HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

দাঈ ভাইদের প্রতি

লেখকঃ চৌধুরী আবুল কালাম আজাদ

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
দাঈ ভাইদের প্রতি

চৌধুরী আবুল কালাম আজাদ

সম্পাদনা : আলী হাসান তৈয়ব

দাঈ ভাইদের প্রতি
আল্লাহর পথে আহবান একটি মহান ইবাদত ও গুরুত্বপূর্ণ ফরজ। এ কাজটিই পৃথিবীর সকল নবী-রাসূল করেছেন যুগে যুগে। শেষ নবীর অবর্তমানে এ গুরুদায়িত্ব বর্তেছে তাঁর উম্মতের ওপর। এ কাজ জরুরি সবার জন্য। এ দায়িত্ব সবার। ইরশাদ হচ্ছে-

وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ﴿১০৪ سورة آل عمران﴾

‘আর যেন তোমাদের মধ্য হতে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের প্রতি আহবান করবে, ভালো কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে, আর তারাই সফলকাম।’ (আলে ইমরান : ১০৪)

ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ ﴿১২৫ سورة النحل﴾

‘তুমি তোমার রবের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহবান কর এবং সুন্দরতম পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক কর। নিশ্চয় একমাত্র তোমার রবই জানেন কে তাঁর পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে এবং হিদায়াতপ্রাপ্তদের তিনি খুব ভালো করেই জানেন।’ (নাহল : ১২৫)

وَادْعُ إِلَى رَبِّكَ وَلَا تَكُونَنَّ مِنَ الْمُشْرِكِينَ ﴿৮৭ سورة القصص﴾

‘তুমি তোমার রবের দিকে আহবান কর এবং কিছুতেই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।’ (কাসাস : ৮৭)

قُلْ هَذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ عَلَى بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي ﴿১০৮ سورة يوسف﴾

‘তুমি বল : এটাই আমার পথ, আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহবান করি সজ্ঞানে, আমি এবং যে আমার অনুসারী...।’ (ইউসুফ : ১০৮)

উল্লে¬খিত আয়াতগুলোতে আমরা দেখলাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসারীগণই দাঈ ইলাল্লাহ এবং তারাই দূরদৃষ্টি সম্পন্ন।

বিজ্ঞানের উন্নতি ও যুগের চ্যালেঞ্জ :
নিত্য নতুন তথ্য প্রযুক্তির আবিষ্কার ও উন্নতি নবুয়্যতে মুহাম্মদির সত্যতার একটি উজ্জল নিদর্শন। এটি তাঁর রেসালতের প্রচার-প্রসারের এক বড় মাধ্যম। তবে এটি দাঈদের জন্য এক কঠিন চ্যালেঞ্জও বটে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির কারণে সারা বিশ্ব পরিণত হয়েছে একটি শহরে- যেখানে পূর্বেকার যুগে একজন রাসূল প্রেরণ করা হত। আর এরই মাধ্যমে বুঝা যাচ্ছে যে, মহান সত্তা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এক এলাকা ও একটি গোষ্ঠীর জন্য খাস না করে সর্বযুগের সকল মানুষের জন্য রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন। তিনি ভালো করেই জানতেন, অচিরেই সারা পৃথিবী হয়ে যাবে ছোট্ট একটি গ্রামের মত। ফলে একাধিক নবীর প্রয়োজন হবে না, দরকার হবে না এ রাসূলের পর আর কোনো নবী-রাসূলের। নবী মুহাম্মদের আগমনের সাথে সাথেই সারা পৃথিবীর শহরগুলো কাছাকাছি হতে শুরু হয়েছে। এরপর যোগাযোগের উন্নতি অগ্রগতির সাথে সাথে বিশ্ব বর্তমান অবস্থায় এসে পৌঁছেছে।

প্রিন্টিং জগতের উন্নতির ফলে বর্তমানে যত দ্রুতগতিতে বই-পুস্তক প্রকাশ করা যায় অতীতে তা কল্পনাও করা যেত না। এখন আর লেখার বিষয়টি কাগজ-কলমের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। কম্পিউটারে বসে কোটি কোটি পৃষ্ঠায় একই সাথে টাইপ-কপি-পেস্ট করা সম্ভব। আবার লিখিত বিষয়গুলো খুব সহজেই পড়া, মুখস্থ করা ও অন্যের নিকট পৌঁছানো যায়। লাখ লাখ কিতাব একটি সিডি ও ডিভিডি আকারে সংরক্ষণ করা অতি সহজ। বয়ান-বক্তৃতা শুনা ও দেখার জন্য বক্তার সামনে উপস্থিত থাকার প্রয়োজন হয় না। বরং সারা বিশ্বের যেপ্রান্তে বসে বক্তৃতা দেয় হোক না কেন মুহূর্তের মধ্যে তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব। সরাসরি দেখাও সম্ভব। ফ্যাক্স, ইন্টারনেটের মাধ্যমে অতি অল্প সময়ে যে কোনো তথ্যের আদান প্রদান করা যায়। এগুলো যুগ যুগ ধরে নেট লাইনে সেভ করে রাখা যায়।

তবে তথ্য প্রযুক্তির উন্নতি অগ্রগতি ইসলামপন্থীদের জন্য একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জও বটে। কারণ যেমনিভাবে আমাদের জন্য অমুসলিমদের নিকট ইসলাম প্রচার সহজ, ঠিক তেমনিভাবে তাদের বাতিল মতবাদ মুসলমানদের কাছে পৌঁছে দেয়া তাদের জন্য আরো সহজ। কেননা এ অঙ্গনে তারা আমাদের চেয়ে অনেক অগ্রগামী। তাই বলে আমাদের হাত গুটিয়ে ঘরে বসে থাকলে চলবে না। বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তিতে আমাদেরও পারদর্শী হতে হবে। সাধ্যানুযায়ী হকের দাওয়াত নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন -

وَقُلْ جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ إِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوقًا ﴾ ( سور ة الإسراء : ৮১)

‘আর তুমি বল, হক এসেছে এবং বাতিল বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় বাতিল বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল।’ (বনী ইসরাঈল : ৮১)

দাওয়াতের পন্থা ও পদ্ধতি :
বর্তমান যুগে আল্লাহ তাআলা দাওয়াতি কাজকে আমাদের জন্য অনেক সহজ করে দিয়েছেন। আমাদের পূর্বেকার লোকদের জন্য এতোটা সহজ ছিল না। আজকের যুগে ইসলাম প্রচার, দাওয়াতি কাজ পরিচালনা ও মানুষের কাছে দলিল-প্রমাণ উপস্থাপন অনেক দিক দিয়েই সহজ। বিশেষ করে তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে দাওয়াত ও প্রচার কর্ম আরও সহজ হয়ে গিয়েছে। এ কাজে বর্তমানে রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্রসহ নানা মাধ্যমের সাহায্যে অতি সহজে উদ্দেশ্য হাসিল করা যায়।

অতএব, জ্ঞানবান ঈমানদার ব্যক্তিবর্গ ও নায়েবে রাসূলদের ওপর অবশ্য কর্তব্য, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এ কাজে আত্মনিয়োগ করা, পরস্পর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আল্লাহর বার্তা তাঁর বান্দাদের নিকট পৌঁছে দেয়া। এ মহৎ কাজে জড়িত হলে চারদিক থেকে অসহযোগিতা, বাঁধা ও ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের সম্মুখীন হতে হবে। এসব আমলে না নিয়ে নির্ভয়ে সম্মুখপানে এগিয়ে যেতে হবে।

একজন মুসলমানের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, সার্বিক জীবনে সফলতার জন্য তার কুরআন-হাদিস অনুসরণ করাই যথেষ্ট। দাওয়াতের দিকটিও এর বাইরে নয়। দাওয়াতি ময়দানে সফল হতে হলে কি প্রক্রিয়ায় কাজ করতে হবে, সে সর্ম্পকে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহর হাদিসেও এ বিষয়টি এসেছে সুস্পষ্টভাবে।

আল্লাহ তাআলা খুব স্পষ্ট করে বলেছেন :

ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ ﴿১২৫﴾ سورة النحل

‘তুমি তোমার রবের পথে আহবান কর হিকমত ও সদুপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সাথে বিতর্ক কর সুন্দরতম পন্থায়।’ (নাহল : ১২৫)

দাওয়াত পদ্ধতি কি হবে এবং একজন দাওয়াত কর্মীকে কি কি গুণ অর্জন করতে হবে যা সে দাওয়াতি ময়দানে প্রয়োগ করবে উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন। সে দাওয়াত শুরু করবে হিকমত ও পরিবেশ-পরিস্থিতির বিবেচনায় বিভিন্ন কৌশল গ্রহণের মাধ্যমে। এখানে হিকমত বলতে বুঝানো হয়েছে সুস্পষ্ট দলিল প্রমাণসমূহ যা স্বচ্ছ ও সন্তোষজনক পন্থায় হক প্রতিষ্ঠিত করবে এবং অসার ও বাতুলতাকে খন্ডন করবে।

আল্লামা ইবনুল কাইয়িম রহ. উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, আল্লাহ তাআলা মানুষের অবস্থা ভেদে দাওয়াতের স্তর বিন্যাস করে তা তিন ভাগে ভাগ করেছেন।

এক. যদি ব্যক্তি হক অন্বেষণকারী ও তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয় এবং হক পেলে সাথে সাথে তা অন্য যে কোনো মতবাদের উপর প্রাধান্য দেয়, তাহলে তাকে শুধু হিকমতের মাধ্যমে দাওয়াত দেয়া হবে। তার জন্য ওয়াজ-নসিহত ও বিতর্কে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।

দুই. আর যদি সে হকের বিপরীতে নিমগ্ন থাকে, কিন্তু হক চিনতে পারলে তা গ্রহণ করবে বলে আশা থাকে, তাহলে আশা ও ভয় দেখিয়ে নসিহত করতে হবে।

তিন. অপরদিকে যে ব্যক্তি হকের বিরোধিতা করে এবং এর প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী তাকে উত্তম পন্থায় যুক্তি-প্রমাণ পেশ করে দাওয়াত দিতে হবে। যদি ফিরে আসে তো ভালো। তা না হলে সে ইসলাম বিরোধী বলে গণ্য হবে।

তাই দাঈ ইলাল্লাহ এর দায়িত্ব হচ্ছে, আল্লাহর দিকে আহবানের এ গুরুদায়িত্ব পালনকালে হিকমতের পথ অবলম্বন করা এবং দাওয়াত কর্ম হিকমত দিয়েই শুরু করা, এর প্রতি বিশেষ যত্নবান হওয়া। যদি দাওয়াত প্রদত্ত ব্যক্তির মাঝে কোনো সংর্কীণতা বা আপত্তি থাকে তাহলে উত্তম উপদেশের স্মরণাপন্ন হওয়া, উৎসাহ ব্যঞ্জক পবিত্র আয়াত ও হাদিসের উপদেশ দ্বারা দাওয়াত পেশ করা। যদি কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি সন্দিহান হয়, তাহলে উত্তম পন্থায় বিতর্কের রাস্তা গ্রহণ করা। এবং কাঙ্খিত পর্যায়ে পৌঁছার নিমিত্তে ধৈর্য ধারণ করা, তাড়াহুড়ো বা বল প্রয়োগ কিংবা রূঢ় আচরণের চিন্তা পরিহার করা। বরং সন্দেহ নিরসনের জন্য আল্লাহর ওপর ভরসা করে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে অব্যাহতভাবে। এবং দলিলাদি উপস্থাপন করতে হবে উত্তম পদ্ধতিতে। হকের মাধ্যমে নিজে উপকৃত হওয়া, হক গ্রহণ করা এবং হকের দাওয়াত দ্বারা কোনো ব্যক্তিকে প্রভাবিত করা ও বিতর্ক-আলোচনায় সন্তুষ্ট করে হক গ্রহণে তাকে উৎসাহী করার এটিই সহজ উপায়।

দাওয়াতের সঠিক পন্থা হলো, দাঈকে প্রজ্ঞাপূর্ণ, দূরদর্শী হয়ে দাওয়াত দানে প্রবৃত্ত হওয়া। তাড়াহুড়ো ও বল প্রয়োগের মানসিকতা ত্যাগ করে হিকমতের মাধ্যমে অগ্রসর হওয়া। কুরআন ও হাদিসের প্রভাবপূর্ণ উপদেশ বাণীর মাধ্যমে দাওয়াত পেশ করা যেগুলো দাওয়াত পেশকৃত ব্যক্তির হৃদয়-মনে প্রভাব সৃষ্টি করতে সক্ষম এবং হক গ্রহণে প্রেরণা দানে খুবই পারঙ্গম। বিতর্ক করার প্রয়োজন দেখা দিলে সেখানেও উত্তম আদর্শের স্বাক্ষর রাখতে হবে, যুক্তিপূর্ণ তথ্য ও নম্রতাপূর্ণ আচরণের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে নিজ মতাদর্শে বিশ্বাসী ও অনুপ্রাণিত করার প্রতি মনোযোগী হতে হবে। সফল হতে হলে এ পদ্ধতির বিকল্প নেই।

দাঈর আবশ্যক গুণাবলি :
দাওয়াতি ময়দানে সফল হবার জন্য একজন দাওয়াত কর্মীর যেসব গুণাবলি থাকা প্রয়োজন; আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে সেগুলো উল্লেখ করেছেন। বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে তা থেকে কিছু তুলে ধরা হল :

(১) এলেম : দাওয়াত হতে হবে জ্ঞান ভিত্তিক। যে বিষয়ে আপনি দাওয়াত দিবেন সে বিষয়ে আপনার পূর্ণ বুৎপত্তি থাকা বাঞ্ছনীয়। সে সম্পর্কে আপনার অজানা থাকা চলবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন,

قُلْ هَذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ عَلَى بَصِيرَةٍ ﴿১০৮ سورة يوسف﴾

‘তুমি বল : এটাই আমার পথ, আল্লাহর প্রতি মানুষকে আমি আহবান করি সজ্ঞানে।’ (ইউসুফ : ১০৮)

অতএব, জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। ইসলামে জ্ঞান অর্জনকে ফরজ করা হয়েছে। জানা বিষয়ে কথা বলা থেকে সাবধান থাকতে হবে। অজ্ঞ-মূর্খরা বিনাশ করে, গঠন করতে পারে না। নষ্ট করে, সংশোধন করতে পারে না। হে আল্লাহর বান্দা, আল্লাহকে ভয় করুন। আল্লাহ সম্পর্কে না জেনে কথা বলা থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করুন। একটি বিষয়ে পরিপূর্ণ ধারণা না নিয়ে অপরকে দাওয়াত দেবেন না। আর প্রকৃত জ্ঞানতো সেটিই যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল বলেছেন। সুতরাং সচেতন ও জ্ঞানবান হওয়া জরুরি।

একজন শিক্ষার্থী ও দাওয়াত কর্মীর প্রথম কর্তব্য হচ্ছে, যে বিষয়ে দাওয়াত দিচ্ছে তা নিরীক্ষণ করা, বিষয়বস্ত্ত ও দলিলের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা। যদি বিষয়বস্ত্তর সত্যতা সুস্পষ্ট ও বোধগম্য বলে অনুভূত হয় তবেই কেবল দাওয়াত দেবে।

(২) ইখলাস : একজন দাঈর জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি বিষয় হচ্ছে আল্লাহর জন্য আন্তরিক হওয়া। লোক দেখানো, খ্যাতি লাভ, প্রশংসা কুড়ানোর মনোবৃত্তি তার উদ্দেশ্য হওয়া কাম্য নয়। দাঈ মানুষকে আল্লাহর দিকে আহবান করবে কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের জন্য।

সহি বুখারিতে ওমর ইবনে খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন -

‘প্রত্যেক আমলের ফলাফল নিয়ত অনুযায়ী হয়ে থাকে।’

তাই দাঈ হিসাবে আপনার কর্তব্য হচ্ছে দাওয়াত কর্মে আন্তরিক হওয়া। এটাই হচ্ছে বড় চরিত্র, এটাই বড় গুণ, দাওয়াতের ক্ষেত্রে যার প্রয়োজন সর্বাধিক। সুতরাং দাওয়াতি কাজে আপনার কামনা হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের সফলতা।

(৩) ধৈর্য ও সহনশীলতা : দাওয়াত কর্মী হিসাবে আপনাকে অতিমাত্রায় সহনশীল হতে হবে। হতে হবে পরমত সহিষ্ণু ও ধৈর্যশীল। যেমন ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। দাওয়াতি ময়দানে তাঁকে অনেক দুঃখ কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু তিনি কখনও বিচলিত হননি। বরং ধৈর্যের সাথে মোকাবিলা করেছেন। অতএব তাড়াহুড়ো ও কঠোর নীতি গ্রহণ করা হতে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে কঠিনভাবে।

(৪) নম্রতা : আল্লাহ তাআলা মুসা ও হারুন আ. কে যখন ফেরাউনের কাছে দাওয়াত নিয়ে পাঠালেন তখন তাদেরকে ফেরাউনের সাথে নম্রতা বজায় রেখে কথা বলার আদেশ করেছেন। অথচ সে ছিল সবচেয়ে বড় সীমালঙ্ঘনকারী।

আল্লাহ বলেন-

فَقُولَا لَهُ قَوْلًا لَيِّنًا لَعَلَّهُ يَتَذَكَّرُ أَوْ يَخْشَى ). سورة طه (

‘তোমরা তার সাথে নম্র কথা বলবে, হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে। (ত্বহা : ৪৪)

(৫) সদয় আচরণ : নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে আল্লাহ বলেন -

فَبِمَا رَحْمَةٍ مِنَ اللَّهِ لِنْتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ .) سورة آل عمران (

‘অতঃপর আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমতের কারণে তুমি তাদের জন্য নম্র হয়েছিলে। আর যদি তুমি কঠোর স্বভাবের, কঠিন হৃদয়সম্পন্ন হতে তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়ত।’ (আলে ইমরান : ১০৯)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :

‘হে আল্লাহ, যার ওপর আমার উম্মতের কোনো দায়িত্ব অর্পিত হল এবং সে তাদের ওপর সদয় আচরণ করল তুমি তার প্রতি সদয় ব্যবহার কর, আর যার ওপর আমার উম্মতের কোনো দায়িত্ব অর্পিত হল এবং সে তাদের প্রতি নির্দয় আচরণ করল, তুমি তার প্রতি নির্দয় আচরণ কর।’ (মুসলিম)

তাই আপনাকে একজন দাঈ হিসাবে নবী আদর্শের অনুবর্তিতায় দাওয়াত কর্মে কোমল হতে হবে। সর্বাবস্থায় মাধুর্যপূর্ণ ব্যবহার বজায় রাখতে হবে, কোনোভাবেই মানুষের ওপর কঠোর হওয়া যাবে না। অশোভন, রূঢ় ও কষ্টদায়ক আচরণ করে তাদেরকে দীন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া যাবে না। আপনাকে ধৈর্য্য ও সহনশীল হতে হবে। হতে হবে নেতৃত্বে সাবলীল, কথা ও আচরণে কোমল। এতে আপনার দাওয়াতের টার্গেট মুসলিম ভাইয়ের অন্তরে প্রভাব পড়বে, আপনার কথা শুনতে চাইবে, আপনার প্রতি নমনীয় হবে, আপনার প্রশংসা করবে, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। সর্বোপরি আপনার দাওয়াত কবুল করবে। মনে রাখবেন রূঢ়তা অপরকে নিজ হতে বিচ্ছিন্ন করে দূরে ঠেলে দেয়; কাছে আনে না। হৃদ্যতার পরিবর্তে ঘৃণা সৃষ্টি করে।

(৬) প্রথমে নিজে আমল করা : দাঈর জন্য বাঞ্ছনীয় বরং আবশ্যক গুণাবলীর মধ্যে এটিও একটি যে, লোকদেরকে যে বিষয়ের প্রতি দাওয়াত দেবে নিজের মধ্যে আগে তা বাস্তবায়ন করবে। তাকে সে বিষয়ে আদর্শ হতে হবে। এমন হওয়া চলবে না যে, অপরকে হকের দাওয়াত দিল, ভালো কাজ করতে বলল, আর নিজে তা থেকে দূরে সরে রইল অথবা কোনো বিষয়ে অন্যকে নিষেধ করল, এরপর নিজে তাতে জড়িয়ে পড়ল। এটা অবশ্যই ক্ষতিকর।

মূলত সফল মুমিন ও স্বার্থক দাঈ তারাই যারা আহবানকৃত বিষয়ে শ্রদ্ধাশীল থেকে নিজেরা আমল করে বরং এক্ষেত্রে অন্যদের চেয়ে অগ্রসর থাকে আর নিষিদ্ধ বিষয়াদি হতে নিজেরা দূরে থাকে এবং বর্জনের দিক দিয়ে অন্য সবার থেকে এগিয়ে থাকে।

আল্লাহ তাআলা বলেন :

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لِمَ تَقُولُونَ مَا لَا تَفْعَلُونَ ﴿২﴾ كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ اللَّهِ أَنْ تَقُولُوا مَا لَا تَفْعَلُونَ ﴿৩﴾ ) سورة الصف (

‘হে মুমিনগণ, তোমরা যা কর না তা তোমরা বল কেন? তোমরা যা কর না তোমাদের তা বলা, আল্লাহর নিকট অতিশয় অসন্তোষজনক।’ (সাফফ : ২-৩)

আল্লাহ তাআলা ইহুদিদের এ মর্মে ভৎর্সনা করেছেন যে, তারা মানুষকে কল্যাণের কথা বলে অথচ নিজেরা নিজেদের ভুলে থাকে।

أَتَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنْسَوْنَ أَنْفُسَكُمْ وَأَنْتُمْ تَتْلُونَ الْكِتَابَ أَفَلَا تَعْقِلُونَ . ) سورة البقرة (

‘তবে কি তোমরা লোকদেরকে সৎকাজে আদেশ করছো এবং তোমাদের নিজেদের ভুলে যাচ্ছ। অথচ তোমরা কিতাব পাঠ কর; তবে কি তোমরা হৃদয়ঙ্গম করছো না?’ (বাকারা : ৪৪)

আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, হে আল্লাহ আমাদের সকলকে আপনার রাস্তায় উত্তমভাবে দাওয়াত দেয়ার তাওফিক দিন। আমাদের সকলকে দীনের ব্যাপারে বিশুদ্ধ বুঝ দান করুন। দীনের ওপর অবিচল থাকা সহজ করে দিন। আমাদেরকে হিদায়েতপ্রাপ্ত ও হিদায়েতের পথপ্রদর্শক-নেককাজকারীদের অন্তর্ভূক্ত করুন। নিশ্চয়ই আপনি বড় দয়ালু মহান দাতা।

সমাপ্ত

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন