HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
আল-কুরআনের আলোকে মানুষের স্বরূপ বিশ্লেষণ
লেখকঃ ড. মোঃ আবদুল কাদের
২
আল-কুরআনের আলোকে মানুষের স্বরূপ বিশ্লেষণমহাগ্রন্থ আল-কুরআন মানব জাতির কল্যাণের আঁধার। মানুষের সঠিক পথের দিশা দিতে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত সর্বশেষ আসমানী গ্রন্থ হলো আল-কুরআন। এটি সুদীর্ঘ তেইশ বছর যাবৎ বিভিন্ন সময় ও পরিস্থিতির আবর্তে মানুষের কল্যাণ সাধনের নিমিত্তে গাইড বুক হিসেবে নাযিল হয়েছে। এতে মানব জীবনের প্রতিটি দিক ও বিভাগের সমস্যা ও তার সমাধানের বর্ণনা বিবৃত হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন:
مَا فَرَّطْنَا فِي الْكِتَابِ مِنْ شَيْءٍ
কিতাব (কুরআনে) কোন কিছুই আমি বাদ দেইনি।’’ [. সূরা আল-আন‘আম: ৩৮। অন্যত্র আরো ষ্পষ্ট করে বলা হয়েছে: وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِكُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً وَبُشْرَى لِلْمُسْلِمِينَ ‘‘ আমি আত্মসম্পর্ণকারীদের জন্য প্রত্যেক বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যাস্বরূপ পথ নির্দেশ, দয়া ও সুসংবাদস্বরূপ তোমাদের প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করলাম। (সূরা আন-নাহল: ৮৯)।]
মানুষ আল্লাহ তা’আলার অসংখ্য সৃষ্টির মধ্যে এক অনন্য ও অসাধারণ সৃষ্টি। বুদ্ধিবৃত্তিক ও জীবকে দেয়া হয়েছে ভাল ও মন্দের মাঝে পার্থক্য সুচিত করার এক অসুপম ক্ষমতা। মানুষই একমাত্র সৃষ্টিজীব যাদের রয়েছে বিবেক ও বোধশক্তি। এ বিবেকই তাদের চালিকাশক্তি এবং আল্লাহ প্রদত্ত কল্যাণের অনুসন্ধানী। ফলে মানুষকে তিনি আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টি শ্রেষ্ঠ জীবরূপে ঘোষণা দিয়েছেন। [. সূরা বনী ইসরাইল:৭০।]
এ পৃথিবীতে যা কিছু সৃষ্টি করা হয়েছে, তার সবই মানুষের কল্যাণের জন্য। মহান আল্লাহ আপন কৃপায় সেসব সৃষ্টিজীবকে মানুষের অনুগত ও বশ্য করে দিয়েছেন। যদিও তারা আকার-আকৃতিতে, শক্তি ও দেহাবয়বের দিক থেকে মানুষের চেয়ে অনেক বড়। এ মর্মে তিনি ইরশাদ করেন:
أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللهَ سَخَّرَ لَكُمْ مَا فِي الْأَرْضِ وَالْفُلْكَ
‘‘তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহ তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন পৃথিবীতে যা কিছু আছে তৎসমূদয়কে।’’ [. সুরা আল-হাজ্ব: ৬৫।]
মানুষের সৃষ্টি মূলে যে মহান আল্লাহর একক ইচ্ছার প্রতিফলন মাত্র, সেই মহান আল্লাহ দু’ধরনের উপাদান দিয়ে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। [. আব্দুর রহমান আননাহলাভী, উসূলুত তারিবিয়াতিল ইসলামিয়্যাহ ওয়া আসালিবুহা, দামেশক, দারুল ফিকর, ১৯৭৯ খ্রী. পৃ. ৩০।]
প্রথমত: মাটি থেকে, অত:পর তাতে রূহ প্রবেশ করিয়েছেন যেমন: হযরত (আ.) এর সৃষ্টি। কুরআনে এসেছে:
الَّذِي أَحْسَنَ كُلَّ شَيْءٍ خَلَقَهُ وَبَدَأَ خَلْقَ الْإِنسَانِ مِنْ طِينٍ - ثُمَّ جَعَلَ نَسْلَهُ مِنْ سُلَالَةٍ مِنْ مَاءٍ مَهِينٍ
‘‘যিনি তার প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সৃজন করেছেন উত্তমরূপে এবং কর্দম হতে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন। অত:পর তিনি তার বংশ উৎপন্ন করেন তুচ্ছ তরল পদার্থের নির্যাস হতে। পরে তিনি তাকে করেছেন সুঠাম এবং তাতে ফুঁকিয়ে দিয়েছেন তাঁর রূহ হতে এবং তোমাদেরকে দিয়েছেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্ত:করণ, তোমরা অতি সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।’’ [. সূরা আস-সাজদা: ৭-৮।]
অন্যত্র সরাসরি পৃথিবীতে মানব আদম(আ.) এর সৃষ্টি সম্পর্কে তিনি বলেন:
وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِنْ صَلْصَالٍ مِنْ حَمَإٍ مَسْنُونٍ - فَإِذَا سَوَّيْتُهُ وَنَفَخْتُ فِيهِ مِنْ رُوحِي فَقَعُوا لَهُ سَاجِدِينَ
‘‘স্মরণ কর, যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেস্তাদেরকে বললেন, আমি গন্ধযুক্ত কর্দমের শুস্ক ঠনঠনা মৃত্তিকা হতে মানুষ সৃষ্টি করেছি, যখন আমি তাকে সুমাঠ করব এবং তাতে আমার পক্ষ হতে রূহ সঞ্চার করব, তখন তোমরা তার প্রতি সিজদাবনত হইও।’’ [. সূরা আল-হিজর: ২৮-২৯।]
দ্বিতীয়ত: বীর্ষ থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে:
وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ مِنْ سُلَالَةٍ مِنْ طِينٍ - ثُمَّ جَعَلْنَاهُ نُطْفَةً فِي قَرَارٍ مَكِينٍ - ثُمَّ خَلَقْنَا النُّطْفَةَ عَلَقَةً فَخَلَقْنَا الْعَلَقَةَ مُضْغَةً فَخَلَقْنَا الْمُضْغَةَ عِظَامًا فَكَسَوْنَا الْعِظَامَ لَحْمًا ثُمَّ أَنشَأْنَاهُ خَلْقًا آخَرَ فَتَبَارَكَ اللهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ
‘‘আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মৃত্তিকার উপাদান হতে, অত:পর আমি তাকে শুক্রবিন্দুরূপে স্থাপন করি ‘আলাক-এ, অত:পর ‘আলাককে পরিণত করি পিন্ডে এবং পিন্ডকে পরিণত করি অস্থি-পাঞ্জরে অত:পর অস্থি পাঞ্জরকে ঢেকে দেই গোশত দ্বারা; অবশেষে তাতে গড়ে তুলি অন্য এক সৃষ্টিরূপে। অতএব সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ কত মহান।’’ [. সূরা আল-মু‘মিনুন:১২-১৪।]
অন্যত্র সৃষ্টি সম্পর্কে আরো বলা হয়েছে:
يَخْلُقُكُمْ فِي بُطُونِ أُمَّهَاتِكُمْ خَلْقًا مِنْ بَعْدِ خَلْقٍ فِي ظُلُمَاتٍ ثَلَاثٍ ذَلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمْ لَهُ الْمُلْكُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ فَأَنَّى تُصْرَفُونَ
‘‘তিনি তোমাদেরকে তোমাদের মাতৃ-গর্ভের ত্রিবিধ অন্ধকারে পর্যায়ক্রমে সৃষ্টি করেছেন। তিনিই আললাহ; তোমাদের প্রতিপালক; সর্বময় কর্তৃত্ব তারই; তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তবে তোমরা মৃখ ফিরিয়ে কোথায় চলছ?’’ [. সূরা আয-যুমার: ৬।]
মূলত: মানুষকে একটি প্রাণ থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তারপর তা থেকে তার সঙ্গীর সৃষ্টি হয়েছে। অত:পর তাদের উভয়ের মাধ্যমে অসংখ্য নারী-পুরুষের বিস্তৃতি লাভ করেছে। মহান আল্লাহ সূরা নিসার শুরুতে ঘোষণা দিয়েছেন এভাবে:
يَاأَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمْ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً
‘‘হে মানব! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন ও যিনি তা হতে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেন। যিনি তাদের দুইজন হতে বহু নব-নারী ছড়িয়ে দেন।’’ [. সূরা আন-নিসা: ১।]
মানুষ সৃষ্টি করে মহনা আল্লাহ ক্লান্ত হননি বরং তাদের দিয়েছেন ভাল ও মন্দের মাঝে পার্থক্য করার ক্ষমতা, মুক্ত ও স্বাধীনভাবে জমীনে বিচরণের অধিকার, চিন্তার স্বাধীনতা প্রভৃতি। তিনি বলেন:
وَنَفْسٍ وَمَا سَوَّاهَا - فَأَلْهَمَهَا فُجُورَهَا وَتَقْوَاهَا - قَدْ أَفْلَحَ مَنْ زَكَّاهَا - وَقَدْ خَابَ مَنْ دَسَّاهَا
‘‘শপথ মানুষের এবং তার, যিনি তাকে সুঠাম করিয়েছেন, অত:পর তাকে তার অসৎকর্ম এবং অসৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন। সে-ই সফলকাম হবে, যে নিজেকে পবিত্র করবে এবং সে-ই ব্যর্থ হবে যে নিজেকে কলুষাচ্ছন্ন করবে।’’ [. সূরা আশ-শামস: ৭-১০।]
প্রকৃতপক্ষে মানুষের শ্রেষ্ঠ জীব হওয়ার মূলে যে বৈশিষ্ট্যটি খুবই গুরুত্বের দাবীদার তা হলো জ্ঞান। তিনি মানুষকে জ্ঞানের ভান্ডার দান করেছেন, শুধু তাই নয়, এ জ্ঞানের দ্বারাই মানুষ ফিরিশতাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল। এ মর্মে তিনি ইশরাদ করেন:
اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ- الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ - عَلَّمَ الْإِنسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ
‘‘পাঠ কর, আর তোমার প্রতিপালক মহামহিমান্বিত, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।’’ [. সুরা আল-আলাক: ৩-৫।]
সূরা আল-বাকারাতে এসেছে:
وَعَلَّمَ آدَمَ الْأَسْمَاءَ كُلَّهَا ثُمَّ عَرَضَهُمْ عَلَى الْمَلَائِكَةِ فَقَالَ أَنْبِئُونِي بِأَسْمَاءِ هَؤُلَاء إِنْ كُنتُمْ صَادِقِينَ - قَالُوا سُبْحَانَكَ لَا عِلْمَ لَنَا إِلَّا مَا عَلَّمْتَنَا إِنَّكَ أَنْتَ الْعَلِيمُ الْحَكِيمُ
‘‘আর তিনি আদমকে যাবতীয় নাম শিক্ষা দিলেন, তৎপর সে সমূদয় ফিরিশতাদের সামনে প্রকাশ করলেন এবং বললেন, ‘‘এই সমুদয়ের নাম আমাকে বলে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও। তারা বলল ‘আপনি মহান, পবিত্র। আপনি আমাদেরকে যা শিক্ষা দিয়েছেন, তাছাড়া আমাদেরতো কোন জ্ঞান নেই।’’ [. সূর বাকারা: ৯-১০।]
এতদ্ব্যতীত জ্ঞানের যেসব উপদান রয়েছে, তা সবই তিনি স্বীয় অনুগ্রহে মানুষকে দিয়েছেন। এ মর্মে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন:
وَجَعَلَ لَكُمْ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَالْأَفْئِدَةَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
‘‘তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি এবং হৃদয়, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।’’ [. সূরা আন-নাহল: ৭৮।]
কুরআনের অন্যত্র এসেছে:
أَلَمْ نَجْعَلْ لَهُ عَيْنَيْنِ - وَلِسَانًا وَشَفَتَيْنِ
‘‘আমি কি তার জন্য সৃষ্টি করি নাই দুই চক্ষু? আর জিহবা ও দুই ওষ্ঠ? [. সূরা আল-বালাদ: ৮-৯।] এছাড়াও তিনি মানুষকে বয়ান বা কথা বলা শিখিয়েছেন। সূরা আর-রহমানে এসেছে:
الرَّحْمَنُ - عَلَّمَ الْقُرْآنَ- خَلَقَ الْإِنسَانَ- عَلَّمَهُ الْبَيَانَ
‘‘দয়াময় আল্লাহ তিনিই শিক্ষা দিয়েছে কুরআন, তিনিই সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তিনিই তাকে শিখিয়েছেন ভাব প্রকাশ করতে।’’ [. সূরা আর-রহমান: ১-৪।]
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে নি‘আমত দ্বারা মানুষকে ভুষিত করা হয়েছে তা হলো যুগে যুগে প্রেরিত আসমানী গ্রন্থসমূহ। সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী গ্রন্থের ধারণ করা সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন:
إِنَّا عَرَضْنَا الْأَمَانَةَ عَلَى السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَالْجِبَالِ فَأَبَيْنَ أَنْ يَحْمِلْنَهَا وَأَشْفَقْنَ مِنْهَا وَحَمَلَهَا الْإِنْسَانُ إِنَّهُ كَانَ ظَلُومًا جَهُولًا
‘‘আমি তো আসমান, যমীন ও পবর্তমালার প্রতি এই আমানত পেশ করেছিলাম, তারা তা বহন করতে অস্বীকার করল এবং তাতে শংকিত হলো, কিন্তু মানুষ তা বহন করল; সে তো অতিশয় জালিম, অতিশয় অজ্ঞ।’’ [. সূরা আল-আহযাব: ৭২।]
এসকল নি‘আমতের পিছনে উদ্দেশ্য ছিল কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন, তাঁর বিধি-বিধানের আনুগত্য করা, তাঁকে সিজদা করা প্রভৃতি। এসব অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা প্রকাশার্থে স্বয়ং রাসূল (সা) সিজদায় অবনত হয়েছেন। সহীহ মুসলিম শরীফে এসেছে, তিনি বলেন:
مجد وجهى للذي خلقه وصوره وشق يحعه وبصره تبارك الله أحسن الخالقين
‘‘আমার চেহারা সিজদা করেছে ঐ সত্তার জন্য যিনি তা সৃষ্টি করেছেন, অবয়ব দিয়েছেন এবং দিয়েছেন তাকে শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি। আল্লাহ অতীব বরকতময়, সবচেয়ে উত্তম স্রষ্টা।’’ [. মুসলিম ইব্ন হাজ্জাক, সহীত মুসলিম, হাদীস নং: ৭৭১।]
কিন্তু মানুষ অতিশয় অকৃতজ্ঞ। মহান আল্লাহ এসব অনুগ্রহের স্বীকৃতি দিতে চায় না এবং চেষ্টাও করে না। মহান আল্লাহ বলেন: إِنَّ الْإِنسَانَ لَكَفُورٌ ‘‘মানুষ তো অতিমাত্রায় অকৃতজ্ঞ।’’ [. সূরা আল-হাজ্ব: ৬৬।]
আল-কুরআন নানা ধরনের দীনি বিষয়ের বর্ণনার সাথে সাথে মানুষের বিভিন্ন প্রকারের স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য সর্ম্পকেও সংক্ষিপ্ত অথচ মূল্যবান চিত্র তুলে ধরেছে। যা সর্ব যুগের সর্বকালের সকল মানুষের মধ্যে বিদ্যমান। মানুষের এ স্বরূপগুলো স্থায়ী। কোন জাতি বা কোন গোত্রই এ সকল বৈশিষ্ট্যের বাইরে নয়।
পবিত্র কুরআনে যেসব মানুষের প্রশংসা করা হয়েছে, তেমনি নিন্দাও করা হয়েছে। তাকে একদিকে যেমন আসমান, জমিন ও ফিরিশতার চাইতেও মহীয়ান-গরীয়ান করা হয়েছে, অপরদিকে তেমনি তাকে চতুষ্পদ জন্তু, শয়তানের চেয়েও হীন ও নিকৃষ্টতর প্রাণীরূপে চিত্রিত করা হয়েছে। ফিরিশতার উপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করতে পারে এরাই, অথাপি এরা এত দুর্বল যে, নিকৃষ্টতম অবস্থানেও নেমে যেতে পারে। তাই কুরআনে তাদেরকে অত্যন্ত স্বৈরাচারী ও মুর্খরূপে চিত্রিত করা হয়েছে। এ মর্মে ইরশাদ হয়েছে:
وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيرًا مِنْ الْجِنِّ وَالْإِنسِ لَهُمْ قُلُوبٌ لَا يَفْقَهُونَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لَا يُبْصِرُونَ بِهَا وَلَهُمْ آذَانٌ لَا يَسْمَعُونَ بِهَا أُوْلَئِكَ كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ أُوْلَئِكَ هُمْ الْغَافِلُونَ
‘‘আমি তো বহু জ্বিন ও মানবকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি, তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তা দ্বারা তারা উপলব্ধি করে না, তাদের চক্ষু আছে তা দ্বারা তারা দেখে না এবং তদের কর্ণ আছে তা দ্বারা তারা শ্রবণ করে না, তারা পশুর ন্যায় বরং তারা অধিক বিভ্রান্ত, তারাই গাফিল।’’ [. সুরা আল-আ‘রাফ: ১৭৯।]
কুরআনের অন্যত্র আরো বলা হয়েছে:
لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ فِي أَحْسَنِ تَقْوِيم - ثُمَّ رَدَدْنَاهُ أَسْفَلَ سَافِلِينَ - إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَلَهُمْ أَجْرٌ غَيْرُ مَمْنُونٍ
‘‘আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি সুন্দরতম গঠনে, অত:পর আমি তাদেরকে হীনতাগ্রস্থদের হীনতমে পরিণত করি। কিন্তু তাদেরকে নয় যারা মু’মিন ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্য রয়েছে নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার।’’ [. সুরা আত-তীন: ৪-৬।]
مَا فَرَّطْنَا فِي الْكِتَابِ مِنْ شَيْءٍ
কিতাব (কুরআনে) কোন কিছুই আমি বাদ দেইনি।’’ [. সূরা আল-আন‘আম: ৩৮। অন্যত্র আরো ষ্পষ্ট করে বলা হয়েছে: وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِكُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً وَبُشْرَى لِلْمُسْلِمِينَ ‘‘ আমি আত্মসম্পর্ণকারীদের জন্য প্রত্যেক বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যাস্বরূপ পথ নির্দেশ, দয়া ও সুসংবাদস্বরূপ তোমাদের প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করলাম। (সূরা আন-নাহল: ৮৯)।]
মানুষ আল্লাহ তা’আলার অসংখ্য সৃষ্টির মধ্যে এক অনন্য ও অসাধারণ সৃষ্টি। বুদ্ধিবৃত্তিক ও জীবকে দেয়া হয়েছে ভাল ও মন্দের মাঝে পার্থক্য সুচিত করার এক অসুপম ক্ষমতা। মানুষই একমাত্র সৃষ্টিজীব যাদের রয়েছে বিবেক ও বোধশক্তি। এ বিবেকই তাদের চালিকাশক্তি এবং আল্লাহ প্রদত্ত কল্যাণের অনুসন্ধানী। ফলে মানুষকে তিনি আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টি শ্রেষ্ঠ জীবরূপে ঘোষণা দিয়েছেন। [. সূরা বনী ইসরাইল:৭০।]
এ পৃথিবীতে যা কিছু সৃষ্টি করা হয়েছে, তার সবই মানুষের কল্যাণের জন্য। মহান আল্লাহ আপন কৃপায় সেসব সৃষ্টিজীবকে মানুষের অনুগত ও বশ্য করে দিয়েছেন। যদিও তারা আকার-আকৃতিতে, শক্তি ও দেহাবয়বের দিক থেকে মানুষের চেয়ে অনেক বড়। এ মর্মে তিনি ইরশাদ করেন:
أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللهَ سَخَّرَ لَكُمْ مَا فِي الْأَرْضِ وَالْفُلْكَ
‘‘তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহ তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন পৃথিবীতে যা কিছু আছে তৎসমূদয়কে।’’ [. সুরা আল-হাজ্ব: ৬৫।]
মানুষের সৃষ্টি মূলে যে মহান আল্লাহর একক ইচ্ছার প্রতিফলন মাত্র, সেই মহান আল্লাহ দু’ধরনের উপাদান দিয়ে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। [. আব্দুর রহমান আননাহলাভী, উসূলুত তারিবিয়াতিল ইসলামিয়্যাহ ওয়া আসালিবুহা, দামেশক, দারুল ফিকর, ১৯৭৯ খ্রী. পৃ. ৩০।]
প্রথমত: মাটি থেকে, অত:পর তাতে রূহ প্রবেশ করিয়েছেন যেমন: হযরত (আ.) এর সৃষ্টি। কুরআনে এসেছে:
الَّذِي أَحْسَنَ كُلَّ شَيْءٍ خَلَقَهُ وَبَدَأَ خَلْقَ الْإِنسَانِ مِنْ طِينٍ - ثُمَّ جَعَلَ نَسْلَهُ مِنْ سُلَالَةٍ مِنْ مَاءٍ مَهِينٍ
‘‘যিনি তার প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সৃজন করেছেন উত্তমরূপে এবং কর্দম হতে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন। অত:পর তিনি তার বংশ উৎপন্ন করেন তুচ্ছ তরল পদার্থের নির্যাস হতে। পরে তিনি তাকে করেছেন সুঠাম এবং তাতে ফুঁকিয়ে দিয়েছেন তাঁর রূহ হতে এবং তোমাদেরকে দিয়েছেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্ত:করণ, তোমরা অতি সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।’’ [. সূরা আস-সাজদা: ৭-৮।]
অন্যত্র সরাসরি পৃথিবীতে মানব আদম(আ.) এর সৃষ্টি সম্পর্কে তিনি বলেন:
وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِنْ صَلْصَالٍ مِنْ حَمَإٍ مَسْنُونٍ - فَإِذَا سَوَّيْتُهُ وَنَفَخْتُ فِيهِ مِنْ رُوحِي فَقَعُوا لَهُ سَاجِدِينَ
‘‘স্মরণ কর, যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেস্তাদেরকে বললেন, আমি গন্ধযুক্ত কর্দমের শুস্ক ঠনঠনা মৃত্তিকা হতে মানুষ সৃষ্টি করেছি, যখন আমি তাকে সুমাঠ করব এবং তাতে আমার পক্ষ হতে রূহ সঞ্চার করব, তখন তোমরা তার প্রতি সিজদাবনত হইও।’’ [. সূরা আল-হিজর: ২৮-২৯।]
দ্বিতীয়ত: বীর্ষ থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে:
وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ مِنْ سُلَالَةٍ مِنْ طِينٍ - ثُمَّ جَعَلْنَاهُ نُطْفَةً فِي قَرَارٍ مَكِينٍ - ثُمَّ خَلَقْنَا النُّطْفَةَ عَلَقَةً فَخَلَقْنَا الْعَلَقَةَ مُضْغَةً فَخَلَقْنَا الْمُضْغَةَ عِظَامًا فَكَسَوْنَا الْعِظَامَ لَحْمًا ثُمَّ أَنشَأْنَاهُ خَلْقًا آخَرَ فَتَبَارَكَ اللهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ
‘‘আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মৃত্তিকার উপাদান হতে, অত:পর আমি তাকে শুক্রবিন্দুরূপে স্থাপন করি ‘আলাক-এ, অত:পর ‘আলাককে পরিণত করি পিন্ডে এবং পিন্ডকে পরিণত করি অস্থি-পাঞ্জরে অত:পর অস্থি পাঞ্জরকে ঢেকে দেই গোশত দ্বারা; অবশেষে তাতে গড়ে তুলি অন্য এক সৃষ্টিরূপে। অতএব সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ কত মহান।’’ [. সূরা আল-মু‘মিনুন:১২-১৪।]
অন্যত্র সৃষ্টি সম্পর্কে আরো বলা হয়েছে:
يَخْلُقُكُمْ فِي بُطُونِ أُمَّهَاتِكُمْ خَلْقًا مِنْ بَعْدِ خَلْقٍ فِي ظُلُمَاتٍ ثَلَاثٍ ذَلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمْ لَهُ الْمُلْكُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ فَأَنَّى تُصْرَفُونَ
‘‘তিনি তোমাদেরকে তোমাদের মাতৃ-গর্ভের ত্রিবিধ অন্ধকারে পর্যায়ক্রমে সৃষ্টি করেছেন। তিনিই আললাহ; তোমাদের প্রতিপালক; সর্বময় কর্তৃত্ব তারই; তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তবে তোমরা মৃখ ফিরিয়ে কোথায় চলছ?’’ [. সূরা আয-যুমার: ৬।]
মূলত: মানুষকে একটি প্রাণ থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তারপর তা থেকে তার সঙ্গীর সৃষ্টি হয়েছে। অত:পর তাদের উভয়ের মাধ্যমে অসংখ্য নারী-পুরুষের বিস্তৃতি লাভ করেছে। মহান আল্লাহ সূরা নিসার শুরুতে ঘোষণা দিয়েছেন এভাবে:
يَاأَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمْ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً
‘‘হে মানব! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন ও যিনি তা হতে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেন। যিনি তাদের দুইজন হতে বহু নব-নারী ছড়িয়ে দেন।’’ [. সূরা আন-নিসা: ১।]
মানুষ সৃষ্টি করে মহনা আল্লাহ ক্লান্ত হননি বরং তাদের দিয়েছেন ভাল ও মন্দের মাঝে পার্থক্য করার ক্ষমতা, মুক্ত ও স্বাধীনভাবে জমীনে বিচরণের অধিকার, চিন্তার স্বাধীনতা প্রভৃতি। তিনি বলেন:
وَنَفْسٍ وَمَا سَوَّاهَا - فَأَلْهَمَهَا فُجُورَهَا وَتَقْوَاهَا - قَدْ أَفْلَحَ مَنْ زَكَّاهَا - وَقَدْ خَابَ مَنْ دَسَّاهَا
‘‘শপথ মানুষের এবং তার, যিনি তাকে সুঠাম করিয়েছেন, অত:পর তাকে তার অসৎকর্ম এবং অসৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন। সে-ই সফলকাম হবে, যে নিজেকে পবিত্র করবে এবং সে-ই ব্যর্থ হবে যে নিজেকে কলুষাচ্ছন্ন করবে।’’ [. সূরা আশ-শামস: ৭-১০।]
প্রকৃতপক্ষে মানুষের শ্রেষ্ঠ জীব হওয়ার মূলে যে বৈশিষ্ট্যটি খুবই গুরুত্বের দাবীদার তা হলো জ্ঞান। তিনি মানুষকে জ্ঞানের ভান্ডার দান করেছেন, শুধু তাই নয়, এ জ্ঞানের দ্বারাই মানুষ ফিরিশতাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল। এ মর্মে তিনি ইশরাদ করেন:
اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ- الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ - عَلَّمَ الْإِنسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ
‘‘পাঠ কর, আর তোমার প্রতিপালক মহামহিমান্বিত, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।’’ [. সুরা আল-আলাক: ৩-৫।]
সূরা আল-বাকারাতে এসেছে:
وَعَلَّمَ آدَمَ الْأَسْمَاءَ كُلَّهَا ثُمَّ عَرَضَهُمْ عَلَى الْمَلَائِكَةِ فَقَالَ أَنْبِئُونِي بِأَسْمَاءِ هَؤُلَاء إِنْ كُنتُمْ صَادِقِينَ - قَالُوا سُبْحَانَكَ لَا عِلْمَ لَنَا إِلَّا مَا عَلَّمْتَنَا إِنَّكَ أَنْتَ الْعَلِيمُ الْحَكِيمُ
‘‘আর তিনি আদমকে যাবতীয় নাম শিক্ষা দিলেন, তৎপর সে সমূদয় ফিরিশতাদের সামনে প্রকাশ করলেন এবং বললেন, ‘‘এই সমুদয়ের নাম আমাকে বলে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও। তারা বলল ‘আপনি মহান, পবিত্র। আপনি আমাদেরকে যা শিক্ষা দিয়েছেন, তাছাড়া আমাদেরতো কোন জ্ঞান নেই।’’ [. সূর বাকারা: ৯-১০।]
এতদ্ব্যতীত জ্ঞানের যেসব উপদান রয়েছে, তা সবই তিনি স্বীয় অনুগ্রহে মানুষকে দিয়েছেন। এ মর্মে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন:
وَجَعَلَ لَكُمْ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَالْأَفْئِدَةَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
‘‘তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি এবং হৃদয়, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।’’ [. সূরা আন-নাহল: ৭৮।]
কুরআনের অন্যত্র এসেছে:
أَلَمْ نَجْعَلْ لَهُ عَيْنَيْنِ - وَلِسَانًا وَشَفَتَيْنِ
‘‘আমি কি তার জন্য সৃষ্টি করি নাই দুই চক্ষু? আর জিহবা ও দুই ওষ্ঠ? [. সূরা আল-বালাদ: ৮-৯।] এছাড়াও তিনি মানুষকে বয়ান বা কথা বলা শিখিয়েছেন। সূরা আর-রহমানে এসেছে:
الرَّحْمَنُ - عَلَّمَ الْقُرْآنَ- خَلَقَ الْإِنسَانَ- عَلَّمَهُ الْبَيَانَ
‘‘দয়াময় আল্লাহ তিনিই শিক্ষা দিয়েছে কুরআন, তিনিই সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তিনিই তাকে শিখিয়েছেন ভাব প্রকাশ করতে।’’ [. সূরা আর-রহমান: ১-৪।]
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে নি‘আমত দ্বারা মানুষকে ভুষিত করা হয়েছে তা হলো যুগে যুগে প্রেরিত আসমানী গ্রন্থসমূহ। সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী গ্রন্থের ধারণ করা সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন:
إِنَّا عَرَضْنَا الْأَمَانَةَ عَلَى السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَالْجِبَالِ فَأَبَيْنَ أَنْ يَحْمِلْنَهَا وَأَشْفَقْنَ مِنْهَا وَحَمَلَهَا الْإِنْسَانُ إِنَّهُ كَانَ ظَلُومًا جَهُولًا
‘‘আমি তো আসমান, যমীন ও পবর্তমালার প্রতি এই আমানত পেশ করেছিলাম, তারা তা বহন করতে অস্বীকার করল এবং তাতে শংকিত হলো, কিন্তু মানুষ তা বহন করল; সে তো অতিশয় জালিম, অতিশয় অজ্ঞ।’’ [. সূরা আল-আহযাব: ৭২।]
এসকল নি‘আমতের পিছনে উদ্দেশ্য ছিল কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন, তাঁর বিধি-বিধানের আনুগত্য করা, তাঁকে সিজদা করা প্রভৃতি। এসব অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা প্রকাশার্থে স্বয়ং রাসূল (সা) সিজদায় অবনত হয়েছেন। সহীহ মুসলিম শরীফে এসেছে, তিনি বলেন:
مجد وجهى للذي خلقه وصوره وشق يحعه وبصره تبارك الله أحسن الخالقين
‘‘আমার চেহারা সিজদা করেছে ঐ সত্তার জন্য যিনি তা সৃষ্টি করেছেন, অবয়ব দিয়েছেন এবং দিয়েছেন তাকে শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি। আল্লাহ অতীব বরকতময়, সবচেয়ে উত্তম স্রষ্টা।’’ [. মুসলিম ইব্ন হাজ্জাক, সহীত মুসলিম, হাদীস নং: ৭৭১।]
কিন্তু মানুষ অতিশয় অকৃতজ্ঞ। মহান আল্লাহ এসব অনুগ্রহের স্বীকৃতি দিতে চায় না এবং চেষ্টাও করে না। মহান আল্লাহ বলেন: إِنَّ الْإِنسَانَ لَكَفُورٌ ‘‘মানুষ তো অতিমাত্রায় অকৃতজ্ঞ।’’ [. সূরা আল-হাজ্ব: ৬৬।]
আল-কুরআন নানা ধরনের দীনি বিষয়ের বর্ণনার সাথে সাথে মানুষের বিভিন্ন প্রকারের স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য সর্ম্পকেও সংক্ষিপ্ত অথচ মূল্যবান চিত্র তুলে ধরেছে। যা সর্ব যুগের সর্বকালের সকল মানুষের মধ্যে বিদ্যমান। মানুষের এ স্বরূপগুলো স্থায়ী। কোন জাতি বা কোন গোত্রই এ সকল বৈশিষ্ট্যের বাইরে নয়।
পবিত্র কুরআনে যেসব মানুষের প্রশংসা করা হয়েছে, তেমনি নিন্দাও করা হয়েছে। তাকে একদিকে যেমন আসমান, জমিন ও ফিরিশতার চাইতেও মহীয়ান-গরীয়ান করা হয়েছে, অপরদিকে তেমনি তাকে চতুষ্পদ জন্তু, শয়তানের চেয়েও হীন ও নিকৃষ্টতর প্রাণীরূপে চিত্রিত করা হয়েছে। ফিরিশতার উপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করতে পারে এরাই, অথাপি এরা এত দুর্বল যে, নিকৃষ্টতম অবস্থানেও নেমে যেতে পারে। তাই কুরআনে তাদেরকে অত্যন্ত স্বৈরাচারী ও মুর্খরূপে চিত্রিত করা হয়েছে। এ মর্মে ইরশাদ হয়েছে:
وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيرًا مِنْ الْجِنِّ وَالْإِنسِ لَهُمْ قُلُوبٌ لَا يَفْقَهُونَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لَا يُبْصِرُونَ بِهَا وَلَهُمْ آذَانٌ لَا يَسْمَعُونَ بِهَا أُوْلَئِكَ كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ أُوْلَئِكَ هُمْ الْغَافِلُونَ
‘‘আমি তো বহু জ্বিন ও মানবকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি, তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তা দ্বারা তারা উপলব্ধি করে না, তাদের চক্ষু আছে তা দ্বারা তারা দেখে না এবং তদের কর্ণ আছে তা দ্বারা তারা শ্রবণ করে না, তারা পশুর ন্যায় বরং তারা অধিক বিভ্রান্ত, তারাই গাফিল।’’ [. সুরা আল-আ‘রাফ: ১৭৯।]
কুরআনের অন্যত্র আরো বলা হয়েছে:
لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ فِي أَحْسَنِ تَقْوِيم - ثُمَّ رَدَدْنَاهُ أَسْفَلَ سَافِلِينَ - إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَلَهُمْ أَجْرٌ غَيْرُ مَمْنُونٍ
‘‘আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি সুন্দরতম গঠনে, অত:পর আমি তাদেরকে হীনতাগ্রস্থদের হীনতমে পরিণত করি। কিন্তু তাদেরকে নয় যারা মু’মিন ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্য রয়েছে নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার।’’ [. সুরা আত-তীন: ৪-৬।]
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন