HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ঈমানের প্রকৃত স্বাদ

লেখকঃ জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের

দ্বিতীয় হাদিস:
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «ثَلَاثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ طَعْمَ الْإِيمَانِ : مَنْ كَانَ يُحِبُّ الْمَرْءَ لَا يُحِبُّهُ إِلَّا لِلَّهِ، وَمَنْ كَانَ اللهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا، وَمَنْ كَانَ أَنْ يُلْقَى فِي النَّارِ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ أَنْ يَرْجِعَ فِي الْكُفْرِ بَعْدَ إِذْ أَنْقَذَهُ اللهُ مِنْهُ»

“আনাস বিন মালেক রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তিনটি জিনিস যার মধ্যে পাওয়া যাবে, সে ঈমানের স্বাদ উপভোগ করতে পারবে। যে ব্যক্তি কোনো মানুষকে একমাত্র আল্লাহর জন্য ভালোবাসবে। যার নিকট আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল অন্য সব কিছু হতে অধিক প্রিয় এবং কুফরি থেকে মুক্তি দেয়ার পর পুণরায় কুফরিতে ফিরে যাওয়া যার নিকট আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়া অপেক্ষায় অধিক প্রিয়”। [মুসলিম, হাদিস: ৪৩, ৬৮; বুখারি, হাদিস: ২১, ৬০৪১; ইবনু মাযা, হাদিস: ৪০৩৩; নাসায়ী, হাদিস: ৯৬/৮]

চার. ঈমানের স্বাদ সে ব্যক্তি ভোগ করবে, যে কোনো মানুষকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে এবং আল্লাহর জন্য অপছন্দ করে। একজন মানুষের সাথে অপর মানুষের মহব্বত ও ভালোবাসা হবে ঈমানের ভিত্তিতে। এক মুমিন অপর মুমিনকে ভালো বাসা ও মহব্বত করাও ঈমান। আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

« إِنَّ أَوْثَقَ عُرَى الْإِيمَانِ أَنْ تُحِبَّ فِي اللهِ، وَتُبْغِضَ فِي اللهِ »

“ঈমানের দৃঢ় বন্ধন হল, আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্য দুশমনি করা”। [জারির ইবন আব্দুল হামিদ এর সনদে ইমাম বাইহাকী শুয়াবুল ঈমানে হাদিসটি বর্ণনা করেন। হাদিস নং ১৪]

অপর একটি হাদিসে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

« إِنَّ أَحَبَّ الْأَعْمَالِ إِلَى اللهِ الْحُبُّ فِي اللهِ، وَالْبُغْضُ فِي اللهِ »

“নিশ্চয় আল্লাহর নিকট উত্তম আমল হল, আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্য দুশমনি করা”। [আবু দাউদ, হাদিস: ৪৫৯৯]

অপর একটি হাদিসে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ أَعْطَى لِلَّهِ، وَمَنَعَ لِلَّهِ، وَأَحَبَّ لِلَّهِ، وَأَبْغَضَ لِلَّهِ، وَأَنْكَحَ لِلَّهِ، فَقَدْ اسْتَكْمَلَ إِيمَانَهُ»

“যে আল্লাহর জন্য দান করে, আল্লাহর বারণ করে, আল্লাহর জন্য মহব্বত করে, আল্লাহর জন্য দুশমনি করে, আল্লাহর জন্য বিবাহ শাদী দেয়, তার ঈমান পরিপূর্ণ হয়ে যায়”। [তিরমিযি, হাদিস: ২৫২১ আল্লামা আলবানী হাদিসটি হাসান বলেছেন।]

পাঁচ. হাদিস দ্বারা স্পষ্ট হল, একজন মুমিনের বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা হবে আল্লাহর জন্য। ঈমানের ভিত্তিতে ভালোবাসাই হল প্রকৃত ভালোবাসা। যে ভালোবাসা ও মহব্বত ঈমানের ভিত্তিতে হয়, সেই ভালোবাসা, বন্ধুত্ব ও মহব্বত কিয়ামতের কাজে আসবে। এ ছাড়া পার্থিব ও জাগতিক স্বার্থে যে সব বন্ধুত্ব বা মহব্বত হয়ে থাকে, তা আখিরাতে কোনো কাজে আসবে না। আল্লাহ তা‘আলা কুরআন করীমে বলেছেন,

﴿ ٱلۡأَخِلَّآءُ يَوۡمَئِذِۢ بَعۡضُهُمۡ لِبَعۡضٍ عَدُوٌّ إِلَّا ٱلۡمُتَّقِينَ ٦٧ ﴾ [ الزخرف : ٦٧ ]

“সেদিন বন্ধুরা একে অন্যের শত্রু হবে, মুত্তাকীরা ছাড়া”। [সূরা আয-যুখরুফ, আয়াত: ৬৭]

আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলকে দুনিয়ার সব কিছু হতে অধিক ভালোবাসা। এমনকি আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলকে নিজের স্ত্রী, সন্তান, পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, ধন-সম্পদ এবং সমস্ত মানুষের চেয়ে অধিক ভালোবাসা। যার মধ্যে এ ধরনের ভালোবাসা পাওয়া যাবে সেই প্রকৃত ঈমানদার এবং সে ঈমানের সত্যিকার স্বাদ উপভোগ করতে পারবে। আনাস রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ، وَوَلَدِهِ، وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ»

আনাস ইবন মালেক রা. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমরা কেউ পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তোমাদের নিকট তোমাদের তোমাদের মাতা-পিতা, সন্তান-সন্ততি ও সমস্ত মানুষ থেকে অধিক প্রিয় না হব”। [বুখারি, হাদিস: ১৫; মুসলিম, হাদিস: ৪৪; নাসায়ী, হাদিস: ১১৫/৮] ওমর রা. বলেন,

وَاللهِ لَأَنْتَ يَا رَسُولَ اللهِ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ إِلَّا نَفْسِي، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ نَفْسِهِ » فَقَالَ عُمَرُ : فَلَأَنْتَ الْآنَ وَاللهِ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ نَفْسِي، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «الْآنَ يَا عُمَرُ »

“আল্লাহর শপথ করে বলছি, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমার নিকট দুনিয়ার সব কিছু হতে অধিক প্রিয় তবে আমার জীবন থেকে নয়। তার কথা শোনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের কেউ পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার কাছে তার জীবন থেকেও অধিক প্রিয় না হব। এ কথা শোনে ওমর রা. বললেন, আল্লাহর শপথ আপনি এখন আমার নিকট আমার জীবনের চেয়েও অধিক প্রিয়। তারপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে ওমর তুমি এখন পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারলে”। [বুখারি, হাদিস: ৩৬৯৪, ৬২৬৪, ৬৬৩২]

একজন মানুষ যখন বিশ্বাস করবে, আল্লাহই তার রব ও প্রতিপালক, রিজিক দাতা এবং উপকার ও ক্ষতির মালিক, জীবন ও মৃত্যুর তারই হাতে এবং তিনিই যাবতীয় সব কর্মের বিধায়ক, তখন সে আল্লাহকে অন্তর দিয়ে ভালবাসবে, তার কথা শুনবে ও তার আদেশ নিষেধ মানবে, তার আনুগত্য করবে।

আর যখন সে এও বুঝতে পারবে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পক্ষ থেকে উম্মতের প্রতি প্রেরিত একজন রাসূল। তার মাধ্যমেই আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে গোমরাহি থেকে হেফাজত করেন এবং সঠিক পথ দেখান। হক ও বাতিলের সঠিক সংজ্ঞা তার মাধ্যমেই আমরা জানতে পারি। তিনিই মানুষ আল্লাহর ইবাদতের দিক আহ্বান করেন। তিনি মানুষকে কুফর থেকে বের করে ইসলামের দিকে নিয়ে আসেন, তখন তারা অবশ্যই আল্লাহর রাসূলকে অন্তর দিয়ে ভালো বাসবেন। আর যখন বান্দা আল্লাহকে ভালোবাসবে তখন আল্লাহর ইবাদত করাকেও ভালো বাসবে। সালাত, সাওম, যাকাত, জিকির, দুআ, কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি তার কাছে ভালো লাগবে এবং সবকিছুতে সে খুব মজা পাবে। একেই বলা হয় ইমানের স্বাদ বা মজা।

আল্লাহর নবীর মহব্বতের আলামত হল, নবীর প্রতি ঈমান আনা, নবীর অনুকরণ করা, তার আদর্শ অনুযায়ী জীবন যাপন করা এবং তার নির্দেশ মেনে চলা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ لَّقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِي رَسُولِ ٱللَّهِ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٞ ٢١ ﴾ [ الاحزاب : ٢١ ]

“তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ”। [সূরা আহযাব, আয়াত: ২১] একজন ব্যক্তি যখন নবীকে মহব্বত করবে, তখন সে অবশ্যই তার অবাধ্য হওয়া ও তার সুন্নাত থেকে বের হওয়াকে অপছন্দ করবে। এটিই হল, আল্লাহর রাসূলের মহব্বতের বাস্তবতা।

ছয়- ঈমানের পর কুফরে প্রত্যাবর্তন করাকে এমন অপছন্দ করে যেমন জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষেপ করাকে অপছন্দ করে। আল্লাহ তা‘আলা তাকে কুফর থেকে মুক্তি দিয়েছেন এবং ঈমানের মত মহা মূল্যবান দৌলত দিয়েছেন। আল্লাহর অনুগ্রহে ঈমান লাভ করার পর আল্লাহর আনুগত্যটাকে মেনে নিয়েছেন এবং ঈমানের উপর অটুট অবিচল রয়েছেন। সুতরাং এখন লোকটি ঈমানের পর কুফরিকে ঘৃণা করে, হেদায়েত লাভের পর গোমরাহিকে অপছন্দ করে, দীনের উপর অবিচল থাকাকে পছন্দ করে এবং দীন থেকে ফিরে যাওয়াকে অপছন্দ করে। জ্ঞান লাভের পর অজ্ঞতায় ফিরে যাওয়াকে ঘৃণা করে। মোট কথা, আল্লাহ তা‘আলা যা কিছু অপছন্দ করেন, তার সব কিছুই তার নিকট অপছন্দ। তাকে যতই কষ্ট দেয়া হোক না কেন, সে আল্লাহর হুকুমের অবাধ্যে কোনো কিছুই করবে না। যদিও তাকে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়, ফাঁশি কাস্টে ঝুলানো হয় এবং জেল খানায় নেয়া হয়। এমনকি যদি তাকে বলা হয়, তুমি কুফরি কর, অন্যথায় তোমাকে জালিয়ে দেয়া হবে, তারপরও সে কুফরি করবে না। বরং সে কষ্টের উপর ধৈর্য ধারণ করবে। কুফরি করা এমন অপছন্দ করবে যেমনটি আগুনে পুড়ে মারা যাওয়াকে অপছন্দ করবে।

অনুরূপভাবে গুনাহকে সে অপছন্দ ও ঘৃণা করবে। কারণ, সে জানে তার প্রভূ অন্যায়কে হারাম করেছেন এবং অন্যায়কারীকে তিনি পছন্দ করেন না। তিনি এ বলে ঘোষণা দেন, আমার রব যা নিষেধ করেছেন তা আমি ঘৃণা করি, আমি নিষিদ্ধ বস্তুর কাছেও যাব না। যদিও তাতে দুনিয়াবি কিছু লাভ হয়ে থাকে। ফলে লোকটি অহংকার, ব্যভিচার, অশ্লীল কর্ম, মদ্যপান, গান-বাজনা, নগ্ন সিনেমা দেখা, ইত্যাদিকে ঘৃণা করে। পর্দাহীন বেগানা নারীদের দিকে তাকানো থেকে বিরত থাকে। নারীরাও বেপর্দা হওয়াকে ঘৃণা করে। মোটকথা, আল্লাহ তা‘আলা যা অপছন্দ করে, মানুষও তা অপছন্দ করে। এটিই হল, ঈমানের প্রতি ভালোবাসা ও মহব্বতের আলামত। যাদের মধ্যে ঈমানের প্রতি ভালোবাসা ও মহব্বত পাওয়া যাবে, তারাই ঈমানের প্রকৃত স্বাদ গ্রহণ করবে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন