HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

গুনাহের দরজা

লেখকঃ আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
গুনাহের দরজা

আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান

সম্পাদনা : ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী

সংক্ষিপ্ত বর্ণনা... .. .
প্রতিটি গুনাহের কিছু উপকরণ রয়েছে যা মানুষকে তাতে লিপ্ত হওয়ার প্রতি আহ্বান করে। গুনাহ থেকে পরহেয থাকার জন্যে সে উপকরণসমূহ সম্পর্কে পূর্ণ ধারনা থাকা অত্যাবশ্যক। প্রবন্ধে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে আলোকপাত করা হয়েছে।

গুনাহের দরজা পর্ব-১
গুনাহের কিছু কারণ ও ভূমিকা রয়েছে যা গুনাহের প্রতি টেনে নিয়ে যায় এবং তার কিছু প্রবেশ পথ রয়েছে যা সেখানে প্রবিষ্ট করে দেয়। গুনাহ থেকে বিরত ও বেঁচে থাকার জন্য এই সব বিষয়ের জানা নিতান্ত অপরিহার্য।

আল্লাহর অবাধ্য আচরণের অনেক কারণ রয়েছে। তন্মধ্যে সর্ববৃহৎ হলো, অপ্রয়োজনীয় ও নিরর্থক কাজে মানুষের জড়িয়ে পড়া। তাকে দীন বা দুনিয়ার কোনো উপকার করবে না। উপরন্তু নিরর্থক কাজ বর্জন করা মানুষের ইসলামের পরিপূর্ণতা ও তার ঈমান বৃদ্ধির পরিচায়ক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مِنْ حُسْنِ إِسْلَامِ المَرْءِ تَرْكُهُ مَا لَا يَعْنِيهِ»

“মানুষের সর্বোত্তম ইসলাম হলো নিরর্থক কাজ বর্জন করা।” [. সুনান তিরমিযী, হাদীস নং ২৩১৭; সুনান ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৯৭৬। আল্লামা আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, সুনান তিরমিযী, হাদীস নং ১৮৮৭।]

অতএব, যে ব্যক্তি অনর্থক কাজে ব্যস্ত রইল এবং দুনিয়ার কাজে তার পূর্ণ সময় ব্যয় করল এবং অধিক হারে মুবাহ কাজ করল -এ মুবাহ কাজ দ্বারা আল্লাহর আনুগত্য করার সাহায্য চাওয়া ছাড়া সে তার জন্য গুনাহের উপকরণসমূহ উন্মুক্ত করে দিল।

তবে মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সমূহ-ই হলো গুনাহের দরজা। আর সবচেয়ে ক্ষতিকারক অঙ্গ প্রত্যঙ্গ। ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন, যে ব্যক্তি চতুষ্টয়কে সংরক্ষণ করল সে তার দীনকে নিরাপদ করল সে গুলো হলো, মুহূর্ত ও সময়, ক্ষতিকারক বস্তুসমূহ, বাকশক্তি ও পদক্ষেপসমূহ।

অতএব, এই চারটি দরজায় নিজের পাহারাদার নিযুক্ত করা উচিত। এগুলোর প্রাচীরসমূহে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা সৃষ্টি করবে। কেননা এগুলোর মাধ্যমেই শত্রু পরবশ করে তাকে। অতঃপর সে গোটা ভূমিকে গ্রাস করে নেয় এবং প্রবল পরাক্রম হয়ে বিস্তার লাভ করে। মানুষের কাছে অধিকাংশ গুনাহ এ চারটি পথেই প্রবেশ করে থাকে। সুতরাং গুনাহের উপকরণ ও যেসব প্রবেশপথে গুনাহ বিস্তার লাভ করে থাকে সেগুলো সম্পর্কে সম্যক অবগতি লাভ করা মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। যেন সে সেসব থেকে বেঁচে থাকতে পারে। এখন সেসব বিষয়ের বিশদ আলোচনা উপস্থাপিত হচ্ছে।

প্রথমতঃ দৃষ্টিশক্তি:
মানুষ দৃষ্টিশক্তি থেকে কোনোভাবেই অমুখাপেক্ষী নয়। যা দ্বারা সে তার পথ দেখতে পারে এবং তার গন্তব্য চিনতে পারে এবং যা দ্বারা সে তার স্রষ্টার সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে। কিন্তু আমাদের বাস্তব সম্পর্কে চিন্তাশীল ব্যক্তি মাত্রই পর্যবেক্ষণ করছেন সে, এ মহান নি‘আমত দ্বারা মানুষ কীভাবে অনর্থক কাজের উদ্দেশ্যে সীমা-লঙ্ঘন করছে, যা কোনো প্রগতিবাদী সার্থক উন্নতির জন্য প্রচেষ্টাকারীর কর্ম হতে পারে না। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿لِمَن شَآءَ مِنكُمۡ أَن يَتَقَدَّمَ أَوۡ يَتَأَخَّرَ ٣٧﴾ [ المدثر : ٣٧ ]

“যার ইচ্ছে সামনে অগ্রসর হোক, যার ইচ্ছে পশ্চাৎপসরণ করুক।” [সূরা আল-মুদ্দাসসির, আয়াত: ৩৭] এবং সন্দেহ নেই যে, দৃষ্টিকে নিছক নিরর্থক বিষয়ে নিবন্ধ করা উচিৎ নয়।

যদিও তা মুবাহ হোক বা না এবং নিজদের দৃষ্টি সংযত রাখার ব্যাপারে যত্নশীল হতে হবে যদিও তা যতই কঠিন হোক না কেন এবং তা অপরিষ্কার নয় যে, এ মুবাহ দৃষ্টি নিষিদ্ধ হতে পারে যখন তা দায়িত্ব পালনে গাফেল বানাবে।

অর্থহীন দৃষ্টি: অপকারী বইপত্র ও ম্যাগাজিন পড়ার জন্য দৃষ্টি বোলানো যেমন কাল্পনিক গল্প ও রহস্য গল্প। বিভিন্ন ঘটনা ও চরিত্রের কাল্পনিক বর্ণনার মাধ্যমে মনের স্থূল আনন্দ ছাড়া এগুলোতে অর্থবহ কিছু নেই। এমনিভাবে উপকার শূন্য আরো বিভিন্ন মাধ্যমে যেমন ক্রীড়াও শিল্পের সংবাদ ও কুকুরের সংবাদ ইত্যাদি। যখন বিষয়টি এরূপ তাহলে হারাম ও নিষিদ্ধ বস্ত্তর প্রতি দৃষ্টিদান আরো অধিক নিরর্থক কাজ। বিশেষতঃ মানুষের গোপনাঙ্গের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করা। কেননা তা আরো বেশি নিন্দনীয় কাজ ঐ সত্তার নিকট যিনি চক্ষুসমূহের খিয়ানত ও অন্তর এর গোপন সবকিছুর খবর রাখেন এবং যার মন নিষিদ্ধ দৃষ্টির মাধ্যমে তার অন্তরকে হারাম থেকে বিরত রাখতে চায় তবে তা তার জন্য বৈধ। কেননা, তা দু’টি ক্ষতির মধ্যে লঘুতর এবং এ চিকিৎসা প্রয়োগের মাধ্যমে সে তার অন্তরকে কল্যাণময় দৃষ্টির দিকে ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি, যা দৃষ্টি এবং অন্যান্য বিষয় যথা অন্তর কথা ও সক্রিয় কর্মের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

দ্বিতীয়তঃ জিহ্বা:
মানুষের অর্থহীন আচরণ যেমন কাজের ক্ষেত্রে হয় তদ্রূপ কথার ক্ষেত্রেও হয়। কেননা কথাও তার কাজের অংশ। তবে এ বিষয়ে অধিকাংশ মানুষই বেখবর। তাই তারা তাদের কথাবার্তাকে কর্মের অঙ্গীভূত মনে করে না। উমার ইবন আব্দুল আযীয তাদের জন্য এ বিষয়টির তাৎপর্য সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন। তিনি বলেন,

«مَنْ عَلِمَ أَنَّ الْكَلاَمَ مِنْ عَمَلِهِ أَمْسَكَ عَنِ الْكَلاَمِ إِلاَّ فِيْمَا يَعْنِيْهِ»

“যে জানবে যে তার কথা কর্মেরই অংশ সে নিরর্থক কথা থেকে নিবৃত্ত থাকবে।” [. ইমাম আহমদের ‘কিতাবুজ জুহুদ’ পৃষ্ঠা: ২৯৬। ইবন রজবের ‘জামে আল-উলুম ওয়ালহিকাম’, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২৯১।]

বরং নিরর্থক কাজ থেকে বিরত থাকার নিকটতম উদ্দেশ্যে হলো জিহবাকে অর্থহীন কথা থেকে বাঁচিয়ে রাখা। এ বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা সাক্ষ্য দিচ্ছে,

«إِنَّ مِنْ حُسْنِ إِسْلامِ الْمَرْءِ، قِلَّةَ الْكَلامِ فِيمَا لَا يَعْنِيهِ»

“মানুষের সৌন্দর্য্য ইসলাম হলো অর্থহীন কথা থেকে জিহ্বাকে বাঁচিয়ে রাখা।” [. মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ১৭৩২।]

আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন,

«مِنْ فِقْهِ الرَّجُلِ قِلَّةُ الْكَلاَمِ فِيْمَا لاَ يَعْنِيْهِ»

“মানুষের বুদ্ধিমত্তার অংশ বিশেষ হলো নিরর্থক বিষয়ে কথার স্বল্পতা।” [. আদাবুল মুজালিসা, ইবন আব্দুল বার, পৃ. ৬৮।]

মানুষের বাক্য সংযমের ক্ষেত্রে আল্লাহর বাণী যথেষ্ট যে, তিনি বলেছেন,

﴿مَّا يَلۡفِظُ مِن قَوۡلٍ إِلَّا لَدَيۡهِ رَقِيبٌ عَتِيدٞ ١٨﴾ [ق: ١٨ ]

“মানুষ যে কথা উচ্চারণ করে তার নিকট রয়েছে রক্ষণশীল প্রহরী”। [সূরা ক্বাফ, আয়াত: ১৮]

এবং নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«وَهَلْ يَكُبُّ النَّاسَ فِي النَّارِ عَلَى وُجُوهِهِمْ أَوْ عَلَى مَنَاخِرِهِمْ إِلَّا حَصَائِدُ أَلْسِنَتِهِمْ»

“মানুষকে তাদের চেহারা বা কাঁধের উপর দিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে কেবল তাদের জিহ্বার শস্যসমূহ (কথা)।” [. সুনান তিরমিযী, হাদীস নং ২৬১৬; মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং২২০১৬]

জিহ্বাকে সংযত রাখবে এভাবে যে কোনো শব্দ অনর্থক উচ্চারিত হবে না কেবলমাত্র ঐসব বিষয়ে কথা বলবে যেখানে তার দীনের ক্ষেত্রে লাভ ও বৃদ্ধির আশা করা যায়। যখন সে কথা বলবে চিন্তা করবে তাতে কোনো লাভ ও কল্যাণ আছে কি নেই? যদি কোনো লাভ না থাকে নিজেকে সংযত রাখবে আর যদি তাতে কোনো লাভ থাকে, তবে লক্ষ্য রাখবে এই কথার মাধ্যমে কী তার চেয়েও অধিক লাভ জনক কোনো পথ ছুটে যাবে? এমন হলে এর দ্বারা ঐটিকে বিনষ্ট করবে না। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেছেন,

«خَمْسًا لَهُنَّ أَحْسَنُ مِنَ الدُّهْمِ الْمُوقَفَةِ : لا تَكَلَّمْ فِيمَا لا يَعْنِيكَ، فَإِنَّهُ فَضْلٌ، وَلا آمَنُ عَلَيْكَ الْوِزْرَ، وَلا تَتَكَلَّمْ فِيمَا يَعْنِيكَ حَتَّى تَجِدَ لَهُ مَوْضِعًا، فَإِنَّهُ رُبَّ مُتَكَلِّمٍ فِي أَمْرٍ يَعْنِيهِ، قَدْ وَضَعَهُ فِي غَيْرِ مَوْضِعِهِ فَعَنَتَ»

“যখন তুমি অন্তরের কোনো ইচ্ছাকে প্রকাশ করতে চাও তবে জিহ্বার নড়াচড়ার মাধ্যমেই প্রকাশ পায়। কেননা তার অভিব্যক্তি চেহারায় ফুটে ওঠে চাই সে চাক বা অস্বীকার করুক”। [. আসসমত, ইবন আবুদ দুনয়া, পৃষ্ঠা: ৯৫।]

আশ্চর্যের বিষয় হলো, মানুষের জন্য হারাম বস্তু খাদ্য হিসেবে গ্রহণ, যুলুম, ব্যভিচার, চুরি, মদ্য পান এবং নিষিদ্ধ দৃষ্টিদান ইত্যাদি বিষয় থেকে বেঁচে থাকা সহজ হয়। আর তার পক্ষে জিহ্বার আন্দোলন থেকে নিবৃত্ত থাকা খুবই কঠিন বিষয়। তাই তুমি এমন লোক দেখতে পাবে যার কাছে দীন, ইবাদত এবং দুনিয়া বিমুখতা সম্পর্কে পরামর্শ করা হয়। অথচ ঐ ব্যক্তি এমন সব কথা বলে যা তাকে নির্ঘাত আল্লাহর ক্রোধে নিপতিত করবে এবং এমন বৈপরীত্য কথাবার্তা বলে যা আকাশ ও জমিনের চেয়ে ও অধিক দূরত্ব রাখে এবং তুমি এমন অনেক লোক দেখেতে পাবে যারা অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে অনেক সচেতন অথচ তার জিহ্বা জীবিত বা মৃত সকলের ব্যাপারেই নির্বিচারে মন্তব্য করে সে কী বলেছে এ ব্যাপারে তার কোনো পরওয়া নেই।

অর্থহীন কথাবার্তার সীমা বা পরিধি:

এমন কথাবার্তা বলা যদি সে চুপ থাকে তবে সে গুনাহগার হবে না এবং বর্তমান ও ভবিষ্যতে তার কোনো ক্ষতি ও সাধিত হবে না। যেমন নিত্য দিনের ঘটনা এমন খাবার পোশাক ইত্যাদির আলোচনা এবং অপরকে তার ইবাদাত সম্পর্কে প্রশ্ন করা এবং তার অবস্থান ও অপরের সঙ্গে তার কথাবার্তার অবস্থান ও কথাবার্তার বিবরণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা, যা দ্বারা জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি কোনো মিথ্যা বা ক্ষতি শিকার হয়।

প্রকৃতপক্ষে মানুষ:

আর নিরর্থক কথার অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে অর্থপূর্ণ কাজের ক্ষেত্রে প্রয়োজনের চেয়ে অতিরঞ্জন করা। তবে এটা আপেক্ষিক বিষয়। অর্থহীন বেফায়দা কথাবার্তার ক্ষেত্রে ঈমানদের নিষিদ্ধকরণ সংক্রান্ত আলোচনা অনেক বেশি।

এটা অস্পষ্ট নয় যে, গিবত, পরনিন্দা, অপবাদ ও মিথ্যা কথা বলা ইত্যাদি অধিক যুক্তিসঙ্গতভাবে হাদীসের অন্তর্ভুক্ত।

মোটকথা, জবানের ধ্বংসাত্মক পরিণাম ও তার বিপদসমূহের পরিচয় লাভ এবং তা থেকে বেঁচে থাকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া নেহায়েত জরুরি এই ভয়ে যে, এর মাধ্যমে এগুলোর সংঘটকরা ধ্বংস ও ক্ষতির মধ্যে নিপতিত হবে। ন্যূনতম এতটুকু উন্নীত হতে পারত তা থেকে বঞ্চিত হবে এবং অর্থহীন কথাবার্তায় অনেক ক্ষতি রয়েছে। যথা- রিযিক বিলম্বকরণ, হিফাযতকারী ফিরিশতাদের যন্ত্রণা প্রদান, আল্লাহর নিকট নিরর্থক কথাবার্তার রেকর্ড প্রেরণ ও শীর্ষ সাক্ষীদের সামনে সে আমলনামা পঠন, জান্নাতে থেকে বাধা প্রদান, হিসাব, ভৎর্সনা, তিরস্কার, দলীল উপস্থাপন করা এবং আল্লাহর থেকে লজ্জা পাওয়া। হাদীসে এসেছে,

«إِنَّ أَحَدَكُمْ لَيَتَكَلَّمُ بِالكَلِمَةِ مِنْ رِضْوَانِ اللَّهِ مَا يَظُنُّ أَنْ تَبْلُغَ مَا بَلَغَتْ فَيَكْتُبُ اللَّهُ لَهُ بِهَا رِضْوَانَهُ إِلَى يَوْمِ يَلْقَاهُ، وَإِنَّ أَحَدَكُمْ لَيَتَكَلَّمُ بِالكَلِمَةِ مِنْ سَخَطِ اللهِ مَا يَظُنُّ أَنْ تَبْلُغَ مَا بَلَغَتْ، فَيَكْتُبُ اللَّهُ عَلَيْهِ بِهَا سَخَطَهُ إِلَى يَوْمِ يَلْقَاهُ»

“তোমাদের কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টিদায়ক কোনো কথা বলে অথচ সে ধারনা করতে পারে না তা কোথায় পৌঁছবে, অতঃপর আল্লাহ তার জন্য কিয়ামতের সাক্ষাৎ দিবসে আপন সন্তুষ্টি লিপিবদ্ধ করে রাখেন এবং তোমাদের একই আল্লাহর অসন্তোষ প্রদানকারী কোনো কথা বলে অথচ সে ধারনাও করতে পারে না তার পরিণাম কী হবে, অতঃপর আল্লাহ কিয়ামত দিবসের জন্য তার প্রতি অসন্তুষ্টি লিখে রাখেন।” [. সুনান তিরমিযী, হাদীস নং ২৩১৯; হাদীসটিকে আলবানী সহীহ বলেছেন; সহীহ সুনান তিরমিযী, হাদীস নং ১৮৮৮।]

কথিত আছে, লোকমানকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল তিনি কীভাবে তার মর্যাদাও সম্মানের আসন লাভ করেছেন। তিনি বলেছেন,

«صِدْقُ الْحَدِيثِ،   وَطُولُ السُّكُوتِ عَمَّا لَا يَعْنِينِي»

“সত্য কথন ও অর্থহীন বিষয়ে দীর্ঘ নীরবতা পালন।”

মুহাম্মাদ ইবন আজলান বলেছেন,

«إِنَّمَا   الْكَلامُ أَرْبَعَةٌ : أَنْ تَذْكُرَ اللَّهَ، وَتَقْرَأَ الْقُرْآنَ، أَوْ تَسْأَلَ عَنْ عَلْمٍ فَتُخْبَرَ بِهِ، أَوْ تَتَكَلَّمَ فِيمَا يَعْنِيكَ مِنْ أَمْرِ دُنْيَاك»

“প্রকৃতপক্ষে কথা চার প্রকার: যথা- আল্লাহকে স্মরণ করা অথবা পবিত্র কুরআন পাঠ করা অথবা কোনো জ্ঞান সম্পর্কে প্রশ্ন করে সে বিষয়ে অবগত হওয়া অথবা দুনিয়ার বিষয়ে উপকারী কথাবার্তা বলা।” [. আত-তামহীদ, ইবন আব্দুল বার, খণ্ড: ৯, পৃষ্ঠা: ২০২।]

হাসান ইবন হুমাইদ বলেছেন,

إذا عقل الفتى استحيا واتقى :: وقلت من مقالته الفضول

“যখন কোনো যুবক বুদ্ধিদীপ্ত হবে সে সলাজ ও আল্লাহভীরু হবে এবং সে কথাবার্তায় পরিমিত ও স্বল্পভাষী হবে।”

গুনাহের দরজা পর্ব-২ সংক্ষিপ্ত বর্ণনা… .. .
প্রতিটি গুনাহের কিছু উপকরণ রয়েছে যা মানুষকে তাতে লিপ্ত হওয়ার প্রতি আহ্বান করে। গুনাহ থেকে পরহেয থাকার জন্যে সে উপকরণসমূহ সম্পর্কে পূর্ণ ধারনা থাকা অত্যাবশ্যক। প্রবন্ধে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে আলোকপাত করা হয়েছে।

তৃতীয়তঃ মেধার চিন্তা ও কল্পনাসমূহ:
চিন্তা ও কল্পনা বিষয়ক অধ্যায়টি বিশেষ গুরুত্ববহ। কেননা মানুষের কথা, কাজ ও আচরণসমূহে এর শক্তিশালী প্রভাব রয়েছে। কারণ, চিন্তাই হলো ভালো-মন্দের উৎস এবং চিন্তা থেকেই নানা ইচ্ছা, প্রেরণা ও সংকল্পের সৃষ্টি হয়। অতএব, সে তার কল্পনা শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করবে সে তার প্রবৃত্তির লাগাম এর নিয়ন্ত্রক হবে এবং সে প্রবৃত্তর ওপর বিজয় লাভ করবে। পক্ষান্তরে যার কল্পনা তাকে পরাজিত করবে তার প্রবৃত্তি মন তার ওপর বিজয়ী হবে। আর সে কল্পনাকে লঘু দৃষ্টিতে দেখবে তাকে ধ্বংসের প্রান্তসীমায় নিয়ে যাবে এবং এই কল্পনা মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকবে যাবৎ না তার নিরর্থক হিসেবে সাব্যস্ত হবে।

আর কল্যাণময় কল্পনা যা মানুষের উপকারে আসে তা হচ্ছে, পার্থিব বা অপার্থিব কল্যাণ অর্জনের উদ্দেশ্যে যা নিবেদিত অথবা কোনো ইহলৌকিক বা পারলৌকিক অনিষ্ট দূর করার উদ্দেশ্যে যা নির্দিষ্ট।

আর সর্বাধিক উপকারী হলো যা আল্লাহ ও পরকালের উদ্দেশে হয়ে থাকে যেমন পবিত্র কুরআনের আয়াতের অর্থসমূহ গভীর চিন্তা-ভাবনা করা এবং তা দ্বারা আল্লাহর উদ্দেশ্য উপলব্ধি করা এবং আমাদের সামনে উপস্থিত জাগতিক নিদর্শনসমূহে ধ্যানমগ্ন হওয়া এবং তা দ্বারা আল্লাহর নাম, গুণ ও প্রজ্ঞার ওপর প্রমাণ উপস্থাপন করা। এমনভাবে আল্লাহর নি‘আমত অনুগ্রহ ও দানসমূহ সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করা। প্রবৃত্তির দোষ-ত্রুটি ও সমস্যাসমূহ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা। সময়ের দায়িত্ব প্রয়োজন সম্পর্কে চিন্তামগ্ন হওয়া। এই মোট পাঁচ প্রকার।

পূর্ণতা হলো হৃদয়কে কল্পনা শক্তি, চিন্তা-ভাবনা ও প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জনের চিন্তায় নিমগ্ন ও পরিপূর্ণ রাখা এবং তার পথ ও গন্তব্য সম্পর্কে চিন্তা করা। সবচেয়ে পূর্ণতম মানুষ সে যে কল্পনা, চিন্তা ও ইচ্ছায় এর বাস্তবায়নে অধিক মনোযোগী। পক্ষান্তরে সবচেয়ে অসম্পূর্ণ মানুষ সে যে কল্পনা, চিন্তা ও ইচ্ছায় তার প্রবৃত্তির অধিক অনুগামী। আর কেউ তো অধিক এমন বিষয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে যা পুরো পুরি অর্থহীন, ফলে তার ইচ্ছাশক্তি প্রকৃত অর্থবহ কাজ থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকে। অতপর তার ইহকাল ও পরকাল উভয়ই নষ্ট হয়ে যায়। অতএব, অর্থহীন কল্পনা ও চিন্তা-ভাবনা এবং কাল্পনিক ও সুদূর পরাহত বিষয়ের চিন্তা কী উপকারে আসবে?

নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য হচ্ছে, মেধাকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং তাকে কল্পনা ও প্রশস্ত চিন্তায় নির্বিঘ্নে খোরাখুরির সুযোগ না দেওয়া, যা তাকে পার্থিব উপকরণ তার বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় পরিভ্রমণ করাবে। আর তাকে এক বস্তু থেকে আরেক বস্ত্তর দিকে স্থানান্তর করবে। তবে তা তাকে প্রয়োজনীয় কোনো স্থানে অবস্থান করাবে না। আর বিক্ষিপ্ত, অবিন্যস্ত চিন্তা-ভাবনার সুসংহত চিন্তা-ভাবনা মানুষের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বস্তু এবং জাতিকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য।

গন্তব্যে পৌঁছার উপায় কী?
এ বিষয়ে আমরা অন্তরের দুর্বলতা ও রোগ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞের অভিজ্ঞতার শরণাপন্ন হওয়ার অধিক প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি, যে রোগ শনাক্ত করবে ও তার কারণগুলো বিশেষণ করবে এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার ব্যাখ্যা দিবে। একটি নীতি দীর্ঘ বক্তব্যের মাধ্যমে বিষয়টি সুস্পষ্ট করা হচ্ছে ‘জেনে রাখো ওয়াসাওয়াসা ও প্ররোচনার সাথে সংশিষ্ট বিষয়গুলো চিন্তা-ভাবনাকে পর্যন্ত আক্রান্ত করে। আর চিন্তা-ভাবনা এগুলোকে স্মরণের বিষয়ে পরিণত করে। তারপর স্মরণ এগুলোকে ইচ্ছা পর্যন্ত পৌঁছে দেয়, ইচ্ছা তাকে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও কাজে বাস্তবায়ন করে। অতঃপর তা মজবুত হয়ে স্বভাব ও অভ্যাসে পরিণত হয়। তাই এগুলোকে শুরু থেকেই মূলোৎপাটন করা অধিকতর সহজ তা দৃঢ় ও পূর্ণতা লাভ করার পর বিচ্ছিন্ন করার তুলনায়।

আর এটা জানা বিষয় যে, মানুষকে কল্পনা শক্তি মৃত বানিয়ে ফেলা এবং তা নির্মূল করার শক্তি দেওয়া হয় নি। প্রবৃত্তির বিভিন্ন উপসর্গ তার কাছে ভিড় করবেই; কিন্তু ঈমানের শক্তি ও জ্ঞান তাকে সর্বোত্তম জিনিস গ্রহণ ও তার প্রতি সন্তুষ্টি এবং তা ধারণ করার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। আর সবচেয়ে মন্দ বিষয়কে প্রতিরোধ ও তার প্রতি ঘৃণা ও অসন্তুষ্টি প্রকাশে সহায়তা করবে। যেমন, সাহাবীগণ বলতেন,

«يَا رَسُولَ اللهِ ! إِنَّ أَحَدَنَا يَجِدُ فِي نَفْسِهِ -يُعَرِّضُ بِالشَّيْءِ- لأَنْ يَكُونَ حُمَمَةً أَحَبُّ إِلَيْهِ مِنْ أَنْ يَتَكَلَّمَ بِهِ؛ فَقَالَ : «قَدْ وَجَدْتُمُوهُ؟» قَالُوا : نَعَمْ، قَالَ : «ذَلِكَ صَرِيحُ الْإِيمَانِ» وفي لفظ : اللهُ أَكْبَرُ، اللهُ أَكْبَرُ، اللهُ أَكْبَرُ، الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي رَدَّ كَيْدَهُ إِلَى الْوَسْوَسَةِ»

“হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কেউ তার মনের ভেতর এমনি কিছুর উপস্থিতি পায় যদি তা দাহ্য বস্তু হত তা কয়লায় পরিণত হয়ে যেত। তিনি বললেন, তোমরা কি এমন কিছুর উপলব্ধি করেছ? তারা বললেন, জি হ্যাঁ। তিনি বললেন, এটাই হচ্ছে সুস্পষ্ট ঈমান। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ; সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর যিনি কুমন্ত্রণার দিকে তার কৌশলকে বানচাল করে দিয়েছেন।” [. সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১৩২; সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৫১১]

এ বিষয়ে দু’টি বক্তব্য পাওয়া যায়। একটি হচ্ছে, তা প্রত্যাখ্যান ও অপছন্দ করা ঈমানের সুস্পষ্ট পরিচায়ক। দ্বিতীয় হচ্ছে, তার মনে শয়তানের উপস্থিতি ও প্ররোচনা দেওয়া সুস্পষ্ট ঈমান। কেননা ঈমানের সঙ্গে বৈপরীত্য সৃষ্টি ও তার দ্বারা মানকে নির্বাসিত করার ইচ্ছায় শয়তান এমনটি করে থাকে।

মহান আল্লাহ মানুষরে মনকে সর্বদা ঘুর্নায়মান বা তার সাদৃশ্য করে সৃষ্টি করেছেন। তাই তার এমন এক বস্তু দরকার যা সে বিচূর্ণ করবে। যদি তার মধ্যে কোনো দানা রাখা হয় তবে তাকেই চূর্ণ করবে। আর যদি তার মধ্যে মাটি বা পাথর রাখা হয় তবে তাকেও বিচূর্ণ করবে। অতঃএব, মনের ভিতরে আন্দোলিত সমস্ত কল্পনা ও চিন্তাশক্তি জাঁতায় রক্ষিত দানা তুল্য। আর জাঁতা কখনও কর্মহীন, নির্বিকার বসে থাকে না। তাই তার মধ্যে কিছু রাখতেই হবে। মানুষের মধ্যে কারো জাঁতা এমন যে নিজেও উপকৃত হয় এবং অন্যকেও উপকার পৌঁছায়। আর অধিকাংশ মানুষ তারা বালি, পাথর ও তৃণ বিচূর্ণ করে। তারপর যখন খামির ও রুটি তৈরির সময় আসে তখনই চূর্ণ করার পরিচয় বেরিয়ে পড়ে।

আর এটাও জানা বিষয় যে, কল্পনার সংশোধন চিন্তার সংশোধনের তুলনায় অধিক সহজ। আর চিন্তার পরিশুদ্ধি ইচ্ছার পরিশুদ্ধির তুলনায় সহজ। এবং ইচ্ছার সংশোধন বিনষ্ট কর্মের প্রতিবিধানের তুলনায় সহজ। আর তার প্রতিবিধান। তাই সবচেয়ে উপকারী চিকিৎসা হচ্ছে, তুমি নিজেকে অর্থহীন ভাবনায় না জড়িয়ে অর্থপূর্ণ কাজে ব্যস্ত রাখবে। অর্থহীন বিষয় চিন্তা-ভাবনা সব অনিষ্টের প্রবেশ পথ। আর যে নিরর্থক ভাবনায় জড়িয়ে পড়ে তার অর্থবহ কাজগুলো ছেড়ে অধিক লাভ জনক কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখবে। আর চিন্তা, কল্পনা, ইচ্ছা ও প্রেরণা শক্তিকে পরিশুদ্ধ করা অধিক বাঞ্ছনীয়। কেননা, এগুলোই হচ্ছে তোমার বৈশিষ্ট্য ও স্বরূপ যা দ্বারা তুমি আপন প্রভুর নৈকট্য বা বৈরাগ্য লাভ কর। অথচ তোমার প্রভুর নৈকট্য লাভ ও তার তোমার প্রতি সন্তুষ্টিই হচ্ছে সৌভাগ্যের সোপান। আর তার থেকে তোমার দূরত্ব ও তোমার প্রতি তার অসন্তুষ্টি হচ্ছে পূর্ণ অমঙ্গল। আর যার কল্পনাও চিন্তার সীমানায় দুর্বুদ্ধি ও মন্দ ভাবনার স্থান পায় তার সমস্ত কাজেই এর প্রভাব থাকে।

তোমার চিন্তা ও ইচ্ছা শক্তির পরিমণ্ডলে শয়তানকে স্থান দেওয়া থেকে বিরত থাকবে। কেননা সে চিন্তাকে এমনভাবে বিনষ্ট করে যার ক্ষতিপূরণ অনেক কঠিন হয়ে পড়বে এবং সে তোমাকে ক্ষতিকর চিন্তা ও প্ররোচনায় নিক্ষেপ করবে এবং সে তোমার ও তোমার মঙ্গলজনক চিন্তার মাঝে দেয়াল তৈরি করবে। অথচ তুমিই তাকে তোমার বিরুদ্ধে সহযোগিতা করেছ। তাকে তোমার হৃদয় ও কল্পনার মালিকানার আসনে বসিয়েছ সে এগুলোর মালিক বনে গেছে। এই সবগুলোর সমন্বিত সংশোধনের উপায় হচ্ছে আপনার চিন্তাকে জ্ঞান ও ভাবনায় নিমগ্ন রাখা। যথা- তাওহীদ ও তার দায়িত্ব সম্পর্কে জানা এবং মৃত্যু, তার পরবর্তী জান্নাত বা জাহান্নামের প্রবেশ সম্পর্কে ও মন্দ কর্ম এবং তা থেকে বেঁচে থাকার উপায় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা। ইচ্ছা ও প্রতিজ্ঞার ক্ষেত্রে উপকারী ইচ্ছায় নিজেকে ব্যস্ত রাখা এবং অপকারী ইচ্ছা পরিত্যাগ করা। এ জাঁতাকে সংশোধনের মূল উপায় হচ্ছে অর্থবহ কাজে ব্যস্ত রাখা আর তার বিনাশ সাধান হচ্ছে অর্থহীন কাজে তাকে ব্যবহার করা।

চতুর্থতঃ দায়িত্বে অবহেলাকারী
দায়িত্বে অবহেলাকারী অধিকাংশেরই সময় স্বল্পতা ও অবসরে অভাবের অভিযোগ তুলে। তবে সরেজমিনে অনুসন্ধানে তুমি লক্ষ করবে। এগুলোর সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে তাদের সময়ের বড় অংশ অর্থহীন কাজে বিনষ্ট হওয়া। তাদের বৈঠকগুলো থেকেও তুমি এসবের অনেক কিছুই অবহিত হতে পারবে। তুমি তা দেখতে পাবে ক্রীড়া-কৌতুক ও অসার গল্পের শুষ্ক পরিবেশ, নেতিবাচকতার নমুনা, অবহেলার আশ্রয়স্থল ও জীবনকে ধ্বংস করার পথ, অর্থবহ ও উপকারী বিষয়ে গুরুত্বহীন। আর এ নেতিবাচক কাজের ক্ষতি আরো তীব্র হয় যখন রোগাক্রান্ত কিছু সৎকর্মশীলরাও তাতে লিপ্ত হয়। অতঃপর তাদের আসরগুলোই মন্দের দিক প্রতীক হয়ে যায়। আলেমে রব্বানী ইবনুল কাইয়্যেম তাদের সম্পর্কে আলোচনায় বলেন, সতীর্থদের মন্দ বৈঠক দুই প্রকার। তার একটি হচ্ছে, মনকে চাঙ্গা রাখা ও সময় কাটানোর উদ্দেশ্যে বৈঠক। এ প্রকারের বৈঠক তার পরকালের তুলনায় ক্ষতির পরিমাণ বেশি। আর ন্যূনতম ক্ষতি হচ্ছে, তা অন্তরকে দূষিত করে ও সময়ের অপচয় করে।

তবে কোনো মজলিস উদ্দেশ্যপূর্ণ ও লক্ষ্যমুখী হয়, তবে তা কখনও লক্ষ্য থেকে বিচ্যুতও হয়ে থাকে। ইবনুল কাইয়্যেম মজলিসের কিছু ক্ষতি থেকে সতর্ক করছেন। তিনি দ্বিতীয় প্রকারের উল্লেখ করে বলেন, দ্বিতীয়ত হচ্ছে, পরস্পর একে অপরকে সত্য ও ধৈর্যধারণের উপদেশ এবং নাজাতের উপকরণসমূহের ক্ষেত্রে সহযোগিতার ব্যাপারে পারস্পরিক মিলন বা সমাবেশ। এটা হচ্ছে মহত্তম গনিমত ও সর্বাধিক উপকারী বিষয়। কিন্তু তাতেও ## তিনটি ক্ষতির দিক রয়েছে।

প্রথমত: প্রয়োজনের তুলনায় অধিক কথাবার্তা ও মেলামেশা বা ঘনিষ্ঠতা অর্জন।

##

তৃতীয়ত: এটি একটি মনের আকাঙ্ক্ষা ও অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে। যা দ্বারা উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। এতদসত্ত্বেও ভালোদের সংস্পর্শ অর্জন এবং নেককার মুরুব্বীদের সান্নিধ্যের প্রতি গুরুত্বারোপ করতে কোনো নিষেধ নেই। তবে গুরুত্বের বিষয় হচ্ছে, সঙ্গী নির্বাচন দুরদর্শিতা ও উত্তম নির্বাচন করা। আর নিজেকে উপকারী মজলিসে নিয়মানুবর্তিতার সাথে সময় দিতে প্রস্তুত করা। আর মজলিসে আলোচিত কথা-কাজ ও বিশ্বাসের সঙ্গে নিজেকে পরিমাপ করা এবং তার জন্যে চেষ্টা-সাধনা করা। কেননা এ ব্যাপারে অবহেলা ক্ষতি ডেকে আনবে। আবার কখনোও এ অভিযান অর্থহীন বিষয়ের দিকেও মোড় নিতে পারে। আর সে মুহূর্তে অর্থহীন ও ক্রীড়া-কৌতুকে আসক্ত অন্তর মন্দ ও অর্থহীন বৈঠকে উপস্থিত হতে প্ররোচিত হতে পারে। আর এটাই হচ্ছে শয়তানের পদক্ষেপ।

মোটকথা, আড্ডা ও মেলামেশা হচ্ছে অঙ্গী নফসে আম্মারা বা নফসে মুতমাআন্নাহ উভয়ের জন্য। এ মিশ্রণ থেকে ফলাফল প্রকাশ পাবে। মিশ্রণ যদি উত্তম হয় তবে তার ফলাফল ও ভালো হবে। এমনকি পবিত্র আত্মাসমূহ তার মিশ্রণ ফিরিশতা থেকে। আর মন্দ আত্মা তার মিশ্রণ শয়তান থেকে। তাই আল্লাহ তা‘আলা তার প্রজ্ঞায় ও কৌশলে পুণ্যবতী নারীদেরকে পুণ্যবান পুরুষদের জন্য এবং মন্দ নারীদেরকে মন্দাপুরুষদের জন্য নির্বাচন করেছেন।

মানুষের কাজও গুরুত্বের বিষয়ের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে তাদের অর্থহীন ব্যস্ততার পরিমাণ সম্পর্কে উপলব্ধি করতে পারবে। ক্রীড়া-কৌতুক, আনন্দ, উল্লাস ও আনন্দদায়ক বা খেলাধুলা এবং হাত পায়ের নিরর্থক সমস্ত আন্দোলন। নানা ধরনের অর্থহীন প্রতিযোগিতা রান্না ও পোশাকের গ্রন্থাদী এবং গল্পের আসর ও নিরর্থক আনন্দ ভ্রমণ। বিভিন্ন চ্যানেল ও সম্প্রচারের পরিবেশিত অনুষ্ঠানের গভীর মনোনিবেশ এবং বিশ্ব সংবাদের গূঢ় রহস্য উদ্ঘাটন যা সংশিষ্ট ব্যক্তিদের ছাড়া অন্যদের কোনো উপকারে আসে না। পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন পাঠ ও অর্থহীন পড়াশোনাসহ আরো অনেক নিষিদ্ধ জিনিস রয়েছে। সুস্পষ্ট নিষিদ্ধ বস্তু দেখা ও শোনা, যথা- পোশাক প্রদর্শনকারী নারীদের প্রতিযোগিতা ও সুন্দরী প্রতিযোগিতা। তারা এসব কিছু তোমাকে এই বিশ্ব ও তার কল্যাণ সম্পর্কে অবহিত করবে। আর তার ভ্রান্ত চেষ্টা তোমার কাছে সুস্পষ্ট করবে। অথচ সে মনে করছে কত উত্তম কাজই না সে করেছে। যারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে না তাদের থেকে যদি এ কাজ প্রত্যাশিত না হয় তাহলে মুসলিমদের অবস্থা কী?

তিক্ত বাস্তবতা হচ্ছে, যাদের ওপর আল্লাহ হিদায়াতের নি‘আমত দিয়েছেন তাদের কারো অধিকাংশ গুরুত্ব মানুষ লক্ষ্য করে তাদের তিক্ততা বেড়ে যায়। এদের সম্পর্কে প্রথম বক্তব্য হচ্ছে তারা যেন বয়স ফুরিয়ে যাওয়ার আগে নিজেদের নিয়ে হিসাব-নিকাশ করে।

ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন, পদক্ষেপের সংরক্ষণ হচ্ছে নিজের কদমকে সাওয়াবের প্রত্যাশা ছাড়া স্থানান্তর না করা। যদি তার পদক্ষেপে অতিরিক্ত সাওয়াব প্রাপ্তি না হয়, তবে বসে থাকাই উত্তম। আর প্রত্যেক মুবাহ কাজে আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিয়ত করলে তা সাওয়াব হিসেবে পরিগণিত হবে। শরীর ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সমস্ত কাজ ও আন্দোলনও ঠিক অনুরূপ।

সমাপ্ত

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন