HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

শী‘আ মতবাদের বিস্তৃতি

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল-মাত্বরাফী

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
শী‘আ মতবাদের বিস্তৃতি

আব্দুল্লাহ আল-মাত্বরাফী

অনুবাদ : আব্দুল আলীম বিন কাওসার

সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

শী‘আ মতবাদের বিস্তৃতি
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম

সমস্ত প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালকের জন্য, দুরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবীর প্রতি।

সম্মানিত পাঠক! অপরাধীর অপরাধ পরিকল্পনা এবং তাদের দুরভিসন্ধি ফাঁস করে দেওয়া মহাগ্রন্থ আল-কুরআন নির্ধারিত একটি পদ্ধতি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর এমনিভাবে আমি নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করি, যাতে অপরাধীদের পথ সুস্পষ্ট হয়ে উঠে’ (আল-আন‘আম ৫৫)।

মুসলিম উম্মাহ্‌র বৃহত্তম জনগোষ্ঠী তাদের বিরোধীদের আক্বীদাসমূহ সম্পর্কে জানলে কতই না ভাল হত! বাতিলকে হক্ব বলে চালিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের নানা পরিকল্পনা ও পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত হলেও না কত ভাল হত!

আমরা এমন একটি ভয়াবহ বিষয়ের সাথে পরিচিত হব, যার প্রচার ঘণ্টা বেজে উঠেছে, ধুম্রজাল ছেয়ে গেছে এবং যার আগুন জ্বলে উঠেছে। আর তা হল, ইসলামী বিশ্বে শী‘আ মতবাদের বিস্তৃতির ভয়াবহতা।

শী‘আ মতবাদের বিস্তৃতির ঘটনা বাস্তব, ইহা কল্পনাপ্রসূত কোন বিষয় নয়। সেজন্য জাপান থেকে শুরু করে ল্যাটিন আমেরিকা পর্যন্ত এমন কোন দেশ বা এলাকা নেই, যেখানে শী‘আ মতবাদের অপচ্ছায়া প্রবেশ করেনি।

শী‘আ মতবাদ প্রসারের নানা প্রকল্প বিভিন্ন অঞ্চলে প্রবেশ করে ইসলামের রজ্জু, আক্বীদা, ইতিহাস ও প্রতীককে খাটো করছে। এমনকি ক্রমবর্ধমান এই বাতেনী প্রলয়ের প্রতি ক্রোধান্বিত ও উত্তেজিত প্রত্যেকের অভিযোগ এমন এক মুহূর্তে বৃদ্ধি পেয়েছে, যখন ইসলামী সংস্থা ও সংগঠনসমূহ পাপিষ্ঠ খৃষ্টান চক্রের নানা কষ্ট-ক্লেশ ও নির্যাতন ভোগ করছে।

গুরুত্বের দিক থেকে আক্বীদাগত সংঘাতের আলোচনা সামরিক দখলদারিত্বের আলোচনার চেয়ে কোন অংশে কম নয়। বিশেষ করে এই সংঘাতের যে ফলাফল আমরা লক্ষ্য করছি, তা মুসলিম উম্মাহ্‌র জন্য একটি নিশ্চিন্ত ভবিষ্যতের সুসংবাদ প্রদান করে না। যাহোক, এক্ষণে আমাদের প্রশ্ন হল, শী‘আ মতবাদের বিস্তৃতি থেকে কেন এই হুঁশিয়ারী?

এর জবাবে এক কথায় বলা যায়, আমাদের ও তাদের মধ্যকার দলীল-প্রমাণাদি ভিন্ন এবং উভয়ের মধ্যকার মৌলিক বিষয়সমূহ পূর্ব ও পশ্চিম দিগন্তের দূরত্বের ন্যায় দূরত্ব সম্পন্ন।

সম্মানিত পাঠক! আমরা কিভাবে এমন একটি সম্প্রদায়ের সাথে ঘনিষ্টতা সৃষ্টি করতে পারি, যারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবারের ইমামগণকে মাছূম দাবী করে এবং বিশ্বাস রাখে যে, তাঁরা গায়েব বা অদৃশ্যের খবর রাখেন! (দেখুনঃ কুলায়নী, উছূলুল কাফী ১/১৬৫)। তারা বলে, কুরআন কারীমে পরিবর্তন-পরিবর্ধন সাধিত হয়েছে এবং আমাদের কাছে যে কুরআন আছে, তা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর অবতীর্ণ কুরআন নয়; বরং তাতে পরিবর্তন-পরিবর্ধন ও কমবেশী করা হয়েছে! (উছূলুল কাফী ১/২৮৫)।

কিভাবে আমরা ধর্মীয়ভাবে এমন এক সম্প্রদায়ের কাছাকাছি যেতে পারি, যারা সাহাবীগণকে ফাসিক্ব বলে। শুধু তাই নয়, তারা তাঁদেরকে অভিশাপ দিয়ে এবং কাফির বলে নিজেদের উগ্র যবানকে পিচ্ছিল করে ফেলেছে (মাজলীসী, বিহারুল আনওয়ার ৬৯/১৩৭, ১৩৮)।

কেউ ১২ (বারো) ইমামের কারো নেতৃত্ব ও প্রতিনিধিত্ব অস্বীকার করলে সে শী‘আ ইমামিয়াদের নিকট কাফির, পথভ্রষ্ট এবং জাহান্নামের চিরস্থায়ী অধিবাসী (আব্দুল্লাহ শুব্বার, হাক্কুল ইয়াক্বীন ২/১৮৯)।

এখানেই শেষ নয়, মুসলিম উম্মাহ্‌র সাথে এই সম্প্রদায়ের রয়েছে ইতিহাসের কালো অধ্যায়। সুতরাং আমাদের প্রতি তাদের শত্রুতা যেমন সুপ্রতিষ্ঠিত, তেমনি আমাদের প্রতি তাদের ক্রোধ ও হিংসাও অব্যাহত; বরং আমাদের মুসলিম উম্মাহ্‌র ইতিহাসে এমন কোন সময় অতিক্রম করেনি, যখন তাদের আঘাত, গাদ্দারী, বিদ্রোহ আর খেয়ানত মুসলিমদেরকে জর্জরিত করেনি। এটিই শী‘আদের বাস্তব চিত্র। কবি বলেন,

اقرؤوا التاريخ إذ فيه العبر * ضل قوم ليس يدرون الخبر

‘তোমরা ইতিহাস পড়, কেননা তাতে শিক্ষা রয়েছে। ইতিহাস জানে না এমন কোনো কোনো সম্প্রদায় পথভ্রষ্ট হয়েছে’।

তাদের মতবাদ বিস্তৃতি লাভের পদ্ধতিসমূহ প্রকাশ করে দেওয়ার অর্থ তাদের প্রতি যুলম নয় এবং নয় তাদের সাথে বেইনছাফী। কেননা আমরা ইনছাফ, ন্যায়, দয়া ও মধ্যমপন্থী উম্মত।

আল্লাহ্‌র শপথ! বর্তমান সময়ে দলীয় সংঘাতের দিকে আহ্বান করা মুসলিম উম্মাহ্‌র জন্য কল্যাণকর নয়। কেননা এটি এমন একটি বীজ, যার ফল ভোগ করে ইয়াহুদীবাদী প্রকল্প এবং তার দোসররা। কিন্তু এই স্পষ্ট বিস্তৃতি ও সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে চুপ থাকা এবং তা থেকে চোখ ফিরিয়ে রাখার নীতি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের বিপক্ষে যায়। কেননা শী‘আদের এই ধর্মপ্রচার মুলতঃ সুন্নী অধ্যুষিত এলাকাসমূহকে টার্গেট করে।

অতএব শী‘আ মতবাদ বিস্তৃতির প্রকল্প অনুধাবন, উহার ঝুঁকিসমূহ নিরূপণ এবং শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিসমূহের মাধ্যমে উহাকে প্রতিরোধের আহ্বান জানানোর লক্ষ্যেই এই বক্তব্যটি লেখা হল। ইহা দলীয় সংঘাত সৃষ্টির আহ্বান নয়।

সম্মানিত পাঠক! শী‘আ মতবাদ বিস্তৃতির চিন্তাধারা ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট খুমেনীর শাসনামল থেকে শুরু হয়, যিনি তাঁর অভ্যুত্থানের সঙ্গে সঙ্গে তথাকথিত ইসলামী বিপ্লব শুরুর ঘোষণা দেন।

শী‘আ মতবাদ বিস্তৃতির এই প্রকল্প ‘ফক্বীহ-এর শাসন ব্যবস্থা’-এর নতুন যুগের সঙ্গে একই সাথে শুরু হয়। শী‘আদের নিকটে ‘ফক্বীহ-এর শাসন ব্যবস্থা’-এর অর্থ হল, শী‘আদের একটি গ্রুপ ‘মাযহাবে ইমামী’র অনুসারীদের উপর ‘ফক্বীহ’-এর অনুসরণ করা ওয়াজিব, যিনি অনুপস্থিত প্রতীক্ষিত ইমাম মাহদীর স্থলাভিষিক্ত। খুমায়নী তার গ্রন্থ ‘আল-হুকুমাহ আল-ইসলামিয়াহ’-এর ৩৬ পৃস্ঠায় ‘ফক্বীহ-এর শাসন ব্যবস্থা’ বিষয়ক আক্বীদার উল্লেখ করে বলেন, ‘ফক্বীহদের অধিকার; বরং তাদের উপর ওয়াজিব ও ফরয যে, তারা আখেরী যামানার অনুপস্থিত ইমামের খলীফা বা প্রতিনিধি হবেন এবং তারা হবেন ইমামের প্রতিনিধি হিসাবে শাসন ক্ষমতার অধিকারী। অতএব, তাকে অনুসরণ করা ওয়াজিব একজন ইমাম হিসাবে শুধু নয়; বরং একজন নবী বা রাসূল হিসাবে’। এই চিন্তা-চেতনার আলোকে ইসলামী বিপ্লবের ঘোষক তার অনুসারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে সর্বত্র ধরে রেখেছে, যাতে তারা পরবর্তীতে তার অনুসারী এবং তার নির্দেশ পালনকারী হতে পারে।

বিপ্লব ঘোষণার উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে খুমায়নীর সরকার আট বছর ধরে ইরাকের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ে, যে ইরাককে পারস্যবাসীরা ইসলামী বিশ্বে তাদের প্রবেশ দ্বার মনে করে। এছাড়া তাদের আক্বীদায় ইরাকের একটা ধর্মীয় গুরুত্ব তো রয়েছেই। অসংখ্য প্রাণের আত্মহুতি ও ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধনের মধ্য দিয়ে এই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে।

ইরানের মোড়ল সরকার শুরু থেকেই শী‘আ সংখ্যালঘু এলাকাসমূহকে স্বাধীন এবং সেখানে স্বায়ত্বশাসন প্রতিষ্ঠার দাবীর প্রতি উৎসাহ দিয়ে আসছিল। যে কারণে সে সময় শী‘আদের বেশ কিছু সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দল জন্ম নেয়, বর্তমান বিশ্বে যেগুলির নাম ছড়িয়ে পড়েছে। যেমনঃ ইরাকে ‘হিযবুদ্‌-দা‘ওয়াহ আল-ইসলামিইয়াহ’ লেবাননে ‘হারাকাতে আমাল’ ও ‘হিযবুল্লাহ’, বাহরাইনে ‘জাবহাতুত্‌-তাহরীর আল-ইসলামী’ ইয়েমেনে ‘আল-হারাকাহ আল-হূছিইয়াহ’ ইত্যাদি। এই দলগুলি ‘ক্বুম’-এর মোড়লদের নির্দেশনাসমূহ বাস্তবায়নের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং পরবর্তীতে পারস্য নিনাদের প্রতিধ্বনিতে পরিণত হয়েছে। পারস্যবাসীরা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বিপ্লব প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হওয়ার পর শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে বিপ্লব প্রতিষ্ঠার বিচক্ষণ নীতি বেঁছে নেয়। দীর্ঘমেয়াদী নীতি, গভীর পরিকল্পনা এবং সম্ভবপর কার্য সম্পাদনের নীতিকে সামনে রেখে শী‘আ মতবাদের বিস্তৃতি ইসলামী দেশসমূহে আগ্রাসন চালাতে শুরু করে। দেশের সীমারেখার সে পরোয়া করে না এবং কোন প্রতিবন্ধকতাও তাকে থামাতে পারে না।

এই প্রকল্পকে একটি শী‘আ রাষ্ট্র সার্বিক সাহায্য-সহযোগিতা করতে শুরু করে এবং সে নেতৃত্বের আসন গ্রহণের প্রয়াস চালায়। এই লক্ষ্যে সে তার সার্বিক ক্ষমতা, প্রতিষ্ঠানসমূহ ও অর্থ তহবিলকে কাজে লাগায় এবং শী‘আ মতবাদ প্রচারের পথে সে মোটা অংকের অর্থ ব্যয় করে। এ মর্মে প্রচারিত সংবাদ হল, ইরানী খনিজ তেলের লভ্যাংশের এক পঞ্চমাংশ এই উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়নের জন্য ব্যয় করা হয়।

খুমায়নী স্বীয় অছিয়তে তার ভক্তদেরকে শী‘আ মতবাদ প্রচারের প্রতি উৎসাহ দিয়ে বলেন, ‘ধর্ম প্রচার কেবল জাতীয় পথনির্দেশ মন্ত্রণালয়ের একার দায়িত্ব নয়; বরং তা সমস্ত আলেম, খত্বীব, লেখক ও দক্ষ ব্যক্তির দায়িত্ব। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্তব্য, দূতাবাস সমূহে প্রচুর পরিমাণে প্রচারপত্র সরবরাহের প্রয়াস চালানো, যেগুলি ইসলামের আলোকিত অধ্যায় বর্ণনা করবে’ (খুমায়নী, আল-ওয়াছিইয়াহ আস্‌-সিয়াসিইয়াহ, পৃঃ ৪০)।

এদিকে ইরানের বর্তমান প্রধান আহমাদিনেজাদ স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন যে, ইরান নীতির মূল উদ্দেশ্য হল, বিশ্বে শী‘আ মতবাদের প্রসার ঘটানো এবং প্রতীক্ষিত মাহদীর নিশান বুলন্দ করা। তিনি বলেন, ‘এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি প্রচারের দায়িত্ব গণপ্রজাতন্ত্রী ইরানের উপর বর্তায়’ [‘মুফাক্কেরাতুল ইসলাম’ ( مفكرة الإسلام ) ওয়েবসাইট থেকে গৃহীত]।

একজন শী‘আ আলেম ০৪/০১/১৪২৮ হিঃ তারিখে ‘আল-মুসতাক্বেল্লাহ’ ( المستقلة ) চ্যানেলে তার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘শী‘আ অধ্যুষিত অঞ্চল ক্বুম ও নাজাফ, হেজায, শাম, ইয়েমেন এবং ইরাকে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রয়াস চালাবে এবং শী‘আ আলেমদের লক্ষ্য হল, সমগ্র ইসলামী বিশ্বের নেতৃত্ব প্রদান। আর শী‘আ মতবাদ বিস্তৃতির ক্ষেত্রে কোন সীমানা নেই, তারা সারা জাহানে এই মতবাদ সম্প্রসারণের চেষ্টা চালাবে।

শী‘আ মতবাদ প্রচার এবং তাতে তাদের সফল হওয়ার পেছনে বেশ কিছু পথ ও পদ্ধতি রয়েছে, সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ
১. রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবারের প্রতি ভালবাসা প্রদর্শনের মিথ্যা শ্লোগান প্রদান, নিজেদের মতবাদকে তাঁর পরিবারের মতবাদের নামে নামকরণ, দা‘ওয়াতী কার্যক্রমের প্রাথমিক পর্যায়ে কেবলমাত্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবারের প্রতি ভালবাসার আহ্বান, তাঁদের মর্যাদা বর্ণনা এবং তাঁদের অধিকার আদায়ের প্রতি তাকীদ প্রদান।

শী‘আরা দা‘ওয়াতী এই পদ্ধতিকে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবার-পরিজনের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি এবং তাঁদেরকে মাছূম জ্ঞান করার অন্যতম ওয়াসীলা হিসাবে ব্যবহার করে। আর যারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবারের অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে এবং তাঁদের প্রতি অবিচার করেছে, তাদেরকে দোষারোপ করার সেতু হিসাবে এই পদ্ধতিকে কাজে লাগায়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, রাফেযীদের ধারণা মতে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবারের প্রতি অবিচারকারী ব্যক্তিবর্গ হলেন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীবর্গ (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) (না‘ঊযুবিল্লাহ)। এরপর আসে ছাহাবীগণকে নিন্দা করা, কটাক্ষ করা, তাঁদেরকে খেয়ানতকারী হিসাবে অভিহিত করা, অতঃপর তাঁদেরকে লা‘নত করা এবং কাফির ফৎওয়া দেওয়ার জঘন্য পর্ব।

অতএব, বলা যায়, আলুল বায়ত বা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবারের প্রতি ভালবাসা প্রদর্শনের এই শ্লোগান শী‘আ মতবাদ প্রচারের এবং উহাকে মানুষের নিকট উত্তমরূপে তুলে ধরার একটি হাতিয়ার মাত্র। সেজন্য শী‘আদের দা‘ওয়াত এবং ত্রাণ বিষয়ক সংগঠনগুলি এমনকি রাজনৈতিক সংগঠনগুলিও শী‘আ মতবাদকে ভাল বলে চালিয়ে দেওয়ার এবং মানুষের কাছে উহার গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টির জন্যে আলুল বায়তের নামানুসারে নিজেদেরকে নামকরণ করে।

শুধু তাই নয়; বরং আলুল বায়তের ক্ববরসমূহ অবস্থিত এমন এলাকাগুলি শী‘আদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। সেগুলিকে তারা পরিদর্শন স্থল বানিয়েছে, ক্ববরগুলির উপরে গম্বুজ নির্মাণ করেছে এবং সেগুলির আশেপাশে বহু বিদ‘আতী ও কুফরী কর্মকাণ্ডের জন্ম দিয়েছে। এছাড়া যাতে ঐ এলাকাগুলি পরবর্তীতে শুধুমাত্র শী‘আ অধ্যুষিত এলাকা হয়, সেজন্য ক্ববরগুলির আশেপাশে সম্পত্তি গড়ে তোলা এবং জমি ক্রয়ের বিষয়টি তো রয়েছেই।

২. শী‘আ মতবাদ প্রচারে শী‘আদের আরেকটি অভিনব কৌশল হল, সুন্নী ও শী‘আদের মধ্যে ধর্মীয়ভাবে পরস্পরে কাছাকাছি আসার আহ্বান। এটি ধোকা বৈ কিছুই নয়। মূলতঃ এই আহ্বানের অর্থই হল, শী‘আ মতবাদ এবং উহার বিশুদ্ধতার স্বীকৃতি প্রদান- যা এই মতাবলম্বনের পথ সুগম করে।

দুঃখের বিষয় হল, এই আহ্বান শী‘আদেরকে সুন্নী মুসলিম অধ্যুষিত দেশসমূহে নির্বিঘ্নে বিচরণ, কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, প্রকাশনালয় চালু এবং তাদের মতবাদ প্রচারের পথ সহজ করে দিয়েছে।

তবে শী‘আদের বিকৃত আক্বীদাসমূহ এবং বংশ পরম্পরায় চলে আসা এই কুফরী মতবাদে কেউ আপত্তি করলে তা শী‘আদের নিকট হয় মুসলিম ঐক্যকে হুমকি দেওয়ার শামিল।

এক্ষণে সুন্নীদের জানতে চাওয়া উচিৎ, ইরানের শী‘আ আলেমরা কি শী‘আ অধ্যুষিত অঞ্চলসমূহে মানুষকে সুন্নী বানানোর প্রক্রিয়া পরিচালনার অনুমতি দিবে? ইরানীরা সুন্নী হয়ে গেলে কি পারস্য মোড়লরা নীরব থাকবে? আর তারা কি এ ধরনের তৎপরতার আদৌ অুমোদন দিবে?

আল্লাহ্‌র কসম! তারা কখনই অনুমোদন দিবে না। উভয় জামা‘আতকে কাছাকাছি করার এই প্রতারণা মানুষকে সুন্নী বানানোর প্রক্রিয়া পরিচালনার অনুমতি দেওয়া তো দূরের কথা, এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে সুন্নী আক্বীদা চর্চায়ও বাঁধা প্রদান করে থাকে।

ধর্মীয়ভাবে কাছাকাছি আসার এই প্রতারণা সেখানকার সুন্নী আলেমগণকে হত্যা করে, ‘আহ্‌ওয়ায’-এর আরবদেরকে গোপনে খুন করে। এটি এমন একটি ধোঁকা, যা সুন্নী মসজিদসমূহ ধ্বংস করে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে তালা ঝুলায় আর সুন্নী দাঈগণকে বিতাড়িত করে।

অতএব, সুন্নী মুসলিম হিসাবে আমাদের পক্ষে এমন সম্প্রদায়ের কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব নয়। কারণ, তারা ইসলাম বিনষ্টকারী বিষয়সমূহকে আঁকড়ে ধরে থাকে, ক্ববরসমূহ প্রদক্ষিণ করে এবং জীবন বাজি রেখে বিদ‘আত প্রচারে আত্মনিয়োগ করে।

৩. শী‘আ মতবাদ সম্প্রসারণের আরেকটি অন্যতম কৌশল হল, শিক্ষাবৃত্তি প্রদানের প্রতি গুরুত্ব প্রদান এবং তেহরান, ক্বুম, মাশহাদ ও তাবরীযের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে অধ্যয়নের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাযার হাযার সরলমনা মুসলিম যুবককে একত্রীকরণ। ইরান সরকার সেখানে তাদের খরচ-খরচা, জীবন-যাপন, প্রয়োজনাদি পূরণ এমনকি বিয়ে-শাদী দেওয়ার দায়িত্বও গ্রহণ করে থাকে।

এই শিক্ষা বৃত্তি প্রদানের প্রধান লক্ষ্য হল, তাদেরকে শী‘আ বানানো- যাতে তারা শী‘আ মতবাদ প্রচার ও প্রসারের আহ্বায়ক হিসাবে নিজ নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করতে পারে। কয়েক বছরে ছাত্রদেরকে এমর্মে শিক্ষা দেওয়া হয় যে, সব সুন্নী সরকার যালেম এবং অবৈধ। কেননা তাদের ধারণা মতে, এসব সরকার ‘ফক্বীহ’-এর শাসন ব্যবস্থা বা ইসলামের আসল ও মুহাম্মাদী পথের পথিক নয়।

৪. শী‘আ মতবাদ প্রচারের উদ্দেশ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে দাঈ ও শিক্ষকদের প্রেরণ এ মতবাদ প্রসারের আরেকটি মাধ্যম। বিশেষ করে দূরবর্তী মুসলিম সংখ্যালঘু এলাকা সমূহে। একটি বিদেশী পত্রিকা এ মর্মে খবর প্রকাশ করেছে যে, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সেখানকার সদ্য বিভক্ত অঞ্চলসমূহে ইরান শত শত শিক্ষক পাঠিয়েছে। পত্রিকাটি উল্লেখ করেছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে ইরান সরকার বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে।

৫. শী‘আ মতবাদ প্রচারে তাদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হল, বিভিন্ন দেশে অবস্থিত ইরানী দূতাবাস সমূহের মাধ্যমে ফায়দা হাছিল করা। এসব দূতাবাসের সাংস্কৃতিক অঙ্গনগুলি ওসব এলাকায় বসবাসকারী শী‘আদের সাথে যোগাযোগ অব্যহত রাখা, তাদের সমস্যায় সহযোগিতা প্রদান, তাদের অধিকার রক্ষা এবং তাদেরকে শী‘আপন্থী ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বই-পুস্তক যোগান দেওয়ার মাধ্যমে শী‘আ মতবাদের দিকে আহ্বানের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মন্ত্রণালয়ে পরিণত হয়েছে। এজন্য এমন কোন ইরানী দূতাবাস নেই, যেখানে তথাকথিত পাগড়ীধারী আহ্বায়ক এবং শী‘আ মতবাদ বিষয়ক তদারককারী নেই।

৬. শী‘আ মতবাদ প্রচারে তাদের আরেকটি মাধ্যম হল, অর্থ ও বস্তুগত প্রলোভনকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা এবং নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ও গোত্রপ্রধানগণকে শী‘আ মতবাদে দীক্ষিত করার জন্য অঢেল সম্পদ আর প্রলুব্ধকারী অনুদানের মাধ্যমে তাঁদের দায়ভার ক্রয় করা। সাথে সাথে তাঁদেরকে এ ধারণা প্রদান করা যে, ইসলামে শী‘আ ও সুন্নীর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।

ভাই পাঠক! একথা গোপন নেই যে, নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এবং গোত্র প্রধানগণের সূত্র ধরেই ইরাক ও সিরিয়াতে শী‘আ মতবাদ প্রসার লাভ করে (তাহযীরুল বারিইয়াহ মিন নাশাতিশ্‌-শী‘আহ ফী সূরিইয়াহ)।

৭. শী‘আ মতবাদ প্রচারে তাদের আরো একটি মাধ্যম হল, মূর্খতা ও দরিদ্রতাপীড়িত এলাকাসমূহ খুঁজে বের করা এবং সেক্ষেত্রে জোর প্রচেষ্টা চালানো। এই মতবাদ প্রচারের লক্ষ্যকে সামনে রেখে সেসব এলাকায় হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়, আবাস স্থল গড়ে তোলা হয়, মানুষের জীবন ধারণের মানোন্নয়ন করা হয় এবং বিভিন্নমুখী সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করা হয়।

ইসলাম এবং আলুল বায়তের প্রতি ভালবাসা প্রদর্শনের এই খপ্পরে পড়ে ঐসব এলাকার সাদাসিধে দরিদ্র লোকজন দলে দলে শী‘আ ধর্মে দীক্ষিত হচ্ছে।

৮. তাদের মতবাদ প্রচার ও প্রসারের অন্যতম আরেকটি মাধ্যম হল, মুসলমানদের সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা প্রদান এবং ইয়াহুদবাদ ও পশ্চিমা রাজনীতির বিরুদ্ধে শত্রুভাবাপন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের দাবী। মুসলিম বিশ্বে শী‘আদের মুখোজ্জ্বলের পেছনে এবং নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর হৃদ্যতা অর্জনের ক্ষেত্রে এই নীতির বিরাট প্রভাব রয়েছে।

ইরানী মোড়লদের ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধানে হাত বাড়ানোর বিষয়টি মানুষের অনুভূতিকে নাড়া দেওয়া এবং মাযহাবী স্বার্থসিদ্ধি আর রাজনৈতিক স্বার্থার্জন বৈ কিছুই নয়। ইরানী পার্লামেন্ট প্রধান বলেন, ‘ইসলামী দেশসমূহে ইরানের আধ্যাত্মিক শক্তি সে দেশের জাতীয় স্বার্থসিদ্ধির জন্য কাজ করে যায়’ [‘সহীফাতুল আখবার’ ( صحيفة الأخبار ) ওয়েবসাইট, জুমআ, ২৭ জুন ২০০৮ ইং]।

এটি সেখানকার একজন রাজনীতিবিদের স্বীকারোক্তি যে, ইরান কেবলমাত্র তার নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধির জন্য কাজ করে, মুসলিম উম্মাহ্‌র স্বার্থে নয়।

৯. শী‘আ মতবাদ প্রচারের একটি রাজনৈতিক পদক্ষেপ হল, শী‘আ মতবাদ বিরোধী সুন্নী রাষ্ট্রসমূহকে আঘাত করার জন্য অন্যান্য দেশসমূহের সাথে সহযোগিতা গড়ে তোলা। সেজন্য যতই সেখানকার পাগড়ীধারীরা সবচেয়ে বড় শয়তান আমেরিকাকে গলা বাজিয়ে অভিশাপ করুক না কেন ইরান সরকার ইরাক এবং এর আগে আফগানিস্তানের পতনের জন্য অন্যান্য দেশের সাথে সহযোগিতা গড়ে তুলেছিল। সাবেক ইরানী ভাইস প্রেসিডেন্ট তা স্পষ্টই ঘোষণা করেছিলেন, (তিনি বলেছিলেন), ‘ইরান না থাকলে আমেরিকা ইরাক দখল করতে পারত না এবং ইরান না থাকলে আমেরিকা আফগানিস্তান দখল করতে পারত না’ (‘মাযা তা‘রিফু আন হিযবিল্লাহ’ গ্রন্থের ২০৮ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।

১০. তাদের মতবাদ প্রচার এবং দলীয় শক্তি বৃদ্ধির আরেকটি মাধ্যম হল, সুন্নী সমাজের প্রতি বিদ্বেষী সম্প্রদায়গুলির সাথে মৈত্রীবন্ধন গড়ে তোলা। যেমনঃ পুরনো দিনে মার্কসবাদীদের সাথে এবং বর্তমানে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের সাথে। সেজন্য আপনি শী‘আদের প্রচার মাধ্যম এবং তাদের সভা-সমিতিতে সুন্নী সমাজ বর্জিত এই নামগুলির উপস্থিতি খুঁজে পাবেন। কেননা সুন্নী পরিচয়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের লক্ষ্যে তারা তাদের সাথে একমত হয়েছে।

এই মৈত্রীবন্ধনের আরো একটি উদ্দেশ্য হল, সুন্নীদের অবস্থানকে নড়বড়ে করা এবং ভেতর থেকে তাদের মধ্যে ভাঙ্গন সৃষ্টি করা।

সুন্নীদের কিছু কিছু প্রতীকের প্রতি শী‘আদের সম্মান প্রদর্শনও শী‘আ মতবাদ প্রচারের আরেকটি মাধ্যম। দুঃখের বিষয় হল, সুন্নী এই প্রতীকগুলি শী‘আ মতবাদকে বৈধতা দান করে তাদের বক্তব্য এবং ফতওয়া প্রচার করছে। এই প্রতীকগুলির ধ্বজাধারীদেরকে শী‘আ মিডিয়ায় ঐক্য ও ন্যায়ের প্রতীক হিসাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

সম্মানিত পাঠক! শী‘আ মতবাদের বিস্তৃতি ভয়ানক বিপদ হিসাবে থেকে যাবে এবং ইসলামী কোন এলাকা তাদের টার্গেট থেকে বাদ পড়বে না। বিশেষ করে প্রাচুর্য সমৃদ্ধ ও পবিত্র স্থানসমূহের দেশ হারামাইন শরীফাইনের দেশ (সঊদী আরব)। যেখানে-সেখানে রাফেযীদের বিস্তৃতি ও সম্প্রসারণ হলেও এই দেশটি তাদের মূল টার্গেট। এটি তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ নয়; বরং তাদের বই-পুস্তক এবং তথাকথিত পাগড়ীধারীদের বক্তব্য থেকেই এই উদ্দেশ্য বেরিয়ে এসেছে।

তেহরানের একজন মেজর জেনারেল ‘আল-ইসলাম আলা যওইত্‌-তাশাইয়ূ’ গ্রন্থের লেখক বলেন, ‘দুনিয়ার সব শী‘আ মক্কা-মদীনার বিজয় এবং এতদুভয় থেকে অপবিত্র ওয়াহাবী সরকারের পতন কামনা করে’। পারস্যের এক পাগড়ীধারী বলেন, ‘পূর্ব থেকে পশ্চিম দিগন্তের হে আমার মুসলিম ভাইয়েরা! আমি স্পষ্টভাবে বলছি যে, আল্লাহ্‌র হারাম মক্কা মুকাররমা অল্প কিছু সংখ্যক মানুষ দখল করে আছে, যারা ইয়াহুদীদের চেয়েও ভয়ানক’ (‘আল-মিশকাত আল-ইসলামিইয়াহ’ ( المشكاة الإسلامية ) ওয়েবসাইট)।

বাহরাইনের ‘কুতলাতুল বিফাক্ব’-এর জনৈক সদস্য হামযাহ আদ-দীরী বলেন, ‘সুন্নীদের আলেম-ওলামা এবং হারাম শরীফের ইমামগণ নাছেবী। সুতরাং হারামে তোমাদের সালাত একজন নাছেবীর পেছনে আদায়কৃত ছালাত হিসাবে গণ্য হবে’ (‘আল-ওয়াক্‌ত’ পত্রিকা, রবিবার, ২২ রজব ১৪২৮ হিঃ,৫৩১ সংখ্যা)।

আর গণপ্রজাতন্তী ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট রাফসানজানী ১৪/১২/১৯৮৭ ইং তারিখে ‘ইত্তেলাআত’ পত্রিকাতে তো স্পষ্টই বলেছিলেন, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী ইরানের কাছে মক্কাকে মুক্ত করার জন্য যুদ্ধের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে’।

এদিকে সঊদী শী‘আ মতাবলম্বী নিম্‌র আন্‌-নিম্‌র তার নিজস্ব ওয়েব সাইট ‘আশ্‌-শী‘আহ আলাত্‌-তাহাররুক’-এ প্রচারিত এক উস্কানীমূলক বক্তব্যে বলেন, ‘আমি নিজেকে আহ্বান করছি এবং সমস্ত মুমিনকে বিশেষ করে, আলুল বায়তের প্রেমিকদেরকে এবং আরো বিশেষ করে, আলুল বায়তের মিত্র ও অনুসারীদেরকে শপথ নবায়ন, দৃঢ় প্রতিজ্ঞা গ্রহণ এবং আমাদের সম্ভবপর সার্বিক শক্তি দিয়ে দ্বিগুণ প্রচেষ্টা করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করছি। নির্মম ধ্বংসের এক যুগ অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই সুউচ্চ ভিত্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা যেন লড়াই-সংগ্রাম করে যাই’।

লন্ডনে বসবাসরত কুয়েতী শী‘আ মতাবলম্বী ইয়াসের আল-হাবীব এক বক্তব্যে বিদ্রোহের ডাক দিয়ে বলেন, ‘মক্কা ও মদীনা আজ দখলদারিত্বের কবলে। এতদুভয়কে মুক্ত করা আবশ্যক’।

এই হল শী‘আ মতবাদ বিস্তৃতির কতিপয় মাধ্যম এবং তাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও সামান্য কিছু বক্তব্য। বাস্তবতা এগুলির সাক্ষ্য দেয় এবং সঠিক বিশ্লেষণ এগুলির সত্যতা প্রমাণ করে। (আরো জানতে হলে পড়ুন, ‘আল-খুত্ত্বাতুল খামসিনিইয়াহ লিআয়া-তির রাফিযা ফী ইরান’)।

শী‘আ মতবাদ প্রচারের এই ঘূর্ণিঝড় এবং স্পষ্ট বিপদ প্রতিরোধে আমাদের করণীয় কি?
ভাই পাঠক! এখন বাকী থাকে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্নঃ শী‘আ মতবাদ প্রচারের এই ঘূর্ণিঝড় এবং স্পষ্ট বিপদ প্রতিরোধে আমাদের করণীয় কি?

সম্মানিত মুসলিম ভাই! শরী‘আতের দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যাবশ্যক এবং মুসলিম জনতার জন্য নছীহত হল, যবান ও মাল দ্বারা রাফেযী বিদ‘আতের মোকাবেলা করতে হবে এবং দ্বীন ও শরী‘আতের হেফাযতার্থে এই বিস্তৃতির ভয়াবহতা সম্পর্কে মুসলমানদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।

আমরা শাসকগোষ্ঠী এবং সাধারণ জনগণ সম্মিলিতভাবে যদি শী‘আ মতবাদের এই তুফানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নিই, তাহলে এর বাতাস আগমন করবেই। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের ঘটনাপুঞ্জ কিন্তু অবাস্তব নয়। সুতরাং দ্বীনের প্রতি অধিক আগ্রহী প্রত্যেকটি মুসলমানের উচিৎ, সর্বশক্তি দিয়ে তার সুন্নী মতবাদকে সহযোগিতা করা। আমাদের করণীয় কয়েকটি বিষয় নীচের পয়েন্টগুলিতে সংক্ষিপ্তাকারে উল্লেখ করা যেতে পারেঃ-

এক. ইসলামী বিশ্বে সুন্নী মতবাদ প্রসারে আন্তরিকভাবে কাজ করে যেতে হবে এবং এই লক্ষ্যকে বাস্তবায়নের জন্য দাঈগণ ও ইসলামী প্রতিষ্ঠানসমূহকে সহায়তা প্রদান করতে হবে।

দুই. পঠন, শ্রবণ ও দর্শনযোগ্য তথ্যাবলী প্রচার করতে হবে, যা শী‘আ মতবাদের রহস্য উন্মোচন করবে এবং এর আসল উদ্দেশ্য ফাঁস করে দিবে।

তিন. সুন্নী সমাজে সুন্নী আক্বীদা পাঠদানের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। বিশেষ করে, সাহাবীগণকে সম্মান প্রদর্শন এবং তাঁদের সম্পর্কে রাফেযী কর্তৃক সৃষ্ট সন্দেহ ও অস্পষ্টতাসমূহের জবাবদানের বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।

চার. আহলে সুন্নাতকে, বিশেষ করে ইসলামী দা‘ওয়াতের কর্মীদেরকে তাঁদের নিজেদের মতানৈক্য ভুলে গিয়ে সুন্নী মতবাদকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কেননা আমাদের মতানৈক্য আমাদের বিভক্তি ও দুর্বলতার কারণ। আর এই বিভক্তি কেবল শত্রুদের স্বার্থেই কাজে লাগে।

পাঁচ. সুন্নী দেশসমূহকে অবশ্যই শক্তিশালী হতে হবে এবং এমন শক্তি অর্জনের চেষ্টা করতে হবে, যা সুন্নী দেশসমূহের প্রতি পারস্যদের লোভ-লালসাকে প্রতিহত করতে পারে। বর্তমান শক্তিই হল সব। আজকের বিশ্ব শক্তিশালী ছাড়া অন্যকে সমীহ করে না। বিশেষ করে, আজ আমরা প্রতিপক্ষকে দিনে দিনে ছুরিতে ধার দিতে এবং শক্তি পরীক্ষা করতে দেখতে পাচ্ছি।

ছয়. ইসলামের দাঈ, মিডিয়ার লোকজন এবং ব্যবসায়ীদেরকে ইসলামী চ্যানেল খুলতে হবে, যা শী‘আ মতাবলম্বী উস্কানী সৃষ্টিকারী চ্যানেলগুলির মোকাবেলা করতে পারে। কেননা আজকের যুগ মিডিয়ার যুগ। আর মিডিয়া নামক তরবারী অত্যধিক ধারালো এবং অতি প্রসারিত।

সাত. আহলে সুন্নাতকে রাফেযীদের আক্বীদা তাদেরই নির্ভরযোগ্য বই-পুস্তক থেকে প্রচার করতে হবে। যুগে যুগে তাদের খেয়ানত এবং মুসলিম উম্মাহ্‌র উপর তাদের হিংসার ইতিহাস প্রকাশ করতে হবে। আর এটাও উল্লেখ করতে হবে যে, এরা তারাই, যারা ঐক্য সৃষ্টি ও পরস্পরে কাছাকাছি আসার মিথ্যা দাবী করে।

আট. আহলে সুন্নাতকে স্বীয় ইতিহাস এবং মুসলিম উম্মাহ্‌র আক্বীদা ও ঐক্য সংরক্ষণে তাঁদের দীর্ঘ পথপরিক্রমা তুলে ধরতে হবে। মুসলিম উম্মাহ্‌র পবিত্রস্থানসমূহ রক্ষণাবেক্ষণে তাঁদের অবদানের কথাও তুলে ধরতে হবে এবং এটাও উল্লেখ করতে হবে যে, তাঁদের হাতেই দুনিয়ার সর্বত্র ইসলাম প্রসার লাভ করেছে।

শী‘আদের আক্বীদার বিবরণ এবং তাদের বিভ্রান্তি সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে নিম্নোক্ত বইগুলি পড়ুনঃ-
১. আওজাযুল খিত্বাব ফী বায়ানি মাওক্বিফিশ্‌ শী‘আতি মিনাল আছহাব ( أوجز الخطاب في بيان موقف الشيعة من الأصحاب )

২. মিন আক্বাইদিশ্‌ শী‘আহ ( من عقائد الشيعة ) ।

৩. আশ্‌-শী‘আহ আল-ইছনা আশারিইয়াহ ওয়া তাকফীরুহুম লিউমূমিল মুসলিমীন ( الشيعة الاثنا عشرية وتكفيرهم لعموم المسلمين ) ।

পরিশেষে, আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি আমাদের জন্য আমাদের দ্বীন, নিরাপত্তা ও ঈমানকে সংরক্ষণ করুন। তিনি আমাদের শত্রু ও আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের অনিষ্ট থেকে আমাদেরকে রক্ষা করুন। আমীন!

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন