HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

প্রচলিত বিভিন্ন খতম তাৎপর্য ও পর্যালোচনা

লেখকঃ শাইখ মুস্তাফা সোহেল হিলালী

১৪
খতমে শিফা
‘শিফা’ শব্দের আরবী মূল শব্দ ‘ شِفاء ’ যার অর্থ রোগমুক্ত করা বা রোগ নিরাময়। এভাবে ‘খতমে শিফা’ অর্থ: রোগ নিরাময় করার খতম। কেউ অসুস্থ হলে তার রোগমুক্তির আশায় এই খতম পড়ানো হয়। আমাদের দেশে প্রচলিত একটি বইয়ে এই খতমটি যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে :

‘‘খতমে শিফা

لا اله الا الله (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্)

এই পবিত্র কালেমা একলক্ষ পঁচিশ হাজার বার পাঠ করাকে ‘‘খতমে শিফা’’ বলে। একে খতমে তাহলীলও বলা হয়। এই খতম পাঠ করিয়া এর সোয়াব মৃত লোকের রূহের উদ্দেশ্যে বখশিশ করিয়া দিলে নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা এর উসিলায় তাহাকে মাফ করিয়া দিবেন ও বেহেশত দান করবেন। যদি কোনো ব্যক্তি কোনো কঠিন বিপদের সম্মুখীন হয় অথবা কোনো কঠিন রোগে আক্রান্ত হইয়া দীর্ঘদিন ভুগিতে থাকে, তবে উক্ত কালাম তাহার নিকট বসিয়া সশব্দে পাঠ করিতে থাকিবে, যেন সেই রোগী উহা শুনিতে পায়। আল্লাহর ফযলে খতম শেষ হইবার পূর্বেই ইহার আশ্চর্য ফল বুঝিতে পারা যায়। কোনো মুমূর্ষু লোকের নিকট বসে এই খতম পাঠ করলে তাহার রোগ যন্ত্রনা লাঘব হয় এবং পরমায়ূ শেষ হইয়া থাকিলে আছানির সহিত মৃত্যু হয়। এই খতম একজনে পাঠ করাই ভাল, তবে জরুরী প্রয়োজনে ১০/১৫ জন একত্র বসিয়া একদিনেও খতম করা চলে।’’ [মোকছুদুল মো’মিনীন বা বেহেশ্তের পুঞ্জী, আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মোহাম্মদ নাজমুল হক, পঞ্চদশ খ-, ১৭৮ পৃষ্ঠা। সাদনান পাবলিকেশন।]

ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজি‘ঊন। ওহি নির্ভর কথার উপর নিজ থেকে কিছু বলার কি দুঃসাহসিকতা!!

রোগ আল্লাহ দেন এবং তিনিই মানুষকে রোগমুক্ত করেন। কারো রোগ দেখা দিলে রোগীর নিজের কী করণীয় এবং তার বেলায় অন্যদের কী করণীয় সবই বলে গেছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষার মাঝে ‘খতমে শিফা’ নামের কিছু নেই।

একবার সাহাবায়ে কেরাম আরয করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমরা কি চিকিৎসা করব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন:

« تداووا فإن الله عز وجل لم يضع داء إلا وضع له دواء غير داء واحد الهرم » . ( سنن أبي داود، كتاب الطب، باب في الرجل يتداوى، رقم : 3857 ، سنن الترمذي، كتاب الطب، باب الدواء والحث عليه،رقم :2038 )

‘‘তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ কর। কেননা মহান আল্লাহ তা‘আলা এমন কোনো রোগ দেননি যার ঔষধ দেননি, একমাত্র মৃত্যু ব্যতীত।’’ [আবু দাঊদ, সুনান, চিকিৎসা অধ্যায়, ব্যক্তির চিকিৎসা গ্রহণ অনুচ্ছেদ, নং: ৩৮৫৭, তিরমিযী, সুনান, চিকিৎসা অধ্যায়, ঔষধ ও তার প্রতি উৎসাহিত করা অনুচ্ছেদ, নং: ২০৩৮।]

আরেকটি হাদীসে এরশাদ করেন:

« لكل داء دواء فإذا أصيب دواء الداء برأ بإذن الله عز وجل »

( صحيح مسلم، باب لكل داء دواء واستحباب التداوي، رقم :5871)

‘‘প্রত্যেক রোগের ঔষধ রয়েছে। অতঃপর যখন ঔষধ রোগের সাথে ঠিকমত পড়ে আল্লাহর ইচ্ছায় ভাল হয়।’’ [সহীহ মুসলিম, প্রত্যেক রোগের ঔষধ রয়েছে এবং চিকিৎসা করা মুস্তাহাব অনুচ্ছেদ, নং: ৫৮৭১।]

এভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চিকিৎসা গ্রহণের আরো অনেক হাদীস রয়েছে। স্বয়ং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন ধরণের চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। হাদীসের পাতা খুললেই চিকিৎসা গ্রহণের ঘটনা পাওয়া যায়। মুহাদ্দিসীনে কেরামের অনেকে তাদের কিতাবে ‘চিকিৎসা অধ্যায়’ নামে পৃথক অধ্যায় রচনা করেছেন। তবে মুমিন ব্যক্তি চিকিৎসাকে শুধুমাত্র মাধ্যম হিসেবেই গ্রহণ করেন। তার বিশ্বাস, রোগ নিবারণের মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। তবে আল্লাহ অমুক ঔষধ অমুক রোগের জন্য দিয়েছেন বলে গবেষণার মাধ্যমে এ বিষয়ের পণ্ডিতগণ জানতে পেরেছেন। তাই ঔষধ ব্যবহার মূলত আল্লাহর নির্দেশ বলেই আমরা হাদীসের আলোকে জানতে পারি। বিধায় মুমিন ঔষধ ব্যবহার করেন। এতে তিনি নবীর সুন্নাত পালন করেন। তাই মুমিন ঔষধ ব্যবহার করলেও আল্লাহকে ভুলেন না। ঔষধ যেন ঠিকমত কাজ করে তার জন্য তিনি সকাতরে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। ঔষধ তাকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল করে না। বরং আল্লাহ এই ঔষধের মাঝে রোগের শিফা রেখেছেন বলে সে ঔষধ ব্যবহার করে আরো বেশি আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করতঃ আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করে। এ হলো একজন মুমিন অসুস্থ হলে তার নিজের কাজ।

অপরদিকে এক মুমিন আরেক মুমিনের ভাই বলে কুরআন ও হাদীসে ঘোষণা করা হয়েছে। তাই একজন মুমিন অসুস্থ হয়ে বিপদে পড়লে অপর মুমিনের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব মুমিনকে একই ব্যক্তির সাথে তুলনা করেছেন। একজন মানুষের একটি অঙ্গে ব্যথা হলে তার সমস্ত শরীর যেমন কষ্ট অনূভব করে তদ্রূপ একজন মুমিন ব্যথিত হলে প্রতিটি মুমিন তার ব্যথায় ব্যথিত হওয়া ঈমানের আলামত বলে আমাদেরকে বুঝিয়েছেন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

« مثل المؤمنين فى توادهم وتراحمهم وتعاطفهم مثل الجسد إذا اشتكى منه عضو تداعى له سائر الجسد بالسهر والحمى » .

( صحيح مسلم، باب تراحم المؤمنين وتعاطفهم وتعاضدهم، رقم : 6751)

‘‘মুমিনদের দৃষ্টান্ত পরস্পরের প্রতি দয়া, মমতা, আন্তরিকতার দিক দিয়ে একটি দেহের মত। তাদের দেহের একটি অংশ আক্রান্ত হলে, তার সমগ্র অঙ্গ ব্যথা, যন্ত্রনা ও অনিদ্রায় আক্রান্ত হয়।’’ [সহীহ মুসলিম, কিতাবুল বির ওয়াসসিলাহ, মুমিনদের প্রতি দয়া, মমতা সহযোগিতা পরিচ্ছেদ, নং: ৬৭৫১, সহীহুল বুখারী, কিতাবুল আদব, পরিচ্ছেদ: মানুষ ও চতুষ্পদ জন্তুর উপর দয়া করা, নং:৫৬৬৫।]

এই হাদীস থেকেই কোনো মুমিন অসুস্থ হলে আরেক মুমিনের কি করণীয়, তার কতটুকু দায়িত্ব উপলব্ধি করা যায়। তথাপি এ হাদীস ছাড়া আরো অনেক হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুমিনের অনেক করণীয় স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন। একজন অসুস্থ মুমিনের আরেক মুমিনের উপর তাকে দেখতে যাওয়াকে অধিকার সাব্যস্ত করেছেন।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

« حَقُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ سِتٌّ » . قِيلَ مَا هُنَّ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ : … وَإِذَا مَرِضَ فَعُدْهُ وَإِذَا مَاتَ فَاتَّبِعْهُ » . ( صحيح مسلم، باب من حق المسلم على المسلم، رقم :5778)

‘‘এক মুসলিমের অপর মুসলিমের উপর ছয়টি প্রাপ্য রয়েছে। বলা হলো: হে আল্লাহর রাসূল: সেগুলো কী? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ....আর যখন সে অসুস্থ হয় তাকে দেখতে যাও, আর যখন সে মারা যায় তার জানাযায় অংশ নাও।’’ [সহীহ মুসলিম, মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের হক্ব পরিচ্ছেদ, নং:৫৭৭৮।]

রোগীকে দেখতে যাওয়া বা তার সেবার ফযিলতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

« من عاد مريضا لم يزل فى خرفة الجنة حتى يرجع » . ( صحيح مسلم،كتاب البر والصلة والأدب، باب فضل عيادة المريض، رقم : 6717)

‘‘যে ব্যক্তি রোগীকে দেখতে যায় ফিরে আসার পূর্ব পর্যন্ত সে জান্নাতের ফলের মাঝে থাকে।’’ [সহীহ মুসলিম, কিতাবুল বির ওয়াসসিলাহ, রোগী দেখতে যাওয়ার মর্যাদা পরিচ্ছেদ, নং: ৬৭১৭।]

এভাবে রোগী দেখতে যাওয়া, তাঁর সেবা করা, এর ফযিলত সংক্রান্ত বিভিন্ন হাদীস বর্ণিত হয়েছে। দেখতে গিয়ে কী পড়বে এতেও নবীর সুন্নাত রয়েছে। হাদীসে রয়েছে:

" أن رسول الله صلى الله عليه و سلم دخل على رجل يعوده فقال : " لا بأس طهور إن شاء الله " ".( صحيح البخاري، باب علامات النبوة في الإسلام، رقم : 5338 )

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তির কাছে তার রোগ দেখতে গেলেন। গিয়ে বললেন: কোনো অসুবিধা নেই, (ভাল হয়ে যাবে) পবিত্র হবে (রোগ গোনাহের কাফ্ফারা হয়ে গোনাহ থেকে পবিত্র করবে) ইন-শা-আল্লাহ।’’ [সহীহুল বুখারী, ইসলামে নবুওয়াতের আলামত পরিচ্ছেদ, নং: ৫৩৩৮।]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এত দিক নির্দেশনা থাকতে এগুলো বাদ দিয়ে, বা এগুলো রেখে নতুন কিছু সংযোজন করে ‘খতমে শিফা’ নামে খতম বের করা হয়েছে যার কোনো ভিত্তি নেই। এর ফযিলতে যা বলা হয়েছে সবই মনগড়া। এই খতম রোগ নিবারণের খতম হলে আর অন্য কিছুর কি দরকার ছিল? রোগের জন্য কুরআন খতম, বুখারীর হাদীসের খতমকে অভিজ্ঞতার বাহানায় অর্থ উপার্জনের মাধ্যম বানানোর কি প্রয়োজন ছিল। অসুস্থ ব্যক্তি অজ্ঞতার কারণে না বুঝলে তাকে সঠিক বিষয় বোঝানোই ছিল একজন আলেমের দায়িত্ব। তাকে দীনের দা‘ওয়াত দেওয়ার এটি ছিল একটি সুবর্ণ সুযোগ। তাকে দীনের সঠিক একটি শিক্ষাদান আমার মৃত্যুর পরও কাজে আসতো। এই দায়িত্ব আদায় না করে বরং তার অজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নিজের স্বার্থ উদ্ধারের চিন্তা করা কতটুকু অমানবিক কাজ তা ভেবে দেখা প্রয়োজন। এই অমানবিক কাজকেই তার থেকে কিছু অর্থ উদ্ধারের সুবর্ণ সুযোগ পাওয়া গেছে বলে মনে করা হয়। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার এই যে, একজন অসুস্থ মানুষ মানেই সে যে কোনো দিক থেকে বিপদগ্রস্ত। এই বিপদে আমাকে আমার সামর্থানুযায়ী তার সাহায্যে এগিয়ে আসা প্রয়োজন ছিল। আজীবন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের এই শিক্ষাই দিয়ে গেলেন। আমরা রাসূলের এই শিক্ষাতো গ্রহণ করছিই না, উপরন্তু বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে আরো বিপদ ও ঝামেলায় ফেলছি। তাকে সাহায্য না করে খতমের বাহানায় তার থেকেই আর্থিক সাহায্য নিচ্ছি। আল্লাহ আমাকে এবং সবাইকে হেদায়াত দান করুন। সাহায্য গ্রহণ না করে সাহায্য করার তওফিক ও মানসিকতা দান করুন। আমীন।

উল্লেখ্য যে, ‘খতমে শিফা’ নামের খতমের বর্ণিত পদ্ধতি ছাড়া অন্য পদ্ধতিও বলা হয়ে থাকে। যেমন, ‘ইয়া সালামু’ নির্দিষ্ট সংখ্যায় পড়া। এর কোনো ভিত্তি নেই। টাকার পরিমাণে ছোট দো‘আ, বড় দো‘আ, কম সংখ্যা, বেশি সংখ্যা নির্ধারিত হয়ে থাকে। অনেক সময় পড়ার মাঝে কম বেশ করা আয়োজকের তদারিকের উপর নির্ভর করে। আল্লাহ আমাদেরকে এসব থেকে দূরে রাখুন। আমীন।



রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন