HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
আল কোরআন ও আধুনিক যুগের চাহিদা
লেখকঃ জহির উদ্দিন বাবর
৪
কোরআনের নামকরণের কারণকোরআন শব্দটি ‘কেরাআতুন’ শব্দ থেকে নির্গত। এর আভিধানিক অর্থ জমা করা, ঘোষণা করা ইত্যাদি। কোরআন মূলত এমন এক শাশ্বত ঘোষণা যা ইলম ও হিকমত এবং সমস্ত নবী-রাসূলের শিক্ষার সার নির্যাস। কোরআনুল কারীমের নামকরণের কারণ হিসেবে এটাও বলা হয় যে, এতে সমস্ত আসমানী কিতাব এবং যাবতীয় ইলম ও হিকমতের ভান্ডার সঞ্চিত রয়েছে। যেমন সূরা ইউসুফের শেষ দিকে বলা হয়েছে,
(আরবি)
‘নিঃসন্দেহে তাদের সংবাদের কারণে বুদ্ধিমানদের চক্ষু খুলে যায়। এটা বানোয়াট কিছু নয়। বরং পূর্ববর্তী কালামের সত্যায়ন। আর প্রত্যেক জিনিসের বিস্তারিত বর্ণনা এবং মুসলমানদের জন্য হেদায়াত ও রহমত।’ (সূরা ইউসুফ : ১১১)
এর দ্বারা জানা গেল, কোরআনুল কারীমে অন্য কোনো নবীর সুসংবাদ নেই, যেমনটা আগেকার আসমানী কিতাবসমূহে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের সুসংবাদ পাওয়া যায়। বরং এতে পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব ও নবীদের সত্যায়ন এবং মুমিনদের জন্য রহমত ও হেদায়াতের সুসংবাদ রয়েছে।
যে পবিত্র কালাম হেদায়াত ও রহমত এর জন্য বিশেষ কোনো যুগের কিংবা বিশেষ কোনো স্থানের কথা নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ নেই। বরং এতে প্রতিটি যুগ ও কালের চাহিদা পূরণের প্রয়োজনীয় উপকরণ বিদ্যমান। এই পবিত্র কালামের যিনি ধারক তিনিও রহমতের আধার, রহমাতুল্লিল আলামীন। যার আলোতে উদ্ভাসিত সমগ্র ভুবন। কোরআন নিজেই ঘোষণা করেছে, ‘প্রকৃত অর্থে এই কোরআনুল কারীম উজ্জ্বল ও অনস্বীকারযোগ্য আয়াতসমূহের সমষ্টি, যা ওই লোকদের সীনায় যাদেরকে ইলম দেয়া হয়েছে।’
কোরআনুল কারীমে মূলত দু’ধরনের নির্দেশনা পাওয়া যায়। প্রথমত, শরীয়তের সেসব নির্দেশনা যা আকীদার সঙ্গে সম্পৃক্ত। দ্বিতীয়ত, সংবাদমূলক অর্থাৎ ঐতিহাসিক ও জ্ঞানগত তথ্য। শরয়ী উলূম এবং আকীদাগত যে নির্দেশনা এর সম্পর্ক প্রতিটি যুগে অভিন্ন থাকে এবং এতে পূর্ববর্তীদের জ্ঞান ও প্রতিভার ওপর নির্ভর করে। তবে অন্যান্য তথ্যের সঙ্গে যা সম্পৃক্ত তাতে নতুনের সংযুক্তি ঘটে এবং ভবিষ্যতেও সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ অবারিত। এজন্য ওইসব বিষয়ের আয়াতের ব্যাখ্যা এ সময়ের বাস্তবতা অনুযায়ী হবে। এর ফলে কোরআনের আয়াত আরো বেশি স্পষ্ট ও বিস্তৃত হবে।
আমরা যদি অতীত দর্পনে নজর দেই তাহলে জানতে পারব, প্রাচীন যুগে মানুষের বৈষয়িক জ্ঞান ছিল অতি স্বল্প। পরবর্তী সময়ে যখনই এর মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে কোরআনুল কারীমের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণও আগের চেয়ে বিশুদ্ধ ও স্পষ্টভাবে বুঝে এসেছে। তদুপরী আল্লাহ রাববুল আলামীন ইরশাদ করেছেন,
(আরবি)
‘কোরআনের ব্যাখ্যা আমার দায়িত্ব।’ অর্থাৎ প্রত্যেক যুগের জ্ঞান-বিজ্ঞান এর ব্যাখ্যা করতে থাকবে। এরপর সূরা হা-মীম সেজদায় বলা হয়েছে,
(আরবি)
‘বিশ্বজগতে ও তাদের নিজেদের মধ্যে আমি তাদেরকে আমার নিদের্শনাবলী দেখাব যাতে তাদের কাছে সুস্পষ্ট হয় যে, এটি (কোরআন) সত্য।’ (সূরা ফুসসিলাত : ৫৩)
এ আয়াতের উদ্দেশ্য হলো, যুগের পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কোরআনুল কারীমের হাকিকত এক একটি করে প্রমাণিত হতে থাকবে।
তাফসীরে আহনাফে লেখা হয়েছে, আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন যা কিছু বিশাল বিশ্বজগতে রয়েছে তা সীমিত আত্মার জগতেও বিদ্যমান। সূরা শূরায় ইরশাদ হয়েছে,
(আরবি)
আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টি এবং এতদোভয়ের মধ্যে তিনি যে সব জীব-জন্তু ছড়িয়ে দিয়েছেন সেগুলো। তিনি যখন ইচ্ছা তখনই এগুলোকে একত্র করতে সক্ষম। (সূরা শুরা : ২৯)
উপরোক্ত আয়াতে বলা হয়েছে, আসমান-জমিনে যা কিছু আছে সবকিছু আল্লাহর সৃষ্টি। আর এ কথাও প্রমাণিত যে, তিনি যেদিন চাইবেন এসবকিছু একত্রে মিলিয়ে দিবেন। এটা চাই হাশরের ময়দানে হোক কিংবা দুনিয়াতে। বিজ্ঞানের দাবী হলো, তারা চাঁদ বিজয় করেছে। তবে তাদের কথা এতটুকু পর্যন্ত সত্য যে, তারা শূন্যতার এমন এক পর্যায় পর্যন্ত লোকদেরকে পৌঁছিয়ে দিয়েছে যাকে লোকেরা চাঁদ মনে করছে। কিন্তু মূলত চাঁদ তাদের থেকে অনেক দূরে অবস্থিত। বিজ্ঞান আজও সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেনি যে, পৃথিবী ছাড়া অন্যান্য গ্রহে ও মহাকাশে কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব আছে কি-না। অথচ পবিত্র কোরআনুল কারীমের উল্লিখিত আয়াত এবং অন্যান্য আয়াতে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা পেশ করা হয়েছে। ইনশাআল্লাহ, যে বিজ্ঞান রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সত্য মেরাজকে অস্বীকার করেছিল তারাই প্রমাণ করবে, আসমানে অবশ্যই প্রাণের অস্তিত্ব আছে। আজ অমুসলিম বিজ্ঞানী-গবেষক নিজেদের চিন্তা-গবেষণা এবং প্রযুক্তির উৎকর্ষের দ্বারা চন্দ্র বিজয় করেছে, মহাকাশে তাদের পদচারণা ঘটেছে। এটা ইসলামের সত্যতা প্রমাণের জাগতিক দলীল। সাড়ে চৌদ্দশত বছর পর আজ ইসলামের সত্যতা ফুটে উঠেছে ইসলামবিদ্বেষীদের মাধ্যমে। আধুনিক বিজ্ঞানের কোনো সূত্রই ইসলামকে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা রাখে না। আল্লাহর ফজলে দ্বীন ইসলামের এই শ্রেষ্ঠত্ব সমস্ত বাতিল ধর্মের ওপর কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। কবির ভাষায় ‘ভূতালয় থেকেই কাবার রক্ষক তৈরি হয়ে গেছে।’
একটি প্রশ্ন ও তার উত্তর
রক্ষণশীল ও সেকেলে চিন্তার ধারক যারা তারা কোরআনুল কারীমের নেজামের ওপর প্রশ্ন করবে যে, কোরআন যদি সব যুগের চাহিদাই পূরণ করে থাকে তাহলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনবিক বোমার আলোচনা কোথাও করেননি কেন? তিনি কি ভবিষ্যতের বাস্তবতা সম্পর্কে সম্যক অবগত ছিলেন না?
এ প্রশ্নের জবাবে তাদের খেদমতে আরজ করব, শুধু আমাদের নবীই নন, প্রত্যেক নবী এমন বাস্তবতা সম্পর্কে সম্যক অবগত ছিলেন। কেননা চিন্তাবিদরা বলেন, আল্লাহ তাআলা আলিমুল গায়েব হওয়ার বিষয়টি প্রত্যেক নবীকে অনুধাবন করান। এমনকি চোখের আড়ালের বাস্তবতাকে বাহ্যিকভাবে তাদের কাছে উপস্থাপন করে দেন- যেসব কাজ ও বাস্তবতার ওপর আমাদের বিশ্বাস হয় গায়েবের ওপর। অথচ নবীদের ঈমান হয় প্রকাশ্য দেখার ভিত্তিতে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কাজের বিস্তারিত বিবরণ বিশ্লেষণমূলকভাবে উল্লেখ করেননি এজন্য যে, যুগের জ্ঞান-বিদ্যার স্তর এর জন্য সহায়ক নয়। সূরা নহলে ইরশাদ হয়েছে,
‘অচিরেই আমি তোমাকে আমার নিদর্শন দেখাব তোমরা চিনে নিবে। তোমার প্রভু বে-খবর নন ওই কাজসমূহ থেকে যা তারা করে।’
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি এমন বাস্তবতার কথা উল্লেখ করতেন তাহলে সমস্যা দেখা দিত। সে যুগের জ্ঞান-বিজ্ঞানের স্তর যেহেতু এত উঁচু ছিল না এজন্য লোকেরা বিভ্রান্তিতে পড়ে যেত। তখন আল্লাহর পথে দাওয়াতের মূল মাকসাদই অকেজো হয়ে যেত। শরয়ী বিধি-বিধান ও আকায়েদের প্রতি কোনো মনোযোগ থাকত না। ঈমান বিল গায়েবের প্রতি যে দাওয়াত দেয়া হচ্ছে তাতে সমস্যার সৃষ্টি হতো। এজন্য বিশেষ প্রজ্ঞার অধিকারী নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘মানুষের সঙ্গে তাদের মেধার স্তর বুঝে কথা বল’-এ নীতির ভিত্তিতে এসব আহকামের বিশ্লেষণ নিজে না করে অনাগত ভবিষ্যতের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। প্রত্যেক যুগের জ্ঞান ও গবেষণা এসব বাস্তবতার মুখোশ উম্মোচন করে যাবে। যতক্ষণ ইলম এ ব্যাপারে সাক্ষ্য না দিবে ততক্ষণ মানুষ এটাকে মিথ্যা বলেই যাবে। সূরা ইউনূসে বলা হয়েছে ,
‘বরং তারা যে ব্যাপারে পূর্ণ জ্ঞান লাভ করেনি, তা তারা অস্বীকার করেছে এবং এখনও তার পরিণতি তাদের কাছে আসেনি।’ এমনিভাবে পবিত্র কোরআনে নবী মূসা আ. ও খিজির-এর ঘটনা উল্লেখ আছে যে, মূসা আ.-এর সফরসঙ্গী খিজির আ. তাঁকে বললেন, এমন বিষয়ের ওপর আপনি কিভাবে ধৈর্য ধারণ করেন যা আপনার জানার গন্ডির বাইরে।’
দ্বীনে হানীফের প্রথম দিকে দৃষ্টি দিলে জানা যায়, আল্লাহ তাআলা নবী আদম আ. কে দুনিয়াতে তাঁর খলিফা বানিয়ে পাঠিয়েছিলেন। তিনিই ছিলেন সৃষ্টিজীবের প্রথম শিক্ষক। আল্লাহ তাআলা আদম আ. কে প্রতিটি বস্ত্তর নাম শিক্ষা দিয়েছেন। শুধু বস্ত্তর নামই নয় এর নিগূঢ় রহস্যও বলে দিয়েছেন। কিয়ামত পর্যন্ত যেসব জিনিস আসবে সেগুলোর নামই শুধু নয়, এর একটি নমুনাও আদম আ.-এর সামনে পেশ করেছিলেন। নবী নূহ আ.কে জাহাজ নির্মাণ পদ্ধতি শিখিয়েছিলেন। দাউদ আ.কে সমরাস্ত্র তৈরি এবং কারিগরি বিদ্যা শিক্ষা দিয়েছিলেন। ইবরাহীম আ.কে আসমান-জমিনের জ্ঞান দান করেছিলেন। তাঁর দ্বারা মৃতকে জীবিত পর্যন্ত করিয়েছেন। যেমন সূরা বাকারায় চারটি পাখির ঘটনা উল্লেখ আছে। এমনিভাবে উজায়ের আ.কেও মৃতকে জীবিত করার ক্ষমতা দিয়েছিলেন। মূসা আ.-এর লাঠি ও হাতের শুভ্রতা মোজেজা লাভ করেছিল। সোলায়মান আ. হাওয়ায় উড়তে পারতেন, পশু-পাখির বুলি বুঝতে পারতেন। জ্বিনদের ওপর তার পুরো কর্তৃত্ব দেয়া হয়েছিল। তাঁর বাহিনীর আগমনের সংবাদ পেয়ে পিপড়ারা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল।
মোটকথা, আল্লাহ তাআলা অসংখ্য নবী-রাসূলকে শিক্ষক বানিয়ে প্রেরণ করেছেন যারা লোকদেরকে ইলমে ওহীর শিক্ষা দিতেন। কিন্তু তারা সবাই এসেছিলেন সীমিত সময়ের জন্য, সীমিত জাতি-গোষ্ঠী কিংবা সীমিত সম্প্রদায়ের জন্য। অবশেষে একটি সময় এমন আসল যে, এ ধারাবাহিকতা বন্ধ হয়ে গেল। সর্বশেষে প্রেরণ করা হলো রহমাতুললিল আলামিন মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে। যিনি কোনো কাল বা সম্প্রদায়ের জন্য গন্ডিভূত ছিলেন না। তিনি ছিলেন কুল মাখলুকাতের অনন্তকালের নবী ও রাসূল। যার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন,
(আরবি)
‘আমি তোমাকে একমাত্র জগতের রহমত বানিয়ে প্রেরণ করেছি।’ (সূরা আম্বিয়া : ১০৭)
অন্যত্র বলেন,
(আরবি)
‘বরকতময় ওই সত্ত্বা যিনি কোরআন নাজিল করেছেন তার বান্দার ওপর যাতে সমগ্র ভুবনের জন্য ভীতি প্রদর্শনকারী হন।’ ( সূরা ফোরকান : ১)
এর দ্বারা জানা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমস্ত দুনিয়ার রহমত হিসেবে আবিভূর্ত হয়েছিলেন, আঠার হাজার মাখলুকাত সবারই তিনি পথপ্রদর্শক ও শিক্ষক।
যেহেতু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমগ্র দুনিয়ার জন্য পথ প্রদর্শক ও ভীতি প্রদর্শনকারী হিসেবে প্রেরিত হয়েছিলেন এজন্য মাখলুকের সব ধরনের জীবনপ্রণালী ও জীবনদর্শন সম্পর্কে যাবতীয় ইলম দান করা হয়েছিল। এ ধরনের পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান ও জানাশোনা থাকলেই কেবল সমগ্র সৃষ্টিজীবকে ভয় প্রদর্শন করা যায়। তাঁর নবুওয়ত ও রেসালাত কেয়ামত পর্যন্ত নির্ধারিত। কোরআনী নেজামও অনন্তকালের জন্য। যেহেতু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র সত্ত্বা সমস্ত দুনিয়ার জন্য ভীতি প্রদর্শনকারী এজন্য তাঁকে দান করা হয়েছে এমন এক কিতাব যা সমস্ত ভুবনের নীতিমালা ও জীবনপ্রণালী সমন্বিত। যে মহান শিক্ষকের ওপর মহিমান্বিত এই কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে তিনি এ কিতাবের শিক্ষা লোকদেরকে দিয়েছেন। এর দ্বারা তিনি লোকদেরকে শিখিয়েছেন ইলম ও প্রজ্ঞা এবং তাদেরকে করেছেন পরিশুদ্ধ।
কোরআনের নেজাম চিরন্তন ও শাশ্বত। এর অনুসারীদের জন্য অন্য কোনো নেজামের দ্বারস্থ হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। এই নেজামের যিনি ধারক তিনি বিশ্বনবী। তাঁর আনিত শরীয়ত চির সবুজ ও সতেজ। আমাদের উচিত শুধু তাঁর আনুগত্য করা। কারণ এর মধ্যেই আল্লাহর নৈকট্য ও মহববত লাভের রহস্য লুকায়িত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রকৃত আনুগত্য হলো তাঁর সঙ্গে মহববতের সম্পর্ক কায়েম করা। যতক্ষণ তাঁর সঙ্গে এ সম্পর্ক কায়েম না হবে ততক্ষণ তাঁর আনুগত্য করা কিংবা তাঁর নির্দেশনা মোতাবেক চলার স্পৃহা জন্ম নিবে না। কোরআনের ভাষ্য অনুযায়ী,
(আরবি)
‘তোমরা আমার আনুগত্য কর, আল্লাহ তোমাদেরকে মহববত করবেন।’ (সূরা আলে ইমরান : ৩১)
এর ওপর আমলকারী হয়ে গেলেই আল্লাহ আমাদের গোনাহ মাফ করে দিবেন বলে আশা পোষণ করতে পারি। সুতরাং আমাদেরকে রেসালতের উৎসমূলে অবনত হতে হবে। এর মধ্যেই আমাদের সফলতা ও কামিয়াবী নিহিত। ওই দরবার ছাড়া খালেস ইসলামের কোনো আশ্রয়স্থল পাওয়া যাবে না। দোয়া করি, আল্লাহ তাআলা যেন আমাদেরকে সীরাতে মুস্তাকিম নসীব করেন এবং তাঁর প্রিয় হাবীবের সঙ্গে প্রকৃত মহববতের সম্পর্ক স্থাপনের তাওফিক দান করেন #
[উর্দূ সাইয়্যারা ডাইজেস্ট-এর ‘কোরআন সংখ্যা’ থেকে লেখাটি ছায়ানুবাদ করা হয়েছে।]
(আরবি)
‘নিঃসন্দেহে তাদের সংবাদের কারণে বুদ্ধিমানদের চক্ষু খুলে যায়। এটা বানোয়াট কিছু নয়। বরং পূর্ববর্তী কালামের সত্যায়ন। আর প্রত্যেক জিনিসের বিস্তারিত বর্ণনা এবং মুসলমানদের জন্য হেদায়াত ও রহমত।’ (সূরা ইউসুফ : ১১১)
এর দ্বারা জানা গেল, কোরআনুল কারীমে অন্য কোনো নবীর সুসংবাদ নেই, যেমনটা আগেকার আসমানী কিতাবসমূহে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের সুসংবাদ পাওয়া যায়। বরং এতে পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব ও নবীদের সত্যায়ন এবং মুমিনদের জন্য রহমত ও হেদায়াতের সুসংবাদ রয়েছে।
যে পবিত্র কালাম হেদায়াত ও রহমত এর জন্য বিশেষ কোনো যুগের কিংবা বিশেষ কোনো স্থানের কথা নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ নেই। বরং এতে প্রতিটি যুগ ও কালের চাহিদা পূরণের প্রয়োজনীয় উপকরণ বিদ্যমান। এই পবিত্র কালামের যিনি ধারক তিনিও রহমতের আধার, রহমাতুল্লিল আলামীন। যার আলোতে উদ্ভাসিত সমগ্র ভুবন। কোরআন নিজেই ঘোষণা করেছে, ‘প্রকৃত অর্থে এই কোরআনুল কারীম উজ্জ্বল ও অনস্বীকারযোগ্য আয়াতসমূহের সমষ্টি, যা ওই লোকদের সীনায় যাদেরকে ইলম দেয়া হয়েছে।’
কোরআনুল কারীমে মূলত দু’ধরনের নির্দেশনা পাওয়া যায়। প্রথমত, শরীয়তের সেসব নির্দেশনা যা আকীদার সঙ্গে সম্পৃক্ত। দ্বিতীয়ত, সংবাদমূলক অর্থাৎ ঐতিহাসিক ও জ্ঞানগত তথ্য। শরয়ী উলূম এবং আকীদাগত যে নির্দেশনা এর সম্পর্ক প্রতিটি যুগে অভিন্ন থাকে এবং এতে পূর্ববর্তীদের জ্ঞান ও প্রতিভার ওপর নির্ভর করে। তবে অন্যান্য তথ্যের সঙ্গে যা সম্পৃক্ত তাতে নতুনের সংযুক্তি ঘটে এবং ভবিষ্যতেও সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ অবারিত। এজন্য ওইসব বিষয়ের আয়াতের ব্যাখ্যা এ সময়ের বাস্তবতা অনুযায়ী হবে। এর ফলে কোরআনের আয়াত আরো বেশি স্পষ্ট ও বিস্তৃত হবে।
আমরা যদি অতীত দর্পনে নজর দেই তাহলে জানতে পারব, প্রাচীন যুগে মানুষের বৈষয়িক জ্ঞান ছিল অতি স্বল্প। পরবর্তী সময়ে যখনই এর মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে কোরআনুল কারীমের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণও আগের চেয়ে বিশুদ্ধ ও স্পষ্টভাবে বুঝে এসেছে। তদুপরী আল্লাহ রাববুল আলামীন ইরশাদ করেছেন,
(আরবি)
‘কোরআনের ব্যাখ্যা আমার দায়িত্ব।’ অর্থাৎ প্রত্যেক যুগের জ্ঞান-বিজ্ঞান এর ব্যাখ্যা করতে থাকবে। এরপর সূরা হা-মীম সেজদায় বলা হয়েছে,
(আরবি)
‘বিশ্বজগতে ও তাদের নিজেদের মধ্যে আমি তাদেরকে আমার নিদের্শনাবলী দেখাব যাতে তাদের কাছে সুস্পষ্ট হয় যে, এটি (কোরআন) সত্য।’ (সূরা ফুসসিলাত : ৫৩)
এ আয়াতের উদ্দেশ্য হলো, যুগের পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কোরআনুল কারীমের হাকিকত এক একটি করে প্রমাণিত হতে থাকবে।
তাফসীরে আহনাফে লেখা হয়েছে, আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন যা কিছু বিশাল বিশ্বজগতে রয়েছে তা সীমিত আত্মার জগতেও বিদ্যমান। সূরা শূরায় ইরশাদ হয়েছে,
(আরবি)
আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টি এবং এতদোভয়ের মধ্যে তিনি যে সব জীব-জন্তু ছড়িয়ে দিয়েছেন সেগুলো। তিনি যখন ইচ্ছা তখনই এগুলোকে একত্র করতে সক্ষম। (সূরা শুরা : ২৯)
উপরোক্ত আয়াতে বলা হয়েছে, আসমান-জমিনে যা কিছু আছে সবকিছু আল্লাহর সৃষ্টি। আর এ কথাও প্রমাণিত যে, তিনি যেদিন চাইবেন এসবকিছু একত্রে মিলিয়ে দিবেন। এটা চাই হাশরের ময়দানে হোক কিংবা দুনিয়াতে। বিজ্ঞানের দাবী হলো, তারা চাঁদ বিজয় করেছে। তবে তাদের কথা এতটুকু পর্যন্ত সত্য যে, তারা শূন্যতার এমন এক পর্যায় পর্যন্ত লোকদেরকে পৌঁছিয়ে দিয়েছে যাকে লোকেরা চাঁদ মনে করছে। কিন্তু মূলত চাঁদ তাদের থেকে অনেক দূরে অবস্থিত। বিজ্ঞান আজও সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেনি যে, পৃথিবী ছাড়া অন্যান্য গ্রহে ও মহাকাশে কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব আছে কি-না। অথচ পবিত্র কোরআনুল কারীমের উল্লিখিত আয়াত এবং অন্যান্য আয়াতে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা পেশ করা হয়েছে। ইনশাআল্লাহ, যে বিজ্ঞান রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সত্য মেরাজকে অস্বীকার করেছিল তারাই প্রমাণ করবে, আসমানে অবশ্যই প্রাণের অস্তিত্ব আছে। আজ অমুসলিম বিজ্ঞানী-গবেষক নিজেদের চিন্তা-গবেষণা এবং প্রযুক্তির উৎকর্ষের দ্বারা চন্দ্র বিজয় করেছে, মহাকাশে তাদের পদচারণা ঘটেছে। এটা ইসলামের সত্যতা প্রমাণের জাগতিক দলীল। সাড়ে চৌদ্দশত বছর পর আজ ইসলামের সত্যতা ফুটে উঠেছে ইসলামবিদ্বেষীদের মাধ্যমে। আধুনিক বিজ্ঞানের কোনো সূত্রই ইসলামকে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা রাখে না। আল্লাহর ফজলে দ্বীন ইসলামের এই শ্রেষ্ঠত্ব সমস্ত বাতিল ধর্মের ওপর কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। কবির ভাষায় ‘ভূতালয় থেকেই কাবার রক্ষক তৈরি হয়ে গেছে।’
একটি প্রশ্ন ও তার উত্তর
রক্ষণশীল ও সেকেলে চিন্তার ধারক যারা তারা কোরআনুল কারীমের নেজামের ওপর প্রশ্ন করবে যে, কোরআন যদি সব যুগের চাহিদাই পূরণ করে থাকে তাহলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনবিক বোমার আলোচনা কোথাও করেননি কেন? তিনি কি ভবিষ্যতের বাস্তবতা সম্পর্কে সম্যক অবগত ছিলেন না?
এ প্রশ্নের জবাবে তাদের খেদমতে আরজ করব, শুধু আমাদের নবীই নন, প্রত্যেক নবী এমন বাস্তবতা সম্পর্কে সম্যক অবগত ছিলেন। কেননা চিন্তাবিদরা বলেন, আল্লাহ তাআলা আলিমুল গায়েব হওয়ার বিষয়টি প্রত্যেক নবীকে অনুধাবন করান। এমনকি চোখের আড়ালের বাস্তবতাকে বাহ্যিকভাবে তাদের কাছে উপস্থাপন করে দেন- যেসব কাজ ও বাস্তবতার ওপর আমাদের বিশ্বাস হয় গায়েবের ওপর। অথচ নবীদের ঈমান হয় প্রকাশ্য দেখার ভিত্তিতে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কাজের বিস্তারিত বিবরণ বিশ্লেষণমূলকভাবে উল্লেখ করেননি এজন্য যে, যুগের জ্ঞান-বিদ্যার স্তর এর জন্য সহায়ক নয়। সূরা নহলে ইরশাদ হয়েছে,
‘অচিরেই আমি তোমাকে আমার নিদর্শন দেখাব তোমরা চিনে নিবে। তোমার প্রভু বে-খবর নন ওই কাজসমূহ থেকে যা তারা করে।’
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি এমন বাস্তবতার কথা উল্লেখ করতেন তাহলে সমস্যা দেখা দিত। সে যুগের জ্ঞান-বিজ্ঞানের স্তর যেহেতু এত উঁচু ছিল না এজন্য লোকেরা বিভ্রান্তিতে পড়ে যেত। তখন আল্লাহর পথে দাওয়াতের মূল মাকসাদই অকেজো হয়ে যেত। শরয়ী বিধি-বিধান ও আকায়েদের প্রতি কোনো মনোযোগ থাকত না। ঈমান বিল গায়েবের প্রতি যে দাওয়াত দেয়া হচ্ছে তাতে সমস্যার সৃষ্টি হতো। এজন্য বিশেষ প্রজ্ঞার অধিকারী নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘মানুষের সঙ্গে তাদের মেধার স্তর বুঝে কথা বল’-এ নীতির ভিত্তিতে এসব আহকামের বিশ্লেষণ নিজে না করে অনাগত ভবিষ্যতের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। প্রত্যেক যুগের জ্ঞান ও গবেষণা এসব বাস্তবতার মুখোশ উম্মোচন করে যাবে। যতক্ষণ ইলম এ ব্যাপারে সাক্ষ্য না দিবে ততক্ষণ মানুষ এটাকে মিথ্যা বলেই যাবে। সূরা ইউনূসে বলা হয়েছে ,
‘বরং তারা যে ব্যাপারে পূর্ণ জ্ঞান লাভ করেনি, তা তারা অস্বীকার করেছে এবং এখনও তার পরিণতি তাদের কাছে আসেনি।’ এমনিভাবে পবিত্র কোরআনে নবী মূসা আ. ও খিজির-এর ঘটনা উল্লেখ আছে যে, মূসা আ.-এর সফরসঙ্গী খিজির আ. তাঁকে বললেন, এমন বিষয়ের ওপর আপনি কিভাবে ধৈর্য ধারণ করেন যা আপনার জানার গন্ডির বাইরে।’
দ্বীনে হানীফের প্রথম দিকে দৃষ্টি দিলে জানা যায়, আল্লাহ তাআলা নবী আদম আ. কে দুনিয়াতে তাঁর খলিফা বানিয়ে পাঠিয়েছিলেন। তিনিই ছিলেন সৃষ্টিজীবের প্রথম শিক্ষক। আল্লাহ তাআলা আদম আ. কে প্রতিটি বস্ত্তর নাম শিক্ষা দিয়েছেন। শুধু বস্ত্তর নামই নয় এর নিগূঢ় রহস্যও বলে দিয়েছেন। কিয়ামত পর্যন্ত যেসব জিনিস আসবে সেগুলোর নামই শুধু নয়, এর একটি নমুনাও আদম আ.-এর সামনে পেশ করেছিলেন। নবী নূহ আ.কে জাহাজ নির্মাণ পদ্ধতি শিখিয়েছিলেন। দাউদ আ.কে সমরাস্ত্র তৈরি এবং কারিগরি বিদ্যা শিক্ষা দিয়েছিলেন। ইবরাহীম আ.কে আসমান-জমিনের জ্ঞান দান করেছিলেন। তাঁর দ্বারা মৃতকে জীবিত পর্যন্ত করিয়েছেন। যেমন সূরা বাকারায় চারটি পাখির ঘটনা উল্লেখ আছে। এমনিভাবে উজায়ের আ.কেও মৃতকে জীবিত করার ক্ষমতা দিয়েছিলেন। মূসা আ.-এর লাঠি ও হাতের শুভ্রতা মোজেজা লাভ করেছিল। সোলায়মান আ. হাওয়ায় উড়তে পারতেন, পশু-পাখির বুলি বুঝতে পারতেন। জ্বিনদের ওপর তার পুরো কর্তৃত্ব দেয়া হয়েছিল। তাঁর বাহিনীর আগমনের সংবাদ পেয়ে পিপড়ারা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল।
মোটকথা, আল্লাহ তাআলা অসংখ্য নবী-রাসূলকে শিক্ষক বানিয়ে প্রেরণ করেছেন যারা লোকদেরকে ইলমে ওহীর শিক্ষা দিতেন। কিন্তু তারা সবাই এসেছিলেন সীমিত সময়ের জন্য, সীমিত জাতি-গোষ্ঠী কিংবা সীমিত সম্প্রদায়ের জন্য। অবশেষে একটি সময় এমন আসল যে, এ ধারাবাহিকতা বন্ধ হয়ে গেল। সর্বশেষে প্রেরণ করা হলো রহমাতুললিল আলামিন মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে। যিনি কোনো কাল বা সম্প্রদায়ের জন্য গন্ডিভূত ছিলেন না। তিনি ছিলেন কুল মাখলুকাতের অনন্তকালের নবী ও রাসূল। যার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন,
(আরবি)
‘আমি তোমাকে একমাত্র জগতের রহমত বানিয়ে প্রেরণ করেছি।’ (সূরা আম্বিয়া : ১০৭)
অন্যত্র বলেন,
(আরবি)
‘বরকতময় ওই সত্ত্বা যিনি কোরআন নাজিল করেছেন তার বান্দার ওপর যাতে সমগ্র ভুবনের জন্য ভীতি প্রদর্শনকারী হন।’ ( সূরা ফোরকান : ১)
এর দ্বারা জানা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমস্ত দুনিয়ার রহমত হিসেবে আবিভূর্ত হয়েছিলেন, আঠার হাজার মাখলুকাত সবারই তিনি পথপ্রদর্শক ও শিক্ষক।
যেহেতু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমগ্র দুনিয়ার জন্য পথ প্রদর্শক ও ভীতি প্রদর্শনকারী হিসেবে প্রেরিত হয়েছিলেন এজন্য মাখলুকের সব ধরনের জীবনপ্রণালী ও জীবনদর্শন সম্পর্কে যাবতীয় ইলম দান করা হয়েছিল। এ ধরনের পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান ও জানাশোনা থাকলেই কেবল সমগ্র সৃষ্টিজীবকে ভয় প্রদর্শন করা যায়। তাঁর নবুওয়ত ও রেসালাত কেয়ামত পর্যন্ত নির্ধারিত। কোরআনী নেজামও অনন্তকালের জন্য। যেহেতু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র সত্ত্বা সমস্ত দুনিয়ার জন্য ভীতি প্রদর্শনকারী এজন্য তাঁকে দান করা হয়েছে এমন এক কিতাব যা সমস্ত ভুবনের নীতিমালা ও জীবনপ্রণালী সমন্বিত। যে মহান শিক্ষকের ওপর মহিমান্বিত এই কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে তিনি এ কিতাবের শিক্ষা লোকদেরকে দিয়েছেন। এর দ্বারা তিনি লোকদেরকে শিখিয়েছেন ইলম ও প্রজ্ঞা এবং তাদেরকে করেছেন পরিশুদ্ধ।
কোরআনের নেজাম চিরন্তন ও শাশ্বত। এর অনুসারীদের জন্য অন্য কোনো নেজামের দ্বারস্থ হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। এই নেজামের যিনি ধারক তিনি বিশ্বনবী। তাঁর আনিত শরীয়ত চির সবুজ ও সতেজ। আমাদের উচিত শুধু তাঁর আনুগত্য করা। কারণ এর মধ্যেই আল্লাহর নৈকট্য ও মহববত লাভের রহস্য লুকায়িত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রকৃত আনুগত্য হলো তাঁর সঙ্গে মহববতের সম্পর্ক কায়েম করা। যতক্ষণ তাঁর সঙ্গে এ সম্পর্ক কায়েম না হবে ততক্ষণ তাঁর আনুগত্য করা কিংবা তাঁর নির্দেশনা মোতাবেক চলার স্পৃহা জন্ম নিবে না। কোরআনের ভাষ্য অনুযায়ী,
(আরবি)
‘তোমরা আমার আনুগত্য কর, আল্লাহ তোমাদেরকে মহববত করবেন।’ (সূরা আলে ইমরান : ৩১)
এর ওপর আমলকারী হয়ে গেলেই আল্লাহ আমাদের গোনাহ মাফ করে দিবেন বলে আশা পোষণ করতে পারি। সুতরাং আমাদেরকে রেসালতের উৎসমূলে অবনত হতে হবে। এর মধ্যেই আমাদের সফলতা ও কামিয়াবী নিহিত। ওই দরবার ছাড়া খালেস ইসলামের কোনো আশ্রয়স্থল পাওয়া যাবে না। দোয়া করি, আল্লাহ তাআলা যেন আমাদেরকে সীরাতে মুস্তাকিম নসীব করেন এবং তাঁর প্রিয় হাবীবের সঙ্গে প্রকৃত মহববতের সম্পর্ক স্থাপনের তাওফিক দান করেন #
[উর্দূ সাইয়্যারা ডাইজেস্ট-এর ‘কোরআন সংখ্যা’ থেকে লেখাটি ছায়ানুবাদ করা হয়েছে।]
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন