HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
আল-কুরআনের আলোকে মানুষের স্বরূপ বিশ্লেষণ
লেখকঃ ড. মোঃ আবদুল কাদের
৪
১. ইতিবাচক দিক:এক. মানুষ দুনিয়াতে আল্লাহর খলিফা
খলিফা শব্দের শাব্দিক অর্থ হলো প্রতিনিধি, উত্তরাধিকারী। [. ড. মুহাম্মদ ফজলুর রহমান, আরবী-বাংলা ব্যবহারিক অভিধান, রিয়াদ প্রকাশনী, ঢাকা- চতুর্থ সংস্কার-২০০২, পৃ. ৩২২।] মহান আল্লাহ তাঁর অসংখ্য সৃষ্টির মাঝে মানুষকে স্বীয় খলিফা মনোনীত করেছেন। যে তারা দুনিয়ার তাঁর দীন প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে তাঁর প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। এ মর্মে সৃষ্টির প্রারম্ভেই তিনি ফেরেশতাদের করে ঘোষণা দিয়েছেন:
وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً قَالُوا أَتَجْعَلُ فِيهَا مَنْ يُفْسِدُ فِيهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَاءَ وَنَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ قَالَ إِنِّي أَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُونَ
‘‘স্মরণ কর, যখন তোমার প্রতিপালক ফিরিশতাদের বললেন, ‘‘আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করতেছি; তারা বলল, আপনি কি সেখানে এমন কাউকেও সৃষ্টি করবেন যে অশান্তি ঘটানে ও রক্তপাত করবে? আমরাই তো আপনার সপ্রশংস স্ততিগান ও পবিত্রতা ঘোষনা করি। তিনি বললেন, আমি জানি যা তোমরা জান না।’’ [. সূরা আল-বাকারা: ৩০।]
তিনি (আল্লাহ) শুধু খলিফা হিসেবেই সৃষ্টি করেননি; বরং তাদেরকে পরীক্ষার জন্য একজনকে অন্যজনের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন:
وَهُوَ الَّذِي جَعَلَكُمْ خَلَائِفَ الْأَرْضِ وَرَفَعَ بَعْضَكُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِيَبْلُوَكُمْ فِي مَا آتَاكُمْ إِنَّ رَبَّكَ سَرِيعُ الْعِقَابِ وَإِنَّهُ لَغَفُورٌ رَحِيمٌ
‘‘তিনিই তোমাদেরকে দুনিয়ার প্রতিনিধি করেছেন এবং যা তিনি তোমাদের দিয়েছেন সে সম্বন্ধে পরীক্ষার উদ্দেশ্যে তোমাদের কতজকে কতকের উপর মর্যাদায় উন্নীত করেছেন।’’ [. সুরা আন’আম: ১৬৫।]
এছাড়াও খলিফা হিসেবে একজন মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য বিধৃত করতে গিয়ে তিনি তাঁর মনোনীত বান্দা দাউদ (আ.) কে লক্ষ্য করে বলেন: ‘‘হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি, অতএব তুমি লোকদের মধ্যে সুবিচার কর এবং খেয়াল খুশির অনুসরণ করিও না, কেননা তা তোমাকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করবে। [. সূরা ছোয়াদ: ২৬।]
এখানে প্রতিনিধি হিসেবে একজন রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব ও কর্তব্য কি তার দিকে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে। কেননা মহান আল্লাহকে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে প্রমাণিত করতে হলে তাঁর আইনকেই শুধু মানুষের মাঝে পরিচালিত করতে হবে অন্যথায় তা হবে ব্যক্তি পুজা বা প্রবৃত্তির অনুসরণ। আর দাউদ (আ.) এ ধরনেরই একজন শাসক ছিলেন।
দুই. সর্বশ্রেষ্ঠ নি‘আমত জ্ঞানের অধিকারী
মানুষ বোধশক্তি সম্পন্ন প্রাণী। মহান আল্লাহ মানুষকে এমন জ্ঞান দান করেছেন যার সাহায্যে ভাল ও মন্দ, কল্যাণ-অকল্যাণ প্রভৃতির মাঝে পার্থক্য সুচিত করা যায়। এ জ্ঞান দ্বারাই মানুষ ফিরিশতাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত করেছে। অতএব জ্ঞানের ক্ষেত্রে মানুষ সকল প্রাণীর সেরা। পবিত্র কুরআনে এসেছে:
وَعَلَّمَ آدَمَ الْأَسْمَاءَ كُلَّهَا ثُمَّ عَرَضَهُمْ عَلَى الْمَلَائِكَةِ فَقَالَ أَنْبِئُونِي بِأَسْمَاءِ هَؤُلَاء إِنْ كُنتُمْ صَادِقِينَ- قَالُوا سُبْحَانَكَ لَا عِلْمَ لَنَا إِلَّا مَا عَلَّمْتَنَا إِنَّكَ أَنْتَ الْعَلِيمُ الْحَكِيمُ- قَالَ يَاآدَمُ أَنْبِئْهُمْ بِأَسْمَائِهِمْ فَلَمَّا أَنْبَأَهُمْ بِأَسْمَائِهِمْ قَالَ أَلَمْ أَقُلْ لَكُمْ إِنِّي أَعْلَمُ غَيْبَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَأَعْلَمُ مَا تُبْدُونَ وَمَا كُنتُمْ تَكْتُمُونَ
‘‘আর তিনি আদম কে যাবতীয় নাম শিক্ষা দিলেন তারপর ফিরিশতাদের সামনে সেগুলো প্রকাশ করলেন এবং বললেন ‘এগুলোর নাম আমাকে বলে দাও, ’ যদি তোমরা সত্যবাদী হও। তারা বলল, আপনি মহান পবিত্র। আপনি আমাদেরকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তাছাড়া আমাদের তো কোন জ্ঞান নেই। বস্ত্তত আপনি জ্ঞানমত ও প্রজ্ঞাময়। তিনি বললেন ‘‘হে আদম! তাদেরকে এসকল নাম বলে দাও’। সে তাদেরকে এ সবের নাম বলে দিল।’’ [. সূরা আল-বাকারা: ৩১-৩৩।]
জ্ঞানে মাধ্যমেই মানুষ প্রভৃত কল্যাণের অধিকারী হয়েছে। এজন্যই পবিত্র কুরআনে বারবার জ্ঞান আহরণে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়ার জন্য বলা হয়েছে-মহান আল্লাহ বলেন:
وَمَنْ يُؤْتَ الْحِكْمَةَ فَقَدْ أُوتِيَ خَيْرًا كَثِيرًا
যাকে জ্ঞান দান করা হয়েছে, তার প্রভৃত কল্যাণ সাধিত হয়েছে। [. সূরা আল-বাকারা: ২৬৯।]
তিনি আরো বলেন:
وَهُوَ الَّذِي يَتَوَفَّاكُمْ بِاللَّيْلِ وَيَعْلَمُ مَا جَرَحْتُمْ بِالنَّهَارِ ثُمَّ يَبْعَثُكُمْ فِيهِ لِيُقْضَى أَجَلٌ مُسَمًّى ثُمَّ إِلَيْهِ مَرْجِعُكُمْ ثُمَّ يُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ
‘‘বল অন্ধ ও চক্ষুম্মান কি সমান? তোমরা কি অনুধাবন কর না?’’ [. সূরা আল-আন’আম: ৬০।]
তিন. মানুষ মুক্ত ও স্বাধীন
মানুষ সাধারণত স্বাধীন চেতা ও মুক্ত বিহঙ্গের ন্যায় চলা-ফেরা করতে পছন্দ করে। কিসে কল্যাণ এবং কিসে তাদের অকল্যাণ তা জ্ঞাত হবার পরও তা গ্রহণের ক্ষেত্রে রয়েছে তাদের পূর্ণ স্বাধীনতা। মহান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থাশীল হওয়া পয়গম্বরী মিশন পরিচালনার প্রয়োজনীয় গুণাবলীতে মানব জীবন বিমন্ডিত। তারা দায়িত্বশীল জীব। উদ্যোগ ও কঠোর শ্রমের মাধ্যমে জীবনের পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের জন্য মানুষের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে। সমৃদ্ধি বা বিপর্যয় যে কোন একটিকে বেছে নেয়ায় তার রয়েছে পূর্ণ স্বাধীনতা। হয় সে সঠিক পথে চলে সমৃদ্ধির পানে বাড়াবে অথবা অকৃজ্ঞ হয়ে বাস্তবতা থেকে দূরে সরে যাবে। এ মর্মে মহান আল্লাহ বলেন:
إِنَّا خَلَقْنَا الْإِنسَانَ مِنْ نُطْفَةٍ أَمْشَاجٍ نَبْتَلِيهِ فَجَعَلْنَاهُ سَمِيعًا بَصِيرًا- إِنَّا هَدَيْنَاهُ السَّبِيلَ إِمَّا شَاكِرًا وَإِمَّا كَفُورًا
‘‘আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিলিত শুক্রবিন্দু হতে, তাকে পরীক্ষা করার জন্য এজন্য আমি তাকে করেছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন। আমি তাকে পথের নির্দেশ দিয়েছি, হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় সে অকৃতজ্ঞ হবে। [. সুরা আল-ইনসান: ২-৩।]
চার. মহত্ত্ব ও মর্যাদার বিভুষিত
জন্মগতভাবেই মহত্ব ও মর্যাদার গুণাবলীতে মানুষ বিভুষিত। বাস্তবেই আল্লাহ অপরাপর অসংখ্য প্রাণীর উপর তাকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। সে তার আসল সত্ত্বাকে তখনই আবিস্কার করতে পারে, যখন সে তার মহত্ত্ব ও মর্যাদাকে উপলব্ধি করতে পারবে এবং নিজকে সকল নীচতা, দাসত্ত্ব, অধীনতা ও ভোগ লালসার ক্ষুদ্রতার উর্ধ্বে স্থাপন করতে পারবে। মহান আল্লাহ বলেন:
وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِي آدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُمْ مِنْ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَى كَثِيرٍ مِمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيلًا
‘‘আমি তো আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি; স্থলে ও সমূদ্রে তাদের চলাচলের বাহন দিয়েছি; তাদেরকে উত্তম রিযিক দান করেছি এবং আমি যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের উপর মানুষদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি।’’ [. সুরা বনী ইসরাইল: ৭০।]
পাঁচ: নৈতিক চেতনাবোধ সম্পন্ন
মানুষের নৈতিক চেতনা আছে। তারা প্রকৃতিগতভাবেই ভালো আর মন্দ বুঝে নিতে পারে। কল্যাণ ও অকল্যাণের মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করতে পারে। মানুষের সত্তার মাঝেই এ সুপ্ত নৈতিক চেতনা লুকিয়ে আছে। কুরআনে বলা হয়েছে:
وَنَفْسٍ وَمَا سَوَّاهَا- فَأَلْهَمَهَا فُجُورَهَا وَتَقْوَاهَا
‘‘শপথ মানুষের এবং যিনি তাকে সুঠাম করেছেন। তাকে(মানুষকে) তার অসৎকর্ম ও তার সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন। [. সুরা আশশামস: ৭-৮।]
ছয়. আল্লাহর স্মরণে মানসিক প্রশান্তি লাভ
আল্লাহ স্মরণ ব্যতীত মানুষের হৃদয় প্রশান্তি লাভ করে না। মানুষের আকাঙ্খা, চাহিদা সীমাহীন। তথাপি কোন কিছুর আধিক্য তাদের মধ্যে একঘেয়েমীর সৃষ্টি করে। আধিক্য লাভে তারা প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়ে থাকে। বিপরীত দিকে মহান আল্লাহর চিরন্তন সত্তার সাথে মিলনের পথে তারা যত এগিয়ে যায়, তাদের ব্যগ্রতা আরো বেড়ে যায়। মহান আল্লাহর স্মরণ মানুষকে এসব ক্ষেত্রে একমাত্র প্রশান্তির পায়রা হয়ে আবর্তিত হয়। মহান আল্লাহ বলেন:
الَّذِينَ آمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُمْ بِذِكْرِ اللهِ أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
‘‘যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের চিত্ত প্রশাস্ত হয়; জেনে রেখ আল্লাহর স্মরণেই চিত্ত প্রশান্ত হয়।’’ [. সূরা আর-রাদ: ২৮।]
অতএব, মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের এবং মানুষের প্রশান্তির অন্যতম উপায় হলো আল্লাহর যিকির।
সাত: আল্লাহর ইবাদত পালনকারী
আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁরই ইবাদতের জন্য এবং একনিষ্ঠভাবে তাঁর আনুগত্য প্রদর্শন করার নিমিত্তে। এটাই তাদের প্রধান দায়িত্ব। মহান আল্লাহ বলেন:
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِي
আমার ইবাদতের জন্যই আমি সৃষ্টি করেছি মানুষ এবং জ্বীনকে। [. সূরা আয-যারিয়াত: ৫৬।]
কিন্তু মানুষ যদি আল্লাহর ইবাদত না করে এবং তাঁর সম্পর্কে চিন্তা গবেষণা না করে তাহলে তারা নিজেদের চিনতে পারবে না। আল্লাহর ব্যাপারে গাফেল হলে তারা নিজেদেরও ভুলে যাবে। এ পরিস্থিতিতে তারা বুঝতে পারবে না তাদের নিজেদের পরিচয় সম্পর্কে; তাদের সৃষ্টি ও অস্তিত্বের পেছনে কি উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে তাও ভুলে যাবে। এ বিষয়ে সর্তক করে দিয়ে ধমকের সুরে মহান আল্লাহ বলেন:
وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ نَسُوا اللهَ فَأَنْسَاهُمْ أَنْفُسَهُمْ أُوْلَئِكَ هُمْ الْفَاسِقُونَ
‘‘আর তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছে; ফলে আল্লাহ তাদেরকে আত্মবিস্মৃত করেছেন। তারাই তো পাপাচারী।’’ [. সূরা আল-হাশর: ১৯।]
আট. পরকালীন সফলতা ও আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধান
মানুষ বস্ত জাগতিক প্রেরণা বা উদ্দেশ্য নিয়েই বাঁচে না। অর্থাৎ বস্তগত চাহিদা বা প্রয়োজনই মানুষের সকল কর্মের পেছনে একমাত্র প্রেরণা নয় বরং তারা মহত্তর লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও আশা-আকাঙ্খা পুরণের জন্য প্রচেষ্টা চালায়। আর তা হলো পরকালীন সফলতা ও আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধান। অতএব, কোন কোন ক্ষেত্রে আল্লাহর সন্তুষ্টি ব্যতিরেকে তাদের সামনে আর কোন লক্ষ্যই থাকে না। এদিকে ইঙ্গিত করেই কুরআনুল কারীমে ঘোষিত হয়েছে মহাবাণী:
يَاأَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ - ارْجِعِي إِلَى رَبِّكِ رَاضِيَةً مَرْضِيَّةً - فَادْخُلِي فِي عِبَادِي- وَادْخُلِي جَنَّتِي
‘‘হে প্রশান্ত চিত্ত! তুমি তোমার প্রতিপালকের নিকট ফিরে আস সন্তুষ্ট ও সন্তোষ ভাজন হয়ে। আমার বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত হও আর আমার জান্নাতে প্রবেশ কর।’’ [. সূরা আল-ফাজর: ২৭-৩০।]
নয়: মজবুত ঈমান:
ঈমান মানে বিশ্বাস, প্রত্যয়, ধর্মীয় বিশ্বাস [. ড. মুহাম্মদ ফজলুর রহমান, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৪৩।] অন্তরের বিশ্বাস [. মুফতী আমীমুল ইহসান, কাওয়ায়েদুল ফিকহ, পৃ. ২০০।] । এক কথায় বলতে গেলে ঈমান হচ্ছে: স্বীকৃতি প্রদান। পরিভাষায়: ইসলামের মূল বিষয়গুলো মনে প্রাণে বিম্বাস করে মুখে স্বীকার করা এবং সে অনুযায়ী আমল করার নাম ঈমান।
মানুষের মধ্যে এমন কতক মানুষ আছে যারা আল্লাহ তাঁর রাসূল, ফিরিশতা, আসমানী গ্রন্থাবলী ও সদৃশ্য বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস রাখে। কোন অত্যাচারী শাসকের রক্ষচক্ষু ও তাদের বিন্দুমাত্র টলাতে পারে না। এমন ঈমানের এক জীবন্ত মডেল হিসাবে বিশ্বের বুকে সমাদৃত রয়েছেন, মুসলিম জাহানের প্রথম খলিফা আবু বকর সিদ্দিক (রা)। রাসূল (সা) এর প্রতি তাঁর এম বেশী অগাধ আস্থা ছিল যে, মিরাজের ঘটনার বিবরণ শুনামাত্রই তিনি তা বিশ্বাস করে ফেলেন। পবিত্র কুরআন মানুষকে দুভাবে ভাগ করেছে। ১. ঈমানদার ২. যারা ঈমান আনেনি এমন। তবে যারা ঈমান আনে তাদের অধিকাংশই মজবুত ঈমানের অধিকারী হওয়া বাঞ্চনীয়। অন্যথায় তারা বিশেষ বিশেষণে বিশেষিত হতে বাধ্য। তাইতো এরশাদ হয়েছে: যারা বরে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ; অত:পর অবিচলিত থাতে তাদের নিকট অবতীর্ণ হয় ফিরিশতা এবং বলে তোমার ভীত হইও না, চিন্তিত হইও না এবং তোমাদেরকে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তার জন্য আনন্দিত হও।’’ [. সূরা হা-মীম আস-সাজদা: ৩০।]
এ ধরনের ঈমানের অধিকারী যারা তারাই সফলকাম ও বিজয়ী হবে। তাদের জন্যেই মহান আল্লাহ পরকালে মহাপুরুস্কারের ঘোষনা দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন:
وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنْتُمْ الْأَعْلَوْنَ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ
‘‘তোমরা হীনবল হইও না এবং দুঃখিত হইও না; তোমরাই বিজয়ী যদি তোমরা মু’মিন হও।’’ [. সূরা আল-ইমরান: ১৩৯।]
দশ. দরিদ্র অথচ অল্পে তুষ্ট
সমাজে দু’ শ্রেণীর মানুষ বাস করে। এক. ধনী, দুই. দরিদ্র। ধনী এবং দরিদ্রের মাঝে বৈষম্য দুরীকরণার্থে ইসলামে যাকাতের বিধান রয়েছে যা ধনীদের সম্পদ থেকে উত্তোলণ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে বিতরণ করতে হয়। কেননা ইসলাম সুসামঞ্জস্যপূর্ণ জীবন ব্যবস্থার নাম। এতে যাকাতের বিধান রাখা হয়েছে যেন সম্পদ এক শ্রেণীর হাতে আবদ্ধ না হয়ে পড়ে। এ মর্মে ইরশাদ হয়েছে:
كَيْ لَا يَكُونَ دُولَةً بَيْنَ الْأَغْنِيَاءِ مِنْكُمْ
‘‘যাতে তোমাদের মধ্যে যারা বিত্তবান কেবল তাদের মধ্যেই সম্পদ আবর্তন না করে।’’ [. সুরা আল-হাশর: ৭।]
এতদসত্ত্বেও এমন কতিপয় মানুষ রয়েছে যারা অভাবগ্রস্থ হওয়া সত্বেও সন্তুষ্ট চিত্তে জীবন যাপন করে। তথাপিও মানুষের কাছে হাত পারে না এবং ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা বানায় না। পবিত্র কুরআনে তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে:
لِلفُقَرَاءِ الَّذِينَ أُحْصِرُوا فِي سَبِيلِ اللهِ لَا يَسْتَطِيعُونَ ضَرْبًا فِي الْأَرْضِ يَحْسَبُهُمْ الْجَاهِلُ أَغْنِيَاءَ مِنْ التَّعَفُّفِ تَعْرِفُهُمْ بِسِيمَاهُمْ لَا يَسْأَلُونَ النَّاسَ إِلْحَافًا
‘দান সাদকা তো ঐসব গরীব লোকদের জন্য, যারা আল্লাহর পথে এমনভাবে ব্যাপৃত যে, দেশময় ঘুরাফিরা করতে পারে না, অথচ লোকেরা হাত না পাতার কারণে তাদেরকে অভাবমুক্ত মনে করে; তুমি তাদের লক্ষণ দেখে চিনতে পারবে। তারা মানুষের নিকট কাকুতি মিনতি করে ভিক্ষা করে ভিক্ষা চায় না। [. সূরা আল-বাকারা: ২৭৩।] মূলত: অল্পে তুষ্টতাই শান্তির নিয়ামক। রাসূল (স.) বলেন:
الغنى غنى النفس
‘‘অন্তরের প্রাচুর্যতাই প্রকৃত প্রাচুর্য।’’ [. সহীত মুসলিম: হাদীস নং ১০৫১।]
এগার. তাকওয়া সম্পন্ন
তাকওয়া আরবী শব্দ। অর্থ হলো আল্লাহর ভয়, পরহেযগারি, দ্বীনদারী, ধার্মিকতা। [. ড. মুহাম্মদ ফজলুর রহমান, প্রাগুক্ত, পৃ. ২১৯।] যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদেরকেই মুত্তাকী বলা হয়। মহাগ্রন্থ আল-কুরআন কেবল মুত্তাকীদের জন্যই পথ প্রদর্শক। কুরআনের বিভিন্নস্থানে মানুষকে লক্ষ্য করে পরিপূর্ণ তাকওয়াবান হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেমন বলা হয়েছে:
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে যেভাবে ভয় করা উচিত সেরূপ ভয় কর এবং মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।’’ [. সূর আল-ইমরান: ১০২।]
এ তাকওয়ার গুণে গুনান্বিত করার জন্য মানুষের উচিত, অধিক পরিমাণে তাঁকে স্মরণ করা এবং সকল কাজ তাঁর দেয়া বিধান অনুযায়ী পরিচালনা করা। এ সব লোকদের প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন:
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آياتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ
‘মু’মিন তো তারাই যাদের হৃদয় কম্পিত হয় যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। এবং যখন তাঁর আয়াত তাদের নিকট পাঠ করা হয়, তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়। আর তারা তাদের প্রতিপালকের উপরই নির্ভর করে।’’ [. সুরা আল-আরফাল:২।]
প্রকৃত পক্ষে মহান আল্লাহর নিদের্শিত পন্থায় যারা জীবন অতিবাহিত করে এবং তাঁর নিষিদ্ধ বিষয় ও কাজ সমূহ থেকে নিজেকে বাuঁচয়ে রাখে তারাই মুত্তাকী। এ সব লোকদের জন্যই মহান আল্লাহ চিরস্থায়ী সুখময় জান্নাতের ঘোষণা দিয়েছেন।
বার. বিনয়ী ও ভদ্র
বিনয় ও নম্রতা মানুষের অন্যতম চারিত্রিক ভূষণ। বিনয় মানুষকে উচ্চ আসনে সমাসীন করতে এবং গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্বে পরিণত করতে সহায়তা করে। বিনীয়কে মানুষ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। এ মর্মে ইরশাদ হয়েছে:
وَعِبَادُ الرَّحْمَنِ الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الْأَرْضِ هَوْنًا وَإِذَا خَاطَبَهُمْ الْجَاهِلُونَ قَالُوا سَلَامًا
‘‘রামমানের’ বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদেরকে যখন অজ্ঞ ব্যক্তিরা সম্বোধন করে তখন তারা শান্তি কামনা করে (তর্কে অবতীর্ণ হয় না)।’’ [. সূরা আল-ফুরকান: ৬৩।] শুধু তাই নয়, একজন বিদগ্ধ পন্ডিত ও আল্লাহর প্রিয় বান্দা লুকমানও তার পুত্রকে একই আদেশ দিয়েছেন: ‘‘(প্রিয় বৎস) পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে বিচরণ করো না।’’ [. সুরা লুকমান: ১৮।]
তের. দানশীল ও উদার
এ দুটি উত্তম চারিত্রিক গুণাবলীর অন্তর্ভুক্ত। ইসলামে সম্পদের মালিক একমাত্র আল্লাহ। আর মানুষ হচ্ছে তার ব্যবহারকারী বা ভোক্তা মাত্র। অতএব, সম্পদকে পুঞ্জিভুত করে না রেখে মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেয়া কতক মানুষের স্বভাবে পরিণত হয়েছে। খুলাফায়ে রাশেদীন ও সাহবায়ে কেরাম এক্ষেত্রে অনুকরণীয় আদর্শ। দানের ক্ষেত্রে তাঁরা আমাদের জন্য কিয়ামত অবধি মডেল হয়ে থাকবে। দানশীল লোকদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন:
وَيُطْعِمُونَ الطَّعَامَ عَلَى حُبِّهِ مِسْكِينًا وَيَتِيمًا وَأَسِيرًا، إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللهِ لَا نُرِيدُ مِنْكُمْ جَزَاءً وَلَا شُكُورًا
‘‘আহার্যের প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও তারা অভাবগ্রস্থ, ইয়াতীম ও বন্দীকে আহার্য দান করে এবং বলে, কেবল আললাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আমরা তোমাদেরকে আহার্য দান করি। আমরা তোমাদের নিকট হতে কোন প্রতিদান চাই না। কৃতজ্ঞতাও নয়।’’ [. সূরা আল-ইনসান: ৮-৯।]
চৌদ্দ. ধৈর্যশীল
ধৈর্য একটি মহৎ গুণ। ধৈর্যশীলকে মহান আল্লাহ ভালবাসেন। মানুষ এ পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরণের বাধা-বিপত্তি ও কষ্টের সম্মুখীন হয় যা দ্বারা মূলত: তাদের পরীক্ষা করা হয়। আর তা হলো ভয়, ক্ষুধা, সম্পদের ধ্বংস, জীবন ও সম্মানহানি প্রভৃতি। এক্ষেত্রে ধৈর্যশীলগণ খুব সহজেই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে সক্ষম হন। মহান আল্লাহ বলেন:
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنْ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِنْ الْأَمْوَالِ وَالْأَنفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرْ الصَّابِرِينَ - الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُمْ مُصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ
‘‘আমি তোমাদের কিছু ভয়; ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। তুমি শুভ সংবাদ দাও ধৈর্যশীলগণকে। যারা তাদের উপর বিপদ আপতিত হলে বলে, আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী।’’ [. সূরা আল-বাকারা: ১৫৫-১৫৬।]
পনের. অপরকে অগ্রাধিকার দান
মানুষের স্বভাব হলো অন্যের উপর নিজের প্রাধান্য বিস্তার করা। তথাপিও আল্লাহর একান্ত অনুগত কতক বান্দা রয়েছে; যারা নিজেদের আমিত্বকে ভুলে গিয়ে অপর ভাইকে অগ্রাধিকার দানে মহত্বের পরিচয় দিয়ে থাকে। সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন এ দৃষ্টান্তের মূর্ত প্রতীক। বিশেষত: আনসারগণ সকল সংকীর্ণতার উর্দ্ধে উঠে এক্ষেত্রে নিজেদের মডেল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:
وَالَّذِينَ تَبَوَّءُوا الدَّارَ وَالْإِيمَانَ مِنْ قَبْلِهِمْ يُحِبُّونَ مَنْ هَاجَرَ إِلَيْهِمْ وَلَا يَجِدُونَ فِي صُدُورِهِمْ حَاجَةً مِمَّا أُوتُوا وَيُؤْثِرُونَ عَلَى أَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ وَمَنْ يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُوْلَئِكَ هُمْ الْمُفْلِحُونَ
‘‘মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে যারা এ নগরীতে বসবাস করেছে ও ঈমান এনেছে তারা মুহাজিরদের ভালবাসা এবং মুহাজিরদের যা দেয়া হয়েছে তার জন্য তারা অন্তরে আকাঙ্খা পোষণ করে না। আর তারা তাদেরকে নিজেদের উপর অগ্রাধিকার দেয় নিজেরা অভাবগ্রস্থ হলেও। যাদেরকে অন্তরের কার্পন্য হতে মুক্ত রাখা হয়েছে তারাই সফলকাম।’’ [. সূরআ আল-হাশর: ৯।]
ষোল, ক্রোধ দমনকারী
ক্রোধ মানুষের মাঝে হিংসা-বিদ্বেষের সৃষ্টি করে দেয়। ক্রোর্ধের বশবর্তী হয়ে মানুষের পরস্পরের প্রতি ঘৃণাবোধ জন্ম নেয়। এমনকি অন্যায় পথে পা বাড়াতেও এ ক্রোধ মানুষকে সাহায্য করে। অতএব, ক্রোধ হলো বিভ্রান্তিকর একটি মানবিক দুর্বলতার নাম। মুমিনগণ এ ক্রোধকে দমন করে স্বীয় কাজে সিদ্ধহস্ত হয়ে থাকে। পবিত্র কুরআনে তাদের এ গুণটির উল্লেখ করে মহান আল্লাহ বলেন: ‘‘তারা নিজেদের ক্রোধকে সবরণ করে। [. সূরা আল-ইমরান: ১৪৩।] এ মনের অধিকারী ব্যক্তিগণই হলেন সৎকর্মপরায়ণ।
সতের. ক্ষমাশীল
ক্ষমা অন্যতম একটি মানবিক গুণাবলী। যা মানুষকে বড় মনের অধিকারী বানাতে সাহায্য করে এবং ক্রোধ সংবরণে সহায়তা করে। ক্রোধের সাথে ক্ষমা ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। ক্রোধের সাথেই ক্ষমাশীলতার উল্লেখ রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন:
أُوْلَئِكَ جَزَاؤُهُمْ مَغْفِرَةٌ مِنْ رَبِّهِمْ وَجَنَّاتٌ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَنِعْمَ أَجْرُ الْعَامِلِينَ
‘‘যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় ব্যয় করে এবং ক্রোধ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল; আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদেরকে ভালবাসেন।’’ [. সূরা আল-ইমরান: ১৩৬।]
এসব গুণাবলীর অধিকারী যেসব মানুষ রয়েছে, মুলত: তাদের জন্যেই মহান আল্লাহ স্বীয় গুণে গুণান্বিত হয়ে ক্ষমা ও চিরস্থায়ী সুখময় জান্নাতের ঘোষণা দিয়েছেন। উপরোল্লিখিত আয়াতের পূর্বোক্ত আয়াতে সে বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ইরশাদ হয়েছে:
وَسَارِعُوا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ
‘‘তোমরা ধাবমান হও তোমদের প্রতিপালকের ক্ষমার দিকে এবং সেই জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি আসমান ও যমীনের ন্যায়। যা প্রস্ত্তত রাখা হয়েছে মুত্তাকীদের জন্য।’’ [. সূরা আল-ইমরান: ১৩৩।]
খলিফা শব্দের শাব্দিক অর্থ হলো প্রতিনিধি, উত্তরাধিকারী। [. ড. মুহাম্মদ ফজলুর রহমান, আরবী-বাংলা ব্যবহারিক অভিধান, রিয়াদ প্রকাশনী, ঢাকা- চতুর্থ সংস্কার-২০০২, পৃ. ৩২২।] মহান আল্লাহ তাঁর অসংখ্য সৃষ্টির মাঝে মানুষকে স্বীয় খলিফা মনোনীত করেছেন। যে তারা দুনিয়ার তাঁর দীন প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে তাঁর প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। এ মর্মে সৃষ্টির প্রারম্ভেই তিনি ফেরেশতাদের করে ঘোষণা দিয়েছেন:
وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً قَالُوا أَتَجْعَلُ فِيهَا مَنْ يُفْسِدُ فِيهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَاءَ وَنَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ قَالَ إِنِّي أَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُونَ
‘‘স্মরণ কর, যখন তোমার প্রতিপালক ফিরিশতাদের বললেন, ‘‘আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করতেছি; তারা বলল, আপনি কি সেখানে এমন কাউকেও সৃষ্টি করবেন যে অশান্তি ঘটানে ও রক্তপাত করবে? আমরাই তো আপনার সপ্রশংস স্ততিগান ও পবিত্রতা ঘোষনা করি। তিনি বললেন, আমি জানি যা তোমরা জান না।’’ [. সূরা আল-বাকারা: ৩০।]
তিনি (আল্লাহ) শুধু খলিফা হিসেবেই সৃষ্টি করেননি; বরং তাদেরকে পরীক্ষার জন্য একজনকে অন্যজনের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন:
وَهُوَ الَّذِي جَعَلَكُمْ خَلَائِفَ الْأَرْضِ وَرَفَعَ بَعْضَكُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِيَبْلُوَكُمْ فِي مَا آتَاكُمْ إِنَّ رَبَّكَ سَرِيعُ الْعِقَابِ وَإِنَّهُ لَغَفُورٌ رَحِيمٌ
‘‘তিনিই তোমাদেরকে দুনিয়ার প্রতিনিধি করেছেন এবং যা তিনি তোমাদের দিয়েছেন সে সম্বন্ধে পরীক্ষার উদ্দেশ্যে তোমাদের কতজকে কতকের উপর মর্যাদায় উন্নীত করেছেন।’’ [. সুরা আন’আম: ১৬৫।]
এছাড়াও খলিফা হিসেবে একজন মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য বিধৃত করতে গিয়ে তিনি তাঁর মনোনীত বান্দা দাউদ (আ.) কে লক্ষ্য করে বলেন: ‘‘হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি, অতএব তুমি লোকদের মধ্যে সুবিচার কর এবং খেয়াল খুশির অনুসরণ করিও না, কেননা তা তোমাকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করবে। [. সূরা ছোয়াদ: ২৬।]
এখানে প্রতিনিধি হিসেবে একজন রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব ও কর্তব্য কি তার দিকে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে। কেননা মহান আল্লাহকে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে প্রমাণিত করতে হলে তাঁর আইনকেই শুধু মানুষের মাঝে পরিচালিত করতে হবে অন্যথায় তা হবে ব্যক্তি পুজা বা প্রবৃত্তির অনুসরণ। আর দাউদ (আ.) এ ধরনেরই একজন শাসক ছিলেন।
দুই. সর্বশ্রেষ্ঠ নি‘আমত জ্ঞানের অধিকারী
মানুষ বোধশক্তি সম্পন্ন প্রাণী। মহান আল্লাহ মানুষকে এমন জ্ঞান দান করেছেন যার সাহায্যে ভাল ও মন্দ, কল্যাণ-অকল্যাণ প্রভৃতির মাঝে পার্থক্য সুচিত করা যায়। এ জ্ঞান দ্বারাই মানুষ ফিরিশতাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত করেছে। অতএব জ্ঞানের ক্ষেত্রে মানুষ সকল প্রাণীর সেরা। পবিত্র কুরআনে এসেছে:
وَعَلَّمَ آدَمَ الْأَسْمَاءَ كُلَّهَا ثُمَّ عَرَضَهُمْ عَلَى الْمَلَائِكَةِ فَقَالَ أَنْبِئُونِي بِأَسْمَاءِ هَؤُلَاء إِنْ كُنتُمْ صَادِقِينَ- قَالُوا سُبْحَانَكَ لَا عِلْمَ لَنَا إِلَّا مَا عَلَّمْتَنَا إِنَّكَ أَنْتَ الْعَلِيمُ الْحَكِيمُ- قَالَ يَاآدَمُ أَنْبِئْهُمْ بِأَسْمَائِهِمْ فَلَمَّا أَنْبَأَهُمْ بِأَسْمَائِهِمْ قَالَ أَلَمْ أَقُلْ لَكُمْ إِنِّي أَعْلَمُ غَيْبَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَأَعْلَمُ مَا تُبْدُونَ وَمَا كُنتُمْ تَكْتُمُونَ
‘‘আর তিনি আদম কে যাবতীয় নাম শিক্ষা দিলেন তারপর ফিরিশতাদের সামনে সেগুলো প্রকাশ করলেন এবং বললেন ‘এগুলোর নাম আমাকে বলে দাও, ’ যদি তোমরা সত্যবাদী হও। তারা বলল, আপনি মহান পবিত্র। আপনি আমাদেরকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তাছাড়া আমাদের তো কোন জ্ঞান নেই। বস্ত্তত আপনি জ্ঞানমত ও প্রজ্ঞাময়। তিনি বললেন ‘‘হে আদম! তাদেরকে এসকল নাম বলে দাও’। সে তাদেরকে এ সবের নাম বলে দিল।’’ [. সূরা আল-বাকারা: ৩১-৩৩।]
জ্ঞানে মাধ্যমেই মানুষ প্রভৃত কল্যাণের অধিকারী হয়েছে। এজন্যই পবিত্র কুরআনে বারবার জ্ঞান আহরণে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়ার জন্য বলা হয়েছে-মহান আল্লাহ বলেন:
وَمَنْ يُؤْتَ الْحِكْمَةَ فَقَدْ أُوتِيَ خَيْرًا كَثِيرًا
যাকে জ্ঞান দান করা হয়েছে, তার প্রভৃত কল্যাণ সাধিত হয়েছে। [. সূরা আল-বাকারা: ২৬৯।]
তিনি আরো বলেন:
وَهُوَ الَّذِي يَتَوَفَّاكُمْ بِاللَّيْلِ وَيَعْلَمُ مَا جَرَحْتُمْ بِالنَّهَارِ ثُمَّ يَبْعَثُكُمْ فِيهِ لِيُقْضَى أَجَلٌ مُسَمًّى ثُمَّ إِلَيْهِ مَرْجِعُكُمْ ثُمَّ يُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ
‘‘বল অন্ধ ও চক্ষুম্মান কি সমান? তোমরা কি অনুধাবন কর না?’’ [. সূরা আল-আন’আম: ৬০।]
তিন. মানুষ মুক্ত ও স্বাধীন
মানুষ সাধারণত স্বাধীন চেতা ও মুক্ত বিহঙ্গের ন্যায় চলা-ফেরা করতে পছন্দ করে। কিসে কল্যাণ এবং কিসে তাদের অকল্যাণ তা জ্ঞাত হবার পরও তা গ্রহণের ক্ষেত্রে রয়েছে তাদের পূর্ণ স্বাধীনতা। মহান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থাশীল হওয়া পয়গম্বরী মিশন পরিচালনার প্রয়োজনীয় গুণাবলীতে মানব জীবন বিমন্ডিত। তারা দায়িত্বশীল জীব। উদ্যোগ ও কঠোর শ্রমের মাধ্যমে জীবনের পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের জন্য মানুষের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে। সমৃদ্ধি বা বিপর্যয় যে কোন একটিকে বেছে নেয়ায় তার রয়েছে পূর্ণ স্বাধীনতা। হয় সে সঠিক পথে চলে সমৃদ্ধির পানে বাড়াবে অথবা অকৃজ্ঞ হয়ে বাস্তবতা থেকে দূরে সরে যাবে। এ মর্মে মহান আল্লাহ বলেন:
إِنَّا خَلَقْنَا الْإِنسَانَ مِنْ نُطْفَةٍ أَمْشَاجٍ نَبْتَلِيهِ فَجَعَلْنَاهُ سَمِيعًا بَصِيرًا- إِنَّا هَدَيْنَاهُ السَّبِيلَ إِمَّا شَاكِرًا وَإِمَّا كَفُورًا
‘‘আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিলিত শুক্রবিন্দু হতে, তাকে পরীক্ষা করার জন্য এজন্য আমি তাকে করেছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন। আমি তাকে পথের নির্দেশ দিয়েছি, হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় সে অকৃতজ্ঞ হবে। [. সুরা আল-ইনসান: ২-৩।]
চার. মহত্ত্ব ও মর্যাদার বিভুষিত
জন্মগতভাবেই মহত্ব ও মর্যাদার গুণাবলীতে মানুষ বিভুষিত। বাস্তবেই আল্লাহ অপরাপর অসংখ্য প্রাণীর উপর তাকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। সে তার আসল সত্ত্বাকে তখনই আবিস্কার করতে পারে, যখন সে তার মহত্ত্ব ও মর্যাদাকে উপলব্ধি করতে পারবে এবং নিজকে সকল নীচতা, দাসত্ত্ব, অধীনতা ও ভোগ লালসার ক্ষুদ্রতার উর্ধ্বে স্থাপন করতে পারবে। মহান আল্লাহ বলেন:
وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِي آدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُمْ مِنْ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَى كَثِيرٍ مِمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيلًا
‘‘আমি তো আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি; স্থলে ও সমূদ্রে তাদের চলাচলের বাহন দিয়েছি; তাদেরকে উত্তম রিযিক দান করেছি এবং আমি যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের উপর মানুষদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি।’’ [. সুরা বনী ইসরাইল: ৭০।]
পাঁচ: নৈতিক চেতনাবোধ সম্পন্ন
মানুষের নৈতিক চেতনা আছে। তারা প্রকৃতিগতভাবেই ভালো আর মন্দ বুঝে নিতে পারে। কল্যাণ ও অকল্যাণের মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করতে পারে। মানুষের সত্তার মাঝেই এ সুপ্ত নৈতিক চেতনা লুকিয়ে আছে। কুরআনে বলা হয়েছে:
وَنَفْسٍ وَمَا سَوَّاهَا- فَأَلْهَمَهَا فُجُورَهَا وَتَقْوَاهَا
‘‘শপথ মানুষের এবং যিনি তাকে সুঠাম করেছেন। তাকে(মানুষকে) তার অসৎকর্ম ও তার সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন। [. সুরা আশশামস: ৭-৮।]
ছয়. আল্লাহর স্মরণে মানসিক প্রশান্তি লাভ
আল্লাহ স্মরণ ব্যতীত মানুষের হৃদয় প্রশান্তি লাভ করে না। মানুষের আকাঙ্খা, চাহিদা সীমাহীন। তথাপি কোন কিছুর আধিক্য তাদের মধ্যে একঘেয়েমীর সৃষ্টি করে। আধিক্য লাভে তারা প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়ে থাকে। বিপরীত দিকে মহান আল্লাহর চিরন্তন সত্তার সাথে মিলনের পথে তারা যত এগিয়ে যায়, তাদের ব্যগ্রতা আরো বেড়ে যায়। মহান আল্লাহর স্মরণ মানুষকে এসব ক্ষেত্রে একমাত্র প্রশান্তির পায়রা হয়ে আবর্তিত হয়। মহান আল্লাহ বলেন:
الَّذِينَ آمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُمْ بِذِكْرِ اللهِ أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
‘‘যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের চিত্ত প্রশাস্ত হয়; জেনে রেখ আল্লাহর স্মরণেই চিত্ত প্রশান্ত হয়।’’ [. সূরা আর-রাদ: ২৮।]
অতএব, মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের এবং মানুষের প্রশান্তির অন্যতম উপায় হলো আল্লাহর যিকির।
সাত: আল্লাহর ইবাদত পালনকারী
আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁরই ইবাদতের জন্য এবং একনিষ্ঠভাবে তাঁর আনুগত্য প্রদর্শন করার নিমিত্তে। এটাই তাদের প্রধান দায়িত্ব। মহান আল্লাহ বলেন:
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِي
আমার ইবাদতের জন্যই আমি সৃষ্টি করেছি মানুষ এবং জ্বীনকে। [. সূরা আয-যারিয়াত: ৫৬।]
কিন্তু মানুষ যদি আল্লাহর ইবাদত না করে এবং তাঁর সম্পর্কে চিন্তা গবেষণা না করে তাহলে তারা নিজেদের চিনতে পারবে না। আল্লাহর ব্যাপারে গাফেল হলে তারা নিজেদেরও ভুলে যাবে। এ পরিস্থিতিতে তারা বুঝতে পারবে না তাদের নিজেদের পরিচয় সম্পর্কে; তাদের সৃষ্টি ও অস্তিত্বের পেছনে কি উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে তাও ভুলে যাবে। এ বিষয়ে সর্তক করে দিয়ে ধমকের সুরে মহান আল্লাহ বলেন:
وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ نَسُوا اللهَ فَأَنْسَاهُمْ أَنْفُسَهُمْ أُوْلَئِكَ هُمْ الْفَاسِقُونَ
‘‘আর তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছে; ফলে আল্লাহ তাদেরকে আত্মবিস্মৃত করেছেন। তারাই তো পাপাচারী।’’ [. সূরা আল-হাশর: ১৯।]
আট. পরকালীন সফলতা ও আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধান
মানুষ বস্ত জাগতিক প্রেরণা বা উদ্দেশ্য নিয়েই বাঁচে না। অর্থাৎ বস্তগত চাহিদা বা প্রয়োজনই মানুষের সকল কর্মের পেছনে একমাত্র প্রেরণা নয় বরং তারা মহত্তর লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও আশা-আকাঙ্খা পুরণের জন্য প্রচেষ্টা চালায়। আর তা হলো পরকালীন সফলতা ও আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধান। অতএব, কোন কোন ক্ষেত্রে আল্লাহর সন্তুষ্টি ব্যতিরেকে তাদের সামনে আর কোন লক্ষ্যই থাকে না। এদিকে ইঙ্গিত করেই কুরআনুল কারীমে ঘোষিত হয়েছে মহাবাণী:
يَاأَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ - ارْجِعِي إِلَى رَبِّكِ رَاضِيَةً مَرْضِيَّةً - فَادْخُلِي فِي عِبَادِي- وَادْخُلِي جَنَّتِي
‘‘হে প্রশান্ত চিত্ত! তুমি তোমার প্রতিপালকের নিকট ফিরে আস সন্তুষ্ট ও সন্তোষ ভাজন হয়ে। আমার বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত হও আর আমার জান্নাতে প্রবেশ কর।’’ [. সূরা আল-ফাজর: ২৭-৩০।]
নয়: মজবুত ঈমান:
ঈমান মানে বিশ্বাস, প্রত্যয়, ধর্মীয় বিশ্বাস [. ড. মুহাম্মদ ফজলুর রহমান, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৪৩।] অন্তরের বিশ্বাস [. মুফতী আমীমুল ইহসান, কাওয়ায়েদুল ফিকহ, পৃ. ২০০।] । এক কথায় বলতে গেলে ঈমান হচ্ছে: স্বীকৃতি প্রদান। পরিভাষায়: ইসলামের মূল বিষয়গুলো মনে প্রাণে বিম্বাস করে মুখে স্বীকার করা এবং সে অনুযায়ী আমল করার নাম ঈমান।
মানুষের মধ্যে এমন কতক মানুষ আছে যারা আল্লাহ তাঁর রাসূল, ফিরিশতা, আসমানী গ্রন্থাবলী ও সদৃশ্য বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস রাখে। কোন অত্যাচারী শাসকের রক্ষচক্ষু ও তাদের বিন্দুমাত্র টলাতে পারে না। এমন ঈমানের এক জীবন্ত মডেল হিসাবে বিশ্বের বুকে সমাদৃত রয়েছেন, মুসলিম জাহানের প্রথম খলিফা আবু বকর সিদ্দিক (রা)। রাসূল (সা) এর প্রতি তাঁর এম বেশী অগাধ আস্থা ছিল যে, মিরাজের ঘটনার বিবরণ শুনামাত্রই তিনি তা বিশ্বাস করে ফেলেন। পবিত্র কুরআন মানুষকে দুভাবে ভাগ করেছে। ১. ঈমানদার ২. যারা ঈমান আনেনি এমন। তবে যারা ঈমান আনে তাদের অধিকাংশই মজবুত ঈমানের অধিকারী হওয়া বাঞ্চনীয়। অন্যথায় তারা বিশেষ বিশেষণে বিশেষিত হতে বাধ্য। তাইতো এরশাদ হয়েছে: যারা বরে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ; অত:পর অবিচলিত থাতে তাদের নিকট অবতীর্ণ হয় ফিরিশতা এবং বলে তোমার ভীত হইও না, চিন্তিত হইও না এবং তোমাদেরকে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তার জন্য আনন্দিত হও।’’ [. সূরা হা-মীম আস-সাজদা: ৩০।]
এ ধরনের ঈমানের অধিকারী যারা তারাই সফলকাম ও বিজয়ী হবে। তাদের জন্যেই মহান আল্লাহ পরকালে মহাপুরুস্কারের ঘোষনা দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন:
وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنْتُمْ الْأَعْلَوْنَ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ
‘‘তোমরা হীনবল হইও না এবং দুঃখিত হইও না; তোমরাই বিজয়ী যদি তোমরা মু’মিন হও।’’ [. সূরা আল-ইমরান: ১৩৯।]
দশ. দরিদ্র অথচ অল্পে তুষ্ট
সমাজে দু’ শ্রেণীর মানুষ বাস করে। এক. ধনী, দুই. দরিদ্র। ধনী এবং দরিদ্রের মাঝে বৈষম্য দুরীকরণার্থে ইসলামে যাকাতের বিধান রয়েছে যা ধনীদের সম্পদ থেকে উত্তোলণ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে বিতরণ করতে হয়। কেননা ইসলাম সুসামঞ্জস্যপূর্ণ জীবন ব্যবস্থার নাম। এতে যাকাতের বিধান রাখা হয়েছে যেন সম্পদ এক শ্রেণীর হাতে আবদ্ধ না হয়ে পড়ে। এ মর্মে ইরশাদ হয়েছে:
كَيْ لَا يَكُونَ دُولَةً بَيْنَ الْأَغْنِيَاءِ مِنْكُمْ
‘‘যাতে তোমাদের মধ্যে যারা বিত্তবান কেবল তাদের মধ্যেই সম্পদ আবর্তন না করে।’’ [. সুরা আল-হাশর: ৭।]
এতদসত্ত্বেও এমন কতিপয় মানুষ রয়েছে যারা অভাবগ্রস্থ হওয়া সত্বেও সন্তুষ্ট চিত্তে জীবন যাপন করে। তথাপিও মানুষের কাছে হাত পারে না এবং ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা বানায় না। পবিত্র কুরআনে তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে:
لِلفُقَرَاءِ الَّذِينَ أُحْصِرُوا فِي سَبِيلِ اللهِ لَا يَسْتَطِيعُونَ ضَرْبًا فِي الْأَرْضِ يَحْسَبُهُمْ الْجَاهِلُ أَغْنِيَاءَ مِنْ التَّعَفُّفِ تَعْرِفُهُمْ بِسِيمَاهُمْ لَا يَسْأَلُونَ النَّاسَ إِلْحَافًا
‘দান সাদকা তো ঐসব গরীব লোকদের জন্য, যারা আল্লাহর পথে এমনভাবে ব্যাপৃত যে, দেশময় ঘুরাফিরা করতে পারে না, অথচ লোকেরা হাত না পাতার কারণে তাদেরকে অভাবমুক্ত মনে করে; তুমি তাদের লক্ষণ দেখে চিনতে পারবে। তারা মানুষের নিকট কাকুতি মিনতি করে ভিক্ষা করে ভিক্ষা চায় না। [. সূরা আল-বাকারা: ২৭৩।] মূলত: অল্পে তুষ্টতাই শান্তির নিয়ামক। রাসূল (স.) বলেন:
الغنى غنى النفس
‘‘অন্তরের প্রাচুর্যতাই প্রকৃত প্রাচুর্য।’’ [. সহীত মুসলিম: হাদীস নং ১০৫১।]
এগার. তাকওয়া সম্পন্ন
তাকওয়া আরবী শব্দ। অর্থ হলো আল্লাহর ভয়, পরহেযগারি, দ্বীনদারী, ধার্মিকতা। [. ড. মুহাম্মদ ফজলুর রহমান, প্রাগুক্ত, পৃ. ২১৯।] যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদেরকেই মুত্তাকী বলা হয়। মহাগ্রন্থ আল-কুরআন কেবল মুত্তাকীদের জন্যই পথ প্রদর্শক। কুরআনের বিভিন্নস্থানে মানুষকে লক্ষ্য করে পরিপূর্ণ তাকওয়াবান হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেমন বলা হয়েছে:
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে যেভাবে ভয় করা উচিত সেরূপ ভয় কর এবং মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।’’ [. সূর আল-ইমরান: ১০২।]
এ তাকওয়ার গুণে গুনান্বিত করার জন্য মানুষের উচিত, অধিক পরিমাণে তাঁকে স্মরণ করা এবং সকল কাজ তাঁর দেয়া বিধান অনুযায়ী পরিচালনা করা। এ সব লোকদের প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন:
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آياتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ
‘মু’মিন তো তারাই যাদের হৃদয় কম্পিত হয় যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। এবং যখন তাঁর আয়াত তাদের নিকট পাঠ করা হয়, তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়। আর তারা তাদের প্রতিপালকের উপরই নির্ভর করে।’’ [. সুরা আল-আরফাল:২।]
প্রকৃত পক্ষে মহান আল্লাহর নিদের্শিত পন্থায় যারা জীবন অতিবাহিত করে এবং তাঁর নিষিদ্ধ বিষয় ও কাজ সমূহ থেকে নিজেকে বাuঁচয়ে রাখে তারাই মুত্তাকী। এ সব লোকদের জন্যই মহান আল্লাহ চিরস্থায়ী সুখময় জান্নাতের ঘোষণা দিয়েছেন।
বার. বিনয়ী ও ভদ্র
বিনয় ও নম্রতা মানুষের অন্যতম চারিত্রিক ভূষণ। বিনয় মানুষকে উচ্চ আসনে সমাসীন করতে এবং গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্বে পরিণত করতে সহায়তা করে। বিনীয়কে মানুষ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। এ মর্মে ইরশাদ হয়েছে:
وَعِبَادُ الرَّحْمَنِ الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الْأَرْضِ هَوْنًا وَإِذَا خَاطَبَهُمْ الْجَاهِلُونَ قَالُوا سَلَامًا
‘‘রামমানের’ বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদেরকে যখন অজ্ঞ ব্যক্তিরা সম্বোধন করে তখন তারা শান্তি কামনা করে (তর্কে অবতীর্ণ হয় না)।’’ [. সূরা আল-ফুরকান: ৬৩।] শুধু তাই নয়, একজন বিদগ্ধ পন্ডিত ও আল্লাহর প্রিয় বান্দা লুকমানও তার পুত্রকে একই আদেশ দিয়েছেন: ‘‘(প্রিয় বৎস) পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে বিচরণ করো না।’’ [. সুরা লুকমান: ১৮।]
তের. দানশীল ও উদার
এ দুটি উত্তম চারিত্রিক গুণাবলীর অন্তর্ভুক্ত। ইসলামে সম্পদের মালিক একমাত্র আল্লাহ। আর মানুষ হচ্ছে তার ব্যবহারকারী বা ভোক্তা মাত্র। অতএব, সম্পদকে পুঞ্জিভুত করে না রেখে মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেয়া কতক মানুষের স্বভাবে পরিণত হয়েছে। খুলাফায়ে রাশেদীন ও সাহবায়ে কেরাম এক্ষেত্রে অনুকরণীয় আদর্শ। দানের ক্ষেত্রে তাঁরা আমাদের জন্য কিয়ামত অবধি মডেল হয়ে থাকবে। দানশীল লোকদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন:
وَيُطْعِمُونَ الطَّعَامَ عَلَى حُبِّهِ مِسْكِينًا وَيَتِيمًا وَأَسِيرًا، إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللهِ لَا نُرِيدُ مِنْكُمْ جَزَاءً وَلَا شُكُورًا
‘‘আহার্যের প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও তারা অভাবগ্রস্থ, ইয়াতীম ও বন্দীকে আহার্য দান করে এবং বলে, কেবল আললাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আমরা তোমাদেরকে আহার্য দান করি। আমরা তোমাদের নিকট হতে কোন প্রতিদান চাই না। কৃতজ্ঞতাও নয়।’’ [. সূরা আল-ইনসান: ৮-৯।]
চৌদ্দ. ধৈর্যশীল
ধৈর্য একটি মহৎ গুণ। ধৈর্যশীলকে মহান আল্লাহ ভালবাসেন। মানুষ এ পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরণের বাধা-বিপত্তি ও কষ্টের সম্মুখীন হয় যা দ্বারা মূলত: তাদের পরীক্ষা করা হয়। আর তা হলো ভয়, ক্ষুধা, সম্পদের ধ্বংস, জীবন ও সম্মানহানি প্রভৃতি। এক্ষেত্রে ধৈর্যশীলগণ খুব সহজেই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে সক্ষম হন। মহান আল্লাহ বলেন:
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنْ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِنْ الْأَمْوَالِ وَالْأَنفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرْ الصَّابِرِينَ - الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُمْ مُصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ
‘‘আমি তোমাদের কিছু ভয়; ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। তুমি শুভ সংবাদ দাও ধৈর্যশীলগণকে। যারা তাদের উপর বিপদ আপতিত হলে বলে, আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী।’’ [. সূরা আল-বাকারা: ১৫৫-১৫৬।]
পনের. অপরকে অগ্রাধিকার দান
মানুষের স্বভাব হলো অন্যের উপর নিজের প্রাধান্য বিস্তার করা। তথাপিও আল্লাহর একান্ত অনুগত কতক বান্দা রয়েছে; যারা নিজেদের আমিত্বকে ভুলে গিয়ে অপর ভাইকে অগ্রাধিকার দানে মহত্বের পরিচয় দিয়ে থাকে। সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন এ দৃষ্টান্তের মূর্ত প্রতীক। বিশেষত: আনসারগণ সকল সংকীর্ণতার উর্দ্ধে উঠে এক্ষেত্রে নিজেদের মডেল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:
وَالَّذِينَ تَبَوَّءُوا الدَّارَ وَالْإِيمَانَ مِنْ قَبْلِهِمْ يُحِبُّونَ مَنْ هَاجَرَ إِلَيْهِمْ وَلَا يَجِدُونَ فِي صُدُورِهِمْ حَاجَةً مِمَّا أُوتُوا وَيُؤْثِرُونَ عَلَى أَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ وَمَنْ يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُوْلَئِكَ هُمْ الْمُفْلِحُونَ
‘‘মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে যারা এ নগরীতে বসবাস করেছে ও ঈমান এনেছে তারা মুহাজিরদের ভালবাসা এবং মুহাজিরদের যা দেয়া হয়েছে তার জন্য তারা অন্তরে আকাঙ্খা পোষণ করে না। আর তারা তাদেরকে নিজেদের উপর অগ্রাধিকার দেয় নিজেরা অভাবগ্রস্থ হলেও। যাদেরকে অন্তরের কার্পন্য হতে মুক্ত রাখা হয়েছে তারাই সফলকাম।’’ [. সূরআ আল-হাশর: ৯।]
ষোল, ক্রোধ দমনকারী
ক্রোধ মানুষের মাঝে হিংসা-বিদ্বেষের সৃষ্টি করে দেয়। ক্রোর্ধের বশবর্তী হয়ে মানুষের পরস্পরের প্রতি ঘৃণাবোধ জন্ম নেয়। এমনকি অন্যায় পথে পা বাড়াতেও এ ক্রোধ মানুষকে সাহায্য করে। অতএব, ক্রোধ হলো বিভ্রান্তিকর একটি মানবিক দুর্বলতার নাম। মুমিনগণ এ ক্রোধকে দমন করে স্বীয় কাজে সিদ্ধহস্ত হয়ে থাকে। পবিত্র কুরআনে তাদের এ গুণটির উল্লেখ করে মহান আল্লাহ বলেন: ‘‘তারা নিজেদের ক্রোধকে সবরণ করে। [. সূরা আল-ইমরান: ১৪৩।] এ মনের অধিকারী ব্যক্তিগণই হলেন সৎকর্মপরায়ণ।
সতের. ক্ষমাশীল
ক্ষমা অন্যতম একটি মানবিক গুণাবলী। যা মানুষকে বড় মনের অধিকারী বানাতে সাহায্য করে এবং ক্রোধ সংবরণে সহায়তা করে। ক্রোধের সাথে ক্ষমা ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। ক্রোধের সাথেই ক্ষমাশীলতার উল্লেখ রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন:
أُوْلَئِكَ جَزَاؤُهُمْ مَغْفِرَةٌ مِنْ رَبِّهِمْ وَجَنَّاتٌ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَنِعْمَ أَجْرُ الْعَامِلِينَ
‘‘যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় ব্যয় করে এবং ক্রোধ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল; আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদেরকে ভালবাসেন।’’ [. সূরা আল-ইমরান: ১৩৬।]
এসব গুণাবলীর অধিকারী যেসব মানুষ রয়েছে, মুলত: তাদের জন্যেই মহান আল্লাহ স্বীয় গুণে গুণান্বিত হয়ে ক্ষমা ও চিরস্থায়ী সুখময় জান্নাতের ঘোষণা দিয়েছেন। উপরোল্লিখিত আয়াতের পূর্বোক্ত আয়াতে সে বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ইরশাদ হয়েছে:
وَسَارِعُوا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ
‘‘তোমরা ধাবমান হও তোমদের প্রতিপালকের ক্ষমার দিকে এবং সেই জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি আসমান ও যমীনের ন্যায়। যা প্রস্ত্তত রাখা হয়েছে মুত্তাকীদের জন্য।’’ [. সূরা আল-ইমরান: ১৩৩।]
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন