HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আত্মগঠন

লেখকঃ খালিদ ইবন আব্দুল আযীয আবাল খায়ল

আত্মগঠনের ক্ষেত্রে বর্জনীয় বিষয়াদি:
১. আত্মম্ভরিতা পরিহার ও আত্মার অদৃশ্যমান দোষত্রুটি ত্যাগ করা: আর এ বিশ্বাস পোষণ করা যে, মহান আল্লাহ আত্মম্ভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা দোষগুলোকে লোকচক্ষু থেকে আড়াল করে রেখেছেন, এটি বান্দার প্রতি তাঁর অপার করুণা। মানুষের মুখে প্রশংসা শোনে মানবাত্মা যখন দম্ভ-অহঙ্কারে উদ্বেলিত হয় তখন এ ত্যাগের প্রয়োজনীয়তা আরো তীব্র হয়।

আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন, এসব ক্ষেত্রে আমি শায়খুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রহ. থেকে অভূতপূর্ব আচরণ প্রত্যক্ষ করেছি, যা আর কারো মধ্যে দেখি নি। তিনি বেশি বেশি বলতেন,

ما لي شيء، ولا مني شيء، ولا فيّ شيء .

“আমার কিছু নেই, আমার পক্ষ থেকেও কিছু হয় নি এবং আমার মাঝেও কিছু নেই।”

তাঁর সম্মুখে প্রশংসা করা হলে বলতেন,

والله إني إلى الآن أجدد إسلامي كل وقت، وما أسلمت بعدُ إسلاما جيدا .

“আল্লাহর শপথ আমি এখনো প্রতি মুহূর্তে আমার ইসলামকে সংস্কার ও নবায়ন করি। এখনো পর্যন্ত আমি ভালো মানের ইসলাম গ্রহণ করতে পারি নি।” [মাদারেজুস সালেকীন: ১/৫২৪।]

শ্রদ্ধেয় পাঠকবৃন্দ, শাইখুল ইসলামের ব্যক্তিত্বের বিশালতাটি কল্পনা করুন। স্মরণে আনুন তাঁর সংগ্রামময় সোনালী জীবনকে। জীবনে শত শত বিতর্কে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি এবং প্রতিবারই ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তকারীদের হতাশ করে বিজয় মালা ছিনিয়ে এনেছেন। জীবদ্দশায় সূধী ও সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে কত প্রশংসা ও অভিবাদন পেয়েছেন তিনি। তাঁর শত্রুরা পর্যন্ত তাঁর ব্যক্তিত্ব, প্রতিভা ও জ্ঞানের বিশালতার কথা অকপটে স্বীকার করেছে বার বার। এবার নিজ সম্বন্ধে তাঁর উপরোক্ত মন্তব্য সম্পর্কে বিচার করুন। চিন্তা করে দেখুন, অহংকার ও আত্মম্ভরিতা ত্যাগ করে নিজকে কত সুন্দরভাবে গঠন করতে পারলে এমন মন্তব্য করা যায়। জ্ঞান ও কর্মে উচ্চাসনে আরোহনের এটি একটি অন্যতম উপাদান।

হে মুসলিম ভ্রাতৃবৃন্দ! যখন প্রমাণিত হলো যে, আপনার সম্বন্ধে আপনিই সর্বাধিক জ্ঞাত। আপনার ভিতরে কী আছে সেটি আপনার চেয়ে অন্য কেউ বেশি জানে না? তাই আপনাকে সতর্ক হতে হবে, এমনও দিন আসবে, লোকেরা আপনার প্রশংসা করবে এবং এমনও হতে পারে জনসমুদ্রের সামনে বাড়াবাড়ি পর্যায়ের প্রশংসা হবে। পক্ষান্তরে এমন দিনও আসতে পারে যে, লোকেরা আপনার নিন্দা জ্ঞাপন করবে, দুর্নাম ছড়াবে, আপনার মর্যাদা হানি করবে। তবে আপনার বিশ্বাস থাকা উচিৎ, প্রশংসা বা নিন্দা কোনোটাই কিয়ামতের দিন আপনার পাল্লা ভারি করবে না; বরং আপনার আভ্যন্তরীণ অবস্থা, মানসিক পঙ্কিলতা, অন্তরের সুপ্ত ত্রুটি-বিচ্যুতি সম্বন্ধে কিয়ামতের দিন আল্লাহ আপনার হিসাব নিবেন। সুতরাং মানুষ আপনাকে কেমন জ্ঞান করল সেটি বিবেচ্য নয়। আপনি কেমন, কেমন আপনার অন্তর সেটিই বিবেচ্য। তাই লোকেরা আপনাকে সম্মান করে -এর ওপর ভিত্তি করে আপনিও নিজেকে সম্মানিত জ্ঞান করা শুরু করবেন না। মানুষ যতই আপনার প্রশংসা করুক, বাস্তবতা কখনো বিঃস্মৃত হবেন না। মানুষের প্রশংসার ওপর আপনার বিচার হবে এমন আত্মপ্রবঞ্চনায় পতিত হবেন না।

এ প্রসঙ্গে আল্লামা ইবন হাযম রহ.-এর একটি কথা বড়ই চমৎকার, নিজ দোষ-ত্রুটি গণনা করে তার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়ে তিনি মন্তব্যটি করেছিলেন।

বলেছেন, আমার দোষের মাঝে একটি ছিল ‘তীব্র আত্মম্ভরিতা’। আমার বিবেক আত্মার সেসব দোষ সম্বন্ধে পরিজ্ঞাত হয়ে তার সাথে বিতর্কে জয়ী হয়। আর তাকে চরমভাবে পরাভূত করে ধরাশায়ী করে ফেলে। ফলশ্রুতিতে আত্মম্ভরিতা সমূলে বিদায় নেয়। আল্লাহর শুকরিয়া, এমনভাবেই বিদায় নেয় যে, সামান্যতম চিহ্ন পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকে নি। এরপর থেকে আত্মা নিজেকে ছোট জ্ঞান করে বিনয়ী আচরণ করতে শুরু করে। [মুদাওয়াতুন নুফূস: ১/৩৫৪।]

সালাফে সালেহীন রহ. দীন সম্বন্ধে চূড়ান্ত পর্যায়ের জ্ঞান ও পূর্ণাঙ্গ ধর্মানুরাগের কারণে খ্যাতি ও প্রশংসা কুড়ানোর মজলিসকে সতর্কতার সাথে এড়িয়ে চলতেন।

আল্লামা ইবনুল মুবারক রহ. বলেন, আমাকে সুফিয়ান রহ. বলেছেন, খ্যাতির অনুরাগ থেকে সতর্ক থাকো। যাদের কাছেই আমি গিয়েছি প্রত্যেকেই খ্যাতির লোভ সম্বন্ধে আমাকে সতর্ক করেছেন।

আল্লামা বিশর আল হাফি রহ. বলেন, যার ভিতর খ্যাতির লোভ আছে তার মাঝে আল্লাহভীতি ও তাকওয়া নেই।

তাইতো দাওয়াত কর্মীদের জীবনে অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এ পিচ্ছিল জায়গার ভয়াবহতা থেকে সতর্ক থাকা এবং দাওয়াত কর্মে সৎ উদ্দেশ্য লালন করা। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের জন্য এ বিধান প্রযোজ্য।

এ উদ্দেশ্য পতনের সবচেয়ে বড় নিদর্শন হচ্ছে, দা‘ঈর অন্তরে ভক্ত ও অনুরাগী বানানো এবং সম্মান ও সমাদর প্রাপ্তির স্পৃহা জাগ্রত হওয়া।

২. অতিরিক্ত মেলা-মেশা ত্যাগ করে নির্জনতা ও একাকীত্ব অবলম্বন করা: আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন, চারটি কাজ প্রয়োজনের মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে এর মাধ্যমে অন্তর কঠোর ও শক্ত হয়ে যায়: আহার, নিদ্রা, কথাবার্তা ও মেলামেশা। [আল-ফাওয়ায়েদ: পৃ ৯৭।]

এসব কাজ বিনা প্রয়োজনে কিংবা অধিকহারে করতে থাকলে অন্তর শক্ত হয়ে মরে যায়। তিনি সত্যই বলেছেন, অন্তরের শুদ্ধতা ও আত্মার কল্যাণের জন্য নির্জনতার চেয়ে অধিক ফলদায়ক আর কিছু নেই। তবে এই নির্জনতা ও একাকীত্ব হবে ন্যায়সঙ্গত ও পরিমিত। কর্তব্য সম্পাদনের কষ্ট থেকে পরিত্রাণ পাওয়া কিংবা দায়িত্ব এড়ানোর উদ্দেশ্যে নয়।

একজন দা‘ঈ ও মুরুব্বির জন্য -আলোচিত বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত- নির্জনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্জনতা দা‘ঈকে নিজের হাকীকত সম্বন্ধে অনুধাবন করার ফুরসত দেয়। মানুষের শোরগোল ও তার বিরূপ প্রভাব-প্রতিক্রিয়া থেকে মুক্ত থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ তৈরি করে দেয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿قُلۡ إِنَّمَآ أَعِظُكُم بِوَٰحِدَةٍۖ أَن تَقُومُواْ لِلَّهِ مَثۡنَىٰ وَفُرَٰدَىٰ ثُمَّ تَتَفَكَّرُواْۚ مَا بِصَاحِبِكُم مِّن جِنَّةٍۚ﴾ [ سبا : ٤٦ ]

“বলুন, আমি তো তোমাদেরকে একটি বিষয়ে উপদেশ দিচ্ছি, তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে দু‘জন অথবা এক একজন করে দাঁড়িয়ে যাও, অতঃপর চিন্তা করে দেখ, তোমাদের সাথীর মধ্যে কোনো পাগলামী নেই।” [সূরা সাবা, আয়াত: ৪৬]

এ আয়াতে মহান আল্লাহ কুরাইশ কাফির ও যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করেছে তাদেরকে মানুষের ভীড় ও শোরগোল থেকে পৃথক হয়ে একাকী কিংবা দু’একজন সাথীর সঙ্গে নির্জনে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিচ্ছেন। এতে তাদের নিকট সত্য প্রকাশিত হবে। এর কারণ হচ্ছে, যে ব্যক্তি সার্বক্ষণিক মানুষের সাথে মেলামেশায় মত্ত থাকে আস্তে আস্তে তার চিন্তাশক্তি লোপ পেতে থাকে এবং পানি যেমন পঁচে যায় তেমনি তার বোধ-বুদ্ধিতেও পঁচন ধরে। এভাবে চলতে চলতে এক সময় চিন্তা শূণ্য হয়ে যায়, সিদ্ধান্ত গ্রহণে অস্থির এবং জটিল মুহূর্তের কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

ফায়েদা:

নুয়াইম ইবন হাম্মাদ রহ. বলেছেন, আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক রহ. তার অধিকাংশ সময় ঘরে বসেই কাটাতেন। তাকে বলা হলো, এতে আপনি একাকীত্ববোধ করেন না? উত্তরে তিনি বলেছেন, একাকীত্ববোধ করব কেন, আমিতো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণের সাথে সময় অতিবাহিত করি।

আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন, শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রহ.-এর একজন নিকটাত্মীয় আমাকে বলেছেন, শাইখ তাঁর (বিপদ সঙ্কুল, সংগ্রামী) জীবনের প্রথম দিকে আপতিত বিপদের তীব্রতার কারণে কিছু সময় একাকীত্বে কাটানোর জন্য মাঝে মাঝে নির্জন প্রান্তরে বেরিয়ে পড়তেন। একদিন আমি তার পিছু নিয়ে তাকে পর্যবেক্ষণ করেছি, প্রান্তরে গিয়ে তিনি দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লেন এবং লায়লার মজনুকে নিয়ে লেখা বিখ্যাত এক কবির নিম্নোক্ত পংক্তি নিজেকে উদ্দেশ করে আবৃত্তি করলেন,

وأخرج من بين البيوت لعلني * أحدث عنك النفس بالسر خاليا .

“জনপদ থেকে বের হয়ে আসি, তোমায় নিয়ে নির্জনে নিজের সাথে কিছু বলার আশায়।”

নিশ্চয় এটি বড়ই চমৎকার একটি দৃশ্য। আপন স্রষ্টার তরে বান্দার অনুরাগ-ভালোবাসা এমন স্তরে পৌঁছলে নির্জনে তাঁর সম্মুখে নিজ অন্যায়-অপরাধ স্বীকার করে তাঁর সান্নিধ্য অন্বেষণ করে। যিকিরের মাধ্যমে তাঁর ঘনিষ্ঠ হবার চেষ্টা করে। আপন বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল এ নির্জনতাগুলো যুগে যুগে উম্মতকে রব্বানী ও হক্কানী বহু নেতা উপহার দিয়েছে। যারা উম্মতকে তাদের কর্তব্য পালন ও রবের প্রভূত্ব প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দিয়ে তাদের শান বুলন্দ করণে নিজেদেরকে শতভাগ উজাড় করে নিরত রেখেছেন আমৃত্যু। আর নিজ স্বার্থ ও আত্মচাহিদা পূরণ করা থেকে মুক্ত থেকেছেন পূর্ণ সফলতার সাথে।

এখান থেকেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অতি ভারী বাণী ধারণ এবং তার জন্য ত্যাগ ও কুরবানি করার প্রস্তুতি গ্রহণ কল্পে হেরা গুহায় আপন রবের সান্নিধ্যে নির্জনতা অবলম্বনের তাৎপর্য বুঝে আসে।

আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রহ. মেলামেশাকে চমৎকার দু’টি ভাগে ভাগ করেছেন। বলেছেন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সম্মেলন দুই প্রকার:

এক. সময় কাটানো ও অন্তরের বিনোদনের জন্য সম্মেলন। এ জাতীয় সম্মেলনে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি। সর্ব নিম্নস্তরের ক্ষতি হচ্ছে, এতে সময় ও অন্তর বিনষ্ট হয়ে যায়।

দুই. নেক কাজে পারস্পরিক সহযোগিতা, আমর বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকারের উদ্দেশ্যে সম্মেলন। এ জাতীয় সম্মেলন জীবনের একটি লাভ জনক ও বিশাল প্রাপ্তি। তবে এতে তিনটি আশংকা রয়েছে।

(ক) একে অপরকে দেখানোর জন্য নিজেকে শোভিত করা।

(খ) প্রয়োজনের অতিরিক্ত মেলামেলা ও গল্প করা।

(গ) সম্মেলন ও আড্ডা অভ্যাসে পরিণত হওয়া, যা উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করবে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন