hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

রিয়াদুস সলেহিন

. বিবিধ

رياض الصالحين

/ পরিচ্ছেদঃ ইখলাস প্রসঙ্গে

প্রকাশ্য ও গোপনীয় আমল (কর্ম) কথা ও অবস্থায় আন্তরিকতা ও বিশুদ্ধ নিয়ত জরুরী আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿ وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ وَيُقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُواْ ٱلزَّكَوٰةَۚ وَذَٰلِكَ دِينُ ٱلۡقَيِّمَةِ ٥ ﴾ [البينة: ٥] অর্থাৎ “তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করতে এবং নামায কায়েম করতে ও যাকাত প্রদান করতে। আর এটাই সঠিক ধর্ম।” (সূরা বাইয়িনাহ্ ৫নং আয়াত) তিনি আরো বলেন, ﴿ لَن يَنَالَ ٱللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَآؤُهَا وَلَٰكِن يَنَالُهُ ٱلتَّقۡوَىٰ مِنكُمۡۚ ﴾ [الحج: ٣٧] অর্থাৎ “আল্লাহর কাছে কখনোও ওগুলির গোশত পৌঁছে না এবং রক্তও না; বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাক্বওয়া (সংযমশীলতা)।” (সূরা হাজ্জ্ব ৩৭ নং আয়াত) তিনি আরো বলেন, ﴿ قُلۡ إِن تُخۡفُواْ مَا فِي صُدُورِكُمۡ أَوۡ تُبۡدُوهُ يَعۡلَمۡهُ ٱللَّهُۗ ﴾ [ال عمران: ٢٩] অর্থাৎ “বল, তোমাদের মনে যা আছে তা যদি তোমরা গোপন রাখ কিংবা প্রকাশ কর, আল্লাহ তা অবগত আছেন।” (সূরা আলে ইমরান ২৯ নং আয়াত)

সহিহ হাদিস
وعن أبي عبد الله جابر بن عبد الله الأنصارى رضي الله عنهما قال‏:‏ كنا مع النبي صلى الله عليه وسلم في غزاةٍ فقال‏:‏ ‏"‏إن بالمدينة لرجالاً ماسرتم مسيراً، ولا قطعتم وادياً إلا كانوا معكم حبسهم المرض‏"‏ وفى رواية‏:‏ ‏"‏إلا شاركوكم في الأجر‏"‏ ‏(‏‏‏رواه مسلم‏‏‏)‏‏.

আবূ আবদুল্লাহ জাবের ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে এক অভিযানে ছিলাম। তিনি বললেন, ‘‘মদ্বীনাতে কিছু লোক এমন আছে যে, তোমরা যত সফর করছ এবং যে কোন উপত্যকা অতিক্রম করছ, তারা তোমাদের সঙ্গে রয়েছে। অসুস্থতা তাদেরকে মদ্বীনায় থাকতে বাধ্য করেছে।’’ আর একটি বর্ণনায় আছে যে, ‘‘তারা নেকীতে তোমাদের অংশীদার।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৮৩৮, ২৮৩৯, ৪৪২৩, ইবনু মাজাহ ২৭৬৪।

সহিহ হাদিস
وعن عائشة رضي الله عنها قالت قال النبي صلى الله عليه وسلم‏:‏ ‏ "‏ لا هجرة بعد الفتح، ولكن جهاد ونية، وإذا استفرتم فانفروا‏"‏ ‏(‏‏‏متفق عليه‏‏‏)‏‏.

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মক্কা বিজয়ের পর (মক্কা থেকে) হিজরত নেই; বরং বাকী রয়েছে জিহাদ ও নিয়ত। সুতরাং যদি তোমাদেরকে জিহাদের জন্য ডাক দেওয়া হয়, তাহলে তোমরা (জিহাদে) বেরিয়ে পড়।’’[১]

‘মক্কা বিজয়ের পর আর হিজরত নেই’ এর অর্থ এই যে, মক্কা এখন ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত হল। ফলে এখান থেকে মুসলিমরা আর হিজরত করতে পারবে না।
[১] সহীহুল বুখারী ৩০৮০, ৩৯০০, মুসলিম ১৮৬৪

সহিহ হাদিস
عن أنس رضي الله عنه قال‏:‏ رجعنا من غزوة تبوك مع النبي صلى الله عليه وسلم فقال‏:‏ ‏"‏ إن أقواماً خلفنا بالمدينة ما سلكنا شعباً ولا وادياً إلا وهم معنا، حبسهم العذر‏"‏‏.‏ (‏‏‏ورواه البخاري‏‏‏)

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

সহীহ বুখারীতে আনাস (রাঃ) থেকে এরূপ বর্ণনা রয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে তাবূক অভিযান থেকে আমাদের প্রত্যাবর্তনকালে তিনি বললেন যে, ‘‘আমাদের পিছনে মদীনায় এরূপ কিছু লোক আছে যারা প্রত্যেক গিরিপথ বা উপত্যকা অতিক্রমকালে আমাদের সাথে রয়েছে। বিশেষ ওজর তাদেরকে ঘরে থাকতে বাধ্য করেছে।’’
সহিহুল বুখারী ১৪২২, আহমাদ ১৫৪৩৩, ১৭৮১১, দারেমী ১৬৩৮

সহিহ হাদিস
وعن أمير المؤمنين أبي حفص عمر بن الخطاب بن نفيل بن عبد العزى بن رياح بن قرط بن رزاح بن عدى بن لؤى ابن غالب القرشى العدوى‏.‏ رضي الله عنه، قال‏:‏ سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول‏:‏ ‏ "‏ إنما الأعمال بالنيات، وإنما لكل امرىء ما نوى فمن كانت هجرته إلى الله ورسوله فهجرته إلى الله ورسوله، ومن كانت هجرته لدنيا يصيبها، أو امرأة ينكحها فهجرته إلى ما هاجر إليه‏"‏ ‏(‏‏‏متفق على صحته‏.‏ رواه إماما المحدثين‏:‏ أبو الحسين مسلم بن الحجاج بن مسلم القشيرى النيسابورى رضي الله عنهما في صحيحهما اللذين هما أصح الكتب المصنفة‏‏‏)‏‏.‏

উমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ

উমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, “আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, ‘‘যাবতীয় কার্য নিয়ত বা সংকল্পের উপর নির্ভরশীল। আর মানুষের জন্য তাই প্রাপ্য হবে, যার সে নিয়ত করবে। অতএব যে ব্যক্তির হিজরত (সবদেশত্যাগ) আল্লাহর (সন্তোষ লাভের) উদ্দেশ্যে ও তাঁর রাসূলের জন্য হবে; তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্যই হবে। আর যে ব্যক্তির হিজরত পার্থিব সম্পদ অর্জন কিংবা কোন মহিলাকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যেই হবে, তার হিজরত যে সংকল্প নিয়ে করবে তারই জন্য হবে।”[১]

এই হাদীসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ ও ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল রাহিমাহুল্লাহ এটিকে ‘এক তৃতীয়াংশ অথবা অর্ধেক দ্বীন’ বলে অভিহিত করেছেন।

এটিকে ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ তাঁর গ্রন্থ সহীহ বুখারীতে সাত জায়গায় বর্ণনা করেছেন। প্রত্যেক স্থানে এই হাদীসটি উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হল কর্মের বিশুদ্ধতা ও কর্মের প্রতিদান নিয়তের সাথে সম্পৃক্ত---সে কথা প্রমাণ করা।
[১] সহীহুল বুখারী হাদীস নং ১, ৫৪, ২৫২৯, ৩৮৯৮, ৫০৭০, ৬৬৮৯, ৬৯৫৩, মুসলিম ১৯০৭, তিরমিযী ১৬৪৭, নাসায়ী ৭৫, ৩৪৩৭, ৩৭৯৪, আবূ দাউদ ২২০১, ইবনু মাজাহ ৪২২৭, আহমাদ ১৬৯, ৩০২।

সহিহ হাদিস
وعن أبي يزيد معن بن يزيد بن الأخنس رضي الله عنهم، وهو وأبوه وجده صحابيون، قال‏:‏ كان أبي يزيد أخرج دنانير يتصدق بها فوضعها عند رجل في المسجد فجئت فأخذتها فأتيته بها، فقال‏:‏ والله ما إياك أردت، فخاصمته إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال‏:‏ ‏ "‏ لك ما نويت يا يزيد، ولك ما أخذت يامعن‏"‏ ‏(‏‏‏رواه البخاري‏‏‏)‏‏.

আবূ ইয়াযীদ মা‘ন ইবনু ইয়াযীদ ইবনু আখনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আবূ ইয়াযীদ মা‘ন ইবনু ইয়াযীদ ইবনু আখনাস (রাঃ) - তিনি (মা‘ন) এবং তাঁর পিতা ও দাদা সকলেই সাহাবী---তিনি বলেন, আমার পিতা ইয়াযীদ দান করার জন্য কয়েকটি স্বর্ণমুদ্রা বের করলেন। অতঃপর তিনি সেগুলি (দান করতে) মসজিদে একটি লোককে দায়িত্ব দিলেন। আমি (মসজিদে) এসে তার কাছ থেকে (অন্যান্য ভিক্ষুকের মত) তা নিয়ে নিলাম এবং তা নিয়ে বাড়ী এলাম। (যখন আমার পিতা এ ব্যাপারে অবগত হলেন তখন) বললেন, আল্লাহর কসম! তোমাকে দেওয়ার নিয়ত আমার ছিল না। (ফলে এগুলি আমার জন্য হালাল হবে কি না তা জানার উদ্দেশ্যে) আমি আমার পিতাকে নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে উপস্থিত হলাম। তিনি বললেন, ‘‘হে ইয়াযীদ! তোমার জন্য সেই বিনিময় রয়েছে যার নিয়ত তুমি করেছ এবং হে মা’ন! তুমি যা নিয়েছ তা তোমার জন্য হালাল।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ১৪২২, আহমাদ ১৫৪৩৩, ১৭৮১১, দারেমী ১৬৩৮।

সহিহ হাদিস
وعن أم المؤمنين أم عبد الله عائشة رضي الله عنها قالت‏:‏ قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ‏:‏ ‏"‏يغزو جيش الكعبة فإذا كانوا ببيداء من الأرض يخسف بأولهم وآخرهم‏"‏‏.‏ قالت‏:‏ قلت‏:‏ يارسول الله، كيف يخسف بأولهم وآخرهم وفيهم أسواقهم ومن ليس منهم‏!‏‏؟‏ قال‏:‏ ‏"‏يخسف بأولهم وآخرهم، ثم يبعثون على نياتهم‏"‏ ‏(‏‏‏متفق عليه‏.‏ هذا لفظ البخاري‏‏‏)‏‏.‏

উম্মুল মু’মেনীন উম্মে আব্দুল্লাহ আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘একটি বাহিনী কা‘বা ঘরের উপর আক্রমণ করার উদ্দেশ্যে বের হবে। অতঃপর যখন তারা সমতল মরুপ্রান্তরে (বাইদা) পৌঁছবে তখন তাদের প্রথম ও শেষ ব্যক্তি সকলকেই যমীনে ধসিয়ে দেওয়া হবে। তিনি (আয়েশা) বলেন যে, আমি (এ কথা শুনে) বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! কেমন করে তাদের প্রথম ও শেষ সকলকে ধসিয়ে দেওয়া হবে? অথচ তাদের মধ্যে তাদের বাজারের ব্যবসায়ী এবং এমন লোক থাকবে, যারা তাদের (আক্রমণকারীদের) অন্তর্ভুক্ত নয়। তিনি বললেন, তাদের প্রথম ও শেষ সকলকে ধসিয়ে দেওয়া হবে। তারপর তাদেরকে তাদের নিয়ত অনুযায়ী পুনরুত্থিত করা হবে।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ২১১৮ মুসলিম ২৮৮৪, শব্দগুচ্ছ বুখারীর।

সহিহ হাদিস
وعن أبي إسحاق سعد بن أبي وقاص مالك بن أهيب بن عبد مناف بن زهرة بن كلاب بن مرة بن كعب بن لؤى القرش الزهرى رضي الله عنه، أحد العشرة المشهود لهم بالجنة، رضي الله عنهم، قال‏:‏ ‏ "‏ جاءنى رسول الله صلى الله عليه وسلم يعودنى عام حجة الوداع من وجع اشتد بى فقلت‏:‏ يارسول الله إني قد بلغ بى من الوجع ما ترى، وأنا ذو مال ولا يرثنى إلا ابنة لي، أفاتصدق بثلثى ما لي‏؟‏ قال‏:‏ لا، قلت‏:‏ فالشطر يارسول الله‏؟‏ فقال‏:‏ لا، قلت‏:‏ فالثلث يا رسول الله‏؟‏ قال الثلث والثلث كثير- أو كبير- إنك أن تذر ورثتك أغنياء خير من أن تذرهم عالة يتكففون الناس، وإنك لن تنفق نفقة تبتغى بها وجه الله إلا أجرت عليها حتى ما تجعل في فيّ امرأتك قال‏:‏ فقلت‏:‏ يارسول الله أخلف بعد أصحابي‏؟‏ قال‏:‏ إنك لن تخلف فتعمل عملا تبتغي بهوجه الله إلا ازددت به درجة ورفعةً، ولعلك أن تخلف حتى ينتفع بك أقوام ويضرّ بك آخرون‏.‏ اللهم امض لآصحابى هجرتهم، ولا تردهم على أعقابهم، لكن البائس سعد بن خولة‏"‏ يرثى له رسول الله صلى الله عليه وسلم أن مات بمكة‏.‏‏(‏‏‏متفق عليه‏‏‏)‏‏.

সা‘দ ইবনু আবী অক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

সা‘দ ইবনু আবী অক্কাস (রাঃ) বলেন, যে দশজন সাহাবীকে জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছিল ইনি তাঁদের মধ্যে একজন। বিদায় হজ্জ্বের বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার রুগ্ন অবস্থায় আমাকে দেখা করতে এলেন। সে সময় আমার শরীরে চরম ব্যথা ছিল। আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার (দৈহিক) জ্বালা-যন্ত্রণা কঠিন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে--যা আপনি সচক্ষে দেখছেন। আর আমি একজন ধনী মানুষ; কিন্তু আমার উত্তরাধিকারী বলতে আমার একমাত্র কন্যা। তাহলে আমি কি আমার মাল-সম্পদের দুই তৃতীয়াংশ দান করে দেব?’ তিনি বললেন, ‘‘না।’’ আমি বললাম, ‘তাহলে অর্ধেক মাল হে আল্লাহর রাসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘না।’’ আমি বললাম, ‘তাহলে কি এক তৃতীয়াংশ দান করতে পারি?’ তিনি বললেন, ‘‘এক তৃতীয়াংশ (দান করতে পার), তবে এক তৃতীয়াংশও অনেক। কারণ এই যে, তুমি যদি তোমার উত্তরাধিকারীদের ধনবান অবস্থায় ছেড়ে যাও, তাহলে তা এর থেকে ভাল যে, তুমি তাদেরকে কাঙ্গাল করে ছেড়ে যাবে এবং তারা লোকের কাছে হাত পাতবে।

(মনে রাখ,) আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তুমি যা ব্যয় করবে তোমাকে তার বিনিময় দেওয়া হবে। এমনকি তুমি যে গ্রাস তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দাও তারও তুমি বিনিময় পাবে।’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি আমার সঙ্গীদের ছেড়ে পিছনে (মক্কায়) থেকে যাব?’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি যদি তোমার সঙ্গীদের মরার পর জীবিত থাক এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কোনো কাজ কর, তাহলে তার ফলে তোমার মর্যাদা ও সম্মান বর্ধন হবে। আর সম্ভবতঃ তুমি বেঁচে থাকবে। এমনকি তোমার দ্বারা কিছু লোক (মু’মিনরা) উপকৃত হবে। আর কিছু লোক (কাফেররা) ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হে আল্লাহ! তুমি আমার সাহাবীদেরকে হিজরতে পরিপূর্ণতা দান কর এবং তাদেরকে (হিজরত থেকে) পিছনে ফিরিয়ে দিও না। কিন্তু মিসকীন সা‘দ ইবনু খাওলা।’’ তাঁর মৃত্যু মক্কায় হওয়ার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুঃখ ও শোক প্রকাশ করেন।[১]
[১] সহীহুল বুখারী ১২৯৫, ১২৯৬, ৫৬, ২৭৪২, ২৭৪৪, ৩৯৩৬, ৪৪০৯, ৫৩৫৪, ৫৬৫৯, ৫৬৬৮, ৬৩৭৩, ৬৭৩৩, মুসলিম ১৬২৮, তিরমিযী ২১১৬, নাসায়ী ৩৬২৬, ৩৬২৭, ৩৬২৮, ৩৬৩০, ৩৬৩২, ৩৬৩৫, আবূ দাউদ ২৮৬৪, আহমাদ ১৪৪৩, ১৪৭৭, ১৪৮২, ১৪৮৮, ১৫২৭, ১৫৪৯, ১৬০২, মুওয়াত্তা মালিক ১৪৯৫, দারেমী ৩১৯৬।

সহিহ হাদিস
وعن أبي هريرة عبد الرحمن بن صخر رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم‏:‏ ‏ "‏ إن الله لا ينظر إلى أجسامكم ، ولا إلى صوركم، ولكن ينظر إلى قلوبكم وأعمالكم‏"‏ ‏(‏‏‏رواه مسلم‏‏‏)‏‏.

আবূ হুরাইরাহ আব্দুর রহমান ইবনু সাখর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের দেহ এবং তোমাদের আকৃতি দেখেন না, বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও আমল দেখেন।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫১৪৪, ৬০৬৬, মুসলিম ২৫৬৪, তিরমিযী ১১৩৪, ১৯৮৮, নাসায়ী ৩২৩৯, ৪৪৯৬, ৪৫০৬, ৪৫০৭, আবূ দাউদ ৩৪৩৮, ৩৪৪৩, ৪৯১৭, ইবনু মাজাহ ১৮৬৭, ২১৭২, ২১৭৪, আহমাদ ৭৬৭০, ৭৮১৫, ৮০৩৯, মালিক ১৩৯১, ১৬৮৪

১০

সহিহ হাদিস
وعن أبي بكرة نفيع بن الحارث الثقفى رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال‏:‏ ‏"‏إذ التقى المسلمان بسيفيهما فالقاتل والمقتول في النار‏"‏ قلت يارسول الله، هذا القاتل فما بال المقتول‏؟‏ قال‏:‏ ‏"‏إنه كان حريصاً على قتل صاحبه‏"‏ ‏(‏‏‏متفق عليه‏‏‏)‏‏.

আবূ বাক্‌রাহ নুফাই ইবনু হারেস সাক্বাফী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যখন দু’জন মুসলিম তরবারি নিয়ে আপোসে লড়াই করে, তখন হত্যাকারী ও নিহত দু’জনই জাহান্নামে যাবে।’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! হত্যাকারীর জাহান্নামে যাওয়া তো স্পষ্ট; কিন্তু নিহত ব্যক্তির ব্যাপার কী?’ তিনি বললেন, ‘‘সেও তার সঙ্গীকে হত্যা করার জন্য লালায়িত ছিল।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩১, ৬৮৭৫, ৭০৮৩, মুসলিম ২৮৮৮, নাসায়ী ৪১১৭, ৪১২০, ৪১২১, ৪১২২, ৪১২৩, আবূ দাউদ ৪২৬৮, ইবনু মাজাহ ৩৯৬৫, আহমাদ ১৯৯১১, ১৯৯২৬, ১৯৯৫৯, ১৯৯৮০, ১৯৯৯৫।

সহিহ হাদিস
وعن أبي موسى عبد الله بن قيس الأشعرى رضي الله عنه قال‏:‏ سئل رسول الله صلى الله عليه وسلم عن الرجل يقاتل شجاعة، ويقاتل حميةً، ويقاتل رياء، أى ذلك في سبيل الله‏؟‏ فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم‏:‏ ‏ "‏ من قاتل لتكون كلمة الله هى العليا فهو في سبيل الله‏"‏ ‏(‏‏‏متفق عليه‏‏‏)‏‏.

আবূ মূসা আব্দুল্লাহ ইবনু কায়স আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল, যে বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য যুদ্ধ করে, অন্ধ পক্ষপাতিত্বের জন্য যুদ্ধ করে এবং লোক প্রদর্শনের জন্য (সুনাম নেওয়ার উদ্দেশ্যে) যুদ্ধ করে, এর কোন্ যুদ্ধটি আল্লাহর পথে হবে? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কালেমাকে উঁচু করার উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করে, একমাত্র তারই যুদ্ধ আল্লাহর পথে হয়।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ১২৩, ২৮১০, ৩১২৬, ৭৪৫৮, মুসলিম ১৯০৪, তিরমিযী ১৬৪৬, নাসায়ী ৩১৩৬, আবূ দাউদ ২৫১৭, ইবনু মাজাহ ২৭৮৩, আহমাদ ১৮৯৯৯, ১৯০৪৯, ১৯০৯৯, ১৯১৩৪, ১৯২৪০।

১১

সহিহ হাদিস
وعن أبي هريرة رضي الله عنه قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ‏:‏ ‏"‏صلاة الرجل في جماعة تزيد على صلاته في سوقه وبيته بضعاً وعشرين درجه وذلك أن أحدهم إذا توضأ فأحسن الوضوء ثم أتى المسجد لا يريد إلا الصلاة، لا ينهزه إلا الصلاة، لم يخط خطوة إلا رفع له بها درجة، وحط عنه بها خطيئة حتى يدخل المسجد، فإذا دخل المسجد كان في الصلاة ما كانت الصلاة هى تحبسه، والملائكة يصلون على أحدكم ما دام في مجلسه الذى صلى فيه، ما لم يحدث فيه‏"‏ ‏(‏‏‏متفق عليه، وهذا لفظ مسلم‏‏‏)‏‏.‏ وقوله صلى الله عليه وسلم‏:‏ (2)

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মানুষের জামাআতের সঙ্গে নামায পড়ার নেকী, তার বাজারে ও বাড়ীতে নামায পড়ার চেয়ে (২৫ বা ২৭) গুণ বেশী। আর তা এ জন্য যে, যখন কোন ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযূ করে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে আসে এবং সালাতই তাকে মসজিদে নিয়ে যায়, তখন তার মসজিদে প্রবেশ করা পর্যন্ত প্রত্যেক পদক্ষেপের বিনিময়ে একটি মর্যাদা উন্নত হয় ও একটি পাপ মোচন করা হয়।

অতঃপর যখন সে মসজিদে প্রবেশ করে, তখন যে পর্যন্ত সালাত তাকে (মসজিদে) আটকে রাখে, সে পর্যন্ত সে নামাযের মধ্যেই থাকে। আর ফিরিশতারা তোমাদের কোন ব্যক্তির জন্য সে পর্যন্ত রহমতের দো‘আ করতে থাকেন---যে পর্যন্ত সে ঐ স্থানে বসে থাকে, যে স্থানে সে সালাত আদায় করেছে। তাঁরা বলেন, ‘হে আল্লাহ! এর প্রতি দয়া কর, হে আল্লাহ! একে ক্ষমা কর, হে আল্লাহ! এর তওবাহ কবুল কর।’ (ফিরিশতাদের এই দো‘আ সে পর্যন্ত চলতে থাকে) যে পর্যন্ত সে কাউকে কষ্ট না দেয়, যে পর্যন্ত তার ওযূ নষ্ট না হয়।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬৪৫, ৬৪৬, ৬৪৭, মুসলিম ৬৫০, তিরমিযী ২১৫, নাসায়ী ৮৩৭, ইবনু মাজাহ ৭৮৯, আহমাদ ৫৩১০, ৫৭৪৫, ৫৮৮৫, মুওয়াত্তা মালিক ২৯০

১২

সহিহ হাদিস
وعن أبي العباس عبد الله بن عباس بن عبد المطلب رضي الله عنهما، عن رسول الله، صلى الله عليه وسلم، فيما يروى عن ربه، تبارك وتعالى قال‏:‏ ‏ "‏ إن الله كتب الحسنات والسيئات ثم بين ذلك‏:‏ فمن همّ بحسنة فلم يعملها كتبها الله تبارك وتعالى عنده حسنة كاملة، وإن هم بها فعملها كتبها الله عشر حسنات إلى سبعمائه ضعف إلى أضعاف كثيرة، وإن هم بسيئة فلم يعملها كتبها الله عنده حسنة كاملة، وإن همّ بها فعملها كتبها الله سيئة واحدة ‏"‏ ‏(‏‏‏متفق عليه‏‏‏)‏‏.‏

আবূল আব্বাস আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস ইবনু আব্দুল মুত্তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বরকতময় মহান প্রভু থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন যে, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ পুণ্যসমূহ ও পাপসমূহ লিখে দিয়েছেন। অতঃপর তিনি তার ব্যাখ্যাও করে দিয়েছেন। যে ব্যক্তি কোনো নেকী করার সংকল্প করে; কিন্তু সে তা কর্মে বাস্তবায়িত করতে পারে না, আল্লাহ তাবারাকা অতা‘আলা তার জন্য (কেবল নিয়ত করার বিনিময়ে) একটি পূর্ণ নেকী লিখে দেন।

আর সে যদি সংকল্প করার পর কাজটি করে ফেলে, তাহলে আল্লাহ তার বিনিময়ে দশ থেকে সাতশ গুণ, বরং তার চেয়েও অনেক গুণ নেকী লিখে দেন। পক্ষান্তরে যদি সে একটি পাপ করার সংকল্প করে; কিন্তু সে তা কর্মে বাস্তবায়িত না করে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিকট একটি পূর্ণ নেকী হিসাবে লিখে দেন। আর সে যদি সংকল্প করার পর ঐ পাপ কাজ করে ফেলে, তাহলে আল্লাহ মাত্র একটি পাপ লিপিবদ্ধ করেন।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬৪৯১, মুসলিম ১৩১, আহমাদ ২০০২, ২৫১৫, ২৮২৩, ৩৩৯২

১৩

সহিহ হাদিস
وعن أبي عبد الرحمن عبد الله بن عمر بن الخطاب، رضي الله عنهما قال‏:‏ سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول‏:‏ ‏"‏ انطلق ثلاثة نفر ممن كان قبلكم حتى آواهم المبيت إلى غار فدخلوه، فانحدرت صخرة من الجبل فسدت عليهم الغار، فقالوا‏:‏ إنه لا ينجيكم من هذه الصخرة إلا أن تدعوا الله بصالح أعمالكم‏.‏ قال رجل منهم‏:‏ اللهم كان لي أبوان شيخان كبيران، وكنت لا أغبق قبلهما أهلاً ولا مالاً‏.‏ فنأى بى طلب الشجر يوماً فلم أرح عليهما حتى ناما فحلبت لهما غبوقهما فوجدتهما نائمين فكرهت أن أوقظهما وأن أغبق قبلهما أهلاً أو مالاً، فلبثت- والقدح على يدى- أنتظر استيقاظهما حتى برق الفجر والصبية يتضاغون عند قدمى- فاستيقظا فشربا غبوقهما‏.‏ اللهم إن كنت فعلت ذلك ابتغاء وجهك ففرج عنا ما نحن فيه من هذه الصخرة، فانفرجت شيئاً لا يستطيعون الخروج منه‏.‏ قال الآخر‏:‏ اللهم إنه كانت لي ابنة عم كانت أحب الناس إلىّ ‏"‏ وفى رواية‏:‏ ‏"‏كنت أحبها كأشد ما يحب الرجال النساء، فأردتها على نفسها فامتنعت منى حتى ألمّت بها سنة من السنين فجاءتنى فأعطيتها عشرين ومائة دينار على أن تخلى بينى وبين نفسها ففعلت، حتى إذا قدرت عليها‏"‏ وفى رواية‏:‏ ‏"‏فلما قعدت بين رجليها، قالت‏:‏ اتق الله ولا تفض الخاتم إلا بحقه، فانصرفت عنها وهى أحب الناس إلى وتركت الذهب الذى أعطيتها، اللهم إن كنت فعلت ذلك ابتغاء وجهك فافرج عنا ما نحن فيه، فانفرجت الصخرة غير أنهم لا يستطيعون الخروج منها‏.‏ وقال الثالث‏:‏ اللهم استأجرت أجراء وأعطيتهم أجرهم غير رجل واحد ترك الذى له وذهب، فثمرت أجره حتى كثرت منه الأموال، فجاءنى بعد حين فقال‏:‏ يا عبد الله أدّ إلى أجرى، فقلت‏:‏ كل ما ترى من أجرك‏:‏ من الإبل والبقر والغنم والرقيق‏.‏ فقال‏:‏ يا عبد الله لا تستهزئ بى‏!‏ فقلت‏:‏ لا أستهزئ بك، فأخذه كله فاستاقه فلم يترك منه شيئاً، اللهم إن كنتُ فعلت ذلك ابتغاء وجهك فافرج عنا ما نحن فيه، فانفرجت الصخرة فخرجوا يمشون‏"‏ ‏(‏‏‏متفق عليه‏‏‏)‏‏.‏

আবূ আব্দুর রহমান আব্দুল্লাহ ইবনু উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের পূর্বে (বানী ইসরাঈলের যুগে) তিন ব্যক্তি একদা সফরে বের হল। চলতে চলতে রাত এসে গেল। সুতরাং তারা রাত কাটানোর জন্য একটি পর্বত-গুহায় প্রবেশ করল। অল্পক্ষণ পরেই একটা বড় পাথর উপর থেকে গড়িয়ে নীচে এসে গুহার মুখ বন্ধ করে দিল। এ দেখে তারা বলল যে, ‘এহেন বিপদ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হচ্ছে এই যে, তোমরা তোমাদের নেক আমলসমূহকে অসীলা বানিয়ে আল্লাহর কাছে দো‘আ কর।’ সুতরাং তারা সব সব আমলের অসীলায় (আল্লাহর কাছে) দো‘আ করতে লাগল।

তাদের মধ্যে একজন বলল, ‘‘হে আল্লাহ! তুমি জান যে, আমার অত্যন্ত বৃদ্ধ পিতা-মাতা ছিল এবং (এও জান যে,) আমি সন্ধ্যা বেলায় সবার আগে তাদেরকে দুধ পান করাতাম। তাদের পূর্বে স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও কৃতদাস-দাসী কাউকে পান করাতাম না। একদিন আমি গাছের খোঁজে দূরে চলে গেলাম এবং বাড়ী ফিরে দেখতে পেলাম যে পিতা-মাতা ঘুমিয়ে গেছে। আমি সন্ধ্যার দুধ দহন করে তাদের কাছে উপস্থিত হয়ে দেখলাম, তারা ঘুমিয়ে আছে। আমি তাদেরকে জাগানো পছন্দ করলাম না এবং এও পছন্দ করলাম না যে, তাদের পূর্বে সন্তান-সন্ততি এবং কৃতদাস-দাসীকে দুধ পান করাই। তাই আমি দুধের বাটি নিয়ে তাদের ঘুম থেকে জাগার অপেক্ষায় তাদের শিয়রে দাঁড়িয়ে থাকলাম। অথচ শিশুরা ক্ষুধার তাড়নায় আমার পায়ের কাছে চেঁচামেচি করছিল। এভাবে ফজর উদয় হয়ে গেল এবং তারা জেগে উঠল। তারপর তারা নৈশদুধ পান করল। হে আল্লাহ! আমি যদি এ কাজ তোমার সন্তুষ্টি বিধানের জন্য করে থাকি, তাহলে পাথরের কারণে আমরা যে গুহায় বন্দী হয়ে আছি এ থেকে তুমি আমাদেরকে উদ্ধার কর।’’

এই দো‘আর ফলস্বরূপ পাথর একটু সরে গেল। কিন্তু তাতে তারা বের হতে সক্ষম ছিল না।

দ্বিতীয়-জন দো‘আ করল, ‘‘হে আল্লাহ! আমার একটি চাচাতো বোন ছিল। সে আমার নিকট সকল মানুষের চেয়ে প্রিয়তমা ছিল। (অন্য বর্ণনা অনুযায়ী) আমি তাকে এত বেশী ভালবাসতাম, যত বেশী ভালবাসা পুরুষরা নারীদেরকে বাসতে পারে। একবার আমি তার সঙ্গে যৌন মিলন করার ইচ্ছা করলাম। কিন্তু সে অস্বীকার করল। পরিশেষে সে যখন এক দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ল, তখন সে আমার কাছে এল। আমি তাকে এই শর্তে ১২০ দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) দিলাম, যেন সে আমার সঙ্গে যৌন-মিলন করে। সুতরাং সে (অভাবের তাড়নায়) রাজী হয়ে গেল। অতঃপর যখন আমি তাকে আয়ত্তে পেলাম। (অন্য বর্ণনা অনুযায়ী) যখন আমি তার দু’পায়ের মাঝে বসলাম, তখন সে বলল, তুমি আল্লাহকে ভয় কর এবং অবৈধভাবে (বিনা বিবাহে) আমার পবিত্রতা নষ্ট করো না। সুতরাং আমি তার কাছ থেকে দূরে সরে গেলাম; যদিও সে আমার একান্ত প্রিয়তমা ছিল এবং যে স্বর্ণমুদ্রা আমি তাকে দিয়েছিলাম তাও পরিত্যাগ করলাম। হে আল্লাহ! যদি আমি এ কাজ তোমার সন্তুষ্টির জন্য করে থাকি, তাহলে তুমি আমাদের উপর পতিত মুসীবতকে দূরীভূত কর।’’

সুতরাং পাথর আরো কিছুটা সরে গেল। কিন্তু তাতে তারা বের হতে সক্ষম ছিল না।

তৃতীয়জন দো‘আ করল, ‘‘হে আল্লাহ! আমি কিছু লোককে মজুর রেখেছিলাম। (কাজ সুসম্পন্ন হলে) আমি তাদের সকলকে মজুরী দিয়ে দিলাম। কিন্তু তাদের মধ্যে একজন মজুরী না নিয়ে চলে গেল। আমি তার মজুরীর টাকা ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করলাম। (কিছুদিন পর) তা থেকে প্রচুর অর্থ জমে গেল। কিছুকাল পর একদিন সে এসে বলল, ‘হে আল্লাহর বান্দা! তুমি আমার মজুরী দিয়ে দাও।’ আমি বললাম, ‘এসব উঁট, গাভী, ছাগল এবং গোলাম (বাঁদি) যা তুমি দেখছ তা সবই তোমার মজুরীর ফল।’ সে বলল, ‘হে আল্লাহর বান্দা! তুমি আমার সঙ্গে উপহাস করবে না।’ আমি বললাম, ‘আমি তোমার সঙ্গে উপহাস করিনি (সত্য ঘটনাই বর্ণনা করছি)।’ সুতরাং আমার কথা শুনে সে তার সমস্ত মাল নিয়ে চলে গেল এবং কিছুই ছেড়ে গেল না। হে আল্লাহ! যদি আমি এ কাজ একমাত্র তোমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য করে থাকি, তাহলে যে বিপদে আমরা পড়েছি তা তুমি দূরীভূত কর।’’ এর ফলে পাথর সম্পূর্ণ সরে গেল এবং সকলেই (গুহা থেকে) বের হয়ে চলতে লাগল।[১]
[১] সহীহুল বুখারী ২২১৫, ২২৭২, ২৩৩৩, ৩৪৬৫, ৫৯৭৪, মুসলিম ২৭৪৩, আবূ দাউদ ৩৩৮৭, আহমাদ ৫৯৩৭
/ পরিচ্ছেদঃ তওবার বিবরণ

উলামা সম্প্রদায়ের উক্তি এই যে, প্রত্যেক পাপ থেকে তওবা করা (চিরতরে প্রত্যাবর্তন করা) ওয়াজেব (অবশ্য-কর্তব্য)। যদি গোনাহর সম্পর্ক আল্লাহর (অবাধ্যতার) সঙ্গে থাকে এবং কোন মানুষের অধিকারের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না থাকে, তাহলে এ ধরনের তওবা কবুলের জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে। ১। পাপ সম্পূর্ণরূপে বর্জন করতে হবে। ২। পাপে লিপ্ত হওয়ার জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে। ৩। ঐ পাপ আগামীতে দ্বিতীয়বার না করার দৃঢ় সঙ্কল্প করতে হবে। সুতরাং যদি এর মধ্যে একটি শর্তও লুপ্ত হয়, তাহলে সেই তওবা বিশুদ্ধ হবে না। পক্ষান্তরে যদি সেই পাপ মানুষের অধিকার সম্পর্কিত হয়, তাহলে তা গ্রহণীয় হওয়ার জন্য চারটি শর্ত আছে। উপরোক্ত তিনটি এবং চতুর্থ শর্ত হল, হকদারদের হক ফিরিয়ে দিতে হবে। যদি অবৈধ পন্থায় কারো মাল বা অন্য কিছু নিয়ে থাকে, তাহলে তা ফিরিয়ে দিতে হবে। আর যদি কারো উপর মিথ্যা অপবাদ দেয় অথবা অনুরূপ কোনো দোষ করে থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে শাস্তি নিতে নিজেকে পেশ করতে হবে অথবা তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। যদি কারো গীবত করে থাকে, তাহলে তার কাছে তা বৈধ করে নেবে। সমস্ত পাপ থেকে তওবাহ করা ওয়াজেব। আংশিক পাপ থেকে তওবাহ করলে সেই তওবাহ হকপন্থী আলেমগণের নিকট গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হবে এবং অবশিষ্ট পাপ রয়ে যাবে। তওবা ওয়াজেব হওয়ার ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসে প্রচুর প্রমাণ রয়েছে এবং এ ব্যাপারে উম্মতের ঐকমত্যও বিদ্যমান। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ﴿ وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ﴾ [النور: ٣١] অর্থাৎ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর কাছে তওবা (প্রত্যাবর্তন) কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।” (সূরা নূর ৩১ আয়াত) ﴿ وَأَنِ ٱسۡتَغۡفِرُواْ رَبَّكُمۡ ثُمَّ تُوبُوٓاْ إِلَيۡهِ ﴾ [هود: ٣] অর্থাৎ “তোমরা নিজেদের প্রতিপালকের নিকট (পাপের জন্য) ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাঁর কাছে তওবা (প্রত্যাবর্তন) কর।” (সূরা হূদ ৩ আয়াত) তিনি আরো বলেছেন, ﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ تُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ تَوۡبَةٗ نَّصُوحًا ﴾ [التحريم: ٨] অর্থাৎ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা কর বিশুদ্ধ তওবা।” (সূরা তাহরীম ৮ আয়াত)

১৪

সহিহ হাদিস
وعن أبي هريرة رضي الله عنه قال‏:‏ سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول‏:‏ ‏ "‏والله إني لأستغفر الله وأتوب إليه في اليوم أكثر من سبعين مرة ‏"‏ ‏(‏‏‏رواه البخاري‏‏‏)‏‏.‏

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, ‘‘আল্লাহর কসম! আমি প্রত্যহ ৭০ বারের অধিক আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা ও তওবা করি।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬৩০৭, তিরমিযী ৩২৫৯, ইবনুূু মাজাহ ৩৮১৬, আহমাদ ৭৭৩৪, ৮২৮৮, ৯৫১৫

১৫

সহিহ হাদিস
وعن الأغر بن يسار المزنى رضي الله عنه قال‏:‏ قال رسول الله صلى الله عليه وسلم‏:‏ ‏ "‏ ياأيها الناس توبوا إلى الله واستغفروه فإنى أتوب في اليوم مائه مرة‏"‏ ‏(‏‏‏رواه مسلم‏‏‏)‏‏.‏

আগার্র ইবনু ইয়াসার মুযানী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর সমীপে তওবা কর ও তাঁর নিকট ক্ষমা চাও! কেননা, আমি প্রতিদিন ১০০ বার করে তওবাহ করে থাকি।’’[১]
[১] মুসলিম ২৭০২, আবূ দাউদ ১৫১৫, আহমাদ ১৭৩৯১, ১৭৮২৭

১৮

সহিহ হাদিস
وعن أبي هريرة رضي الله عنه قال‏:‏ قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ‏:‏ ‏ "‏ من تاب قبل أن تطلع الشمس من مغربها تاب الله عليه‏"‏ ‏(‏‏‏رواه مسلم‏‏‏)‏‏.‏

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় হওয়ার পূর্বে তওবা করবে, আল্লাহ তার তওবা গ্রহণ করবেন।’’[১]
[১] মুসলিম ২৭০৩, আহমাদ ৭৬৫৪, ৮৮৮৫, ৯২২৫, ১০০৪৭, ১০২০৩

১৯

হাসান হাদিস
وعن أبي عبد الرحمن عبد الله بن عمر بن الخطاب رضي الله عنهما عن النبي صلى الله عليه وسلم قال‏:‏ ‏ "‏ إن الله عز وجل يقبل توبة العبد ما لم يغرغر‏"‏ ‏(‏‏‏رواه الترمذي وقال‏:‏ حديث حسن‏‏‏)‏‏.‏

আবূ আব্দুর রহমান আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা বান্দার তওবাহ সে পর্যন্ত কবুল করবেন, যে পর্যন্ত তার প্রাণ কণ্ঠাগত না হয়।”[১]
[১] তিরমিযী , ৩৫৩৭, ইবনুূু মাজাহ ৪২৫৩

১৬

সহিহ হাদিস
وعن أبي حمزة أنس بن مالك الأنصارى خادم رسول الله صلى الله عليه وسلم، رضي الله عنه قال‏:‏ قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ‏:‏ ‏"‏ لله أفرح بتوبة عبده من أحدكم سقط على بعيره وقد أضله في أرض فلاة ‏"‏ ‏(‏‏‏متفق عليه‏‏‏)‏‏.‏ وفى رواية لمسلم‏:‏ لله أشد فرحا بتوبة عبده حين يتوب إليه من أحدكم كان على راحلته بأرض فلاة، فانفلتت منه وعليها طعامه وشرابه فأيس منها، فأتى شجرة فاضطجع في ظلها، وقد أيس من راحلته، فبينما هو كذلك إذا هو بها، قائمة عنده ، فأخذ بخطامها ثم قال من شدة الفرح‏:‏ اللهم أنت عبدي وأنا ربك، أخطأ من شدة الفرح‏"‏‏.‏

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খাদেম, আবূ হামযাহ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় বান্দার তওবা করার জন্য ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা বেশী আনন্দিত হন, যে তার উট জঙ্গলে হারিয়ে ফেলার পর পুনরায় ফিরে পায়।’’(বুখারী ৬৩০৯, মুসলিম ২৭৪৭, আহমাদ ১২৮১৫)
মুসলিমের অন্য বর্ণনায় এইভাবে এসেছে যে, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দার তওবায় যখন সে তওবা করে তোমাদের সেই ব্যক্তির চেয়ে বেশী খুশী হন, যে তার বাহনের উপর চড়ে কোনো মরুভূমি বা জনহীন প্রান্তর অতিক্রমকালে বাহনটি তার নিকট থেকে পালিয়ে যায়। আর খাদ্য ও পানীয় সব ওর পিঠের উপর থাকে। অতঃপর বহু খোঁজাখুঁজির পর নিরাশ হয়ে সে একটি গাছের ছায়ায় ঘুমিয়ে পড়ে। ইতোমধ্যে বাহনটি হঠাৎ তার সম্মুখে দাঁড়িয়ে যায়। সে তার লাগাম ধরে খুশীর চোটে বলে ওঠে, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার দাস, আর আমি তোমার প্রভু!’ সীমাহীন খুশীর কারণে সে ভুল করে ফেলে।’’

১৭

সহিহ হাদিস
وعن أبي موسى عبد الله بن قيس الأشعرى رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال‏:‏ ‏ "‏ إن الله تعالى يبسط يده بالليل ليتوب مسيء النهار، ويبسط يده بالنهار ليتوب مسيء الليل حتى تطلع الشمس من مغربها‏"‏ ‏(‏‏‏رواه مسلم‏‏‏)‏‏.‏

আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা নিজ হাত রাতে প্রসারিত করেন; যেন দিনে পাপকারী (রাতে) তওবা করে এবং দিনে তাঁর হাত প্রসারিত করেন; যেন রাতে পাপকারী (দিনে) তওবাহ করে। যে পর্যন্ত পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় না হবে, সে পর্যন্ত এই রীতি চালু থাকবে।’ [১]

২৪

সহিহ হাদিস

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘যদি আদম সন্তানের সোনার একটি উপত্যকা হয়, তবুও সে চাইবে যে, তার কাছে দুটি উপত্যকা হোক। (কবরের) মাটিই একমাত্র তার মুখ পূর্ণ করতে পারবে। আর যে তওবা করে, আল্লাহ তওবা গ্রহণ করেন।’’(সহীহুল বুখারী ৬৪৩৬, ৬৪৩৭, মুসলিম ১০৪৯, তিরমিযী ৩৭৯৩, ৩৮৯৮, আহমাদ ৩৪৯১, ২০৬০৭, ২০৬৯৭)

২৫

সহিহ হাদিস

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘আল্লাহ সুবহানাহু অতা‘আলা ঐ দু’টি লোককে দেখে হাসেন, যাদের মধ্যে একজন অপরজনকে হত্যা করে এবং দু’জনই জান্নাতে প্রবেশ করবে। নিহত ব্যক্তিকে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করা অবস্থায় (কোন কাফের কর্তৃক) হত্যা করে দেওয়া হল। পরে আল্লাহ তা‘আলা হত্যাকারী কাফেরকে তওবা করার তাওফীক প্রদান করেন। ফলে সে ইসলাম গ্রহণ করে আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে যায়।’’(সহীহুল বুখারী-২৮২৬, মুসলিম ১৮৯০, নাসায়ী ৩১৬৫, ৩১৬৬, ইবনু মাজাহ ১৯১, আহমাদ ৭২৮২, ২৭৪৪৬, ৯৬৫৭, ১০২৫৮, মুওয়াত্তা মালিক ১০০০)

২৩

সহিহ হাদিস

আবূ নুজাইদ ইমরান ইবনে হুসাইন খুযা‘য়ী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

জুহাইনা গোত্রের এক নারী আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর খিদমতে হাজির হল। সে অবৈধ মিলনে গর্ভবতী ছিল। সে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি দণ্ডনীয় অপরাধ করে ফেলেছি তাই আপনি আমাকে শাস্তি দিন!’ সুতরাং আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার আত্মীয়কে ডেকে বললেন, ‘‘তুমি একে নিজের কাছে যত্ন সহকারে রাখ এবং সন্তান প্রসবের পর একে আমার নিকট নিয়ে এসো।’’ সুতরাং সে তাই করল (অর্থাৎ প্রসবের পর তাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর কাছে নিয়ে এল)। আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কাপড় তার (শরীরের) উপর মজবুত করে বেঁধে দেওয়ার আদেশ দিলেন। অতঃপর তাকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলার আদেশ দিলেন। অতঃপর তিনি তার জানাযার নামায পড়লেন। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এই মেয়ের জানাযার নামায পড়লেন, অথচ সে ব্যভিচার করেছিল?’ তিনি বললেন, ‘‘(উমার! তুমি জান না যে,) এই স্ত্রী লোকটি এমন বিশুদ্ধ তওবা করেছে, যদি তা মদীনার ৭০টি লোকের মধ্যে বণ্টন করা হত তা তাদের জন্য যথেষ্ট হত। এর চেয়ে কি তুমি কোন উত্তম কাজ পেয়েছ যে, সে আল্লাহর জন্য নিজের প্রাণকে কুরবান করে দিল?’’ (মুসলিম ১৬৯৬, তিরমিযী ১৪৩৫, নাসায়ী ১৯৫৭, আবূ দাউদ ৪৪৪০, ইবনু মাজাহ ২৫৫৫, আহমাদ ১৯৩৬০, ১৯৪০২, দারেমী ২৩২৫)

২১

সহিহ হাদিস

আবূ সাঈদ সা‘দ ইবন মালেক ইবন সিনান খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের পূর্বে (বনী ইস্রাইলের যুগে) একটি লোক ছিল; যে ৯৯টি মানুষকে হত্যা করেছিল। অতঃপর লোকদেরকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আলেম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। তাকে একটি খ্রিষ্টান সন্নাসীর কথা বলা হল। সে তার কাছে এসে বলল, ‘সে ৯৯ জন মানুষকে হত্যা করেছে। এখন কি তার তওবার কোন সুযোগ আছে?’ সে বলল, ‘না।’ সুতরাং সে (ক্রোধান্বিত হয়ে) তাকেও হত্যা করে একশত পূরণ করে দিল। পুনরায় সে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আলেম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। এবারও তাকে এক আলেমের খোঁজ দেওয়া হল। সে তার নিকট এসে বলল যে, সে একশত মানুষ খুন করেছে। সুতরাং তার কি তওবার কোন সুযোগ আছে? সে বলল, ‘হ্যাঁ আছে! তার ও তওবার মধ্যে কে বাধা সৃষ্টি করবে? তুমি অমুক দেশে চলে যাও। সেখানে কিছু এমন লোক আছে যারা আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করে। তুমিও তাদের সাথে আল্লাহর ইবাদত কর। আর তোমার নিজ দেশে ফিরে যেও না। কেননা, ও দেশ পাপের দেশ।’ সুতরাং সে ব্যক্তি ঐ দেশ অভিমুখে যেতে আরম্ভ করল। যখন সে মধ্য রাস্তায় পৌঁছল, তখন তার মৃত্যু এসে গেল। (তার দেহ-পিঞ্জর থেকে আত্মা বের করার জন্য) রহমত ও আযাবের উভয় প্রকার ফেরেশতা উপস্থিত হলেন। ফিরিশতা- দের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক আরম্ভ হল। রহমতের ফেরেশতাগণ বললেন, ‘এই ব্যক্তি তওবা করে এসেছিল এবং পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর দিকে তার আগমন ঘটেছে।’ আর আযাবের ফিরিশতারা বললেন, ‘এ এখনো ভাল কাজ করেনি (এই জন্য সে শাস্তির উপযুক্ত)।’ এমতাবস্থায় একজন ফিরিশতা মানুষের রূপ ধারণ করে উপস্থিত হলেন। ফিরিশতাগণ তাঁকে সালিস মানলেন। তিনি ফায়সালা দিলেন যে, ‘তোমরা দু’ দেশের দূরত্ব মেপে দেখ। (অর্থাৎ এ যে এলাকা থেকে এসেছে সেখান থেকে এই স্থানের দূরত্ব এবং যে দেশে যাচ্ছিল তার দূরত্ব) এই দুয়ের মধ্যে সে যার দিকে বেশী নিকটবর্তী হবে, সে তারই অন্তর্ভুক্ত হবে।’ অতএব তাঁরা দূরত্ব মাপলেন এবং যে দেশে সে যাওয়ার ইচ্ছা করেছিল, সেই (ভালো) দেশকে বেশী নিকটবর্তী পেলেন। সুতরাং রহমতের ফিরিশতাগণ তার জান কবয করলেন।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
সহীহতে আর একটি বর্ণনায় এরূপ আছে যে, ‘‘পরিমাপে ঐ ব্যক্তিকে সৎশীল লোকদের দেশের দিকে এক বিঘত বেশী নিকটবর্তী পাওয়া গেল। সুতরাং তাকে ঐ সৎশীল ব্যক্তিদের দেশবাসী বলে গণ্য করা হল।’’
সহীহতে আরো একটি বর্ণনায় এইরূপ এসেছে যে, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা ঐ দেশকে (যেখান থেকে সে আসছিল তাকে) আদেশ করলেন যে, তুমি দূরে সরে যাও এবং এই সৎশীলদের দেশকে আদেশ করলেন যে, তুমি নিকটবর্তী হয়ে যাও। অতঃপর বললেন, ‘তোমরা এ দু’য়ের দূরত্ব মাপ।’ সুতরাং তাকে সৎশীলদের দেশের দিকে এক বিঘত বেশী নিকটবর্তী পেলেন। যার ফলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হল।’’
আরো একটি বর্ণনায় আছে, ‘‘সে ব্যক্তি নিজের বুকের উপর ভর করে ভালো দেশের দিকে একটু সরে গিয়েছিল।’’(সহীহুল বুখারী ৩৪৭০, মুসলিম ২৭৬৬, ইবনু মাজাহ ২৬২৬, আহমাদ ১০৭৭০, ১১২৯০)

২০

সহিহ হাদিস

যির্র ইবনে হুবাইশ থেকে বর্ণিতঃ

আমি মোজার উপর মাসাহ করার মাসআলা জিজ্ঞাসা করার জন্য সাফওয়ান ইবনে আস্সালের নিকট গেলাম। তিনি বললেন, ‘হে যির্র! তোমার আগমনের উদ্দেশ্য কি?’ আমি বললাম, ‘জ্ঞান অন্বেষণ।’ তিনি বললেন, ‘নিশ্চয় ফিরিশতামণ্ডলী ঐ অন্বেষণের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে বিদ্যার্থীর জন্য নিজেদের ডানা বিছিয়ে দেন।’
অতঃপর আমি বললাম, ‘পেশাব-পায়খানার পর মোজার উপর মাসাহ করার ব্যাপারে আমার মনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। যেহেতু আপনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর একজন সাহাবী, তাই আপনার নিকট জানতে এলাম যে, আপনি এ ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে কিছু আলোচনা করতে শুনেছেন কি না?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ! যখন আমরা বিদেশ সফরে বের হতাম, তখন তিনি আমাদেরকে (সফরে) তিনদিন ও তিন রাত মোজা না খোলার আদেশ দিতেন (অর্থাৎ আমরা যেন এই সময়সীমা পর্যন্ত মাসাহ করতে থাকি), কিন্তু বড় অপবিত্রতা (সঙ্গম, বীর্যপাত ইত্যাদি) হেতু অপবিত্র হলে (মোজা খুলতে হবে)। কিন্তু পেশাব-পায়খানা ও ঘুম থেকে উঠলে নয়। (এ সবের পর রীতিমত মাসাহ করা জায়েয)।’ আমি বললাম, ‘আপনি কি তাঁকে ভালবাসা সম্পর্কে কিছু আলোচনা করতে শুনেছেন?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ। আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সঙ্গে সফরে ছিলাম। আমরা তাঁর সঙ্গে বসেছিলাম, এমন সময় এক বেদুঈন অতি উঁচু গলায় ডাক দিল, ‘‘হে মুহাম্মাদ!’’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাকে উঁচু আওয়াজে জবাব দিলেন, ‘‘এখানে এস!’’ আমি তাকে বললাম, ‘‘আরে তুমি নিজের আওয়াজ নীচু কর! কেননা, তুমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নিকট আছ। তাঁর নিকট এ রকম উঁচু গলায় কথা বলা তোমার (বরং সকলের) জন্য নিষিদ্ধ।’’ সে (বেদুঈন) বলল, ‘‘আল্লাহর কসম! আমি তো আস্তে কথা বলবই না।’’ বেদুঈন বলল, ‘‘কোন ব্যক্তি কিছু লোককে ভালবাসে; কিন্তু সে তাদের (মর্যাদায়) পৌঁছতে পারেনি? (এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?)।’’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যুত্তরে বললেন, ‘‘মানুষ কিয়ামতের দিন ঐ লোকদের সঙ্গে থাকবে, যাদেরকে সে ভালবাসবে।’’ পুনরায় তিনি আমাদের সাথে কথাবার্তা বলতে থাকলেন। এমনকি তিনি পশ্চিম দিকের একটি দরজার কথা উল্লেখ করলেন, যার প্রস্থের দূরত্ব ৪০ কিংবা ৭০ বছরের পথ অথবা তিনি বললেন, ওর প্রস্থে একজন আরোহী ৪০ কিম্বা ৭০ বছর চলতে থাকবে। (সুফইয়ান এই হাদীসের একজন বর্ণনাকারী বলেন যে, এই দরজা সিরিয়ার দিকে অবস্থিত।) আল্লাহ তা‘আলা এই দরজাটি আসমান-যমীন সৃষ্টি করার দিন সৃষ্টি করেছেন এবং সেই সময় থেকে তা তওবার জন্য খোলা রয়েছে। পশ্চিমদিক থেকে সূর্য না উঠা পর্যন্ত এটা বন্ধ হবে না।’(তিরমিযী ৯৬, ৩২৮৭, ৩৫৩৫, ৩৫৩৬, নাসায়ী ১২৬, ১২৭, ১৫৮, ১৫৯, ইবনু মাজাহ ৪৭৮, আহমাদ ১৭৬২৩, ১৭৬২৮)

২২

সহিহ হাদিস

কা‘ব ইবনে মালেকের পুত্র আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিতঃ

এই আব্দুল্লাহ কা‘ব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর ছেলেদের মধ্যে তাঁর পরিচালক ছিলেন, যখন তিনি অন্ধ হয়ে যান। তিনি (আব্দুল্লাহ) বলেন, আমি (আমার পিতা) কা‘ব ইবনে মালেককে ঐ ঘটনা বর্ণনা করতে শুনেছি, যখন তিনি তাবূকের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর পিছনে থেকে যান। তিনি বলেন, ‘আমি তাবূক যুদ্ধ ছাড়া যে যুদ্ধই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেছেন তাতে কখনোই তাঁর পিছনে থাকিনি। অবশ্য বদরের যুদ্ধ থেকে আমি পিছনে রয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু বদরের যুদ্ধে যে অংশগ্রহণ করেনি, তাকে ভৎর্সনা করা হয়নি। আসল ব্যাপার ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও মুসলিমগণ কুরাইশের কাফেলার পশ্চাদ্ধাবনে বের হয়েছিলেন। (শুরুতে যুদ্ধের নিয়ত ছিল না।) পরিশেষে আল্লাহ তা‘আলা তাঁদেরকে ও তাঁদের শত্রুকে (পূর্বঘোষিত) ওয়াদা ছাড়াই একত্রিত করেছিলেন। আমি আক্বাবার রাতে (মিনায়) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সাথে উপস্থিত ছিলাম, যখন আমরা ইসলামের উপর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলাম। আক্বাবার রাত অপেক্ষা আমার নিকটে বদরের উপস্থিতি বেশী প্রিয় ছিল না। যদিও বদর (অভিযান) লোক মাঝে ওর চাইতে বেশী প্রসিদ্ধ। (কা‘ব বলেন,) আর আমার তাবূকের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর পিছনে থাকার ঘটনা এরূপ যে, এই যুদ্ধ হতে পিছনে থাকার সময় আমি যতটা সমর্থ ও সচ্ছল ছিলাম অন্য কোন সময় ছিলাম না। আল্লাহর কসম! এর পূর্বে আমার নিকট কখনো দু’টি সওয়ারী (বাহন) একত্রিত হয়নি। কিন্তু এই (যুদ্ধের) সময়ে একই সঙ্গে দু’টি সওয়ারী আমার নিকট মওজুদ ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নিয়ম ছিল, যখন তিনি কোন যুদ্ধে বের হওয়ার ইচ্ছা করতেন, তখন ‘তাওরিয়া’ করতেন (অর্থাৎ সফরের গন্তব্যস্থলের নাম গোপন রেখে সাধারণ অন্য স্থানের নাম নিতেন, যাতে শত্রুরা টের না পায়)। এই যুদ্ধ এইভাবে চলে এল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভীষণ গরমে এই যুদ্ধে বের হলেন এবং দূরবর্তী সফর ও দীর্ঘ মরুভূমির সম্মুখীন হলেন। আর বহু সংখ্যক শত্রুরও সম্মুখীন হলেন। এই জন্য তিনি মুসলিমদের সামনে বিষয়টি স্পষ্ট করে দিলেন; যাতে তাঁরা সেই অনুযায়ী যথোচিত প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। ফলে তিনি সেই দিকও বলে দিলেন, যেদিকে যাবার ইচ্ছা করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সঙ্গে অনেক মুসলিম ছিলেন এবং তাদের কাছে কোন হাজিরা বহি ছিল না, যাতে তাদের নামসমূহ লেখা হবে। এই জন্য যে ব্যক্তি (যুদ্ধে) অনুপস্থিত থাকত সে এই ধারণাই করত যে, আল্লাহর অহী অবতীর্ণ ছাড়া তার অনুপস্থিতির কথা গুপ্ত থাকবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই যুদ্ধ ফল পাকার মৌসুমে করেছিলেন এবং সে সময় (গাছের) ছায়াও উৎকৃষ্ট (ও প্রিয়) ছিল, আর আমার টানও ছিল সেই ফল ও ছায়ার দিকে। সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও মুসলিমরা (যুদ্ধের জন্য) প্রস্তুতি নিলেন। আর (আমার এই অবস্থা ছিল যে,) আমি সকালে আসতাম, যেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সঙ্গে আমিও (যুদ্ধের) প্রস্তুতি নিই। কিন্তু কোন ফায়সালা না করেই আমি (বাড়ী) ফিরে আসতাম এবং মনে মনে বলতাম যে, আমি যখনই ইচ্ছা করব, যুদ্ধে শামিল হয়ে যাব। কেননা, আমি এর ক্ষমতা রাখি। আমার এই গড়িমসি অবস্থা অব্যাহত রইল এবং লোকেরা জিহাদের আয়োজনে প্রবৃত্ত থাকলেন।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও মুসলিমরা একদিন সকালে জিহাদে বেরিয়ে পড়লেন এবং আমি প্রস্তুতির ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্তেই উপনীত হতে পারলাম না। আমি আবার সকালে এলাম এবং বিনা সিদ্ধান্তেই (বাড়ী) ফিরে গেলাম। সুতরাং আমার এই অবস্থা অব্যাহত থেকে গেল। ওদিকে মুসলিম সেনারা দ্রুতগতিতে আগে বাড়তে থাকল এবং যুদ্ধের ব্যাপারও ক্রমশঃ এগুতে লাগল। আমি ইচ্ছা করলাম যে, আমিও সফরে রওয়ানা হয়ে তাদের সঙ্গ পেয়ে নিই। হায়! যদি আমি তাই করতাম (তাহলে কতই না ভাল হত)। কিন্তু এটা আমার ভাগ্যে হয়ে উঠল না। এদিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর চলে যাওয়ার পর যখনই আমি লোকের মাঝে আসতাম, তখন এ জন্যই দুঃখিত ও চিন্তিত হতাম যে, এখন (মদীনায়) আমার সামনে কোন আদর্শ আছে তো কেবলমাত্র মুনাফিক কিংবা এত দুর্বল ব্যক্তিরা যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমার্হ বা অপারগ বলে গণ্য করেছেন।
সম্পূর্ণ রাস্তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে স্মরণ করলেন না। তাবূক পৌঁছে যখন তিনি লোকের মাঝে বসেছিলেন, তখন আমাকে স্মরণ করলেন এবং বললেন, ‘‘কা‘ব ইবন মালেকের কী হয়েছে?’’ বানু সালেমাহ (গোত্রের) একটি লোক বলে উঠল, ‘‘হে আল্লাহর রাসূল! তার দুই চাদর এবং দুই পার্শ্ব দর্শন (অর্থাৎ ধন ও তার অহঙ্কার) তাকে আটকে দিয়েছে।’’ (এ কথা শুনে) মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘‘বাজে কথা বললে তুমি। আল্লাহর কসম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা তার ব্যাপারে ভাল ছাড়া অন্য কিছু জানি না।’’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নীরব থাকলেন।
এসব কথাবার্তা চলছিল এমতাবস্থায় তিনি একটি লোককে সাদা পোশাক পরে (মরুভূমির) মরীচিকা ভেদ করে আসতে দেখলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘‘তুমি যেন আবূ খাইসামাহ হও।’’ (দেখা গেল,) সত্যিকারে তিনি আবূ খাইসামাহ আনসারীই ছিলেন। আর তিনি সেই ব্যক্তি ছিলেন, যিনি একবার আড়াই কিলো খেজুর সদকাহ করেছিলেন বলে মুনাফিকরা (তা অল্প মনে করে) তাঁকে বিদ্রূপ করেছিল।’
কা‘ব বলেন, ‘অতঃপর যখন আমি সংবাদ পেলাম যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাবূক থেকে ফিরার সফর শুরু করে দিয়েছেন, তখন আমার মনে কঠিন দুশ্চিন্তা এসে উপস্থিত হল এবং মিথ্যা অজুহাত পেশ করার চিন্তা করতে লাগলাম এবং মনে মনে বলতে লাগলাম যে, আগামী কাল যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফিরবেন, সে সময় আমি তাঁর রোষানল থেকে বাঁচব কি উপায়ে? আর এ ব্যাপারে আমি পরিবারের প্রত্যেক বুদ্ধিমান মানুষের সহযোগিতা চাইতে লাগলাম। অতঃপর যখন বলা হল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর আগমন একদম নিকটবর্তী, তখন আমার অন্তর থেকে বাতিল (পরিকল্পনা) দূর হয়ে গেল। এমনকি আমি বুঝতে পারলাম যে, মিথ্যা বলে আমি কখনই বাঁচতে পারব না। সুতরাং আমি সত্য বলার দৃঢ় সঙ্কল্প করে নিলাম। এদিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকালে (মদীনায়) পদার্পণ করলেন। তাঁর অভ্যাস ছিল, যখন তিনি সফর থেকে (বাড়ি) ফিরতেন, তখন সর্বপ্রথম তিনি মসজিদে দু’ রাকআত নামায পড়তেন। তারপর (সফরের বিশেষ বিশেষ খবর শোনাবার জন্য) লোকেদের জন্য বসতেন। সুতরাং এই সফর থেকে ফিরেও যখন পূর্ববৎ কাজ করলেন, তখন মুনাফেকরা এসে তাঁর নিকট ওজর-আপত্তি পেশ করতে লাগল এবং কসম খেতে আরম্ভ করল। এরা সংখ্যায় আশি জনের কিছু বেশী ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের বাহ্যিক ওজর গ্রহণ করে নিলেন, তাদের বায়আত নিলেন, তাদের জন্য (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করলেন এবং তাদের গোপনীয় অবস্থা আল্লাহকে সঁপে দিলেন। অবশেষে আমিও তাঁর খিদমতে হাজির হলাম। অতঃপর যখন আমি তাঁকে সালাম দিলাম, তখন তিনি রাগান্বিত ব্যক্তির হাসির মত মুচকি হাসলেন। অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘সামনে এসো!’’ আমি তাঁর সামনে এসে বসে পড়লাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘তুমি কেন জিহাদ থেকে পিছনে রয়ে গেলে? তুমি কি বাহন ক্রয় করনি?’’ আমি বললাম, ‘‘হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর কসম! আমি যদি আপনি ছাড়া দুনিয়ার অন্য কোন লোকের কাছে বসতাম, তাহলে নিশ্চিতভাবে কোন মিথ্যা ওজর পেশ করে তার অসন্তুষ্টি থেকে বেঁচে যেতাম। বাকচাতুর্য (বা তর্ক-বিতর্ক করা)র অভিজ্ঞতা আমার যথেষ্ট রয়েছে। কিন্তু আল্লাহর কসম! আমি জানি যে, যদি আজ আপনার সামনে মিথ্যা বলি, যাতে আপনি আমার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন, তাহলে অতি সত্বর আল্লাহ তা’আলা (অহী দ্বারা সংবাদ দিয়ে) আপনাকে আমার উপর অসন্তুষ্ট করে দেবেন। পক্ষান্তরে আমি যদি আপনাকে সত্য কথা বলি, তাহলে আপনি আমার উপর অসন্তুষ্ট হবেন। কিন্তু আমি আল্লাহর নিকট এর সুফলের আশা রাখি। (সেহেতু আমি সত্য কথা বলছি যে,) আল্লাহর কসম! (আপনার সাথে জিহাদে যাওয়ার ব্যাপারে) আমার কোন অসুবিধা ছিল না। আল্লাহর কসম! আপনার সাথ ছেড়ে পিছনে থাকার সময় আমি যতটা সমর্থ ও সচ্ছল ছিলাম ততটা কখনো ছিলাম না।’’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘‘এই লোকটি নিশ্চিতভাবে সত্য কথা বলেছে। বেশ, তুমি এখান থেকে চলে যাও, যে পর্যন্ত তোমার ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা কোন ফায়সালা না করবেন।’’
আমার পিছনে পিছনে বনু সালেমাহ (গোত্রের) কিছু লোক এল এবং আমাকে বলল যে, ‘‘আল্লাহর কসম! আমরা অবগত নই যে, তুমি এর পূর্বে কোন পাপ করেছ। অন্যান্য পিছনে থেকে যাওয়া লোকেদের ওজর পেশ করার মত তুমিও কোন ওজর পেশ করলে না কেন? তোমার পাপ মোচনের জন্য এটাই যথেষ্ট ছিল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমার জন্য (আল্লাহর নিকট) ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।’’ কা‘ব বলেন, ‘আল্লাহর কসম! লোকেরা আমাকে আমার সত্য কথা বলার জন্য তিরস্কার করতে থাকল। পরিশেষে আমার ইচ্ছা হল যে, আমি দ্বিতীয়বার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর কাছে গিয়ে প্রথম কথা অস্বীকার করি (এবং কোন মিথ্যা ওজর পেশ করে দিই।) আবার আমি তাদেরকে বললাম, ‘‘আমার এ ঘটনা কি অন্য কারো সাথে ঘটেছে?’’ তাঁরা বললেন, ‘‘হ্যাঁ। তোমার মত আরো দু’জন সমস্যায় পড়েছে। (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নিকটে) তারাও সেই কথা বলেছে, যা তুমি বলেছ এবং তাদেরকে সেই কথাই বলা হয়েছে, যা তোমাকে বলা হয়েছে।’’ আমি তাদেরকে বললাম, ‘‘তারা দু’জন কে?’’ তারা বলল, ‘‘মুরারাহ ইবনে রাবী‘ আমরী ও হিলাল ইবনে উমাইয়্যাহ ওয়াক্বেফী।’’ এই দু’জন যাঁদের কথা তারা আমার কাছে বর্ণনা করল, তাঁরা সৎলোক ছিলেন এবং বদর যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন; তাঁদের মধ্যে আমার জন্য আদর্শ ছিল। যখন তারা সে দু’জন ব্যক্তির কথা বলল, তখন আমি আমার পূর্বেকার অবস্থার (সত্যের) উপর অনড় থেকে গেলাম (এবং আমার কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা দূরীভূত হল। যাতে আমি তাদের ভৎর্সনার কারণে পতিত হয়েছিলাম)। (এরপর) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লোকদেরকে পিছনে অবস্থানকারীদের মধ্যে আমাদের তিনজনের সাথে কথাবার্তা বলতে নিষেধ করে দিলেন।’
কা‘ব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘লোকেরা আমাদের থেকে পৃথক হয়ে গেল।’ অথবা বললেন, ‘লোকেরা আমাদের জন্য পরিবর্তন হয়ে গেল। পরিশেষে পৃথিবী আমার জন্য আমার অন্তরে অপরিচিত মনে হতে লাগল। যেন এটা সেই পৃথিবী নয়, যা আমার পরিচিত ছিল। এইভাবে আমরা ৫০টি রাত কাটালাম। আমার দুই সাথীরা তো নরম হয়ে ঘরের মধ্যে কান্নাকাটি আরম্ভ করে দিলেন। কিন্তু আমি দলের মধ্যে সবচেয়ে যুবক ও বলিষ্ঠ ছিলাম। ফলে আমি ঘর থেকে বের হয়ে মুসলিমদের সাথে নামাযে হাজির হতাম এবং বাজারসমূহে ঘোরাফেরা করতাম। কিন্তু কেউ আমার সঙ্গে কথা বলত না। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর খিদমতে হাজির হতাম এবং তিনি যখন নামাযের পর বসতেন, তখন তাঁকে সালাম দিতাম, আর আমি মনে মনে বলতাম যে, তিনি আমার সালামের জওয়াবে ঠোঁট নড়াচ্ছেন কি না? তারপর আমি তাঁর নিকটেই নামায পড়তাম এবং আড়চোখে তাঁকে দেখতাম। (দেখতাম,) যখন আমি নামাযে মনোযোগী হচ্ছি, তখন তিনি আমার দিকে তাকাচ্ছেন এবং যখন আমি তাঁর দিকে দৃষ্টি ফিরাচ্ছি, তখন তিনি আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন!
অবশেষে যখন আমার সাথে মুসলিমদের বিমুখতা দীর্ঘ হয়ে গেল, তখন একদিন আমি আবূ ক্বাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর বাগানে দেওয়াল ডিঙিয়ে (তাতে প্রবেশ করলাম।) সে (আবূ ক্বাতাদাহ) আমার চাচাতো ভাই এবং আমার সর্বাধিক প্রিয় লোক ছিল। আমি তাকে সালাম দিলাম। কিন্তু আল্লাহর কসম! সে আমাকে সালামের জওয়াব দিল না। আমি তাকে বললাম, ‘‘হে আবূ ক্বতাদাহ! আমি তোমাকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, তুমি কি জান যে, আমি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে ভালবাসি?’’ সে নিরুত্তর থাকল। আমি দ্বিতীয়বার কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। এবারেও সে চুপ থাকল। আমি তৃতীয়বার কসম দিয়ে প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করলে সে বলল, ‘‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই বেশী জানেন।’’ এ কথা শুনে আমার চক্ষুদ্বয় থেকে অশ্রু বইতে লাগল এবং যেভাবে গিয়েছিলাম, আমি সেইভাবেই দেওয়াল ডিঙিয়ে ফিরে এলাম।
এরই মধ্যে একদিন মদীনার বাজারে হাঁটছিলাম। এমন সময় শাম দেশের কৃষকদের মধ্যে একজন কৃষককে---যে মদীনায় খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করতে এসেছিল---বলতে শুনলাম, কে আমাকে কা‘ব ইবন মালেককে দেখিয়ে দেবে? লোকেরা আমার দিকে ইঙ্গিত করতে লাগল। ফলে সে ব্যক্তি আমার নিকটে এসে আমাকে ‘গাস্সান’-এর বাদশার একখানি পত্র দিল। আমি লিখা-পড়া জানতাম তাই আমি পত্রখানি পড়লাম। পত্রে লিখা ছিলঃ-
‘--- অতঃপর আমরা এই সংবাদ পেয়েছি যে, আপনার সঙ্গী (মুহাম্মাদ) আপনার প্রতি দুর্ব্যবহার করেছে। আল্লাহ আপনাকে লাঞ্ছিত ও বঞ্চিত অবস্থায় থাকার জন্য সৃষ্টি করেননি। আপনি আমাদের কাছে চলে আসুন; আমরা আপনার প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করব। পত্র পড়ে আমি বললাম, ‘‘এটাও অন্য এক বালা (পরীক্ষা)।’’ সুতরাং আমি ওটাকে চুলোয় ফেলে জ্বালিয়ে দিলাম। অতঃপর যখন ৫০ দিনের মধ্যে ৪০ দিন গত হয়ে গেল এবং অহী আসা বন্ধ ছিল এই অবস্থায় আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর একজন দূত আমার নিকট এসে বলল, ‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাকে তোমার স্ত্রী থেকে পৃথক থাকার আদেশ দিচ্ছেন!’’ আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘‘আমি কি তাকে তালাক দেব, না কী করব?’’ সে বলল, ‘‘তালাক নয় বরং তার নিকট থেকে আলাদা থাকবে, মোটেই ওর নিকটবর্তী হবে না।’’ আমার দুই সাথীর নিকটেও এই বার্তা পৌঁছে দিলেন। আমি আমার স্ত্রীকে বললাম, ‘‘তুমি পিত্রালয়ে চলে যাও এবং সেখানে অবস্থান কর---যে পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা এ ব্যাপারে কোন ফায়সালা না করেন।’’ (আমার সাথীদ্বয়ের মধ্যে একজন সাথী) হিলাল ইবন উমাইয়ার স্ত্রী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর কাছে এসে বলল, ‘‘ইয়া রসূলাল্লাহ! হিলাল ইবন উমাইয়াহ খুবই বৃদ্ধ মানুষ, তার কোন খাদেমও নেই, সেহেতু আমি যদি তার খিদমত করি, তবে আপনি কি এটা অপছন্দ করবেন?’’ তিনি বললেন, ‘‘না, (অর্থাৎ তুমি তার খিদমত করতে পার।) কিন্তু সে যেন তোমার (মিলন উদ্দেশ্যে) নিকটবর্তী না হয়।’’ (হিলালের স্ত্রী) বলল, ‘‘আল্লাহর কসম! (দুঃখের কারণে এ ব্যাপারে) তার কোন সক্রিয়তা নেই। আল্লাহর কসম! যখন থেকে এ ব্যাপার ঘটেছে তখন থেকে আজ পর্যন্ত সে সর্বদা কাঁদছে।’’
(কা‘ব বলেন,) ‘আমাকে আমার পরিবারের কিছু লোক বলল যে, ‘‘তুমিও যদি নিজ স্ত্রীর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নিকট অনুমতি চাইতে, (তাহলে তা তোমার পক্ষে ভাল হত।) তিনি হিলাল ইবন উমাইয়ার স্ত্রীকে তো তার খিদমত করার অনুমতি দিয়ে দিয়েছেন।’’ আমি বললাম, ‘‘এ ব্যাপারে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নিকট অনুমতি চাইব না। জানি না, যখন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নিকটে অনুমতি চাইব, তখন তিনি কী বলবেন। কারণ, আমি তো যুবক মানুষ।’’
এভাবে আরও দশদিন কেটে গেল। যখন থেকে লোকদেরকে আমাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে নিষেধ করা হয়েছে, তখন থেকে এ পর্যন্ত আমাদের পঞ্চাশ রাত পূর্ণ হয়ে গেল। আমি পঞ্চাশতম রাতে আমাদের এক ঘরের ছাদের উপর ফজরের নামায পড়লাম। নামায পড়ার পর আমি এমন অবস্থায় বসে আছি যার বর্ণনা আল্লাহ তা‘আলা আমাদের ব্যাপারে দিয়েছেন- আমার জীবন আমার জন্য দুর্বিষহ হয়ে পড়েছিল এবং পৃথিবী প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও আমার প্রতি সংকীর্ণ হয়ে উঠেছিল---এমন সময় আমি এক চিৎকারকারীর আওয়ায শুনতে পেলাম, সে সাল‘আ পাহাড়ের উপর চড়ে উচ্চৈঃস্বরে বলছে, ‘‘হে কা‘ব ইবনে মালেক! তুমি সুসংবাদ নাও!’’ আমি তখন (খুশীতে শুকরিয়ার) সিজদায় পড়ে গেলাম এবং বুঝতে পারলাম যে, (আল্লাহর পক্ষ থেকে) মুক্তি এসেছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের নামায পড়ার পর লোকদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, আল্লাহ আয্যা অজাল্ল্ আমাদের তওবা কবূল করে নিয়েছেন। সুতরাং লোকেরা আমাদেরকে সুসংবাদ দেওয়ার জন্য আসতে আরম্ভ করল। এক ব্যক্তি আমার দিকে অতি দ্রুত গতিতে ঘোড়া ছুটিয়ে এল। সে ছিল আসলাম (গোত্রের) এক ব্যক্তি। আমার দিকে সে দৌড়ে এল এবং পাহাড়ের উপর চড়ে (আওয়াজ দিল)। তার আওয়াজ ঘোড়ার চেয়েও দ্রুতগামী ছিল। সুতরাং যখন সে আমার কাছে এল, যার সুসংবাদের আওয়াজ আমি শুনেছিলাম, তখন আমি তার সুসংবাদ দানের বিনিময়ে আমার দেহ থেকে দু’খানি বস্ত্র খুলে তাকে পরিয়ে দিলাম। আল্লাহর কসম! সে সময় আমার কাছে এ দু’টি ছাড়া আর কিছু ছিল না। আর আমি নিজে দু’খানি কাপড় অস্থায়ীভাবে ধার নিয়ে পরিধান করলাম এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। পথে লোকেরা দলে দলে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমাকে মুবারকবাদ জানাতে লাগল এবং বলতে লাগল, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা তোমার তওবা কবুল করেছেন, তাই তোমাকে ধন্যবাদ।’’ অতঃপর আমি মসজিদে প্রবেশ করলাম। (দেখলাম,) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বসে আছেন এবং তাঁর চারপাশে লোকজন আছে। ত্বালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু উঠে ছুটে এসে আমার সঙ্গে মুসাফাহা করলেন এবং আমাকে মুবারকবাদ দিলেন। আল্লাহর কসম! মুহাজিরদের মধ্যে তিনি ছাড়া আর কেউ উঠলেন না।’ সুতরাং কা‘ব ত্বালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর এই ব্যবহার কখনো ভুলতেন না। কা‘ব বলেন, ‘যখন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে সালাম জানালাম, তখন তিনি তাঁর খুশীময় উজ্জ্বল চেহারা নিয়ে আমাকে বললেন, ‘‘তোমার মা তোমাকে যখন প্রসব করেছে, তখন থেকে তোমার জীবনের বিগত সর্বাধিক শুভদিনের তুমি সুসংবাদ নাও!’’ আমি বললাম, ‘‘হে আল্লাহর রাসূল! এই শুভসংবাদ আপনার পক্ষ থেকে, না কি আল্লাহর পক্ষ থেকে?’’ তিনি বললেন, ‘‘না, বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে।’’
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন খুশি হতেন, তখন তাঁর চেহারা উজ্জ্বল হয়ে যেত, মনে হত যেন তা একফালি চাঁদ এবং এতে আমরা তাঁর এ (খুশী হওয়ার) কথা বুঝতে পারতাম। অতঃপর যখন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সামনে বসলাম, তখন আমি বললাম, ‘‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার তওবা কবুল হওয়ার দরুন আমি আমার সমস্ত মাল আল্লাহ ও তাঁর রসুলের রাস্তায় সাদকাহ করে দিচ্ছি।’’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি কিছু মাল নিজের জন্য রাখ, তোমার জন্য তা উত্তম হবে।’’ আমি বললাম, ‘‘যাই হোক! আমি আমার খায়বারের (প্রাপ্ত) অংশ রেখে নিচ্ছি।’’ আর আমি এ কথাও বললাম যে, ‘‘হে আল্লাহর রাসূল! নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা আমাকে সত্যবাদিতার কারণে (এই বিপদ থেকে) উদ্ধার করলেন। আর এটাও আমার তওবার দাবী যে, যতদিন আমি বেঁচে থাকব, সর্বদা সত্য কথাই বলব।’’ সুতরাং আল্লাহর কসম! যখন থেকে আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সঙ্গে সত্য কথা বলার প্রতিজ্ঞা করলাম আমি জানি না যে, আল্লাহ তা‘আলা কোন মুসলিমকে সত্য কথার বলার প্রতিদান স্বরূপ উৎকৃষ্ট পুরস্কার দিয়েছেন। আল্লাহর কসম! আমি যেদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর কাছে এ কথা বলেছি, সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত আমি মিথ্যা কথা বলার ইচ্ছা করিনি। আর আশা করি যে, বাকী জীবনেও আল্লাহ তা‘আলা আমাকে এ থেকে নিরাপদ রাখবেন।’
কা‘ব বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা (আমাদের ব্যাপারে আয়াত) অবতীর্ণ করেছেন, (যার অর্থ), ‘‘আল্লাহ ক্ষমা করলেন নবীকে এবং মুহাজির ও আনসারদেরকে যারা সংকট মুহূর্তে নবীর অনুগামী হয়েছিল, এমন কি যখন তাদের মধ্যকার এক দলের অন্তর বাঁকা হওয়ার উপক্রম হয়েছিল, তারপর আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করলেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাদের প্রতি বড় স্নেহশীল, পরম করুণাময়। আর ঐ তিন ব্যক্তিকেও ক্ষমা করলেন, যাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ স্থগিত রাখা হয়েছিল; পরিশেষে পৃথিবী প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও তাদের প্রতি সংকীর্ণ হয়ে উঠেছিল এবং তাদের জীবন তাদের জন্য দুর্বিষহ হয়ে পড়েছিল আর তারা উপলব্ধি করেছিল যে, আল্লাহ ছাড়া আল্লাহর পাকড়াও হতে বাঁচার অন্য কোন আশ্রয়স্থল নেই। পরে তিনি তাদের প্রতি অনুগ্রহপরায়ণ হলেন, যাতে তারা তওবা করে। নিশ্চয় আল্লাহই হচ্ছেন তওবা গ্রহণকারী, পরম করুণাময়। হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সঙ্গী হও।’’ (সূরাহ তাওবাহ ১১৭-১১৯ আয়াত)
কা‘ব ইবন মালেক বলেন, ‘আল্লাহ আমাকে ইসলামের জন্য হিদায়াত করার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে সত্য কথা বলা অপেক্ষা বড় পুরস্কার আমার জীবনে আল্লাহ আমাকে দান করেননি। ভাগ্যে আমি তাঁকে মিথ্যা কথা বলিনি। নচেৎ তাদের মত আমিও ধ্বংস হয়ে যেতাম, যারা মিথ্যা বলেছিল। আল্লাহ তা‘আলা যখন অহী অবতীর্ণ করলেন, তখন নিকৃষ্টভাবে মিথ্যুকদের নিন্দা করলেন। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা তাদের ব্যাপারে বললেন, ‘‘যখন তোমরা তাদের কাছে ফিরে যাবে, তারা তখন অচিরেই তোমাদের সামনে শপথ করে বলবে, যেন তোমরা তাদেরকে উপেক্ষা কর; অতএব তোমরা তাদেরকে উপেক্ষা কর; তারা হচ্ছে অতিশয় ঘৃণ্য, আর তাদের ঠিকানা হচ্ছে জাহান্নাম, তা হল তাদের কৃতকর্মের প্রতিফল। তারা এ জন্য শপথ করবে যেন তোমরা তাদের প্রতি রাজী হয়ে যাও, অনন্তর যদি তোমরা তাদের প্রতি রাজী হয়ে যাও, তবে আল্লাহ তো এমন দুষ্কর্মকারী লোকদের প্রতি রাজী হবেন না।’’ (ঐ ৯৫-৯৬ আয়াত)
কা‘ব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘হে তিনজন! আমাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত পিছিয়ে রাখা হয়েছিল তাদের থেকে যাদের মিথ্যা কসম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (অজান্তে) গ্রহণ করলেন, তাদের বায়‘আত নিলেন এবং তাদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করলেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের ব্যাপারটা পিছিয়ে দিলেন। পরিশেষে মহান আল্লাহ সে ব্যাপারে ফায়সালা দিলেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘আর ঐ তিন ব্যক্তিকেও ক্ষমা করলেন, যাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’’ পিছনে রাখার যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে তার অর্থ যুদ্ধ থেকে আমাদের পিছনে থাকা নয়। বরং (এর অর্থ) আমাদের ব্যাপারটাকে ঐ লোকদের ব্যাপার থেকে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যারা তাঁর কাছে শপথ করেছিল এবং ওযর পেশ করেছিল। ফলে তিনি তা কবূল করে নিয়েছিলেন।’ (সহীহুল বুখারী ২৭৫৮, ২৯৪৭, ২৯৪৮, ২৯৪৯, ২৯৫০, ৩০৮৮, ৩৫৫৬, ৩৮৮৯, ৩৯৫১, ৪৪১৮, ৪৬৭৩, মুসলিম ২৭৬৯, তিরমিযী ৩১০২, নাসায়ী ৩৮২৪, ৩৮২৫, ৩৮২৬, আবূ দাউদ ২২০২, ৩৩১৭, ৩৩১৭, ৩৩২১, ৪৬০০, আহমাদ ১৫৩৪৩, ১৫৩৫৪, ২৬৬২৯, ২৬৬৩৪, ২৬৬৩৭)
আর একটি বর্ণনায় আছে, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাবূকের যুদ্ধে বৃহস্পতিবার বের হয়েছিলেন। আর তিনি বৃহস্পতিবার সফরে বের হওয়া পছন্দ করতেন। অন্য এক বর্ণনায় আছে, তিনি সফর থেকে কেবল দিনে চাশ্তের (সূর্য একটু উপরে উঠার) সময় আসতেন এবং এসে সর্বপ্রথম মসজিদে প্রবেশ করে দু’রাকাত নামায পড়তেন অতঃপর সেখানেই বসে যেতেন (এবং লোকের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলার পর বাসায় যেতেন।)’
/ পরিচ্ছেদঃ সবর (ধৈর্যের) বিবরণ

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱصۡبِرُواْ وَصَابِرُواْ ﴾ [ال عمران: ٢٠٠] অর্থাৎ “হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা ধৈর্য ধারণ কর এবং ধৈর্য ধারণে প্রতিযোগিতা কর।” (সূরা আলে ইমরান ২০০ আয়াত) তিনি আরও বলেন, ﴿وَلَنَبۡلُوَنَّكُم بِشَيۡءٖ مِّنَ ٱلۡخَوۡفِ وَٱلۡجُوعِ وَنَقۡصٖ مِّنَ ٱلۡأَمۡوَٰلِ وَٱلۡأَنفُسِ وَٱلثَّمَرَٰتِۗ وَبَشِّرِ ٱلصَّٰبِرِينَ ١٥٥﴾ [البقرة: ١٥٥] অর্থাৎ “নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে কিছু ভয় ও ক্ষুধা দ্বারা এবং কিছু ধনপ্রাণ এবং ফলের (ফসলের) নোকসান দ্বারা পরীক্ষা করব; আর তুমি ধৈর্যশীলদেরকে সুসংবাদ দাও।” (সূরা বাকারাহ ১৫৫ আয়াত) তিনি আরও বলেন, ﴿ إِنَّمَا يُوَفَّى ٱلصَّٰبِرُونَ أَجۡرَهُم بِغَيۡرِ حِسَابٖ﴾ [الزمر: ١٠] অর্থাৎ “ধৈর্যশীলদেরকে তো অপরিমিত পুরস্কার দেওয়া হবে।” (সূরা যুমার ১০ আয়াত) তিনি অন্যত্র বলেন, ﴿ وَلَمَن صَبَرَ وَغَفَرَ إِنَّ ذَٰلِكَ لَمِنۡ عَزۡمِ ٱلۡأُمُورِ ٤٣ ﴾ [الشورا: ٤٣] অর্থাৎ “অবশ্যই যে ধৈর্য ধারণ করে এবং ক্ষমা করে, নিশ্চয় তা দৃঢ়-সংকল্পের কাজ।” (সূরা শুরা ৪৩ আয়াত) ﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱسۡتَعِينُواْ بِٱلصَّبۡرِ وَٱلصَّلَوٰةِۚ إِنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلصَّٰبِرِينَ ١٥٣ ﴾ [البقرة: ١٥٣] অর্থাৎ “হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে থাকেন।” (সূরা বাকারাহ ১৫৩ আয়াত) তিনি আরো বলেন, ﴿ وَلَنَبۡلُوَنَّكُمۡ حَتَّىٰ نَعۡلَمَ ٱلۡمُجَٰهِدِينَ مِنكُمۡ وَٱلصَّٰبِرِينَ وَنَبۡلُوَاْ أَخۡبَارَكُمۡ ٣١ ﴾ [محمد: ٣١] অর্থাৎ “আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব যতক্ষণ না আমি তোমাদের মধ্যে মুজাহিদ ও ধৈর্যশীলদেরকে জেনে নই এবং আমি তোমাদের অবস্থা পরীক্ষা করি।” (সূরা মুহাম্মাদ ৩১ আয়াত) আয়াতসমূহে ধৈর্যের আদেশ এবং তার মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে তার সংখ্যা অনেক ও প্রসিদ্ধ।

২৬

সহিহ হাদিস
وعن أبي مالك الحارث بن عاصم الأشعري رضي الله عنه قال‏:‏ قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ‏:‏ ‏ "‏الطهور شطر الإيمان، والحمد لله تملأ الميزان، وسبحان الله والحمد لله تملآن -أو تملأ- ما بين السماوات والأرض، والصلاة نور، والصدقة برهان، والصبر ضياء، والقرآن حجة لك أو عليك‏.‏ كل الناس يغدو، فبائع نفسه فمعتقها، أو موبقها‏"‏ ‏(‏‏‏رواه مسلم‏‏‏)‏‏.‏

আবূ মালিক হারিস ইবনু ‘আসেম আশ‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘পবিত্রতা অর্ধেক ঈমান। আর ‘আলহামদু লিল্লাহ’ (কিয়ামতে নেকীর) দাঁড়িপাল্লাকে ভরে দেবে এবং ‘সুবহানাল্লাহ’ ও ‘আলহামদু লিল্লাহ’ আসমান ও যমীনের মধ্যস্থিত শূন্যতা পূর্ণ করে দেয়। নামায হচ্ছে জ্যোতি। সাদকাহ হচ্ছে প্রমাণ। ধৈর্য হল আলো। আর কুরআন তোমার স্বপক্ষে অথবা বিপক্ষে দলীল। প্রত্যেক ব্যক্তি সকাল সকাল সবকর্মে বের হয় এবং তার আত্মার ব্যবসা করে। অতঃপর সে তাকে (শাস্তি থেকে) মুক্ত করে অথবা তাকে (আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত ক’রে) বিনাশ করে।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ২২৩, মুসলিম ৩৫১৭, ইবনু মাজাহ ২৮০, আহমাদ ২২৩৯৫, ২২৪০১, দারেমী ৬৫৩

২৭

সহিহ হাদিস
وعن أبي سعيد سعد بن مالك بن سنان الخدري رضي الله عنهما‏:‏ ‏"‏أن ناساً من الأنصار سألوا رسول الله صلى الله عليه وسلم فأعطاهم، ثم سألوه فأعطاهم ، حتى نفد ما عنده، فقال لهم حين أنفق كل شيء بيده ‏:‏ ‏"‏ما يكن عندي من خير فلن أدخره عنكم ، ومن يستعفف يعفه الله، ومن يستغن يغنه الله، ومن يتصبر يصبره الله‏.‏ وما أعطي أحد عطاءً خيراً وأوسع من الصبر‏"‏ ‏(‏‏‏متفق عليه‏‏‏)‏ ‏.‏

আবূ সায়ীদ সা‘দ ইবনু মালিক ইবনু সিনান খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

কিছু আনসারী আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে কিছু চাইলেন। তিনি তাদেরকে দিলেন। পুনরায় তারা দাবী করল। ফলে তিনি (আবার) তাদেরকে দিলেন। এমনকি যা কিছু তাঁর কাছে ছিল তা সব নিঃশেষ হয়ে গেল। অতঃপর যখন তিনি সমস্ত জিনিস নিজ হাতে দান করে দিলেন, তখন তিনি বললেন, ‘‘আমার কাছে যা কিছু (মাল) আসে তা আমি তোমাদেরকে না দিয়ে কখনই জমা করে রাখব না। (কিন্তু তোমরা একটি কথা মনে রাখবে) যে ব্যক্তি চাওয়া থেকে পবিত্র থাকার চেষ্টা করবে, আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখবেন। আর যে ব্যক্তি (চাওয়া থেকে) অমুখাপেক্ষিতা অবলম্বন করবে, আল্লাহ তাকে অমুখাপেক্ষী করবেন। যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করার চেষ্টা করবে আল্লাহ তাকে ধৈর্য ধারণের ক্ষমতা প্রদান করবেন। আর কোন ব্যক্তিকে এমন কোন দান দেওয়া হয়নি, যা ধৈর্য অপেক্ষা উত্তম ও বিস্তর হতে পারে।[১]
[১] সহীহুল বুখারী ১৪৬৯, ৬৪৭০, মুসলিম ১০৫৩, তিরমিযী ২০২৪, নাসায়ী ২৫৮৮, ১৬৪৪, আহমাদ ১০৬০৬, ১০৬২২, ১০৬৬০, মুওয়াত্তা মালিক ১৮৮০, দারেমী ১৬৪৬

২৮

সহিহ হাদিস
وعن أبي يحيى صهيب بن سنان رضي الله عنه قال‏:‏ قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ‏ "‏عجبا لأمر المؤمن إن أمره كله له خير، وليس ذلك لأحد إلا للمؤمن ‏:‏ إن أصابته سراء شكر فكان خيراً له، وإن أصابته ضراء صبر فكان خيراً له‏"‏ ‏(‏‏‏رواه مسلم‏‏‏)‏‏.‏

আবূ ইয়াহয়া সুহাইব ইবনু সিনান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘মুমিনের ব্যাপারটাই আশ্চর্যজনক। তার প্রতিটি কাজে তার জন্য মঙ্গল রয়েছে। এটা মু’মিন ব্যতীত অন্য কারো জন্য নয়। সুতরাং তার সুখ এলে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। ফলে এটা তার জন্য মঙ্গলময় হয়। আর দুঃখ পৌঁছলে সে ধৈর্য ধারণ করে। ফলে এটাও তার জন্য মঙ্গলময় হয়।’’[১]
[১] মুসলিম ২৯৯৯, আহমাদ ১৮৪৫৫, ১৮৪৬০, ২৩৪০৬, ২৩৪১২, দারেমী ২৭৭৭

২৯

সহিহ হাদিস
وعن أنس رضي الله عنه قال‏:‏ لما ثقل النبي صلى الله عليه وسلم جعل يتغشاه الكرب فقالت فاطمة رضي الله عنها‏:‏ واكرب أبتاه‏.‏ فقال ‏:‏ ‏ "‏ليس على أبيك كرب بعد اليوم‏"‏ فلما مات قالت ‏:‏ يا أبتاه أجاب رباً دعاه، يا أبتاه جنة الفردوس مأواه، يا أبتاه إلى جبريل ننعاه، فلما دفن قالت ‏:‏ فاطمة رضي الله عنها‏:‏ أطابت أنفسكم أن تحثوا على رسول الله صلى الله عليه وسلم التراب‏؟‏ ‏(‏‏‏رواه البخاري‏‏‏)‏‏.‏

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশী অসুস্থ হয়ে পড়লেন এবং তাকে কষ্ট ঘিরে ফেলল, তখন (তাঁর কন্যা) ফাতিমা (রাঃ) বললেন, ‘হায়! আব্বাজানের কষ্ট!’ তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা শুনে বললেন, ‘‘আজকের দিনের পর তোমার পিতার কোনো কষ্ট হবে না।’’ অতঃপর যখন তিনি মারা গেলেন, তখন ফাতিমা (রাঃ) বললেন, ‘হায় আব্বাজান! প্রভু যখন তাঁকে আহ্বান করলেন, তখন তিনি তাঁর ডাকে সাড়া দিলেন। হায় আব্বাজান! জান্নাতুল ফিরদাউস তাঁর বাসস্থান। হায় আব্বাজান! আমরা জিবরীলকে আপনার মৃত্যু-সংবাদ দেব।’ অতঃপর যখন তাঁকে সমাধিস্থ করা হল, তখন ফাতিমা (রাঃ) (সাহাবাদেরকে) বললেন, ‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর মাটি ফেলতে কি তোমাদেরকে ভাল লাগল?[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৪৪৬২, নাসায়ী ১৮৪৪, ইবনু মাজাহ ১৬২৯, ১৬৩০, আহমাদ ১২০২৬, ১২৬১৯, ১২৭০৪, দারেমী ৮৭

৩২

সহিহ হাদিস
وعن أنس رضي الله عنه قال‏:‏ مر النبي صلى الله عليه وسلم بامرأة تبكي عند قبر فقال ‏:‏ ‏"‏اتقي الله واصبري‏"‏ فقالت ‏:‏ إليك عني ، فإنك لم تصب بمصيبتي ‍‍‍‏(‏ ولم تعرفه، فقيل لها ‏:‏ إنه النبي صلى الله عليه وسلم ، فأتت باب النبي صلى الله عليه وسلم، فلم تجد عنده بوابين، فقالت‏:‏ لم أعرفك، فقال‏:‏ ‏"‏إنما الصبر عند الصدمة الأولى‏"‏ ‏(‏‏‏متفق عليه‏‏‏)‏ ‏.‏

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি মহিলার পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। সে একটি কবরের পাশে বসে কাঁদছিল। তিনি বললেন, ‘‘তুমি আল্লাহকে ভয় কর এবং ধৈর্য ধারণ কর।’’ সে বলল, ‘আপনি আমার নিকট হতে দূরে সরে যান। কারণ, আমি যে বিপদে পড়েছি আপনি তাতে পড়েননি।’ সে তাঁকে চিনতে পারেনি (তাই সে চরম শোকে তাঁকে অসঙ্গত কথা বলে ফেলল)। অতঃপর তাকে বলা হল যে, ‘তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন।’ সুতরাং (এ কথা শুনে) সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দুয়ারের কাছে এল। সেখানে সে দারোয়ানদেরকে পেল না। অতঃপর সে (সরাসরি প্রবেশ করে) বলল, ‘আমি আপনাকে চিনতে পারিনি।’ তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘আঘাতের শুরুতে সবর করাটাই হল প্রকৃত সবর।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ১২৫২, ১২৮৩, ১৩০২, ৭১৫৪, মুসলিম ৯২৬, তিরমিযী ৯৮৮, নাসায়ী ১৮৬৯, আবূ দাউদ ৩১২৪, ইবনুূু মাজাহ ১৫৯৬, আহমাদ ১১৯০৮, ১২০৪৯, ১২৮৬০।

৩০

সহিহ হাদিস
وعن أبي زيد أسامة بن زيد بن حارثة مولى رسول الله صلى الله عليه وسلم وحبه وابن حبه، رضي الله عنهما، قال‏:‏ أرسلت بنت النبي صلى الله عليه وسلم ‏:‏ إن ابني قد احتضر فاشهدنا، فأرسل يقرئ السلام ويقول‏:‏ ‏"‏إن لله ما أخذ، وله ما أعطى، وكل شيء عنده بأجل مسمى، فلتصبر ولتحتسب‏"‏ فأرسلت إليه تقسم عليه ليأتينها‏.‏ فقام ومعه سعد بن عبادة، ومعاذ بن جبل، وأبي بن كعب، وزيد بن ثابت، ورجال رضي الله عنهم، فرفع إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم الصبي فأقعده في حجره ونفسه تقعقع، ففاضت عيناه، فقال سعد‏:‏ يا رسول الله ماهذا‏؟‏ فقال‏:‏ ‏"‏هذه رحمة جعلها الله تعالى في قلوب عباده‏"‏ وفى رواية ‏:‏ ‏"‏في قلوب من شاء من عباده وإنما يرحم الله من عباده الرحماء‏"‏ ‏(‏‏‏متفق عليه‏‏‏)‏ ‏.‏

আবূ যায়েদ উসামাহ ইবনু যাইদ ইবনু হারেসাহ থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্বাধীনকৃত দাস এবং তাঁর প্রিয়পাত্র তথা প্রিয়পাত্রের পুত্র থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কন্যা তাঁর নিকট সংবাদ পাঠালেন যে, ‘আমার ছেলের মর মর অবস্থা, তাই আপনি আমাদের এখানে আসুন।’ ‘তিনি সালাম দিয়ে সংবাদ পাঠালেন যে, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা যা নিয়েছেন, তা তাঁরই এবং যা দিয়েছেন তাও তাঁরই। আর তাঁর কাছে প্রতিটি জিনিসের এক নির্দিষ্ট সময় আছে।” অতএব সে যেন ধৈর্য ধারণ করে এবং সওয়াবের আশা রাখে।’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা পুনরায় কসম দিয়ে বলে পাঠালেন যে, তিনি যেন অবশ্যই আসেন।

ফলে তিনি সা‘দ ইবনু ‘উবাদাহ, মু‘আয ইবনু জাবাল, উবাই ইবনু কা‘ব, যাইদ ইবনু সাবেত (রাঃ) এবং আরো কিছু লোকের সঙ্গে সেখানে গেলেন। শিশুটিকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তুলে দেওয়া হল। তিনি তাকে নিজ কোলে বসালেন। সে সময় তার প্রাণ ধুকধুক্ করছিল। (তার এই অবস্থা দেখে) তাঁর চক্ষুদ্বয় থেকে অশ্রু প্রবাহিত হতে লাগল। সা‘দ (রাঃ) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! একি?’ তিনি বললেন, ‘‘এ হচ্ছে দয়া, যা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের অন্তরে রেখে দিয়েছেন।’’

অন্য একটি বর্ণনায় আছে, ‘‘যে সব বান্দার অন্তরে তিনি চান তাদের অন্তরে রেখে দিয়েছেন। আর আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে কেবল মাত্র দয়ালুদের প্রতই দয়া করেন।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ১২৮৪, ৫৬৫৫, ৬৬০২, ৬৬৫৫, ৭৩৭৭, ৭৪৪৮, মুসলিম ৯২৩, নাসায়ী ১৮৬৮, আবূ দাউদ ৩১২৫, আহমাদ ২১২৬৯, ২১২৮২, ২১২৯২

৩১

সহিহ হাদিস
وعن صهيب رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال‏:‏ ‏ "‏ كان ملك فيمن كان قبلكم، وكان له ساحرٌ، فلما كبر قال للملك ‏:‏ إني قد كبرت فابعث إلى غلاماً أعلمه السحر؛ فبعث إليه غلاماً يعلمه، وكان في طريقه إذا سلك راهبٌ، فقعد إليه وسمع كلامه فأعجبه، وكان إذا أتى الساحر مر بالراهب وقعد إليه، فإذا أتى الساحر ضربه، فشكا ذلك إلى الراهب فقال‏:‏ إذا خشيت الساحر فقال‏:‏ حبسني أهلي، وإذا خشيت أهلك فقل‏:‏ حبسني الساحر‏.‏ فبينما هو على ذلك إذ أتى على دابةٍ عظيمةٍ قد حبست الناس فقال‏:‏ اليوم أعلم آلساحر أفضل أم الراهب أفضل‏؟‏ فآخذ حجراً فقال‏:‏ اللهم إن كان أمر الراهب أحب إليك من أمر الساحر فاقتل هذه الدابة حتى يمضي الناس، فرماها فقتلها ومضى الناس، فأتى الراهب فأخبره‏.‏ فقال له الراهب‏:‏ أي بني أنت اليوم أفضل مني، قد بلغ أمرك ما أرى، وإنك ستبتلى، فإن ابتليت فلا تدل علي؛ وكان الغلام يبرئ الأكمه والأبرص، ويداوي الناس من سائر الأدواء‏.‏ فسمع جليس للملك كان قد عمي، فأتاه بهدايا كثيرةٍ فقال‏:‏ ما هاهُنا لك أجمع إن أنت شفيتنى، فقال‏:‏ إني لا أشفي أحداً إنما يشفى الله تعالى، فإن آمنت بالله دعوت الله فشفاك، فآمن بالله تعالى فشفاه الله تعالى، فأتى الملك فجلس إليه كما كان يجلس فقال له الملك‏:‏ من ردّ عليك بصرك‏؟‏ فقال‏:‏ ربي قال‏:‏ ولك رب غيري ‏؟‏‏(‏ قال‏:‏ ربي وربك الله، فأخذه فلم يزل يعذبه حتى دل على الغلام، فجئ بالغلام فقال له الملك‏:‏ أى بني قد بلغ من سحرك ما تبرئ الأكمه والأبرص وتفعل وتفعل فقال‏:‏ إني لا أشفي أحداً، إنما يشفي الله تعالى، فأخذه فلم يزل يعذبه حتى دل على الراهب؛ فجيء بالراهب فقيل له‏:‏ ارجع عن دينك، فأبى ، فدعا بالمنشار فوضع المنشار في مفرق رأسه، فشقه حتى وقع شقاه، ثم جيء بجليس الملك فقيل له‏:‏ ارجع عن دينك فأبى، فوضع المنشار في مفرق رأسه، فشقه به حتى وقع شقاه، ثم جيء بالغلام فقيل له ارجع عن دينك فأبى، فدفعه إلى نفر من أصحابه فقال‏:‏ اذهبوا به إلى جبل كذا وكذا فاصعدوا به الجبل فقال‏:‏ اللهم اكفنيهم بما شئت، فرجف بهم الجبل فسقطوا، وجاء يمشي إلى الملك، فقال له الملك‏:‏ ما فعل أصحابك‏؟‏ فقال‏:‏ كفانيهم الله تعالى، فدفعه إلى نفر من أصحابه فقال ‏:‏ اذهبوا به فاحملوه في قرقور وتوسطوا به البحر، فإن رجع عن دينه وإلا فاقذفوه، فذهبوا به فقال‏:‏ اللهم اكفنيهم بما شئت، فانكفأت بهم السفينة فغرقوا، وجاء يمشي إلى الملك‏.‏ فقال له الملك ‏:‏ ما فعل أصحابك‏؟‏ فقال‏:‏ كفانيهم الله تعالى‏.‏ فقال الملك إنك لست بقاتلي حتى تفعل ما آمرك به‏.‏ قال ‏:‏ ما هو‏؟‏ قال ‏:‏ تجمع الناس في صعيد واحد، وتصلبني على جذع ، ثم خذ سهماً من كنانتي، ثم ضع السهم في كبد القوس ثم قل‏:‏ بسم الله رب الغلام ثم ارمني، فإنك إن فعلت ذلك قتلتني ‏.‏ فجمع الناس في صعيد واحد، وصلبه على جذع، ثم أخذ سهما من كنانته، ثم وضع السهم في كبد القوس، ثم قال‏:‏ بسم الله رب الغلام، ثم رماه فوقع السهم في صدغه، فوضع يده في صدغه فمات‏.‏ فقال الناس آمنا برب الغلام، فأتى الملك فقيل له‏:‏ أرأيت ما كنت تحذر قد والله نزل بك حذرك‏.‏ قد آمن الناس‏.‏ فأمر بالأخدود بأفواه السكك فخدت وأضرم فيها النيران وقال‏:‏ من لم يرجع عن دينه فأقحموه فيها أو قيل له ‏:‏ اقتحم ، ففعلوا حتى جاءت امرأة ومعها صبى لها، فتقاعست ان تقع فيها، فقال لها الغلام‏:‏ يا أماه اصبري فإنك على الحق‏"‏ ‏(‏‏‏رواه مسلم‏‏‏)‏‏.‏

সুহাইব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের পূর্ব যুগে একজন বাদশাহ ছিল এবং তাঁর (উপদেষ্টা) এক জাদুকর ছিল। জাদুকর বার্ধক্যে উপনীত হলে বাদশাহকে বলল যে, ‘আমি বৃদ্ধ হয়ে গেলাম তাই আপনি আমার নিকট একটি বালক পাঠিয়ে দিন, যাতে আমি তাকে জাদু-বিদ্যা শিক্ষা দিতে পারি।’ ফলে বাদশাহ তার কাছে একটি বালক পাঠাতে আরম্ভ করল, যাকে সে জাদু শিক্ষা দিত। তার যাতায়াত পথে এক পাদ্রী বাস করত। যখনই বালকটি জাদুকরের কাছে যেত, তখনই পাদ্রীর নিকটে কিছুক্ষণের জন্য বসত, তাঁর কথা তাকে ভাল লাগত। ফলে সে যখনই জাদুকরের নিকট যেত, তখনই যাওয়ার সময় সে পাদ্রীর কাছে বসত। যখন সে পাদ্রীর কাছে আসত জাদুকর তাকে (তার বিলম্বের কারণে) মারত। ফলে সে পাদ্রীর নিকটে এর অভিযোগ করল। পাদ্রী বলল, ‘যখন তোমার ভয় হবে যে, জাদুকর তোমাকে মারধর করবে, তখন তুমি বলবে, আমার বাড়ির লোক আমাকে (কোন কাজে) আটকে দিয়েছিল। আর যখন বাড়ির লোকে মারবে বলে আশঙ্কা হবে, তখন তুমি বলবে যে, জাদুকর আমাকে (কোন কাজে) আটকে দিয়েছিল।’

সুতরাং সে এভাবেই দিনপাত করতে থাকল। একদিন বালকটি তার চলার পথে একটি বিরাট (হিংস্র) জন্তু দেখতে পেল। ঐ (জন্তু)টি লোকের পথ অবরোধ করে রেখেছিল। বালকটি (মনে মনে) বলল, ‘আজ আমি জানতে পারব যে, জাদুকর শ্রেষ্ঠ না পাদ্রী?’ অতঃপর সে একটি পাথর নিয়ে বলল, ‘হে আল্লাহ! যদি পাদ্রীর বিষয়টি তোমার নিকটে জাদুকরের বিষয় থেকে পছন্দনীয় হয়, তাহলে তুমি এই পাথর দ্বারা এই জন্তুটিকে মেরে ফেল। যাতে (রাস্তা নিরাপদ হয়) এবং লোকেরা চলাফিরা করতে পারে।’ (এই দো‘আ করে) সে জন্তুটাকে পাথর ছুঁড়ল এবং তাকে হত্যা করে দিল। এর পর লোকেরা চলাফিরা করতে লাগল। বালকটি পাদ্রীর নিকটে এসে ঘটনাটি বর্ণনা করল। পাদ্রী তাকে বলল, ‘বৎস! তুমি আজ আমার চেয়ে উত্তম। তোমার (ঈমান ও একীনের) ব্যাপার দেখে আমি অনুভব করছি যে, শীঘ্রই তোমাকে পরীক্ষায় ফেলা হবে। সুতরাং যখন তুমি পরীক্ষার সম্মুখীন হবে, তখন তুমি আমার রহস্য প্রকাশ করে দিও না।’

আর বালকটি (আল্লাহর ইচ্ছায়) জন্মান্ধত্ব ও কুষ্ঠরোগ ভাল করত এবং অন্যান্য সমস্ত রোগের চিকিৎসা করত। (এমতাবস্থায়) বাদশাহর জনৈক নিকটী অন্ধ হয়ে গেল। যখন সে বালকটির কথা শুনল, তখন প্রচুর উপঢৌকন নিয়ে তার কাছে এল এবং তাকে বলল যে, ‘তুমি যদি আমাকে ভাল করতে পার, তাহলে এ সমস্ত উপঢৌকন তোমার।’ সে বলল, ‘আমি তো কাউকে আরোগ্য দিতে পারি না, আল্লাহ তা‘আলাই আরোগ্য দান করে থাকেন। যদি তুমি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন কর, তাহলে আমি আল্লাহর কাছে দো‘আ করব, ফলে তিনি তোমাকে অন্ধত্বমুক্ত করবেন।’ সুতরাং সে তার প্রতি ঈমান আনল। ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে আরোগ্য দান করলেন। তারপর সে পূর্বেকার অভ্যাস অনুযায়ী বাদশাহর কাছে গিয়ে বসল। বাদশাহ তাকে বলল, ‘কে তোমাকে চোখ ফিরিয়ে দিল?’ সে বলল, ‘আমার প্রভু!’ সে বলল, ‘আমি ব্যতীত তোমার অন্য কেউ প্রভু আছে?’ সে বলল, ‘আমার প্রভু ও আপনার প্রভু হচ্ছেন আল্লাহ।’ বাদশাহ তাকে গ্রেপ্তার করল এবং তাকে ততক্ষণ পর্যন্ত শাস্তি দিতে থাকল, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে ঐ (চিকিৎসক) বালকের কথা বলে দিল। অতএব তাকে (বাদশার নিকটে) নিয়ে আসা হল। বাদশাহ তাকে বলল, ‘বৎস! তোমার কৃতিত্ব ঐ সীমা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে যে, তুমি জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে আরোগ্য দান করছ এবং আরো অনেক কিছু করছ।’ বালকটি বলল, ‘আমি কাউকে আরোগ্য দান করি না, আরোগ্য দানকারী হচ্ছেন একমাত্র মহান আল্লাহ।’ বাদশাহ তাকেও গ্রেপ্তার করে ততক্ষণ পর্যন্ত শাস্তি দিতে থাকল, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে ঐ পাদ্রীর কথা বলে দিল।

অতঃপর পাদ্রীকেও (তার কাছে) নিয়ে আসা হল। পাদ্রীকে বলা হল যে, ‘তুমি নিজের ধর্ম থেকে ফিরে যাও।’ কিন্তু সে অস্বীকার করল। ফলে তার মাথার সিঁথিতে করাত রাখা হল। করাতটি তাকে (চিরে) দ্বিখন্ডিত করে দিল; এমনকি তার দুই ধার (মাটিতে) পড়ে গেল। তারপর বাদশাহর নিকটীকে নিয়ে আসা হল এবং তাকে বলা হল যে, ‘তোমার ধর্ম পরিত্যাগ কর।’ কিন্তু সেও (বাদশার কথা) প্রত্যাখান করল। ফলে তার মাথার সিঁথিতে করাত রাখা হল। তা দিয়ে তাকে (চিরে) দ্বিখন্ডিত করে দিল; এমনকি তার দুই ধার (মাটিতে) পড়ে গেল। তারপর বালকটিকে নিয়ে আসা হল। অতঃপর তাকে বলা হল যে, ‘তুমি ধর্ম থেকে ফিরে এস।’ কিন্তু সেও অসম্মতি জানাল। সুতরাং বাদশাহ তাকে তার কিছু বিশেষ লোকের হাতে সঁপে দিয়ে বলল যে, ‘একে অমুক পাহাড়ে নিয়ে যাও, তার উপরে তাকে আরোহণ করাও। অতঃপর যখন তোমরা তার চূড়ায় পৌঁছবে (তখন তাকে ধর্ম-ত্যাগের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা কর) যদি সে নিজের ধর্ম থেকে ফিরে যায়, তাহলে ভাল। নচেৎ তাকে ওখান থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দাও।’ সুতরাং তারা তাকে নিয়ে গিয়ে পাহাড়ের উপর আরোহণ করল। বালকটি আল্লাহর কাছে দো‘আ করল, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার জন্য তাদের মুকাবেলায় যে ভাবেই চাও যথেষ্ট হয়ে যাও।’ সুতরাং পাহাড় কেঁপে উঠল এবং তারা সকলেই নীচে পড়ে গেল।

বালকটি হেঁটে বাদশার কাছে উপস্থিত হল। বাদশাহ তাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘তোমার সঙ্গীদের কি হল?’ বালকটি বলল, ‘আল্লাহ তা‘আলা তাদের মোকাবেলায় আমার জন্য যথেষ্ট হয়েছেন।’

বাদশাহ আবার তাকে তার কিছু বিশেষ লোকের হাতে সঁপে দিয়ে বলল যে, ‘একে নিয়ে তোমরা নৌকায় চড় এবং সমুদ্রের মধ্যস্থলে গিয়ে তাকে ধর্মের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা কর! যদি সে স্বধর্ম থেকে ফিরে আসে, তাহলে ঠিক আছে। নচেৎ তাকে সমুদ্রে নিক্ষেপ কর।’ সুতরাং তারা তাকে নিয়ে গেল। অতঃপর বালকটি (নৌকায় চড়ে) দো‘আ করল, ‘হে আল্লাহ! তুমি এদের মোকাবেলায় যেভাবে চাও আমার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাও।’ সুতরাং নৌকা উল্টে গেল এবং তারা সকলেই পানিতে ডুবে গেল।

তারপর বালকটি হেঁটে বাদশাহর কাছে এল। বাদশাহ বলল, ‘তোমার সঙ্গীদের কী হল?’ বালকটি বলল, ‘আল্লাহ তা‘আলা তাদের মোকাবেলায় আমার জন্য যথেষ্ট হয়ে গেছেন।’ পুনরায় বালকটি বাদশাহকে বলল যে, ‘আপনি আমাকে সে পর্যন্ত হত্যা করতে পারবেন না, যে পর্যন্ত না আপনি আমার নির্দেশিত পদ্ধতি অবলম্বন করবেন।’ বাদশাহ বলল, ‘তা কী?’ সে বলল, ‘আপনি একটি মাঠে লোকজন একত্রিত করুন এবং গাছের গুড়িতে আমাকে ঝুলিয়ে দিন। অতঃপর আমার তূণ থেকে একটি তীর নিয়ে তা ধনুকের মাঝে রাখুন, তারপর বলুন, ‘‘বিসমিল্লাহি রাব্বিল গুলাম!’’ (অর্থাৎ এই বালকের প্রতিপালক আল্লাহর নামে মারছি।) অতঃপর আমাকে তীর মারুন। এভাবে করলে আপনি আমাকে হত্যা করতে সফল হবেন।’

সুতরাং (বালকটির নির্দেশানুযায়ী) বাদশাহ একটি মাঠে লোকজন একত্রিত করল এবং গাছের গুঁড়িতে তাকে ঝুলিয়ে দিল। অতঃপর তার তূণ থেকে একটি তীর নিয়ে তা ধনুকের মাঝে রেখে বলল, ‘বিসমিল্লাহি রাব্বিল গুলাম!’ (অর্থাৎ এই বালকের প্রতিপালক আল্লাহর নামে মারছি।) অতঃপর তাকে তীর মারল। তীরটি তার কান ও মাথার মধ্যবর্তী স্থানে (কানমুতোয়) লাগল। বালকটি তার কানমুতোয় হাত রেখে মারা গেল। অতঃপর লোকেরা (বালকটির অলোকিকতা দেখে) বলল যে, ‘আমরা এ বালকটির প্রভুর উপর ঈমান আনলাম।’ বাদশার কাছে এসে বলা হল যে, ‘আপনি যার ভয় করছিলেন তাই ঘটে গেছে, লোকেরা (আল্লাহর প্রতি) ঈমান এনেছে।’ সুতরাং সে পথের দুয়ারে গর্ত খুঁড়ার আদেশ দিল। ফলে তা খুঁড়া হল এবং তাতে আগুন জ্বালানো হল। বাদশাহ আদেশ করল যে, ‘যে দ্বীন থেকে না ফিরবে তাকে এই আগুনে নিক্ষেপ কর’ অথবা তাকে বলা হল যে, ‘তুমি আগুনে প্রবেশ কর।’ তারা তাই করল। শেষ পর্যন্ত একটি স্ত্রীলোক এল। তার সঙ্গে তার একটি শিশু ছিল। সে তাতে পতিত হতে কুণ্ঠিত হলে তার বালকটি বলল, ‘আম্মা! তুমি সবর কর। কেননা, তুমি সত্যের উপরে আছ।’’[১]
[১] মুসলিম ৩০০৫, তিরমিযী ৩৩৪০, আহমাদ ২৩৪১৩

৩৩

সহিহ হাদিস
وعن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ‏:‏ ‏ "‏ يقول الله تعالى ‏:‏ ما لعبدي المؤمن عندي جزاء إذا قبضت صفيه من أهل الدنيا ثم احتسبه إلا الجنة‏"‏ ‏(‏‏‏رواه البخاري‏‏‏)‏‏.

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আমার মু’মিন বান্দার জন্য আমার নিকট জান্নাত ব্যতীত অন্য কোন পুরস্কার নেই, যখন আমি তার দুনিয়ার প্রিয়তম কাউকে কেড়ে নই এবং সে সওয়াবের নিয়তে সবর করে।’’[১]

৩৫

সহিহ হাদিস
وعن أنس رضي الله عنه قال‏:‏ سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول ‏:‏ ‏"‏إن لله عزوجل قال‏:‏ إذا ابتليت عبدي بحبيبتيه فصبر عوضته منهما الجنة‏"‏ ، ‏(‏‏‏رواه البخاري‏‏‏)‏‏.‏

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যখন আমি আমার বান্দাকে তার প্রিয়তম দুটি জিনিস দ্বারা (অর্থাৎ চক্ষু থেকে বঞ্চিত করে) পরীক্ষা করি এবং সে সবর করে আমি তাকে এ দু’টির বিনিময়ে জান্নাত প্রদান করব।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫৬৫৩, তিরমিযী ২৪০০, আহমাদ ১২০৫৯, ১২১৮৫, ১৩৬০৭

৩৮

সহিহ হাদিস
وعن أبي سعيد وأبي هريرة رضي الله عنهما عن النبي صلى الله عليه وسلم قال‏:‏ ‏"‏ما يصيب المسلم من نصب ولا وصب ولا هم ولا حزن ولا أذى ولا غم، حتى الشوكة يشاكها إلا كفر الله بها من خطاياه‏"‏ ‏(‏‏‏متفق عليه‏‏‏)‏ ‏‏.‏

আবূ সাঈদ (রাঃ) ও আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মুসলিমকে যে কোনো ক্লান্তি, অসুখ, চিন্তা, শোক এমন কি (তার পায়ে) কাঁটাও লাগে, আল্লাহ তা‘আলা এর মাধ্যমে তার গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫৬৪২, মুসলিম ২৫৭৩, তিরমিযী ৯৬৬, আহমাদ ৭৯৬৯, ৮২১৯, ৮৯৬৬, ১০৬২৪

৩৪

সহিহ হাদিস
وعن عائشة رضي الله عنها أنها سألت رسول الله صلى الله عليه وسلم عن الطاعون، فأخبرها أنه كان عذاباً يبعثه الله تعالى على من يشاء، فجعله الله تعالى رحمة للمؤمنين، فليس من عبد يقع في الطاعون فيمكث في بلده صابراً محتسباً يعلم أنه لا يصيبه إلا ما كتب الله له إلا كان له مثل أجر الشهيد‏"‏ ‏(‏‏‏رواه البخاري‏‏‏)‏‏.‏

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ

তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্লেগ রোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি তাঁকে বললেন যে, ‘‘এটা আযাব; আল্লাহ তা‘আলা যার প্রতি ইচ্ছা করেন এটা প্রেরণ করেন। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা একে মু’মিনদের জন্য রহমত বানিয়ে দিলেন। ফলে (এখন) যে ব্যক্তি প্লেগ রোগে আক্রান্ত হবে এবং সে নিজ দেশে ধৈর্য সহকারে নেকীর নিয়তে অবস্থান করবে, সে জানবে যে, তাকে তাইই পৌঁছবে যা আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য লিখে দিয়েছেন, তাহলে সে ব্যক্তির জন্য শহীদের মত পুরস্কার রয়েছে।” [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩৪৭৪, ৫৭৩৪, ৬৬১৯ আহমাদ ২৩৮৩৭, ২৪৬৮৬, ২৫৬০৮

৩৭

সহিহ হাদিস
وعن أبي عبد الرحمن عبد الله بن مسعود رضي الله عنه قال‏:‏ كأني انظر إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم يحكي نبياً من الأنبياء، صلوات الله وسلامه عليهم، ضربه قومه فأدموه وهو يمسح الدم عن وجهه، يقول ‏:‏ ‏ "‏اللهم اغفر لقومى فإنهم لا يعلمون‏"‏ ‏(‏‏‏متفق عليه‏‏‏)‏ ‏.‏

ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ‘আমি যেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নবীদের মধ্যে কোন এক নবীর ঘটনা বর্ণনা করতে দেখছি; (আলাইহিমুস সালাতু অসসালাম) যাঁকে তাঁর স্বজাতি প্রহার করে রক্তাক্ত করে দিয়েছে। আর তিনি নিজ চেহারা থেকে রক্ত পরিষ্কার করছেন আর বলছেন, ‘‘হে আল্লাহ! তুমি আমার জাতিকে ক্ষমা করে দাও। কেননা, তারা জ্ঞানহীন।”[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩৪৭৭, ৬৯২৯, মুসলিম ১৭৯২, ইবনু মাজাহ ৪০২৫, আহমাদ ৩৬০০, ৪০৪৭, ৪০৯৬, ৪১৯১, ৪৩১৯, ৪৩৫৩।

৩৬

সহিহ হাদিস
وعن عطاء بن أبي رباح قال‏:‏ قال لي ابن عباس رضي الله عنهما‏:‏ ألا أريك امرأة من أهل الجنة ‏"‏ فقلت‏:‏ بلى، قال‏:‏ هذه المرأة السوداء أتتت النبي صلى الله عليه وسلم فقالت ‏:‏ إني أصرع، و إني أتكشف، فادع الله تعالى لي قال‏:‏ ‏"‏إن شئت صبرت ولك الجنة، وإن شئت دعوت الله تعالى أن يعافيك‏"‏ فقالت‏:‏ أصبر، فقالت‏:‏ إني أتكشف ، فادع الله أن لا أتشكف ، فدمعا لها‏.‏ ‏(‏‏‏متفق عليه‏‏‏)‏ ‏.‏

আত্বা ইবনু আবী রাবাহ থেকে বর্ণিতঃ

একদা ইবনু আব্বাস (রাঃ) আমাকে বললেন, ‘আমি কি তোমাকে একটি জান্নাতী মহিলা দেখাব না!’ আমি বললাম, ‘হ্যাঁ!’ তিনি বললেন, ‘এই কৃষ্ণকায় মহিলাটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে এসে বলল যে, আমার মৃগী রোগ আছে, আর সে কারণে আমার দেহ থেকে কাপড় সরে যায়। সুতরাং আপনি আমার জন্য দো‘আ করুন।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি যদি চাও তাহলে সবর কর; এর বিনিময়ে তোমার জন্য জান্নাত রয়েছে। আর যদি চাও তাহলে আমি তোমার রোগ নিরাময়ের জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকটে দো‘আ করব।’’ স্ত্রীলোকটি বলল, ‘আমি সবর করব।’ অতঃপর সে বলল, ‘(রোগ উঠার সময়) আমার দেহ থেকে কাপড় সরে যায়, সুতরাং আপনি আল্লাহর কাছে দো‘আ করুন, যেন আমার দেহ থেকে কাপড় সরে না যায়।’ ফলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য দো‘আ করলেন।[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫৬৫৩, তিরমিযী ২৪০০, আহমাদ ১২০৫৯, ১২১৮৫, ১৩৬০৭।

৩৯

সহিহ হাদিস
وعن ابن مسعود رضي الله عنه قال‏:‏ دخلت على النبي صلى الله عليه وسلم وهو يوعك فقلت‏:‏ يارسول الله إنك توعك وعكاً شديداً قال‏:‏ ‏"‏أجل إني أوعك كما يوعك رجلان منكم‏"‏ قلت‏:‏ ذلك أن لك أجرين ‏؟‏ قال‏:‏ ‏"‏أجل ذلك كذلك ما من مسلم يصيبه أذى؛ شوكة فما فوقها إلا كفر الله بها سيئاته ، وحطت عنه ذنوبه كما تحط الشجرة ورقها‏"‏ ‏(‏‏‏متفق عليه‏‏‏)‏ ‏.‏

ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে উপস্থিত হলাম। সে সময় তিনি জ্বরে ভুগছিলেন। আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনার যে প্রচণ্ড জ্বর!’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ! তোমাদের দু’জনের সমান আমার জ্বর আসে।’’ আমি বললাম, ‘তার জন্যই কি আপনার পুরস্কারও দ্বিগুণ?’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ! ব্যাপার তা-ই। (অনুরূপ) যে কোন মুসলিমকে কোন কষ্ট পৌঁছে, কাঁটা লাগে অথবা তার চেয়েও কঠিন কষ্ট হয়, আল্লাহ তা‘আলা এর কারণে তার পাপসমূহকে মোচন করে দেন এবং তার পাপসমূহকে এভাবে ঝরিয়ে দেওয়া হয়; যেভাবে গাছ তার পাতা ঝরিয়ে দেয়।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫৬৪৮, ৫৬৪৭, ৫৬৬০, ৫৬৬১, ৫৬৬৭ মুসলিম ২৫৭১, আহমাদ ৩৬১১, ৪১৯৩, ৪৩৩৩, দারেমী ২৭৭১

৪০

সহিহ হাদিস
وعن أبي هريرة رضي الله عنه قال‏:‏ قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ من يرد الله به خيراً يصب منه‏"‏ ‏:‏ ‏(‏‏‏رواه البخاري‏‏‏)‏‏.‏

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকে দুঃখ-কষ্টে ফেলেন।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫৬৪৫, আহমাদ ৭১৯৪, মুওয়াত্তা মালেক ১৭৫২

৪১

সহিহ হাদিস
وعن أنس رضي الله عنه قال‏:‏ قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ‏:‏ ‏ "‏ لا يتمنين أحدكم الموت لضر أصابه، فإن كان لابد فاعلاً فليقل‏:‏ اللهم أحيني ما كانت الحياة خيراً لي وتوفني إذا كانت الوفاة خيراً لي‏"‏ ‏(‏‏‏متفق عليه‏‏‏)‏ ‏.‏

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে কেউ কোনো বিপদে পড়ার কারণে যেন মরার আকাঙ্ক্ষা না করে। আর যদি করতেই হয়, তাহলে সে যেন বলে, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে জীবিত রাখ; যে পর্যন্ত জীবিত থাকাটা আমার জন্য মঙ্গলময় হয়। আর আমাকে মরণ দাও; যদি মরণ আমার জন্য মঙ্গলময় হয়।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫৬৭১, ৬৩৫১, ৭২৩৩, মুসলিম ২৬৮০, তিরমিযী ৯৭১, নাসায়ী ১৮২০, ১৮২১, ১৮২২, আবূ দাউদ, ১৩০৮, ইবনু মাজাহ ৪২৬৫, আহমাদ ১১৫৬৮, ১১৬০৪, ১২২৫৩, ১২৩৪৪, ১২৬০৮।

৪২

সহিহ হাদিস
وعن أبي عبد الله خباب بن الأرت رضي الله عنه قال‏:‏ شكونا إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم وهو متوسد بردة له في ظل الكعبة، فقلنا ‏:‏ ألا تستنصر لنا ألا تدعو لنا‏؟‏ فقال‏:‏ قد كان من قبلكم يؤخذ الرجل فيحفر له في الأرض فيجعل فيها ثم يؤتى بالمنشار فيوضع على رأسه فيجعل نصفين، ويمشط بأمشاط من الحديد ما دون لحمه وعظمه، ما يصده ذلك عن دينه، والله ليتمن الله هذا الأمر حتى يسير الراكب من صنعاء إلى حضرموت لا يخاف إلا الله والذئب على غنمه، ولكنكم تستعجلون‏"‏ ‏(‏‏‏رواه البخاري‏‏‏)‏‏.‏

খাব্বাব ইবনু আরাত্ত্ রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিতঃ

আমরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে অভিযোগ করলাম (এমতাবস্থায়) যে, তিনি কা‘বা ঘরের ছায়ায় একটি চাদরে ঠেস দিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। আমরা বললাম যে, ‘আপনি কি আমাদের জন্য (আল্লাহর কাছে) সাহায্য চাইবেন না? আপনি কি আমাদের জন্য দো‘আ করবেন না?’ তিনি বললেন, ‘‘(তোমাদের জানা উচিত যে,) তোমাদের পূর্বেকার (মু’মিন) লোকেদের এই অবস্থা ছিল যে, একটি মানুষকে ধরে আনা হত, তার জন্য গর্ত খুঁড়ে তাকে তার মধ্যে (পুঁতে) রাখা হত। অতঃপর তার মাথার উপর করাত চালিয়ে তাকে দু’খণ্ড করে দেওয়া হত এবং দেহের গোশতের নিচে হাড় পর্যন্ত লোহার চিরুনী চালিয়ে শাস্তি দেওয়া হত। কিন্তু এই (কঠোর পরীক্ষা) তাকে তার দ্বীন থেকে ফেরাতে পারত না। আল্লাহর কসম! আল্লাহ নিশ্চয় এই ব্যাপারটিকে (দ্বীন ইসলামকে) এমন সুসম্পন্ন করবেন যে, একজন আরোহী সান‘আ’ থেকে হাযরামাউত একাই সফর করবে; কিন্তু সে (রাস্তায়) আল্লাহ এবং নিজ ছাগলের উপর নেকড়ের আক্রমণ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করবে না। কিন্তু তোমরা তাড়াহুড়ো করছ।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩৬১৬, ৫৬৫৬, ৫৬৬২, ৭৪৭০

৪৪

সহিহ হাদিস
وعن أنس رضي الله عنه قال‏:‏ قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ‏:‏‏"‏إذا أراد الله بعبده خيراً عجل له العقوبة في الدنيا، وإذا أراد الله بعبده الشر أمسك عنه بذنبه حتى يوافي به يوم القيامة‏"‏‏.‏ وقال النبي صلى الله عليه وسلم ‏:‏ ‏"‏إن عظم الجزاء مع عظم البلاء، وإن الله تعالى إذا أحب قوماً ابتلاهم، فمن رضي فله الرضى، ومن سخط فله السخط‏"‏ ‏(‏‏‏رواه الترمذي وقال ‏:‏ حديث حسن‏‏‏)‏‏.‏

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যখন আল্লাহ তাঁর বান্দার মঙ্গল চান, তখন তিনি তাকে তাড়াতাড়ি দুনিয়াতে (পাপের) শাস্তি দিয়ে দেন। আর যখন আল্লাহ তাঁর বান্দার অমঙ্গল চান, তখন তিনি তাকে (শাস্তিদানে) বিরত থাকেন। পরিশেষে কিয়ামতের দিন তাকে পুরোপুরি শাস্তি দেবেন।’’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, ‘‘বড় পরীক্ষার বড় প্রতিদান রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা যখন কোনো জাতিকে ভালবাসেন, তখন তার পরীক্ষা নেন। ফলে তাতে যে সন্তুষ্ট (ধৈর্য) প্রকাশ করবে, তার জন্য (আল্লাহর) সন্তুষ্টি রয়েছে। আর যে (আল্লাহর পরীক্ষায়) অসন্তুষ্ট হবে, তার জন্য রয়েছে আল্লাহর অসন্তুষ্টি।’’[১]
[১] মুসলিম ২৩৯৬, ইবনু মাজাহ ৪০৩১

৪৩

সহিহ হাদিস
وعن ابن مسعود رضي الله عنه قال ‏:‏ لما كان يوم حنين آثر رسول الله صلى الله عليه وسلم ناساً في القسمة، فأعطى الأقرع بن حابس مائة من الإبل، وأعطى عيينة بن حصن مثل ذلك، وأعطى ناساً من أشراف العرب وآثرهم يومئذ في القسمة‏.‏ فقال رجل‏:‏ والله إن هذه قسمة ما عدل فيها، وما أريد فيها وجه الله، فقلت ‏:‏ والله لأخبرن رسول الله صلى الله عليه وسلم ، فأتيته فأخبرته بما قال‏:‏ فتغير وجههه حتى كان كالصرف ‏.‏ ثم قال ‏ "‏ فمن يعدل إذا لم يعدل الله ورسوله‏؟‏ ثم قال‏:‏ يرحم الله موسى قد أوذي بأكثر من هذا فصبر‏"‏‏.‏ فقلت‏:‏ لا جرم لا أرفع إليه بعدها حديثاً‏.‏ ‏(‏‏‏متفق عليه‏‏‏)‏ ‏.‏

ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

হুনাইন যুদ্ধের গনিমতের মাল বণ্টনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু লোককে (তাদেরকে আকৃষ্ট করার জন্য) প্রাধান্য দিলেন (অর্থাৎ অন্য লোকের তুলনায় তাদেরকে বেশী মাল দিলেন)। সুতরাং তিনি আক্বরা‘ ইবনু হাবেসকে একশত উঁট দিলেন এবং ‘উয়াইনা ইবনু হিসনকেও তারই মত দিলেন। অনুরূপ আরবের আরো কিছু সম্ভ্রান্ত মানুষকেও সেদিন (মাল) বণ্টনে প্রাধান্য দিলেন। (এ দেখে) একটি লোক বলল, ‘আল্লাহর কসম! এই বণ্টনে ইনসাফ করা হয়নি এবং এতে আল্লাহর সন্তোষ লাভের ইচ্ছা রাখা হয়নি!’ আমি (ইবনু মাসউদ) বললাম, ‘আল্লাহর কসম! নিশ্চয় আমি এই সংবাদ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেব।’ অতএব আমি তাঁর কাছে এসে সেই সংবাদ দিলাম যা সে বলল। ফলে তাঁর চেহারা পরিবর্তিত হয়ে এমনকি লালবর্ণ হয়ে গেল। অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘যদি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ইনসাফ না করেন, তাহলে আর কে ইনসাফ করবে?’’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহ মূসাকে রহম করুন, তাঁকে এর চেয়ে বেশী কষ্ট দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি ধৈর্য ধারণ করেছিলেন।’’ অবশেষে আমি (মনে মনে) বললাম যে, ‘আমি এর পরে কোন কথা তাঁর কাছে পৌঁছাব না।’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩১৫০, ৩৪০৫, ৪৩৩৫, ৪৩৩৬, ৬০৫৯, ৬১০০, ৬২৯১, ৬৩৩৬, মুসলিম ১০৬২, আহমাদ ৩৫৯৭, ৩৭৫০, ৩৮৯২, ৪১৩৭

৪৬

সহিহ হাদিস
وعن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال‏:‏ ‏ "‏ليس الشديد بالصرعة، إنما الشديد الذى يملك نفسه عند الغضب‏"‏ ‏(‏‏‏متفق عليه‏‏‏)‏ ‏.‏

আবূ হুরাইরাহ থেকে বর্ণিতঃ

সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘(প্রকৃত) বলবান সে নয়, যে কুস্তিতে (অপরকে পরাজিত করে)। প্রকৃত বলবান (কুস্তিগীর) তো সেই ব্যক্তি, যে ক্রোধের সময় নিজেকে কাবুতে রাখতে পারে।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬১১৪, মুসলিম ২৬০৯, আহমাদ ৭১৭৮, ৭৫৮৪, ১০৩২৪, মুওয়াত্তা মালেক ১৬৮১

৪৭

সহিহ হাদিস
وعن سليمان بن صرد رضي الله عنه قال‏:‏ كنت جالساً مع النبي صلى الله عليه وسلم، ورجلان يستبان، وأحدهما قد احمر وجهه، وانتفخت أوداجه‏.‏ فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم‏:‏ ‏"‏ إني لأعلم كلمة لو قالها لذهب عنه ما يجد، لو قال‏:‏ أعوذ بالله من الشيطان الرجيم ذهب منه ما يجد‏"‏‏.‏ فقال له‏:‏ إن النبي صلى الله عليه وسلم قال‏:‏ ‏"‏ تعوذ بالله من الشيطان الرجيم‏"‏ ‏(‏‏‏متفق عليه‏‏‏)‏ ‏.‏

সুলাইমান ইবনু সুরাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একদা আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বসে ছিলাম। এমতাবস্থায় দু’জন লোক একে অপরকে গালি দিচ্ছিল। তার মধ্যে একজনের চেহারা (ক্রোধের চোটে) লালবর্ণ হয়ে গিয়েছিল এবং তার শিরাগুলো ফুলে উঠেছিল। (এ দেখে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘নিশ্চয় আমি এমন এক বাক্য জানি, যদি সে তা পড়ে, তাহলে তার ক্রোধ দূরীভূত হবে। যদি সে বলে ‘আউযু বিল্লাহি মিনাশ শায়ত্বানির রাজীম’ (অর্থাৎ আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাইছি), তাহলে তার উত্তেজনা ও ক্রোধ সমাপ্ত হবে।’’ লোকেরা তাকে বলল, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাও (অর্থাৎ উপরোক্ত বাক্যটি পড়)।’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩২৮২, ৬০৪৮, ৬১১৫, মুসলিম ২৬১০, আবূ দাউদ ৪৭৮১, আহমাদ ২৬৬৬৪

৪৫

সহিহ হাদিস
وعن أنس رضي الله عنه قال‏:‏ كان ابن لأبي طلحة رضي الله عنه يشتكي، فخرج أبو طلحة، فقبض الصبي، فلما رجع أبو طلحة قال‏:‏ ما فعل ابني‏؟‏ قالت أم سليم وهى أم الصبي ‏:‏ هو أسكن ما كان، فقربت إليه العشاء فتعشى، ثم أصاب منها، فلما فرغ قالت‏:‏ واروا الصبي، فلما أصبح أبو طلحة أتى رسول الله صلى الله عليه وسلم فأخبره، فقال‏:‏ ‏"‏أعرستم الليلة ‏؟‏‏"‏ قال‏:‏ نعم ، قال‏:‏ ‏"‏اللهم بارك لهما، فولدت غلاماً، فقال لي أبو طلحة‏:‏ احمله حتى تأتى به النبي صلى الله عليه وسلم، وبعث معه بتمرات، فقال‏:‏ ‏"‏أمعه شيء‏؟‏‏"‏ قال‏:‏ نعم، تمرات فأخذها النبي صلى الله عليه وسلم فمضغها ، ثم أخذها من فيه فجعلها في فيّ الصبي ، ثم حنكه وسماه عبد الله‏.‏ ‏(‏‏‏متفق عليه‏‏‏)‏ ‏.‏ وفى رواية لمسلم‏:‏ مات ابن لأبي طلحة بن أم سليم ، فقالت لأهلها لا تحدثوا أبا طلحة بابنه حتى أكون أنا أحدثه، فجاء فقربت إليه عشاءً فأكل وشرب، ثم تصنعت له أحسن ما كانت تصنع قبل ذلك، فوقع بها، فلما أن رأت أنه قد شبع وأصاب منها قالت‏:‏ يا أبا طلحة، أرأيت لو أن قوماً أعاروا عاريتهم أهل بيت فطلبوا عاريتهم، ألهم أن يمنعوهم‏؟‏ قال‏:‏ لا، فقالت ‏:‏ فاحتسب ابنك‏.‏ قال‏:‏ فغضب، ثم قال‏:‏ تركتني حتى إذا تلطخت أخبرتني بابني‏؟‏‏!‏ فانطلق حتى أتى رسول الله صلى الله عليه وسلم فأخبره بما كان ، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم‏.‏ ‏"‏بارك الله في ليلتكما‏"‏ قال‏:‏ فحملت، قال وكان رسول الله صلى الله عليه وسلم في سفر وهي معه، وكان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا أتى المدينة من سفر لا يطرقها طروقاً فدنوا من المدينة، فضربها المخاض، فاحتبس عليها أبو طلحة، وانطلق رسول الله صلى الله عليه وسلم قال‏:‏ يقول أبو طلحة‏:‏ إنك لتعلم يارب أنه يعجبني أن أخرج مع رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا خرج، وأدخل معه إذا دخل، وقد احتبست بما ترى، تقول أم سليم‏:‏ يا أبا طلحة ما أجد الذى كنت أجد، انطلق، فانطلقنا، وضربها المخاض حين قدما فولدت غلاماً‏.‏ فقالت لي أمي ‏:‏ يا أنس لا يرضعه أحد حتى تغدو به على رسول الله صلى الله عليه وسلم، فلما أصبح احتملته فانطلقت به إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم‏.‏ وذكر تمام الحديث‏.‏

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবূ ত্বালহা (রাঃ)-এর এক ছেলে অসুস্থ ছিল। আবূ ত্বালহা (রাঃ) যখন কোন কাজে বাইরে চলে গেলেন তখন ছেলেটি মারা গেল। যখন তিনি বাড়ি ফিরে এলেন তখন জিজ্ঞাসা করলেন যে, ‘আমার ছেলে কেমন আছে?’ ছেলেটির মা উম্মে সুলাইম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহ বললেন, ‘সে পূর্বের চেয়ে আরামে আছে।’ অতঃপর তিনি তাঁর সামনে রাতের খাবার হাজির করলেন। তিনি তা খেলেন। অতঃপর তার সঙ্গে যৌন-মিলন করলেন। আবূ ত্বালহা যখন এসব থেকে অবকাশপ্রাপ্ত হলেন, তখন স্ত্রী বললেন যে, ‘(আপনার বাইরে চলে যাওয়ার পর শিশুটি মারা গেছে।) সুতরাং শিশুটিকে এখন দাফন করুন।’ সকাল হলে আবূ ত্বালহা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে হাজির হয়ে সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন।

তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন যে, ‘‘তোমরা কি আজ রাতে মিলন করেছ?’’ তিনি বললেন, ‘জী হ্যাঁ।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘হে আল্লাহ! তুমি এ দুজনের জন্য বরকত দাও?’’ অতএব (তাঁর দো‘আর ফলে নির্দিষ্ট সময়ে উম্মে সুলাইম) একটি পুত্র সন্তান প্রসব করলেন। (আনাস বলেন,) আমাকে আবূ ত্বালহা বললেন, ‘তুমি একে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে নিয়ে যাও।’ আর তার সঙ্গে কিছু খেজুরও পাঠালেন। তিনি বললেন, ‘তার সঙ্গে কি কিছু আছে?’ আনাস (রাঃ) বললেন, ‘জী হ্যাঁ! কিছু খেজুর আছে।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেগুলো নিলেন এবং তা চিবালেন। অতঃপর তাঁর মুখ থেকে বের করে শিশুটির মুখে রেখে দিলেন। আর তার নাম ‘আব্দুল্লাহ’ রাখলেন। (বুখারী-মুসলিম)
বুখারীর আর এক বর্ণনায় আছে, ইবনু উয়াইনাহ বলেন যে, জনৈক আনসারী বলেছেন, ‘আমি এই আব্দুল্লাহর নয়টি ছেলে দেখেছি, তারা সকলেই কুরআনের হাফেয ছিলেন।’

মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে যে, আবূ ত্বালহার একটি ছেলে, যে উম্মে সুলাইমের গর্ভ থেকে হয়েছিল, সে মারা গেল। সুতরাং তিনি (উম্মে সুলাইম) তাঁর বাড়ির লোককে বললেন, ‘তোমরা আবূ ত্বালহাকে তাঁর পুত্রের ব্যাপারে কিছু বলো না। আমি স্বয়ং তাঁকে এ কথা বলব।’ সুতরাং তিনি এলেন এবং (স্ত্রী তাঁর সামনে রাতের খাবার রাখলেন। তিনি পানাহার করলেন। এ দিকে স্ত্রী আগের তুলনায় বেশী সাজসজ্জা করে তাঁর কাছে এলেন এবং তিনি তাঁর সঙ্গে মিলন করলেন। অতঃপর তিনি যখন দেখলেন যে, তিনি (স্বামী) খুবই পরিতৃপ্ত হয়ে গেছেন এবং যৌন-সম্ভোগ করে নিয়েছেন, তখন বললেন, ‘হে আবূ ত্বালহা! আচ্ছা আপনি বলুন! যদি কোন সম্প্রদায় কোন পরিবারকে কোন জিনিস (সাময়িকভাবে) ধার দেয়, অতঃপর তারা তাদের ধার দেওয়া জিনিস ফিরিয়ে নিতে চায়, তাহলে কি তাদের জন্য তা না দেওয়ার অধিকার আছে?’ তিনি জবাব দিলেন, ‘না।’ অতঃপর স্ত্রী বললেন, ‘আপনি নিজ পুত্রের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে প্রতিদান পাওয়ার আশা রাখুন। (অর্থাৎ আপনার পুত্রও আল্লাহর দেওয়া আমানত ছিল, তিনি তাঁর আমানত ফিরিয়ে নিয়েছেন।)’

আনাস (রাঃ) বলেন, (এ কথা শুনে) তিনি রাগান্বিত হলেন। অতঃপর তিনি বললেন, ‘তুমি আমাকে কিছু না বলে এমনি ছেড়ে রাখলে, অবশেষে আমি সহবাস করে যখন অপবিত্র হয়ে গেলাম, তখন তুমি আমার ছেলের মৃত্যুর সংবাদ দিলে!’ এরপর তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে হাজির হয়ে যা কিছু ঘটেছে তা বর্ণনা করলেন। তা শুনে তিনি দো‘আ করলেন, ‘হে আল্লাহ! তাদের দু’জনের জন্য এই রাতে বরকত দাও।’ সুতরাং (এই দো‘আর ফলে) তিনি গর্ভবতী হলেন।

আনাস (রাঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সফরে ছিলেন। উম্মে সুলাইম ও (তাঁর স্বামী আবূ ত্বালহা) তাঁর সঙ্গে ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অভ্যাস ছিল যে, যখন তিনি সফর থেকে মদ্বীনায় আসতেন তখন তিনি রাতে আসতেন না। যখন এই কাফেলা মদ্বীনার নিকটবর্তী হল, তখন উম্মে সুলাইমের প্রসব-বেদনা উঠল। সুতরাং আবূ ত্বালহা তাঁর খিদমতের জন্য থেমে গেলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মদ্বীনায়) চলে গেলেন।’ আনাস বলেন, ‘আবূ ত্বালহা বললেন, ‘‘হে প্রভু! তুমি জান যে, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদ্বীনা থেকে বাইরে যান, তখন আমি তাঁর সঙ্গে যেতে ভালবাসি এবং তিনি মদ্বীনায় প্রবেশ করেন, তখন আমি তাঁর সঙ্গে প্রবেশ করতে ভালবাসি এবং তুমি দেখছ যে, (আমার স্ত্রীর) জন্য আমি থেমে গেলাম।’’

উম্মে সুলাইম বললেন, ‘হে আবূ ত্বালহা! আমি পূর্বে যে বেদনা অনুভব করছিলাম এখন তা অনুভব করছি না, তাই চলুন।’ সুতরাং আমরা সেখান থেকে চলতে আরম্ভ করলাম। যখন তাঁরা দু’জনে মদ্বীনা পৌঁছলেন, তখন আবার প্রসব বেদনা শুরু হল। অবশেষে তিনি একটি পুত্র সন্তান প্রসব করলেন। আমার মা আমাকে বললেন, ‘যে পর্যন্ত তুমি একে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে না নিয়ে যাবে, সে পর্যন্ত কেউ যেন একে দুধ পান না করায়।’ ফলে আমি সকাল হতেই তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমত নিয়ে গেলাম। অতঃপর আনাস (রাঃ) বাকী হাদীস বর্ণনা করলেন।[১]
[১] সহীহুল বুখারী ১৩০১, ১৫০২, ৫৪৭০, ৫৫৪২, ৫৮২৪, মুসলিম ২১১৯, ২১৪৪, আবূ দাউদ ২৫৬৩, ৪৯৫১, আহমাদ ১১৬১৭, ১২৩৩৯, ১২৩৮৪, ১২৪৫৪, ১২৫৪৬

৫০

সহিহ হাদিস
وعن أبي هريرة رضي الله عنه قال‏:‏ قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ‏:‏ ‏ "‏ ما يزال البلاء بالمؤمن والمؤمنة في نفسه وولده ة وماله حتى يلقى الله تعالى وما عليه خطيئة‏"‏ ‏(‏‏‏رواه الترمذي وقال حديث حسن صحيح‏‏‏)‏ ‏.‏

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘মু’মিন পুরুষ ও নারীর জান, সন্তান-সন্ততি ও তার ধনে (বিপদ-আপদ দ্বারা) পরীক্ষা হতে থাকে, পরিশেষে সে আল্লাহ তা‘আলার সঙ্গে নিষ্পাপ হয়ে সাক্ষাৎ করবে।’’[১]
[১] (তিরমিযী, হাসান সহীহ) তিরমিযী ২৩৯৯, আহমাদ ৭৭৯৯, ২৭২১৯

৪৯

সহিহ হাদিস
وعن أبي هريرة رضي الله عنه ، أن رجلاً قال للنبي صلى الله عليه وسلم‏:‏ أوصني، قال‏:‏ ‏"‏لا تغضب‏"‏ فردد مراراً، قال‏:‏ ‏"‏ لاتغضب‏"‏ رواه البخاري‏.‏

আবূ হুরাইরাহ থেকে বর্ণিতঃ

একটি লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সমীপে আবেদন জানাল যে, আপনি আমাকে অসিয়ত করুন। তিনি বললেন, ‘‘তুমি রাগান্বিত হয়ো না।’’ লোকটি বার বার এই আবেদন জানাল। তিনি (প্রত্যেক বারেই) তাকে এই অসিয়ত করলেন যে, ‘‘তুমি রাগান্বিত হয়ো না।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬১১৬, তিরমিযী ২০২০, আহমাদ ৯৬৮২, ২৭৩১১

৪৮

হাসান হাদিস
وعن معاذ بن أنس رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال‏:‏ ‏ "‏ من كظم غيظاً ، وهو قادر على أن ينفذه، دعاه الله سبحانه وتعالى على رؤوس الخلائق يوم القيامة حتى يخيره من الحور العين ما شاء‏"‏ ‏(‏‏‏رواه أبو داود، والترمذي وقال‏:‏ حديث حسن‏‏‏)‏‏.‏

মু‘আয ইবনু আনাস থেকে বর্ণিতঃ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি ক্রোধ সংবরণ করবে অথচ সে তা বাস্তবায়িত করার ক্ষমতা রাখে। আল্লাহ তা‘আলা তাকে কিয়ামতের দিন সমস্ত সৃষ্টির সামনে ডেকে এখতিয়ার দিবেন যে, সে যে কোন হুর নিজের জন্য পছন্দ করে নিক।’’[১]
[১] (ইমাম তিরমিযী বলেন, এই হাদীসটি হাসান।) তিরমিযী ২০২১, ২৪৯৩, আবূ দাউদ ৪৭৭৭, ইবনু মাজাহ ৪১৮৬, আহমাদ ১৫১৯২, ১৫২১০

৫৩

সহিহ হাদিস
وعن أبي يحيى أسيد بن حضير رضي الله عنه أن رجلاً من الأنصار قال‏:‏ يا رسول الله ألا تستعملني كما استعملت فلاناً فقال‏:‏ ‏ "‏إنكم ستلقون بعدي أثرة، فاصبروا حتى تلقوني على الحوض‏"‏ ‏(‏‏‏متفق عليه‏‏‏)‏ ‏.‏

আবূ ইয়াহইয়্যা উসাইদ ইবনু হুদাইর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একজন আনসারী বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আমাকে কোনো সরকারী পদ নিয়োগ দেবেন, যেমন অমুককে দিয়েছেন?’ তিনি বললেন, ‘‘তোমরা আমার (মৃত্যুর) পর (অবৈধভাবে) অগ্রাধিকার দেওয়ার কাজ দেখবে! সুতরাং ধৈর্য ধারণ করবে; যে অবধি তোমরা হাওযের কাছে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ না করবে।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩৭৯২, ৭০৫৭, মুসলিম ১৮৪৫, তিরমিযী ২১৮৯, নাসায়ী ৫৩৮৩, আহমাদ ১৮৬১৩, ১৮৬১৫

৫২

সহিহ হাদিস
وعن ابن مسعود رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال‏:‏ ‏ "‏ إنها ستكون بعدي أثرة وأمور تنكرونها ‏!‏ قالوا‏:‏ يا رسول الله فما تأمرنا‏؟‏ قال‏:‏ تؤدون الحق الذى عليكم ، وتسألون الله الذى لكم‏"‏ ‏(‏‏‏متفق عليه‏‏‏)‏ ‏.‏

ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমার পরে (শাসকগোষ্ঠী দ্বারা অবৈধভাবে) প্রাধান্য দেওয়ার কাজ হবে এবং এমন অনেক কাজ হবে যেগুলোকে তোমরা মন্দ জানবে।’’ সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি (সেই অবস্থায়) আমাদেরকে কী আদেশ দিচ্ছেন?’ তিনি বললেন, ‘‘যে অধিকার আদায় করার দায়িত্ব তোমাদের আছে, তা তোমরা আদায় করবে এবং তোমাদের যে অধিকার তা তোমরা আল্লাহর কাছে চেয়ে নেবে।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩৬০৩, ৭০৫২, মুসলিম ১৮৪৩, তিরমিযী ২১৯০, আহমাদ ৩৬৩৩, ৪০৫৬, ৪১১৬, ২৭২০৭,

৫১

সহিহ হাদিস
وعن ابن عباس رضي الله عنهما قال‏:‏ قدم عيينة بن حصن فنزل على ابن أخيه الحر بن قيس، وكان من النفر الذين يدنيهم عمر رضي الله عنه، وكان القراء أصحاب مجلس عمر رضي الله عنه ومشاورته كهولاً كانوا أو شباناً، فقال عيينة لابن أخيه ‏:‏ يا ابن أخي لك وجه عند هذا الأمير فاستأذن لي عليه، فاستأذن فأذن عمر‏.‏ فلما دخل قال‏:‏ هِىَ يا ابن الخطاب، فوالله ما تعطينا الجزل ولا تحكم فينا بالعدل، فغضب عمر رضي الله عنه حتى همّ أن يوقع به، فقال له الحر‏:‏ يا أمير المؤمنين إن الله تعالى قال لنبيه صلى الله عليه وسلم‏:‏ ‏{‏خذ العفو وأمر بالعرف وأعرض عن الجاهلين‏}‏ ‏(‏‏‏الأعراف ‏:‏198‏‏‏)‏‏.‏ وإن هذا من الجاهلين، والله ما جاوزها عمر حين تلاها، وكان وقافاً عند كتاب الله تعالى‏.‏ ‏(‏‏‏رواه البخاري‏‏‏)‏ ‏.‏

ইবনু আব্বাস থেকে বর্ণিতঃ

উয়াইনাহ ইবনু হিসন এলেন এবং তাঁর ভাতিজা হুর্র ইবনু কাইসের কাছে অবস্থান করলেন। এই (হুর্র) উমার (রাঃ)-এর খেলাফত কালে ঐ লোকগুলির মধ্যে একজন ছিলেন যাদেরকে তিনি তাঁর নিকটে রাখতেন। আর কুরআন বিশারদগণ বয়স্ক হন অথবা যুবক দল তাঁরা উমার (রাঃ)-এর সভাষদ ও পরামর্শদাতা ছিলেন। উয়াইনাহ তাঁর ভাতিজাকে বললেন, ‘হে আমার ভ্রাতুষ্পুত্র! এই খলীফার কাছে তোমার বিশেষ সম্মান রয়েছে। তাই তুমি আমার জন্যে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার অনুমতি চাও।’ ফলে তিনি অনুমতি চাইলেন। সুতরাং উমার তাকে অনুমতি দিলেন। অতঃপর যখন উয়াইনাহ ভিতরে প্রবেশ করলেন, তখন উমার ((রাঃ))কে বললেন, ‘হে ইবনু খাত্ত্বাব! আল্লাহর কসম! আপনি আমাদেরকে পর্যাপ্ত দান দেন না এবং আমাদের মধ্যে ন্যায় বিচার করেন না!’

(এ কথা শুনে) উমার (রাঃ) রাগান্বিত হলেন। এমনকি তাকে মারতে উদ্যত হলেন। তখন হুর্র তাঁকে বললেন, ‘হে আমীরুল মু’মেনীন! আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীকে বলেন, ‘‘তুমি ক্ষমাশীলতার পথ অবলম্বন কর। ভাল কাজের আদেশ প্রদান কর এবং মূর্খদিগকে পরিহার করে চল।’’ সূরা আল আরাফ ১৯৮ আয়াত) আর এ এক মূর্খ।’ আল্লাহর কসম! যখন তিনি (হুর্র) এই আয়াত পাঠ করলেন, তখন উমার (রাঃ) একটুকুও আগে বাড়লেন না। আর তিনি আল্লাহর কিতাবের কাছে (অর্থাৎ তাঁর নির্দেশ শুনে) সত্বর থেমে যেতেন।[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৪৬৪২, ৭২৮৬।

৫৪

সহিহ হাদিস
وعن أبي إبراهيم عبد الله بن أبي أوفى رضي الله عنهما أن رسول الله صلى الله عليه وسلم في بعض أيامه التي لقي فيها العدو، انتظر حتى إذا مالت الشمس قام فيهم فقال‏:‏ ‏"‏ يا أيها الناس لا تتمنوا لقاء العدو، واسألوا الله العافية، فإذا لقيتموهم فاصبروا، واعلموا أن الجنة تحت ظلال السيوف‏"‏ ثم قال النبي صلى الله عليه وسلم ‏:‏ ‏"‏ اللهم منزل الكتاب ومجري السحاب ، وهازم الأحزاب، اهزمهم وانصرنا عليهم‏"‏ ‏(‏‏‏متفق عليه‏‏‏)‏ وبالله التوفيق‏.‏

আবূ ইব্রাহীম আব্দুল্লাহ ইবনু আবী আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

শত্রুর সাথে মোকাবেলার কোন এক দিনে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপেক্ষা করলেন (অর্থাৎ যুদ্ধ করতে বিলম্ব করলেন)। অবশেষে যখন সূর্য ঢলে গেল, তখন তিনি লোকদের মধ্যে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘হে লোকেরা! তোমরা শত্রুর সঙ্গে সাক্ষাৎ (যুদ্ধ) কামনা করো না এবং আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা চাও। কিন্তু যখন শত্রুর সামনা-সামনি হয়ে যাবে, তখন তোমরা দৃঢ়তার সাথে যুদ্ধ কর! আর জেনে রেখো যে, জান্নাত আছে তরবারির ছায়ার নীচে।’’ অতঃপর তিনি দো‘আ করে বললেন, ‘‘হে কিতাব অবতীর্ণকারী, মেঘ সঞ্চালনকারী এবং শত্রুসকলকে পরাজিতকারী! তুমি তাদেরকে পরাজিত কর এবং তাদের মুকাবিলায় আমাদেরকে সাহায্য কর।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৮১৯, ২৮৩৩, ২৯৩৩, ২৯৬৬, ৩০২৪, ৩০২৬, ৪১১৫, ৬৩৯২, ৭২৩৭, ৭৪৮৯, মুসলিম ১৭৪১, ১৭৪২, তিরমিযী ১৬৭৮, আবূ দাউদ ২৬৩১, ইবনু মাজাহ ২৭৯৬, আহমাদ ১৮৬২৮, ১৮৬৫০, ১৮৬৬০, ১৮৯১৭।
/ পরিচ্ছেদঃ সত্যবাদিতার গুরুত্ব

৫৫

সহিহ হাদিস
فالأول عن ابن مسعود رضي الله عن النبي صلى الله عليه وسلم قال‏:‏ ‏ "‏إن الصدق يهدي إلى البر وإن البر يهدي إلى الجنة، وإن الرجل ليصدق حتى يكتب عند الله صديقاً، وإن الكذب يهدي إلى الفجور، وإن الفجور يهدي إلى النار، وإن الرجل ليكذب حتى يكتب عند الله كذاباً‏"‏ ‏(‏‏‏متفق عليه‏‏‏)‏ ‏.‏

ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় সত্য পুণ্যের পথ দেখায় এবং পুণ্য জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। একজন মানুষ (অবিরত) সত্য বলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত আল্লাহর কাছে তাকে খুব সত্যবাদী বলে লিখা হয়। পক্ষান্তরে মিথ্যা পাপের পথ দেখায় এবং পাপ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। একজন মানুষ (সর্বদা) মিথ্যা বলতে থাকে, শেষ অবধি আল্লাহর নিকটে তাকে মহা মিথ্যাবাদী বলে লিপিবদ্ধ করা হয়।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬০৯৪, মুসলিম ২৬০৬, ২৬০৭, তিরমিযী ১৯৭১, আবূ দাউদ ৪৯৮৯, ইবনু মাজাহ ৪৬, আহমাদ ৩৬৩১, ৩৭১৯, ৩৮৩৫, মুওয়াত্তা মালিক ১৮৫৯, দারেমী ২৭১৫

৫৬

সহিহ হাদিস
الثانى‏:‏ عن أبي محمد الحسن بن علي بن أبي طالب، رضي الله عنهما ، قال ‏:‏ حفظت من رسول الله، صلى الله عليه وسلم ‏:‏ ‏ "‏دع ما يريبك إلى ما لا يريبك؛ فإن الصدق طمأنينة، والكذب ريبةٌ‏"‏ ‏(‏‏‏رواه الترمذي وقال حديث حسن صحيح‏‏‏)‏ ‏.‏

আবূ মুহাম্মাদ হাসান ইবনু আলী ইবনু আবী ত্বালেব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এই শব্দগুলি স্মরণ রেখেছি যে, ‘‘তুমি ঐ জিনিস পরিত্যাগ কর, যে জিনিস তোমাকে সন্দেহে ফেলে এবং তা গ্রহণ কর যাতে তোমার সন্দেহ নেই। কেননা, সত্য প্রশান্তির কারণ এবং মিথ্যা সন্দেহের কারণ।’’[১]
[১] তিরমিযী ২৫১৮, নাসায়ী ৫৭১১, আহমাদ ২৭৮১৯, দারেমী ২৫৩২

৫৮

সহিহ হাদিস
الرابع‏:‏ عن أبي ثابت، وقيل أبي سعيد، وقيل أبي الوليد، سهل بن حنيف ، وهو بدري، رضي الله عنه، أن النبي ، صلى الله عليه وسلم، قال‏:‏ ‏ "‏من سأل الله، تعالى، الشهادة بصدق بلغه الله منازل الشهداء، وإن مات على فراشه‏"‏ ‏(‏‏‏رواه مسلم‏‏‏)‏ ‏.‏

আবূ সাবেত, মতান্তরে আবূ সাঈদ বা আবূল অলীদ সাহ্‌ল ইবনু হুনাইফ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

(আর তিনি বাদরী সাহাবী ছিলেন) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি সত্য অন্তর নিয়ে আল্লাহর নিকট শাহাদত প্রার্থনা করবে, তাকে আল্লাহ তা‘আলা শহীদদের মর্যাদায় পৌঁছাবেন; যদিও তার মৃত্যু নিজ বিছানায় হয়।’’[১]
[১] মুসলিম ১৯০৯, তিরমিযী ১৬৫৩, নাসায়ী ৩১৬২, আবূ দাউদ ১৫২০, ইবনু মাজাহ ২৭৯৭, দারেমী ২৪০৭

৫৭

সহিহ হাদিস
الثالث‏:‏ عن أبي سفيان صخر بن حرب ، رضي الله عنه، في حديثه الطويل في قصة هرقل، قال هرقل‏:‏ فماذا يأمركم -يعنى النبي صلى الله عليه وسلم- قال أبو سفيان‏:‏ قلت ‏:‏يقول ‏:‏ ‏ "‏ اعبدوا الله وحده لا تشركوا به شيئاً، واتركوا ما يقول آباؤكم ، ويأمرنا بالصلاة، والصدق، والعفاف، والصلة‏"‏ ‏(‏‏‏متفق عليه‏‏‏)‏ ‏.‏

আবূ সুফিয়ান সাখর ইবনু হারব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

ঐ দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করেন যাতে (রোমের বাদশাহ) হিরাক্লিয়াসের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। হিরাক্লিয়াস আবূ সুফিয়ানকে জিজ্ঞাসা করলেন (তখন তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেননি) ‘তিনি---অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম---তোমাদেরকে কোন্ কাজের আদেশ করছেন?’ আবূ সুফিয়ান বলেন, আমি বললাম, ‘তিনি বলছেন যে, ‘‘তোমরা মাত্র এক আল্লাহর উপাসনা কর, তাঁর সাথে কাউকে অংশীদার করো না এবং ঐসব কথা পরিহার কর, যা তোমাদের বাপ-দাদারা বলত (এবং করত)।’’ আর তিনি আমাদেরকে নামায পড়া, সত্য কথা বলা, চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষা করা এবং আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখার আদেশ দেন।’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৭, ৫১, ২৬৮১, ২৮০৪, ২৯৩৬, ২৯৪১, ৩১৭৪, ৪৫৯৩, মুসলিম ১৭৭৩, তিরমিযী ২৭১৭, আবূ দাউদ ৫১৩৬, আহমাদ ২৩৬৬

৬০

সহিহ হাদিস
السادس‏:‏ عن أبي خالد حكيم بن حزام‏.‏ رضي الله عنه ، قال‏:‏ قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ‏:‏ ‏ "‏ البيعان بالخيار مالم يتفرقا، فإن صدقاً وبينا بورك لهما في بيعهما، وإن كتما وكذبا محقت بركة بيعهما‏"‏ ‏(‏‏‏متفق عليه‏‏‏)‏ ‏.‏

আবূ খালেদ হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত (চুক্তি পাকা বা বাতিল করার) স্বাধীনতা রয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা পৃথক (স্থানান্তরিত) না হবে। আর যদি তারা সত্য কথা বলে এবং (পণ্যদ্রব্যের প্রকৃতি) খুলে বলে, (দোষ-ত্রুটি গোপন না রাখে,) তাহলে তাদের কেনা-বেচার মধ্যে বরকত দেওয়া হয়। আর তারা যদি (দোষ-ত্রুটি) গোপন রাখে এবং মিথ্যা বলে, তাহলে তাদের দু’জনের কেনা-বেচার বরকত রহিত করা হয়।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৯৬৩, ৩০৭৯, ৪৩০৬, ৪৩০৮, মুসলিম ১৮৬৩, আহমাদ ১৫৪২০, ১৫৪২৩

৫৯

সহিহ হাদিস
الخامس‏:‏ عن أبي هريرة ، رضي الله عنه ، قال‏:‏ قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ‏:‏ ‏ "‏غزا نبي من الأنبياء صلوات الله وسلامه عليهم فقال لقومه‏:‏ لا يتبعني رجل ملك بضع امرأة‏.‏ وهو يريد أن يبني بها ولما يبن بها، ولا أحد بنى بيوتا لم يرفع سقوفها، ولا أحد اشترى غنما أو خلفات وهو ينتظر أولادها‏.‏ فغزا فدنا من القرية صلاة العصر أو قريباً من ذلك، فقال للشمس‏:‏ إنك مأمورة وأنا مأمور، اللهم احبسها علينا، فحبست حتى فتح الله عليه، فجمع الغنائم، فجائت -يعني النار- لتأكلها فلم تطعمها، فقال ‏:‏ إن فيكم غلولاً، فليبايعني من كل قبيلةٍ رجل، فلزقت يد رجل بيده فقال‏:‏ فيكم الغلول، فلتبايعني قبيلتك، فلزقت يد رجلين أو ثلاثة بيده فقال‏:‏ فيكم الغلول‏:‏ فجاؤوا برأس مثل رأس بقرة من الذهب، فوضعها فجاءت النار فأكلتها، فلم تحل الغنائم لأحد قبلنا، ثم أحل الله لنا الغنائم لما رأى ضعفنا وعجزنا فأحلها لنا‏"‏ ‏(‏‏‏متفق عليه‏‏‏)‏ ‏.‏

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘নবীদের মধ্যে কোনো এক নবী জিহাদের জন্য বের হওয়ার ইচ্ছা করলেন। সুতরাং তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন, ‘আমার সঙ্গে যেন ঐ ব্যক্তি না যায়, যে নতুন বিবাহ করেছে এবং সে তার সাথে বাসর করার কামনা রাখে; কিন্তু এখনো পর্যন্ত সে তা করেনি। আর সেও নয়, যে ঘর নির্মাণ করেছে; কিন্তু এখনো পর্যন্ত ছাদ ঢালেনি। আর সেও নয়, যে গর্ভবতী ভেড়া-ছাগল কিম্বা উটনী কিনেছে এবং সে তাদের বাচ্চা হওয়ার অপেক্ষায় আছে।’ অতঃপর সেই নবী জিহাদের জন্য বেরিয়ে পড়লেন।

তারপর তিনি আসরের নামাযের সময় অথবা ওর নিকটবর্তী সময়ে ঐ গ্রামে (যেখানে জিহাদ করবেন সেখানে) পৌঁছলেন। অতঃপর তিনি সূর্যকে (সম্বোধন ক’রে) বললেন, ‘তুমিও (আল্লাহর) আজ্ঞাবহ এবং আমিও (তাঁর) আজ্ঞাবহ। হে আল্লাহ! একে তুমি আটকে দাও (অর্থাৎ যুদ্ধের ফলাফল বের না হওয়া পর্যন্ত সূর্য যেন না ডোবে)।’ বস্তুতঃ সূর্যকে আটকে দেওয়া হল। এমনকি আল্লাহ তা‘আলা (ঐ জনপদটিকে) তাদের হাতে জয় করালেন। অতঃপর তিনি গনীমতের মাল জমা করলেন। তারপর তা গ্রাস করার জন্য (আসমান থেকে) আগুন এল; কিন্তু সে তা খেল না (ভষ্ম করল না)। (এ দেখে) তিনি বললেন, ‘নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে খিয়ানত আছে (অর্থাৎ তোমাদের কেউ গনীমতের মাল আত্মসাৎ করেছে)। সুতরাং প্রত্যেক গোত্রের মধ্য হতে একজন আমার হাতে ‘বায়আত’ করুক।’ অতঃপর (বায়আত করতে করতে) একজনের হাত তাঁর হাতের সঙ্গে লেগে গেল।

তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে খিয়ানত রয়েছে। সুতরাং তোমার গোত্রের লোক আমার হাতে ‘বায়আত’ করুক।’ সুতরাং দুই অথবা তিনজনের হাত তাঁর হাতের সঙ্গে লেগে গেল। তিনি বললেন যে, ‘তোমাদের মধ্যে খিয়ানত রয়েছে।’ সুতরাং তারা গাভীর মাথার মত একটি সোনার মাথা নিয়ে এল এবং তিনি তা গনীমতের সাথে রেখে দিলেন। তারপর আগুন এসে তা খেয়ে ফেলল। (শেষ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যে,) আমাদের পূর্বে কারো জন্য গণীমতের মাল হালাল ছিল না। পরে আল্লাহ তা‘আলা যখন আমাদের দুর্বলতা ও অক্ষমতা দেখলেন, তখন আমাদের জন্য তা হালাল করে দিলেন।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩১২৪, ৫১৫৭, মুসলিম ১৭৪৭, আহমাদ ২৭৪৫৭

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন