HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামী সভ্যতা ও সংস্কৃতি

লেখকঃ আবুল কালাম আযাদ আনোয়ার ও আখতারুজ্জামান মুহাম্মদ সুলাইমান

১১
ইসলামে নারীর অবস্থান
ইসলামে নারীর মর্যাদা, অবস্থান এবং নারীর অধিকার সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা নিতে হলে ইসলাম পূর্বযুগে নারীর অবস্থা সম্পর্কে কিছু আলোচনা জরুরি।

ইসলাম পূর্বযুগে নারী

আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নবুওয়্যত লাভের পূর্বে ধরা-পৃষ্ঠ ছিল মূর্খতা ও ঘোর অন্ধকারাচ্ছন্ন। প্রতিটি বিষয় ও স্থানে ছিল বিশৃঙ্খলার জয়জয়কার। আকীদা-বিশ্বাস, অভ্যাস-আচরণ, চরিত্র-মাধুর্য সকল ক্ষেত্রেই ছিল অরাজকতা বিরাজমান। তথাকথিত কতিপয় প্রথা, ব্যক্তি স্বার্থ বৈ এমন কোনো নীতি-আদর্শ বিদ্যমান ছিল না, যার উপর নির্ভরশীল হতে পারে একটি সমাজ, রাষ্ট্র কিংবা মানব গোষ্ঠী।

যার কিছু নগ্ন চিত্র, বাস্তব প্রতিচ্ছবি: নারীদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণের ভেতরদিয়ে আমাদের গোচরীভূত হয়। দেখতে পাই নারীরা কেমন বেদনাদায়ক পরিবেশে দিনাতিপাত করত। কোনো অধিকার নেই, দায়িত্ব নেই, সামর্থ্যের বাইরে সামান্য প্রাপ্যও নেই। এরই কতিপয় নমুনা আমরা এখানে তুলে ধরছি।

(ক) জন্মের পর থেকেই নারী অপয়া। জন্মের পূর্বে পিতা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করত, বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত থাকত, পুত্র সন্তানের আগমনে কীভাবে আনন্দ করবে, কোনো ধরনের উৎসবের আয়োজন করবে ইত্যাদি বিষয়ে। হঠাৎ কন্যা সন্তানের সংবাদ শুনলে মাথা নত হয়ে যেত। মন সংকীর্ণ হয়ে আসতো। বিবর্ণ হয়ে যেত চেহারা। অন্ধকার মনে হত সূর্যালোকিত এ পৃথিবী। অপমান আর লজ্জার গ্লানিতে লোকালয় পরিত্যাগ করত।

(খ) কেউ কেউ কন্যাসন্তান জনিত গ্লানি মুছতে জীবিত দাফন করে দিত তাকে। আবার বাঁচিয়ে রাখলেও অপমান আর লাঞ্ছনার সাথে। স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা যার উল্লেখ করছেন পবিত্র কুরআনে। তিনি বলেন-

﴿ وَإِذَا بُشِّرَ أَحَدُهُم بِٱلۡأُنثَىٰ ظَلَّ وَجۡهُهُۥ مُسۡوَدّٗا وَهُوَ كَظِيمٞ ٥٨ يَتَوَٰرَىٰ مِنَ ٱلۡقَوۡمِ مِن سُوٓءِ مَا بُشِّرَ بِهِۦٓۚ أَيُمۡسِكُهُۥ عَلَىٰ هُونٍ أَمۡ يَدُسُّهُۥ فِي ٱلتُّرَابِۗ أَلَا سَآءَ مَا يَحۡكُمُونَ ٥٩ ﴾ [ النحل : ٥٨، ٥٩ ]

তাদের কাউকে যখন কন্যা সন্তানের শুভসংবাদ প্রদান করা হয়, তখন সাথে সাথে তার মুখাবয়ব কালো হয়ে যায় এবং অসহ্য মনস্তাপে ক্লিষ্ট হতে থাকে। প্রাপ্ত অশুভ সংবাদ শুনে স্বজাতি হতে মাথা লুকিয়ে নেয়। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায় স্বীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপারেতকি করবে একে নিয়ে। অপমানসহ বাঁচিয়ে রাখবে, না মাটির নীচে পূতে ফেলবে। জেনে নাও, তারা নেহায়েত নির্মম, নিষ্ঠুর ও অসুন্দর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। [নাহাল : ৫৯]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন-

﴿ وَإِذَا ٱلۡمَوۡءُۥدَةُ سُئِلَتۡ ٨ بِأَيِّ ذَنۢبٖ قُتِلَتۡ ٩ ﴾ [ التكوير : ٨، ٩ ]

‘স্মরণ কর, যখন জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে, কি অপরাধে তাকে হত্যা করা হল?’ [তাকওয়ীর : ৮]

(গ) নারীর অর্থনৈতিক অধিকার? সেও ছিল তথৈবচ। উত্তরাধিকার বলতে কোনো জিনিসই ছিল না তাদের ক্ষেত্রে।ব্যাপারটি এপর্যন্ত সীমিত থাকলে কথা ছিল কিন্তু বাস্তব অবস্থা ছিল আরো অমানবিক আরো করুন,স্বামীর মৃত্যুর পর তাকেই বরং উত্তরাধিকার ও ভোগ্যপণ্য গণ্য করা হত ।

(ঘ) নারী যখন জায়া তখন সে কি তার দাম্পত্য অধিকার নিয়ে ভাবার প্রয়াস পেত? এ চিন্তা ছিল কল্পনারও অতীত কারণ স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী ছিল উত্তরাধিকার, স্বামীর অন্য পক্ষের সন্তান অথবা কোনো নিকট আত্মীয় তাকে উত্তরাধিকার হিসেবে নিয়ে নিত, যার ইচ্ছা বিয়ে করত আবার কেউ এমনিই আবদ্ধ করে রেখে দিত। অন্যত্র বিবাহের কোনো কল্পনা করাও ছিল নিষিদ্ধ। বরং বাধার সৃষ্টি করত অন্যত্র বিবাহ করতে। শান্তির ধর্ম ইসলাম এসে তাদের এ অবস্থা হতে মুক্ত করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا يَحِلُّ لَكُمۡ أَن تَرِثُواْ ٱلنِّسَآءَ كَرۡهٗاۖ وَلَا تَعۡضُلُوهُنَّ لِتَذۡهَبُواْ بِبَعۡضِ مَآ ءَاتَيۡتُمُوهُنَّ ﴾ [ النساء : ١٩ ]

হে ঈমানদারগণ! জোরপূর্বক নারীদের উত্তরাধিকার হিসেবে গ্রহণ করা তোমাদের জন্য বৈধ নয়। তোমাদের প্রদত্ত কিয়দংশ সম্পদ নিয়ে যাবে বলে, তাদের আবদ্ধ করে রেখো না। [নিসা : ১৯]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন-

﴿ وَلَا تَنكِحُواْ مَا نَكَحَ ءَابَآؤُكُم مِّنَ ٱلنِّسَآءِ إِلَّا مَا قَدۡ سَلَفَۚ إِنَّهُۥ كَانَ فَٰحِشَةٗ وَمَقۡتٗا وَسَآءَ سَبِيلًا ٢٢ ﴾ [ النساء : ٢٢ ]

যে সকল নারীদের তোমাদের পিতা-পিতামহ বিবাহ করেছে, তোমরা তাদের বিবাহ করো না। তবে অতীত তো অতীতই। এটা অশ্লীল, শাস্তিযোগ্য ও নিকৃষ্ট আচরণ। [নিাসা : ২২]

(ঙ) শ্রদ্ধা ও সম্মান এবং এ জাতীয় বিষয় নিয়ে নারীরা চিন্তাও করত না। তাদের ক্ষেত্রে এগুলো ছিল কল্পনা বিলাস। নারী সে সময়ে! জীবন্ত প্রোথিত হত শৈশবে, নাহয় -বেচে থাকলে- লাঞ্ছনার জীবন ও পণ্যত্ব বরণ। তার কোনো অধিকারই স্বীকৃত ছিল না। তাহলে ঐ নারী কেমন জীবন যাপন করত?!

ইসলামে নারী

নারীর এ হীনতর অবস্থায় ইসলাম জীবন তরী হয়ে আগমন করল। টেনে তুলল ক্লান্ত-হাবুডুবুরত নারীকে বিস্তৃত-গহিন সমুদ্র হতে। উপহার দিল সুখকর স্বাচ্ছন্দ্যময় একটি বর্নীল-কাংখিত জীবন। যেখানে রয়েছে শিশু-কিশোরীদের স্নেহ-মমতা-আদর আর আদর। সাবালকত্বে রয়েছে পছন্দ-অপছন্দের সব অধিকার। পূর্ণ বয়স্কাদের জন্য আছে বোনের মর্যাদা কিংবা স্ত্রীর সম্মান। অতঃপর পরম শ্রদ্ধার্হ একজন মা।

নারীর ন্যায্য-যোগ্য-প্রাপ্য সব অধিকারই প্রদান করল ইসলাম। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সকল অধিকার নিশ্চিতও করল। এমনকি মৃত্যুর পরও। নিম্নে তার সামান্য চিত্র প্রদত্ত হল।

(ক) আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতি সৃষ্টি করেছেন সাথে সাথে তার আনুগত্য-ইবাদতের দায়িত্বও অর্পণ করেছেন। বিধান রেখেছেন জবাবদিহিতারও। নারী-পুরুষ সকলেই সমান। শিষ্টের লালন-দুষ্টের দমন, ভালোর প্রতিদান এবং মন্দের শাস্তির বিধানও রেখেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

﴿ لَّيۡسَ بِأَمَانِيِّكُمۡ وَلَآ أَمَانِيِّ أَهۡلِ ٱلۡكِتَٰبِۗ مَن يَعۡمَلۡ سُوٓءٗا يُجۡزَ بِهِۦ وَلَا يَجِدۡ لَهُۥ مِن دُونِ ٱللَّهِ وَلِيّٗا وَلَا نَصِيرٗا ١٢٣ وَمَن يَعۡمَلۡ مِنَ ٱلصَّٰلِحَٰتِ مِن ذَكَرٍ أَوۡ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤۡمِنٞ فَأُوْلَٰٓئِكَ يَدۡخُلُونَ ٱلۡجَنَّةَ وَلَا يُظۡلَمُونَ نَقِيرٗا ١٢٤ ﴾ [ النساء : ١٢٣، ١٢٤ ]

‘যে মন্দ কাজ করবে, সে তার শাস্তি ভোগ করবে। আল্লাহ ছাড়া সে কোনো বন্ধু কিংবা সাহায্যকারীরও সন্ধান পাবে না। পুরুষ কিংবা নারী যে কেউ ঈমান এনে সৎকর্ম করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারা তিল পরিমাণও প্রাপ্য হতে বঞ্চিত হবে না।’

(খ) আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় সৃষ্টি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত। সে জ্ঞান ও হিকমতের ভিত্তিতে কতক জিনিসের ভেতর আলাদা বিশেষত্ব প্রদান করেছেন। যা তার দায়িত্ব ও কাজ-কর্মে বিকশিত হয়। তেমনি কতক বিশেষত্বের অধিকারী নারী। যেমন কোমলতা, নমনীয়তা ও দ্রুত প্রতিক্রিয়াশীলতা। এগুলো তাদের সৃষ্টিগত স্বভাব। এর ভিত্তিতেই তার দায়িত্ব ও কর্তব্য বণ্টন করেছে মানুষের স্বভাব অনুযায়ী প্রদত্ত দীন ইসলাম। এজন্য আল্লাহ তা‘আলা তাদের সৃষ্টিগত বৈশিষ্টের সাথে সঙ্গতি রেখেই দায়িত্ব দিয়েছেন, এমন কোনো দায়িত্ব দেননি যা তার সাধ্যের বাইরে। আর পুরুষকে নারীর উপর ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব দিয়েছেন,তার দায়িত্বের চাহিদা ও ঐ বৈশিষ্টের কারণে যা তাকে আলাদা স্বাতন্ত্র দিয়েছে। আল্লাহই সুউচ্চ কৌশলের মালিক ।

(গ) মেয়েদেরকে ছোট অবস্থায় আদরের সাথে লালন পালন করার প্রতিদান অধিক।

ইমাম মুসলিম র. আনাস রা. থেকে বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

যে ব্যক্তি দুটি মেয়েকে পূর্ণ বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত ভালভাবে লালন-পালন করল, কেয়ামতের দিন সে আর আমি একত্রে আসব। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূল স. আঙুল একত্রে মিলিয়ে দেখালেন।

(ঘ) ইসলাম নারীদেরকে ছোট অবস্থা থেকেই ধর্মীয় শিক্ষা, উত্তম চরিত্র, পবিত্রতা, চরিত্র রক্ষা... শিক্ষা দেওয়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার পথ দেখিয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন―

«مروا أولادكم بالصلاة لسبع، واضربوهم عليها لعشر، وفرقوا بينهم فى المضاجع» .

তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে সাত বছর বয়সে উপনীত হলে নামাযের আদেশ কর আর দশ বছর হয়ে গেলে তার জন্যে শাস্তি প্রয়োগ কর এবং বিছানা আলাদা করে দাও। [আবু দাউদ : ৪১৮]

(ঙ) নারীকে স্বামীর সাথে জীবন যাপন করতে হবে এদিকের গুরুত্ব বিবেচনা করে ইসলাম আদেশ দিয়েছে যে ইতোপূর্বে যারা তাকে বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছে এদের মধ্যে কাকে তার জন্যে নির্বাচন করা যায় এবিষয়ে তার সাথে পরামর্শ করতে হবে। সাথে সাথে কোন কোন গুণের বিবেচনায় পাত্র নির্বাচন করা হবে তারও একটি দিকনির্দেশনা দিয়েছে। যেমন দ্বীনদারী এবং ভালো চরিত্র। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন―

«إذا أتاكم من ترضون دينه وخلقه فزوجوه إلا تفعلوا تكن فتنة في الأرض وفساد عريض» .

যখন তোমাদের কাছে বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে আসে এমন লোক যার দ্বীন এবং চরিত্র নিয়ে তোমরা সন্তুষ্ট, তাহলে তার সাথে বিবাহ দিয়ে দাও। এবং ব্যতিক্রম করলে পৃথিবীতে অশান্তি এবং অধিক বিশৃঙ্খলা হবে। [ইবনে মাজাহ : ১৯৫৭]

(চ) আল্লাহ তা‘আলা স্বামীকে স্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন, তার যত্ন নেওয়া এবং সুন্দরভাবে দেখা-শোনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন―

«خياركم خياركم لأهله، وأنا خياركم لأهلي» .

তোমাদের সর্বোত্তম সে যে তার পরিবারের কাছে সর্বোত্তম। আর আমি আমার পরিবারের কাছে সর্বোত্তম। [ইবনে মাজাহ : ১৯৬৭]

আল্লাহর রাসূল আরো বলেন―

«استوصوا بالنساء خيرا، فإن المرأة خلقت من ضلع أعوج» .

তোমরা নারীর ব্যাপারে কল্যাণ কামী হও। কেননা, নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে পাঁজরের বক্র হাড় থেকে। [মুসলিম : ২৬৭১]

(ছ) নারী মা, এদিকটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ইসলাম তার জন্যে এমন কিছু অধিকার নিশ্চিত করেছে যে সম্পর্কে প্রাচীন বা আধুনিক মানব রচিত কোনো বিধানই কখনো চিন্তা করেনি।

তার সম্মানের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, আল্লাহ তা‘আলা নিজের অধিকারের পর মাতা-পিতার অধিকারকে স্থান দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন―

﴿ ۞وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعۡبُدُوٓاْ إِلَّآ إِيَّاهُ وَبِٱلۡوَٰلِدَيۡنِ إِحۡسَٰنًاۚ إِمَّا يَبۡلُغَنَّ عِندَكَ ٱلۡكِبَرَ أَحَدُهُمَآ أَوۡ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَآ أُفّٖ وَلَا تَنۡهَرۡهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوۡلٗا كَرِيمٗا ٢٣ وَٱخۡفِضۡ لَهُمَا جَنَاحَ ٱلذُّلِّ مِنَ ٱلرَّحۡمَةِ وَقُل رَّبِّ ٱرۡحَمۡهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرٗا ٢٤ ﴾ [ الاسراء : ٢٣، ٢٤ ]

আপনার পালনকর্তা আদেশ করছেন যে, তাকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না এবং মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার কর। তাদের মাঝে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদের কে উফ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিয়ো না। এবং বল তাদেরকে শিষ্টচার পূর্ণ কথা। তাদের সামনে নম্রতার সাথে মাথা পেতে দাও। এবং বল হে পালনকর্তা! তাঁদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবে লালন-পালন করেছে। [আল-ইসরা : ২২]

মুসলিম নারীর বৈশিষ্ট্য:

ইসলাম নারীকে মর্যাদা দিয়েছে, দান করেছে তাদের এমন বৈশিষ্ট্য যার মাধ্যমে তাদেরকে অন্যদের থেকে স্বতন্ত্র করে দিয়েছে এবং তাদেরকে সেগুলো সংরক্ষণের আদেশ দিয়েছে। সে বৈশিষ্টাবলীর কিছু নিম্নে প্রদান করা হল:

ক) নারীকে পর্দার বিধান দেওয়া হয়েছে যে, নারীরা তাদের সমস্ত শরীর অপরিচিত পুরুষ হতে ঢেকে রাখবে, যাতে করে তাকে গোপন তীর আঘাত করতে না পারে এবং তার চরিত্র ও পবিত্রতা কালিমা যুক্ত না হয়ে যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন―

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ قُل لِّأَزۡوَٰجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ يُدۡنِينَ عَلَيۡهِنَّ مِن جَلَٰبِيبِهِنَّۚ ذَٰلِكَ أَدۡنَىٰٓ أَن يُعۡرَفۡنَ فَلَا يُؤۡذَيۡنَۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ٥٩ ﴾ [ الاحزاب : ٥٩ ]

‘হে নবী! আপনি আপনার পত্নী, কন্যা এবং মুমিনদের স্ত্রী-গণ কে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্ত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ [আল-আহযাব : ৫৯]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন-

﴿وَقُل لِّلۡمُؤۡمِنَٰتِ يَغۡضُضۡنَ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِنَّ وَيَحۡفَظۡنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنۡهَاۖ وَلۡيَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّۖ﴾ [ النور : ٣١ ]

‘আর ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং যৌনাঙ্গের হেফাযত করে।আর সাধারণত: যা প্রকাশমান, তাছাড়া তাদের সৌন্দর্য যেন প্রদর্শন না করে। এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ-দেশে ফেলে রাখে।’ [নূর : ৩১]

খ) ইসলাম পুরুষকে রক্তের সম্পর্কবিহীন নারীর সাথে একাকিত্বে সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ করেছে, যদিও সে নিকট আত্মীয় হয়। যেমন চাচাত ভাই, মামাত ভাই, দেবর ইত্যাদি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন―

«إياكم والدخول على النساء» .

‘মহিলাদের নিকট প্রবেশ করা থেকে সাবধান!’ [তিরমিযী : ১০৯১]

আনসারদের একজন বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি দেবরের কথা বলছেন? রাসূলহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

«الحمو الموت» .

দেবর হল মৃত্যু সমতুল্য। [বুখারী: ৪৮৩১]

গ) নারীর স্থান তার ঘরে। ঘরই তার কাজের ময়দান। ঘরই তার দায়বদ্ধতার জায়গা, সেখানে তার দৃষ্টির হেফাযত হবে। সন্তানদেরকে লালন-পালন করবে। নিজ স্বামীর বিষয়াদি দেখবে। সহীহ হাদীসে এসেছে―

«كلكم راع، وكلكم مسؤول عن رعيته فالإمام راع ومسؤول عن رعيته ...... والمرأة فى بيت زوجها راعية ومسؤولة عن رعيتها، والخادم فى مال سيده راع و مسؤول عن رعيته» .

‘তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল, প্রত্যেককে তার অধিনস্ত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে। ইমাম দায়িত্বশীল এবং তাকে তার অধিনস্ত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে। .......নারী তার স্বামীর ঘরে দায়িত্বশীল, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে। সেবক তার মালিকের সম্পদের দায়িত্বশীল তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।’ [বুখারী: ২৩৮৯]

এবং আল্লাহ বলেন-

﴿ وَقَرۡنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ ٱلۡأُولَىٰۖ﴾ [ الاحزاب : ٣٣ ]

‘আর তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে, মূর্খতার যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না। [আল-আহযাব : ৩৩]

এর অর্থ এই নয় যে, নারীদের জন্য কোনো কর্মই বৈধ নয় বরং তাদের নিজস্ব পরিমণ্ডলে সম্ভ্রম বজায় রেখে কাজ করাতে কোনো দোষ নেই। যেমন মেয়েদের শিক্ষকতা করা, তাদের চিকিৎসা করা এবং সামাজিকভাবে তাদের দেখাশোনা করা। এবং শরীয়তের নিয়মের ভিতরে থেকে এ জাতীয় যা করা যায়।

ঘ) নিজের ঘর থেকে বের হওয়ার সময় সংশ্লিষ্ট আদব রক্ষা করে বের হবে। যেমন পর্দা রক্ষা করা, শরীর ভালভাবে ঢেকে নেয়া, গাম্ভির্য রক্ষা করা ইত্যাদি। প্রয়োজন ছাড়া বের হবে না, সুগন্ধি লাগিয়ে সাজসজ্জা করে বের হবে না।

আবু দাউদ শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

«إِذَا اسْتَعْطَرَتِ الْمَرْأَةُ، فَمَرَّتْ عَلَى الْقَوْمِ لِيَجِدُوا رِيحَهَا، فَهِيَ كَذَا وَكَذَا»

‘নারী যখন সুগন্ধি ব্যবহার করে কোনো জনসমক্ষের পাশ দিয়ে যায়; যাতে তারা তার সুগন্ধ পায়, তবে সে মহিলা এমন এমন। (খুব কঠিন কথা বলেছেন। অর্থাৎ ব্যভিচারিণী। [আবু দাউদ, ৪১৭৩।]

আর এই সতর্কতা এই জন্যে যে, শয়তান যেন তার কিংবা পুরুষদের অন্তরে প্রবেশ করতে না পারে।

ঙ) বেগানা পুরুষের সাথে অতি প্রয়োজন ছাড়া কোনো কথা না বলা, যদি কিছু বলার প্রয়োজন হয় তাহলে যথাযথ আদব ও সম্মানের সাথে নম্র ও কোমলতা ছাড়া কথা বলবে। আল্লাহ বলেন-

﴿ يَٰنِسَآءَ ٱلنَّبِيِّ لَسۡتُنَّ كَأَحَدٖ مِّنَ ٱلنِّسَآءِ إِنِ ٱتَّقَيۡتُنَّۚ فَلَا تَخۡضَعۡنَ بِٱلۡقَوۡلِ فَيَطۡمَعَ ٱلَّذِي فِي قَلۡبِهِۦ مَرَضٞ وَقُلۡنَ قَوۡلٗا مَّعۡرُوفٗا ٣٢ ﴾ [ الاحزاب : ٣٢ ]

নবী পত্নীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও, যদি তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে পর-পুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না। ফলে সেই ব্যক্তি যার অন্তরে ব্যাধি আছে কু-বাসনা করে বসবে এবং তোমরা সংগত কথা বলবে। [আল-আহযাব : ৩২]

নারী-পুরুষের অবাধে মেলামেশার ক্ষতি

মুসলিম নারীর বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ব্যক্তিত্বের ক্ষতি সাধন করার জন্য যতগুলি মাধ্যম আছে, তার মাঝে সবচেয়ে ক্ষতিকর মাধ্যম হল, পর-পুরুষের সাথে অবাধে মেলামেশা করা। বিশেষ করে নির্জনে মেলামেশা করা। বর্তমান যুগে অমুসলিম নারীরা অবাধ মেলামেশার এই ফাসাদে এমনভাবে পতিত হয়েছে যে মানুষ নামের নেকড়ের সামনে এরা সস্তা পণ্যে পরিণত হয়েছে। মানব জাতির সম্মানকে কর্দমাক্ত করে বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রচার মাধ্যম হিসাবে নিজেদের প্রচার করছে। নিজের পবিত্রতাকে শিল্পকারখানার ধুয়া দ্বারা কলুষিত করেছে। এমনকি নিজের চরিত্রকে পয়সার বিনিময়ে বিলিয়ে দিয়েছে।

এই হল অমুসলিম নারীর সংক্ষিপ্ত অবস্থা। এর মূল কারণ হল আল্লাহর নিয়ম পদ্ধতি থেকে দূরে থাকা এবং পর-পুরুষের সাথে কর্মস্থলে, কারখানায়, দোকানে মেলামেশা করা। সংক্ষেপে অবাধে মেলামেশা অপকার এবং ক্ষতি এভাবে নিরূপণ করতে পারি।

ক) আল্লাহ তা‘আলার বেধে দেওয়া পথ ও পন্থা হতে বের হয়ে আসা। কারণ মহান আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিজস্ব প্রজ্ঞানুযায়ী মানুষদের ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট দিয়ে নারী ও পুরুষ করে সৃষ্টি করেছেন। পুরুষ বাইরে কাজ করবে ও নারী অন্দরে। এখন যদি নারী পুরুষ অবাধে মেলামেশা শুরু করে তাহলে প্রত্যেককে এমন দায়িত্ব মাথায় নিতে হবে যা মূলত তার ক্ষমতার বাইরে। আর এতে করে জীবনের গতি-শৃংখলাই ব্যহত হবে ।

খ) এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, নারী পুরুষ অবাধে মেলামেশার দ্বারা যৌবনের তপ্ত বাসনা জাগ্রত হয়। খারাপ কামনার আগুনকে বাড়িয়ে দেয়। একে অন্যকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে, তখন পাশবিকতার লাগাম এমনভাবে বিস্তার লাভ করে যে তার কোনো পরিসীমা থাকে না। তখন দুজনই কামনা বাসনা পূরণ করার কাজে বন্দি হয়ে যায়।

গ) মানুষ যখনই অবৈধভাবে যৌন বাসনা পুরা করার পিছনে পড়ে যায়, তখন তার চিন্তাশক্তি এবং বুদ্ধিলোপ পায় এবং ভালো গুণাবলি ধ্বংস হয়ে যায়। যেমন ধৈর্য, সহনশীলতা ইত্যাদি।

ঘ) অবাধে মেলামেশা নারী-পুরুষকে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের দিকে নিয়ে যায়। আর এর থেকে সৃষ্টি হয় কঠিন রোগ এইডস, যার কোনো চিকিৎসা নেই।

ঙ) মানুষ তার কামনার পিছনে দৌড়ালে, যা সাধারণত: নারী-পুরুষের অবাধে মেলামেশার দ্বারা সৃষ্টি হয়, সমাজ তখন অনৈতিক আনন্দ-ফুর্তি, খেলাধুলা এবং অহেতুক কাজের সমাজ হয়ে যায়।

চ) স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিরোধ এবং তালাকের প্রবনতা বৃদ্ধি পায়। কেননা প্রত্যেকে অন্যত্র তার যৌন চাহিদা পূরণ করতে পারে। এতে কারো কোনো দুঃখ ও মনস্তাপ হয়না কারণ প্রত্যেকেরইতো বিকল্প হিসাবে বন্ধু বান্ধবী আছে ।

ছ) অধিক হারে জারজ সন্তান জন্ম নেয় এবং সমাজে এর খারাপ প্রভাব পড়ে।

জ) পারিবারিক বন্ধন নষ্ট হয়ে যায়, সন্তানের ভবিষ্যত নষ্ট হয়ে যায়, তাদেরকে সুন্দরভাবে লালন-পালন করা যায় না। তাদের প্রতি কর্তব্যগুলি সঠিকভাবে পালন করা হয় না।

সবশেষে মহান রাব্বুল আলামিনের প্রশংসা করি যিনি মুসলিমদেরকে সুন্দর পথ প্রদর্শন করেছেন, যে পথে মান-সম্মান, ধর্ম, চরিত্র, বংশ মর্যাদা, সমস্ত কিছু রক্ষা হয় এবং জীবনের সকল ক্ষেত্র সহজ-সরল হয়।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন