HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইখলাসের অপরিহার্যতা ও হজ কবূলে তার প্রভাব

লেখকঃ ড. সালেহ ইবন আবদুল আযীয সিন্দী

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
ইখলাসের অপরিহার্যতা ও হজ কবূলে তার প্রভাব

ড. সালেহ ইবন আবদুল আযীয সিন্দী

অনুবাদক : মুহাম্মাদ আব্দুর রব আফ্‌ফান

সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

সংক্ষিপ্ত বর্ণনা... .. .
এ প্রবন্ধে শাইখ সালেহ সিন্দী হাফেযাহুল্লাহ দীনের মধ্যে ইখলাসের গুরুত্ব কী তা তুলে ধরেছেন। তারপর তিনি হজে ইখলাসের প্রয়োজনীয়তার কথা আলোচনা করেছেন। তাছাড়া যেসব বিষয় ইখলাস বিনষ্ট করে সেগুলোর প্রতিও আলোকপাত করেছেন।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
যাবতীয় প্রশংসা একমমাত্র আল্লাহরই জন্য। যিনি সৃষ্টিকুলের রব্ব। আল্লাহ তাঁর বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদ এবং তাঁর বংশ ও সকল সাহাবীগণের প্রতি সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন।

প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল সৎ আমলের ফলাফল:
অন্তরের পরিশুদ্ধতা, তাকওয়া ও তা একমাত্র সৃষ্টিকুলের রবের জন্য নির্ধারণ করার ওপর আমলের ফলাফল নির্ভর করে। এগুলো বাস্তবায়ন হবে না, যদি এসব ক্ষেত্রে আল্লাহই তার চূড়ান্ত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য না হয়। আল্লাহর বাণী:

﴿وَأَنَّ إِلَىٰ رَبِّكَ ٱلۡمُنتَهَىٰ ٤٢﴾ [ النجم : ٤٢ ]

“আর সব কিছুর সমাপ্তি তো তোমার রবের নিকট।” [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ৪২]

যে সব ইবাদতে তাকওয়া প্রতিফলিত হয়, তার মধ্যে হজ একটি অন্যতম ইবাদত। অনুরূপ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর একটি ইবাদতের ব্যাপারে বলেন, তা হলো কুরবানী:

﴿لَن يَنَالَ ٱللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَآؤُهَا وَلَٰكِن يَنَالُهُ ٱلتَّقۡوَىٰ مِنكُمۡ﴾ [ الحج : ٣٧ ]

“আল্লাহর কাছে পৌঁছে না এগুলোর গোশত এবং রক্ত; বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।” [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ৩৭]

আল্লামা সা‘দী রহ. বলেন, “এর মধ্যে রয়েছে কুরবানী করার ক্ষেত্রে ইখলাসের প্রতি উৎসাহ প্রদান। অর্থাৎ এতে যেন উদ্দেশ্য হয় আল্লাহরই সন্তুষ্টি। যাতে থাকবে না কোনো অহঙ্কার, রিয়া অর্থাৎ অন্যকে দেখান ও শোনানোর মন-মানসিকতা এবং না তা হবে একান্ত অভ্যাস ও স্বভাবগত। এমনই হতে হবে সমস্ত ইবাদতের অবস্থা। পক্ষান্তরে ইবাদতের মধ্যে যদি ইখলাস ও আল্লাহর তাকওয়া-ভয় না থাকে, তবে তা হবে ফলের এমন খোসার মতো যার মধ্যে নেই কোনো মূল জিনিস ও এমন দেহ যার মধ্যে নেই কোনো আত্মা।” [তাইসীরুল কারীমির রহমান: ৫৩৯।]

কুরআন ও সুন্নাহ’র অসংখ্য দলীলের ভিত্তিতে শরী‘আতের অকাট্য নীতি হলো:
সকল আমল কবূল হওয়া নির্ভর করে আল্লাহর জন্য আমলের মধ্যে ইখলাস প্রতিষ্ঠা এবং তার সাথে তা শরী‘আতসম্মত অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তরীকা মতো হওয়ার ওপর।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ ٱللَّهُ مِنَ ٱلۡمُتَّقِينَ﴾ [ المائ‍دة : ٢٧ ]

“নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদের আমলই কবূল করে থাকেন।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ২৭]

ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন, “আয়াতটির তাফসীর সম্পর্কে সর্বোত্তম যা বলা হয়েছে তা হলো: নিশ্চয় আল্লাহ সে ব্যক্তির আমলটিই কবূল করবেন, যে ব্যক্তি সে আমলের ক্ষেত্রে তাঁকে ভয় করবে। আমলের ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করার অর্থ হলো, তা যেন একমাত্র তাঁর সন্তুষ্টির জন্যই ও তাঁর হুকুম অনুযায়ীই হয়।” [মিফতাহু দারিস সা‘আদাহ: ৩/৩০৪।]

এ মহা গুরুত্বপূর্ণ নীতির মূলকথা হলো ইখলাস ও ইত্তিবা (অনুসরণ)
এর দ্বারাই কালেমায়ে শাহাদাত যথাযথ ও প্রকৃতভাবে সাব্যস্ত হবে। সুতরাং একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করতে হবে এবং সে তরীকা ও নিয়মেই ইবাদত করতে হবে যা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৌঁছিয়েছেন। এই দুই মহানীতির ওপরই নির্ভর করে সফলতা-সৌভাগ্য।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَنۡ أَحۡسَنُ دِينٗا مِّمَّنۡ أَسۡلَمَ وَجۡهَهُۥ لِلَّهِ وَهُوَ مُحۡسِنٞ﴾ [ النساء : ١٢٥ ]

“আর যে আল্লাহর উদ্দেশ্যে আত্মসমর্পণ করেছে ও সৎকর্মশীল তার চেয়ে উত্তম ধার্মিক আর কে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১২৫]

ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন, “নিজের আত্মসমর্পণ অর্থ: লক্ষ-উদ্দেশ্যের মধ্যে ইখলাস আনা ও আল্লাহর জন্যই আমল করা। আর সে ক্ষেত্রে সৎকর্মশীল হওয়ার অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর তরীকার ইত্তিবা-অনুসরণ করা। [মাদারেজুস সালেকীন: ২/৯৩।]

আলোচ্য প্রবন্ধটির বিষয় আল-ইখলাস:
ইখলাস হলো, ইবাদতের মাধ্যমে এক আল্লাহ অভিমূখী হওয়া, আল্লাহকে সৃষ্টির যাবতীয় দোষ-ত্রুটির উর্ধ্বে রাখা ও তাঁকে ছোট-বড় সব ধরনের শির্ক থেকে মুক্ত রাখা। আর এটি প্রত্যেক মুসলিমের ওপর সর্বসম্মতিক্রমে ফরয, আল্লাহর কুরআনে এর হুকুমও রয়েছে বহু স্থানে। যেমন,

﴿إِنَّآ أَنزَلۡنَآ إِلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ بِٱلۡحَقِّ فَٱعۡبُدِ ٱللَّهَ مُخۡلِصٗا لَّهُ ٱلدِّينَ ٢ أَلَا لِلَّهِ ٱلدِّينُ ٱلۡخَالِصُۚ﴾ [ الزمر : ٢، ٣ ]

“আমরা তোমার নিকট এই কিতাব সত্যতা সহকারে অবতীর্ণ করেছি। সুতরাং তুমি আল্লাহর ইবাদত কর তাঁর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে। জেনে রেখো, খালেস আনুগত্য আল্লাহরই প্রাপ্য।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ২-৩]

﴿قُلۡ إِنِّيٓ أُمِرۡتُ أَنۡ أَعۡبُدَ ٱللَّهَ مُخۡلِصٗا لَّهُ ٱلدِّينَ ١١ ﴾ [ الزمر : ١١ ]

“বল, আমি আদিষ্ট হয়েছি, আল্লাহর আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে তাঁর ইবাদত করতে।।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ১১]

আমলে ইখলাস না থাকলে তা কবূলও হবে না ও সাওয়াব থেকেও বঞ্চিত হবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِنَّ اللَّهَ لَا يَقْبَلُ مِنَ الْعَمَلِ إِلَّا مَا كَانَ لَهُ خَالِصًا، وَابْتُغِيَ بِهِ وَجْهُهُ»

“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা কোনো আমলই কবূল করবেন না যদি তা তাঁর জন্য বিশুদ্ধ ও একমাত্র তাঁরই সন্তুষ্টির জন্য না হয়।” [নাসাঈ, হাদীস নং ৩১৪০।]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,

«بَشِّرْ هَذِهِ الْأُمَّةَ بِالسَّنَاءِ، وَالرِّفْعَةِ، وَالنَّصْرِ، وَالتَّمْكِينِ فِي الْأَرْضِ، فَمَنْ عَمِلَ مِنْهُمِ عَمَلَ الْآخِرَةِ لِلدُّنْيَا، لَمْ يَكُنْ لَهُ فِي الْآخِرَةِ نَصِيبٌ»

“এ উম্মতকে মর্যাদা, উন্নতি, সাহায্য ও যমীনের আধিপত্য অর্জনের সুসংবাদ দিন। সুতরাং তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি দুনিয়াবী স্বার্থে পরকালের আমল করবে, তার জন্য পরকালে কোনো অংশ থাকবে না। [মুসনাদে আহমাদ: ৩৫/১৪৬। শাইখ আলবানী সহীহ বলেছেন।]

ইখলাস ও হজ
ইখলাসই হলো হজের ভিত্তি ও মূল। হাজী সাহেব তার হজের বিধি-বিধান স্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়ে ও নিজেকে তা সম্পর্কে স্মরণ করিয়েই শুরু করবেন:

لبيك لاشريك لك

(হে আল্লাহ! আমি তোমার ডাকে সাড়া দিয়ে উপস্থিত, তোমার কোনো শরীক নেই।) যেমন, হাদীসে আছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হজে বলেন,

اللهم حجةً لارياءً ولا سمعةً

“হে আল্লাহ তোমার জন্যই আমার এ হজ। যাতে কোনো রিয়া নেই ও কারো সুনাম অর্জনের জন্য নয়।” [শামায়েলে তিরমিযী, হাদীস নং ১৯১; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৮৯০ ইত্যাদি। শাইখ আলবানী সহীহ বলেছেন।] আর এটি হলো, খালেস-বিশুদ্ধ হজ।

যে ব্যক্তি হজকার্য সম্পাদনের জন্য ধাবমান, তিনি যেন জেনে নেন প্রকৃত হাজী অল্প সংখ্যকই হয়ে থাকেন, কিন্তু হাজীর কাফেলার সংখ্যা অনেক। সুতরাং তিনি যদি চান যে তাঁর হজের দ্বারা তাঁর পরিশ্রম নিছক ব্যর্থ চেষ্টা না হোক তবে তিনি যেন তাঁর উদ্দেশ্যকে উত্তম করেন ও নিয়তকে খালেস-বিশুদ্ধ করেন এবং ইখলাস ভঙ্গ ও নষ্টকারী বিষয়গুলো থেকে সতর্ক হন।

ইখলাস নষ্টের কারণ:
ইখলাস নষ্টের কারণগুলো মূলতঃ দু’টি বিষয় থেকেই উৎপত্তি: (১) রিয়া (২) দুনিয়াবী উদ্দেশ্য সাধন।

১০
প্রথমত: রিয়া
রিয়া বা লোক দেখানো আমল হলো, আমলকারীর ইবাদতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্য থাকবে না; বরং সে তার আমলগুলো প্রকাশ করবে, যেন মানুষ তার আমল-ইবাদত দেখে প্রশংসা করে।

রিয়ার রয়েছে বিভিন্ন স্তর ও প্রকার: যেমন,

(১) বড় রিয়া (২) ছোট রিয়া, তা থেকে নিরাপদ সে, যাকে আল্লাহ নিরাপদে রেখেছেন।

রিয়া হারাম হওয়ার বহু স্পষ্ট দলীল রয়েছে। দলীলসমূহে রিয়াকে ছোট শির্ক, গোপন শির্ক ও সূক্ষ্ম শির্ক নামে অভিহিত করা হয়েছে। যেমন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمْ الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ " قَالُوا : وَمَا الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ : " الرِّيَاءُ، يَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِذَا جُزِيَ النَّاسُ بِأَعْمَالِهِمْ اذْهَبُوا إِلَى الَّذِينَ كُنْتُمْ تُرَاءُونَ فِي الدُّنْيَا فَانْظُرُوا هَلْ تَجِدُونَ عِنْدَهُمْ جَزَاءً»

“আমি তোমাদের ওপর সর্বাধিক যে জিনিসের ভয় পাই তা হলো: ছোট শির্ক। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন: হে আল্লাহর রাসূল, ছোট শির্ক কি? তিনি বলেন, রিয়া। কিয়ামতের দিন যখন মানুষকে তাদের আমলের প্রতিদান দেয়া হবে তখন আল্লাহ এদেরকে বলবেন: তোমরা এখন ঐ সব লোকের নিকট যাও যাদেরকে তোমরা দেখানোর জন্য আমল করেছিলে, দেখ তোমরা তাদের নিকট কোনো প্রতিদান পাও কিনা।” [মুসনাদে আহমাদ: ৩৯/৩৯, সহীহ।]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,

«أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِمَا هُوَ أَخْوَفُ عَلَيْكُمْ عِنْدِي مِنْ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ " , قَالَ : قُلْنَا : بَلَى , فَقَالَ : " الشِّرْكُ الْخَفِيُّ , أَنْ يَقُومَ الرَّجُلُ يُصَلِّي فَيُزَيِّنُ صَلَاتَهُ لِمَا يَرَى مِنْ نَظَرِ رَجُلٍ» .

“আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয়ের খবর দিব না, যা আমার নিকট তোমাদের ওপর মসীহ দাজ্জালের চেয়েও ভয়াবহ? বর্ণনাকারী বলেন, আমরা বললাম: জ্বী হ্যাঁ! তখন তিনি বলেন, গোপন শির্ক (আর তা হলো) কোনো লোক সালাতে দাঁড়াবে, অতঃপর তার সালাত সুন্দর করবে, যে ব্যক্তি দেখছে তার কারণে।” [ইবন মাজাহ: ২/১৪০৬।]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«أَيُّهَا النَّاسُ   إِيَّاكُمْ وَشِرْكَ السَّرَائِرِ " قَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، وَمَا شِرْكُ السَّرَائِرِ ؟ قَالَ : " يَقُومُ الرَّجُلُ فَيُصَلِّي فَيُزَيِّنُ صَلاتَهُ جَاهِدًا لِمَا يَرَى مِنْ نَظَرِ النَّاسِ إِلَيْهِ ، فَذَلِكَ شِرْكُ السَّرَائِرِ»

“ওহে মানবমণ্ডলী! তোমরা নিজেদেরকে সূক্ষ্ম ও গুপ্ত শির্ক থেকে বাঁচাও। সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সূক্ষ্ম শির্ক কি? তিনি বলেন, মানুষ সালাত আদায় করতে দাঁড়াবে আর তার সালাতকে সুন্দর করার চেষ্টা করবে এজন্য যে, মানুষ তার দিকে দেখছে। আর এটিই হচ্ছে সূক্ষ্ম শির্ক।” [সহীহ ইবন খুযাইমা: ২/৬৭ শাইখ আলবানী রহ. হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।]

এরই দৃষ্টান্ত হলে যেমন কোনো হাজী এ ধরণের ভয়াবহ ব্যাধির সম্মুখীন হয়ে থাকে। অর্থাৎ সে হজ করে আর তার নিয়তে ঢুকে থাকে যে সে তার হজের দ্বারা গর্ব প্রকাশ করে বেড়াবে বা কতবার সে হজ করল তার দ্বারা দেশে ফিরে গর্ব করবে অথবা তার সেই হজে এমন আলহাজ উপাধির মর্যাদা অর্জন হবে যা তার বংশের মধ্যে তার পূর্বে অর্জন করতে পারে নি। কখনও আবার হজ পালনরত অবস্থায় সৎ আমলের প্রচেষ্টা, সালাতে স্থিরতা, নমনীয়তা, দো‘আতে কাকুতি-মিনতি, বেশি বেশি নফল ইবাদত আদায় বা অন্যকে উপদেশ নসীহত ইত্যাদি প্রকাশ করে ইখলাসকে নষ্ট করে দেওয়া হয়। কেননা উক্ত আমল সে মানুষের সুনাম অর্জন ও তাদের চোখে বড় হওয়ার জন্য করে থাকে। এসব কাজ ইখলাসের পরিপন্থী ও নষ্টকারী, যা আমল ও তার নেকীর ওপর প্রভাব ফেলে। তাতে হয়তো আমল নষ্ট হয়ে যাবে না; বরং নেকী কমে যাবে।

অনুরূপ হজে সাথীদের খেদমত ও তাঁদের প্রয়োজনে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ায় যদি তাদের নিকট সুনাম অর্জনই উদ্দেশ্য হয়, তবে সে তার মহা সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে।

ইবাদত দ্বারা যদি সৃষ্টির সন্তুষ্টি ও তাদের নৈকট্য অর্জন করা হয় তবে নিঃসন্দেহে সে ইবাদত নষ্ট হয়ে যাবে তাতে কোনো নেকী হবে না; বরং যে এমন ইবাদত করবে সে আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও শাস্তির উপযুক্ত হবে। হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

«أَنَا أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنْ الشِّرْكِ مَنْ عَمِلَ عَمَلًا أَشْرَكَ فِيهِ مَعِي غَيْرِي تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ»

“আমি শির্ককারীদের শির্ক (অংশীদারদের অংশ) গ্রহণ থেকে অমুখাপেক্ষী, যে ব্যক্তি এমন আমল কোনো করবে যাতে সে আমার সাথে অন্যকে শরীক করবে, আমি তাকে ও তার শির্ককৃত বস্তু উভয়কেই বর্জন করি।” [সহীহ মুসলিম: ১৮/৩২৬।]

শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ বলেন, “সর্বসম্মতি ক্রমে শির্ক মিশ্রিত আমলে কোনো নেকী দেওয়া হবে না।” [আল-ইখতিয়ারাত: ৯০।]

১১
দ্বিতীয়ত: দুনিয়াবী স্বার্থে হজ করা
হজকে যদি দুনিয়া কামানোর উসীলা বনান হয় এবং দুনিয়ার সামান্য উপকারই লক্ষ্য হয়। যেমন, এর অন্তর্ভুক্ত হলো, কোনো হজকারীর অন্যের পক্ষ থেকে হজ করে অর্থ উপার্জন করা, কেননা এর দ্বারা মূলত সে তার ভাইয়ের উপকার সাধন উদ্দেশ্য নেয় না। বা যা তাকে দেওয়া হয় তা দিয়ে পবিত্র মক্কা পৌঁছা ও সেখানে সালাত আদায় ও দো‘আ-যিকির করে তার ও তার ভাই যিনি তাকে অর্থ দিয়েছেন তার উপকারিতা অর্জনের সহযোগিতা গ্রহণ করা উদ্দেশ্য নেয় না; বরং যে তাকে হজের জন্য স্থলাভিষিক্ত করেছে তার নিকট থেকে অর্থ উপার্জন করা উদ্দেশ্য নেয়। এ হচ্ছে দুনিয়া কামানোর উদাহারণ। তাছাড়া হয়তো বা সে অর্থ লোভে এমনও বলে দেয়: আরো বাড়িয়ে দিন, কেননা হজে তো অনেক পরিশ্রম করতে হবে। (আল্লাহুল মুস্তায়ান)

অবস্থা যদি এমন হয়, তবে সে অসন্তুষ্টি ও শাস্তিরই উপযুক্ত এবং তার নেকী নষ্ট হয়ে যাবে।

শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যা রহ. বলেন, “অর্থ উপার্জনের জন্য হজ নয়; বরং হজ করার জন্য অর্থ গ্রহণ করা মুস্তাহাব। এটিই সৎ আমলের ওপর অর্থ গ্রহণের মূল কথা। সুতরাং যে অর্থ গ্রহণ করে ইলম শিক্ষা করার জন্য বা শিক্ষা দেওয়ার জন্য বা জিহাদ করার জন্য তা ঠিক আছে। পক্ষান্তরে, যে সৎ আমলের লেবাসে অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্য রাখে, তা হবে দুনিয়াবী স্বার্থের আমলের অন্তর্ভুক্ত। উভয়ের পার্থক্য হলো:

প্রথম ব্যক্তি: যার দীনই হলো উদ্দেশ্য আর দুনিয়া হলো উসীলা। দ্বিতীয় ব্যক্তি: যার দুনিয়া হলো উদ্দেশ্য আর দীন হলো উসীলা। এর জন্য পরকালে কোনো অংশ নেই। [মাজমু‘ ফাতাওয়া: ২৬/১৯-২০।]

শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. আরো বলেন, ইমাম আহমাদ রহ. বলেন, আমি সালাফে সালেহীনের কারো সম্পর্কে জানি না যে, কেউ কোনো কিছুর বিনিময়ে কারো পক্ষ থেকে হজ করেছেন। যদি তা সৎ আমলের অন্তর্ভুক্ত হত, তবে তারা তাতে অগ্রণী হতেন। আর সৎ আমলের দ্বারা রুযী অর্জন করা সৎ লোকদের কর্ম নয়। [মাজমূ‘ ফাতাওয়া: ২৬/১৯।]

ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন, আল্লাহর নৈকট্য অর্জনমূলক কর্মে বিনিময় গ্রহণ করা আমরা নিষেধ করব ও তার ওপর বিনিময় গ্রহণ করাকে ভঙ্গ করব। বিশেষ বিশেষ ইবাদতকে মুয়ামালাতে (লেন-দেনমূলক বিষয়ে) পরিণত করা শরী‘আতের উত্তম আদর্শের অন্তর্ভুক্ত নয়, যার দ্বারা আমরা পার্থিব স্বার্থ ও লেন-দেন অর্জন করতে পারি।” [আর-রূহ: ৩২৫।]

হাদীসের বর্ণনায় অতিবাহিত হয়েছে, ‘সুতরাং যে ব্যক্তি দুনিয়ার জন্য আখিরাতের আমল করবে। আখিরাতে তার জন্য কোনো অংশ থাকবে না।’

মহান আল্লাহ বলেন,

﴿مَن كَانَ يُرِيدُ ٱلۡحَيَوٰةَ ٱلدُّنۡيَا وَزِينَتَهَا نُوَفِّ إِلَيۡهِمۡ أَعۡمَٰلَهُمۡ فِيهَا وَهُمۡ فِيهَا لَا يُبۡخَسُونَ ١٥ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ لَيۡسَ لَهُمۡ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ إِلَّا ٱلنَّارُۖ وَحَبِطَ مَا صَنَعُواْ فِيهَا وَبَٰطِلٞ مَّا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٦﴾ [ هود : ١٥، ١٦ ]

“যারা শুধু পার্থিব জীবন ও ওর জাঁকজমক কামনা করে, আমরা তাদেরকে তাদের কৃতকর্মগুলোর ফল দুনিয়াতেই পরিপূর্ণরূপে প্রদান করে দিই এবং দুনিয়াতে তাদের জন্যে কিছুই কম করা হয় না। এরা এমন লোক যে, তাদের জন্যে আখিরাতে জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই নেই, আর তারা যা কিছু করেছিল তা সবই আখিরাতে অকেজো হয়ে যাবে এবং যা কিছু করছে তাও বিফল হবে।” [সূরা হুদ, আয়াত: ১৫-১৬]

কেউ বলেন আয়াতগুলো কাফেরদের ব্যাপারে, কেউ বলেন তা মুসলিমদের ব্যাপারে। অধিকাংশ তাফসীরকারকের মতে তা সমস্ত সৃষ্টির ব্যাপারে। [জামে‘ লিআহকামিল কুরআন: ৯/১১ ইত্যাদি।]

যেহেতু এক মতানুযায়ী তা কাফেরদের ব্যাপারে, তাই এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, তাদের মতো যারাই এমন কর্মে জড়িত, তাদেরই এমন ফল রয়েছে। [আল-কাওলুল মুফীদ: ১০/৭২৩।]

নিম্নোক্ত আয়াতগুলো উক্ত আয়াতগুলোর অর্থকে আরো নিকটতম করে দেয়:

﴿مَن كَانَ يُرِيدُ حَرۡثَ ٱلۡأٓخِرَةِ نَزِدۡ لَهُۥ فِي حَرۡثِهِۦۖ وَمَن كَانَ يُرِيدُ حَرۡثَ ٱلدُّنۡيَا نُؤۡتِهِۦ مِنۡهَا وَمَا لَهُۥ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِن نَّصِيبٍ ٢٠﴾ [ الشورى : ٢٠ ]

“যে আখিরাতের ফসল কামনা করে তার জন্যে আমি তার ফসল বর্ধিত করে দিই এবং যে দুনিয়ার ফসল কামনা করে আমরা তাকে এরই কিছু দিই, আখিরাতে তার জন্যে কিছুই থাকবে না।।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ২০]

আল্লাহ অন্যত্র বলেন,

﴿مَّن كَانَ يُرِيدُ ٱلۡعَاجِلَةَ عَجَّلۡنَا لَهُۥ فِيهَا مَا نَشَآءُ لِمَن نُّرِيدُ ثُمَّ جَعَلۡنَا لَهُۥ جَهَنَّمَ يَصۡلَىٰهَا مَذۡمُومٗا مَّدۡحُورٗا ١٨﴾ [ الاسراء : ١٨ ]

“কেউ পার্থিব সুখ-সম্ভোগ কামনা করলে আমি যাকে যা ইচ্ছা সত্বর দিয়ে থাকি; পরে তার জন্যে জাহান্নাম নির্ধারিত করি, সেখানে সে প্রবেশ করবে নিন্দিত ও অনুগ্রহ থেকে দূরীকৃত অবস্থায়।।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১৮]

ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন, কুরআনের এ তিনটি স্থান। একটির সাথে অন্যটির সাদৃশ্য রয়েছে। অনুরূপ একটি অন্যটিকে সত্যায়ন করে, যা এক-অভিন্ন অর্থের অন্তর্ভুক্ত: আর তা হলো: যার দুনিয়া অর্জনই উদ্দেশ্য হবে আর সে জন্যই সে চরম প্রচেষ্টা চালাবে; তার জন্য পরকালে কোনো অংশ থাকবে না।

পক্ষান্তরে পরকালই যার উদ্দেশ্য ও সে তার জন্য চরম চেষ্টাও চালিয়ে যায়, তা সে অর্জন করবে।” [উদ্দাতুস সাবেরীন: ১৬৬।]

উক্ত হুকুমের আওতায় যা অন্তর্ভুক্ত নয়:

হজের মধ্যে ব্যবসার উদ্দেশ্য পোষণ করা। কেননা এর অনুমতি আল্লাহ তা‘আলার নিম্নের আয়াতে রয়েছে:

﴿لَيۡسَ عَلَيۡكُمۡ جُنَاحٌ أَن تَبۡتَغُواْ فَضۡلٗا مِّن رَّبِّكُمۡۚ فَإِذَآ أَفَضۡتُم مِّنۡ عَرَفَٰتٖ فَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ عِندَ ٱلۡمَشۡعَرِ ٱلۡحَرَامِۖ وَٱذۡكُرُوهُ كَمَا هَدَىٰكُمۡ وَإِن كُنتُم مِّن قَبۡلِهِۦ لَمِنَ ٱلضَّآلِّينَ ١٩٨﴾ [ البقرة : ١٩٨ ]

“তোমরা স্বীয় রবের অনুগ্রহ লাভের চেষ্টা করলে তাতে তোমাদের পক্ষে কোনো অপরাধ নেই; অতঃপর যখন তোমরা আরাফাত হতে প্রত্যাবর্তিত হও তখন পবিত্র (মাশ‘আরে হারাম) স্মৃতি-স্থানের নিকট আল্লাহকে স্মরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যেরূপ নির্দেশ দিয়েছেন তদ্রূপ তাঁকে স্মরণ করো এবং নিশ্চয় তোমরা এর পূর্বে বিভ্রান্তদের অন্তর্গত ছিলে।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৯৮]

এ উদ্দেশ্য পোষণে কোনো দোষ নেই যদি তার প্রধান ও মূল উদ্দেশ্য হয় দীন। বিশেষ করে জীবিকা অর্জন তার হজের কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত যেন না হয়; বরং তা হবে আনুসঙ্গিক বিষয়। এটি হবে দু’টি নিয়তকে অন্তর্ভুক্তকরণ: একটি শরী‘আতগত অন্যটি তার মধ্যে অনুমতিগত।

আল্লাহ যেন আমাদের প্রত্যেক কর্মকে সৎকর্মের অন্তর্ভুক্ত করেন এবং তা তাঁরই সন্তুষ্টির জন্য খালেস-বিশুদ্ধ করেন ও তার কোনো অংশই যেন অন্য কারো জন্য না করেন। আল্লাহ আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরিবার-পরিজনদের প্রতি সালাত ও সালাম তথা শান্তির ধারা বর্ষণ করুন। আমীন!

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন