HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
আল-কুরআনের আলোকে মানুষের স্বরূপ বিশ্লেষণ
লেখকঃ ড. মোঃ আবদুল কাদের
৫
২. নেতিবাচক দিক:মানুষের স্বভাবের এমন কতিপয় দিক রয়েছে যে এগুলোর প্রভাবে মানুষ নিজ নিজ গুণাবলী ও মর্যাদা বিচ্যুৎ হয়ে অন্য নামে আখ্যায়িত হয় সেগুলোই তার নেতিবাচক দিক। এক কথায় বলতে গেলে, যেসব মৌলিক ও অসৎগুণাবলীর সংমিশ্রণ রয়েছে মানুষের স্বভাব-প্রকৃতিতে যা বর্জন করা একজন মানুষ হিসেবে সকলের কর্তব্য সেগুলো হলো:
এক. স্বার্থপরতা
মানুষ বড় Selfish বা স্বার্থপর। কোথাও বা কোন কাজে তার স্বার্থ ও সুযোগ সুবিধা জড়িয়ে না থাকলে সে কাজ সিদ্ধ করে না। এজন্যেই পবিত্র কুরআনে তাকে অসংখ্যবার জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে, যেন সে তা অর্জনের আশায় দুনিয়ায় বৈধ পথে চলাচল করে। মানুষ বিপদ আসলে সর্বদা আল্লাহকে ডাকে, আর বিপদ কেটে গেলে তাঁকে উপেক্ষা করে চলে। এ চরিত্র বর্ণনায় কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:
وَإِذَا مَسَّ الْإِنْسَانَ الضُّرُّ دَعَانَا لِجَنْبِهِ أَوْ قَاعِدًا أَوْ قَائِمًا فَلَمَّا كَشَفْنَا عَنْهُ ضُرَّهُ مَرَّ كَأَنْ لَمْ يَدْعُنَا إِلَى ضُرٍّ مَسَّهُ كَذَلِكَ زُيِّنَ لِلْمُسْرِفِينَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
‘‘আর মানুষকে যখন দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করে তখন সে শুয়ে বসে অথবা দাঁড়িয়ে আমাকে ডাকে, অত:পর আমি যখন তার দুঃখ-দৈন্য, দুরীভূত করি, সে এমন পথ অবলম্বন করে, যেন তাকে যে দুঃখ-দৈন্য, স্পর্শ করেছিল তার জন্য সে আমাকে ডাকেনি।’’ [. সূরা ইউনুস: ১২।] কুরআনে আরো এসেছে:
إِنَّ الْإِنسَانَ خُلِقَ هَلُوعًا، إِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ جَزُوعًا، وَإِذَا مَسَّهُ الْخَيْرُ مَنُوعًا
‘‘মানুষতো সৃজিত হয়েছে অতিশয় অস্থির চিত্তরূপে, যখন বিপদ তাকে স্পর্শ করে সে হয় হা-হুতাশকারী। আর যখন কল্যাণ তাকে স্পর্শ করে সে হয় অতি কৃপণ।’’ [. সূরা আল-মা‘আরিজ: ১৯-২১।]
দুই. অহংকারী
মানুষের জীবনের যাত্রা দুর্বলতা ও অসামর্থের তথা মাটি ও শুক্র জাতীয় দুটি দুর্বল ও অক্ষম উপাদান দিয়ে শুরু হলেও মানুষ অহংকারী স্বভাবের হয়ে থাকে। দুনিয়ার হিসেব অনুযায়ী বড় ধরনের কোন কল্যাণ প্রাপ্ত হলে তখন সে স্বেচ্চাচারী রূপ নিয়ে অহংকারবশত তাঁর অতীতকে ভুলে যেতে চেষ্টা করে। পবিত্র কুরআনে তাদের চিত্র ফুটে উঠেছে এভাবে:
وَلَئِنْ أَذَقْنَا الْإِنسَانَ مِنَّا رَحْمَةً ثُمَّ نَزَعْنَاهَا مِنْهُ إِنَّهُ لَيَئُوسٌ كَفُورٌ، وَلَئِنْ أَذَقْنَاهُ نَعْمَاءَ بَعْدَ ضَرَّاءَ مَسَّتْهُ لَيَقُولَنَّ ذَهَبَ السَّيِّئَاتُ عَنِّي إِنَّهُ لَفَرِحٌ فَخُورٌ
‘‘যদি আমি মানুষকে আমার নিকট হতে অনুগ্রত আস্বাদন করাই ও পরে তার নিকট হতে তা প্রত্যাহার করি তখন সে অবশ্যই হতাশ ও অকৃতজ্ঞ হবে। আর যদি দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করার পর আমি তাকে সুখ-সম্পদ আস্বাদন করাই তখন সে অবশ্যই বলবে, আমার বিপদ আপদ কেটে গেছে, আর সে তো হয় প্রফুল্ল ও অহংকারী।’’ [. সূর হুদা: ৯-১০।]
মহান আল্লাহ আরো বলেন:
وَإِذَا أَنْعَمْنَا عَلَى الْإِنسَانِ أَعْرَضَ وَنَأَى بِجَانِبِهِ وَإِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ كَانَ يَئُوسًا
‘‘আমি যখন মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করি তখন সে মুখ ফিরিয়ে লয় ও দূরে সরে যায় এবং তাকে অনিষ্ট স্পর্শ করলে সে একেবারে হতাশ হয়ে পড়ে।’’ [. সুরা বনী ইসরাইল: ৮৩।]
তিন. ঠুনকো বিশ্বাসী
মানুষের মধ্যে এমন এক ধরনের মানুষ আছে, যাদের বিশ্বাস খুবই ঠুনকো। যারা তাদের বিশ্বাসের উপর দৃঢ় থাকতে পারে না। এরা ততক্ষণ ঈমানের পথে থাকে যতক্ষণ নিরাপদ ও নির্ঝামেলায় তা থেকে ফায়দা লাভ করা যায়। আর যদি কোনোরূপ পরীক্ষা বা কাঠিন্য আরোপ করা হয়, সাথে সাথে তারা ঈমান ত্যাগ করতে দ্বিধা করে না। এ মর্মে ইরশাদ হয়েছে:
وَمِنْ النَّاسِ مَنْ يَعْبُدُ اللهَ عَلَى حَرْفٍ فَإِنْ أَصَابَهُ خَيْرٌ اطْمَأَنَّ بِهِ وَإِنْ أَصَابَتْهُ فِتْنَةٌ انقَلَبَ عَلَى وَجْهِهِ خَسِرَ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةَ ذَلِكَ هُوَ الْخُسْرَانُ الْمُبِينُ
‘‘মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহর ইবাদত করে দ্বিধার সাথে। তার মঙ্গল তাতে তার চিত্ত প্রশান্ত হয় এবং কোন বিপর্যয় ঘটলে সে তার পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়। সে ক্ষতিগ্রস্থ হয় দুনিয়াতে ও আখিরাতে; এটাই তো সুস্পষ্ট ক্ষতি।’’ [. সূরা আল-হাজ্জ: ১১।]
ইবন আববাস রা. আলোচ্য আয়াত অবতীর্ণের প্রেক্ষাপটে বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন: এক ব্যক্তি মদিনায় বাস করত। যদি তার স্ত্রীর গর্ভে পুত্র সন্তান জন্মলাভ করত এবং তার পশুটি কোন বাচ্চা প্রসব করতে তাহলে সে বলত, দীন ইসলাম বড় চমৎকার। আর যদি তার স্ত্রীর গর্ভে পুত্রসন্তান না জন্মাত এবং তার পশুটিরও বাচ্চা না হত তাহলে সে বলত দীন ইসলাম খারাপ ও অপয়া। [. ইমাম বুখারী, সহীহ বুখারী, কিতাবুত্তাফসীর, হাদীস নং ৪৩৮১।]
কুরআনের অন্যত্র আরো ইরশাদ হয়েছে:
وَمِنْ النَّاسِ مَنْ يَقُولُ آمَنَّا بِاللهِ فَإِذَا أُوذِيَ فِي اللهِ جَعَلَ فِتْنَةَ النَّاسِ كَعَذَابِ اللهِ وَلَئِنْ جَاءَ نَصْرٌ مِنْ رَبِّكَ لَيَقُولُنَّ إِنَّا كُنَّا مَعَكُمْ أَوَلَيْسَ اللهُ بِأَعْلَمَ بِمَا فِي صُدُورِ الْعَالَمِينَ
‘‘মানুষের মধ্যে কতক লোক বলে, আমরা আল্লাহর উপর বিশ্বাস করি, কিন্তু আল্লাহর পথে যখন তারা নিগৃহীত হয়, তখন তারা মানুষের পীড়নকে আল্লাহর শাস্তির মত গণ্য করে এবং তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে কোন সাহায্য আসলে তারা বলতে থাকে, আমরা তো তোমাদের সাথেই ছিলাম। বিশ্ববাসীর অন্ত:করণে যা আছে, আল্লাহ কি তা সম্যক অবগত নন?’’ [. সুরা আল-আনকাবুত: ১০।]
চার. ভীরু কাপুরুষ
কিছু লোক এমন আছে যারা সত্যকে ঘৃণা ও অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখে থাকে। সত্যের সাথে পরিচিত হতে চায় না। ফলে একদিকে তাদের জিদ ও হঠকারিতা সত্য থেকে বিরত রাখে, অপরদিকে তাদেরকে কাপুরুষতায় পেয়ে বসে। যার কারণে তারা কখনো সত্যের মুখোমুখী হওয়ার সাহস পর্যন্ত পায় না। মহান আল্লাহর ভাষায়:
يُجَادِلُونَكَ فِي الْحَقِّ بَعْدَ مَا تَبَيَّنَ كَأَنَّمَا يُسَاقُونَ إِلَى الْمَوْتِ وَهُمْ يَنظُرُونَ
‘‘সত্য স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হওয়ার পরও তারা তোমার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয়। মনে হচ্ছিল তারা যেন মৃত্যুর দিকে চালিত হচ্ছে, আর তারা যেন তা প্রত্যক্ষ করছে।’’ [. সূরা আল-আনফাল: ৬।]
পাঁচ. হাসি-কৌতুক উদ্রেককারী
কতিপয় মানুষের কর্মকান্ড হাসি-তামাশায় উদ্রেক করে মাত্র। তারা খুব আজব প্রকৃতির। অগ্রপশ্চাৎ না ভেবেই সত্য থেকে পলায়নের চেষ্টায় তার বিভোর হয়ে পড়ে। মুলত: তারা সত্য গোপনকারী। কুরআনে এসেছে:
فَمَا لَهُمْ عَنْ التَّذْكِرَةِ مُعْرِضِينَ، كَأَنَّهُمْ حُمُرٌ مُسْتَنْفِرَةٌ ، فَرَّتْ مِنْ قَسْوَرَةٍ
‘‘তাদের কি হলো যে, তারা উপদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়? যেন তারা ইতস্তত বিক্ষিপ্ত গর্দভ, হট্টগোলের কারণে পলায়নপর।’’ [. সূর আল মুদ্দাছছির।]
ছয়. প্রশংসাকাঙ্খী
মানুষ সর্বদা প্রশংসিত হতে পছন্দ করে। তবে এক্ষেত্রে তারা নিজেরা করে না এমন বিষয়েও প্রশংসা কামনা করে। তাদের সম্পর্কে কুরআনে এসেছে:
وَيُحِبُّونَ أَنْ يُحْمَدُوا بِمَا لَمْ يَفْعَلُوا فَلَا تَحْسَبَنَّهُمْ بِمَفَازَةٍ مِنْ الْعَذَابِ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
‘‘যা নিজেরা করেনি এমন কাজের জন্য প্রশংসিত হতে ভালবাসে যারা, তারা শাস্তি হতে মুক্তি পাবে-এরূপ তুমি কখনো মনে করো না। তাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি রয়েছে।’’ [. সূরা আলে ইমরান: ১৮৮।]
সাত. সুবিধাবাদী
এমন কিছু লোক আছে, যারা সুবিধা পেলে একদলে ভিড়ে যায় আবার সেখানে অসুবিধা হলে অন্য দলে যোগ দেয়। মহান আল্লাহ বলেন:
الَّذِينَ يَتَرَبَّصُونَ بِكُمْ فَإِنْ كَانَ لَكُمْ فَتْحٌ مِنْ اللهِ قَالُوا أَلَمْ نَكُنْ مَعَكُمْ وَإِنْ كَانَ لِلْكَافِرِينَ نَصِيبٌ قَالُوا أَلَمْ نَسْتَحْوِذْ عَلَيْكُمْ وَنَمْنَعْكُمْ مِنْ الْمُؤْمِنِينَ
‘‘যারা তোমাদের অমঙ্গলের প্রতীক্ষায় থাকে তারা আল্লাহর পক্ষ হতে তোমাদের জয় হলে বলে, আমরা কি তোমাদের সঙ্গে ছিলাম না। আর যদি কাফিরদের কিছু বিজয় হয়, তবে তারা বলে আমরা কি তোমাদের বিরুদ্ধে প্রবল ছিলাম না এবং আমরা কি তোমাদেরকে মুমিনদের হাত হতে রক্ষা করিনি? আল্লাহ কিয়ামতের দিন তোমাদের মধ্যে বিচার মীমাংসা করবেন এবং আল্লাহ কখনই মু’মিনরেদ বিরুদ্ধে কাফিরদের জন্য কোন পথ রাখবেন না।’’ [. সূরা আন নিসা: ১৪১।]
আট. ধুর্ত প্রকৃতির
মানুষের মধ্যে এমন কতিপয় মানুষ আছে যারা অত্যন্ত ধূর্ত ও চালাক প্রকৃতির। সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত কোন কাজ নিজেরা করবে এবং তা থেকে ফায়দা নেবে। যখনই সেই কাজ অন্য কেউ করে তখন তা অস্বীকার করে বসে। আল-কুরআন বিষয়টি চিত্রিত করেছে এভাবে:
وَلَمَّا جَاءَهُمْ كِتَابٌ مِنْ عِنْدِ اللهِ مُصَدِّقٌ لِمَا مَعَهُمْ وَكَانُوا مِنْ قَبْلُ يَسْتَفْتِحُونَ عَلَى الَّذِينَ كَفَرُوا فَلَمَّا جَاءَهُمْ مَا عَرَفُوا كَفَرُوا بِهِ فَلَعْنَةُ اللهِ عَلَى الْكَافِرِينَ
‘‘তাদের নিকট যা আছে আল্লাহর নিকট হতে তার সমর্থক কিতাব আসল; যদি পূর্বে সত্য প্রত্যাখানকারীদের বিরুদ্ধে তারা এর সাহায্যে বিজয় প্রার্থনা করত, তবুও তারা যা জ্ঞাত ছিল তার যখন তাদের নিকট আসল তখন তারা সেটা প্রত্যাখান করল। সুতরাং কাফিরদের প্রতি আল্লাহর লা’নত। [. সূরা আল-বাকারা: ৮৯।]
তাদের এ ধরনের আরো একটি চরিত্র বর্ণনায় কুরআনে এসেছে:
وَإِذَا دُعُوا إِلَى اللهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ إِذَا فَرِيقٌ مِنْهُمْ مُعْرِضُونَ، وَإِنْ يَكُنْ لَهُمْ الْحَقُّ يَأْتُوا إِلَيْهِ مُذْعِنِينَ
‘‘ফয়সালা করার জন্য যখন তাদেরকে আল্লাহ ও রাসূলের দিকে আহবান করা হয়, তখন তাদের একদল মুখ ফিরিয়ে নেয়। আর সত্য তাদের স্বপক্ষে হলে তারা বিনীতভাবে রাসূলের কাছে ছুটে আসে।’’ [. সূরা আন-নূর: ৪৮-৪৯।]
এমন কিছু মানুষ আছে যারা শুধু আকৃতিতেই মানুষ। এছাড়া মনুষত্বের কোন কিছু তাদের মাঝে পাওয়া যায় না। এ যেন চলমান জড় পদার্থ, যা দেখে লোকদের হাসি পায়। মূলত: এটি মুনাফিকদের অত্যন্ত আকর্ষর্ণীয় একটি চিত্র। যা বেদনা মিশ্রিত কৌতুক। মহান আল্লাহ বলেন:
وَإِذَا رَأَيْتَهُمْ تُعْجِبُكَ أَجْسَامُهُمْ وَإِنْ يَقُولُوا تَسْمَعْ لِقَوْلِهِمْ كَأَنَّهُمْ خُشُبٌ مُسَنَّدَةٌ
‘‘তুমি যখন তাদেরকে দেখ, তখন তাদের দেহাবয়র অত্যন্ত আকর্ষণীয় মনে হয়। আর যদি তারা কথা বলে তুমি তাদের কথা শোন। কিন্তু তারা তো প্রাচীরে ঠেকানো কাঠের মত।’’ [. সূরা আল-মুনাফিকুন: ৪।]
দশ. গোপনে সত্য উপেক্ষাকারী
সমাজে এমন কতিপয় মানুষ পাওয়া যায় যারা নিজে যেমন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না, ঠিক তেমনিভাবে সত্যকে মেনে নিতেও পারে না। প্রতি মুর্হূতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে দুদোল্যমান থাকে। এ ধরনের লোক চুপি চুপি সত্য থেকে বিমুখ হতে পছন্দ করে। মূলত: এটি দুর্বল এক শ্রেণীর মুনাফিকের চরিত্র। তাদের সম্পর্কে কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:
وَإِذَا مَا أُنزِلَتْ سُورَةٌ نَظَرَ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ هَلْ يَرَاكُمْ مِنْ أَحَدٍ ثُمَّ انصَرَفُوا صَرَفَ اللهُ قُلُوبَهُمْ بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لَا يَفْقَهُونَ
‘‘এবং যখনই কোন সূরা অবতীর্ণ হয়, তখন তারা একে অপরের দিকে তাকায় এবং ইশারায় জিজ্ঞেস করে তোমাদেরকে কেউ লক্ষ্য করতেছে কি? অত:পর তারা সরে পড়ে। আল্লাহ তাদের হৃদয়কে সত্য বিমুখ করেছেন, কারণ তারা এমন এক সম্প্রদায় যাদের বোধশক্তি নেই।’’ [. সূরা আত-তাওবা: ১২৭।]
এগার. দ্বিমুখী নীতি
এমন কতক মানুষ রয়েছে যারা Double Standard অবলম্বন করে সমাজে বিচরণ করে। তারা নীতি নৈতিকতার তোয়াক্কা করে না। বরং সর্বদা দ্বিমুখী নীতিতে বিশ্বাসী। যখন যেখানে যায় অবস্থান তখন সেখানে তার আপন জনে পরিণত হয়। আর অন্যত্র গেলে তা প্রত্যাখ্যান করে। এ মর্মে কুরআনে এসেছে:
وَإِذَا لَقُوا الَّذِينَ آمَنُوا قَالُوا آمَنَّا وَإِذَا خَلَوْا إِلَى شَيَاطِينِهِمْ قَالُوا إِنَّا مَعَكُمْ إِنَّمَا نَحْنُ مُسْتَهْزِئُونَ
‘‘যখন তারা মু’মিনদের স্পর্শে আসে তখন বলে আমরা ঈমান এনেছি, আর যখন তারা নিভৃতে তাদের শয়তানের সাথে মিলিত হয় তখন বলে, আমরাতো তোমাদের সাথেই রয়েছি; আমরা শুধু তাদের সাথে ঠাট্টা-তামাশা করে থাকি।’’ [. সূরা আল-বাকারা: ১৪।]
কুরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে:
مُذَبْذَبِينَ بَيْنَ ذَلِكَ لَا إِلَى هَؤُلَاءِ وَلَا إِلَى هَؤُلَاءِ
‘‘দোটানায় দোদুল্যমান, না এদের দিকে না ওদের দিকে।’’ [. সূরা আন-নিসা: ১৪৩।]
বার. নিবোর্ধ প্রতারক
কিছু লোক আছে যারা প্রতারণা ও ভন্ডামীতে লিপ্ত। নিজেদেরকে যদিও তারা চালাক মনে করে কিন্তু তাদের মাথায় ভুষি ছাড়া আর কিছুই নেই। তারা মানুষকে ঠকানোর চেষ্টা করে কিন্তু মূলত: তারা নিজেরাই নিজেদের ঠকাচ্ছে। কুরানের ভাষায়:
وَمِنْ النَّاسِ مَنْ يَقُولُ آمَنَّا بِاللهِ وَبِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَمَا هُمْ بِمُؤْمِنِينَ، يُخَادِعُونَ اللهَ وَالَّذِينَ آمَنُوا وَمَا يَخْدَعُونَ إِلَّا أَنفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُونَ
‘‘আর মানুষের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে, যারা বলে, আমরা আল্লাহ ও আখিরাতে ঈমান এনেছি; কিন্তু তারা মু’মিন নয়। আল্লাহ এবং মু’মিনদেরকে তারা প্রতারিত করতে চায়। অথচ তারা যে নিজেদেরকে ভিন্ন কাউকে প্রতারিত করে না, এটা তারা বুঝতে পারে না।’’ [. সূরা আল-বাকার: ৮ ও ৯।]
তের. তর্ক প্রিয়
মানুষ স্বভাবতই তর্ক প্রিয়। মানব উম্মেষকাল থেকে মুহাম্মদ (স.) পর্যন্ত তর্কের অস্তিত্ব বিদ্যমান। আল্লাহ রাববুল আলামীন মানব সৃষ্টির সূচনালগ্নে একদল ফিরিশতার সাথে বিতাড়িত শয়তানের সাথে এবং বিভিন্ন উম্মত ও তার কাওমের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বিতর্কের বর্ণনা পবিত্র কুরআনুল কারীমে বিধৃত করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন:
وَكَانَ الْإِنسَانُ أَكْثَرَ شَيْءٍ جَدَلًا
‘‘ মানুষ অধিকাংশ ব্যাপারে তর্ক প্রিয়।’’ [. সূরা আল-কাহফ: ৫৪।]
চৌদ্দ. ঝগড়াটে
কিছু লোক আছে যারা ঝগড়া করতে পছন্দ করে। সত্য হোক কিংবা মিথ্যা, জেনে হোক কিংবা না জেনে ঝগড়া বা গন্ডগোল তারা করবেই। কুরআনে এসেছে:
هَا أَنْتُمْ هَؤُلَاءِ حَاجَجْتُمْ فِيمَا لَكُمْ بِهِ عِلْمٌ فَلِمَ تُحَاجُّونَ فِيمَا لَيْسَ لَكُمْ بِهِ عِلْمٌ وَاللهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
‘‘হ্যাঁ, তোমরা তো সেসব লোক, যে বিষয়ে তোমাদের সামান্য জ্ঞান আছে সে বিষয়ে তোমারাই তো তর্ক করেছ, তবে যে বিষয়ে তোমাদের কোন জ্ঞান নেই সে বিষয়ে কেন কর্ত করছ? আল্লাহ জ্ঞাত আছেন এবং তোমরা জ্ঞাত নও।’’ [. সূরা আল-ইমরান: ৬৬।]
এমর্মে অন্যত্রে ইরশাদ হয়েছে:
وَمِنْ النَّاسِ مَنْ يُجَادِلُ فِي اللهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَلَا هُدًى وَلَا كِتَابٍ مُنِيرٍ
‘‘মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহ সম্বন্ধে বিতন্ডা করে, তাদের না আছে জ্ঞান, না আছে পথ নির্দেশ, না আছে কোন দীপ্তিমান কিতাব।’’ [. সূরা আল-হাজ্ব: ৮।]
পনের. বিপর্যয় সৃষ্টিকারী
কতক মানুষের স্বভাব হলো সমাজে বিপর্যয় সৃষ্টি করার মাধ্যমে শান্তি বিঘ্নিত করা। তারা না জেনে ও না বুঝে অনেক সময় এ ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টির পায়তারা করে। যখন তাদেরকে এ থেকে বিরত থাকতে বলা হয় তখন তারা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ لَا تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ قَالُوا إِنَّمَا نَحْنُ مُصْلِحُونَ، أَلَا إِنَّهُمْ هُمْ الْمُفْسِدُونَ وَلَكِنْ لَا يَشْعُرُونَ
‘‘তাদেরকে যখন বলা হয়, পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করো না। তারা বলে, আমরাই তো শান্তি স্থাপনকারী। সাবধা! এরাই অশান্তি সৃষ্টিকারী। কিন্তু তারা বুঝতে পারে না।’’ [. সূরা আল-বাকারা: ১১-১২।]
ঘোল. ওজর আপত্তিকারী
মানব জীবনের যাবতীয় কার্যাবলী সাধারণত দু’টি অবস্থায় সংঘটিত হয়। একটি সহজ অবস্থা অপরটি হলো কঠিন অবস্থা বা দুঃখ দুর্দশাগ্রস্থ হওয়া। মানুষ সর্বদা সহজতর অবস্থা কামনা করে থাকে। কিন্তু যখনই কোন কাঠিন্য ও দুঃখ-দুর্দশা তাকে স্পর্শ করে তখন সে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে এবং মিথ্যে ওজর আপত্তি পেশ করে তা থেকে বিরত থাকর চেষ্টা করে। পবিত্র কুরআনে নিম্নোক্তভাবে বিষয়টি উপস্থাপিত হয়েছে:
لَوْ كَانَ عَرَضًا قَرِيبًا وَسَفَرًا قَاصِدًا لَاتَّبَعُوكَ وَلَكِنْ بَعُدَتْ عَلَيْهِمْ الشُّقَّةُ وَسَيَحْلِفُونَ بِاللهِ لَوْ اسْتَطَعْنَا لَخَرَجْنَا مَعَكُمْ يُهْلِكُونَ أَنفُسَهُمْ وَاللهُ يَعْلَمُ إِنَّهُمْ لَكَاذِبُونَ
‘‘আশু সম্পদ লাভের সম্ভাবনা থাকলে ও সফর সহজ হলে তারা নিশ্চয়ই তোমার অনুসরণ করত, কিন্তু তাদের নিকট যাত্রাপথ সুদীর্ঘ মনে হল। তারা অচিরেই আল্লাহর নামে শপথ করে বলবে, পারলে আমরা নিশ্চয়ই তোমাদের সাথে বের হতাম। তারা নিজেদেরকে ধ্বংস করে। আল্লাহ জানেন তারা অবশ্যই মিথ্যাবাদ।’’ [. সূরা আত-তাওবা: ৪২।]
সতের. ভীতু বেহায়া
ভয়-ভীতি মানুষের প্রাকৃতিক স্বভাব বটে। কিন্তু এ ভীতির সঙ্গে অনেক সময় নির্লজ্জ ও ভীতু বেহায়া স্বভাবে পরিণত করে। বস্ত্তত: মিথ্যা আশ্রয় নেয়ার জন্য এটি মানুষের অন্যতম কুটকৌশল। আল্লাহ তা’আলা বলেন:
وَلَوْ تَرَى إِذْ وُقِفُوا عَلَى النَّارِ فَقَالُوا يَالَيْتَنَا نُرَدُّ وَلَا نُكَذِّبَ بِآيَاتِ رَبِّنَا وَنَكُونَ مِنْ الْمُؤْمِنِينَ - بَلْ بَدَا لَهُمْ مَا كَانُوا يُخْفُونَ مِنْ قَبْلُ وَلَوْ رُدُّوا لَعَادُوا لِمَا نُهُوا عَنْهُ وَإِنَّهُمْ لَكَاذِبُونَ
‘‘তুমি যদি দেখতে পেতে যখন তাদেরকে অগ্নির পাশে দাঁড় করানো হবে এবং তারা বলবে, হায়! যদি আমাদের প্রত্যাবর্তন ঘটত তবে আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিদর্শনকে অস্বীকার করতাম না এবং আমরা মু’মিনদের অন্তর্ভূক্ত হতাম। না, পূর্বে তারা যা গোপন করত তা যখন তাদের নিকট প্রকাশ পেয়েছে এবং তারা প্রত্যাবর্তিত হলেও যা করবে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল পুনরায় তারা তাই করত। আর নিশ্চয় তারা মিথ্যাবাদী। [. সূরা আল-আন’আম: ২৭-২৮।]
আঠার. স্বেচ্ছাচারী
অহংকারবশে মানুষ অনেক সময় স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠে। এরা নিজেদেরকে কোন নির্দিষ্ট পথের পথিক কিংবা কোন দল বা জামাআতের অন্তর্ভূক্তও মনে করে না। এ মর্মে কুরআনে এসেছে:
أَوَكُلَّمَا عَاهَدُوا عَهْدًا نَبَذَهُ فَرِيقٌ مِنْهُمْ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ
‘‘তবে কি যখনই তারা অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছে, তখনই তাদের কোন একদল তা ভঙ্গ করেছে? বরং তাদের অধিকাংশই বিশ্বাস করে না।’’ [. সূরা আল-বাকারা: ১০০।]
উনিশ: গোঁয়ার ও স্থবির প্রকৃতির
সমাজে এমন এক শ্রেণীর মানুষ রয়েছে যারা অত্যন্ত গোঁয়ার এবং স্থবির প্রকৃতির। তারা নিজেরা যা বুঝে অন্যেরা তার ধারে পৌঁছাতেও সক্ষম নয় বলে ধারনা পোষণ করে। ইসলামের প্রাথমিক যুগে এ ধরনের গোর্য়াতুমির জন্যেই একশ্রেণীর মানুষ ইসলামের সুশীতল ছায়া থেকে বঞ্চিত ছিল। মনে হয় যেন তাদের পা গুলো পাথর দিয়ে তৈরী। তারা এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের কোন চেষ্টা করেনি। মহান আল্লাহ তাদের স্বরূপ সম্পর্কে বলেন:
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ اتَّبِعُوا مَا أَنزَلَ اللهُ قَالُوا بَلْ نَتَّبِعُ مَا أَلْفَيْنَا عَلَيْهِ آبَاءَنَا أَوَلَوْ كَانَ آبَاؤُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ شَيْئًا وَلَا يَهْتَدُونَ
‘‘আর যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তা তোমরা অনুসরণ কর, তারা বলে, না বরং আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে যাতে পেয়েছি তার অনুসরণ করব। এমনকি তাদের পিতৃপুরুষগণ যদিও কিছু বুঝত না এবং তারা সৎপথে পরিচালিত ছিল না, তথাপিও?’’ [. সূরা আল-বাকারা: ১৭০।]
বিশ. পার্থিব জীবনের মোহে মোহগ্রস্থ:
এমন কিছু লোক আছে যারা পার্থিব জীবনকেই বেশী গুরুত্ব দেয়। যেখানেই থাকুক না কেন জৈবিক চাহিদাটাই তাদের কাছে বড়। তারা একে এত বেশী গুরুত্ব দেয়, প্রয়োজনে লাঞ্চনার জীবন যাপন করতে রাজি তথাপিও দুনিয়ার সহায়-সম্পদ ও লোভ-লালসায় মত্ত থাকা থেকে বিরত থাকতে পারে না। ইরশাদ হয়েছে:
وَلَتَجِدَنَّهُمْ أَحْرَصَ النَّاسِ عَلَى حَيَاةٍ وَمِنْ الَّذِينَ أَشْرَكُوا يَوَدُّ أَحَدُهُمْ لَوْ يُعَمَّرُ أَلْفَ سَنَةٍ وَمَا هُوَ بِمُزَحْزِحِهِ مِنْ الْعَذَابِ أَنْ يُعَمَّرَ وَاللهُ بَصِيرٌ بِمَا يَعْمَلُونَ
‘‘তুমি নিশ্চয় তাদেরকে জীবনের প্রতি সহজ সমস্ত মানুষ, এমনকি মুশরিক অপেক্ষা অধিক লোভী দেখতে পাবে। তাদের প্রত্যেক আকাঙ্খা করে যদি সহস্র বছর আয়ু দেয়া হত; কিন্তু দীর্ঘায়ু তাকে শান্তি হতে দূরে রাখতে পারবে না। তারা যা করে আল্লাহ তার দ্রষ্টা।’’ [. সূরা আল-বাকারা: ৯৬।]
অন্যত্র আরো এসেছে:
إِنَّ هَؤُلَاءِ يُحِبُّونَ الْعَاجِلَةَ وَيَذَرُونَ وَرَاءَهُمْ يَوْمًا ثَقِيلًا
‘‘নিশ্চয় তারা ভালবাসে পার্থিব জীবনকে এবং তারা পরবর্তী কঠিন দিবসকে উপেক্ষা করে চলে।’’ [. সূরা আল-ইনসান: ২৭।]
একুশ: কৃপন
যারা প্রয়োজনের মুর্হুতে খরচ করে না, তারা কৃপন। যদি কেউ খরচ করার পর ক্ষতিগ্রস্থ হয় তখন সে বিজয়ের হাসি হেসে বলে: যাক আমি খরচ না করে ভালোই করেছি। আমার টাকাগুলো রয়ে গেল। আর যদি জিহাদে কোন কল্যাণ লাভ হয় তখন আক্ষেপ করে বলে: হায়! যদি আমিও খরচ করতাম তবে লাভ হত। ইরশাদ হয়েছে:
وَإِنَّ مِنْكُمْ لَمَنْ لَيُبَطِّئَنَّ فَإِنْ أَصَابَتْكُمْ مُصِيبَةٌ قَالَ قَدْ أَنْعَمَ اللهُ عَلَيَّ إِذْ لَمْ أَكُنْ مَعَهُمْ شَهِيدًا، وَلَئِنْ أَصَابَكُمْ فَضْلٌ مِنَ اللهِ لَيَقُولَنَّ كَأَنْ لَمْ تَكُنْ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُ مَوَدَّةٌ يَا لَيْتَنِي كُنتُ مَعَهُمْ فَأَفُوزَ فَوْزًا عَظِيمًا
‘‘তোমাদের মধ্যে এমন কতক লোক আছে, যে গড়িমসি করবেই। তোমাদের কোন মুসীবত হলে সে বলবে, তাদের সঙ্গে না থাকায় আল্লাহ আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। আর তোমাদেরৃ প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ হলে, যেন তোমদের ও তার মধ্যে কোন সম্পর্ক নাই এমনভাবে বলবেই, হায়! যদি তাদের সাথে থাকতাম তবে আমিও বিরাট সাফল্য লাভ করতাম।’’ [. সূরা আন-নিসা: ৭২-৭৩।]
বাইশ. ভেরত ও বাইরের বৈপরিত্য
কিছু লোক আছে যাদের বাইরের ও ভেতরের কোন মিল নেই। মনে হয় সে একজন নয় দুজন মানুষ। এ মর্মে মহান আল্লাহ বলেন:
وَمِنْ النَّاسِ مَنْ يُعْجِبُكَ قَوْلُهُ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيُشْهِدُ اللهَ عَلَى مَا فِي قَلْبِهِ وَهُوَ أَلَدُّ الْخِصَامِ ، وَإِذَا تَوَلَّى سَعَى فِي الْأَرْضِ لِيُفْسِدَ فِيهَا وَيُهْلِكَ الْحَرْثَ وَالنَّسْلَ وَاللهُ لَا يُحِبُّ الْفَسَادَ
‘‘আর মানুষের মধ্যে এমন ব্যক্তি আছে, পার্থিব জীবন সম্পর্কে যার কথাবার্তা তোমাকে চমৎকার করে এবং তার অন্তরে যা আছে সে সম্বন্ধে সে আল্লাহকে সাক্ষী রাখে। প্রকৃতপক্ষে সে ভীষণ কলহপ্রিয়। যখন সে প্রস্থান করে তখন সে পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টির এবং শষ্যক্ষেত্র ও জীবজন্তু নিপাতের চেষ্টা করে। আর আল্লাহ অশান্তি পছন্দ করেন না।’’ [. সূরা আল বাকারা: ২০৪-২০৫।]
তেইশ. স্বল্প বুদ্ধি সম্পন্ন
কিছু লোক এমন স্বল্প বুদ্ধির হয়ে থাকে, তাদের সামনে কি বলা হলো না হলো সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ উদাসীন। কুরআনের ভাষায়:
وَمِنْهُمْ مَنْ يَسْتَمِعُ إِلَيْكَ حَتَّى إِذَا خَرَجُوا مِنْ عِنْدِكَ قَالُوا لِلَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ مَاذَا قَالَ آنِفًا
‘‘তাদের মধ্যে কতক লোক আপনার কথার দিকে কান পাতে ঠিকই কিন্তু বাইরে বের হওয়া মাত্র যারা শিক্ষিত তাদেরকে বলে: এই মাত্র তিনি কি বললেন?’’ [. সূরা মুহাম্মদ: ১৬।]
চবিবশ: মুমূর্ষু অবস্থায় তাওবাকারী
তাওবা( توبة ) অর্থ- অনুশোচনা, অনুতাপ, প্রত্যাবর্তন, ক্ষমা। [. ড. মুহাম্মদ ফজলুর রহমান, প্রাগুক্ত, পৃ. ২৩৪।] মানুষ সাধারণত অপরাধ প্রবণ। কোনো না কোনভাবে সে অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে। মহান আল্লাহ তা থেকে পরিত্রাণের জন্য তাওবার ব্যবস্থা রেখেছেন।
আর এটি অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পরপরই তাৎক্ষণিকভাবে করতে হয়। অথচ কতিপয় লোক ইচ্ছে মাফিক গোটা জিন্দেহী অন্যায় পথে যাপন করে মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্তে তাওবা করে। কিন্তু তাদের এ তাওবা গ্রহণযোগ্য নয়। এ মর্মে ইরশাদ হয়েছে:
إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِنْ قَرِيبٍ فَأُوْلَئِكَ يَتُوبُ اللهُ عَلَيْهِمْ وَكَانَ اللهُ عَلِيمًا حَكِيمًا، وَلَيْسَتْ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ حَتَّى إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمْ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الْآنَ وَلَا الَّذِينَ يَمُوتُونَ وَهُمْ كُفَّارٌ أُوْلَئِكَ أَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا
‘‘আল্লাহ অবশ্যই সেসব লোকদের তাওবা কবুল করবেন, যারা ভুলবশত মন্দ কাজ করে এবং সত্বর তওবা করে। এরাই তারা, যাদের তওবা আল্লাহ কবুল করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। তওবা তাদের জন্য নয় যারা আজীবন মন্দ কাজ করে। অবশেষে তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হলে সে বলে, আমি এখন তওবা করছি এবং তাদের জন্য নয় যাদের মৃত্যু হয় কাফির অবস্থায়। এরাই তারা যাদের জন্য মর্মস্ত্তদ শাস্তির ব্যবস্থা করেছি।’’ [. সূরা আল-নিসা: ১৭-১৮।]
পঁচিশ. তাড়াহুড়া প্রিয়
মানুষ সৃষ্টিগতভাবেই ত্বরাপ্রবণ। কোন কর্মের ত্বরিত ফলভোগে বিশ্বাসী। ফলে সর্বদা তাড়াহুড়া করে কোন কিছু অর্জনকেই বেশী প্রাধান্য দিয়ে থাকে। তবে এটি সমুচিত নয়। কুরআনে এ চরিত্রের বর্ণনায় এসেছে:
خُلِقَ الْإِنسَانُ مِنْ عَجَلٍ سَأُرِيكُمْ آيَاتِي فَلَا تَسْتَعْجِلُونِي
‘‘মানুষ সৃষ্টিগতভাবে ত্বরাপ্রবণ, শীঘ্রই আমি তোমাদেরকে আমার নির্দেশাবলী দেখাব; সুতরাং তোমরা আমাকে ত্বরা করতে বলো না।’’ [. সূরা আল-আম্বিয়া: ৩৭।] অন্যত্র মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন:
وَكَانَ الْإِنسَانُ عَجُولًا
‘‘মানুষতো অতি মাত্রায় ত্বরাপ্রিয়।’’ [. সূরা বনী ইসরাইল: ১১।]
পরিশেষে বলা যায় যে, মানুষ এমন এক প্রাণী যাকে মহান আল্লাহ নিজের পছন্দ মোতাবেক সৃষ্টি করেছেন, বানিয়েছেন দুনিয়ায় তার খলিফা বা প্রতিনিধি। তার প্রকৃতির মধ্যে রয়েছে আল্লাহকে চেনার, তার স্বরূপ উপলব্ধির যোগ্যতা। মানুষ জন্মগতভাবেই স্বাধীন, তার মধ্যে রয়েছে বিশ্বস্ততা এবং নিজের প্রতি ও সারা বিশ্বের প্রতি দায়িত্বানুভুতি। প্রকৃতি, আকাশ ও পৃথিবীর উপর আধিপত্য বিস্তারের যোগ্যতা দান করে মানুষকে করা হয়েছে ধন্য ও মহিমান্বিত। মানুষের মধ্যে রয়েছে ভাল ও মন্দের প্রতি ঝোক প্রবাণতা। মহত্ব ও মর্যাদা তার সহজাত গুণাবলী। মানুষের যোগ্যতা ও সামর্থ সীমাহীন জ্ঞান অর্জন ও অর্জিত জ্ঞানের প্রয়োগ ও উভয় ক্ষেত্রেই। মহান আল্লাহর অসংখ্য নি‘আমত প্রাপ্ত এ প্রাণীর আল্লাহ এবং আল্লাহ কেন্দ্রিক চিন্তাধারা ছাড়া অন্য কোন কিছুর লালন সমূচিত নয়। পবিত্র কুরআনে তাদের সৃষ্টির রহস্য, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, কর্মপন্থা ও প্রদত্ত নি‘আমতরাজির বর্ণনাসহ স্ব-নামে (ইনসান) একটি সূরার অবতারণা হয়েছে, যার নির্দেশনার অনুসরণ ও অনুকরণে মানুষ পেতে পারে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি। এ মর্মে মহান আল্লাহ ঘোষণা দিয়েছেন-‘‘ইহা এক উপদেশ, অতএব, যার ইচ্ছা সে তার প্রতিপালকের দিকে পথ অবলম্বন করুক।’’ [. মহান আল্লাহ বলেন: إِنَّ هَذِهِ تَذْكِرَةٌ فَمَنْ شَاءَ اتَّخَذَ إِلَى رَبِّهِ سَبِيلًا (সূরা আল-ইনসান: ২৯)]
আলোচ্য প্রবন্ধে মানুষের স্বরূপ উদঘাটনে যেসব আয়াতের উল্লেখ করা হয়েছে মূলত: তার অধিকাংশই একটি বিশেষ অবস্থার প্রেক্ষিতে অবতীর্ণ হয়েছিল। কিন্তু এর মাধ্যমে মানুষের জীবন্ত ও বাস্তব এমন কিছু চিত্র অংকিত হয়েছে যা বিষয়বস্ত্তর দিক থেকে অলৌকিক ও চিরন্তর। কেননা এ চিত্রগুলো স্থান ও কালের আবর্তনে শতাব্দীর পর শতাব্দী চক্রাকারে আবর্তিত হচ্ছে এবং তা সর্বদাই জীবন্ত, প্রাণবন্ত ও মূর্তমান।
এক. স্বার্থপরতা
মানুষ বড় Selfish বা স্বার্থপর। কোথাও বা কোন কাজে তার স্বার্থ ও সুযোগ সুবিধা জড়িয়ে না থাকলে সে কাজ সিদ্ধ করে না। এজন্যেই পবিত্র কুরআনে তাকে অসংখ্যবার জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে, যেন সে তা অর্জনের আশায় দুনিয়ায় বৈধ পথে চলাচল করে। মানুষ বিপদ আসলে সর্বদা আল্লাহকে ডাকে, আর বিপদ কেটে গেলে তাঁকে উপেক্ষা করে চলে। এ চরিত্র বর্ণনায় কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:
وَإِذَا مَسَّ الْإِنْسَانَ الضُّرُّ دَعَانَا لِجَنْبِهِ أَوْ قَاعِدًا أَوْ قَائِمًا فَلَمَّا كَشَفْنَا عَنْهُ ضُرَّهُ مَرَّ كَأَنْ لَمْ يَدْعُنَا إِلَى ضُرٍّ مَسَّهُ كَذَلِكَ زُيِّنَ لِلْمُسْرِفِينَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
‘‘আর মানুষকে যখন দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করে তখন সে শুয়ে বসে অথবা দাঁড়িয়ে আমাকে ডাকে, অত:পর আমি যখন তার দুঃখ-দৈন্য, দুরীভূত করি, সে এমন পথ অবলম্বন করে, যেন তাকে যে দুঃখ-দৈন্য, স্পর্শ করেছিল তার জন্য সে আমাকে ডাকেনি।’’ [. সূরা ইউনুস: ১২।] কুরআনে আরো এসেছে:
إِنَّ الْإِنسَانَ خُلِقَ هَلُوعًا، إِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ جَزُوعًا، وَإِذَا مَسَّهُ الْخَيْرُ مَنُوعًا
‘‘মানুষতো সৃজিত হয়েছে অতিশয় অস্থির চিত্তরূপে, যখন বিপদ তাকে স্পর্শ করে সে হয় হা-হুতাশকারী। আর যখন কল্যাণ তাকে স্পর্শ করে সে হয় অতি কৃপণ।’’ [. সূরা আল-মা‘আরিজ: ১৯-২১।]
দুই. অহংকারী
মানুষের জীবনের যাত্রা দুর্বলতা ও অসামর্থের তথা মাটি ও শুক্র জাতীয় দুটি দুর্বল ও অক্ষম উপাদান দিয়ে শুরু হলেও মানুষ অহংকারী স্বভাবের হয়ে থাকে। দুনিয়ার হিসেব অনুযায়ী বড় ধরনের কোন কল্যাণ প্রাপ্ত হলে তখন সে স্বেচ্চাচারী রূপ নিয়ে অহংকারবশত তাঁর অতীতকে ভুলে যেতে চেষ্টা করে। পবিত্র কুরআনে তাদের চিত্র ফুটে উঠেছে এভাবে:
وَلَئِنْ أَذَقْنَا الْإِنسَانَ مِنَّا رَحْمَةً ثُمَّ نَزَعْنَاهَا مِنْهُ إِنَّهُ لَيَئُوسٌ كَفُورٌ، وَلَئِنْ أَذَقْنَاهُ نَعْمَاءَ بَعْدَ ضَرَّاءَ مَسَّتْهُ لَيَقُولَنَّ ذَهَبَ السَّيِّئَاتُ عَنِّي إِنَّهُ لَفَرِحٌ فَخُورٌ
‘‘যদি আমি মানুষকে আমার নিকট হতে অনুগ্রত আস্বাদন করাই ও পরে তার নিকট হতে তা প্রত্যাহার করি তখন সে অবশ্যই হতাশ ও অকৃতজ্ঞ হবে। আর যদি দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করার পর আমি তাকে সুখ-সম্পদ আস্বাদন করাই তখন সে অবশ্যই বলবে, আমার বিপদ আপদ কেটে গেছে, আর সে তো হয় প্রফুল্ল ও অহংকারী।’’ [. সূর হুদা: ৯-১০।]
মহান আল্লাহ আরো বলেন:
وَإِذَا أَنْعَمْنَا عَلَى الْإِنسَانِ أَعْرَضَ وَنَأَى بِجَانِبِهِ وَإِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ كَانَ يَئُوسًا
‘‘আমি যখন মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করি তখন সে মুখ ফিরিয়ে লয় ও দূরে সরে যায় এবং তাকে অনিষ্ট স্পর্শ করলে সে একেবারে হতাশ হয়ে পড়ে।’’ [. সুরা বনী ইসরাইল: ৮৩।]
তিন. ঠুনকো বিশ্বাসী
মানুষের মধ্যে এমন এক ধরনের মানুষ আছে, যাদের বিশ্বাস খুবই ঠুনকো। যারা তাদের বিশ্বাসের উপর দৃঢ় থাকতে পারে না। এরা ততক্ষণ ঈমানের পথে থাকে যতক্ষণ নিরাপদ ও নির্ঝামেলায় তা থেকে ফায়দা লাভ করা যায়। আর যদি কোনোরূপ পরীক্ষা বা কাঠিন্য আরোপ করা হয়, সাথে সাথে তারা ঈমান ত্যাগ করতে দ্বিধা করে না। এ মর্মে ইরশাদ হয়েছে:
وَمِنْ النَّاسِ مَنْ يَعْبُدُ اللهَ عَلَى حَرْفٍ فَإِنْ أَصَابَهُ خَيْرٌ اطْمَأَنَّ بِهِ وَإِنْ أَصَابَتْهُ فِتْنَةٌ انقَلَبَ عَلَى وَجْهِهِ خَسِرَ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةَ ذَلِكَ هُوَ الْخُسْرَانُ الْمُبِينُ
‘‘মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহর ইবাদত করে দ্বিধার সাথে। তার মঙ্গল তাতে তার চিত্ত প্রশান্ত হয় এবং কোন বিপর্যয় ঘটলে সে তার পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়। সে ক্ষতিগ্রস্থ হয় দুনিয়াতে ও আখিরাতে; এটাই তো সুস্পষ্ট ক্ষতি।’’ [. সূরা আল-হাজ্জ: ১১।]
ইবন আববাস রা. আলোচ্য আয়াত অবতীর্ণের প্রেক্ষাপটে বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন: এক ব্যক্তি মদিনায় বাস করত। যদি তার স্ত্রীর গর্ভে পুত্র সন্তান জন্মলাভ করত এবং তার পশুটি কোন বাচ্চা প্রসব করতে তাহলে সে বলত, দীন ইসলাম বড় চমৎকার। আর যদি তার স্ত্রীর গর্ভে পুত্রসন্তান না জন্মাত এবং তার পশুটিরও বাচ্চা না হত তাহলে সে বলত দীন ইসলাম খারাপ ও অপয়া। [. ইমাম বুখারী, সহীহ বুখারী, কিতাবুত্তাফসীর, হাদীস নং ৪৩৮১।]
কুরআনের অন্যত্র আরো ইরশাদ হয়েছে:
وَمِنْ النَّاسِ مَنْ يَقُولُ آمَنَّا بِاللهِ فَإِذَا أُوذِيَ فِي اللهِ جَعَلَ فِتْنَةَ النَّاسِ كَعَذَابِ اللهِ وَلَئِنْ جَاءَ نَصْرٌ مِنْ رَبِّكَ لَيَقُولُنَّ إِنَّا كُنَّا مَعَكُمْ أَوَلَيْسَ اللهُ بِأَعْلَمَ بِمَا فِي صُدُورِ الْعَالَمِينَ
‘‘মানুষের মধ্যে কতক লোক বলে, আমরা আল্লাহর উপর বিশ্বাস করি, কিন্তু আল্লাহর পথে যখন তারা নিগৃহীত হয়, তখন তারা মানুষের পীড়নকে আল্লাহর শাস্তির মত গণ্য করে এবং তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে কোন সাহায্য আসলে তারা বলতে থাকে, আমরা তো তোমাদের সাথেই ছিলাম। বিশ্ববাসীর অন্ত:করণে যা আছে, আল্লাহ কি তা সম্যক অবগত নন?’’ [. সুরা আল-আনকাবুত: ১০।]
চার. ভীরু কাপুরুষ
কিছু লোক এমন আছে যারা সত্যকে ঘৃণা ও অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখে থাকে। সত্যের সাথে পরিচিত হতে চায় না। ফলে একদিকে তাদের জিদ ও হঠকারিতা সত্য থেকে বিরত রাখে, অপরদিকে তাদেরকে কাপুরুষতায় পেয়ে বসে। যার কারণে তারা কখনো সত্যের মুখোমুখী হওয়ার সাহস পর্যন্ত পায় না। মহান আল্লাহর ভাষায়:
يُجَادِلُونَكَ فِي الْحَقِّ بَعْدَ مَا تَبَيَّنَ كَأَنَّمَا يُسَاقُونَ إِلَى الْمَوْتِ وَهُمْ يَنظُرُونَ
‘‘সত্য স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হওয়ার পরও তারা তোমার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয়। মনে হচ্ছিল তারা যেন মৃত্যুর দিকে চালিত হচ্ছে, আর তারা যেন তা প্রত্যক্ষ করছে।’’ [. সূরা আল-আনফাল: ৬।]
পাঁচ. হাসি-কৌতুক উদ্রেককারী
কতিপয় মানুষের কর্মকান্ড হাসি-তামাশায় উদ্রেক করে মাত্র। তারা খুব আজব প্রকৃতির। অগ্রপশ্চাৎ না ভেবেই সত্য থেকে পলায়নের চেষ্টায় তার বিভোর হয়ে পড়ে। মুলত: তারা সত্য গোপনকারী। কুরআনে এসেছে:
فَمَا لَهُمْ عَنْ التَّذْكِرَةِ مُعْرِضِينَ، كَأَنَّهُمْ حُمُرٌ مُسْتَنْفِرَةٌ ، فَرَّتْ مِنْ قَسْوَرَةٍ
‘‘তাদের কি হলো যে, তারা উপদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়? যেন তারা ইতস্তত বিক্ষিপ্ত গর্দভ, হট্টগোলের কারণে পলায়নপর।’’ [. সূর আল মুদ্দাছছির।]
ছয়. প্রশংসাকাঙ্খী
মানুষ সর্বদা প্রশংসিত হতে পছন্দ করে। তবে এক্ষেত্রে তারা নিজেরা করে না এমন বিষয়েও প্রশংসা কামনা করে। তাদের সম্পর্কে কুরআনে এসেছে:
وَيُحِبُّونَ أَنْ يُحْمَدُوا بِمَا لَمْ يَفْعَلُوا فَلَا تَحْسَبَنَّهُمْ بِمَفَازَةٍ مِنْ الْعَذَابِ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
‘‘যা নিজেরা করেনি এমন কাজের জন্য প্রশংসিত হতে ভালবাসে যারা, তারা শাস্তি হতে মুক্তি পাবে-এরূপ তুমি কখনো মনে করো না। তাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি রয়েছে।’’ [. সূরা আলে ইমরান: ১৮৮।]
সাত. সুবিধাবাদী
এমন কিছু লোক আছে, যারা সুবিধা পেলে একদলে ভিড়ে যায় আবার সেখানে অসুবিধা হলে অন্য দলে যোগ দেয়। মহান আল্লাহ বলেন:
الَّذِينَ يَتَرَبَّصُونَ بِكُمْ فَإِنْ كَانَ لَكُمْ فَتْحٌ مِنْ اللهِ قَالُوا أَلَمْ نَكُنْ مَعَكُمْ وَإِنْ كَانَ لِلْكَافِرِينَ نَصِيبٌ قَالُوا أَلَمْ نَسْتَحْوِذْ عَلَيْكُمْ وَنَمْنَعْكُمْ مِنْ الْمُؤْمِنِينَ
‘‘যারা তোমাদের অমঙ্গলের প্রতীক্ষায় থাকে তারা আল্লাহর পক্ষ হতে তোমাদের জয় হলে বলে, আমরা কি তোমাদের সঙ্গে ছিলাম না। আর যদি কাফিরদের কিছু বিজয় হয়, তবে তারা বলে আমরা কি তোমাদের বিরুদ্ধে প্রবল ছিলাম না এবং আমরা কি তোমাদেরকে মুমিনদের হাত হতে রক্ষা করিনি? আল্লাহ কিয়ামতের দিন তোমাদের মধ্যে বিচার মীমাংসা করবেন এবং আল্লাহ কখনই মু’মিনরেদ বিরুদ্ধে কাফিরদের জন্য কোন পথ রাখবেন না।’’ [. সূরা আন নিসা: ১৪১।]
আট. ধুর্ত প্রকৃতির
মানুষের মধ্যে এমন কতিপয় মানুষ আছে যারা অত্যন্ত ধূর্ত ও চালাক প্রকৃতির। সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত কোন কাজ নিজেরা করবে এবং তা থেকে ফায়দা নেবে। যখনই সেই কাজ অন্য কেউ করে তখন তা অস্বীকার করে বসে। আল-কুরআন বিষয়টি চিত্রিত করেছে এভাবে:
وَلَمَّا جَاءَهُمْ كِتَابٌ مِنْ عِنْدِ اللهِ مُصَدِّقٌ لِمَا مَعَهُمْ وَكَانُوا مِنْ قَبْلُ يَسْتَفْتِحُونَ عَلَى الَّذِينَ كَفَرُوا فَلَمَّا جَاءَهُمْ مَا عَرَفُوا كَفَرُوا بِهِ فَلَعْنَةُ اللهِ عَلَى الْكَافِرِينَ
‘‘তাদের নিকট যা আছে আল্লাহর নিকট হতে তার সমর্থক কিতাব আসল; যদি পূর্বে সত্য প্রত্যাখানকারীদের বিরুদ্ধে তারা এর সাহায্যে বিজয় প্রার্থনা করত, তবুও তারা যা জ্ঞাত ছিল তার যখন তাদের নিকট আসল তখন তারা সেটা প্রত্যাখান করল। সুতরাং কাফিরদের প্রতি আল্লাহর লা’নত। [. সূরা আল-বাকারা: ৮৯।]
তাদের এ ধরনের আরো একটি চরিত্র বর্ণনায় কুরআনে এসেছে:
وَإِذَا دُعُوا إِلَى اللهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ إِذَا فَرِيقٌ مِنْهُمْ مُعْرِضُونَ، وَإِنْ يَكُنْ لَهُمْ الْحَقُّ يَأْتُوا إِلَيْهِ مُذْعِنِينَ
‘‘ফয়সালা করার জন্য যখন তাদেরকে আল্লাহ ও রাসূলের দিকে আহবান করা হয়, তখন তাদের একদল মুখ ফিরিয়ে নেয়। আর সত্য তাদের স্বপক্ষে হলে তারা বিনীতভাবে রাসূলের কাছে ছুটে আসে।’’ [. সূরা আন-নূর: ৪৮-৪৯।]
এমন কিছু মানুষ আছে যারা শুধু আকৃতিতেই মানুষ। এছাড়া মনুষত্বের কোন কিছু তাদের মাঝে পাওয়া যায় না। এ যেন চলমান জড় পদার্থ, যা দেখে লোকদের হাসি পায়। মূলত: এটি মুনাফিকদের অত্যন্ত আকর্ষর্ণীয় একটি চিত্র। যা বেদনা মিশ্রিত কৌতুক। মহান আল্লাহ বলেন:
وَإِذَا رَأَيْتَهُمْ تُعْجِبُكَ أَجْسَامُهُمْ وَإِنْ يَقُولُوا تَسْمَعْ لِقَوْلِهِمْ كَأَنَّهُمْ خُشُبٌ مُسَنَّدَةٌ
‘‘তুমি যখন তাদেরকে দেখ, তখন তাদের দেহাবয়র অত্যন্ত আকর্ষণীয় মনে হয়। আর যদি তারা কথা বলে তুমি তাদের কথা শোন। কিন্তু তারা তো প্রাচীরে ঠেকানো কাঠের মত।’’ [. সূরা আল-মুনাফিকুন: ৪।]
দশ. গোপনে সত্য উপেক্ষাকারী
সমাজে এমন কতিপয় মানুষ পাওয়া যায় যারা নিজে যেমন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না, ঠিক তেমনিভাবে সত্যকে মেনে নিতেও পারে না। প্রতি মুর্হূতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে দুদোল্যমান থাকে। এ ধরনের লোক চুপি চুপি সত্য থেকে বিমুখ হতে পছন্দ করে। মূলত: এটি দুর্বল এক শ্রেণীর মুনাফিকের চরিত্র। তাদের সম্পর্কে কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:
وَإِذَا مَا أُنزِلَتْ سُورَةٌ نَظَرَ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ هَلْ يَرَاكُمْ مِنْ أَحَدٍ ثُمَّ انصَرَفُوا صَرَفَ اللهُ قُلُوبَهُمْ بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لَا يَفْقَهُونَ
‘‘এবং যখনই কোন সূরা অবতীর্ণ হয়, তখন তারা একে অপরের দিকে তাকায় এবং ইশারায় জিজ্ঞেস করে তোমাদেরকে কেউ লক্ষ্য করতেছে কি? অত:পর তারা সরে পড়ে। আল্লাহ তাদের হৃদয়কে সত্য বিমুখ করেছেন, কারণ তারা এমন এক সম্প্রদায় যাদের বোধশক্তি নেই।’’ [. সূরা আত-তাওবা: ১২৭।]
এগার. দ্বিমুখী নীতি
এমন কতক মানুষ রয়েছে যারা Double Standard অবলম্বন করে সমাজে বিচরণ করে। তারা নীতি নৈতিকতার তোয়াক্কা করে না। বরং সর্বদা দ্বিমুখী নীতিতে বিশ্বাসী। যখন যেখানে যায় অবস্থান তখন সেখানে তার আপন জনে পরিণত হয়। আর অন্যত্র গেলে তা প্রত্যাখ্যান করে। এ মর্মে কুরআনে এসেছে:
وَإِذَا لَقُوا الَّذِينَ آمَنُوا قَالُوا آمَنَّا وَإِذَا خَلَوْا إِلَى شَيَاطِينِهِمْ قَالُوا إِنَّا مَعَكُمْ إِنَّمَا نَحْنُ مُسْتَهْزِئُونَ
‘‘যখন তারা মু’মিনদের স্পর্শে আসে তখন বলে আমরা ঈমান এনেছি, আর যখন তারা নিভৃতে তাদের শয়তানের সাথে মিলিত হয় তখন বলে, আমরাতো তোমাদের সাথেই রয়েছি; আমরা শুধু তাদের সাথে ঠাট্টা-তামাশা করে থাকি।’’ [. সূরা আল-বাকারা: ১৪।]
কুরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে:
مُذَبْذَبِينَ بَيْنَ ذَلِكَ لَا إِلَى هَؤُلَاءِ وَلَا إِلَى هَؤُلَاءِ
‘‘দোটানায় দোদুল্যমান, না এদের দিকে না ওদের দিকে।’’ [. সূরা আন-নিসা: ১৪৩।]
বার. নিবোর্ধ প্রতারক
কিছু লোক আছে যারা প্রতারণা ও ভন্ডামীতে লিপ্ত। নিজেদেরকে যদিও তারা চালাক মনে করে কিন্তু তাদের মাথায় ভুষি ছাড়া আর কিছুই নেই। তারা মানুষকে ঠকানোর চেষ্টা করে কিন্তু মূলত: তারা নিজেরাই নিজেদের ঠকাচ্ছে। কুরানের ভাষায়:
وَمِنْ النَّاسِ مَنْ يَقُولُ آمَنَّا بِاللهِ وَبِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَمَا هُمْ بِمُؤْمِنِينَ، يُخَادِعُونَ اللهَ وَالَّذِينَ آمَنُوا وَمَا يَخْدَعُونَ إِلَّا أَنفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُونَ
‘‘আর মানুষের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে, যারা বলে, আমরা আল্লাহ ও আখিরাতে ঈমান এনেছি; কিন্তু তারা মু’মিন নয়। আল্লাহ এবং মু’মিনদেরকে তারা প্রতারিত করতে চায়। অথচ তারা যে নিজেদেরকে ভিন্ন কাউকে প্রতারিত করে না, এটা তারা বুঝতে পারে না।’’ [. সূরা আল-বাকার: ৮ ও ৯।]
তের. তর্ক প্রিয়
মানুষ স্বভাবতই তর্ক প্রিয়। মানব উম্মেষকাল থেকে মুহাম্মদ (স.) পর্যন্ত তর্কের অস্তিত্ব বিদ্যমান। আল্লাহ রাববুল আলামীন মানব সৃষ্টির সূচনালগ্নে একদল ফিরিশতার সাথে বিতাড়িত শয়তানের সাথে এবং বিভিন্ন উম্মত ও তার কাওমের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বিতর্কের বর্ণনা পবিত্র কুরআনুল কারীমে বিধৃত করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন:
وَكَانَ الْإِنسَانُ أَكْثَرَ شَيْءٍ جَدَلًا
‘‘ মানুষ অধিকাংশ ব্যাপারে তর্ক প্রিয়।’’ [. সূরা আল-কাহফ: ৫৪।]
চৌদ্দ. ঝগড়াটে
কিছু লোক আছে যারা ঝগড়া করতে পছন্দ করে। সত্য হোক কিংবা মিথ্যা, জেনে হোক কিংবা না জেনে ঝগড়া বা গন্ডগোল তারা করবেই। কুরআনে এসেছে:
هَا أَنْتُمْ هَؤُلَاءِ حَاجَجْتُمْ فِيمَا لَكُمْ بِهِ عِلْمٌ فَلِمَ تُحَاجُّونَ فِيمَا لَيْسَ لَكُمْ بِهِ عِلْمٌ وَاللهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
‘‘হ্যাঁ, তোমরা তো সেসব লোক, যে বিষয়ে তোমাদের সামান্য জ্ঞান আছে সে বিষয়ে তোমারাই তো তর্ক করেছ, তবে যে বিষয়ে তোমাদের কোন জ্ঞান নেই সে বিষয়ে কেন কর্ত করছ? আল্লাহ জ্ঞাত আছেন এবং তোমরা জ্ঞাত নও।’’ [. সূরা আল-ইমরান: ৬৬।]
এমর্মে অন্যত্রে ইরশাদ হয়েছে:
وَمِنْ النَّاسِ مَنْ يُجَادِلُ فِي اللهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَلَا هُدًى وَلَا كِتَابٍ مُنِيرٍ
‘‘মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহ সম্বন্ধে বিতন্ডা করে, তাদের না আছে জ্ঞান, না আছে পথ নির্দেশ, না আছে কোন দীপ্তিমান কিতাব।’’ [. সূরা আল-হাজ্ব: ৮।]
পনের. বিপর্যয় সৃষ্টিকারী
কতক মানুষের স্বভাব হলো সমাজে বিপর্যয় সৃষ্টি করার মাধ্যমে শান্তি বিঘ্নিত করা। তারা না জেনে ও না বুঝে অনেক সময় এ ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টির পায়তারা করে। যখন তাদেরকে এ থেকে বিরত থাকতে বলা হয় তখন তারা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ لَا تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ قَالُوا إِنَّمَا نَحْنُ مُصْلِحُونَ، أَلَا إِنَّهُمْ هُمْ الْمُفْسِدُونَ وَلَكِنْ لَا يَشْعُرُونَ
‘‘তাদেরকে যখন বলা হয়, পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করো না। তারা বলে, আমরাই তো শান্তি স্থাপনকারী। সাবধা! এরাই অশান্তি সৃষ্টিকারী। কিন্তু তারা বুঝতে পারে না।’’ [. সূরা আল-বাকারা: ১১-১২।]
ঘোল. ওজর আপত্তিকারী
মানব জীবনের যাবতীয় কার্যাবলী সাধারণত দু’টি অবস্থায় সংঘটিত হয়। একটি সহজ অবস্থা অপরটি হলো কঠিন অবস্থা বা দুঃখ দুর্দশাগ্রস্থ হওয়া। মানুষ সর্বদা সহজতর অবস্থা কামনা করে থাকে। কিন্তু যখনই কোন কাঠিন্য ও দুঃখ-দুর্দশা তাকে স্পর্শ করে তখন সে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে এবং মিথ্যে ওজর আপত্তি পেশ করে তা থেকে বিরত থাকর চেষ্টা করে। পবিত্র কুরআনে নিম্নোক্তভাবে বিষয়টি উপস্থাপিত হয়েছে:
لَوْ كَانَ عَرَضًا قَرِيبًا وَسَفَرًا قَاصِدًا لَاتَّبَعُوكَ وَلَكِنْ بَعُدَتْ عَلَيْهِمْ الشُّقَّةُ وَسَيَحْلِفُونَ بِاللهِ لَوْ اسْتَطَعْنَا لَخَرَجْنَا مَعَكُمْ يُهْلِكُونَ أَنفُسَهُمْ وَاللهُ يَعْلَمُ إِنَّهُمْ لَكَاذِبُونَ
‘‘আশু সম্পদ লাভের সম্ভাবনা থাকলে ও সফর সহজ হলে তারা নিশ্চয়ই তোমার অনুসরণ করত, কিন্তু তাদের নিকট যাত্রাপথ সুদীর্ঘ মনে হল। তারা অচিরেই আল্লাহর নামে শপথ করে বলবে, পারলে আমরা নিশ্চয়ই তোমাদের সাথে বের হতাম। তারা নিজেদেরকে ধ্বংস করে। আল্লাহ জানেন তারা অবশ্যই মিথ্যাবাদ।’’ [. সূরা আত-তাওবা: ৪২।]
সতের. ভীতু বেহায়া
ভয়-ভীতি মানুষের প্রাকৃতিক স্বভাব বটে। কিন্তু এ ভীতির সঙ্গে অনেক সময় নির্লজ্জ ও ভীতু বেহায়া স্বভাবে পরিণত করে। বস্ত্তত: মিথ্যা আশ্রয় নেয়ার জন্য এটি মানুষের অন্যতম কুটকৌশল। আল্লাহ তা’আলা বলেন:
وَلَوْ تَرَى إِذْ وُقِفُوا عَلَى النَّارِ فَقَالُوا يَالَيْتَنَا نُرَدُّ وَلَا نُكَذِّبَ بِآيَاتِ رَبِّنَا وَنَكُونَ مِنْ الْمُؤْمِنِينَ - بَلْ بَدَا لَهُمْ مَا كَانُوا يُخْفُونَ مِنْ قَبْلُ وَلَوْ رُدُّوا لَعَادُوا لِمَا نُهُوا عَنْهُ وَإِنَّهُمْ لَكَاذِبُونَ
‘‘তুমি যদি দেখতে পেতে যখন তাদেরকে অগ্নির পাশে দাঁড় করানো হবে এবং তারা বলবে, হায়! যদি আমাদের প্রত্যাবর্তন ঘটত তবে আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিদর্শনকে অস্বীকার করতাম না এবং আমরা মু’মিনদের অন্তর্ভূক্ত হতাম। না, পূর্বে তারা যা গোপন করত তা যখন তাদের নিকট প্রকাশ পেয়েছে এবং তারা প্রত্যাবর্তিত হলেও যা করবে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল পুনরায় তারা তাই করত। আর নিশ্চয় তারা মিথ্যাবাদী। [. সূরা আল-আন’আম: ২৭-২৮।]
আঠার. স্বেচ্ছাচারী
অহংকারবশে মানুষ অনেক সময় স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠে। এরা নিজেদেরকে কোন নির্দিষ্ট পথের পথিক কিংবা কোন দল বা জামাআতের অন্তর্ভূক্তও মনে করে না। এ মর্মে কুরআনে এসেছে:
أَوَكُلَّمَا عَاهَدُوا عَهْدًا نَبَذَهُ فَرِيقٌ مِنْهُمْ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ
‘‘তবে কি যখনই তারা অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছে, তখনই তাদের কোন একদল তা ভঙ্গ করেছে? বরং তাদের অধিকাংশই বিশ্বাস করে না।’’ [. সূরা আল-বাকারা: ১০০।]
উনিশ: গোঁয়ার ও স্থবির প্রকৃতির
সমাজে এমন এক শ্রেণীর মানুষ রয়েছে যারা অত্যন্ত গোঁয়ার এবং স্থবির প্রকৃতির। তারা নিজেরা যা বুঝে অন্যেরা তার ধারে পৌঁছাতেও সক্ষম নয় বলে ধারনা পোষণ করে। ইসলামের প্রাথমিক যুগে এ ধরনের গোর্য়াতুমির জন্যেই একশ্রেণীর মানুষ ইসলামের সুশীতল ছায়া থেকে বঞ্চিত ছিল। মনে হয় যেন তাদের পা গুলো পাথর দিয়ে তৈরী। তারা এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের কোন চেষ্টা করেনি। মহান আল্লাহ তাদের স্বরূপ সম্পর্কে বলেন:
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ اتَّبِعُوا مَا أَنزَلَ اللهُ قَالُوا بَلْ نَتَّبِعُ مَا أَلْفَيْنَا عَلَيْهِ آبَاءَنَا أَوَلَوْ كَانَ آبَاؤُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ شَيْئًا وَلَا يَهْتَدُونَ
‘‘আর যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তা তোমরা অনুসরণ কর, তারা বলে, না বরং আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে যাতে পেয়েছি তার অনুসরণ করব। এমনকি তাদের পিতৃপুরুষগণ যদিও কিছু বুঝত না এবং তারা সৎপথে পরিচালিত ছিল না, তথাপিও?’’ [. সূরা আল-বাকারা: ১৭০।]
বিশ. পার্থিব জীবনের মোহে মোহগ্রস্থ:
এমন কিছু লোক আছে যারা পার্থিব জীবনকেই বেশী গুরুত্ব দেয়। যেখানেই থাকুক না কেন জৈবিক চাহিদাটাই তাদের কাছে বড়। তারা একে এত বেশী গুরুত্ব দেয়, প্রয়োজনে লাঞ্চনার জীবন যাপন করতে রাজি তথাপিও দুনিয়ার সহায়-সম্পদ ও লোভ-লালসায় মত্ত থাকা থেকে বিরত থাকতে পারে না। ইরশাদ হয়েছে:
وَلَتَجِدَنَّهُمْ أَحْرَصَ النَّاسِ عَلَى حَيَاةٍ وَمِنْ الَّذِينَ أَشْرَكُوا يَوَدُّ أَحَدُهُمْ لَوْ يُعَمَّرُ أَلْفَ سَنَةٍ وَمَا هُوَ بِمُزَحْزِحِهِ مِنْ الْعَذَابِ أَنْ يُعَمَّرَ وَاللهُ بَصِيرٌ بِمَا يَعْمَلُونَ
‘‘তুমি নিশ্চয় তাদেরকে জীবনের প্রতি সহজ সমস্ত মানুষ, এমনকি মুশরিক অপেক্ষা অধিক লোভী দেখতে পাবে। তাদের প্রত্যেক আকাঙ্খা করে যদি সহস্র বছর আয়ু দেয়া হত; কিন্তু দীর্ঘায়ু তাকে শান্তি হতে দূরে রাখতে পারবে না। তারা যা করে আল্লাহ তার দ্রষ্টা।’’ [. সূরা আল-বাকারা: ৯৬।]
অন্যত্র আরো এসেছে:
إِنَّ هَؤُلَاءِ يُحِبُّونَ الْعَاجِلَةَ وَيَذَرُونَ وَرَاءَهُمْ يَوْمًا ثَقِيلًا
‘‘নিশ্চয় তারা ভালবাসে পার্থিব জীবনকে এবং তারা পরবর্তী কঠিন দিবসকে উপেক্ষা করে চলে।’’ [. সূরা আল-ইনসান: ২৭।]
একুশ: কৃপন
যারা প্রয়োজনের মুর্হুতে খরচ করে না, তারা কৃপন। যদি কেউ খরচ করার পর ক্ষতিগ্রস্থ হয় তখন সে বিজয়ের হাসি হেসে বলে: যাক আমি খরচ না করে ভালোই করেছি। আমার টাকাগুলো রয়ে গেল। আর যদি জিহাদে কোন কল্যাণ লাভ হয় তখন আক্ষেপ করে বলে: হায়! যদি আমিও খরচ করতাম তবে লাভ হত। ইরশাদ হয়েছে:
وَإِنَّ مِنْكُمْ لَمَنْ لَيُبَطِّئَنَّ فَإِنْ أَصَابَتْكُمْ مُصِيبَةٌ قَالَ قَدْ أَنْعَمَ اللهُ عَلَيَّ إِذْ لَمْ أَكُنْ مَعَهُمْ شَهِيدًا، وَلَئِنْ أَصَابَكُمْ فَضْلٌ مِنَ اللهِ لَيَقُولَنَّ كَأَنْ لَمْ تَكُنْ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُ مَوَدَّةٌ يَا لَيْتَنِي كُنتُ مَعَهُمْ فَأَفُوزَ فَوْزًا عَظِيمًا
‘‘তোমাদের মধ্যে এমন কতক লোক আছে, যে গড়িমসি করবেই। তোমাদের কোন মুসীবত হলে সে বলবে, তাদের সঙ্গে না থাকায় আল্লাহ আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। আর তোমাদেরৃ প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ হলে, যেন তোমদের ও তার মধ্যে কোন সম্পর্ক নাই এমনভাবে বলবেই, হায়! যদি তাদের সাথে থাকতাম তবে আমিও বিরাট সাফল্য লাভ করতাম।’’ [. সূরা আন-নিসা: ৭২-৭৩।]
বাইশ. ভেরত ও বাইরের বৈপরিত্য
কিছু লোক আছে যাদের বাইরের ও ভেতরের কোন মিল নেই। মনে হয় সে একজন নয় দুজন মানুষ। এ মর্মে মহান আল্লাহ বলেন:
وَمِنْ النَّاسِ مَنْ يُعْجِبُكَ قَوْلُهُ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيُشْهِدُ اللهَ عَلَى مَا فِي قَلْبِهِ وَهُوَ أَلَدُّ الْخِصَامِ ، وَإِذَا تَوَلَّى سَعَى فِي الْأَرْضِ لِيُفْسِدَ فِيهَا وَيُهْلِكَ الْحَرْثَ وَالنَّسْلَ وَاللهُ لَا يُحِبُّ الْفَسَادَ
‘‘আর মানুষের মধ্যে এমন ব্যক্তি আছে, পার্থিব জীবন সম্পর্কে যার কথাবার্তা তোমাকে চমৎকার করে এবং তার অন্তরে যা আছে সে সম্বন্ধে সে আল্লাহকে সাক্ষী রাখে। প্রকৃতপক্ষে সে ভীষণ কলহপ্রিয়। যখন সে প্রস্থান করে তখন সে পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টির এবং শষ্যক্ষেত্র ও জীবজন্তু নিপাতের চেষ্টা করে। আর আল্লাহ অশান্তি পছন্দ করেন না।’’ [. সূরা আল বাকারা: ২০৪-২০৫।]
তেইশ. স্বল্প বুদ্ধি সম্পন্ন
কিছু লোক এমন স্বল্প বুদ্ধির হয়ে থাকে, তাদের সামনে কি বলা হলো না হলো সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ উদাসীন। কুরআনের ভাষায়:
وَمِنْهُمْ مَنْ يَسْتَمِعُ إِلَيْكَ حَتَّى إِذَا خَرَجُوا مِنْ عِنْدِكَ قَالُوا لِلَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ مَاذَا قَالَ آنِفًا
‘‘তাদের মধ্যে কতক লোক আপনার কথার দিকে কান পাতে ঠিকই কিন্তু বাইরে বের হওয়া মাত্র যারা শিক্ষিত তাদেরকে বলে: এই মাত্র তিনি কি বললেন?’’ [. সূরা মুহাম্মদ: ১৬।]
চবিবশ: মুমূর্ষু অবস্থায় তাওবাকারী
তাওবা( توبة ) অর্থ- অনুশোচনা, অনুতাপ, প্রত্যাবর্তন, ক্ষমা। [. ড. মুহাম্মদ ফজলুর রহমান, প্রাগুক্ত, পৃ. ২৩৪।] মানুষ সাধারণত অপরাধ প্রবণ। কোনো না কোনভাবে সে অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে। মহান আল্লাহ তা থেকে পরিত্রাণের জন্য তাওবার ব্যবস্থা রেখেছেন।
আর এটি অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পরপরই তাৎক্ষণিকভাবে করতে হয়। অথচ কতিপয় লোক ইচ্ছে মাফিক গোটা জিন্দেহী অন্যায় পথে যাপন করে মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্তে তাওবা করে। কিন্তু তাদের এ তাওবা গ্রহণযোগ্য নয়। এ মর্মে ইরশাদ হয়েছে:
إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِنْ قَرِيبٍ فَأُوْلَئِكَ يَتُوبُ اللهُ عَلَيْهِمْ وَكَانَ اللهُ عَلِيمًا حَكِيمًا، وَلَيْسَتْ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ حَتَّى إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمْ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الْآنَ وَلَا الَّذِينَ يَمُوتُونَ وَهُمْ كُفَّارٌ أُوْلَئِكَ أَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا
‘‘আল্লাহ অবশ্যই সেসব লোকদের তাওবা কবুল করবেন, যারা ভুলবশত মন্দ কাজ করে এবং সত্বর তওবা করে। এরাই তারা, যাদের তওবা আল্লাহ কবুল করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। তওবা তাদের জন্য নয় যারা আজীবন মন্দ কাজ করে। অবশেষে তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হলে সে বলে, আমি এখন তওবা করছি এবং তাদের জন্য নয় যাদের মৃত্যু হয় কাফির অবস্থায়। এরাই তারা যাদের জন্য মর্মস্ত্তদ শাস্তির ব্যবস্থা করেছি।’’ [. সূরা আল-নিসা: ১৭-১৮।]
পঁচিশ. তাড়াহুড়া প্রিয়
মানুষ সৃষ্টিগতভাবেই ত্বরাপ্রবণ। কোন কর্মের ত্বরিত ফলভোগে বিশ্বাসী। ফলে সর্বদা তাড়াহুড়া করে কোন কিছু অর্জনকেই বেশী প্রাধান্য দিয়ে থাকে। তবে এটি সমুচিত নয়। কুরআনে এ চরিত্রের বর্ণনায় এসেছে:
خُلِقَ الْإِنسَانُ مِنْ عَجَلٍ سَأُرِيكُمْ آيَاتِي فَلَا تَسْتَعْجِلُونِي
‘‘মানুষ সৃষ্টিগতভাবে ত্বরাপ্রবণ, শীঘ্রই আমি তোমাদেরকে আমার নির্দেশাবলী দেখাব; সুতরাং তোমরা আমাকে ত্বরা করতে বলো না।’’ [. সূরা আল-আম্বিয়া: ৩৭।] অন্যত্র মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন:
وَكَانَ الْإِنسَانُ عَجُولًا
‘‘মানুষতো অতি মাত্রায় ত্বরাপ্রিয়।’’ [. সূরা বনী ইসরাইল: ১১।]
পরিশেষে বলা যায় যে, মানুষ এমন এক প্রাণী যাকে মহান আল্লাহ নিজের পছন্দ মোতাবেক সৃষ্টি করেছেন, বানিয়েছেন দুনিয়ায় তার খলিফা বা প্রতিনিধি। তার প্রকৃতির মধ্যে রয়েছে আল্লাহকে চেনার, তার স্বরূপ উপলব্ধির যোগ্যতা। মানুষ জন্মগতভাবেই স্বাধীন, তার মধ্যে রয়েছে বিশ্বস্ততা এবং নিজের প্রতি ও সারা বিশ্বের প্রতি দায়িত্বানুভুতি। প্রকৃতি, আকাশ ও পৃথিবীর উপর আধিপত্য বিস্তারের যোগ্যতা দান করে মানুষকে করা হয়েছে ধন্য ও মহিমান্বিত। মানুষের মধ্যে রয়েছে ভাল ও মন্দের প্রতি ঝোক প্রবাণতা। মহত্ব ও মর্যাদা তার সহজাত গুণাবলী। মানুষের যোগ্যতা ও সামর্থ সীমাহীন জ্ঞান অর্জন ও অর্জিত জ্ঞানের প্রয়োগ ও উভয় ক্ষেত্রেই। মহান আল্লাহর অসংখ্য নি‘আমত প্রাপ্ত এ প্রাণীর আল্লাহ এবং আল্লাহ কেন্দ্রিক চিন্তাধারা ছাড়া অন্য কোন কিছুর লালন সমূচিত নয়। পবিত্র কুরআনে তাদের সৃষ্টির রহস্য, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, কর্মপন্থা ও প্রদত্ত নি‘আমতরাজির বর্ণনাসহ স্ব-নামে (ইনসান) একটি সূরার অবতারণা হয়েছে, যার নির্দেশনার অনুসরণ ও অনুকরণে মানুষ পেতে পারে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি। এ মর্মে মহান আল্লাহ ঘোষণা দিয়েছেন-‘‘ইহা এক উপদেশ, অতএব, যার ইচ্ছা সে তার প্রতিপালকের দিকে পথ অবলম্বন করুক।’’ [. মহান আল্লাহ বলেন: إِنَّ هَذِهِ تَذْكِرَةٌ فَمَنْ شَاءَ اتَّخَذَ إِلَى رَبِّهِ سَبِيلًا (সূরা আল-ইনসান: ২৯)]
আলোচ্য প্রবন্ধে মানুষের স্বরূপ উদঘাটনে যেসব আয়াতের উল্লেখ করা হয়েছে মূলত: তার অধিকাংশই একটি বিশেষ অবস্থার প্রেক্ষিতে অবতীর্ণ হয়েছিল। কিন্তু এর মাধ্যমে মানুষের জীবন্ত ও বাস্তব এমন কিছু চিত্র অংকিত হয়েছে যা বিষয়বস্ত্তর দিক থেকে অলৌকিক ও চিরন্তর। কেননা এ চিত্রগুলো স্থান ও কালের আবর্তনে শতাব্দীর পর শতাব্দী চক্রাকারে আবর্তিত হচ্ছে এবং তা সর্বদাই জীবন্ত, প্রাণবন্ত ও মূর্তমান।
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন