HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইত্তেবায়ে রাসূল

লেখকঃ জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
ইত্তেবা‘য়ে রাসূল

জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের

সম্পাদনা : ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী

সংক্ষিপ্ত বর্ণনা... .. .
রাসূলের অনুসরণের মাধ্যমেই আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ রয়েছে। জীবনের সকল ক্ষেত্র থেকে বাতিল আদর্শ পরিত্যাগ করা, অন্ধ-অনুকরণ, অন্ধ-বিশ্বাস ও কুসংস্কার বর্জন করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও হিদায়াতপ্রাপ্ত খলীফাদের অনুসরণ করা একান্ত কর্তব্য। এ বইতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ’র মর্যাদা ও গুরুত্ব এবং অনুসরণের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরা হয়েছে।

ভূমিকা
إِنَّ الْحَمْدُ للهِ، نَحْمَدُهُ وَنَسْتَعِيْنُهُ وَنَسْتَغْفِرُهُ، وَنَعُـوْذُ بِاللهِ مِنْ شُرُوْرِ أَنْفُسِنَا، وَمِنْ سَيِّئَاتِ أَعْمَالِنَا، مَنْ يَّهْدِهِ اللهُ فَلاَ مُضِلَّ لَهُ، وَمَنْ يُّضْلِلِ اللهُ فَلاَ هَادِيَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنْ لاَّ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ

নিশ্চয় যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য। আমরা তাঁরই প্রশংসা করি, তাঁর কাছে সাহায্য চাই, তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি। আল্লাহর নিকট আমরা আমাদের প্রবৃত্তির অনিষ্টতা ও আমাদের কর্মসমূহের খারাবী থেকে আশ্রয় কামনা করি। আল্লাহ যাকে হিদায়াত দেন, তাকে গোমরাহ করার কেউ নেই। আর যাকে গোমরাহ করেন তাকে হিদায়াত দেওয়ার কেউ নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্যিকার ইলাহ নেই, তিনি একক, তার কোনো শরীক নেই। আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। সালাত ও সালাম নাযিল হোক তার ওপর, তার পরিবার-পরিজন ও তার সাহাবীগণের ওপর এবং যারা কিয়ামত অবধি ইহসানের সাথে তাদের অনুসরণ করেন তাদের ওপর।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন স্বীয় বান্দাদের প্রতি অধিক দয়ালু ও ক্ষমাশীল। তিনি তার বান্দাদের যে কোনো উপায়ে ক্ষমা করতে ও তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করতে পছন্দ করেন।

আমরা সরল পথে চলতে চাই, হক জানতে চাই। অথচ সুপথ পেতে হলে রব হিসেবে আল্লাহকে মানতে হবে, তাগূতকে বর্জন করতে হবে; জীবনাদর্শ হিসেবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করতে হবে এবং তাকে অনুকরণীয় আদর্শ হিসেবে মানতে হবে। রাসূলের জীবনেই আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ রয়েছে। জীবনের সকল ক্ষেত্র থেকে বাতিল আদর্শ পরিত্যাগ করতে হবে। অন্ধ-অনুকরণ, অন্ধ-বিশ্বাস ও বিদ‘আত- কুসংস্কার বর্জন করে ইত্তেবা‘য়ে রাসূল অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও হিদায়াতপ্রাপ্ত খলীফাদের অনুসরণ করতে হবে।

তাই আসুন আমরা কুরআন এবং সহীহ ও হাসান হাদীসকেই আমাদের জীবনের চলার পথের একমাত্র পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করি। সহীহ হাদীস ছাড়া রাসূলের সুন্নাহ প্রমাণ করা যায় না। দ‘ঈফ হাদীস রাসূলের সুন্নাহ’র ব্যাপারে কিছু অনুমান-ধারণার সৃষ্টি করে মাত্র। সুতরাং সহীহ হাদীসের বিপরীতে দুর্বল হাদীসকে গ্রহণ না করি। সহীহ হাদীসের ওপর আমল করা ছেড়ে দিয়ে দুর্বল হাদীসের পিছনে ছুটাছুটি না করি। যে ক্ষেত্রে সহীহ বা হাসান হাদীস পাওয়া যাবে সে ক্ষেত্রে সহীহ হাদীসকে বাদ দিয়ে দুর্বল হাদীসের ওপর আমল করা কোনো অজুহাতে গ্রহণ যোগ্য নয়। কারণ, দুর্বল হাদীস দ্বারা শুধু অনুমান বা ধারণায় লাভ হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱجۡتَنِبُواْ كَثِيرٗا مِّنَ ٱلظَّنِّ إِنَّ بَعۡضَ ٱلظَّنِّ إِثۡمٞۖ﴾ [ الحجرات : ١٢ ]

“হে মুমিনগণ! তোমরা অধিকাংশ অনুমান হতে দূরে থাক। কারণ, অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপ”। [সূরা আল-হুজরাত, আয়াত: ১২]

কোন হাদীসটি দুর্বল আর কোন হাদীসটি সহীহ আমাদের পূর্ববর্তী বিদ্বানরা বিশদভাবে আলোচনা করে গিয়েছেন। তাদের ব্যাপারে সারা পৃথিবীর আহলে ইলমগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন। তাদের প্রতি কারো কোনো প্রশ্ন নেই। তাই হাদীস যাচাইয়ের জন্য মুহাদ্দিস, ফকীহ, ইমামদের গ্রন্থ পড়তে হবে। বইয়ের শেষে নির্ভরযোগ্য মুহাদ্দিস, ফকীহ, ইমামদের গ্রন্থ ও তাদের তালিকা দেওয়া আছে। হাদীস যাচাই করা ও বিশুদ্ধ ইলম অর্জন করা আমাদের সবারই দায়িত্ব ও কর্তব্য। সত্য উদঘাটন করা ছাড়া আপনি কখনোই দায়িত্ব মুক্ত হতে পারেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِن جَآءَكُمۡ فَاسِقُۢ بِنَبَإٖ فَتَبَيَّنُوٓاْ أَن تُصِيبُواْ قَوۡمَۢا بِجَهَٰلَةٖ فَتُصۡبِحُواْ عَلَىٰ مَا فَعَلۡتُمۡ نَٰدِمِينَ ٦ ﴾ [ الحجرات : ٦ ]

“হে মুমনিগণ! যদি কোনো পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ আনয়ন করে তবে তোমরা পরীক্ষা করে দেখবে যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোনো সম্প্রদায়রে ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃত কর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হও”। [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ৬]

এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা যে কোনো সংবাদকে গ্রহণ করার পূর্বে তা যাচাই বাচাই করার নির্দেশ দেন। সুতরাং ইসলামী শরী‘আতের বিধান হলো, যে কোনো সংবাদ যাচাই করা ছাড়া তার ওপর আমল করা যাবে না এবং তা গ্রহণ করা যাবে না। আমল করতে হলে আগে তা সঠিক কিনা তা যাচাই করতে হবে। হাদীসটি কোনো পর্যায়ের হাদীস তা জানা থাকা জরুরী। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় হলো, বর্তমানে আমরা শোনার ওপররই নির্ভর করে থাকি। জ্ঞান অর্জন করা বা জানার আমরা একেবারেই উদাসীন। যদি বলি এ আমলটি আপনি কোথায় পেলেন তখন বলবে আমি অমুক আলেমকে বা পীর সাহেবকে বলতে শুনেছি তাই আমল করছি। অথচ এ বিষয়ে হাদীসে কোনো দিক নির্দেশনা আছে কিনা তা জানার কোনো প্রয়োজনই আজ আমাদের মধ্যে অনুভূত হয় না। আমাদের এ দুর্বলতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্বার্থান্বেষী আলেম, পেট পূজারীরা ইসলামের মধ্যে তাদের মনগড়া অসংখ্য বিদ‘আত ও কুসংস্কার প্রবর্তন করেছেন। অসংখ্য বানোয়াট হাদীস ও মিথ্যা কথা মানুষের মধ্যে চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের থেকে আমাদের অবশ্যই সাবধান হতে হবে। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«يَكُونُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ، يَأْتُونَكُمْ مِنَ الْأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوا أَنْتُمْ، وَلَا آبَاؤُكُمْ، فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ، لَا يُضِلُّونَكُمْ، وَلَا يَفْتِنُونَكُمْ»

“শেষ জামানায় এমন সব দজ্জাল ও মিথ্যুকদের আর্বিভাব হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব হাদীস নিয়ে আসবে, যা তোমরা ইতোপূর্বে কখনো শোন নি এবং তোমাদের পূর্ব পুরুষরাও কখনো শুনে নি। তোমরা তাদের থেকে সতর্ক থাকবে, যাতে তারা তোমাদের পথভ্রষ্ট করতে না পারে এবং তোমাদের বিপদে ফেলতে না পারে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭।]

সুতরাং গোমরাহি ও পথভ্রষ্টটা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো, আল্লাহর রাসূলের ইত্তেবা‘ করা এবং বিশুদ্ধ ও হাসান হাদীসের ওপর আমল করা। এ বইটি আমরা ইত্তেবা‘য়ে রাসূল কাকে বলে এবং ইত্তেবা‘য়ে রাসূলের গুরুত্ব তুলে ধরার চেষ্টা করছি, যাতে আমরা তদনুযায়ী আমাদের জীবন পরিচালনা করতে পারি। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন। আমীন

সংকলক

জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের

ইত্তেবা‘র অর্থ:
আভিধানিক অর্থে ইত্তেবা‘ অর্থ হল; কারো পদচিহ্ন দেখে দেখে চলা। এ শব্দটি অনুসরণ, অনুকরণ, মান্যকরণ, আদর্শ জ্ঞান করণ ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়।

শরী‘আতের পরিভাষায় ইত্তেবা‘:
দীনের সকল বিষয় তথা আকিদা-বিশ্বাস, কথা, কাজ, গ্রহণ-বর্জনসহ সর্বক্ষেত্রে রাসূলের পরিপূর্ণ অনুসরণ করাকে ইত্তেবা‘ বলে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কাজটি যেভাবে করেছেন সেটি ঠিক সেভাবে করাই হলো রাসূলের ইত্তেবা‘ বা অনুসরণ। রাসূলের ইত্তেবা‘ ছাড়া কোনো ইবাদত শুদ্ধ হয় না। এ কারণেই ইবাদতের ক্ষেত্রে রাসূলের ইত্তেবা‘র কোনো বিকল্প নেই। আর রাসূলের ইত্তেবা‘ সম্পর্কে এবং আল্লাহর রাসূল কোনো কাজ কীভাবে করেছেন সে সম্পর্কে জানতে হলে হাদীস বা সুন্নাহ অধ্যয়ন ছাড়া আর কোনো পথ নেই। কেবল হাদীস বা সূন্নাহের অধ্যয়নের মাধ্যমে রাসূলের ইত্তেবা‘ সম্পর্কে জানা যাবে।

আল-কুরআনে ইত্তেবা‘র গুরুত্ব:
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা রাসূলের অনুকরণ ও অনুসরণ করার নির্দেশ দেন। কারণ, আল্লাহর রাসূল হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের প্রতি দূত। তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে আল্লাহর বাণী মানুষের নিকট পৌঁছে দেন। রাসূলের মাধ্যমেই আল্লাহর আদেশ নিষেধ বাস্তবায়িত হয় এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভে ধন্য হয়। তাই আল্লাহ মানুষকে তার প্রেরিত রাসূলের অনুকরণ করার নির্দেশ দেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَأَنَّ هَٰذَا صِرَٰطِي مُسۡتَقِيمٗا فَٱتَّبِعُوهُۖ وَلَا تَتَّبِعُواْ ٱلسُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمۡ عَن سَبِيلِهِۦۚ ذَٰلِكُمۡ وَصَّىٰكُم بِهِۦ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٥٣﴾ [ الانعام : ١٥٣ ]

“আর এটি তো আমার সোজা পথ। সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ কর এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ করো না, তাহলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে। এ গুলো তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর”। [সূরা আল-আনআম, আয়াত: ১৫৩]

ইমাম কুরতবী রহ. বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়াত যাতে আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় রাসূলের ইত্তেবা‘ করার আদেশ দিয়েছেন এবং তার পথের ইত্তেবা‘ ছাড়া অন্য সব পথ পরিহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর আয়াতে সীরাতে মুস্তাকীম-এর অর্থ হলো, আল্লাহর পথ যে পথের প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষকে আহ্বান করেছেন। আর তা হলো রাসূলের ইত্তেবা‘ ও তার সুন্নাতের অনুসরণ। [তাফসীরে কুরতবী, ১৩৭/৭।]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

﴿فَلۡيَحۡذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنۡ أَمۡرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمۡ فِتۡنَةٌ أَوۡ يُصِيبَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ ٦٣﴾ [ النور : ٦٣ ]

“অতএব যারা তার নির্দেশের বিরোধিতা করে, তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক ‘আযাব পৌঁছার ভয় করে”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৬৩]

ইমামুল লুগাহ আল্লামা রাগেব আল-ইসফাহানী রহ. বলেন, মুখালাফা অর্থ হলো, কথা, কাজ ও কর্মে কোনো ভাইয়ের বিরোধিতা করা এবং সে যে পথ চলা আরম্ভ করে তার বিপরীত পথে চলতে শুরু করা। [আল-মুফরাদাত ফি গরীবিল কুরআন, পৃ. ১৫৬।]

আল্লামা ইবনুল আরাবী রহ. যুবাইর ইবন বুকার হতে একটি ঘটনা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, মালেক ইবন আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আবূ আব্দুল্লাহ আমি কোথা থেকে ইহরাম বাঁধব? তিনি বললেন, জুল হুলাইফা থেকে -যেখান থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম বেঁধেছেন। তখন লোকটি বলল, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মসজিদ থেকে ইহরাম বাঁধতে চাই। তিনি বললেন, না, তুমি তা করো না। লোকটি বলল, আমি মসজিদের পাশে রাসূলের কবরের নিকট থেকে ইহরাম বাঁধব। তিনি বললেন, না তুমি তা করো না, আমি ভয় করছি তুমি কোনো ফিতনায় আক্রান্ত হবে। লোকটি বলল, কিসের ফিতনা। তখন তিনি বললেন, এর চেয়ে বড় ফিতনা আর কি হতে পারে যে, তুমি মনে করছ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অধিক ফযীলত লাভ করবে, যা তিনি লাভ করতে পারেন নি। আল্লাহ বলেন,

﴿فَلۡيَحۡذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنۡ أَمۡرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمۡ فِتۡنَةٌ أَوۡ يُصِيبَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ ٦٣ ﴾ [ النور : ٦٣ ]

“অতএব যারা তার নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌঁছার ভয় করে”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৬৩]

ইমাম মালেক রহ. আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, যে ব্যক্তি এ উম্মতের দীনের মধ্যে নতুন কিছু আবিষ্কার করে, যা ইতোপূর্বে দীনের মধ্যে ছিল না, তাহলে সে যেন এ কথা দাবী করল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীনের বিষয়ে খিয়ানত করেছেন। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗاۚ ٣﴾ [ المائ‍دة : ٣ ]

“আজ তোমাদের জন্য দীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের ওপর আমার নি‘আমত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে পছন্দ করলাম ইসলামকে”। [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৩] আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা জানিয়ে দেন, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পূর্বেই দীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা তার দীনকে পূর্ণতা দান করার পর দীনের মধ্যে কোনো কিছু বাড়ানোর কোনো অবকাশ নেই। যদি কেউ দ্বীনের মধ্যে কোনো কিছু বাড়ান বা কমান তার অর্থ হলো আল্লাহ দীনকে পূর্ণতা দান করেন নি দীনকে অসম্পূর্ণ ছেড়ে দিয়েছেন এবং অবশিষ্ট কাজের জন্য কোনো মাখলুককে দায়িত্ব বা অধিকার দিয়েছেন। [আল মাওসুয়াতুল ফিকহিয়্যাহ: ২৩/৮।]

ইত্তেবা‘য়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুরুত্ব:
কোনো ইবাদত শুদ্ধ হওয়ার জন্য বা ইবাদতটি ইবাদত হিসেবে বিবেচিত হওয়ার জন্য শর্ত হলো, তার মধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইত্তেবা‘ পাওয়া যেতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবাদতটি যেভাবে করেছেন সেভাবে আদায় করতে হবে এবং তার মধ্যে কোনো প্রকার বিকৃতি বা কমবেশ করা চলবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি প্রসিদ্ধ হাদীসে এ বিষয়টি আরও স্পষ্ট করেন। হাদীসদ্বয়ে তিনি ইবাদত যেভাবে করেছেন সেভাবে করার নির্দেশ দেন।

প্রথম হাদীস:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«صلوا كما رأيتموني أصلي»

এটি পূর্ণ হাদীসের একটি অংশ মাত্র। পুরো হাদীসটি ইমাম বুখারী রহ. স্বীয় কিতাব সহীহ আল-বুখারীতে আবূ কালাবাহ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, মালেক ইবন হুয়াইরাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أتينا رسول الله - صلى الله عليه وسلم - ونحن شببة متقاربون فأقمنا عنده عشرين يوماً وليلة وكان رسول الله - صلى الله عليه وسلم - رحيماً رفيقاً فلما ظن أنا قد اشتهينا أهلنا أو قد اشتقنا سألنا عمن تركنا بعدنا فأخبرناه . قال : ارجعوا إلى أهليكم فأقيموا فيهم وعلموهم ومروهم وذكر أشياء أحفظها أو لا أحفظها وصلوا كما رأيتموني أصلي فإذا حضرت الصلاة فليؤذن لكم أحدكم وليؤمكم أكبركم» .

“আমরা একে অপরের কাছাকাছি ও সম পর্যায়ের কতক লোক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এসে বিশ দিন অবস্থান করি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু ও মেহেরবান। তারপর যখন তিনি অনুভব করলেন আমরা আমাদের পরিবারের নিকট যেতে চাই তখন তিনি আমাদের জিজ্ঞাসা করলেন, আমরা আমাদের বাড়ীতে কাদের রেখে আসছি? আমরা তাদের বিষয়গুলো বললে, তিনি আমাদের বলেন, তোমরা তোমাদের বাড়িতে ফিরে যাও, তাদের মধ্যে তোমরা অবস্থান কর, তাদের তোমরা দীন শেখাও, ভালো কাজের আদেশ দাও। বর্ণনাকারী বলেন, এ ছাড়াও আরও কিছু বিষয় আদেশ করেন তার সবগুলো আমার স্মরণ নেই। আর তোমরা সালাত আদায় কর, যেভাবে তুমি আমাকে সালাত আদায় করতে দেখছ। যখন সালাতের সময় হয়, তোমাদের মধ্যে একজন আযান দিবে, আর তোমাদের মধ্যে বয়স্ক ব্যক্তি ইমামতি করবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস, নং ২৫২।]

বিশুদ্ধ হাদীসটি উল্লিখিত মূলনীতি (ইবাদতের ক্ষেত্রে আসল হলো রাসূলের ইত্তেবা‘)-কে আরও স্পষ্ট করেন। অর্থাৎ সালাত আদায়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পুরোপুরি ইত্তেবা‘ করতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে সালাত আদায় করেছেন, সেভাবে সালাত আদায় করতে হবে। তার মধ্যে কোনো প্রকার কমবেশ করা যাবে না।

দ্বিতীয় হাদীস:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, তিনি বলেন, «خذوا عني مناسككم» “তোমরা আমার থেকে হজের আহকামগুলো শিখে নাও”। [সহীহ মুসলিম, আবূ দাঊদ, নাসাঈ, ইবন মাজাহ।]

হজ বিষয়ে উল্লিখিত হাদীসটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ও মৌলিক -যেমনিভাবে সালাত বিষয়ে উপরের হাদীসটি গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক। উল্লিখিত দু’টি হাদীসই প্রমাণ করে ইবাদতের ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত ও পদ্ধতিই হলো মূল বিবেচ্য ও অনুকরণীয়। তিনি যে ইবাদত যেভাবে করেছেন ঠিক সে ইবাদত সেভাবেই করতে হবে। তাতে কোনো প্রকার কমবেশ করার কোনো সুযোগ নেই।

ছয়টি বিষয়ে ইত্তেবা‘ জরুরি:
মোটকথা, যে কোনো ইবাদতে রাসূলের ইত্তেবা‘ জরুরী। মনগড়া কোনো ইবাদত আল্লাহর নিকট গ্রহণ যোগ্য নয়। আমলের ক্ষেত্রে ইত্তেবা‘ সহীহ হওয়া ও আমলটি শরী‘আত অনুযায়ী হওয়ার জন্য ছয়টি বিষয়ে এক ও অভিন্ন হতে হবে।

এক- ইবাদতের কারণটি শরী‘আত অনুযায়ী ও অনুমোদিত হতে হবে। সুতরাং যদি কোনো মানুষ এমন একটি কারণ দেখিয়ে ইবাদত করে যে কারণটি শরী‘আত অনুমোদন করে নি তা অবশ্যই প্রত্যাখ্যাত হবে। যেমন, কিছু মানুষ রজব মাসের সাতাশ তারিখ রাতে সালাত আদায় ও ইবাদত-বন্দেগী করে থাকে। তাদের যুক্তি হলো, এ রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মি‘রাজে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং পাঁচ ওয়াক্ত সালাত এ রাতেই ফরয করা হয়েছে। সুতরাং এ রাতে সালাত আদায় করা সাওয়াবের কাজ ও পূন্যময়। কিন্তু এখানে যে কারণটি উল্লেখ করা হয়েছে, তা শরী‘আতের দলীল দ্বারা প্রমাণিত নয়। কারণ, এ কারণটি দেখিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে বা তার কোনো সাহাবী এ রাতে সালাত আদায় ও ইবাদত-বন্দেগী করে নি। তাই এ রাতে সালাত আদায় ও ইবাদত বন্দেগী করা বিদ‘আত। সুতরাং ইবাদতের কারণটি শরী‘আত অনুযায়ী হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি কারণটি শরী‘আত অনুমোদিত কিনা তা জানা যায়, তবে অনেক বিদ‘আত থেকে বাঁচা যাবে। কারণ, আমরা এ ধরনের অনেক ইবাদতকে শরী‘আত মনে করি। কিন্তু বাস্তবে তা শরী‘আত নয় বরং বিদ‘আত।

দুই- ইবাদতের ধরনটি শরী‘আত অনুমোদিত হতে হবে। যদি কোনো ব্যক্তি কোনো একটি ইবাদত আল্লাহর জন্য করে থাকে কিন্তু তার ধরনটি শরী‘আত অনুমোদন করে নি। তাহলে সে ইবাদত গ্রহণযোগ্য হবে না। যেমন, এক ব্যক্তি ঘোড়া কুরবানি করল, এ লোকের কুরবানি সহীহ হবে না। কারণ, লোকটি কুরবানির পশুর ধরনের মধ্যে শরী‘আতের বিরোধিতা করছে। কারণ, শরী‘আত কুরবানি করার জন্য চতুষ্পদ জন্তু থেকে কেবল গরু, ছাগল উটকেই নির্ধারিত করেছেন।

তিন- পরিমাণ: পরিমাণ শরী‘আত অনুমোদিত হবে। যদি কোনো মানুষ পরিমাণ বাড়ায় বা কমায় তাহলে তার ইবাদত শুদ্ধ হবে না। যেমন, যদি কোনো মানুষ যোহরের সালাত চার রাকাতের জায়গায় পাঁচ রাকাত আদায় করে, তাহলে তার সালাত শুদ্ধ হবে না। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহরের সালাত কখনো পাঁচ রাকাত আদায় করেন নি।

চার- পদ্ধতি: পদ্ধতি শরী‘আত অনুমোদিত হতে হবে। যেমন, যদি কোনো ব্যক্তি অযু করার সময় হাত ধোয়ার পূর্বে পা দুয়ে ফেলে তাহলে সেও সুন্নাতের বিরোধিতা করল। তার অযু ঠিক হবে না। কারণ, লোকটি অযু করার পদ্ধতিতে ভুল করেছেন এবং শরী‘আতের বিরোধিতা করেছে।

পাঁচ- সময়: সময়টি শরী‘আত অনুযায়ী হতে হবে। যদি কোনো ইবাদত শরী‘আত নির্ধারিত সময়ে না করে নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে করে তাহলে তা ইবাদত বলে গণ্য হবে না এবং ইবাদত সঠিক হবে না। যেমন, কোনো ব্যক্তি যিলহজ মাসের প্রথমে কুরবানি করে ফেলল বা ঈদের সালাতের পূর্বে কুরবানি করল, তাহলে তার কুরবানি সহীহ হবে না। বরং এটি গোশত খাওয়ার জন্য যবেহ করা হবে। অনুরূপ যদি কেউ রমযান মাসে কুরবানি করে তাহলে তার কুরবানি শুদ্ধ হবে না। সুতরাং ইবাদত শুদ্ধ হওয়ার জন্য নির্ধারিত সময়টি শরী‘আতসম্মত হতে হবে।

ছয়- স্থান: ইবাদতের স্থানটি শরী‘আত অনুমোদিত হবে। যদি স্থানটি শরী‘আত সম্মত না হয়, তবে ইবাদত হিসেবে পরিগণিত হবে না। যেমন, শরী‘আত অনুযায়ী ইতিকাফ করার স্থান হলো মসজিদ। যদি কোনো ব্যক্তি মসজিদের বাইরে ইতিকাফ করে তার ইতিকাফ করা শুদ্ধ হবে না। যদি কোনো নারী বলে আমি স্বীয় ঘরে সালাতের স্থানে ইতিকাফ করব, তাহলে তার ইতিকাফ শুদ্ধ হবে না। কারণ, ইতিকাফের স্থান হলো মসজিদ। অনুরূপভাবে কোনো ব্যক্তি বায়তুল্লাহ’র তাওয়াফ করতে গিয়ে দেখে সেখানে অনেক ভিড় তখন সে সেখান থেকে ফিরে মহল্লার মসজিদে তাওয়াফ করা আরম্ভ করল তার তাওয়াফ শুদ্ধ হবে না। কারণ, তাওয়াফ করার স্থান হলো মসজিদ। আল্লাহ তা‘আলা তার স্বীয় বন্ধু ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে বলেন,

﴿أَن طَهِّرَا بَيۡتِيَ لِلطَّآئِفِينَ وَٱلۡعَٰكِفِينَ وَٱلرُّكَّعِ ٱلسُّجُودِ ١٢٥﴾ [ البقرة : ١٢٥ ]

“তোমরা ইতেকাফ কারী, তাওয়াফকারী ও রুকু- সাজদাকারীদের জন্য আল্লাহর ঘরকে পবিত্র কর”। [সূরা বাকারাহ, আয়াত: ১২৫]

নবী আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইত্তেবা‘ তথা অনুসরণ ইসলামের অন্যতম মূল ভিত্তি। এ প্রসঙ্গে কুরআন ও হাদীসে প্রচুর উদ্ধৃতি বিদ্যমান। সবগুলো এ সংক্ষিপ্ত বইতে উল্লেখ করা সম্ভব নয়। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۖ إِنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ ٧﴾ [ الحشر : ٧ ]

“রাসূল তোমাদের যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক”। [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ৩]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

﴿مَّن يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدۡ أَطَاعَ ٱللَّهَۖ وَمَن تَوَلَّىٰ فَمَآ أَرۡسَلۡنَٰكَ عَلَيۡهِمۡ حَفِيظٗا ٨٠ ﴾ [ النساء : ٨٠ ]

“যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে প্রকারান্তরে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে বিমুখ হলো, আমি আপনাকে তাদের ওপর তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে প্রেরণ করিনি”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৮০]

আব্বাস ইবন আবদুল মুত্তালিব থেকেবর্ণিত, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শোনেছেন:

«ذَاقَ طَعْمَ الْإِيمَانِ مَنْ رَضِيَ بِاللهِ رَبًّا، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا، وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولًا»

“সে ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ পেয়েছে, যে রব হিসেবে আল্লাহকে, দীন হিসেবে ইসলামকে এবং রাসূল হিসেবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিয়েছে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৪।]

অপর একটি হাদীস আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«ثَلاَثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ حَلاَوَةَ الإِيمَانِ : أَنْ يَكُونَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا، وَأَنْ يُحِبَّ المَرْءَ لاَ يُحِبُّهُ إِلَّا لِلَّهِ، وَأَنْ يَكْرَهَ أَنْ يَعُودَ فِي الكُفْرِ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُقْذَفَ فِي النَّارِ»

“তিনটি জিনিস যার মধ্যে পাওয়া যাবে, সে ঈমানের সাধ গ্রহণ করবে। এক- আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল তার নিকট দুনিয়ার সব কিছু হতে প্রিয় হওয়া। দুই- কোনো মানুষকে একমাত্র আল্লাহর জন্য ভালোবাসা। তিন- ঈমান আনার পর কুফুরীতে ফিরে যাওয়াতে এমন অপছন্দ করবে, যেমন আগুনে নিক্ষেপ করাকে অপছন্দ করে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৬।]

সুন্নাহ বা হাদীস যার মাধ্যমে রাসূলের ইত্তেবা‘ করা হয় তার গুরুত্ব:
সুন্নাহ শব্দের অর্থ চলার পথ, কর্মের নীতি ও পদ্ধতি। যে পন্থা ও রীতি মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবলম্বন করতেন তাই সুন্নাহ। কুরআনে রাসূলের সর্বোত্তম আদর্শ বলতে সুন্নাহকেই বুঝানো হয়েছে। হাদীসের অপর নাম সুন্নাহ। হাদীস অর্থ কথা, বাণী, সংবাদ, খবর, প্রাচীন ও পুরাতনের বিপরীত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা, কাজ ও সমর্থনকে হাদীস বলে।

১. সুন্নাহ হলো এক প্রকার ওহী:

ওহী দুই প্রকার: এক- ওহী মাতলু, দুই- ওহী গাইরে মাতলু। ওহী মাতলু হলো, কুরআন মাজীদ। আর ওহী গায়রে মাতলু হলো, সুন্নাহ বা হাদীস। সুন্নাহ বা হাদীস ও আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে প্রেরিত ওহী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

﴿وَمَا يَنطِقُ عَنِ ٱلۡهَوَىٰٓ ٣ إِنۡ هُوَ إِلَّا وَحۡيٞ يُوحَىٰ ٤﴾ [ النجم : ٣، ٤ ]

“আর সে মনগড়া কথাও বলে না । তাতো ওহী যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ করা হয়”। [সূরা নজম, আয়াত: ৩, ৪]

হাসান ইবন আত্বিয়া বলেন, জিবরীল আলাইহিস সালাম যেরূপ কুরআন নিয়ে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট অবতীর্ণ হতেন তেমনি হাদীস নিয়েও অবতীর্ণ হতেন। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কুরআনের ন্যায় হাদীসও শিক্ষা দিতেন।

২. সুন্নাহ হলো কুরআনের ব্যাখ্যা:

সুন্নাহ হলো কুরআনের ব্যাখ্যা। সুন্নাহ বাদ দিয়ে কুরআনের ওপর আমল করা বা কুরান বুঝা সম্ভব নয়। যেমন, সালাত কায়েম করা, যাকাত আদায় করা ইত্যাদি আদেশ কুরআনে দেওয়া হয়েছে কিন্তু সালাত কীভাবে আদায় করতে হবে এবং যাকাত কী পরিমাণ আদায় করতে হবে, কোন কোন সম্পদের যাকাত দিতে হবে এবং কোন সম্পদের যাকাত দিতে হবে না -তা বিস্তারিত আলোচনা করা হয় নি। এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হাদীসেই করা হয়েছে।

﴿بِٱلۡبَيِّنَٰتِ وَٱلزُّبُرِۗ وَأَنزَلۡنَآ إِلَيۡكَ ٱلذِّكۡرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيۡهِمۡ وَلَعَلَّهُمۡ يَتَفَكَّرُونَ ٤٤ ﴾ [ النحل : ٤٤ ]

“(তাদের প্রেরণ করেছি) স্পষ্ট প্রমাণাদি ও কিতাবসমূহ এবং তোমার প্রতি নাযিল করেছি কুরআন, যাতে তুমি মানুষের জন্য স্পষ্ট করে দিতে পার, যা তাদের প্রতি নাযিল হয়েছে। আর যাতে তারা চিন্তা করে”। [সূরা আন-নাহাল, আয়াত: ৪৪]

﴿وَمَآ أَنزَلۡنَا عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ إِلَّا لِتُبَيِّنَ لَهُمُ ٱلَّذِي ٱخۡتَلَفُواْ فِيهِ وَهُدٗى وَرَحۡمَةٗ لِّقَوۡمٖ يُؤۡمِنُونَ ٦٤ ﴾ [ النحل : ٦٤ ]

“আর আমরা তোমার ওপর কিতাব নাযিল করেছি, শুধু এ জন্য যে, যে বিষয়ে তারা বিতর্ক করছে, তা তাদের জন্য তুমি স্পষ্ট করে দিবে এবং (এটি), হিদায়াত ও রহমত সেই কাওমের জন্য যারা ঈমান আনে”। [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৬৪]

﴿وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۖ إِنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ ٧ ﴾ [ الحشر : ٧ ]

“রাসূল তোমাদের যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক”। [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ৭]

﴿وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوۡمِهِۦ لِيُبَيِّنَ لَهُمۡۖ فَيُضِلُّ ٱللَّهُ مَن يَشَآءُ وَيَهۡدِي مَن يَشَآءُۚ وَهُوَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ ٤﴾ [ ابراهيم : ٤ ]

“আর আমরা প্রত্যেক রাসূলকে তারা কওমের ভাষাতেই পাঠিয়েছি, যাতে সে তাদের নিকট বর্ণনা দেয়। সুতরাং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সঠিক পথ দেখান। আর তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়”। [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৪]

আল্লাহ প্রত্যেক রাসূলের ওপর তার নিজ ভাষায় কিতাব নাযিল করেছেন যাতে রাসূলগণ ব্যাখ্যা করে জনগণকে ভালভাবে বুঝাতে পারেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের ব্যাখ্যা করে বুঝিয়েছেন যা হাদীসের মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা সংরক্ষণ করেছেন। যদিও হাদীসের মধ্যে রাসূলের নামে অনেক কথাই বিদ্যমান। কিন্তু সম্মানিত মুহাদ্দিস ইমামগণ কোনটি রাসূলের কথা আর কোনটি রাসূলের কথা নয়, তা পৃথক করেছেন। দ‘ঈফ ও জাল বা মিথ্যা হাদীস অবশ্যই বর্জন করতে হবে যা রাসূলের নামে মিথ্যুকরা চালিয়ে দিয়েছে। আমরা কেবল সহীহ ও হাসান হাদীসই গ্রহণ করব। যদি কখনো কোনো দ‘ঈফ হাদীস উল্লেখ করতে হয়, তবে স্পষ্ট করে দিতে হবে।

মালিক ইবন আনাস থেকে মুরসালরূপে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«تَرَكْتُ فِيكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا : كِتَابَ اللَّهِ وَسُنَّةَ رَسُولِهِ»

“আমি তোমাদের মধ্যে দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতক্ষণ তোমরা সে দু’টি জিনিস আঁকড়ে থাকবে, পথভ্রষ্ট হবে না: আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের হাদীস”। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হাদীস, নং ৩৩৩৮।]

৩. সুন্নাহ বা হাদীস হলো হিকমাহ (প্রজ্ঞা):

আল্লাহ তা‘আলা তা‘আলা কুরআনে সুন্নাহকে হিকমাহ বলে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَأَنزَلَ ٱللَّهُ عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَعَلَّمَكَ مَا لَمۡ تَكُن تَعۡلَمُۚ ١١٣﴾ [ النساء : ١١٣ ]

“এবং আল্লাহ তোমার প্রতি গ্রন্থ ও হিকমাহ (হাদীস) অবতীর্ণ করেছেন এবং তুমি যা জানতে না, তিনি তাই তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১৩]

আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা যেমনিভাবে কুরআন নাযিল করার কথা বলেন, অনুরূপভাবে হিকমাহ অর্থাৎ সুন্নাহ নাযিল করার কথাও বলেন। এতে প্রমাণিত হয় যে, সুন্নাহও আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত ওহী। সুতরাং কুরআন যেমন আল্লাহর ওহী অনুরূপভাবে সুন্নাহও আল্লাহর ওহী। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

﴿لَقَدۡ مَنَّ ٱللَّهُ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ إِذۡ بَعَثَ فِيهِمۡ رَسُولٗا مِّنۡ أَنفُسِهِمۡ يَتۡلُواْ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتِهِۦ وَيُزَكِّيهِمۡ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ ١٦٤﴾ [ ال عمران : ١٦٤ ]

“নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অত্যন্ত অনুকম্পা প্রদর্শন করেছেন যখন তাদের নিকট তাদের নিজস্ব একজনকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন, সে তাদেরকে আল্লাহর আয়াত পড়ে শোনাচ্ছে, তাদেরকে পরিশোধন করছে, তাদেরকে কিতাব ও হিকমাহ (হাদীস) শিক্ষা দিচ্ছে”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৬৪]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

﴿وَٱذۡكُرۡنَ مَا يُتۡلَىٰ فِي بُيُوتِكُنَّ مِنۡ ءَايَٰتِ ٱللَّهِ وَٱلۡحِكۡمَةِۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ لَطِيفًا خَبِيرًا ٣٤﴾ [ الاحزاب : ٣٤ ]

“আল্লাহর আয়াত ও হিকমাহ (হাদীস) এর কথা যা তোমাদের গৃহে পঠিত হয়, তা তোমরা স্মরণ রাখবে, নিশ্চয় আল্লাহ অতি সূক্ষ্মদর্শী ও সর্ব বিষয়ে অবহিত”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৪]

অনেক বিদ্বানরা বলেছেন, হিকমাহ হলো সুন্নাহ বা হাদীস। কেননা কুরআন ছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের গৃহে যা পাঠ করা হত, তা ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ। এ জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«أَلَا إِنِّيْ أُوْتِيْتُ الْكِتَابَ وَمِثْلَهُ مَعَهُ»

“সাবধান! আমাকে কিতাব (কুরআন) ও তার সঙ্গে অনুরূপ কিতাব (হাদীস) দেওয়া হয়েছে। [আহমদ, হাদীস নং ১৭১৭৪; আবূ দাউদ, হাদীস, হাদীস নং ৪৬০৪।]

৪. সুন্নাহর বাইরে যে আমল করা হয়, তা পরিত্যাজ্য:

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رد»

“যে ব্যক্তি আমাদের এ দীনে নতুন কিছু উদ্ভাবন করেছে যা এতে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত”। [সহীহ বুখারী, হাদীস, হাদীস নং ২৪৭৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস, হাদীস নং ১৭১৮।]

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«جَاءَ ثَلَاثَة رَهْط إِلَى بيُوت أَزْوَاجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْأَلُونَ عَنْ عِبَادَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا أخبروا كَأَنَّهُمْ تقالوها فَقَالُوا وَأَيْنَ نَحْنُ مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأَخَّرَ قَالَ أحدهم أما أَنا فَإِنِّي أُصَلِّي اللَّيْل أبدا وَقَالَ آخر أَنا أَصوم الدَّهْر وَلَا أفطر وَقَالَ آخر أَنَا أَعْتَزِلُ النِّسَاءَ فَلَا أَتَزَوَّجُ أَبَدًا فَجَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْهِمْ فَقَالَ : «أَنْتُمُ الَّذِينَ قُلْتُمْ كَذَا وَكَذَا أَمَا وَاللَّهِ إِنِّي لَأَخْشَاكُمْ لِلَّهِ وَأَتْقَاكُمْ لَهُ لَكِنِّي أَصُومُ وَأُفْطِرُ وَأُصَلِّي وَأَرْقُدُ وَأَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مني»

“তিন ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের নিকট তার ইবাদতের অবস্থা জানার জন্য আসেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইবাদতের খবর শুনে তারা যেন তার ইবাদতকে কম মনে করলেন। তারা পরস্পর আলাপ করলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তুলনায় আমরা কী? আল্লাহ তা‘আলা তার আগের-পিছের সকল গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন। তাদের একজন বললেন, আমি সারা রাত সালাত আদায় করবো। দ্বিতীয়জন বললেন, আমি দিনে সিয়াম পালন করবো, আর কখনো তা ত্যাগ করবো না। তৃতীয় জন বললেন, আমি নারী থেকে দূরে থাকব, কখনো বিয়ে করবো না। তাদের এই পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে পড়লেন এবং বললেন, “তোমরা কি এ ধরনের কথাবার্তা বলেছিলে? খবরদার! আমি আল্লাহকে তোমাদের চেয়ে বেশি ভয় করি, তোমাদের চেয়ে বেশি তাকওয়া অবলম্বন করি। কিন্তু এরপরও আমি কোনো দিন সিয়াম পালন করি আবার কোনো দিন সিয়াম পালন ছেড়ে দিই। রাতে সালাত আদায় করি আবার ঘুমও যাই। নারীদেরকে বিয়েও করি। এটাই আমার পথ। তাই যে ব্যক্তি আমার পথ ছেড়ে দিয়েছে সে আমার (উম্মতের মধ্যে) গণ্য হবে না”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫০৬৩।]

সুতরাং ভালো কাজ বিশুদ্ধ নিয়তে করলেও কোনোই লাভ হবে না যতক্ষণ না রাসূলের সুন্নাত অনুযায়ী হয়। আর জেনে রাখা ভালো যে, সহীহ ও হাসান হাদীস ছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত প্রমাণিত হয় না।

৫. সুন্নাহ ছাড়া আমল হলো বিদ‘আত, আর বিদ‘আত হলো ভ্রষ্টতা, আর ভ্রষ্টতা হলো জাহান্নামের পথ:

আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«إِنَّ أَحْسَنَ الحَدِيثِ كِتَابُ اللَّهِ، وَأَحْسَنَ الهَدْيِ هَدْيُ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَشَرَّ الأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا»

“সর্বোত্তম বাণী আল্লাহর কিতাব, আর সর্বোত্তম পথ নির্দেশনা হলো মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পথ নির্দেশনা। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হলো নতুনভাবে উদ্ভাবিত পন্থাসমূহ”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০৯৮; আহমদ, হাদীস নং ১৪৪৩১।]

জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّ خَيْرَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللَّهِ وَخَيْرَ الْهَدْيِ هَدْيُ مُحَمَّدٍ وَشَرَّ الْأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ»

“অতঃপর অবশ্য অবশ্যই সর্বোত্তম বাণী হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার কিতাব। আর সর্বোচ্চ পথ হচ্ছে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পথ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট হলো দীনে নতুন জিনিস সৃষ্টি করা। এরূপ সব নতুন জিনিসই গুমরাহী (পথভ্রষ্ট)”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৬৭।]

জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«وَشَرُّ الْأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا، وَكُلُّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ، وَكُلُّ ضَلَالَةٍ فِي النَّارِ»

“আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট হলো দীনে নতুন জিনিস সৃষ্টি করা। এরূপ সব নতুন জিনিসই বিদ‘আত। এরূপ সব বিদ‘আত-ই-গুমরাহী (পথভ্রষ্ট)। এরূপ সব গুমরাহী (পথভ্রষ্ট) হবে জাহান্নামের আগুনে অবস্থিতির কারণ। [নাসাঈ, হাদীস নং ১৫৭৮।]

৬. সুন্নাহ হলো নাজাতের অসীলা, মুক্তির পথ:

সুন্নাহ’র অনুসরণ করার মধ্যেই নাজাত ও মুক্তি। সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করা ছাড়া নাজাত বা মুক্তি লাভ করা সম্ভব নয়।

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُونَ الجَنَّةَ إِلَّا مَنْ أَبَى»، قَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَمَنْ يَأْبَى؟ قَالَ : «مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الجَنَّةَ، وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أَبَى»

“আমার সকল উম্মাত জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করবে সে ব্যতীত। জিজ্ঞেস করা হলো, কে অস্বীকার করবে? তিনি বললেন, যারা আমার অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই (জান্নাতে প্রবেশ করতে) অস্বীকার করল”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭২৮০।]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿تِلۡكَ حُدُودُ ٱللَّهِۚ وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ يُدۡخِلۡهُ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَاۚ وَذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ١٣﴾ [ النساء : ١٣ ]

“এসব আল্লাহর নির্ধারিত সীমা এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তার রাসূলের হুকুম অনুযায়ী চলবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার পাদদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত, তারা তাতে চিরকাল থাকবে এবং এটা বিরাট সাফল্য”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৩]

আয়াতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুসরণ করাকে মহা সাফল্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

﴿وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَ فَأُوْلَٰٓئِكَ مَعَ ٱلَّذِينَ أَنۡعَمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِم مِّنَ ٱلنَّبِيِّ‍ۧنَ وَٱلصِّدِّيقِينَ وَٱلشُّهَدَآءِ وَٱلصَّٰلِحِينَۚ وَحَسُنَ أُوْلَٰٓئِكَ رَفِيقٗا ٦٩﴾ [ النساء : ٦٩ ]

“যারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করে, তারা নবী, সিদ্দিক, শহীদ এবং নেককার লোকদের সঙ্গী হবে, যাদের প্রতি আল্লাহ নি‘আমত দান করেছেন, তারা কতই না উত্তম সঙ্গী! [সূরা আনন-নিসা, আয়াত: ৬৯]

﴿وَأَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَ لَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُونَ ١٣٢﴾ [ ال عمران : ١٣٢ ]

“আল্লাহর ও রাসূলের হুকুম মান্য কর, যাতে তোমরা কৃপা প্রাপ্ত হতে পার”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩২]

﴿ٱلَّذِي يُؤۡمِنُ بِٱللَّهِ وَكَلِمَٰتِهِۦ وَٱتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمۡ تَهۡتَدُونَ ١٥٨﴾ [ الاعراف : ١٥٧ ]

“যে আল্লাহ ও তার বাণীতে ঈমান আনে এবং তোমরা তার (রাসূলের) অনুসরণ কর, যাতে তোমরা সঠিক পথ পেতে পার”। [সূরা আল-আরাফ, আয়াত: ১৫৭]

﴿وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَيَخۡشَ ٱللَّهَ وَيَتَّقۡهِ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡفَآئِزُونَ ٥٢﴾ [ النور : ٥٢ ]

“যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে ও তার অবাধ্যতা পরিহার করে চলে তারাই কৃত কার্য”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৫২]

﴿قُلۡ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَۖ فَإِن تَوَلَّوۡاْ فَإِنَّمَا عَلَيۡهِ مَا حُمِّلَ وَعَلَيۡكُم مَّا حُمِّلۡتُمۡۖ وَإِن تُطِيعُوهُ تَهۡتَدُواْۚ وَمَا عَلَى ٱلرَّسُولِ إِلَّا ٱلۡبَلَٰغُ ٱلۡمُبِينُ ٥٤﴾ [ النور : ٥٤ ]

“বল, আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর। অতঃপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তার ওপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য সে দায়ী এবং তোমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য তোমরাই দায়ী এবং তোমরা তার আনুগত্য করলে সৎপথ পাবে, আর রাসূলের কাজ তো কেবল স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেওয়া। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৫৪]

﴿وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدۡ فَازَ فَوۡزًا عَظِيمًا ٧١ ﴾ [ الاحزاب : ٧١ ]

“যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করে সে সাফল্য লাভ করে মহা সাফল্য”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৭১]

﴿وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ يُدۡخِلۡهُ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَاۚ وَذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ١٣ ﴾ [ النساء : ١٣ ]

“আর যে কেউই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে দাখিল করাবেন, যার নিচ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত। আর যে কেউ পিঠ ফিরিয়ে নিবে, তিনি তাকে ভয়াবহ শাস্তি দিবেন।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৩]

৭. রাসূলের ফায়সালার সামনে মুমিনের আর কোনো এখতিয়ার বা স্বাধীনতা থাকে না; বরং শুনলাম ও মানলাম বলা:

﴿فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥﴾ [ النساء : ٦٥ ]

“কিন্তু না, তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা মুমিন হবে না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের বিবাদ-বিসম্বাদের মীমাংসার ভার তোমার ওপর ন্যস্ত না করে, অতঃপর তোমার ফয়সালার ব্যাপারে তাদের মনে কিছু মাত্র কুণ্ঠাবোধ না থাকে, আর তারা তার সামনে নিজেদেরকে পূর্ণরূপে সমর্পণ করে”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬৫]

﴿وَأَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥٓ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ ١﴾ [ الانفال : ١ ]

“তোমরা যদি মুমিন হয়ে থাক তবে তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর”। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ১]

﴿إِنَّمَا كَانَ قَوۡلَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ إِذَا دُعُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ لِيَحۡكُمَ بَيۡنَهُمۡ أَن يَقُولُواْ سَمِعۡنَا وَأَطَعۡنَاۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ٥١﴾ [ النور : ٥١ ]

“মুমিনদেরকে যখন তাদের মাঝে ফায়সালা করার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে ডাকা হয়, তখন মুমিনদের জওয়াব তো এই হয় যে, তারা বলে, আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম, আর তারাই সফলকাম”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৫১]

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَلَا تَوَلَّوۡاْ عَنۡهُ وَأَنتُمۡ تَسۡمَعُونَ ٢٠ ﴾ [ الانفال : ٢٠ ]

“ওহে বিশ্বাসীগণ! আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর এবং আদেশ শোনার পর তা অমান্য কর না”। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ২০]

﴿وَمَا كَانَ لِمُؤۡمِنٖ وَلَا مُؤۡمِنَةٍ إِذَا قَضَى ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥٓ أَمۡرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ ٱلۡخِيَرَةُ مِنۡ أَمۡرِهِمۡۗ وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلَٰلٗا مُّبِينٗا ٣٦ ﴾ [ الاحزاب : ٣٦ ]

“আল্লাহ ও তার রাসূল কোনো নির্দেশ দিলে কোনো মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী উক্ত নির্দেশের ভিন্নতা করার কোনো অধিকার রাখে না। যে আল্লাহ ও তার রাসূলকে অমান্য করে সে গুমরাহ হয় সুস্পষ্ট গুমরাহীতে”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৬]

৮. রাসূলের অনুসরণই আল্লাহর আনুগত্য:

﴿مَّن يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدۡ أَطَاعَ ٱللَّهَۖ وَمَن تَوَلَّىٰ فَمَآ أَرۡسَلۡنَٰكَ عَلَيۡهِمۡ حَفِيظٗا ٨٠﴾ [ النساء : ٨٠ ]

“যে রাসূলের হুকুম মানল, সে তো আল্লাহরই হুকুম মানল, কেউ মুখ ফিরিয়ে নিলে আমরা তোমাকে তাদের প্রতি পাহারাদার করে পাঠাই নি”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৮০]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ أَطَاعَنِي فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ، وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ عَصَى اللَّه»

“যে ব্যক্তি আমার অনুসরণ করল, সে আল্লাহরই অনুসরণ করল, আর যে ব্যক্তি আমার নাফরমানী করল, সে তো আল্লাহর নাফরমানী করল”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৯৫৭।]

৯. মুমিন জীবনের আদর্শ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম:

একজন মুমিনের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনীর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। আল্লাহর রাসূলই হলো একজন মুমীনের অনুকরনীয় আদর্শ।

﴿لَّقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِي رَسُولِ ٱللَّهِ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٞ لِّمَن كَانَ يَرۡجُواْ ٱللَّهَ وَٱلۡيَوۡمَ ٱلۡأٓخِرَ وَذَكَرَ ٱللَّهَ كَثِيرٗا ٢١ ﴾ [ الاحزاب : ٢١ ]

“তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের আশা রাখে আর আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ২১]

﴿وَإِنَّكَ لَعَلَىٰ خُلُقٍ عَظِيمٖ ٤ ﴾ [ القلم : ٤ ]

“তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত”। [সূরা আল-কলম, আয়াত: ৪]

১০. আল্লাহর ভালবাসা পাওয়ার মাধ্যম রাসূলের অনুসরণ:

আল্লাহকে ভালোবাসতে হলে, রাসূলের ইত্তেবা‘র কোনো বিকল্প নেই। রাসূলের ইত্তেবা‘র মাধ্যমেই আল্লাহর ভালোবাসা লাভ হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۚ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٣١ ﴾ [ ال عمران : ٣١ ]

“বলে দাও, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাসো তবে আমার অনুসরণ কর আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাসমূহ ক্ষমা করবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। [সূরা আল ইমরান, আয়াত: ৩১]

১১. কুরআন ও সুন্নাহই সকল সমস্যার সমাধান:

একজন মুমিনের জন্য কুরআন ও সুন্নাহই হলো সব সমস্যার সমাধানের মূল।

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَأُوْلِي ٱلۡأَمۡرِ مِنكُمۡۖ فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ ذَٰلِكَ خَيۡرٞ وَأَحۡسَنُ تَأۡوِيلًا ٥٩﴾ [ النساء : ٥٩ ]

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর অনুগত হও এবং রাসূলের অনুগত হও এবং তোমাদের মধ্যকার কর্তৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গেরও; তবে যদি কোনো বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটে, তাহলে সেই বিষয়কে আল্লাহ এবং রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও যদি তোমরা আল্লাহ এবং আখিরাতে ঈমান আন; এটাই উত্তম এবং সুন্দরতম মর্মকথা”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৫৯]

﴿وَلَا يَأۡتُونَكَ بِمَثَلٍ إِلَّا جِئۡنَٰكَ بِٱلۡحَقِّ وَأَحۡسَنَ تَفۡسِيرًا ٣٣﴾ [ الفرقان : ٣٣ ]

“তোমার কাছে তারা এমন কোনো সমস্যাই নিয়ে আসে না যার সঠিক সমাধান ও সুন্দর ব্যাখ্যা আমি তোমাকে দান করিনি”। [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৩৩]

﴿وَأَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَلَا تَنَٰزَعُواْ فَتَفۡشَلُواْ وَتَذۡهَبَ رِيحُكُمۡۖ وَٱصۡبِرُوٓاْۚ إِنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلصَّٰبِرِينَ ٤٦﴾ [ الانفال : ٤٦ ]

“আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর, পরস্পরে ঝগড়া বিবাদ কর না, তা করলে তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলবে, তোমাদের শক্তি-ক্ষমতা বিলুপ্ত হবে। আর ধৈর্য ধারণ করবে, আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন”। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৪৬]

১২. সহীহ হাদীস যখন আহ্বান করবে, তখন সকলকে সেই আহ্বানে সাড়া দেওয়া জরুরী। সহীহ হাদীসের বিপরীতে কোনো দূর্বল হাদীস বা যুক্তির পিছলে আমল করা যাবে না।

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱسۡتَجِيبُواْ لِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ إِذَا دَعَاكُمۡ لِمَا يُحۡيِيكُمۡۖ ٢٤ ﴾ [ الانفال : ٢٤ ]

“হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের ডাকে সাড়া দাও; যখন সে তোমাদেরকে আহ্বান করে তার প্রতি, যা তোমাদেরকে প্রাণবন্ত করে”। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ২৪]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«لَا أُلْفِيَنَّ أَحَدَكُمْ مُتَّكِئًا عَلَى أَرِيكَتِهِ، يَأْتِيهِ الْأَمْرُ مِمَّا أَمَرْتُ بِهِ، أَوْ نَهَيْتُ عَنْهُ، فَيَقُولُ : لَا أَدْرِي، مَا وَجَدْنَا فِي كِتَابِ اللَّهِ اتَّبَعْنَاهُ»

“আমি যেন তোমাদের মাঝে কাউকে এমন না পাই, সে তার খাটের ওপর ঠেস দিয়ে বসে থাকবে। আর আমি যা আদেশ দিয়েছি অথবা যা থেকে নিষেধ করেছি, তা তার কাছে পৌছলে সে তখন বলবে: এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না, আমরা আল্লাহর কিতাবে যা পেয়েছি, তারই অনুসরণ করি”। [আহমদ, হাদীস নং ২৩৮৭৬; আবূ দাউদ, হাদীস নং ৪৬০৫; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৩; তিরমিযী, হাদীস নং ২৬৬৩।]

﴿لَّا تَجۡعَلُواْ دُعَآءَ ٱلرَّسُولِ بَيۡنَكُمۡ كَدُعَآءِ بَعۡضِكُم بَعۡضٗاۚ قَدۡ يَعۡلَمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ يَتَسَلَّلُونَ مِنكُمۡ لِوَاذٗاۚ فَلۡيَحۡذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنۡ أَمۡرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمۡ فِتۡنَةٌ أَوۡ يُصِيبَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ ٦٣ ﴾ [ النور : ٦٣ ]

“রাসূলের ডাককে তোমরা তোমাদের একের প্রতি অন্যের ডাকের মত গণ্য করো না। আল্লাহ তাদেরকে জানেন যারা তোমাদের মধ্যে চুপিসারে সরে পড়ে। কাজেই যারা তার আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, তাদের ওপর পরীক্ষা নেমে আসবে কিংবা তাদের ওপর নেমে আসবে ভয়াবহ শাস্তি”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৬৩]

সালাত ছেড়ে রাসূলের ডাকে সাড়া দান:

১৩. আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি সর্বোচ্চ ভালবাসা ঈমানী কর্তব্য:

দুনিয়ার সব কিছু থেকে আল্লাহর রাসূলকে সর্বোচ্চ ভালো বাসতে হবে। সকল কিছুর ওপর রাসূলের ভালোবাসাকে প্রাধ্যান্য দিতে হবে।

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ، حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ»

“তোমাদের মধ্যে কেউ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার কাছে তার পিতা, তার সন্তানাদি এবং সকল মানুষ হতে বেশি প্রিয় না হবো”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৬।]

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«ثَلاَثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ حَلاَوَةَ الإِيمَانِ : مَنْ كَانَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا، وَمَنْ أَحَبَّ عَبْدًا لاَ يُحِبُّهُ إِلَّا لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ، وَمَنْ يَكْرَهُ أَنْ يَعُودَ فِي الكُفْرِ، بَعْدَ إِذْ أَنْقَذَهُ اللَّهُ، مِنْهُ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُلْقَى فِي النَّارِ»

“যে ব্যক্তির মধ্যে তিনটি জিনিস পাওয়া যাবে, সে ঈমানের সঠিক স্বাদ আস্বাদন করেছে। প্রথমত: তার মধ্যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালবাসা দুনিয়ার সকল জিনিস অপেক্ষা বেশি হবে। দ্বিতীয়ত: যে ব্যক্তি কোনো ব্যক্তিকে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ভালোবাসে। তৃতীয়ত: যে ব্যক্তি কুফুরীর অন্ধকার থেকে বের হয়ে ঈমান ও ইসলামের আলো গ্রহণ করার পর আবার কুফুরীর অন্ধকারে ফিরে যাওয়াকে এত খারাপ মনে করে যেমন মনে করে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২১।]

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تُقَدِّمُواْ بَيۡنَ يَدَيِ ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦۖ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۚ إِنَّ ٱللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٞ ١ ﴾ [ الحجرات : ١ ]

“ওহে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের আগে বেড়ে যেয়ো না , আল্লাহকে ভয় কর, আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ”। [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১]

১৪. মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ শাশ্বত ও চিরন্তন। তাঁর শরী‘আত পূর্বের সমস্ত শরী‘আতকে রহিত বা বাতিল করেছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত তা রহিত থাকবে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«والذي نفس محمد بيده لو بدا لكم موسى فاتبعتموه وتركتموني لضللتم عن سواء السبيل ولو كان حيا وأدرك نبوتي لاتبعني»

“আল্লাহর কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন। যদি মূসা আলাইহিস সালাম তোমাদের মাঝে প্রকাশ পেতেন তাহলে তোমরা তার আনুগত্য করতে আর আমাকে ত্যাগ করতে,ফলে তোমরা সহজ -সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পথভ্রষ্ট হয়ে যেতে। অথচ মূসা আলাইহিস সালাম যদি এখন জীবিত থাকতেন ও আমার নবুওয়াতের কাল পেতেন তাহলে তিনি নিশ্চিত আমার আনুগত্য করতেন”। [দারেমী, হাদীস নং ৪৪৯।]

﴿يَٰٓأَهۡلَ ٱلۡكِتَٰبِ لِمَ تَلۡبِسُونَ ٱلۡحَقَّ بِٱلۡبَٰطِلِ وَتَكۡتُمُونَ ٱلۡحَقَّ وَأَنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ٧١﴾ [ ال عمران : ٧١ ]

“হে আহলে কিতাবগণ, কেন তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে সংমিশ্রণ করছ এবং সত্যকে গোপন করছ, অথচ তোমরা তা জান”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৭১]

মুসলিম হওয়ার পর খ্রিষ্টান হলো কিন্তু কবর তার মৃতদেহ গ্রহণ করল না। সুতরাং পূর্বের সমস্ত ধর্ম বাতিল বা অগ্রহণযোগ্য বা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ رَجُلٌ نَصْرَانِيًّا فَأَسْلَمَ، وَقَرَأَ البَقَرَةَ وَآلَ عِمْرَانَ، فَكَانَ يَكْتُبُ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَعَادَ نَصْرَانِيًّا، فَكَانَ يَقُولُ : مَا يَدْرِي مُحَمَّدٌ إِلَّا مَا كَتَبْتُ لَهُ فَأَمَاتَهُ اللَّهُ فَدَفَنُوهُ، فَأَصْبَحَ وَقَدْ لَفَظَتْهُ الأَرْضُ، فَقَالُوا : هَذَا فِعْلُ مُحَمَّدٍ وَأَصْحَابِهِ لَمَّا هَرَبَ مِنْهُمْ، نَبَشُوا عَنْ صَاحِبِنَا فَأَلْقَوْهُ، فَحَفَرُوا لَهُ فَأَعْمَقُوا، فَأَصْبَحَ وَقَدْ لَفَظَتْهُ الأَرْضُ، فَقَالُوا : هَذَا فِعْلُ مُحَمَّدٍ وَأَصْحَابِهِ، نَبَشُوا عَنْ صَاحِبِنَا لَمَّا هَرَبَ مِنْهُمْ فَأَلْقَوْهُ، فَحَفَرُوا لَهُ وَأَعْمَقُوا لَهُ فِي الأَرْضِ مَا اسْتَطَاعُوا، فَأَصْبَحَ وَقَدْ لَفَظَتْهُ الأَرْضُ، فَعَلِمُوا : أَنَّهُ لَيْسَ مِنَ النَّاسِ، فَأَلْقَوْهُ»

“এক খ্রিষ্টান মুসলিম হলো এবং সূরা বাকারা ও আলে ইমরান শিখে নিলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য ওহী লিখত। অতঃপর সে আবার খ্রিষ্টান হয়ে গেল। সে বলতে লাগল, আমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যা লিখে দিতাম তার চেয়ে বেশি কিছু তিনি জানেন না। (নাউযুবিল্লাহ) কিছুদিন পর আল্লাহ তাকে মৃত্যু দিলেন। খ্রিষ্টানরা তাকে দাফন করল। কিন্তু পরদিন সকালে দেখা গেল, কবরের মাটি তাকে বাইরে নিক্ষেপ করে দিয়েছে। এটা দেখে খ্রিষ্টানরা বলতে লাগল -এটা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীদেরই কাজ। যেহেতু আমাদের এ সাথী তাদের থেকে পালিয়ে এসেছিল। এ জন্যই তারা আমাদের সাথীকে কবর থেকে উঠিয়ে বাহিরে ফেলে দিয়েছে। তাই যতদূর পারা যায় গভীর করে কবর খুঁড়ে তাকে আবার দাফন করল। কিন্তু পরদিন সকালে দেখা গেল, কবরের মাটি আবার তাকে বাইরে নিক্ষেপ করে দিয়েছে। এবারও তারা বলতে লাগল, এটা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার সাহাবীদেরই কাজ। তাদের নিকট থেকে পালিয়ে আসার কারণে তারা আমাদের সাথীকে কবর থেকে উঠিয়ে বাহিরে ফেলে দিয়েছে। এবার আরও গভীর করে কবর খনন করে দাফন করল। পরদিন ভোরে দেখা গেল, কবরের মাটি আবার তাকে বাইরে নিক্ষেপ করে দিয়েছে। তখন তারাও বুঝল, এটা মানুষের কাজ নয়। কাজেই তারা লাশটি ফেলে রাখল”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৬১৭।]

আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো দীন বা জীবন ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন না।

﴿ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗاۚ ٣﴾ [ المائ‍دة : ٣ ]

“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের ওপর আমার নি‘আমত সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন হিসেবে কবুল করে নিলাম”। [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৩]

﴿وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٨٥ ﴾ [ ال عمران : ٨٥ ]

“আর যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো দীন গ্রহণ করতে চাইবে কক্ষনো তার সেই দীন কবুল করা হবে না এবং আখিরাতে সে ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮৫]

১৫. মৃত সুন্নাত জীবিত করার মর্যাদা:

যখন কোনো সুন্নাত বিলুপ্ত হয়ে যায়, তার ওপর মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা এবং তার ওপর আমল করার ফযীলত অনেক। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ أَحْيَا سُنَّةً مِنْ سُنَّتِي، فَعَمِلَ بِهَا النَّاسُ، كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِ مَنْ عَمِلَ بِهَا، لَا يَنْقُصُ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا، وَمَنْ ابْتَدَعَ بِدْعَةً، فَعُمِلَ بِهَا، كَانَ عَلَيْهِ أَوْزَارُ مَنْ عَمِلَ بِهَا، لَا يَنْقُصُ مِنْ أَوْزَارِ مَنْ عَمِلَ بِهَا شَيْئًا»

“যে ব্যক্তি আমার একটি (মৃত) সুন্নাত জীবিত করে এবং লোকেরা তদনুযায়ী আমল করে, সেও আমল কারীর অনুরূপ পুরস্কার পাবে। এতে আমলকারীর পুরস্কার কিছুমাত্র কম হবে না। অপরদিকে যে ব্যক্তি কোনো বিদআতের উদ্ভাবন করে এবং সে অনুযায়ী আমল করা হয়, তার ওপর আমলকারীর পাপের বোঝার অনুরূপ বোঝা বর্তাবে। এতে আমলকারীর পাপের পরিমাণ কিছুই কমানো হবে না”। [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২০৯।]

১৬. যারা আল্লাহ ও রাসূল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে, তারা মুমিন নন; বরং তারা মুনাফিক, যালিম, কাফির। আল্লাহ তা‘আলা তাদের সম্পর্কে বলেন,

﴿وَيَقُولُونَ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَبِٱلرَّسُولِ وَأَطَعۡنَا ثُمَّ يَتَوَلَّىٰ فَرِيقٞ مِّنۡهُم مِّنۢ بَعۡدِ ذَٰلِكَۚ وَمَآ أُوْلَٰٓئِكَ بِٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٤٧ ﴾ [ النور : ٤٧ ]

“তারা বলে- আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলাম আর রাসূলের প্রতিও আর আমরা মেনে নিলাম। কিন্তু এরপরও তাদের মধ্যকার একদল মুখ ফিরিয়ে নেয়, তারা মুমিন নয়”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৪৭]

﴿وَإِذَا دُعُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ لِيَحۡكُمَ بَيۡنَهُمۡ إِذَا فَرِيقٞ مِّنۡهُم مُّعۡرِضُونَ ٤٨ ﴾ [ النور : ٤٨ ]

“তাদেরকে যখন তাদের মাঝে ফায়সালা করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ ও তার রাসূলের পানে আহ্বান করা হয়, তখন তাদের একদল মুখ ফিরিয়ে নেয়”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৪৭]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

﴿وَإِذَا قِيلَ لَهُمۡ تَعَالَوۡاْ إِلَىٰ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ وَإِلَى ٱلرَّسُولِ رَأَيۡتَ ٱلۡمُنَٰفِقِينَ يَصُدُّونَ عَنكَ صُدُودٗا ٦١ ﴾ [ النساء : ٦١ ]

“যখন তাদেরকে বলা হয় -তোমরা আল্লাহর অবতীর্ণ হুকুমের এবং রাসূলের দিকে এসো, তখন তুমি ঐ মুনাফিকদের দেখবে, তারা তোমার কাছ থেকে ঘৃণা ভরে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬১]

﴿كَيۡفَ يَهۡدِي ٱللَّهُ قَوۡمٗا كَفَرُواْ بَعۡدَ إِيمَٰنِهِمۡ وَشَهِدُوٓاْ أَنَّ ٱلرَّسُولَ حَقّٞ وَجَآءَهُمُ ٱلۡبَيِّنَٰتُۚ وَٱللَّهُ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلظَّٰلِمِينَ ٨٦﴾ [ ال عمران : ٨٦ ]

“আল্লাহ কীরূপে সেই সম্প্রদায়কে সুপথ দেখাবেন যারা ঈমান আনার পর, এ রাসূলকে সত্য বলে স্বীকার করার পর এবং তাদের নিকট সুস্পষ্ট দলীল আসার পর কুফুরী করে? বস্তুতঃ আল্লাহ যালিম কওমকে পথ দেখান না”। [সূরা আলে ইসরান, আয়াত: ৮৬]

﴿قُلۡ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَۖ فَإِن تَوَلَّوۡاْ فَإِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ ٱلۡكَٰفِرِينَ ٣٢ ﴾ [ ال عمران : ٣٢ ]

“বল, ‘তোমরা আল্লাহর ও রাসূলের আজ্ঞাবহ হও’। অতঃপর যদি তারা না মানে, তবে জেনে রেখ, আল্লাহ কাফিরদেরকে ভালোবাসেন না”। [সূরা আলে ইসরান, আয়াত: ৩২]

১৭. যারা আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অমান্য করবে তারা জাহান্নামী। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُۥ يُدۡخِلۡهُ نَارًا خَٰلِدٗا فِيهَا وَلَهُۥ عَذَابٞ مُّهِينٞ ١٤ ﴾ [ النساء : ١٤ ]

“আর যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তার রাসূলের নাফরমানী করবে এবং তার নির্ধারিত সীমালঙ্ঘন করবে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামে দাখিল করাবেন, সে তাতে চিরকাল থাকবে এবং সে অবমাননাকর শাস্তি ভোগ করবে”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৪] আল্লাহ তা‘আলা তাদের বিষয়ে বলেন,

﴿وَمَن يُشَاقِقِ ٱلرَّسُولَ مِنۢ بَعۡدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ ٱلۡهُدَىٰ وَيَتَّبِعۡ غَيۡرَ سَبِيلِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ نُوَلِّهِۦ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصۡلِهِۦ جَهَنَّمَۖ وَسَآءَتۡ مَصِيرًا ١١٥﴾ [ النساء : ١١٥ ]

“যে ব্যক্তি সত্য পথ প্রকাশিত হওয়ার পরও রাসূলের বিরোধিতা করে এবং মুমিনদের পথ বাদ দিয়ে ভিন্ন পথ অনুসরণ করে, আমরা তাকে সে পথেই ফিরাব যে পথে সে ফিরে যায়, আর তাকে জাহান্নামে দগ্ধ করব, কত মন্দই না সে আবাস”! [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১৫]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِلَّا بَلَٰغٗا مِّنَ ٱللَّهِ وَرِسَٰلَٰتِهِۦۚ وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَإِنَّ لَهُۥ نَارَ جَهَنَّمَ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدًا ٢٣ ﴾ [ الجن : ٢٣ ]

“আল্লাহর বাণী পৌঁছানো ও তার পয়গাম প্রচার করাই আমার কাজ। যে কেউ আল্লাহ ও তার রাসূলকে অমান্য করে, তার জন্য আছে জাহান্নামের আগুন; তাতে তারা চিরকাল থাকবে”। [সূরা আন-জিন্ন, আয়াত: ২৩]

﴿ٱلَّذِينَ كَذَّبُواْ بِٱلۡكِتَٰبِ وَبِمَآ أَرۡسَلۡنَا بِهِۦ رُسُلَنَاۖ فَسَوۡفَ يَعۡلَمُونَ ٧٠ إِذِ ٱلۡأَغۡلَٰلُ فِيٓ أَعۡنَٰقِهِمۡ وَٱلسَّلَٰسِلُ يُسۡحَبُونَ ٧١ فِي ٱلۡحَمِيمِ ثُمَّ فِي ٱلنَّارِ يُسۡجَرُونَ ٧٢ ﴾ [ غافر : ٧٠، ٧٢ ]

“যারা কিতাবকে আর আমি আমার রাসূলদেরকে যা দিয়ে পাঠিয়েছি তাকে অস্বীকার করে, তারা শীঘ্রই জানতে পারবে। যখন তাদের গলায় থাকবে বেড়ি আর শিকল; তাদের টেনে নিয়ে যাওয়া হবে -ফুটন্ত পানিতে, অতঃপর তাদেরকে আগুনে দগ্ধ করা হবে”। [সূরা গাফির, আয়াত: ৭০-৭২]

১৮. যারা আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য পরিহার করবে তাদের সমস্ত আমল নষ্ট হয়ে যাবে। আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের আনুগত্য ছাড়া কোনো আমল কাজে আসবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَلَا تُبۡطِلُوٓاْ أَعۡمَٰلَكُمۡ ٣٣﴾ [ محمد : ٣٣ ]

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর আর রাসূলের আনুগত্য কর আর তোমাদের আমলগুলোকে নষ্ট করে দিও না”। [সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ৩৩]

১৯. আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের পথ অবলম্বন করুন। রাসূলের পথ বাদ দিয়ে শয়তানের পথে চলার পর অনুশোচনা, কোনো কাজে আসবে না। সুতরাং সময় থাকতে তাওবা করে কুরআন ও সহীহ হাদীসের দিকে আসুন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَيَوۡمَ يَعَضُّ ٱلظَّالِمُ عَلَىٰ يَدَيۡهِ يَقُولُ يَٰلَيۡتَنِي ٱتَّخَذۡتُ مَعَ ٱلرَّسُولِ سَبِيلٗا ٢٧ ﴾ [ الفرقان : ٢٧ ]

“যালিম সেদিন আপন হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে, হায় আফসোস! আমি যদি রাসূলের সাথে পথ অবলম্বন করতাম”। [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ২৮]

﴿يَٰوَيۡلَتَىٰ لَيۡتَنِي لَمۡ أَتَّخِذۡ فُلَانًا خَلِيلٗا ٢٨ ﴾ [ الفرقان : ٢٨ ]

“হায় আমার দুর্ভাগ্য, আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম”। [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ২৮]

﴿لَّقَدۡ أَضَلَّنِي عَنِ ٱلذِّكۡرِ بَعۡدَ إِذۡ جَآءَنِيۗ وَكَانَ ٱلشَّيۡطَٰنُ لِلۡإِنسَٰنِ خَذُولٗا ٢٩ ﴾ [ الفرقان : ٢٩ ]

“আমার কাছে উপদেশ আসার পর সে আমাকে তা থেকে বিভ্রান্ত করেছিল। আর শয়তান মানুষকে বিপদকালে ধোঁকা দেয়”। [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ২৯]

২০. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ যেরূপ হওয়া উচিৎ:

আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন,

«إِنَّ اللَّهَ بَعَثَ إِلَيْنَا مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَا نَعْلَمُ شَيْئًا، فَإِنَّمَا نَفْعَلُ كَمَا رَأَيْنَا مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَفْعَلُ»

“আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমাদের নিকট প্রেরণ করেছেন, আমরা কিছুই জানতাম না। আমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যেরূপ করতে দেখি, আমরাও সেরূপ করি”। [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১০৬৬। আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ লি গাইরিহী বলে আখ্যায়িত করেন।]

আবূ জাফর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ ابْنُ عُمَرَ : إِذَا سَمِعَ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَدِيثًا لَمْ يَعْدُهُ، وَلَمْ يُقَصِّرْ دُونَهُ»

“ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোনো হাদীস শুনতেন, তাতে তিনি কোনো কিছু বাড়াতেন না এবং তা থেকে কিছু কমাতেন না।” [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪। আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।]

ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«اتَّخَذَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَاتَمًا مِنْ ذَهَبٍ، فَاتَّخَذَ النَّاسُ خَوَاتِيمَ مِنْ ذَهَبٍ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «إِنِّي اتَّخَذْتُ خَاتَمًا مِنْ ذَهَبٍ» فَنَبَذَهُ، وَقَالَ : إِنِّي لَنْ أَلْبَسَهُ أَبَدًا، فَنَبَذَ النَّاسُ خَوَاتِيمَهُمْ»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সোনার আংটি পরতেন। তখন লোকেরাও সোনার আংটি পড়তে লাগল। এরপর (একদিন) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আমি সোনার আংটি পরছিলাম -তারপর তিনি তা ছুঁড়ে ফেলে দিলেন এবং বললেন: আমি আর কোনো দিনই তা পরব না। ফলে লোকেরাও তাদের আংটিগুলো ছুঁড়ে ফেলল”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭২৯৮।]

উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি হাজরে আসওয়াদের কাছে এসে তা চুম্বন করে বললেন,

«إِنِّي أَعْلَمُ أَنَّكَ حَجَرٌ، لاَ تَضُرُّ وَلاَ تَنْفَعُ، وَلَوْلاَ أَنِّي رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُقَبِّلُكَ مَا قَبَّلْتُكَ»

“আমি অবশ্যই জানি যে, তুমি একখানা পাথর মাত্র, তুমি কারোও কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে পার না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তোমায় চুম্বন করতে না দেখলে কখনো আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫৯৭।]

২১. হাদীস অমান্য কারীর সঙ্গে সম্পর্ক কিরূপ হওয়া চাই:

আবদুল্লাহ ইবন মুগাফ্‌ফাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,

«أَنَّهُ كَانَ جَالِسًا إِلَى جَنْبِهِ ابْنُ أَخٍ لَهُ، فَخَذَفَ، فَنَهَاهُ، وَقَالَ : إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْهَا وَقَالَ : «إِنَّهَا لَا تَصِيدُ صَيْدًا، وَلَا تَنْكِي عَدُوًّا، وَإِنَّهَا تَكْسِرُ السِّنَّ، وَتَفْقَأُ الْعَيْنَ» قَالَ : فَعَادَ ابْنُ أَخِيهِ يخذفَ فَقَالَ : أُحَدِّثُكَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْهَا، ثُمَّ عُدْتَ تَخْذِفُ، لَا أُكَلِّمُكَ أَبَدًا»

“একদা তার কাছে তার এক ভাতিজা বসা ছিল। সে তখন কঙ্কর নিক্ষেপ করছিল। তিনি তাকে তা থেকে নিষেধ করলেন এবং বললেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কাজ থেকে নিষেধ করছেন। তিনি আরও বললেন: এতে না শিকার করা হয়, আর না শত্রু পরাভূত হয়, বরং তা দাঁত ভেঙ্গে দেয় অথবা চক্ষু নষ্ট করে দেয়। বর্ণনাকারী বলেন, তার ভাইপো পুনরায় পাথর নিক্ষেপ করলে তিনি (ইবন মুগাফ্‌ফাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, আমি তোমাকে হাদীস শুনাচ্ছি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করতে নিষেধ করেছেন। অথচ এরপরও তুমি কঙ্কর নিক্ষেপ করছ? আমি তোমার সাথে আর কখনও কথা বলব না। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৫৪।]

ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لَا تَمْنَعُوا إِمَاءَ اللَّهِ أَنْ يُصَلِّينَ فِي الْمَسْجِدِ» فَقَالَ ابْنٌ لَهُ : إِنَّا لَنَمْنَعُهُنَّ، فَقَالَ : فَغَضِبَ غَضَبًا شَدِيدًا، وَقَالَ : أُحَدِّثُكَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وتقولُ : إِنَّا لَنَمْنَعُهُنَّ؟»

“তোমরা আল্লাহর বান্দীদের (মহিলাদের) মসজিদে সালাত আদায় করতে মানা করো না। তখন ইবন উমারের এক পুত্র বললেন: আমরা অবশ্যই তাদের নিষেধ করব। বর্ণনাকারী বলেন, এতে তিনি (ইবন উমার) ভয়ানক রাগান্বিত হয়ে বললেন: আমি তোমার নিকট রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস বর্ণনা করছি, অথচ তুমি বলছ যে, আমরা অবশ্যই তাদের নিষেধ করব [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৬, হাদীসটি সহীহ।]?”

২২. হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন জরুরী। কারণ, মিথ্যা হাদীস বর্ণনাকারী জাহান্নামী। তাই সহীহ ও হাসান হাদীস ছাড়া জাল বা দ‘ঈফ হাদীস আমল করার জন্য বর্ণনা করা যাবে না। তবে বর্জন করার জন্য দ‘ঈফ ও জাল হাদীস জানা দরকার। দ‘ঈফ হাদীস রাসূলের সুন্নাহর ব্যাপারে কিছু অনুমান-ধারণার সৃষ্টি করে মাত্র। “হে মুমিনগণ! তোমরা অধিকাংশ অনুমান হতে দূরে থাক। কারণ, অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপ”। আর জাল বা মিথ্যা হাদীস যা স্পষ্ট রাসূলের কথা নয়। সুতরাং হাদীস যাচাই করতে হবে। তাক্বলীদ করা চলবে না (বিনা দলীল-প্রমাণে কারো কথা মেনে নেওয়া)।

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«كَفَى بِالْمَرْءِ كَذِبًا أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ»

“কোনো ব্যক্তি মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে তাই বলে বেড়ায়”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০।]

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِن جَآءَكُمۡ فَاسِقُۢ بِنَبَإٖ فَتَبَيَّنُوٓاْ أَن تُصِيبُواْ قَوۡمَۢا بِجَهَٰلَةٖ فَتُصۡبِحُواْ عَلَىٰ مَا فَعَلۡتُمۡ نَٰدِمِينَ ٦ ﴾ [ الحجرات : ٦ ]

“মুমনিগণ! যদি কোনো পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ আনয়ন করবে, তবে তোমরা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতি সাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হও”। [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ৬]

আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لاَ تَكْذِبُوا عَلَيَّ، فَإِنَّهُ مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ فَلْيَلِجِ النَّارَ»

“তোমরা আমার ওপর মিথ্যারোপ করো না। কারণ, যে আমার ওপর মিথ্যারোপ করে সে জাহান্নামে যাবে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১০৬।]

আব্দুল্লাহ ইবন যুবায়ের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার পিতা যুবায়রকে বললাম:

«إِنِّي لاَ أَسْمَعُكَ تُحَدِّثُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَمَا يُحَدِّثُ فُلاَنٌ وَفُلاَنٌ؟ قَالَ : أَمَا إِنِّي لَمْ أُفَارِقْهُ، وَلَكِنْ سَمِعْتُهُ يَقُولُ : «مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ»

“আমি তো আপনাকে অমুক অমুকের মতো আল্লাহর রাসূলের হাদীস বর্ণনা করতে শুনি না। তিনি বললেন: জেনে রেখ! আমি তার (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে দূরে থাকি নি, কিন্তু আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, যে আমার ওপর মিথ্যারোপ করে সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১০৭।]

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«إِنَّهُ لَيَمْنَعُنِي أَنْ أُحَدِّثَكُمْ حَدِيثًا كَثِيرًا أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : «مَنْ تَعَمَّدَ عَلَيَّ كَذِبًا، فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ»

“এ কথাটি তোমাদের নিকট বহু হাদীস বর্ণনা করতে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায় যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ইচ্ছাকৃতভাবে আমার ওপর মিথ্যারোপ করে সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয় [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১০৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২।]।”

সালামাহ ইবন আকওয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি,

«مَنْ يَقُلْ عَلَيَّ مَا لَمْ أَقُلْ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ»

“যে ব্যক্তি আমার ওপর এমন কথা আরোপ করে যা আমি বলিনি, সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১০৯।]

২৩. মত বিরোধপূর্ণ পরিবেশে সুন্নাত ও হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদিনের আদর্শের ওপর অবিচল থাকা অপরিহার্য। আর বিদ‘আত পরিত্যাগ করতে হবে।

«عَلَيْكُمْ بِتَقْوَى اللَّهِ، وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ، وَإِنْ عَبْدًا حَبَشِيًّا، وَسَتَرَوْنَ مِنْ بَعْدِي اخْتِلَافًا شَدِيدًا، فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي، وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ، عَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ، وَإِيَّاكُمْ وَالْأُمُورَ الْمُحْدَثَاتِ، فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ»

“তোমরা আল্লাহকে ভয় করবে আর শুনবে ও মানবে, যদিও তোমাদের নেতা হাবশী গোলাম হয়। আমার পরে অচিরেই তোমরা কঠিন মতবিরোধ দেখতে পাবে। তখন তোমাদের ওপর আমার সুন্নাত ও হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের আদর্শের ওপর অবিচল থাকা অপরিহার্য। তোমরা তা শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে থাকবে। সাবধান! তোমরা বিদ‘আত পরিহার করবে। কেননা প্রত্যেক বিদ‘আতই গোমরাহি-পথভ্রষ্ট।” [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪২।]

২৪. যুগে যুগে ইত্তেবা‘য়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা সুন্নাতের অনুসরণে যারা অগ্রবর্তী, যারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অনুসারী, যে জামা‘আত আঁকড়ে ধরার জন্য আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন, আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভূক্ত হবে। সুতরাং যারা কুরআন হাদীসের অনুসরণকে বাদ দিয়ে যুক্তির পিছনে ছুটে ঘুরে বেড়ায় তাদের পথ পরিহার করতে হবে। আমাদেরকে আহলুর রায় থেকে বের হয়ে আসতে হবে এবং কুরআন ও সহীহ হাদীসের অনুসারী হতে হবে।

আবু হুরাইর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«تَفَرَّقَتِ اليَهُودُ عَلَى إِحْدَى وَسَبْعِينَ أَوْ اثْنَتَيْنِ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً، وَالنَّصَارَى مِثْلَ ذَلِكَ، وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلاَثٍ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً» .

“ইয়াহূদী জাতি ৭১ বা ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল। নাসারাও তাই। আর আমার উম্মাত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে।” [তিরমিযী, হাদীস নং ২৬৪০; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৯৯১।]

আওফ ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«افْتَرَقَتِ الْيَهُودُ عَلَى إِحْدَى وَسَبْعِينَ فِرْقَةً، فَوَاحِدَةٌ فِي الْجَنَّةِ، وَسَبْعُونَ فِي النَّارِ، وَافْتَرَقَتِ النَّصَارَى عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً، فَإِحْدَى وَسَبْعُونَ فِي النَّارِ، وَوَاحِدَةٌ فِي الْجَنَّةِ، وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَتَفْتَرِقَنَّ أُمَّتِي عَلَى ثَلَاثٍ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً، وَاحِدَةٌ فِي الْجَنَّةِ، وَثِنْتَانِ وَسَبْعُونَ فِي النَّارِ»، قِيلَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ هُمْ؟ قَالَ : «الْجَمَاعَةُ»

“ইয়াহূদী জাতি ৭১ দলে বিভক্ত হয়েছিল। একদল জান্নাতী আর ৭০ দল জাহান্নামী। খ্রিস্টানরা ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল। ৭১ দল জাহান্নামী আর একদল জান্নাতী। সেই মহান সত্তার শপথ, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, অবশ্যই আমার উম্মাত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। একটি দল হবে জান্নাতী। আর ৭২টি দল হবে জাহান্নামী। বলা হলো, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কারা জান্নাতী? তিনি বললেন: আল-জামা‘আত (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীদের জামা‘আত)”। [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৯৯২।]

আনাস ইবন মালিক থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«إِنَّ بَنِي إِسْرَائِيلَ افْتَرَقَتْ عَلَى إِحْدَى وَسَبْعِينَ فِرْقَةً، وَإِنَّ أُمَّتِي سَتَفْتَرِقُ عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً، كُلُّهَا فِي النَّارِ، إِلَّا وَاحِدَةً وَهِيَ : الْجَمَاعَةُ»

“বনী ইসরাঈল ৭১ দলে বিভক্ত হয়েছিল। আমার উম্মাত ৭২ দলে বিভক্ত হবে। একটি দল ব্যতীত সবাই হবে জাহান্নামী। আর তা হচ্ছে আল-জামা‘আত।” [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৯৯৩।]

আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لَيَأْتِيَنَّ عَلَى أُمَّتِي مَا أَتَى عَلَى بني إسرائيل حَذْوَ النَّعْلِ بِالنَّعْلِ، حَتَّى إِنْ كَانَ مِنْهُمْ مَنْ أَتَى أُمَّهُ عَلاَنِيَةً لَكَانَ فِي أُمَّتِي مَنْ يَصْنَعُ ذَلِكَ، وَإِنَّ بني إسرائيل تَفَرَّقَتْ عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ مِلَّةً، وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلاَثٍ وَسَبْعِينَ مِلَّةً، كُلُّهُمْ فِي النَّارِ إِلاَّ مِلَّةً وَاحِدَةً، قَالُوا : وَمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ : مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي» .

“বনী ইসরাঈলের যে অবস্থা এসেছিল অবশ্যই আমার উম্মাতের মধ্যে অনুরূপ অবস্থা আসবে। এমনকি তাদের কেউ যদি প্রকাশ্যে তার মায়ের সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে থাকে তবে আমার উম্মাতেরও কেউ তাতে লিপ্ত হবে। বনী ইসরাঈল ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল। আমার উম্মাত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। একটি দল ব্যতীত সবাই হবে জাহান্নামী। বলা হলো একটি দল (যারা জান্নাতী) কারা? তিনি বললেন: আমি এবং আমার সাহাবীগণ আজকের দিনে যার ওপর (প্রতিষ্ঠিত)”। [তিরমিযি, হাদীস নং ২৬৪১]

১০
যুগে ইত্তেবা‘য়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা সুন্নাতের অনুসরণে যারা অগ্রবর্তী তাদের তালিকা নিম্নে দেওয়া হলো। সাহাবী:
১.আবূ বকর সিদ্দিক (১৩ হি.)

২.উমার ইবনুল খাত্তাব (২৩ হি., বর্ণিত হাদীস ৫৩৯)

৩.উসমান ইবন আফ্‌ফান (৩৫ হি.)

৪.আলী ইবন আবী তালিব (৪০ হি., বর্ণিত হাদীস ৫৮৬)

৫.আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (৩২ হি., বর্ণিত হাদীস ৮৪৮)

৬.আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (৬৮ হি., বর্ণিত হাদীস ২৬৬০, তাফসীরে ইবন আব্বাস)

৭.আব্দুল্লাহ ইবন উমার (৭৩ হি., বর্ণিত হাদীস ১৬৩০)

৮.আয়েশা বিনতে আবূ বকর (৫৮ হি., বর্ণিত হাদীস ২২১০)

৯.যায়দ ইবন সাবিত (৪৫ হি.)

১০.আবূ মুসা আশ‘আরী (৪৪ হি.)

১১.মুয়ায ইবন জাবাল (১৭ হি., বর্ণিত হাদীস ১৫৭)

১২.উবাই ইবন কা‘ব (৩২ হি., বর্ণিত হাদীস ৬৪)

১৩.আবূ হুরায়রা (৫৮ হি., বর্ণিত হাদীস ৫৩৭৪)

১৪.আব্দুল্লাহ ইবন যুবায়ের (১-৭৩ হি.)

১৫.জাবির ইবন আবদুল্লাহ (৭৪ হি., বর্ণিত হাদীস ১৫৪০)

১৬.আনাস ইবন মালেক (৯১ হি., বর্ণিত হাদীস ২২৮৬)

১৭.আবু সাঈদ খুদরী (৭৪ হি., বর্ণিত হাদীস ১১৭০)

১৮.আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল ‘আস (৬৫ হি., বর্ণিত হাদীস ৭০০)

১১
তাবেঈ:
১৯.সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব (১৫ হি.-৯৪ হি., ৭১৩ সন)

২০.ওরওয়াহ ইবন যুবায়ের ইবনুল আওয়াম (২২-৯৪ হি.)

২১.সুলায়মান ইবন ইয়াসার (৯৪ হি.)

২২.সাঈদ ইবন যুবায়ের (৯৫ হি.)

২৩.কাসিম ইবন মুহাম্মাদ ইবন আবূ বকর সিদ্দিক (১০১ হি.)

২৪.ইকরামা (১০৫ হি.)

২৫.তাউস ইবন কাইসান (১০৬ হি.)

২৬.সালিম ইবন আবদুল্লাহ ইবন উমার (১০৬ হি.)

২৭.আতা ইবন আবী রিবাহ ১১৪ হি

২৮. মুহাম্মদ ইবন মুসলিম ওরফে ইবন শিহাব যুহরী (৫৮-১২৪ হি.)

২৯.মুজাহিদ ইবন জাবার (১১৪ হি.)

৩০.হাসান ইবন ইয়াসার ওরফে হাসান বসরী (২১-১১০ হি.)

৩১.মুহাম্মদ ইবন সীরীন (৩৩-১১০ হি., ৭২৯ সন)

১২
তাবে-তাবেঈ:
৩২. নু‘মান ইবন সাবিত ওরফে ইমাম আবূ হানিফা (৮০-১৫০ হি.)

৩৩. সুফিয়ান ইবন সাঈদ ওরফে ইমাম সুফিয়ান ছাওরি (৯৭-১৬১ হি.)

৩৪. মালিক ইবন আনাস (৯৩-১৭৯ হি. আল-মুয়াত্তা)

৩৫. আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক (১৮১ হি. আয-যুহদ)

৩৬.নাফে ইবন উমার আল-জামহী (১৭৯ হি.)

৩৭. আব্দুর রহমান ইবন আমর ওরফে ইমাম আওযাঈ (৮৮-১৫৭ হি.)

১৩
মুহাদ্দিস ও ফকীহ ইমামগণ:
৩৮. শাফে‘ঈ, মুহাম্মাদ ইবন ইদরীস (১৫০-২০৪ হি. আল-উম্ম, আর-রিসালা, আল মুসনাদ)

৩৯. আব্দুর রাজ্জাক সান‘আনী (২১১ হি. আল মুসান্নাফ)

৪০. ইবন আবী শাইবা, আব্দুল্লাহ ইবন মুহাম্মাদ (২৩৫ হি. আল মুসান্নাফ)

৪১.ইসহাক ইবন ইবরাহীম ওরফে ইমাম ইসহাক্ব ইবন রাহওয়াই (১৬৬-২৩৮ হি. আস-সুনান)

৪২. আহমদ ইবন হাম্বাল (১৬৪-২৪১ হি. আল-মুসনাদ/ শরাহু ফাতহুর রব্বানী)

৪৩. আবদ ইবন হুমাইদ (২৪৯ হি. আল-মুসনাদ)

৪৪.দারেমী, আব্দুল্লাহ ইবন আব্দুর রাহমান (১৮১-২৫৫ হি. আস-সুনান)

৪৫. বুখারী, মুহাম্মাদ ইবন ইসমাঈল (১৯৪-২৫৬ হি. আস-সহীহ, শারহু ফাতহুল বারী)

৪৬. মুসলিম ইবন হাজ্জাজ (২০৪-২৬১ হি. আস-সহীহ, শারহু আলমিনহাজ্জ)

৪৭. আবূ দাঊদ, সুলাইমান ইবন আশ‘আস ২০২-২৭৫ হি. আস-সুনান)

৪৮. ইবন মাজাহ, মুহাম্মাদ ইবন ইয়াজিদ (২০৯-২৭৩ হি. আস-সুনান)

৪৯. তিরমিযী, মুহাম্মাদ ইবন ঈসা (২৭৯ হি. জামি তিরমিযী/আস-সুনান, কিতাবুশ শামাইল)

৫০. ইবন আবীদ দুনিয়া (২৮১ হি. কিতাবুত সামত ও আদাবুল লিসান, মাওসূআতু ইবন আবীদ দুনিয়া)

৫১.বায্যার, আবূ বকর আহমদ ইবন আমর (২৯২ হি. আল-মুসনাদ)

৫২. নাসাঈ, আহমদ ইবন শু‘আইব (৩০৩ হি. আস-সুনান, আস-সুনানুল কুবরা)

৫৩. আবূ ইয়ালা আল-মাউসিলী (৩০৭ হি. আল-মুসনাদ)

৫৪. ইবন খুযাইমা, আবুবকর মুহাম্মাদ ইবন ইসহাক (৩১১ হি. আস-সহীহ)

৫৫. ইবন হিব্বান, মুহাম্মাদ ইবন হিব্বান (৩৫৪ হি. আস-সহীহ)

৫৬. তাবারানী, সুলাইমান ইবন আহমদ (৩৬০ হি. আল-মুজামুল কাবীর, আল-মুজামুল আউসাত, আল-মুজামুস সগীর)

৫৭. আলী ইবন উমার আদ্-দারাকুতনী (৩৮৫ হি. আস-সুনান)

৫৮. হাকিম নিসাপুরী, মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল্লাহ (৩২১-৪০৫ হি. আল-মুসতাদরাক)

৫৯. ইবন হাযম, আলী ইবন আহমদ (৪৫৬ হি. আল মুহাল্লা)

৬০. বাইহাকী, আহমদ ইবনুল হুসাইন (৪৫৮ হি. আস-সুনানুল কুবরা, শুআবূল ঈমান)

৬১. ইবনুল জাউযী, আবুল ফারাজ আব্দুর রাহমান ইবন আলী (৫৯৭ হি. আল-মাউযুআত, আয-যুয়াফা ওয়াল মাতরূকুন)

৬২. কুরতুবি, আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবন আহমদ (৬৭১ হি. আল-জামেলি আহকামুল কুরআন)

৬৩. নব্বী, ইয়াহইয়া ইবন শারাফ (৬৩১-৬৭৬ হি. আল-মিনহাজ্জ ফি শারহু সহীহ মুসলিম, রিয়াদুস সালেহীন, জামিউস সুন্নাহ, আল মাজমূ শারহুল মাহযাব আন্ নভবী ২০ খণ্ড)

৬৪. ইমাম ইবন তাইমিয়া, আহমদ ইবন আব্দুল হালীম (৬৬১-৭২৮ হি. মাজমূ‘উ ফাতাওয়া, মিনহাজুস্সুন্নাহ)

৬৫. ইমাম যাহাবী, মুহাম্মাদ ইবন আহমাদ (৬৭৩-৭৪৮ হি. মীযানুল ইতিদাল, সিয়ারু আলামিন নুবালা, তাযকিরাতুল হুফফায)

৬৬. ইমাম ইবনূল কাইয়্যেম, মুহাম্মাদ ইবন আবূ বকর (৬৯১-৭৫১ হি. যাদুল মা‘আদ)

৬৭. ইমাম ইবন কাসীর ইসমাঈল ইবন উমার (৭০১-৭৭৪ হি. তাফসীর আল-কুরআন আল-আযীম)

৬৮. হাফিজ ইবন হাজার আসকালানী, আহমদ ইবন আলী (৭৭৩-৮৫২ হি. লিসানুল মিযান, ফাতহুল বারী ফী শারহিল বুখারী, তাকরীবুত তাহযীব, তাহযীবুত তাহযীব, তালখীসুল হাবীর, বুলুগুল মারাম-শারহু সুবুলুস সালাম)

৬৯. শাওকানী, মুহাম্মাদ ইবন আলী (১১৭২-১২৫৫ হি. আল-ফাওয়ায়েদ আল-মাজমুয়া ফিল আহাদিসিল মাওযুয়াহ, নেইলুল আওতার, তাফসীরে ফাতহুল কাদীর)

৭০. আলবানি, মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দিন (১৯১৪-১৯৯৯ সন: সিলসিলাতুল আহাদীসিস দ‘ঈফাহ, সিলসিলাতুল আহাদীসিস সাহীহাহ, ইরওয়াউল গালীল, তামামুল মিন্নাহ)

৭১. মুহাম্মাদ ইবন সালিহ আল-উসাইমীন (১৩৪৭-১৪২১ হি. মাজমূআ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েল ২৬ খণ্ড, শারহু মুমতা‘আ আলা যাদুল মুসতাক্বনি ১৫ খণ্ড, আল-কাওলুল মুফীদ আলা কিতাবিত তাওহীদ, শারহু আক্বীদাতুল ওয়াসিতিয়া)

১৪
সুন্নাতের অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলী: হাদীস গ্রন্থ:
১.সহীহ বুখারী, মুহাম্মাদ ইবন ইসমাঈল: আস-সহীহ

২.ফাতহুল বারী ফী শারহিল বুখারী

৩.মুসলিম ইবন হাজ্জাজ: আস-সহীহ

৪.আল-মিনহাজ্জ ফি শারহু সহীহ মুসলিম

৫.আবূ দাউদ: আস-সুনান

৬.আবূ দাউদ: শারহু আওনুল মা‘বুদ

৭.ইবন মাজাহ: আস-সুনান

৮.তিরমিযী: জামে‘ তিরমিযী-আস-সুনান

৯.তিরমিযী: শারহু তুওফাতুল আহওয়াযী

১০.নাসাঈ: আস-সুনান,

১১.ইবন খুযাইমা: আস-সহীহ

১২.ইবন হিব্বান: আস-সহীহ

১৩.হাকিম নিসাপুরী: আল-মুসতাদরাক

১৪.বাইহাকী: আস-সুনানুল কুবরা

১৫.রিয়াদুস সালেহীন

১৬.তালখীসুল হাবীর

১৭.বুলুগুল মারাম

১৮.সুবুলুস সালাম

১৯.মাযমাউয যাওয়ায়েদ-হাইসামী (৭৩৫-৮০৭ হি.)

২০.ইরওয়াউল গালীল -আলবানি

২১.সিলসিলাতুল আহাদীসিস দ‘ঈফাহ- আলবানি

২২. সিলসিলাতুল আহাদীসিস সাহীহাহ- আলবানি

১৫
ফিকহী গ্রন্থ:
২৩. আল মুহাল্লা -ইবন হাযম ৪৫৬ হি.

২৪. আল-মুগনী -ইবনে কুদামা

২৫. আল মাজমু -নব্বী, ইয়াহইয়া ইবন শারাফ -২০ খণ্ড

২৬. মাজমূ’উ ফাতাওয়া -ইমাম ইবন তাইমিয়া -৩৭ খণ্ড

২৭. যাদুল মা‘আদ- ইমাম ইবনূল কাইয়্যেম -৫ খণ্ড

২৮. নাইলুল আওতার -শাওকানী

২৯. মাজমূআ ফাতাওয়া ইবন বায -শাইখ আবদুল আযীয ইবন বায

৩০. মাজমূআ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েল ২৬ খণ্ড -মুহাম্মাদ ইবন সালিহ আল-উসাইমীন

৩১. আশ-শারহু মুমতা‘আ আলা যাদুল মুসতাক্বনি ১৫ খণ্ড -মুহাম্মাদ ইবন সালিহ আল-উসাইমীন

৩২. ফিকহুস সুন্নাহ -সাইদ সাবিক (তাহক্বীক তামামুল মিন্নাহ-আলবানী)

৩৩. সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ- আবু মালিক কামাল ইবন সাইদ সালিম- ৪ খণ্ড

৩৪. আল ফিকহ আলাল মাজাহিবিল আর-বাআ

৩৫. বিদাআতুল মুজতাহিদ-ইবনে রুশদ

৩৬. ফাতাওয়া ইসলামিয়া

৩৭. ফাতাওয়া লাজনা আদ দায়েমা

৩৮. আল মাওসুআতু ফীকহীয়া কুয়েতীয়া -৪৫ খণ্ড

১৬
আক্বীদা:
৩৯.শারহু আক্বীদাতুল ওয়াসীতিয়া -ইবন উসাইমিন

৪০.আল কাওলুল মুফিদ আলা শারহু কিতাবিত তাওহীদ -ইবন উসাইমিন

১৭
তাফসীরুল কুরআন:
৪১.আল-জামে লি আহকামুল কুরআন-কুরতুবি (৬৭১ হি.)

৪২.তাফসীর আল-কুরআন আল-আযীম-ইমাম ইবন কাসীর ইসমাঈল ইবন উমার (৭০১-৭৭৪ হি.)

৪৩.তাফসীরে ফাতহুল কাদীর -শাওকানী (১১৭২-১২৫৫ হি.)

১৮
হাদীসের রাবীদের জীবনী-রিজাল শাস্ত্র: সহীহ, হাসান, দ‘ঈফ, জাল নির্ণয়:
৪৪. মীযানুল ইতিদাল -ইমাম যাহাবী, মুহাম্মাদ ইবন আহমাদ (৬৭৩-৭৪৮ হি.)

৪৫. লিসানুল মিযান -হাফেয ইবন হাজার আসকালানী (৭৭৩-৮৫২ হি.)

৪৬.তাকরীবুত তাহযীব -হাফেয ইবন হাজার আসকালানী

৪৭.তাহযীবুত তাহযীব -হাফেয ইবন হাজার আসকালানী

১৯
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী:
৪৮.আর রাহীকুল মাখতূম -সফিউর রহমান মুবারকপুরী

২০
আরবী অভিধান:
৪৯. আলকামুসুল মুহীত্ব -আল ফিরোযাবাদী (৭২৯-৮১৭ হি.)

৫০. লিসানুল আরব -ইবন মানযুর (৬৩০-৭১১ হি.)

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন