HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
কেন ধূমপান করেন
লেখকঃ শাইখ মুহাম্মদ ইবরাহিম আল-হামদ
৫
লক্ষ্য করুন: ধূমপান ছাড়ার কিছু সহায়ক উপায় পেশ করছি:১- স্মরণ করুন ধূমপান ক্ষতিকর ও শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম। কখনো ভুলবেন না ইসলামের দৃষ্টিতে ধূমপান হারাম এবং ধূমপান শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এ দু’টি বিষয়ই আপনাকে ধূমপান ত্যাগ করতে সহায়তা করবে।
বারবার ধূমপান করা, ধূমপানের নিষেধাজ্ঞার প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করা ধূমপান বৈধ স্বীকৃতি দেয়া ও তার অনিষ্ট অস্বীকার করার নামান্তর, যা ধূমপান করার চেয়ে মারাত্মক!
২- ধূমপান করব না মর্মে খালেস দিলে তওবা করুন। আপনার নিকট যখন স্পষ্ট হল, আপনি যখন নিশ্চিত হলেন যে, ধূমপান শরীর ও দীনের জন্য ক্ষতিকর, অতএব আপনি আপনার রবের নিকট তওবা করুন। ধূমপানের কারণে আপনার শরীর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আগেই আপনি হিদায়েতের দিকে ফিরে আসুন। হঠাৎ মৃত্যু হানা দেয়ার আগেই আপনি লজ্জা, শরম ও দ্বিধা ত্যাগ করে সঠিক পথ গ্রহণ করুন। খবরদার কখনো আগামী কাল, বা এই ছেড়ে দিচ্ছি দিব বলবেন না, কারণ এটাও এক ধরণের পাপ, যা থেকে তওবা করা জরুরী।
৩- আল্লাহর জন্য ইখলাস গ্রহণ করুন। খাঁটি ইখলাসই ধূমপান ও অন্যান্য হারাম বস্তু ত্যাগ করার জন্য যথেষ্ট। আপনি যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার নিমিত্তে এবং তার ভয় ও আযাব থেকে দূরে থাকার জন্য ইখলাস গ্রহণ করেন, সত্যিকার তওবা করেন, তাহলে অবশ্যই আল্লাহ আপনাকে তাওফিক দিবেন, আপনার তাওবা কবুল করবেন। আল্লাহ আপনাকে নিরাশ করবেন না, ধূমপান ত্যাগ করা আপনার জন্য তিনি সহজ করবেন। আপনাকে তার কল্যাণ অর্জন করার তাওফিক দিবেন।
৪- অন্তর আল্লাহর মহব্বত দ্বারা পূর্ণ করুন। যার মধ্যে আল্লাহর মহব্বত রয়েছে সে বিচ্যুতি থেকে নিরাপদ। আমাদের অন্তরের ক্ষুধা, অভাব ও শূন্যতা একমাত্র আল্লাহর মহব্বতেই পূর্ণ হতে পারে। আল্লাহর মহব্বতের ফলে অন্তর তৃপ্ত ও আনন্দিত হয়, বরং নফসের প্রিয় বস্তু ত্যাগ করে আল্লাহর দিকে ধাবিত হয়।
বস্তুত মানুষের অন্তরে আল্লাহর মহব্বতের ঘাটতির অনুপাতে চিন্তা, পেরেশানি ও দুঃখ বাসা বাঁধে।
আল্লাহর মহব্বত থেকে যে অন্তর একেবারে শূন্য, সে অন্তর দুশ্চিন্তা, দুঃখ ও কষ্ট থেকে কখনো মুক্তি পায় না। তার অন্তরে অন্য সকল মহব্বত ভিড় করে, তার কার্যাদি বিক্ষিপ্ত ও এলোমেলো করে দেয়। অতএব ধূমপানে অভ্যস্ত ব্যক্তির আল্লাহ মহব্বত দ্বারা অন্তর পূর্ণ করা ব্যতীত কোনো উপায় নেই।
শায়খুল ইসলাম ইব্ন তাইমিয়াহ রহ. বলেন: আল্লাহর ইবাদত, মহব্বত ও তার দিকে মনোনিবেশ ব্যতীত অন্তর কখনো সুখ, সফলতা, নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা পায় না। উপভোগ ও বিনোদনের সকল বস্তু থাকা সত্যেও সে তৃপ্ত হয় না, প্রকৃত আনন্দ লাভ থেকে বঞ্চিত হয়। কারণ তার অন্তর সে উপাদান থেকে শূন্য, যার মাধ্যমে প্রকৃত সুখ ও কল্যাণ লাভ হয়। [আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা: (৫/১৮৮-১৮৯)]
প্রিয় পাঠক, আপনি যদি আল্লাহর মহব্বত আপনার মূল লক্ষ্যে পরিণত করেন, গোপনে ও প্রকাশ্যে আল্লাহকে স্মরণ করেন, তাহলে ইনশাআল্লাহ আপনার প্রবৃত্তি ও নফসের ওপর আপনি বিজয়ী হবেন। শয়তানকে আপনি পরাস্ত করতে পারবেন।
আল্লাহর মহব্বত অর্জন করার মাধ্যম হচ্ছে ফরয পরবর্তী নফল আদায় করা, সর্বাবস্থায় আল্লাহর স্মরণ করা। এ নিয়ে সামনে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
অতএব আপনার সামনে যখন আল্লাহর মহব্বতের প্রয়োজনীয়তা প্রমাণিত হল, আপনি কিভাবে তা গ্রহণ করেন বা তাতে অভ্যস্ত হন যা আল্লাহর মহব্বতকে ক্ষতিগ্রস্ত করে?!
৫- আল্লাহর সাহায্য তলব করুন। ধূমপান ত্যাগ করার উপকরণ গ্রহণ করুন, যার বর্ণনা সামনে আসছে। অতঃপর আপনার বিষয় আল্লাহর নিকট সোপর্দ করুন। তার নিকট সাহায্য ও মদদ তলব করুন। আল্লাহ আপনাকে সাহায্য করবেন, আপনার ওপর সদয় হবেন, যা আপনার কল্পনার অতীত। তিনি সুন্দর সাহায্যকারী ও উত্তম অভিভাবক। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿ وَمَن يَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱللَّهِ فَهُوَ حَسۡبُهُۥٓۚ﴾ [ الطلاق : ٣ ]
“আর যে আল্লাহ ওপর তাওয়াককুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট”। [সূরা তালাক: (৩)]
৬- ধূমপান ত্যাগ করার উপকারিতা স্মরণ করুন। কারণ যার উপকারিতা স্বীকৃত তা গ্রহণ করা সহজ হয়। যখনি ধূমপানের কথা মনে পড়ে, ধূমপান ত্যাগ করা কষ্টকর লাগে, তখনি ধূমপানের অনিষ্ট সম্পর্কে চিন্তা করুন। আশা করি এভাবেই ধূমপান ত্যাগ করা আপনার জন্য সহজ হবে।
স্মরণ করুন আল্লাহর জন্য যে কোনো বস্তু ত্যাগ করল, আল্লাহ তাকে তার চেয়ে উত্তম বস্তু দান করেন। সবচেয়ে উত্তম বস্তু আল্লাহর মহব্বত, অন্তরের প্রশান্তি, কর্মের শক্তি, সামর্থ্য, চঞ্চলতা ও আল্লাহর ওপর সন্তুষ্টি। [দেখুন: আল-ফাওয়ায়েদ লি ইব্নিল কাইয়্যিম, (পৃ.১৬)]
আরো স্মরণ করুন কষ্টকর ইবাদতে যেমন অধিক সাওয়াব, তেমনি অভ্যস্ত পাপ ত্যাগ করা অধিক সাওয়াব।
স্মরণ করুন ধূমপান ত্যাগ করে নিজেকে নিশ্চিত ক্ষতি থেকে রক্ষা করছেন।
প্রবৃত্তি ও নফসের ওপর বিজয়ী হওয়ার স্বাদ স্মরণ করুন, এ স্বাদই বড় স্বাদ।
৭- ধূমপানের অনিষ্ট ও ধূমপান ত্যাগ করার উপকারিতা তুলনা করুন। আপনি ধূমপানের ক্ষণিক স্বাদ স্মরণ করুন, যদি তাতে স্বাদ থাকে, তাহলে আপনার নিকট ধূমপানের অনিষ্ট স্পষ্ট হয়ে যাবে। যে স্বাদ ক্ষণিকেই নিঃশেষ হয় তার বিনিময়ে আপনি কিভাবে ধ্বংস, দুশ্চিন্তা, দুঃখ ও কষ্ট প্রাধান্য দেন!?
৮- দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করুন। আপনার মধ্যে ধূমপান ত্যাগ করার যত ইচ্ছা থাক, আপনি ধূমপানের ক্ষতি সম্পর্কে যতই জানুন, যদি আপনার মধ্যে সত্যিকার প্রতিজ্ঞা না থাকে ধূমপান ত্যাগ করতে পারবেন না।
৯- ধূমপান ত্যাগ করার জন্য শক্তিশালী ইচ্ছা জরুরী। শক্তিশালী ইচ্ছাই কঠিন কাজ সহজ করে দেয়, তা বাস্তবায়নের জন্য সামনে অগ্রসর হতে সাহায্য করে। শক্তিশালী ইচ্ছার অধিকারী কোনো বাধার সম্মুখে থামে না, বরং সামর্থ্যের সবটুকু ব্যয় করে সামনে অগ্রসর হয়। তার নিকট সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার চেয়ে কঠিন কোনো কাজ নেই।
এটাই মানুষের সফলতার মাপকাঠি, দৃঢ়চিত্তের পরিচয়। দৃঢ়চিত্তরা কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে পিছপা হয় না, মসৃণ ও কণ্টকাকীর্ণ সব পথই অতিক্রম করে, সহজ ও কঠিন সকল উপকরণ গ্রহণ করে।
এ কথা ঠিক যে, মানুষের শরীরে যেমন নানা রোগ-ব্যাধির উপসর্গ দেখা দেয়, তেমনি তার সৎ ইচ্ছার ওপর বাধার সৃষ্টি হয়, ফলে সে প্রবৃত্তির মোকাবেলা করতে সক্ষম হয় না, বাধা ও বিপত্তি অতিক্রম করে সামনে অগ্রসর হতে পারে না। এর নিদর্শন হচ্ছে মানুষ কোনো কল্যাণের সিদ্ধান্ত নিল, কিন্তু পরক্ষণে তার মধ্যে হীনমন্যতা বাসা বাঁধে, ফলে সে প্রবৃত্তির দাসে পরিণত হয়। অন্যথায় অধিকাংশ ধূমপায়ী জানে ধূমপান হারাম, ধূমপান ত্যাগ করার ইচ্ছা করে, কিন্তু পরবর্তীতে তার ইচ্ছা দুর্বল হয়ে অনিচ্ছায় পরিণত হয়।
ইচ্ছার এ দুর্বলতা দূর করার জন্য এমন কিছু করুন যা কষ্ট ও সাধনা দাবি করে। অতঃপর আস্তে আস্তে নফসকে কঠিন কাজে অভ্যস্ত করুন। আত্মসমালোচনা করুন, সাওয়াব ও শাস্তির কথা চিন্তা করুন ইত্যাদি।
১০- ধৈর্য ধারণ করুন। ধৈর্য সুন্দর আখলাক ও প্রশংসিত স্বভাব। প্রত্যেক মানুষ ধৈর্যের মুখাপেক্ষী। অনিচ্ছা ও অপছন্দনীয় সকল বিষয়ে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় ধৈর্য ধারণ করা অপরিহার্য। সম্মানিত ব্যক্তিরা স্বেচ্ছায় ধৈর্য ধারণ করে, কারণ সে তার পরিণতি সম্পর্কে জানে, ধৈর্যহীনতার কারণে মানুষ তিরস্কারের সম্মুখীন হয়।
সন্দেহ নেই ধূমপান ত্যাগ করার শুরুতে কষ্ট হবে, কারণ ধূমপান ত্যাগ করা নফসের জন্য কঠিন, কিন্তু অসম্ভব ও অবাস্তব নয়।
ইব্নুল কাইয়্যূম রহ. বলেন: ‘চিরাচরিত স্বভাব ও পছন্দের বস্তু ত্যাগ করা তার জন্যই কষ্টকর, যে তা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো সন্তুষ্টির জন্য ত্যাগ করে। কিন্তু ইখলাসের সাথে আল্লাহর জন্য যে তা ত্যাগ করল, সে তাতে কষ্ট অনুভব করে না। প্রথম প্রথম অবশ্যই কষ্ট হয়, কিন্তু সে তাতে বিজয়ী হয়। সে তার প্রতিজ্ঞায় সত্যবাদী প্রমাণ দেয়। কষ্টের ওপর ধৈর্য ধারণই এক সময় স্বাদ ও সুখে পরিণত হয়’। [আল-ফাওয়ায়েদ: (পৃ.১৫৯-১৬০)]
প্রিয় পাঠক, ধৈর্যের তিক্ততা গলাধঃকরণ করুন, শুরুতে বঞ্চিত হোন, শেষে নিশ্চয় আপনি তার স্বাদ ও মিষ্টতা আস্বাদন করবেন। কোন কবি বলেছেন:
والصبر مثلُ اسمه مرٌّ مذاقَتُهُ *** لكنْ عواقُبُه أحلى من العسل
“সবর তার শব্দের মতই আস্বাদন করা তিক্ত (ফিটকিরীকে আরবীতে ‘সবর’ বলা হয়, যা তিক্ত), কিন্তু তার পরিণতি মধুর চেয়ে মিষ্টি”। অপর কোন কবি বলেছেন:
وقلَّ مَنْ جدَّ في أمرٍ تَطَلَّبَهُ *** واستصحب الصبرَ إلا فاز بالظَّفَرِ
والصبرُ أكرمُ من صحبتَ مواسيًا *** يحنو على الكبد الجديب فيينعُ
“দুষ্কর হবে তাদের সন্ধান পাওয়া, যারা কোন বিষয়ে ধৈর্যের সাথে কঠোর পরিশ্রম করেও সফল হন নি। আপনি যাদের সঙ্গ গ্রহণ করেছেন তাদের মধ্যে ধৈর্যই অধিক সান্ত্বনা দানকারী, ধৈর্যই ক্ষত হৃদয়কে সমবেদনা জানায়, ফলে সে সতেজ হয়ে ওঠে”।
আরো মনে রাখুন, ধৈর্যের কারণে আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনি সাহায্য প্রাপ্ত হবেন। আল্লাহ ধৈর্যশীলদের পছন্দ করেন, তিনি ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«ومن يتصبر يصبره الله» .
“যে ধৈর্য ধারণের চেষ্টা করে, আল্লাহ তাকে ধৈর্য ধারণ করার তাওফিক দান করেন”। [বুখারি: (৭/১৮৩), মুসলিম: (১০৫৩)]
মনে রাখুন, ধূমপানের কারণে যেসব সমস্যার সৃষ্টি হয়, তা চিন্তা করলে ধূমপান ত্যাগ করে ধৈর্য ধারণ সহজ।
১১- ধূমপান ত্যাগ করার জন্য মুজাহাদা বা কঠোর প্রচেষ্টা করুন। আল্লাহর পক্ষ থেকে মুজাহাদাকারীর জন্য কল্যাণ, হিদায়াত ও তাওফিকের সুসংবাদ রয়েছে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:
﴿ وَٱلَّذِينَ جَٰهَدُواْ فِينَا لَنَهۡدِيَنَّهُمۡ سُبُلَنَاۚ وَإِنَّ ٱللَّهَ لَمَعَ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ٦٩ ﴾ [ العنكبوت : ٦٩ ]
“আর যারা আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, তাদেরকে আমি অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আর নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সাথেই আছেন”। [সূরা আনকাবুত: (৬৯)]
প্রিয় পাঠক, আল্লাহর জন্য মুজাহাদা করুন, নিজেকে নফসের প্রবৃত্তি থেকে দূরে রাখুন, অন্যথায় সে আপনাকে গোমরাহি ও অকল্যাণের দিকে ধাবিত করবে।
ইব্ন মুবারক রহ. বলেন:
ومن البلايا من البلاء علامة *** ألا يرى لك من هوالك نزوع
العبد عبد النفس في شهواتها *** والحر يشبع تارة ويجوع
“মুসিবতের মুসিবত হচ্ছে মুসিবতের নিদর্শন যে, ধ্বংস্তূপ থেকে উত্তরণের তোমার কোনো আগ্রহ নেই। বান্দা তার প্রবৃত্তির অনুসরণে নফসের গোলামে পরিণত হয়, আর স্বাধীন কখনো পরিতৃপ্ত হয় কখনো হয় ক্ষুধার্ত”। অপর কবি বলেছেন:
والنفس إن أعطيتها مناها *** فاغرةٌ نحو هواها فاها
“নফস এমন, যদি তুমি তার সব চাওয়া পূর্ণ কর, মুখ হা করে সে তার বাসনার দিকে ছুটবে”। অপর কবি বলেছেন:
إذا المرء أعطى نفسه كلَّ ما اشتهت * ولم ينهها تاقت إلى كل مطلب
“ব্যক্তি যদি তার নফসের সকল চাহিদা পূর্ণ করে, কোনো বিষয়ে তাকে বারণ না করে, তাহলে সে প্রত্যেক চাহিদার দিকেই ধাবিত হবে”।
একবার বা দুইবার চেষ্টা করার নাম মুজাহাদা নয়, বরং মুজাহাদা হচ্ছে মৃত্যু পর্যন্ত চেষ্টা অব্যাহত রাখা।
১২- ধূমপান ত্যাগ করার জন্য দুর্দান্ত হিম্মত থাকা চাই। আপনার মধ্যে ধূমপান ত্যাগ করার হিম্মত না থাকলে কখনোই ধূমপান ত্যাগ করতে পারবেন না। ধূমপান করা খারাপ স্বভাব, ধূমপান করা অপমান।
আপনি জানেন না ধূমপায়ী শুধু মুসলিমদের নিকটই হীন নয়, বরং পশ্চিমা অমুসলিম দেশেও ধূমপানকে খারাপ দৃষ্টিতে দেখা হয়। পশ্চিমা ডাক্তার ও শিক্ষিত সমাজ এক সময় ধূমপান করলেও এখন তারা ধূমপান করেন না। ধূমপায়ীকে হেয় দৃষ্টিতে দেখেন।
خُلِقْتُ أبيَّ النفسِ لا أَتْبَعُ الهوى * ولا أستقي إلا من المشرب الأصفى
ولا أتحرَّى العزَّ فيما يُذِلُّني * ولا أخطب الأعمال كي لا أرى صرفًا
ولست على طبع الذباب متى يُذَدْ * عن الشيء يسقطْ فيه هو يرى الحتفا
“আমাকে প্রবৃত্তির বিরোধী করে সৃষ্টি করা হয়েছে, আমি কখনো প্রবৃত্তির অনুসরণ করব না, পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন পানি ব্যতীত পান করব না। যা আমাকে অসম্মান করে, তাতে আমি কখনো সম্মান তালাশ করব না। আমি কাজকে সম্বোধন করব না যেন পলায়নের কোন পথ না দেখি। আমার স্বভাব মাছির মত নয় যে, যখনি কোন বস্তু হতে হটিয়ে দেয়া হবে তাতে ঝাঁপিয়ে পড়ব, অথচ মাছি মৃত্যু দু’চোখে দেখে”। [যাম্মুল হাওয়া লি ইব্ন জাওযি: (পৃ.৪৮০)]
১৩- নিজের মধ্যে শরম রাখুন। শরম আপাদ-মস্তক কল্যাণ আর কল্যাণ। শরম ইসলামী আখলাক, ঈমানের একটি অঙ্গ। আপনি যদি লজ্জাশীল হন, লজ্জা আপনাকে কল্যাণের দিকে ধাবিত করবে, আপনার থেকে অকল্যাণ দূর করবে। কারণ লজ্জা এমন স্বভাব যা কল্যাণের দিকে ধাবিত করে ও অকল্যাণ থেকে দূরে রাখে।
লজ্জাশীল ব্যক্তি অপমান ও দুনিয়া-আখিরাতের শাস্তিকে ভয় করে, যে কারণে সে কল্যাণ গ্রহণ করে ও খারাপি থেকে দূরে থাকে।
১৪- জামাতের সাথে সালাত আদায় করুন। সালাত অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:
﴿إِنَّ ٱلصَّلَوٰةَ تَنۡهَىٰ عَنِ ٱلۡفَحۡشَآءِ وَٱلۡمُنكَرِۗ ٤٥ ﴾ [ العنكبوت : ٤٥ ]
“নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে”। [সূরা আল-আনকাবূত: (৪৫)]
সালাত যেসব বস্তু থেকে বিরত রাখে, ধূমপান তার মধ্যে অন্যতম। যদি আপনি ঠিকমত সালাত আদায় করেন, সালাতে একাগ্রতা ঠিক রাখেন সন্দেহ নেই সালাত আপনাকে ধূমপান থেকে বিরত রাখবে।
১৫- ধূমপান ত্যাগ করার নববী চিকিৎসা সিয়াম। সিয়াম নফসকে পরিশুদ্ধ করে, সুন্দর চরিত্র দান করে, প্রবৃত্তি ও মনের সাথে যুদ্ধ শেখায়। এভাবে ইচ্ছার মধ্যে দৃঢ়তা সৃষ্টি হয়, ইচ্ছা মজবুত হয় ও হারাম বস্তু ত্যাগ করার শক্তি অর্জন হয়।
১৬- ধূমপান ত্যাগ করার জন্য দো‘আ করুন। দোয়ার ফলে পতিত মুসিবত দূর হয়, অনাগত মুসিবত হটে যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَقَالَ رَبُّكُمُ ٱدۡعُونِيٓ أَسۡتَجِبۡ لَكُمۡۚ ٦٠ ﴾ [ غافر : ٦٠ ]
“আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব”। [সূরা গাফের: (৬০)] অন্যত্র তিনি বলেন:
﴿ وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌۖ أُجِيبُ دَعۡوَةَ ٱلدَّاعِ إِذَا دَعَانِۖ ١٨٦ ﴾ [ البقرة : ١٨٦ ]
“আর যখন আমার বান্দাগণ তোমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে, আমি তো নিশ্চয় নিকটবর্তী। আমি আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া দেই, যখন সে আমাকে ডাকে”। [সূরা বাকারা: (১৮৬)]
অতএব বেশী করে দো‘আ করুন, ইনশাআল্লাহ আল্লাহ আপনার দো‘আ শ্রবণ করবেন, আপনাকে মুসিবত থেকে মুক্তি দিবেন। আপনি দো‘আ কবুলের উপযুক্ত সময়, পরিস্থিতি ও পরিবেশ তালাশ করুন। যেমন সেজদায় দো‘আ করুন, শেষ রাতে দো‘আ করুন, আযান ও ইকামাতের মাঝে দো‘আ করুন। অন্তরের একাগ্রতা ও এখলাস নিয়ে নিরুপায়ীদের ন্যায় দো‘আ করুন। [দেখুন লেখকের কিতাব: “আদ-দোয়া”।]
ماضاق بالمرء أمر فاستعد له *** عبادة الله إلا جاءه الفرجولا أناخ بباب الله ذو ألم *** إلا تزحزح عنه الهم
“ব্যক্তিকে যখনি কোন সমস্যা পিষ্ট করে, অতঃপর তার জন্য আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হয়, তার অবশ্যই মুক্তি আসবে। এমন হয়নি কোন মুসিবতগ্রস্ত আল্লাহর দরজার কড়া নাড়ছে, কিন্তু তার মুসিবত দূর হয় নি”। অপর এক কবি বলেছেন:
والجأ لسيدك الذي لا تأتي *** أبداً بفيض حنانها تتمتع
“আপনি আপনার মনিবের আশ্রয় গ্রহণ কর, শুধু অনুগ্রহে অবগাহন করে ভোগে লিপ্ত হয়ো না”।
১৭- অধিক কুরআন তিলাওয়াত করুন। অধিক কুরআন তিলাওয়াত অন্তরের প্রতিষেধক স্বরূপ। দো‘আ আল্লাহর জমিনে দস্তরখান স্বরূপ। এতে রয়েছে হিদায়াত, নূর, খুশি ও বিনোদন।
প্রিয় পাঠক, কুরআনের প্রতি মনোযোগী হোন, তার চিকিৎসা গ্রহণ করুন, অধিক কুরআন তিলাওয়াত করুন, কুরআন শ্রবণ করুন, মুখস্থ করুন, কুরআন নিয়ে চিন্তা করুন, যেন আপনার অন্তর সুস্থ হয়, নফস পবিত্র হয় ও আপনার জীবন সুখকর হয়। কোন কবি বলেছেন:
وكتابُ ربِّك إن في نفحاته *** من كل خير فوق ما يُتَوَقَّعُ
نورُ الوجود وأنسُ كلِّ مروَّعٍ *** بكروبه ضاق الفضاء الأوسعُ
والعاكفون عليه هم جلساء مَنْ *** لجلاله كلُّ العوالم تخشعُ
فادفن همومك في ظلال بيانه *** تحْلُ الحياة وتطمئنَّ الأضلعُ
فبكل حرفٍ من عجائب وحيه *** نبأٌ يبشر أو نذير يقرعُ
“আর তোমার রবের কিতাব, যার সুগন্ধে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ, যা তোমার ধারণার অতীত। নুরের উপস্থিতি এবং প্রত্যেক দুঃখী ব্যক্তির সান্ত্বনা, যার মুসিবতে প্রশস্ত আসমান সংকীর্ণ হয়ে গেছে। তার কাছে অবস্থানকারীগণ তার মেহমান, যার মহত্বের নিকট পুরো জগত অবনত। অতএব তুমি কুরআনের ব্যাখ্যার ছায়ায় তোমার চিন্তাগুলো দাফন কর, তোমার জীবন সুখকর হবে এবং শিরা উপশিরা প্রশান্তি বোধ করবে। তার প্রত্যেক হরফে ওহীর আশ্চর্য কারিশমা, হয় সুখের সংবাদ অথবা শাস্তির সতর্ক বার্তা”।
১৮- আল্লাহর অধিক যিকির করুন। আল্লাহর যিকির দ্বারা অন্তর পরিশুদ্ধ হয়, মনে স্থিরতা আসে। যিকিরকারীকে আল্লাহর রহমত ঢেকে নেয় ও তার ওপর সাকীনা [বিশেষ রহমত বা প্রশান্তি] নাযিল হয়। যিকির দ্বারা মনের দুশ্চিন্তা ও কু-ভাবনা দূর হয়। অতএব আল্লাহর অধিক যিকির করুন। বিশেষ করে ফজিলতপূর্ণ যিকির গ্রহণ করুন, কুরআনের পরেই যার অবস্থান, বা যা কুরআনের অংশ, যেমন:
سبحان الله، والحمد لله، ولا إله إلا الله، والله أكبر .
অনুরূপ পড়ুন:
لا حول ولا قوة إلا بالله
এ বাক্যগুলো জান্নাতের খাজানার অংশ। মুসিবত ও কষ্টের সময় এ বাক্যগুলো পাঠ করলে সুফল মিলে।
১৯- শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চান। শয়তান আপনার সামনে পাপকে সুন্দরভাবে পেশ করে ও তাতে আকৃষ্ট করে। তাই যখন আপনার মনে ধূমপান করার ইচ্ছা হয়, আপনি শয়তান থেকে পানাহ চান। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ ٱلشَّيۡطَٰنِ نَزۡغٞ فَٱسۡتَعِذۡ بِٱللَّهِۚ إِنَّهُۥ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ٢٠٠ ﴾ [ الاعراف : ١٩٩ ]
“আর যদি শয়তানের পক্ষ হতে কোন প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে তুমি আল্লাহর আশ্রয় চাও। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ”। [সূরা বাকারা: (২০০)]
২০- অবসরতা ও একাকীত্ব পরিহার করুন। অবসর সময় মানুষকে ধূমপানে অভ্যস্ত করে। তাই একা দুশ্চিন্তা নিয়ে বসে না থেকে কাজে ব্যস্ত হোন। পড়াশোনা কর, ক্লাসের পড়ায় মন দাও যদি ছাত্র হও। অথবা আত্মীয় স্বজনদের সাক্ষাত করুন ও তাদের প্রয়োজন পুরো করুন। অথবা কোন বৈধ কাজে ব্যস্ত হোন যেমন বেচা-কেনা ইত্যাদি পেশা।
২১- ধূমপানের পরিণতির দিকে দৃষ্টি দিন। বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা কোনো কাজ করার আগে তার পরিণতি দেখে, নিশ্চিতভাবে পরিণতি ভাল না হলে তাতে সাড়া দেয় না। বাস্তবতা চিন্তা না করে কোনো বস্তুর বাহ্যিক অবস্থা দেখে ধোকায় পতিত হয় না। তারা ক্ষণস্থায়ী স্বাদকে দীর্ঘস্থায়ী বিষাদের ওপর কখনো প্রাধান্য দেয় না।
ধূমপানের ক্ষতি ব্যাপক, তার পরিণতি খুব খারাপ। তাতে যদিও সামান্য স্বাদ থাকে, কিন্তু তার পশ্চাতে রয়েছে আফসোস, অপমান ও হতাশা। ধূমপান শেষে স্বাদ নিঃশেষ হয় ঠিকই, কিন্তু রেখে যায় কষ্ট। প্রবৃত্তির আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়, কিন্তু কল্যাণ হাত ছাড়া হয়। কোন কবি বলেন:
تفنى اللذات ممن نال صفوتها *** من الحرام ويبقى الخزي والعار
تبقى عواقبُ سوءٍ في مغبتها **** لا خير في لذة من بعدها النار
“যারা হারামের মাধ্যমে নিরেট আনন্দ ভোগ করেছে, তাদের আনন্দ নিঃশেষ হয়ে যাবে, অবশিষ্ট থাকবে শুধু লাঞ্ছনা ও অপমান। তার পশ্চাতে থাকবে শুধু দুঃখময় পরিণতি। এমন আনন্দে কোন সুখ নেই, যার পশ্চাতে রয়েছে আগুন”।
২২- আত্মসমালোচনা নিয়ে নিজের মুখোমুখি হন। ধূমপান ত্যাগ করার কার্যকর চিকিৎসা হল ধূমপান নিয়ে নিজের মধ্যে চিন্তা করা। নিজের সাথে নিজের বোঝাপড়া করা।
প্রিয় পাঠক, আপনি যদি বড় হোন, তাহলে অবশ্যই নিজেকে সম্বোধন করুন: কিসের অপেক্ষা করছি? কত দিন ধূমপান করব? জীবনের পড়ন্ত বয়সে আমি কি মুসিবতের অপেক্ষা করছি? অথবা দ্রুত মৃত্যু অন্বেষণ করছি? অতঃপর নফসকে তিরস্কার করুন: আমি কি এখনো সুস্থ হব না, ধূমপান ত্যাগ করব না, অথচ আমার দিকে বার্ধক্য ধেয়ে আসছে! আরো বলুন:
أطرباً وأنت قَنَّسْرِيُّ *** والدهر بالإنسان دوَّارِيُّ
“আনন্দ করছ! অথচ তুমি পড়ন্ত বয়সে উপনীত, সময় মানুষকে নিয়ে ঘূর্ণ্যমান”। আরো বলুন:
دار عواءٍ فليس بعد اشتعال الرَّ *** أس شيبًا إلى الصبا من سبيل
“বিলাপের ঘর, মাথায় বার্ধক্য দেখা দেয়ার পর শৈশবে ফিরে যাওয়ার কোনো পথ নেই”।
আপনার বয়স যদি কম হয়, আপনি কি নিশ্চিত যে দীর্ঘজীবী হবেন? অথবা আপনি কি নিশ্চিত নন যে, জীবনের যে কোন মুহূর্তে মৃত্যু হানা দিতে পারে? যদি তাই হয় ধূমপানের স্বভাবসহ আপনার রবের সাথে সাক্ষাত করা আপনি পছন্দ করেন? জীবিত থাকলেও আপনি পছন্দ করবেন ঝুঁকিপূর্ণ জীবন যাপন করা? অথবা আপনি কি চান এ নিষ্ফল কর্মে আপনার যৌবন বিনষ্ট হোক?
প্রিয় পাঠক, আপনাদের কেউ কি পছন্দ করেন নিজ পরিবার ধ্বংসের কারণ হতে? অথবা চান আপনার দ্বারা সমাজ ও জাতির ক্ষতি হোক? আশা করছি এসব আত্ম-জিজ্ঞাসা আপনাকে ধূমপান ত্যাগ করতে সাহায্য করবে।
২৩- নিরাশ হবেন না। আপনি এক বা একাধিক বার ধূমপান ত্যাগ করার ইচ্ছা করেছেন কিন্তু ত্যাগ করতে পারেন নি। অথবা দীর্ঘ এক সময় ধূমপান ত্যাগ করেছিলেন, অতঃপর আবার আরম্ভ করেছেন। এ জন্য আপনার মধ্যে হতাশা আসতে পারে, অথবা শয়তান আপনার অন্তরে ভাবনা সৃষ্টি করতে পারে যে, ধূমপান ত্যাগ করার কোনো পথ নেই। ধূমপান ত্যাগ করার সব চেষ্টাই বিফলে যাবে। খবরদার এ চিন্তা যেন আপনার মধ্যে অনুপ্রবেশ না করে, এর জন্য কোন পথ খোলা রাখবেন না। বরং আবার চেষ্টা করুন, পুনরায় শুরু করুন, যত চেষ্টা করেন, যতবার আপনার চেষ্টা বিফলে যায় আপনি নিরাশ হবেন না। খুব সম্ভব একবার বিফল হলে আরেকবার সফল হবেন। কোন কবি বলেছেন:
اطلبْ ولا تضْجَرَ من مطلبٍ *** فآفةُ الطالبِ أن يضجرا
أما ترى الحبلَ بتكراره *** في الصخرة الصَّمَّاء قد أثَّرا
“তালাশ কর, উদ্দেশ্য হাসিলে বিরক্ত হয়ো না, অন্বেষণকারীর মুসিবত হচ্ছে বিরক্ত হওয়া। তুমি দেখ না বারবার ঘর্ষণের ফলে রশিও কঠিন পাথরে দাগ কাটে”।
২৪- ধূমপান স্মরণ করে বা ধূমপানের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টিকারী বস্তু থেকে দূরে থাকুন। ধূমপানের নিকটবর্তী হওয়া এক ধরণের শাস্তি ও মুসিবত, তার থেকে দূরে থাকা সান্ত্বনা ও প্রশান্তি। ধূমপায়ী যখন বিড়ি বা সিগারেটের ধোঁয়া দেখে অথবা তার গন্ধ শোঁকে অথবা অন্য ধূমপায়ীকে দেখে ও তাদের সাথে আড্ডা দেয়, তার মধ্যে ধূমপানের ইচ্ছা জাগতে পারে, ধূমপান ত্যাগ করার প্রতিজ্ঞায় দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। অসম্ভব নয় তার পুরনো অভ্যাস ফিরে আসা, যদি সে ধূমপান ত্যাগ করে থাকে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী হলে ভিন্ন কথা।
হে ধূমপায়ী প্রিয় ভাই, আপনি ধূমপান স্মরণ করে দেয় এমন বস্তু থেকে দূরে থাকুন, যেসব বস্তু আপনাকে ধূমপানের দিকে আহ্বান করে অথবা তার জন্য উদ্বুদ্ধ করে আপনি তা ত্যাগ করুন। কারণ কোন বস্তুর উপকরণ নিঃশেষ করে দেয়া মূলত ঐ বস্তুই নিঃশেষ করে দেয়া।
২৫- অসৎ সঙ্গ থেকে দূরে থাকুন। অসৎ সঙ্গ খারাপকে ভাল ও ভালকে খারাপ করে পেশ করে। খারাপের দিকে ধাবিত করে ও ভাল থেকে দূরে রাখে। মনে রাখুন, মানুষ তার বন্ধুর স্বভাব দ্বারা প্রভাবিত হয়।
আপনি যদি ধূমপায়ীদের ধূমপানের বদ অভ্যাস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন, তাহলে তাদের অধিকাংশকে পাবেন খারাপ সঙ্গের কারণে ধূমপানে অভ্যস্ত হয়েছে। যে ব্যক্তি খারাপ সঙ্গ গ্রহণ করবে, অবশ্যই তাকে তাদের খারাপি স্পর্শ করবে।
খারাপ সঙ্গের কারণে কমপক্ষে এ ক্ষতি হবে যে, নিজের খারাপ কর্মের সাথে তাদের খারাপ কর্ম তুলনা করে যখন দেখবে তাদের তুলনায় তার খারাপের সংখ্যা কম, সে অধিক ধ্বংসাত্মক কাজের দিকে ধাবিত হবে। অতএব খারাপ সঙ্গ আপনার দীন ধ্বংস করবে, আপনার দোষ আপনার সামনে চাপা দিবে। খারাপ সঙ্গ আপনাকে খারাপের সাথে সম্পর্ক জুড়ে দিবে ও ভাল সঙ্গ থেকে দূরে রাখবে, এক সময় আপনাকে অসম্মান, লাঞ্ছনা ও অপরাধের দিকে ধাবিত করবে। অনুরূপ আপনাকে অপরাধপ্রবণ করবে, অপরাধকে গৌণ করে পেশ করবে এবং আপনার চোখে ভাল-মন্দ সমান করে দিবে। খারাপ সম্পর্ক সামান্য ঝগড়া ও মনোমালিন্যতায় ভেঙ্গে যায়। আর যদিও দুনিয়াতে টিকে কিন্তু আখেরাতে কখনো টিকবে না।
ধূমপায়ী প্রিয় পাঠক, যখন আপনার সামনে স্পষ্ট হল, আপনি খারাপ সঙ্গ থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। সিংহ থেকে পলায়নের ন্যায় খারাপ সঙ্গ থেকে পলায়ন করুন।
২৬- সৎ সঙ্গ গ্রহণ করুন। সৎ সঙ্গ আপনাকে উপদেশ দিবে, আপনাকে আপনার দোষ দেখিয়ে দিবে ও তা পূর্ণ করার পথ বাতলে দিবে। সৎ সঙ্গ আপনাকে সৎ পথ দেখাবে খারাপ সঙ্গ থেকে দূরে রাখবে। পাপ থেকে দূরে রাখবে, প্রথম প্রথম যদিও লজ্জায় পাপ ত্যাগ করবেন, কিন্তু পরবর্তীতে আপনার অভ্যাসে পরিণত হবে ইনশাআল্লাহ।
সৎ সঙ্গ আপনাকে আল্লাহর স্মরণ করিয়ে দিবে। উপস্থিত অনুপস্থিত উভয় অবস্থায় আপনাকে হিফাজত করবে। আপনার সম্মান বৃদ্ধি করবে। নেককার লোকদের মজলিস আল্লাহর রহমত ঢেকে রাখে, ফেরেশতারা চারপাশ থেকে ঘিরে রাখে, তাদের ওপর সাকিনা [বিশেষ রহমত বা প্রশান্তি] নাযিল হয় এবং আল্লাহ নিজ মজলিসে তাদের নিয়ে আলোচনা করেন। কবি বলেছেন:
إذا ما صحبت القوم فاصحب خيارهم * ولا تصحبِ الأردى فتردى مع الردي
“যখন কোন কওমে অবস্থান কর, তাদের নেককার লোকদের সঙ্গ গ্রহণ কর, খারাপ লোকদের সঙ্গ গ্রহণ কর না, তাহলে তুমিও খারাপের সঙ্গে খারাপ বনে যাবে”।
২৭- ধূমপায়ীদের দিকে ভ্রুক্ষেপ না করা। কখনো এমন লোকের আড্ডায় পড়তে পারেন যে আপনার ধূমপান ত্যাগ করার সৎ ইচ্ছার বাধ সাধবে, আপনার সামনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে, দৃঢ় ইচ্ছা থেকে আপনাকে ফিরাতে চেষ্টা করবে।
আপনি তার কথায় কান দিবেন? তার কথার কোন মূল্য দিবেন?
না, বরং আপনি তাকে আপনার পৃষ্ঠ দেখান, তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিন এবং আল্লাহর ওপর তাওয়াককুল করুন। দৃঢ় ইচ্ছায় অটল থাকুন ও চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুন। ইনশাআল্লাহ আপনি আপনার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবেন।
২৮- ধাপে ধাপে অগ্রসর হোন। আপনার জন্য অবশ্য করণীয় ও আপনার কাছে আমাদের প্রত্যাশা হচ্ছে আপনি তৎক্ষণাৎ ধূমপান ত্যাগ করুন, চির দিনের জন্য ত্যাগ করুন।
যদি আপনি হেরে যান, একসাথে ধূমপান ত্যাগ করা আপনার জন্য কষ্টকর হয়, তাহলে ধাপে ধাপে অগ্রসর হোন, ধূমপান ত্যাগ করার পদ্ধতি গ্রহণ করুন। আস্তে আস্তে চেষ্টা করুন, ধূমপান কমিয়ে দিন যেন এক সময় পুরোই ত্যাগ করতে পারেন। এ জন্য সহায়ক কয়েকটি বিষয় হল:
ক. জনসম্মুখে ধূমপান পরিহার করুন। কারণ এ অভ্যাস সব জায়গায় ধূমপান করতে আপনাকে উদ্বুদ্ধ করবে, যার ফলশ্রুতিতে আপনার ধূমপান অভ্যাস বাড়বেই। জনসম্মুখে ধূমপান ত্যাগ করলে স্বাভাবিক গতিতে আপনার ধূমপান কমে যাবে।
খ. ধূমপায়ীদের সঙ্গ ত্যাগ করুন ও ধূমপান স্মরণ করে দেয় এমন বস্তু থেকে দূরে থাকুন, যেমন পূর্বে বলা হয়েছে।
গ. ধূমপান ত্যাগ করার জন্য এমন জায়গায় বেশী অবস্থান করুন, যেখানে আপনার জন্য ধূমপান করার সম্ভব নয়, যেমন পিতা-মাতার সাথে বসুন, যাদের থেকে লজ্জা হয় তাদের সাথে ঘনঘন ও দীর্ঘ সময় অবস্থান করুন, যেন ধূমপান ভুলে যান ও তা ত্যাগ করার অভ্যাস গড়ে ওঠে।
ঘ. ধূমপানের পরিবর্তে কোন বস্তু গ্রহণ করুন, যেমন মিসওয়াক ব্যবহার করুন, অথবা শারীরিক ব্যায়াম করুন, যেমন সাতার কাটুন বা হাঁটা-চলা করুন ইত্যাদি।
২৯- ধূমপান ত্যাগ করার একটি সহজ উপায় হল, যে আপনাকে ধূমপান ত্যাগ করতে সাহায্য করবে তার নিকট আপনার অবস্থা পেশ করুন। যার মধ্যে কল্যাণ, মঙ্গল ও ইলম রয়েছে তার নিকট আপনার অবস্থা খুলে বলুন। সে আপনাকে উপযুক্ত পথ বাতলে দিবে, যা আপনাকে ধূমপানের অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করবে।
অথবা বিশেষজ্ঞ কোন ডাক্তারকে বলুন, সে আপনাকে কোন পথ বাতলে দিবে, অথবা ধূমপান ত্যাগ করার পদ্ধতি শিখিয়ে দিবে, যা আপনাকে ধূমপান থেকে মুক্ত করবে।
এখন আমার কলমের বিরতির নেয়ার সময় হয়ে আসছে। আল্লাহর নিকট তার সকল সুন্দর নাম ও সিফাতের উসিলায় প্রার্থনা করছি, তিনি আপনাকে সবচেয়ে সঠিক কাজের তাওফিক দিন। আপনার অন্তরে ইমান প্রিয় ও সৌন্দর্যমণ্ডিত করে দিন, কুফর, পাপ ও অবাধ্যতা অপছন্দ করে দিন এবং আপনাকে সঠিক পথ প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করুন।
দো‘আ করি আল্লাহ আপনাকে সত্যকে সত্য হিসেবে দেখা ও তার আনুগত্য করার তাওফিক দিন। বাতিলকে বাতিল হিসেবে দেখা ও তার থেকে পরহেজ করার তাওফিক দিন।
ধূমপায়ী প্রিয় পাঠক, আমি আপনার নিকট ক্ষমা চাচ্ছি যদি আমি বিষয়টি দীর্ঘ করে থাকি, অথবা আপনার সাথে রূঢ় ও কঠিন বাক্য প্রয়োগ করে থাকি। আশা করছি এ বাক্যগুলো আপনার অন্তরে সাড়া জাগাবে, আপনাকে ধূমপান ছাড়তে সাহায্য করবে।
আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করব, অনেক খুশি হবো যদি আপনার পক্ষ থেকে ধূমপান ত্যাগ করার সুসংবাদ ও তার থেকে তওবা জানিয়ে আমাকে চিঠি লিখেন, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে কখনো অসম্ভব নয়।
আর আমাদের সবার শেষ চাওয়া হচ্ছে এই যে, সকল প্রশংসা সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর জন্য, আর সালাম সকল রাসূলদের উপর। আল্লাহই ভালো জানেন।
وصلى الله وسلم على نبينا محمد وآله وصحبه أجمعين .
আপনার ভাই ও শুভাকাঙ্খী,
মুহাম্মাদ ইবন ইবরাহীম আল-হামাদ
আয-যুলফী, ৯/১১/১৪১৬ হি.
পোস্ট কোড নং ১১৯৩২; পোস্ট বক্স নং ৪৬০
www.toislam.net
বারবার ধূমপান করা, ধূমপানের নিষেধাজ্ঞার প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করা ধূমপান বৈধ স্বীকৃতি দেয়া ও তার অনিষ্ট অস্বীকার করার নামান্তর, যা ধূমপান করার চেয়ে মারাত্মক!
২- ধূমপান করব না মর্মে খালেস দিলে তওবা করুন। আপনার নিকট যখন স্পষ্ট হল, আপনি যখন নিশ্চিত হলেন যে, ধূমপান শরীর ও দীনের জন্য ক্ষতিকর, অতএব আপনি আপনার রবের নিকট তওবা করুন। ধূমপানের কারণে আপনার শরীর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আগেই আপনি হিদায়েতের দিকে ফিরে আসুন। হঠাৎ মৃত্যু হানা দেয়ার আগেই আপনি লজ্জা, শরম ও দ্বিধা ত্যাগ করে সঠিক পথ গ্রহণ করুন। খবরদার কখনো আগামী কাল, বা এই ছেড়ে দিচ্ছি দিব বলবেন না, কারণ এটাও এক ধরণের পাপ, যা থেকে তওবা করা জরুরী।
৩- আল্লাহর জন্য ইখলাস গ্রহণ করুন। খাঁটি ইখলাসই ধূমপান ও অন্যান্য হারাম বস্তু ত্যাগ করার জন্য যথেষ্ট। আপনি যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার নিমিত্তে এবং তার ভয় ও আযাব থেকে দূরে থাকার জন্য ইখলাস গ্রহণ করেন, সত্যিকার তওবা করেন, তাহলে অবশ্যই আল্লাহ আপনাকে তাওফিক দিবেন, আপনার তাওবা কবুল করবেন। আল্লাহ আপনাকে নিরাশ করবেন না, ধূমপান ত্যাগ করা আপনার জন্য তিনি সহজ করবেন। আপনাকে তার কল্যাণ অর্জন করার তাওফিক দিবেন।
৪- অন্তর আল্লাহর মহব্বত দ্বারা পূর্ণ করুন। যার মধ্যে আল্লাহর মহব্বত রয়েছে সে বিচ্যুতি থেকে নিরাপদ। আমাদের অন্তরের ক্ষুধা, অভাব ও শূন্যতা একমাত্র আল্লাহর মহব্বতেই পূর্ণ হতে পারে। আল্লাহর মহব্বতের ফলে অন্তর তৃপ্ত ও আনন্দিত হয়, বরং নফসের প্রিয় বস্তু ত্যাগ করে আল্লাহর দিকে ধাবিত হয়।
বস্তুত মানুষের অন্তরে আল্লাহর মহব্বতের ঘাটতির অনুপাতে চিন্তা, পেরেশানি ও দুঃখ বাসা বাঁধে।
আল্লাহর মহব্বত থেকে যে অন্তর একেবারে শূন্য, সে অন্তর দুশ্চিন্তা, দুঃখ ও কষ্ট থেকে কখনো মুক্তি পায় না। তার অন্তরে অন্য সকল মহব্বত ভিড় করে, তার কার্যাদি বিক্ষিপ্ত ও এলোমেলো করে দেয়। অতএব ধূমপানে অভ্যস্ত ব্যক্তির আল্লাহ মহব্বত দ্বারা অন্তর পূর্ণ করা ব্যতীত কোনো উপায় নেই।
শায়খুল ইসলাম ইব্ন তাইমিয়াহ রহ. বলেন: আল্লাহর ইবাদত, মহব্বত ও তার দিকে মনোনিবেশ ব্যতীত অন্তর কখনো সুখ, সফলতা, নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা পায় না। উপভোগ ও বিনোদনের সকল বস্তু থাকা সত্যেও সে তৃপ্ত হয় না, প্রকৃত আনন্দ লাভ থেকে বঞ্চিত হয়। কারণ তার অন্তর সে উপাদান থেকে শূন্য, যার মাধ্যমে প্রকৃত সুখ ও কল্যাণ লাভ হয়। [আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা: (৫/১৮৮-১৮৯)]
প্রিয় পাঠক, আপনি যদি আল্লাহর মহব্বত আপনার মূল লক্ষ্যে পরিণত করেন, গোপনে ও প্রকাশ্যে আল্লাহকে স্মরণ করেন, তাহলে ইনশাআল্লাহ আপনার প্রবৃত্তি ও নফসের ওপর আপনি বিজয়ী হবেন। শয়তানকে আপনি পরাস্ত করতে পারবেন।
আল্লাহর মহব্বত অর্জন করার মাধ্যম হচ্ছে ফরয পরবর্তী নফল আদায় করা, সর্বাবস্থায় আল্লাহর স্মরণ করা। এ নিয়ে সামনে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
অতএব আপনার সামনে যখন আল্লাহর মহব্বতের প্রয়োজনীয়তা প্রমাণিত হল, আপনি কিভাবে তা গ্রহণ করেন বা তাতে অভ্যস্ত হন যা আল্লাহর মহব্বতকে ক্ষতিগ্রস্ত করে?!
৫- আল্লাহর সাহায্য তলব করুন। ধূমপান ত্যাগ করার উপকরণ গ্রহণ করুন, যার বর্ণনা সামনে আসছে। অতঃপর আপনার বিষয় আল্লাহর নিকট সোপর্দ করুন। তার নিকট সাহায্য ও মদদ তলব করুন। আল্লাহ আপনাকে সাহায্য করবেন, আপনার ওপর সদয় হবেন, যা আপনার কল্পনার অতীত। তিনি সুন্দর সাহায্যকারী ও উত্তম অভিভাবক। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿ وَمَن يَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱللَّهِ فَهُوَ حَسۡبُهُۥٓۚ﴾ [ الطلاق : ٣ ]
“আর যে আল্লাহ ওপর তাওয়াককুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট”। [সূরা তালাক: (৩)]
৬- ধূমপান ত্যাগ করার উপকারিতা স্মরণ করুন। কারণ যার উপকারিতা স্বীকৃত তা গ্রহণ করা সহজ হয়। যখনি ধূমপানের কথা মনে পড়ে, ধূমপান ত্যাগ করা কষ্টকর লাগে, তখনি ধূমপানের অনিষ্ট সম্পর্কে চিন্তা করুন। আশা করি এভাবেই ধূমপান ত্যাগ করা আপনার জন্য সহজ হবে।
স্মরণ করুন আল্লাহর জন্য যে কোনো বস্তু ত্যাগ করল, আল্লাহ তাকে তার চেয়ে উত্তম বস্তু দান করেন। সবচেয়ে উত্তম বস্তু আল্লাহর মহব্বত, অন্তরের প্রশান্তি, কর্মের শক্তি, সামর্থ্য, চঞ্চলতা ও আল্লাহর ওপর সন্তুষ্টি। [দেখুন: আল-ফাওয়ায়েদ লি ইব্নিল কাইয়্যিম, (পৃ.১৬)]
আরো স্মরণ করুন কষ্টকর ইবাদতে যেমন অধিক সাওয়াব, তেমনি অভ্যস্ত পাপ ত্যাগ করা অধিক সাওয়াব।
স্মরণ করুন ধূমপান ত্যাগ করে নিজেকে নিশ্চিত ক্ষতি থেকে রক্ষা করছেন।
প্রবৃত্তি ও নফসের ওপর বিজয়ী হওয়ার স্বাদ স্মরণ করুন, এ স্বাদই বড় স্বাদ।
৭- ধূমপানের অনিষ্ট ও ধূমপান ত্যাগ করার উপকারিতা তুলনা করুন। আপনি ধূমপানের ক্ষণিক স্বাদ স্মরণ করুন, যদি তাতে স্বাদ থাকে, তাহলে আপনার নিকট ধূমপানের অনিষ্ট স্পষ্ট হয়ে যাবে। যে স্বাদ ক্ষণিকেই নিঃশেষ হয় তার বিনিময়ে আপনি কিভাবে ধ্বংস, দুশ্চিন্তা, দুঃখ ও কষ্ট প্রাধান্য দেন!?
৮- দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করুন। আপনার মধ্যে ধূমপান ত্যাগ করার যত ইচ্ছা থাক, আপনি ধূমপানের ক্ষতি সম্পর্কে যতই জানুন, যদি আপনার মধ্যে সত্যিকার প্রতিজ্ঞা না থাকে ধূমপান ত্যাগ করতে পারবেন না।
৯- ধূমপান ত্যাগ করার জন্য শক্তিশালী ইচ্ছা জরুরী। শক্তিশালী ইচ্ছাই কঠিন কাজ সহজ করে দেয়, তা বাস্তবায়নের জন্য সামনে অগ্রসর হতে সাহায্য করে। শক্তিশালী ইচ্ছার অধিকারী কোনো বাধার সম্মুখে থামে না, বরং সামর্থ্যের সবটুকু ব্যয় করে সামনে অগ্রসর হয়। তার নিকট সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার চেয়ে কঠিন কোনো কাজ নেই।
এটাই মানুষের সফলতার মাপকাঠি, দৃঢ়চিত্তের পরিচয়। দৃঢ়চিত্তরা কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে পিছপা হয় না, মসৃণ ও কণ্টকাকীর্ণ সব পথই অতিক্রম করে, সহজ ও কঠিন সকল উপকরণ গ্রহণ করে।
এ কথা ঠিক যে, মানুষের শরীরে যেমন নানা রোগ-ব্যাধির উপসর্গ দেখা দেয়, তেমনি তার সৎ ইচ্ছার ওপর বাধার সৃষ্টি হয়, ফলে সে প্রবৃত্তির মোকাবেলা করতে সক্ষম হয় না, বাধা ও বিপত্তি অতিক্রম করে সামনে অগ্রসর হতে পারে না। এর নিদর্শন হচ্ছে মানুষ কোনো কল্যাণের সিদ্ধান্ত নিল, কিন্তু পরক্ষণে তার মধ্যে হীনমন্যতা বাসা বাঁধে, ফলে সে প্রবৃত্তির দাসে পরিণত হয়। অন্যথায় অধিকাংশ ধূমপায়ী জানে ধূমপান হারাম, ধূমপান ত্যাগ করার ইচ্ছা করে, কিন্তু পরবর্তীতে তার ইচ্ছা দুর্বল হয়ে অনিচ্ছায় পরিণত হয়।
ইচ্ছার এ দুর্বলতা দূর করার জন্য এমন কিছু করুন যা কষ্ট ও সাধনা দাবি করে। অতঃপর আস্তে আস্তে নফসকে কঠিন কাজে অভ্যস্ত করুন। আত্মসমালোচনা করুন, সাওয়াব ও শাস্তির কথা চিন্তা করুন ইত্যাদি।
১০- ধৈর্য ধারণ করুন। ধৈর্য সুন্দর আখলাক ও প্রশংসিত স্বভাব। প্রত্যেক মানুষ ধৈর্যের মুখাপেক্ষী। অনিচ্ছা ও অপছন্দনীয় সকল বিষয়ে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় ধৈর্য ধারণ করা অপরিহার্য। সম্মানিত ব্যক্তিরা স্বেচ্ছায় ধৈর্য ধারণ করে, কারণ সে তার পরিণতি সম্পর্কে জানে, ধৈর্যহীনতার কারণে মানুষ তিরস্কারের সম্মুখীন হয়।
সন্দেহ নেই ধূমপান ত্যাগ করার শুরুতে কষ্ট হবে, কারণ ধূমপান ত্যাগ করা নফসের জন্য কঠিন, কিন্তু অসম্ভব ও অবাস্তব নয়।
ইব্নুল কাইয়্যূম রহ. বলেন: ‘চিরাচরিত স্বভাব ও পছন্দের বস্তু ত্যাগ করা তার জন্যই কষ্টকর, যে তা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো সন্তুষ্টির জন্য ত্যাগ করে। কিন্তু ইখলাসের সাথে আল্লাহর জন্য যে তা ত্যাগ করল, সে তাতে কষ্ট অনুভব করে না। প্রথম প্রথম অবশ্যই কষ্ট হয়, কিন্তু সে তাতে বিজয়ী হয়। সে তার প্রতিজ্ঞায় সত্যবাদী প্রমাণ দেয়। কষ্টের ওপর ধৈর্য ধারণই এক সময় স্বাদ ও সুখে পরিণত হয়’। [আল-ফাওয়ায়েদ: (পৃ.১৫৯-১৬০)]
প্রিয় পাঠক, ধৈর্যের তিক্ততা গলাধঃকরণ করুন, শুরুতে বঞ্চিত হোন, শেষে নিশ্চয় আপনি তার স্বাদ ও মিষ্টতা আস্বাদন করবেন। কোন কবি বলেছেন:
والصبر مثلُ اسمه مرٌّ مذاقَتُهُ *** لكنْ عواقُبُه أحلى من العسل
“সবর তার শব্দের মতই আস্বাদন করা তিক্ত (ফিটকিরীকে আরবীতে ‘সবর’ বলা হয়, যা তিক্ত), কিন্তু তার পরিণতি মধুর চেয়ে মিষ্টি”। অপর কোন কবি বলেছেন:
وقلَّ مَنْ جدَّ في أمرٍ تَطَلَّبَهُ *** واستصحب الصبرَ إلا فاز بالظَّفَرِ
والصبرُ أكرمُ من صحبتَ مواسيًا *** يحنو على الكبد الجديب فيينعُ
“দুষ্কর হবে তাদের সন্ধান পাওয়া, যারা কোন বিষয়ে ধৈর্যের সাথে কঠোর পরিশ্রম করেও সফল হন নি। আপনি যাদের সঙ্গ গ্রহণ করেছেন তাদের মধ্যে ধৈর্যই অধিক সান্ত্বনা দানকারী, ধৈর্যই ক্ষত হৃদয়কে সমবেদনা জানায়, ফলে সে সতেজ হয়ে ওঠে”।
আরো মনে রাখুন, ধৈর্যের কারণে আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনি সাহায্য প্রাপ্ত হবেন। আল্লাহ ধৈর্যশীলদের পছন্দ করেন, তিনি ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«ومن يتصبر يصبره الله» .
“যে ধৈর্য ধারণের চেষ্টা করে, আল্লাহ তাকে ধৈর্য ধারণ করার তাওফিক দান করেন”। [বুখারি: (৭/১৮৩), মুসলিম: (১০৫৩)]
মনে রাখুন, ধূমপানের কারণে যেসব সমস্যার সৃষ্টি হয়, তা চিন্তা করলে ধূমপান ত্যাগ করে ধৈর্য ধারণ সহজ।
১১- ধূমপান ত্যাগ করার জন্য মুজাহাদা বা কঠোর প্রচেষ্টা করুন। আল্লাহর পক্ষ থেকে মুজাহাদাকারীর জন্য কল্যাণ, হিদায়াত ও তাওফিকের সুসংবাদ রয়েছে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:
﴿ وَٱلَّذِينَ جَٰهَدُواْ فِينَا لَنَهۡدِيَنَّهُمۡ سُبُلَنَاۚ وَإِنَّ ٱللَّهَ لَمَعَ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ٦٩ ﴾ [ العنكبوت : ٦٩ ]
“আর যারা আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, তাদেরকে আমি অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আর নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সাথেই আছেন”। [সূরা আনকাবুত: (৬৯)]
প্রিয় পাঠক, আল্লাহর জন্য মুজাহাদা করুন, নিজেকে নফসের প্রবৃত্তি থেকে দূরে রাখুন, অন্যথায় সে আপনাকে গোমরাহি ও অকল্যাণের দিকে ধাবিত করবে।
ইব্ন মুবারক রহ. বলেন:
ومن البلايا من البلاء علامة *** ألا يرى لك من هوالك نزوع
العبد عبد النفس في شهواتها *** والحر يشبع تارة ويجوع
“মুসিবতের মুসিবত হচ্ছে মুসিবতের নিদর্শন যে, ধ্বংস্তূপ থেকে উত্তরণের তোমার কোনো আগ্রহ নেই। বান্দা তার প্রবৃত্তির অনুসরণে নফসের গোলামে পরিণত হয়, আর স্বাধীন কখনো পরিতৃপ্ত হয় কখনো হয় ক্ষুধার্ত”। অপর কবি বলেছেন:
والنفس إن أعطيتها مناها *** فاغرةٌ نحو هواها فاها
“নফস এমন, যদি তুমি তার সব চাওয়া পূর্ণ কর, মুখ হা করে সে তার বাসনার দিকে ছুটবে”। অপর কবি বলেছেন:
إذا المرء أعطى نفسه كلَّ ما اشتهت * ولم ينهها تاقت إلى كل مطلب
“ব্যক্তি যদি তার নফসের সকল চাহিদা পূর্ণ করে, কোনো বিষয়ে তাকে বারণ না করে, তাহলে সে প্রত্যেক চাহিদার দিকেই ধাবিত হবে”।
একবার বা দুইবার চেষ্টা করার নাম মুজাহাদা নয়, বরং মুজাহাদা হচ্ছে মৃত্যু পর্যন্ত চেষ্টা অব্যাহত রাখা।
১২- ধূমপান ত্যাগ করার জন্য দুর্দান্ত হিম্মত থাকা চাই। আপনার মধ্যে ধূমপান ত্যাগ করার হিম্মত না থাকলে কখনোই ধূমপান ত্যাগ করতে পারবেন না। ধূমপান করা খারাপ স্বভাব, ধূমপান করা অপমান।
আপনি জানেন না ধূমপায়ী শুধু মুসলিমদের নিকটই হীন নয়, বরং পশ্চিমা অমুসলিম দেশেও ধূমপানকে খারাপ দৃষ্টিতে দেখা হয়। পশ্চিমা ডাক্তার ও শিক্ষিত সমাজ এক সময় ধূমপান করলেও এখন তারা ধূমপান করেন না। ধূমপায়ীকে হেয় দৃষ্টিতে দেখেন।
خُلِقْتُ أبيَّ النفسِ لا أَتْبَعُ الهوى * ولا أستقي إلا من المشرب الأصفى
ولا أتحرَّى العزَّ فيما يُذِلُّني * ولا أخطب الأعمال كي لا أرى صرفًا
ولست على طبع الذباب متى يُذَدْ * عن الشيء يسقطْ فيه هو يرى الحتفا
“আমাকে প্রবৃত্তির বিরোধী করে সৃষ্টি করা হয়েছে, আমি কখনো প্রবৃত্তির অনুসরণ করব না, পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন পানি ব্যতীত পান করব না। যা আমাকে অসম্মান করে, তাতে আমি কখনো সম্মান তালাশ করব না। আমি কাজকে সম্বোধন করব না যেন পলায়নের কোন পথ না দেখি। আমার স্বভাব মাছির মত নয় যে, যখনি কোন বস্তু হতে হটিয়ে দেয়া হবে তাতে ঝাঁপিয়ে পড়ব, অথচ মাছি মৃত্যু দু’চোখে দেখে”। [যাম্মুল হাওয়া লি ইব্ন জাওযি: (পৃ.৪৮০)]
১৩- নিজের মধ্যে শরম রাখুন। শরম আপাদ-মস্তক কল্যাণ আর কল্যাণ। শরম ইসলামী আখলাক, ঈমানের একটি অঙ্গ। আপনি যদি লজ্জাশীল হন, লজ্জা আপনাকে কল্যাণের দিকে ধাবিত করবে, আপনার থেকে অকল্যাণ দূর করবে। কারণ লজ্জা এমন স্বভাব যা কল্যাণের দিকে ধাবিত করে ও অকল্যাণ থেকে দূরে রাখে।
লজ্জাশীল ব্যক্তি অপমান ও দুনিয়া-আখিরাতের শাস্তিকে ভয় করে, যে কারণে সে কল্যাণ গ্রহণ করে ও খারাপি থেকে দূরে থাকে।
১৪- জামাতের সাথে সালাত আদায় করুন। সালাত অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:
﴿إِنَّ ٱلصَّلَوٰةَ تَنۡهَىٰ عَنِ ٱلۡفَحۡشَآءِ وَٱلۡمُنكَرِۗ ٤٥ ﴾ [ العنكبوت : ٤٥ ]
“নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে”। [সূরা আল-আনকাবূত: (৪৫)]
সালাত যেসব বস্তু থেকে বিরত রাখে, ধূমপান তার মধ্যে অন্যতম। যদি আপনি ঠিকমত সালাত আদায় করেন, সালাতে একাগ্রতা ঠিক রাখেন সন্দেহ নেই সালাত আপনাকে ধূমপান থেকে বিরত রাখবে।
১৫- ধূমপান ত্যাগ করার নববী চিকিৎসা সিয়াম। সিয়াম নফসকে পরিশুদ্ধ করে, সুন্দর চরিত্র দান করে, প্রবৃত্তি ও মনের সাথে যুদ্ধ শেখায়। এভাবে ইচ্ছার মধ্যে দৃঢ়তা সৃষ্টি হয়, ইচ্ছা মজবুত হয় ও হারাম বস্তু ত্যাগ করার শক্তি অর্জন হয়।
১৬- ধূমপান ত্যাগ করার জন্য দো‘আ করুন। দোয়ার ফলে পতিত মুসিবত দূর হয়, অনাগত মুসিবত হটে যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَقَالَ رَبُّكُمُ ٱدۡعُونِيٓ أَسۡتَجِبۡ لَكُمۡۚ ٦٠ ﴾ [ غافر : ٦٠ ]
“আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব”। [সূরা গাফের: (৬০)] অন্যত্র তিনি বলেন:
﴿ وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌۖ أُجِيبُ دَعۡوَةَ ٱلدَّاعِ إِذَا دَعَانِۖ ١٨٦ ﴾ [ البقرة : ١٨٦ ]
“আর যখন আমার বান্দাগণ তোমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে, আমি তো নিশ্চয় নিকটবর্তী। আমি আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া দেই, যখন সে আমাকে ডাকে”। [সূরা বাকারা: (১৮৬)]
অতএব বেশী করে দো‘আ করুন, ইনশাআল্লাহ আল্লাহ আপনার দো‘আ শ্রবণ করবেন, আপনাকে মুসিবত থেকে মুক্তি দিবেন। আপনি দো‘আ কবুলের উপযুক্ত সময়, পরিস্থিতি ও পরিবেশ তালাশ করুন। যেমন সেজদায় দো‘আ করুন, শেষ রাতে দো‘আ করুন, আযান ও ইকামাতের মাঝে দো‘আ করুন। অন্তরের একাগ্রতা ও এখলাস নিয়ে নিরুপায়ীদের ন্যায় দো‘আ করুন। [দেখুন লেখকের কিতাব: “আদ-দোয়া”।]
ماضاق بالمرء أمر فاستعد له *** عبادة الله إلا جاءه الفرجولا أناخ بباب الله ذو ألم *** إلا تزحزح عنه الهم
“ব্যক্তিকে যখনি কোন সমস্যা পিষ্ট করে, অতঃপর তার জন্য আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হয়, তার অবশ্যই মুক্তি আসবে। এমন হয়নি কোন মুসিবতগ্রস্ত আল্লাহর দরজার কড়া নাড়ছে, কিন্তু তার মুসিবত দূর হয় নি”। অপর এক কবি বলেছেন:
والجأ لسيدك الذي لا تأتي *** أبداً بفيض حنانها تتمتع
“আপনি আপনার মনিবের আশ্রয় গ্রহণ কর, শুধু অনুগ্রহে অবগাহন করে ভোগে লিপ্ত হয়ো না”।
১৭- অধিক কুরআন তিলাওয়াত করুন। অধিক কুরআন তিলাওয়াত অন্তরের প্রতিষেধক স্বরূপ। দো‘আ আল্লাহর জমিনে দস্তরখান স্বরূপ। এতে রয়েছে হিদায়াত, নূর, খুশি ও বিনোদন।
প্রিয় পাঠক, কুরআনের প্রতি মনোযোগী হোন, তার চিকিৎসা গ্রহণ করুন, অধিক কুরআন তিলাওয়াত করুন, কুরআন শ্রবণ করুন, মুখস্থ করুন, কুরআন নিয়ে চিন্তা করুন, যেন আপনার অন্তর সুস্থ হয়, নফস পবিত্র হয় ও আপনার জীবন সুখকর হয়। কোন কবি বলেছেন:
وكتابُ ربِّك إن في نفحاته *** من كل خير فوق ما يُتَوَقَّعُ
نورُ الوجود وأنسُ كلِّ مروَّعٍ *** بكروبه ضاق الفضاء الأوسعُ
والعاكفون عليه هم جلساء مَنْ *** لجلاله كلُّ العوالم تخشعُ
فادفن همومك في ظلال بيانه *** تحْلُ الحياة وتطمئنَّ الأضلعُ
فبكل حرفٍ من عجائب وحيه *** نبأٌ يبشر أو نذير يقرعُ
“আর তোমার রবের কিতাব, যার সুগন্ধে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ, যা তোমার ধারণার অতীত। নুরের উপস্থিতি এবং প্রত্যেক দুঃখী ব্যক্তির সান্ত্বনা, যার মুসিবতে প্রশস্ত আসমান সংকীর্ণ হয়ে গেছে। তার কাছে অবস্থানকারীগণ তার মেহমান, যার মহত্বের নিকট পুরো জগত অবনত। অতএব তুমি কুরআনের ব্যাখ্যার ছায়ায় তোমার চিন্তাগুলো দাফন কর, তোমার জীবন সুখকর হবে এবং শিরা উপশিরা প্রশান্তি বোধ করবে। তার প্রত্যেক হরফে ওহীর আশ্চর্য কারিশমা, হয় সুখের সংবাদ অথবা শাস্তির সতর্ক বার্তা”।
১৮- আল্লাহর অধিক যিকির করুন। আল্লাহর যিকির দ্বারা অন্তর পরিশুদ্ধ হয়, মনে স্থিরতা আসে। যিকিরকারীকে আল্লাহর রহমত ঢেকে নেয় ও তার ওপর সাকীনা [বিশেষ রহমত বা প্রশান্তি] নাযিল হয়। যিকির দ্বারা মনের দুশ্চিন্তা ও কু-ভাবনা দূর হয়। অতএব আল্লাহর অধিক যিকির করুন। বিশেষ করে ফজিলতপূর্ণ যিকির গ্রহণ করুন, কুরআনের পরেই যার অবস্থান, বা যা কুরআনের অংশ, যেমন:
سبحان الله، والحمد لله، ولا إله إلا الله، والله أكبر .
অনুরূপ পড়ুন:
لا حول ولا قوة إلا بالله
এ বাক্যগুলো জান্নাতের খাজানার অংশ। মুসিবত ও কষ্টের সময় এ বাক্যগুলো পাঠ করলে সুফল মিলে।
১৯- শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চান। শয়তান আপনার সামনে পাপকে সুন্দরভাবে পেশ করে ও তাতে আকৃষ্ট করে। তাই যখন আপনার মনে ধূমপান করার ইচ্ছা হয়, আপনি শয়তান থেকে পানাহ চান। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ ٱلشَّيۡطَٰنِ نَزۡغٞ فَٱسۡتَعِذۡ بِٱللَّهِۚ إِنَّهُۥ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ٢٠٠ ﴾ [ الاعراف : ١٩٩ ]
“আর যদি শয়তানের পক্ষ হতে কোন প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে তুমি আল্লাহর আশ্রয় চাও। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ”। [সূরা বাকারা: (২০০)]
২০- অবসরতা ও একাকীত্ব পরিহার করুন। অবসর সময় মানুষকে ধূমপানে অভ্যস্ত করে। তাই একা দুশ্চিন্তা নিয়ে বসে না থেকে কাজে ব্যস্ত হোন। পড়াশোনা কর, ক্লাসের পড়ায় মন দাও যদি ছাত্র হও। অথবা আত্মীয় স্বজনদের সাক্ষাত করুন ও তাদের প্রয়োজন পুরো করুন। অথবা কোন বৈধ কাজে ব্যস্ত হোন যেমন বেচা-কেনা ইত্যাদি পেশা।
২১- ধূমপানের পরিণতির দিকে দৃষ্টি দিন। বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা কোনো কাজ করার আগে তার পরিণতি দেখে, নিশ্চিতভাবে পরিণতি ভাল না হলে তাতে সাড়া দেয় না। বাস্তবতা চিন্তা না করে কোনো বস্তুর বাহ্যিক অবস্থা দেখে ধোকায় পতিত হয় না। তারা ক্ষণস্থায়ী স্বাদকে দীর্ঘস্থায়ী বিষাদের ওপর কখনো প্রাধান্য দেয় না।
ধূমপানের ক্ষতি ব্যাপক, তার পরিণতি খুব খারাপ। তাতে যদিও সামান্য স্বাদ থাকে, কিন্তু তার পশ্চাতে রয়েছে আফসোস, অপমান ও হতাশা। ধূমপান শেষে স্বাদ নিঃশেষ হয় ঠিকই, কিন্তু রেখে যায় কষ্ট। প্রবৃত্তির আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়, কিন্তু কল্যাণ হাত ছাড়া হয়। কোন কবি বলেন:
تفنى اللذات ممن نال صفوتها *** من الحرام ويبقى الخزي والعار
تبقى عواقبُ سوءٍ في مغبتها **** لا خير في لذة من بعدها النار
“যারা হারামের মাধ্যমে নিরেট আনন্দ ভোগ করেছে, তাদের আনন্দ নিঃশেষ হয়ে যাবে, অবশিষ্ট থাকবে শুধু লাঞ্ছনা ও অপমান। তার পশ্চাতে থাকবে শুধু দুঃখময় পরিণতি। এমন আনন্দে কোন সুখ নেই, যার পশ্চাতে রয়েছে আগুন”।
২২- আত্মসমালোচনা নিয়ে নিজের মুখোমুখি হন। ধূমপান ত্যাগ করার কার্যকর চিকিৎসা হল ধূমপান নিয়ে নিজের মধ্যে চিন্তা করা। নিজের সাথে নিজের বোঝাপড়া করা।
প্রিয় পাঠক, আপনি যদি বড় হোন, তাহলে অবশ্যই নিজেকে সম্বোধন করুন: কিসের অপেক্ষা করছি? কত দিন ধূমপান করব? জীবনের পড়ন্ত বয়সে আমি কি মুসিবতের অপেক্ষা করছি? অথবা দ্রুত মৃত্যু অন্বেষণ করছি? অতঃপর নফসকে তিরস্কার করুন: আমি কি এখনো সুস্থ হব না, ধূমপান ত্যাগ করব না, অথচ আমার দিকে বার্ধক্য ধেয়ে আসছে! আরো বলুন:
أطرباً وأنت قَنَّسْرِيُّ *** والدهر بالإنسان دوَّارِيُّ
“আনন্দ করছ! অথচ তুমি পড়ন্ত বয়সে উপনীত, সময় মানুষকে নিয়ে ঘূর্ণ্যমান”। আরো বলুন:
دار عواءٍ فليس بعد اشتعال الرَّ *** أس شيبًا إلى الصبا من سبيل
“বিলাপের ঘর, মাথায় বার্ধক্য দেখা দেয়ার পর শৈশবে ফিরে যাওয়ার কোনো পথ নেই”।
আপনার বয়স যদি কম হয়, আপনি কি নিশ্চিত যে দীর্ঘজীবী হবেন? অথবা আপনি কি নিশ্চিত নন যে, জীবনের যে কোন মুহূর্তে মৃত্যু হানা দিতে পারে? যদি তাই হয় ধূমপানের স্বভাবসহ আপনার রবের সাথে সাক্ষাত করা আপনি পছন্দ করেন? জীবিত থাকলেও আপনি পছন্দ করবেন ঝুঁকিপূর্ণ জীবন যাপন করা? অথবা আপনি কি চান এ নিষ্ফল কর্মে আপনার যৌবন বিনষ্ট হোক?
প্রিয় পাঠক, আপনাদের কেউ কি পছন্দ করেন নিজ পরিবার ধ্বংসের কারণ হতে? অথবা চান আপনার দ্বারা সমাজ ও জাতির ক্ষতি হোক? আশা করছি এসব আত্ম-জিজ্ঞাসা আপনাকে ধূমপান ত্যাগ করতে সাহায্য করবে।
২৩- নিরাশ হবেন না। আপনি এক বা একাধিক বার ধূমপান ত্যাগ করার ইচ্ছা করেছেন কিন্তু ত্যাগ করতে পারেন নি। অথবা দীর্ঘ এক সময় ধূমপান ত্যাগ করেছিলেন, অতঃপর আবার আরম্ভ করেছেন। এ জন্য আপনার মধ্যে হতাশা আসতে পারে, অথবা শয়তান আপনার অন্তরে ভাবনা সৃষ্টি করতে পারে যে, ধূমপান ত্যাগ করার কোনো পথ নেই। ধূমপান ত্যাগ করার সব চেষ্টাই বিফলে যাবে। খবরদার এ চিন্তা যেন আপনার মধ্যে অনুপ্রবেশ না করে, এর জন্য কোন পথ খোলা রাখবেন না। বরং আবার চেষ্টা করুন, পুনরায় শুরু করুন, যত চেষ্টা করেন, যতবার আপনার চেষ্টা বিফলে যায় আপনি নিরাশ হবেন না। খুব সম্ভব একবার বিফল হলে আরেকবার সফল হবেন। কোন কবি বলেছেন:
اطلبْ ولا تضْجَرَ من مطلبٍ *** فآفةُ الطالبِ أن يضجرا
أما ترى الحبلَ بتكراره *** في الصخرة الصَّمَّاء قد أثَّرا
“তালাশ কর, উদ্দেশ্য হাসিলে বিরক্ত হয়ো না, অন্বেষণকারীর মুসিবত হচ্ছে বিরক্ত হওয়া। তুমি দেখ না বারবার ঘর্ষণের ফলে রশিও কঠিন পাথরে দাগ কাটে”।
২৪- ধূমপান স্মরণ করে বা ধূমপানের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টিকারী বস্তু থেকে দূরে থাকুন। ধূমপানের নিকটবর্তী হওয়া এক ধরণের শাস্তি ও মুসিবত, তার থেকে দূরে থাকা সান্ত্বনা ও প্রশান্তি। ধূমপায়ী যখন বিড়ি বা সিগারেটের ধোঁয়া দেখে অথবা তার গন্ধ শোঁকে অথবা অন্য ধূমপায়ীকে দেখে ও তাদের সাথে আড্ডা দেয়, তার মধ্যে ধূমপানের ইচ্ছা জাগতে পারে, ধূমপান ত্যাগ করার প্রতিজ্ঞায় দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। অসম্ভব নয় তার পুরনো অভ্যাস ফিরে আসা, যদি সে ধূমপান ত্যাগ করে থাকে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী হলে ভিন্ন কথা।
হে ধূমপায়ী প্রিয় ভাই, আপনি ধূমপান স্মরণ করে দেয় এমন বস্তু থেকে দূরে থাকুন, যেসব বস্তু আপনাকে ধূমপানের দিকে আহ্বান করে অথবা তার জন্য উদ্বুদ্ধ করে আপনি তা ত্যাগ করুন। কারণ কোন বস্তুর উপকরণ নিঃশেষ করে দেয়া মূলত ঐ বস্তুই নিঃশেষ করে দেয়া।
২৫- অসৎ সঙ্গ থেকে দূরে থাকুন। অসৎ সঙ্গ খারাপকে ভাল ও ভালকে খারাপ করে পেশ করে। খারাপের দিকে ধাবিত করে ও ভাল থেকে দূরে রাখে। মনে রাখুন, মানুষ তার বন্ধুর স্বভাব দ্বারা প্রভাবিত হয়।
আপনি যদি ধূমপায়ীদের ধূমপানের বদ অভ্যাস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন, তাহলে তাদের অধিকাংশকে পাবেন খারাপ সঙ্গের কারণে ধূমপানে অভ্যস্ত হয়েছে। যে ব্যক্তি খারাপ সঙ্গ গ্রহণ করবে, অবশ্যই তাকে তাদের খারাপি স্পর্শ করবে।
খারাপ সঙ্গের কারণে কমপক্ষে এ ক্ষতি হবে যে, নিজের খারাপ কর্মের সাথে তাদের খারাপ কর্ম তুলনা করে যখন দেখবে তাদের তুলনায় তার খারাপের সংখ্যা কম, সে অধিক ধ্বংসাত্মক কাজের দিকে ধাবিত হবে। অতএব খারাপ সঙ্গ আপনার দীন ধ্বংস করবে, আপনার দোষ আপনার সামনে চাপা দিবে। খারাপ সঙ্গ আপনাকে খারাপের সাথে সম্পর্ক জুড়ে দিবে ও ভাল সঙ্গ থেকে দূরে রাখবে, এক সময় আপনাকে অসম্মান, লাঞ্ছনা ও অপরাধের দিকে ধাবিত করবে। অনুরূপ আপনাকে অপরাধপ্রবণ করবে, অপরাধকে গৌণ করে পেশ করবে এবং আপনার চোখে ভাল-মন্দ সমান করে দিবে। খারাপ সম্পর্ক সামান্য ঝগড়া ও মনোমালিন্যতায় ভেঙ্গে যায়। আর যদিও দুনিয়াতে টিকে কিন্তু আখেরাতে কখনো টিকবে না।
ধূমপায়ী প্রিয় পাঠক, যখন আপনার সামনে স্পষ্ট হল, আপনি খারাপ সঙ্গ থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। সিংহ থেকে পলায়নের ন্যায় খারাপ সঙ্গ থেকে পলায়ন করুন।
২৬- সৎ সঙ্গ গ্রহণ করুন। সৎ সঙ্গ আপনাকে উপদেশ দিবে, আপনাকে আপনার দোষ দেখিয়ে দিবে ও তা পূর্ণ করার পথ বাতলে দিবে। সৎ সঙ্গ আপনাকে সৎ পথ দেখাবে খারাপ সঙ্গ থেকে দূরে রাখবে। পাপ থেকে দূরে রাখবে, প্রথম প্রথম যদিও লজ্জায় পাপ ত্যাগ করবেন, কিন্তু পরবর্তীতে আপনার অভ্যাসে পরিণত হবে ইনশাআল্লাহ।
সৎ সঙ্গ আপনাকে আল্লাহর স্মরণ করিয়ে দিবে। উপস্থিত অনুপস্থিত উভয় অবস্থায় আপনাকে হিফাজত করবে। আপনার সম্মান বৃদ্ধি করবে। নেককার লোকদের মজলিস আল্লাহর রহমত ঢেকে রাখে, ফেরেশতারা চারপাশ থেকে ঘিরে রাখে, তাদের ওপর সাকিনা [বিশেষ রহমত বা প্রশান্তি] নাযিল হয় এবং আল্লাহ নিজ মজলিসে তাদের নিয়ে আলোচনা করেন। কবি বলেছেন:
إذا ما صحبت القوم فاصحب خيارهم * ولا تصحبِ الأردى فتردى مع الردي
“যখন কোন কওমে অবস্থান কর, তাদের নেককার লোকদের সঙ্গ গ্রহণ কর, খারাপ লোকদের সঙ্গ গ্রহণ কর না, তাহলে তুমিও খারাপের সঙ্গে খারাপ বনে যাবে”।
২৭- ধূমপায়ীদের দিকে ভ্রুক্ষেপ না করা। কখনো এমন লোকের আড্ডায় পড়তে পারেন যে আপনার ধূমপান ত্যাগ করার সৎ ইচ্ছার বাধ সাধবে, আপনার সামনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে, দৃঢ় ইচ্ছা থেকে আপনাকে ফিরাতে চেষ্টা করবে।
আপনি তার কথায় কান দিবেন? তার কথার কোন মূল্য দিবেন?
না, বরং আপনি তাকে আপনার পৃষ্ঠ দেখান, তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিন এবং আল্লাহর ওপর তাওয়াককুল করুন। দৃঢ় ইচ্ছায় অটল থাকুন ও চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুন। ইনশাআল্লাহ আপনি আপনার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবেন।
২৮- ধাপে ধাপে অগ্রসর হোন। আপনার জন্য অবশ্য করণীয় ও আপনার কাছে আমাদের প্রত্যাশা হচ্ছে আপনি তৎক্ষণাৎ ধূমপান ত্যাগ করুন, চির দিনের জন্য ত্যাগ করুন।
যদি আপনি হেরে যান, একসাথে ধূমপান ত্যাগ করা আপনার জন্য কষ্টকর হয়, তাহলে ধাপে ধাপে অগ্রসর হোন, ধূমপান ত্যাগ করার পদ্ধতি গ্রহণ করুন। আস্তে আস্তে চেষ্টা করুন, ধূমপান কমিয়ে দিন যেন এক সময় পুরোই ত্যাগ করতে পারেন। এ জন্য সহায়ক কয়েকটি বিষয় হল:
ক. জনসম্মুখে ধূমপান পরিহার করুন। কারণ এ অভ্যাস সব জায়গায় ধূমপান করতে আপনাকে উদ্বুদ্ধ করবে, যার ফলশ্রুতিতে আপনার ধূমপান অভ্যাস বাড়বেই। জনসম্মুখে ধূমপান ত্যাগ করলে স্বাভাবিক গতিতে আপনার ধূমপান কমে যাবে।
খ. ধূমপায়ীদের সঙ্গ ত্যাগ করুন ও ধূমপান স্মরণ করে দেয় এমন বস্তু থেকে দূরে থাকুন, যেমন পূর্বে বলা হয়েছে।
গ. ধূমপান ত্যাগ করার জন্য এমন জায়গায় বেশী অবস্থান করুন, যেখানে আপনার জন্য ধূমপান করার সম্ভব নয়, যেমন পিতা-মাতার সাথে বসুন, যাদের থেকে লজ্জা হয় তাদের সাথে ঘনঘন ও দীর্ঘ সময় অবস্থান করুন, যেন ধূমপান ভুলে যান ও তা ত্যাগ করার অভ্যাস গড়ে ওঠে।
ঘ. ধূমপানের পরিবর্তে কোন বস্তু গ্রহণ করুন, যেমন মিসওয়াক ব্যবহার করুন, অথবা শারীরিক ব্যায়াম করুন, যেমন সাতার কাটুন বা হাঁটা-চলা করুন ইত্যাদি।
২৯- ধূমপান ত্যাগ করার একটি সহজ উপায় হল, যে আপনাকে ধূমপান ত্যাগ করতে সাহায্য করবে তার নিকট আপনার অবস্থা পেশ করুন। যার মধ্যে কল্যাণ, মঙ্গল ও ইলম রয়েছে তার নিকট আপনার অবস্থা খুলে বলুন। সে আপনাকে উপযুক্ত পথ বাতলে দিবে, যা আপনাকে ধূমপানের অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করবে।
অথবা বিশেষজ্ঞ কোন ডাক্তারকে বলুন, সে আপনাকে কোন পথ বাতলে দিবে, অথবা ধূমপান ত্যাগ করার পদ্ধতি শিখিয়ে দিবে, যা আপনাকে ধূমপান থেকে মুক্ত করবে।
এখন আমার কলমের বিরতির নেয়ার সময় হয়ে আসছে। আল্লাহর নিকট তার সকল সুন্দর নাম ও সিফাতের উসিলায় প্রার্থনা করছি, তিনি আপনাকে সবচেয়ে সঠিক কাজের তাওফিক দিন। আপনার অন্তরে ইমান প্রিয় ও সৌন্দর্যমণ্ডিত করে দিন, কুফর, পাপ ও অবাধ্যতা অপছন্দ করে দিন এবং আপনাকে সঠিক পথ প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করুন।
দো‘আ করি আল্লাহ আপনাকে সত্যকে সত্য হিসেবে দেখা ও তার আনুগত্য করার তাওফিক দিন। বাতিলকে বাতিল হিসেবে দেখা ও তার থেকে পরহেজ করার তাওফিক দিন।
ধূমপায়ী প্রিয় পাঠক, আমি আপনার নিকট ক্ষমা চাচ্ছি যদি আমি বিষয়টি দীর্ঘ করে থাকি, অথবা আপনার সাথে রূঢ় ও কঠিন বাক্য প্রয়োগ করে থাকি। আশা করছি এ বাক্যগুলো আপনার অন্তরে সাড়া জাগাবে, আপনাকে ধূমপান ছাড়তে সাহায্য করবে।
আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করব, অনেক খুশি হবো যদি আপনার পক্ষ থেকে ধূমপান ত্যাগ করার সুসংবাদ ও তার থেকে তওবা জানিয়ে আমাকে চিঠি লিখেন, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে কখনো অসম্ভব নয়।
আর আমাদের সবার শেষ চাওয়া হচ্ছে এই যে, সকল প্রশংসা সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর জন্য, আর সালাম সকল রাসূলদের উপর। আল্লাহই ভালো জানেন।
وصلى الله وسلم على نبينا محمد وآله وصحبه أجمعين .
আপনার ভাই ও শুভাকাঙ্খী,
মুহাম্মাদ ইবন ইবরাহীম আল-হামাদ
আয-যুলফী, ৯/১১/১৪১৬ হি.
পোস্ট কোড নং ১১৯৩২; পোস্ট বক্স নং ৪৬০
www.toislam.net
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন