HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
নারী ইসলামের পূর্বে ও পরে
লেখকঃ মুতয়েব উমার আল-হারেসী
৫
নারীরা কেন ঘরে বসে কাজ করার সুযোগ পাবে না?নারীদের জন্য আলাদা কর্মস্থল তৈরি করতে হবে যেখানে নারীদের সাথে পুরুষের সংমিশ্রণ থাকবে না। একজন নারী ইচ্ছা করলে সমাজে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সুতরাং তাকে কাজে লাগাতে হলে, তার জন্য উপযোগী কর্মক্ষেত্রে তৈরি করতে হবে, যাতে তারা সমাজের উপকার করতে পারে এবং দেশ ও জাতির উন্নয়নে কাজ করতে পারে। তারা যেখানে কাজ করবে তা যেন হয় পুরুষদের থেকে দূরে এবং নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা হতে সম্পূর্ণ মুক্ত। আর তাদের কাজের সময় যেন হয় তাদের জন্য উপযোগী; যাতে তারা তাদের পরিবারের যাবতীয় কাজগুলো সমাধান করতে যথেষ্ট সুযোগ পায়। সন্তান যেন মাতৃ স্নেহ থেকে বঞ্চিত না হয়। আর স্বামী যেন স্ত্রীর অভাব অনুভব না করে।
অনুরূপভাবে জরুরি হলো, নারীদের ঈমান, আক্বীদা, আমল-আখলাক, শিক্ষা-দীক্ষা, শরীর চর্চা ইত্যাদি বিষয়গুলোর উন্নতির জন্য জোর চেষ্টা চালানো। যাতে তারা যুগের চাহিদা অনুযায়ী সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে এবং লাভ করতে পারে উন্নত জীবন। তারাও যেন বর্তমান সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে হতে পারে যোগ্য থেকে যোগ্যতর। আর তা যেন হয়, সুনির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি ও বাস্তবসম্মত পরিকল্পনার আলোকে, যা মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে অন্তর্ভুক্ত করবে এবং যাবতীয় সমস্যার বৈজ্ঞানিক সমাধান দেবে। আর তা যেন হয় ইসলামী চিন্তাবিদ ও সমাজ বিজ্ঞানীদের সমন্বিত প্রচেষ্টার ফসল।
২. ইসলাম নারীদের বিশ্বাস ও চিন্তার স্বাধীনতা দিয়েছেন। নারীদের একান্ত কোনো বিষয় ছাড়া ইসলাম নারী ও পুরুষের মধ্যে কোনো ব্যবধান ও বৈষম্য তৈরি করেনি, বরং ইসলাম নারীদেরকে পুরুষের মতই সমানভাবে সম্বোধন করা হয়েছে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনের ৯১ টি স্থানে হে ঈমানদারগণ বলে সম্বোধন করেছেন। অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা হে মানবজাতি বলে ১৮ টি স্থানে সম্বোধন করেছে। এ সব সম্বোধনে আল্লাহ তা‘আলা নারী পুরুষ সবাইকে সমানভাবেই অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এ ছাড়াও কুরআন ও হাদিসে সমগ্র মানবজাতিকে আল্লাহর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করা এবং আল্লাহর মাখলুকের মধ্যে চিন্তার মাধ্যমে আল্লাহর পরিচয় জানার আহ্বান জানানো হয়েছে। তাতে নারী ও পুরুষের মধ্যে কোনো ব্যবধান করা হয় নি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قُلِ ٱنظُرُواْ مَاذَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۚ وَمَا تُغۡنِي ٱلۡأٓيَٰتُ وَٱلنُّذُرُ عَن قَوۡمٖ لَّا يُؤۡمِنُونَ ١٠١﴾ [ يونس : ١٠١ ]
“বল, আসমানসমূহ ও জমিনে কী আছে তা তাকিয়ে দেখ। আর নিদর্শনসমূহ ও সতর্ককারীগণ এমন কওমের কাজে আসে না, যারা ঈমান আনে না।” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ১০১]
অনুরূপভাবে নারীরা তাদের ঈমান ও বিশ্বাসের ক্ষেত্রে পুরুষদের মতোই স্বাধীন। তারা তাদের ইচ্ছা মতোই ঈমান আনবে বা বিরত থাকবে। তাদের কেউ কোনো দীন কবুল করার ক্ষেত্রে বাধ্য করতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿لَآ إِكۡرَاهَ فِي ٱلدِّينِ .........﴾ [ البقرة : ٢٥٦ ]
“দীন গ্রহণের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই। নিশ্চয় হিদায়াত স্পষ্ট হয়েছে ভ্রষ্টতা থেকে।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৫৬]
আব্দুর রহমান আস-সা‘দী রহ. বলেন, ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন বিধান। মানব স্বভাবের সাথে তার সখ্যতা ও সম্পর্ক গভীর হওয়াতে ইসলাম গ্রহণের জন্য কাউকে বাধ্য করার প্রয়োজন পড়ে না। বাধ্য করার প্রয়োজন তখন হয়, যখন মানবাত্মা তা হতে পলায়ন করে, সত্য ও বাস্তবতা বিবর্জিত হয় অথবা যখন দলীল প্রমাণ ও তার নিদর্শনসমূহ অস্পষ্ট থাকে। অন্যথায় কারও নিকট এ দীনের দাওয়াত পৌঁছার পরও সে তা কবুল করবে না তা হতেই পারে না। যদি কেউ করেই থাকে তবে তার হটকারিতা ও অহমিকার কারণেই হয়ে থাকে। কারণ, ইসলামের আগমনের ফলে সত্য স্পষ্ট হয়ে গেছে আর অন্ধকার দূর হয়ে গেছে। সুতরাং, কারো জন্য এদিক সেদিক যাওয়ার অবকাশ চিরতরে নিঃশেষ হয়ে গেছে। এখন যদি কেউ ইসলামকে প্রত্যাখ্যান করে তার প্রত্যাখ্যান করাটা অগ্রহণযোগ্য। তাকেই প্রত্যাখ্যান করা হবে।
এ কারণেই দেখা যেত জাহেলিয়্যাতের যুগে নারীরাও স্বাধীনভাবে ইসলাম গ্রহণ করত অথচ তাদের পরিবারের অন্য লোকেরা সবাই তখনো মুশরিক। তাদের অন্যতম হলেন, ফাতেমা বিনতুল খাত্তাব- তিনি তার ভাই উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর ইসলাম গ্রহণের পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেন। শুধু তাই নয়, বরং তার ইসলাম উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর ইসলাম গ্রহণের কারণ হয়।
অনুরূপভাবে উম্মে কুলসুম বিনতে উকবা ইবন আবি মু‘য়াইত তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিল, কিন্তু তার পরিবারের অন্যরা সবাই ছিল মুশরিক। অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা একজন মুসলিমের জন্য আহলে কিতাবী কোনো নারীকে বিবাহ হালাল করেছেন। কিতাবী কোনো নারী কোনো মুসলিমের সাথে বিবাহ হলে তাকে তার দীন ধর্ম ও বিশ্বাস পরিবর্তন করতে বাধ্য করে না ইসলাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ٱلۡيَوۡمَ أُحِلَّ لَكُمُ ٱلطَّيِّبَٰتُۖ وَطَعَامُ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ حِلّٞ لَّكُمۡ وَطَعَامُكُمۡ حِلّٞ لَّهُمۡۖ وَٱلۡمُحۡصَنَٰتُ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ وَٱلۡمُحۡصَنَٰتُ مِنَ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ مِن قَبۡلِكُمۡ إِذَآ ءَاتَيۡتُمُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ مُحۡصِنِينَ غَيۡرَ مُسَٰفِحِينَ وَلَا مُتَّخِذِيٓ أَخۡدَانٖۗ وَمَن يَكۡفُرۡ بِٱلۡإِيمَٰنِ فَقَدۡ حَبِطَ عَمَلُهُۥ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٥﴾ [ المائدة : ٥ ]
“আজ তোমাদের জন্য বৈধ করা হলো সব ভালো বস্তু এবং যাদেরকে কিতাব প্রদান করা হয়েছে, তাদের খাবার তোমাদের জন্য বৈধ এবং তোমাদের খাবার তাদের জন্য বৈধ। আর মুমিন সচ্চরিত্রা নারী এবং তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে, তাদের সচ্চরিত্রা নারীদের সাথে তোমাদের বিবাহ বৈধ। যখন তোমরা তাদেরকে মোহর দেবে, বিবাহকারী হিসেবে, প্রকাশ্য ব্যভিচারকারী বা গোপন-পত্নী গ্রহণকারী হিসেবে নয়। আর যে ঈমানের সাথে কুফরি করবে, অবশ্যই তার আমল বরবাদ হবে এবং সে আখিরাতে ক্ষতি-গ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৫]
৩.ইসলাম একজন মহিলার জীবনের শুরু থেকে নিয়ে বৃদ্ধা হওয়া পর্যন্ত, সব অধিকার সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছে। ইসলাম একজন নারীকে বাল্যকালে কন্যা হিসেবে, প্রাপ্তবয়স্কা হলে স্ত্রী হিসেবে, ও বৃদ্ধ বয়সে মা হিসেবে বিভিন্নভাবে মর্যাদা দিয়েছে। কারণ, ইসলাম অধিকারের দিক দিয়ে ছেলে ও মেয়ে হওয়ার দিক দিয়ে কোনো প্রকার পার্থক্য করে নি। একজন ছেলের জন্য যে অধিকার একজন মেয়ের জন্যও ঠিক একই অধিকার। উভয়ের মাঝে কোনো প্রকার বৈষম্য ও ব্যবধান করা হয়নি। আল্লাহ তা‘আলা পিতাদের উপর তাদের সন্তানদের লালন পালন ভরণ পোষণ শিক্ষা দীক্ষা ও আদব আখলাক শিখানোকে কর্তব্য করে দিয়েছেন।
বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইসলাম মেয়েদেরকে ছেলেদের তুলনায় আরও অধিক মর্যাদা দিয়েছেন। কারণ, যে ব্যক্তি তার কন্যা সন্তানদের লালন-পালন করে এবং তাকে আদব আখলাক শিক্ষা দেয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من كان له ثلاث بنات فصبر عليهن وأطعمهن وسقاهن وكساهن من جدته كن له حجابا من النار يوم القيامة»
“যার তিনটি কন্যা সন্তান হবে এবং সে তাদের লালন-পালনে ধৈর্য ধারণ করবে, তাদের খাদ্য, পানীয় ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করবে। তারা কিয়ামতের দিন তার জন্য জাহান্নামের আগুনের প্রতিবন্ধক হবে।” [ইবন মাজাহ, কিতাবুল আদব। আল্লামা আলবানী হাদীসটি সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।]
ইসলাম তাদেরকে তাদের জীবন সঙ্গীকে বেচে নেওয়ার অধিকার দিয়েছে, যাতে তারা তাদের পছন্দনীয় স্বামী গ্রহণ করতে পারে এবং যদি স্বামী তার অপছন্দ হয়, তাকে সে প্রত্যাখ্যানও করতে পারে। এ ক্ষেত্রে তাদের কোনো প্রকার বাধ্য করার অবকাশ নাই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«الأيم أحق بنفسها من وليها . والبكر تستأذن في نفسها ... وإذنها صماتها ؟ قال : نعم» .
“একজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারী তার নিজের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে তার অভিভাবকের তুলনায় অধিক হকদার। একজন কুমারী নারীর নিকট সরাসরি অনুমতি চাওয়া হবে। জিজ্ঞাসা করা হলো যে, তার চুপ থাকা কি অনুমতি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। [সহীহ মুসলিম (কিতাবুন নিকাহ), হাদীস নং ২৫৪৫।]
ইসলাম তাদের সম্মান দিয়েছেন তাদের জন্য ঔসব হক্বকে ফরয করার মাধ্যমে যা তাদের কর্তব্য রাখা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَهُنَّ مِثۡلُ ٱلَّذِي عَلَيۡهِنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِۚ وَلِلرِّجَالِ عَلَيۡهِنَّ دَرَجَةٞۗ وَٱللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ﴾ [ البقرة : ٢٢٨ ]
“আর নারীদের রয়েছে বিধি মোতাবেক অধিকার। যেমন আছে তাদের ওপর (পুরুষদের) অধিকার। আর পুরুষদের রয়েছে তাদের উপর মর্যাদা এবং আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২২৮]
আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য মাহরের বিধান চালু করেছেন এবং স্বামীর ওপর তার সামর্থ্য অনুযায়ী স্ত্রীদের ভরণ-পোষণকে ফরয করেছেন এবং স্বামীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, যদি নারীদের থেকে এমন কোনো আচরণ প্রকাশ পায়, যা তোমাদের কষ্টের কারণ হয়, তাহলে তোমাদের অবশ্যই ধৈর্য ধারণ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا يَحِلُّ لَكُمۡ أَن تَرِثُواْ ٱلنِّسَآءَ كَرۡهٗاۖ وَلَا تَعۡضُلُوهُنَّ لِتَذۡهَبُواْ بِبَعۡضِ مَآ ءَاتَيۡتُمُوهُنَّ إِلَّآ أَن يَأۡتِينَ بِفَٰحِشَةٖ مُّبَيِّنَةٖۚ وَعَاشِرُوهُنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِۚ فَإِن كَرِهۡتُمُوهُنَّ فَعَسَىٰٓ أَن تَكۡرَهُواْ شَيۡٔٗا وَيَجۡعَلَ ٱللَّهُ فِيهِ خَيۡرٗا كَثِيرٗا ١٩﴾ [ النساء : ١٩ ]
“হে মুমিনগণ, তোমাদের জন্য হালাল নয় যে, তোমরা জোর করে নারীদের ওয়ারিশ হবে। আর তোমরা তাদেরকে আবদ্ধ করে রেখো না, তাদেরকে যা দিয়েছ তা থেকে তোমরা কিছু নিয়ে নেওয়ার জন্য, তবে যদি তারা প্রকাশ্য অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়। আর তোমরা তাদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস কর। আর যদি তোমরা তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে এমনও হতে পারে যে, তোমরা কোনো কিছুকে অপছন্দ করছ আর আল্লাহ তাতে অনেক কল্যাণ রাখবেন।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৯]
এ ছাড়াও আল্লাহ তা‘আলার অপার অনুগ্রহ হলো, আল্লাহ তা‘আলা স্বামীর প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন, তারা যেন তাদের স্ত্রীদের সাথে ভালো ব্যবহার করে এবং তাদেরকে কোনো প্রকার কষ্ট না দেয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«استوصوا بالنساء خيراً»
“তোমরা তোমাদের নারীদের প্রতি কল্যাণকামী হও। তাদের সাথে সৎ আচরণ কর।” [সহীগহ মুসলিম, কিতাবুন নিকাহ।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
«اللهم إني أُحرج حق الضعيفين : اليتيم، والمرأة»
“হে আল্লাহ, আমি দু’ ধরণের দুর্বল শ্রেণির লোকের অধিকারের বিষয়ে কঠোরতা আরোপ করছি: ইয়াতীম ও নারী।” [ইবন মাজাহ, কিতাবুল আদব। আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্বামীদের ওপর স্ত্রীদের অধিকার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি বলেন,
«أن يطعمها إذا طعم ، ويكسوها إذا اكتسى ،ولا يضرب الوجه، ولا يقبح ولا يهجر إلا في البيت»
“তোমাদের কেউ যখন খেতে পায় তখন তার স্ত্রীকে খেতে দেবে, আর যখন সে পরিধান করতে সক্ষম হয়, তখন স্ত্রীকেও পরিধান করাবে, আর তার তাকে চেহারায় প্রহার করবে না, বিকৃতি করবে না বা তার কাজ ও কথাকে কুৎসিত বলে গণ্য করবে না এবং ঘর ছাড়া অন্য কোথাও একাকী ছাড়বে না।” [ইবনে মাজাহ কিতাবুন নিকাহ। আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
«خياركم خياركم لنسائهم»
তোমাদের মধ্যে তারাই উত্তম যারা তাদের স্ত্রীদের নিকট উত্তম।” [আবু দাউদ, কিতাবুন নিকাহ। আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
«لقد طاف بآل محمد نساء كثير كلهن تشكو زوجها من الضرب !! وأيم الله لا تجدون أولئك خياركم»
“রাসূলের পরিবারে অনেকগুলো নারী একত্র হলো, তারা সবাই তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে মারার অভিযোগ করল, আর আল্লাহর শপথ! তোমরা তাদেরকে তোমাদের মধ্যকার উত্তম লোক হিসেবে পাবে না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
«من كانت له امرأتان فمال إلى إحداهما جاء يوم القيامة وشقه مائل»
“যার স্ত্রী দুজন থাকে এবং লোকটি তাদের একজনের দিকে অধিক ঝুঁকে পড়ে কিয়ামতের দিন সে আল্লাহর নিকট উপস্থিত হবে এক পাশ ঝুঁকে থাকা অবস্থায়।” [আবু দাউদ, কিতাবুন নিকাহ। আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন]
একজন নারী যখন মা হয়, তখন সে ঘরের একজন অভিভাবক ও সরদার হয়ে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতকে তাদের পায়ের তলে রেখেছেন এবং সন্তানদের দায়িত্ব দিয়েছেন, তারা যেন তাদের মাতার সাথে ভালো ব্যবহার করে, তাদের প্রতি অনুগ্রহ করে, তাদের আদেশ নিষেধের অনুকরণ করে, তাদের জন্য দো‘আ করে এবং প্রয়োজনের সময় তাদের জন্য ব্যয় করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَوَصَّيۡنَا ٱلۡإِنسَٰنَ بِوَٰلِدَيۡهِ إِحۡسَٰنًاۖ حَمَلَتۡهُ أُمُّهُۥ كُرۡهٗا وَوَضَعَتۡهُ كُرۡهٗاۖ وَحَمۡلُهُۥ وَفِصَٰلُهُۥ ثَلَٰثُونَ شَهۡرًاۚ حَتَّىٰٓ إِذَا بَلَغَ أَشُدَّهُۥ وَبَلَغَ أَرۡبَعِينَ سَنَةٗ قَالَ رَبِّ أَوۡزِعۡنِيٓ أَنۡ أَشۡكُرَ نِعۡمَتَكَ ٱلَّتِيٓ أَنۡعَمۡتَ عَلَيَّ وَعَلَىٰ وَٰلِدَيَّ وَأَنۡ أَعۡمَلَ صَٰلِحٗا تَرۡضَىٰهُ وَأَصۡلِحۡ لِي فِي ذُرِّيَّتِيٓۖ إِنِّي تُبۡتُ إِلَيۡكَ وَإِنِّي مِنَ ٱلۡمُسۡلِمِينَ ١٥﴾ [ الاحقاف : ١٥ ]
“আর আমি মানুষকে তার মাতা-পিতার প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে অতিকষ্টে গর্ভে ধারণ করেছে এবং অতি কষ্টে তাকে প্রসব করেছে। তার গর্ভধারণ ও দুধ পান ছাড়ানোর সময় লাগে ত্রিশ মাস। অবশেষে যখন সে তার শক্তির পূর্ণতায় পৌঁছে এবং চল্লিশ বছরে উপনীত হয়, তখন সে বলে, হে আমার রব, আমাকে সামর্থ্য দাও, তুমি আমার উপর ও আমার মাতা-পিতার ওপর যে নি‘আমত দান করেছ, তোমার সে নিয়ামতের যেন আমি শোকর আদায় করতে পারি এবং আমি যেন সৎকর্ম করতে পারি, যা তুমি পছন্দ কর। আর আমার জন্য তুমি আমার বংশধরদের মধ্যে সংশোধন করে দাও। নিশ্চয় আমি তোমার কাছে তাওবা করলাম এবং নিশ্চয় আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।” [সূরা আল-আহকাফ, আয়াত: ১৫]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«جاء رجل إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال : يا رسول الله، من أحق الناس بحسن صحابتي ؟ قال : [ أمك ] . قال : ثم من ؟ قال : [ ثم أمك ] . قال : ثم من ؟ قال : [ ثم أمك ] . قال : ثم من ؟ قال : [ ثم أبوك ]»..
“এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার সুন্দর ব্যবহার পাওয়ার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কে? তিনি বলেন, তোমার মা, বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তারপর তোমার মা, লোকটি আবারো জিজ্ঞাসা করলেন তারপর কে? বললেন, তাপরও তোমার মা, তারপর সে আবার জিজ্ঞাসা করলেন, তারপর কে? তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারপর তোমার পিতা।” [সহীহ বুখারী, কিতাবুল আদব]
৪.ইসলাম নারীদের অর্থনৈতিক ও আইনি অধিকার নিশ্চিত করেছে।
ইসলাম নারীদের জন্য স্বয়ং-সম্পন্ন অর্থনৈতিক লেনদেন করার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছেন। একজন হালাল পন্থায় অর্থ সম্পদ উপার্জন করতে চাইলে ইসলাম তাতে কোনো প্রকার বাধা সৃষ্টি করে নি। বেচা কেনা হেবা দান করা ব্যবসা-বাণিজ্য, রেহান বন্দক ভাড়া দেওয়া ইত্যাদি কাজগুলো ইচ্ছা করলে একজন নারী পর্দার মধ্যে থেকে অনায়াসে করতে পারে। তা সত্ত্বেও ইসলাম তার ওপর তার নিজের কিংবা ছেলে সন্তানদের ভরণ পোষণের কোনো দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়নি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿لِّلرِّجَالِ نَصِيبٞ مِّمَّا ٱكۡتَسَبُواْۖ وَلِلنِّسَآءِ نَصِيبٞ مِّمَّا ٱكۡتَسَبۡنَۚ ............﴾ [ النساء : ٣٢ ]
“... পুরুষদের জন্য রয়েছে অংশ, তারা যা উপার্জন করে তা থেকে এবং নারীদের জন্য রয়েছে অংশ, যা তারা উপার্জন করে তা থেকে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩২]
ইসলাম নারীদের জন্য পরিপূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে যাতে তারা তাদের নিজেদের পক্ষে আইনি অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে। বিচারাধীন বিষয়ে বিচারক নারীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করতে পারে। সুতরাং নারীরাও কোনো বিচারাধীন বিষয়ে পুরুষের মতো সাক্ষী হতে পারে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا تَتَمَنَّوۡاْ مَا فَضَّلَ ٱللَّهُ بِهِۦ بَعۡضَكُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖۚ لِّلرِّجَالِ نَصِيبٞ مِّمَّا ٱكۡتَسَبُواْۖ وَلِلنِّسَآءِ نَصِيبٞ مِّمَّا ٱكۡتَسَبۡنَۚ وَسَۡٔلُواْ ٱللَّهَ مِن فَضۡلِهِۦٓۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِكُلِّ شَيۡءٍ عَلِيمٗا ٣٢﴾ [ النساء : ٣٢ ] “আর তোমরা আকাঙ্ক্ষা করো না সে সবের, যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদের এক জনকে অন্য জনের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। পুরুষদের জন্য রয়েছে অংশ, তারা যা উপার্জন করে তা থেকে এবং নারীদের জন্য রয়েছে অংশ, যা তারা উপার্জন করে তা থেকে। আর তোমরা আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ চাও। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩২]
তিনি আরও বলেন,
﴿....... وَٱسۡتَشۡهِدُواْ شَهِيدَيۡنِ مِن رِّجَالِكُمۡۖ فَإِن لَّمۡ يَكُونَا رَجُلَيۡنِ فَرَجُلٞ وَٱمۡرَأَتَانِ مِمَّن تَرۡضَوۡنَ مِنَ ٱلشُّهَدَآءِ أَن تَضِلَّ إِحۡدَىٰهُمَا فَتُذَكِّرَ إِحۡدَىٰهُمَا ٱلۡأُخۡرَىٰۚ وَلَا يَأۡبَ ٱلشُّهَدَآءُ إِذَا مَا دُعُواْۚ .......﴾ [ البقرة : ٢٨٢ ]
“...আর তোমরা তোমাদের পুরুষদের মধ্য হতে দুইজন সাক্ষী রাখ। অতঃপর যদি তারা উভয়ে পুরুষ না হয়, তাহলে একজন পুরুষ ও দু’জন নারী- যাদেরকে তোমরা সাক্ষী হিসেবে পছন্দ কর। যাতে তাদের (নারীদের) একজন ভুল করলে অপরজন স্মরণ করিয়ে দেয়। সাক্ষীরা যেন অস্বীকার না করে, যখন তাদেরকে ডাকা হয়। আর তা ছোট হোক কিংবা বড় তা নির্ধারিত সময় পর্যন্ত লিপিবদ্ধ করতে তোমরা বিরক্ত হয়তো না”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৮২]
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা নারীদের জন্য উত্তরাধিকারী সম্পত্তিতে তাদের অধিকার নিশ্চিত করছে। অথচ ইসলামের পূর্বে নারীদের তাদের পৈত্তিক সম্পত্তি ও মিরাস হতে বঞ্চিত করা হত। তাদের কোনো সম্পত্তি দেওয়া হত না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿لِّلرِّجَالِ نَصِيبٞ مِّمَّا تَرَكَ ٱلۡوَٰلِدَانِ وَٱلۡأَقۡرَبُونَ وَلِلنِّسَآءِ نَصِيبٞ مِّمَّا تَرَكَ ٱلۡوَٰلِدَانِ وَٱلۡأَقۡرَبُونَ مِمَّا قَلَّ مِنۡهُ أَوۡ كَثُرَۚ نَصِيبٗا مَّفۡرُوضٗا ٧﴾ [ النساء : ٧ ]
“পুরুষদের জন্য মাতা পিতা ও নিকটাত্মীয়রা যা রেখে গিয়েছে তা থেকে একটি অংশ রয়েছে। আর নারীদের জন্য রয়েছে মাতা পিতা ও নিকটাত্মীয়রা যা রেখে গিয়েছে তা থেকে একটি অংশ (তা থেকে কম হোক বা বেশি হোক) নির্ধারিত হারে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৭]
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
﴿يُوصِيكُمُ ٱللَّهُ فِيٓ أَوۡلَٰدِكُمۡۖ لِلذَّكَرِ مِثۡلُ حَظِّ ٱلۡأُنثَيَيۡنِۚ فَإِن كُنَّ نِسَآءٗ فَوۡقَ ٱثۡنَتَيۡنِ فَلَهُنَّ ثُلُثَا مَا تَرَكَۖ وَإِن كَانَتۡ وَٰحِدَةٗ فَلَهَا ٱلنِّصۡفُۚ وَلِأَبَوَيۡهِ لِكُلِّ وَٰحِدٖ مِّنۡهُمَا ٱلسُّدُسُ مِمَّا تَرَكَ إِن كَانَ لَهُۥ وَلَدٞۚ فَإِن لَّمۡ يَكُن لَّهُۥ وَلَدٞ وَوَرِثَهُۥٓ أَبَوَاهُ فَلِأُمِّهِ ٱلثُّلُثُۚ فَإِن كَانَ لَهُۥٓ إِخۡوَةٞ فَلِأُمِّهِ ٱلسُّدُسُۚ مِنۢ بَعۡدِ وَصِيَّةٖ يُوصِي بِهَآ أَوۡ دَيۡنٍۗ ءَابَآؤُكُمۡ وَأَبۡنَآؤُكُمۡ لَا تَدۡرُونَ أَيُّهُمۡ أَقۡرَبُ لَكُمۡ نَفۡعٗاۚ فَرِيضَةٗ مِّنَ ٱللَّهِۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمٗا ١١﴾ [ النساء : ١١ ]
“আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে নির্দেশ দিচ্ছেন, এক ছেলের জন্য দুই মেয়ের অংশের সমপরিমাণ। তবে যদি তারা দুইয়ের অধিক মেয়ে হয়, তাহলে তাদের জন্য হবে, যা সে রেখে গেছে তার তিন ভাগের দুই ভাগ, আর যদি একজন মেয়ে হয় তখন তার জন্য অর্ধেক। আর তার মাতা পিতা উভয়ের প্রত্যেকের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ সে যা রেখে গেছে তা থেকে, যদি তার সন্তান থাকে। আর যদি তার সন্তান না থাকে এবং তার ওয়ারিশ হয় তার মাতা-পিতা তখন তার মাতার জন্য তিন ভাগের এক ভাগ। আর যদি তার ভাই-বোন থাকে তবে তার মায়ের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ। অসিয়ত পালনের পর, যা দ্বারা সে অসিয়ত করেছে অথবা ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের মাতা পিতা ও তোমাদের সন্তান-সন্ততিদের মধ্য থেকে তোমাদের উপকারে কে অধিক নিকটবর্তী তা তোমরা জান না। আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১]
আল্লাহ এ আয়াতে নারীদের জন্য পুরুষের অর্ধেক সম্পদ দেওয়ার কথা বলেছেন, তার কারণ হলো, একজন পুরুষের দায়িত্ব হলো, সে তার পরিবারের জন্য খরচ করবে, তাদের যাবতীয় বিষয়ে দেখা শোনা করবে এবং তাদের দায়-দায়িত্ব তাকেই বহন করতে হবে। এ কারণেই তাকে নারীদের ওপর প্রভাব বিস্তার ও শক্তিশালী বলা হয়েছে। একজন স্ত্রী সে তার স্বামীর থেকে মোহরানা পেয়ে থাকে; যদি সে তাকে সহবাসের পূর্বে তালাক দেয়, তাহলে অর্ধেক মাহর আর যদি পরে তালাক দেয়, তাহলে পূর্ণ মাহর পাবে। সুতরাং একজন নারী সে একজন পুরুষের অর্ধেক সম্পদ পেলেও কিন্তু দায়িত্ব কম থাকায় তার ব্যয়ের খাত মোটেই নাই এবং সে স্ত্রী হিসেবে মাহর ও মা হিসেবে পিতার চেয়ে বেশি পাওয়াতে তার হকের মধ্যে কোনো প্রকার কমতি করা হয় নি। তাদের মোহরের বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَءَاتُواْ ٱلنِّسَآءَ صَدُقَٰتِهِنَّ نِحۡلَةٗۚ فَإِن طِبۡنَ لَكُمۡ عَن شَيۡءٖ مِّنۡهُ نَفۡسٗا فَكُلُوهُ هَنِيٓٔٗا مَّرِيٓٔٗا ٤﴾ [ النساء : ٤ ]
“আর তোমরা নারীদেরকে সন্তুষ্টচিত্তে তাদের মোহর দিয়ে দাও, অতঃপর যদি তারা তোমাদের জন্য তা থেকে খুশি হয়ে কিছু ছাড় দেয়, তাহলে তোমরা তা সানন্দে তৃপ্তিসহকারে খাও।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪]
অনুরূপভাবে জরুরি হলো, নারীদের ঈমান, আক্বীদা, আমল-আখলাক, শিক্ষা-দীক্ষা, শরীর চর্চা ইত্যাদি বিষয়গুলোর উন্নতির জন্য জোর চেষ্টা চালানো। যাতে তারা যুগের চাহিদা অনুযায়ী সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে এবং লাভ করতে পারে উন্নত জীবন। তারাও যেন বর্তমান সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে হতে পারে যোগ্য থেকে যোগ্যতর। আর তা যেন হয়, সুনির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি ও বাস্তবসম্মত পরিকল্পনার আলোকে, যা মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে অন্তর্ভুক্ত করবে এবং যাবতীয় সমস্যার বৈজ্ঞানিক সমাধান দেবে। আর তা যেন হয় ইসলামী চিন্তাবিদ ও সমাজ বিজ্ঞানীদের সমন্বিত প্রচেষ্টার ফসল।
২. ইসলাম নারীদের বিশ্বাস ও চিন্তার স্বাধীনতা দিয়েছেন। নারীদের একান্ত কোনো বিষয় ছাড়া ইসলাম নারী ও পুরুষের মধ্যে কোনো ব্যবধান ও বৈষম্য তৈরি করেনি, বরং ইসলাম নারীদেরকে পুরুষের মতই সমানভাবে সম্বোধন করা হয়েছে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনের ৯১ টি স্থানে হে ঈমানদারগণ বলে সম্বোধন করেছেন। অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা হে মানবজাতি বলে ১৮ টি স্থানে সম্বোধন করেছে। এ সব সম্বোধনে আল্লাহ তা‘আলা নারী পুরুষ সবাইকে সমানভাবেই অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এ ছাড়াও কুরআন ও হাদিসে সমগ্র মানবজাতিকে আল্লাহর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করা এবং আল্লাহর মাখলুকের মধ্যে চিন্তার মাধ্যমে আল্লাহর পরিচয় জানার আহ্বান জানানো হয়েছে। তাতে নারী ও পুরুষের মধ্যে কোনো ব্যবধান করা হয় নি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قُلِ ٱنظُرُواْ مَاذَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۚ وَمَا تُغۡنِي ٱلۡأٓيَٰتُ وَٱلنُّذُرُ عَن قَوۡمٖ لَّا يُؤۡمِنُونَ ١٠١﴾ [ يونس : ١٠١ ]
“বল, আসমানসমূহ ও জমিনে কী আছে তা তাকিয়ে দেখ। আর নিদর্শনসমূহ ও সতর্ককারীগণ এমন কওমের কাজে আসে না, যারা ঈমান আনে না।” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ১০১]
অনুরূপভাবে নারীরা তাদের ঈমান ও বিশ্বাসের ক্ষেত্রে পুরুষদের মতোই স্বাধীন। তারা তাদের ইচ্ছা মতোই ঈমান আনবে বা বিরত থাকবে। তাদের কেউ কোনো দীন কবুল করার ক্ষেত্রে বাধ্য করতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿لَآ إِكۡرَاهَ فِي ٱلدِّينِ .........﴾ [ البقرة : ٢٥٦ ]
“দীন গ্রহণের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই। নিশ্চয় হিদায়াত স্পষ্ট হয়েছে ভ্রষ্টতা থেকে।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৫৬]
আব্দুর রহমান আস-সা‘দী রহ. বলেন, ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন বিধান। মানব স্বভাবের সাথে তার সখ্যতা ও সম্পর্ক গভীর হওয়াতে ইসলাম গ্রহণের জন্য কাউকে বাধ্য করার প্রয়োজন পড়ে না। বাধ্য করার প্রয়োজন তখন হয়, যখন মানবাত্মা তা হতে পলায়ন করে, সত্য ও বাস্তবতা বিবর্জিত হয় অথবা যখন দলীল প্রমাণ ও তার নিদর্শনসমূহ অস্পষ্ট থাকে। অন্যথায় কারও নিকট এ দীনের দাওয়াত পৌঁছার পরও সে তা কবুল করবে না তা হতেই পারে না। যদি কেউ করেই থাকে তবে তার হটকারিতা ও অহমিকার কারণেই হয়ে থাকে। কারণ, ইসলামের আগমনের ফলে সত্য স্পষ্ট হয়ে গেছে আর অন্ধকার দূর হয়ে গেছে। সুতরাং, কারো জন্য এদিক সেদিক যাওয়ার অবকাশ চিরতরে নিঃশেষ হয়ে গেছে। এখন যদি কেউ ইসলামকে প্রত্যাখ্যান করে তার প্রত্যাখ্যান করাটা অগ্রহণযোগ্য। তাকেই প্রত্যাখ্যান করা হবে।
এ কারণেই দেখা যেত জাহেলিয়্যাতের যুগে নারীরাও স্বাধীনভাবে ইসলাম গ্রহণ করত অথচ তাদের পরিবারের অন্য লোকেরা সবাই তখনো মুশরিক। তাদের অন্যতম হলেন, ফাতেমা বিনতুল খাত্তাব- তিনি তার ভাই উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর ইসলাম গ্রহণের পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেন। শুধু তাই নয়, বরং তার ইসলাম উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর ইসলাম গ্রহণের কারণ হয়।
অনুরূপভাবে উম্মে কুলসুম বিনতে উকবা ইবন আবি মু‘য়াইত তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিল, কিন্তু তার পরিবারের অন্যরা সবাই ছিল মুশরিক। অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা একজন মুসলিমের জন্য আহলে কিতাবী কোনো নারীকে বিবাহ হালাল করেছেন। কিতাবী কোনো নারী কোনো মুসলিমের সাথে বিবাহ হলে তাকে তার দীন ধর্ম ও বিশ্বাস পরিবর্তন করতে বাধ্য করে না ইসলাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ٱلۡيَوۡمَ أُحِلَّ لَكُمُ ٱلطَّيِّبَٰتُۖ وَطَعَامُ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ حِلّٞ لَّكُمۡ وَطَعَامُكُمۡ حِلّٞ لَّهُمۡۖ وَٱلۡمُحۡصَنَٰتُ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ وَٱلۡمُحۡصَنَٰتُ مِنَ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ مِن قَبۡلِكُمۡ إِذَآ ءَاتَيۡتُمُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ مُحۡصِنِينَ غَيۡرَ مُسَٰفِحِينَ وَلَا مُتَّخِذِيٓ أَخۡدَانٖۗ وَمَن يَكۡفُرۡ بِٱلۡإِيمَٰنِ فَقَدۡ حَبِطَ عَمَلُهُۥ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٥﴾ [ المائدة : ٥ ]
“আজ তোমাদের জন্য বৈধ করা হলো সব ভালো বস্তু এবং যাদেরকে কিতাব প্রদান করা হয়েছে, তাদের খাবার তোমাদের জন্য বৈধ এবং তোমাদের খাবার তাদের জন্য বৈধ। আর মুমিন সচ্চরিত্রা নারী এবং তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে, তাদের সচ্চরিত্রা নারীদের সাথে তোমাদের বিবাহ বৈধ। যখন তোমরা তাদেরকে মোহর দেবে, বিবাহকারী হিসেবে, প্রকাশ্য ব্যভিচারকারী বা গোপন-পত্নী গ্রহণকারী হিসেবে নয়। আর যে ঈমানের সাথে কুফরি করবে, অবশ্যই তার আমল বরবাদ হবে এবং সে আখিরাতে ক্ষতি-গ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৫]
৩.ইসলাম একজন মহিলার জীবনের শুরু থেকে নিয়ে বৃদ্ধা হওয়া পর্যন্ত, সব অধিকার সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছে। ইসলাম একজন নারীকে বাল্যকালে কন্যা হিসেবে, প্রাপ্তবয়স্কা হলে স্ত্রী হিসেবে, ও বৃদ্ধ বয়সে মা হিসেবে বিভিন্নভাবে মর্যাদা দিয়েছে। কারণ, ইসলাম অধিকারের দিক দিয়ে ছেলে ও মেয়ে হওয়ার দিক দিয়ে কোনো প্রকার পার্থক্য করে নি। একজন ছেলের জন্য যে অধিকার একজন মেয়ের জন্যও ঠিক একই অধিকার। উভয়ের মাঝে কোনো প্রকার বৈষম্য ও ব্যবধান করা হয়নি। আল্লাহ তা‘আলা পিতাদের উপর তাদের সন্তানদের লালন পালন ভরণ পোষণ শিক্ষা দীক্ষা ও আদব আখলাক শিখানোকে কর্তব্য করে দিয়েছেন।
বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইসলাম মেয়েদেরকে ছেলেদের তুলনায় আরও অধিক মর্যাদা দিয়েছেন। কারণ, যে ব্যক্তি তার কন্যা সন্তানদের লালন-পালন করে এবং তাকে আদব আখলাক শিক্ষা দেয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من كان له ثلاث بنات فصبر عليهن وأطعمهن وسقاهن وكساهن من جدته كن له حجابا من النار يوم القيامة»
“যার তিনটি কন্যা সন্তান হবে এবং সে তাদের লালন-পালনে ধৈর্য ধারণ করবে, তাদের খাদ্য, পানীয় ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করবে। তারা কিয়ামতের দিন তার জন্য জাহান্নামের আগুনের প্রতিবন্ধক হবে।” [ইবন মাজাহ, কিতাবুল আদব। আল্লামা আলবানী হাদীসটি সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।]
ইসলাম তাদেরকে তাদের জীবন সঙ্গীকে বেচে নেওয়ার অধিকার দিয়েছে, যাতে তারা তাদের পছন্দনীয় স্বামী গ্রহণ করতে পারে এবং যদি স্বামী তার অপছন্দ হয়, তাকে সে প্রত্যাখ্যানও করতে পারে। এ ক্ষেত্রে তাদের কোনো প্রকার বাধ্য করার অবকাশ নাই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«الأيم أحق بنفسها من وليها . والبكر تستأذن في نفسها ... وإذنها صماتها ؟ قال : نعم» .
“একজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারী তার নিজের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে তার অভিভাবকের তুলনায় অধিক হকদার। একজন কুমারী নারীর নিকট সরাসরি অনুমতি চাওয়া হবে। জিজ্ঞাসা করা হলো যে, তার চুপ থাকা কি অনুমতি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। [সহীহ মুসলিম (কিতাবুন নিকাহ), হাদীস নং ২৫৪৫।]
ইসলাম তাদের সম্মান দিয়েছেন তাদের জন্য ঔসব হক্বকে ফরয করার মাধ্যমে যা তাদের কর্তব্য রাখা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَهُنَّ مِثۡلُ ٱلَّذِي عَلَيۡهِنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِۚ وَلِلرِّجَالِ عَلَيۡهِنَّ دَرَجَةٞۗ وَٱللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ﴾ [ البقرة : ٢٢٨ ]
“আর নারীদের রয়েছে বিধি মোতাবেক অধিকার। যেমন আছে তাদের ওপর (পুরুষদের) অধিকার। আর পুরুষদের রয়েছে তাদের উপর মর্যাদা এবং আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২২৮]
আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য মাহরের বিধান চালু করেছেন এবং স্বামীর ওপর তার সামর্থ্য অনুযায়ী স্ত্রীদের ভরণ-পোষণকে ফরয করেছেন এবং স্বামীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, যদি নারীদের থেকে এমন কোনো আচরণ প্রকাশ পায়, যা তোমাদের কষ্টের কারণ হয়, তাহলে তোমাদের অবশ্যই ধৈর্য ধারণ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا يَحِلُّ لَكُمۡ أَن تَرِثُواْ ٱلنِّسَآءَ كَرۡهٗاۖ وَلَا تَعۡضُلُوهُنَّ لِتَذۡهَبُواْ بِبَعۡضِ مَآ ءَاتَيۡتُمُوهُنَّ إِلَّآ أَن يَأۡتِينَ بِفَٰحِشَةٖ مُّبَيِّنَةٖۚ وَعَاشِرُوهُنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِۚ فَإِن كَرِهۡتُمُوهُنَّ فَعَسَىٰٓ أَن تَكۡرَهُواْ شَيۡٔٗا وَيَجۡعَلَ ٱللَّهُ فِيهِ خَيۡرٗا كَثِيرٗا ١٩﴾ [ النساء : ١٩ ]
“হে মুমিনগণ, তোমাদের জন্য হালাল নয় যে, তোমরা জোর করে নারীদের ওয়ারিশ হবে। আর তোমরা তাদেরকে আবদ্ধ করে রেখো না, তাদেরকে যা দিয়েছ তা থেকে তোমরা কিছু নিয়ে নেওয়ার জন্য, তবে যদি তারা প্রকাশ্য অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়। আর তোমরা তাদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস কর। আর যদি তোমরা তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে এমনও হতে পারে যে, তোমরা কোনো কিছুকে অপছন্দ করছ আর আল্লাহ তাতে অনেক কল্যাণ রাখবেন।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৯]
এ ছাড়াও আল্লাহ তা‘আলার অপার অনুগ্রহ হলো, আল্লাহ তা‘আলা স্বামীর প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন, তারা যেন তাদের স্ত্রীদের সাথে ভালো ব্যবহার করে এবং তাদেরকে কোনো প্রকার কষ্ট না দেয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«استوصوا بالنساء خيراً»
“তোমরা তোমাদের নারীদের প্রতি কল্যাণকামী হও। তাদের সাথে সৎ আচরণ কর।” [সহীগহ মুসলিম, কিতাবুন নিকাহ।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
«اللهم إني أُحرج حق الضعيفين : اليتيم، والمرأة»
“হে আল্লাহ, আমি দু’ ধরণের দুর্বল শ্রেণির লোকের অধিকারের বিষয়ে কঠোরতা আরোপ করছি: ইয়াতীম ও নারী।” [ইবন মাজাহ, কিতাবুল আদব। আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্বামীদের ওপর স্ত্রীদের অধিকার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি বলেন,
«أن يطعمها إذا طعم ، ويكسوها إذا اكتسى ،ولا يضرب الوجه، ولا يقبح ولا يهجر إلا في البيت»
“তোমাদের কেউ যখন খেতে পায় তখন তার স্ত্রীকে খেতে দেবে, আর যখন সে পরিধান করতে সক্ষম হয়, তখন স্ত্রীকেও পরিধান করাবে, আর তার তাকে চেহারায় প্রহার করবে না, বিকৃতি করবে না বা তার কাজ ও কথাকে কুৎসিত বলে গণ্য করবে না এবং ঘর ছাড়া অন্য কোথাও একাকী ছাড়বে না।” [ইবনে মাজাহ কিতাবুন নিকাহ। আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
«خياركم خياركم لنسائهم»
তোমাদের মধ্যে তারাই উত্তম যারা তাদের স্ত্রীদের নিকট উত্তম।” [আবু দাউদ, কিতাবুন নিকাহ। আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
«لقد طاف بآل محمد نساء كثير كلهن تشكو زوجها من الضرب !! وأيم الله لا تجدون أولئك خياركم»
“রাসূলের পরিবারে অনেকগুলো নারী একত্র হলো, তারা সবাই তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে মারার অভিযোগ করল, আর আল্লাহর শপথ! তোমরা তাদেরকে তোমাদের মধ্যকার উত্তম লোক হিসেবে পাবে না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
«من كانت له امرأتان فمال إلى إحداهما جاء يوم القيامة وشقه مائل»
“যার স্ত্রী দুজন থাকে এবং লোকটি তাদের একজনের দিকে অধিক ঝুঁকে পড়ে কিয়ামতের দিন সে আল্লাহর নিকট উপস্থিত হবে এক পাশ ঝুঁকে থাকা অবস্থায়।” [আবু দাউদ, কিতাবুন নিকাহ। আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন]
একজন নারী যখন মা হয়, তখন সে ঘরের একজন অভিভাবক ও সরদার হয়ে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতকে তাদের পায়ের তলে রেখেছেন এবং সন্তানদের দায়িত্ব দিয়েছেন, তারা যেন তাদের মাতার সাথে ভালো ব্যবহার করে, তাদের প্রতি অনুগ্রহ করে, তাদের আদেশ নিষেধের অনুকরণ করে, তাদের জন্য দো‘আ করে এবং প্রয়োজনের সময় তাদের জন্য ব্যয় করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَوَصَّيۡنَا ٱلۡإِنسَٰنَ بِوَٰلِدَيۡهِ إِحۡسَٰنًاۖ حَمَلَتۡهُ أُمُّهُۥ كُرۡهٗا وَوَضَعَتۡهُ كُرۡهٗاۖ وَحَمۡلُهُۥ وَفِصَٰلُهُۥ ثَلَٰثُونَ شَهۡرًاۚ حَتَّىٰٓ إِذَا بَلَغَ أَشُدَّهُۥ وَبَلَغَ أَرۡبَعِينَ سَنَةٗ قَالَ رَبِّ أَوۡزِعۡنِيٓ أَنۡ أَشۡكُرَ نِعۡمَتَكَ ٱلَّتِيٓ أَنۡعَمۡتَ عَلَيَّ وَعَلَىٰ وَٰلِدَيَّ وَأَنۡ أَعۡمَلَ صَٰلِحٗا تَرۡضَىٰهُ وَأَصۡلِحۡ لِي فِي ذُرِّيَّتِيٓۖ إِنِّي تُبۡتُ إِلَيۡكَ وَإِنِّي مِنَ ٱلۡمُسۡلِمِينَ ١٥﴾ [ الاحقاف : ١٥ ]
“আর আমি মানুষকে তার মাতা-পিতার প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে অতিকষ্টে গর্ভে ধারণ করেছে এবং অতি কষ্টে তাকে প্রসব করেছে। তার গর্ভধারণ ও দুধ পান ছাড়ানোর সময় লাগে ত্রিশ মাস। অবশেষে যখন সে তার শক্তির পূর্ণতায় পৌঁছে এবং চল্লিশ বছরে উপনীত হয়, তখন সে বলে, হে আমার রব, আমাকে সামর্থ্য দাও, তুমি আমার উপর ও আমার মাতা-পিতার ওপর যে নি‘আমত দান করেছ, তোমার সে নিয়ামতের যেন আমি শোকর আদায় করতে পারি এবং আমি যেন সৎকর্ম করতে পারি, যা তুমি পছন্দ কর। আর আমার জন্য তুমি আমার বংশধরদের মধ্যে সংশোধন করে দাও। নিশ্চয় আমি তোমার কাছে তাওবা করলাম এবং নিশ্চয় আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।” [সূরা আল-আহকাফ, আয়াত: ১৫]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«جاء رجل إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال : يا رسول الله، من أحق الناس بحسن صحابتي ؟ قال : [ أمك ] . قال : ثم من ؟ قال : [ ثم أمك ] . قال : ثم من ؟ قال : [ ثم أمك ] . قال : ثم من ؟ قال : [ ثم أبوك ]»..
“এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার সুন্দর ব্যবহার পাওয়ার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কে? তিনি বলেন, তোমার মা, বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তারপর তোমার মা, লোকটি আবারো জিজ্ঞাসা করলেন তারপর কে? বললেন, তাপরও তোমার মা, তারপর সে আবার জিজ্ঞাসা করলেন, তারপর কে? তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারপর তোমার পিতা।” [সহীহ বুখারী, কিতাবুল আদব]
৪.ইসলাম নারীদের অর্থনৈতিক ও আইনি অধিকার নিশ্চিত করেছে।
ইসলাম নারীদের জন্য স্বয়ং-সম্পন্ন অর্থনৈতিক লেনদেন করার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছেন। একজন হালাল পন্থায় অর্থ সম্পদ উপার্জন করতে চাইলে ইসলাম তাতে কোনো প্রকার বাধা সৃষ্টি করে নি। বেচা কেনা হেবা দান করা ব্যবসা-বাণিজ্য, রেহান বন্দক ভাড়া দেওয়া ইত্যাদি কাজগুলো ইচ্ছা করলে একজন নারী পর্দার মধ্যে থেকে অনায়াসে করতে পারে। তা সত্ত্বেও ইসলাম তার ওপর তার নিজের কিংবা ছেলে সন্তানদের ভরণ পোষণের কোনো দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়নি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿لِّلرِّجَالِ نَصِيبٞ مِّمَّا ٱكۡتَسَبُواْۖ وَلِلنِّسَآءِ نَصِيبٞ مِّمَّا ٱكۡتَسَبۡنَۚ ............﴾ [ النساء : ٣٢ ]
“... পুরুষদের জন্য রয়েছে অংশ, তারা যা উপার্জন করে তা থেকে এবং নারীদের জন্য রয়েছে অংশ, যা তারা উপার্জন করে তা থেকে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩২]
ইসলাম নারীদের জন্য পরিপূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে যাতে তারা তাদের নিজেদের পক্ষে আইনি অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে। বিচারাধীন বিষয়ে বিচারক নারীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করতে পারে। সুতরাং নারীরাও কোনো বিচারাধীন বিষয়ে পুরুষের মতো সাক্ষী হতে পারে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا تَتَمَنَّوۡاْ مَا فَضَّلَ ٱللَّهُ بِهِۦ بَعۡضَكُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖۚ لِّلرِّجَالِ نَصِيبٞ مِّمَّا ٱكۡتَسَبُواْۖ وَلِلنِّسَآءِ نَصِيبٞ مِّمَّا ٱكۡتَسَبۡنَۚ وَسَۡٔلُواْ ٱللَّهَ مِن فَضۡلِهِۦٓۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِكُلِّ شَيۡءٍ عَلِيمٗا ٣٢﴾ [ النساء : ٣٢ ] “আর তোমরা আকাঙ্ক্ষা করো না সে সবের, যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদের এক জনকে অন্য জনের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। পুরুষদের জন্য রয়েছে অংশ, তারা যা উপার্জন করে তা থেকে এবং নারীদের জন্য রয়েছে অংশ, যা তারা উপার্জন করে তা থেকে। আর তোমরা আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ চাও। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩২]
তিনি আরও বলেন,
﴿....... وَٱسۡتَشۡهِدُواْ شَهِيدَيۡنِ مِن رِّجَالِكُمۡۖ فَإِن لَّمۡ يَكُونَا رَجُلَيۡنِ فَرَجُلٞ وَٱمۡرَأَتَانِ مِمَّن تَرۡضَوۡنَ مِنَ ٱلشُّهَدَآءِ أَن تَضِلَّ إِحۡدَىٰهُمَا فَتُذَكِّرَ إِحۡدَىٰهُمَا ٱلۡأُخۡرَىٰۚ وَلَا يَأۡبَ ٱلشُّهَدَآءُ إِذَا مَا دُعُواْۚ .......﴾ [ البقرة : ٢٨٢ ]
“...আর তোমরা তোমাদের পুরুষদের মধ্য হতে দুইজন সাক্ষী রাখ। অতঃপর যদি তারা উভয়ে পুরুষ না হয়, তাহলে একজন পুরুষ ও দু’জন নারী- যাদেরকে তোমরা সাক্ষী হিসেবে পছন্দ কর। যাতে তাদের (নারীদের) একজন ভুল করলে অপরজন স্মরণ করিয়ে দেয়। সাক্ষীরা যেন অস্বীকার না করে, যখন তাদেরকে ডাকা হয়। আর তা ছোট হোক কিংবা বড় তা নির্ধারিত সময় পর্যন্ত লিপিবদ্ধ করতে তোমরা বিরক্ত হয়তো না”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৮২]
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা নারীদের জন্য উত্তরাধিকারী সম্পত্তিতে তাদের অধিকার নিশ্চিত করছে। অথচ ইসলামের পূর্বে নারীদের তাদের পৈত্তিক সম্পত্তি ও মিরাস হতে বঞ্চিত করা হত। তাদের কোনো সম্পত্তি দেওয়া হত না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿لِّلرِّجَالِ نَصِيبٞ مِّمَّا تَرَكَ ٱلۡوَٰلِدَانِ وَٱلۡأَقۡرَبُونَ وَلِلنِّسَآءِ نَصِيبٞ مِّمَّا تَرَكَ ٱلۡوَٰلِدَانِ وَٱلۡأَقۡرَبُونَ مِمَّا قَلَّ مِنۡهُ أَوۡ كَثُرَۚ نَصِيبٗا مَّفۡرُوضٗا ٧﴾ [ النساء : ٧ ]
“পুরুষদের জন্য মাতা পিতা ও নিকটাত্মীয়রা যা রেখে গিয়েছে তা থেকে একটি অংশ রয়েছে। আর নারীদের জন্য রয়েছে মাতা পিতা ও নিকটাত্মীয়রা যা রেখে গিয়েছে তা থেকে একটি অংশ (তা থেকে কম হোক বা বেশি হোক) নির্ধারিত হারে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৭]
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
﴿يُوصِيكُمُ ٱللَّهُ فِيٓ أَوۡلَٰدِكُمۡۖ لِلذَّكَرِ مِثۡلُ حَظِّ ٱلۡأُنثَيَيۡنِۚ فَإِن كُنَّ نِسَآءٗ فَوۡقَ ٱثۡنَتَيۡنِ فَلَهُنَّ ثُلُثَا مَا تَرَكَۖ وَإِن كَانَتۡ وَٰحِدَةٗ فَلَهَا ٱلنِّصۡفُۚ وَلِأَبَوَيۡهِ لِكُلِّ وَٰحِدٖ مِّنۡهُمَا ٱلسُّدُسُ مِمَّا تَرَكَ إِن كَانَ لَهُۥ وَلَدٞۚ فَإِن لَّمۡ يَكُن لَّهُۥ وَلَدٞ وَوَرِثَهُۥٓ أَبَوَاهُ فَلِأُمِّهِ ٱلثُّلُثُۚ فَإِن كَانَ لَهُۥٓ إِخۡوَةٞ فَلِأُمِّهِ ٱلسُّدُسُۚ مِنۢ بَعۡدِ وَصِيَّةٖ يُوصِي بِهَآ أَوۡ دَيۡنٍۗ ءَابَآؤُكُمۡ وَأَبۡنَآؤُكُمۡ لَا تَدۡرُونَ أَيُّهُمۡ أَقۡرَبُ لَكُمۡ نَفۡعٗاۚ فَرِيضَةٗ مِّنَ ٱللَّهِۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمٗا ١١﴾ [ النساء : ١١ ]
“আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে নির্দেশ দিচ্ছেন, এক ছেলের জন্য দুই মেয়ের অংশের সমপরিমাণ। তবে যদি তারা দুইয়ের অধিক মেয়ে হয়, তাহলে তাদের জন্য হবে, যা সে রেখে গেছে তার তিন ভাগের দুই ভাগ, আর যদি একজন মেয়ে হয় তখন তার জন্য অর্ধেক। আর তার মাতা পিতা উভয়ের প্রত্যেকের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ সে যা রেখে গেছে তা থেকে, যদি তার সন্তান থাকে। আর যদি তার সন্তান না থাকে এবং তার ওয়ারিশ হয় তার মাতা-পিতা তখন তার মাতার জন্য তিন ভাগের এক ভাগ। আর যদি তার ভাই-বোন থাকে তবে তার মায়ের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ। অসিয়ত পালনের পর, যা দ্বারা সে অসিয়ত করেছে অথবা ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের মাতা পিতা ও তোমাদের সন্তান-সন্ততিদের মধ্য থেকে তোমাদের উপকারে কে অধিক নিকটবর্তী তা তোমরা জান না। আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১]
আল্লাহ এ আয়াতে নারীদের জন্য পুরুষের অর্ধেক সম্পদ দেওয়ার কথা বলেছেন, তার কারণ হলো, একজন পুরুষের দায়িত্ব হলো, সে তার পরিবারের জন্য খরচ করবে, তাদের যাবতীয় বিষয়ে দেখা শোনা করবে এবং তাদের দায়-দায়িত্ব তাকেই বহন করতে হবে। এ কারণেই তাকে নারীদের ওপর প্রভাব বিস্তার ও শক্তিশালী বলা হয়েছে। একজন স্ত্রী সে তার স্বামীর থেকে মোহরানা পেয়ে থাকে; যদি সে তাকে সহবাসের পূর্বে তালাক দেয়, তাহলে অর্ধেক মাহর আর যদি পরে তালাক দেয়, তাহলে পূর্ণ মাহর পাবে। সুতরাং একজন নারী সে একজন পুরুষের অর্ধেক সম্পদ পেলেও কিন্তু দায়িত্ব কম থাকায় তার ব্যয়ের খাত মোটেই নাই এবং সে স্ত্রী হিসেবে মাহর ও মা হিসেবে পিতার চেয়ে বেশি পাওয়াতে তার হকের মধ্যে কোনো প্রকার কমতি করা হয় নি। তাদের মোহরের বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَءَاتُواْ ٱلنِّسَآءَ صَدُقَٰتِهِنَّ نِحۡلَةٗۚ فَإِن طِبۡنَ لَكُمۡ عَن شَيۡءٖ مِّنۡهُ نَفۡسٗا فَكُلُوهُ هَنِيٓٔٗا مَّرِيٓٔٗا ٤﴾ [ النساء : ٤ ]
“আর তোমরা নারীদেরকে সন্তুষ্টচিত্তে তাদের মোহর দিয়ে দাও, অতঃপর যদি তারা তোমাদের জন্য তা থেকে খুশি হয়ে কিছু ছাড় দেয়, তাহলে তোমরা তা সানন্দে তৃপ্তিসহকারে খাও।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪]
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন