HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সালাতুল আউওয়াবীন

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন আল-আযহারী

মাগরিবের পরে ছয় রাকাত সালাত কি আউয়াবীনের সালাত?
সালাতুল আউয়াবীনের ব্যাপারে মোট চারটি মত পাওয়া যায়। নিম্নে এ চারটি মত দলীল ও বিশ্লেষণসহ উল্লেখ করে নির্ভরযোগ্য মত ব্যক্ত করব ইনশাআল্লাহ।

প্রথম মত: একদল আলেম বিশেষ করে সূফীবাদিরা মনে করেন, মাগরিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার মধ্যবর্তী সময়ে ছয় রাকাত সালাত আদায় হলো আউয়াবীনের সালাত। তারা দলীল হিসেবে নিম্নোক্ত হাদীসসমূহ উল্লেখ করেছেন:

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ أَحْيَا مَا بَيْنَ الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ، وَالْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ غُفِرَ لَهُ وَشَفَعَ لَهُ مَلَكَانِ» .

“যে ব্যক্তি যোহর ও আসর এবং মাগরীব ও ইশার মধ্যবর্তী সময় সালাত আদায় করবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন এবং দু’জন ফিরিশতা তার জন্য শাফা‘আত করবে।” [আত-তারগীব ফি ফাদায়েলে আমাল, হাদীস নং ৮১, পৃ. ৩৩।]

এ হাদীসটি আবুশ শাইখ আব্দুল্লাহ ইবন মুহাম্মদ ইবন হিব্বান ‘সাওয়াবুল ‘আমালিয যাকিয়্যাহ’ কিতাবে বর্ণনা করেছেন।

ইমাম যাহাবী রহ. বলেন, “আবূ মূসা আল-মাদিনী রহ. বলেন, আবুশ শাইখ আব্দুল্লাহ ইবন মুহাম্মদ ইবন হিব্বান-এর কিতাব ‘সাওয়াবুল ‘আমালিয যাকিয়্যাহ’ ইমাম তাবরানীর নিকট পেশ করলে তিনি এটাকে ভালো মনে করেছেন। তিনি আরো মন্তব্য করে বলেন, হাদীসখানা ইতোপূর্বে আমার জানা ছিল না। ‘সাওয়াবুল ‘আমাল’ নামে তার একখানা কিতাব আছে”। [সিয়ার ‘আলামুন নুবালা, ১৬/১৭৮।]

এ হাদীসটিকে ইমাম শাওকানী রহ. ইল্লত তথা দোষযুক্ত বলেছেন। তিনি বলেন, এ হাদীসের সনদে ‘হাফস ইবন ‘উমার আল-কাজ্জাজ’ রয়েছে, তাকে জয়নুদ্দীন ইরাকী রহ. মাজহুল বলেছেন। [নাইলুল আওতার, ৩/৫৪।]

ইমাম যাহাবী রহ.ও তাকে মাজহুল বলেছেন। [আল-মীযান, ১/৫৬৪।]

অন্য বর্ণনা হচ্ছে, ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«من صلى أربع ركعات بعد المغرب قبل أن يتكلم رفعت له في عليين، وكان كمن أدرك ليلة القدر في المسجد الأقصى، وهي خير من قيام نصف ليلة» .

“যে ব্যক্তি মাগরিবের পরে কোনো কথা বলার আগে চার রাকাত সালাত আদায় করবে তাকে ‘ইল্লিয়্যীনদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তার সাওয়াব এমন যে লাইলাতুল কদরে মসজিদে আকসায় সালাত আদায় করলে যেরূপ সাওয়াবের অধিকারী হয়। এ সালাত মধ্যরাতের (তাহাজ্জুদ) সালাতের চেয়েও উত্তম”। [হাদীসটি দাইলামী তার মুসনাদে ফিরদাউসে বর্ণনা করেছেন।]

ইমাম শাওকানী রহ. বলেছেন, হাদীসটি দাইলামী তার মুসনাদে ফিরদাউসে বর্ণনা করেছেন। হাদীসের সনদে অপরিচিত রাবী রয়েছে। তাছাড়া এটা আব্দুল্লাহ ইবন আবু সাঈদ এর বর্ণনা। তিনি যদি হাসান এবং তার থেকে ইয়াজিদ ইবন হারুন বর্ণনা করে থাকেন তবে আবু হাতিম রহ. তাকে অপরিচিত হিসেবে গণ্য করেছেন। আর ইবন হিব্বান তাকে সিকাহ এর মধ্যে গণ্য করেছেন। পক্ষান্তরে যদি রাবী আবু সাঈদ আল-মাকবুরী হন তাহলে তিনি দ‘য়ীফ। [নাইলুল আওতার, ৩/৬৮।] আর ইরাকী রহ. হাদীসের সনদটিকে দ‘য়ীফ বলেছেন। [তাখরিজ আহাদীসু এহইয়াউ উলুমুদ্দীন, ২/৮৮১।]

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ صَلَّى سِتَّ رَكَعَاتٍ بَعْدَ الْمَغْرِبِ قَبْلَ أَنْ يَتَكَلَّمَ غُفِرَ لَهُ بِهَا خَمْسِينَ سَنَةً» .

“যে ব্যক্তি মাগরিবের সালাতের পরে কোনো কথাবার্তা না বলে ছয় রাকাত সালাত আদায় করবে তার পঞ্চাশ বছরের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে”। [কিয়ামুল লাইল, মুহাম্মদ ইবন নসর আল-মারওয়াযী, পৃ. ১৩১।]

ইমাম যাহাবী রহ. মীযানে (৩/৬৮১) বলেছেন, আবু যুর‘আ তাকে মুনকিরুল হাদীস বলেছেন। ইবন হিব্বান বলেছেন, তিনি হাদীসকে উল্টিয়ে বলেন, মাউকুফকে মারফু হিসেবে চালিয়ে দেন, তার দ্বারা দলীল দেওয়া যাবে না। ইবন আবী হাতিম রহ. ‘আল-‘ইলাল’ (১/৭৮) এ বলেছেন, আবূ যুর‘আ রহ. বলেছেন, এ হাদীসকে ছুঁড়ে ফেল, কেননা এটা বানোয়াটের মতো। আবূ যুর‘আ রহ. আরো বলেছেন, মুহাম্মদ ইবন গাযওয়ান দামেস্কী মুনকিরুল হাদীস।আলবানী রহ. তাকে দ‘য়ীফার মধ্যে উল্লেখ করেছেন (পৃ. ৪৬৮)।

আরেক বর্ণনায় আছে, আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«مَنْ صَلَّى بَعْدَ المَغْرِبِ سِتَّ رَكَعَاتٍ لَمْ يَتَكَلَّمْ فِيمَا بَيْنَهُنَّ بِسُوءٍ عُدِلْنَ لَهُ بِعِبَادَةِ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ سَنَةً» .

“কেউ যদি মাগরিবের পর ছয় রাকাত (নফল) আদায় করে এবং এর মাঝে সে যদি কোনো মন্দ কথা না বলে, তবে তাকে বার বছর ইবাদত করার সমপরিমাণ সাওয়াব দেওয়া হয়।” [তিরমিযী, হাদীস নং ৪৩৫।]

ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী রহ. বলেন:  আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীসটি গরীব। যায়েদ ইবনুল হুবাব.... উমার ইবন আবী খাস‘আম সূত্র ছাড়া এটি বর্ণিত আছে বলে আমরা জানি না। মুহাম্মাদ ইবন ইসমাঈল আল-বুখারী রহ.-কে বলতে শুনেছি, উমার ইবন আবদুল্লাহ ইবন আবী খাস‘আম মুনকারুল হাদীস (তার হাদীস প্রত্যাখ্যাত)। তিনি তাকে খুবই দ‘য়ীফ বলে মন্তব্য করেছেন।আলবানী রহ. হাদীসটিকে অত্যন্ত দ‘য়ীফ বলেছেন।

অন্য বর্ণনায় এসেছে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা সূত্রে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন:

«مَنْ صَلَّى بَعْدَ الْمَغْرِبِ عِشْرِينَ رَكْعَةً بَنَى اللَّهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ» .

“মাগরিবের পর কেউ যদি বিশ রাকাত (নফল) সালাত আদায় করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে ঘর বানাবেন।” [তিরমিযী, হাদীস নং ৪৩৫।]

আলবানী রহ. হাদীসটিকে অত্যন্ত দ‘য়ীফ বলেছেন।

«من صَلَّى بَين الْمغرب وَالْعشَاء فَإِنَّهَا من صَلَاة الْأَوَّابِينَ» .

“যে ব্যক্তি মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে সালাত আদায় করবে; কেননা তা আউয়াবীনদের সালাত। [ইবন মুবারক ‘রাকাইক’ এ ইবন মুনজির এর সূত্রে মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করেছেন।]

ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«مَنْ أَدْمَنَ عَلَى أَرْبَعِ رَكَعَاتٍ بَعْدَ الْمَغْرِبِ، كَانَ كَالْمُعَقِّبِ غَزْوَةً بَعْدَ غَزْوَةٍ» .

“যে ব্যক্তি নিয়মিতভাবে মাগরিবের পরে চার রাকাত সালাত আদায় করবে, সে যুদ্ধের পর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীর মতো সাওয়াবের অধিকারী হবে।” [যুহুদ ওয়ার রাকাইক, ইবন মুবারক, ১/৪৪৫। শরহে সুন্নাহ লিল-বাগভী, ৩/৪৭৪। মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক, হাদীস নং ৪৭২৮, ৩/৪৫।]

শাওকানী রহ. বলেছেন, এ হাদীসের সনদে ‘মূসা ইবন ‘উবাইদাহ আর-রুবজী’ খুবই দ‘য়ীফ। ইমাম ইরাকী রহ. মূলত এটা ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার কথা, মারফু‘ হাদীস নয়। [নাইলুল আওতার (৩/৫৪)।]

ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كان رسول اللَّه صلى اللَّه عليه وسلم يصلي بين المغرب والعشاء أربع ركعات» .

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময় চার রাকাত সালাত আদায় করতেন।” [কিয়ামুল লাইল, মুহাম্মদ ইবন নসর আল-মারওয়াযী, (মুখতাসার: পৃ. ১৩২-১৩৩)।]

শাওকানী রহ. বলেছেন, হাদীসটির সনদ মুনকাতী‘; কেননা এটা মা‘ন ইবন আব্দুর রহমান ইবন আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ তার দাদার থেকে বর্ণনা। অথচ তিনি তার দাদাকে জীবিত পান নি। [নাইলুল আওতার (৩/৫৪)]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাস ‘উবাইদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে,

«أَكَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْمُرُ بِصَلَاةٍ بَعْدَ الْمَكْتُوبَةِ، أَوْ سِوَى الْمَكْتُوبَةِ؟ قَالَ : " نَعَمْ بَيْنَ الْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ» .

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি ফরজ সালাত ব্যতীত অন্য কোনো সালাত আদায় করতে নির্দেশ দিতেন? তিনি বলেছেন, হ্যাঁ, মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময় নফল সালাত আদায়ে নির্দেশ দিয়েছেন।” [মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ২৩৬৫২।]

আল্লামা শুয়াইব আরনাউত রহ. হাদীসের সনদকে দ‘য়ীফ বলেছেন, কেননা এখানে ‘উবাইদ থেকে বর্ণনাকারী অজ্ঞাত একলোক। হাইসামী বলেছেন, ইমাম আহমদ ও তাবরানী আল-কাবীরে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে প্রত্যেকটি সনদ একজন অজ্ঞাত লোকের থেকে বর্ণিত, অন্যান্য বর্ণনাকারীগণ সহীহ হাদীসের বর্ণনাকারী। [মাজমাউয যাওয়ায়েদ (২/২২৯)।]

মুহাম্মাদ ইবন আম্মার ইবন ইয়াসির রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«رأيت عمار بن ياسر يصلي بعد المغرب ست ركعات، وقال : رأيت حبيبي رسول الله صلى الله عليه وسلم يصلي بعد المغرب ست ركعات وقال : من صلى بعد المغرب ست ركعات ؛ غفرت له ذنوبه، ولو كانت مثل زبد البحر» .

“আমি আম্মার ইবন ইয়াসির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে মাগরিবের পরে ছয় রাকাত সালাত আদায় করতে দেখেছি। তিনি (আম্মার ইবন ইয়াসির) বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মাগরিবের পরে ছয় রাকাত সালাত আদায় করতে দেখেছি, আর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মাগরিবের পরে ছয় রাকাত সালাত আদায় করবে তার সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে; যদিও তার গুনাহ সমুদ্রের ফেনার মতো অধিক হয়।” [মাজমাউয যাওয়ায়েদ (২/২২৯)।]

হাইসামী রহ. বলেন, হাদীসটি ইমাম তাবরানী তার সগীর, আওসাত ও কাবীরে বর্ণনা করেছেন। সালিহ ইবন কুতন আল-বুখারী এককভাবে বর্ণনা করেছেন। আল্লামা মুনযিরী রহ. তারগীব ওয়াত তারহীব কিতাবে বলেছেন, হাদীসটি গরীব। শাওকানী রহ. বলেছেন, ইবন জাওযী রহ. বলেছেন, এ হাদীসের সনদে অনেক অপরিচিত বর্ণনাকারী আছেন। [নাইলুল আওতার (৩/৫৪)।] আলবানী রহ. হাদীসটিকে দ‘য়ীফ বলেছেন। তিনি সালিহ ইবন কুতন কে মাজহুল বলেছেন, এছাড়াও তার উর্ধ্বতন বর্ণনাকারীগণও অপরিচিত। [তারগীব ওয়াত তারহীব (১/১৭২)।]

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, আসওয়াদ রহ. বলেন,

«مَا أَتَيْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فِي تِلْكَ السَّاعَةِ إِلَّا وَجَدْتُهُ يُصَلِّي، فَقُلْتُ لَهُ : فِي ذَلِكَ، قَالَ : نِعْمَ سَاعَةُ الْغَفْلَةِ يَعْنِي بَيْنَ الْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ» .

“আমি যখনই সে সময় (মাগরিবের পর) আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে এসেছি, তখনই তাকে সালাতরত অবস্থায় পেয়েছি আমি তাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, এ অলস সময় অর্থাৎ মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময় ইবাদত করা কতই না উত্তম।” [মুখতাসার কিয়ামুল লাইল, পৃ. ৮৯। মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক, হাদীস নং ৪৭২৫। তাবরানী কাবীর, ৯/২৮৮, হাদীস নং ৯৪৫০।]

হাইসামী রহ. বলেছেন, হাদীসের সনদে জাবির আল-জু‘ফি সম্পর্কে আলেমগণ অনেক ধরনের মন্তব্য করেছেন। [মাজমাউয যাওয়ায়েদ (২/২৩০)।]আলবানী রহ. হাদীসটিকে দ‘য়ীফ বলেছেন। [তারগীব ওয়াত তারহীব (১/১৭২)]

হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«سَأَلَتْنِي أُمِّي : مَتَى عَهْدُكَ، تَعْنِي بِالنَّبِيِّ ‏صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ،‏ ‏فَقُلْتُ : مَا لِي بِهِ عَهْدٌ مُنْذُ كَذَا وَكَذَا، فَنَالَتْ مِنِّي . فَقُلْتُ لَهَا : دَعِينِي ‏‏آتِي ‏‏النَّبِيَّ ‏‏صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏ ‏فَأُصَلِّيَ مَعَهُ الْمَغْرِبَ، وَأَسْأَلُهُ أَنْ يَسْتَغْفِرَ لِي وَلَكِ، فَأَتَيْتُ النَّبِيَّ ‏‏صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏فَصَلَّيْتُ مَعَهُ الْمَغْرِبَ، فَصَلَّى حَتَّى صَلَّى الْعِشَاءَ، ثُمَّ ‏‏انْفَتَلَ ‏‏فَتَبِعْتُهُ فَسَمِعَ صَوْتِي فَقَالَ : مَنْ هَذَا؟‏ ‏حُذَيْفَةُ ‏ . ‏قُلْتُ نَعَمْ قَالَ : مَا حَاجَتُكَ غَفَرَ اللَّهُ لَكَ وَلِأُمِّكَ» .

“আমার মা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খিদমতে তোমার পালা কখন? তখন আমি আমার অমুক সময় থেকে অমুক সময় পর্যন্ত সময়ের কথা তাকে বললাম। তিনি আমার সে সময়টা আমার থেকে নিয়ে নিলেন। আমি মাকে বললাম: আপনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এসে তাঁর সাথে মাগরিবের সালাত আদায় করবেন এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমার ও আপনার জন্য দো‘আ করতে বলব। আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে আসলাম এবং তাঁর সাথে মাগরিবের সালাত আদায় করলাম, তিনি মাগরিবের পরে সালাত আদায় করতে থাকলেন, এমনকি ইশা পর্যন্ত সালাত আদায় করে ইশার সালাত আদায় করলেন। অতঃপর তিনি নির্জন স্থানে যাচ্ছিলেন, আমিও তাঁকে অনুসরণ করতে লাগলাম। তিনি আমার আওয়াজ শুনে জিজ্ঞেস করলেন, কে? হুযাইফা? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তোমার কী প্রয়োজন? আল্লাহ তোমাকে ও তোমার মাকে ক্ষমা করে দিন।” [তিরমিযী, হাদীস নং ৩৭৮১, তিনি হাদীসটিকে হাসান গরীব বলেছেন। নাসায়ী আল-কুবরা, হাদীস নং ৩৮০, মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ৩৯২, ৪০৪। ইমাম মুনযিরী রহ. তারগীব ওয়াততারহীবে বলেছেন, হাদীসটি নাসায়ী জাইয়্যেদ সনদে বর্ণনা করেছেন। আল্লামা আলবানী রহ. সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীবে (১/৩৮২) হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। শুয়াইব আরনাউত ও সহীহ বলেছেন (৩৮/৪৩০)।]

যদিও হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীসটি সহীহ; কিন্তু এ হাদীস দ্বারা আউয়াবীন সালাত প্রমাণ করা যাবে না। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ফরয সালাতের পরে যে কোনো নফল সালাত আদায় করেছেন। তাছাড়া এতো দীর্ঘ সময়ে তিনি মাত্র ছয় রাকাত সালাত আদায় করেন নি; বরং এর চেয়েও বেশি হতে পারে, যা রাবীর কথা দ্বারাই বুঝা যায় যে, তিনি মাগরিবের পরে ইশা পর্যন্ত সালাতরত ছিলেন। ফলে হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও তার মা সে সময় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কথা বলার সুযোগ পান নি।

আব্দুল করীম ইবন হারিস রহ. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ رَكَعَ عَشْرَ رَكَعَاتٍ بَيْنَ الْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ بُنِيَ لَهُ قَصْرٌ فِي الْجَنَّةِ» ، فَقَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ : إِذًا نُكْثِرُ قُصُورَنَا، أَوْ بُيُوتَنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «اللَّهُ أَكْثَرُ وَأَفْضَلُ» أَوْ قَالَ : «أَطْيَبُ» .

“যে ব্যক্তি মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে বারো রাকাত সালাত আদায় করবে তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ তৈরি করা হবে। তখন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তাহলে আমরা বেশি বেশি সালাত আদায় করে আমাদের প্রাসাদ বা বাড়ি বেশি পরিমাণ করতে পারি। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহু আকসার বা আফদাল বা আতইয়াব (আল্লাহ অধিক দাতা, উত্তম প্রতিদান প্রদানকারী)।” [যুহুদ ওয়ার রাকাইক, ইবন মুবারক, ১/৪৪৬। মুখতাসার কিয়ামুল লাইল, পৃ. ৮৮।] আল্লামা আলবানী রহ. বলেছেন, এটা মুরসাল দ‘য়ীফ। [সিলসিলা দ‘য়ীফার (৪৫৯৭)।]

মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে আদায়কৃত ছয় রাকাত সালাতকে কতিপয় শাফে‘ঈগণ আউয়াবীনের সালাত বলেছেন। এটাকে সালাতুল গাফলাহও বলা হয়। কেননা মানুষ এ সময় রাতের খাবার, ঘুমের প্রস্তুতি ও অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকেন।

ইবন মুনকাদির ও আবূ হাযিম রহ. নিম্নোক্ত আল্লাহর বাণী সম্পর্কে বলেন,

﴿تَتَجَافَىٰ جُنُوبُهُمۡ عَنِ ٱلۡمَضَاجِعِ﴾ [ السجدة : ١٦ ] هي ما بين المغرب وصلاة العشاء ، صلاة الأوابين .

“তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে আলাদা হয়।” [সূরা আস-সাজদাহ, আয়াত: ১৬] এটা মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী আউয়াবীনের সালাত।” [সুনান আল-বাইহাকী, ৩/১৯।] তবে এ হাদীসের সনদে ইবন লাহি‘আহ আছেন, তাঁকে অনেকেই দ‘য়ীফ বলেছেন।

দ্বিতীয় মত: সালাতুল আউয়াবীন হলো সলাতুদ-দুহা বা চাশতের সালাত। এ সালাত সূর্যোদয়ের ১৫ মিনিট পরে শুরু হয় এবং যোহরের ১৫ মিনিট পূর্বে শেষ হয়। এ সালাতের সময় সম্পর্কে হাদীসে এসেছে, যায়িদ ইবন আরকাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«خَرَجَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى أَهْلِ قُبَاءَ وَهُمْ يُصَلُّونَ، فَقَالَ : «صَلَاةُ الْأَوَّابِينَ إِذَا رَمِضَتِ الْفِصَالُ» .

“রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুবা বাসীদের ওখানে গেলেন, তখন তারা সালাত আদায় করছিলেন। তিনি তখন বলেছিলেন, আল্লাহ প্রেমিকদের সালাতের সময় হল যখন উট শাবকের পায়ে উত্তাপ লাগে (অর্থাৎ মাটি গরম হয়ে যায়)।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৮।]

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«لَا يُحَافِظُ عَلَى صَلَاةِ الضُّحَى إِلَّا أَوَّابٌ» قَالَ : «وَهِيَ صَلَاةُ الْأَوَّابِينَ» .

“কেবল আওয়াব তথা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনকারীগণই সালাতুদ-দুহার সর্বদা গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তিনি আরো বলেছেন, সালাতুদ-দুহা হলো আউওয়াবীনের সালাত।” [আল-মুসতাদরাক লিলহাকিম, হাদীস নং ১১৮২। ইমাম হাকিম রহ. বলেন, হাদীসটি মুসলিমের শর্তে সহীহ, তবে বুখারী ও মুসলিম কেউ তাদের কিতাবে উল্লেখ করেন নি।]

আল্লামা আলবানী রহ. বলেছেন, “যারা মাগরিবের পরে ছয় রাকাত সালাত আদায় করাকে আউওয়াবীনের সালাত বলেন এ হাদীস তাদের সে দাবী খণ্ডন করে দিয়েছে। আসলে এ ছয় রাকতের নামের কোনো অস্তিত্ব নেই এবং প্রকৃতপক্ষে মাগরিবের পরে ছয় রাকাত সালাত সাব্যস্ত নেই।” [সিলসিলা আহাদীসুদ দ‘য়ীফা ওয়াল মাউদু‘আহ, ১/৪৮১।]

তৃতীয় মত: সালাতুল আউয়াবীন সালাতুদ-দুহা ও মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ের নফল সালাত উভয়কেই বুঝায়। এ মতানুসারীরা মূলতঃ দু’টি মতকে একত্রিত করেছেন।

মাউসু‘আ ফিকহিয়্যাহ কুয়েতিয়াহতে বলা হয়েছে, সালাতুদ-দুহা ও মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সালাতকে সালাতুল আউয়াবীন বলা হয়। এটা উভয় সালাতের জন্য ব্যবহৃত হয়। [মাউসু‘আ ফিকহিয়্যাহ কুয়েতিয়াহ, ২৭/১৩৪-১৩৫।]

চতুর্থ মত: সালাতুল আউয়াবীন হলো সফর থেকে ঘরে ফিরে বা সফরে বের হওয়ার সময় দু রাকাত সালাত আদায় করা। তারা দলীল হিসেবে এ হাদীস পেশ করেন,

উসমান ইবন আবূ সাওদাহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মারফু‘ সূত্রে বর্ণনা করেন,

«صلاة الأبرار ) صلاة الأوابين ( ركعتان إذا دخلت بيتك، وركعتان إذا خرجت»

“সালাতুল আবরার তথা সালাতুল আউয়াবীন হলো যখন তুমি গৃহ থেকে বের হও এবং গৃহে প্রবেশ করো তখন আদায়কৃত দু রাকাত সালাত।” [ইবন মুবারক আয-যুহদ এ বর্ণনা করেছেন। আলবানী রহ. সিলসিলা দ‘য়ীফিয়া (৩৭৮৮)-তে হাদীসটিকে দ‘য়ীফ বলেছেন।]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন