HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

কেন ধূমপান করেন

লেখকঃ শাইখ মুহাম্মদ ইবরাহিম আল-হামদ

আত্মজিজ্ঞাসা:
ধূমপায়ী ভাই, আপনি যেহেতু এসব কারণে ধূমপান করেন, আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই। আমি আপনার বিবেক, স্বভাব ও অনুভূতিকে সম্বোধন করে আলোচনার টেবিলে বসতে চাই। হয়ত আল্লাহ আমাদেরকে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার তাওফিক দিবেন, যার পশ্চাতে রয়েছে কল্যাণ আর কল্যাণ!!!

ধূমপায়ী প্রিয় ভাই, ধূমপান হারাম এ ব্যাপারে আপনার মধ্যে কোনো সন্দেহ আছে? আপনি কি ধূমপানের ক্ষতি, কু-প্রভাব ও অনিষ্ট সম্পর্কে অনিশ্চিত বা সন্দিহান?

আমার শতভাগ বিশ্বাস আপনি অবশ্যই বলবেন: আমি জানি ধূমপান হারাম, তার অনিষ্ট সম্পর্কে আমার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই। শুধু আপনি নয় সামান্য বিবেকের অধিকারী সকল ধূমপায়ী এ কথা বলে।

আপনার প্রতি আমার জিজ্ঞাসা: ত্যাগ করব করব বলার পরিবর্তে আপনি কেন ধূমপান ত্যাগ করেন না, কেন আপনি চির দিনের জন্য ধূমপান থেকে মুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না!?

আপনি অবশ্যই মুখভরে উত্তর দিবেন: অবশ্যই, অবশ্যই ছেড়ে দিব ধূমপান। আমি চাই আপনি ধূমপানের ক্ষতি সম্পর্কে নিশ্চিত হোন এবং তা ত্যাগ করার এখনি ঘোষণা দিন।

প্রিয় ভাই, আপনি মনযোগসহ শুনুন, অন্তর দিয়ে চিন্তা করুন, ইনশাআল্লাহ আপনি অবশ্যই ধূমপানের ক্ষতি সম্পর্কে নিশ্চিত হবেন এবং তা ত্যাগ করার আজই সিদ্ধান্ত নিবেন।

স্মরণ করুন:

ধূমপায়ী প্রিয় পাঠক, আপনি সবার আগে চিন্তা করুন আপনি আল্লাহর বান্দা, আল্লাহ আপনাকে বান্দার মর্যাদায় ভূষিত করেছেন। বান্দা হওয়ার মর্যাদা বড় মর্যাদা। আপনি আল্লাহর পরিপূর্ণ রূপে বান্দা হোন তথা পূর্ণরূপে তার দাসত্ব গ্রহণ করুন, আপনি সকল দাসত্ব থেকে মুক্তি পাবেন, আপনার নফস ও প্রবৃত্তির দাসত্ব থেকেও মুক্তি পাবেন। আপনি স্বাধীন এক আল্লাহর দাসে পরিণত হবেন, তিনি ব্যতীত আপনার কোনো প্রভু থাকবে না।

আপনি যদি আল্লাহর দাসত্বে সীমাবদ্ধ না থাকেন, সকল দাসত্ব আপনাকে ঘিরে ধরবে, আপনি দাসের দাসে পরিণত হবেন, তাদের নির্দেশ বাস্তবায়নে ক্লান্ত ও পেরেশান হবেন!

মনে রাখুন আল্লাহর দাসত্বের অর্থ তার আনুগত্য করা, নাফরমানি ত্যাগ করা; তার শোকর করা, অকৃতজ্ঞ না হওয়া; তাকে স্মরণ করা, ভুলে না যাওয়া।

জেনে রাখুন, তিনি আপনাকে কতক বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন ও কতক বিষয়ে নিষেধ করেছেন। যার মধ্যে আপনার কল্যাণ ও সফলতা রয়েছে তার নির্দেশ দিয়েছেন। যার মধ্যে আপনার অনিষ্ট ও ক্ষতি রয়েছে তার থেকে নিষেধ করেছেন।

ধূমপায়ী প্রিয় পাঠক, এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে চিন্তা করুন এবং ধূমপানের অনিষ্টগুলো ভেবে দেখুন। নিম্নে ধূমপানের কিছু অনিষ্ট তুলে ধরা হল:

১- বিড়ি-সিগারেট খবিস ও নাপাক বস্তু। আপনার রব খবিস বস্তু সম্পর্কে ইরশাদ করেন:

﴿ وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ ١٥٧ ﴾ [ الاعراف : ١٥٦ ]

“এবং তিনি তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করেন আর অপবিত্র বস্তু হারাম করেন”। [সূরা আরাফ: (১৫৭)]

২- ধূমপান অপব্যয় ও বাজে খরচ। আপনার রব বাজে খরচ সম্পর্কে ইরশাদ করেন:

﴿وَلَا تُبَذِّرۡ تَبۡذِيرًا ٢٦ إِنَّ ٱلۡمُبَذِّرِينَ كَانُوٓاْ إِخۡوَٰنَ ٱلشَّيَٰطِينِۖ وَكَانَ ٱلشَّيۡطَٰنُ لِرَبِّهِۦ كَفُورٗا ٢٧﴾ [ الاسراء : ٢٦، ٢٧ ]

“আর কোনভাবেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার রবের প্রতি খুবই অকৃতজ্ঞ।”। [সূরা ইসরা: (২৬-২৭)]

হে ধূমপায়ী ভাই, আপনি অপব্যয়ীদের অন্তর্ভুক্ত হতে চান, আপনি চান শয়তানের ভাই উপাধি লাভ করুন?

৩- ধূমপান অপচয়। আল্লাহ তা‘আলা অপচয় সম্পর্কে বলেন:

﴿إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُسۡرِفِينَ ٣١﴾ [ الأعراف : ٣١ ]

“নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না”। [সূরা আরাফ: (৩১)]

৪- ধূমপান করা মানে নিজেকে হত্যা করা। আল্লাহ তা'আলা এ সম্পর্কে বলেন:

﴿وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَنفُسَكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِكُمۡ رَحِيمٗا ٢٩ وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ عُدۡوَٰنٗا وَظُلۡمٗا فَسَوۡفَ نُصۡلِيهِ نَارٗاۚ وَكَانَ ذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ يَسِيرًا ٣٠﴾ [ النساء : ٢٩، ٣٠ ]

“আর তোমরা নিজেরা নিজেদেরকে হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে পরম দয়ালু”। [সূরা নিসা: (২৯-৩০)]

৫- ধূমপান অর্থ নিজ হাতে নিজেকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করা। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿وَلَا تُلۡقُواْ بِأَيۡدِيكُمۡ إِلَى ٱلتَّهۡلُكَةِ وَأَحۡسِنُوٓاْۚ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ١٩٥﴾ [ البقرة : ١٩٥ ]

“এবং নিজ হাতে নিজেদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না”। [সূরা বাকারা: (১৯৫)]

৬- ধূমপান অর্থ নিজের অনিষ্ট সাধন করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সম্পর্কে বলেন:

«لاضرر ولا ضرار» .

“কোনো ব্যক্তি তার ভাইয়ের ক্ষতি করবে না, কারো ক্ষতির মোকাবিলায় ক্ষতি করে প্রতিশোধ নিবে না”। কেউ বলেছেন: এ হাদিসের অর্থ: “কোন স্বার্থে কারো ক্ষতি করা যাবে না এবং বিনা স্বার্থেও কারো ক্ষতি করা যাবে না”। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক: (১৪৬), আহমদ: (২২১৭৮), ইব্‌ন মাজাহ: (২৩৩৪), হাকেম: (২২৮২), তিনি হাদিসটি সহিহ বলেছেন।]

৭- ধূমপায়ী ভাই, এসব ক্ষতি ছাড়াও আপনার ধূমপানের কারণে আপনার অপর ভাই কষ্ট পায়, আপনি তাকে কিভাবে কষ্ট দেন?! কিভাবে আপনি আল্লাহর বান্দাদের বিরক্তির কারণ হন?! ধূমপানের কারণে বায়ু দূষণ হয়, অন্যদের অনুভূতিতে আঘাত লাগে। বিশেষ করে যদি জনসাধারণের সমাগম স্থানে ধূমপান করা হয়, যেমন এয়ারপোর্ট, বাসষ্ট্যাণ্ড, রেল স্টেশন, বাজার, হাসপাতাল, বিশ্রামাগার ইত্যাদি?!

আপনি কি আল্লাহর বাণী শ্রবণ করেননি, তিনি ইরশাদ করেছেন:

﴿وَٱلَّذِينَ يُؤۡذُونَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ بِغَيۡرِ مَا ٱكۡتَسَبُواْ فَقَدِ ٱحۡتَمَلُواْ بُهۡتَٰنٗا وَإِثۡمٗا مُّبِينٗا ٥٨﴾ [ الأحزاب : ٥٨ ]

“আর যারা মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে তাদের কৃত কোন অন্যায় ছাড়াই কষ্ট দেয়, নিশ্চয় তারা বহন করবে অপবাদ ও সুস্পষ্ট পাপ”। [সূরা আহযাব: (৫৮)]

৮- মসজিদ আল্লাহর ঘর, আল্লাহ তার ঘরের মর্যাদা বৃদ্ধি করা ও তাতে যিকির করার আদেশ করেছেন। তাতে প্রবেশ করার আগে তিনি আমাদেরকে সৌন্দর্য গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। বৈধ ও হালাল হওয়া সত্যেও পিয়াস রসুন ইত্যাদি দুর্গন্ধযুক্ত বস্তু খেয়ে মসজিদে যেতে নিষেধ করেছেন, যেন মুসল্লিরা কষ্ট না পায়, তাদের অনুভূতিতে আঘাত না লাগে, তাদের একাগ্রতা, ইবাদত ও আল্লাহর সাথে মোনাজাতে বিঘ্ন না ঘটে।

ধূমপায়ী প্রিয় পাঠক, আপনি ধূমপান করে মসজিদে গিয়ে আল্লাহর বান্দাদের কষ্ট দিলেন, ফেরেশতাদের কষ্ট দিলেন!

প্রিয় পাঠক, মনে করুন আপনি এক সম্মানজনক দায়িত্বে আছেন, কিভাবে বসবেন আপনার আসনে? অথবা বিশেষ ব্যক্তির সামনে দণ্ডায়মান যাকে আপনি মহব্বত করেন ও যার থেকে লজ্জাবোধ করেন, কিভাবে দাঁড়াবেন তার সামনে?

সন্দেহ নেই আপনি তার সামনে সুন্দর অবয়বে দাঁড়াবেন, সুঘ্রাণ ও সুন্দর পোশাকে দাঁড়াবেন।

অতএব আপনি যখন আসমান ও জমিনের মালিক আল্লাহর সামনে ধূমপান করে সালাতে দাঁড়ান, আর আপনার মুখ থেকে ধূমপানের দুর্গন্ধ বের হয় তখন কিরূপ লাগে!?

আল্লাহর সম্মান ও মর্যাদার দাবি কোথায় রইল! আপনার অন্তরে তার মহত্বের পরিচয় কি হল!?

৯- মানুষেরা তাদের সম্পদের বিপরীতে সুঘ্রাণ খরিদ করে, আতর ব্যবসায়ীরা প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয় কে কার থেকে বেশী ঘ্রাণ যুক্ত আতর খরিদ করবে, কে অধিক হারে বিভিন্ন রুচি ও পছন্দের লোকদের আকৃষ্ট করবে। মেহমানদের আপ্যায়নে ভদ্র লোকেরাও কম যান না, অপরিচিত ও আকর্ষণীয় নানা ঘ্রাণ দ্বারা অতিথিদের মন জয় করেন, তাদেরকে খুশি করার চেষ্টা করেন! আর আপনি –আল্লাহ আপনাকে হিদায়েত করুন- এসবের দিকে পৃষ্ঠ ফিরিয়েছেন, আপনি শুধু দুর্গন্ধেই অভ্যস্ত! আপনার থেকেই আপনার অপছন্দ গন্ধ বের হয়, আপনার থেকে মানুষেরা বিরক্তি বোধ করে, বরং আপনাকে এ জন্য অনেকে ত্যাগ করে!

১০- আপনার প্রিয় স্ত্রী, যে আপনাকে তার পবিত্র ভালোবাসা দান করেছে, তার সব অনুভূতি ও আবেগ আপনাকে উজাড় করে দিয়েছে, আপনার জন্য তার অন্তর খুলে দিয়েছে, সে তার সব দিয়ে আপনার সন্তুষ্টি অর্জনে যত্নবান থাকে, পরিচ্ছন্ন পোশাক ও সুঘ্রাণ ব্যতীত আপনার সামনে হাজির হয় না! তাহলে আপনি কেন ধূমপান করে তাকে কষ্ট দেন, তার অনুভূতিকে আঘাত করেন, তার পছন্দের কোন তোয়াক্কা করেন না? এ কেমন ইনসাফ, কেমন নীতি, কেমন আদর্শ!?

আপনি কি আল্লাহর বাণী শ্রবণ করেন নি, আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

﴿وَلَهُنَّ مِثۡلُ ٱلَّذِي عَلَيۡهِنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِۚ ٢٢٨﴾ [ البقرة : ٢٢٨ ]

“আর নারীদের রয়েছে বিধি মোতাবেকঅধিকার। যেমন আছে তাদের উপর ‎‎ (পুরুষদের) অধিকার”। [সূরা বাকারা: (২২৮)]

ইব্‌ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু‘‎‘আনহু বলেন:

إني لأحب أن أتزيَّن للمرأة كما أحبُّ أن تتزيَّن لي المرأة؛ لأن الله _ تعالى _ يقول : [ وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِي عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ ] ( البقرة : 228).

“আমি নিশ্চয় সৌন্দর্য গ্রহণ করা পছন্দ করি স্ত্রীকে খুশি করার জন্য, যেমন পছন্দ করি সে আমার জন্য সৌন্দর্য গ্রহণ করুক। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: “আর নারীদের রয়েছে বিধি মোতাবেকঅধিকার। যেমন আছে তাদের উপর ‎‎ (পুরুষদের) অধিকার”। [সূরা বাকারা: (২২৮)]

১১- সন্তান সবাই আশা করে, এ জন্য জ্ঞানীরা তাদের চেষ্টার কমতি রাখে নি। শরীয়ত সন্তানের জন্য তারগীব বা উৎসাহ দিয়েছে, সন্তানের ক্ষতি, ধ্বংস ও বিনাশ হয় এমন কার্যকলাপ থেকে বারণ করেছে। আপনি ধূমপান করে সন্তানের নিয়ামত থেকে নিজেকে বঞ্চিত করছেন, বরং নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন! কারণ ধূমপান প্রজনন ক্ষমতা দুর্বল করে, যৌন শক্তি হ্রাস করে ও বন্ধ্যাত্বের দিকে নিয়ে যায়!

১২- আপনার সন্তান আপনার কলিজার টুকরা। সন্তান দিয়ে আল্লাহ আপনার ওপর অনুগ্রহ করেছেন, তাদের সুরক্ষার জন্য তিনি আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন। আপনি তাদের মহব্বত করেন, তাদের কল্যাণে সচেষ্ট থাকেন, দুর্গন্ধ ও কষ্টদায়ক বস্তু তাদের থেকে দূরে রাখেন, শুধু আপনি নয় সকল দায়িত্বশীল অভিভাবকই এরূপ করেন, এতদ সত্যেও ধূমপান করে আপনি তাদের অনিষ্ট ও ধ্বংসের চেষ্টা করছেন, জেনে বা না-জেনে আপনি ধূমপান করে তাদের বিরক্তির উদ্রেক করছেন, তাদের সুন্দর বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছেন, তাদের মধ্যে বদ অভ্যাসের বীজ বপন করছেন! কারণ ধূমপায়ীদের দ্বারা সন্তান প্রভাবিত হয়।

কতক ধূমপান বিশেষজ্ঞ বলেছেন: ধূমপানের ‘নিকোটিন’ প্রজনন বীজের জন্য বিষতুল্য। নিকোটিনের ফলে প্রজনন ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

১৩- নেক সন্তান পিতা-মাতার জন্য নিয়ামত, আল্লাহর বড় দান। সন্তানের নেক ও সৎ হওয়া পিতা-মাতার জন্য সৌভাগ্য। তাই সকল পিতা-মাতা তাদের ভালোর জন্য চেষ্টা করেন, সন্তানের অনিষ্ট ও অমঙ্গল সবাই অপছন্দ করেন। কিন্তু আপনি ধূমপান করে তাদের অনিষ্টের কারণ হচ্ছেন, আপনার ধূমপানের অনিষ্ট অচিরেই তাদেরকে গ্রাস করবে। তারা এক সময় আপনার অনুসরণে ধূমপানে অবশ্যই অভ্যস্ত হবে। কোনো কবি বলেছেন:

وينشأ ناشىءُ الفتيان منا *** على ما كان عوَّدَه أبوه

“পিতা যেভাবে বাচ্চাদের গড়ে তুলে আমাদের শিশুরা সেভাবেই গড়ে ওঠে”।

১৪- পিতা-মাতার খিদমত করা সাওয়াব ও কল্যাণের কাজ, তাদের অবাধ্য হওয়া পাপ। ধূমপান কখনো তাদের খিদমত থেকে বঞ্চিত করে! যেমন সন্তান হয়ে প্রথম প্রথম ধূমপান করে তাদের কাছে যেতে ভয় পায়, ইতস্তত বোধ করে, এভাবে তাদের থেকে দূরে থাকে, অতঃপর এক সময় তাদের অবাধ্য হতে দ্বিধা করে না!

১৫- আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখা ওয়াজিব, ছিন্ন করা পাপ ও গুনাহ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿فَهَلۡ عَسَيۡتُمۡ إِن تَوَلَّيۡتُمۡ أَن تُفۡسِدُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَتُقَطِّعُوٓاْ أَرۡحَامَكُمۡ ٢٢ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ لَعَنَهُمُ ٱللَّهُ فَأَصَمَّهُمۡ وَأَعۡمَىٰٓ أَبۡصَٰرَهُمۡ ٢٣﴾ [ محمد : ٢٢، ٢٣ ]

“তবে কি তোমরা প্রত্যাশা করছ যে,যদি তোমরা শাসন কর্তৃত্ব পাও, তবে ‎‎ তোমরা জমিনে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং ‎‎ তোমাদের আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকরবে? এরাই যাদেরকে আল্লাহ লানতকরেছেন, ফলে তাদেরকে বধির ওতাদের দৃষ্টিসমূহকে অন্ধ করেদিয়েছেন”।‎ [সূরা মুহাম্মদ: (২২-২৩)]

ধূমপায়ী ভাই, ধূমপান কখনো আত্মীয়তা বিনষ্টের কারণ হয়। আপনার নেককার কোনো আত্মীয় যে আপনার ধূমপান করা পছন্দ করে না, আপনি যখন তার সাথে সাক্ষাতের চিন্তা করবেন সে জেনে যাবে ভেবে বা তার নিকট আপনার মর্যাদা নষ্ট হবে চিন্তা করে তার থেকে দূরে থাকবেন! অথবা দীর্ঘ সাক্ষাত হবে আশঙ্কায় তাকে এড়িয়ে থাকবেন, যে দীর্ঘ সময় আপনি ধূমপান ব্যতীত থাকতে পারবেন না, ফলে তাদের এড়িয়ে চলবেন। এভাবে আপনার আত্মীয়তা বিনষ্ট হবে, আপনি আত্মীয়তা রক্ষার বরকত ও তাদের দো‘আ থেকে মাহরূম হবেন। অতএব যে কাজ পিতা-মাতার অসন্তুষ্টি ও আত্মীয়তার ছেদ সৃষ্টি করে তাতে কিসের কল্যাণ?!

১৬- আমাদের সম্পদ আল্লাহর মালিকানা। তিনি আপনাকে এ সম্পদের মালিক বানিয়েছেন। এ সম্পদ তিনি বৈধ পন্থায় অর্জন করা ও বৈধ পন্থায় খরচ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আপনি যদি ধূমপান করে সম্পদ নষ্ট করেন আপনি আল্লাহর হুকুম পালন করলেন? না, আল্লাহর নির্দেশ পালন করেন নি আপনি, আপনি সম্পদ নষ্ট করলেন, অপচয় ও অপব্যয় করলেন, বরং আপনি আপনার অনিষ্টের পথে নিজ সম্পদ খরচ করলেন। অধিকন্তু এভাবে আপনি আপনার জাতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করলেন, শত্রুদের আর্থিক সুবিধা দিলেন যারা রাত-দিন ইসলামের অনিষ্ট সাধনে লিপ্ত।

وبفضل جهدك قد غدوت لصانعي *** تلك السموم السود خيْرَ مُعينِ

تَحْبُوهُمُ المـــــــالَ الذي لولاه لم *** يجدوا السبيلَ لكيد هذا الدينِ

“আপনার কৃপায় আপনি তাদের বিষাক্ত হাতিয়ার তৈরিতে সাহায্য করছেন। তাদেরকে আপনি সম্পদ দিচ্ছেন, যদি এ সম্পদ না হত, তারা কখনো এ দীনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে সক্ষম হত না”।

এ ছাড়াও ধূমপানের কারণে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়। আপনি ধূমপান করেন তাই ধূমপান বিক্রয়, বিপণন ও প্রচারে অনেক অর্থ ব্যয় হয়। আবার আপনাকেই ধূমপান থেকে বিরত রাখার জন্য স্বাস্থ্য কর্মী, স্বেচ্ছাসেবী ও দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়, অর্থ ব্যয় করে প্রচারণা চালাতে হয়, সভা-সেমিনার করতে হয়। ধূমপানজনিত সৃষ্ট রোগের চিকিৎসায় ব্যয়িত অর্থ মূলত ধূমপানের কারণে খরচ হয়! যদি আপনি ধূমপান ত্যাগ করেন এসব অর্থনৈতিক ক্ষতি থেকে দেশ সুরক্ষা পাবে। আপনি অপরাধ ও পাপের সাহায্য থেকে বিরত থাকলেন।

১৭- জীবন অমূল্য সম্পদ। আবার তা সংক্ষেপ ও অনিশ্চিত, যে কোনো সময় মৃত্যু হানা দিতে পারে, আপনি ধূমপান করে তা আরো হ্রাস করছেন। যারা ধূমপান করে না তারা ধূমপায়ীদের তুলনায় দীর্ঘজীবী হয়। বিজ্ঞানের এ যুগে ধূমপানের কারণে বিশ্বে প্রতি বছরে মারা যায় দুই মিলিয়ন পাঁচ লাখ মানুষ! শুধু আমেরিকাতে মারা যায় তিন লাখ পঞ্চাশ হাজার মানুষ।

বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রমাণ করেছে যে, সিগারেট জীবন বিধ্বংসী বস্তু, যা মানুষকে বার্ধক্যে উপনীত করে মৃত্যুর ঘাটে পৌঁছে দেয়। দিনে পনেরটি সিগারেট পানকারী ত্রিশ বছরের যুবক, সিগারেট পান করে না অনুরূপ বয়সের যুবকের তুলনায় পাঁচ বছর হায়াত কম পায়। অর্থাৎ ধূমপান ত্রিশ বছরে পাঁচ বছরের ব্যবধান গড়ে দেয়। [এ বিষয়টি অনেকের নিকট আশ্চর্য ঠেকতে পারে যে, সিগারেটের কারণে কিভাবে হায়াত কমে অথচ আল্লাহ তাআলা আসমান-জমিন সৃষ্টির পূর্বে প্রত্যেকের হায়াত নির্ধারণ করে দিয়েছেন! তিনি ইরশাদ করেন: ﴿ فَإِذَا جَآءَ أَجَلُهُمۡ لَا يَسۡتَأۡخِرُونَ سَاعَةٗ وَلَا يَسۡتَقۡدِمُونَ ٣٤ ﴾ [ الاعراف : ٣٤ ] “অতঃপর যখন তাদের সময় আসবে, তখন তারাএক মুহূর্ত বিলম্ব করতে পারবে না এবং এগিয়েওআনতে পারবে না”। [সূরা আরাফ: (৩৪)]‎এর উত্তর এতে কোন বৈপরীত্য নেই। আল্লাহ যেরূপ প্রত্যেক বস্তুর তাকদীর নির্ধারণ করেছেন, অনুরূপ তিনি প্রত্যেকের তাকদীর তথা নির্ধারিত সময় ও বয়স নির্দিষ্ট উপকরণের সাথে সংশ্লিষ্ট করেছেন। যেমন ভাল স্বাস্থ্য, পুষ্টিকর খাদ্য, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং শরীর ও মনের উপযুক্ত বস্তু গ্রহণ করা দীর্ঘ জীবন লাভের মাধ্যম, তেমনি এসব উপায় গ্রহণ না করা হায়াত হ্রাস করার অন্যতম উপকরণ। ধূমপানকে হায়াত হ্রাসকারী উপকরণ হিসেবে গণ্য করা হয়। অতএব আল্লাহর নির্ধারিত তাকদীর ও ধূমপানের কারণে হায়াত হ্রাসের মধ্যে কোন বৈপরীত্য নেই। যেমন উদাহরণত ক্ষুধার সম্পর্ক খাদ্যের সাথে, তৃষ্ণার সম্পর্ক পানির সাথে, সন্তান হওয়ার সম্পর্ক সহবাসের সাথে ও শস্য জন্মানোর সম্পর্ক বীজ বপনের সাথে তাকদীর পরিপন্থী নয়, অনুরূপ ধূমপানের সাথে হায়াত হ্রাসের সম্পর্কও তাকদীর পরিপন্থী নয়। কতক বিষয় রয়েছে যার কারণে হায়াত বৃদ্ধি পায় যেমন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা, ইস্তেগফার করা ইত্যাদি। অনুরূপ কতক বিষয় রয়েছে যার কারণে হায়াত হ্রাস পায় যেমন পাপ ও অন্যান্য গুনাহ। অতএব কোন বুদ্ধিমানের মুখে এ প্রশ্ন মানায় না যে, উপকরণের সাথে কোনো বিষয়কে সংশ্লিষ্ট করা পূর্ব নির্ধারিত তাকদীর পরিপন্থী অথবা কোনভাবে তার সাথে সাংঘর্ষিক। সুতরাং এ ভূমিকার পর আমরা জানলাম যে, ধূমপান দু’ভাবে ধূমপায়ীর জীবন হ্রাস করে: এক. ধূমপান আল্লাহর নাফরমানি। দুই. ধূমপান শরীরের জন্য ক্ষতিকর। দেখুন লেখকের: “আল-ঈমান বিল কাদা ওয়াল কাদার” বই। [অর্থাৎ ধুমপায়ীর তাকদীরে লিখা আছে যে, লোকটি অন্যায় করে ধুমপান করার কারণে তার আয়ূ এত এত দিন হবে, সে অনুসারেই তার আয়ূ লেখা হয়েছে। এতে পরিবর্তন পরিবর্ধন হবে না। (সম্পাদক)]] উপরন্তু ধূমপানের কারণে শেষ বয়সের পুরোটা বিষাদ, বিরক্ত ও কষ্টে ভরে যায়।

১৮- আমাদের সবার অভীষ্ট লক্ষ্য সফলতা অর্জন করা। আমরা সবাই সফলতা কামনা করি, তাই সবাই তার জন্য চেষ্টা করি ও তার পথ খুঁজে বেড়াই। অথচ আপনি ধূমপান করে প্রকৃত সফলতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সুন্দর জীবন উপভোগ করার মুহূর্তগুলো বিনষ্ট করে দিচ্ছেন, যদিও আপনার ভাবনায় আপনি নতুন স্বাদ নিচ্ছেন ও জীবনকে উপভোগ করছেন! কিন্তু আপনি জানেন না আপনার এ ধারণা অমূলক। ধূমপান ত্যাগ করা ব্যতীত কখনো আপনি প্রকৃত সফলতা লাভে ধন্য হবেন না। একজন ধূমপায়ী কিভাবে সুখী হয়, যার জীবন ঝুঁকিপূর্ণ ও বিষাদময়? বাস্তবিক পক্ষে ধূমপায়ীরা দুর্বিষহ জীবন যাপন করে।

১৯- মানুষের বিবেক ও মেধা আল্লাহর দেয়া বড় নিয়ামত। এ নিয়ামতের কারণে আল্লাহ আপনাকে অন্য মখলুকের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। অথচ আপনি ধূমপান করে বিবেক বিনষ্ট করছেন, তার প্রখরতা নিস্তেজ করে দিচ্ছেন। কারণ ধূমপানের কারণে বিবেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, মেধা দুর্বল হয় ও দেহ-মনে পতনের আলামত দেখা যায়, ধূমপায়ী ও অধূমপায়ী ছাত্রদের মাঝে তুলনা করলে বিষয়টি সহজেই অনুমেয়।

আমেরিকার একদল বিশেষজ্ঞ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের মাঝে এক পরিসংখ্যান করে দেখেছেন যে, ধূমপায়ী ছাত্রদের স্মৃতিশক্তি ও বুঝার ক্ষমতা অধূমপায়ী ছাত্রদের তুলনায় অনেক কম। বরং অন্যান্য নেশা জাতীয় দ্রব্যের তুলনায় ধূমপানের প্রভাব মস্তিষ্কে খুব দ্রুত বিস্তার করে। সিগারেট জ্বালিয়ে ধূমপান আরম্ভ করার এক মিনিটের কম সময়ে তার ক্রিয়া মগজে পৌঁছে যায়।

২০- মানুষের হৃদয় তার সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সরদার। হৃদয়ের গুরুত্ব আমাদের সবার নিকট অনস্বীকার্য। অথচ আপনি ধূমপান করে রাতদিন আপনার হৃদয়কে ক্ষতিগ্রস্ত করছেন, তাতে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছেন, রক্ত দূষিত করছেন ও আকস্মিক মৃত্যুর সম্ভাবনা গড়ে তুলছেন। কারণ ধূমপানের ফলে রক্তচাপ বৃদ্ধিসহ অন্যান্য রোগের জন্ম হয়।

২১- আপনার দু’চোখ আপনার জীবনের জানালা ও জ্ঞানের দরজা। চোখ দ্বারা আপনি সব কিছু দেখেন ও আসমান-জমিনের নিদর্শন পর্যবেক্ষণ করেন। অথচ ধূমপান করে আপনি এ জানালা বন্ধ করছেন, তার আলো নিভিয়ে দিচ্ছেন বা দুর্বল করছেন। সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রমাণ করেছে যে, দিনে এক প্যাকেটের অধিক সিগারেট পান করা চোখের ছানি ও অন্ধত্ব রোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। ধূমপানের ফলে চোখের পাতায় বিভিন্ন প্রদাহ ও চোখের মনিতে স্নায়ু প্রদাহের সৃষ্টি হয়, ধীরে ধীরে অন্ধত্বের দিকে ধাবিত করে।

২২- জ্ঞানীরা সম্মান অর্জন করে এবং মর্যাদার সিঁড়ি বেয়ে উঁচুতে ওঠার চেষ্টা করে। আপনি ধূমপান করে নিচে অবতরণ করছেন। কারণ ধূমপান আপনাকে অসম্মান করছে, আপনার সম্মান বিনষ্ট করছে ও জনসম্মুখে আপনাকে হেয় করছে। সর্বোপরি ধূমপান আপনার অক্ষমতা ও দুর্বল সিদ্ধান্তের প্রমাণ বহন করে। প্রিয় পাঠক, আমি কখনো মনে করি না আপনি এ পতনে সন্তুষ্ট!

আপনি কি ইমাম শাফে‘ঈ রাহিমাহুল্লাহ্‌র বাণী শ্রবণ করেন নি: “যদি আমি জানি যে, ঠাণ্ডা পানি আমার সম্মান হ্রাস করবে, তাহলে কখনো ঠাণ্ডা পানি পান করব না”। [রওযাতুল মুহিহিব্বন লি ইব্‌নিল কাইয়্যিম, (পৃ.৪৬৮)]

২৩- ধূমপান ইবাদতে অলসতা সৃষ্টি করে ও তার প্রতি অনাগ্রহ বাড়ায়, বরং আপনাকে অন্যান্য নেশা দ্রব্য, অপরাধ ও মাদকের দিকে ধাবিত করবে।

تلك العصا من هذه العصية *** لا تلـــــد الحيَّةُ إلا حيةْ

“ঐ বড় লাঠি ছোট এ লাঠি থেকেই, সাপ তো শুধু সাপই জন্ম দেয়”।

২৪- বড়দের সঙ্গ‎ লাভ করা সম্মান ও মর্যাদার বিষয়। কপালপোড়া ব্যতীত কেউ তাদের সঙ্গ‎ থেকে দূরে থাকে না। ধূমপান আপনাকে তাদের থেকে দূরে রাখে ও নিচুমানের লোকদের সঙ্গ‎ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কী-ই বা আছে!

২৫. দৈনন্দিন কাজে আপনার প্রয়োজন ইখলাস, শক্তি, চঞ্চলতা ও উদ্যমতা। আপনি ধূমপান করে ইখলাস বিনষ্ট করছেন, শক্তি ক্ষয় করছেন ও শরীরে দুর্বলতা আনয়ন করছেন, বরং কাজের ক্ষমতা নিঃশেষ করে দিচ্ছেন, যার পরিণতি হিসেবে আপনি আপনার ও জাতির বোঝায় পরিণত হবেন।

২৬. সুস্থতা মানব দেহের মুকুটস্বরূপ, যার কদর একমাত্র রোগীরাই জানে। সুস্থতা এমন এক সম্পদ যা টাকায় কেনা যায় না। মানুষরা সুস্থতার জন্য ছোট-বড় রোগ-ব্যাধি থেকে সুরক্ষা গ্রহণ করে। আপনি ধূমপান করে নিজেকে ধ্বংস করছেন, জেনে বা না-জেনে ধূমপান করে নিজের ক্ষতির চেষ্টা করছেন। ধূমপায়ীর সকল অঙ্গ ধূমপানের অনিষ্টে আক্রান্ত হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে, অন্যান্য ক্ষতিকর বস্তু থেকে ধূমপানের ক্ষতি অনেক বেশী, যা হিসাবের বাইরে। কবি বলেন:

يا مَنْ يُريدُ دمارَ صِحّتِهِ وَيَهْـ *** وَى الموتَ منتحرًا بلا سِكِّينِ

لا تيأسنَّ فإنَّ مثلَكَ واجــــدٌ *** كلَّ الــذي يرجوه بالتدخينِ

“কে আছ তুমি, যে নিজের সুস্থতা ধ্বংস করতে চাও ও বিনা ছুরিতে কেটে মৃত্যু কামনা কর। তুমি নিরাশ হয়ো না, তোমার ন্যায় লোকের অভাব নেই, ধূমপান করে মৃত্যু কামনাকারী সবাই তোমার দলের”।

২৭- মানুষ মাত্র ক্যান্সারকে খুব ভয় পায়। ক্যান্সারের নাম শোনার সাথে ভয়ে ও আতঙ্কে শরীর শিউরে উঠে। অথচ আপনি ধূমপান করে নিজের মধ্যে ক্যান্সারের প্রকোপ বৃদ্ধি করছেন ও তার দিকে দ্রুত ধাবিত হচ্ছেন। আপনি জানেন ধূমপান একাধিক ক্যান্সারের প্রধান কারণ? জেনে রাখুন, ধূমপান ফুসফুসে ক্যান্সার, স্বরযন্ত্রী ও ঠোঁটে ক্যান্সার, ইসফাগিয়াল ক্যান্সার, অন্ননালী ক্যান্সার, মুখের ক্যান্সার, জিহ্বার ক্যান্সার, অগ্ন্যাশয় ক্যান্সার, মূত্রাশয় ক্যান্সার ও কিডনি ক্যান্সারের কারণ।

২৮- দাঁত মানুষের সৌন্দর্য। মানুষ চায় সুন্দর অবয়ব ও পরিপাটি হয়ে মানুষের সাথে মিলিত হতে। তাই তারা দাঁতের যত্ন নেয় ও দাঁতের চিকিৎসার জন্য হাজার হাজার টাকা খরচ করে। কারণ দাঁত মুখের সৌন্দর্য। অথচ আপনি ধূমপান করে আল্লাহর দেয়া মাড়ি, মুখ, জিহ্বা, ঠোঁট ও দাঁত কালো, ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্গন্ধময় করছেন!

২৯- বিষ মানুষের শরীরের ঘাতক, জীবন বিনষ্টকারী ও মৃত্যুর অপর নাম। মানষিক রোগী ও বিকারগ্রস্ত ব্যতীত কেউ তা স্বেচ্ছায় গ্রহণ করে না, অথচ আপনি ধূমপান করে দেখে-শুনে বিষ পান করছেন, অর্থের অপচয় করছেন।

আপনি জানেন সিগারেটের ধোঁয়ায় আনুমানিক 1000 বিষাক্ত উপসর্গ রয়েছে, সবচেয়ে বিপজ্জনক ও সর্বাধিক ক্ষতিকর হল নিকোটিন ও কার্বন মনো অক্সাইড। সবুজ তামাক পাতায় ২% থেকে 10% পার্সেণ্ট ও পেষা চূর্ণিত পাতায় ০.৫% থেকে 5% পার্সেণ্ট নিকোটিন থাকে। বাজারে সরবরাহকৃত সিগারেটে রয়েছে 1% থেকে 3% পর্যন্ত নিকোটিন।

নিকোটিনের ওপর পরিচালিত গবেষণা দ্বারা নিম্নের বিষয়গুলো প্রমাণিত হয়েছে:

ক. নিকোটিন দ্বারা শরীরের সকল টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

খ. একগ্রাম নিকোটিন বড় দশটি কুকুর হত্যার জন্য যথেষ্ট।

গ. একঘন সেন্টিমিটার নিকোটিন দ্রুত সময়ে একটি ঘোড়া হত্যার জন্য যথেষ্ট।

ঘ. একফোটা নিকোটিন মুহূর্তে একটি ইঁদুর হত্যার জন্য যথেষ্ট।

ঙ. ৫০ মিলিগ্রাম নিকোটিন ইনজেকশন দ্বারা পুশ করা হলে একজন মানুষ হত্যার জন্য যথেষ্ট।

কার্বন মনো অক্সাইড রক্তের অক্সিজেন চোষণ ক্ষমতা ও অক্সিজেন থেকে টিস্যুর উপকৃত হওয়ার শক্তি হ্রাস করে।

৩০- সারকথা ধূমপান অনেক রোগের জন্ম দেয়। ধূমপানের ধর্ম হচ্ছে মানুষ ধ্বংস করা ও তাদের জীবন দুর্বিষহ করা। ধূমপানের অনিষ্ট শরীরের এক জায়গায় স্থির থাকে না, বরং বিভিন্ন জায়গায় বিস্তার লাভ করে, এক সময় ধূমপায়ীর সকল অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। ধূমপানের আরো কতক ক্ষতি:

ধূমপানের কারণে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, বদ হজম, লিভার সিরোসিস, ব্রেন স্ট্রোক, ফুসফুসে যক্ষ্মা, ফুসফুসের ক্ষমতা হ্রাস ও কণ্ঠনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মস্তিষ্কের ধমনীতে ক্ষত সৃষ্টি হয়, মস্তিষ্ক ধমনী সংকীর্ণ হয়, মস্তিষ্ক নালীর স্থূলতা বাড়ে, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া ও দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠবদ্ধতা হয়। মাথা ব্যথা, মাথা ঝিমঝিম করা, অনিদ্রা, কিডনির অকৃতকার্যতা, শ্রবণেন্দ্রিয়ের দুর্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং নাকের অনুভূতি নিঃশেষ বা দুর্বল হয়। ধূমপান এলার্জি বৃদ্ধি করে, চামড়া সংক্রমণ ব্যাধিতে আক্রান্ত করে, পেটে ব্যথা ও গ্রহণী জাতীয় নানা রোগের সৃষ্টি করে। এ ছাড়া অনেক গুরুতর রোগের জন্ম দেয় ধূমপান। পুরো শরীরের ক্রিয়া মন্থর করে।

৩১- ধূমপানের অনিষ্ট পাশে থাকা অধূমপায়ীকে আক্রান্ত করে। ধূমপান পেটের বাচ্চা ও গর্ভের ভ্রূণ ক্ষতি করে। ধূমপানের কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ধূমপানের ফলে বায়ু দূষণ হয়। বলাবাহুল্য ধূমপান ও গাড়ি দুর্ঘটনা একে অপরের সাথে সংশ্লিষ্ট।

ধূমপায়ী প্রিয় পাঠক, আপনি এখনো ধূমপানের ক্ষতি সম্পর্কে নিশ্চিত হননি! ধূমপান যে অবৈধ ও ক্ষতিকর, এতে কি আপনার কোনো সন্দেহ আছে? বিবেকী ও চিন্তার অধিকারী ব্যক্তির জন্য এ আলোচনা কি যথেষ্ট নয়!?

আপনি আপনার অভ্যাস মোতাবেক বলবেন: নিশ্চয়, নিশ্চয় যথেষ্ট।

তাহলে আমার জিজ্ঞাসা আপনি কখন ধূমপান ত্যাগ করবেন?

আপনি নিশ্চয় বলবেন: আগামী কাল বা আগামী পরশু অথবা ধূমপান ত্যাগ করার চেষ্টা করব।

তাহলে আমার সংশয় পূর্বের আলোচনা থেকে আপনি নিশ্চিত হন নি, আপনি ধূমপান অব্যাহত রাখবেন, কখনো ত্যাগ করবেন না।

আপনি বলবেন: না, ক্ষমা করবেন, আমি পুরোপুরি নিশ্চিত, কিন্তু ধূমপান ত্যাগ করা আমার জন্য কষ্টকর। একবারে ত্যাগ করা কঠিন বা পুরোপুরি ত্যাগ করতে পারব না।

প্রিয় পাঠক, তাহলে সমাধান কি? আমরা আপনার থেকে নিরাশ বসে থাকব? আপনি আপনার দীন-দুনিয়া বিনষ্ট করবেন আমরা তা নিশ্চুপ প্রত্যক্ষ করব?

আপনি বলবেন: না, এ পর্যায়ে পৌঁছেনি, কিন্তু করার কি আছে?

হয়ত আপনি বলবেন: ধূমপান থেকে মুক্তির অন্য পথ গ্রহণ করব। ধূমপান ত্যাগ করে গুল ব্যবহার করব অথবা হুক্কা ব্যবহার করব, যা ধূমপানের তুলনায় কম ক্ষতিকর।

আমি বলব: না, এরূপ কখনো করবেন না। এর অর্থ হচ্ছে রৌদ্র থেকে বাচার জন্য আগুনের আশ্রয়ে যাওয়া! আপনি জানেন না গুল ও হুক্কার মধ্যে ধূমপানের ন্যায় ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে!

হয়ত আপনি বলবেন: ধূমপানের চেয়ে কম নিকোটিন যুক্ত মাদক গ্রহণ করব, কারণ কতক বস্তুর ক্ষতি কতক বস্তুর তুলনায় কম।

আমি বলব: এটা বড় ধোকা, এসব বস্তুর ক্ষতি নিশ্চিত, কারণ:

ক. এভাবে সিগারেটের বিকল্প অধিক মাদক গ্রহণ করা হয়।

খ. এভাবে ধূমপায়ীরা সিগারেটের চেয়ে অধিক শ্বাস গ্রহণ করে।

গ. এভাবে ধূমপায়ীরা গভীরভাবে শ্বাস গ্রহণ করে এবং যতক্ষণ তা ধরে রাখে, যেন সিগারেটের চাহিদা পূর্ণ হয়।

ঘ. এসব পদ্ধতি আপনাকে অধিক মাদক গ্রহণের দিকে নিয়ে যাবে, আপনার অনিচ্ছা ও অজ্ঞতাসারে!

অতএব সমাধান হিসেবে তা গ্রহণ করার কোন সুযোগ নেই।

হয়ত আপনি বলবেন: আমাকে আপনি অপারগ করে দিয়েছেন। আমার সকল পথ আপনি বন্ধ করে দিয়েছেন।

আমি আপনাকে থামিয়ে দিয়ে বলব: না ভাই, আমি আপনাকে অপারগ করি নি, আমি আপনার পথ সংকীর্ণ করি নি। এ কথা ঠিক যে, প্রত্যেক রোগের ওষুধ রয়েছে, প্রত্যেক সমস্যার সমাধান রয়েছে।

হয়ত আপনি বলবেন: তাহলে সমাধান কি?

আমি বলব: এখনি আপনি ধূমপান ত্যাগ করুন, কখনো তা গ্রহণ করবেন না। হয়ত আপনি আবেগ, উচ্ছ্বাস, আশা ও আনন্দ চিত্তে বলবেন: কিভাবে ত্যাগ করব? এ ধ্বংসাত্মক ব্যাধি থেকে মুক্তির পথ কি? কার্যকর পদ্ধতি কোনটি?

আমি বলব: প্রিয় ভাই, আপনার কান আমাকে ধার দিন, আমার জন্য আপনার অন্তর খুলে দিন, অবশ্যই আপনি পেয়ে যাবেন আপনার তৃষ্ণা নিবারণকারী মদিরা ও ব্যাধি থেকে মুক্তকারী মহৌষধ!

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন