HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আল-কুরআনুল কারিম হিফয করার ব্যবহারিক পদ্ধতি

লেখকঃ সানাউল্লাহ নজির আহমদ

প্রথম পরিচ্ছদ: হিফয আরম্ভ করার পূর্বে হিফযের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
যথা:

১. ইখলাস অর্জন করা: অর্থাৎ হিফযের মাধ্যমে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা। বলে নেওয়া ভালো, সালাত, সিয়াম, বায়তুল্লাহ শরিফের তাওয়াফ ইত্যাদি নিরেট ইবাদতগুলো কবুল হওয়ার জন্য ইখলাস ও আল্লাহর সন্তুষ্টি জরুরি। তদ্রূপ যেসব জিনিস আমাদের জৈবিক ও শারীরিক চাহিদা পূরণ করে, যেমন পানাহার, পরস্পর লেনদেন, আচার-ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়কে ইবাদতে পরিণত করার জন্য ইখলাস ও আল্লাহর সন্তুষ্টি প্রয়োজন, বরং শর্ত। আমাদের আলোচ্য বিষয় তথা কুরআন তিলাওয়াত ও কুরআন হিফয করা নিরেট ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত, যা ইখলাস ছাড়া আল্লাহর নিকট মূল্যহীন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿فَمَن كَانَ يَرۡجُواْ لِقَآءَ رَبِّهِۦ فَلۡيَعۡمَلۡ عَمَلٗا صَٰلِحٗا وَلَا يُشۡرِكۡ بِعِبَادَةِ رَبِّهِۦٓ أَحَدَۢا ١١٠﴾ [ الكهف : ١١٠ ].

“সুতরাং যে তার রবের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার রবের ইবাদতে কাউকে শরীক না করে”। [সূরা আল-কাহাফ, আয়াত: ১১]

হাদীসে কুদসীতে রয়েছে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

«أَنَا أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ، مَنْ عَمِلَ عَمَلًا أَشْرَكَ فِيهِ مَعِي غَيْرِي، تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ» .

“শরিকদের মধ্যে আমি-ই অংশিদারী অংশের সবচেয়ে বেশি অমুখাপেক্ষী। যে আমার সঙ্গে কাউকে শরিক করে কোনো আমল করলো, আমি তাকে এবং তার আমলকে প্রত্যাখ্যান করি। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯৮৫) অতএব একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই হিফয করা।

২. কুরআনের মহত্ত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা: এ বিষয়ে আমরা সামান্য আলোচনা করছি।

• কুরআন আল্লাহর কালাম এ অনুভূতি অন্তরে জাগরুক রাখা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿حَتَّىٰ يَسۡمَعَ كَلَٰمَ ٱللَّهِ﴾ [ التوبة : ٦ ].

“তাহলে তাকে আশ্রয় দাও, যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনে”। [সূরা আত-তওবাহ, আয়াত: ৬]

কুরআনের সম্মান মূলত আল্লাহর সম্মান। আল্লাহর সম্মানের উর্ধ্বে কোনো সম্মান নেই, তাই আল্লাহর কালামের চেয়ে বেশি সম্মানিত কোনো বস্তু নেই।

• কুরআন অবতীর্ন হওয়ার প্রেক্ষাপট নিয়ে চিন্তা করা। আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতির দিকনির্দেশনা ও তাদের আলোকবর্তিকা স্বরূপ এ কুরআন নাজিল করেছেন। তিনি বলেন,

﴿ ذَٰلِكَ ٱلۡكِتَٰبُ لَا رَيۡبَۛ فِيهِۛ هُدٗى لِّلۡمُتَّقِينَ ٢ ﴾ [ البقرة : ٢ ].

“এই কিতাবটি, এতে কোনো সন্দেহ নেই, মুত্তাকীদের জন্য হিদায়াতস্বরূপ। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২]

অপর এক স্থানে তিনি আরো বলেন,

﴿شَهۡرُ رَمَضَانَ ٱلَّذِيٓ أُنزِلَ فِيهِ ٱلۡقُرۡءَانُ هُدٗى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَٰتٖ مِّنَ ٱلۡهُدَىٰ وَٱلۡفُرۡقَانِۚ ﴾ [ البقرة : ١٨٥ ].

“রমযান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৫]

• কুরআনের মর্যাদার বিষয়টি এ থেকেও স্পষ্ট হয় যে, কুরআনের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে অন্য জিনিসও সম্মানের পাত্র হয়ে যায়। যে মাসে এ কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে সে মাস অন্য মাসের চেয়ে অধিক সম্মানের। যে রাতে এ কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে সে রাত অন্য রাতের তুলনায় অধিক সম্মানের। যে নবীর ওপর এ কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে সে নবী অন্য নবীর চেয়ে অধিক সম্মানের। কুরআনের বদৌলতেই শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য সব নবী-রাসূল দের ইমাম ও গোটা আদম সন্তানের নেতা হিসেবে ভূষিত হয়েছেন। তিনি বলেন, আমি আদম সন্তানের সরদার, এতে কোনো অহঙ্কার নেই। যে কুরআন শিক্ষা করবে ও অন্যদের শিক্ষা দেবে তার মর্যাদা অন্য সবার চেয়ে বেশি। উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ القُرْآنَ وَعَلَّمَهُ» .

“তোমাদের মধ্যে সেই সর্বোত্তম যে কুরআন শিক্ষা করে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়”। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫০২৭)

• আল্লাহ তা‘আলা কুরআনের প্রসংশা করে বলেন,

﴿وَلَقَدۡ ءَاتَيۡنَٰكَ سَبۡعٗا مِّنَ ٱلۡمَثَانِي وَٱلۡقُرۡءَانَ ٱلۡعَظِيمَ ٨٧ ﴾ [ الحجر : ٨٧ ].

“আর আমরা তো তোমাকে দিয়েছি পুনঃপুনঃ পঠিত সাতটি আয়াত ও মহান কুরআন”। [সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৮৭]

৩. হাফেযে কুরআনের ফযিলত ও তার সাওয়াবের জ্ঞান লাভ করা: কুরআন হিফযের প্রস্তুতি হিসেবে হাফেযে কুরআনের ফযিলত ও তার সাওয়াবের জ্ঞান লাভ করা। এর বর্ণনা বিভিন্ন হাদীসে এভাবে এসেছে। যেমন :

• ওমর রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِنَّ اللهَ يَرْفَعُ بِهَذَا الْكِتَابِ أَقْوَامًا، وَيَضَعُ بِهِ آخَرِينَ» .

“আল্লাহ তা‘আলা এ কিতাবের দ্বারা অনেক জাতির উত্থান দান করেন এবং অপর জাতিসমূহের নিশ্চিত করেন পতন”। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮১৭)

• ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللَّهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ، وَالحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا، لَا أَقُولُ الم حَرْفٌ، وَلَكِنْ أَلِفٌ حَرْفٌ وَلَامٌ حَرْفٌ وَمِيمٌ حَرْفٌ» .

“যে কুরআনের একটি হরফ পড়বে তার একটি নেকি হবে, আবার একটি নেকি দশটি নেকির সমান, আমার কথার উদ্দেশ্য এ নয় যে, الم একটি হরফ। বরং ألف একটি হরফ لام একটি হরফ ميم একটি হরফ”। (সুনান তিরমিযী, হাদীস নং ২৯১০)

• উকবা ইবন আমের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা সুফ্‌ফাতে ছিলাম, এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হন, অতঃপর তিনি বলেন,

«أَيُّكُمْ يُحِبُّ أَنْ يَغْدُوَ كُلَّ يَوْمٍ إِلَى بُطْحَانَ، أَوْ إِلَى الْعَقِيقِ، فَيَأْتِيَ مِنْهُ بِنَاقَتَيْنِ كَوْمَاوَيْنِ فِي غَيْرِ إِثْمٍ، وَلَا قَطْعِ رَحِمٍ؟» ، فَقُلْنَا : يَا رَسُولَ اللهِ نُحِبُّ ذَلِكَ، قَالَ : «أَفَلَا يَغْدُو أَحَدُكُمْ إِلَى الْمَسْجِدِ فَيَعْلَمُ، أَوْ يَقْرَأُ آيَتَيْنِ مِنْ كِتَابِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ، خَيْرٌ لَهُ مِنْ نَاقَتَيْنِ، وَثَلَاثٌ خَيْرٌ لَهُ مِنْ ثَلَاثٍ، وَأَرْبَعٌ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَرْبَعٍ، وَمِنْ أَعْدَادِهِنَّ مِنَ الْإِبِلِ» .

“তোমাদের কার ইচ্ছে হয়, প্রতিদিন বুতহান বা আকিক নামক স্থানে গমন করা এবং কোনো অপরাধ বা সম্পর্ক ছিন্ন করা ছাড়াই বিনা পরিশ্রমে বড় ও লম্বা চুটি সম্পন্ন দু’টি উট নিয়ে আসা? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমরা সকলে তা পছন্দ করি। অতঃপর তিনি বলেন, তোমরা কি সকাল বেলা মসজিদে গমন করতে পার না? সেখানে গিয়ে দুটি আয়াত শিক্ষা কর বা তিলাওয়াত কর। এটাই তোমাদের জন্যে দুটি উটের চেয়ে উত্তম। তিনটি আয়াত তিনটি উটের চেয়ে উত্তম। চারটি আয়াত চারটি উটের চেয়ে উত্তম। তদ্রূপ অন্যান্য আয়াতের বিষয়টিও”। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮০৩)

• আবু উমামা আল-বাহিলী রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,

«اقْرَءُوا الْقُرْآنَ فَإِنَّهُ يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيعًا لِأَصْحَابِهِ» .

“তোমরা কুরআন তিলাওয়াত করো, কারণ কুরআন কিয়ামতের দিন তার পাঠকারীর জন্যে সুপারিশ করবে”। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮০৪)

• আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«يُقَالُ لِصَاحِبِ الْقُرْآنِ : اقْرَأْ، وَارْتَقِ، وَرَتِّلْ كَمَا كُنْتَ تُرَتِّلُ فِي الدُّنْيَا، فَإِنَّ مَنْزِلَكَ عِنْدَ آخِرِ آيَةٍ تَقْرَؤُهَا» .

“হাফেযে কুরআনকে বলা হবে, পড় এবং ওপরে উঠ। তারতিলসহ পড় অর্থাৎ ধীরে ধীরে আবৃত্তি কর, যেমন দুনিয়াতে করতে। কারণ, সর্বশেষ আয়াতের স্থানই হবে তোমার মর্যাদার স্থান”। (সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪৬৪)

• ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«يَؤُمُّ الْقَوْمَ أَقْرَؤُهُمْ لِكِتَابِ اللهِ» .

“কুরআনে পারদর্শী ব্যক্তিই নিজ কওমের ইমামতি করবে”। (মুসলিম ১:৪৬৫, হাদীস নং ৬৭৩)

• আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَثَلُ الَّذِي يَقْرَأُ القُرْآنَ، وَهُوَ حَافِظٌ لَهُ مَعَ السَّفَرَةِ الكِرَامِ البَرَرَةِ، وَمَثَلُ الَّذِي يَقْرَأُ، وَهُوَ يَتَعَاهَدُهُ، وَهُوَ عَلَيْهِ شَدِيدٌ فَلَهُ أَجْرَانِ» .

“যে কুরআনে পারদর্শী এবং কুরআন পাঠ করে সে বিচরণকারী, পুণ্যবান ও সম্মানিত ফেরেশতাদের সঙ্গী। আর যে কষ্ট সত্ত্বেও বারবার কুরআন পাঠ করে, তার সাওয়াব দ্বিগুণ”। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৯৩৭)

• আবু মুসা আশআরি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَثَلُ المُؤْمِنِ الَّذِي يَقْرَأُ القُرْآنَ كَمَثَلِ الأُتْرُجَّةِ، رِيحُهَا طَيِّبٌ وَطَعْمُهَا طَيِّبٌ، وَمَثَلُ المُؤْمِنِ الَّذِي لاَ يَقْرَأُ القُرْآنَ كَمَثَلِ التَّمْرَةِ، لاَ رِيحَ لَهَا وَطَعْمُهَا حُلْوٌ، وَمَثَلُ المُنَافِقِ الَّذِي يَقْرَأُ القُرْآنَ مَثَلُ الرَّيْحَانَةِ، رِيحُهَا طَيِّبٌ وَطَعْمُهَا مُرٌّ، وَمَثَلُ المُنَافِقِ الَّذِي لاَ يَقْرَأُ القُرْآنَ كَمَثَلِ الحَنْظَلَةِ، لَيْسَ لَهَا رِيحٌ وَطَعْمُهَا مُرٌّ»

“যে মুমিন কুরআন তিলাওয়াত করে তারা দৃষ্টান্ত হচ্ছে উতরুজ্জা (লেবু তুল্য ফল) যার ঘ্রাণ মনোহর এবং যার স্বাদও আকর্ষনীয় । আর যে মু‘মিন কুরআন তিলাওয়াত করে না, সে খেজুর ফলের ন্যায়, যার ঘ্রাণ নেই, তবে স্বাদ খুব চমৎকার। পক্ষান্তরে যে মুনাফেক কুরআন পাঠ করে সে রায়হান ফলের ন্যায়, যার ঘ্রাণ চমৎকার, স্বাদ খুব তিক্ত। আর যে মুনাফেক কুরআন পড়ে না সে হানযালা বা কেদাঁ ফলের ন্যায়, যার কোনো ঘ্রাণ নেই, স্বাদ তিক্ত”। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৪২৭, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৯৭)

৪. বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত ও শ্রবণ করা: কুরআন তিলাওয়াত করা ও গভীর মনোযোগসহ কুরআন শোনা হিফযের জন্য খুব সহায়ক।

ক. আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَتۡلُونَ كِتَٰبَ ٱللَّهِ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَأَنفَقُواْ مِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ سِرّٗا وَعَلَانِيَةٗ يَرۡجُونَ تِجَٰرَةٗ لَّن تَبُورَ ٢٩ ﴾ [ فاطر : ٢٩ ].

“নিশ্চয় যারা আল্লাহর কিতাব অধ্যয়ন করে, সালাত কায়েম করে এবং আল্লাহ যে রিয্‌ক দিয়েছেন তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে যা কখনো ধ্বংস হবে না”। [সূরা ফাতির, আয়াত: ২৯]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«اقْرَءُوا الْقُرْآنَ فَإِنَّهُ يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيعًا لِأَصْحَابِهِ» .

“তোমরা কুরআন তিলাওয়াত করো, কারণ কুরআন কিয়ামতের দিন তার পাঠকারীর জন্যে সুপারিশ করবে”। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮0৪)

খ. কুরআন শ্রবণ করার প্রতি আল্লাহর নির্দেশ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ وَإِذَا قُرِئَ ٱلۡقُرۡءَانُ فَٱسۡتَمِعُواْ لَهُۥ وَأَنصِتُواْ لَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُونَ ٢٠٤ ﴾ [ الاعراف : ٢٠٤ ].

আর যখন কুরআন পাঠ করা হয়, তখন তা মনোযোগ দিয়ে শোন এবং চুপ থাক, যাতে তোমরা রহমত লাভ কর। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ২-৪]

লাইস ইবন সাদ বলেন, কুরআন শ্রবণকারীর ন্যায় দ্রুত কারো ওপর রহমত অবতীর্ণ হয় না। দলীল হিসেবে তিনি আল্লাহর এ বাণী পেশ করেন,

﴿ وَإِذَا قُرِئَ ٱلۡقُرۡءَانُ فَٱسۡتَمِعُواْ لَهُۥ وَأَنصِتُواْ لَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُونَ ٢٠٤ ﴾ [ الاعراف : ٢٠٤ ].

“আর যখন কুরআন পাঠ করা হয়, তখন তা মনোযোগ দিয়ে শোন এবং চুপ থাক, যাতে তোমরা রহমত লাভ কর”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ২০৪]

৫. কুরআন হিফয করার পূর্বে কুরআন পাঠ ও হিফয করার উদ্দেশ্য সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা: নিম্নে আমরা তার সামান্য আলোচনা পেশ করছি।

• সাওয়াব ও মর্যাদার আশায় কুরআন পাঠ করা, যার সামান্য আলোচনা ইতিপূর্বে আমরা করেছি।

• কুরআনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও তার শিক্ষা বাস্তবায়নের জন্য কুরআন পাঠ করা।

• চিন্তাশক্তি ও বোধ-বুদ্ধির পরিশুদ্ধির জন্য কুরআন পাঠ করা, কুরআন সকল জ্ঞানের উৎস। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ وَنَزَّلۡنَا عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ تِبۡيَٰنٗا لِّكُلِّ شَيۡءٖ ﴾ [ النحل : ٨٩ ].

“আর আমরা তোমার উপর কিতাব নাযিল করেছি প্রতিটি বিষয়ের স্পষ্ট বর্ণনা”। [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৮৯]

৬. কুরআন হিফয করা সহজ এই বিশ্বাস মনে রাখা: আল্লাহর এ বাণী স্মরণ রাখা, যে আল্লাহ কুরআন সহজ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ وَلَقَدۡ يَسَّرۡنَا ٱلۡقُرۡءَانَ لِلذِّكۡرِ فَهَلۡ مِن مُّدَّكِرٖ ١٧﴾ [ القمر : ١٧ ].

“আর আমরা তো কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য। অতএব, কোনো উপদেশ গ্রহণকারী আছে কি?” [সূরা আল-কামার, আয়াত: ১৭]

ইমাম কুরতুবি রাহিমাহুল্লাহ এর ব্যাখ্যায় বলেন, অর্থাৎ আমি কুরআন হিফয করার জন্য সহজ করেছি, যে হিফয করতে চায় আমি তাকে সাহায্য করি, এর জন্য আছ কেউ?

৭. কুরআন মুখস্থ করার ইচ্ছা রাখা: হিফয শুরু ও হিফয চলমান রাখার জন্য দৃঢ় ইচ্ছা প্রয়োজন। অন্যথায় হিফয শুধু একটি আশা বা স্বপ্নই থেকে যাবে। তাই কুরআনের মর্যাদা, হাফেযদের মর্যাদা, কুরআন শোনা ও কুরআন তিলাওয়াত করার সাওয়াব ইত্যাদি নিয়ে ভাবা ও তার জন্য উৎসাহিত হওয়া।

৮. অন্যান্য ব্যস্ততা হ্রাস করা, হিফযের নিয়ত থাকা ও তার জন্য চেষ্টা অব্যহত রাখা: আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ وَٱلَّذِينَ جَٰهَدُواْ فِينَا لَنَهۡدِيَنَّهُمۡ سُبُلَنَاۚ وَإِنَّ ٱللَّهَ لَمَعَ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ٦٩ ﴾ [ العنكبوت : ٦٩ ].

আর যারা আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, তাদেরকে আমি অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আর নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সাথেই আছেন। [সূরা আল-‘আনকাবুত, আয়াত: ৬৯]

মুদ্দাকথা : যে অবিরত চলতে থাকে, সে নিশ্চিত লক্ষ্যে পৌঁছায়। যে চেষ্টা করে সে সফল হয়। যে চাষ করে সে ঘরে ফসল তুলে। পিঁপড়ার ব্যাপারটি আমরা অনেকেই জানি, সে উঁচুতে উঠতে বারবার চেষ্টা করে, ব্যর্থ হয়, পড়ে যায়, তার পরেও সে ক্ষান্ত হয় না, চেষ্টা ত্যাগ করে না, বরং আরো উৎসাহ নিয়ে পুনরায় চেষ্টা করে। কুরআনের একজন শিক্ষার্থীরও তদ্রূপ হওয়া জরুরি।

৯. প্রতিদিন কিছু সময় কুরআন হিফয করার জন্য নির্দিষ্ট করা: ফজর, আসর, মাগরিব বা অন্য কোনো সময় নিয়মিত কুরআন পাঠ করা। তবে জায়গা হিসেবে মসজিদকে প্রধান্য দেয়াই উত্তম। যেমন পূর্বের একটি হাদীসে রয়েছে : ( أَفَلَا يَغْدُو أَحَدُكُمْ إِلَى الْمَسْجِدِ ) এবং এ জন্যও মসজিদকে প্রধান্য দেয়া উত্তম যে, হিফযের উপযুক্ত পরিবেশ অন্য কোথাও পাওয়া খুব কঠিন।

দ্বিতীয়ত : মসজিদের আরেকটি ফযিলত রয়েছে, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা ‘আনহু থেকে বর্ণিত,

« َمَا اجْتَمَعَ قَوْمٌ فِي بَيْتٍ مِنْ بُيُوتِ اللهِ، يَتْلُونَ كِتَابَ اللهِ، وَيَتَدَارَسُونَهُ بَيْنَهُمْ، إِلَّا نَزَلَتْ عَلَيْهِمِ السَّكِينَةُ، وَغَشِيَتْهُمُ الرَّحْمَةُ وَحَفَّتْهُمُ الْمَلَائِكَةُ، وَذَكَرَهُمُ اللهُ فِيمَنْ عِنْدَهُ » .

“যারা মসজিদে কুরআন তিলাওয়াতের জন্য জড়ো হয় এবং পরস্পর মিলে দাওর (শোনা-শুনি) করে, তাদের ওপর বিশেষ প্রশান্তি (সাকিনা) নাযিল হয়, তাদেরকে আল্লাহর রহমত ঢেকে নেয়, ফেরেশতাগণ তাদের বেষ্টন করে নেয় এবং আল্লাহ তাদের নিয়ে ফেরেশতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন”। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৯৯)

অনেক সময় শরীর অলস ও উদ্যমহীন হয়ে পড়ে, তখন অপরের সঙ্গ চালিকাশক্তির ন্যায় কাজ করে এবং উৎসাহ প্রদান করে, যার ফলে কুরআন হিফযকারী আলস্য ত্যাগ করে পুনরায় হিফযে মনোনিবেশ করতে সক্ষম হয়।

১০. কুরআনে পারদর্শী একজন ভাল উস্তাদ গ্রহণ করা: ওলামায়ে কেরাম বলেন, শুধু মাসহাফ বা কুরআনের ওপর নির্ভর করে কুরআন শিক্ষার জন্য প্রস্তুত হওয়া যথেষ্ট নয়, বরং এমন উস্তাদের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি যে, অপর বিজ্ঞ উস্তাদ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। সুলাইমান ইবন মূসা রাহিমাহুল্লাহ বলেন, এক সময় বলা হত : কাগজের কুরআন থেকে কুরআন গ্রহণ করো না।

সাইদ তানুখি বলেন, আগে উস্তাদদের মুখের বুলি ছিল, তোমরা খাতা থেকে কুরআন শিখো না, তোমরা কুরআন থেকে কুরআন গ্রহণ কর না।

কুরআন শিক্ষার বিশুদ্ধ পদ্ধতি হচ্ছে, শ্রবণ করা এবং মুখস্থ করা।

ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলতেন,

«لَقَدْ حَفِظْتُ مِنْ فِيِّ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَبْعَيْنَ سُوْرَةً» .

সত্তরের চেয়ে বেশি সূরা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র জবান থেকে সরাসরি শিখেছি। (ফাতহুল বারি : ৯/৪৬, হাদীস নং ৫০) কুরআনের অবশিষ্ট সূরা কিভাবে শিখেছেন? সে ব্যাপারে হাফেয ইবন হাজার রহ. তার বুখারীর ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেন, আসেমের বর্ণনায় রয়েছে, তিনি (ইবন মাসউদ) বলেন, বাকি অংশ শিক্ষা করেছি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবাদের থেকে। (ফাতহুল বারি: ৯/৪৮)

কুরআন পড়ার জন্য উস্তাদ গ্রহণ করা এবং উস্তাদ থেকে সরাসরি কুরআন শিক্ষা করা আবশ্যক। সে জন্য সাহাবারা পর্যন্ত তাদের ছাত্রদের কুরআন শিক্ষার জন্য, সেসব সাহাবাদের নিকট প্রেরণ করতেন, যারা সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কুরআন শিক্ষা করেছেন। সাহাবী মা‘দী কারিবা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর নিকট এসে বললাম, আমাদেরকে طسم الْمِائَتَيْنِ অর্থাৎ সূরা শুআরা তিলাওয়াত করে শোনান। তিনি বললেন,

«مَا هِيَ مَعِي، وَلَكِنْ " عَلَيْكُمْ مَنْ أَخَذَهَا مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : خَبَّابَ بْنَ الْأَرَتِّ " ، قَالَ : فَأَتَيْنَا خَبَّابَ بْنَ الْأَرَتِّ، فَقَرَأَهَا عَلَيْنَا» .

“এ সূরা আমার নিকট নেই, তোমরা খাববাব ইবন আরত এর নিকট যাও, তিনি সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ সূরা শিক্ষা করেছেন। তিনি বলেন, অতঃপর আমরা খাববাব ইবন আরত এর নিকট আসি, তিনি আমাদেরকে তিলাওয়াত করে শোনান। (মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ২৯৮০)

আমরা আরো দেখতে পাই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি বৎসর জিবরাইল আলাইহিস সালামের সঙ্গে কুরআন দাওর করতেন। যে বৎসর ইন্তেকাল করেন, সে বৎসর তিনি জিবরাইল আলাইহিস সালামের সঙ্গে দুবার দাওর করেন। (ফাতহুল বারি : ৯/৪৩, হাদীস নং ৪৯৯৮)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের সরাসরি কুরআন শিক্ষার জন্য উদ্বুদ্ধ করতেন। তিনি বলতেন,

«خُذُوا القُرْآنَ مِنْ أَرْبَعَةٍ مِنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ فَبَدَأَ بِهِ، وَسَالِمٍ، مَوْلَى أَبِي حُذَيْفَةَ، وَمُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ، وَأُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ» .

“তোমরা চার জন থেকে কুরআন শিক্ষা কর: ১. আবদুল্লা ইবন মাসউদ, ২. আবু হুযাইফার গোলাম সালেম, ৩. মুয়ায ইবন জাবাল থেকে এবং ৪. উবাই ইবন কাব”। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪৬৪)

১১. কুরআন হিফয করার জন্য যে কোনো এক ছাপার কুরআন বাছাই নির্দিষ্ট করা।

১২. শেষ থেকে কুরআন হিফয আরম্ভ করা।

বিশেষ করে ছোট বাচ্চা, দুর্বল স্মরণশক্তি বা অপেক্ষাকৃত কম আগ্রহীদের ব্যাপারে এ পদ্ধতি অনুসরণ করা খুবই জরুরি। এর ফলে তারা অল্প সময়ে একটি সূরা মুখস্থ করতে পারবে, অন্য সূরার জন্য প্রস্তুতি নেবে ও উদ্যমী হবে।

১৩. আল্লাহ তা‘আলার নিকট স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি, হিফয করা ও হিফয ধরে রাখার জন্য তাওফীক চাওয়া।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন