HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

জানাযার কিছু বিধান

লেখকঃ শিহাবউদ্দিন হোসাইন

সালাতুল জানাযা ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা
প্রশ্ন -১ দাফনের পর সালাতে জানাযার হুকুম কি? তা কি একমাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ?

উত্তর - দাফনের পর জানাযা পড়া সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাফনের পর জানাযার সালাত পড়েছেন। যে ব্যক্তি জামাতের সহিত সালাত পাড়েনি সে দাফনের পর পড়বে। যে একবার পড়েছে সে ইচ্ছা করলে অন্যান্য মুসল্লিদের সাথে একাধিকবার পড়তে পারবে, এতে কোন সমস্যা নেই। আলেমদের প্রসিদ্ধ মতানুসারে দাফনের একমাস পর পর্যন্ত জানাযার সালাত পড়া যায়।

প্রশ্ন ২- জানাযায় অংশগ্রহণকারীর যদি আংশিক সালাত ছুটে যায় তাহলে তা আদায় করতে হবে কি?

উত্তর – হ্যাঁ, ছুটে যাওয়া অংশ সাথে সাথে আদায় করে নিবে। যদি ইমামকে তৃতীয় তাকবীরে পায় তাহলে সে তাকবির বলে সূরা ফাতিহা পড়বে, ইমাম যখন চতুর্থ তাকবীর বলবে তখন সে দ্বিতীয় তাকবীর বলে রাসূলের উপর দরুদ পড়বে, ইমাম যখন সালাম ফিরাবে তখন সে তৃতীয় তাকবীর বলে দু’আ পড়বে অতঃপর চতুর্থ তাকবির দিয়ে সালাম ফিরাবে।

প্রশ্ন ৩- ছুটে যাওয়া আংশিক সালাত আদায়ের আগেই যদি লাশ তুলে নেয়া হয় তাহলে অবশিষ্ট সালাত কিভাবে আদায় করবে?

উত্তর – সাথে সাথে তাকবিরে তাহরিমা বলে সূরা ফাতিহা পড়বে, অতঃপর ইমামের সাথে তাকবির বলবে ও রাসূলের উপর দরুদ পড়বে। অতঃপর ইমাম সালাম ফিরালে সে তাকবির দিয়ে দো‘আ করবে, যার অর্থ: “হে আল্লাহ, তুমি এ মৃতকে ক্ষমা কর, অতঃপর তাকবির বলে সালাম ফিরাবে”। ইমামের সাথে দু’তাকবির পেলে বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করবে।

প্রশ্ন ৪- জানাযার সালাতে ইমামের ডানপাশে কাতার বন্ধি জায়েয কি না?

উত্তর - প্রয়োজনে ইমামের ডান ও বাম দিকে কাতার বন্ধি করা যেতে পারে, তবে ইমামের পিছনে কাতার বন্ধি করাই সুন্নত, কিন্তু জায়গার সঙ্কীর্ণতার কারণে ইমামের ডান ও বামে কাতার হতে পারবে।

প্রশ্ন ৫- মুনাফেকের উপর জানাযার নামাজ পড়া যাবে কি?

উত্তর – যার নেফাক সুস্পষ্ট, তার উপর জানাযার সালাত পড়া যাবে না। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

﴿وَلَا تُصَلِّ عَلَىٰٓ أَحَدٖ مِّنۡهُم مَّاتَ أَبَدٗا ٨٤﴾ [ التوبة : 84]

“আর তাদের মধ্যে যে মারা গিয়েছে, তার উপর তুমি জানাযা পড়বে না”। সূরা আত-তাওবাহ: (৮৪) আর যদি নেফাকির বিষয়টি অস্পষ্ট বা অপবাদমুলক হয়, তাহলে তার উপর জানাযা পড়া যাবে, কারণ মৃতের উপর জানাযা পড়া অকাট্য দলীলের কারণে ওয়াজিব, যা কোন সন্দেহের দ্বারা রহিত হবে না।

প্রশ্ন ৬- লাশ দাফনের একমাস পর কবরের উপর জানাযা পড়া যাবে?

উত্তর - এ প্রসঙ্গে আলেমদের মতানৈক্য রয়েছে, তাই উত্তম হল একমাসের পর না পড়া। অধিকাংশ বর্ণনা মতে দেখা যায় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একমাস পর্যন্ত কবরের উপর জানাযা পড়েছেন, একমাসের বেশী সময় অতিবাহিত হওয়ার পর নামাজ পড়ছেন বলে কোন প্রমাণ নেই। তাছাড়া প্রকৃতপক্ষে জনাযা তো দাফনের পূর্বে পরে নয়।

প্রশ্ন ৭- জানাযার স্থানে পৌঁছতে অক্ষম ব্যক্তি গোসল খানায় জানাযা পড়তে পারবে?

উত্তর – হ্যাঁ, পড়তে পারবে যদি গোসলখানা পাক হয়।

প্রশ্ন ৮- মৃতব্যক্তিকে সালাত পর্যন্ত কোন কক্ষে রাখতে কোন অসুবিধা আছে কি?

উত্তর – না, তাতে কোন অসুবিধা নেই।

প্রশ্ন ৯- একটি হাদিস বলা হয় যে,

«إنَّ الشَّيَاطِيْنَ تَلْعَبُ بِالْمَيِّتِ»

“শয়তান মৃতব্যক্তিকে নিয়ে খেলা করে”। এ হাদিসটি কতটুকু শুদ্ধ?

উত্তর - এটি একটি বিভ্রান্তিকর কাথা, আমাদের জানামতে ইসলামি শরি‘আতে এর কোন ভিত্তি নেই।

প্রশ্ন ১০- যারা কবরের উপর নির্মিত মসজিদে নামায পড়া বৈধ মনে করে, তারা তাদের সপক্ষে দলিল পেশ করে যে, মসজিদে নববিও তো কবরের উপর, সেখানে কিভাবে সালাত শুদ্ধ হচ্ছে?

উত্তর - রাসূলের কবর মসজিদে নয় বরং রাসূলের কবর তাঁর ঘরের ভিতর। যারা ধারণা করে যে মসজিদে নববি রাসূলের কবরের উপর তাদের ধারণা ভুল।

প্রশ্ন ১১- জানাযার নামাজে ইমামতির জন্য মসজিদের স্থায়ী ইমাম অধিক হকদার, না মৃতের ওয়ারিসগণ?

উত্তর – জানাযা যদি মসজিদে হয়, তাহলে মসজিদের ইমামই জানাযা পড়াবে।

প্রশ্ন ১২- আমরা জানি যে দাফনের পর প্রায় একমাস পর্যন্ত মৃতের উপর নামাজ পড়া যায়। তাহলে প্রশ্ন জাগে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে তাঁর শেষ জীবনে “জান্নাতুল বাকি”তে (মসজিদের নববির আশে অবস্থিত গোরস্তান) দাফন কৃত সাহাবাদের উপর জানাযা পড়েছেন এবং তাদেরকে সম্বোধন করে কথা বলেছেন?

উত্তর - তাদের উপর জানাযা পড়েছেন, এর অর্থ হচ্ছে তাদের জন্যে দু’আ করেছেন, আর মৃতদের জন্যে দো‘আ যে কোন সময় হতে পারে।

প্রশ্ন ১৩- যে মসজিদে কবর বিদ্যমান, সেখানে কি সালাত পড়া যাবে?

উত্তর – না, যে মসজিদে কবর রয়েছে সেখানে সালাত পড়া যাবে না। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াহূদী ও খৃস্টানদেরকে এ জন্যে অভিশাপ করেছেন যে, তারা তাদের নবীগণের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছিল।

প্রশ্ন ১৪- যদি অবস্থা এমন হয় যে পুরা শহরে একটি মাত্র মসজিদ, আর তাতে রয়েছে কবর এমতাবস্থায় মুসলিমগণ কি ঐ মসজিদে নামায পড়বে?

উত্তর - মুসলিম কখনো সে মসজিদে সালাত পড়বে না। যদি কবরহীন অন্য কোন মসজিদ পাওয়া যায় তা হলে ঐ মসজিদে পড়বে অন্যথায ঘরেই সালাত পড়বে। কোন মসজিদে কবর থাকলে দেখতে হবে যে, মসজিদ আগে নির্মাণ হয়েছে না কবর আগে তৈরি হয়েছে, যদি মসজিদ আগে হয়ে থাকে তাহলে কর্তৃপক্ষের উপর ওয়াজিব হচ্ছে কবর খনন করে সেখান হতে অবশিষ্ট হাড্ডি মাংশ উত্তলন করে সাধারণ জনগনের জন্যে ব্যাবহারিত কবরস্থানে স্থানান্তর করা। আর যদি কবর পূর্ব হতে থাকে আর মসজিদ পরে নির্মাণ হয়। তাহলে সেখান থেকে মসজিদ ভেঙ্গে অন্য জায়গায় নির্মাণ করবে, যেখানে কোন কবর নেই।

কারণ আম্বিয়ায়ে কেরামের কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ করার কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াহূদী ও খৃস্টানদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন। মুমিন জননী উম্মে সালমা ও উম্মে হাবীবাহ যখন সংবাদ দিলেন যে, হাবশায় তাঁরা এমন একটি গির্জা দেখেছেন যেখানে প্রতিমার ছবি নির্মিত। এতদশ্রবণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “তাদের মাঝে কোন সৎকর্মশীল লোক মারা গেলে তারা তাদের কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ করত এবং সেখানে তাদের প্রতিমা স্থাপন করত। তারা আল্লাহর নিকট এ ভূ-পৃষ্ঠের মধ্যে নিকৃষ্টতম প্রাণী”। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, কোন ব্যক্তি কবরের উপর নির্মিত মসজিদে সালাত পড়লে তা বাতিল বলে গণ্য, এ সালাত পুনরায় পড়তে হবে।

প্রশ্ন ১৫- স্বেচ্ছাসেবামূলক রক্তদান জায়েয আছে কি না?

উত্তর - প্রয়োজনে দেয়া যেতে পারে, তবে লক্ষ্য রাখাতে হবে যে দানকারীর যেন কোন কষ্ট না হয়। আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ

﴿وَقَدۡ فَصَّلَ لَكُم مَّا حَرَّمَ عَلَيۡكُمۡ إِلَّا مَا ٱضۡطُرِرۡتُمۡ إِلَيۡهِۗ١١٩﴾ [ الأنعام :119]

“অথচ তিনি তোমাদের জন্য বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন, যা তোমাদের উপর হারাম করেছেন। তবে যার প্রতি তোমরা বাধ্য হয়েছ”। সূরা আল-আনআম: (১১৯)

প্রশ্ন ১৬- জানাযার নিয়ম কি ?

উত্তর - জানাযার নিয়ম এই যে, প্রথমে তাকবির বলে ইমাম সাহেব আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পড়ে সূরা-ফাতিহা পড়বে। সূরা ফাতিহার সাথে সূরায়ে ইখলাস বা সূরায়ে ‘আসরের ন্যায় কোরআনের কোন ছোট সূরা বা কিছু আয়াত মিলিয়ে নেয়া মুস্তাহাব। সাহাবি আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে সূরা মিলিয়ে জানাযা পড়তেন। অতঃপর দ্বিতীয় তাকবির দিয়ে রাসূলের উপর দরুদ পড়বে, যেমন অন্যান্য নামাযের শেষ বৈঠকে পড়া হয়। অতঃপর তৃতীয় তাকবির দিয়ে মৃতের জন্যে দু’আ করবে, দু’আর সময় নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে শব্দের আভিধানিক পরিবর্তন প্রয়োগ করবে, একাধিক জানাযা হলে বহুবচনের সর্বনাম ব্যবহার করবে। অতঃপর চতুর্থ তাকবির বলবে এবং ক্ষণকাল চুপ থেকে ডান দিকে এক সালাম ফিরিয়ে জানাযা শেষ করবে।

আর ছানা ইচ্ছা করলে পড়তেও পারে, আবার ইচ্ছা করলে ছেড়েও দিতে পারে। তবে তা পরিত্যাগ করাই উত্তম হবে। কেননা, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা জানাযা নিয়ে তাড়াতাড়ি করবে।” (বুখারি ও মুসলিম)

প্রশ্ন ১৭- যে ব্যক্তি জানাযা ও দাফনে অংশগ্রহণ করবে সে কি দু’কিরাত নেকি পাবে?

উত্তর – হ্যাঁ, সে দু’কিরাত নেকি পাবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

«من تبع الجنازة حتى يصلى عليها ويفرغ من دفنها فإنه يرجع بقيراطين كل قيراط مثل أحد»

“যে ব্যক্তি জানাযায় অংশগ্রহণ করবে এবং লাশ দাফন পর্যন্ত অপেক্ষা করবে সে দু’কিরাত নেকী নিয়ে বাড়ি ফিরবে, প্রতিটি কিরাত ওহুদ পাহাড় সমান”। (বুখারি)

ولقوله صلى الله عليه وسلم «من شهد الجنازة حتى يصلى عليها فله قيراط ومن شهدها حتى تدفن فله قيراطان» قيل يارسول الله : وما القيراطان ؟ قال : «مثل الجبلين العظيمين»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি জানাযায় অংশগ্রণ করত নামাজ পর্যন্ত অপেক্ষা করবে সে এক কিরাত নেকি পাবে, আর যে জানাযায় অংশগ্রহণ করে দাফন পর্যন্ত অপেক্ষা করবে সে দু’কিরাত নেকি পাবে”। জিজ্ঞসা করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! দু’কিরাত বলতে কি বুঝায়? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “দুইটি বড় পাহাড় সমপরিমাণ”। (বুখারি ও মুসলিম)

প্রশ্ন ১৮- ইসলামে বিশেষ অবদান রেখেছেন এমন ব্যক্তির জানাযা একদিন বা ততোধিক বিলম্ব করা যাবে?

উত্তর - বিলম্ব করাতে যদি কল্যাণ থাকে তাহলে করা যাবে। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যু হয়েছে সোমবার অথচ তাঁর দাফন হয়েছে বুধবার রাতে। তাই ইসলামের সেবায় নিবেদিত এমন ব্যক্তির দাফন বিলম্বে যদি কোন কল্যাণ থাকে, যেমন তার আত্মীয় স্বজনের আগমন ইত্যাদি, তাহলে বিলম্ব করা যেতে পারে।

প্রশ্ন ১৯- কোন মৃতের উপর একাধিক বার জানাযা পড়ার হুকুম কি?

উত্তর - বিশেষ কারণে একাধিক বার জানাযা পড়া যেতে পারে, যেমন জানাযা শেষে কিছু লোক উপস্থিত হলো, তাহলে এরা মৃতের উপর দাফনের পূর্বে বা পরে জানাযা পড়তে পারবে। এমনিভাবে যে একবার সবার সাথে জানাযা পড়েছে সে আগত লোকদের সাথে লাশ দাফনের পরে ও পুনরায় জানাযা পড়তে পারবে। কারণ এতে সালাত আদায়কারী ও মৃত ব্যক্তি উভয়ের জন্য কল্যাণ রয়েছে।

প্রশ্ন ২০- মায়ের গর্ভে মৃত সন্তানের জানাযা পড়া যাবে কি?

উত্তর – পাঁচ মাস বা ততোধিক সময় গর্ভে অবস্থান করে যদি কোন শন্তান মৃত ভূমিষ্ঠ হয়, তাহলে তাকে গোসল দেবে, তার জানাযা পড়বে ও তাকে মুসলিমদের গোরস্থানে দাফন করবে।

প্রশ্ন ২১- আত্মহত্যাকারীর জানাযা পড়া যাবে কি?

উত্তর - যেহেতু আহলে সূন্নত ওয়াল জামায়াতের মতানুসারে আত্মহত্যার কারণে কেউ মুসলিমদের গন্ডি হতে বেরিয়ে যায় না, তাই অন্যান্য অপরাধীদের ন্যায় তার উপরও কিছু সংখ্যক লোক জানাযা পড়ে নিবে।

প্রশ্ন ২২- নিষিদ্ধ সময়ে জানাযার নামাজা পড়ার বিধান কি?

উত্তর - নিষিদ্ধ সময়ে জানাযা পড়া যাবে না, তবে নিষিদ্ধ সময়টি যদি লম্বা হয়, যেমন ফজরের সালাতের পর হতে সূর্য উঠা পর্যন্ত এবং আসরের সালাতের পর হতে সুর্যাস্ত পর্যন্ত, বিশেষ প্রয়োজনে এ দু’সময়ে জানাযা পড়া ও লাশ দাফন করা যাবে। আর যদি নিষিদ্ধ সময়টি স্বল্প হয় তাহলে জানাযা ও দাফন কিছুই করা যাবে না। আর সল্প সময় বলতে বুঝায় ঠিক বেলা উঠার পূর্ব মুহূর্ত এবং ঠিক দ্বিপ্রহর ও সুর্যাস্তের সময়। সাহাবি উকবা ইবন আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

«ثلاث ساعات كان رسول الله صلى الله عليه وسلم ينهانا أن نصلي فيهن و أن نقبر فيهن موتانا : حين تطلع الشمس بازغة حتى ترفع وحين يقوم قائم الظهيرة حتى تزول وحين تضيّف الشمس للغروب» .

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন সময়ে আমাদেরকে জানাযা পড়তে ও তাতে আমাদের মৃতদেরকে দাফন করতে নিষেধ করেছেন, সুর্যোদয়ের সময় যতক্ষণ না তা পরিপূর্ণরূপে উদয় হয়, ঠিক দ্বিপ্রহরের সময় যতক্ষণ না সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে যায় এবং ঠিক সূর্যাস্তের সময়। [মুসলিম]

প্রশ্ন ২৩- বিদ’আতির জানাযায় অংশ গ্রহণ না করার বিধান কি?

উত্তর - বিদ’আতির বিদ‘আত যদি বিত’আতিকে কুফর পর্যন্ত নিয়ে যায়, যেমন খারেযি, মুতাযিলা ও জাহমিয়া প্রমূখ পথভ্রষ্ট সম্প্রদায়ের বিদ‘আত। তাহলে এরূপ বিদ’আতির জানাযায় অংশ গ্রহণ করা কারো পক্ষেই জায়েয নয়।

আর যদি তার বিদ‘আত এ পর্যায়ের না হয়, তবুও আলেমদের উচিত বিত’আতের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করে তার জানাযা পরিত্যাগ করা।

প্রশ্ন ২৪- আলেমদের ন্যায় জনসাধারণ কি বিদ’আতির জানাযা পরিত্যাগ করবে না ?

উত্তর - প্রতিটি মুসলিমের জানাযা পড়া ওয়াজিব, যদিও সে বিদ’আতি হয়। সুতরাং বিদ‘আত যদি কুফরের পর্যায়ের না হয়, তাহলে এরূপ বিদ’আতির জানাযা মুষ্টিমেয় কিছু লোক পড়ে নেবে। আর যদি বিদ‘আত কুফরের পর্যায়ের হয়, যেমন খারেযি, রাফেযি, মুতাযিলা ও জাহমিয়া প্রমূখদের বিদ‘আত, যারা বিপদে-আপদে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ও রাসূলের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের শরণাপন্ন হয়, তাদেরকে আহ্বান করে, তাহলে এরূপ বিদ‘আতিদের জানাযায় অংশগ্রহণ করা কাহারো জন্যই জায়েয নেয়। আল্লাহ তাআলা মুনাফেক ও তাদের ন্যায় অন্যান্য কাফেরদের প্রসঙ্গে বলেছেনঃ

﴿وَلَا تُصَلِّ عَلَىٰٓ أَحَدٖ مِّنۡهُم مَّاتَ أَبَدٗا وَلَا تَقُمۡ عَلَىٰ قَبۡرِهِۦٓۖ إِنَّهُمۡ كَفَرُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَمَاتُواْ وَهُمۡ فَٰسِقُونَ ٨٤﴾ [ التوبة : 84]

“আর তাদের মধ্যে যে মারা গিয়েছে, তার উপর তুমি জানাযা পড়বে না এবং তার কবরের উপর দাঁড়াবে না। নিশ্চয় তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করেছে এবং তারা ফাসিক অবস্থায় মারা গিয়েছে”। সূরা আত-তাওবাহ: (৮৪)

প্রশ্ন ২৫- জানাযায় অধিক সংখ্যক লোকের অংশ গ্রহণে কি বিশেষ কোন ফজিলত আছে?

উত্তর - সাহাবি আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

«ما من رجل مسلم يموت فيقوم على جنازته أربعون رجلا لايشركون بالله شيئاً إلا شفعهم الله فيه»

“যদি কোন মুসলিম মৃত্যুবরণ করে, আর তার জানাযায় চল্লিশ জন লোক এমন উপস্থিত হয়, যারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করে না, আল্লাহ মৃত ব্যক্তির ব্যাপারে তাদের সুপারিশ কবুল করবেন”। (মুসলিম)

তাই আলেমগণ বলেছেন, যে মসজিদে মুসল্লি বেশী হয়, জানাযার জন্য ঐ মসজিদ অন্বেষণ করা মুস্তাহাব, মুসল্লি যত বেশী হবে ততই মৃতের জন্যে কল্যাণ হবে, কারণ এতে সে অধিক মানুষের দু’আ পাবে।

প্রশ্ন ২৬- জানাযার সালাতে ইমামের দাঁড়ানোর নিয়ম কি?

উত্তর - সুন্নত হচ্ছে ইমাম পুরুষদের মাথা বরাবর আর মহিলাদের মাঝা বরাবর দাঁড়াবে। জানাযা একাধিক লোকের হলে প্রথমে সালাবক পুরুষদের লাশ, অতঃপর নাবালেক ছেলেদের লাশ, অতঃপর সাবালক নারীদের লাশ, অতঃপর নাবালেক মেয়েদের লাশ রাখবে। একই সাথে সবার উপর নামাজ পড়ার জন্য প্রথমে পুরুষদের লাশ লাখবে, অতঃপর তাদের মাথা বরাবর বাচ্ছাদের মাথা রাখাবে, অতঃপর তাদের মাথা বরাবর নারী ও মেয়েদের কোমর রাখবে।

প্রশ্ন ২৭- জানাযার সালাতে সূরা ফাতিহা পড়ার হুকুম কি?

উত্তর – জানাযার সালাতে সূরা ফাতিহা পড়া ওয়াজিব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

« صلوا كما رأيتموني أصلي »

“তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখ, সেভাবেই সালাত আদায় কর”। (বুখারি)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

« لا صلاة لمن لم يقرأ بفاتحة الكتاب »

“ঐ ব্যক্তির কোন সালাত হয়নি, যে সূরা ফাতিহা পাঠ করে নি”। (বুখারি ও মুসলিম)

প্রশ্ন ২৮- চতুর্থ তাকবির শেষে কিছু পড়ার বিধান আছে কি?

উত্তর - চতুর্থ তাকবির শেষে কিছু পড়ার প্রমাণ নেই, তবে চতুর্থ তাকবির শেষে একটু চুপ থেকে অতঃপর সালাম ফিরাবে।

প্রশ্ন ২৯- ব্যক্তিত্ব সম্পূর্ণ মৃতলোকের জানাযায় অতিরিক্ত তাকবির বলা যাবে কি?

উত্তর - প্রচলিত নিয়ম তথা চার তাকবিরের উপর সীমাবদ্ধ থাকাই উত্তম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শেষ জীবনে জানাযার পদ্ধতি এরূপই ছিল। হাবশার বাদশা নাজ্জাশী অত্যন্ত সম্মানী মানুষ হওয়া সত্বেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযায় চারের অধিক তাকবির বলেননি।

প্রশ্ন ৩০- জানাযার নামাজে রাসূলের উপর দরূদ পড়ার হুকুম কি?

উত্তর - ওলামায়ে কেরামের প্রশিদ্ধ উক্তি অনুযায়ী জানাযার সালাতে রাসূলের উপর দরূদ পড়া ওয়াজিব। মুসল্লিরা জানাযায় কখনো রাসূলের উপর দরূদ পরিত্যাগ করবে না।

প্রশ্ন ৩১- জানাযায় সূরা-ফাতিহা পড়ার বিধান কি?

উত্তর - সূরা ফাতিহা পড়া উত্তম, সাহাবি ইব্‌ন ইব্বাস রাদিআল্লাহ আনহু সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানাযায় সূরা ফাতেহা পড়তেন।

প্রশ্ন ৩২- জানাযার প্রতি তাকবিরে হাত উঠানো কি সুন্নত ?

উত্তর - জানাযার প্রতি তাকবিরে হাত উঠানো সুন্নত। বর্ণিত আছে যে, সাহাবি আব্দুল্লাহ ইব্‌ন ওমর ও আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস প্রতি তাকবিরে হাত উঠাতেন। (দারা কুতনি)

প্রশ্ন ৩৩- জনৈক ব্যক্তি জানাযা পড়তে মসজিদে প্রবেশ করল, কিন্তু তখনো সে ফরজ সালাত পড়েনি, এমতাবস্থায় সে কি প্রথমে ফরজ নামাজ পড়বে, না অন্যান্য লোকদের সাথে জানাযায় অংশগ্রহণ করবে। যদি ইতিমধ্যে লাশ তুলে নেয়া হয় তাহলে সে জানাযার নামাজ পড়বে কি না?

উত্তর -এমতাবস্থায় সে প্রথমে জানাযার নামাজ আদায় করবে অতঃপর ফরজ নামাজ পড়বে, কারণ তখন যদি সে জানাযা না পড়ে পরবর্তীতে পড়তে পারবে না, পক্ষান্তরে ফরজ নামাজ তো পরেও পড়া যাচ্ছে। লাশ তুলে নেয়ার হলে দাফনের পর জানাযা পড়বে।

প্রশ্ন ৩৪- আমাদেরে কর্মক্ষেত্রে দেখা যায় যে, কোন সহকর্মী মারা গেলে বিজ্ঞাপন বিতরণ করা হয়, যাতে জানাযার সময় ও দাফনের স্থানের উল্লেখ থাকে, এ ব্যাপারে শরি‘আতের হুকুম কি?

উত্তর - যদি এরূপ বলা হয় যে অমুক মসজিদে অমুকের জানাযা হবে ইত্যাদি, তাহলে আমার জানা মতে দোষের কিছু নেই, যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজ্জাশির ব্যাপারে বলেছিলেন।

প্রশ্ন ৩৫- গায়েবানা জানাযার বিধান কি?

উত্তর - প্রসিদ্ধ মতানুসারে এটা নাজ্জাশীর জন্যে নির্দিষ্ট ছিল। তবে কতিপয় আলেম বলেছেন যে, মৃত ব্যক্তি যদি বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়, যেমন বড় আলেম, বড় দায়ি, ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে যার বিশেষ অবদান রয়েছে, এরূপ ব্যক্তির ক্ষেত্রে গায়েবানা জানাযা পড়া যেতে পারে। কিন্তু আমাদের জানা মতে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক নাজ্জাশি ছাড়া অন্য কারো উপর গায়েবানা জানাযা পড়েননি, অথচ তাঁর নিকট মক্কাতুল মুক্কারামাহসহ বিভিন্ন স্থান হতে অনেক সাহাবিদের মৃত্যুর সংবাদ এসে ছিল। বাস্তবতার নিরিখে এটাই সত্য মনে হচ্ছে যে, গায়েবানা জানাযা নাজ্জাশির জন্যেই নির্দিষ্ট ছিল, তথাপিও যদি কেউ বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের অধিকারী যেমন আলেম ও সরকারী কর্মকর্তা প্রমূখদের উপর পড়তে চায়, তাহলে পড়ার অবকাশ রয়েছে।

প্রশ্ন ৩৬- জানাযায় অধিক কাতার মুস্তাহাব, তাই প্রথম কাতারে জায়গা রেখে দ্বিতীয় কাতার করা যাবে কি?

উত্তর - ফরজ নামাজের কাতারের ন্যায় জানাযার নামাজের কাতার হবে। তাই আগে প্রথম কাতার পূর্ণ করবে অতঃপর দ্বিতীয় কাতার। এক্ষেত্রে সাহাবি মালেক ইব্‌ন হুবাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণিত হাদিসের উপর আমল করা যাবে না, কারণ তার বর্ণিত হাদিসটি বিশুদ্ধ হাদিসের বিপরীত, যার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, প্রথম কাতার পূরণ করা ওয়াজীব।

প্রশ্ন ৩৭- জানাযার নামাজ কি মাঠে পড়া উত্তম না মসজিদে?

উত্তর - সম্ভব হলে মাঠে পড়াই উত্তম। তবে মসজিদে পড়াও জায়েয আছে, যেমন মুমিন জননী আয়শা রাদিয়াল্লাহু আনহা সূত্রে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বয়জা নামীয় ব্যক্তির দু’পুত্রের জানাযা মসজিদেই পড়েছেন। (মুসলিম)

প্রশ্ন ৩৮- জানাযায় সূরা ফাতিহা পড়া সুন্নত, এ ব্যাপারে লোকজনকে অবগত করার জন্যে মাঝে মধ্যে তা স্বশব্দে পড়া কেমন?

উত্তর - কখনো কখনো সূরা ফাতিহা স্বশব্দে পড়তে সমস্যা নেই, যদি সূরা ফাতিহার সাথে অন্য কোন ছোট একটি সূরা বা কিছু আয়াত মিলিয়ে নেয়া হয় তাহলে আরও ভাল। সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা সূত্রে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানাযার নামাজে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলিয়ে নিতেন। তবে যদি শুধু সূরা ফাতিহা পড়ে তাও যথেষ্ট।

প্রশ্ন ৩৯- গায়েবানা জানাযার পদ্ধতি কি?

উত্তর - লাশ উপস্থিত থাক আর না থাক জানাযার পদ্ধতি একই।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন