মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
* {আমাদের অনুরোধে এটি মাসিক ‘আত-তাহরীক, রাজশাহী, অক্টোবর ২০০০ সংখ্যায় প্রকাশিত মাননীয় লেখকের একটি পৃথক প্রবন্ধ। সেসময়ে দেশে গজিয়ে ওঠা এম, এল, এম. ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘জিজিএন’ ও ‘নিউওয়ে বাংলাদেশ (প্রা:) লিমিটেড’ সম্পর্কে এটি তাঁর একটি অনবদ্য রচনা। আলোচ্য বইয়ের বিষয়বস্ত্তর সাথে প্রবন্ধটি সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়ায় পাঠকদের উদ্দেশ্যে এখানে এটি সংযুক্ত করা হ’ল। -প্রকাশক}
সম্প্রতি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ‘গ্লোবাল গার্ডিয়ান নেটওয়ার্ক’ (জিজিএন) নামের একটি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তর লেখালেখি হচ্ছে। জিজিএন এবং এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘নিউওয়ে বাংলাদেশ (প্রাঃ) লিমিটেড’ সম্পর্কে প্রতারণার গুরুতর অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। দৈনিক জনকণ্ঠ (৯, ১২, ১৭, ১৯ ও ২০শে সেপ্টেম্বর ২০০০), দৈনিক মানবজমিন (৫ই সেপ্টেম্বর, ২০০০), দৈনিক ইনকিলাব (৯ই সেপ্টেম্বর ২০০০), দৈনিক মুক্তকণ্ঠ (১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০০০) প্রভৃতি পত্রিকায় এদের কার্যকলাপ সম্বন্ধে দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে এদের সম্বন্ধে সন্দেহ ও প্রশ্নের উদ্রেক হওয়া স্বাভাবিক। বিভিন্ন সূত্র হ’তে এই প্রতিষ্ঠান দু’টি সম্বন্ধে যা জানা গেছে এবং এদের নিজেদের প্রচারিত লিফলেট ও হ্যান্ডআউট হ’তে যা উপলব্ধি করা গেছে, তা থেকে সন্দেহাতীতভাবে বলা যায় যে, জিজিএন ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানটি জোরেশোরে এদেশে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এদের কৌশল এতই ‘ফুলপ্রুফ’ এবং গাণিতিকভাবে বিশুদ্ধ যে, এরা প্রতারিত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে যাবে।
জিজিএন ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান নিউওয়ে যে গাণিতিক পদ্ধতি ব্যবহার করছে তাদের ব্যবসার উদ্দেশ্যে একে বলা হয় ‘বাইনারি পদ্ধতি’। এই পদ্ধতিতে ‘ডুপ্লিকেশন অব টু’ তত্ত্ব অনুসারে একজন হ’তে দু’জন এই দু’জনের প্রত্যেকেই আবার দু’জন এমনিভাবে চক্রাকারে বা গ্রুপভিত্তিতে সংখ্যা বৃদ্ধি করেই যেতে থাকে। গাণিতিকভাবেই এই সংখ্যা অসীম হ’তে পারে বা হওয়া সম্ভব। এই পদ্ধতির উপর নির্ভর করেই তারা নেটওয়ার্ক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, শ্রীলংকান বংশোদ্ভূত বর্তমানে কানাডার নাগরিক মিঃ নবরত্নম শ্রী নারায়ণা থাসার স্বত্বাধিকারীতে প্রতিষ্ঠিত জিজিএন বাংলাদেশে কাজ শুরু করে ১৯৯৯ সালের মার্চ মাস হ’তে। এদের প্রধান কার্যালয় ঢাকার গুলশান দেখানো হ’লেও বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বনানীর একটি বাড়ী থেকে।
নেটওয়ার্ক ব্যবসা কমিশনভিত্তিক হয়ে থাকে। প্রথমে একজন ক্রেতা নির্দিষ্ট একটি অংকের পণ্যসামগ্রী ক্রয় করে, যা পণ্যের আসল মূল্যের চাইতে অনেকগুণ অধিক। শর্ত থাকে যে, এই ক্রেতা কমিশন পাবে। কোম্পানী যে বেশী পরিমাণ অর্থ পূর্বেই আদায় করে রেখেছিল সেই অর্থ হ’তেই এই কমিশন দিয়ে থাকে। প্রথম জন কোম্পানীর এজেন্ট বা পরিবেশক হিসাবে যে দু’জনকে সংগ্রহ করেছিল তাদের প্রত্যেকেই এখন নিজেরা এজেন্ট বা পরিবেশক হিসাবে দু’জন করে নতুন ক্রেতা সংগ্রহ করবে। এক্ষেত্রে প্রথম জনের মত এই নতুন দুই এজেন্টও কমিশন পাবার হকদার হবে। এবারে নতুন যে চারজন ক্রেতা হয়েছে তারা নিজেরা এজেন্ট হিসাবে প্রত্যেকে দু’জন করে নতুন ক্রেতা সংগ্রহ করবে। ফলে ঐ চারজন তখন কমিশন পাবে। এভাবেই এজেন্ট ও ক্রেতার সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকবে। কোথায় গিয়ে এই সংখ্যা থামবে তা কেউ জানে না।
অবশ্য প্রথম ক্রেতাই যদি এজেন্ট হ’তে ব্যর্থ হয়, অর্থাৎ নতুন দু’জন ক্রেতা সংগ্রহ করতে না পারে, তাহ’লে তার কমিশন পাওয়ার আশা নেই। এক্ষেত্রে তার ব্যবসাও যেমন এখানেই শেষ, তেমনি তার প্রদত্ত পুরো টাকাটাই কোম্পানী অবলীলাক্রমে হাতিয়ে নেয়। অথচ সে এর বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে কোন আইনানুগ পদক্ষেপই নিতে পারে না। কারণ সে জেনে বুঝেই এই ফাঁদে পা রেখেছিল। সাহি’ত্যের ভাষায় একেই বলে ‘আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান’। অনুরূপভাবে প্রথম ক্রেতা এজেন্ট হ’তে পারলেও তার শিকার নতুন দুই ক্রেতা যদি এজেন্ট হ’তে না পারে তাহ’লে তারাও একইভাবে প্রতারিত হবে।
এই নেটওয়ার্ক পদ্ধতিতে এমন একটা সময় আসবে, যখন আর এজেন্ট হওয়া সম্ভব হবে না। অর্থাৎ নতুন ক্রেতা পাওয়া যাবে না। তখন প্রান্তিক লোকটি নিশ্চিতভাবেই প্রতারিত হবে এবং এ রকম চূড়ান্তভাবে প্রতারিত লোকের সংখ্যা হবে লক্ষ লক্ষ। এদের মধ্যে বেশীর ভাগ লোকই হবে বেকার ও শিক্ষিত যুবক-যুবতী।
জিজিএন ও তার বাংলাদেশী সহযোগী নিউওয়ে (প্রাঃ) লিঃ-এর কার্যকলাপের অন্তর্নিহিত ক্রটি ও প্রতারণাগুলো আরও বিশদ বিশ্লেষণের দাবী রাখে। নীচে এ বিষয়ে আলোকপাত করা হ’ল।
(১) প্রতিষ্ঠান দু’টি তাদের পণ্যের যে প্যাকেজ বিক্রি করছে তার মোট মূল্য টাকা ৭,৫০০/=। এর মধ্যে তারা টাকা ৩,৫০০/= লাভ করছে বলে নিজেরাই দাবী করছে। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, তাদের বিক্রিতব্য পণ্যটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোন ব্রান্ডের নয়। সুতরাং এর প্রকৃত গুণাগুণ ও মূল্য যাচাই করা যেমন অসম্ভব, তেমনি ঐ দ্রব্যটির সুবাদে কোম্পানী কত মুনাফা করছে তাও জানা অসম্ভব। যা হোক যিনি বা যারা চড়া মূল্যের ঐ প্যাকেজটি কিনছেন, তিনি বাহ্য দৃষ্টিতে চড়ামূল্যে কিনতে স্বীকৃত হওয়ার ফলে এই লেনদেন বা ব্যবসা শরী‘আহ্র দৃষ্টিতে জায়েয মনে হ’লেও তিনি প্রকৃতপক্ষে জেনেশুনেই প্রতারিত হচ্ছেন এবং প্রতারিত হয়েও প্যাকেজটি ক্রয় করছেন এই আশাতে যে, তিনি যদি তারই মত আরও দু’জন গ্রাহক বা ক্রেতা ম্যানেজ করতে পারেন তাহ’লে অন্ততঃ তার নিজের দেওয়া অতিরিক্ত ১৮০০/= টাকা ফেরত পাওয়া সম্ভব হবে।
এটা অনেকটা ঈশপের সেই লেজকাটা শিয়ালের গল্পের মত, যার নিজের লেজ কাটা যাওয়ার পর তার সহযোগী অন্যদেরও লেজ কাটতে প্রলুব্ধ করেছিল। এক্ষেত্রে প্রথম ক্রেতা বা এজেন্ট এবং তার নতুন দুই শিকারের প্রত্যেকেই এই একই প্রতারণাপূর্ণ কাজ আরও দু’জন করে গ্রাহক সৃষ্টির মাধ্যমে সম্প্রসারণের চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। তারা এটা এজন্যেই করবে যে, এর ফলে প্রথম এজেন্টের প্রথম দুই গ্রাহকের প্রত্যেকেই আবার টাকা ১৮০০/= করে ফেরত পাবে এবং প্রথম এজেন্ট নিজে ফেরত পাবে টাকা ২৪০০/=। মনে রাখা দরকার যে, এদের প্রত্যেকেই প্যাকেজটি কেনার সময় অতিরিক্ত টাকা ৩৫০০/= করে প্রদান করেছিল। সেই অর্থ হ’তেই এই ‘মুনাফা’ বা ‘কমিশন’ দেওয়া হচ্ছে। মাছের তেলে মাছ ভাজার এ যেমন এক চমৎকার উদাহরণ তেমনি লোভের টোপ ফেলে চাতুর্যপূর্ণ প্রতারণারও এক অনন্য নযীর।
(২) কোম্পানী দু’টি টাকা ৭৫০০/= মূল্যের প্যাকেজের পণ্যের মধ্যে সার্ভিস চার্জ, সিকিউরিটি ও বিতরণের জন্য টাকা ৩৫০০/= (৪৩.৬৭%) ধার্য করেছে। অর্থাৎ, মূল পণ্যটির দাম প্যাকেজ মূল্যের ৫৩.৩৩% বা টাকা ৪,০০০/= মাত্র। পরবর্তীতে গ্রাহক/এজেন্ট/পরিবেশক হয়ে গেলে সে এর বিপরীতে টাকা ৬০০/= ফেরত পেতে পারে, যদি নতুন দু’জন গ্রাহক ম্যানেজ করতে পারে। নাহ’লে সে কিছুই ফেরত পাবে না। এক্ষেত্রে পুরো টাকাটাই কোম্পানী হজম করে ফেলবে।
(৩) কোন কোম্পানী পণ্য বিক্রয়ের জন্য সাধারণতঃ সার্ভিস চার্জ দাবী করে না। ক্ষেত্রবিশেষে, বিশেষতঃ যন্ত্রপাতি বসানো ও চালু করার কাজে এ ধরনের চার্জ দাবী করলেও তা মূল্যের ২% হ’তে ২.৫% এর বেশী হয় না। উপরন্তু সার্ভিস চার্জ যদি দাবী করাই হয়, তাহ’লে পণ্য বা সেবা বিতরণের জন্য পুনরায় বিতরণ বা ডিস্ট্রিবিউশন চার্জ নেবার নিয়ম নেই। অথচ এরা সেই গর্হিত কাজটিই করছে।
(৪) সিকিউরিটি বাবদ গৃহীত অর্থ সব সময়েই মূল ক্রেতাকে ফেরত দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে আলোচ্য কোম্পানী দু’টি মূল ক্রেতাকে ঐ অর্থ বা তার কিয়দংশও ফেরত দিবে না, যদি না তিনি পরবর্তীতে এজেন্ট বা পরিবেশক হ’তে পারেন। এভাবে সিকিউরিটির নামে গৃহীত অর্থ আত্মসাৎ নিঃসন্দেহে যুলুম এবং ক্রেতাকে শোষণ করা ছাড়া আর কিছুই নয়।
(৫) আলোচ্য দু’টি কোম্পানী ষ্টেপ ১-এ লাভ করে টাকা ৩৫০০/=। কিন্তু গ্রাহককে লাভের কোন অংশ ফেরত দেবার বিধি নেই। তবে ঐ গ্রাহক যদি ষ্টেপ ২-এ এজেন্ট বা পরিবেশক হন, তাহ’লে তাকে অবশ্যই তিনটি প্যাকেজ বিক্রি করতে হবে এবং তিনি ঐ তিনটি প্যাকেজ হ’তে প্রতিটির জন্য টাকা ৬০০/= হারে মোট টাকা ১,৮০০/= ফেরত পাবেন। এক্ষেত্রে কোম্পানীর নীট মুনাফা থাকবে টাকা ৮,৭০০/=। নিঃসন্দেহে এটা বড় ধরনের প্রতারণা।
(৬) কোম্পানীর হিসাব অনুসারে ষ্টেপ ১১-তে গ্রাহক পরিবেশককে ৮০% হারে মুনাফা দেবার কথা। অর্থাৎ তাদের দাবী অনুসারে তারা প্যাকেজপিছু মাত্র টাকা ৭০০/= মুনাফা রাখবে। এক্ষেত্রেও তাদের মুনাফার শতকরা হার দাঁড়াচ্ছে ১৭.৫%। অবশ্য এর পূর্বেই তারা বিরাট অংকের মুনাফা করে নিয়েছে। ষ্টেপ ১-এ তারা কাউকে কোন মুনাফা দেয়নি, ষ্টেপ ২-এ মাত্র টাকা ৬০০/= মুনাফা দিয়েছে এবং ষ্টেপ ৩-এ টাকা ১১১৪/= প্রদান করেছে। এই প্রক্রিয়ায় এজেন্ট/পরিবেশকের প্রাপ্য মুনাফার হার তখনই ক্রমাগত বেশী হ’তে থাকবে যখন একই ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে ও তারই আওতায় ক্রেতার সংখ্যা ধাপে ধাপে বৃদ্ধি পাবে। ধাপ বা ষ্টেপ যত কম হবে কোম্পানীর মুনাফা তত বেশী হবে। ধাপ বাড়াতে পারলে তবেই ব্যক্তির/এজেন্টের/পরিবেশকের মুনাফা বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে।
(৭) কোম্পানীর ঘোষিত নীতি অনুসারে কোন এজেন্ট/পরিবেশক একাধারে ৫১১ জন গ্রাহক তৈরী করতে পারলে তবেই ৭৩.৪০% হারে মুনাফা দাবী করতে পারেন। মনে রাখতে হবে, একই ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে ও স্বাক্ষরে এটা হ’তে হবে। কোন একজন গ্রাহকও কোন স্টেপ ধাপ ডিঙিয়ে যেতে বা সিঁড়ি ভাঙতে পারবে না। সেক্ষেত্রে চ্যানেল বা যোগসূত্রের পরম্পরা ছিন্ন হয়ে যাবে। ফলে ঐ প্রথম পরিবেশকের উন্নতি বিঘ্নিত হবে এবং বর্ধিত হারে মুনাফা বা কমিশন প্রাপ্তিও বন্ধ হয়ে যাবে।
(৮) প্যাকেজের মাধ্যমে বিক্রিত পণ্যটির গুণ, মান ও প্রকৃত মূল্য জানার কোন উপায় নেই। বিক্রিত দ্রব্য ফেরতও নেওয়া হয় না। বিক্রয়-উত্তর সার্ভিসের সুযোগও নেই। সুতরাং পণ্যটির মেরামত ও সার্ভিসিং-এর কোন সুবিধাই ক্রেতা পাচ্ছে না, যা যেকোন বড় কোম্পানীর ব্যবসার রীতির বরখেলাপ।
(৯) বিক্রিত পণ্যের ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টি পত্রের কোন ব্যবস্থা নেই। অর্থাৎ অন্ততঃ এক বা দু’বছরের মধ্যে পণ্যটি ব্যবহারে অযোগ্য বা ক্ষতিগ্রস্ত হ’লে তা বদলে নেবার বা মেরামত করার কোন ব্যবস্থা বা নিশ্চয়তা এই কোম্পানী দু’টি দিচ্ছে না। অথচ বিশ্বব্যাপী খ্যাতনামা কোম্পানীগুলোর এ ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে।
(১০) প্রসঙ্গতঃ আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকে নজর দেওয়া যেতে পারে। বাইনারী পদ্ধতি অনুসারে ‘ডুপ্লিকেশন অব টু’ রীতিতে অসীম সংখ্যক স্তরের সৃষ্টি হওয়া সম্ভব। কোম্পানী দু’টো এরই আশ্রয় নিয়েছে। অর্থাৎ তাত্ত্বিকভাবে একজন এজেন্ট পিরামিডের শীর্ষে অবস্থান করতে পারে এবং কোম্পানী ঘোষিত বিপুল হারের মুনাফার মালিক হ’তে পারে। কিন্তু বাস্তবে এটা প্রায় অসম্ভব। কারণ খুব কম গ্রাহক-এজেন্ট-পরিবেশকের পক্ষে ষ্টেপ ৪-এর নীচে যাওয়া সম্ভব। কারণ চেইনের সূত্র ছিঁড়ে যাবারই সম্ভাবনা বেশী। এর ফলে কোম্পানীরই বেশী লাভ হবে। একজন ক্রেতা যে পরবর্তীতে এজেন্ট বা পরিবেশক হচ্ছে তার ধাপ বা ষ্টেপ যত কম হবে কোম্পানীর মুনাফার পরিমাণও তত বেশী হবে। উদাহরণতঃ ষ্টেপ ৬-এ ৬৩টি প্যাকেজ বিক্রি করলে কোম্পানীর লাভ দেখানো হয়েছে টাকা ২,২০,৫০০/=। এজেন্টের পাওনা টাকা ১,২৩,৬০০/= বাদ দিলে কোম্পানীর নীট লাভ থাকে মোট টাকা ৯৬,৯০০/=। কিন্তু বাস্তবে এই ৬৩ টি প্যাকেজ ৩ স্তরে ৯টি পৃথক চ্যানেলে গ্রাহক/এজেন্টের মাধ্যমে বিক্রি করলে কোম্পানীর লাভ হবে টাকা (২৪,৫০০/= টাকা ৭,৮০০/= টাকা) টাঃ ১৬,৭০০´৯= টাকা ১,৫০,৩০০/=। তাই কোম্পানী চাইবে যাতে গ্রাহকের ষ্টেপ কম হয় বা ষ্টেপ-এর সূত্র ছিন্ন হয়ে যায় যদিও মুখে তারা একথা কখনোই বলবে না।
(১১) আরও একটি বিষয় গুরুত্বের সাথে অনুধাবনযোগ্য। সেটি হ’ল- পিরামিডের মত এই বিক্রয় কাঠামোর সর্বশেষ স্তরে যারা থাকবে, নিশ্চয়ই তারা পরবর্তী ধাপে গ্রাহক-পরিবেশক হওয়ার আশা নিয়ে পূর্বের গ্রাহক-পরিবেশকের নিকট হ’তে প্যাকেজ কিনবে। এরা সকলেই প্রতারিত হবে যখন আর নতুন ক্রেতা পাওয়া সম্ভব হবে না অথবা কোম্পানীটি হঠাৎ করে পাততাড়ি গুটাবে। যদি দশ হাযার ব্যক্তিও পিরামিডের শীর্ষে থাকে তাহ’লে ষ্টেপ ৯-এ থাকবে (যদি চেইন অবিচ্ছিন্ন থাকে) ৫১,১১,০০০ জন ক্রেতা। যারা মোট ৩,৮৩২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার প্যাকেজ কিনবে। এদের কাছ থেকে কোম্পানী মোট মুনাফাই আদায় করবে ১,৭৮৮ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে যারা পিরামিডের বাইরে ছিটকে পড়বে তাদের হিসাব পাওয়া হবে অত্যন্ত দুরূহ।
(১২) এই পদ্ধতি সত্যি সত্যি উত্তম ও বিশ্বস্ত হ’লে বহুজাতিক কোম্পানীগুলো দেশে দেশে কারখানা তৈরী করে বা দোকান খুলে ব্যবসা করত না। বরং দেখা যায় অংশীদারীত্বের ভিত্তিতে লিমিটেড কোম্পানী খুলে তারা পণ্য উৎপাদন করে, সংযোজন করে বা আমদানী করে ব্যবসা করছে। এরাও কোটি কোটি টাকা মুনাফা করছে। কিন্তু না জনগণ প্রতারিত হচ্ছে, না তাদের পণ্য ও কর্মপদ্ধতির ব্যাপারে জনগণ সন্দিগ্ধ রয়েছে। তারা তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপন দিয়ে শো-রূমে পশরা সাজিয়ে রেখে খদ্দেরদের যাচাই-বাছাই করার সুযোগ দিয়ে বৈধভাবেই ব্যবসা করছে। উপরন্তু তাদের কোন নেটওয়ার্ক সিষ্টেম নেই।
পক্ষান্তরে জিজিএন পণ্যের বিবরণ ও গুণাগুণ জানাবার পরিবর্তে যেনতেন প্রকারে পণ্যটি ক্রেতার কাছে গছিয়ে দিতেই ব্যস্ত। পণ্যটি অগ্রিম দেখার সুযোগই তারা দেয় না। তারা তাদের ক্রেতাকে আরও দু’জন ক্রেতা কিভাবে ম্যানেজ করা যায়, তারই প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। ইতিমধ্যেই অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে যে, এরা টাকা নেবার অনেক পরে, ক্ষেত্রবিশেষে তিন মাসেরও পরে মাল দিচ্ছে না। এ ছাড়াও যারা এখন সক্ষম ক্রেতা ম্যানেজ করতে পারছে না, তারা টাকা দেবার পরেও পণ্য ও মুনাফা বা কমিশন কোনটাই পাচ্ছে না। তাদেরকে ক্রেতা সংগ্রহের জন্যই চাপ দেওয়া হচ্ছে। এর থেকে অনুসন্ধিৎসু ব্যক্তি নিশ্চয়ই প্রকৃত সত্য অনুধাবনে সক্ষম হবেন।
(১৩) দুর্ভাগ্য যে, কতিপয় আলেম জিজিএন-র এই যুলুম ও প্রতারণামূলক ব্যবসাকে ইসলামী শরী‘আতের দৃষ্টিতে বৈধ বলে রায় দিয়েছেন। তাদের সাথে দ্বিমত পোষণের যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে। উপরের বিষয়গুলি তাদের বিবেচনার খোরাক হ’তে পারে। বৈধ ব্যবসার জন্য শরী‘আতের যেসব শর্ত আরোপিত হয়েছে, সেগুলো আপাতঃদৃষ্টিতে জিজিএন পূরণ করছে বলে প্রতীয়মান হ’তে পারে। কিন্তু এদের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য যে অসাধু এবং পরিণাম ফল যে মারাত্মক, তা উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলির প্রতি মনোযোগ দিলে সহজেই বোঝা যাবে।
বন্দরনগরী চট্টগ্রামে এরা ইতিমধ্যে ৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে পাততাড়ি গুটিয়েছে বলে পত্রিকান্তরে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এদের ব্যবসায়িক পদ্ধতি ও কৌশলের চুলচেরা বিশ্লেষণ করলে একথা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, এরা আসলেই এদেশের লক্ষ লক্ষ বেকার যুবক-যুবতীকে কৌশলে কাজে লাগিয়ে খুবই চাতুর্যের সঙ্গে তাদের ও সেই সাথে দেশের জনগণের পকেট সাফ করে চলেছে।
চাকুরীর খোঁজে উদভ্রান্ত বেকার যুবকদের আড়ম্বরপূর্ণ এয়ারকন্ডিশন রুমে বসিয়ে ওভারহেড প্রজেক্টের ব্যবহার করে চটকদার সব বক্তব্য দিয়ে আগামী দিনের রঙিন স্বপ্ন দেখিয়ে যেভাবে প্রলুব্ধ করা হচ্ছে, তা নৈতিকতারও পরিপন্থী। পণ্য বিক্রয়ের কৌশল শেখানো, পণ্যের গুণ বা মান এবং সমজাতীয় অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে তার তুলনীয় শ্রেষ্ঠত্বের কথা আদৌ না বলে কিভাবে তারা তাদেরই মত আরো ক্রেতা জোগাড় করতে পারবে, তারই কৌশল শেখানো হয় এসব ‘ওরিয়েন্টেশন’ ক্লাসে। এজেন্ট হ’তে গেলে প্রশিক্ষণ গ্রহণ যরূরী। কিন্তু এই কোম্পানীর প্রশিক্ষণের কৌশল ও উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের।
(১৪) দৈনিক ইনকিলাবের ১২ই সেপ্টেম্বর ২০০০ সংখ্যায় জিজিএন এবং নিউওয়ে বাংলাদেশ (প্রাঃ) লিঃ বিজ্ঞাপন ছেপে জানিয়েছে যে, তারা বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী সকল অনুমতিপত্র গ্রহণ, নিবন্ধীকরণ, সদস্যপদ গ্রহণ ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেই ব্যবসা করছে। তারা আরও দাবী করছে, তাদের ব্যবসায়ে কোনই গোপনীয়তা নেই। তাদের সকল কাগজপত্র সকলের জন্য উন্মুক্ত।
এই ঘোষণার কোন দরকার ছিল না। বরং এতে মনে পড়ে যায়, ‘ঠাকুর ঘরে কে রে? আমি কলা খাইনি’। একথা সর্বজন বিদিত যে, কোন দেশে ব্যবসা করতে হ’লে সেদেশের সরকারী ও স্থানীয় সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেই তা করতে হয়। কিন্তু তাতে সততার বা নির্ভরযোগ্যতার গ্যারান্টি পাওয়া যায় না। যদি আলোচ্য কোম্পানী দু’টো তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দেয়, সেক্ষেত্রে সরকারের যেমন বলার কিছু থাকবে না, তেমনি দেশ ছেড়ে চলে গেলেও পাওনা আদায় করার জন্য কারোরই কোন সুযোগ থাকবে না। কমিশন যদি পণ্য বিক্রয়ের জন্য হয় এবং তাতে যদি কোন ফাঁক-ফোকর রয়ে যায় তাহ’লে চোরাবালিতে পা পড়ার দশা হবে।
(১৫) দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত ঐ বিজ্ঞাপনেই দাবী করা হয়েছে যে, ‘কোয়ালিফাই করার পর কমিশন পাননি এমন একটি উদাহরণও জিজিএন ও নিউওয়ের ইতিহাসে নেই। জিজিএন ও নিউওয়ের বিরুদ্ধে একটি মাত্রও সুনির্দিষ্ট প্রতারণার অভিযোগ বা মামলা নেই’। কথাগুলো প্রণিধানযোগ্য। জিজিএন ও তার সঙ্গী কোম্পানীটি ক্রেতাদের কমিশন দিচ্ছে ঠিকই। কিন্তু একথা ভুললে চলবে না যে, শুরুতেই এই ক্রেতার পকেট কেটে সাফ করেছে তারা। নিম্নমানের পণ্য বাজার দরের চেয়ে বেশী মূল্যে তো বটেই, সেই সাথে আরও অন্যান্য চার্জের নামে সমপরিমাণ অর্থ আদায় করে নিচ্ছে তারা। শুধু তাই নয়, তাকে তারই মত আরও দু’জন ক্রেতাকে শিকার হিসাবে জিজিএন-এর গুহায় ঢুকিয়ে কমিশন পাবার যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয় বা ‘কোয়ালিফাই’ করতে হয়।
তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ নেই বলে দাবী করা হয়েছে। এর পিছনে দু’টো কারণ রয়েছে। (১) যারা এদের শিকার হয় তারা লোভের বশবর্তী হয়েই এদের পাতা ফাঁদে পা দেয়। সুতরাং তারা কিভাবে প্রতারণার অভিযোগ আনবে? (২) এরা পণ্য সরবরাহে বিলম্ব করে। তখনও কেউ অভিযোগ করে না এজন্যে যে, ইতিমধ্যে আরও যে দু’জন গ্রাহককে সে সংগ্রহ করেছে, তারা এই অভিযোগের কথা শুনলে কেটে পড়বে। ফলে তার সম্ভাব্য কমিশন পাবার পথ বন্ধ হয়ে যাবে।
(১৬) তারা আরও দাবী করেছে যে, সমগ্র বিশ্বে এ ধরনের আরও বহু নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কোম্পানী রয়েছে। তাদের এই দাবীর যথার্থতা যাচাইয়ে না গিয়েও বলা যায় যে, প্রতারণা প্রতারণাই। ইসলামে সূদ নিষিদ্ধ। অথচ সূদ পুঁজিবাদের জীয়নকাঠি। বিশ্বের দু-একটি দেশ বাদ দিলে সকল দেশেই রাষ্ট্রীয়ভাবে সূদভিত্তিক বিনিয়োগ, লেন-দেন ও ব্যবসা-বাণিজ্য হচ্ছে। তাই বলে কি সূদ হালাল হয়ে যাবে? কোন মুসলমান কি তাকে স্বীকার করে নিয়েছে? নেয়নি। কারণ হারাম যা তা হারামই। সব দেশের সকল মানুষের জন্যেই তা হারাম। এক্ষেত্রেও জিজিএন ও তার সঙ্গী প্রতিষ্ঠানটি সাধারণ সূদের চাইতেও চক্রবৃদ্ধিহারে লাভ করে ও ক্রেতাকে ঠকিয়ে সেই ধরনের হারাম কাজটিই করছে।
(১৭) জিজিএন ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান শুরু থেকেই তাদের নেটওয়ার্ক ব্যবসা চালাতে ‘ম্যানেজ করার’ পদ্ধতি অনুসরণ করে চলছে বলে পত্রিকান্তরে অভিযোগ প্রকাশিত হয়েছে। মিঃ নবরত্নম শ্রী নারায়ণা থাসা শ্রীলংকার নাগরিক ছিলেন। এদেশে তিনি কানাডার নাগরিক পরিচয় দানকারী একজন বিদেশী। ল্যান্ড পারমিট নিয়ে আসার পর ওয়ার্ক পারমিট না থাকা সত্ত্বেও একজন বিদেশীকে কিভাবে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হ’ল তা রহস্যজনক। একইভাবে প্রশ্ন ওঠে যে, সরকারের বিনিয়োগ বোর্ড কিভাবে ল্যান্ড পারমিটধারী একজন বিদেশীকে রেজিষ্ট্রেশন দিল? অভিযোগ রয়েছে যে, এসব ম্যানেজ করার পদ্ধতিতেই সম্ভব হয়েছে।
(১৮) যে বিশেষ প্রশ্নটি এখন দেশবাসীর সামনে জ্বলজ্বল করছে সেটি হ’ল- বর্তমান কানাডার এই নাগরিক সেদেশে বা পাশ্চাত্যের কোন দেশে এই ব্যবসা পরিচালনা না করে কেন বাংলাদেশকে বেছে নিয়েছে? এর উত্তরও খুব সহজ। প্রতারণার জন্যে দরিদ্র দেশকে বেছে নিলে বিপদ কম। দরিদ্র দেশের যুবক-যুবতীরা কর্মসংস্থানের পাশাপাশি মুনাফার সোনালী হাতছানিতে সহজেই প্রতারিত হয়। এমনকি খোদ সরকারও কর্মসংস্থানের সুযোগ হচ্ছে শুনলে বহু সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। উপরন্তু প্রয়োজনে ‘ম্যানেজ’ করার পথ খোলাই রয়েছে। জিজিএন সেই সুযোগটিই নিয়েছে।
(১৯) এদের লোভের ফাঁদে ইতিমধ্যেই ৩৪ হাযারের বেশী সদস্য পা দিয়েছে। এদের কাছ থেকে সংগৃহীত অর্থের পরিমাণ ১০২ কোটি টাকারও বেশী বলে দৈনিক জনকণ্ঠ (১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০০০) জানিয়েছে। মাত্র দেড় বছরের মত স্বল্প সময়ে একশ’ কোটি টাকারও বেশী অর্থ সংগ্রহের ব্যবসা পৃথিবীর আর কোথাও আছে কি-না জানা নেই। এদের ব্যবসায়ের প্রক্রিয়া জটিল ও সূক্ষ্ম। কিন্তু সরলমনা ক্রেতা তথা এজেন্ট হ’তে অভিলাষীদের অধিকাংশের পক্ষেই এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া আদৌ সম্ভব নয়। বরং পতঙ্গের মত তারা ঝাঁপ দিচ্ছে লোভের অগ্নিকুন্ডে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, অনেকেই বিষয়-সম্পদ এবং ব্যাংকের সঞ্চিত অর্থ তুলে নিয়ে ছুটছে এই নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসার পিছনে। এক্ষেত্রে ১৯৯৬ সালের শেষে দেশের শেয়ার মার্কেটে যে ভয়াবহ ধ্বস নেমেছিল তার কথাই মনে পড়ে যায়। সে সময় বছরের গোড়ার দিকে হঠাৎ করে শেয়ার মার্কেট অদৃশ্য কারোর ইঙ্গিতে দ্রুত চাঙ্গা হ’তে শুরু করে। লোকেরা ব্যাংকে সঞ্চিত অর্থ হ’তে শুরু করে বোনেদের-স্ত্রীদের গহনা পর্যন্ত বিক্রি করে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে। তারপর এক সময়ে মুনাফার ফানুসটি ফেটে যায়। রাতারাতি পথের ফকীর হয়ে দাঁড়ায় অজস্র মানুষ। ঠিক একই রকম অবস্থা পরিদৃষ্ট হচ্ছে এই ব্যবসায়েও।
(২০) প্রসঙ্গতঃ আলবেনিয়ার উদাহরণ উল্লেখযোগ্য। ‘পিরামিড স্কীম’ নামে পরিচিত এই নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসা আলবেনিয়ায় ১৯৯৬ সালের শুরু হ’তে সম্প্রসারিত হ’তে থাকে। সমাজের সর্বস্তরের মানুষ নিজেদের সঞ্চিত অর্থ ছাড়াও বিষয়-সম্পত্তি বিক্রি করে উচ্চহারে মুনাফা পাওয়ার আশায় বিপুলভাবে বিনিয়োগ করে এ ব্যবসায়। এমনকি ইতালী ও গ্রীসে কর্মরত আলবেনীয়রাও ব্যাংকে অর্থ না রেখে এ ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে থাকে। কোম্পানীগুলো প্রথমে ১৫% হ’তে ২৫% হারে মুনাফা প্রদান করত। ক্রমান্বয়ে মুনাফার এই হার বাড়াতে বাড়াতে তারা ৮০% এ উন্নীত করে। এরপর বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়তে থাকে অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে। ফলে মাত্র কয়েক মাসে ১৬টি কোম্পানী পিরামিড স্কীমের আওতায় ৫ লক্ষাধিক লোকের কাছ থেকে ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার হাতিয়ে নেয়। পরিণতিতে আলবেনিয়ার অর্থনীতিতে যে বিপর্যয় নেমে এসেছিল আজও তার জের কাটেনি।
প্রতারণা ইসলামে হারাম। সেই হারাম সর্বাবস্থায় পরিত্যাজ্য। জিজিএন গণিতের বাইনারী পদ্ধতির ‘ডুপ্লিকেশন অব টু’ থিওরী ব্যবহার করে তার প্রতারণাকে যেমন ফুলপ্রুফ পদ্ধতিতে উন্নীত করেছে, তেমনি ব্যবসার মোড়কে এবং কমিশনের মত নির্দোষ পারিতোষিকের ব্যবস্থা রেখে প্রতারণার বহিরঙ্গের চিহ্ন গোপন করতেও সমর্থ হয়েছে। তাই বলে এটা বৈধ হয়ে যায়নি অথবা প্রকৃত ব্যবসাও হয়ে ওঠেনি। একটু সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে বিচার করলেই এর অন্তর্নিহিত গলদগুলো ধরা পড়বে। সুতরাং লোভের বশবর্তী হয়ে এদের প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে গাঁটের পয়সা খরচ করে হারাম উপার্জন ও লোক ঠকানোর মত কবীরা গুনাহে শামিল না হওয়াই শ্রেয়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/225/18
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।