HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

হিংসা ও অহংকার

লেখকঃ প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব

১০
হিংসুকদের কিছু দৃষ্টান্ত
(১) ইবলীসের হিংসা : আদম (আঃ)-এর উচ্চ মর্যাদা দেখে ইবলীস হিংসায় জ্বলে উঠেছিল। সে নিজেকে আদমের চাইতে শ্রেষ্ঠ দাবী করে তাঁকে সম্মানের সিজদা করেনি। সে যুক্তি দিয়ে বলেছিল, خَلَقْتَنِي مِنْ نَارٍ وَخَلَقْتَهُ مِنْ طِينٍ ‘আল্লাহ তুমি আমাকে আগুন দিয়ে তৈরী করেছ এবং আদমকে তৈরী করেছ মাটি দিয়ে’ (আ‘রাফ ৭/১১-১২)। অতএব আগুন কখনো মাটিকে সিজদা করতে পারে না। তার এই যুক্তিবাদের ফলে সে অভিশপ্ত হয় এবং জান্নাত থেকে বিতাড়িত হয়। এভাবে আসমানে প্রথম হিংসা করে ইবলীস এবং সেই-ই প্রথম আদম ও হাওয়াকে বিভ্রান্ত করে। ফলে তারাও জান্নাত থেকে আল্লাহর হুকুমে নেমে যান। আদমের ও তার সন্তানদের প্রতি ইবলীসের উক্ত হিংসা আজও অব্যাহত রয়েছে। যা ক্বিয়ামত পর্যন্ত থাকবে আল্লাহর অনুমতিক্রমে (আরাফ ৭/১৩-১৫; হিজর ১৫/৩৩-৩৮)।

ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, الحاسد شبيه بإبليس، وهو في الحقيقة من أتباعه؛ لأنه يطلب ما يحبه الشيطان من فساد الناس وزوال نعم الله عنهم، كما أن إبليس حسد آدم لشرفه وفضله، وأبى أن يسجد له حسدا، فالحاسد من جند إبليس ‘হিংসুক ব্যক্তি ইবলীসের ন্যায়। সে শয়তানের অনুসারী। কেননা সে শয়তানের চাহিদা মতে সমাজে বিশৃংখলা ও অশান্তি সৃষ্টি করতে চায় এবং অন্যের উপর আল্লাহর নে‘মতসমূহের ধ্বংস কামনা করে। যেমন ইবলীস আদমের উচ্চ মর্যাদা ও তার শ্রেষ্ঠত্বকে হিংসা করেছিল এবং তাকে সিজদা করতে অস্বীকার করেছিল। অতএব হিংসুক ব্যক্তি ইবলীসের সেনাবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত।[1]

(২) হাবীলের প্রতি কাবীলের হিংসা :

আদম-পুত্র কাবীল তার ছোট ভাই হাবীলকে হত্যা করেছিল হিংসা বশে। কারণ আল্লাহভীরু হাবীলের কুরবানী আল্লাহ কবুল করেছিলেন। কিন্তু দুনিয়াদার কাবীলের কুরবানী আল্লাহ কবুল করেননি। অথচ এতে হাবীলের কিছুই করার ছিলনা। এতদসত্ত্বেও কাবীল তাকে হত্যা করে। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন, ‘(হে নবী!) তুমি লোকদের নিকট আদমের দুই পুত্রের ঘটনা সত্য সহকারে বর্ণনা কর। যখন তারা কুরবানী পেশ করে। অতঃপর একজনের কুরবানী কবুল হয়, কিন্তু অপর জনের কুরবানী কবুল হয়নি। তখন সে বলল, আমি অবশ্যই তোমাকে হত্যা করব। জবাবে সে বলল, আল্লাহ তো কেবল মুত্তাক্বীদের কুরবানী কবুল করে থাকেন’। ‘যদি তুমি আমার দিকে হাত বাড়াও আমাকে হত্যা করার জন্য, আমি তোমাকে হত্যা করার জন্য তোমার দিকে হাত বাড়াবো না। আমি বিশ্বচরাচরের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি’ (মায়েদাহ ৫/২৭-২৮)।

বলা বাহুল্য, এটাই ছিল মানবেতিহাসের প্রথম হত্যাকান্ডের ঘটনা। সেকারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত হত্যাকান্ড হবে, তার পাপের একটা অংশ ক্বাবীলের আমলনামায় লেখা হবে। কেননা সেই-ই প্রথম এর সূচনা করেছিল।[2] এভাবে আসমানে প্রথম হিংসা করেছিল ইবলীস এবং যমীনে প্রথম হিংসা করেছিল ক্বাবীল। তাই ভাল-র প্রতি হিংসা চিরন্তন।

(৩) ইউসুফের প্রতি তার ভাইদের হিংসা :

নবী ইউসুফের ১০ জন বিমাতা ভাই ছিল। যারা ছিল তার আপন খালার সন্তান। ইউসুফ ও বেনিয়ামীনের মা মারা যাওয়ায় মাতৃহারা দুই শিশুপুত্রের প্রতি পিতা নবী ইয়াকূবের পিতৃস্নেহ স্বভাবতই বেশী ছিল। তন্মধ্যে ইউসুফের প্রতিই তাঁর আসক্তি ছিল বেশী তার অলৌকিক গুণাবলীর কারণে। তদুপরি শিশুকালে ইউসুফের দেখা স্বপ্নবৃত্তান্ত শোনার পর পিতা তার প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন এবং অজানা আশংকায় তাকে সর্বক্ষণ চোখের উপর রাখতেন। ফলে বিমাতা ভাইয়েরা তার প্রতি হিংসায় জ্বলে ওঠে এবং শিশু ইউসুফকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। উক্ত বিষয়ে সূরা ইউসুফ নাযিল হয়। যাতে পূরা ঘটনা সুন্দরভাবে বর্ণিত হয়েছে (দ্রঃ নবীদের কাহিনী ১ম খন্ড)।

(৪) ইহূদী-নাছারাদের হিংসা :

এরাই ইসলাম ও ইসলামের নবীর প্রতি সবচেয়ে বেশী হিংসাকারী। তাদের বংশ বনু ইসহাক থেকে শেষনবী না হয়ে বনু ইসমাঈলের কুরায়েশ বংশ থেকে হওয়ায় তারা মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর প্রতি হিংসায় অন্ধ ছিল। অথচ তাদের কিতাব তাওরাত-ইনজীলে শেষনবী হিসাবে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আগমন ও তাঁর পূর্ণ পরিচয় আগেই বর্ণিত হয়েছে (আ‘রাফ ৭/১৫৭)। কিন্তু তারা তাঁর উচ্চ মর্যাদাকে বরদাশত করতে পারেনি। ফলে তারা মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর অনুসারী মুমিনদের চাইতে মক্কার কাফিরদের অধিকতর হেদায়াতপ্রাপ্ত বলতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি। যেমন আল্লাহ বলেন, أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِيْنَ أُوْتُوْا نَصِيْبًا مِنَ الْكِتَابِ يُؤْمِنُوْنَ بِالْجِبْتِ وَالطَّاغُوْتِ وَيَقُوْلُوْنَ لِلَّذِيْنَ كَفَرُوْا هَؤُلاَءِ أَهْدَى مِنَ الَّذِيْنَ آمَنُوْا سَبِيلاً- أُوْلَئِكَ الَّذِيْنَ لَعَنَهُمُ اللهُ وَمَنْ يَلْعَنِ اللهُ فَلَنْ تَجِدَ لَهُ نَصِيْرًا - ‘তুমি কি তাদেরকে দেখোনি যাদেরকে ইলাহী কিতাবের কিছু অংশ দেওয়া হয়েছে, যারা প্রতিমা ও শয়তানের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং কাফিরদের বলে যে, তারাই মুমিনদের চাইতে অধিক সুপথপ্রাপ্ত’। ‘এদের প্রতি আল্লাহ অভিসম্পাৎ করেছেন। আর আল্লাহ যাকে অভিসম্পাৎ করেন, তার জন্য তুমি কোন সাহায্যকারী পাবে না’ (নিসা ৪/৫১-৫২)।

মুমিনদের প্রতি হিংসা ছাড়াও তারা তাদেরকে ইসলাম ত্যাগ করে ইহূদী-নাছারাদের দলভুক্ত হওয়ার আকাংখা পোষণ করে। যেমন আল্লাহ বলেন, وَدَّ كَثِيرٌ مِّنْ أَهْلِ الْكِتَابِ لَوْ يَرُدُّونَكُم مِّن بَعْدِ إِيمَانِكُمْ كُفَّاراً حَسَداً مِّنْ عِندِ أَنفُسِهِم مِّن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْحَقُّ فَاعْفُواْ وَاصْفَحُواْ حَتَّى يَأْتِيَ اللهُ بِأَمْرِهِ إِنَّ اللهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ‘সত্য প্রকাশিত হওয়ার পরেও অন্তর্নিহিত বিদ্বেষ বশতঃ আহলে কিতাবদের অনেকে তোমাদেরকে ঈমান আনার পরেও কাফির বানাতে চায়। এমতাবস্থায় তোমরা ওদের ক্ষমা কর এবং এড়িয়ে চল আল্লাহর আদেশ না আসা পর্যন্ত। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছুর উপরে ক্ষমতাবান’ (বাক্বারাহ ২/১০৯)।

ইবনু কাছীর বলেন, অত্র আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ আহলে কিতাবদের রীতি-নীতি অনুসরণ করা হ’তে বিরত থাকার ব্যাপারে মুমিনদের সাবধান করেছেন। গোপনে ও প্রকাশ্যে তারা যে সর্বদা মুসলমানদের শত্রুতা করবে, সেটাও জানিয়ে দিয়েছেন। মুসলমানদের ও তাদের নবীর শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা জানা সত্ত্বেও তারা এটা করে থাকে স্রেফ হিংসার বশবর্তী হয়ে’ (ঐ, তাফসীর)। আল্লাহ বলেন, وَلَن تَرْضَى عَنكَ الْيَهُودُ وَلاَ النَّصَارَى حَتَّى تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ قُلْ إِنَّ هُدَى اللهِ هُوَ الْهُدَى وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ أَهْوَاءهُم بَعْدَ الَّذِي جَاءكَ مِنَ الْعِلْمِ مَا لَكَ مِنَ اللهِ مِن وَلِيٍّ وَلاَ نَصِيْرٍ ‘ইহূদী ও নাছারাগণ কখনোই তোমার উপরে খুশী হবে না, যতক্ষণ না তুমি তাদের ধর্মের অনুসারী হবে। তুমি বল, নিশ্চয়ই আল্লাহর দেখানো পথই সঠিক পথ। আর যদি তুমি তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ কর, তোমার নিকটে (অহি-র) জ্ঞান এসে যাওয়ার পরেও, তবে আল্লাহর কবল থেকে তোমাকে বাঁচাবার মতো কোন বন্ধু বা সাহায্যকারী নেই’ (বাক্বারাহ ২/১২০)। এখানে শেষনবী (ছাঃ)-কে বলা হ’লেও তা মূলতঃ উম্মতে মুহাম্মাদীকে বলা হয়েছে। মুসলিম উম্মাহর প্রতি ইহূদী-খ্রিষ্টান অপশক্তির অতীত ও বর্তমান আচরণ অত্র আয়াতের বাস্তব প্রমাণ বহন করে।

(৫) কুরায়েশ কাফিরদের হিংসা :

আল্লাহ স্বীয় নবী মুহাম্মাদকে নবুঅত ও রিসালাত দ্বারা সম্মানিত করেছেন। কিন্তু তাঁর নিজ বংশ কুরায়েশ নেতারা হিংসায় জ্বলে ওঠে তাঁর এই উচ্চ মর্যাদার কারণে। তাদের ধারণা মতে নবুঅতের সম্মান তাদের মত নেতাদের পাওয়া উচিৎ ছিল। যেমন আল্লাহ বলেন, وَقَالُوا لَوْلاَ نُزِّلَ هَذَا الْقُرْآنُ عَلَى رَجُلٍ مِّنَ الْقَرْيَتَيْنِ عَظِيمٍ- أَهُمْ يَقْسِمُونَ رَحْمَةَ رَبِّكَ؟ ‘আর তারা বলে যে, এই কুরআন কেন নাযিল হলো না দুই জনপদের কোন বড় নেতার উপরে? (অর্থাৎ মক্কার নেতা আবু জাহল অথবা ত্বায়েফের নেতা ওরাওয়া ইবনু মাসঊদের উপর)’? ‘তবে কি তোমার প্রতিপালকের রহমত তারাই বণ্টন করবে?’ (যুখরুফ ৪৩/৩১-৩২)।

কুরায়েশ নেতারা কিরূপ শ্রেষ্ঠত্বের কাঙাল ছিল যে, নিজেদের বংশে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবীকে পেয়েও তারা সর্বদা তাঁকে হত্যার চক্রান্ত করেছে। তারা তাঁর বিরুদ্ধে নানা অপবাদ দিয়েছে ও যুদ্ধ করেছে কেবল উক্ত মর্যাদা নিজেরা না পাওয়ার হিংসা থেকেই।

(৬) মুনাফিকদের হিংসা :

মুনাফিকরা ইসলাম যাহির করে ও কুফরীকে অন্তরে লালন করে। তাদের হৃদয় সর্বদা খাঁটি মুমিনদের বিরুদ্ধে হিংসা-বিদ্বেষ ও কপটতায় পূর্ণ থাকে। যেমন আল্লাহ বলেন, إِنْ تَمْسَسْكُمْ حَسَنَةٌ تَسُؤْهُمْ وَإِنْ تُصِبْكُمْ سَيِّئَةٌ يَفْرَحُوا بِهَا وَإِنْ تَصْبِرُوا وَتَتَّقُوا لاَ يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئًا إِنَّ اللهَ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيْطٌ ‘তোমাদের কোন কল্যাণ স্পর্শ করলে তারা নাখোশ হয়। আর তোমাদের কোন অমঙ্গল হলে তারা খুশী হয়। কিন্তু যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ কর ও আল্লাহভীরু হও, তাহলে ওদের চক্রান্ত তোমাদের কোনই ক্ষতি করতে পারবে না। নিশ্চয়ই তারা যা কিছু করে, সবই আল্লাহর আয়ত্তাধীনে রয়েছে’। (আলে ইমরান ৩/১২০)।

মক্কায় মূলতঃ কাফির ও মুসলমানদের সংঘর্ষ ছিল। কিন্তু মদীনায় গিয়ে যোগ হয় ইহূদী ও মুনাফিকদের কপটতা। যা ছিল কাফিরদের ষড়যন্ত্রের চাইতে মারাত্মক। ৩য় হিজরীতে ওহোদের যুদ্ধে গমনকারী এক হাযার মুসলিম বাহিনীর মধ্য থেকে সাড়ে তিনশ’ মুনাফিকের পশ্চাদগমন ছিল এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। যুগে যুগে ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাসে আল্লাহভীরু নেতাদের জন্য এর মধ্যে রয়েছে অমূল্য উপদেশ ও শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত। অথচ সর্বদা মুনাফিকরা ভাবে যে, তারাই লাভবান। যদিও প্রকৃত অর্থে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। তারা ভাবে তাদের চতুরতা কেউ ধরতে পারবে না। অথচ তারাই সবচেয়ে বোকা। কেননা দেরীতে হলেও তাদের কপটতা প্রকাশ হয়ে পড়ে। যেমন আল্লাহ বলেন, أَمْ حَسِبَ الَّذِيْنَ فِي قُلُوبِهِمْ مَرَضٌ أَنْ لَنْ يُخْرِجَ اللهُ أَضْغَانَهُمْ- وَلَوْ نَشَاءُ لَأَرَيْنَاكَهُمْ فَلَعَرَفْتَهُمْ بِسِيْمَاهُمْ وَلَتَعْرِفَنَّهُمْ فِي لَحْنِ الْقَوْلِ وَاللهُ يَعْلَمُ أَعْمَالَكُمْ- وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ حَتَّى نَعْلَمَ الْمُجَاهِدِيْنَ مِنْكُمْ وَالصَّابِرِيْنَ وَنَبْلُوَ أَخْبَارَكُمْ -

‘যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে, তারা কি মনে করে যে, আল্লাহ তাদের হৃদয়ের গোপন বিদ্বেষ কখনোই প্রকাশ করে দেবেন না’? ‘আমরা চাইলে তোমাকে তাদের দেখাতাম। তখন তুমি তাদের চেহারা দেখে চিনতে পারতে এবং তাদের কথার ভঙ্গিতে তুমি তাদের অবশ্যই বুঝে নিতে। বস্ত্ততঃ আল্লাহ তোমাদের কর্মসমূহ সম্যক অবগত’। ‘আর আমরা অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা নেব। যতক্ষণ না আমরা (প্রমাণসহ) জানতে পারব তোমাদের মধ্যে কারা সত্যিকারের মুজাহিদ এবং কারা সত্যিকারের ধৈর্যশীল। বস্ত্ততঃ আমরা তোমাদের অবস্থা সমূহ যাচাই করে থাকি’ (মুহাম্মাদ ৪৭/২৯-৩১)।

পরপর তিনটি আয়াতে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, মুনাফিকদের গোপন বিদ্বেষ সাময়িকভাবে চাপা থাকলেও তা অবশেষে প্রকাশিত হয়। আর এর মাধ্যমেই আল্লাহ তার পথের প্রকৃত মুজাহিদ ও দৃঢ়চিত্ত বান্দাদের পরীক্ষা নেন। এভাবে তিনি সর্বাবস্থায় মুমিন ও মুনাফিকের কার্যক্রম যাচাই করে থাকেন।

বস্ত্ততঃ মুনাফিকদের কপটতা মুমিনদের সরলতা ও স্বচ্ছতার প্রতি হিংসা থেকে উদ্ভূত হয়। আর মুমিনদের প্রতি মুনাফিকদের এই হিংসা চিরন্তন।

(৭) নেতৃত্বের প্রতি হিংসা :

নেতৃত্বের প্রতি হিংসা করা ও তার বিরুদ্ধে অন্যকে উসকে দেওয়া শয়তানের অন্যতম প্রধান কাজ। কারণ এর ফলেই সমাজে বিভক্তি ও অশান্তি সৃষ্টি হয়। আর সেটাই হ’ল শয়তানের প্রধান কাম্য। ইসলামী নেতৃত্ব নির্বাচনে এর কোন সুযোগ নেই। কারণ এখানে যোগ্য ও তাক্বওয়াশীল ব্যক্তিদের মাধ্যমে দল ও প্রার্থীবিহীনভাবে নেতৃত্ব নির্বাচন হয়। এখানে নেতৃত্বের জন্য আকাংখী হওয়া যায় না, লোভ করা যায় না বা প্রার্থী হওয়া যায় না।[3] নেতা পরামর্শ নিবেন। কিন্তু পরামর্শ মানতে তিনি বাধ্য নন (আলে ইমরান ৩/১৫৯)। তিনি শরী‘আত বিরোধী কোন নির্দেশ দিতে পারেন না।[4] নেতার কোন কাজ অপসন্দনীয় হ’লে ছবর করবে। কেননা যদি কেউ জামা‘আত থেকে এক বিঘত পরিমাণ বের হয়, অতঃপর মৃত্যুবরণ করে, তাহ’লে সে জাহেলী মৃত্যু বরণ করবে’।[5] ফলে ইসলামী সমাজে অবাধ্যতা ও বিদ্রোহের কোন সুযোগ নেই। এর অন্যতম প্রধান কারণ হ’ল আমীরের ইসলামী নির্দেশ পালনের মধ্যে নেকী পাওয়ার নিশ্চয়তা রয়েছে। যেমন আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, مَنْ أَطَاعَنِى فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ ، وَمَنْ عَصَانِى فَقَدْ عَصَى اللهَ ، وَمَنْ يُطِعِ الأَمِيرَ فَقَدْ أَطَاعَنِى ، وَمَنْ يَعْصِ الأَمِيرَ فَقَدْ عَصَانِى ‘যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল, সে আল্লাহর আনুগত্য করল। আর যে ব্যক্তি আমার অবাধ্যতা করল, সে আল্লাহর অবাধ্যতা করল। যে ব্যক্তি আমীরের আনুগত্য করল, সে আমার আনুগত্য করল। আর যে ব্যক্তি আমীরের অবাধ্যতা করল, সে আমার অবাধ্যতা করল...।[6] এরপরেও শয়তান সেখানে কাজ করে এবং নানা অজুহাত বের করে সংগঠনে ও সমাজে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে।

(৮) ভাল-র প্রতি হিংসা :

মানুষ অনেক সময় ভাল-র প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে। যেমন নবী-রাসূলগণের প্রতি, ইসলামের প্রতি, কুরআন ও হাদীছের প্রতি, সমাজের সত্যসেবী দ্বীনদারগণের প্রতি এবং বিশেষ করে সমাজ সংস্কারক মুত্তাক্বী আলেমগণের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা পাপাচারী মানুষের স্বভাবগত বিষয়। যেমন (ক) সৃষ্টির সূচনায় প্রথম পাপ ছিল আদম (আঃ)-এর প্রতি ইবলীসের হিংসার পাপ। আদমের উচ্চ সম্মান দেখে সে হিংসায় জ্বলে উঠেছিল। তাকে আদমের প্রতি সম্মানের সিজদা করতে বলা হলে সে করেনি। ফলে সে জান্নাত থেকে চিরকালের মত বিতাড়িত হয় (বাক্বারাহ ২/৩৪-৩৮)। অনুরূপভাবে (খ) আদম-পুত্র কাবীল তার ভাই হাবীলকে হত্যা করে হিংসা বশে। কারণ পশুপালক হাবীল ছিল মুত্তাকী পরহেযগার ও শুদ্ধ হৃদয়ের মানুষ। সে আল্লাহকে ভালবেসে তার সর্বোত্তম দুম্বাটি আল্লাহর ওয়াস্তে কুরবানীর জন্য পেশ করে। অথচ তার কৃষিজীবী ভাই ক্বাবীল তার ক্ষেতের ফসলের নিকৃষ্ট একটা অংশ কুরবানীর জন্য পেশ করে। ফলে আল্লাহ তারটা কবুল না করে হাবীলের উৎকৃষ্ট কুরবানী কবুল করেন এবং আসমান থেকে আগুন এসে তা উঠিয়ে নিয়ে যায়। এতে ক্বাবীল হিংসায় জ্বলে ওঠে ও হাবীলকে হত্যা করে (মায়েদাহ ৫/২৭-৩০)। পরবর্তীকালে (গ) ইহূদী-নাছারাগণ শেষনবীকে চিনতে পেরেও এবং তাঁকে শ্রেষ্ঠ জেনেও মানেনি স্রেফ হিংসা বশে (বাক্বারাহ ২/১৪৬)।

(ঘ) আবু জাহল শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে সত্য বলে স্বীকার করেও মেনে নেয়নি তার বনু মখযূম গোত্রে জন্ম না হয়ে বনু হাশেম গোত্রে জন্ম হওয়ার কারণে এবং নিজেদের নেতৃত্ব হারানোর ভয়ে।[7]

(ঙ) যুগে যুগে অসংখ্য সত্যসেবী আলেম ও নেতা নির্যাতিত হয়েছেন স্রেফ কুচক্রীদের হিংসার কারণে। তারা নিজেদের হিংসা গোপন করার জন্য ভাল-র বিরুদ্ধে নানাবিধ মিথ্যা রটনা করে। তাকে নানাভাবে কষ্ট দেয়, এমনকি দেশত্যাগে বাধ্য করে ও হত্যার চেষ্টা করে। যেমন শেষনবী (ছাঃ)-এর বিরুদ্ধে তাঁর বিরোধীরা করেছিল। অথচ তিনি এজন্য আদৌ দায়ী ছিলেন না। যদিও প্রবাদ আছে যে, ‘এক হাতে তালি বাজে না’। ‘যা রটে, তার কিছু না কিছু ঘটে’। ‘দশ যেখানে আল্লাহ সেখানে’। অথচ নবী-রাসূলগণ ও তাঁদের নিখাদ অনুসারী সৎকর্মশীল নেতা ও নেককার মুমিন নর-নারীদের বিরুদ্ধে যাবতীয় ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত একপক্ষীয় হয়ে থাকে। তাদের বিরুদ্ধে যেসব রটানো হয়, সবই মিথ্যা। সকল যুগে এর অসংখ্য নযীর রয়েছে। বর্তমান যুগেও এমন নযীরের কোন অভাব নেই।

[1]. ইবনুল ক্বাইয়িম, বাদায়ে‘উল ফাওয়ায়েদ ২/২৩৪।

[2]. বুখারী হা/৩৩৩৫, মুসলিম হা/১৬৭৭; মিশকাত হা/২১১ ‘ইল্ম’ অধ্যায়।

[3]. বুখারী হা/২২৬১, মুসলিম হা/১৭৩৩; মিশকাত হা/৩৬৮৩ ‘নেতৃত্ব ও বিচার’ অধ্যায়।

[4]. মুসলিম হা/১৮৩৮, মিশকাত হা/৩৬৬২ ‘নেতৃত্ব ও বিচার’ অধ্যায়।

[5]. বুখারী হা/৭১৪৩, মুসলিম হা/১৮৪৯; মিশকাত হা/৩৬৬৮ ‘নেতৃত্ব ও বিচার’ অধ্যায়।

[6]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৩৬৬১ ’নেতৃত্ব ও বিচার’ অধ্যায়।

[7]. বায়হাক্বী, দালায়েলুন নবুঅত ২/২০৬; ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ৩/৬৪।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন