটির সমান করে দিতাম এবং পূর্ব ও পশ্চিমে দু’টি দরোজা রাখতাম, (একটি প্রবেশ করার ও অপরটি বের হওয়ার), আর হিজরের দিক থেকে কাবা ছয় হাত বাড়িয়ে দিতাম, কারণ কুরাইশরা কাবা নির্মাণ করার সময় তা বাদ দিয়েছে”। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩৬৯।ইবন উসাইমীনকে হিজর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি বলেন: “অনেকে হিজরকে হিজরে ইসমাইল বলে যার পশ্চাতে কোনো ভিত্তি নেই। কারণ, ইসমাইল হিজর সম্পর্কে জানতেন না, তাই এটাকে হিজরে ইসমাইল না বলে শুধু হিজর বলাই শ্রেয়”। ফতোয়া: (১২/৩৯৮)।হিজরকে হাতীমও বলা হয়: হাতীম অর্থ ভাঙ্গা বস্তু, মক্কার কুরাইশরা কাবা নির্মাণ করার সময় হাতীম ছোট দেয়াল ঘেরা করে দেয়। দেয়ালটি কাবার সমপরিমাণ ছিল না, অনেকটা অসম্পূর্ণ ও উপর থেকে ভাঙ্গা দেয়ালের মতো ছিল, তাই এটাকে হাতীম বলা হয়। কেউ বলেছেন: মক্কার লোকেরা এখানে পরস্পর চুক্তিতে আবদ্ধ হত ও বিভিন্ন শপথ করত, কেউ তার খেলাফ করলে ধ্বংস হয়ে যেত তাই এটাকে হাতীম বলা হয়। কারণ, হাতীম অর্থ ধ্বংস। কেউ বলেছেন: মক্কার লোকেরা তাওয়াফের কাপড় এখানে রেখে দিত এবং এখানেই সেগুলো ধ্বংস হত তাই এটাকে হাতীম বলা হয়।মোদ্দাকথা, হাতীম কাবার অংশ, এতে সালাত আদায় করার অর্থ কাবার ভেতর সালাত আদায় করা, কাবার ভেতর ফরয আদায় করা অনেকের নিকট বৈধ নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবার ভেতর ফরয সালাত আদায় করেন নি। কারণ, এভাবে সালাত আদায় করলে কাবার কিয়দংশ পশ্চাদমুখী হয়, যা ফরয সালাতে বৈধ নয়, নফল সালাতে বৈধ, যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহনে চড়ে নফল আদায় করতেন, যে দিকে তার মুখ হত ভ্রুক্ষেপ করতেন না। -অনুবাদক।] সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন? তিনি বলেন: হিজর কাবার অংশ”। বুখারী ও মুসলিম। তিরমিযীর বর্ণনায়, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন: হে আল্লাহর রাসূল, আমি বায়তুল্লায় সালাত আদায় করার মান্নত করেছি? তিনি বলেন: “হিজরে সালাত আদায় কর, কারণ হিজর বায়তুল্লাহর অংশ”।
জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন, আমি বুঝতে পারিনি ফলে হাদি জবেহ করার পূর্বে মাথা মুণ্ডন করেছি? তিনি বলেন: “জবেহ কর কোনো সমস্যা নেই”। অপর ব্যক্তি জিজ্ঞেস করেন, আমি বুঝতে পারিনি রমি করার পূর্বে জবেহ করেছি? তিনি বলেন: “রমি কর কোনো সমস্যা নেই”। আব্দুল্লাহ ইবন আমর থেকে বুখারী ও মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন, জবেহ করার পূর্বে আমি মাথামুণ্ডন করেছি? তিনি বলেন: যবেহ কর কোনো সমস্যা নেই”। সে বলল: সন্ধ্যা হওয়ার পর আমি রমি করেছি? তিনি বলেন: “কোনো সমস্যা নেই”। [নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্বাহ্নে তথা দ্বিপ্রহরের আগে রমি করেছেন, অতঃপর নহর করেছেন, অতঃপর করেছেন হলক তথা মাথামুণ্ডন। এরপর আয়েশা তাকে আতর লাগিয়ে দেন, এভাবে তিনি প্রথমবারের মত হালাল হন, অর্থাৎ স্ত্রী ব্যতীত সব কিছু তার জন্য হালাল হয়। অতঃপর তাওয়াফ ও সা‘ঈ করে চূড়ান্তভাবে হালাল হন। এটাই হাজীদের জন্য করণীয় সুন্নত, তবে এসব কর্ম সম্পাদনে অগ্র-পশ্চাৎ হলে কোনো সমস্যা নেই, এটাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ফাতওয়া। অনুবাদক।] ইবন আব্বাস থেকে বুখারী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন