মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
(১) রঈসুল মুফাসসিরীন খ্যাতনামা ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) (মৃঃ ৬৮ হিঃ) أَنْ أَقِيْمُوا الدِّيْنَ ‘তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর’-এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, أَنِ اتَّفِقُوْا فِى الدِّيْنِ ‘তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ থাক’। এর পূর্বে তিনি ‘দ্বীন’ অর্থে বলেন, ‘ইসলাম’ ( دين الإسلام )।[1]
(২) ইবনু জারীর ত্বাবারী (মৃঃ ৩১০ হিঃ) বলেন, সকল নবীকে আল্লাহ পাক যে হুকুম দিয়েছিলেন, সেটা ছিল দ্বীনে হক-এর প্রতিষ্ঠা। অতঃপর তিনি তাবেঈ বিদ্বান মুজাহিদ-এর বক্তব্য তুলে ধরেন যে, مَا اَوْصَاكَ بِهِ وَاَنْبِيَاءَهُ كُلَّهُمْ دِيْنٌ وَاحِدٌ ‘আল্লাহ আপনাকে ও তাঁর অন্য নবীদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, সকল দ্বীনই এক’। অতঃপর ক্বাতাদাহ-এর উদ্ধৃতি পেশ করেন بِتَحْلِيْلِ الْحَلاَلِ وَتَحْرِيْمِ الْحَرَامِ ‘হালালকে হালাল ও হারামকে হারাম’ গণ্য করার মাধ্যমে দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর।[2]
(৩) কুরআনের যুগশ্রেষ্ঠ সূক্ষ্ম তত্ত্ববিদ ইমাম হাসান বিন মুহাম্মাদ নিশাপুরী (মৃঃ ৪০৬ হিঃ) বলেন, هُوَ إِقَامَةُ الدِّيْنِ يَعْنِىْ إِقَامَتُ اُصُوْلِهِ مِنَ التَّوْحِيْدِ وَالنَّبُوَّةِ وَالْمَعَادِ وَنَحْوُ ذَلِكَ دُوْنَ الْفُرُوْعِ الَّتِىْ تَخْتَلِفُ بِحَسْبِ الْاَوْقَاتِ لِقَوْلِهِ تَعَالَى : لِكُلٍّ جَعَلْنَا مِنْكُمْ شِرْعَةً وَّ مِنْهَاجًا - অর্থাৎ ‘দ্বীনের উছূল বা মূলনীতি সমূহ প্রতিষ্ঠিত কর। যেমন তাওহীদ, নবুঅত, আখেরাত বিশ্বাস বা অনুরূপ বিষয় সমূহ’। শাখা-প্রশাখা বিষয় সমূহ নয়, যা সময়ভেদে পরিবর্তিত হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন, তোমাদের জন্য আমরা পৃথক পৃথক বিধি-বিধান ও পদ্ধতি সমূহ নির্ধারিত করেছি’ (মায়েদাহ ৪৮)।[3]
(৪) ইমাম মাওয়ার্দী (৩৬৪-৪৫০ হিঃ) সুদ্দী-র উদ্ধৃতি পেশ করেন, اِعْمَلُوْا بِهِ ‘দ্বীন অনুযায়ী আমল কর’। অতঃপর তাবেঈ বিদ্বান মুজাহিদ-এর বক্তব্য উদ্ধৃত করেন, دِيْنُ اللهِ فِىْ طَاعَتِهِ وَتَوْحِيْدِهِ وَاحِدٌ ‘আল্লাহর দ্বীন তাঁর আনুগত্যে ও একত্বে একই’। অতঃপর নিজের পক্ষ থেকে তৃতীয় ব্যাখ্যা পেশ করে বলেন, جَاهِدُوْا عَلَيْهِ مَنْ عَانَدَهُ ‘আল্লাহর দ্বীনের বিরোধীদের সাথে জিহাদ কর’।[4]
(৫) ইমাম কুরতুবী (মৃঃ ৬৭১ হিঃ) বলেন, هُوَ تَوْحِيْدُ اللهِ وَطَاعَتُهُ الخ ‘দ্বীন প্রতিষ্ঠিত কর’ অর্থ হ’ল : আল্লাহর তাওহীদ ও তাঁর আনুগত্য, তাঁর রাসূলগণের উপরে, কিতাব সমূহের উপরে, ক্বিয়ামত দিবসের উপরে এবং একজন মানুষকে মুসলিম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যেসব বিষয় প্রয়োজন সবকিছুর উপরে ঈমান আনয়ন কর। অবস্থার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন উম্মতের উপরে যেসকল শরী‘আত বা ব্যবহারিক বিধি-বিধান নির্ধারিত হয়েছে, সেগুলি এই আয়াতের বিষয়বস্ত্তর অন্তর্ভুক্ত নয়’।[5]
(৬) ইমাম বায়যাভী (মৃঃ ৬৮৫ হিঃ) বলেন, দ্বীন অর্থ যেসবের উপরে একীন রাখা ওয়াজিব, সেসবের উপরে ঈমান আনা এবং আল্লাহর বিধান সমূহের আনুগত্য করা’ ( اَلْإِيْمَانُ بِمَا يَجِبُ تَصْدِيْقَهُ وَالطَّاعَةُ فِىْ اَحْكَامِ اللهِ )।[6]
(৭) হাফেয ইবনু কাছীর (৭০১-৭৭৪ হিঃ) বলেন, اَلدِّيْنُ الَّذِيْ جَاءَتْ بِهِ الرُّسُلُ كُلُّهُمْ هُوَ : عِبَادَةُ اللهِ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ وَإِنِ اخْتَلَفَتْ شَرَائِعُهُمْ وَمَنَاهِجُهُمْ অর্থাৎ ‘ঐ দ্বীন যা নিয়ে সকল রাসূল আগমন করেছিলেন, তা হ’ল একক আল্লাহর ইবাদত করা, যার কোন শরীক নেই। যদিও তাঁদের শরী‘আত ও কর্মধারা পৃথক ছিল’।[7]
(৯) ইমাম শাওকানী (১১৭২-১২৫০ হিঃ) বলেন, أَيْ تَوْحِيْدُ اللهِ وَالْإِيْمَانُ بِهِ وَطَاعَةُ رُسُلِهِ وَقُبُوْلُ شَرَائِعِهِ ‘তা হ’ল আল্লাহর তাওহীদ ও তাঁর উপরে ঈমান আনা, তাঁর রাসূলগণের উপরে ঈমান আনা ও আল্লাহর শরী‘আত সমূহ কবুল করা’।[9]
(১০) আব্দুর রহমান বিন নাছির সা‘দী (১৩০৭-৭৬ হিঃ) বলেন, এর অর্থ হ’ল, أَمَرَكُمْ أَنْ تُقِيْمُوْا جَمِيْعَ شَرَائِعِ الدِّيْنِ أُصُوْلَهُ وَفُرُوْعَهُ، تُقِيْمُوْنَهُ بِأَنْفُسِكُمْ وَتَجْتَهِدُوْنَ فِىْ إِقَامَتِهِ عَلَى غَيْرِكُمْ ‘তোমরা মূল ও শাখাসমূহ সহকারে দ্বীনের সকল বিধি-বিধান নিজেদের জীবনে প্রতিষ্ঠিত কর এবং অপরের মধ্যে তা প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা কর। নেকী ও তাক্বওয়ার কাজে পরস্পরকে সাহায্য কর। অন্যায় ও গোনাহের কাজে কাউকে সাহায্য করো না। ... অতঃপর দ্বীনের মূলনীতির ব্যাপারে এক থাকার পরে বিভিন্ন মাসায়েলের কারণে তোমরা দলে দলে বিভক্ত হয়ো না’।[10]
(১১) সাইয়িদ কুতুব (১৯০৬-৬৬ খৃঃ) অত্র সূরার শুরুতে সারমর্ম বর্ণনায় বলেন, সকল মাক্কী সূরার ন্যায় এ সূরাটিও আক্বীদা বিষয়ে বক্তব্য রেখেছে। তবে এ সূরাটিতে বিশেষভাবে অহী ও রিসালাতের বিষয়ে দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়েছে। বরং যথার্থভাবে বলতে গেলে বলতে হয় যে, এটাই হ’ল এ সূরার মুখ্য এবং প্রতিপাদ্য বিষয় ( اَلْمِحْوَرُ الرَّئِيْسِىُّ )। অতঃপর ‘আক্বীমুদ্দীন’-এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, আমরা সূরার প্রথমে যে সারমর্ম ব্যাখ্যা করেছি, সেই হাক্বীক্বত বা সারবস্ত্তকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই এখানে নির্দেশ করা হয়েছে। ..... আর সেটা হ’ল ‘তাওহীদের হাক্বীক্বত’ ( حَقِيْقَةُ التَّوْحِيْدِ )।[11]
ছাহাবায়ে কেরামের সোনালী যুগ হ’তে আধুনিক যুগের সেরা মুফাসসিরগণের তাফসীর উপরে পেশ করা হ’ল। যেগুলির সারমর্ম হ’ল ‘ইক্বামতে দ্বীন’ অর্থ তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করা। আমরাও সেই ব্যাখ্যা পেশ করেছি। কিন্তু বর্তমান যুগের কোন কোন রাজনৈতিক মুফাসসির এই আয়াতটির ভিন্নরূপ ব্যাখ্যা দিয়ে দ্বীন অর্থ ‘হুকূমত’ করেছেন। অর্থাৎ আল্লাহ নূহ (আঃ) থেকে মুহাম্মাদ (ছাঃ) পর্যন্ত সকল নবীকে যেন এ নির্দেশ দিয়েই পাঠিয়েছিলেন যে, ‘তোমরা রাষ্ট্র কায়েম কর’। ইসলামের প্রচার ও প্রসারে রত ওলামায়ে কেরামকে এজন্য তারা বলে থাকেন, ‘আপনারা খিদমতে দ্বীনে লিপ্ত আছেন। কিন্তু ইক্বামতে দ্বীন-এর জন্য কি করছেন? ‘ভাবখানা এই যে, ইক্বামতে দ্বীনের অর্থই হ’ল ইসলামী হুকুমত কায়েম করা ও এজন্য রাজনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়া এবং এর বাইরে সবকিছুই হ’ল ‘খিদমতে দ্বীন’। অথচ ইসলামী হুকুমত কায়েমের জন্য চেষ্টা করা প্রত্যেক তাওহীদবাদী মুসলমানের উপরে অপরিহার্য দায়িত্ব। আর সেটা হ’ল ইক্বামতে দ্বীন-এর একটি অংশ। একমাত্র ইক্বামতে দ্বীন নয়। কেননা পূর্ণাঙ্গ তাওহীদ প্রতিষ্ঠার অর্থই হ’ল পূর্ণাঙ্গ ইক্বামতে দ্বীন। যার অর্থ জীবনের সকল দিক ও বিভাগে কেবলমাত্র আল্লাহর বিধান ও দাসত্বকে কবুল করা ও তা বাস্তবায়িত করা। রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করাও মুমিনের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। যে দায়িত্ব পালন করতে সকল মুমিন ধর্মতঃ বাধ্য। কুরআন ও হাদীছের অসংখ্য স্থানে ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার ইঙ্গিত ও শর্তাবলী বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু বিশেষ করে এই আয়াতটিকে ‘হুকুমত কায়েমের নির্দেশ’ হিসাবে ব্যবহার করা নিঃসন্দেহে দুঃখজনক।
ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝিতে প্রচারিত ‘ধর্ম ও রাজনীতি আলাদা বস্ত্ত’ এই মর্মের চরমপন্থী ‘ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ’-এর বিপরীতে কিঞ্চিদধিক শতবর্ষ পরে ‘রাজনীতিই ধর্ম’ এই মর্মের অত্র চরমপন্থী মতবাদটি ভারতবর্ষে প্রচারিত হয়। এই মতবাদ হুকুমত বা রাষ্ট্রক্ষমতাকেই আসল ‘দ্বীন’ গণ্য করে ও ইসলামের সকল ইবাদতকে উক্ত মূল দ্বীন কায়েমের জন্য ‘ট্রেনিং কোর্স’ বলে মনে করে।
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।