HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
আল-কুরআনুল কারিম হিফয করার ব্যবহারিক পদ্ধতি
লেখকঃ সানাউল্লাহ নজির আহমদ
৫
তৃতীয় পরিচ্ছদ: হিফয সমাপনের পর করণীয়:১. হিফয নিয়ে রিয়া বা লৌকিকতায় লিপ্ত না হওয়া।
আমাদের পরিভাষায় রিয়া দ্বারা উদ্দেশ্য : হিফয সমাপনের পর বা বিশ্বমানের তিলাওয়াত ও শ্রুতিমধুর কণ্ঠের জন্য সম্মান ও মর্যাদার প্রত্যাশী থাকা, মানুষের অন্তরে আত্মপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা, যা শিরকের অন্তর্ভুক্ত। মাহমুদ ইবন লাবীদ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمُ الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ " قَالُوا : وَمَا الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ : " الرِّيَاءُ، يَقُولُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ : إِذَا جُزِيَ النَّاسُ بِأَعْمَالِهِمْ : اذْهَبُوا إِلَى الَّذِينَ كُنْتُمْ تُرَاءُونَ فِي الدُّنْيَا فَانْظُرُوا هَلْ تَجِدُونَ عِنْدَهُمْ جَزَاءً» .
“আমার কাছে সবচেয়ে ভয়ের জিনিস হচ্ছে শির্কে আসগার। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল, শির্কে আসগার তথা ছোট শির্ক কি? তিনি বললেন, রিয়া তথা লোক দেখানো আমল। অতঃপর তিনি বলেন, কিয়ামতের দিন যখন আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদের আমলের প্রতিদান দিবেন, তখন রিয়াকারীদের বলবেন, তোমরা তাদের কাছে যাও, যাদের দেখানোর জন্য আমল করতে, দেখ তাদের কাছে কোনো প্রতিদান পাওয়া যায় কি-না? (মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ২৩৬৩০)
যে ব্যক্তি কুরআনকে নিয়ে রিয়াতে লিপ্ত হবে, সে নিজকে কঠিন আযাবের সম্মুখীন করবে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ أَوَّلَ النَّاسِ يُقْضَى يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَيْهِ رَجُلٌ اسْتُشْهِدَ، فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا، قَالَ : فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا؟ قَالَ : قَاتَلْتُ فِيكَ حَتَّى اسْتُشْهِدْتُ، قَالَ : كَذَبْتَ، وَلَكِنَّكَ قَاتَلْتَ لِأَنْ يُقَالَ : جَرِيءٌ، فَقَدْ قِيلَ، ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِيَ فِي النَّارِ، وَرَجُلٌ تَعَلَّمَ الْعِلْمَ، وَعَلَّمَهُ وَقَرَأَ الْقُرْآنَ، فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا، قَالَ : فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا؟ قَالَ : تَعَلَّمْتُ الْعِلْمَ، وَعَلَّمْتُهُ وَقَرَأْتُ فِيكَ الْقُرْآنَ، قَالَ : كَذَبْتَ، وَلَكِنَّكَ تَعَلَّمْتَ الْعِلْمَ لِيُقَالَ : عَالِمٌ، وَقَرَأْتَ الْقُرْآنَ لِيُقَالَ : هُوَ قَارِئٌ، فَقَدْ قِيلَ، ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِيَ فِي النَّارِ، وَرَجُلٌ وَسَّعَ اللهُ عَلَيْهِ، وَأَعْطَاهُ مِنْ أَصْنَافِ الْمَالِ كُلِّهِ، فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا، قَالَ : فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا؟ قَالَ : مَا تَرَكْتُ مِنْ سَبِيلٍ تُحِبُّ أَنْ يُنْفَقَ فِيهَا إِلَّا أَنْفَقْتُ فِيهَا لَكَ، قَالَ : كَذَبْتَ، وَلَكِنَّكَ فَعَلْتَ لِيُقَالَ : هُوَ جَوَادٌ، فَقَدْ قِيلَ، ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ، ثُمَّ أُلْقِيَ فِي النَّارِ» .
“সর্ব প্রথম যাদের ব্যাপারে কিয়ামতের দিন ফয়সালা হবে, তার মধ্যে ঐ ব্যক্তি রয়েছে যে, ইলম শিক্ষা করেছে, অপরকে শিক্ষা দিয়েছে ও কুরআন তিলাওয়াত করেছে। তাকে উপস্থিত করা হবে, অতঃপর তার ওপর প্রদত্ত নেয়ামতসমূহ স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে, সে তা স্বীকারও করবে। তাকে বলা হবে, তুমি এর ওপর কি আমল করেছ? সে বলবে, আমি ইলম শিক্ষা করেছি, অপরকে শিক্ষা দিয়েছি এবং তোমার সন্তুষ্টির জন্য কুরআন পড়েছি। তাকে বলা হবে, তুমি মিথ্যে বলছ, বরং তুমি ইলম শিক্ষা করেছ, যাতে তোমাকে আলেম বলা হয়, কুরআন পড়েছ যাতে তোমাকে কারী বলা হয়। অতঃপর তাকে চেহারার ওপর দাঁড় করিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার নির্দেশ দেয়া হবে”। (সহীহ মুসলিম, ১৯০৫) সুতরাং মুক্তি পেতে হলে, ইখলাস এবং নিয়ত ও উদ্দেশ্যকে পরিশুদ্ধ রাখা জরুরি।
২. কুরআন মোতাবেক আমল করা এবং সে অনুযায়ী আদব, আখলাক ও চরিত্র গঠন করা :
কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে আমল করার জন্য ও কুরআন মোতাবেক জীবন পদ্ধতি পরিচালনা করার জন্য। ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা ‘আনহু বলেন, তোমাদের আমলের জন্যে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, সুতরাং আমলের জন্য কুরআন পড়। তোমাদের কেউ কেউ পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াত করে, একটি হরফও বাদ পড়ে না, অথচ মোটেও সে কুরআন অনুযায়ী আমল করে না। কতক বিজ্ঞজন বলেছেন, কেউ কেউ কুরআন তিলাওয়াত করে নিজের ওপরই অভিসম্পাত করে, অথচ সে জানেও না। যেমন কুরআনের অনেক জায়গায় রয়েছে অত্যাচারী তথা নিজেদের ক্ষতি সাধনকারীদের ওপর আল্লাহর লানত। অথচ কুরআনের ওপর আমল না করার কারণে সে নিজেই এর অন্তর্ভুক্ত। আবার সে তিলাওয়াত করে, মিথ্যুকদের ওপর আল্লাহর লানত। অথচ কুরআন অনুযায়ী আমল না করে সে নিজেও একজন মিথ্যুক। আনাস রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা ‘আনহু বলেন, অনেক কুরআন পাঠকারী এমন রয়েছে, কুরআন যাদেরকে অভিসম্পাত করে।
৩. নিজেকে নিয়ে অহংকারে লিপ্ত না হওয়া বা অপরকে তুচ্ছ জ্ঞান না করা:
অহংকার বা অপরকে তুচ্ছ জ্ঞান করার অর্থ আল্লাহর করুণা বা তাওফিকের কথা ভুলে নিজের কঠোর পরিশ্রম ও চেষ্টার ফলে হিফয সমাপন সমাপ্ত হয়েছে মনে করা ও আত্মতুষ্টিতে লিপ্ত হওয়া। অথচ আল্লাহ তা‘আলা তাকে হিফযের তওফীক দিয়েছেন, যদি তার অনুগ্রহ না হত, কখনো সে পূর্ণ কুরআন বা তার কিয়দাংশ মুখস্থ করতে সক্ষম হত না। তাই হিফযের জন্য সর্বতোভাবে আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ স্বীকার করা, তার কৃতজ্ঞতা আদায় করা এবং শুধু তার দিকেই এ নেয়ামতের নিসবত করা জরুরি।
মানুষের ওপর বড়ত্বের প্রকাশই অহংকার, এ থেকে বিরত থাকা। কারণ, মানুষ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয় একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার মেহেরবাণীতে, তার করুণায়। তাই অন্যদের মূর্খ ভাবা বা তুচ্ছজ্ঞান করার কোনো সুযোগ নেই। যে এতে লিপ্ত হয়, তার হয়তো এর শাস্তির কথা জানা নেই। হাদীসে কুদসিতে রয়েছে, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
«الْكِبْرِيَاءُ رِدَائِي، وَالْعَظَمَةُ إِزَارِي، فَمَنْ نَازَعَنِي وَاحِدًا مِنْهُمَا، قَذَفْتُهُ فِي النَّارِ» .
“অহংকার আমার চাদর, বড়ত্ব আমার পরিধেয় বস্ত্র, যে আমার এ দু’টোর যে কোন একটি নিয়ে আমার সঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত হবে, আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। (সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৮০৯০)
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,
«لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كِبْرٍ» .
“যার অন্তরে সামান্য পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না”। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯১)
৪. কুরআন বারবার তিলাওয়াত করা:
কুরআন মুখস্থ রাখার জন্য বারবার তিলাওয়াত করা এবং আগ্রহ সৃষ্টির জন্য হাদীস ইত্যাদি অধ্যয়ন করা। কুরআন তিলাওয়াতের ফযীলত ও তা ভুলে যাওয়ার ক্ষতি সম্পর্কে জানা। যেমন,
• ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«إِنَّمَا مَثَلُ صَاحِبِ القُرْآنِ، كَمَثَلِ صَاحِبِ الإِبِلِ المُعَقَّلَةِ، إِنْ عَاهَدَ عَلَيْهَا أَمْسَكَهَا، وَإِنْ أَطْلَقَهَا ذَهَبَتْ» .
“হাফেযে কুরআনের উদাহরণ উটের মালিকের ন্যায়, যদি সে তাকে বেঁধে রাখে, নিজ আয়ত্তে রাখতে পারবে, অন্যথায় সে চলে যাবে”। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫0৩১)
• সাহাবী আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«بِئْسَ مَا لِأَحَدِهِمْ أَنْ يَقُولَ نَسِيتُ آيَةَ كَيْتَ وَكَيْتَ، بَلْ نُسِّيَ وَاسْتَذْكِرُوا القُرْآنَ، فَإِنَّهُ أَشَدُّ تَفَصِّيًا مِنْ صُدُورِ الرِّجَالِ مِنَ النَّعَمِ» .
“তোমাদের কারো এমন বলা যে, আমি অমুক আয়াত ভুলে গেছি, খুবই খারাপ। বরং তাকে ভুলানো হয়েছে। তার উচিত বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা। কারণ, কুরআন মানুষের হৃদয় থেকে উটের চেয়ে দ্রুত পলায়নপ”। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৫৩২)
• আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«تَعَاهَدُوا القُرْآنَ، فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَهُوَ أَشَدُّ تَفَصِّيًا مِنَ الإِبِلِ فِي عُقُلِهَا» .
“তোমরা বারবার কুরআন পড়, আল্লাহর কসম, যার হাতে আমার জান, রশি থেকে উটের পলায়ন করার চেয়েও কুরআন দ্রুত পলায়নকারী”। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৫০৩৩)
এসব বর্ণনা ও অন্যান্য বর্ণনার ফলে আলেমগণ কুরআন খতমের কম মেয়াদ ও দীর্ঘ মেয়াদ ঠিক করে দিয়েছেন, যা অতিক্রম করা বৈধ নয়।
কুরআন খতমের কম মেয়াদ: তিন দিন। আব্দুল্লাহ ইবন আমর বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لَا يَفْقَهُ مَنْ قَرَأَ الْقُرْآنَ فِي أَقَلَّ مِنْ ثَلَاثٍ» .
“যে তিন দিনের কমে কুরআন খতম করবে, সে কিছুই বুঝবে না”। (সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩৯৪)
মুয়াজ ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা ‘আনহু তিন দিনের কমে কুরআন খতম করা মাকরূহ বলতেন। (ইবন কাসির : ফাজায়েলে কুরআন) ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা ‘আনহু বলতেন, তোমরা সাত দিনে কুরআন খতম কর, তিন দিনের কমে কুরআন খতম কর না। (ফাতহুল বারি, ৯/৯৭)
তিন দিনের কম কুরআন খতমে দ্রুত পড়ার দরুন চিন্তা-ফিকিরের সুযোগ থাকে না, বিরক্তির উদ্রেক হয়, শব্দ উচ্চারণ সঠিক হয় না, তিলাওয়াতও সুন্দর হয় না ইত্যাদি। যে সকল আকাবের ও বুযর্গানে দ্বীনের ব্যাপারে বর্ণিত রয়েছে, তারা তিন দিনের কমে কুরআন খতম করেছেন, সম্ভবত তাদের নিকট আমাদের বর্ণিত হাদীসগুলো পৌঁছেনি বা দ্রুত পড়া সত্ত্বেও তারা কুরআনে মনোযোগ ঠিক রেখেছেন বা রমযান ইত্যাদির মত কোন ফযিলতপূর্ণ সময়ে তারা এমন করেছেন। তারা এ সময়কে সুবর্ণ সুযোগ মনে করে বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করেছেন। এটা তাদের চিরাচরিত নিয়ম ছিল না।
কুরআন খতমের দীর্ঘ মেয়াদ: কুরআন খতমের দীর্ঘ মেয়াদ চল্লিশ দিন। আব্দুল্লাহ ইবন আমর থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করেন, কত দিনে কুরআন খতম করব? তিনি বলেন,
«اقْرَأِ القُرْآنَ فِي أَرْبَعِينَ»
“তুমি চল্লিশ দিনে কুরআন খতম কর”। (সুনান তিরমিযী, হাদীস নং ২৯৪৭)
এ হাদীসের কারণে ইসহাক ইবন রাহওয়াইহ বলেন, চল্লিশ দিনের অধিক অতিবাহিত হবে, অথচ কুরআন খতম হবে না, এটা খুবই খারাপ। (সুনান তিরমিযী, ৫/১৯৭) তিনি আরো বলেন, চল্লিশ দিনের মধ্যে কুরআন খতম না করা মাকরূহ। (ইবন কাসির : ফাজায়েলে কুরআন)
৫. গুনাহ ও নাফরমানির কারণে কুরআন চলে যায়:
হাদীসে রয়েছে গুনাহের কারণে মানুষ অনেক নেয়ামত হতে বঞ্চিত হয়, বিভিন্ন মুসিবতে গ্রেফতার হয়, যার মধ্যে বড় মুসিবত হচ্ছে কুরআন ভুলে যাওয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لَا يُصِيبُ عَبْدًا نَكْبَةٌ فَمَا فَوْقَهَا أَوْ دُونَهَا إِلَّا بِذَنْبٍ، وَمَا يَعْفُو اللَّهُ عَنْهُ أَكْثَرُ» .
“মানুষ সামান্য মুসিবত বা তার চেয়েও ছোট বা বড় মুসিবতে নিজ গুনাহের কারণেই পতিত হয়। আর আল্লাহ তা‘আলা যেসব গুনাহ ক্ষমা করেন, তার পরিমাণ তো অনেক বেশি। (তিরমিযী: ৫:৩৭৭, হা.৩২৫২) কুরআন ভোলার ক্ষেত্রে গুনাহই বেশি দায়ী। জাহহাক ইবন মুজাহিম বলেন, যে কুরআন পড়ে ভুলে গেছে, সে মূলত নিজ গুনাহের কারণেই ভুলে গেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَآ أَصَٰبَكُم مِّن مُّصِيبَةٖ فَبِمَا كَسَبَتۡ أَيۡدِيكُمۡ وَيَعۡفُواْ عَن كَثِيرٖ ٣٠﴾ [ الشورا : ٣٠ ].
আর তোমাদের প্রতি যে মুসীবত আপতিত হয়, তা তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল। আর অনেক কিছুই তিনি ক্ষমা করে দেন। (সূরা আশ-শূরা আয়াত: ৩)
কুরআন ভোলা সব চেয়ে বড় মুসিবত। (ইবন কাসির : ফাযায়েলে কুরআন) আগের যুগে যে কুরআন ভুলে যেত, সে খুবই কোণঠাসা হয়ে যেত। ইবন সিরিন থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে কুরআন ভুলে যেত তাকে তারা ঘৃণা করতেন, তার ব্যাপারে তারা কঠোর মন্তব্য করতেন। (ফাতহুল বারি, ৯/৮৬) এর কারণ হিসেবে কুরতুবি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, যে পূর্ণ কুরআন বা তার কিয়দাংশ মুখস্থ করল, তার মর্যাদা অন্যদের তুলনায় বৃদ্ধি পেল। যদি সে এ মর্যাদার অবমাননা করে, অথবা এ মর্যাদা থেকে ছিটকে পড়ে, সে তিরস্কারের পাত্র। কুরআন না পড়ার অর্থ অজ্ঞতার শিকার হওয়া। (ফাতহুল বারি, ৯/৮৬)
কারো মতে কুরআন ভুলে যাওয়া মারাত্মক গুনাহ। আবুল আলিয়া আনাস রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, আমরা সব চেয়ে বড় গুনাহ মনে করতাম, কুরআন পড়ে অলসতা বা গাফলতির কারণে ভুলে যাওয়া। (ফাতহুল বারি, ৯/৮৬)
ইবন কাসির রাহিমাহুল্লাহ বলেন, কতক আলেম কুরআন ভুলে যাওয়া ব্যক্তিকে কুরআন বিমুখ ব্যক্তির সঙ্গে তুলনা করে এ আয়াতের অর্ন্তভুক্ত জ্ঞান করেছেন,
﴿ وَمَنۡ أَعۡرَضَ عَن ذِكۡرِي فَإِنَّ لَهُۥ مَعِيشَةٗ ضَنكٗا وَنَحۡشُرُهُۥ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ أَعۡمَىٰ ١٢٤ قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرۡتَنِيٓ أَعۡمَىٰ وَقَدۡ كُنتُ بَصِيرٗا ١٢٥﴾ [ طه : ١٢٤، ١٢٦ ].
“আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জন্য হবে নিশ্চয় এক সংকুচিত জীবন এবং আমি তাকে কিয়ামত দিবসে উঠাবো অন্ধ অবস্থায়। সে বলবে, হে আমার রব, কেন আপনি আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালেন? অথচ আমি তো ছিলাম দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন?” (সূরা ত্বহা, আয়াত: ১২৪, ১২৫)
তখন আল্লাহ বলবেন,
﴿ كَذَٰلِكَ أَتَتۡكَ ءَايَٰتُنَا فَنَسِيتَهَاۖ وَكَذَٰلِكَ ٱلۡيَوۡمَ تُنسَىٰ ١٢٦ ﴾ [ طه : ١٢٦ ].
“এমনিভাবেই তোমার নিকট আমাদের নিদর্শনাবলী এসেছিল, কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে এবং সেভাবেই আজ তোমাকে ভুলে যাওয়া হল”। [সূরা ত্বহা, আয়াত: ১২৪৬] সামান্য হলেও সে এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত। কারণ, কুরআন তিলাওয়াত না করা, তার ব্যাপারে অবহেলা প্রদর্শন করা, স্বেচ্ছায় ভুলে যাওয়ারই শামিল, যা মারাত্মক অপরাধ। (ইবন কাসির: ফাযায়েলে কুরআন)
৬. কুরআন মুখস্থ রাখার পদ্ধতি:
কুরআন মুখস্থ রাখার জন্য সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি হচ্ছে, প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে তাওফীক মোতাবিক তিলাওয়াত করা। যাদের পক্ষে তা সম্ভব নয়, তারা নিম্নের পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারে :
(ক) এক পারা আট ভাগ করে নেওয়া:
ফজরের সুন্নত ব্যতীত অন্যান্য সুন্নতে মুয়াক্কাদাতে প্রতি দুরাকাতে একঅষ্টমাংশ পড়া। (জোহরের আগে-পরে সুন্নতে তিন অংশ, মাগরিবের সুন্নতে এক অংশ, এশার সুন্নতে এক অংশ, এভাবে আট অংশের পাঁচ অংশ পড়া হয়ে যাবে।)
• আসরের আগে দু রাকা‘আত সালাতে এক অংশ পড়া। (এক অষ্টমাংশ)
• ফরজ সালাতে ও তাহাজ্জুদের সালাতে দুই অংশ পড়া। (দুই অষ্টমাংশ)
এভাবে প্রতি দিন সর্ব নিম্ন এক পারা অবশ্যই তিলাওয়াত করা।
(খ) নফল সালাতে, গাড়িতে, আযান-ইকামাতের মাঝখানে, বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে, অফিসে যাওয়ার পথে এবং আসার সময়... আরো অন্যান্য সময়ে কুরআন তিলাওয়াত করা।
(গ) ফজর সালাতের পরে সামান্য সময়ের জন্যে হলেও কুরআন পড়তে বসা, অন্ততঃ পক্ষে এক অষ্টমাংশ তিলাওয়াত করা।
(ঘ) আরো উঁচু হিম্মত সম্পন্ন লোক মনজিল পদ্ধতিতে এক সপ্তাহে পূর্ণ কুরআন খতম করতে পারেন, নিম্নের বিন্যাস অনুসারে মাশায়েখ ও ওলামায়ে কেরামরা কুরআন খতম করতেন :
• প্রথম দিনের পরিমাণ: সূরা আল-ফাতিহা থেকে সূরা আল-মায়েদার আগ পর্যন্ত।
• দ্বিতীয় দিনের পরিমাণ: সূরা আল-মায়েদা থেকে সূরা ইউনুসের আগ পর্যন্ত।
• তৃতীয় দিনের পরিমাণ: সূরা ইউনুস থেকে সূরা মারইয়ামের আগ পর্যন্ত।
• চতুর্থ দিনের পরিমাণ: সূরা মারইয়াম থেকে সূরা আশ-শু‘আরার আগ পর্যন্ত।
• পঞ্চম দিনের পরিমাণ: সূরা আশ-শু‘আরা থেকে সূরা আস-সাফ্ফাতের আগ পর্যন্ত।
• ষষ্ঠ দিনের পরিমাণ: সূরা আস-সাফ্ফাত থেকে সূরা কাফ এর আগ পর্যন্ত।
• সপ্তম দিনের পরিমাণ: সূরা কাফ থেকে সূরা আন-নাস-এর শেষ পর্যন্ত।
আলাদা আলাদা এ পরিমাণ স্মরণ রাখার জন্য ( فمي مشوق ) শব্দটি মুখস্থ রাখা যায়। ف দ্বারা সূরা আল-ফাতিহার শুরু, م দ্বারা সূরা আল-মায়েদার শুরু, ي দ্বারা সূরা ইউনুসের শুরু, م দ্বারা সূরা মারইয়ামের শুরু, ش দ্বারা সূরা আশ-শু‘আরার শুরু, و দ্বারা সূরা আস-সাফ্ফাতের শুরু, ق দ্বারা সূরা ক্বাফ এর শুরু।
যার দশ পারার কম মুখস্থ তার উচিত পুরো মুখস্থ অংশ প্রতি পনের দিন অন্তর একবার অবশ্যই পড়া। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফীক দিন। আমীন।
সমাপ্ত
আমাদের পরিভাষায় রিয়া দ্বারা উদ্দেশ্য : হিফয সমাপনের পর বা বিশ্বমানের তিলাওয়াত ও শ্রুতিমধুর কণ্ঠের জন্য সম্মান ও মর্যাদার প্রত্যাশী থাকা, মানুষের অন্তরে আত্মপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা, যা শিরকের অন্তর্ভুক্ত। মাহমুদ ইবন লাবীদ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمُ الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ " قَالُوا : وَمَا الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ : " الرِّيَاءُ، يَقُولُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ : إِذَا جُزِيَ النَّاسُ بِأَعْمَالِهِمْ : اذْهَبُوا إِلَى الَّذِينَ كُنْتُمْ تُرَاءُونَ فِي الدُّنْيَا فَانْظُرُوا هَلْ تَجِدُونَ عِنْدَهُمْ جَزَاءً» .
“আমার কাছে সবচেয়ে ভয়ের জিনিস হচ্ছে শির্কে আসগার। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল, শির্কে আসগার তথা ছোট শির্ক কি? তিনি বললেন, রিয়া তথা লোক দেখানো আমল। অতঃপর তিনি বলেন, কিয়ামতের দিন যখন আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদের আমলের প্রতিদান দিবেন, তখন রিয়াকারীদের বলবেন, তোমরা তাদের কাছে যাও, যাদের দেখানোর জন্য আমল করতে, দেখ তাদের কাছে কোনো প্রতিদান পাওয়া যায় কি-না? (মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ২৩৬৩০)
যে ব্যক্তি কুরআনকে নিয়ে রিয়াতে লিপ্ত হবে, সে নিজকে কঠিন আযাবের সম্মুখীন করবে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ أَوَّلَ النَّاسِ يُقْضَى يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَيْهِ رَجُلٌ اسْتُشْهِدَ، فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا، قَالَ : فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا؟ قَالَ : قَاتَلْتُ فِيكَ حَتَّى اسْتُشْهِدْتُ، قَالَ : كَذَبْتَ، وَلَكِنَّكَ قَاتَلْتَ لِأَنْ يُقَالَ : جَرِيءٌ، فَقَدْ قِيلَ، ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِيَ فِي النَّارِ، وَرَجُلٌ تَعَلَّمَ الْعِلْمَ، وَعَلَّمَهُ وَقَرَأَ الْقُرْآنَ، فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا، قَالَ : فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا؟ قَالَ : تَعَلَّمْتُ الْعِلْمَ، وَعَلَّمْتُهُ وَقَرَأْتُ فِيكَ الْقُرْآنَ، قَالَ : كَذَبْتَ، وَلَكِنَّكَ تَعَلَّمْتَ الْعِلْمَ لِيُقَالَ : عَالِمٌ، وَقَرَأْتَ الْقُرْآنَ لِيُقَالَ : هُوَ قَارِئٌ، فَقَدْ قِيلَ، ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِيَ فِي النَّارِ، وَرَجُلٌ وَسَّعَ اللهُ عَلَيْهِ، وَأَعْطَاهُ مِنْ أَصْنَافِ الْمَالِ كُلِّهِ، فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا، قَالَ : فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا؟ قَالَ : مَا تَرَكْتُ مِنْ سَبِيلٍ تُحِبُّ أَنْ يُنْفَقَ فِيهَا إِلَّا أَنْفَقْتُ فِيهَا لَكَ، قَالَ : كَذَبْتَ، وَلَكِنَّكَ فَعَلْتَ لِيُقَالَ : هُوَ جَوَادٌ، فَقَدْ قِيلَ، ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ، ثُمَّ أُلْقِيَ فِي النَّارِ» .
“সর্ব প্রথম যাদের ব্যাপারে কিয়ামতের দিন ফয়সালা হবে, তার মধ্যে ঐ ব্যক্তি রয়েছে যে, ইলম শিক্ষা করেছে, অপরকে শিক্ষা দিয়েছে ও কুরআন তিলাওয়াত করেছে। তাকে উপস্থিত করা হবে, অতঃপর তার ওপর প্রদত্ত নেয়ামতসমূহ স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে, সে তা স্বীকারও করবে। তাকে বলা হবে, তুমি এর ওপর কি আমল করেছ? সে বলবে, আমি ইলম শিক্ষা করেছি, অপরকে শিক্ষা দিয়েছি এবং তোমার সন্তুষ্টির জন্য কুরআন পড়েছি। তাকে বলা হবে, তুমি মিথ্যে বলছ, বরং তুমি ইলম শিক্ষা করেছ, যাতে তোমাকে আলেম বলা হয়, কুরআন পড়েছ যাতে তোমাকে কারী বলা হয়। অতঃপর তাকে চেহারার ওপর দাঁড় করিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার নির্দেশ দেয়া হবে”। (সহীহ মুসলিম, ১৯০৫) সুতরাং মুক্তি পেতে হলে, ইখলাস এবং নিয়ত ও উদ্দেশ্যকে পরিশুদ্ধ রাখা জরুরি।
২. কুরআন মোতাবেক আমল করা এবং সে অনুযায়ী আদব, আখলাক ও চরিত্র গঠন করা :
কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে আমল করার জন্য ও কুরআন মোতাবেক জীবন পদ্ধতি পরিচালনা করার জন্য। ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা ‘আনহু বলেন, তোমাদের আমলের জন্যে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, সুতরাং আমলের জন্য কুরআন পড়। তোমাদের কেউ কেউ পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াত করে, একটি হরফও বাদ পড়ে না, অথচ মোটেও সে কুরআন অনুযায়ী আমল করে না। কতক বিজ্ঞজন বলেছেন, কেউ কেউ কুরআন তিলাওয়াত করে নিজের ওপরই অভিসম্পাত করে, অথচ সে জানেও না। যেমন কুরআনের অনেক জায়গায় রয়েছে অত্যাচারী তথা নিজেদের ক্ষতি সাধনকারীদের ওপর আল্লাহর লানত। অথচ কুরআনের ওপর আমল না করার কারণে সে নিজেই এর অন্তর্ভুক্ত। আবার সে তিলাওয়াত করে, মিথ্যুকদের ওপর আল্লাহর লানত। অথচ কুরআন অনুযায়ী আমল না করে সে নিজেও একজন মিথ্যুক। আনাস রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা ‘আনহু বলেন, অনেক কুরআন পাঠকারী এমন রয়েছে, কুরআন যাদেরকে অভিসম্পাত করে।
৩. নিজেকে নিয়ে অহংকারে লিপ্ত না হওয়া বা অপরকে তুচ্ছ জ্ঞান না করা:
অহংকার বা অপরকে তুচ্ছ জ্ঞান করার অর্থ আল্লাহর করুণা বা তাওফিকের কথা ভুলে নিজের কঠোর পরিশ্রম ও চেষ্টার ফলে হিফয সমাপন সমাপ্ত হয়েছে মনে করা ও আত্মতুষ্টিতে লিপ্ত হওয়া। অথচ আল্লাহ তা‘আলা তাকে হিফযের তওফীক দিয়েছেন, যদি তার অনুগ্রহ না হত, কখনো সে পূর্ণ কুরআন বা তার কিয়দাংশ মুখস্থ করতে সক্ষম হত না। তাই হিফযের জন্য সর্বতোভাবে আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ স্বীকার করা, তার কৃতজ্ঞতা আদায় করা এবং শুধু তার দিকেই এ নেয়ামতের নিসবত করা জরুরি।
মানুষের ওপর বড়ত্বের প্রকাশই অহংকার, এ থেকে বিরত থাকা। কারণ, মানুষ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয় একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার মেহেরবাণীতে, তার করুণায়। তাই অন্যদের মূর্খ ভাবা বা তুচ্ছজ্ঞান করার কোনো সুযোগ নেই। যে এতে লিপ্ত হয়, তার হয়তো এর শাস্তির কথা জানা নেই। হাদীসে কুদসিতে রয়েছে, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
«الْكِبْرِيَاءُ رِدَائِي، وَالْعَظَمَةُ إِزَارِي، فَمَنْ نَازَعَنِي وَاحِدًا مِنْهُمَا، قَذَفْتُهُ فِي النَّارِ» .
“অহংকার আমার চাদর, বড়ত্ব আমার পরিধেয় বস্ত্র, যে আমার এ দু’টোর যে কোন একটি নিয়ে আমার সঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত হবে, আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। (সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৮০৯০)
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,
«لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كِبْرٍ» .
“যার অন্তরে সামান্য পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না”। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯১)
৪. কুরআন বারবার তিলাওয়াত করা:
কুরআন মুখস্থ রাখার জন্য বারবার তিলাওয়াত করা এবং আগ্রহ সৃষ্টির জন্য হাদীস ইত্যাদি অধ্যয়ন করা। কুরআন তিলাওয়াতের ফযীলত ও তা ভুলে যাওয়ার ক্ষতি সম্পর্কে জানা। যেমন,
• ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«إِنَّمَا مَثَلُ صَاحِبِ القُرْآنِ، كَمَثَلِ صَاحِبِ الإِبِلِ المُعَقَّلَةِ، إِنْ عَاهَدَ عَلَيْهَا أَمْسَكَهَا، وَإِنْ أَطْلَقَهَا ذَهَبَتْ» .
“হাফেযে কুরআনের উদাহরণ উটের মালিকের ন্যায়, যদি সে তাকে বেঁধে রাখে, নিজ আয়ত্তে রাখতে পারবে, অন্যথায় সে চলে যাবে”। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫0৩১)
• সাহাবী আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«بِئْسَ مَا لِأَحَدِهِمْ أَنْ يَقُولَ نَسِيتُ آيَةَ كَيْتَ وَكَيْتَ، بَلْ نُسِّيَ وَاسْتَذْكِرُوا القُرْآنَ، فَإِنَّهُ أَشَدُّ تَفَصِّيًا مِنْ صُدُورِ الرِّجَالِ مِنَ النَّعَمِ» .
“তোমাদের কারো এমন বলা যে, আমি অমুক আয়াত ভুলে গেছি, খুবই খারাপ। বরং তাকে ভুলানো হয়েছে। তার উচিত বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা। কারণ, কুরআন মানুষের হৃদয় থেকে উটের চেয়ে দ্রুত পলায়নপ”। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৫৩২)
• আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«تَعَاهَدُوا القُرْآنَ، فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَهُوَ أَشَدُّ تَفَصِّيًا مِنَ الإِبِلِ فِي عُقُلِهَا» .
“তোমরা বারবার কুরআন পড়, আল্লাহর কসম, যার হাতে আমার জান, রশি থেকে উটের পলায়ন করার চেয়েও কুরআন দ্রুত পলায়নকারী”। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৫০৩৩)
এসব বর্ণনা ও অন্যান্য বর্ণনার ফলে আলেমগণ কুরআন খতমের কম মেয়াদ ও দীর্ঘ মেয়াদ ঠিক করে দিয়েছেন, যা অতিক্রম করা বৈধ নয়।
কুরআন খতমের কম মেয়াদ: তিন দিন। আব্দুল্লাহ ইবন আমর বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لَا يَفْقَهُ مَنْ قَرَأَ الْقُرْآنَ فِي أَقَلَّ مِنْ ثَلَاثٍ» .
“যে তিন দিনের কমে কুরআন খতম করবে, সে কিছুই বুঝবে না”। (সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩৯৪)
মুয়াজ ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা ‘আনহু তিন দিনের কমে কুরআন খতম করা মাকরূহ বলতেন। (ইবন কাসির : ফাজায়েলে কুরআন) ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা ‘আনহু বলতেন, তোমরা সাত দিনে কুরআন খতম কর, তিন দিনের কমে কুরআন খতম কর না। (ফাতহুল বারি, ৯/৯৭)
তিন দিনের কম কুরআন খতমে দ্রুত পড়ার দরুন চিন্তা-ফিকিরের সুযোগ থাকে না, বিরক্তির উদ্রেক হয়, শব্দ উচ্চারণ সঠিক হয় না, তিলাওয়াতও সুন্দর হয় না ইত্যাদি। যে সকল আকাবের ও বুযর্গানে দ্বীনের ব্যাপারে বর্ণিত রয়েছে, তারা তিন দিনের কমে কুরআন খতম করেছেন, সম্ভবত তাদের নিকট আমাদের বর্ণিত হাদীসগুলো পৌঁছেনি বা দ্রুত পড়া সত্ত্বেও তারা কুরআনে মনোযোগ ঠিক রেখেছেন বা রমযান ইত্যাদির মত কোন ফযিলতপূর্ণ সময়ে তারা এমন করেছেন। তারা এ সময়কে সুবর্ণ সুযোগ মনে করে বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করেছেন। এটা তাদের চিরাচরিত নিয়ম ছিল না।
কুরআন খতমের দীর্ঘ মেয়াদ: কুরআন খতমের দীর্ঘ মেয়াদ চল্লিশ দিন। আব্দুল্লাহ ইবন আমর থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করেন, কত দিনে কুরআন খতম করব? তিনি বলেন,
«اقْرَأِ القُرْآنَ فِي أَرْبَعِينَ»
“তুমি চল্লিশ দিনে কুরআন খতম কর”। (সুনান তিরমিযী, হাদীস নং ২৯৪৭)
এ হাদীসের কারণে ইসহাক ইবন রাহওয়াইহ বলেন, চল্লিশ দিনের অধিক অতিবাহিত হবে, অথচ কুরআন খতম হবে না, এটা খুবই খারাপ। (সুনান তিরমিযী, ৫/১৯৭) তিনি আরো বলেন, চল্লিশ দিনের মধ্যে কুরআন খতম না করা মাকরূহ। (ইবন কাসির : ফাজায়েলে কুরআন)
৫. গুনাহ ও নাফরমানির কারণে কুরআন চলে যায়:
হাদীসে রয়েছে গুনাহের কারণে মানুষ অনেক নেয়ামত হতে বঞ্চিত হয়, বিভিন্ন মুসিবতে গ্রেফতার হয়, যার মধ্যে বড় মুসিবত হচ্ছে কুরআন ভুলে যাওয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لَا يُصِيبُ عَبْدًا نَكْبَةٌ فَمَا فَوْقَهَا أَوْ دُونَهَا إِلَّا بِذَنْبٍ، وَمَا يَعْفُو اللَّهُ عَنْهُ أَكْثَرُ» .
“মানুষ সামান্য মুসিবত বা তার চেয়েও ছোট বা বড় মুসিবতে নিজ গুনাহের কারণেই পতিত হয়। আর আল্লাহ তা‘আলা যেসব গুনাহ ক্ষমা করেন, তার পরিমাণ তো অনেক বেশি। (তিরমিযী: ৫:৩৭৭, হা.৩২৫২) কুরআন ভোলার ক্ষেত্রে গুনাহই বেশি দায়ী। জাহহাক ইবন মুজাহিম বলেন, যে কুরআন পড়ে ভুলে গেছে, সে মূলত নিজ গুনাহের কারণেই ভুলে গেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَآ أَصَٰبَكُم مِّن مُّصِيبَةٖ فَبِمَا كَسَبَتۡ أَيۡدِيكُمۡ وَيَعۡفُواْ عَن كَثِيرٖ ٣٠﴾ [ الشورا : ٣٠ ].
আর তোমাদের প্রতি যে মুসীবত আপতিত হয়, তা তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল। আর অনেক কিছুই তিনি ক্ষমা করে দেন। (সূরা আশ-শূরা আয়াত: ৩)
কুরআন ভোলা সব চেয়ে বড় মুসিবত। (ইবন কাসির : ফাযায়েলে কুরআন) আগের যুগে যে কুরআন ভুলে যেত, সে খুবই কোণঠাসা হয়ে যেত। ইবন সিরিন থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে কুরআন ভুলে যেত তাকে তারা ঘৃণা করতেন, তার ব্যাপারে তারা কঠোর মন্তব্য করতেন। (ফাতহুল বারি, ৯/৮৬) এর কারণ হিসেবে কুরতুবি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, যে পূর্ণ কুরআন বা তার কিয়দাংশ মুখস্থ করল, তার মর্যাদা অন্যদের তুলনায় বৃদ্ধি পেল। যদি সে এ মর্যাদার অবমাননা করে, অথবা এ মর্যাদা থেকে ছিটকে পড়ে, সে তিরস্কারের পাত্র। কুরআন না পড়ার অর্থ অজ্ঞতার শিকার হওয়া। (ফাতহুল বারি, ৯/৮৬)
কারো মতে কুরআন ভুলে যাওয়া মারাত্মক গুনাহ। আবুল আলিয়া আনাস রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, আমরা সব চেয়ে বড় গুনাহ মনে করতাম, কুরআন পড়ে অলসতা বা গাফলতির কারণে ভুলে যাওয়া। (ফাতহুল বারি, ৯/৮৬)
ইবন কাসির রাহিমাহুল্লাহ বলেন, কতক আলেম কুরআন ভুলে যাওয়া ব্যক্তিকে কুরআন বিমুখ ব্যক্তির সঙ্গে তুলনা করে এ আয়াতের অর্ন্তভুক্ত জ্ঞান করেছেন,
﴿ وَمَنۡ أَعۡرَضَ عَن ذِكۡرِي فَإِنَّ لَهُۥ مَعِيشَةٗ ضَنكٗا وَنَحۡشُرُهُۥ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ أَعۡمَىٰ ١٢٤ قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرۡتَنِيٓ أَعۡمَىٰ وَقَدۡ كُنتُ بَصِيرٗا ١٢٥﴾ [ طه : ١٢٤، ١٢٦ ].
“আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জন্য হবে নিশ্চয় এক সংকুচিত জীবন এবং আমি তাকে কিয়ামত দিবসে উঠাবো অন্ধ অবস্থায়। সে বলবে, হে আমার রব, কেন আপনি আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালেন? অথচ আমি তো ছিলাম দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন?” (সূরা ত্বহা, আয়াত: ১২৪, ১২৫)
তখন আল্লাহ বলবেন,
﴿ كَذَٰلِكَ أَتَتۡكَ ءَايَٰتُنَا فَنَسِيتَهَاۖ وَكَذَٰلِكَ ٱلۡيَوۡمَ تُنسَىٰ ١٢٦ ﴾ [ طه : ١٢٦ ].
“এমনিভাবেই তোমার নিকট আমাদের নিদর্শনাবলী এসেছিল, কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে এবং সেভাবেই আজ তোমাকে ভুলে যাওয়া হল”। [সূরা ত্বহা, আয়াত: ১২৪৬] সামান্য হলেও সে এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত। কারণ, কুরআন তিলাওয়াত না করা, তার ব্যাপারে অবহেলা প্রদর্শন করা, স্বেচ্ছায় ভুলে যাওয়ারই শামিল, যা মারাত্মক অপরাধ। (ইবন কাসির: ফাযায়েলে কুরআন)
৬. কুরআন মুখস্থ রাখার পদ্ধতি:
কুরআন মুখস্থ রাখার জন্য সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি হচ্ছে, প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে তাওফীক মোতাবিক তিলাওয়াত করা। যাদের পক্ষে তা সম্ভব নয়, তারা নিম্নের পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারে :
(ক) এক পারা আট ভাগ করে নেওয়া:
ফজরের সুন্নত ব্যতীত অন্যান্য সুন্নতে মুয়াক্কাদাতে প্রতি দুরাকাতে একঅষ্টমাংশ পড়া। (জোহরের আগে-পরে সুন্নতে তিন অংশ, মাগরিবের সুন্নতে এক অংশ, এশার সুন্নতে এক অংশ, এভাবে আট অংশের পাঁচ অংশ পড়া হয়ে যাবে।)
• আসরের আগে দু রাকা‘আত সালাতে এক অংশ পড়া। (এক অষ্টমাংশ)
• ফরজ সালাতে ও তাহাজ্জুদের সালাতে দুই অংশ পড়া। (দুই অষ্টমাংশ)
এভাবে প্রতি দিন সর্ব নিম্ন এক পারা অবশ্যই তিলাওয়াত করা।
(খ) নফল সালাতে, গাড়িতে, আযান-ইকামাতের মাঝখানে, বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে, অফিসে যাওয়ার পথে এবং আসার সময়... আরো অন্যান্য সময়ে কুরআন তিলাওয়াত করা।
(গ) ফজর সালাতের পরে সামান্য সময়ের জন্যে হলেও কুরআন পড়তে বসা, অন্ততঃ পক্ষে এক অষ্টমাংশ তিলাওয়াত করা।
(ঘ) আরো উঁচু হিম্মত সম্পন্ন লোক মনজিল পদ্ধতিতে এক সপ্তাহে পূর্ণ কুরআন খতম করতে পারেন, নিম্নের বিন্যাস অনুসারে মাশায়েখ ও ওলামায়ে কেরামরা কুরআন খতম করতেন :
• প্রথম দিনের পরিমাণ: সূরা আল-ফাতিহা থেকে সূরা আল-মায়েদার আগ পর্যন্ত।
• দ্বিতীয় দিনের পরিমাণ: সূরা আল-মায়েদা থেকে সূরা ইউনুসের আগ পর্যন্ত।
• তৃতীয় দিনের পরিমাণ: সূরা ইউনুস থেকে সূরা মারইয়ামের আগ পর্যন্ত।
• চতুর্থ দিনের পরিমাণ: সূরা মারইয়াম থেকে সূরা আশ-শু‘আরার আগ পর্যন্ত।
• পঞ্চম দিনের পরিমাণ: সূরা আশ-শু‘আরা থেকে সূরা আস-সাফ্ফাতের আগ পর্যন্ত।
• ষষ্ঠ দিনের পরিমাণ: সূরা আস-সাফ্ফাত থেকে সূরা কাফ এর আগ পর্যন্ত।
• সপ্তম দিনের পরিমাণ: সূরা কাফ থেকে সূরা আন-নাস-এর শেষ পর্যন্ত।
আলাদা আলাদা এ পরিমাণ স্মরণ রাখার জন্য ( فمي مشوق ) শব্দটি মুখস্থ রাখা যায়। ف দ্বারা সূরা আল-ফাতিহার শুরু, م দ্বারা সূরা আল-মায়েদার শুরু, ي দ্বারা সূরা ইউনুসের শুরু, م দ্বারা সূরা মারইয়ামের শুরু, ش দ্বারা সূরা আশ-শু‘আরার শুরু, و দ্বারা সূরা আস-সাফ্ফাতের শুরু, ق দ্বারা সূরা ক্বাফ এর শুরু।
যার দশ পারার কম মুখস্থ তার উচিত পুরো মুখস্থ অংশ প্রতি পনের দিন অন্তর একবার অবশ্যই পড়া। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফীক দিন। আমীন।
সমাপ্ত
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন