মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
অনুবাদঃ (১) আবদুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন যে, আল্লাহ লা‘নত করেছেন হালালকারী ও যার জন্য হালাল করা হয় উভয় ব্যক্তিকে’। তাঁর থেকে অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) লা‘নত করেছেন’..।[1] (২) উক্ববা বিন আমের (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, আমি কি তোমাদেরকে ভাড়াটে ষাঁড় সম্পর্কে খবর দিব না? ছাহাবীগণ বললেন, অবশ্যই হে রাসূলুল্লাহ। তখন তিনি বললেন, সে হ’ল ঐ হালালকারী ব্যক্তি। আল্লাহ লা‘নত করেছেন হালালকারী ও যার জন্য হালাল করা হয় উভয় ব্যক্তিকে’।[2]
‘তাহলীল’ অর্থ : হালাল করা। প্রচলিত অর্থে একত্রিত তিন তালাক প্রাপ্তা স্ত্রীকে তার পূর্ব স্বামীর নিকটে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য দ্বিতীয় একজনকে স্বল্প সময়ের জন্য স্বামীত্বে বরণ করে সহবাস শেষে তালাক নিয়ে প্রথম স্বামীর জন্য তাকে হালাল করা। এদেশে এই ধরনের বিবাহকে ‘হিল্লা’ বিবাহ বলা হয়।
বুলূগুল মারামের ভাষ্যগ্রন্থ সুবুলুস সালাম-এর লেখক আল্লামা ছান‘আনী বলেন, এ হাদীছ হ’ল তাহলীল হারাম হওয়ার দলীল। কেননা হারামকারী ব্যতীত অন্যের উপরে লা‘নত করা হয় না। আর প্রত্যেক হারাম বস্ত্ত নিষিদ্ধ। এখানে নিষিদ্ধতার দাবী হ’ল বিবাহ ভঙ্গ হওয়া। ....তাহলীল-এর অনেকগুলি পদ্ধতি লোকেরা বর্ণনা করেছেন। লা‘নত-এর কারণে সকল প্রকার পদ্ধতির তাহলীল বা হিল্লা বিবাহ বাতিল (ফাসিদ)।[3]
তিরমিযীর ভাষ্যকার আবদুর রহমান মুবারকপুরী বলেন, তাবেঈন ছাড়াও মুজতাহিদ ফক্বীহদের মধ্যে শাফেঈ, আহমাদ, ইসহাক্ব, সুফিয়ান ছাওরী, আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক প্রমুখ সবাই উক্ত হাদীছের উপরে আমল করে তাহলীলকে হারাম বলেছেন ও এর উপরেই তাঁদের ফৎওয়া রয়েছে।
পক্ষান্তরে ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) ও তাঁর শিষ্যবৃন্দ তাহলীলকে জায়েয রেখেছেন এবং মাননীয় ‘হেদায়া’ লেখক উক্ত হাদীছ দ্বারা দলীল এনেছেন। অতঃপর হেদায়া-র ভাষ্যকার আল্লামা যায়লা‘ঈ যুক্তি দেখিয়েছেন যে,
‘যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঐ ব্যক্তিকে হালালকারী বলেছেন, তখন এটাই ‘তাহলীল’-এর বিবাহ সিদ্ধ হওয়ার দলীল। কেননা হালালকারী ব্যক্তি পূর্ব স্বামীর জন্য তার স্ত্রীকে প্রতিষ্ঠিত করে। অতএব যদি তাহলীল-এর বিবাহ বাতিল হ’ত, তাহ’লে ঐ ব্যক্তিকে হালালকারী বলা হ’ত না’।[4] তিরমিযীর ভাষ্যকার আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী আরফুশ শাযীতে বলেন, আমাদের নিকটে প্রসিদ্ধ কথা এই যে, তাহলীল-এর শর্তটি পাপযু্ক্ত হ’লেও বিবাহ সিদ্ধ হবে।.... আমাদের কোন কোন কিতাবে রয়েছে যে, যদি শব্দ উচ্চারণের মাধ্যমে স্ত্রীকে ফিরিয়ে দেওয়ার শর্ত না করা হয়, তাহ’লেও একজন মুসলমান ভাইয়ের উপকার করার জন্য হালালকারী ব্যক্তি ছওয়াবের অধিকারী হবে’। বরং কোন কোন হানাফী গ্রন্থে পরিষ্কার বলা আছে যে, উভয়ের মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়ার শর্ত থাকলেও হালালকারী ব্যক্তি ছওয়াবের অধিকারী হবে ( انه مأجور ) তাদের মধ্যকার (পারিবারিক) ‘ইছলাহ’ বা সংশোধনের জন্য। বলতেকি এ প্রথাই এদেশে (উপমহাদেশে) চালু আছে এবং তারা এর মাধ্যমে নেকীর কাজ করছেন বলে মনে করে থাকেন।[5]
জবাবে বলা চলে যে, হাদীছে ‘হালালকারী’ কথাটি বলা হয়েছে হালালকারী ব্যক্তির নিজস্ব ধারণা অনুযায়ী। যদিও এটি আল্লাহর নিকটে হারাম। যেমন মুশরিক ও বিদ‘আতীরা নেকীর কাজ মনে করেই শিরক ও বিদ‘আত সমূহ করে থাকি। যদিও সেগুলি আল্লাহর নিকটে হারাম। কেননা যে ব্যক্তি তাহলীল করে, সে স্রেফ এই নিয়তেই করে যে, এর মাধ্যমে ঐ মহিলাটিকে তার পূর্ব স্বামীর নিকটে ফিরে যাবার পথ খুলে দেবে এবং তাকে তার জন্য আইনসিদ্ধ করে দেবে। মুখে বলুক বা না বলুক শর্ত করুক বা না করুক, প্রচলিত তাহলীল বা হিল্লা বিবাহ মানেই হ’ল এটা। তাহলীল কখনোই স্থায়ী বিবাহ নয়। এটি স্রেফ অস্থায়ী ও সাময়িক বিবাহ। অতএব শরী‘আতের দৃষ্টিতে একে বিবাহ বলা অন্যায়।
তাহলীল-এর হুকুম :
ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর যামানায় এটিকে سِفَاحٌ বা ‘যেনা বলে গণ্য করতাম’। তিনি বলেন, এরা দু’জনেই ব্যভিচারী। যদিও তারা ২০ বছর যাবত স্বামী-স্ত্রী নামে দিন যাপন করে’।[6] ওমর ফারূক (রাঃ) বলতেন, ‘হালালকারী’ ব্যক্তি বা যার জন্য হালাল করা হয়েছে, এমন কাউকে আনা হ’লে আমি তাকে স্রেফ ‘রজম’ করব।[7] অর্থাৎ ব্যভিচারীর শাস্তির ন্যায় বুক পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে অতঃপর পাথর মেরে মাথা ফাটিয়ে শেষ করে দেব।
ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, তাহলীল-এর সময় মুখে শর্ত করুক বা না করুক, মদীনাবাসী বিদ্ধানমন্ডলী এবং আহলুল হাদীছ ও তাদের ফক্বীহদের নিকটে ঐ বিবাহ বাতিল। কেননা এই সাময়িক বাহ্যিক বিবাহ মিথ্যা ও ধোঁকা ছাড়া আর কিছুই নয়। আল্লাহ প্রেরিত শরী‘আতে এটা সিদ্ধ নয় এবং এটা কোন কিছুকে সিদ্ধ করতে পারে না। কেননা এর ক্ষতিকারিতা কারো নিকটে গোপন নয়’।
ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, আল্লাহর দ্বীন পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন। তা কখনোই হারাম পন্থায় কোন নারীকে হালাল করার অনুমতি দেয় না। যতক্ষণ কোন পশু স্বভাবের পুরুষকে ‘ভাড়াটে ষাঁড়’ হিসাবে উক্ত কাজে ব্যবহার না করা হয়। তিনি বলেন, কিভাবে কোন হারাম বস্ত্ত অন্যকে হালাল করতে পারে? কিভাবে কোন অপবিত্র বস্ত্ত অন্যকে পবিত্র করতে পারে?
সাইয়িদ সাবিক্ব বলেন, ‘এটাই সঠিক কথা এবং একথাই বলেন, ইমাম মালেক আহমাদ, ছাওরী, আহলুয যাহের এবং অন্যান্য ফক্বীহগণ। যেমন হাসান বছরী, ইবরাহীম নাখঈ, ক্বাতাদাহ, লাইছ, ইবনুল মুবারক প্রমুখ। পক্ষান্তরে ইমাম আবু হানীফা ও যুফার (রহঃ) বলেন, তাহলীল-এর সময় যদি শর্ত করে তাহ’লে বিবাহ সিদ্ধ হবে। তবে তা মাকরূহ হবে। কেননা অন্যায় শর্তের জন্য বিবাহ বাতিল হ’তে পারে না। ইমাম আবু ইউসুফ (রহঃ)-এর মতে উক্ত বিবাহ বাতিল (ফাসিদ) হবে। কেননা এটি সাময়িক বিবাহ (যা শারঈ বিবাহের উদ্দেশ্য বিরোধী)। ইমাম মুহাম্মাদ (রহঃ)-এর মতে বিবাহ সিদ্ধ হবে। তবে পূর্ব স্বামীর জন্য স্ত্রী হালাল হবে না’।[8] মোট কথা কুরআনে বর্ণিত নিয়মানুসারে তিন তুহরে তিন তালাক দেওয়ার পরে স্ত্রী স্বেচ্ছায় অন্য স্বামী গ্রহণ করবে।
অতঃপর যদি কখনো সেই স্বামী স্বেচ্ছায় তালাক দেয় এবং পূর্ব স্বামী তাকে পুনরায় আগ্রহের সাথে গ্রহণ করতে চায়, তখনই কেবল ঐ স্ত্রী তার প্রথম স্বামীর নিকটে নতুন বিবাহের মাধ্যমে ফেরত আসতে পারে। এ ব্যতীত অন্য কোন হীলা-বাহানা ও কৌশল করে ‘তাহলীল’ নামক নোংরা পন্থার আশ্রয় নিয়ে পূর্ব স্বামীর নিকটে ফিরে আসার কোন সুযোগ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ) দেননি। যদিও উপমহাদেশে এই নোংরা প্রথাই চলছে ইসলামের নামে ও কুরআন-সুন্নাহর দোহাই দিয়ে। অথচ বাস্তবে এটি চালু হয়েছে উম্মতের একটি দলের মাযহাবী তাক্বলীদের দুঃখজনক পরিণতি হিসাবে। যেমন-
মিশকাতের বাংলা অনুবাদক নূর মোহাম্মাদ আজমী উক্ত হাদীছের (নং ৪০৬২, ৬/৩২৩ পৃঃ) ব্যাখ্যায় বলেন, অপর হাদীছে হালালকারীকে ধারের ষাঁড় বলা হয়েছে। কেহ কাহারো তিন তালাক দেওয়া নারী এ শর্তে বিবাহ করিল যে, সে সহবাস করিয়া ছাড়িয়া দিবে যাহাতে প্রর্থম স্বামী বিবাহ করিতে পারে- এই ব্যক্তিকে ‘মুহাল্লেল’ হালালকারী বলে। ইমাম আবু হানিফার মতে এইরূপ বিবাহ জায়েজ, তবে মাকরূহ তাহরিমী। কিন্তু ইমাম আবু ইউছুফ, মালেক (একমত অনুসারে শাফেয়ী) ও ইমাম আহমদের মতে এইরূপ বিবাহ ফাছেদ। প্রথম স্বামীর পক্ষে ঐ নারীর বিবাহ জায়েয নহে। হাঁ, শর্তে আবদ্ধ না হইয়া যদি কেহ প্রথম স্বামীর উপকারার্থে বিবাহ করে এবং পরে ছাড়িয়ে দেয় তাহাতে সে পুণ্য লাভ করিবে। হাদীছ তার প্রতি প্রযোজ্য নহে’।
সৈয়দ আবুল আ‘লা মওদূদী ‘তাহলীল’ বা পাতানো বিয়ে সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন যে, ‘এ ধরনের বিয়েতে আগে থেকেই শর্ত থাকে যে, নারীকে তার পূর্ব স্বামীর জন্য হালাল করার নিমিত্তে এক ব্যক্তি তাকে বিয়ে করবে এবং সহবাস করার পর তালাক দিবে। ইমাম আবু ইউসুফের (রহঃ) মতে এ ধরনের শর্তযুক্ত বিয়ে আদৌ বৈধ হয় না। ইমাম আবু হানীফার (রহ:) মতে এভাবে তাহলীল হয়ে যাবে, তবে কাজটি মাকরূহ তাহরিমী বা হারাম পর্যায়ের মাকরূহ’। এরপরে তিনি (দরসে বর্ণিত) দু’টি হাদীছ এনে কোনরূপ মন্তব্য ছাড়াই আলোচনা শেষ করেছেন।[9]
তাহলীল-এর কারণ :
সাময়িক উত্তেজনার বশে অথবা অজ্ঞতা বশে স্বামী কখনো স্ত্রীকে তিন তালাক একত্রে দিয়ে বসে। ফলে তালাকের সংখ্যাগত সীমা শেষ হওয়ার কারণে তার অনুশোচনা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। এমতাবস্থায় স্ত্রীর প্রেম, সন্তানের মায়া ও সংসারের শৃংখলা রক্ষার স্বার্থে সে স্ত্রীকে ফিরে পাওয়ার জন্য একসময় মরিয়া হয়ে ওঠে। ওদিকে স্ত্রীর অবস্থা হয় আরো করুণ। চোখের পানি ছাড়া তার আর কিছুই বলার থাকে না। নিজ হাতে সাজানো সংসারের মায়া তাকে পাগলিনী করে ফেলে। উভয়ের এই নাযুক মানসিক অবস্থার প্রেক্ষিতে তারা স্বামী-স্ত্রী পুনর্মিলনের জন্য যেকোন কাজ করতে রাযী হয়ে যায়। আর এসময়েই ‘তাহলীল’-এর নোংরা পদ্ধতি পেশ করা হয় ধর্মের নামে। যা তারা ইচ্ছার বিরুদ্ধে কবুল করে নেয়।
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।