HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
ইসলামে ‘তাকওয়া’র স্বরূপ ও সমাজ জীবনে এর প্রভাব
লেখকঃ ড. মোঃ ছানাউল্লাহ
৫
মুসলিম মনীষীদের দৃষ্টিতে তাকওয়া ও মুত্তাকী১. আলী ইব্ন আবূ তালিব (রা) বলেন, “তাকওয়া হচ্ছে পাপ কাজে জড়িয়ে থাকাকে ছেড়ে দেয়া এবং সৎকাজে প্রতারিত হওয়াকে ছেড়ে দেয়া [. ইমাম ফখরুদ্দীন আল রাযী, বৈরুত, দার ইহইয়াউত তুরাছ আল আরাবী, ১৯৯৭, খণ্ড-১, পৃ. ২৬৮।]।” কুরআনের বাণী “হে মানবসমাজ! তোমরা তোমাদের প্রভূর ইবাদত কর, যিনি তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার [. আল কুরআন, ২: ২১।]।” এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে আল্লামা কাযী নাসিরুদ্দীন বায়যাবী (র) বেলন, “এর দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, তাকওয়া হচ্ছে আল্লাহর পথের পথিকদের সর্বশেষ স্তর। আল্লাহ ব্যতীত সবকিছু থেকে মুক্ত হয়ে কেবল আল্লাহমুখী হয়ে জীবন যাপন করা এবং ইবাদতকারী যেন তার ইবাদত দ্বারা প্রতারিত না হয়; বরং সে ভয় ও আশা নিয়ে ইবাদত করবে। যেমন আল্লাহ্ তা’আলা অন্যত্র বলেছেন, “ তারা তাদের প্রভূর ইবাদত করে ভয়ে ভয়ে ও আশায় আশায়। তারা তাঁর রহমতের প্রত্যাশা করে এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় করে [. কাযী নাসিরুদ্দীন আল-বায়যাবী, প্রাগুক্ত, পৃ. ৪১।]।”
২. উমর ইব্নু আবদুল আযীয (র) বলেন, “ আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা ছেড়ে দেয়া এবং তিনি যা ফরয করেছেন তা আদায় করার নাম হচ্ছে তাকওয়া [. আবু মুহাম্মদ আল হুসাইন ইবন মাসউদ আল-বগবী (মৃ. ৫১০ হি.), মা’আলিমুত তানযীল ফিত তাফসীর ওয়াত তাবীল, বৈরুত, দার আল ফিক্র, ১৯৮৫, খণ্ড ১, পৃ. ৩৫।]”।
৩. আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) মুত্তাকীদের পরিচয় দিয়ে বলেন, “ যারা মহান আল্লাহর শাস্তিকে ভয় করে এমন সব কর্মকাণ্ড ছেড়ে দিয়ে, যেগুলোর হারাম হওয়া সম্পর্কিত বিধান আল্লাহর দেয়া হেদায়েত তথা কুরআন ও হাদীস থেকে তারা জানে এবং অনুসরণের জন্য মহনবী (সা) যা নিয়ে এসেছেন তার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসী হয়ে আল্লাহ্র রহমত কামনা করে [. আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন জারীর আল তাবারী (মৃ. ৩১০ হি.) জামিউল বায়ান ‘আন তাবীলি আয়িল কুরআন, বৈরুত দার আল ফিক্র, তা.বি. খণ্ড ১. পৃ.১৪৭। আদ্দুররুল মানসুর ফী আল তাফসীর আল মাছুর, প্রাগুক্ত, প. ৬০।]।” তিনি আরো বলেন, “যে ব্যক্তি নিজেকে শিরক, কবীরা গুনাহ ও অশ্লীল কাজকর্ম ও কথাবার্তা থেকে বিরত রাখে, তাকে মুত্তাকী বলা হয়। [. সম্পদনা পরিষদ সম্পাদিত, দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম,ঢাকা ইফাবা, পৃ. ৬৯৫।]”
৪. কালবী (র.) বলেন, “যারা গুনাহে কবীরা তথা বড় ধরনের অপবাদ থেকে বেঁচে থাকে, তারা হল মুত্তাকী [. আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন জারীর আল তাবারী (মৃ. ৩১০ হি.) জামিউল বায়ান ‘আন তাবীলি আয়িল কুরআন, বৈরুত দার আল ফিক্র, তা.বি. খণ্ড ১. পৃ.১৪৭।]।”
৫. হাসান (র.) বলেন, “ আল্লাহ্র ওপর আল্লাহ ব্যতীত কাউকে গ্রহণ না করা এবং সবকিছু তাঁর হাতে ন্যস্ত বলে জানা-এটিই হচ্ছে তাকওয়া।“তিনি আরও বলেন, “হারামের ভয়ে বহু হালালও যতক্ষণ মুত্তাকীগণ বর্জন করে চলেন ততক্ষণ পর্যন্ত মুত্তাকীদের মাঝে তাকওয়া বিদ্যমান থাকে। [. আবদুর রহমান জালালুদ্দীন আল সুয়ূতী (র), আদ্দুররুল মানসুর ফী আল তাফসীর আল মাছুর, প্রাগুক্ত, প. ৬১।]” আল্লাহ্র বাণী “ লিলমুত্তাকীন [. আল কুরআন, ২ : ২।]”–এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “মুত্তাকী হচ্ছে তারা, যারা তাদের প্রতি যা হারাম করা হয়েছে তা থেকে দূরে থাকে এবং তাদের ওপর যা ফরয করা হয়েছে তা পালন করে [.আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন জারীর আল তাবারী (মৃ. ৩১০ হি.) জামিউল বায়ান ‘আন তাবীলি আয়িল কুরআন, প্রাগুক্ত।]।”
৬. ইবরাহীম ইব্নু আদহাম (র.) বলেন, “ সৃষ্টিজগত তোমার যবানে-কথায় কোন ক্রটি পাবে না, ফেরেশতাগণ তোমার কাজ-কর্মে ক্রটি পাবে না এবং আরশের অধিপতি আল্লাহ্ তোমার গোপনীয়তায় কোন ক্রটি পাবে না-এমন অবস্থার নাম তাকওয়া। [. ইমাম ফখরুদ্দীন আল রাযী, বৈরুত, দার ইহইয়াউত তুরাছ আল আরাবী, ১৯৯৭, খণ্ড-১, পৃ. ২৬৮।]”
৭. ওয়াকেদী (র.) বলেন, “তাকওয়া হচ্ছে সত্যের জন্য তোমার মনকে সজ্জিতকরণ, যেমন তোমার বাহ্যিক অবস্থাকে চরিত্রের জন্য সাজিয়ে থাক [. প্রাগুক্ত।]।”
৮. আবদুল্লাহ ইব্ন মুবারক (র.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “যদি কোন ব্যক্তি পরিহারযোগ্য একটি বিষয়েও সে করে তাহলে সে ব্যক্তি মুত্তাকীদের অন্তর্ভূক্ত হবে না [. আবদুর রহমান জালালুদ্দীন আল সুয়ূতী (র), আদ্দুররুল মানসুর ফী আল তাফসীর আল মাছুর, প্রাগুক্ত, প. ৬১।]।"
৯. আবূ দারদা (রা.) বলেন, “ সম্পূর্ণ তাকওয়া হল বান্দা আল্লাহকে ভয় করবে (করণীয় বিষয়) ত্যাগ করতে গিয়ে কিছু হালালও বর্জন করবে এই ভয়ে যেন তাকে হারামে পড়তে না হয়; আর যেন সামন্য হালাল বর্জন যেন হারাম এবং হালালের মাঝখানে পর্দা-দেয়াল হয়ে যায়। [. প্রাগুক্ত।]”
১০. সুফইয়ান সাওরী (র.) বলেন, “যে বিষয়ে তোমর মনে সন্দেহ হয়, তা পরত্যাগ করার চেয়ে তাকওয়ার সহজ পথ আমার জানা নেই। [. আবদুল কাদের জিলানী (র), অনুবাদ-হাফেয মাওলানা আবদুল জলীল. গুনিয়াতুত তালেবীন, ঢাকা, ফেরদৌস পাবলিকেশন্স, তা.বি. খণ্ড ১, পৃ. ১৯০।]” সুতরাং সন্দেহপূর্ণ যে কোন কাজ থেকে বিরত থাকা এবং সবসময় নিজের নফসের হিসাব গ্রহণ করা হল তাকওয়া।
১১. শাহর ইব্নু হাউশার (র) বলেন, “মুত্তাকী হচ্ছেন তিনি, যিনি এমন বিষয়-আশায়ও বর্জন করেন, যাতে কোন ক্ষতি নেই এই ভয়ে যাতে ক্ষতি আছে তা থেকে যেন বেঁচে থাক যায়। [. আলাউদ্দীন আলী ইবন মুহাম্মদ আল বাগদাদী (মৃ. ৭২৫ হি.) লুবাতুত তাবীল ফী মা’আনিত তানযীল ওরফে তাফসীরে খাযেন, বৈরুত, দার আল ফিক্র, ১৩৯৯/১৯৭৯, খণ্ড ১, পৃ. ২৮।]”
১২. আতিয়া আল সাআদী (রা.) বলেন, “মুমিন বান্দা ততক্ষণ পর্যন্ত মুত্তাকী বলে গণ্য হয় না যতক্ষণ না সে এমন বিষয়ও পরিত্যাগ নাকরে যা ক্ষতির কারণ হতে পারে। [. আবদুর রহমান জালালুদ্দীন আল সুয়ূতী (র), আদ্দুররুল মানসুর ফী আল তাফসীর আল মাছুর, বৈরুত, দার আল ফিক্র, ১৯৮৩, খণ্ড ১, প. ৬১।]”
১৩. ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) একবার উবাই ইব্নু কা’ব (রা)-কে বললেন, “আপনি তাকওয়া সম্পর্কে আমাকে বলুন। জবাবে তিনি বললেন, ‘আপনি কি কখনও কন্টকাকীর্ণ পথ দিয়ে চলেছেন? ওমর (রা) বলেছেন, কাপড় চোপড় গুটিয়ে অত্যন্ত সাবধানে চলেছি। কা’ব (রা) বললেন, ওটাই তো তাকওয়া [. তাফসীর খাযেন, প্রাগুক্ত, পৃ. ২৮; মা’আলিমুত তানযীল, প্রাগুক্ত, পৃ.৩৫।]।” বস্তত: বিবেকের সার্বক্ষণিক সচেতনতা ও সতর্কতা, চেতনা ও অনুভূতির স্বচ্ছতা, নিরবচ্ছিন্ন সাবধানতা, জীবন পথের কন্টকসমূহ থেকে আ্ত্মরক্ষার প্রবণতা, অব্যাহত ভীতি-এ সবেরই নাম তাকওয়া। জীবন পথের কন্টকসমূহ হচ্ছে প্রবৃত্তির কুৎসিত কামনা, বাসনা ও প্ররোচনা। অন্যায় লোভ-লালসা, মোহ, ভয়-ভীতি ও শংকা, আশা পূরণে সক্ষম নয় এমন কারো কাছে মিথ্যা আশা পোষণ করা, ক্ষতি বা উপকার সাধনে সক্ষম নয় এমন কারো মিথ্যা ভয়ে আক্রান্ত হওয়া ইত্যাদি [. সাইয়েদ কুতুব শহীদ, তাফসীর ফী যিলালিল কুরআন, অনুবাদ,-হাফেয মুনির উদ্দীন আহমদ, লণ্ডন, আল-কোরআন একাডেমি, ২০০৫, খণ্ড ১, পৃ. ৭২।]।
১৪. আবদুল্লাহ ইবন ওমর (রা) বলেন, “তাকওয়া হচ্ছে নিজেকে অন্য যে কারোর তুলনায় উত্তম মনে না করা [. আলাউদ্দীন আলী ইবন মুহাম্মদ আল বাগদাদী (মৃ. ৭২৫ হি.) লুবাতুত তাবীল ফী মা’আনিত তানযীল ওরফে তাফসীরে খাযেন, প্রাগুক্ত, আবু মুহাম্মদ হুসাইন ইবন মাসউদ আল-বগবী (র), মা’আলিমুত তানযীল ফিত তাফসীর ওয়াত তাবীল, প্রাগুক্ত, খণ্ড ১, পৃ. ৩৫।]।” এ কথার অর্থ এ নয় যে, একজন মানুষ নিজেকে হীন, তুচ্ছ, নিকৃষ্ট ও অবহেলিত মনে করবে; বরং এ কথার প্রকৃত মর্ম হচ্ছে, আল্লাহ্র নির্দেশ পালন তথা ব্যক্তি জীবন থেকে রাষ্টীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসলামের যে বিধি-নিষেধ রয়েছে তা মানার ক্ষেত্রে সে ইবলিসের মত এ কথা বলবে না যে, “আমি তার [আদম (আ)] চেয়ে উত্তম-শ্রেষ্ঠ; আপনি আমাকে আগুন দিয়ে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন [. আল কুরআন, ৭ : ১২।]।” অর্থাৎ সে অহংকারী হবে না।
১৫. কোন কোন মুফাসসির বলেন, “তাকওয়া হচ্ছে মহানবী (সা) এর অনুসরণ করা। কেউ কেউ বলেন, আল্লাহ তা’আলার বাণী ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ আদল ও ইহসান.... এর নির্দেশ দিয়েছেন’ এই বাণীতে তাকওয়ার সমাবেশ রয়েছে [. আবু মুহাম্মদ হুসাইন ইবন মাসউদ আল-বগবী (র) মা’আলিমুত তানযীল ফিত তাফসীর ওয়াত তাবীল, প্রাগুক্ত, খণ্ড ১, পৃ. ৩৫।]।”
২. উমর ইব্নু আবদুল আযীয (র) বলেন, “ আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা ছেড়ে দেয়া এবং তিনি যা ফরয করেছেন তা আদায় করার নাম হচ্ছে তাকওয়া [. আবু মুহাম্মদ আল হুসাইন ইবন মাসউদ আল-বগবী (মৃ. ৫১০ হি.), মা’আলিমুত তানযীল ফিত তাফসীর ওয়াত তাবীল, বৈরুত, দার আল ফিক্র, ১৯৮৫, খণ্ড ১, পৃ. ৩৫।]”।
৩. আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) মুত্তাকীদের পরিচয় দিয়ে বলেন, “ যারা মহান আল্লাহর শাস্তিকে ভয় করে এমন সব কর্মকাণ্ড ছেড়ে দিয়ে, যেগুলোর হারাম হওয়া সম্পর্কিত বিধান আল্লাহর দেয়া হেদায়েত তথা কুরআন ও হাদীস থেকে তারা জানে এবং অনুসরণের জন্য মহনবী (সা) যা নিয়ে এসেছেন তার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসী হয়ে আল্লাহ্র রহমত কামনা করে [. আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন জারীর আল তাবারী (মৃ. ৩১০ হি.) জামিউল বায়ান ‘আন তাবীলি আয়িল কুরআন, বৈরুত দার আল ফিক্র, তা.বি. খণ্ড ১. পৃ.১৪৭। আদ্দুররুল মানসুর ফী আল তাফসীর আল মাছুর, প্রাগুক্ত, প. ৬০।]।” তিনি আরো বলেন, “যে ব্যক্তি নিজেকে শিরক, কবীরা গুনাহ ও অশ্লীল কাজকর্ম ও কথাবার্তা থেকে বিরত রাখে, তাকে মুত্তাকী বলা হয়। [. সম্পদনা পরিষদ সম্পাদিত, দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম,ঢাকা ইফাবা, পৃ. ৬৯৫।]”
৪. কালবী (র.) বলেন, “যারা গুনাহে কবীরা তথা বড় ধরনের অপবাদ থেকে বেঁচে থাকে, তারা হল মুত্তাকী [. আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন জারীর আল তাবারী (মৃ. ৩১০ হি.) জামিউল বায়ান ‘আন তাবীলি আয়িল কুরআন, বৈরুত দার আল ফিক্র, তা.বি. খণ্ড ১. পৃ.১৪৭।]।”
৫. হাসান (র.) বলেন, “ আল্লাহ্র ওপর আল্লাহ ব্যতীত কাউকে গ্রহণ না করা এবং সবকিছু তাঁর হাতে ন্যস্ত বলে জানা-এটিই হচ্ছে তাকওয়া।“তিনি আরও বলেন, “হারামের ভয়ে বহু হালালও যতক্ষণ মুত্তাকীগণ বর্জন করে চলেন ততক্ষণ পর্যন্ত মুত্তাকীদের মাঝে তাকওয়া বিদ্যমান থাকে। [. আবদুর রহমান জালালুদ্দীন আল সুয়ূতী (র), আদ্দুররুল মানসুর ফী আল তাফসীর আল মাছুর, প্রাগুক্ত, প. ৬১।]” আল্লাহ্র বাণী “ লিলমুত্তাকীন [. আল কুরআন, ২ : ২।]”–এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “মুত্তাকী হচ্ছে তারা, যারা তাদের প্রতি যা হারাম করা হয়েছে তা থেকে দূরে থাকে এবং তাদের ওপর যা ফরয করা হয়েছে তা পালন করে [.আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন জারীর আল তাবারী (মৃ. ৩১০ হি.) জামিউল বায়ান ‘আন তাবীলি আয়িল কুরআন, প্রাগুক্ত।]।”
৬. ইবরাহীম ইব্নু আদহাম (র.) বলেন, “ সৃষ্টিজগত তোমার যবানে-কথায় কোন ক্রটি পাবে না, ফেরেশতাগণ তোমার কাজ-কর্মে ক্রটি পাবে না এবং আরশের অধিপতি আল্লাহ্ তোমার গোপনীয়তায় কোন ক্রটি পাবে না-এমন অবস্থার নাম তাকওয়া। [. ইমাম ফখরুদ্দীন আল রাযী, বৈরুত, দার ইহইয়াউত তুরাছ আল আরাবী, ১৯৯৭, খণ্ড-১, পৃ. ২৬৮।]”
৭. ওয়াকেদী (র.) বলেন, “তাকওয়া হচ্ছে সত্যের জন্য তোমার মনকে সজ্জিতকরণ, যেমন তোমার বাহ্যিক অবস্থাকে চরিত্রের জন্য সাজিয়ে থাক [. প্রাগুক্ত।]।”
৮. আবদুল্লাহ ইব্ন মুবারক (র.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “যদি কোন ব্যক্তি পরিহারযোগ্য একটি বিষয়েও সে করে তাহলে সে ব্যক্তি মুত্তাকীদের অন্তর্ভূক্ত হবে না [. আবদুর রহমান জালালুদ্দীন আল সুয়ূতী (র), আদ্দুররুল মানসুর ফী আল তাফসীর আল মাছুর, প্রাগুক্ত, প. ৬১।]।"
৯. আবূ দারদা (রা.) বলেন, “ সম্পূর্ণ তাকওয়া হল বান্দা আল্লাহকে ভয় করবে (করণীয় বিষয়) ত্যাগ করতে গিয়ে কিছু হালালও বর্জন করবে এই ভয়ে যেন তাকে হারামে পড়তে না হয়; আর যেন সামন্য হালাল বর্জন যেন হারাম এবং হালালের মাঝখানে পর্দা-দেয়াল হয়ে যায়। [. প্রাগুক্ত।]”
১০. সুফইয়ান সাওরী (র.) বলেন, “যে বিষয়ে তোমর মনে সন্দেহ হয়, তা পরত্যাগ করার চেয়ে তাকওয়ার সহজ পথ আমার জানা নেই। [. আবদুল কাদের জিলানী (র), অনুবাদ-হাফেয মাওলানা আবদুল জলীল. গুনিয়াতুত তালেবীন, ঢাকা, ফেরদৌস পাবলিকেশন্স, তা.বি. খণ্ড ১, পৃ. ১৯০।]” সুতরাং সন্দেহপূর্ণ যে কোন কাজ থেকে বিরত থাকা এবং সবসময় নিজের নফসের হিসাব গ্রহণ করা হল তাকওয়া।
১১. শাহর ইব্নু হাউশার (র) বলেন, “মুত্তাকী হচ্ছেন তিনি, যিনি এমন বিষয়-আশায়ও বর্জন করেন, যাতে কোন ক্ষতি নেই এই ভয়ে যাতে ক্ষতি আছে তা থেকে যেন বেঁচে থাক যায়। [. আলাউদ্দীন আলী ইবন মুহাম্মদ আল বাগদাদী (মৃ. ৭২৫ হি.) লুবাতুত তাবীল ফী মা’আনিত তানযীল ওরফে তাফসীরে খাযেন, বৈরুত, দার আল ফিক্র, ১৩৯৯/১৯৭৯, খণ্ড ১, পৃ. ২৮।]”
১২. আতিয়া আল সাআদী (রা.) বলেন, “মুমিন বান্দা ততক্ষণ পর্যন্ত মুত্তাকী বলে গণ্য হয় না যতক্ষণ না সে এমন বিষয়ও পরিত্যাগ নাকরে যা ক্ষতির কারণ হতে পারে। [. আবদুর রহমান জালালুদ্দীন আল সুয়ূতী (র), আদ্দুররুল মানসুর ফী আল তাফসীর আল মাছুর, বৈরুত, দার আল ফিক্র, ১৯৮৩, খণ্ড ১, প. ৬১।]”
১৩. ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) একবার উবাই ইব্নু কা’ব (রা)-কে বললেন, “আপনি তাকওয়া সম্পর্কে আমাকে বলুন। জবাবে তিনি বললেন, ‘আপনি কি কখনও কন্টকাকীর্ণ পথ দিয়ে চলেছেন? ওমর (রা) বলেছেন, কাপড় চোপড় গুটিয়ে অত্যন্ত সাবধানে চলেছি। কা’ব (রা) বললেন, ওটাই তো তাকওয়া [. তাফসীর খাযেন, প্রাগুক্ত, পৃ. ২৮; মা’আলিমুত তানযীল, প্রাগুক্ত, পৃ.৩৫।]।” বস্তত: বিবেকের সার্বক্ষণিক সচেতনতা ও সতর্কতা, চেতনা ও অনুভূতির স্বচ্ছতা, নিরবচ্ছিন্ন সাবধানতা, জীবন পথের কন্টকসমূহ থেকে আ্ত্মরক্ষার প্রবণতা, অব্যাহত ভীতি-এ সবেরই নাম তাকওয়া। জীবন পথের কন্টকসমূহ হচ্ছে প্রবৃত্তির কুৎসিত কামনা, বাসনা ও প্ররোচনা। অন্যায় লোভ-লালসা, মোহ, ভয়-ভীতি ও শংকা, আশা পূরণে সক্ষম নয় এমন কারো কাছে মিথ্যা আশা পোষণ করা, ক্ষতি বা উপকার সাধনে সক্ষম নয় এমন কারো মিথ্যা ভয়ে আক্রান্ত হওয়া ইত্যাদি [. সাইয়েদ কুতুব শহীদ, তাফসীর ফী যিলালিল কুরআন, অনুবাদ,-হাফেয মুনির উদ্দীন আহমদ, লণ্ডন, আল-কোরআন একাডেমি, ২০০৫, খণ্ড ১, পৃ. ৭২।]।
১৪. আবদুল্লাহ ইবন ওমর (রা) বলেন, “তাকওয়া হচ্ছে নিজেকে অন্য যে কারোর তুলনায় উত্তম মনে না করা [. আলাউদ্দীন আলী ইবন মুহাম্মদ আল বাগদাদী (মৃ. ৭২৫ হি.) লুবাতুত তাবীল ফী মা’আনিত তানযীল ওরফে তাফসীরে খাযেন, প্রাগুক্ত, আবু মুহাম্মদ হুসাইন ইবন মাসউদ আল-বগবী (র), মা’আলিমুত তানযীল ফিত তাফসীর ওয়াত তাবীল, প্রাগুক্ত, খণ্ড ১, পৃ. ৩৫।]।” এ কথার অর্থ এ নয় যে, একজন মানুষ নিজেকে হীন, তুচ্ছ, নিকৃষ্ট ও অবহেলিত মনে করবে; বরং এ কথার প্রকৃত মর্ম হচ্ছে, আল্লাহ্র নির্দেশ পালন তথা ব্যক্তি জীবন থেকে রাষ্টীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসলামের যে বিধি-নিষেধ রয়েছে তা মানার ক্ষেত্রে সে ইবলিসের মত এ কথা বলবে না যে, “আমি তার [আদম (আ)] চেয়ে উত্তম-শ্রেষ্ঠ; আপনি আমাকে আগুন দিয়ে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন [. আল কুরআন, ৭ : ১২।]।” অর্থাৎ সে অহংকারী হবে না।
১৫. কোন কোন মুফাসসির বলেন, “তাকওয়া হচ্ছে মহানবী (সা) এর অনুসরণ করা। কেউ কেউ বলেন, আল্লাহ তা’আলার বাণী ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ আদল ও ইহসান.... এর নির্দেশ দিয়েছেন’ এই বাণীতে তাকওয়ার সমাবেশ রয়েছে [. আবু মুহাম্মদ হুসাইন ইবন মাসউদ আল-বগবী (র) মা’আলিমুত তানযীল ফিত তাফসীর ওয়াত তাবীল, প্রাগুক্ত, খণ্ড ১, পৃ. ৩৫।]।”
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন