HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সূদ

লেখকঃ শাহ মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান

সূদ ও ইসলাম
সূদ প্রসঙ্গে ইসলামের অবস্থান সবচেয়ে কঠোর ও অনমনীয়। এ ব্যাপারে ইতিপূর্বেই সূরা বাক্বারাতে মহান আল্লাহর ঘোষণা বর্ণনা করা হয়েছে। এ সূরাতেই আরও বলা হয়েছে,

يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا اتَّقُوْا اللّهَ وَذَرُوْا مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَا إِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ- فَإِن لَّمْ تَفْعَلُوْا فَأْذَنُوْا بِحَرْبٍ مِّنَ اللّهِ وَرَسُوْلِهِ وَإِنْ تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُؤُوْسُ أَمْوَالِكُمْ لاَ تَظْلِمُوْنَ وَلاَ تُظْلَمُوْنَ -

‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ্কে ভয় করো এবং সূদের যে অংশ বাকী আছে তা ছেড়ে দাও, যদি তোমরা প্রকৃত মুমিন হও। যদি তোমরা তা না করো তাহ’লে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর পক্ষ হ’তে যুদ্ধের ঘোষণা শুনে রাখ। আর যদি তোমরা তওবা কর তবে তোমাদের মূলধন ফিরিয়ে নিতে পারবে। না তোমরা যুলুম করবে, না তোমাদের প্রতি যুলুম করা হবে’ (বাক্বারাহ ২/২৭৮-৭৯)।

ক্বিয়ামতের দিন সূদখোরদের অবস্থা কেমন হবে সে সম্পর্কে ঐ সূরাতেই বলা হয়েছে,

اَلَّذِيْنَ يَأْكُلُوْنَ الرِّبَا لاَ يَقُوْمُوْنَ إِلاَّ كَمَا يَقُوْمُ الَّذِيْ يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوْا إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا -

‘যারা সূদ খায় তারা ক্বিয়ামতে দন্ডায়মান হবে যেভাবে দন্ডায়মান হবে ঐ ব্যক্তি যার উপর শয়তান আছর করে। তাদের এ অবস্থার কারণ, তারা বলে ক্রয়-বিক্রয়ও তো সূদ নেওয়ারই মতো’ (বাক্বারাহ ২/২৭৫)।

সূদের লেনদেন ও সূদের সাথে সংশ্রব রাখা প্রসঙ্গে প্রখ্যাত ছাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন, لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ صَلىَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ آكِلَ الرِّبَا وَمُوْكِلَهُ وَكَاتِبَهُ وَشَاهِدَيْهِ، وَقَالَ : هُمْ سَوَاءٌ - ‘যারা সূদ খায়, সূদ দেয়, সূদের হিসাব লিখে এবং সূদের সাক্ষ্য দেয়, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদের উপর লা‘নত করেছেন এবং এরা অপরাধের ক্ষেত্রে সকলেই সমান’।[1]

পবিত্র কুরআনে বহু ধরনের গুনাহের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে। সেসবের জন্য কঠোর শাস্তি ও ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। কিন্তু সূদের ক্ষেত্রে যত কঠোর ভাষা প্রয়োগ করা হয়েছে অন্য কোন গুনাহের ব্যাপারে এমনটি করা হয়নি। এজন্যই সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে সূদ বন্ধ করার উদ্দেশ্যে রাসূলে করীম (ছাঃ) সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। উদাহরণস্বরূপ নাজরানের খৃষ্টানদের সাথে তিনি যে সন্ধিপত্র সম্পাদন করেন তাতে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় লিখে পাঠান- ‘যদি তোমরা সূদী কারবার করো তাহ’লে তোমাদের সাথে চুক্তি ভেঙ্গে যাবে এবং আমাদেরকে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে’। বনু মুগীরার সূদী লেনদেন সমগ্র আরবে প্রসিদ্ধ ছিল। মক্কা বিজয়ের পর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদের প্রাপ্য সমুদয় সূদ বাতিল করে দেন এবং মক্কায় তাঁর নিযুক্ত তহসীলদারদেরকে লিখে পাঠান, যদি তারা (বনু মুগীরা) সূদ গ্রহণ করা বন্ধ না করে তাহ’লে তাদের সাথে যুদ্ধ করো।

রিবার অবৈধতা আল-কুরআনের সাতটি আয়াত (বাক্বারাহ ২৭৫-২৭৬, ২৭৮-২৮০; আলে ইমরান ১৩০ এবং রুম ৩৯) এবং চল্লিশটিরও বেশী হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। এখানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হাদীছ তুলে ধরা হ’ল-

(১) আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, اَلرِّبَا سَبْعُوْنَ جُزْءًا، أَيْسَرُهَا أَنْ يَّنْكِحَ الرَّجُلُ أُمَّهُ - ‘সূদের (পাপের) সত্তুরটি স্তর রয়েছে। যার নিম্নতম স্তর হ’ল মায়ের সাথে যেনা করার পাপ’।[2]

(২) আব্দুল্লাহ ইবনে হানযালা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, دِرْهَمُ رِبًا يَأْكُلُهُ الرَّجُلُ وَهُوَ يَعْلَمُ، أَشَدُّ مِنْ سِتَّةٍ وَّثَلاَثِيْنَ زِنِيَّةً، ‘কোন ব্যক্তি যদি এক দিরহাম (রৌপ্যমুদ্রা) রিবা বা সূদ জ্ঞাতসারে গ্রহণ করে, তাতে তার পাপ ছত্রিশবার ব্যভিচার করার চেয়েও অনেক বেশী হয়’।[3]

(৩) কূফার ক্বাযী খ্যাতনামা তাবেঈ আবু বুরদা বিন আবু মূসা বলেন, আমি মদীনায় এলাম এবং ছাহাবী আব্দুল্লাহ বিন সালাম (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাত করলাম। তখন তিনি বললেন, তুমি এমন এক এলাকায় বাস কর, যেখানে সূদ ব্যাপকহারে প্রচলিত। অতএব যদি কারু নিকট তোমার কোন পাওনা থাকে, আর সে যদি তোমার নিকট এক থলে ভূষি বা যব কিংবা এক আঁটি ঘাসও উপঢৌকন দেয়, তবুও তুমি তা গ্রহণ করো না। কেননা ওটা হবে ‘রিবা’ বা সূদ’।[4]

(৪) আলী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত যে, أَنَّهُ سَمِعَ رَسُوْلَ اللهِ صَلىَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَعَنَ آكِلَ الرِّبَا وَمُوْكِلَهُ وَكَاتِبَهُ وَمَانِعَ الصَّدَقَةِ، وَكَانَ يَنْهَى عَنِ النَّوْحِ، ‘তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে অভিশাপ করতে শুনেছেন সূদখোরের প্রতি, সূদ দাতার প্রতি, সূদের প্রমাণপত্র লেখকের প্রতি ও ছাদাক্বা প্রদানে বাধাদানকারীর প্রতি। আর তিনি নিষেধ করতেন মৃতের জন্য বিলাপ করা হ’তে’।[5]

(৫) আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) বলেন, إِنَّ الرِّبَا وَإِنْ كَثُرَ فَإِنَّ عَاقِبَتَهُ تَصِيْرُ إِلَى قُلٍّ، ‘সূদের দ্বারা সম্পদ যতই বৃদ্ধি পাক না কেন তার শেষ পরিণতি হ’ল নিঃস্বতা।[6]

উপরোল্লিখিত হাদীছসমূহ থেকে সূদ সম্পর্কে বেশ কিছু তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় সুস্পষ্টভাবে উঠে আসে। এসবের মধ্যে রয়েছে সূদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা মহাপাপী বলে গণ্য হবে। সামান্য বিষয় এমনকি ঋণদাতাকে উপহার প্রদানও সূদ হিসাবে বিবেচিত হবে। সূদের শেষ পরিণতি হবে নিঃস্বতা। সূদ বহু প্রকারের হ’তে পারে। এক সময়ে সূদ বিশ্বব্যাপী বিস্তৃতি লাভ করবে এবং তা থেকে কারো রেহাই থাকবে না। সূদের গুনাহ (যা কবীরা গুণাহ) অতীব নিকৃষ্ট ধরনের ইত্যাদি। তাই সূদ প্রসঙ্গে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা যেমন প্রয়োজন তেমনি সমাজদেহ হ’তে সূদ উচ্ছেদ ও রহিত করার জন্য সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণও সমান প্রয়োজন।

বিশ্বমানবতার সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর জীবনের সর্বশেষ ভাষণেও এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে ভুলেননি। তিনি যে প্রকৃতই রহমাতুল্লিল আলামীন, তাঁর বিদায় হজ্জের ঐতিহাসিক ভাষণেও তার পরিচয় রেখে গেছেন। অবিস্মরণীয় সেই ভাষণে তিনি একটিমাত্র ঘোষণার মাধ্যমে শোষণের বিষদাঁত চিরতরে ভেঙ্গে দিলেন। অবিচল কণ্ঠে তিনি ঘোষণা করলেন, ‘জাহেলী যুগের সমস্ত সূদ বাতিল করা হ’ল। সবার আগে আমাদের গোত্রের আববাস ইবনু আব্দিল মুত্তালিবের সব সূদ আমিই রহিত করে দিলাম’।[7]

সেই ঘোষণার ফল হয়েছিল সূদূরপ্রসারী। উমাইয়া ও আববাসীয় খিলাফত পরবর্তী যুগেও বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশী বিশাল ভূখন্ডে দীর্ঘ নয়শত বছর ইসলামী হুকুমত বহাল থাকাকালীন কোথাও সূদ বিদ্যমান ছিল না। সূদের মাধ্যমে কোন লেনদেন ও ব্যবসা-বাণিজ্য হয়নি। পরবর্তীতে মুসলমানদের ভোগবিলাস ও আত্মবিস্মৃতির সুযোগে সাম্রাজ্যবাদী ইউরোপীয় শক্তিসমূহ তাদের পরাভূত করে ধ্বংস করে দেয় তাদের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড। ব্যবসা-বাণিজ্য ও উৎপাদনের উপায়-উপকরণের উপর আধিপত্য বিস্তার করে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহ। বিপরীতে মুসলিম দেশ ও সমাজ কোন প্রতিরোধ তো গড়তে পারেইনি বরং ধীরে ধীরে পিছিয়ে পড়ে যোজন যোজন পথ। এই সময়েই ইউরোপে সংঘটিত শিল্প বিপ্লবের পথ ধরে নতুন আঙ্গিকে সূদ পুনরায় ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে বিশ্বের সকল দেশে, সমাজের সর্বস্তরে। ব্যাংকিং পদ্ধতির বিকাশ ঘটে শিল্প বিপ্লবের হাত ধরেই। ব্যাংকিং পদ্ধতির মাধ্যমেই সমাজে সূদের সর্বনাশা শোষণ ও ধ্বংস আরও গভীর ব্যাপ্তি লাভ করে। একদিকে পুঁজি আবর্তিত হ’তে থাকে শুধু ধনীদের মধ্যেই, যা পবিত্র কুরআনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অন্যদিকে সূদের কারণে আরও নতুন নতুন অর্থনৈতিক নির্যাতন ও শোষণ বিস্তৃতি লাভ করে সমাজের তৃণমূল পর্যায়ে, যার হাত থেকে পরিত্রাণ লাভ আজ আর সহজসাধ্য নয়।

[1]. মুসলিম, মিশকাত হা/২৮০৭; বঙ্গানুবাদ মিশকাত ৬/১৯ পৃঃ হা/২৬৮৩।

[2]. ইবনু মাজাহ, হা/২২৭৪, সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/২৮২৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৭০২।

[3]. মুসনাদে আহমাদ, মিশকাত হা/২৮২৫, সনদ ছহীহ; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৭০১।

[4]. বুখারী, মিশকাত হা/২৮৩৩।

[5]. নাসাঈ, মিশকাত হা/২৮২৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৭০৫, শাওয়াহেদ-এর কারণে হাদীছ ছহীহ।

[6]. ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৮২৭, সনদ ছহীহ; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৭০৩, ৬/২৭ পৃঃ।

[7]. তারীখে ত্ববারী; সীরাতে ইবনে হিশাম।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন