HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

হিংসা ও অহংকার

লেখকঃ প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব

হিংসার প্রতি নিন্দা ও নিষেধাজ্ঞা
কুরআন থেকে :

(১) হিংসুকদের অনিষ্টকারিতা হ’তে বাঁচার জন্য আল্লাহ আমাদের প্রার্থনা করতে বলেছেন - وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ ‘(হে আল্লাহ!) আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই হিংসুকের অনিষ্টকারিতা হতে যখন সে হিংসা করে’ (ফালাক্ব ১১৩/৫)। ইমাম রাযী বলেন, আল্লাহ মানুষের সকল নষ্টের মূল হিসাবে এখানে ‘হিংসা’ দিয়ে সূরা শেষ করেছেন। যেমন শয়তানের সকল অনিষ্টের মূল হিসাবে ‘মনে খটকা সৃষ্টি’ (ওয়াসওয়াসা) দিয়ে সূরা নাস শেষ করেছেন’। যা তারতীরের দিক দিয়ে কুরআনের শেষ সূরা। এর মাধ্যমে মানুষকে মানুষের হিংসা থেকে এবং শয়তানের ধোঁকা থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাইতে বলা হয়েছে। কেননা এ দু’টি থেকে বাঁচার অন্য কোন উপায় নেই আল্লাহর রহমত ব্যতীত। হুসাইন বিন ফযল বলেন, আল্লাহ এই সূরাতে যাবতীয় মন্দকে একত্রিত করেছেন এবং ‘হিংসা’ দিয়ে শেষ করেছেন এটা বুঝানোর জন্য যে এটাই হ’ল সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্বভাব’।

বস্ত্ততঃ যে সমাজে হিংসার প্রসার যত বেশী, সে সমাজে অশান্তি তত বেশী। সমাজে অতক্ষণ যাবত কল্যাণ ও শান্তি বিরাজ করে, যতক্ষণ সেখানে হিংসার প্রসার না ঘটে। যামরাহ বিন ছা‘লাবাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, لاَ يَزَالُ النَّاسُ بِخَيْرٍ مَا لَمْ يَتَحَاسَدُوْا ‘মানুষ অতক্ষণ কল্যাণের মধ্যে থাকবে, যতক্ষণ তারা পরস্পরে হিংসা না করবে’।[1]

(২) আল্লাহ নিজেই হিংসাকে নিন্দা করেছেন। যেমন তিনি আহলে কিতাবদের বদস্বভাব বর্ণনা করে বলেন, أَمْ يَحْسُدُونَ النَّاسَ عَلَى مَا آتَاهُمُ اللهُ مِن فَضْلِهِ ‘তবে কি তারা লোকদের (মুসলমানদের) প্রতি এজন্য হিংসা করে যে, আল্লাহ তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহ হতে কিছু দান করেছেন? (নিসা ৪/৫৪)। অত্র আয়াতের তাফসীরে ইমাম কুরতুবী বলেন, وَالْحَسَدُ مَذْمُومٌ وَصَاحِبُهُ مَغْمُومٌ وَهُوَ يَأْكُلُ الْحَسَنَاتِ كَمَا تَأْكُلُ النَّارُ الْحَطَبَ ‘হিংসা নিন্দনীয় এবং হিংসুক ব্যক্তি সর্বদা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। হিংসা সকল নেকী খেয়ে ফেলে যেমন আগুন কাঠকে খেয়ে ফেলে’ (কুরতুবী)।

হাদীছ থেকে :

(১) হযরত আনাস বিন মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন وَلاَ تَبَاغَضُوْا ولاَ تَحَاسَدُوْا وَلاَ تَدَابَرُوْا وَلاَتَقَاطَعُوْا وَكُوْنُوْا عِبَادَ اللهِ إِخْوَانًا ‘তোমরা পরস্পরে বিদ্বেষ করো না, হিংসা করো না, একে অপরকে পরিত্যাগ করো না, একে অপরের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করো না। তোমরা পরস্পরে আল্লাহর বান্দা হিসাবে ভাই ভাই হয়ে যাও’।[2] অত্র হাদীছে মানবতাকে হত্যাকারী কয়েকটি দুরারোগ্য ব্যাধির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা ইসলামী সমাজকে ভিতর থেকে ধ্বংস করে দেয়। এখানে চারটি বিষয় উল্লেখ করা হলেও তা মূলতঃ একটি থেকে উৎসারিত। আর তা হ’ল ‘হিংসা’। এই মূল বিষবৃক্ষ থেকেই বাকীগুলি কাঁটাযুক্ত ও যন্ত্রণাদায়ক ডাল-পালার ন্যায় বেরিয়ে আসে। হাসান বাছরী বলেন, প্রত্যেক মানুষের মধ্যে হিংসা রয়েছে। যতক্ষণ সেটি অবাধ্যতা ও যুলুমের দিকে সীমা অতিক্রম না করে, ততক্ষণ তা মানুষের কোন ক্ষতি করে না’।[3]

(২) হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, تُفْتَحُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ وَفِيْ رِوَايَةٍ : تُعْرَضُ الأَعْمَالُ فِى كُلِّ يَوْمِ خَمِيسٍ وَاثْنَيْنِ فَيَغْفِرُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ فِى ذَلِكَ الْيَوْمِ لِكُلِّ امْرِئٍ لاَ يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا إِلاَّ امْرَأً كَانَتْ بَيْنَهُ وَبَيْنَ أَخِيهِ شَحْنَاءُ فَيُقَالُ ارْكُوا هَذَيْنِ حَتَّى يَصْطَلِحَا ارْكُوا هَذَيْنِ حَتَّى يَصْطَلِحَا প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দরজা সমূহ খোলা হয়। অন্য বর্ণনায় এসেছে, এ দু’দিন বান্দার আমলনামা আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। অতঃপর আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করেনি এমন সবাইকে মাফ করা হয়। কেবল ঐ দু’জন ব্যতীত যাদের পরস্পরের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ বিদ্যমান রয়েছে। বলা হয়, এদের ছাড়, যতক্ষণ না এরা আপোষে মীমাংসা করে নেয়’।[4]

যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি হিংসা ও বিদ্বেষ পোষণ করে, তার ঈমান হয় ত্রুটিপূর্ণ। হিংসা তার সমস্ত নেকীকে খেয়ে ফেলে যেমন আগুন ধীরে ধীরে কাঠকে খেয়ে ফেলে। এভাবে সে নিজের আগুনে নিজে জ্বলে-পুড়ে মরে। পরিণামে তার পূর্বে কৃত সৎকর্মসমূহের নেকীগুলিও ক্রমে নিঃশেষ হয়ে যায়। ঐ অবস্থায় তার মৃত্যু হ’লে সে নিঃস্ব অবস্থায় আল্লাহর কাছে চলে যায়।

সালাফে ছালেহীনের বক্তব্য সমূহ :

(১) হযরত মু‘আবিয়া বিন আবু সুফিয়ান (রাযিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেন, كُلُّ النَّاسِ أَسْتَطِيْعُ أَنْ أَرْضِيَهُ إِلاَّ حَاسِدُ نِعْمَةٍ، فَإِنَّهُ لاَ يُرْضِيْهِ إِلاَّ زَوَالُهَا ‘সকল মানুষকে আমি খুশী করতে সক্ষম, কেবল হিংসুক ব্যতীত। কেননা সে অন্যের নে‘মত দূর না হওয়া পর্যন্ত খুশী হয় না’।[5]

(২) তাবেঈ বিদ্বান মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন (৩৩-১১০ হিঃ) বলেন, দুনিয়াবী কোন ব্যাপারে আমি কোন ব্যক্তিকে হিংসা করি না। কেননা সে ব্যক্তি যদি জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত হয়, তাহ’লে আমি কিভাবে দুনিয়াবী বিষয়ে তাকে হিংসা করব? অথচ জান্নাতের তুলনায় দুনিয়া অতীব তুচ্ছ। আর যদি ঐ ব্যক্তি জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়, তাহ’লে আমি কিভাবে তাকে দুনিয়াবী বিষয়ে হিংসা করব? অথচ ঐ ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে?[6]

(৩) অন্যতম তাবেঈ হাসান বাছরী (২১-১১০ হিঃ) বলেন, হিংসুকের চাইতে বড় কোন যালেমকে আমি দেখিনি যে মযলূমের মতোই। কেননা সে বেঁচে থাকে। অথচ দুঃখ তার অবশ্যম্ভাবী এবং দুশ্চিন্তা তার অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী’।[7]

(৪) আবু হাতেম দারেমী (মৃঃ ৩৫৪ হিঃ) বলেন, জ্ঞানীর উপর ওয়াজিব হ’ল সর্বাবস্থায় হিংসা হ’তে দূরে থাকা। কেননা হিংসার সবচাইতে নীচু স্তর হ’ল তাক্বদীরের উপর সন্তুষ্টি পরিত্যাগ করা এবং আল্লাহ স্বীয় বান্দার জন্য যা নির্ধারণ করেছেন তার বিপরীত কামনা করা। তিনি বলেন, الحسدُ من أخلاقِ اللِّئَامِ، وتركُه من أفعال الكِرام، ولكلِّ حريقٍ مُطْفِئٌ، ونارُ الحسدِ لا تَطْفَأُ হিংসা হ’ল নিকৃষ্ট ব্যক্তিদের চরিত্র এবং তা পরিত্যাগ করা হ’ল মর্যাদাবান ব্যক্তিদের কর্ম। আর প্রত্যেক আগুনের নির্বাপক আছে। কিন্তু হিংসার আগুন নির্বাপিত হয় না’।[8]

(৫) আবুল লাইছ সমরকন্দী (মৃঃ ৩৭৩ হিঃ) বলেন, হিংসাকৃত ব্যক্তির আগেই হিংসুকের নিকট পাঁচটি শাস্তি পৌঁছে যায়। (ক) দুশ্চিন্তা, যা বিচ্ছিন্ন হয় না। (খ) কষ্ট, যার কোন পুরস্কার পাওয়া যায় না। (গ) তিরষ্কার, যাকে প্রশংসা করা হয় না (ঘ) আল্লাহর ক্রোধ অর্জন করা এবং (ঙ) তার জন্য (কল্যাণ কর্মের) তাওফীকের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়া।[9]

[1]. ত্বাবারাণী হা/৮১৫৭; ছহীহাহ হা/৩৩৮৬।

[2]. বুখারী, ফাৎহুলবারী, হা/৬০৭৬; মুসলিম হা/২৫৫৯; মিশকাত হা/৫০২৮।

[3]. ফাৎহুল বারী হা/৬০৬৫।

[4]. মুসলিম হা/২৫৬৫; মিশকাত হা/৫০২৯-৩০।

[5]. ইবনু আসাকির, তারীখু দিমাশ্ক্ব ৫৯/২০০ পৃঃ।

[6]. বায়হাক্বী, যুহ্দ আল-কাবীর ৩১৫ পৃঃ।

[7]. ইবনু আব্দি রবিবহী, আল-ইক্বদুল ফারীদ ২/২৭০ পৃঃ।

[8]. আবু হাতেম দারেমী, রওযাতুল উক্বালা ১৩৪ পৃঃ।

[9]. শিহাবুদ্দীন আবশীহী, আল-মুসতাত্বরাফ ২২১ পৃঃ।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন