HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আত্মগঠন

লেখকঃ খালিদ ইবন আব্দুল আযীয আবাল খায়ল

আত্মগঠনে বরণীয় বিষয়াদি
আত্মগঠন ঈমানী অবকাঠামোয় সুসম্পন্ন হবার নিমিত্তে আমরা এখানে চারটি বিষয় উল্লেখ করব। বস্তুচতুষ্টয়ের অনুবর্তনের মাধ্যমে আত্মগঠন ঈমানী চেতনায় সমৃদ্ধ হবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। বিষয়গুলো হলো,

১. গোপনীয়তা রক্ষা করে অধিক পরিমাণে আমল করে যাওয়া। আর লোক চক্ষুর অন্তরালে সম্পাদিত আমলই আল্লাহর মুহব্বতের সত্যতা প্রমাণ করে। একজন মুসলিমের যে গুণটি অবধারিতভাবে থাকতে হয় অর্থাৎ ইখলাস, গোপনীয়তার সাথে সম্পাদিত আমল সেই ইখলাসের বিদ্যমানতার পরিচায়ক। জনৈক মনীষী বলেন, “গোপন আমলের চেয়ে নফসের ওপর অধিক ভারি ও কষ্টকর আর কিছু নেই। কারণ, এতে তার কোনো অংশ থাকে না।”

গোপন আমলের অনেক উপকারিতা রয়েছে। যেমন,

ক. সকল নেক আমলের ক্ষেত্রে যে ব্যক্তির অবস্থা ইখলাস ও আল্লাহর মুহব্বত প্রমাণের মানদণ্ডে উত্তীর্ণ, তার ব্যাপারে নিশ্চিত করে বলা যায়, দৃঢ়তা ও অবিচলতার বিরাট এক পুঁজি সঞ্চয় করে নিয়েছে সে। যা বিশেষ করে বিপদ ও মুসীবতের দিনগুলোতে বিশাল কাজ দিবে।

খ. গোপন আমলকে মানদণ্ড ও পাল্লা বিবেচনা করা হয়, যে পাল্লার মাধ্যমে বান্দা তার আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছার রাস্তার বিশুদ্ধতাকে পরিমাপ করতে পারে। সুতরাং একজন মুসলিম যখন বাহ্যিক আমলের ক্ষেত্রে নিজের মাঝে উদ্যম ও শক্তির উপস্থিতি দেখতে পায়। আর এর বিপরীতে গোপন আমলের ক্ষেত্রে অলসতা ও দুর্বলতা অনূভব করে, তাহলে তাকে সতর্ক হয়ে যেতে হবে এবং নিজ নফসকে অভিযুক্ত করে শুধরানোর রাস্তা বের করতে হবে। তাকে অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে যে, যে রাস্তায় সে চলমান তা বিচ্ছুতি ও বিপদ হতে পরিপূর্ণ নিরাপদ নয়।

গ. অন্তরে ইখলাসের বৃক্ষকে জীবন্ত করা। আর ঐ বৃক্ষকে উন্নত, বৃদ্ধি, শক্তিশালী ও সজীব করার ক্ষেত্রে গোপন আমলের মত আর কোনো কিছু নেই।

২. ইহলৌকিক ও পারলৌকিক যাবতীয় প্রয়োজনের ক্ষেত্রে আল্লাহর আশ্রয়ের দ্বারস্থ হওয়া ও তাঁর সম্মুখে নিজেকে নিক্ষিপ্ত করার ব্যাপারে নিজ আত্মাকে অভ্যস্ত করে তোলা। বান্দার এ ছাড়া কোনো বিকল্প ব্যবস্থা যে নেই, এটি দিবালোকের মতো সত্য। তবে অত্যন্ত পরিতাপের সাথে বলতে হয়, সাধারণ মানুষ; বরং বিশেষ ব্যক্তিবর্গরাও এ বিষয়ে খুবই গাফেল ও অমনযোগী। বিপদে পতিত হলে তাদের দেখতে পাবেন আল্লাহর দরজা ব্যতীত সকল দরজায় কড়া নাড়তে। সকল জায়গায় ধর্না দিবে কেবল আল্লাহর নিকট আসবে না। আর তাঁর দ্বারস্থ যদি হয়ও তবে মনে অনেক সংশয় নিয়ে, বিপদ দূর হবে এমন বিশ্বাস মনে আনতে পারে না। অথচ মানুষের উচিৎ, বেশি বেশি আল্লাহর দ্বারস্থ হওয়া। তাঁর কাছে নিজেকে বার বার সমর্পণ করা এবং এই ব্যাপারে নিজেকে ছোট মনে না করা, হীনমন্যতায় না ভোগা। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা পরম দাতা, অতিশয় দয়ালু। প্রার্থনাকারীর কোনো প্রার্থনাই তাঁর নিকট ভারী নয়। বান্দা যদি প্রার্থনাতে আন্তরিক সততার পরিচয় দেয়। একেবারে উপায়হীন অবস্থায় পৌঁছে যায় এবং এই বিশ্বাস পোষণ করে যে, কেবল আল্লাহ তা‘আলাই বিপদ দূর করতে পারেন, তিনি ব্যতীত আর কারো ক্ষমতা নেই। তখনই কেবল সেই মহা ক্ষমতাধর আল্লাহর কাছ থেকে স্বস্তি ও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে যার হাতে সব কিছু নিয়ন্ত্রিত হয়, যার নিমিত্তে সব কিছু সম্পাদিত হয়।

আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন, “বিতাড়িত হলেও দরজায় অবস্থান করাকে লজ্জার মনে করবে না। প্রতাখ্যাত হলেও ওযর-আপত্তি করাকে বাদ দিবে না। দরজা যদি গৃহীতদের তরে উন্মুক্ত করা হয় তাহলে তুমি মিথ্যুকদের ন্যায় ভীড় করবে এবং অযাচিত-অবাঞ্চিতদের ন্যায় প্রবেশ করবে।” [আল-ফাওয়ায়েদ: পৃ. ৫১।]

সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সাথে বান্দার বন্ধন যেসব জিনিসের মাধ্যমে দৃঢ় হয় তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হচ্ছে, আল্লাহর আসমা ও সিফাত তথা নাম ও গুণ সম্বন্ধে ধারণা লাভ করা। সেসব আসমা ও সিফাতের অর্থ সম্বন্ধে গভীর চিন্তা করা। তার প্রভাব ও আনুষঙ্গিকতার প্রতি দৃষ্টিপাত করা। এর মাঝে বান্দার সাথে সৃষ্টিকুলের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে মহান সৃষ্টাকর্তা আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপিত হবার ক্ষেত্রে দারুন প্রভাব রয়েছে।

ফায়েদা:

আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন, চিন্তাশীল ও সত্যনিষ্ঠ সালেকীনদের একটি বিশুদ্ধ অভিজ্ঞতা হচ্ছে, যে ব্যক্তি সব সময় অধিক পরিমাণে يا حيّ يا قيوم لا إله إلا أنت পাঠ করবে, এটি তার অন্তর ও বিবেককে জীবন্ত করে তুলবে। শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রহ. এ কালেমাটির প্রতি তীব্রভাবে আকর্ষণ বোধ করতেন। সব সময় পড়ার মাঝে থাকতেন। তিনি আমাকে একদিন বললেন, অন্তর জীবন্ত করণে এ কালেমা দু’টির বিরাট প্রভাব রয়েছে। [আল-ওয়াবিলুস সাইয়েব: পৃ. ৬২।]

৩. সার্বক্ষণিক ও সর্বাবস্থায় যিকিরের ওপর থাকা। যিকিরকে অভ্যাসে পরিণত করে ফেলা যে, একটি মুহূর্তও যেন যিকির বিহীন অতিবাহিত না হয়। যিকির অন্তরের প্রশান্তি আনয়ন করে। অন্তরে দৃঢ়তা ও মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿أَلَا بِذِكۡرِ ٱللَّهِ تَطۡمَئِنُّ ٱلۡقُلُوبُ﴾ [ الرعد : ٢٨ ]

“জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয়।” [সূরা আর-রা‘দ, আয়াত: ২৮]

বরং যিকিরকে বিপদ-আপদে দৃঢ় থাকার সবচেয়ে বড় মাধ্যম হিসাবে গণ্য করা হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِذَا لَقِيتُمۡ فِئَةٗ فَٱثۡبُتُواْ وَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ كَثِيرٗا لَّعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٤٥﴾ [ الانفال : ٤٥ ]

“হে মুমিনগণ, যখন তোমরা কোনো দলের মুখোমুখি হও, তখন অবিচল থাক আর অধিক পরিমাণে আল্লাহর যিকির কর, যাতে তোমরা সফল হও।” [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৪৫]

আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন, যিকিরের উপকারিতার মাঝে একটি হচ্ছে, যিকির অন্তর ও আত্মার শক্তি। বান্দা যদি যিকির শূন্য হয়ে যায় তাহলে সে প্রাণহীন শরীর সদৃশ হয়ে যাবে। (তিনি বলেন) একবার আমি শায়খুল ইসলাম ইবন তাইমিয়ার নিকট গেলাম, তিনি ফজরের সালাম আদায় করে যিকিরে বসেছেন। প্রায় অর্ধদিন আল্লাহর যিকিরে অতিবাহিত করার পর আমার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বললেন। এটি আমার দিনের খাবার। যদি খাবার গ্রহণ না করি তাহলে আমার শক্তি পড়ে যাবে। (অথবা এর কাছাকাছি কোনো কথা বলেছিলেন)

একদিন আমাকে বললেন, আমি কেবল আত্মাকে বিশ্রাম দেওয়ার জন্যই যিকির থেকে সামান্য সময় বিরত থাকি এবং এর মাধ্যমে নতুন আরেকটি যিকিরের প্রস্তুতি গ্রহণ করি। (অথবা এর কাছাকাছি কোনো কথা বলেছিলেন)

৪. সারা জীবনের লক্ষ্য স্থির করে তার জন্য একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা এবং খুব সুক্ষ্মতার সাথে তা সম্পন্ন করা। এর মাধ্যমে আমরা নেতিবাচক ও অহেতুক কর্মকাণ্ড থেকে বেঁচে থাকতে পারব আর সুশৃংখল ও ইতিবাচক কাজের প্রতি অধিক মনোযোগী হতে পারব। পাশাপাশি সময়ের মূল্য অনুধাবন করতে পারব।

আত্মা যদি পরিকল্পিত লক্ষ্য ভিন্ন অন্য কোনো দিকে ধাবিত না হয়। গৃহীত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়েই সার্বক্ষণিক ব্যস্ত থাকতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। আর তা সাধন করাই একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান হয় তাহলে সময়ের মূল্য সম্বন্ধে মনে এক অনুভূতির সৃষ্টি হবে। উদ্দেশ্যহীন কাজে দীর্ঘ সময় নষ্ট হওয়ার কারণে একটি অস্থিরতার সৃষ্টি হবে। অহেতুক মজলিসের প্রতি সৃষ্টি হবে তীব্র ঘৃণা আর ভালো ও কল্যাণমূলক মজলিসের প্রতি প্রচণ্ড আকর্ষণ। এটি বাস্তবিকপক্ষেই অতি উচ্চমানের একটি স্তর, যা অর্জন করার প্রতি আমাদের সকলেরই সচেষ্ট হওয়া উচিৎ।

আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে আত্মা গঠনে সচেষ্ট হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন।

সমাপ্ত

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন