HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
সালাতুল আউওয়াবীন
লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন আল-আযহারী
সালাত আউওয়াবীন ( صلاة الأوابين ) জমহুর আলেমদের কাছে সালাতুদ-দুহা ( صلاة الضحى ) নামে পরিচিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সালাতুল আউওয়াবীন এ দু’নামে পরিচিত। আল্লামা ‘আইনী রহ. বলেন,
وَالضُّحَى، بِالضَّمِّ وَالْقصر : فَوق الضحوة، وَهِي ارْتِفَاع أول النَّهَار، و : الضحاء، بِالْفَتْح وَالْمدّ هُوَ إِذا علت الشَّمْس إِلَى ربع السَّمَاء فَمَا بعده .
“আদ-দুহা ( الضُّحَى ) শব্দটি দম্মা ও কাসরা উভয় হরকত দিয়েই পড়া যায়। সকালের সূর্য কিরণ। পূর্বাহ্নের প্রথম প্রহর, সূর্য যখন উদিত হয়। আর দুহা শব্দকে ফাতহা বা মাদ দিয়ে পড়লে অর্থ হবে, সূর্য যখন আকাশের এক-চতুর্থাংশে অবস্থান করে বা এর পরের সময়।” [‘উমদাতুল ক্বারী, বদরুদ্দীন আল-‘আইনী, ৭/২৩৬।]
মুল্লা ‘আলী ক্বারী রহ. বলেন,
قال الطيبي : المراد وقت الضحى، وهو صدر النهار حين ترتفع الشمس وتلقي شعاعها اهـ . قيل : التقدير صلاة وقت الضحى، والظاهر أن إضافة الصلاة إلى الضحى بمعنى " في " كصلاة الليل وصلاة النهار . وقيل : وقت الضحى عند مضي ربع اليوم إلى قبيل الزوال، وقيل : هذا وقته المتعارف، وأما وقته فوقت صلاة الإشراق، وقيل : الإشراق أول الضحى .
“আল্লামা ত্বীবী রহ. বলেছেন, সালাতুদ-দুহা পরিচ্ছেদ দ্বারা মূলত উদ্দেশ্য হলো সালাতুদ-দুহার ওয়াক্ত বর্ণনা করা। আর এ সালাতের সময় হলো দিনের প্রথমভাগে সূর্য যখন আকাশের উদিত হয় এবং সূর্যের কিরণ বিচ্ছুরিত হয়। কেউ কেউ বলেছেন, এখানে ওয়াক্ত শব্দটি উহ্য আছে। মূলত পরিচ্ছেদের নাম হবে صلاة وقت الضحى । প্রকৃতপক্ষে, সালাতকে দুহা-এর সাথে সম্পৃক্ত করা যেমন সালাতুল লাইল, সলাতুন্নাহারকে সম্পৃক্ত করা হয়। দুহার সালাতের সময় হলো দিনের এক-চতুর্থাংশ আর শেষ হলো সূর্য হেলা যাওয়া পর্যন্ত। কেউ কেউ বলেন, এটাই এ সালাতের প্রসিদ্ধ সময়। ইশরাকের সালাতের ওয়াক্তই দুহার ওয়াক্ত। কেউ কেউ বলেন, ইশরাক হলো দুহার প্রথম ওয়াক্ত।” [মিরকাতুল মাফাহীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ, মুল্লা ‘আলী ক্বারী, ৩/৯৭৭।]
মূলকথা হলো, সালাতুদ-দুহা, সালাতুল আউওয়াবীন, সালাতুল ইশরাক বলতে একই সালাতকে বুঝানো হয়েছে। হাদীসে একই সালাতের বিভিন্ন নাম এসেছে। আর এর সময় হলো সূর্য যখন আকাশের এক-চতুর্থাংশে উদিত হবে এবং পশ্চিম আকাশে ঢলে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এ সালাতের সময় অব্যহত থাকে। আধুনিক হিসেব অনুযায়ী, সূর্যোদয়ের ১৫ মিনিট পরে, কারো মতে, ২৩ মিনিট পরে সালাতুদ-দুহা শুরু হয় এবং সূর্য ঢলে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তথা যোহর ওয়াক্তের ১৫ মিনিট পূর্ব পর্যন্ত এ সালাতের সময়।
وَالضُّحَى، بِالضَّمِّ وَالْقصر : فَوق الضحوة، وَهِي ارْتِفَاع أول النَّهَار، و : الضحاء، بِالْفَتْح وَالْمدّ هُوَ إِذا علت الشَّمْس إِلَى ربع السَّمَاء فَمَا بعده .
“আদ-দুহা ( الضُّحَى ) শব্দটি দম্মা ও কাসরা উভয় হরকত দিয়েই পড়া যায়। সকালের সূর্য কিরণ। পূর্বাহ্নের প্রথম প্রহর, সূর্য যখন উদিত হয়। আর দুহা শব্দকে ফাতহা বা মাদ দিয়ে পড়লে অর্থ হবে, সূর্য যখন আকাশের এক-চতুর্থাংশে অবস্থান করে বা এর পরের সময়।” [‘উমদাতুল ক্বারী, বদরুদ্দীন আল-‘আইনী, ৭/২৩৬।]
মুল্লা ‘আলী ক্বারী রহ. বলেন,
قال الطيبي : المراد وقت الضحى، وهو صدر النهار حين ترتفع الشمس وتلقي شعاعها اهـ . قيل : التقدير صلاة وقت الضحى، والظاهر أن إضافة الصلاة إلى الضحى بمعنى " في " كصلاة الليل وصلاة النهار . وقيل : وقت الضحى عند مضي ربع اليوم إلى قبيل الزوال، وقيل : هذا وقته المتعارف، وأما وقته فوقت صلاة الإشراق، وقيل : الإشراق أول الضحى .
“আল্লামা ত্বীবী রহ. বলেছেন, সালাতুদ-দুহা পরিচ্ছেদ দ্বারা মূলত উদ্দেশ্য হলো সালাতুদ-দুহার ওয়াক্ত বর্ণনা করা। আর এ সালাতের সময় হলো দিনের প্রথমভাগে সূর্য যখন আকাশের উদিত হয় এবং সূর্যের কিরণ বিচ্ছুরিত হয়। কেউ কেউ বলেছেন, এখানে ওয়াক্ত শব্দটি উহ্য আছে। মূলত পরিচ্ছেদের নাম হবে صلاة وقت الضحى । প্রকৃতপক্ষে, সালাতকে দুহা-এর সাথে সম্পৃক্ত করা যেমন সালাতুল লাইল, সলাতুন্নাহারকে সম্পৃক্ত করা হয়। দুহার সালাতের সময় হলো দিনের এক-চতুর্থাংশ আর শেষ হলো সূর্য হেলা যাওয়া পর্যন্ত। কেউ কেউ বলেন, এটাই এ সালাতের প্রসিদ্ধ সময়। ইশরাকের সালাতের ওয়াক্তই দুহার ওয়াক্ত। কেউ কেউ বলেন, ইশরাক হলো দুহার প্রথম ওয়াক্ত।” [মিরকাতুল মাফাহীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ, মুল্লা ‘আলী ক্বারী, ৩/৯৭৭।]
মূলকথা হলো, সালাতুদ-দুহা, সালাতুল আউওয়াবীন, সালাতুল ইশরাক বলতে একই সালাতকে বুঝানো হয়েছে। হাদীসে একই সালাতের বিভিন্ন নাম এসেছে। আর এর সময় হলো সূর্য যখন আকাশের এক-চতুর্থাংশে উদিত হবে এবং পশ্চিম আকাশে ঢলে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এ সালাতের সময় অব্যহত থাকে। আধুনিক হিসেব অনুযায়ী, সূর্যোদয়ের ১৫ মিনিট পরে, কারো মতে, ২৩ মিনিট পরে সালাতুদ-দুহা শুরু হয় এবং সূর্য ঢলে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তথা যোহর ওয়াক্তের ১৫ মিনিট পূর্ব পর্যন্ত এ সালাতের সময়।
সালাতুল আউওয়াবীনের রয়েছে অনেক ফযীলত। এ ব্যাপারে অনেক সহীহ হাদীস পাওয়া যায়। নিম্নে কিছু হাদীস উল্লেখ করব:
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«أَوْصَانِي خَلِيلِي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِثَلاَثٍ : صِيَامِ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ، وَرَكْعَتَيِ الضُّحَى، وَأَنْ أُوتِرَ قَبْلَ أَنْ أَنَامَ» .
“আমার বন্ধু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তিনটি বিষয়ের উপদেশ দিয়েছেন। তা হলো, প্রত্যেক মাসে তিন দিন সিয়াম পালন করা, দুহার দু-রাকাত (চাশতের) সালাত আদায় করা এবং নিন্দ্রা যাওয়ার আগে যেন আমি বিতর সালাত আদায় করে নিই।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৮১, মুসলিম, হাদীস নং ৭২১।]
আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত, তিনি বলেন,
«أَوْصَانِي حَبِيبِي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِثَلَاثٍ، لَنْ أَدَعَهُنَّ مَا عِشْتُ : بِصِيَامِ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ، وَصَلَاةِ الضُّحَى، وَبِأَنْ لَا أَنَامَ حَتَّى أُوتِرَ» .
“আমার দোস্ত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তিনটি বিষয়ের উপদেশ দিয়েছেন। যতদিন আমি জীবিত থাকব, ততদিন তা ছাড়ব না। প্রতি মাসে তিনটি সাওম পালন করা, চাশতের সালাত আদায় করা এবং বিতর আদায় না করা পর্যন্ত যেন আমি নিদ্রায় না যাই।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭২২।]
আবূ যার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«أَوْصَانِي خَلِيلِي بِثَلَاثٍ لَا أَدَعُهُنَّ إِنْ شَاءَ اللَّهُ أَبَدًا، أَوْصَانِي بِصَلَاةِ الضُّحَى، وَبِالْوِتْرِ قَبْلَ النَّوْمِ، وَبِصَوْمِ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ» .
“আমার বন্ধু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তিনটি বিষয়ের উপদেশ দিয়েছেন, যতদিন আমি জীবিত থাকব, ততদিন তা ছাড়ব না ইনশাআল্লাহ। তিনি আমাকে সালাতুদ-দুহা, ঘুমের পূর্বে বিতরের সালাত আদায় ও প্রতি মাসে তিনটি সাওম পালন করা।” [সহীহ ইবন খুজাইমা, হাদীস নং ১২২১। আল্লামা ‘আজমী রহ. হাদীসের সনদটিকে সহীহ বলেছেন।]
আবূ যর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
عَنْ أَبِي ذَرٍّ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ قَالَ : «يُصْبِحُ عَلَى كُلِّ سُلَامَى مِنْ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ، فَكُلُّ تَسْبِيحَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَحْمِيدَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَهْلِيلَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَكْبِيرَةٍ صَدَقَةٌ، وَأَمْرٌ بِالْمَعْرُوفِ صَدَقَةٌ، وَنَهْيٌ عَنِ الْمُنْكَرِ صَدَقَةٌ، وَيُجْزِئُ مِنْ ذَلِكَ رَكْعَتَانِ يَرْكَعُهُمَا مِنَ الضُّحَى» .
“তোমাদের কেউ যখন ভোরে উঠে, তখন তার প্রতিটি জোড়ার ওপর একটি সদকা রয়েছে। প্রতি সুবহানাল্লাহ সদকা, প্রতি আলহামদুলিল্লাহ সদকা, প্রতি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ সদকা, প্রতি তাকবীর তথা আল্লাহু আকবার সদকা, আমর বিল মারুফ (সৎকাজের আদেশ) সদকা, নাহী ‘আনিল মুনকার (অসৎকাজের নিষেধ) সদকা। অবশ্য চাশতের সময় দু রাকাত সালাত আদায় করা এ সবের পক্ষ থেকে যথেষ্ট।” [মুসলিম, হাদীস নং ৭২০।]
আব্দুল্লাহ ইবন বুরাইদা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«سَمِعْتُ أَبَا بُرَيْدَةَ يَقُولُ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ : فِي الْإِنْسَانِ ثَلَاثُمِائَةٍ وَسِتُّونَ مَفْصَلًا، فَعَلَيْهِ أَنْ يَتَصَدَّقَ عَنْ كُلِّ مَفْصِلٍ مِنْهُ صَدَقَةً» قَالَ : وَمَنْ يُطِيقُ ذَلِكَ يَا نَبِيَّ اللَّهِ؟ قَالَ : «النُّخَامَةُ فِي الْمَسْجِدِ تَدْفِنُهَا أَوِ الشَّيْءُ تُنَحِّيهِ عَنِ الطَّرِيقِ، فَإِنْ لَمْ تَقْدِرْ فَرَكْعَتَا الضُّحَى تُجْزِئُكَ» .
“আমি আবূ বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলতে শুনেছি, তিনি রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, মানব দেহে তিনশ ষাটটি জোড়া রয়েছে। প্রত্যেক জোড়ার জন্য তাকে সদকা করা উচিৎ। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর নবী, এভাবে কেউ সদকা করতে কি সক্ষম? তিনি বললেন, মসজিদ থেকে কফ মুছে ফেলা বা রাস্তা থেকে ক্ষতিকর জিনিস সরিয়ে ফেলা সদকা। আর তুমি যদি এসব করতে সক্ষম না হও তবে দুহার সময় দু-রাকাত সালাত আদায় করা তোমার পক্ষ থেকে যথেষ্ট।” [সহীহ ইবন খুজাইমা, হাদীস নং ১২২৬। আল্লামা ‘আজমী রহ. হাদীসের সনদটিকে সহীহ বলেছেন।]
নু‘আইম ইবন হাম্মার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন,
«يَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ : يَا ابْنَ آدَمَ، لَا تُعْجِزْنِي مِنْ أَرْبَعِ رَكَعَاتٍ فِي أَوَّلِ نَهَارِكَ، أَكْفِكَ آخِرَهُ » .
“আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, হে আদম সন্তান! তুমি যেন দিনের প্রথমে আমার জন্য চার রাকাত সালাত আদায় করতে অপারগ না হও, ফলে (তার বিনিময়ে) আমি তোমার জন্য দিনের শেষ পর্যন্ত যথেষ্ট করে দিব।” [আবূ দাউদ, হাদীস নং ১২৮৯, আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
আল্লামা শাওক্বানী রহ. বলেছেন, এ হাদীস দ্বারা আলেমগণ সালাতুদ-দুহার দলীল দিয়ে থাকেন। এখানে চার রাকাত বলতে সালাতুদ-দুহাকেই বুঝানো হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, এ হাদীস দ্বারা ফজরের সুন্নত ও ফরয চার রাকাতের সালাতকেও বুঝায়। কেননা প্রকৃতপক্ষে দিনের প্রথম ভাগে এ সালাতই আদায় করা হয়। তখন এর অর্থ নিম্নোক্ত হাদীস অনুসারে হবে,
জুনদুব ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ صَلَّى الصُّبْحَ فَهُوَ فِي ذِمَّةِ اللهِ» .
“যে ব্যক্তি ফজরের সালাত আদায় করল সে সারাদিন আল্লাহর যিম্মায় থাকল।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৫৭।]
যাইনুদ্দীন ইরাকী রহ. বলেছেন, এটা নির্ভর করে দিন কি ফজরের উদয় থেকে শুরু হয় নাকি সূর্যোদয় থেকে শুরু হয়? জমহুর আলেমদের মতে, ফজরের উদয় থেকেই দিন শুরু হয়। অতএব, ফজরের উদয় থেকে দিন শুরু ধরে নিলেও সূর্যোদয়ের পরে চার রাকাত সালাত দিনের প্রথম ভাগে ধরে আদায় করলে কোনো অসুবিধা নেই। এটাই মূলত হাদীস বিশারদ ও সমস্ত মানুষের আমল হিসেবে বিবেচিত। তারা এ চার রাকাতকে সালাতুদ-দুহা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। [নাইলুল আওতার, শাওকানী, ৩/৬২।]
عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ، وَأَبِي ذَرٍّ، عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ اللهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى أَنَّهُ قَالَ : «ابْنَ آدَمَ ارْكَعْ لِي أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ مِنْ أَوَّلِ النَّهَارِ أَكْفِكَ آخِرَهُ» .
“আবূ দারদা ও আবূ যর রাদিয়াল্লাহু আনহুমার বরাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূত্রে আল্লাহ তা‘আলা থেকে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “হে আদম সন্তান! তুমি দিনের প্রথমে চার রাকাত সালাত আদায় করলে দিনের শেষ পর্যন্ত তোমার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে।” [তিরমিযী, হাদীস নং ৪৭৫, তিনি হাদীসটিকে হাসান গরীব বলেছেন।]
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ حَافَظَ عَلَى شُفْعَةِ الضُّحَى غُفِرَ لَهُ ذُنُوبُهُ وَإِنْ كَانَتْ مِثْلَ زَبَدِ البَحْرِ» .
“যে ব্যক্তি চাশতের জোড় সালাতে নিত্য সংরক্ষণ করবে, সমূদ্রের ফেনার মতোও যদি তার গুনাহ হয়, তা ক্ষমা করে দেওয়া হবে।” [তিরমিযী, হাদীস নং ৪৪৬, ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী রহ. বলেন, ওয়াকী‘, নাদ্বর ইবন শুমাইল রহ. প্রমূখ হাদীসশাস্ত্রের ইমাম নাহহাস ইবন কাহম রহ. সূত্রে এই হাদীসটি বর্ণনা করেন। এই হাদীসটি ছাড়া তার অন্য কোনো হাদীস সম্পর্কে আমাদের জানা নেই।]
আবূ সাঈদ আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي الضُّحَى حَتَّى نَقُولَ لاَ يَدَعُ، وَيَدَعُهَا حَتَّى نَقُولَ لاَ يُصَلِّي» .
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনভাবে সালাতুদ-দুহা আদায় করতেন যে, আমরা বলতাম তিনি হয়ত আর পরিত্যাগ করবেন না। আবার যখন তা আদায় করা থেকে বিরত থাকতেন তখন আমরা বলতাম যে, হয়ত তিনি আর তা আদায় করবেন না।” [তিরমিযী, হাদীস নং ৪৭৭, তিনি হাদীসটিকে হাসান গরীব বলেছেন।]
আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবন ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«بَعَثَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَرِيَّةً، فَغَنِمُوا، وَأَسْرَعُوا الرَّجْعَةَ، فَتَحَدَّثَ النَّاسُ بِقُرْبِ مَغْزَاهُمْ، وَكَثْرَةِ غَنِيمَتِهِمْ، وَسُرْعَةِ رَجْعَتِهِمْ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " أَلَا أَدُلُّكُمْ عَلَى أَقْرَبَ مِنْهُ مَغْزًى، وَأَكْثَرَ غَنِيمَةً، وَأَوْشَكَ رَجْعَةً؟ مَنْ تَوَضَّأَ، ثُمَّ غَدَا إِلَى الْمَسْجِدِ لِسُبْحَةِ الضُّحَى، فَهُوَ أَقْرَبُ مَغْزًى، وَأَكْثَرُ غَنِيمَةً، وَأَوْشَكُ رَجْعَةً» .
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সারিয়া (ছোট যুদ্ধাভিযান) প্রেরণ করলেন। তারা দ্রুত বিজয় লাভ করে অনেক গনীমত নিয়ে ফিরে আসেন। ফলে লোকজন নিকটবর্তী অভিযান, অধিক গনীমত লাভ ও দ্রুত প্রত্যাবর্তনের করা বলতে লাগল (এতে তারা আশ্চর্যিত হলো এবং ঈর্ষা করতে লাগল)। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেন, আমি কি তোমাদেরকে এর চেয়েও নাতিদীর্ঘ অভিযান, অধিক গনীমত অর্জন ও দ্রুত ফিরে আসার কথা বলে দিবো? যে ব্যক্তি অযু করে মসজিদে গিয়ে দুহার নফল সালাত আদায় করবে, সে এর চেয়েও অতি দ্রুত লাভবান হবে, অধিক গনীমত অর্জন করবে ও দ্রুত প্রত্যাবর্তন করবে।” [মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৬৬৩৮। আল্লামা শুয়াইব আরনাউত হাদীসটিকে হাসান লিগাইরিহী বলেছেন।]
হাফেয ইবন হাজার আসকালানী রহ. বলেছেন,
الْمُرَادَ بِقَوْلِهِ السُّبْحَةَ النَّافِلَةُ وَأَصْلُهَا مِنَ التَّسْبِيحِ وَخُصَّتِ النَّافِلَةُ بِذَلِكَ لِأَنَّ التَّسْبِيحَ الَّذِي فِي الْفَرِيضَةِ نَافِلَةٌ فَقِيلَ لِصَلَاةِ النَّافِلَةِ سُبْحَةٌ لِأَنَّهَا كَالتَّسْبِيحِ فِي الْفَرِيضَةِ .
“হাদীসে السُّبْحَةَ দ্বারা নফল সালাত উদ্দেশ্য। التَّسْبِيحِ হলো এর মূল। নফল সালাতকে সুবহাহ বলার কারণ হলো, ফরয সালাতে যেসব তাসবীহ পাঠ করা হয় তা মূলত নফল। এ কারণে নফল সালাতকে সুবহাহ বলা হয়। এটা ফরয সালাতের তাসবীহের ন্যায়।” [ফাতহুল বারী, ইবন হাজার আসকালানী, ৩/৫৫-৫৬।]
আবূ উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ خَرَجَ مِنْ بَيْتِهِ مُتَطَهِّرًا إِلَى صَلَاةٍ مَكْتُوبَةٍ فَأَجْرُهُ كَأَجْرِ الْحَاجِّ الْمُحْرِمِ، وَمَنْ خَرَجَ إِلَى تَسْبِيحِ الضُّحَى لَا يَنْصِبُهُ إِلَّا إِيَّاهُ فَأَجْرُهُ كَأَجْرِ الْمُعْتَمِرِ، وَصَلَاةٌ عَلَى أَثَرِ صَلَاةٍ لَا لَغْوَ بَيْنَهُمَا كِتَابٌ فِي عِلِّيِّينَ» .
“যে ব্যক্তি অযু করে ফরয সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে যায়, সে ইহরামধারী হাজীর অনুরূপ সাওয়াব প্রাপ্ত হবে। অপর পক্ষে যে ব্যক্তি কেবল চাশতের সালাত আদায়ের জন্য মসজিদে যায় সে উমরাহকারীর ন্যায় সাওয়াব প্রাপ্ত হবে। যে ব্যক্তি এক ওয়াক্ত সালাত আদায়ের পর হতে পরের ওয়াক্ত সালাত আদায় করাকালীন সময়ের মধ্যে কোনোরূপ বেহুদা কাজ ও কথাবার্তায় লিপ্ত না হয়, তার আমলনামা সপ্তাকাশে লিপিবদ্ধ হবে। অর্থাৎ সে উচ্চমর্যাদার অধিকারী হবে” [আবূ দাঊদ, হাদীস নং ৫৫৮। আলবানী রহ. হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।]
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لَا يُحَافِظُ عَلَى صَلَاةِ الضُّحَى إِلَّا أَوَّابٌ» قَالَ : «وَهِيَ صَلَاةُ الْأَوَّابِينَ» .
“কেবল আওয়াব তথা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনকারীগণই সালাতুদ-দুহার সর্বদা গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তিনি আরো বলেছেন, সালাতুদ-দুহা হলো আউওয়াবীনের সালাত।” [আল-মুসতাদরাক লিলহাকিম, হাদীস নং ১১৮২। ইমাম হাকিম রহ. বলেন, হাদীসটি মুসলিমের শর্তে সহীহ, তবে বুখারী ও মুসলিম কেউ তাদের কিতাবে উল্লেখ করেন নি।]
আল্লামা আলবানী রহ. বলেছেন, “যারা মাগরিবের পরে ছয় রাকাত সালাত আদায় করাকে সালাতুল আউওয়াবীন বলেন, এ হাদীস তাদের সে দাবী খণ্ডন করে দিয়েছে। আসলে এ ছয় রাকাতের নামের কোনো অস্তিত্ব নেই এবং প্রকৃতপক্ষে মাগরিবের পরে ছয় রাকাত সালাত সাব্যস্ত নেই।”
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«أَوْصَانِي خَلِيلِي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِثَلاَثٍ : صِيَامِ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ، وَرَكْعَتَيِ الضُّحَى، وَأَنْ أُوتِرَ قَبْلَ أَنْ أَنَامَ» .
“আমার বন্ধু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তিনটি বিষয়ের উপদেশ দিয়েছেন। তা হলো, প্রত্যেক মাসে তিন দিন সিয়াম পালন করা, দুহার দু-রাকাত (চাশতের) সালাত আদায় করা এবং নিন্দ্রা যাওয়ার আগে যেন আমি বিতর সালাত আদায় করে নিই।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৮১, মুসলিম, হাদীস নং ৭২১।]
আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত, তিনি বলেন,
«أَوْصَانِي حَبِيبِي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِثَلَاثٍ، لَنْ أَدَعَهُنَّ مَا عِشْتُ : بِصِيَامِ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ، وَصَلَاةِ الضُّحَى، وَبِأَنْ لَا أَنَامَ حَتَّى أُوتِرَ» .
“আমার দোস্ত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তিনটি বিষয়ের উপদেশ দিয়েছেন। যতদিন আমি জীবিত থাকব, ততদিন তা ছাড়ব না। প্রতি মাসে তিনটি সাওম পালন করা, চাশতের সালাত আদায় করা এবং বিতর আদায় না করা পর্যন্ত যেন আমি নিদ্রায় না যাই।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭২২।]
আবূ যার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«أَوْصَانِي خَلِيلِي بِثَلَاثٍ لَا أَدَعُهُنَّ إِنْ شَاءَ اللَّهُ أَبَدًا، أَوْصَانِي بِصَلَاةِ الضُّحَى، وَبِالْوِتْرِ قَبْلَ النَّوْمِ، وَبِصَوْمِ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ» .
“আমার বন্ধু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তিনটি বিষয়ের উপদেশ দিয়েছেন, যতদিন আমি জীবিত থাকব, ততদিন তা ছাড়ব না ইনশাআল্লাহ। তিনি আমাকে সালাতুদ-দুহা, ঘুমের পূর্বে বিতরের সালাত আদায় ও প্রতি মাসে তিনটি সাওম পালন করা।” [সহীহ ইবন খুজাইমা, হাদীস নং ১২২১। আল্লামা ‘আজমী রহ. হাদীসের সনদটিকে সহীহ বলেছেন।]
আবূ যর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
عَنْ أَبِي ذَرٍّ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ قَالَ : «يُصْبِحُ عَلَى كُلِّ سُلَامَى مِنْ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ، فَكُلُّ تَسْبِيحَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَحْمِيدَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَهْلِيلَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَكْبِيرَةٍ صَدَقَةٌ، وَأَمْرٌ بِالْمَعْرُوفِ صَدَقَةٌ، وَنَهْيٌ عَنِ الْمُنْكَرِ صَدَقَةٌ، وَيُجْزِئُ مِنْ ذَلِكَ رَكْعَتَانِ يَرْكَعُهُمَا مِنَ الضُّحَى» .
“তোমাদের কেউ যখন ভোরে উঠে, তখন তার প্রতিটি জোড়ার ওপর একটি সদকা রয়েছে। প্রতি সুবহানাল্লাহ সদকা, প্রতি আলহামদুলিল্লাহ সদকা, প্রতি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ সদকা, প্রতি তাকবীর তথা আল্লাহু আকবার সদকা, আমর বিল মারুফ (সৎকাজের আদেশ) সদকা, নাহী ‘আনিল মুনকার (অসৎকাজের নিষেধ) সদকা। অবশ্য চাশতের সময় দু রাকাত সালাত আদায় করা এ সবের পক্ষ থেকে যথেষ্ট।” [মুসলিম, হাদীস নং ৭২০।]
আব্দুল্লাহ ইবন বুরাইদা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«سَمِعْتُ أَبَا بُرَيْدَةَ يَقُولُ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ : فِي الْإِنْسَانِ ثَلَاثُمِائَةٍ وَسِتُّونَ مَفْصَلًا، فَعَلَيْهِ أَنْ يَتَصَدَّقَ عَنْ كُلِّ مَفْصِلٍ مِنْهُ صَدَقَةً» قَالَ : وَمَنْ يُطِيقُ ذَلِكَ يَا نَبِيَّ اللَّهِ؟ قَالَ : «النُّخَامَةُ فِي الْمَسْجِدِ تَدْفِنُهَا أَوِ الشَّيْءُ تُنَحِّيهِ عَنِ الطَّرِيقِ، فَإِنْ لَمْ تَقْدِرْ فَرَكْعَتَا الضُّحَى تُجْزِئُكَ» .
“আমি আবূ বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলতে শুনেছি, তিনি রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, মানব দেহে তিনশ ষাটটি জোড়া রয়েছে। প্রত্যেক জোড়ার জন্য তাকে সদকা করা উচিৎ। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর নবী, এভাবে কেউ সদকা করতে কি সক্ষম? তিনি বললেন, মসজিদ থেকে কফ মুছে ফেলা বা রাস্তা থেকে ক্ষতিকর জিনিস সরিয়ে ফেলা সদকা। আর তুমি যদি এসব করতে সক্ষম না হও তবে দুহার সময় দু-রাকাত সালাত আদায় করা তোমার পক্ষ থেকে যথেষ্ট।” [সহীহ ইবন খুজাইমা, হাদীস নং ১২২৬। আল্লামা ‘আজমী রহ. হাদীসের সনদটিকে সহীহ বলেছেন।]
নু‘আইম ইবন হাম্মার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন,
«يَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ : يَا ابْنَ آدَمَ، لَا تُعْجِزْنِي مِنْ أَرْبَعِ رَكَعَاتٍ فِي أَوَّلِ نَهَارِكَ، أَكْفِكَ آخِرَهُ » .
“আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, হে আদম সন্তান! তুমি যেন দিনের প্রথমে আমার জন্য চার রাকাত সালাত আদায় করতে অপারগ না হও, ফলে (তার বিনিময়ে) আমি তোমার জন্য দিনের শেষ পর্যন্ত যথেষ্ট করে দিব।” [আবূ দাউদ, হাদীস নং ১২৮৯, আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
আল্লামা শাওক্বানী রহ. বলেছেন, এ হাদীস দ্বারা আলেমগণ সালাতুদ-দুহার দলীল দিয়ে থাকেন। এখানে চার রাকাত বলতে সালাতুদ-দুহাকেই বুঝানো হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, এ হাদীস দ্বারা ফজরের সুন্নত ও ফরয চার রাকাতের সালাতকেও বুঝায়। কেননা প্রকৃতপক্ষে দিনের প্রথম ভাগে এ সালাতই আদায় করা হয়। তখন এর অর্থ নিম্নোক্ত হাদীস অনুসারে হবে,
জুনদুব ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ صَلَّى الصُّبْحَ فَهُوَ فِي ذِمَّةِ اللهِ» .
“যে ব্যক্তি ফজরের সালাত আদায় করল সে সারাদিন আল্লাহর যিম্মায় থাকল।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৫৭।]
যাইনুদ্দীন ইরাকী রহ. বলেছেন, এটা নির্ভর করে দিন কি ফজরের উদয় থেকে শুরু হয় নাকি সূর্যোদয় থেকে শুরু হয়? জমহুর আলেমদের মতে, ফজরের উদয় থেকেই দিন শুরু হয়। অতএব, ফজরের উদয় থেকে দিন শুরু ধরে নিলেও সূর্যোদয়ের পরে চার রাকাত সালাত দিনের প্রথম ভাগে ধরে আদায় করলে কোনো অসুবিধা নেই। এটাই মূলত হাদীস বিশারদ ও সমস্ত মানুষের আমল হিসেবে বিবেচিত। তারা এ চার রাকাতকে সালাতুদ-দুহা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। [নাইলুল আওতার, শাওকানী, ৩/৬২।]
عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ، وَأَبِي ذَرٍّ، عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ اللهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى أَنَّهُ قَالَ : «ابْنَ آدَمَ ارْكَعْ لِي أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ مِنْ أَوَّلِ النَّهَارِ أَكْفِكَ آخِرَهُ» .
“আবূ দারদা ও আবূ যর রাদিয়াল্লাহু আনহুমার বরাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূত্রে আল্লাহ তা‘আলা থেকে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “হে আদম সন্তান! তুমি দিনের প্রথমে চার রাকাত সালাত আদায় করলে দিনের শেষ পর্যন্ত তোমার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে।” [তিরমিযী, হাদীস নং ৪৭৫, তিনি হাদীসটিকে হাসান গরীব বলেছেন।]
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ حَافَظَ عَلَى شُفْعَةِ الضُّحَى غُفِرَ لَهُ ذُنُوبُهُ وَإِنْ كَانَتْ مِثْلَ زَبَدِ البَحْرِ» .
“যে ব্যক্তি চাশতের জোড় সালাতে নিত্য সংরক্ষণ করবে, সমূদ্রের ফেনার মতোও যদি তার গুনাহ হয়, তা ক্ষমা করে দেওয়া হবে।” [তিরমিযী, হাদীস নং ৪৪৬, ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী রহ. বলেন, ওয়াকী‘, নাদ্বর ইবন শুমাইল রহ. প্রমূখ হাদীসশাস্ত্রের ইমাম নাহহাস ইবন কাহম রহ. সূত্রে এই হাদীসটি বর্ণনা করেন। এই হাদীসটি ছাড়া তার অন্য কোনো হাদীস সম্পর্কে আমাদের জানা নেই।]
আবূ সাঈদ আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي الضُّحَى حَتَّى نَقُولَ لاَ يَدَعُ، وَيَدَعُهَا حَتَّى نَقُولَ لاَ يُصَلِّي» .
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনভাবে সালাতুদ-দুহা আদায় করতেন যে, আমরা বলতাম তিনি হয়ত আর পরিত্যাগ করবেন না। আবার যখন তা আদায় করা থেকে বিরত থাকতেন তখন আমরা বলতাম যে, হয়ত তিনি আর তা আদায় করবেন না।” [তিরমিযী, হাদীস নং ৪৭৭, তিনি হাদীসটিকে হাসান গরীব বলেছেন।]
আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবন ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«بَعَثَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَرِيَّةً، فَغَنِمُوا، وَأَسْرَعُوا الرَّجْعَةَ، فَتَحَدَّثَ النَّاسُ بِقُرْبِ مَغْزَاهُمْ، وَكَثْرَةِ غَنِيمَتِهِمْ، وَسُرْعَةِ رَجْعَتِهِمْ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " أَلَا أَدُلُّكُمْ عَلَى أَقْرَبَ مِنْهُ مَغْزًى، وَأَكْثَرَ غَنِيمَةً، وَأَوْشَكَ رَجْعَةً؟ مَنْ تَوَضَّأَ، ثُمَّ غَدَا إِلَى الْمَسْجِدِ لِسُبْحَةِ الضُّحَى، فَهُوَ أَقْرَبُ مَغْزًى، وَأَكْثَرُ غَنِيمَةً، وَأَوْشَكُ رَجْعَةً» .
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সারিয়া (ছোট যুদ্ধাভিযান) প্রেরণ করলেন। তারা দ্রুত বিজয় লাভ করে অনেক গনীমত নিয়ে ফিরে আসেন। ফলে লোকজন নিকটবর্তী অভিযান, অধিক গনীমত লাভ ও দ্রুত প্রত্যাবর্তনের করা বলতে লাগল (এতে তারা আশ্চর্যিত হলো এবং ঈর্ষা করতে লাগল)। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেন, আমি কি তোমাদেরকে এর চেয়েও নাতিদীর্ঘ অভিযান, অধিক গনীমত অর্জন ও দ্রুত ফিরে আসার কথা বলে দিবো? যে ব্যক্তি অযু করে মসজিদে গিয়ে দুহার নফল সালাত আদায় করবে, সে এর চেয়েও অতি দ্রুত লাভবান হবে, অধিক গনীমত অর্জন করবে ও দ্রুত প্রত্যাবর্তন করবে।” [মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৬৬৩৮। আল্লামা শুয়াইব আরনাউত হাদীসটিকে হাসান লিগাইরিহী বলেছেন।]
হাফেয ইবন হাজার আসকালানী রহ. বলেছেন,
الْمُرَادَ بِقَوْلِهِ السُّبْحَةَ النَّافِلَةُ وَأَصْلُهَا مِنَ التَّسْبِيحِ وَخُصَّتِ النَّافِلَةُ بِذَلِكَ لِأَنَّ التَّسْبِيحَ الَّذِي فِي الْفَرِيضَةِ نَافِلَةٌ فَقِيلَ لِصَلَاةِ النَّافِلَةِ سُبْحَةٌ لِأَنَّهَا كَالتَّسْبِيحِ فِي الْفَرِيضَةِ .
“হাদীসে السُّبْحَةَ দ্বারা নফল সালাত উদ্দেশ্য। التَّسْبِيحِ হলো এর মূল। নফল সালাতকে সুবহাহ বলার কারণ হলো, ফরয সালাতে যেসব তাসবীহ পাঠ করা হয় তা মূলত নফল। এ কারণে নফল সালাতকে সুবহাহ বলা হয়। এটা ফরয সালাতের তাসবীহের ন্যায়।” [ফাতহুল বারী, ইবন হাজার আসকালানী, ৩/৫৫-৫৬।]
আবূ উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ خَرَجَ مِنْ بَيْتِهِ مُتَطَهِّرًا إِلَى صَلَاةٍ مَكْتُوبَةٍ فَأَجْرُهُ كَأَجْرِ الْحَاجِّ الْمُحْرِمِ، وَمَنْ خَرَجَ إِلَى تَسْبِيحِ الضُّحَى لَا يَنْصِبُهُ إِلَّا إِيَّاهُ فَأَجْرُهُ كَأَجْرِ الْمُعْتَمِرِ، وَصَلَاةٌ عَلَى أَثَرِ صَلَاةٍ لَا لَغْوَ بَيْنَهُمَا كِتَابٌ فِي عِلِّيِّينَ» .
“যে ব্যক্তি অযু করে ফরয সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে যায়, সে ইহরামধারী হাজীর অনুরূপ সাওয়াব প্রাপ্ত হবে। অপর পক্ষে যে ব্যক্তি কেবল চাশতের সালাত আদায়ের জন্য মসজিদে যায় সে উমরাহকারীর ন্যায় সাওয়াব প্রাপ্ত হবে। যে ব্যক্তি এক ওয়াক্ত সালাত আদায়ের পর হতে পরের ওয়াক্ত সালাত আদায় করাকালীন সময়ের মধ্যে কোনোরূপ বেহুদা কাজ ও কথাবার্তায় লিপ্ত না হয়, তার আমলনামা সপ্তাকাশে লিপিবদ্ধ হবে। অর্থাৎ সে উচ্চমর্যাদার অধিকারী হবে” [আবূ দাঊদ, হাদীস নং ৫৫৮। আলবানী রহ. হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।]
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لَا يُحَافِظُ عَلَى صَلَاةِ الضُّحَى إِلَّا أَوَّابٌ» قَالَ : «وَهِيَ صَلَاةُ الْأَوَّابِينَ» .
“কেবল আওয়াব তথা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনকারীগণই সালাতুদ-দুহার সর্বদা গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তিনি আরো বলেছেন, সালাতুদ-দুহা হলো আউওয়াবীনের সালাত।” [আল-মুসতাদরাক লিলহাকিম, হাদীস নং ১১৮২। ইমাম হাকিম রহ. বলেন, হাদীসটি মুসলিমের শর্তে সহীহ, তবে বুখারী ও মুসলিম কেউ তাদের কিতাবে উল্লেখ করেন নি।]
আল্লামা আলবানী রহ. বলেছেন, “যারা মাগরিবের পরে ছয় রাকাত সালাত আদায় করাকে সালাতুল আউওয়াবীন বলেন, এ হাদীস তাদের সে দাবী খণ্ডন করে দিয়েছে। আসলে এ ছয় রাকাতের নামের কোনো অস্তিত্ব নেই এবং প্রকৃতপক্ষে মাগরিবের পরে ছয় রাকাত সালাত সাব্যস্ত নেই।”
‘আলেমগণ সালাতুল আউওয়াবীন আদায়ের হুকুমের ব্যাপারে কয়েকটি মত ব্যক্ত করেছেন। জমহুর আলেমদের মতে, এ সালাত আদায় করা মুস্তাহাব। যদি কেউ আদায় করে তার সাওয়াব হবে; কিন্তু ছেড়ে দিলে তাকে কিছু বলা যাবে না। এ মতের অনুসারীরা এ সালাতের ফযীলত সম্পর্কে উল্লিখিত হাদীসসমূহ দ্বারা দলীল পেশ করেছেন। যদিও এটাই সর্বাধিক বিশুদ্ধ মত। তথাপি বিরোধীদের মত পেশ করা, তাদের দলীল খণ্ডন করা ও কীভাবে জমহুর আলেমগণ তাদের দলীলের দ্বারা বিরোধীদেরকে জবাব দিয়েছেন সেগুলো আমাদের জানতে অসুবিধা নেই।
প্রথম মত: একদল আলেম মনে করেন, এ সালাত কোনো কারণ ব্যতীত শরী‘আত অনুমতি দেয় নি। তারা দলীল হিসেবে বলে থাকেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো কারণ ছাড়া এ সালাত পড়েন নি। আর ঘটনাক্রমে তখন দুহার ওয়াক্ত ছিল। তারা নিম্নোক্ত হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেন:
আব্দুর রহমান ইবন আবূ লায়লা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«مَا حَدَّثَنَا أَحَدٌ، أَنَّهُ رَأَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي الضُّحَى غَيْرُ أُمِّ هَانِئٍ فَإِنَّهَا قَالَتْ : إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ بَيْتَهَا يَوْمَ فَتْحِ مَكَّةَ، فَاغْتَسَلَ وَصَلَّى ثَمَانِيَ رَكَعَاتٍ، فَلَمْ أَرَ صَلاَةً قَطُّ أَخَفَّ مِنْهَا، غَيْرَ أَنَّهُ يُتِمُّ الرُّكُوعَ وَالسُّجُودَ» .
“উম্মু হানী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচাত বোন) ব্যতীত অন্য কেউ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চাশ্তের সালাত আদায় করতে দেখেছেন, এরূপ আমাদের কাছে কেউ বর্ণনা করেন নি। তিনি (উম্মে হানী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) অবশ্য বলেছেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন (পূর্বাহ্নে) তাঁর ঘরে গিয়ে গোসল করেছেন। (তিনি বলেছেন) যে, আমি আর কখনো (তাঁকে) অনুরূপ সংক্ষিপ্ত সালাত (আদায় করতে) দেখি নি। তবে কিরাত সংক্ষিপ্ত হলেও তিনি রুকু‘ ও সাজদাহ পুর্নাঙ্গরূপে আদায় করছিলেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৭৬।]
এ মতের প্রবক্তারা মনে করেন, মক্কা বিজয়ের দিনে দুহার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আট রাকাত সালাত আদায় ছিল মক্কা বিজয়ের শুকরিয়াস্বরূপ। আর কোনো বিজয় লাভ করলে সেখানে আট রাকাত সালাত আদায় করা সুন্নত। মুসলিম আমিরগণ এ সালাতকে সালাতুল ফাতহ্ বা বিজয়ের সালাত নামে অভিহিত করেছেন। ইমাম ত্ববারী তার তারিখের কিতাবে শা‘বী থেকে বর্ণনা করেন যে,
«لَمَّا فَتَحَ خَالِدٌ الْحِيرَةَ صَلَّى صَلاةَ الْفَتْحِ ثَمَانِي رَكَعَاتٍ لا يُسَلِّمُ فِيهِنَّ، ثُمَّ انْصَرَفَ» .
“খালিদ ইবন ওয়ালীদ যখন হিরা বিজয়লাভ করেন তখন তিনি সেখানে বিজয়ের আট রাকাত সালাত আদায় করেন, এতে তিনি সালাম না ফিরিয়ে দেশের দিকে প্রত্যাবর্তন করেন।” [তারিখুত ত্বাবারী, দারুত-তুরাস, বৈরূত, ২য় সংস্করণ ১৩৮৭ হি. ৩/৩৬৬।]
তারা বলেন, উম্মে হানী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কথা وذلك ضحى “আর এটা দুহার সময়” বলে এটাই প্রমাণ করে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিজয়ের সে সালাত দুহার সময় ছিল। সালাতুদ-দুহা নামে কোনো সালাতের নাম নেই।
ইবন শিহাব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মাহমুদ ইবন রাবী‘ আনসারী রহ. আমার নিকট বর্ণনা করেন,
«أَنَّ عِتْبَانَ بْنَ مَالِكٍ وَهُوَ مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِمَّنْ شَهِدَ بَدْرًا مِنَ الأَنْصَارِ أَنَّهُ أَتَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ : " يَا رَسُولَ اللَّهِ قَدْ أَنْكَرْتُ بَصَرِي، وَأَنَا أُصَلِّي لِقَوْمِي فَإِذَا كَانَتِ الأَمْطَارُ سَالَ الوَادِي الَّذِي بَيْنِي وَبَيْنَهُمْ، لَمْ أَسْتَطِعْ أَنْ آتِيَ مَسْجِدَهُمْ فَأُصَلِّيَ بِهِمْ، وَوَدِدْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَنَّكَ تَأْتِينِي فَتُصَلِّيَ فِي بَيْتِي، فَأَتَّخِذَهُ مُصَلًّى، قَالَ : فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «سَأَفْعَلُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ» قَالَ عِتْبَانُ : فَغَدَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبُو بَكْرٍ حِينَ ارْتَفَعَ النَّهَارُ، فَاسْتَأْذَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَذِنْتُ لَهُ، فَلَمْ يَجْلِسْ حَتَّى دَخَلَ البَيْتَ، ثُمَّ قَالَ : «أَيْنَ تُحِبُّ أَنْ أُصَلِّيَ مِنْ بَيْتِكَ» قَالَ : فَأَشَرْتُ لَهُ إِلَى نَاحِيَةٍ مِنَ البَيْتِ، فَقَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَبَّرَ، فَقُمْنَا فَصَفَّنَا فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ سَلَّمَ .........» .
“ইতবান ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী আনসারগণের অন্যতম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে হাযির হয়ে আরয করলেন: “ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেয়েছে। আমি আমার গোত্রের লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করি। কিন্তু বৃষ্টি হলে আমার ও তাদের বাসস্থানের মধ্যবর্তী নিম্নভূমিতে পানি জমে যাওয়াতে তা আর পার হয়ে তাদের মসজিদে পৌঁছতে এবং তাদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করতে সমর্থ হই না। আর ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার একান্ত ইচ্ছা যে, আপনি আমার ঘরে তাশরীফ নিয়ে কোনো এক স্থানে সালাত আদায় করেন এবং আমি সেই স্থানকে সালাতের জন্য নির্দিষ্ট করে নিই। বর্ণনাকারী বলেন, তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ইনশাআল্লাহ অচিরেই আমি তা করব। ‘ইতবান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, পরদিন সূর্যোদয়ের পর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আমার ঘরে তাশরীফ আনেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করতে চাইলে আমি তাঁকে অনুমতি দিলাম। ঘরে প্রবেশ করে তিনি না বসেই জিজ্ঞেস করলেন: তোমার ঘরের কোন স্থানে সালাত আদায় করা পছন্দ কর? তিনি বলেন, আমি তাঁকে ঘরের এক প্রান্তের দিকে ইঙ্গিত করলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন এবং তাকবীর বললেন। তখন আমরাও দাঁড়ালাম এবং কাতারবন্দী হলাম। তিনি দুই রাকাত সালাত আদায় করলেন। তারপর সালাম ফিরালেন............।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪২৫।]
তারা এ হাদীস থেকে দলীল পেশ করেন যে, ইতবান ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বাড়িতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাত একটা কারণবশত ছিল। আর এ হাদীসটিই কিছু বর্ণনাকারী সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন এভাবে:
‘ইতবান ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
«أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى فِي بَيْتِهِ سُبْحَةَ الضُّحَى، فَقَامُوا وَرَاءَهُ فَصَلَّوْا فِي بَيْتِهِ» .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে সালাতুদ-দুহার নফল সালাত আদায় করেছেন। সাহাবীগণ তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পিছনে কাতারবদ্ধ হলেন এবং তারাও তাঁর (ইতবান ইবন মালিক) ঘরে সালাত আদায় করলেন।” [সহীহ ইবন খুজাইমা, হাদীস নং ১২৩১, আল্লামা ‘আযমী রহ. হাদীসের সনদটিকে সহীহ বলেছেন।]
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يُصَلِّي الضُّحَى إِلَّا أَنْ يَقْدَمَ مِنْ سَفَرٍ أَوْ يَخْرُجَ» .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর থেকে ফিরে বা সফরে বের হওয়া ব্যতীত দুহার সালাত আদায় করতেন না।” [মুসনাদ আবু ই‘আলা, হাদীস নং ৪৩৩৭। আহাদীসুল মুখতারাহ, দিয়াউদ্দিন মাকদিসী, হাদীস নং ২২৭৫, মাকদিসী রহ. বলেন, হাদীসের সনদটিতে কোনো সমস্যা নেই।]
আব্দুল্লাহ ইবন শাকীক রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«قُلْتُ لِعَائِشَةَ : هَلْ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي الضُّحَى؟ قَالَتْ : لَا، إِلَّا أَنْ يَجِيءَ مِنْ مَغِيبِهِ» .
“আমি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার নিকট জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি পূর্বাহ্নে সালাত আদায় করতেন? তিনি বললেন, না; কিন্তু সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করলে আদায় করতেন।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭১৭।]
এ হাদীসও প্রমাণ করে যে, তার পূর্বাহ্নে সালাত আদায় ছিল কোনো কারণবশতঃ। এখানে সফর থেকে ফেরার কারণে তিনি এ সালাত আদায় করেছেন বলে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবন দীনার রহ. বলেন,
أَنَّ ابن عُمَرَ كَانَ لَا يُصَلِّي الضُّحَى إِلَّا أَنْ يَأْتِيَ قُبَاءً .
“ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু মসজিদে কুবায় আসলে সালাতুদ-দুহা আদায় করতেন।” [ফাতহুল বারী, ৩/৫৩।]
হাফেয ইবন হাজার আসকালানী রহ. এ হাদীসের জবাবে বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে কুবায় হয়ত তাহিয়্যাতুল মসজিদের সালাত আদায় করেছেন, আবার এটাও হতে পারে যে, তিনি তাহিয়্যাতুল মাসজিদ ও সালাতুদ-দুহা উভয় সালাতের নিয়্যাত একত্রে করেছেন, যেমনিভাবে আমরা মক্কা বিজয়ের দিনের সালাতের ব্যাপারে বলেছি যে, তিনি বিজয় ও দুহার সালাত একত্রে আদায় করেছেন। [ফাতহুল বারী, ৩/৫৩।]
কিন্তু তাদের এসব হাদীসের জবাবে জমহুর আলেমগণ আরো শক্তিশালী দলীল পেশ করেন। তারা বলেন, এ সব হাদীসের জবাবে অসংখ্য সহীহ হাদীস রয়েছে যাতে কোনো কারণের কথা উল্লেখ নেই; বরং সাধারণভাবে এ সালাতের ফযিলতের কথা উল্লেখ আছে। আর আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা নিজেই কারণ উল্লেখ ছাড়া এ সালাত আদায়ের কথা বলেছেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«مَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَبَّحَ سُبْحَةَ الضُّحَى، وَإِنِّي لَأُسَبِّحُهَا» .
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চাশ্ত-এর সালাত আদায় করতে আমি দেখি নি। তবে আমি তা আদায় করে থাকি।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৭৭।]
মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, “তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে জিজ্ঞাসা করলেন,
«كَمْ كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي صَلَاةَ الضُّحَى؟ قَالَتْ : أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ وَيَزِيدُ مَا شَاءَ» .
“রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুহার সালাত কত রাকাত আদায় করতেন? তিনি বললেন, চার রাকাত। ইচ্ছে হলে বেশিও পড়তেন।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭১৯।]
আল্লামা শাওক্বানী রহ. এসব হাদীস একত্রিত করে বলেন, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার হাদীস “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুহার চার রাকাত সালাত আদায় করতেন” তা মুদাওয়ামাহ বা সর্বদা পালন করা বুঝায় না। তাছাড়া উসূলবিদদের কাছে كان শব্দটি দ্বারাও মাঝে মাঝে করা বুঝায়। যদিও কোনো কোনো বর্ণনায় সর্বদা আদায় করা প্রমাণ করে। এক্ষেত্রে বলা যায় যে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনাহা যা দেখেছেন তিনি তা-ই বর্ণনা করেছেন। তাঁর বর্ণনা “তিনি সফর থেকে ফিরে আসলে তখন এ সালাত আদায় করতেন” দ্বারা মুতলাক (অনির্দিষ্ট) সময়কে মুকাইয়্যাদ (নির্দিষ্ট) করা বুঝায়। আবার তার আরেক বর্ণনা, “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কখনও দুহার সালাত আদায় করতে দেখি নি” দ্বারা তিনি যা দেখেন নি তার বর্ণনা। সুতরাং এ বর্ণনা দ্বারা অনির্দিষ্টকে নির্দিষ্ট করা ওয়াজিব সাব্যস্ত করে না। মূল কথা হলো, তিনি যা জানতেন বা তার কাছে যা পৌঁছেছে তা-ই বর্ণনা করেছেন। অন্যান্য সাহাবীদের বর্ণনায় সর্বক্ষণিক আদায় করেছেন বলে প্রমাণ করে। এসব বর্ণনা দ্বারা সালাতুদ-দুহার বৈধতা প্রমাণ করে। আর আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার এ সময়ের ব্যাপারে জানা ছিল না বলে তিনি এ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক আদায়ের ব্যাপারে অস্বীকার করেছেন। কেননা এ সময় সাধারণত মানুষ স্ত্রীদের সাথে ঘরে বসে থাকে না। তাই তিনি জানতেন না। [নাইলুল আওতার, শাওকানী, ৩/৬৩।]
দ্বিতীয় মত: আরেকদল আলেম এ সালাত আদায়কে মুস্তাহাব মনে করেন না। তারা সালাতুদ-দুহা না আদায়ের হাদীসসমূহকে সনদের বিবেচনায় প্রাধান্য দিয়েছেন। সাহাবীদের আমল এটাই প্রমাণ করে। তাদের দলীল হলো:
মুওয়াররিক রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«قُلْتُ لِابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا : أَتُصَلِّي الضُّحَى؟ قَالَ : لاَ، قُلْتُ : فَعُمَرُ؟ قَالَ : لاَ، قُلْتُ : فَأَبُو بَكْرٍ؟ قَالَ : لاَ، قُلْتُ : فَالنَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ : لاَ إِخَالُهُ» .
“আমি ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কি চাশ্ত-এর সালাত আদায় করেন? তিনি বললেন, না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তা আদায় করতেন কি? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু? তিনি বললেন, না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম? তিনি বললেন, আমি তা মনে করি না। (আমার মনে হয় তিনিও তা আদায় করতেন না, তবে এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত কিছু বলতে পারছি না)।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৭৫।]
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«قَالَ رَجُلٌ مِنَ الأَنْصَارِ وَكَانَ ضَخْمًا لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِنِّي لاَ أَسْتَطِيعُ الصَّلاَةَ مَعَكَ، فَصَنَعَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ طَعَامًا، فَدَعَاهُ إِلَى بَيْتِهِ وَنَضَحَ لَهُ طَرَفَ حَصِيرٍ بِمَاءٍ، «فَصَلَّى عَلَيْهِ رَكْعَتَيْنِ» وَقَالَ فُلاَنُ بْنُ فُلاَنِ بْنِ جَارُودٍ لِأَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ : أَكَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي الضُّحَى؟ فَقَالَ : «مَا رَأَيْتُهُ صَلَّى غَيْرَ ذَلِكَ اليَوْمِ» .
“জনৈক স্থুলদেহী আনসারী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খিদমতে আরয করলেন, “আমি আপনার সংগে (জামা’আতে) সালাত আদায় করতে পারি না। তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উদ্দেশ্যে খাবার তৈরি করে তাঁকে দাওয়াত করে নিজ বাড়িতে নিয়ে এলেন এবং একটি চাটাই এর এক অংশে (কোমল ও পরিচ্ছন্ন করার উদ্দেশ্যে) পানি ছিটিয়ে (তা বিছিয়ে) দিলেন। তখন তিনি (রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ওপর দুই রাকাত সালাত আদায় করলেন। ইবন জারূদ রহ. (নিশ্চিত হওয়ার উদ্দেশ্যে) আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে জিজ্ঞাসা করলেন (তবে কি) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাশ্ত-এর সালাত আদায় করতেন? আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, সেদিন ব্যতীত অন্য সময়ে তাঁকে এ সালাত আদায় করতে দেখি নি।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৭৯।]
হাফেয ইবন হাজার আসকালানী রহ. বলেন, মোদ্দাকথা হলো, ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীস থেকে সালাতুদ-দুহা শরী‘আতসিদ্ধ হওয়াকে অস্বীকার করে না। কেননা তার না বলাটা না দেখার প্রমাণ। এটা নয় যে, সে কাজটি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনোই করেন নি অথবা তার না বলার অর্থ হলো রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বক্ষনিক ও মসজিদে জামা‘আতের সাথে প্রকাশ্যে সালাতুদ-দুহা আদায়কে না বলা। কেননা এভাবে প্রকাশ্যে জামা‘আতের সাথে আদায় করাটা সুন্নাতের বিরোধী। মূল সালাতটা আদায় করা সুন্নাত বিরোধী নয়। আর তার একথা আরো শক্তিশালী করে ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীস থেকে,
«أَنَّهُ رَأَى قَوْمًا يُصَلُّونَهَا فَأَنْكَرَ عَلَيْهِمْ وَقَالَ إِنْ كَانَ وَلَا بُدَّ فَفِي بُيُوتِكُمْ» .
“তিনি কিছু লোককে সালাতুদ-দুহা আদায় করতে দেখে তাদেরকে এভাবে আদায় করতে নিষেধ করলেন। তিনি তাদেরকে বললেন, যদি তোমরা এ সালাত আদায় করতেই চাও তবে ঘরে বসে আদায় করো”। [মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা, হাদীস নং ৭৭৭৭, খ. ২, পৃ. ১৭২; ফাতহুল বারী, ৩/৫৩।]
তৃতীয় মত: কিছু আলেম মনে করেন, সালাতুদ-দুহা মাঝে মাঝে আদায় করা আবার মাঝে মাঝে ছেড়ে দেয়া মুস্তাহাব। তারা নিম্নোক্ত হাদীস ও আসার দ্বারা দলীল পেশ করেন,
আবূ সাঈদ আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي الضُّحَى حَتَّى نَقُولَ : لَا يَدَعُهَا، وَيَدَعُهَا حَتَّى نَقُولَ : لَا يُصَلِّيهَا» .
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাঝে মাঝে এমনভাবে নিয়মিত সালাতুদ-দুহা আদায় করতেন যে, আমরা মনে করতাম তিনি আর এ সালাত বাদ দিবেন না। আবার মাঝে মাঝে এমনভাবে ছেড়ে দিতেন যে, আমরা ভাবতাম তিনি আর এ সালাত আদায় করতেন না।” [মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ১১১৫৫, আল্লামা শুয়াইব আরনাউত বলেন, ‘হাদীসের সনদটি দয়ীফ’।] কিন্তু এ হাদীসটি দ‘য়ীফ হওয়ার কারণে দলীল হিসেবে শক্তিশালী নয়।
ইকরামাহ রহ. বলেন,
كان ابن عباس يصليها يومًا ويدعها عشرة أيام، يعنى صلاة الضحى .
“ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু একদিন সালাতুদ-দুহা আদায় করলে দশ দিন ছেড়ে দিতেন।” [শরহে সহীহুল বুখারী, ইবন নাত্তাল, ৩/১৬৯।]
আব্দুল্লাহ ইবন দীনার বলেন,
أنه كان لا يصلى الضحى، فإذا أتى مسجد قباء صلى وكان يأتيه كل سبت .
“আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু দুহার সালাত আদায় করতেন না। তবে তিনি যখন মসজিদে কুবায় আসতেন তখন এ সালাত আদায় করতেন। আর তিনি প্রতি শনিবার মসজিদে কুবায় আসতেন।” [শরহে সহীহুল বুখারী, ইবন নাত্তাল, ৩/১৬৯।]
ইবরাহীম নাখঈ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كانوا يكرهون أن يحافظوا عليها كالمكتوبة، ويصلون ويدعون، يعنى صلاة الضحى .
“সাহাবী ও তাবে‘ঈগণ ফরয সালাতের মতো গুরুত্বের সাথে দুহার সালাত আদায় করাকে মাকরূহ মনে করতেন। তারা মাঝে মাঝে এ সালাত আদায় করতেন, আবার মাঝে মাঝে ছেড়ে দিতেন।” [শরহে সহীহুল বুখারী, ইবন নাত্তাল, ৩/১৬৯।]
সাঈদ ইবন জুবায়ের রহ. বলেন,
إنى لأدع صلاة الضحى وأنا أشتهيها، مخافة أن أراها حتمًا علىّ .
“মানুষ সালাতুদ-দুহাকে অত্যাবশ্যকীয় ভাবতে পারে বলে আমি এ সালাত ছেড়ে দিই, তবে আমার আদায় করতে ইচ্ছে করে।” [শরহে সহীহুল বুখারী, ইবন নাত্তাল, ৩/১৬৯।]
এ মতের অনুসারীরা বলেন, মাঝে মাঝে আদায় করা ও মাঝে মাঝে ছেড়ে দেওয়া উত্তম, যাতে মানুষ এ ধারণা না করে যে, এ সালাত ওয়াজিব বা নিয়মিত আদায়যোগ্য সুন্নাত। আর আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা নিয়মিত এ সালাত ঘরে আদায় করতেন বলে মানুষের এ ধারণা হওয়ার সম্ভাবনা কম ছিল। তথাপি এ সব হাদীস ও আসার জমহুম আলেমদের মতের বিরোধী নয়। কেননা জমহুর আলেমগণ এ সালাতকে মুস্তাহাব বলেছেন। আর মুস্তাহাবের হুকুমই হলো যে ব্যক্তি তা আদায় করবে তার সাওয়াব হবে, কেউ আদায় না করলে সাওয়াব হবে না বা গুনাহও হবে না এবং দোষারোপও করা যাবে না। অতএব, এ সালাতের ফযীলত সম্পর্কে যেসব হাদীস ও আসার এসেছে এসব থেকে প্রমাণিত হয় যে, এ সালাত সুন্নত। এটাই জমহুর আলেমদের মত।
চতুর্থ মত: আরেকদল আলেম এ সালাতকে বিদ‘আত বলেছেন। ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে এটা বর্ণিত। হাদী, কাসেম ও আবু তালিব এ মতের অনুসারী। তারা দলীল হিসেবে নিম্নোক্ত হাদীস ও আসার পেশ করেন:
মুজাহিদ রহ. থেকে বর্ণিত, “তিনি বলেন,
«دَخَلْتُ أَنَا وَعُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ المَسْجِدَ، فَإِذَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، جَالِسٌ إِلَى حُجْرَةِ عَائِشَةَ، وَإِذَا نَاسٌ يُصَلُّونَ فِي المَسْجِدِ صَلاَةَ الضُّحَى، قَالَ : فَسَأَلْنَاهُ عَنْ صَلاَتِهِمْ، فَقَالَ : بِدْعَةٌ» .
“আমি এবং ‘উরওয়া ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মসজিদে প্রবেশ করে দেখতে পেলাম, ‘আবদুল্লাহ ইবন ‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার হুজরার পাশে বসে আছেন। ইতোমধ্যে কিছু লোক মসজিদে সালাতুদ-দুহা আদায় করতে লাগল। আমরা তাকে এদের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, এটা বিদ‘আত।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৭৭৫, মুসলিম, হাদীস নং ১২৫৫।]
হাকাম ইবন ‘আরাজ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«سَأَلْتُ مُحَمَّدًا عَنْ صَلَاةِ الضُّحَى وَهُوَ مُسْنِدٌ ظَهْرَهُ إِلَى حُجْرَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَمَ، فَقَالَ : بِدْعَةٌ وَنِعْمَتِ الْبِدْعَةُ» .
“আমি ইমাম মুহাম্মদকে সালাতুদ-দুহা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লামের হুজরার সাথে পিঠ রেখে হেলান দিয়ে বসা ছিলেন। তিনি বললেন, এটা বিদ‘আত; তবে উত্তম বিদ‘আত।” [মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা, হাদীস নং ৭৭৭৫। ইবন হাজার আসকালানী রহ. বলেছেন, হাদীসের সনদটি সহীহ, ফাতহুল বারী, ৩/৫২।]
সালিম তার পিতা ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন,
«لَقَدْ قُتِلَ عُثْمَانُ وَمَا أَحَدٌ يُسَبِّحُهَا وَمَا أَحْدَثَ النَّاسُ شَيْئًا أَحَبَّ إِلَيَّ مِنْهَا» .
“উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু শহীদ হওয়া পর্যন্ত কেউ সালাতুদ-দুহার সালাত প্রচলন করে নি। মানুষ বিদ‘আত হিসেবে এ সালাত আদায় করাটা আমার কাছে খুবই পছন্দনীয়।” [ইবন হাজার আসকালানী রহ. বলেছেন, হাদীসের সনদটি সহীহ, ফাতহুল বারী, ৩/৫২।]
হাফেয ইবন হাজার আসকালানী রহ. বলেন, ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীস থেকে সালাতুদ-দুহা শরী‘আতসিদ্ধ হওয়াকে অস্বীকার করে না, কেননা তার না বলাটা না দেখার প্রমাণ। এটা নয় যে, সে কাজটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনোই করেন নি অথবা তাঁর না বলার অর্থ হলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বক্ষণিক ও মসজিদে জামা‘আতের সাথে প্রকাশ্যে সালাতুদ-দুহা আদায়কে না বলা। কেননা এভাবে প্রকাশ্যে জামা‘আতের সাথে আদায় করাটা সুন্নতের বিরোধী। মূল সালাতটা আদায় করা সুন্নাত বিরোধী নয়। আর তার একথা আরো শক্তিশালী করে ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীস থেকে। ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
«أَنَّهُ رَأَى قَوْمًا يُصَلُّونَهَا فَأَنْكَرَ عَلَيْهِمْ وَقَالَ إِنْ كَانَ وَلَا بُدَّ فَفِي بُيُوتِكُمْ» .
“তিনি কিছু লোককে সালাতুদ-দুহা আদায় করতে দেখে তাদেরকে এভাবে আদায় করতে নিষেধ করলেন। তিনি তাদেরকে বললেন, যদি তোমরা এ সালাত আদায় করতেই চাও তবে ঘরে বসে আদায় করো।” [মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা, হাদীস নং ৭৭৭৭, খ. ২, পৃ. ১৭২। ফাতহুল বারী, ৩/৫৩।]
এসব আলোচনার পর আমাদের কাছে এটা স্পষ্ট যে, জমহুর ‘আলেম সালাতুদ-দুহার ব্যাপারে যে মত ব্যক্ত করেছেন তাই অধিকতর বিশুদ্ধ ও শক্তিশালী। আল্লামা শাওক্বানী রহ. বলেন, এ সালাত সাব্যস্তের হাদীস এতই বেশি যে, অন্যরা কমপক্ষে মুস্তাহাব বলেছেন। ইমাম হাকিম রহ. সালাতুদ-দুহা সাব্যস্তের ব্যাপারে আলাদাভাবে প্রায় বিশজন সাহাবী থেকে বর্ণনা একত্রিত করেছেন। এমনিভাবে ইমাম সুয়ুতী রহ. ও আলাদাভাবে একখণ্ডে হাদীস একত্রিত করেছেন। এতে তিনি যেসব সাহাবীগণ এ সালাত আদায় করেছেন তাদের নাম উল্লেখ করেছেন। তাদের মধ্যে আবু সাঈদ খুদুরী, তার থেকে সাঈদ ইবন মানসুর ও আহমদ ইবন হাম্বল এ সালাত সম্পর্কিত হাদীস বর্ণনা করেছেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা, তার থেকে সাঈদ ইবন মানসূর, ইবন আবী শাইবা এ সালাত সম্পর্কিত হাদীস বর্ণনা করেছেন। আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহুর থেকে ইবন আবু শাইবা, আব্দুল্লাহ ইবন গালিব এ সালাত সম্পর্কিত হাদীস বর্ণনা করেছেন। আবূ নু‘আইম এসব হাদীস তার কিতাবে বর্ণনা করেছেন।
সাঈদ ইবন মানসূর রহ. হাসান রহ. বর্ণনা করেন,
«أَنَّهُ سُئِلَ : هَلْ كَانَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلُّونَهَا؟ فَقَالَ : نَعَمْ، كَانَ مِنْهُمْ مَنْ يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ، وَمِنْهُمْ مَنْ يُصَلِّي أَرْبَعًا، وَمِنْهُمْ مَنْ يَمُدُّ إلَى نِصْفِ النَّهَارِ» .
“তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ কি এ সালাত আদায় করেছেন? তিনি বলেন, হ্যাঁ, তারা এ সালাত আদায় করেছেন। কেউ দু রাআ‘আত, কেউ চার রাকাত, কেউ আবার দ্বি-প্রহর পর্যন্ত দীর্ঘ করতেন।” [নাইলুল আওতার, ৩/৭৬।]
সাঈদ ইবন মানসূর রহ. তার সুনানে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
طَلَبْتُ صَلَاةَ الضُّحَى فِي الْقُرْآنِ فَوَجَدْتُهَا هَهُنَا ﴿ يُسَبِّحۡنَ بِٱلۡعَشِيِّ وَٱلۡإِشۡرَاقِ ١٨ ﴾ [ص : ١٨ ]
“আমি সালাতুদ-দুহা সম্পর্কে কুরআনে খোঁজ করলাম। ফলে এ আয়াতে এ সালাত সম্পর্কে পাই,
﴿يُسَبِّحۡنَ بِٱلۡعَشِيِّ وَٱلۡإِشۡرَاقِ ١٨ ﴾ [ص : ١٨ ]
“আমি পর্বতমালাকে অনুগত করেছিলাম, তার সাথে এগুলো সকাল-সন্ধ্যায় আমার তাসবীহ পাঠ করত।” [সূরা সাদ, আয়াত: ১৮] [নাইলুল আওতার, ৩/৭৬।]
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
إنَّ صَلَاةَ الضُّحَى لَفِي الْقُرْآنِ وَمَا يَغُوصُ عَلَيْهَا إلَّا غَوَّاصٌ فِي قَوْله تَعَالَى : ﴿ فِي بُيُوتٍ أَذِنَ ٱللَّهُ أَن تُرۡفَعَ وَيُذۡكَرَ فِيهَا ٱسۡمُهُۥ يُسَبِّحُ لَهُۥ فِيهَا بِٱلۡغُدُوِّ وَٱلۡأٓصَالِ ٣٦ ﴾ [ النور : ٣٦ ]
“সালাতুদ-দুহা আল-কুরআনে রয়েছে। গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছাড়া তা বুঝতে পারে না। এটা আল্লাহর এ বাণীর মধ্যে রয়েছে,
﴿فِي بُيُوتٍ أَذِنَ ٱللَّهُ أَن تُرۡفَعَ وَيُذۡكَرَ فِيهَا ٱسۡمُهُۥ يُسَبِّحُ لَهُۥ فِيهَا بِٱلۡغُدُوِّ وَٱلۡأٓصَالِ ٣٦ ﴾ [ النور : ٣٦ ]
“সেসব ঘরে যাকে সমুন্নত করতে এবং যেখানে আল্লাহর নাম যিকির করতে আল্লাহই অনুমতি দিয়েছেন। সেখানে সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর তাসবীহ পাঠ করে।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩৬] [নাইলুল আওতার, ৩/৭৬।]
‘আওন আল-‘উকাইলী রহ. নিম্নোক্ত আল্লাহর বাণী সম্পর্কে বলেন,
﴿فَإِنَّهُۥ كَانَ لِلۡأَوَّٰبِينَ غَفُورٗا ٢٥ ﴾ [ الاسراء : ٢٥ ] قَالَ : الَّذِينَ يُصَلُّونَ صَلَاةَ الضُّحَى
“যদি তোমরা নেককার হও তবে তিনি তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারীদের প্রতি অধিক ক্ষমাশীল।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ২৫] তিনি বলেন, যারা সালাতুদ-দুহা আদায় করে।” [আত-তারগীব ওয়াততারহীব, ৩/১১, নাইলুল আওতার, ৩/৭৬।]
প্রথম মত: একদল আলেম মনে করেন, এ সালাত কোনো কারণ ব্যতীত শরী‘আত অনুমতি দেয় নি। তারা দলীল হিসেবে বলে থাকেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো কারণ ছাড়া এ সালাত পড়েন নি। আর ঘটনাক্রমে তখন দুহার ওয়াক্ত ছিল। তারা নিম্নোক্ত হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেন:
আব্দুর রহমান ইবন আবূ লায়লা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«مَا حَدَّثَنَا أَحَدٌ، أَنَّهُ رَأَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي الضُّحَى غَيْرُ أُمِّ هَانِئٍ فَإِنَّهَا قَالَتْ : إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ بَيْتَهَا يَوْمَ فَتْحِ مَكَّةَ، فَاغْتَسَلَ وَصَلَّى ثَمَانِيَ رَكَعَاتٍ، فَلَمْ أَرَ صَلاَةً قَطُّ أَخَفَّ مِنْهَا، غَيْرَ أَنَّهُ يُتِمُّ الرُّكُوعَ وَالسُّجُودَ» .
“উম্মু হানী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচাত বোন) ব্যতীত অন্য কেউ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চাশ্তের সালাত আদায় করতে দেখেছেন, এরূপ আমাদের কাছে কেউ বর্ণনা করেন নি। তিনি (উম্মে হানী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) অবশ্য বলেছেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন (পূর্বাহ্নে) তাঁর ঘরে গিয়ে গোসল করেছেন। (তিনি বলেছেন) যে, আমি আর কখনো (তাঁকে) অনুরূপ সংক্ষিপ্ত সালাত (আদায় করতে) দেখি নি। তবে কিরাত সংক্ষিপ্ত হলেও তিনি রুকু‘ ও সাজদাহ পুর্নাঙ্গরূপে আদায় করছিলেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৭৬।]
এ মতের প্রবক্তারা মনে করেন, মক্কা বিজয়ের দিনে দুহার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আট রাকাত সালাত আদায় ছিল মক্কা বিজয়ের শুকরিয়াস্বরূপ। আর কোনো বিজয় লাভ করলে সেখানে আট রাকাত সালাত আদায় করা সুন্নত। মুসলিম আমিরগণ এ সালাতকে সালাতুল ফাতহ্ বা বিজয়ের সালাত নামে অভিহিত করেছেন। ইমাম ত্ববারী তার তারিখের কিতাবে শা‘বী থেকে বর্ণনা করেন যে,
«لَمَّا فَتَحَ خَالِدٌ الْحِيرَةَ صَلَّى صَلاةَ الْفَتْحِ ثَمَانِي رَكَعَاتٍ لا يُسَلِّمُ فِيهِنَّ، ثُمَّ انْصَرَفَ» .
“খালিদ ইবন ওয়ালীদ যখন হিরা বিজয়লাভ করেন তখন তিনি সেখানে বিজয়ের আট রাকাত সালাত আদায় করেন, এতে তিনি সালাম না ফিরিয়ে দেশের দিকে প্রত্যাবর্তন করেন।” [তারিখুত ত্বাবারী, দারুত-তুরাস, বৈরূত, ২য় সংস্করণ ১৩৮৭ হি. ৩/৩৬৬।]
তারা বলেন, উম্মে হানী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কথা وذلك ضحى “আর এটা দুহার সময়” বলে এটাই প্রমাণ করে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিজয়ের সে সালাত দুহার সময় ছিল। সালাতুদ-দুহা নামে কোনো সালাতের নাম নেই।
ইবন শিহাব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মাহমুদ ইবন রাবী‘ আনসারী রহ. আমার নিকট বর্ণনা করেন,
«أَنَّ عِتْبَانَ بْنَ مَالِكٍ وَهُوَ مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِمَّنْ شَهِدَ بَدْرًا مِنَ الأَنْصَارِ أَنَّهُ أَتَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ : " يَا رَسُولَ اللَّهِ قَدْ أَنْكَرْتُ بَصَرِي، وَأَنَا أُصَلِّي لِقَوْمِي فَإِذَا كَانَتِ الأَمْطَارُ سَالَ الوَادِي الَّذِي بَيْنِي وَبَيْنَهُمْ، لَمْ أَسْتَطِعْ أَنْ آتِيَ مَسْجِدَهُمْ فَأُصَلِّيَ بِهِمْ، وَوَدِدْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَنَّكَ تَأْتِينِي فَتُصَلِّيَ فِي بَيْتِي، فَأَتَّخِذَهُ مُصَلًّى، قَالَ : فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «سَأَفْعَلُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ» قَالَ عِتْبَانُ : فَغَدَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبُو بَكْرٍ حِينَ ارْتَفَعَ النَّهَارُ، فَاسْتَأْذَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَذِنْتُ لَهُ، فَلَمْ يَجْلِسْ حَتَّى دَخَلَ البَيْتَ، ثُمَّ قَالَ : «أَيْنَ تُحِبُّ أَنْ أُصَلِّيَ مِنْ بَيْتِكَ» قَالَ : فَأَشَرْتُ لَهُ إِلَى نَاحِيَةٍ مِنَ البَيْتِ، فَقَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَبَّرَ، فَقُمْنَا فَصَفَّنَا فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ سَلَّمَ .........» .
“ইতবান ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী আনসারগণের অন্যতম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে হাযির হয়ে আরয করলেন: “ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেয়েছে। আমি আমার গোত্রের লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করি। কিন্তু বৃষ্টি হলে আমার ও তাদের বাসস্থানের মধ্যবর্তী নিম্নভূমিতে পানি জমে যাওয়াতে তা আর পার হয়ে তাদের মসজিদে পৌঁছতে এবং তাদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করতে সমর্থ হই না। আর ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার একান্ত ইচ্ছা যে, আপনি আমার ঘরে তাশরীফ নিয়ে কোনো এক স্থানে সালাত আদায় করেন এবং আমি সেই স্থানকে সালাতের জন্য নির্দিষ্ট করে নিই। বর্ণনাকারী বলেন, তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ইনশাআল্লাহ অচিরেই আমি তা করব। ‘ইতবান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, পরদিন সূর্যোদয়ের পর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আমার ঘরে তাশরীফ আনেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করতে চাইলে আমি তাঁকে অনুমতি দিলাম। ঘরে প্রবেশ করে তিনি না বসেই জিজ্ঞেস করলেন: তোমার ঘরের কোন স্থানে সালাত আদায় করা পছন্দ কর? তিনি বলেন, আমি তাঁকে ঘরের এক প্রান্তের দিকে ইঙ্গিত করলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন এবং তাকবীর বললেন। তখন আমরাও দাঁড়ালাম এবং কাতারবন্দী হলাম। তিনি দুই রাকাত সালাত আদায় করলেন। তারপর সালাম ফিরালেন............।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪২৫।]
তারা এ হাদীস থেকে দলীল পেশ করেন যে, ইতবান ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বাড়িতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাত একটা কারণবশত ছিল। আর এ হাদীসটিই কিছু বর্ণনাকারী সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন এভাবে:
‘ইতবান ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
«أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى فِي بَيْتِهِ سُبْحَةَ الضُّحَى، فَقَامُوا وَرَاءَهُ فَصَلَّوْا فِي بَيْتِهِ» .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে সালাতুদ-দুহার নফল সালাত আদায় করেছেন। সাহাবীগণ তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পিছনে কাতারবদ্ধ হলেন এবং তারাও তাঁর (ইতবান ইবন মালিক) ঘরে সালাত আদায় করলেন।” [সহীহ ইবন খুজাইমা, হাদীস নং ১২৩১, আল্লামা ‘আযমী রহ. হাদীসের সনদটিকে সহীহ বলেছেন।]
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يُصَلِّي الضُّحَى إِلَّا أَنْ يَقْدَمَ مِنْ سَفَرٍ أَوْ يَخْرُجَ» .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর থেকে ফিরে বা সফরে বের হওয়া ব্যতীত দুহার সালাত আদায় করতেন না।” [মুসনাদ আবু ই‘আলা, হাদীস নং ৪৩৩৭। আহাদীসুল মুখতারাহ, দিয়াউদ্দিন মাকদিসী, হাদীস নং ২২৭৫, মাকদিসী রহ. বলেন, হাদীসের সনদটিতে কোনো সমস্যা নেই।]
আব্দুল্লাহ ইবন শাকীক রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«قُلْتُ لِعَائِشَةَ : هَلْ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي الضُّحَى؟ قَالَتْ : لَا، إِلَّا أَنْ يَجِيءَ مِنْ مَغِيبِهِ» .
“আমি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার নিকট জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি পূর্বাহ্নে সালাত আদায় করতেন? তিনি বললেন, না; কিন্তু সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করলে আদায় করতেন।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭১৭।]
এ হাদীসও প্রমাণ করে যে, তার পূর্বাহ্নে সালাত আদায় ছিল কোনো কারণবশতঃ। এখানে সফর থেকে ফেরার কারণে তিনি এ সালাত আদায় করেছেন বলে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবন দীনার রহ. বলেন,
أَنَّ ابن عُمَرَ كَانَ لَا يُصَلِّي الضُّحَى إِلَّا أَنْ يَأْتِيَ قُبَاءً .
“ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু মসজিদে কুবায় আসলে সালাতুদ-দুহা আদায় করতেন।” [ফাতহুল বারী, ৩/৫৩।]
হাফেয ইবন হাজার আসকালানী রহ. এ হাদীসের জবাবে বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে কুবায় হয়ত তাহিয়্যাতুল মসজিদের সালাত আদায় করেছেন, আবার এটাও হতে পারে যে, তিনি তাহিয়্যাতুল মাসজিদ ও সালাতুদ-দুহা উভয় সালাতের নিয়্যাত একত্রে করেছেন, যেমনিভাবে আমরা মক্কা বিজয়ের দিনের সালাতের ব্যাপারে বলেছি যে, তিনি বিজয় ও দুহার সালাত একত্রে আদায় করেছেন। [ফাতহুল বারী, ৩/৫৩।]
কিন্তু তাদের এসব হাদীসের জবাবে জমহুর আলেমগণ আরো শক্তিশালী দলীল পেশ করেন। তারা বলেন, এ সব হাদীসের জবাবে অসংখ্য সহীহ হাদীস রয়েছে যাতে কোনো কারণের কথা উল্লেখ নেই; বরং সাধারণভাবে এ সালাতের ফযিলতের কথা উল্লেখ আছে। আর আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা নিজেই কারণ উল্লেখ ছাড়া এ সালাত আদায়ের কথা বলেছেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«مَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَبَّحَ سُبْحَةَ الضُّحَى، وَإِنِّي لَأُسَبِّحُهَا» .
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চাশ্ত-এর সালাত আদায় করতে আমি দেখি নি। তবে আমি তা আদায় করে থাকি।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৭৭।]
মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, “তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে জিজ্ঞাসা করলেন,
«كَمْ كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي صَلَاةَ الضُّحَى؟ قَالَتْ : أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ وَيَزِيدُ مَا شَاءَ» .
“রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুহার সালাত কত রাকাত আদায় করতেন? তিনি বললেন, চার রাকাত। ইচ্ছে হলে বেশিও পড়তেন।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭১৯।]
আল্লামা শাওক্বানী রহ. এসব হাদীস একত্রিত করে বলেন, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার হাদীস “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুহার চার রাকাত সালাত আদায় করতেন” তা মুদাওয়ামাহ বা সর্বদা পালন করা বুঝায় না। তাছাড়া উসূলবিদদের কাছে كان শব্দটি দ্বারাও মাঝে মাঝে করা বুঝায়। যদিও কোনো কোনো বর্ণনায় সর্বদা আদায় করা প্রমাণ করে। এক্ষেত্রে বলা যায় যে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনাহা যা দেখেছেন তিনি তা-ই বর্ণনা করেছেন। তাঁর বর্ণনা “তিনি সফর থেকে ফিরে আসলে তখন এ সালাত আদায় করতেন” দ্বারা মুতলাক (অনির্দিষ্ট) সময়কে মুকাইয়্যাদ (নির্দিষ্ট) করা বুঝায়। আবার তার আরেক বর্ণনা, “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কখনও দুহার সালাত আদায় করতে দেখি নি” দ্বারা তিনি যা দেখেন নি তার বর্ণনা। সুতরাং এ বর্ণনা দ্বারা অনির্দিষ্টকে নির্দিষ্ট করা ওয়াজিব সাব্যস্ত করে না। মূল কথা হলো, তিনি যা জানতেন বা তার কাছে যা পৌঁছেছে তা-ই বর্ণনা করেছেন। অন্যান্য সাহাবীদের বর্ণনায় সর্বক্ষণিক আদায় করেছেন বলে প্রমাণ করে। এসব বর্ণনা দ্বারা সালাতুদ-দুহার বৈধতা প্রমাণ করে। আর আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার এ সময়ের ব্যাপারে জানা ছিল না বলে তিনি এ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক আদায়ের ব্যাপারে অস্বীকার করেছেন। কেননা এ সময় সাধারণত মানুষ স্ত্রীদের সাথে ঘরে বসে থাকে না। তাই তিনি জানতেন না। [নাইলুল আওতার, শাওকানী, ৩/৬৩।]
দ্বিতীয় মত: আরেকদল আলেম এ সালাত আদায়কে মুস্তাহাব মনে করেন না। তারা সালাতুদ-দুহা না আদায়ের হাদীসসমূহকে সনদের বিবেচনায় প্রাধান্য দিয়েছেন। সাহাবীদের আমল এটাই প্রমাণ করে। তাদের দলীল হলো:
মুওয়াররিক রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«قُلْتُ لِابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا : أَتُصَلِّي الضُّحَى؟ قَالَ : لاَ، قُلْتُ : فَعُمَرُ؟ قَالَ : لاَ، قُلْتُ : فَأَبُو بَكْرٍ؟ قَالَ : لاَ، قُلْتُ : فَالنَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ : لاَ إِخَالُهُ» .
“আমি ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কি চাশ্ত-এর সালাত আদায় করেন? তিনি বললেন, না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তা আদায় করতেন কি? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু? তিনি বললেন, না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম? তিনি বললেন, আমি তা মনে করি না। (আমার মনে হয় তিনিও তা আদায় করতেন না, তবে এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত কিছু বলতে পারছি না)।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৭৫।]
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«قَالَ رَجُلٌ مِنَ الأَنْصَارِ وَكَانَ ضَخْمًا لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِنِّي لاَ أَسْتَطِيعُ الصَّلاَةَ مَعَكَ، فَصَنَعَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ طَعَامًا، فَدَعَاهُ إِلَى بَيْتِهِ وَنَضَحَ لَهُ طَرَفَ حَصِيرٍ بِمَاءٍ، «فَصَلَّى عَلَيْهِ رَكْعَتَيْنِ» وَقَالَ فُلاَنُ بْنُ فُلاَنِ بْنِ جَارُودٍ لِأَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ : أَكَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي الضُّحَى؟ فَقَالَ : «مَا رَأَيْتُهُ صَلَّى غَيْرَ ذَلِكَ اليَوْمِ» .
“জনৈক স্থুলদেহী আনসারী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খিদমতে আরয করলেন, “আমি আপনার সংগে (জামা’আতে) সালাত আদায় করতে পারি না। তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উদ্দেশ্যে খাবার তৈরি করে তাঁকে দাওয়াত করে নিজ বাড়িতে নিয়ে এলেন এবং একটি চাটাই এর এক অংশে (কোমল ও পরিচ্ছন্ন করার উদ্দেশ্যে) পানি ছিটিয়ে (তা বিছিয়ে) দিলেন। তখন তিনি (রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ওপর দুই রাকাত সালাত আদায় করলেন। ইবন জারূদ রহ. (নিশ্চিত হওয়ার উদ্দেশ্যে) আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে জিজ্ঞাসা করলেন (তবে কি) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাশ্ত-এর সালাত আদায় করতেন? আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, সেদিন ব্যতীত অন্য সময়ে তাঁকে এ সালাত আদায় করতে দেখি নি।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৭৯।]
হাফেয ইবন হাজার আসকালানী রহ. বলেন, মোদ্দাকথা হলো, ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীস থেকে সালাতুদ-দুহা শরী‘আতসিদ্ধ হওয়াকে অস্বীকার করে না। কেননা তার না বলাটা না দেখার প্রমাণ। এটা নয় যে, সে কাজটি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনোই করেন নি অথবা তার না বলার অর্থ হলো রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বক্ষনিক ও মসজিদে জামা‘আতের সাথে প্রকাশ্যে সালাতুদ-দুহা আদায়কে না বলা। কেননা এভাবে প্রকাশ্যে জামা‘আতের সাথে আদায় করাটা সুন্নাতের বিরোধী। মূল সালাতটা আদায় করা সুন্নাত বিরোধী নয়। আর তার একথা আরো শক্তিশালী করে ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীস থেকে,
«أَنَّهُ رَأَى قَوْمًا يُصَلُّونَهَا فَأَنْكَرَ عَلَيْهِمْ وَقَالَ إِنْ كَانَ وَلَا بُدَّ فَفِي بُيُوتِكُمْ» .
“তিনি কিছু লোককে সালাতুদ-দুহা আদায় করতে দেখে তাদেরকে এভাবে আদায় করতে নিষেধ করলেন। তিনি তাদেরকে বললেন, যদি তোমরা এ সালাত আদায় করতেই চাও তবে ঘরে বসে আদায় করো”। [মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা, হাদীস নং ৭৭৭৭, খ. ২, পৃ. ১৭২; ফাতহুল বারী, ৩/৫৩।]
তৃতীয় মত: কিছু আলেম মনে করেন, সালাতুদ-দুহা মাঝে মাঝে আদায় করা আবার মাঝে মাঝে ছেড়ে দেয়া মুস্তাহাব। তারা নিম্নোক্ত হাদীস ও আসার দ্বারা দলীল পেশ করেন,
আবূ সাঈদ আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي الضُّحَى حَتَّى نَقُولَ : لَا يَدَعُهَا، وَيَدَعُهَا حَتَّى نَقُولَ : لَا يُصَلِّيهَا» .
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাঝে মাঝে এমনভাবে নিয়মিত সালাতুদ-দুহা আদায় করতেন যে, আমরা মনে করতাম তিনি আর এ সালাত বাদ দিবেন না। আবার মাঝে মাঝে এমনভাবে ছেড়ে দিতেন যে, আমরা ভাবতাম তিনি আর এ সালাত আদায় করতেন না।” [মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ১১১৫৫, আল্লামা শুয়াইব আরনাউত বলেন, ‘হাদীসের সনদটি দয়ীফ’।] কিন্তু এ হাদীসটি দ‘য়ীফ হওয়ার কারণে দলীল হিসেবে শক্তিশালী নয়।
ইকরামাহ রহ. বলেন,
كان ابن عباس يصليها يومًا ويدعها عشرة أيام، يعنى صلاة الضحى .
“ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু একদিন সালাতুদ-দুহা আদায় করলে দশ দিন ছেড়ে দিতেন।” [শরহে সহীহুল বুখারী, ইবন নাত্তাল, ৩/১৬৯।]
আব্দুল্লাহ ইবন দীনার বলেন,
أنه كان لا يصلى الضحى، فإذا أتى مسجد قباء صلى وكان يأتيه كل سبت .
“আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু দুহার সালাত আদায় করতেন না। তবে তিনি যখন মসজিদে কুবায় আসতেন তখন এ সালাত আদায় করতেন। আর তিনি প্রতি শনিবার মসজিদে কুবায় আসতেন।” [শরহে সহীহুল বুখারী, ইবন নাত্তাল, ৩/১৬৯।]
ইবরাহীম নাখঈ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كانوا يكرهون أن يحافظوا عليها كالمكتوبة، ويصلون ويدعون، يعنى صلاة الضحى .
“সাহাবী ও তাবে‘ঈগণ ফরয সালাতের মতো গুরুত্বের সাথে দুহার সালাত আদায় করাকে মাকরূহ মনে করতেন। তারা মাঝে মাঝে এ সালাত আদায় করতেন, আবার মাঝে মাঝে ছেড়ে দিতেন।” [শরহে সহীহুল বুখারী, ইবন নাত্তাল, ৩/১৬৯।]
সাঈদ ইবন জুবায়ের রহ. বলেন,
إنى لأدع صلاة الضحى وأنا أشتهيها، مخافة أن أراها حتمًا علىّ .
“মানুষ সালাতুদ-দুহাকে অত্যাবশ্যকীয় ভাবতে পারে বলে আমি এ সালাত ছেড়ে দিই, তবে আমার আদায় করতে ইচ্ছে করে।” [শরহে সহীহুল বুখারী, ইবন নাত্তাল, ৩/১৬৯।]
এ মতের অনুসারীরা বলেন, মাঝে মাঝে আদায় করা ও মাঝে মাঝে ছেড়ে দেওয়া উত্তম, যাতে মানুষ এ ধারণা না করে যে, এ সালাত ওয়াজিব বা নিয়মিত আদায়যোগ্য সুন্নাত। আর আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা নিয়মিত এ সালাত ঘরে আদায় করতেন বলে মানুষের এ ধারণা হওয়ার সম্ভাবনা কম ছিল। তথাপি এ সব হাদীস ও আসার জমহুম আলেমদের মতের বিরোধী নয়। কেননা জমহুর আলেমগণ এ সালাতকে মুস্তাহাব বলেছেন। আর মুস্তাহাবের হুকুমই হলো যে ব্যক্তি তা আদায় করবে তার সাওয়াব হবে, কেউ আদায় না করলে সাওয়াব হবে না বা গুনাহও হবে না এবং দোষারোপও করা যাবে না। অতএব, এ সালাতের ফযীলত সম্পর্কে যেসব হাদীস ও আসার এসেছে এসব থেকে প্রমাণিত হয় যে, এ সালাত সুন্নত। এটাই জমহুর আলেমদের মত।
চতুর্থ মত: আরেকদল আলেম এ সালাতকে বিদ‘আত বলেছেন। ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে এটা বর্ণিত। হাদী, কাসেম ও আবু তালিব এ মতের অনুসারী। তারা দলীল হিসেবে নিম্নোক্ত হাদীস ও আসার পেশ করেন:
মুজাহিদ রহ. থেকে বর্ণিত, “তিনি বলেন,
«دَخَلْتُ أَنَا وَعُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ المَسْجِدَ، فَإِذَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، جَالِسٌ إِلَى حُجْرَةِ عَائِشَةَ، وَإِذَا نَاسٌ يُصَلُّونَ فِي المَسْجِدِ صَلاَةَ الضُّحَى، قَالَ : فَسَأَلْنَاهُ عَنْ صَلاَتِهِمْ، فَقَالَ : بِدْعَةٌ» .
“আমি এবং ‘উরওয়া ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মসজিদে প্রবেশ করে দেখতে পেলাম, ‘আবদুল্লাহ ইবন ‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার হুজরার পাশে বসে আছেন। ইতোমধ্যে কিছু লোক মসজিদে সালাতুদ-দুহা আদায় করতে লাগল। আমরা তাকে এদের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, এটা বিদ‘আত।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৭৭৫, মুসলিম, হাদীস নং ১২৫৫।]
হাকাম ইবন ‘আরাজ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«سَأَلْتُ مُحَمَّدًا عَنْ صَلَاةِ الضُّحَى وَهُوَ مُسْنِدٌ ظَهْرَهُ إِلَى حُجْرَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَمَ، فَقَالَ : بِدْعَةٌ وَنِعْمَتِ الْبِدْعَةُ» .
“আমি ইমাম মুহাম্মদকে সালাতুদ-দুহা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লামের হুজরার সাথে পিঠ রেখে হেলান দিয়ে বসা ছিলেন। তিনি বললেন, এটা বিদ‘আত; তবে উত্তম বিদ‘আত।” [মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা, হাদীস নং ৭৭৭৫। ইবন হাজার আসকালানী রহ. বলেছেন, হাদীসের সনদটি সহীহ, ফাতহুল বারী, ৩/৫২।]
সালিম তার পিতা ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন,
«لَقَدْ قُتِلَ عُثْمَانُ وَمَا أَحَدٌ يُسَبِّحُهَا وَمَا أَحْدَثَ النَّاسُ شَيْئًا أَحَبَّ إِلَيَّ مِنْهَا» .
“উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু শহীদ হওয়া পর্যন্ত কেউ সালাতুদ-দুহার সালাত প্রচলন করে নি। মানুষ বিদ‘আত হিসেবে এ সালাত আদায় করাটা আমার কাছে খুবই পছন্দনীয়।” [ইবন হাজার আসকালানী রহ. বলেছেন, হাদীসের সনদটি সহীহ, ফাতহুল বারী, ৩/৫২।]
হাফেয ইবন হাজার আসকালানী রহ. বলেন, ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীস থেকে সালাতুদ-দুহা শরী‘আতসিদ্ধ হওয়াকে অস্বীকার করে না, কেননা তার না বলাটা না দেখার প্রমাণ। এটা নয় যে, সে কাজটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনোই করেন নি অথবা তাঁর না বলার অর্থ হলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বক্ষণিক ও মসজিদে জামা‘আতের সাথে প্রকাশ্যে সালাতুদ-দুহা আদায়কে না বলা। কেননা এভাবে প্রকাশ্যে জামা‘আতের সাথে আদায় করাটা সুন্নতের বিরোধী। মূল সালাতটা আদায় করা সুন্নাত বিরোধী নয়। আর তার একথা আরো শক্তিশালী করে ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীস থেকে। ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
«أَنَّهُ رَأَى قَوْمًا يُصَلُّونَهَا فَأَنْكَرَ عَلَيْهِمْ وَقَالَ إِنْ كَانَ وَلَا بُدَّ فَفِي بُيُوتِكُمْ» .
“তিনি কিছু লোককে সালাতুদ-দুহা আদায় করতে দেখে তাদেরকে এভাবে আদায় করতে নিষেধ করলেন। তিনি তাদেরকে বললেন, যদি তোমরা এ সালাত আদায় করতেই চাও তবে ঘরে বসে আদায় করো।” [মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা, হাদীস নং ৭৭৭৭, খ. ২, পৃ. ১৭২। ফাতহুল বারী, ৩/৫৩।]
এসব আলোচনার পর আমাদের কাছে এটা স্পষ্ট যে, জমহুর ‘আলেম সালাতুদ-দুহার ব্যাপারে যে মত ব্যক্ত করেছেন তাই অধিকতর বিশুদ্ধ ও শক্তিশালী। আল্লামা শাওক্বানী রহ. বলেন, এ সালাত সাব্যস্তের হাদীস এতই বেশি যে, অন্যরা কমপক্ষে মুস্তাহাব বলেছেন। ইমাম হাকিম রহ. সালাতুদ-দুহা সাব্যস্তের ব্যাপারে আলাদাভাবে প্রায় বিশজন সাহাবী থেকে বর্ণনা একত্রিত করেছেন। এমনিভাবে ইমাম সুয়ুতী রহ. ও আলাদাভাবে একখণ্ডে হাদীস একত্রিত করেছেন। এতে তিনি যেসব সাহাবীগণ এ সালাত আদায় করেছেন তাদের নাম উল্লেখ করেছেন। তাদের মধ্যে আবু সাঈদ খুদুরী, তার থেকে সাঈদ ইবন মানসুর ও আহমদ ইবন হাম্বল এ সালাত সম্পর্কিত হাদীস বর্ণনা করেছেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা, তার থেকে সাঈদ ইবন মানসূর, ইবন আবী শাইবা এ সালাত সম্পর্কিত হাদীস বর্ণনা করেছেন। আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহুর থেকে ইবন আবু শাইবা, আব্দুল্লাহ ইবন গালিব এ সালাত সম্পর্কিত হাদীস বর্ণনা করেছেন। আবূ নু‘আইম এসব হাদীস তার কিতাবে বর্ণনা করেছেন।
সাঈদ ইবন মানসূর রহ. হাসান রহ. বর্ণনা করেন,
«أَنَّهُ سُئِلَ : هَلْ كَانَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلُّونَهَا؟ فَقَالَ : نَعَمْ، كَانَ مِنْهُمْ مَنْ يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ، وَمِنْهُمْ مَنْ يُصَلِّي أَرْبَعًا، وَمِنْهُمْ مَنْ يَمُدُّ إلَى نِصْفِ النَّهَارِ» .
“তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ কি এ সালাত আদায় করেছেন? তিনি বলেন, হ্যাঁ, তারা এ সালাত আদায় করেছেন। কেউ দু রাআ‘আত, কেউ চার রাকাত, কেউ আবার দ্বি-প্রহর পর্যন্ত দীর্ঘ করতেন।” [নাইলুল আওতার, ৩/৭৬।]
সাঈদ ইবন মানসূর রহ. তার সুনানে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
طَلَبْتُ صَلَاةَ الضُّحَى فِي الْقُرْآنِ فَوَجَدْتُهَا هَهُنَا ﴿ يُسَبِّحۡنَ بِٱلۡعَشِيِّ وَٱلۡإِشۡرَاقِ ١٨ ﴾ [ص : ١٨ ]
“আমি সালাতুদ-দুহা সম্পর্কে কুরআনে খোঁজ করলাম। ফলে এ আয়াতে এ সালাত সম্পর্কে পাই,
﴿يُسَبِّحۡنَ بِٱلۡعَشِيِّ وَٱلۡإِشۡرَاقِ ١٨ ﴾ [ص : ١٨ ]
“আমি পর্বতমালাকে অনুগত করেছিলাম, তার সাথে এগুলো সকাল-সন্ধ্যায় আমার তাসবীহ পাঠ করত।” [সূরা সাদ, আয়াত: ১৮] [নাইলুল আওতার, ৩/৭৬।]
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
إنَّ صَلَاةَ الضُّحَى لَفِي الْقُرْآنِ وَمَا يَغُوصُ عَلَيْهَا إلَّا غَوَّاصٌ فِي قَوْله تَعَالَى : ﴿ فِي بُيُوتٍ أَذِنَ ٱللَّهُ أَن تُرۡفَعَ وَيُذۡكَرَ فِيهَا ٱسۡمُهُۥ يُسَبِّحُ لَهُۥ فِيهَا بِٱلۡغُدُوِّ وَٱلۡأٓصَالِ ٣٦ ﴾ [ النور : ٣٦ ]
“সালাতুদ-দুহা আল-কুরআনে রয়েছে। গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছাড়া তা বুঝতে পারে না। এটা আল্লাহর এ বাণীর মধ্যে রয়েছে,
﴿فِي بُيُوتٍ أَذِنَ ٱللَّهُ أَن تُرۡفَعَ وَيُذۡكَرَ فِيهَا ٱسۡمُهُۥ يُسَبِّحُ لَهُۥ فِيهَا بِٱلۡغُدُوِّ وَٱلۡأٓصَالِ ٣٦ ﴾ [ النور : ٣٦ ]
“সেসব ঘরে যাকে সমুন্নত করতে এবং যেখানে আল্লাহর নাম যিকির করতে আল্লাহই অনুমতি দিয়েছেন। সেখানে সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর তাসবীহ পাঠ করে।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩৬] [নাইলুল আওতার, ৩/৭৬।]
‘আওন আল-‘উকাইলী রহ. নিম্নোক্ত আল্লাহর বাণী সম্পর্কে বলেন,
﴿فَإِنَّهُۥ كَانَ لِلۡأَوَّٰبِينَ غَفُورٗا ٢٥ ﴾ [ الاسراء : ٢٥ ] قَالَ : الَّذِينَ يُصَلُّونَ صَلَاةَ الضُّحَى
“যদি তোমরা নেককার হও তবে তিনি তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারীদের প্রতি অধিক ক্ষমাশীল।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ২৫] তিনি বলেন, যারা সালাতুদ-দুহা আদায় করে।” [আত-তারগীব ওয়াততারহীব, ৩/১১, নাইলুল আওতার, ৩/৭৬।]
সূর্য যখন এক বর্শা পরিমাণ উপরে উঠে তখন এ সালাতের সময় শুরু হয়। আর সূর্য হেলে গেলে সময় শেষ হয়। তবে মুস্তাহাব হলো সূর্য আকাশে এমনভাবে উদিত হয় যখন উষ্ণতা প্রখর হয়। যেহেতু হাদীসে এসেছে,
কাসিম আশ-শায়বানী রহ. থেকে বর্ণিত যে,
«أَنَّ زَيْدَ بْنَ أَرْقَمَ، رَأَى قَوْمًا يُصَلُّونَ مِنَ الضُّحَى، فَقَالَ : أَمَا لَقَدْ عَلِمُوا أَنَّ الصَّلَاةَ فِي غَيْرِ هَذِهِ السَّاعَةِ أَفْضَلُ، إِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ : «صَلَاةُ الْأَوَّابِينَ حِينَ تَرْمَضُ الْفِصَالُ» .
“যায়দ ইবন আরকাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু একদল লোককে ‘দুহার সালাত আদায় করতে দেখে বললেন, ওহে! এরা তো জানে না যে, এ সময় ছাড়া অন্য সময় সালাত আদায় করাই বেশি ফযীলতের। রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর দিকে ধাবিত অনুগত প্রেমিকদের সালাতের ওয়াক্ত উট শাবকের পায়ে গরম সেকা লাগার সময় হয়ে থাকে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৮।]
যায়িদ ইবন আরকাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«خَرَجَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى أَهْلِ قُبَاءَ وَهُمْ يُصَلُّونَ، فَقَالَ : «صَلَاةُ الْأَوَّابِينَ إِذَا رَمِضَتِ الْفِصَالُ» .
“রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুবা বাসীদের ওখানে গেলেন, তখন তারা সালাত আদায় করছিলেন। তিনি তখন বলেছিলেন, আল্লাহ প্রেমিকদের সালাতের সময় হল যখন উট শাবকের পায়ে উত্তাপ লাগে (অর্থাৎ মাটি গরম হয়ে যায়)।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৮।]
আসেম ইবন দমরা আস-সালূলী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«سَأَلْنَا عَلِيًّا، عَنْ تَطَوُّعِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالنَّهَارِ فَقَالَ : إِنَّكُمْ لَا تُطِيقُونَهُ، فَقُلْنَا : أَخْبِرْنَا بِهِ نَأْخُذْ مِنْهُ مَا اسْتَطَعْنَا، قَالَ : كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «إِذَا صَلَّى الْفَجْرَ يُمْهِلُ، حَتَّى إِذَا كَانَتِ الشَّمْسُ مِنْ هَاهُنَا يَعْنِي مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ بِمِقْدَارِهَا مِنْ صَلَاةِ الْعَصْرِ مِنْ هَاهُنَا يَعْنِي مِنْ قِبَلِ الْمَغْرِبِ قَامَ فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ يُمْهِلُ حَتَّى إِذَا كَانَتِ الشَّمْسُ مِنْ هَاهُنَا، يَعْنِي مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ مِقْدَارَهَا مِنْ صَلَاةِ الظُّهْرِ مِنْ هَاهُنَا قَامَ فَصَلَّى أَرْبَعًا، وَأَرْبَعًا قَبْلَ الظُّهْرِ إِذَا زَالَتِ الشَّمْسُ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَهَا، وَأَرْبَعًا قَبْلَ الْعَصْرِ، يَفْصِلُ بَيْنَ كُلِّ رَكْعَتَيْنِ بِالتَّسْلِيمِ عَلَى الْمَلَائِكَةِ الْمُقَرَّبِينَ وَالنَّبِيِّينَ، وَمَنْ تَبِعَهُمْ مِنَ الْمُسْلِمِينَ وَالْمُؤْمِنِينَ» قَالَ عَلِيٌّ : فَتِلْكَ سِتَّ عَشْرَةَ رَكْعَةً، تَطَوُّعُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالنَّهَارِ، وَقَلَّ مَنْ يُدَاوِمُ عَلَيْهَا، قَالَ وَكِيعٌ : زَادَ فِيهِ أَبِي : فَقَالَ حَبِيبُ بْنُ أَبِي ثَابِتٍ يَا أَبَا إِسْحَاقَ مَا أُحِبُّ أَنَّ لِي بِحَدِيثِكَ هَذَا مِلْءَ مَسْجِدِكَ هَذَا ذَهَبًا» .
“আমরা ‘আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিনের বেলার নফল সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, তোমরা তা করতে সমর্থ নও। আমরা বললাম, আপনি আমাদের সেই সম্পর্কে অবহিত করুন, আমরা তা থেকে আমাদের সাধ্যমত গ্রহণ করবো। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত পড়ার পর কিছুক্ষণ অবসর থাকতেন। অবশেষে সূর্য আসরের সময় পশ্চিমাকাশে যত উপরে থাকে, পূর্বাকাশে ঠিক ততটা উপরে উঠলে তিনি দুই রাকাত সালাত আদায় করতেন অতঃপর অবসর থাকতেন। অবশেষে পশ্চিম আকাশে সূর্য যতটা উপরে থাকলে যোহরের সালাতের ওয়াক্ত থাকে, পূর্বাকাশে সূর্য ঠিক ততখানি উপরে উঠলে তিনি চার রাকাত সালাত আদায় করতেন। সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ার পর তিনি যোহরের (ফরয) সালাতের পূর্বে চার রাকাত এবং পরে দুই রাকাত পড়তেন। তিনি আসরের পূর্বেও দুই সালামে চার রাকাত সালাত আদায় করতেন এবং তার মাঝখানে নৈকট্যপ্রাপ্ত ফিরিশতাগণ, আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম এবং তাদের অনুগত মুমিন মুসলিমদের জন্য শান্তি ও স্বস্তি কামনা করতেন (তাশাহহুদ পড়তেন)। ‘আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, এই হলো রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিনের বেলার ষোলো রাকাত নফল সালাত। খুব কম লোকই তার ওপর স্থায়ীভাবে আমল করতে পারে। ওয়াকী রহ. বলেন, আমার পিতা এতে আরো বলেছেন, হাবীব ইবন আবূ সাবিত রহ. বলেছেন, হে আবূ ইসহাক! আপনার এই হাদীসের পরিবর্তে এই মসজিদে ভর্তি সোনা আমার মালিকানাভুক্ত হলে তাও আমার প্রিয় হতো না।” [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১১৬১, আলবানী রহ. হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।]
এ হাদীসে সূর্য ঢলে পড়লে চার রাকাত সালাতের কথা বলা হয়েছে। ইমাম ইরাকী রহ. বলেছেন, এটা যোহরের চার রাকাত সুন্নাত সালাত নয়; বরং আলেমগণ একে দুহা আল-কুবরার সালাত বলেছেন। আর সূর্য আকাশে এক বর্শা পরিমাণ উদিত হলে দুই রাকাত সালাতকে দুহা আস-সুগরার সালাত বলেছেন। [নাইলুল আওতার, ৩/৮২।]
কাসিম আশ-শায়বানী রহ. থেকে বর্ণিত যে,
«أَنَّ زَيْدَ بْنَ أَرْقَمَ، رَأَى قَوْمًا يُصَلُّونَ مِنَ الضُّحَى، فَقَالَ : أَمَا لَقَدْ عَلِمُوا أَنَّ الصَّلَاةَ فِي غَيْرِ هَذِهِ السَّاعَةِ أَفْضَلُ، إِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ : «صَلَاةُ الْأَوَّابِينَ حِينَ تَرْمَضُ الْفِصَالُ» .
“যায়দ ইবন আরকাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু একদল লোককে ‘দুহার সালাত আদায় করতে দেখে বললেন, ওহে! এরা তো জানে না যে, এ সময় ছাড়া অন্য সময় সালাত আদায় করাই বেশি ফযীলতের। রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর দিকে ধাবিত অনুগত প্রেমিকদের সালাতের ওয়াক্ত উট শাবকের পায়ে গরম সেকা লাগার সময় হয়ে থাকে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৮।]
যায়িদ ইবন আরকাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«خَرَجَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى أَهْلِ قُبَاءَ وَهُمْ يُصَلُّونَ، فَقَالَ : «صَلَاةُ الْأَوَّابِينَ إِذَا رَمِضَتِ الْفِصَالُ» .
“রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুবা বাসীদের ওখানে গেলেন, তখন তারা সালাত আদায় করছিলেন। তিনি তখন বলেছিলেন, আল্লাহ প্রেমিকদের সালাতের সময় হল যখন উট শাবকের পায়ে উত্তাপ লাগে (অর্থাৎ মাটি গরম হয়ে যায়)।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৮।]
আসেম ইবন দমরা আস-সালূলী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«سَأَلْنَا عَلِيًّا، عَنْ تَطَوُّعِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالنَّهَارِ فَقَالَ : إِنَّكُمْ لَا تُطِيقُونَهُ، فَقُلْنَا : أَخْبِرْنَا بِهِ نَأْخُذْ مِنْهُ مَا اسْتَطَعْنَا، قَالَ : كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «إِذَا صَلَّى الْفَجْرَ يُمْهِلُ، حَتَّى إِذَا كَانَتِ الشَّمْسُ مِنْ هَاهُنَا يَعْنِي مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ بِمِقْدَارِهَا مِنْ صَلَاةِ الْعَصْرِ مِنْ هَاهُنَا يَعْنِي مِنْ قِبَلِ الْمَغْرِبِ قَامَ فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ يُمْهِلُ حَتَّى إِذَا كَانَتِ الشَّمْسُ مِنْ هَاهُنَا، يَعْنِي مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ مِقْدَارَهَا مِنْ صَلَاةِ الظُّهْرِ مِنْ هَاهُنَا قَامَ فَصَلَّى أَرْبَعًا، وَأَرْبَعًا قَبْلَ الظُّهْرِ إِذَا زَالَتِ الشَّمْسُ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَهَا، وَأَرْبَعًا قَبْلَ الْعَصْرِ، يَفْصِلُ بَيْنَ كُلِّ رَكْعَتَيْنِ بِالتَّسْلِيمِ عَلَى الْمَلَائِكَةِ الْمُقَرَّبِينَ وَالنَّبِيِّينَ، وَمَنْ تَبِعَهُمْ مِنَ الْمُسْلِمِينَ وَالْمُؤْمِنِينَ» قَالَ عَلِيٌّ : فَتِلْكَ سِتَّ عَشْرَةَ رَكْعَةً، تَطَوُّعُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالنَّهَارِ، وَقَلَّ مَنْ يُدَاوِمُ عَلَيْهَا، قَالَ وَكِيعٌ : زَادَ فِيهِ أَبِي : فَقَالَ حَبِيبُ بْنُ أَبِي ثَابِتٍ يَا أَبَا إِسْحَاقَ مَا أُحِبُّ أَنَّ لِي بِحَدِيثِكَ هَذَا مِلْءَ مَسْجِدِكَ هَذَا ذَهَبًا» .
“আমরা ‘আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিনের বেলার নফল সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, তোমরা তা করতে সমর্থ নও। আমরা বললাম, আপনি আমাদের সেই সম্পর্কে অবহিত করুন, আমরা তা থেকে আমাদের সাধ্যমত গ্রহণ করবো। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত পড়ার পর কিছুক্ষণ অবসর থাকতেন। অবশেষে সূর্য আসরের সময় পশ্চিমাকাশে যত উপরে থাকে, পূর্বাকাশে ঠিক ততটা উপরে উঠলে তিনি দুই রাকাত সালাত আদায় করতেন অতঃপর অবসর থাকতেন। অবশেষে পশ্চিম আকাশে সূর্য যতটা উপরে থাকলে যোহরের সালাতের ওয়াক্ত থাকে, পূর্বাকাশে সূর্য ঠিক ততখানি উপরে উঠলে তিনি চার রাকাত সালাত আদায় করতেন। সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ার পর তিনি যোহরের (ফরয) সালাতের পূর্বে চার রাকাত এবং পরে দুই রাকাত পড়তেন। তিনি আসরের পূর্বেও দুই সালামে চার রাকাত সালাত আদায় করতেন এবং তার মাঝখানে নৈকট্যপ্রাপ্ত ফিরিশতাগণ, আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম এবং তাদের অনুগত মুমিন মুসলিমদের জন্য শান্তি ও স্বস্তি কামনা করতেন (তাশাহহুদ পড়তেন)। ‘আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, এই হলো রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিনের বেলার ষোলো রাকাত নফল সালাত। খুব কম লোকই তার ওপর স্থায়ীভাবে আমল করতে পারে। ওয়াকী রহ. বলেন, আমার পিতা এতে আরো বলেছেন, হাবীব ইবন আবূ সাবিত রহ. বলেছেন, হে আবূ ইসহাক! আপনার এই হাদীসের পরিবর্তে এই মসজিদে ভর্তি সোনা আমার মালিকানাভুক্ত হলে তাও আমার প্রিয় হতো না।” [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১১৬১, আলবানী রহ. হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।]
এ হাদীসে সূর্য ঢলে পড়লে চার রাকাত সালাতের কথা বলা হয়েছে। ইমাম ইরাকী রহ. বলেছেন, এটা যোহরের চার রাকাত সুন্নাত সালাত নয়; বরং আলেমগণ একে দুহা আল-কুবরার সালাত বলেছেন। আর সূর্য আকাশে এক বর্শা পরিমাণ উদিত হলে দুই রাকাত সালাতকে দুহা আস-সুগরার সালাত বলেছেন। [নাইলুল আওতার, ৩/৮২।]
সর্বনিম্ন হলো দুই রাকাত আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমলের দ্বারা সর্বোচ্চ আট রাকাত প্রমাণিত হয় এবং তাঁর বাণী দ্বারা সর্বোচ্চ বারো রাকাত সাব্যস্ত হয়। নিম্নে রাকাত সম্পর্কিত হাদীস উল্লেখ করা হলো।
আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীস দ্বারা দুই রাকাত, চার রাকাত, ছয় রাকাত, আট রাকাত ও বারো রাকাত পর্যন্ত সাব্যস্ত আছে। আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ صَلَّى الضُّحَى رَكْعَتَيْنِ لَمْ يُكْتَبْ مِنَ الْغَافِلِينَ، وَمَنْ صَلَّى أَرْبَعًا كُتِبَ مِنَ الْعَابِدِينَ، وَمَنْ صَلَّى سِتًّا كُفِيَ ذَلِكَ الْيَوْمَ، وَمَنْ صَلَّى ثَمَانِيًا كَتَبَهُ اللَّهُ مِنَ الْقَانِتِينَ، وَمَنْ صَلَّى ثِنْتَيْ عَشْرَةَ بَنَى اللَّهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ» .
“যে ব্যক্তি দুহার দু রাকাত সালাত আদায় করবে তাকে গাফেলীনদের অন্তর্ভূক্ত করা হবে না। আর যে চার রাকাত আদায় করবে তার নাম আবেদীনদের সাথে লেখা হবে। যে ছয় রাকাত আদায় করবে তার জন্য পুরা দিন যথেষ্ট হবে। আর যে ব্যক্তি আট রাকাত আদায় করবে তার নাম কানেতীনের সাথে লেখা হবে। আর যে ব্যক্তি বারো রাকাত আদায় করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করবেন।” [কানজুল উম্মাল, ৭/৮০৯। ইমাম হাইসামী রহ. বলেছেন, হাদীসটি ইমাম তাবরানী মু’জামুল কাবীরে বর্ণনা করেছেন, তাতে মূসা ইবন ইয়াকুব আজ-জাম‘য়ী রয়েছেন, তাকে ইবন মা‘ঈন ও ইবন হিব্বান সিকাহ বলেছেন, আর ইবনুল মাদিনী ও অন্যরা তাকে দয়ীফ বলেছেন। অন্যান্য রাবীরা সিকাহ। মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, ২/২৩৭।]
উম্মে হানী রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে আট রাকাত সালাতের বর্ণনা আছে। আবু মুররা রহ. থেকে বর্ণিত,
«أَخْبَرَهُ أَنَّهُ سَمِعَ أُمَّ هَانِئٍ بِنْتَ أَبِي طَالِبٍ، تَقُولُ : ذَهَبْتُ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفَتْحِ، فَوَجَدْتُهُ يَغْتَسِلُ، وَفَاطِمَةُ ابْنَتُهُ تَسْتُرُهُ بِثَوْبٍ، قَالَتْ : فَسَلَّمْتُ، فَقَالَ : «مَنْ هَذِهِ؟» قُلْتُ : أُمُّ هَانِئٍ بِنْتُ أَبِي طَالِبٍ، قَالَ : «مَرْحَبًا بِأُمِّ هَانِئٍ»، فَلَمَّا فَرَغَ مِنْ غُسْلِهِ، قَامَ فَصَلَّى ثَمَانِيَ رَكَعَاتٍ مُلْتَحِفًا فِي ثَوْبٍ وَاحِدٍ، فَلَمَّا انْصَرَفَ، قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللهِ زَعَمَ ابْنُ أُمِّي عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ أَنَّهُ قَاتِلٌ رَجُلًا أَجَرْتُهُ، فُلَانُ ابْنُ هُبَيْرَةَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : قَدْ أَجَرْنَا مَنْ أَجَرْتِ يَا أُمَّ هَانِئٍ قَالَتْ أُمُّ هَانِئٍ : وَذَلِكَ ضُحًى» .
“তিনি উম্মে হানী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে বলতে শুনেছেন যে, আমি মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গেলাম এবং আমি তাঁকে গোসল করতে পেলাম। তাঁর কন্যা ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা একটি কাপড় দিয়ে তাকে আড়াল করে রেখেছিলেন। আমি সালাম করলাম! তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এ কে? আমি জবাব দিলাম, উম্মে হানী বিনত আবু তালিব। তিনি বললেন, মারহাবা হে উম্মে হানী! তারপর তিনি গোসল সেরে দাঁড়িয়ে আট রাকাত সালাত আদায় করলেন। তখন তিনি একই কাপড় জড়িয়ে ছিলেন। তিনি যখন সালাত শেষ করলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার সহোদর আলী ইবন আবু তালিব, হুরায়রার পূত্র অমুককে কতল করার সংকল্প করেছে, যাকে আমি নিরাপত্তা দিয়েছি। রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে উম্মে হানী! তুমি যাকে নিরাপত্তা দিয়েছ আমিও তাকে নিরাপত্তা দিলাম। উম্মে হানী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন, এ ছিল দুহার (চাশত) সময়।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৩৬।]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার হাদীস দ্বারা চার রাকাত সাব্যস্ত। মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে জিজ্ঞাসা করলেন,
«كَمْ كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي صَلَاةَ الضُّحَى؟ قَالَتْ : «أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ وَيَزِيدُ مَا شَاءَ» .
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুহার সালাত কত রাকাত আদায় করতেন? তিনি বললেন, চার রাকাত। ইচ্ছে হলে বেশিও পড়তেন।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭১৯।]
আর আবূ যর রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীস দ্বারা দুই রাকাত সাব্যস্ত। আবূ যর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
عَنْ أَبِي ذَرٍّ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ قَالَ : «يُصْبِحُ عَلَى كُلِّ سُلَامَى مِنْ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ، فَكُلُّ تَسْبِيحَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَحْمِيدَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَهْلِيلَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَكْبِيرَةٍ صَدَقَةٌ، وَأَمْرٌ بِالْمَعْرُوفِ صَدَقَةٌ، وَنَهْيٌ عَنِ الْمُنْكَرِ صَدَقَةٌ، وَيُجْزِئُ مِنْ ذَلِكَ رَكْعَتَانِ يَرْكَعُهُمَا مِنَ الضُّحَى» .
“তোমাদের কেউ যখন ভোরে উঠে, তখন তার প্রতিটি জোড়ার ওপর একটি সদকা রয়েছে। প্রতি সুবহানাল্লাহ সদকা, প্রতি আলহামদুলিল্লাহ সদকা, প্রতি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ সদকা, প্রতি আল্লাহু আকবার সদকা, আমর বিল মা‘রুফ (সৎকাজের আদেশ) সদকা, নাহী আনিল মুনকার (অসৎকাজের নিষেধ) সদকা। অবশ্য চাশতের সময় দু-রাকাত সালাত আদায় করা এ সবের পক্ষ থেকে যথেষ্ট।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭২০।]
ইমাম আবূ জা‘ফর তাবারী, হালিমী, রূইয়ানী রহ. বলেছেন, দুহার সালাতের নির্দিষ্ট কোনো রাকাত সংখ্যা নেই। দুই রাকাত থেকে বারো রাকাত বা ততোধিক পড়া যায়। ইমাম ইরাকী তিরমিযীর ব্যাখ্যায় বলেছেন, সাহাবী ও তাবে‘ঈদের থেকে বারো রাকাতকে সীমাবদ্ধ করা হয় নি। ইমাম সুয়ূতী রহ. এ মত ব্যক্ত করেছেন। [নাইলুল আওতার, ৩/৭৬।]
সাঈদ ইবন মানসূর রহ. হাসান রহ. থেকে বর্ণনা করেন,
«أَنَّهُ سُئِلَ : هَلْ كَانَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - يُصَلُّونَهَا؟ فَقَالَ : نَعَمْ، كَانَ مِنْهُمْ مَنْ يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ، وَمِنْهُمْ مَنْ يُصَلِّي أَرْبَعًا، وَمِنْهُمْ مَنْ يَمُدُّ إلَى نِصْفِ النَّهَارِ» .
“তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ কি এ সালাত আদায় করেছেন? তিনি বলেন, হ্যাঁ, তারা এ সালাত আদায় করেছেন। কেউ দু রাকাত, কেউ চার রাকাত, কেউ আবার দ্বিপ্রহর পর্যন্ত দীর্ঘ করতেন।” [তানবীরুল হাওয়ালিক শরহে মুয়াত্তা মালিক, ১/১২৯। নাইলুল আওতার, ৩/৭৬।]
আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীস দ্বারা দুই রাকাত, চার রাকাত, ছয় রাকাত, আট রাকাত ও বারো রাকাত পর্যন্ত সাব্যস্ত আছে। আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ صَلَّى الضُّحَى رَكْعَتَيْنِ لَمْ يُكْتَبْ مِنَ الْغَافِلِينَ، وَمَنْ صَلَّى أَرْبَعًا كُتِبَ مِنَ الْعَابِدِينَ، وَمَنْ صَلَّى سِتًّا كُفِيَ ذَلِكَ الْيَوْمَ، وَمَنْ صَلَّى ثَمَانِيًا كَتَبَهُ اللَّهُ مِنَ الْقَانِتِينَ، وَمَنْ صَلَّى ثِنْتَيْ عَشْرَةَ بَنَى اللَّهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ» .
“যে ব্যক্তি দুহার দু রাকাত সালাত আদায় করবে তাকে গাফেলীনদের অন্তর্ভূক্ত করা হবে না। আর যে চার রাকাত আদায় করবে তার নাম আবেদীনদের সাথে লেখা হবে। যে ছয় রাকাত আদায় করবে তার জন্য পুরা দিন যথেষ্ট হবে। আর যে ব্যক্তি আট রাকাত আদায় করবে তার নাম কানেতীনের সাথে লেখা হবে। আর যে ব্যক্তি বারো রাকাত আদায় করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করবেন।” [কানজুল উম্মাল, ৭/৮০৯। ইমাম হাইসামী রহ. বলেছেন, হাদীসটি ইমাম তাবরানী মু’জামুল কাবীরে বর্ণনা করেছেন, তাতে মূসা ইবন ইয়াকুব আজ-জাম‘য়ী রয়েছেন, তাকে ইবন মা‘ঈন ও ইবন হিব্বান সিকাহ বলেছেন, আর ইবনুল মাদিনী ও অন্যরা তাকে দয়ীফ বলেছেন। অন্যান্য রাবীরা সিকাহ। মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, ২/২৩৭।]
উম্মে হানী রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে আট রাকাত সালাতের বর্ণনা আছে। আবু মুররা রহ. থেকে বর্ণিত,
«أَخْبَرَهُ أَنَّهُ سَمِعَ أُمَّ هَانِئٍ بِنْتَ أَبِي طَالِبٍ، تَقُولُ : ذَهَبْتُ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفَتْحِ، فَوَجَدْتُهُ يَغْتَسِلُ، وَفَاطِمَةُ ابْنَتُهُ تَسْتُرُهُ بِثَوْبٍ، قَالَتْ : فَسَلَّمْتُ، فَقَالَ : «مَنْ هَذِهِ؟» قُلْتُ : أُمُّ هَانِئٍ بِنْتُ أَبِي طَالِبٍ، قَالَ : «مَرْحَبًا بِأُمِّ هَانِئٍ»، فَلَمَّا فَرَغَ مِنْ غُسْلِهِ، قَامَ فَصَلَّى ثَمَانِيَ رَكَعَاتٍ مُلْتَحِفًا فِي ثَوْبٍ وَاحِدٍ، فَلَمَّا انْصَرَفَ، قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللهِ زَعَمَ ابْنُ أُمِّي عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ أَنَّهُ قَاتِلٌ رَجُلًا أَجَرْتُهُ، فُلَانُ ابْنُ هُبَيْرَةَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : قَدْ أَجَرْنَا مَنْ أَجَرْتِ يَا أُمَّ هَانِئٍ قَالَتْ أُمُّ هَانِئٍ : وَذَلِكَ ضُحًى» .
“তিনি উম্মে হানী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে বলতে শুনেছেন যে, আমি মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গেলাম এবং আমি তাঁকে গোসল করতে পেলাম। তাঁর কন্যা ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা একটি কাপড় দিয়ে তাকে আড়াল করে রেখেছিলেন। আমি সালাম করলাম! তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এ কে? আমি জবাব দিলাম, উম্মে হানী বিনত আবু তালিব। তিনি বললেন, মারহাবা হে উম্মে হানী! তারপর তিনি গোসল সেরে দাঁড়িয়ে আট রাকাত সালাত আদায় করলেন। তখন তিনি একই কাপড় জড়িয়ে ছিলেন। তিনি যখন সালাত শেষ করলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার সহোদর আলী ইবন আবু তালিব, হুরায়রার পূত্র অমুককে কতল করার সংকল্প করেছে, যাকে আমি নিরাপত্তা দিয়েছি। রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে উম্মে হানী! তুমি যাকে নিরাপত্তা দিয়েছ আমিও তাকে নিরাপত্তা দিলাম। উম্মে হানী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন, এ ছিল দুহার (চাশত) সময়।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৩৬।]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার হাদীস দ্বারা চার রাকাত সাব্যস্ত। মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে জিজ্ঞাসা করলেন,
«كَمْ كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي صَلَاةَ الضُّحَى؟ قَالَتْ : «أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ وَيَزِيدُ مَا شَاءَ» .
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুহার সালাত কত রাকাত আদায় করতেন? তিনি বললেন, চার রাকাত। ইচ্ছে হলে বেশিও পড়তেন।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭১৯।]
আর আবূ যর রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীস দ্বারা দুই রাকাত সাব্যস্ত। আবূ যর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
عَنْ أَبِي ذَرٍّ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ قَالَ : «يُصْبِحُ عَلَى كُلِّ سُلَامَى مِنْ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ، فَكُلُّ تَسْبِيحَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَحْمِيدَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَهْلِيلَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَكْبِيرَةٍ صَدَقَةٌ، وَأَمْرٌ بِالْمَعْرُوفِ صَدَقَةٌ، وَنَهْيٌ عَنِ الْمُنْكَرِ صَدَقَةٌ، وَيُجْزِئُ مِنْ ذَلِكَ رَكْعَتَانِ يَرْكَعُهُمَا مِنَ الضُّحَى» .
“তোমাদের কেউ যখন ভোরে উঠে, তখন তার প্রতিটি জোড়ার ওপর একটি সদকা রয়েছে। প্রতি সুবহানাল্লাহ সদকা, প্রতি আলহামদুলিল্লাহ সদকা, প্রতি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ সদকা, প্রতি আল্লাহু আকবার সদকা, আমর বিল মা‘রুফ (সৎকাজের আদেশ) সদকা, নাহী আনিল মুনকার (অসৎকাজের নিষেধ) সদকা। অবশ্য চাশতের সময় দু-রাকাত সালাত আদায় করা এ সবের পক্ষ থেকে যথেষ্ট।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭২০।]
ইমাম আবূ জা‘ফর তাবারী, হালিমী, রূইয়ানী রহ. বলেছেন, দুহার সালাতের নির্দিষ্ট কোনো রাকাত সংখ্যা নেই। দুই রাকাত থেকে বারো রাকাত বা ততোধিক পড়া যায়। ইমাম ইরাকী তিরমিযীর ব্যাখ্যায় বলেছেন, সাহাবী ও তাবে‘ঈদের থেকে বারো রাকাতকে সীমাবদ্ধ করা হয় নি। ইমাম সুয়ূতী রহ. এ মত ব্যক্ত করেছেন। [নাইলুল আওতার, ৩/৭৬।]
সাঈদ ইবন মানসূর রহ. হাসান রহ. থেকে বর্ণনা করেন,
«أَنَّهُ سُئِلَ : هَلْ كَانَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - يُصَلُّونَهَا؟ فَقَالَ : نَعَمْ، كَانَ مِنْهُمْ مَنْ يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ، وَمِنْهُمْ مَنْ يُصَلِّي أَرْبَعًا، وَمِنْهُمْ مَنْ يَمُدُّ إلَى نِصْفِ النَّهَارِ» .
“তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ কি এ সালাত আদায় করেছেন? তিনি বলেন, হ্যাঁ, তারা এ সালাত আদায় করেছেন। কেউ দু রাকাত, কেউ চার রাকাত, কেউ আবার দ্বিপ্রহর পর্যন্ত দীর্ঘ করতেন।” [তানবীরুল হাওয়ালিক শরহে মুয়াত্তা মালিক, ১/১২৯। নাইলুল আওতার, ৩/৭৬।]
সালাতুল আউয়াবীনের ব্যাপারে মোট চারটি মত পাওয়া যায়। নিম্নে এ চারটি মত দলীল ও বিশ্লেষণসহ উল্লেখ করে নির্ভরযোগ্য মত ব্যক্ত করব ইনশাআল্লাহ।
প্রথম মত: একদল আলেম বিশেষ করে সূফীবাদিরা মনে করেন, মাগরিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার মধ্যবর্তী সময়ে ছয় রাকাত সালাত আদায় হলো আউয়াবীনের সালাত। তারা দলীল হিসেবে নিম্নোক্ত হাদীসসমূহ উল্লেখ করেছেন:
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ أَحْيَا مَا بَيْنَ الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ، وَالْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ غُفِرَ لَهُ وَشَفَعَ لَهُ مَلَكَانِ» .
“যে ব্যক্তি যোহর ও আসর এবং মাগরীব ও ইশার মধ্যবর্তী সময় সালাত আদায় করবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন এবং দু’জন ফিরিশতা তার জন্য শাফা‘আত করবে।” [আত-তারগীব ফি ফাদায়েলে আমাল, হাদীস নং ৮১, পৃ. ৩৩।]
এ হাদীসটি আবুশ শাইখ আব্দুল্লাহ ইবন মুহাম্মদ ইবন হিব্বান ‘সাওয়াবুল ‘আমালিয যাকিয়্যাহ’ কিতাবে বর্ণনা করেছেন।
ইমাম যাহাবী রহ. বলেন, “আবূ মূসা আল-মাদিনী রহ. বলেন, আবুশ শাইখ আব্দুল্লাহ ইবন মুহাম্মদ ইবন হিব্বান-এর কিতাব ‘সাওয়াবুল ‘আমালিয যাকিয়্যাহ’ ইমাম তাবরানীর নিকট পেশ করলে তিনি এটাকে ভালো মনে করেছেন। তিনি আরো মন্তব্য করে বলেন, হাদীসখানা ইতোপূর্বে আমার জানা ছিল না। ‘সাওয়াবুল ‘আমাল’ নামে তার একখানা কিতাব আছে”। [সিয়ার ‘আলামুন নুবালা, ১৬/১৭৮।]
এ হাদীসটিকে ইমাম শাওকানী রহ. ইল্লত তথা দোষযুক্ত বলেছেন। তিনি বলেন, এ হাদীসের সনদে ‘হাফস ইবন ‘উমার আল-কাজ্জাজ’ রয়েছে, তাকে জয়নুদ্দীন ইরাকী রহ. মাজহুল বলেছেন। [নাইলুল আওতার, ৩/৫৪।]
ইমাম যাহাবী রহ.ও তাকে মাজহুল বলেছেন। [আল-মীযান, ১/৫৬৪।]
অন্য বর্ণনা হচ্ছে, ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«من صلى أربع ركعات بعد المغرب قبل أن يتكلم رفعت له في عليين، وكان كمن أدرك ليلة القدر في المسجد الأقصى، وهي خير من قيام نصف ليلة» .
“যে ব্যক্তি মাগরিবের পরে কোনো কথা বলার আগে চার রাকাত সালাত আদায় করবে তাকে ‘ইল্লিয়্যীনদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তার সাওয়াব এমন যে লাইলাতুল কদরে মসজিদে আকসায় সালাত আদায় করলে যেরূপ সাওয়াবের অধিকারী হয়। এ সালাত মধ্যরাতের (তাহাজ্জুদ) সালাতের চেয়েও উত্তম”। [হাদীসটি দাইলামী তার মুসনাদে ফিরদাউসে বর্ণনা করেছেন।]
ইমাম শাওকানী রহ. বলেছেন, হাদীসটি দাইলামী তার মুসনাদে ফিরদাউসে বর্ণনা করেছেন। হাদীসের সনদে অপরিচিত রাবী রয়েছে। তাছাড়া এটা আব্দুল্লাহ ইবন আবু সাঈদ এর বর্ণনা। তিনি যদি হাসান এবং তার থেকে ইয়াজিদ ইবন হারুন বর্ণনা করে থাকেন তবে আবু হাতিম রহ. তাকে অপরিচিত হিসেবে গণ্য করেছেন। আর ইবন হিব্বান তাকে সিকাহ এর মধ্যে গণ্য করেছেন। পক্ষান্তরে যদি রাবী আবু সাঈদ আল-মাকবুরী হন তাহলে তিনি দ‘য়ীফ। [নাইলুল আওতার, ৩/৬৮।] আর ইরাকী রহ. হাদীসের সনদটিকে দ‘য়ীফ বলেছেন। [তাখরিজ আহাদীসু এহইয়াউ উলুমুদ্দীন, ২/৮৮১।]
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ صَلَّى سِتَّ رَكَعَاتٍ بَعْدَ الْمَغْرِبِ قَبْلَ أَنْ يَتَكَلَّمَ غُفِرَ لَهُ بِهَا خَمْسِينَ سَنَةً» .
“যে ব্যক্তি মাগরিবের সালাতের পরে কোনো কথাবার্তা না বলে ছয় রাকাত সালাত আদায় করবে তার পঞ্চাশ বছরের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে”। [কিয়ামুল লাইল, মুহাম্মদ ইবন নসর আল-মারওয়াযী, পৃ. ১৩১।]
ইমাম যাহাবী রহ. মীযানে (৩/৬৮১) বলেছেন, আবু যুর‘আ তাকে মুনকিরুল হাদীস বলেছেন। ইবন হিব্বান বলেছেন, তিনি হাদীসকে উল্টিয়ে বলেন, মাউকুফকে মারফু হিসেবে চালিয়ে দেন, তার দ্বারা দলীল দেওয়া যাবে না। ইবন আবী হাতিম রহ. ‘আল-‘ইলাল’ (১/৭৮) এ বলেছেন, আবূ যুর‘আ রহ. বলেছেন, এ হাদীসকে ছুঁড়ে ফেল, কেননা এটা বানোয়াটের মতো। আবূ যুর‘আ রহ. আরো বলেছেন, মুহাম্মদ ইবন গাযওয়ান দামেস্কী মুনকিরুল হাদীস। আলবানী রহ. তাকে দ‘য়ীফার মধ্যে উল্লেখ করেছেন (পৃ. ৪৬৮)।
আরেক বর্ণনায় আছে, আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ صَلَّى بَعْدَ المَغْرِبِ سِتَّ رَكَعَاتٍ لَمْ يَتَكَلَّمْ فِيمَا بَيْنَهُنَّ بِسُوءٍ عُدِلْنَ لَهُ بِعِبَادَةِ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ سَنَةً» .
“কেউ যদি মাগরিবের পর ছয় রাকাত (নফল) আদায় করে এবং এর মাঝে সে যদি কোনো মন্দ কথা না বলে, তবে তাকে বার বছর ইবাদত করার সমপরিমাণ সাওয়াব দেওয়া হয়।” [তিরমিযী, হাদীস নং ৪৩৫।]
ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী রহ. বলেন: আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীসটি গরীব। যায়েদ ইবনুল হুবাব.... উমার ইবন আবী খাস‘আম সূত্র ছাড়া এটি বর্ণিত আছে বলে আমরা জানি না। মুহাম্মাদ ইবন ইসমাঈল আল-বুখারী রহ.-কে বলতে শুনেছি, উমার ইবন আবদুল্লাহ ইবন আবী খাস‘আম মুনকারুল হাদীস (তার হাদীস প্রত্যাখ্যাত)। তিনি তাকে খুবই দ‘য়ীফ বলে মন্তব্য করেছেন। আলবানী রহ. হাদীসটিকে অত্যন্ত দ‘য়ীফ বলেছেন।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা সূত্রে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন:
«مَنْ صَلَّى بَعْدَ الْمَغْرِبِ عِشْرِينَ رَكْعَةً بَنَى اللَّهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ» .
“মাগরিবের পর কেউ যদি বিশ রাকাত (নফল) সালাত আদায় করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে ঘর বানাবেন।” [তিরমিযী, হাদীস নং ৪৩৫।]
আলবানী রহ. হাদীসটিকে অত্যন্ত দ‘য়ীফ বলেছেন।
«من صَلَّى بَين الْمغرب وَالْعشَاء فَإِنَّهَا من صَلَاة الْأَوَّابِينَ» .
“যে ব্যক্তি মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে সালাত আদায় করবে; কেননা তা আউয়াবীনদের সালাত। [ইবন মুবারক ‘রাকাইক’ এ ইবন মুনজির এর সূত্রে মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করেছেন।]
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«مَنْ أَدْمَنَ عَلَى أَرْبَعِ رَكَعَاتٍ بَعْدَ الْمَغْرِبِ، كَانَ كَالْمُعَقِّبِ غَزْوَةً بَعْدَ غَزْوَةٍ» .
“যে ব্যক্তি নিয়মিতভাবে মাগরিবের পরে চার রাকাত সালাত আদায় করবে, সে যুদ্ধের পর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীর মতো সাওয়াবের অধিকারী হবে।” [যুহুদ ওয়ার রাকাইক, ইবন মুবারক, ১/৪৪৫। শরহে সুন্নাহ লিল-বাগভী, ৩/৪৭৪। মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক, হাদীস নং ৪৭২৮, ৩/৪৫।]
শাওকানী রহ. বলেছেন, এ হাদীসের সনদে ‘মূসা ইবন ‘উবাইদাহ আর-রুবজী’ খুবই দ‘য়ীফ। ইমাম ইরাকী রহ. মূলত এটা ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার কথা, মারফু‘ হাদীস নয়। [নাইলুল আওতার (৩/৫৪)।]
ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كان رسول اللَّه صلى اللَّه عليه وسلم يصلي بين المغرب والعشاء أربع ركعات» .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময় চার রাকাত সালাত আদায় করতেন।” [কিয়ামুল লাইল, মুহাম্মদ ইবন নসর আল-মারওয়াযী, (মুখতাসার: পৃ. ১৩২-১৩৩)।]
শাওকানী রহ. বলেছেন, হাদীসটির সনদ মুনকাতী‘; কেননা এটা মা‘ন ইবন আব্দুর রহমান ইবন আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ তার দাদার থেকে বর্ণনা। অথচ তিনি তার দাদাকে জীবিত পান নি। [নাইলুল আওতার (৩/৫৪)]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাস ‘উবাইদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে,
«أَكَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْمُرُ بِصَلَاةٍ بَعْدَ الْمَكْتُوبَةِ، أَوْ سِوَى الْمَكْتُوبَةِ؟ قَالَ : " نَعَمْ بَيْنَ الْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ» .
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি ফরজ সালাত ব্যতীত অন্য কোনো সালাত আদায় করতে নির্দেশ দিতেন? তিনি বলেছেন, হ্যাঁ, মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময় নফল সালাত আদায়ে নির্দেশ দিয়েছেন।” [মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ২৩৬৫২।]
আল্লামা শুয়াইব আরনাউত রহ. হাদীসের সনদকে দ‘য়ীফ বলেছেন, কেননা এখানে ‘উবাইদ থেকে বর্ণনাকারী অজ্ঞাত একলোক। হাইসামী বলেছেন, ইমাম আহমদ ও তাবরানী আল-কাবীরে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে প্রত্যেকটি সনদ একজন অজ্ঞাত লোকের থেকে বর্ণিত, অন্যান্য বর্ণনাকারীগণ সহীহ হাদীসের বর্ণনাকারী। [মাজমাউয যাওয়ায়েদ (২/২২৯)।]
মুহাম্মাদ ইবন আম্মার ইবন ইয়াসির রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«رأيت عمار بن ياسر يصلي بعد المغرب ست ركعات، وقال : رأيت حبيبي رسول الله صلى الله عليه وسلم يصلي بعد المغرب ست ركعات وقال : من صلى بعد المغرب ست ركعات ؛ غفرت له ذنوبه، ولو كانت مثل زبد البحر» .
“আমি আম্মার ইবন ইয়াসির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে মাগরিবের পরে ছয় রাকাত সালাত আদায় করতে দেখেছি। তিনি (আম্মার ইবন ইয়াসির) বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মাগরিবের পরে ছয় রাকাত সালাত আদায় করতে দেখেছি, আর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মাগরিবের পরে ছয় রাকাত সালাত আদায় করবে তার সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে; যদিও তার গুনাহ সমুদ্রের ফেনার মতো অধিক হয়।” [মাজমাউয যাওয়ায়েদ (২/২২৯)।]
হাইসামী রহ. বলেন, হাদীসটি ইমাম তাবরানী তার সগীর, আওসাত ও কাবীরে বর্ণনা করেছেন। সালিহ ইবন কুতন আল-বুখারী এককভাবে বর্ণনা করেছেন। আল্লামা মুনযিরী রহ. তারগীব ওয়াত তারহীব কিতাবে বলেছেন, হাদীসটি গরীব। শাওকানী রহ. বলেছেন, ইবন জাওযী রহ. বলেছেন, এ হাদীসের সনদে অনেক অপরিচিত বর্ণনাকারী আছেন। [নাইলুল আওতার (৩/৫৪)।] আলবানী রহ. হাদীসটিকে দ‘য়ীফ বলেছেন। তিনি সালিহ ইবন কুতন কে মাজহুল বলেছেন, এছাড়াও তার উর্ধ্বতন বর্ণনাকারীগণও অপরিচিত। [তারগীব ওয়াত তারহীব (১/১৭২)।]
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, আসওয়াদ রহ. বলেন,
«مَا أَتَيْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فِي تِلْكَ السَّاعَةِ إِلَّا وَجَدْتُهُ يُصَلِّي، فَقُلْتُ لَهُ : فِي ذَلِكَ، قَالَ : نِعْمَ سَاعَةُ الْغَفْلَةِ يَعْنِي بَيْنَ الْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ» .
“আমি যখনই সে সময় (মাগরিবের পর) আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে এসেছি, তখনই তাকে সালাতরত অবস্থায় পেয়েছি আমি তাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, এ অলস সময় অর্থাৎ মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময় ইবাদত করা কতই না উত্তম।” [মুখতাসার কিয়ামুল লাইল, পৃ. ৮৯। মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক, হাদীস নং ৪৭২৫। তাবরানী কাবীর, ৯/২৮৮, হাদীস নং ৯৪৫০।]
হাইসামী রহ. বলেছেন, হাদীসের সনদে জাবির আল-জু‘ফি সম্পর্কে আলেমগণ অনেক ধরনের মন্তব্য করেছেন। [মাজমাউয যাওয়ায়েদ (২/২৩০)।] আলবানী রহ. হাদীসটিকে দ‘য়ীফ বলেছেন। [তারগীব ওয়াত তারহীব (১/১৭২)]
হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«سَأَلَتْنِي أُمِّي : مَتَى عَهْدُكَ، تَعْنِي بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقُلْتُ : مَا لِي بِهِ عَهْدٌ مُنْذُ كَذَا وَكَذَا، فَنَالَتْ مِنِّي . فَقُلْتُ لَهَا : دَعِينِي آتِي النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأُصَلِّيَ مَعَهُ الْمَغْرِبَ، وَأَسْأَلُهُ أَنْ يَسْتَغْفِرَ لِي وَلَكِ، فَأَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَصَلَّيْتُ مَعَهُ الْمَغْرِبَ، فَصَلَّى حَتَّى صَلَّى الْعِشَاءَ، ثُمَّ انْفَتَلَ فَتَبِعْتُهُ فَسَمِعَ صَوْتِي فَقَالَ : مَنْ هَذَا؟ حُذَيْفَةُ . قُلْتُ نَعَمْ قَالَ : مَا حَاجَتُكَ غَفَرَ اللَّهُ لَكَ وَلِأُمِّكَ» .
“আমার মা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খিদমতে তোমার পালা কখন? তখন আমি আমার অমুক সময় থেকে অমুক সময় পর্যন্ত সময়ের কথা তাকে বললাম। তিনি আমার সে সময়টা আমার থেকে নিয়ে নিলেন। আমি মাকে বললাম: আপনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এসে তাঁর সাথে মাগরিবের সালাত আদায় করবেন এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমার ও আপনার জন্য দো‘আ করতে বলব। আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে আসলাম এবং তাঁর সাথে মাগরিবের সালাত আদায় করলাম, তিনি মাগরিবের পরে সালাত আদায় করতে থাকলেন, এমনকি ইশা পর্যন্ত সালাত আদায় করে ইশার সালাত আদায় করলেন। অতঃপর তিনি নির্জন স্থানে যাচ্ছিলেন, আমিও তাঁকে অনুসরণ করতে লাগলাম। তিনি আমার আওয়াজ শুনে জিজ্ঞেস করলেন, কে? হুযাইফা? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তোমার কী প্রয়োজন? আল্লাহ তোমাকে ও তোমার মাকে ক্ষমা করে দিন।” [তিরমিযী, হাদীস নং ৩৭৮১, তিনি হাদীসটিকে হাসান গরীব বলেছেন। নাসায়ী আল-কুবরা, হাদীস নং ৩৮০, মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ৩৯২, ৪০৪। ইমাম মুনযিরী রহ. তারগীব ওয়াততারহীবে বলেছেন, হাদীসটি নাসায়ী জাইয়্যেদ সনদে বর্ণনা করেছেন। আল্লামা আলবানী রহ. সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীবে (১/৩৮২) হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। শুয়াইব আরনাউত ও সহীহ বলেছেন (৩৮/৪৩০)।]
যদিও হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীসটি সহীহ; কিন্তু এ হাদীস দ্বারা আউয়াবীন সালাত প্রমাণ করা যাবে না। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ফরয সালাতের পরে যে কোনো নফল সালাত আদায় করেছেন। তাছাড়া এতো দীর্ঘ সময়ে তিনি মাত্র ছয় রাকাত সালাত আদায় করেন নি; বরং এর চেয়েও বেশি হতে পারে, যা রাবীর কথা দ্বারাই বুঝা যায় যে, তিনি মাগরিবের পরে ইশা পর্যন্ত সালাতরত ছিলেন। ফলে হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও তার মা সে সময় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কথা বলার সুযোগ পান নি।
আব্দুল করীম ইবন হারিস রহ. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ رَكَعَ عَشْرَ رَكَعَاتٍ بَيْنَ الْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ بُنِيَ لَهُ قَصْرٌ فِي الْجَنَّةِ» ، فَقَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ : إِذًا نُكْثِرُ قُصُورَنَا، أَوْ بُيُوتَنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «اللَّهُ أَكْثَرُ وَأَفْضَلُ» أَوْ قَالَ : «أَطْيَبُ» .
“যে ব্যক্তি মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে বারো রাকাত সালাত আদায় করবে তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ তৈরি করা হবে। তখন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তাহলে আমরা বেশি বেশি সালাত আদায় করে আমাদের প্রাসাদ বা বাড়ি বেশি পরিমাণ করতে পারি। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহু আকসার বা আফদাল বা আতইয়াব (আল্লাহ অধিক দাতা, উত্তম প্রতিদান প্রদানকারী)।” [যুহুদ ওয়ার রাকাইক, ইবন মুবারক, ১/৪৪৬। মুখতাসার কিয়ামুল লাইল, পৃ. ৮৮।] আল্লামা আলবানী রহ. বলেছেন, এটা মুরসাল দ‘য়ীফ। [সিলসিলা দ‘য়ীফার (৪৫৯৭)।]
মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে আদায়কৃত ছয় রাকাত সালাতকে কতিপয় শাফে‘ঈগণ আউয়াবীনের সালাত বলেছেন। এটাকে সালাতুল গাফলাহও বলা হয়। কেননা মানুষ এ সময় রাতের খাবার, ঘুমের প্রস্তুতি ও অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকেন।
ইবন মুনকাদির ও আবূ হাযিম রহ. নিম্নোক্ত আল্লাহর বাণী সম্পর্কে বলেন,
﴿تَتَجَافَىٰ جُنُوبُهُمۡ عَنِ ٱلۡمَضَاجِعِ﴾ [ السجدة : ١٦ ] هي ما بين المغرب وصلاة العشاء ، صلاة الأوابين .
“তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে আলাদা হয়।” [সূরা আস-সাজদাহ, আয়াত: ১৬] এটা মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী আউয়াবীনের সালাত।” [সুনান আল-বাইহাকী, ৩/১৯।] তবে এ হাদীসের সনদে ইবন লাহি‘আহ আছেন, তাঁকে অনেকেই দ‘য়ীফ বলেছেন।
দ্বিতীয় মত: সালাতুল আউয়াবীন হলো সলাতুদ-দুহা বা চাশতের সালাত। এ সালাত সূর্যোদয়ের ১৫ মিনিট পরে শুরু হয় এবং যোহরের ১৫ মিনিট পূর্বে শেষ হয়। এ সালাতের সময় সম্পর্কে হাদীসে এসেছে, যায়িদ ইবন আরকাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«خَرَجَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى أَهْلِ قُبَاءَ وَهُمْ يُصَلُّونَ، فَقَالَ : «صَلَاةُ الْأَوَّابِينَ إِذَا رَمِضَتِ الْفِصَالُ» .
“রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুবা বাসীদের ওখানে গেলেন, তখন তারা সালাত আদায় করছিলেন। তিনি তখন বলেছিলেন, আল্লাহ প্রেমিকদের সালাতের সময় হল যখন উট শাবকের পায়ে উত্তাপ লাগে (অর্থাৎ মাটি গরম হয়ে যায়)।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৮।]
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لَا يُحَافِظُ عَلَى صَلَاةِ الضُّحَى إِلَّا أَوَّابٌ» قَالَ : «وَهِيَ صَلَاةُ الْأَوَّابِينَ» .
“কেবল আওয়াব তথা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনকারীগণই সালাতুদ-দুহার সর্বদা গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তিনি আরো বলেছেন, সালাতুদ-দুহা হলো আউওয়াবীনের সালাত।” [আল-মুসতাদরাক লিলহাকিম, হাদীস নং ১১৮২। ইমাম হাকিম রহ. বলেন, হাদীসটি মুসলিমের শর্তে সহীহ, তবে বুখারী ও মুসলিম কেউ তাদের কিতাবে উল্লেখ করেন নি।]
আল্লামা আলবানী রহ. বলেছেন, “যারা মাগরিবের পরে ছয় রাকাত সালাত আদায় করাকে আউওয়াবীনের সালাত বলেন এ হাদীস তাদের সে দাবী খণ্ডন করে দিয়েছে। আসলে এ ছয় রাকতের নামের কোনো অস্তিত্ব নেই এবং প্রকৃতপক্ষে মাগরিবের পরে ছয় রাকাত সালাত সাব্যস্ত নেই।” [সিলসিলা আহাদীসুদ দ‘য়ীফা ওয়াল মাউদু‘আহ, ১/৪৮১।]
তৃতীয় মত: সালাতুল আউয়াবীন সালাতুদ-দুহা ও মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ের নফল সালাত উভয়কেই বুঝায়। এ মতানুসারীরা মূলতঃ দু’টি মতকে একত্রিত করেছেন।
মাউসু‘আ ফিকহিয়্যাহ কুয়েতিয়াহতে বলা হয়েছে, সালাতুদ-দুহা ও মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সালাতকে সালাতুল আউয়াবীন বলা হয়। এটা উভয় সালাতের জন্য ব্যবহৃত হয়। [মাউসু‘আ ফিকহিয়্যাহ কুয়েতিয়াহ, ২৭/১৩৪-১৩৫।]
চতুর্থ মত: সালাতুল আউয়াবীন হলো সফর থেকে ঘরে ফিরে বা সফরে বের হওয়ার সময় দু রাকাত সালাত আদায় করা। তারা দলীল হিসেবে এ হাদীস পেশ করেন,
উসমান ইবন আবূ সাওদাহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মারফু‘ সূত্রে বর্ণনা করেন,
«صلاة الأبرار ) صلاة الأوابين ( ركعتان إذا دخلت بيتك، وركعتان إذا خرجت» .
“সালাতুল আবরার তথা সালাতুল আউয়াবীন হলো যখন তুমি গৃহ থেকে বের হও এবং গৃহে প্রবেশ করো তখন আদায়কৃত দু রাকাত সালাত।” [ইবন মুবারক আয-যুহদ এ বর্ণনা করেছেন। আলবানী রহ. সিলসিলা দ‘য়ীফিয়া (৩৭৮৮)-তে হাদীসটিকে দ‘য়ীফ বলেছেন।]
প্রথম মত: একদল আলেম বিশেষ করে সূফীবাদিরা মনে করেন, মাগরিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার মধ্যবর্তী সময়ে ছয় রাকাত সালাত আদায় হলো আউয়াবীনের সালাত। তারা দলীল হিসেবে নিম্নোক্ত হাদীসসমূহ উল্লেখ করেছেন:
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ أَحْيَا مَا بَيْنَ الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ، وَالْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ غُفِرَ لَهُ وَشَفَعَ لَهُ مَلَكَانِ» .
“যে ব্যক্তি যোহর ও আসর এবং মাগরীব ও ইশার মধ্যবর্তী সময় সালাত আদায় করবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন এবং দু’জন ফিরিশতা তার জন্য শাফা‘আত করবে।” [আত-তারগীব ফি ফাদায়েলে আমাল, হাদীস নং ৮১, পৃ. ৩৩।]
এ হাদীসটি আবুশ শাইখ আব্দুল্লাহ ইবন মুহাম্মদ ইবন হিব্বান ‘সাওয়াবুল ‘আমালিয যাকিয়্যাহ’ কিতাবে বর্ণনা করেছেন।
ইমাম যাহাবী রহ. বলেন, “আবূ মূসা আল-মাদিনী রহ. বলেন, আবুশ শাইখ আব্দুল্লাহ ইবন মুহাম্মদ ইবন হিব্বান-এর কিতাব ‘সাওয়াবুল ‘আমালিয যাকিয়্যাহ’ ইমাম তাবরানীর নিকট পেশ করলে তিনি এটাকে ভালো মনে করেছেন। তিনি আরো মন্তব্য করে বলেন, হাদীসখানা ইতোপূর্বে আমার জানা ছিল না। ‘সাওয়াবুল ‘আমাল’ নামে তার একখানা কিতাব আছে”। [সিয়ার ‘আলামুন নুবালা, ১৬/১৭৮।]
এ হাদীসটিকে ইমাম শাওকানী রহ. ইল্লত তথা দোষযুক্ত বলেছেন। তিনি বলেন, এ হাদীসের সনদে ‘হাফস ইবন ‘উমার আল-কাজ্জাজ’ রয়েছে, তাকে জয়নুদ্দীন ইরাকী রহ. মাজহুল বলেছেন। [নাইলুল আওতার, ৩/৫৪।]
ইমাম যাহাবী রহ.ও তাকে মাজহুল বলেছেন। [আল-মীযান, ১/৫৬৪।]
অন্য বর্ণনা হচ্ছে, ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«من صلى أربع ركعات بعد المغرب قبل أن يتكلم رفعت له في عليين، وكان كمن أدرك ليلة القدر في المسجد الأقصى، وهي خير من قيام نصف ليلة» .
“যে ব্যক্তি মাগরিবের পরে কোনো কথা বলার আগে চার রাকাত সালাত আদায় করবে তাকে ‘ইল্লিয়্যীনদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তার সাওয়াব এমন যে লাইলাতুল কদরে মসজিদে আকসায় সালাত আদায় করলে যেরূপ সাওয়াবের অধিকারী হয়। এ সালাত মধ্যরাতের (তাহাজ্জুদ) সালাতের চেয়েও উত্তম”। [হাদীসটি দাইলামী তার মুসনাদে ফিরদাউসে বর্ণনা করেছেন।]
ইমাম শাওকানী রহ. বলেছেন, হাদীসটি দাইলামী তার মুসনাদে ফিরদাউসে বর্ণনা করেছেন। হাদীসের সনদে অপরিচিত রাবী রয়েছে। তাছাড়া এটা আব্দুল্লাহ ইবন আবু সাঈদ এর বর্ণনা। তিনি যদি হাসান এবং তার থেকে ইয়াজিদ ইবন হারুন বর্ণনা করে থাকেন তবে আবু হাতিম রহ. তাকে অপরিচিত হিসেবে গণ্য করেছেন। আর ইবন হিব্বান তাকে সিকাহ এর মধ্যে গণ্য করেছেন। পক্ষান্তরে যদি রাবী আবু সাঈদ আল-মাকবুরী হন তাহলে তিনি দ‘য়ীফ। [নাইলুল আওতার, ৩/৬৮।] আর ইরাকী রহ. হাদীসের সনদটিকে দ‘য়ীফ বলেছেন। [তাখরিজ আহাদীসু এহইয়াউ উলুমুদ্দীন, ২/৮৮১।]
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ صَلَّى سِتَّ رَكَعَاتٍ بَعْدَ الْمَغْرِبِ قَبْلَ أَنْ يَتَكَلَّمَ غُفِرَ لَهُ بِهَا خَمْسِينَ سَنَةً» .
“যে ব্যক্তি মাগরিবের সালাতের পরে কোনো কথাবার্তা না বলে ছয় রাকাত সালাত আদায় করবে তার পঞ্চাশ বছরের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে”। [কিয়ামুল লাইল, মুহাম্মদ ইবন নসর আল-মারওয়াযী, পৃ. ১৩১।]
ইমাম যাহাবী রহ. মীযানে (৩/৬৮১) বলেছেন, আবু যুর‘আ তাকে মুনকিরুল হাদীস বলেছেন। ইবন হিব্বান বলেছেন, তিনি হাদীসকে উল্টিয়ে বলেন, মাউকুফকে মারফু হিসেবে চালিয়ে দেন, তার দ্বারা দলীল দেওয়া যাবে না। ইবন আবী হাতিম রহ. ‘আল-‘ইলাল’ (১/৭৮) এ বলেছেন, আবূ যুর‘আ রহ. বলেছেন, এ হাদীসকে ছুঁড়ে ফেল, কেননা এটা বানোয়াটের মতো। আবূ যুর‘আ রহ. আরো বলেছেন, মুহাম্মদ ইবন গাযওয়ান দামেস্কী মুনকিরুল হাদীস। আলবানী রহ. তাকে দ‘য়ীফার মধ্যে উল্লেখ করেছেন (পৃ. ৪৬৮)।
আরেক বর্ণনায় আছে, আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ صَلَّى بَعْدَ المَغْرِبِ سِتَّ رَكَعَاتٍ لَمْ يَتَكَلَّمْ فِيمَا بَيْنَهُنَّ بِسُوءٍ عُدِلْنَ لَهُ بِعِبَادَةِ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ سَنَةً» .
“কেউ যদি মাগরিবের পর ছয় রাকাত (নফল) আদায় করে এবং এর মাঝে সে যদি কোনো মন্দ কথা না বলে, তবে তাকে বার বছর ইবাদত করার সমপরিমাণ সাওয়াব দেওয়া হয়।” [তিরমিযী, হাদীস নং ৪৩৫।]
ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী রহ. বলেন: আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীসটি গরীব। যায়েদ ইবনুল হুবাব.... উমার ইবন আবী খাস‘আম সূত্র ছাড়া এটি বর্ণিত আছে বলে আমরা জানি না। মুহাম্মাদ ইবন ইসমাঈল আল-বুখারী রহ.-কে বলতে শুনেছি, উমার ইবন আবদুল্লাহ ইবন আবী খাস‘আম মুনকারুল হাদীস (তার হাদীস প্রত্যাখ্যাত)। তিনি তাকে খুবই দ‘য়ীফ বলে মন্তব্য করেছেন। আলবানী রহ. হাদীসটিকে অত্যন্ত দ‘য়ীফ বলেছেন।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা সূত্রে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন:
«مَنْ صَلَّى بَعْدَ الْمَغْرِبِ عِشْرِينَ رَكْعَةً بَنَى اللَّهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ» .
“মাগরিবের পর কেউ যদি বিশ রাকাত (নফল) সালাত আদায় করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে ঘর বানাবেন।” [তিরমিযী, হাদীস নং ৪৩৫।]
আলবানী রহ. হাদীসটিকে অত্যন্ত দ‘য়ীফ বলেছেন।
«من صَلَّى بَين الْمغرب وَالْعشَاء فَإِنَّهَا من صَلَاة الْأَوَّابِينَ» .
“যে ব্যক্তি মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে সালাত আদায় করবে; কেননা তা আউয়াবীনদের সালাত। [ইবন মুবারক ‘রাকাইক’ এ ইবন মুনজির এর সূত্রে মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করেছেন।]
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«مَنْ أَدْمَنَ عَلَى أَرْبَعِ رَكَعَاتٍ بَعْدَ الْمَغْرِبِ، كَانَ كَالْمُعَقِّبِ غَزْوَةً بَعْدَ غَزْوَةٍ» .
“যে ব্যক্তি নিয়মিতভাবে মাগরিবের পরে চার রাকাত সালাত আদায় করবে, সে যুদ্ধের পর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীর মতো সাওয়াবের অধিকারী হবে।” [যুহুদ ওয়ার রাকাইক, ইবন মুবারক, ১/৪৪৫। শরহে সুন্নাহ লিল-বাগভী, ৩/৪৭৪। মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক, হাদীস নং ৪৭২৮, ৩/৪৫।]
শাওকানী রহ. বলেছেন, এ হাদীসের সনদে ‘মূসা ইবন ‘উবাইদাহ আর-রুবজী’ খুবই দ‘য়ীফ। ইমাম ইরাকী রহ. মূলত এটা ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার কথা, মারফু‘ হাদীস নয়। [নাইলুল আওতার (৩/৫৪)।]
ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كان رسول اللَّه صلى اللَّه عليه وسلم يصلي بين المغرب والعشاء أربع ركعات» .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময় চার রাকাত সালাত আদায় করতেন।” [কিয়ামুল লাইল, মুহাম্মদ ইবন নসর আল-মারওয়াযী, (মুখতাসার: পৃ. ১৩২-১৩৩)।]
শাওকানী রহ. বলেছেন, হাদীসটির সনদ মুনকাতী‘; কেননা এটা মা‘ন ইবন আব্দুর রহমান ইবন আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ তার দাদার থেকে বর্ণনা। অথচ তিনি তার দাদাকে জীবিত পান নি। [নাইলুল আওতার (৩/৫৪)]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাস ‘উবাইদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে,
«أَكَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْمُرُ بِصَلَاةٍ بَعْدَ الْمَكْتُوبَةِ، أَوْ سِوَى الْمَكْتُوبَةِ؟ قَالَ : " نَعَمْ بَيْنَ الْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ» .
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি ফরজ সালাত ব্যতীত অন্য কোনো সালাত আদায় করতে নির্দেশ দিতেন? তিনি বলেছেন, হ্যাঁ, মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময় নফল সালাত আদায়ে নির্দেশ দিয়েছেন।” [মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ২৩৬৫২।]
আল্লামা শুয়াইব আরনাউত রহ. হাদীসের সনদকে দ‘য়ীফ বলেছেন, কেননা এখানে ‘উবাইদ থেকে বর্ণনাকারী অজ্ঞাত একলোক। হাইসামী বলেছেন, ইমাম আহমদ ও তাবরানী আল-কাবীরে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে প্রত্যেকটি সনদ একজন অজ্ঞাত লোকের থেকে বর্ণিত, অন্যান্য বর্ণনাকারীগণ সহীহ হাদীসের বর্ণনাকারী। [মাজমাউয যাওয়ায়েদ (২/২২৯)।]
মুহাম্মাদ ইবন আম্মার ইবন ইয়াসির রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«رأيت عمار بن ياسر يصلي بعد المغرب ست ركعات، وقال : رأيت حبيبي رسول الله صلى الله عليه وسلم يصلي بعد المغرب ست ركعات وقال : من صلى بعد المغرب ست ركعات ؛ غفرت له ذنوبه، ولو كانت مثل زبد البحر» .
“আমি আম্মার ইবন ইয়াসির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে মাগরিবের পরে ছয় রাকাত সালাত আদায় করতে দেখেছি। তিনি (আম্মার ইবন ইয়াসির) বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মাগরিবের পরে ছয় রাকাত সালাত আদায় করতে দেখেছি, আর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মাগরিবের পরে ছয় রাকাত সালাত আদায় করবে তার সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে; যদিও তার গুনাহ সমুদ্রের ফেনার মতো অধিক হয়।” [মাজমাউয যাওয়ায়েদ (২/২২৯)।]
হাইসামী রহ. বলেন, হাদীসটি ইমাম তাবরানী তার সগীর, আওসাত ও কাবীরে বর্ণনা করেছেন। সালিহ ইবন কুতন আল-বুখারী এককভাবে বর্ণনা করেছেন। আল্লামা মুনযিরী রহ. তারগীব ওয়াত তারহীব কিতাবে বলেছেন, হাদীসটি গরীব। শাওকানী রহ. বলেছেন, ইবন জাওযী রহ. বলেছেন, এ হাদীসের সনদে অনেক অপরিচিত বর্ণনাকারী আছেন। [নাইলুল আওতার (৩/৫৪)।] আলবানী রহ. হাদীসটিকে দ‘য়ীফ বলেছেন। তিনি সালিহ ইবন কুতন কে মাজহুল বলেছেন, এছাড়াও তার উর্ধ্বতন বর্ণনাকারীগণও অপরিচিত। [তারগীব ওয়াত তারহীব (১/১৭২)।]
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, আসওয়াদ রহ. বলেন,
«مَا أَتَيْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فِي تِلْكَ السَّاعَةِ إِلَّا وَجَدْتُهُ يُصَلِّي، فَقُلْتُ لَهُ : فِي ذَلِكَ، قَالَ : نِعْمَ سَاعَةُ الْغَفْلَةِ يَعْنِي بَيْنَ الْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ» .
“আমি যখনই সে সময় (মাগরিবের পর) আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে এসেছি, তখনই তাকে সালাতরত অবস্থায় পেয়েছি আমি তাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, এ অলস সময় অর্থাৎ মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময় ইবাদত করা কতই না উত্তম।” [মুখতাসার কিয়ামুল লাইল, পৃ. ৮৯। মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক, হাদীস নং ৪৭২৫। তাবরানী কাবীর, ৯/২৮৮, হাদীস নং ৯৪৫০।]
হাইসামী রহ. বলেছেন, হাদীসের সনদে জাবির আল-জু‘ফি সম্পর্কে আলেমগণ অনেক ধরনের মন্তব্য করেছেন। [মাজমাউয যাওয়ায়েদ (২/২৩০)।] আলবানী রহ. হাদীসটিকে দ‘য়ীফ বলেছেন। [তারগীব ওয়াত তারহীব (১/১৭২)]
হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«سَأَلَتْنِي أُمِّي : مَتَى عَهْدُكَ، تَعْنِي بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقُلْتُ : مَا لِي بِهِ عَهْدٌ مُنْذُ كَذَا وَكَذَا، فَنَالَتْ مِنِّي . فَقُلْتُ لَهَا : دَعِينِي آتِي النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأُصَلِّيَ مَعَهُ الْمَغْرِبَ، وَأَسْأَلُهُ أَنْ يَسْتَغْفِرَ لِي وَلَكِ، فَأَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَصَلَّيْتُ مَعَهُ الْمَغْرِبَ، فَصَلَّى حَتَّى صَلَّى الْعِشَاءَ، ثُمَّ انْفَتَلَ فَتَبِعْتُهُ فَسَمِعَ صَوْتِي فَقَالَ : مَنْ هَذَا؟ حُذَيْفَةُ . قُلْتُ نَعَمْ قَالَ : مَا حَاجَتُكَ غَفَرَ اللَّهُ لَكَ وَلِأُمِّكَ» .
“আমার মা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খিদমতে তোমার পালা কখন? তখন আমি আমার অমুক সময় থেকে অমুক সময় পর্যন্ত সময়ের কথা তাকে বললাম। তিনি আমার সে সময়টা আমার থেকে নিয়ে নিলেন। আমি মাকে বললাম: আপনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এসে তাঁর সাথে মাগরিবের সালাত আদায় করবেন এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমার ও আপনার জন্য দো‘আ করতে বলব। আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে আসলাম এবং তাঁর সাথে মাগরিবের সালাত আদায় করলাম, তিনি মাগরিবের পরে সালাত আদায় করতে থাকলেন, এমনকি ইশা পর্যন্ত সালাত আদায় করে ইশার সালাত আদায় করলেন। অতঃপর তিনি নির্জন স্থানে যাচ্ছিলেন, আমিও তাঁকে অনুসরণ করতে লাগলাম। তিনি আমার আওয়াজ শুনে জিজ্ঞেস করলেন, কে? হুযাইফা? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তোমার কী প্রয়োজন? আল্লাহ তোমাকে ও তোমার মাকে ক্ষমা করে দিন।” [তিরমিযী, হাদীস নং ৩৭৮১, তিনি হাদীসটিকে হাসান গরীব বলেছেন। নাসায়ী আল-কুবরা, হাদীস নং ৩৮০, মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ৩৯২, ৪০৪। ইমাম মুনযিরী রহ. তারগীব ওয়াততারহীবে বলেছেন, হাদীসটি নাসায়ী জাইয়্যেদ সনদে বর্ণনা করেছেন। আল্লামা আলবানী রহ. সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীবে (১/৩৮২) হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। শুয়াইব আরনাউত ও সহীহ বলেছেন (৩৮/৪৩০)।]
যদিও হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীসটি সহীহ; কিন্তু এ হাদীস দ্বারা আউয়াবীন সালাত প্রমাণ করা যাবে না। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ফরয সালাতের পরে যে কোনো নফল সালাত আদায় করেছেন। তাছাড়া এতো দীর্ঘ সময়ে তিনি মাত্র ছয় রাকাত সালাত আদায় করেন নি; বরং এর চেয়েও বেশি হতে পারে, যা রাবীর কথা দ্বারাই বুঝা যায় যে, তিনি মাগরিবের পরে ইশা পর্যন্ত সালাতরত ছিলেন। ফলে হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও তার মা সে সময় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কথা বলার সুযোগ পান নি।
আব্দুল করীম ইবন হারিস রহ. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ رَكَعَ عَشْرَ رَكَعَاتٍ بَيْنَ الْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ بُنِيَ لَهُ قَصْرٌ فِي الْجَنَّةِ» ، فَقَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ : إِذًا نُكْثِرُ قُصُورَنَا، أَوْ بُيُوتَنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «اللَّهُ أَكْثَرُ وَأَفْضَلُ» أَوْ قَالَ : «أَطْيَبُ» .
“যে ব্যক্তি মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে বারো রাকাত সালাত আদায় করবে তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ তৈরি করা হবে। তখন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তাহলে আমরা বেশি বেশি সালাত আদায় করে আমাদের প্রাসাদ বা বাড়ি বেশি পরিমাণ করতে পারি। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহু আকসার বা আফদাল বা আতইয়াব (আল্লাহ অধিক দাতা, উত্তম প্রতিদান প্রদানকারী)।” [যুহুদ ওয়ার রাকাইক, ইবন মুবারক, ১/৪৪৬। মুখতাসার কিয়ামুল লাইল, পৃ. ৮৮।] আল্লামা আলবানী রহ. বলেছেন, এটা মুরসাল দ‘য়ীফ। [সিলসিলা দ‘য়ীফার (৪৫৯৭)।]
মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে আদায়কৃত ছয় রাকাত সালাতকে কতিপয় শাফে‘ঈগণ আউয়াবীনের সালাত বলেছেন। এটাকে সালাতুল গাফলাহও বলা হয়। কেননা মানুষ এ সময় রাতের খাবার, ঘুমের প্রস্তুতি ও অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকেন।
ইবন মুনকাদির ও আবূ হাযিম রহ. নিম্নোক্ত আল্লাহর বাণী সম্পর্কে বলেন,
﴿تَتَجَافَىٰ جُنُوبُهُمۡ عَنِ ٱلۡمَضَاجِعِ﴾ [ السجدة : ١٦ ] هي ما بين المغرب وصلاة العشاء ، صلاة الأوابين .
“তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে আলাদা হয়।” [সূরা আস-সাজদাহ, আয়াত: ১৬] এটা মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী আউয়াবীনের সালাত।” [সুনান আল-বাইহাকী, ৩/১৯।] তবে এ হাদীসের সনদে ইবন লাহি‘আহ আছেন, তাঁকে অনেকেই দ‘য়ীফ বলেছেন।
দ্বিতীয় মত: সালাতুল আউয়াবীন হলো সলাতুদ-দুহা বা চাশতের সালাত। এ সালাত সূর্যোদয়ের ১৫ মিনিট পরে শুরু হয় এবং যোহরের ১৫ মিনিট পূর্বে শেষ হয়। এ সালাতের সময় সম্পর্কে হাদীসে এসেছে, যায়িদ ইবন আরকাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«خَرَجَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى أَهْلِ قُبَاءَ وَهُمْ يُصَلُّونَ، فَقَالَ : «صَلَاةُ الْأَوَّابِينَ إِذَا رَمِضَتِ الْفِصَالُ» .
“রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুবা বাসীদের ওখানে গেলেন, তখন তারা সালাত আদায় করছিলেন। তিনি তখন বলেছিলেন, আল্লাহ প্রেমিকদের সালাতের সময় হল যখন উট শাবকের পায়ে উত্তাপ লাগে (অর্থাৎ মাটি গরম হয়ে যায়)।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৮।]
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لَا يُحَافِظُ عَلَى صَلَاةِ الضُّحَى إِلَّا أَوَّابٌ» قَالَ : «وَهِيَ صَلَاةُ الْأَوَّابِينَ» .
“কেবল আওয়াব তথা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনকারীগণই সালাতুদ-দুহার সর্বদা গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তিনি আরো বলেছেন, সালাতুদ-দুহা হলো আউওয়াবীনের সালাত।” [আল-মুসতাদরাক লিলহাকিম, হাদীস নং ১১৮২। ইমাম হাকিম রহ. বলেন, হাদীসটি মুসলিমের শর্তে সহীহ, তবে বুখারী ও মুসলিম কেউ তাদের কিতাবে উল্লেখ করেন নি।]
আল্লামা আলবানী রহ. বলেছেন, “যারা মাগরিবের পরে ছয় রাকাত সালাত আদায় করাকে আউওয়াবীনের সালাত বলেন এ হাদীস তাদের সে দাবী খণ্ডন করে দিয়েছে। আসলে এ ছয় রাকতের নামের কোনো অস্তিত্ব নেই এবং প্রকৃতপক্ষে মাগরিবের পরে ছয় রাকাত সালাত সাব্যস্ত নেই।” [সিলসিলা আহাদীসুদ দ‘য়ীফা ওয়াল মাউদু‘আহ, ১/৪৮১।]
তৃতীয় মত: সালাতুল আউয়াবীন সালাতুদ-দুহা ও মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ের নফল সালাত উভয়কেই বুঝায়। এ মতানুসারীরা মূলতঃ দু’টি মতকে একত্রিত করেছেন।
মাউসু‘আ ফিকহিয়্যাহ কুয়েতিয়াহতে বলা হয়েছে, সালাতুদ-দুহা ও মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সালাতকে সালাতুল আউয়াবীন বলা হয়। এটা উভয় সালাতের জন্য ব্যবহৃত হয়। [মাউসু‘আ ফিকহিয়্যাহ কুয়েতিয়াহ, ২৭/১৩৪-১৩৫।]
চতুর্থ মত: সালাতুল আউয়াবীন হলো সফর থেকে ঘরে ফিরে বা সফরে বের হওয়ার সময় দু রাকাত সালাত আদায় করা। তারা দলীল হিসেবে এ হাদীস পেশ করেন,
উসমান ইবন আবূ সাওদাহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মারফু‘ সূত্রে বর্ণনা করেন,
«صلاة الأبرار ) صلاة الأوابين ( ركعتان إذا دخلت بيتك، وركعتان إذا خرجت» .
“সালাতুল আবরার তথা সালাতুল আউয়াবীন হলো যখন তুমি গৃহ থেকে বের হও এবং গৃহে প্রবেশ করো তখন আদায়কৃত দু রাকাত সালাত।” [ইবন মুবারক আয-যুহদ এ বর্ণনা করেছেন। আলবানী রহ. সিলসিলা দ‘য়ীফিয়া (৩৭৮৮)-তে হাদীসটিকে দ‘য়ীফ বলেছেন।]
আমরা সকলেই জানি যে, ইবাদত হলো তাওকিফী তথা আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন এবং যেভাবে বলেছেন সেভাবে আদায় করা। এতে নিজের মনগড়া কোনো মত বা দুর্বল ও জাল হাদীস দিয়ে দলীল পেশ করে কিছু বাড়ানো বা কমানো যাবে না। উক্ত আলোচনার দ্বারা এটা স্পষ্ট হলো যে, সালাতুল আউয়াবীনের ব্যাপারে মোট চারটি মত পাওয়া যায়।
প্রথম মতের অনুসারীরা বলেছেন, মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে আদায়কৃত ছয়, চার বা দু রাকাত সালাত। কিন্তু আমরা তাদের দলীলকৃত প্রত্যেকটি হাদীসের তাখরীজে উল্লেখ করেছি যে, তাদের দলীলসমূহ সবই দ‘য়ীফ। একটিও সহীহ হাদীস পাওয়া যায় না। ইমাম তিরমিযী রহ. এর বর্ণিত একটি হাদীস পাওয়া যায়, তাতে হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খিদমতে মাগরিবের পূর্বে গিয়েছিল। তারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মাগরিবের সালাত আদায় করেছেন এবং ইশা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সময় নফল সালাতে ব্যস্ত ছিলেন। ফলে তারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে আলোচনা ও দো‘আ-প্রার্থনা করতে পারেন নি। কিন্তু এ হাদীসে এ কথা উল্লেখ নেই যে, সেটা আউয়াবীনের সালাত ছিল; বরং আমরা বলতে পারি এটা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অভ্যাস অনুযায়ী নফল সালাত আদায় করেছেন।
দ্বিতীয় মতের অধিকারীরা সালাতুল আউয়াবীন ও দুহাকে একই সালাত বলেছেন। তারা চাশতের সালাতকেও আউয়াবীন বলেছেন। মূলত সূর্যোদয়ের পরপরই আউয়াবীনের সালাত আদায় করলে তাঁকে চাশতের সালাত বলে। আর সূর্য পূর্ণরূপে আকাশে উদিত হলে যখন উটের বাচ্চা মায়ের থেকে পৃথক হয়ে যায় তখন এ সালাত আদায় করলে তা দুহার সালাত বলে।
অন্যদিকে যারা উভয় মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ের সালাত ও দুহার সালাত উভয়টিকেই আউয়াবীনের সালাত মনে করেন তাদের এ ব্যাপারে কুরআনের বা সহীহ হাদীসের কোনো দলীল নেই।
আর চতুর্থ দলের দলীলটি দ‘য়ীফ ও অধিকাংশ সহীহ হাদীসের বিপরীত বলে তা গ্রহণযোগ্য নয়।
মোদ্দাকথা হলো, অনেকগুলো সহীহ হাদীস প্রমাণ করে যে, সূর্যোদয় থেকে সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ার পূর্ব পর্যন্ত তথা যোহরের পূর্ব পর্যন্ত আদায়কৃত সালাতকে আউয়াবীনের সালাত বলে। এটাই অধিকাংশ আলেমের মত। ইবাদতের ক্ষেত্রে সহীহ হাদীস পাওয়া সত্ত্বেও দ‘য়ীফ হাদীসের ওপর আমল করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
সমাপ্ত
প্রথম মতের অনুসারীরা বলেছেন, মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে আদায়কৃত ছয়, চার বা দু রাকাত সালাত। কিন্তু আমরা তাদের দলীলকৃত প্রত্যেকটি হাদীসের তাখরীজে উল্লেখ করেছি যে, তাদের দলীলসমূহ সবই দ‘য়ীফ। একটিও সহীহ হাদীস পাওয়া যায় না। ইমাম তিরমিযী রহ. এর বর্ণিত একটি হাদীস পাওয়া যায়, তাতে হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খিদমতে মাগরিবের পূর্বে গিয়েছিল। তারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মাগরিবের সালাত আদায় করেছেন এবং ইশা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সময় নফল সালাতে ব্যস্ত ছিলেন। ফলে তারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে আলোচনা ও দো‘আ-প্রার্থনা করতে পারেন নি। কিন্তু এ হাদীসে এ কথা উল্লেখ নেই যে, সেটা আউয়াবীনের সালাত ছিল; বরং আমরা বলতে পারি এটা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অভ্যাস অনুযায়ী নফল সালাত আদায় করেছেন।
দ্বিতীয় মতের অধিকারীরা সালাতুল আউয়াবীন ও দুহাকে একই সালাত বলেছেন। তারা চাশতের সালাতকেও আউয়াবীন বলেছেন। মূলত সূর্যোদয়ের পরপরই আউয়াবীনের সালাত আদায় করলে তাঁকে চাশতের সালাত বলে। আর সূর্য পূর্ণরূপে আকাশে উদিত হলে যখন উটের বাচ্চা মায়ের থেকে পৃথক হয়ে যায় তখন এ সালাত আদায় করলে তা দুহার সালাত বলে।
অন্যদিকে যারা উভয় মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ের সালাত ও দুহার সালাত উভয়টিকেই আউয়াবীনের সালাত মনে করেন তাদের এ ব্যাপারে কুরআনের বা সহীহ হাদীসের কোনো দলীল নেই।
আর চতুর্থ দলের দলীলটি দ‘য়ীফ ও অধিকাংশ সহীহ হাদীসের বিপরীত বলে তা গ্রহণযোগ্য নয়।
মোদ্দাকথা হলো, অনেকগুলো সহীহ হাদীস প্রমাণ করে যে, সূর্যোদয় থেকে সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ার পূর্ব পর্যন্ত তথা যোহরের পূর্ব পর্যন্ত আদায়কৃত সালাতকে আউয়াবীনের সালাত বলে। এটাই অধিকাংশ আলেমের মত। ইবাদতের ক্ষেত্রে সহীহ হাদীস পাওয়া সত্ত্বেও দ‘য়ীফ হাদীসের ওপর আমল করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
সমাপ্ত
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন