আবদুল্লাহ ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘উমার ইব্নু খাত্তাব (রাঃ)-কে এ আয়াতের ব্যাখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য আমি এক বছর অপেক্ষা করেছি। কিন্তু তাঁর ব্যক্তি প্রভাবের ভয়ে আমি তাঁকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে সক্ষম হইনি। অবশেষে তিনি হাজ্জের উদ্দেশে রওয়ানা হলে, আমিও তাঁর সঙ্গে গেলাম। প্রত্যাবর্তনের সময় আমরা যখন কোন একটি রাস্তা অতিক্রম করছিলাম, তখন তিনি প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের জন্য একটি পিলু গাছের আড়ালে গেলেন। ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, তিনি প্রয়োজন সেরে না আসা পর্যন্ত আমি সেখানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলাম। এরপর তাঁর সঙ্গে পথ চলতে চলতে বললাম, হে আমীরুল মু’মিনীন! নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রীদের কোন্ দু’জন তার বিপক্ষে একমত হয়ে পরস্পর একে অন্যকে সহযোগিতা করেছিলেন? তিনি বললেন, তাঁরা দু’জন হল হাফসাহ ও ‘আয়িশাহ (রাঃ)। ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, আল্লাহ্র শপথ! আমি আপনাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করার জন্য এক বছর যাবত ইচ্ছে করেছিলাম। কিন্তু আপনার ভয়ে আমার পক্ষে তা সম্ভব হয়নি। তখন ‘উমার (রাঃ) বললেন, অমন করবে না। যে বিষয়ে তুমি মনে করবে যে, আমি তা জানি, তা আমাকে জিজ্ঞেস করবে। এ বিষয়ে আমার জানা থাকলে আমি তোমাকে জানিয়ে দেব। তিনি বলেন, এরপর ‘উমার (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্র শপথ! জাহিলী যুগে মহিলাদের কোন অধিকার আছে বলে আমরা মনে করতাম না। অবশেষে আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের সম্পর্কে যে বিধান নাযিল করার ছিল তা নাযিল করলেন এবং তাদের হক হিসাবে যা নির্দিষ্ট করার ছিল তা নির্দিষ্ট করলেন। তিনি বলেন, একদা আমি কোন এক বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করছিলাম, এমতাবস্থায় আমার স্ত্রী আমাকে বললেন, কাজটি যদি তুমি এভাবে এভাবে কর (তাহলে ভাল হবে)। আমি বললাম, তোমার কী প্রয়োজন? এবং আমার কাজে তোমার এ অনধিকার চর্চা কেন? সে আমাকে বলল, হে খাত্তাবের বেটা! কী আশ্চর্য, তুমি চাও না যে, আমি তোমার কথার উত্তর দান করি অথচ তোমার কন্যা হাফ্সাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কথার পিঠে কথা বলে থাকে। এমনকি একদিন তো সে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে রাগান্বিত করে ফেলে। এ কথা শুনে ‘উমার (রাঃ) দাঁড়িয়ে গেলেন এবং চাদরখানা নিয়ে তার বাড়িতে চলে গেলেন। তিনি তাকে বললেন, বেটী! তুমি নাকি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কথার প্রতি-উত্তর করে থাক। ফলে তিনি দিনভর মনঃক্ষুণ্ণ থাকেন। হাফ্সাহ (রাঃ) বলেন, আল্লাহ্র কসম! আমরা তো অবশ্যই তাঁর কথার জবাব দিয়ে থাকি। ‘উমার (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, জেনে রাখ! আমি তোমাকে আল্লাহ্র শাস্তি এবং রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অসন্তুষ্টি সম্পর্কে সতর্ক করছি। রূপ-সৌন্দর্যের কারণে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ভালবাসা যাকে গর্বিতা করে রেখেছে, সে যেন তোমাকে প্রতারিত না করতে পারে। এ কথা বলে ‘উমার (রাঃ) ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে বোঝাচ্ছিলেন। ‘উমার (রাঃ) বলেন, এরপর আমি সেখান থেকে বেরিয়ে আসলাম এবং উম্মু সালামাহ (রাঃ)-এর ঘরে প্রবেশ করলাম ও এ বিষয়ে তাঁর সাথে কথাবার্তা বললাম। কারণ, তাঁর সাথে আমার আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। তখন উম্মু সালামাহ (রাঃ) বললেন, হে খাত্তাবের বেটা! কী আশ্চর্য, তুমি প্রত্যেক ব্যাপারেই হস্তক্ষেপ করছ, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তার স্ত্রীদের ব্যাপারেও হস্তক্ষেপ করতে চাচ্ছ। আল্লাহ্র কসম! তিনি আমাকে এমন কঠোরভাবে ধরলেন যে, আমার গোস্বাকে একেবারে শেষ করে দিলেন। এরপর আমি তাঁর কাছ থেকে চলে আসলাম। আমার একজন আনসার বন্ধু ছিল। যদি আমি কোন মজলিশ থেকে অনুপস্থিত থাকতাম তাহলে সে এসে মজলিশের খবর আমাকে জানাত। আর সে যদি অনুপস্থিত থাকত তাহলে আমি এসে তাকে মজলিশের খবর জানাতাম। সে সময় আমরা গাস্সানী বাদশাহ্র আক্রমণের আশংকা করছিলাম। আমাদেরকে বলা হয়েছিল যে, সে আমাদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য যাত্রা করেছে। তাই আমাদের হৃদয়-মন এ ভয়ে শংকিত ছিল। এমন সময় আমার আনসার বন্ধু এসে দরজায় করাঘাত করে বললেন, দরজা খুলুন, দরজা খুলুন। আমি বললাম, গাস্সানীরা এসে পড়েছে নাকি? তিনি বললেন, বরং এর চেয়েও সাংঘাতিক ঘটনা ঘটে গেছে। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সহধর্মিণীদের থেকে পৃথক হয়ে গেছেন। তখন আমি বললাম, হাফ্সাহ ও ‘আয়িশাহর নাক ধূলায় ধুসরিত হোক। এরপর আমি কাপড় নিয়ে বেরিয়ে চলে আসলাম। গিয়ে দেখলাম, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি উঁচু টঙে অবস্থান করছেন। সিঁড়ি বেয়ে সেখানে পৌঁছতে হয়। সিঁড়ির মুখে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একজন কালো গোলাম বসা ছিল। আমি বললাম, বলুন, ‘উমার ইব্নু খাত্তাব এসেছেন। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে অনুমতি দিলেন, আমি তাঁকে এসব ঘটনা বললাম, এক পর্যায়ে আমি যখন উম্মু সালামাহর কপোপকথন পর্যন্ত পৌঁছলাম তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুচকি হাসলেন। এ সময় তিনি একটা চাটাইয়ের উপর শুয়ে ছিলেন। চাটাই এবং রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাঝে আর কিছুই ছিল না। তাঁর মাথার নিচে ছিল খেজুরের ছালভর্তি চামড়ার একটি বালিশ এবং পায়ের কাছে ছিল সল্ম বৃক্ষের পাতার একটি স্তূপ ও মাথার উপর লটকানো ছিল চামড়ার একটি মশক। আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একপার্শ্বে চাটাইয়ের দাগ দেখে কেঁদে ফেললে তিনি বললেন, তুমি কেন কাঁদছ? আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! কিসরা ও কায়সার পার্থিব ভোগ-বিলাসের মধ্যে ডুবে আছে, অথচ আপনি আল্লাহ্র রাসূল। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি পছন্দ করো না যে, তারা দুনিয়া লাভ করুক, আর আমরা আখিরাত লাভ করি। (বুখারী পর্ব ৬৫ : /৬৬, হাঃ ৪৯১৩; মুসলিম ১৮/৫, হাঃ ১৪৭৯)