HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সালাতুল আউওয়াবীন

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন আল-আযহারী

সালাতুল আউওয়াবীনের হুকুম:
‘আলেমগণ সালাতুল আউওয়াবীন আদায়ের হুকুমের ব্যাপারে কয়েকটি মত ব্যক্ত করেছেন। জমহুর আলেমদের মতে, এ সালাত আদায় করা মুস্তাহাব। যদি কেউ আদায় করে তার সাওয়াব হবে; কিন্তু ছেড়ে দিলে তাকে কিছু বলা যাবে না। এ মতের অনুসারীরা এ সালাতের ফযীলত সম্পর্কে উল্লিখিত হাদীসসমূহ দ্বারা দলীল পেশ করেছেন। যদিও এটাই সর্বাধিক বিশুদ্ধ মত। তথাপি বিরোধীদের মত পেশ করা, তাদের দলীল খণ্ডন করা ও কীভাবে জমহুর আলেমগণ তাদের দলীলের দ্বারা বিরোধীদেরকে জবাব দিয়েছেন সেগুলো আমাদের জানতে অসুবিধা নেই।

প্রথম মত: একদল আলেম মনে করেন, এ সালাত কোনো কারণ ব্যতীত শরী‘আত অনুমতি দেয় নি। তারা দলীল হিসেবে বলে থাকেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো কারণ ছাড়া এ সালাত পড়েন নি। আর ঘটনাক্রমে তখন দুহার ওয়াক্ত ছিল। তারা নিম্নোক্ত হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেন:

আব্দুর রহমান ইবন আবূ লায়লা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«مَا حَدَّثَنَا أَحَدٌ، أَنَّهُ رَأَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي الضُّحَى غَيْرُ أُمِّ هَانِئٍ فَإِنَّهَا قَالَتْ : إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ بَيْتَهَا يَوْمَ فَتْحِ مَكَّةَ، فَاغْتَسَلَ وَصَلَّى ثَمَانِيَ رَكَعَاتٍ، فَلَمْ أَرَ صَلاَةً قَطُّ أَخَفَّ مِنْهَا، غَيْرَ أَنَّهُ يُتِمُّ الرُّكُوعَ وَالسُّجُودَ» .

“উম্মু হানী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচাত বোন) ব্যতীত অন্য কেউ রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চাশ্‌তের সালাত আদায় করতে দেখেছেন, এরূপ আমাদের কাছে কেউ বর্ণনা করেন নি। তিনি (উম্মে হানী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) অবশ্য বলেছেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন (পূর্বাহ্নে) তাঁর ঘরে গিয়ে গোসল করেছেন। (তিনি বলেছেন) যে, আমি আর কখনো (তাঁকে) অনুরূপ সংক্ষিপ্ত সালাত (আদায় করতে) দেখি নি। তবে কিরাত সংক্ষিপ্ত হলেও তিনি রুকু‘ ও সাজদাহ পুর্নাঙ্গরূপে আদায় করছিলেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৭৬।]

এ মতের প্রবক্তারা মনে করেন, মক্কা বিজয়ের দিনে দুহার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আট রাকাত সালাত আদায় ছিল মক্কা বিজয়ের শুকরিয়াস্বরূপ। আর কোনো বিজয় লাভ করলে সেখানে আট রাকাত সালাত আদায় করা সুন্নত। মুসলিম আমিরগণ এ সালাতকে সালাতুল ফাতহ্ বা বিজয়ের সালাত নামে অভিহিত করেছেন। ইমাম ত্ববারী তার তারিখের কিতাবে শা‘বী থেকে বর্ণনা করেন যে,

«لَمَّا فَتَحَ خَالِدٌ الْحِيرَةَ صَلَّى صَلاةَ الْفَتْحِ ثَمَانِي رَكَعَاتٍ لا يُسَلِّمُ فِيهِنَّ، ثُمَّ انْصَرَفَ» .

“খালিদ ইবন ওয়ালীদ যখন হিরা বিজয়লাভ করেন তখন তিনি সেখানে বিজয়ের আট রাকাত সালাত আদায় করেন, এতে তিনি সালাম না ফিরিয়ে দেশের দিকে প্রত্যাবর্তন করেন।” [তারিখুত ত্বাবারী, দারুত-তুরাস, বৈরূত, ২য় সংস্করণ ১৩৮৭ হি. ৩/৩৬৬।]

তারা বলেন, উম্মে হানী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কথা وذلك ضحى “আর এটা দুহার সময়” বলে এটাই প্রমাণ করে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিজয়ের সে সালাত দুহার সময় ছিল। সালাতুদ-দুহা নামে কোনো সালাতের নাম নেই।

ইবন শিহাব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মাহমুদ ইবন রাবী‘ আনসারী রহ. আমার নিকট বর্ণনা করেন,

«أَنَّ عِتْبَانَ بْنَ مَالِكٍ وَهُوَ مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِمَّنْ شَهِدَ بَدْرًا مِنَ الأَنْصَارِ أَنَّهُ أَتَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ : " يَا رَسُولَ اللَّهِ قَدْ أَنْكَرْتُ بَصَرِي، وَأَنَا أُصَلِّي لِقَوْمِي فَإِذَا كَانَتِ الأَمْطَارُ سَالَ الوَادِي الَّذِي بَيْنِي وَبَيْنَهُمْ، لَمْ أَسْتَطِعْ أَنْ آتِيَ مَسْجِدَهُمْ فَأُصَلِّيَ بِهِمْ، وَوَدِدْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَنَّكَ تَأْتِينِي فَتُصَلِّيَ فِي بَيْتِي، فَأَتَّخِذَهُ مُصَلًّى، قَالَ : فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «سَأَفْعَلُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ» قَالَ عِتْبَانُ : فَغَدَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبُو بَكْرٍ حِينَ ارْتَفَعَ النَّهَارُ، فَاسْتَأْذَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَذِنْتُ لَهُ، فَلَمْ يَجْلِسْ حَتَّى دَخَلَ البَيْتَ، ثُمَّ قَالَ : «أَيْنَ تُحِبُّ أَنْ أُصَلِّيَ مِنْ بَيْتِكَ» قَالَ : فَأَشَرْتُ لَهُ إِلَى نَاحِيَةٍ مِنَ البَيْتِ، فَقَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَبَّرَ، فَقُمْنَا فَصَفَّنَا فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ سَلَّمَ .........» .

“ইতবান ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী আনসারগণের অন্যতম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে হাযির হয়ে আরয করলেন: “ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেয়েছে। আমি আমার গোত্রের লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করি। কিন্তু বৃষ্টি হলে আমার ও তাদের বাসস্থানের মধ্যবর্তী নিম্নভূমিতে পানি জমে যাওয়াতে তা আর পার হয়ে তাদের মসজিদে পৌঁছতে এবং তাদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করতে সমর্থ হই না। আর ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার একান্ত ইচ্ছা যে, আপনি আমার ঘরে তাশরীফ নিয়ে কোনো এক স্থানে সালাত আদায় করেন এবং আমি সেই স্থানকে সালাতের জন্য নির্দিষ্ট করে নিই। বর্ণনাকারী বলেন, তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ইনশাআল্লাহ অচিরেই আমি তা করব। ‘ইতবান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, পরদিন সূর্যোদয়ের পর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আমার ঘরে তাশরীফ আনেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করতে চাইলে আমি তাঁকে অনুমতি দিলাম। ঘরে প্রবেশ করে তিনি না বসেই জিজ্ঞেস করলেন: তোমার ঘরের কোন স্থানে সালাত আদায় করা পছন্দ কর? তিনি বলেন, আমি তাঁকে ঘরের এক প্রান্তের দিকে ইঙ্গিত করলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন এবং তাকবীর বললেন। তখন আমরাও দাঁড়ালাম এবং কাতারবন্দী হলাম। তিনি দুই রাকাত সালাত  আদায় করলেন। তারপর সালাম ফিরালেন............।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪২৫।]

তারা এ হাদীস থেকে দলীল পেশ করেন যে, ইতবান ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বাড়িতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাত একটা কারণবশত ছিল। আর এ হাদীসটিই কিছু বর্ণনাকারী সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন এভাবে:

‘ইতবান ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,

«أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى فِي بَيْتِهِ سُبْحَةَ الضُّحَى، فَقَامُوا وَرَاءَهُ فَصَلَّوْا فِي بَيْتِهِ» .

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে সালাতুদ-দুহার নফল সালাত আদায় করেছেন। সাহাবীগণ তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পিছনে কাতারবদ্ধ হলেন এবং তারাও তাঁর (ইতবান ইবন মালিক) ঘরে সালাত আদায় করলেন।” [সহীহ ইবন খুজাইমা, হাদীস নং ১২৩১, আল্লামা ‘আযমী রহ. হাদীসের সনদটিকে সহীহ বলেছেন।]

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يُصَلِّي الضُّحَى إِلَّا أَنْ يَقْدَمَ مِنْ سَفَرٍ أَوْ يَخْرُجَ» .

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর থেকে ফিরে বা সফরে বের হওয়া ব্যতীত দুহার সালাত আদায় করতেন না।” [মুসনাদ আবু ই‘আলা, হাদীস নং ৪৩৩৭। আহাদীসুল মুখতারাহ, দিয়াউদ্দিন মাকদিসী, হাদীস নং ২২৭৫, মাকদিসী রহ. বলেন, হাদীসের সনদটিতে কোনো সমস্যা নেই।]

আব্দুল্লাহ ইবন শাকীক রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«قُلْتُ لِعَائِشَةَ : هَلْ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي الضُّحَى؟ قَالَتْ : لَا، إِلَّا أَنْ يَجِيءَ مِنْ مَغِيبِهِ» .

“আমি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার নিকট জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ‌্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি পূর্বাহ্নে সালাত আদায় করতেন? তিনি বললেন, না; কিন্তু সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করলে আদায় করতেন।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭১৭।]

এ হাদীসও প্রমাণ করে যে, তার পূর্বাহ্নে সালাত আদায় ছিল কোনো কারণবশতঃ। এখানে সফর থেকে ফেরার কারণে তিনি এ সালাত আদায় করেছেন বলে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবন দীনার রহ. বলেন,

أَنَّ ابن عُمَرَ كَانَ لَا يُصَلِّي الضُّحَى إِلَّا أَنْ يَأْتِيَ قُبَاءً .

“ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু মসজিদে কুবায় আসলে সালাতুদ-দুহা আদায় করতেন।” [ফাতহুল বারী, ৩/৫৩।]

হাফেয ইবন হাজার আসকালানী রহ. এ হাদীসের জবাবে বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে কুবায় হয়ত তাহিয়্যাতুল মসজিদের সালাত আদায় করেছেন, আবার এটাও হতে পারে যে, তিনি তাহিয়্যাতুল মাসজিদ ও সালাতুদ-দুহা উভয় সালাতের নিয়্যাত একত্রে করেছেন, যেমনিভাবে আমরা মক্কা বিজয়ের দিনের সালাতের ব্যাপারে বলেছি যে, তিনি বিজয় ও দুহার সালাত একত্রে আদায় করেছেন। [ফাতহুল বারী, ৩/৫৩।]

কিন্তু তাদের এসব হাদীসের জবাবে জমহুর আলেমগণ আরো শক্তিশালী দলীল পেশ করেন। তারা বলেন, এ সব হাদীসের জবাবে অসংখ্য সহীহ হাদীস রয়েছে যাতে কোনো কারণের কথা উল্লেখ নেই; বরং সাধারণভাবে এ সালাতের ফযিলতের কথা উল্লেখ আছে। আর আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা নিজেই কারণ উল্লেখ ছাড়া এ সালাত আদায়ের কথা বলেছেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«مَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَبَّحَ سُبْحَةَ الضُّحَى، وَإِنِّي لَأُسَبِّحُهَا» .

“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চাশ্‌ত-এর সালাত আদায় করতে আমি দেখি নি। তবে আমি তা আদায় করে থাকি।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৭৭।]

মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, “তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে জিজ্ঞাসা করলেন,

«كَمْ كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي صَلَاةَ الضُّحَى؟ قَالَتْ : أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ وَيَزِيدُ مَا شَاءَ» .

“রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুহার সালাত কত রাকাত আদায় করতেন? তিনি বললেন, চার রাকাত। ইচ্ছে হলে বেশিও পড়তেন।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭১৯।]

আল্লামা শাওক্বানী রহ. এসব হাদীস একত্রিত করে বলেন, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার হাদীস “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুহার চার রাকাত সালাত আদায় করতেন” তা মুদাওয়ামাহ বা সর্বদা পালন করা বুঝায় না। তাছাড়া উসূলবিদদের কাছে كان শব্দটি দ্বারাও মাঝে মাঝে করা বুঝায়। যদিও কোনো কোনো বর্ণনায় সর্বদা আদায় করা প্রমাণ করে। এক্ষেত্রে বলা যায় যে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনাহা যা দেখেছেন তিনি তা-ই বর্ণনা করেছেন। তাঁর বর্ণনা “তিনি সফর থেকে ফিরে আসলে তখন এ সালাত আদায় করতেন” দ্বারা মুতলাক (অনির্দিষ্ট) সময়কে মুকাইয়্যাদ (নির্দিষ্ট) করা বুঝায়। আবার তার আরেক বর্ণনা, “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কখনও দুহার সালাত আদায় করতে দেখি নি” দ্বারা তিনি যা দেখেন নি তার বর্ণনা। সুতরাং এ বর্ণনা দ্বারা অনির্দিষ্টকে নির্দিষ্ট করা ওয়াজিব সাব্যস্ত করে না। মূল কথা হলো, তিনি যা জানতেন বা তার কাছে যা পৌঁছেছে তা-ই বর্ণনা করেছেন। অন্যান্য সাহাবীদের বর্ণনায় সর্বক্ষণিক আদায় করেছেন বলে প্রমাণ করে। এসব বর্ণনা দ্বারা সালাতুদ-দুহার বৈধতা প্রমাণ করে। আর আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার এ সময়ের ব্যাপারে জানা ছিল না বলে তিনি এ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক আদায়ের ব্যাপারে অস্বীকার করেছেন। কেননা এ সময় সাধারণত মানুষ স্ত্রীদের সাথে ঘরে বসে থাকে না। তাই তিনি জানতেন না। [নাইলুল আওতার, শাওকানী, ৩/৬৩।]

দ্বিতীয় মত: আরেকদল আলেম এ সালাত আদায়কে মুস্তাহাব মনে করেন না। তারা সালাতুদ-দুহা না আদায়ের হাদীসসমূহকে সনদের বিবেচনায় প্রাধান্য দিয়েছেন। সাহাবীদের আমল এটাই প্রমাণ করে। তাদের দলীল হলো:

মুওয়াররিক রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«قُلْتُ لِابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا : أَتُصَلِّي الضُّحَى؟ قَالَ : لاَ، قُلْتُ : فَعُمَرُ؟ قَالَ : لاَ، قُلْتُ : فَأَبُو بَكْرٍ؟ قَالَ : لاَ، قُلْتُ : فَالنَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ : لاَ إِخَالُهُ» .

“আমি ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কি চাশ্‌ত-এর সালাত আদায় করেন? তিনি বললেন, না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তা আদায় করতেন কি? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু? তিনি বললেন, না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম? তিনি বললেন, আমি তা মনে করি না। (আমার মনে হয় তিনিও তা আদায় করতেন না, তবে এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত কিছু বলতে পারছি না)।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৭৫।]

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«قَالَ رَجُلٌ مِنَ الأَنْصَارِ وَكَانَ ضَخْمًا لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِنِّي لاَ أَسْتَطِيعُ الصَّلاَةَ مَعَكَ، فَصَنَعَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ طَعَامًا، فَدَعَاهُ إِلَى بَيْتِهِ وَنَضَحَ لَهُ طَرَفَ حَصِيرٍ بِمَاءٍ، «فَصَلَّى عَلَيْهِ رَكْعَتَيْنِ» وَقَالَ فُلاَنُ بْنُ فُلاَنِ بْنِ جَارُودٍ لِأَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ : أَكَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي الضُّحَى؟ فَقَالَ : «مَا رَأَيْتُهُ صَلَّى غَيْرَ ذَلِكَ اليَوْمِ» .

“জনৈক স্থুলদেহী আনসারী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খিদমতে আরয করলেন, “আমি আপনার সংগে (জামা’আতে) সালাত আদায় করতে পারি না। তিনি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উদ্দেশ্যে খাবার তৈরি করে তাঁকে দাওয়াত করে নিজ বাড়িতে নিয়ে এলেন এবং একটি চাটাই এর এক অংশে (কোমল ও পরিচ্ছন্ন করার উদ্দেশ্যে) পানি ছিটিয়ে (তা বিছিয়ে) দিলেন। তখন তিনি (রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ওপর দুই রাকাত সালাত আদায় করলেন। ইবন জারূদ রহ. (নিশ্চিত হওয়ার উদ্দেশ্যে) আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে জিজ্ঞাসা করলেন (তবে কি) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাশ্‌ত-এর সালাত আদায় করতেন? আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, সেদিন ব্যতীত অন্য সময়ে তাঁকে এ সালাত আদায় করতে দেখি নি।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৭৯।]

হাফেয ইবন হাজার আসকালানী রহ. বলেন, মোদ্দাকথা হলো, ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীস থেকে সালাতুদ-দুহা শরী‘আতসিদ্ধ হওয়াকে অস্বীকার করে না। কেননা তার না বলাটা না দেখার প্রমাণ। এটা নয় যে, সে কাজটি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনোই করেন নি অথবা তার না বলার অর্থ হলো রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বক্ষনিক ও মসজিদে জামা‘আতের সাথে প্রকাশ্যে সালাতুদ-দুহা আদায়কে না বলা। কেননা এভাবে প্রকাশ্যে জামা‘আতের সাথে আদায় করাটা সুন্নাতের বিরোধী। মূল সালাতটা আদায় করা সুন্নাত বিরোধী নয়। আর তার একথা আরো শক্তিশালী করে ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীস থেকে,

«أَنَّهُ رَأَى قَوْمًا يُصَلُّونَهَا فَأَنْكَرَ عَلَيْهِمْ وَقَالَ إِنْ كَانَ وَلَا بُدَّ فَفِي بُيُوتِكُمْ» .

“তিনি কিছু লোককে সালাতুদ-দুহা আদায় করতে দেখে তাদেরকে এভাবে আদায় করতে নিষেধ করলেন। তিনি তাদেরকে বললেন, যদি তোমরা এ সালাত আদায় করতেই চাও তবে ঘরে বসে আদায় করো”। [মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা, হাদীস নং ৭৭৭৭, খ. ২, পৃ. ১৭২; ফাতহুল বারী, ৩/৫৩।]

তৃতীয় মত: কিছু আলেম মনে করেন, সালাতুদ-দুহা মাঝে মাঝে আদায় করা আবার মাঝে মাঝে ছেড়ে দেয়া মুস্তাহাব। তারা নিম্নোক্ত হাদীস ও আসার দ্বারা দলীল পেশ করেন,

আবূ সাঈদ আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي الضُّحَى حَتَّى نَقُولَ : لَا يَدَعُهَا، وَيَدَعُهَا حَتَّى نَقُولَ : لَا يُصَلِّيهَا» .

“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাঝে মাঝে এমনভাবে নিয়মিত সালাতুদ-দুহা আদায় করতেন যে, আমরা মনে করতাম তিনি আর এ সালাত বাদ দিবেন না। আবার মাঝে মাঝে এমনভাবে ছেড়ে দিতেন যে, আমরা ভাবতাম তিনি আর এ সালাত আদায় করতেন না।” [মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ১১১৫৫, আল্লামা শুয়াইব আরনাউত বলেন, ‘হাদীসের সনদটি দয়ীফ’।] কিন্তু এ হাদীসটি দ‘য়ীফ হওয়ার কারণে দলীল হিসেবে শক্তিশালী নয়।

ইকরামাহ রহ. বলেন,

كان ابن عباس يصليها يومًا ويدعها عشرة أيام، يعنى صلاة الضحى .

“ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু একদিন সালাতুদ-দুহা আদায় করলে দশ দিন ছেড়ে দিতেন।” [শরহে সহীহুল বুখারী, ইবন নাত্তাল, ৩/১৬৯।]

আব্দুল্লাহ ইবন দীনার বলেন,

أنه كان لا يصلى الضحى، فإذا أتى مسجد قباء صلى وكان يأتيه كل سبت .

“আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু দুহার সালাত আদায় করতেন না। তবে তিনি যখন মসজিদে কুবায় আসতেন তখন এ সালাত আদায় করতেন। আর তিনি প্রতি শনিবার মসজিদে কুবায় আসতেন।” [শরহে সহীহুল বুখারী, ইবন নাত্তাল, ৩/১৬৯।]

ইবরাহীম নাখঈ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

كانوا يكرهون أن يحافظوا عليها كالمكتوبة، ويصلون ويدعون، يعنى صلاة الضحى .

“সাহাবী ও তাবে‘ঈগণ ফরয সালাতের মতো গুরুত্বের সাথে দুহার সালাত আদায় করাকে মাকরূহ মনে করতেন। তারা মাঝে মাঝে এ সালাত আদায় করতেন, আবার মাঝে মাঝে ছেড়ে দিতেন।” [শরহে সহীহুল বুখারী, ইবন নাত্তাল, ৩/১৬৯।]

সাঈদ ইবন জুবায়ের রহ. বলেন,

إنى لأدع صلاة الضحى وأنا أشتهيها، مخافة أن أراها حتمًا علىّ .

“মানুষ সালাতুদ-দুহাকে অত্যাবশ্যকীয় ভাবতে পারে বলে আমি এ সালাত ছেড়ে দিই, তবে আমার আদায় করতে ইচ্ছে করে।” [শরহে সহীহুল বুখারী, ইবন নাত্তাল, ৩/১৬৯।]

এ মতের অনুসারীরা বলেন, মাঝে মাঝে আদায় করা ও মাঝে মাঝে ছেড়ে দেওয়া উত্তম, যাতে মানুষ এ ধারণা না করে যে, এ সালাত ওয়াজিব বা নিয়মিত আদায়যোগ্য সুন্নাত। আর আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা নিয়মিত এ সালাত ঘরে আদায় করতেন বলে মানুষের এ ধারণা হওয়ার সম্ভাবনা কম ছিল। তথাপি এ সব হাদীস ও আসার জমহুম আলেমদের মতের বিরোধী নয়। কেননা জমহুর আলেমগণ এ সালাতকে মুস্তাহাব বলেছেন। আর মুস্তাহাবের হুকুমই হলো যে ব্যক্তি তা আদায় করবে তার সাওয়াব হবে, কেউ আদায় না করলে সাওয়াব হবে না বা গুনাহও হবে না এবং দোষারোপও করা যাবে না। অতএব, এ সালাতের ফযীলত সম্পর্কে যেসব হাদীস ও আসার এসেছে এসব থেকে প্রমাণিত হয় যে, এ সালাত সুন্নত। এটাই জমহুর আলেমদের মত।

চতুর্থ মত: আরেকদল আলেম এ সালাতকে বিদ‘আত বলেছেন। ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে এটা বর্ণিত। হাদী, কাসেম ও আবু তালিব এ মতের অনুসারী। তারা দলীল হিসেবে নিম্নোক্ত হাদীস ও আসার পেশ করেন:

মুজাহিদ রহ. থেকে বর্ণিত, “তিনি বলেন,

«دَخَلْتُ أَنَا وَعُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ المَسْجِدَ، فَإِذَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، جَالِسٌ إِلَى حُجْرَةِ عَائِشَةَ، وَإِذَا نَاسٌ يُصَلُّونَ فِي المَسْجِدِ صَلاَةَ الضُّحَى، قَالَ : فَسَأَلْنَاهُ عَنْ صَلاَتِهِمْ، فَقَالَ : بِدْعَةٌ» .

“আমি এবং ‘উরওয়া ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মসজিদে প্রবেশ করে দেখতে পেলাম, ‘আবদুল্লাহ ইবন ‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার হুজরার পাশে বসে আছেন। ইতোমধ্যে কিছু লোক মসজিদে সালাতুদ-দুহা আদায় করতে লাগল। আমরা তাকে এদের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, এটা বিদ‘আত।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৭৭৫, মুসলিম, হাদীস নং ১২৫৫।]

হাকাম ইবন ‘আরাজ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«سَأَلْتُ مُحَمَّدًا عَنْ صَلَاةِ الضُّحَى وَهُوَ مُسْنِدٌ ظَهْرَهُ إِلَى حُجْرَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَمَ، فَقَالَ : بِدْعَةٌ وَنِعْمَتِ الْبِدْعَةُ» .

“আমি ইমাম মুহাম্মদকে সালাতুদ-দুহা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লামের হুজরার সাথে পিঠ রেখে হেলান দিয়ে বসা ছিলেন। তিনি বললেন, এটা বিদ‘আত; তবে উত্তম বিদ‘আত।” [মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা, হাদীস নং ৭৭৭৫। ইবন হাজার আসকালানী রহ. বলেছেন, হাদীসের সনদটি সহীহ, ফাতহুল বারী, ৩/৫২।]

সালিম তার পিতা ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন,

«لَقَدْ قُتِلَ عُثْمَانُ وَمَا أَحَدٌ يُسَبِّحُهَا وَمَا أَحْدَثَ النَّاسُ شَيْئًا أَحَبَّ إِلَيَّ مِنْهَا» .

“উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু শহীদ হওয়া পর্যন্ত কেউ সালাতুদ-দুহার সালাত প্রচলন করে নি। মানুষ বিদ‘আত হিসেবে এ সালাত আদায় করাটা আমার কাছে খুবই পছন্দনীয়।” [ইবন হাজার আসকালানী রহ. বলেছেন, হাদীসের সনদটি সহীহ, ফাতহুল বারী, ৩/৫২।]

হাফেয ইবন হাজার আসকালানী রহ. বলেন, ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীস থেকে সালাতুদ-দুহা শরী‘আতসিদ্ধ হওয়াকে অস্বীকার করে না, কেননা তার না বলাটা না দেখার প্রমাণ। এটা নয় যে, সে কাজটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনোই করেন নি অথবা তাঁর না বলার অর্থ হলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বক্ষণিক ও মসজিদে জামা‘আতের সাথে প্রকাশ্যে সালাতুদ-দুহা আদায়কে না বলা। কেননা এভাবে প্রকাশ্যে জামা‘আতের সাথে আদায় করাটা সুন্নতের বিরোধী। মূল সালাতটা আদায় করা সুন্নাত বিরোধী নয়। আর তার একথা আরো শক্তিশালী করে ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীস থেকে। ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,

«أَنَّهُ رَأَى قَوْمًا يُصَلُّونَهَا فَأَنْكَرَ عَلَيْهِمْ وَقَالَ إِنْ كَانَ وَلَا بُدَّ فَفِي بُيُوتِكُمْ» .

“তিনি কিছু লোককে সালাতুদ-দুহা আদায় করতে দেখে তাদেরকে এভাবে আদায় করতে নিষেধ করলেন। তিনি তাদেরকে বললেন, যদি তোমরা এ সালাত আদায় করতেই চাও তবে ঘরে বসে আদায় করো।” [মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা, হাদীস নং ৭৭৭৭, খ. ২, পৃ. ১৭২। ফাতহুল বারী, ৩/৫৩।]

এসব আলোচনার পর আমাদের কাছে এটা স্পষ্ট যে, জমহুর ‘আলেম সালাতুদ-দুহার ব্যাপারে যে মত ব্যক্ত করেছেন তাই অধিকতর বিশুদ্ধ ও শক্তিশালী। আল্লামা শাওক্বানী রহ. বলেন, এ সালাত সাব্যস্তের হাদীস এতই বেশি যে, অন্যরা কমপক্ষে মুস্তাহাব বলেছেন। ইমাম হাকিম রহ. সালাতুদ-দুহা সাব্যস্তের ব্যাপারে আলাদাভাবে প্রায় বিশজন সাহাবী থেকে বর্ণনা একত্রিত করেছেন। এমনিভাবে ইমাম সুয়ুতী রহ. ও আলাদাভাবে একখণ্ডে হাদীস একত্রিত করেছেন। এতে তিনি যেসব সাহাবীগণ এ সালাত আদায় করেছেন তাদের নাম উল্লেখ করেছেন। তাদের মধ্যে আবু সাঈদ খুদুরী, তার থেকে সাঈদ ইবন মানসুর ও আহমদ ইবন হাম্বল এ সালাত সম্পর্কিত হাদীস বর্ণনা করেছেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা, তার থেকে সাঈদ ইবন মানসূর, ইবন আবী শাইবা এ সালাত সম্পর্কিত হাদীস বর্ণনা করেছেন। আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহুর থেকে ইবন আবু শাইবা, আব্দুল্লাহ ইবন গালিব এ সালাত সম্পর্কিত হাদীস বর্ণনা করেছেন। আবূ নু‘আইম এসব হাদীস তার কিতাবে বর্ণনা করেছেন।

সাঈদ ইবন মানসূর রহ. হাসান রহ. বর্ণনা করেন,

«أَنَّهُ سُئِلَ : هَلْ كَانَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلُّونَهَا؟ فَقَالَ : نَعَمْ، كَانَ مِنْهُمْ مَنْ يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ، وَمِنْهُمْ مَنْ يُصَلِّي أَرْبَعًا، وَمِنْهُمْ مَنْ يَمُدُّ إلَى نِصْفِ النَّهَارِ» .

“তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ কি এ সালাত আদায় করেছেন? তিনি বলেন, হ্যাঁ, তারা এ সালাত আদায় করেছেন। কেউ দু রাআ‘আত, কেউ চার রাকাত, কেউ আবার দ্বি-প্রহর পর্যন্ত দীর্ঘ করতেন।” [নাইলুল আওতার, ৩/৭৬।]

সাঈদ ইবন মানসূর রহ. তার সুনানে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,

طَلَبْتُ صَلَاةَ الضُّحَى فِي الْقُرْآنِ فَوَجَدْتُهَا هَهُنَا ﴿ يُسَبِّحۡنَ بِٱلۡعَشِيِّ وَٱلۡإِشۡرَاقِ ١٨ ﴾ [ص : ١٨ ]

“আমি সালাতুদ-দুহা সম্পর্কে কুরআনে খোঁজ করলাম। ফলে এ আয়াতে এ সালাত সম্পর্কে পাই,

﴿يُسَبِّحۡنَ بِٱلۡعَشِيِّ وَٱلۡإِشۡرَاقِ ١٨ ﴾ [ص : ١٨ ]

“আমি পর্বতমালাকে অনুগত করেছিলাম, তার সাথে এগুলো সকাল-সন্ধ্যায় আমার তাসবীহ পাঠ করত।” [সূরা সাদ, আয়াত: ১৮] [নাইলুল আওতার, ৩/৭৬।]

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

إنَّ صَلَاةَ الضُّحَى لَفِي الْقُرْآنِ وَمَا يَغُوصُ عَلَيْهَا إلَّا غَوَّاصٌ فِي قَوْله تَعَالَى : ﴿ فِي بُيُوتٍ أَذِنَ ٱللَّهُ أَن تُرۡفَعَ وَيُذۡكَرَ فِيهَا ٱسۡمُهُۥ يُسَبِّحُ لَهُۥ فِيهَا بِٱلۡغُدُوِّ وَٱلۡأٓصَالِ ٣٦ ﴾ [ النور : ٣٦ ]

“সালাতুদ-দুহা আল-কুরআনে রয়েছে। গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছাড়া তা বুঝতে পারে না। এটা আল্লাহর এ বাণীর মধ্যে রয়েছে,

﴿فِي بُيُوتٍ أَذِنَ ٱللَّهُ أَن تُرۡفَعَ وَيُذۡكَرَ فِيهَا ٱسۡمُهُۥ يُسَبِّحُ لَهُۥ فِيهَا بِٱلۡغُدُوِّ وَٱلۡأٓصَالِ ٣٦ ﴾ [ النور : ٣٦ ]

“সেসব ঘরে যাকে সমুন্নত করতে এবং যেখানে আল্লাহর নাম যিকির করতে আল্লাহই অনুমতি দিয়েছেন। সেখানে সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর তাসবীহ পাঠ করে।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩৬] [নাইলুল আওতার, ৩/৭৬।]

‘আওন আল-‘উকাইলী রহ. নিম্নোক্ত আল্লাহর বাণী সম্পর্কে বলেন,

﴿فَإِنَّهُۥ كَانَ لِلۡأَوَّٰبِينَ غَفُورٗا ٢٥ ﴾ [ الاسراء : ٢٥ ] قَالَ : الَّذِينَ يُصَلُّونَ صَلَاةَ الضُّحَى

“যদি তোমরা নেককার হও তবে তিনি তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারীদের প্রতি অধিক ক্ষমাশীল।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ২৫] তিনি বলেন, যারা সালাতুদ-দুহা আদায় করে।” [আত-তারগীব ওয়াততারহীব, ৩/১১, নাইলুল আওতার, ৩/৭৬।]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন