HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

মসজিদে নববী শরীফের যিয়ারত ও যিয়ারতকারীর জন্য কতিপয় সতর্কতা ও নির্দেশনা

লেখকঃ ড. আব্দুল্লাহ ইবন নাজী আল-মাখলাফী

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মসজিদ যিয়ারতকারীর জন্য কতিপয় সতর্কতা ও নির্দেশনা:
হে যিয়ারতকারী সম্মানিত ভাই!

* নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মসজিদে অথবা অন্য যে কোনো মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় বর্ণিত দু‘আ পড়তে যত্নবান হোন।

* রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম দেয়ার সময় মাথা ঝুঁকাবেন না; বরং ধীরতা, আদব ও গাম্ভীর্যের সাথে দাঁড়ান।

* দেয়াল বা খুঁটি বা মসজিদে নববীর দরজা বা মিম্বার বা মিহরাব বা নবীর হুজরার (ঘরের) জানালা বরকতের উদ্দেশ্যে স্পর্শ করবেন না। কেননা এরূপ করা জায়েয নেই।

ইমাম নববী-রাহিমাহুল্লাহ-(‘আল-মাজমু‘, 8/257) গ্রন্থে হাত দ্বারা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর স্পর্শ করা সম্পর্কে বলেন, “যার অন্তরে উদয় হয় যে, হাতে কবর স্পর্শ করা প্রভৃতি অধিক বরকতময়, তা তার অজ্ঞতা ও উদাসীনতার প্রমাণ। কেননা, বরকত কেবল শরী‘আতসম্মত কাজেই রয়েছে। আর বৈধ কাজের (শরী‘আতের) বিরোধিতায় কিভাবে কল্যাণ অর্জন করা যায়!”

হে যিয়ারতকারী ভাই! জেনে রাখুন, যিয়ারত দীর্ঘ বা হ্রস্ব নির্দিষ্ট কোনো সময় অনুরূপ কম বা বেশি নির্দিষ্ট কোনো সালাতের সাথে সম্পৃক্ত নয়। এ ছাড়াও কতক ভুল রয়েছে যা মসজিদে নববী শরীফ যিয়ারতকারীদের হয়ে থাকে, যেমন তারা ধারনা করে যে, সেখানে নির্দিষ্ট সংখ্যক সালাত হয়ত চল্লিশ ওয়াক্ত বা এ ধরনের কিছু পড়া জরুরি। কেউ কেউ এজন্য নিজেকে এবং যারা তার সাথে থাকে তাদেরকে কষ্টে ফেলে দেয়। এটি ভুল। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সালাতের কোনো সংখ্যা প্রমাণিত নেই যা যিয়ারতকারীকে তাঁর মসজিদে পড়তে হবে। সুতরাং সালাত কম বা বেশি যাই আপনার পক্ষে সহজ হয় তাই আদায় করুন।

আর রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মসজিদে চল্লিশ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের ব্যাপারে যে হাদীসটি রয়েছে তা মুসনাদে আহমদে আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহ ‘আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,“যে আমার মসজিদে চল্লিশ ওয়াক্ত সালাত আদায় করবে, এক সালাতও তার থেকে ছুটবে না, তার জন্যে জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও আযাব থেকে নাজাত লিখা হবে এবং সে নিফাক থেকে মুক্ত হবে।”এ হাদীসটি দ‘ঈফ।আরেকটি হাদীস যা ইমাম তিরমিযী রাহিমাহুল্লাহ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সংকলন করেছেন, তিনি বলেন:“যে আল্লাহ তা‘আলার জন্যে (একাধারে) চল্লিশ দিন জামাতের সঙ্গে তাকবীরে উলা (প্রথম তাকবীর) পেয়ে সালাত আদায় করবে, তার জন্যে দুটি মুক্তি লিখা হবে: জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও নিফাক থেকে মুক্তি।”এ হাদীসটি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত।

হে যিয়ারতকারী ভাই! কাজেই আমি আপনাকে অসিয়ত করছি যে, এখানে বা আপনার দেশে যেখানে থাকুন এই হাদীসে আমল করে এই মুক্তি অর্জন করুন।

* নিয়ম হচ্ছে, দু‘আকারী দু‘আর সময় কিবলামুখী হবে। কিন্তু কতক মানুষ মসজিদে নববীর কোনো পাশে দাঁড়িয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর শরীফের দিকে ফিরে দুই হাত তুলে আল্লাহর কাছে দু‘আ করেন। এই আমল পূর্ববর্তী উম্মত, ইমাম ও সম্মানিত আলেমদের থেকে পাওয়া যায়নি। অতএব, যিয়ারতকারী ভাই! এসব কাজ থেকে বিরত থাকুন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী, তাবে‘ঈ ও সৎপূর্বসূরী মুমিনগণের জন্যে যা যথেষ্ট হয়েছে তাই যেন আপনার জন্যেও যথেষ্ট হয়। কেননা দু‘আর কিবলা শুধুই কা‘বা।

* নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য দু‘আ লিখে তা হুজরার জানালায় বা রাওজায় অথবা মসজিদে নববীর কোনো পাশে রেখে দেয়া জায়েয নেই। কেননা এগুলো গর্হিত ও অবৈধ কাজ। অনুরূপ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এগুলো বহন করা ও তা মসজিদে নববীতে পৌঁছে দেওয়াও না-জায়েয।

* কবর শরীফ তাওয়াফ করা জায়েয নেই। কেননা তাওয়াফ একটি ইবাদত, যা আল্লাহর নির্দেশের প্রতি সম্মান ও আনুগত্য প্রদর্শনবশত কা‘বা ছাড়া কোথাও সম্পাদন করা জায়েয নেই।

যিয়ারতকারী ভাই! মদীনা মুনাওওয়ারাতে থাকাকালীন বেশি বেশি ইবাদত ও ভালো কাজ করতে উদ্যমী হোন। মসজিদে নববীতে ফরয সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করতে সচেষ্ট থাকুন, রাওজা শরীফে বেশি পরিমাণে নফল সালাত আদায় করুন -যদি তা আপনার জন্য সহজ হয়- কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সাব্যস্ত আছে। তিনি বলেছেন,

“আমার ঘর ও মিম্বার-এর মধ্যবর্তী স্থান জান্নাতের বাগানগুলোর একটি বাগান।”

হাদীসটি বুখারী ও মুসলিম রাহিমাহুমাল্লাহ বর্ণনা করেছেন।

মসজিদের অন্যান্য স্থান বাদে এ স্থানকে এ গুণে গুণান্বিত করা তার ফযিলত ও স্বাতন্ত্র্যের প্রমাণ বহন করে। সুতরাং ঠেলাঠেলি অথবা মুসল্লিদের কষ্ট দেওয়া ছাড়া সেখানে নফল সালাত, আল্লাহর যিকির ও কুরআন তিলাওয়াত করতে চেষ্টা করুন। কেননা, যে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোনো জিনিস ত্যাগ করবে আল্লাহ তাকে তার চেয়ে উত্তম জিনিস দান করবেন।

তবে ফরয সালাত সামনের কাতারে আদায় করা উত্তম। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,“পুরুষদের সর্বোত্তম কাতার হচ্ছে প্রথমটি আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট হচ্ছে শেষেরটি।”হাদীসটি ইমাম মুসলিম রাহিমাহুল্লাহ বর্ণনা করেছেন।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন

“লোকেরা যদি আযান দেয়া ও সালাতে প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর ফযীলত জানত, আর এ ফযীলত অর্জন করার জন্য লটারি ব্যতীত অন্য কোনো (বিকল্প) ব্যবস্থা না পেত তাহলে অবশ্যই তারা লটারির সাহায্য নিত।”

হাদীসটি বুখারী ও মুসলিম রাহিমাহুমাল্লাহ বর্ণনা করেছেন।

«يَسْتَهِمُوا» অর্থ তারা লটারি করত।

জেনে রাখুন, মসজিদে নববীতে এক সালাত মসজিদুল হারাম ব্যতীত অন্যান্য মসজিদে এক হাজার সালাতের চেয়ে উত্তম। কেননা, মসজিদুল হারামে এক সালাত অন্যান্য মসজিদে এক লক্ষ সালাতের চেয়ে উত্তম। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,“আমার এই মসজিদে এক সালাত অন্যান্য মসজিদের হাজার সালাত অপেক্ষা উত্তম, তবে মসজিদুল হারাম ব্যতীত। আর মসজিদুল হারামের এক সালাত অন্যান্য মসজিদের এক লক্ষ সালাত অপেক্ষা উত্তম।”ইবন মাজাহ ও আহমদ রাহিমাহুমাল্লাহ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

কুরআন তিলাওয়াত, আল্লাহর যিকির, শোকর, হামদ ও সাদাকাহ বেশি বেশি করুন এবং আপনার জন্য সহজ হলে মসজিদে নববীতে ই‘তিকাফ করুন।

দীনের কোনো বিষয় যখন আপনার কাছে কঠিন লাগবে, তখন আপনি আলেমদের জিজ্ঞাসা করুন। যেমন মসজিদে নববীর সম্মানিত মাশায়েখ ও শিক্ষকগণ। মহান আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণীর অনুসরণার্থে।“সুতরাং তোমরা জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা কর, যদি তোমরা না জান।”[সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: 7]

“সুতরাং তোমরা জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা কর, যদি তোমরা না জান।”

[সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: 7]

* অথবা (প্রশ্নকারীদের নির্দেশনা বিষয়ক কার্যালয়) এর ফোনে কল করুন, যা মসজিদে নববীর গেটসমূহের পাশে ও অন্যান্য স্থানে রয়েছে। আপনি তাতে যিয়ারত, হজ ও উমরা বিষয়ে আপনার প্রয়োজনীয় উত্তর পেয়ে যাবেন--ইনশাআল্লাহ-।

* আপনার দীনি বিষয় জানতে মসজিদে নববী শরীফের সম্মানিত শিক্ষকগণ যেসব ইলমি পাঠদান করেন তাতে উপস্থিত হোন এবং নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিম্নোক্ত হাদীসে শামিল হোন।“যে আমার এই মসজিদে কোনো কল্যাণ শেখা বা শেখানোর জন্য আসল সে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদরত ব্যক্তির মর্যাদাসম্পন্ন। আর যে অন্য কোনো উদ্দেশ্যে আসল, সে অপরের সম্পদে লোলুপ দৃষ্টি নিক্ষেপকারীর তুল্য।”হাদীসটি ইবন মাজাহ, আহমদ ও মুসতাদরাক গ্রন্থে হাকিম-আল্লাহ সবার উপর রহম করুন-বর্ণনা করেছেন।

“যে আমার এই মসজিদে কোনো কল্যাণ শেখা বা শেখানোর জন্য আসল সে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদরত ব্যক্তির মর্যাদাসম্পন্ন। আর যে অন্য কোনো উদ্দেশ্যে আসল, সে অপরের সম্পদে লোলুপ দৃষ্টি নিক্ষেপকারীর তুল্য।”

হাদীসটি ইবন মাজাহ, আহমদ ও মুসতাদরাক গ্রন্থে হাকিম-আল্লাহ সবার উপর রহম করুন-বর্ণনা করেছেন।

ইলম অন্বেষী ভাই! আপনি মসজিদে নববীর প্রশস্ত হলে অবস্থিত বিশাল লাইব্রেরি পরিদর্শন করতে ভুলবেন না, যা খাদেমুল হারামাইন শারীফাইন বাদশাহ ফাহাদ রাহিমাহুল্লাহ কর্তৃক মসজিদে নববীর সম্প্রসারণ অংশের পশ্চিম পাশে অবস্থিত। সেখানে ওঠার এস্কেলেটর নং ১০। তাতে আপনি এমন কিছু অবশ্যই পাবেন যা আপনাকে উপকার করবে।

যিয়ারতকারী ভাই! আপনি যদি পাণ্ডুলিপির প্রতি বিশেষ আগ্রহী হোন, তাহলে ‘উসমান ইবন ‘আফফান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু গেটে পাণ্ডুলিপি সংক্রান্ত বিশেষ বিভাগ পরিদর্শন করুন, যা (বর্তমান) মসজিদে নববী শরীফের মাঝখানে সৌদী আরবের প্রথম সম্প্রসারণ অংশের শেষপ্রান্তে অবস্থিত।

সেখানে আরও রয়েছে নির্দেশনামূলক অডিও ও ভিডিও নির্মাণ কার্যালয়, যা খাদেমুল হারামাইন বাদশাহ ফাহাদ-রাহিমাহুল্লাহ-এর সম্প্রসারণ অংশে ‘উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নামী 17 নং গেটে অবস্থিত। কার্যালয়টি যিয়ারতকারীগণ খালি ক্যাসেট/পেনড্রাইভ অথবা সিডি অথবা হার্ডডিস্ক পেশ করলে তাতে মসজিদে নববীর দারস (পাঠ), খুতবা ও সালাতসমূহ বিনামূল্যে রেকর্ড করে দেন। অনুরূপভাবে পূর্ব দিকের 24 নং ও পশ্চিম দিকের 16 নং গেটে নারী গ্রন্থাগার ও 28 নং গেটে নারী অডিও লাইব্রেরি রয়েছে।

* সামনে অগ্রসর হোন, প্রথম কাতার তারপর প্রথম কাতার পূর্ণ করুন। আর প্রবেশদ্বারে, চলাচলের পথে, সিঁড়িতে ও দরজায় বসবেন না। কেননা এতে আপনি মসজিদের প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দিবেন, যার ফলে মানুষেরা মসজিদের ভেতর প্রশস্ততা থাকা সত্ত্বেও তার বাইরে সালাত আদায় করতে বাধ্য হবেন।বরং আপনি ও আপনার মুসল্লি ভাইয়েরা কাতারগুলোকে একটির সঙ্গে অপরটি মিলাতে যত্নশীল হোন এবং নিজেদের মাঝে কাতারগুলো পরপর করে নিন, যেন কাতারগুলো মিলে যায় ও পূর্ণ হয় এবং সকল মুসল্লিকে মসজিদের ভেতরে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়।

বরং আপনি ও আপনার মুসল্লি ভাইয়েরা কাতারগুলোকে একটির সঙ্গে অপরটি মিলাতে যত্নশীল হোন এবং নিজেদের মাঝে কাতারগুলো পরপর করে নিন, যেন কাতারগুলো মিলে যায় ও পূর্ণ হয় এবং সকল মুসল্লিকে মসজিদের ভেতরে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়।

যখন আপনি প্রথম কাতারগুলোতে অথবা রাওজা শরীফে সালাত আদায় করার ইচ্ছা করেন, তখন সকাল-সকাল মসজিদে নববীতে হাজির হোন। বিলম্বে হাজির হয়ে অতঃপর মানুষের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে, মুসল্লিদের সামনে চলে ও তাদের সঙ্গে ঠেলাঠেলি করে সামনে এগোবেন না। কেননা এতে রয়েছে মুসল্লীদের কষ্ট। আর মুসলিমদেরকে কষ্ট দেওয়া জাযেয় নেই।

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুম‘আর দিন এক ব্যক্তিকে দেখলেন যে, সে মানুষের ঘাড়ের উপর দিয়ে সামনে কাতারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন মিম্বারে খুতবা দিচ্ছিলেন। তিনি খুতবা বন্ধ করে লোকটিকে সম্বোধন করে বললেন,“বসো, তুমি কষ্ট দিয়েছো ও দেরীতে এসেছো।”[হাদীসটি ইবন মাজাহ ও আহমদ রাহিমাহুমাল্লাহু বর্ণনা করেছেন]

“বসো, তুমি কষ্ট দিয়েছো ও দেরীতে এসেছো।”

[হাদীসটি ইবন মাজাহ ও আহমদ রাহিমাহুমাল্লাহু বর্ণনা করেছেন]

অর্থাৎ তুমি মানুষের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে তাদেরকে কষ্ট দিয়েছো। آنيت অর্থাৎ তুমি আসতে দেরী করেছো, অথচ তুমি আগের কাতারে আগ্রহী হলে তোমার উপর জরুরি ছিল দেরী না করে সকাল-সকাল আসা।

* মুসল্লিদের সামনে দিয়ে অতিক্রম করবেন না। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। তাঁর বাণী:“যদি মুসল্লির সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী জানত যে, তার ওপর কী (পরিমাণ পাপ) রয়েছে, তাহলে তার পক্ষে মুসল্লির সামনে দিয়ে অতিক্রম করার চেয়ে চল্লিশ (দিন/মাস/বছর) দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম হত।”আবূ নাদার বলেন, তিনি চল্লিশ দিন বা মাস বা বছর কী বললেন আমি জানি না।হাদীসটি ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন।ইমাম ইবন হাজার রাহিমাহুল্লাহ ‘ফাতহুল বারী’ (1/585) গ্রন্থে বলেন,তাঁর বাণী: ( لَكَانَ أَنْ يَقِفَ أَرْبَعِينَ ) “চল্লিশ অপেক্ষা করা” অর্থাৎ অতিক্রমকারী যদি জানত মুসল্লির সামনে দিয়ে অতিক্রম করলে কী পরিমাণ গুনাহ হবে, তাহলে সে (অতিক্রম না করে) উল্লেখিত সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করাকে গ্রহণ করত, যেন তাকে উক্ত গুনাহ স্পর্শ না করে।

“যদি মুসল্লির সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী জানত যে, তার ওপর কী (পরিমাণ পাপ) রয়েছে, তাহলে তার পক্ষে মুসল্লির সামনে দিয়ে অতিক্রম করার চেয়ে চল্লিশ (দিন/মাস/বছর) দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম হত।”

আবূ নাদার বলেন, তিনি চল্লিশ দিন বা মাস বা বছর কী বললেন আমি জানি না।

হাদীসটি ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন।

ইমাম ইবন হাজার রাহিমাহুল্লাহ ‘ফাতহুল বারী’ (1/585) গ্রন্থে বলেন,

তাঁর বাণী: ( لَكَانَ أَنْ يَقِفَ أَرْبَعِينَ ) “চল্লিশ অপেক্ষা করা” অর্থাৎ অতিক্রমকারী যদি জানত মুসল্লির সামনে দিয়ে অতিক্রম করলে কী পরিমাণ গুনাহ হবে, তাহলে সে (অতিক্রম না করে) উল্লেখিত সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করাকে গ্রহণ করত, যেন তাকে উক্ত গুনাহ স্পর্শ না করে।

* যিয়ারতকারী ভাই! পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন, সুগন্ধি ব্যবহার করুন এবং শরীর ও কাপড় থেকে দুর্গন্ধ দূর করতে সচেষ্ট হোন। কেননা মানব সন্তান যার দ্বারা কষ্ট পায় ফিরিশতাগণও তার দ্বারা কষ্ট পায়।

* মসজিদ ও তার আঙ্গিনার পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করুন। মসজিদে নববীতে অবস্থানরত আপনার মুসল্লি ভাইদেরকে মসজিদের ফ্লোরে অথবা দেয়ালে অথবা প্রাঙ্গণে থুথু ফেলে ও নাক ঝেড়ে (শ্লেষ্মা ফেলে) কষ্ট দিবেন না। আপনি মসজিদে নববীর মর্যাদা অনুভব করুন। আপনার জানা উচিত যে, মসজিদে থুথু ফেলা গুনাহের কাজ। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাণীতে এর সংবাদ দিয়েছেন,“মসজিদে থুথু ফেলা গুনাহের কাজ। আর তার কাফফারাহ (প্রতিকার) হচ্ছে তা দাবিয়ে দেওয়া (মুছে ফেলা)।”হাদীসটি বুখারী ও মুসলিম রাহিমাহুল্লাহ বর্ণনা করেছেন।

“মসজিদে থুথু ফেলা গুনাহের কাজ। আর তার কাফফারাহ (প্রতিকার) হচ্ছে তা দাবিয়ে দেওয়া (মুছে ফেলা)।”

হাদীসটি বুখারী ও মুসলিম রাহিমাহুল্লাহ বর্ণনা করেছেন।

আপনার সন্তানদেরকে মসজিদে হাসি-তামাশা, খেলাধুলা ও চিল্লা-ফাল্লা করতে ছেড়ে দিবেন না। কেননা এসব কাজ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মসজিদের আদবের সঙ্গে মানানসই নয়।

* ভিড়ের জায়গাসমূহ পরিহার করুন এবং মসজিদের প্রশস্ত জায়গার দিকে অগ্রসর হোন। জেনে রাখুন, মসজিদের যে কোনো জায়গায় সালাত আদায় করলে তার সাওয়াব অর্জিত হবে।

* যিয়ারতকারী ভাই! আপনার সালাত আদায় শেষে অপেক্ষা করুন, সালাতের পরে হাদীসে উল্লিখিত দো‘আসমূহ পাঠ করুন এবং ফরয সালাতের সাথে সাথে বিশেষ করে ভিড়ের স্থানে ও সময়ে নফল সালাত আদায়ে দ্রুত না করুন, যেন যারা অসুস্থ ও যাদের দ্রুত বের হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে তাদেরকে আপনি সরে গিয়ে সুযোগ দিতে পারেন এবং মুসল্লির সামনে দিয়ে অতিক্রম করলে তার যে সমস্যা হয় তাতে আপনি পতিত না হোন।

* আপনি পবিত্র রাওজায় মহিলাদের সালাতের জন্য সাঁটানো পর্দা তোলার সময় ধীরস্থীর থাকুন, দৌড়াদৌড়ি ও ধাক্কাধাক্কি না করুন।

* মসজিদে নববীর বাইরে মুসহাফ নিয়ে যাবেন না। কেননা তা সেখানেই ওয়াকফকৃত।

* মুসহাফের আলমিরাসমূহে হেলান দিবেন না, তার পাশে আপনার জুতো রাখবেন না এবং আল্লাহর কিতাবের সম্মানার্থে তার উপর দিয়ে ডিঙ্গিয়ে যাবেন না।

* আপনি যেখানেই জুতো রাখুন, সে স্থানটি ভালোভাবে চিনে রাখুন।যেসব বক্সে বা তার ওপরে জুতো রাখা হয় তার সবক’টিতে নাম্বার দেওয়া আছে। আপনার কাজ শুধু নাম্বারটি জেনে রাখা, যাতে জুতো নিতে সেখানে সহজে ও আসানির সঙ্গে ফিরে আসতে পারেন।

যেসব বক্সে বা তার ওপরে জুতো রাখা হয় তার সবক’টিতে নাম্বার দেওয়া আছে। আপনার কাজ শুধু নাম্বারটি জেনে রাখা, যাতে জুতো নিতে সেখানে সহজে ও আসানির সঙ্গে ফিরে আসতে পারেন।

* হে যিয়ারতকারী ভাই! জেনে রাখুন, মসজিদে নববী ও অন্যান্য মসজিদ ইবাদতের জন্যে তৈরি করা হয়েছে। সুতরাং তাকে ঘুম, ভিক্ষা বা হারানো জিনিস খোঁজার স্থান বানাবেন না।

* মসজিদের বিভিন্ন জায়গায় স্থাপিত পান করার পানির টিপকল ও জমজমের পানির জারগুলোকে অযুর জন্য ব্যবহার করবেন না। অনুরূপভাবে মসজিদের বিছানাসমূহকে বালিশ বা কম্বল হিসেবে ব্যবহার করবেন না।

মসজিদে নববী শরীফের আঙ্গিনাসমূহ বিছানা বানানো থেকে বিরত থাকুন।

* মসজিদে নববীর প্রাঙ্গণে ও তার সংশ্লিষ্ট জায়গায় ধূমপান করা নিষেধ। যে এতে আক্রান্ত হয়েছে তার উচিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মসজিদে আল্লাহর কাছে আকুতি-মিনতি করা, যেন তিনি তাকে তা ত্যাগ করার তাওফিক দান করেন। আরও জানা জরুরি যে, আলেমগণ বিড়ি-সিগারেট বিক্রি ও ধূমপান করা হারাম ফতোয়া দিয়েছেন। কাজেই ধূমপান করা পাপ। আর আপনি তো এসেছেন সাওয়াব বৃদ্ধি করতে, সুতরাং পাপসমূহ পরিহার করুন।

* মসজিদে নববীর সকল দরজা নামকরণ করা ও নাম্বার দেওয়া আছে। হে যিয়ারতকারী ভাই! আপনি যে দরজা দিয়ে প্রবেশ করছেন সে দরজার নাম অথবা নাম্বার জেনে নিন, যেন মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় সেখানে ফিরে আসতে পারেন।

* আপনি যখন মসজিদের দরজার কাছে ভিড় দেখবেন, তখন ভিড় হালকা না হওয়া পর্যন্ত মসজিদে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন।

* বের হওয়ার সময় আপনার বাম পা এগোতে ভুলবেন না এবং মসজিদ থেকে বের হওয়ার দো’আ পড়ুন, আর সেটি হচ্ছে, «بسم الله، اللهم صل وسلم على محمد، اللهم اغفر لي ذنوبي وافتح لي أبواب فضلك» (বিসমিল্লাহ, হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন। হে আল্লাহ আপনি আমার গুনাহসমূহ মাফ করুন এবং আপনার অনুগ্রহের দরজাসমূহ আমার জন্য খুলে দিন।”হাদীসটি তিরমিযী, ইবন মাজাহ ও আহমদ বর্ণনা করেছেন। এ হাদীসের একটি শাহেদ (সমর্থক) ইমাম মুসলিমের সহীহ গ্রন্থে রয়েছে।

«بسم الله، اللهم صل وسلم على محمد، اللهم اغفر لي ذنوبي وافتح لي أبواب فضلك» (বিসমিল্লাহ, হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন। হে আল্লাহ আপনি আমার গুনাহসমূহ মাফ করুন এবং আপনার অনুগ্রহের দরজাসমূহ আমার জন্য খুলে দিন।”

হাদীসটি তিরমিযী, ইবন মাজাহ ও আহমদ বর্ণনা করেছেন। এ হাদীসের একটি শাহেদ (সমর্থক) ইমাম মুসলিমের সহীহ গ্রন্থে রয়েছে।

* আমরা আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছি যে, আপনি যে বাসায় উঠেছেন তার একটি ভিজিটিং কার্ড সংগ্রহ করে নিন, যেন তা আপনার বাসা না চেনার সময় ব্যবহার করতে পারেন।

* মসজিদে নববীতে রোগী পাওয়া গেলে এম্বুলেন্সের প্রয়োজন হয়। অতএব আপনি দ্রুত মসজিদে নববী শরীফের গেটে অবস্থানরত দায়িত্বশীলদের সংবাদ দিন অথবা যে কোনো ওয়্যারলেস বাহক ও কর্মচারীকে জানান।

* মসজিদে নববীর ছাদ জুমআর সালাতের জন্যে সারা বছর আর বিভিন্ন মৌসুমে (যেমন হজ ও উমরার সময়) পাঁচ ওয়াক্ত খোলা থাকে। যিয়ারতকারী ভাই! যখন আপনি মসজিদে নববীর নিচতলায় ভিড় দেখবেন, সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠুন, সেখানে প্রশস্ত জায়গা পাবেন-ইনশাআল্লাহ-।

* প্রতিবন্ধী ও বয়স্কদের জন্যে মসজিদে নববীর পশ্চিম পার্শ্বে ৮ নং গেটে “মসজিদে নববীর দরজা বিষয়ক কার্যালয়”-এ ট্রলির ব্যবস্থা রয়েছে, যা মুখাপেক্ষীদেরকে তাদের আবাস্থল-হোটেল অথবা তাদের গাড়ী থেকে মসজিদে নববীতে আনা-নেয়ার জন্যে তাদের অবস্থানকালীন পুরো সময়ের জন্যে প্রদান করা হয়।

* ফিকহী মতভেদ থেকে দূরে থাকার জন্যে মসজিদের সামনের প্রাঙ্গণে ভিড়ের সময় সালাত আদায়কালে ইমাম থেকে এগিয়ে যাবেন না।

* মসজিদে নববীতে দায়িত্বশীলদের পরামর্শ থেকে উপকৃত হওয়ার চেষ্টা করুন, যাদেরকে আপনার সেবা ও আরামের বিষয়গুলো সহজ করার জন্যে নিয়োগ করা হয়েছে।

* খুব বেশি আকুতি-মিনতি ও দো’আ করুন এবং সত্যিকার তাওবা করে আল্লাহর সাথে অঙ্গীকারকে দৃঢ় করুন। জেনে রাখুন, মহান আল্লাহর সাথে আদবের প্রকৃত রূপ হচ্ছে, তাঁকে মহব্বত করা, সম্মান করা ও তাঁর জন্য দো’আকে একনিষ্ঠ করা। আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আদবের প্রকৃত রূপ হচ্ছে, তাঁর সুন্নত ও আদর্শ অনুসরণ করা, তাঁর পরবর্তীতে তাঁর সাহাবীদের আদর্শের ওপর চলা এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পরও তাঁর সঙ্গে আদব রক্ষা করা।

* হে যিয়ারতকারী ভাই, সর্বশেষ আপনাকে বলব, আমাদের নবী ও সরদার মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি বেশি বেশি সালাত ও সালাম পাঠ করুন। ‘আমর ইবন ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন,“যে আমার ওপর একবার সালাত পাঠ করবে বিনিময়ে আল্লাহ তার ওপর দশবার রহমত বর্ষণ করবেন।”হাদীসটি মুসলিম ও অন্যান্যগণ বর্ণনা করেছেন।

“যে আমার ওপর একবার সালাত পাঠ করবে বিনিময়ে আল্লাহ তার ওপর দশবার রহমত বর্ষণ করবেন।”

হাদীসটি মুসলিম ও অন্যান্যগণ বর্ণনা করেছেন।

বেশি পরিমাণে হাদীসে বর্ণিত যিকির করুন, আল্লাহর কাছে বিনয়ী হোন ও তাঁর কাছে আশ্রয় চান। কেননা আপনি এমন স্থানে রয়েছেন যেখানে দু‘আ কবুল হওয়ার আশা করা যায়। আপনি আপনার পিতামাতা, পরিবার-পরিজন, সন্তান-সন্ততি ও পৃথিবীর সর্বত্রে বিদ্যমান আপনার মুসলিম ভাইদের জন্য দু‘আ করতে ভুলবেন না।

আল্লাহ আমাদের নবী মুহাম্মাদের ওপর, তার পরিবার ও তার সকল সাহাবীর ওপর শান্তি বর্ষণ করুন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন