HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
ইসলামে ‘তাকওয়া’র স্বরূপ ও সমাজ জীবনে এর প্রভাব
লেখকঃ ড. মোঃ ছানাউল্লাহ
৭
সমাজ জীবনে তাকওয়ার প্রভাবসামাজিক জীবন দর্শনে তাকওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। তাকওয়ার পোশাক যারা আচ্ছাদিত তাদের কর্তৃক কোন রকম অন্যায় ও অসৎ কাজ হতে পারে না। অশ্লীলতা, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী, সুদ, ঘুষ, সম্পদ লুটপাট, কাউকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করণ, ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত-মুস্তাহাবরূপে নির্ধারিত হাক্কুল্লাহ (আল্লাহর অধিকার) ও হাক্কুল ইবাদ (মানুষের প্রতি মানুষের ও সৃষ্টিজগতের প্রতি মানুষের যাবতীয় দায়িত্ব-কর্তব্যসমূহ) পালন উদাসীন থাকা থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত থেকে মুত্তাকীগণ জীবন যাপন করে। সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বজায় রাখার পাশাপাশি দেশ ও জাতির উন্নয়নে গঠনমূলক কাজের মাধ্যমে অবদান রাখতে সর্বদা সচেষ্ট থাকে। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, “আল্লাহ্ তাদেরই সঙ্গে আছে যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যারা সৎকর্মপরায়ন [. আল কুরআন, ১৬ : ১২৮।]।” অন্যত্র বলা হয়েছে, “আল্লাহ্ মুত্তাকীদের অভিভাবক-বন্ধু [.আল কুরআন, ৪৫ : ১৯।]।”
তাকওয়া বা আন্তরিকতাবিহীন কোন কাজই সফলতা বয়ে আনে না। যে কোন কাজের প্রাণ হল তাকওয়া। বিশেষ করে ইবাদত হিসাবে যা কিছু করা হয় তা আল্লাহ্র কাছে গ্রহণীয় হওয়ার জন্য তাকওয়া একান্ত প্রয়োজন। কারণ, “ আল্লাহ কেবল মুত্তাকীদের কুরবানীই গ্রহণ করে থাকে। [. আল কুরআন, ৫: ২৭।]” অন্যত্র বলা হয়েছে, “ আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না এগুলোর (কুরবানীর পশুর) গোশত এবং রক্ত, বরং তাঁর কাছে পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া-মনের একাগ্রতা। [. আল কুরআন, ২২: ৩৭।]” মূলত তাকওয়ার গুণ অর্জনের জন্যই ইসলামের যাবতীয় বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। সালাত, সাওম, যাকাত ও হজ্জসহ সকল মৌলিক কাজ অবশ্য পালনীয় করে দেয়া হয়েছে কেবল মানুষের মধ্যে সুপ্ত তাকওয়া [. অতঃপর তিনি (আল্লাহ) উহাকে (নফ্স তথা মানুষকে) ফুজুর-অসৎকর্মের এবং তাকওয়ার-সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন। আল কুরআন, ৯১ : ৮।] গুণকে সমুন্নত করার জন্য। [. দ্রষ্টব্য আল কুরআন, ২: ২-৪, ১৮৩, সূরা হাজ্জ : ৩২, সূরা তাওবা ৯ :১০৩-১০৪, তাদের (পাপীদের কর্মের জবাবদিহির দায়িত্ব তাদের নয়, যারা তাকওয়া-সাবধানতা অবলম্বন করে; তবে উপদেশ দেওয়া তাদের কর্তব্য যাতে তারাও সাবধানতা অবলম্বন করে। (আল-কুরআন, ৬ : ৬৯)] যে মানুষ যতবেশী তাকওয়ার অধিকারী হবে সে জাগতিক জীবনে সমাজে ততবেশী মর্যাদা ও সম্মানের যোগ্য হবে এবং পরকালে আল্লাহর কাছে বেশী সম্মনিত হবে। [. আল কুরআন, ৪৯ : ১৩। “হযরত আবূ হুরায়রা ৯রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে জিজ্ঞাস করা হল, কোন ব্যক্তি সবচেয়ে সম্মাণিত-মর্যাদাবান? তিনি বললেন, তাদের মধ্যে যে বেশী তাকওয়ার অধীকারী আল্লাহ্র কাছে সেই বেশী সম্মানিত-।” মুহাম্মদ ইবন ইসমাইল আল বুখারী, সহীহ আল বুখারী, দেওবন্দ, মাকতাবা মোস্তফাঈ, তা.বি., খণ্ড ২, পৃ. ৬৭৯।] আর কে কত বেশী মুত্তাকি তা নিয়ে আত্মপ্রশংসা করার কোন সুযোগ নেই। কেননা আল্লাহই ভাল জানেন কে কত বেশী মুত্তাকী। [.আল কুরআন, ৫৩ : ৩২।] যারা তাকওয়ার গুণ অর্জন করতে পারেন তারা আল্লাহর ভালবাসা লাভে ধন্য হন, আল্লাহ তাদের অতিবাহিত হয় বলে পবিত্র কুরআনে বর্ণনা করা হয়েছে। [. আল কুরআন, ৬৫ : ২, ৩ ও ৫] ইমাম ফখরুদ্দীন আল-রাযী (র) বলেছেন, মুত্তাকীর মর্যাদা বর্ণনায় “হুদাল লিল মুত্তাকীন” (পবিত্র কুরআন মুত্তাকীদের জন্য পথপ্রদর্শক) আয়াতাংশটি ছাড়া যদি আর একটি আয়াতও না থাকত তবে তাদের মর্যাদা বর্ণনায় এটিই যথেষ্ট ছিল। কারণ তাঁর মতে পবিত্র কুরআন মুত্তাকীদের জন্য পথ প্রদর্শক। অন্য আয়াতে “আল-কুরআন হুদাল লিন নাস” অর্থাৎ‘পবিত্র কুরআন মানুষের জন্য পথপ্রদর্শক। [. আল কুরআন, ২ : ১৮৫।]” বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এটি সর্বজন বিদিত যে, কুরআন যার উপর অবতীর্ণ হয়েছে তাঁর আহবান ছিল বিশ্বজনীন। [. আল কুরআন, ৭ : ১৫৮; সূরা সাবা ৩৪ : ৪৮; ২১ : ১০৭।] এতে বুঝা যাচ্ছে যে, সকল মানুষই মুত্তাকী তথা সবার মধ্যেই তাকওয়া রয়েছে। যার মধ্যে তাকওয়া নেই, সে যেন মানুষই নয়। [. ইমাম ফখরুদ্দীন আল রাযী, তাফসীর কবীর, প্রাগুক্ত, পৃ. ২৬৮।] যামাখশারী (র) আল্লাহর বাণী“ অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তাকওয়া অবলম্বন কর এবং নিজেদের মধ্যে সদ্ভাব স্থাপন কর এবং আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর, যদি তোমরা মু’মিন হও [. আল কুরআন, ৮: ০১।]” এর ব্যাখ্যায় বলেন, এ আয়াতে মহান আল্লাহ্ তাকওয়া অবলম্বন, নিজেদের মধ্যে সদ্ভাব বজায় রাখা এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুসরণ করাকে ঈমানের অপরিহার্য অংশ ও অবিচ্ছেদ্য দাবী বলে নির্ধারণ করেছেন। [.. মাহমূদ ইবন উমার আল যামাখশারী, আল-কাশ্শাফ আন হাক্বায়িক্বি আল তানযীল ওয়া উয়ূনি আল আক্বাবীল ফী ওযূহি আল তাবীল, প্রাগুক্ত, খণ্ড ১, পৃ. ১৯৫।] সুতরাং তাকওয়া ছাড়া ঈমান পরিপূর্ণ নয়। আল্লাহর হক ও বান্দার হক উভয়টির মহত্ব ও গুরুত্ব বুঝানোর জন্য সূরা আন- নিসার প্রথম আয়াতটি শুরু করা হয়েছে তাকওয়া অবলম্বনের নির্দেশ দিয়ে এবং শেষও করা হয়েছে তাকওয়ার মাধ্যমে পরস্পরিক লেন-দেন সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়ে। সুতরাং মানুষের উচিত জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাকওয়া অবরম্বন করা। [. মুহাম্মদ আল আস-সাবুনী, রাওয়ায়িউল কায়ান তাফসীর আয়াত আল আহকাম নিম আল কুরআন, সৌদি আরব, খণ্ড ১. পৃ,৪১৯।]
তাকওয়ার মৌলিকত্ব বাহ্যিকতার চেয়ে ভিতরটায় সম্পৃক্ত বেশী। গোপনে কিংবা প্রকাশ্যে মহান আল্লাহকে ভয় করার মানসিকতা গড়ে তোলা এবং জীবনের সকল কর্মকাণ্ড তথা ভাল-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, পাপ-পূণ্য, ঠিক-বেঠিক, হালাল-হারাম যা-ই করুক না কেন তা লিপিবদ্ধকরার জন্য ফেরেশতা নিয়োজিত রয়েছে। ছোট-বড় কোন কিছুই তার খতিয়ানে লেখা থেকে বাদ যাচ্ছে না। এক সময় সে তার কৃত সমুদয় কর্মকান্ড স্বচক্ষে দেখতে পাবে। এই অনুভূতি নিয়ে জীবন পরিচালনা করাই হল তাকওয়ার দাবী। তাকওয়া বাহ্যিক আড়ম্বরতা ও লোকিকতার কোন স্থান নেই। “মানুষের বাহ্যিক অবয়ব এবং সম্পদের প্রতি আল্লাহ তাকান না; বরং তিনি দেখেন মানুষের কর্মকাণ্ড এবং মন-মানসিকতা। [. সহীহ মুসলিম, উদ্ধৃত-আবু মুহাম্মদ আল হুসাইন ইবন মাসউদ আল-বগবী শারহুস সুন্নাহ, , বৈরুত, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, প্রথম প্রকাশ, ১৪১৪/১৯৯২, খণ্ড ৭, পৃ. ৩৫৪।] মানব দেহের কোন স্থানে তাকওয়ার অবস্থান সে সম্পর্কে প্রিয় নবী (সা)-এর সুস্পষ্ট বক্তব্য হল “তাকওয়া এখানে এবং তিনি তাঁর বুকের দিকে ইশারা করলেন।” [. সহীহ মুসলিম, উদ্ধৃত-আবু মুহাম্মদ আল হুসাইন ইবন মাসউদ আল-বগবী শারহুস সুন্নাহ, প্রগুক্ত।] অর্থাৎ যে মন বা অন্তকরণ মানুষের সকল কর্মকাণ্ডের চালিকা শক্তি সেই মনের শুদ্ধতাই হচ্ছে তাকওয়া। কেননা মানব দেহের এ অংশটি সুস্থ থাকলে পুরো দেহই সুস্থ-স্বাভাবিক থাকে বলে হাদীসে প্রমাণ রয়েছে। [. দেহে কাল্ব গুরুত্ব সম্পর্কে মহানবী (সা)বলেন. “দেহের মধ্যে এমন একটি মাংশপিণ্ড রয়েছে, তা যখন সুস্থ ও রোগমুক্ত থাকে, সমস্ত দেহই সুস্থ্য ও রোগ শুণ্য থাকে। আর তা যখন রোগাক্রান্ত ও বিপর্যস্থ হয়ে পড়বে তখন সমস্ত দেহটিই রোগাক্রান্ত-বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। তোমরা জেনে রেখো যে, তা-ই হলো কলব (আত্ম)।” (মুহাম্মদ ইবন ইসমাঈল আল-বুখারী, সহীহ আল বুখারী, দেওবন্দ, মাকতাবা মুস্তফাই, তা.বি.,খণ্ড ১, পৃ. ১৩।] পরকালে মুত্তাকীগণই জান্নাত লাভে ধন্য হবেন। “মুত্তাকীগণ থাকবেন প্রস্রবণ-বহুল জান্নাত। তাঁদেরকে বলা হবে তোমরা শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে তাতে প্রবেশ কর…..”। [. আল কুরআন, ৩: ১৩৩-১৩৮; ৪ : ৭৭; ৭ :১২৮, ১৬৯; ১২ : ৫৭, ১০৯; ১৩ : ৩৫; ১৫ : ৪৫-৪৮; ১৯ : ৬৩; ৯০; ২৮ :৮৩; ৩৮ : ৪৯;৪৩ : ৩৫; ৪৪: ৫১; ৪৭ : ১৫; ৫০: ৩১-৩৫; ৫১ : ১৫-১৯; ৫২:৫৪-৫৫; ৭৭ : ৪১-৪৪; ৭৮: ৩১-৩৬।]
তাকওয়ার ব্যক্তিগত , পারিবারিক ও সমাজ জীবনে মানুষের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি করে মানব মনে ইতিবাচক মুল্যবোধ সৃষ্টি করে এবং তাকওয়ার অভাব মানব জীবনকে অস্থির, নিরাপত্তাহীন, পঙ্কিল ও দুর্বিসহ করে তোলা। কেননা, উপর্যূক্ত আলোচনায় দেখা যায়, তাকওয়া শুধু আল্লাহ্ ভীতির মাধ্যেই সীমিত নয়; বরং সত্য সন্ধান, সত্য গ্রহণ, সত্যের উপর সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকা, আল্লাহ্ তা‘আলাকে ভয় করা, আল্লাহর ভয়ের ভিত্তিতে দায়িত্ব সচেতনতা ও দায়িত্ব সচেতনতার সাথে কর্তব্য সম্পাদনই হচেছ তাকওয়া। অর্থাৎ মানব জীবনের সকল কর্মকান্ড ও তৎপরতাকে আল্লাহ্র নির্দেশিত পথে পরিচালনা করা, আল্লাহ্র ইচ্ছানুযায়ী সকল কাজ সম্পাদন করা, আল্লাহ্ কর্তৃক নিষিদ্ধ পথ ও পন্থা পরিহার করা এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহ্র সৃষ্টিকূলের কল্যাণ কামনা করা, সর্বোপরি জবাবদিহিতামূলক সচেতনতার সাথে দায়িত্ব পালন করাই প্রকৃত তাকওয়া। তাই নানা সমস্যায় জর্জরিত মুসলিম জাতির ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কাঙ্খিত কল্যাণ লাভের জন্য প্রয়োজন মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাকওয়া অর্জন এবং তাকওয়ার ভিত্তিতে জীবন গঠন। আমাদের সমাজে যে দিন থেকে পূর্ণরূপ প্রকৃত তাকওয়া সৃষ্টি হবে সেদিনই এ বিশৃঙ্খলাপূর্ণ সমাজে শৃঙ্খলা ফিলে আসবে এবং সমাজ হবে সুখে-শান্তিতে সমৃদ্ধ, স্থিতিশীল ও প্রাণবন্ত।
তাকওয়া বা আন্তরিকতাবিহীন কোন কাজই সফলতা বয়ে আনে না। যে কোন কাজের প্রাণ হল তাকওয়া। বিশেষ করে ইবাদত হিসাবে যা কিছু করা হয় তা আল্লাহ্র কাছে গ্রহণীয় হওয়ার জন্য তাকওয়া একান্ত প্রয়োজন। কারণ, “ আল্লাহ কেবল মুত্তাকীদের কুরবানীই গ্রহণ করে থাকে। [. আল কুরআন, ৫: ২৭।]” অন্যত্র বলা হয়েছে, “ আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না এগুলোর (কুরবানীর পশুর) গোশত এবং রক্ত, বরং তাঁর কাছে পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া-মনের একাগ্রতা। [. আল কুরআন, ২২: ৩৭।]” মূলত তাকওয়ার গুণ অর্জনের জন্যই ইসলামের যাবতীয় বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। সালাত, সাওম, যাকাত ও হজ্জসহ সকল মৌলিক কাজ অবশ্য পালনীয় করে দেয়া হয়েছে কেবল মানুষের মধ্যে সুপ্ত তাকওয়া [. অতঃপর তিনি (আল্লাহ) উহাকে (নফ্স তথা মানুষকে) ফুজুর-অসৎকর্মের এবং তাকওয়ার-সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন। আল কুরআন, ৯১ : ৮।] গুণকে সমুন্নত করার জন্য। [. দ্রষ্টব্য আল কুরআন, ২: ২-৪, ১৮৩, সূরা হাজ্জ : ৩২, সূরা তাওবা ৯ :১০৩-১০৪, তাদের (পাপীদের কর্মের জবাবদিহির দায়িত্ব তাদের নয়, যারা তাকওয়া-সাবধানতা অবলম্বন করে; তবে উপদেশ দেওয়া তাদের কর্তব্য যাতে তারাও সাবধানতা অবলম্বন করে। (আল-কুরআন, ৬ : ৬৯)] যে মানুষ যতবেশী তাকওয়ার অধিকারী হবে সে জাগতিক জীবনে সমাজে ততবেশী মর্যাদা ও সম্মানের যোগ্য হবে এবং পরকালে আল্লাহর কাছে বেশী সম্মনিত হবে। [. আল কুরআন, ৪৯ : ১৩। “হযরত আবূ হুরায়রা ৯রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে জিজ্ঞাস করা হল, কোন ব্যক্তি সবচেয়ে সম্মাণিত-মর্যাদাবান? তিনি বললেন, তাদের মধ্যে যে বেশী তাকওয়ার অধীকারী আল্লাহ্র কাছে সেই বেশী সম্মানিত-।” মুহাম্মদ ইবন ইসমাইল আল বুখারী, সহীহ আল বুখারী, দেওবন্দ, মাকতাবা মোস্তফাঈ, তা.বি., খণ্ড ২, পৃ. ৬৭৯।] আর কে কত বেশী মুত্তাকি তা নিয়ে আত্মপ্রশংসা করার কোন সুযোগ নেই। কেননা আল্লাহই ভাল জানেন কে কত বেশী মুত্তাকী। [.আল কুরআন, ৫৩ : ৩২।] যারা তাকওয়ার গুণ অর্জন করতে পারেন তারা আল্লাহর ভালবাসা লাভে ধন্য হন, আল্লাহ তাদের অতিবাহিত হয় বলে পবিত্র কুরআনে বর্ণনা করা হয়েছে। [. আল কুরআন, ৬৫ : ২, ৩ ও ৫] ইমাম ফখরুদ্দীন আল-রাযী (র) বলেছেন, মুত্তাকীর মর্যাদা বর্ণনায় “হুদাল লিল মুত্তাকীন” (পবিত্র কুরআন মুত্তাকীদের জন্য পথপ্রদর্শক) আয়াতাংশটি ছাড়া যদি আর একটি আয়াতও না থাকত তবে তাদের মর্যাদা বর্ণনায় এটিই যথেষ্ট ছিল। কারণ তাঁর মতে পবিত্র কুরআন মুত্তাকীদের জন্য পথ প্রদর্শক। অন্য আয়াতে “আল-কুরআন হুদাল লিন নাস” অর্থাৎ‘পবিত্র কুরআন মানুষের জন্য পথপ্রদর্শক। [. আল কুরআন, ২ : ১৮৫।]” বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এটি সর্বজন বিদিত যে, কুরআন যার উপর অবতীর্ণ হয়েছে তাঁর আহবান ছিল বিশ্বজনীন। [. আল কুরআন, ৭ : ১৫৮; সূরা সাবা ৩৪ : ৪৮; ২১ : ১০৭।] এতে বুঝা যাচ্ছে যে, সকল মানুষই মুত্তাকী তথা সবার মধ্যেই তাকওয়া রয়েছে। যার মধ্যে তাকওয়া নেই, সে যেন মানুষই নয়। [. ইমাম ফখরুদ্দীন আল রাযী, তাফসীর কবীর, প্রাগুক্ত, পৃ. ২৬৮।] যামাখশারী (র) আল্লাহর বাণী“ অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তাকওয়া অবলম্বন কর এবং নিজেদের মধ্যে সদ্ভাব স্থাপন কর এবং আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর, যদি তোমরা মু’মিন হও [. আল কুরআন, ৮: ০১।]” এর ব্যাখ্যায় বলেন, এ আয়াতে মহান আল্লাহ্ তাকওয়া অবলম্বন, নিজেদের মধ্যে সদ্ভাব বজায় রাখা এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুসরণ করাকে ঈমানের অপরিহার্য অংশ ও অবিচ্ছেদ্য দাবী বলে নির্ধারণ করেছেন। [.. মাহমূদ ইবন উমার আল যামাখশারী, আল-কাশ্শাফ আন হাক্বায়িক্বি আল তানযীল ওয়া উয়ূনি আল আক্বাবীল ফী ওযূহি আল তাবীল, প্রাগুক্ত, খণ্ড ১, পৃ. ১৯৫।] সুতরাং তাকওয়া ছাড়া ঈমান পরিপূর্ণ নয়। আল্লাহর হক ও বান্দার হক উভয়টির মহত্ব ও গুরুত্ব বুঝানোর জন্য সূরা আন- নিসার প্রথম আয়াতটি শুরু করা হয়েছে তাকওয়া অবলম্বনের নির্দেশ দিয়ে এবং শেষও করা হয়েছে তাকওয়ার মাধ্যমে পরস্পরিক লেন-দেন সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়ে। সুতরাং মানুষের উচিত জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাকওয়া অবরম্বন করা। [. মুহাম্মদ আল আস-সাবুনী, রাওয়ায়িউল কায়ান তাফসীর আয়াত আল আহকাম নিম আল কুরআন, সৌদি আরব, খণ্ড ১. পৃ,৪১৯।]
তাকওয়ার মৌলিকত্ব বাহ্যিকতার চেয়ে ভিতরটায় সম্পৃক্ত বেশী। গোপনে কিংবা প্রকাশ্যে মহান আল্লাহকে ভয় করার মানসিকতা গড়ে তোলা এবং জীবনের সকল কর্মকাণ্ড তথা ভাল-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, পাপ-পূণ্য, ঠিক-বেঠিক, হালাল-হারাম যা-ই করুক না কেন তা লিপিবদ্ধকরার জন্য ফেরেশতা নিয়োজিত রয়েছে। ছোট-বড় কোন কিছুই তার খতিয়ানে লেখা থেকে বাদ যাচ্ছে না। এক সময় সে তার কৃত সমুদয় কর্মকান্ড স্বচক্ষে দেখতে পাবে। এই অনুভূতি নিয়ে জীবন পরিচালনা করাই হল তাকওয়ার দাবী। তাকওয়া বাহ্যিক আড়ম্বরতা ও লোকিকতার কোন স্থান নেই। “মানুষের বাহ্যিক অবয়ব এবং সম্পদের প্রতি আল্লাহ তাকান না; বরং তিনি দেখেন মানুষের কর্মকাণ্ড এবং মন-মানসিকতা। [. সহীহ মুসলিম, উদ্ধৃত-আবু মুহাম্মদ আল হুসাইন ইবন মাসউদ আল-বগবী শারহুস সুন্নাহ, , বৈরুত, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, প্রথম প্রকাশ, ১৪১৪/১৯৯২, খণ্ড ৭, পৃ. ৩৫৪।] মানব দেহের কোন স্থানে তাকওয়ার অবস্থান সে সম্পর্কে প্রিয় নবী (সা)-এর সুস্পষ্ট বক্তব্য হল “তাকওয়া এখানে এবং তিনি তাঁর বুকের দিকে ইশারা করলেন।” [. সহীহ মুসলিম, উদ্ধৃত-আবু মুহাম্মদ আল হুসাইন ইবন মাসউদ আল-বগবী শারহুস সুন্নাহ, প্রগুক্ত।] অর্থাৎ যে মন বা অন্তকরণ মানুষের সকল কর্মকাণ্ডের চালিকা শক্তি সেই মনের শুদ্ধতাই হচ্ছে তাকওয়া। কেননা মানব দেহের এ অংশটি সুস্থ থাকলে পুরো দেহই সুস্থ-স্বাভাবিক থাকে বলে হাদীসে প্রমাণ রয়েছে। [. দেহে কাল্ব গুরুত্ব সম্পর্কে মহানবী (সা)বলেন. “দেহের মধ্যে এমন একটি মাংশপিণ্ড রয়েছে, তা যখন সুস্থ ও রোগমুক্ত থাকে, সমস্ত দেহই সুস্থ্য ও রোগ শুণ্য থাকে। আর তা যখন রোগাক্রান্ত ও বিপর্যস্থ হয়ে পড়বে তখন সমস্ত দেহটিই রোগাক্রান্ত-বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। তোমরা জেনে রেখো যে, তা-ই হলো কলব (আত্ম)।” (মুহাম্মদ ইবন ইসমাঈল আল-বুখারী, সহীহ আল বুখারী, দেওবন্দ, মাকতাবা মুস্তফাই, তা.বি.,খণ্ড ১, পৃ. ১৩।] পরকালে মুত্তাকীগণই জান্নাত লাভে ধন্য হবেন। “মুত্তাকীগণ থাকবেন প্রস্রবণ-বহুল জান্নাত। তাঁদেরকে বলা হবে তোমরা শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে তাতে প্রবেশ কর…..”। [. আল কুরআন, ৩: ১৩৩-১৩৮; ৪ : ৭৭; ৭ :১২৮, ১৬৯; ১২ : ৫৭, ১০৯; ১৩ : ৩৫; ১৫ : ৪৫-৪৮; ১৯ : ৬৩; ৯০; ২৮ :৮৩; ৩৮ : ৪৯;৪৩ : ৩৫; ৪৪: ৫১; ৪৭ : ১৫; ৫০: ৩১-৩৫; ৫১ : ১৫-১৯; ৫২:৫৪-৫৫; ৭৭ : ৪১-৪৪; ৭৮: ৩১-৩৬।]
তাকওয়ার ব্যক্তিগত , পারিবারিক ও সমাজ জীবনে মানুষের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি করে মানব মনে ইতিবাচক মুল্যবোধ সৃষ্টি করে এবং তাকওয়ার অভাব মানব জীবনকে অস্থির, নিরাপত্তাহীন, পঙ্কিল ও দুর্বিসহ করে তোলা। কেননা, উপর্যূক্ত আলোচনায় দেখা যায়, তাকওয়া শুধু আল্লাহ্ ভীতির মাধ্যেই সীমিত নয়; বরং সত্য সন্ধান, সত্য গ্রহণ, সত্যের উপর সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকা, আল্লাহ্ তা‘আলাকে ভয় করা, আল্লাহর ভয়ের ভিত্তিতে দায়িত্ব সচেতনতা ও দায়িত্ব সচেতনতার সাথে কর্তব্য সম্পাদনই হচেছ তাকওয়া। অর্থাৎ মানব জীবনের সকল কর্মকান্ড ও তৎপরতাকে আল্লাহ্র নির্দেশিত পথে পরিচালনা করা, আল্লাহ্র ইচ্ছানুযায়ী সকল কাজ সম্পাদন করা, আল্লাহ্ কর্তৃক নিষিদ্ধ পথ ও পন্থা পরিহার করা এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহ্র সৃষ্টিকূলের কল্যাণ কামনা করা, সর্বোপরি জবাবদিহিতামূলক সচেতনতার সাথে দায়িত্ব পালন করাই প্রকৃত তাকওয়া। তাই নানা সমস্যায় জর্জরিত মুসলিম জাতির ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কাঙ্খিত কল্যাণ লাভের জন্য প্রয়োজন মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাকওয়া অর্জন এবং তাকওয়ার ভিত্তিতে জীবন গঠন। আমাদের সমাজে যে দিন থেকে পূর্ণরূপ প্রকৃত তাকওয়া সৃষ্টি হবে সেদিনই এ বিশৃঙ্খলাপূর্ণ সমাজে শৃঙ্খলা ফিলে আসবে এবং সমাজ হবে সুখে-শান্তিতে সমৃদ্ধ, স্থিতিশীল ও প্রাণবন্ত।
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন