মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
সুন্নাহ বা হাদীস যার মাধ্যমে রাসূলের ইত্তেবা‘ করা হয় তার গুরুত্ব:
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/233/9
সুন্নাহ শব্দের অর্থ চলার পথ, কর্মের নীতি ও পদ্ধতি। যে পন্থা ও রীতি মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবলম্বন করতেন তাই সুন্নাহ। কুরআনে রাসূলের সর্বোত্তম আদর্শ বলতে সুন্নাহকেই বুঝানো হয়েছে। হাদীসের অপর নাম সুন্নাহ। হাদীস অর্থ কথা, বাণী, সংবাদ, খবর, প্রাচীন ও পুরাতনের বিপরীত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা, কাজ ও সমর্থনকে হাদীস বলে।
১. সুন্নাহ হলো এক প্রকার ওহী:
ওহী দুই প্রকার: এক- ওহী মাতলু, দুই- ওহী গাইরে মাতলু। ওহী মাতলু হলো, কুরআন মাজীদ। আর ওহী গায়রে মাতলু হলো, সুন্নাহ বা হাদীস। সুন্নাহ বা হাদীস ও আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে প্রেরিত ওহী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
সুন্নাহ হলো কুরআনের ব্যাখ্যা। সুন্নাহ বাদ দিয়ে কুরআনের ওপর আমল করা বা কুরান বুঝা সম্ভব নয়। যেমন, সালাত কায়েম করা, যাকাত আদায় করা ইত্যাদি আদেশ কুরআনে দেওয়া হয়েছে কিন্তু সালাত কীভাবে আদায় করতে হবে এবং যাকাত কী পরিমাণ আদায় করতে হবে, কোন কোন সম্পদের যাকাত দিতে হবে এবং কোন সম্পদের যাকাত দিতে হবে না -তা বিস্তারিত আলোচনা করা হয় নি। এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হাদীসেই করা হয়েছে।
“(তাদের প্রেরণ করেছি) স্পষ্ট প্রমাণাদি ও কিতাবসমূহ এবং তোমার প্রতি নাযিল করেছি কুরআন, যাতে তুমি মানুষের জন্য স্পষ্ট করে দিতে পার, যা তাদের প্রতি নাযিল হয়েছে। আর যাতে তারা চিন্তা করে”। [সূরা আন-নাহাল, আয়াত: ৪৪]
“আর আমরা তোমার ওপর কিতাব নাযিল করেছি, শুধু এ জন্য যে, যে বিষয়ে তারা বিতর্ক করছে, তা তাদের জন্য তুমি স্পষ্ট করে দিবে এবং (এটি), হিদায়াত ও রহমত সেই কাওমের জন্য যারা ঈমান আনে”। [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৬৪]
“আর আমরা প্রত্যেক রাসূলকে তারা কওমের ভাষাতেই পাঠিয়েছি, যাতে সে তাদের নিকট বর্ণনা দেয়। সুতরাং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সঠিক পথ দেখান। আর তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়”। [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৪]
আল্লাহ প্রত্যেক রাসূলের ওপর তার নিজ ভাষায় কিতাব নাযিল করেছেন যাতে রাসূলগণ ব্যাখ্যা করে জনগণকে ভালভাবে বুঝাতে পারেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের ব্যাখ্যা করে বুঝিয়েছেন যা হাদীসের মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা সংরক্ষণ করেছেন। যদিও হাদীসের মধ্যে রাসূলের নামে অনেক কথাই বিদ্যমান। কিন্তু সম্মানিত মুহাদ্দিস ইমামগণ কোনটি রাসূলের কথা আর কোনটি রাসূলের কথা নয়, তা পৃথক করেছেন। দ‘ঈফ ও জাল বা মিথ্যা হাদীস অবশ্যই বর্জন করতে হবে যা রাসূলের নামে মিথ্যুকরা চালিয়ে দিয়েছে। আমরা কেবল সহীহ ও হাসান হাদীসই গ্রহণ করব। যদি কখনো কোনো দ‘ঈফ হাদীস উল্লেখ করতে হয়, তবে স্পষ্ট করে দিতে হবে।
মালিক ইবন আনাস থেকে মুরসালরূপে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“এবং আল্লাহ তোমার প্রতি গ্রন্থ ও হিকমাহ (হাদীস) অবতীর্ণ করেছেন এবং তুমি যা জানতে না, তিনি তাই তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১৩]
আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা যেমনিভাবে কুরআন নাযিল করার কথা বলেন, অনুরূপভাবে হিকমাহ অর্থাৎ সুন্নাহ নাযিল করার কথাও বলেন। এতে প্রমাণিত হয় যে, সুন্নাহও আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত ওহী। সুতরাং কুরআন যেমন আল্লাহর ওহী অনুরূপভাবে সুন্নাহও আল্লাহর ওহী। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
“নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অত্যন্ত অনুকম্পা প্রদর্শন করেছেন যখন তাদের নিকট তাদের নিজস্ব একজনকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন, সে তাদেরকে আল্লাহর আয়াত পড়ে শোনাচ্ছে, তাদেরকে পরিশোধন করছে, তাদেরকে কিতাব ও হিকমাহ (হাদীস) শিক্ষা দিচ্ছে”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৬৪]
“আল্লাহর আয়াত ও হিকমাহ (হাদীস) এর কথা যা তোমাদের গৃহে পঠিত হয়, তা তোমরা স্মরণ রাখবে, নিশ্চয় আল্লাহ অতি সূক্ষ্মদর্শী ও সর্ব বিষয়ে অবহিত”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৪]
অনেক বিদ্বানরা বলেছেন, হিকমাহ হলো সুন্নাহ বা হাদীস। কেননা কুরআন ছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের গৃহে যা পাঠ করা হত, তা ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ। এ জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“যে ব্যক্তি আমাদের এ দীনে নতুন কিছু উদ্ভাবন করেছে যা এতে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত”। [সহীহ বুখারী, হাদীস, হাদীস নং ২৪৭৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস, হাদীস নং ১৭১৮।]
“তিন ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের নিকট তার ইবাদতের অবস্থা জানার জন্য আসেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইবাদতের খবর শুনে তারা যেন তার ইবাদতকে কম মনে করলেন। তারা পরস্পর আলাপ করলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তুলনায় আমরা কী? আল্লাহ তা‘আলা তার আগের-পিছের সকল গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন। তাদের একজন বললেন, আমি সারা রাত সালাত আদায় করবো। দ্বিতীয়জন বললেন, আমি দিনে সিয়াম পালন করবো, আর কখনো তা ত্যাগ করবো না। তৃতীয় জন বললেন, আমি নারী থেকে দূরে থাকব, কখনো বিয়ে করবো না। তাদের এই পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে পড়লেন এবং বললেন, “তোমরা কি এ ধরনের কথাবার্তা বলেছিলে? খবরদার! আমি আল্লাহকে তোমাদের চেয়ে বেশি ভয় করি, তোমাদের চেয়ে বেশি তাকওয়া অবলম্বন করি। কিন্তু এরপরও আমি কোনো দিন সিয়াম পালন করি আবার কোনো দিন সিয়াম পালন ছেড়ে দিই। রাতে সালাত আদায় করি আবার ঘুমও যাই। নারীদেরকে বিয়েও করি। এটাই আমার পথ। তাই যে ব্যক্তি আমার পথ ছেড়ে দিয়েছে সে আমার (উম্মতের মধ্যে) গণ্য হবে না”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫০৬৩।]
সুতরাং ভালো কাজ বিশুদ্ধ নিয়তে করলেও কোনোই লাভ হবে না যতক্ষণ না রাসূলের সুন্নাত অনুযায়ী হয়। আর জেনে রাখা ভালো যে, সহীহ ও হাসান হাদীস ছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত প্রমাণিত হয় না।
৫. সুন্নাহ ছাড়া আমল হলো বিদ‘আত, আর বিদ‘আত হলো ভ্রষ্টতা, আর ভ্রষ্টতা হলো জাহান্নামের পথ:
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“অতঃপর অবশ্য অবশ্যই সর্বোত্তম বাণী হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার কিতাব। আর সর্বোচ্চ পথ হচ্ছে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পথ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট হলো দীনে নতুন জিনিস সৃষ্টি করা। এরূপ সব নতুন জিনিসই গুমরাহী (পথভ্রষ্ট)”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৬৭।]
জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট হলো দীনে নতুন জিনিস সৃষ্টি করা। এরূপ সব নতুন জিনিসই বিদ‘আত। এরূপ সব বিদ‘আত-ই-গুমরাহী (পথভ্রষ্ট)। এরূপ সব গুমরাহী (পথভ্রষ্ট) হবে জাহান্নামের আগুনে অবস্থিতির কারণ। [নাসাঈ, হাদীস নং ১৫৭৮।]
৬. সুন্নাহ হলো নাজাতের অসীলা, মুক্তির পথ:
সুন্নাহ’র অনুসরণ করার মধ্যেই নাজাত ও মুক্তি। সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করা ছাড়া নাজাত বা মুক্তি লাভ করা সম্ভব নয়।
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“আমার সকল উম্মাত জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করবে সে ব্যতীত। জিজ্ঞেস করা হলো, কে অস্বীকার করবে? তিনি বললেন, যারা আমার অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই (জান্নাতে প্রবেশ করতে) অস্বীকার করল”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭২৮০।]
“এসব আল্লাহর নির্ধারিত সীমা এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তার রাসূলের হুকুম অনুযায়ী চলবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার পাদদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত, তারা তাতে চিরকাল থাকবে এবং এটা বিরাট সাফল্য”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৩]
আয়াতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুসরণ করাকে মহা সাফল্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
“যারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করে, তারা নবী, সিদ্দিক, শহীদ এবং নেককার লোকদের সঙ্গী হবে, যাদের প্রতি আল্লাহ নি‘আমত দান করেছেন, তারা কতই না উত্তম সঙ্গী! [সূরা আনন-নিসা, আয়াত: ৬৯]
“বল, আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর। অতঃপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তার ওপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য সে দায়ী এবং তোমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য তোমরাই দায়ী এবং তোমরা তার আনুগত্য করলে সৎপথ পাবে, আর রাসূলের কাজ তো কেবল স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেওয়া। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৫৪]
“আর যে কেউই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে দাখিল করাবেন, যার নিচ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত। আর যে কেউ পিঠ ফিরিয়ে নিবে, তিনি তাকে ভয়াবহ শাস্তি দিবেন।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৩]
৭. রাসূলের ফায়সালার সামনে মুমিনের আর কোনো এখতিয়ার বা স্বাধীনতা থাকে না; বরং শুনলাম ও মানলাম বলা:
“কিন্তু না, তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা মুমিন হবে না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের বিবাদ-বিসম্বাদের মীমাংসার ভার তোমার ওপর ন্যস্ত না করে, অতঃপর তোমার ফয়সালার ব্যাপারে তাদের মনে কিছু মাত্র কুণ্ঠাবোধ না থাকে, আর তারা তার সামনে নিজেদেরকে পূর্ণরূপে সমর্পণ করে”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬৫]
“মুমিনদেরকে যখন তাদের মাঝে ফায়সালা করার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে ডাকা হয়, তখন মুমিনদের জওয়াব তো এই হয় যে, তারা বলে, আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম, আর তারাই সফলকাম”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৫১]
“আল্লাহ ও তার রাসূল কোনো নির্দেশ দিলে কোনো মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী উক্ত নির্দেশের ভিন্নতা করার কোনো অধিকার রাখে না। যে আল্লাহ ও তার রাসূলকে অমান্য করে সে গুমরাহ হয় সুস্পষ্ট গুমরাহীতে”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৬]
“বলে দাও, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাসো তবে আমার অনুসরণ কর আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাসমূহ ক্ষমা করবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। [সূরা আল ইমরান, আয়াত: ৩১]
১১. কুরআন ও সুন্নাহই সকল সমস্যার সমাধান:
একজন মুমিনের জন্য কুরআন ও সুন্নাহই হলো সব সমস্যার সমাধানের মূল।
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর অনুগত হও এবং রাসূলের অনুগত হও এবং তোমাদের মধ্যকার কর্তৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গেরও; তবে যদি কোনো বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটে, তাহলে সেই বিষয়কে আল্লাহ এবং রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও যদি তোমরা আল্লাহ এবং আখিরাতে ঈমান আন; এটাই উত্তম এবং সুন্দরতম মর্মকথা”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৫৯]
“আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর, পরস্পরে ঝগড়া বিবাদ কর না, তা করলে তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলবে, তোমাদের শক্তি-ক্ষমতা বিলুপ্ত হবে। আর ধৈর্য ধারণ করবে, আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন”। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৪৬]
১২. সহীহ হাদীস যখন আহ্বান করবে, তখন সকলকে সেই আহ্বানে সাড়া দেওয়া জরুরী। সহীহ হাদীসের বিপরীতে কোনো দূর্বল হাদীস বা যুক্তির পিছলে আমল করা যাবে না।
“আমি যেন তোমাদের মাঝে কাউকে এমন না পাই, সে তার খাটের ওপর ঠেস দিয়ে বসে থাকবে। আর আমি যা আদেশ দিয়েছি অথবা যা থেকে নিষেধ করেছি, তা তার কাছে পৌছলে সে তখন বলবে: এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না, আমরা আল্লাহর কিতাবে যা পেয়েছি, তারই অনুসরণ করি”। [আহমদ, হাদীস নং ২৩৮৭৬; আবূ দাউদ, হাদীস নং ৪৬০৫; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৩; তিরমিযী, হাদীস নং ২৬৬৩।]
“রাসূলের ডাককে তোমরা তোমাদের একের প্রতি অন্যের ডাকের মত গণ্য করো না। আল্লাহ তাদেরকে জানেন যারা তোমাদের মধ্যে চুপিসারে সরে পড়ে। কাজেই যারা তার আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, তাদের ওপর পরীক্ষা নেমে আসবে কিংবা তাদের ওপর নেমে আসবে ভয়াবহ শাস্তি”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৬৩]
সালাত ছেড়ে রাসূলের ডাকে সাড়া দান:
১৩. আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি সর্বোচ্চ ভালবাসা ঈমানী কর্তব্য:
দুনিয়ার সব কিছু থেকে আল্লাহর রাসূলকে সর্বোচ্চ ভালো বাসতে হবে। সকল কিছুর ওপর রাসূলের ভালোবাসাকে প্রাধ্যান্য দিতে হবে।
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“তোমাদের মধ্যে কেউ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার কাছে তার পিতা, তার সন্তানাদি এবং সকল মানুষ হতে বেশি প্রিয় না হবো”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৬।]
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“যে ব্যক্তির মধ্যে তিনটি জিনিস পাওয়া যাবে, সে ঈমানের সঠিক স্বাদ আস্বাদন করেছে। প্রথমত: তার মধ্যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালবাসা দুনিয়ার সকল জিনিস অপেক্ষা বেশি হবে। দ্বিতীয়ত: যে ব্যক্তি কোনো ব্যক্তিকে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ভালোবাসে। তৃতীয়ত: যে ব্যক্তি কুফুরীর অন্ধকার থেকে বের হয়ে ঈমান ও ইসলামের আলো গ্রহণ করার পর আবার কুফুরীর অন্ধকারে ফিরে যাওয়াকে এত খারাপ মনে করে যেমন মনে করে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২১।]
“ওহে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের আগে বেড়ে যেয়ো না , আল্লাহকে ভয় কর, আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ”। [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১]
১৪. মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ শাশ্বত ও চিরন্তন। তাঁর শরী‘আত পূর্বের সমস্ত শরী‘আতকে রহিত বা বাতিল করেছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত তা রহিত থাকবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«والذي نفس محمد بيده لو بدا لكم موسى فاتبعتموه وتركتموني لضللتم عن سواء السبيل ولو كان حيا وأدرك نبوتي لاتبعني»
“আল্লাহর কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন। যদি মূসা আলাইহিস সালাম তোমাদের মাঝে প্রকাশ পেতেন তাহলে তোমরা তার আনুগত্য করতে আর আমাকে ত্যাগ করতে,ফলে তোমরা সহজ -সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পথভ্রষ্ট হয়ে যেতে। অথচ মূসা আলাইহিস সালাম যদি এখন জীবিত থাকতেন ও আমার নবুওয়াতের কাল পেতেন তাহলে তিনি নিশ্চিত আমার আনুগত্য করতেন”। [দারেমী, হাদীস নং ৪৪৯।]
“এক খ্রিষ্টান মুসলিম হলো এবং সূরা বাকারা ও আলে ইমরান শিখে নিলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য ওহী লিখত। অতঃপর সে আবার খ্রিষ্টান হয়ে গেল। সে বলতে লাগল, আমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যা লিখে দিতাম তার চেয়ে বেশি কিছু তিনি জানেন না। (নাউযুবিল্লাহ) কিছুদিন পর আল্লাহ তাকে মৃত্যু দিলেন। খ্রিষ্টানরা তাকে দাফন করল। কিন্তু পরদিন সকালে দেখা গেল, কবরের মাটি তাকে বাইরে নিক্ষেপ করে দিয়েছে। এটা দেখে খ্রিষ্টানরা বলতে লাগল -এটা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীদেরই কাজ। যেহেতু আমাদের এ সাথী তাদের থেকে পালিয়ে এসেছিল। এ জন্যই তারা আমাদের সাথীকে কবর থেকে উঠিয়ে বাহিরে ফেলে দিয়েছে। তাই যতদূর পারা যায় গভীর করে কবর খুঁড়ে তাকে আবার দাফন করল। কিন্তু পরদিন সকালে দেখা গেল, কবরের মাটি আবার তাকে বাইরে নিক্ষেপ করে দিয়েছে। এবারও তারা বলতে লাগল, এটা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার সাহাবীদেরই কাজ। তাদের নিকট থেকে পালিয়ে আসার কারণে তারা আমাদের সাথীকে কবর থেকে উঠিয়ে বাহিরে ফেলে দিয়েছে। এবার আরও গভীর করে কবর খনন করে দাফন করল। পরদিন ভোরে দেখা গেল, কবরের মাটি আবার তাকে বাইরে নিক্ষেপ করে দিয়েছে। তখন তারাও বুঝল, এটা মানুষের কাজ নয়। কাজেই তারা লাশটি ফেলে রাখল”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৬১৭।]
আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো দীন বা জীবন ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন না।
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের ওপর আমার নি‘আমত সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন হিসেবে কবুল করে নিলাম”। [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৩]
“আর যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো দীন গ্রহণ করতে চাইবে কক্ষনো তার সেই দীন কবুল করা হবে না এবং আখিরাতে সে ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮৫]
১৫. মৃত সুন্নাত জীবিত করার মর্যাদা:
যখন কোনো সুন্নাত বিলুপ্ত হয়ে যায়, তার ওপর মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা এবং তার ওপর আমল করার ফযীলত অনেক। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“যে ব্যক্তি আমার একটি (মৃত) সুন্নাত জীবিত করে এবং লোকেরা তদনুযায়ী আমল করে, সেও আমল কারীর অনুরূপ পুরস্কার পাবে। এতে আমলকারীর পুরস্কার কিছুমাত্র কম হবে না। অপরদিকে যে ব্যক্তি কোনো বিদআতের উদ্ভাবন করে এবং সে অনুযায়ী আমল করা হয়, তার ওপর আমলকারীর পাপের বোঝার অনুরূপ বোঝা বর্তাবে। এতে আমলকারীর পাপের পরিমাণ কিছুই কমানো হবে না”। [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২০৯।]
১৬. যারা আল্লাহ ও রাসূল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে, তারা মুমিন নন; বরং তারা মুনাফিক, যালিম, কাফির। আল্লাহ তা‘আলা তাদের সম্পর্কে বলেন,
“তারা বলে- আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলাম আর রাসূলের প্রতিও আর আমরা মেনে নিলাম। কিন্তু এরপরও তাদের মধ্যকার একদল মুখ ফিরিয়ে নেয়, তারা মুমিন নয়”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৪৭]
“যখন তাদেরকে বলা হয় -তোমরা আল্লাহর অবতীর্ণ হুকুমের এবং রাসূলের দিকে এসো, তখন তুমি ঐ মুনাফিকদের দেখবে, তারা তোমার কাছ থেকে ঘৃণা ভরে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬১]
“আল্লাহ কীরূপে সেই সম্প্রদায়কে সুপথ দেখাবেন যারা ঈমান আনার পর, এ রাসূলকে সত্য বলে স্বীকার করার পর এবং তাদের নিকট সুস্পষ্ট দলীল আসার পর কুফুরী করে? বস্তুতঃ আল্লাহ যালিম কওমকে পথ দেখান না”। [সূরা আলে ইসরান, আয়াত: ৮৬]
“আর যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তার রাসূলের নাফরমানী করবে এবং তার নির্ধারিত সীমালঙ্ঘন করবে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামে দাখিল করাবেন, সে তাতে চিরকাল থাকবে এবং সে অবমাননাকর শাস্তি ভোগ করবে”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৪] আল্লাহ তা‘আলা তাদের বিষয়ে বলেন,
“যে ব্যক্তি সত্য পথ প্রকাশিত হওয়ার পরও রাসূলের বিরোধিতা করে এবং মুমিনদের পথ বাদ দিয়ে ভিন্ন পথ অনুসরণ করে, আমরা তাকে সে পথেই ফিরাব যে পথে সে ফিরে যায়, আর তাকে জাহান্নামে দগ্ধ করব, কত মন্দই না সে আবাস”! [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১৫]
“আল্লাহর বাণী পৌঁছানো ও তার পয়গাম প্রচার করাই আমার কাজ। যে কেউ আল্লাহ ও তার রাসূলকে অমান্য করে, তার জন্য আছে জাহান্নামের আগুন; তাতে তারা চিরকাল থাকবে”। [সূরা আন-জিন্ন, আয়াত: ২৩]
“যারা কিতাবকে আর আমি আমার রাসূলদেরকে যা দিয়ে পাঠিয়েছি তাকে অস্বীকার করে, তারা শীঘ্রই জানতে পারবে। যখন তাদের গলায় থাকবে বেড়ি আর শিকল; তাদের টেনে নিয়ে যাওয়া হবে -ফুটন্ত পানিতে, অতঃপর তাদেরকে আগুনে দগ্ধ করা হবে”। [সূরা গাফির, আয়াত: ৭০-৭২]
১৮. যারা আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য পরিহার করবে তাদের সমস্ত আমল নষ্ট হয়ে যাবে। আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের আনুগত্য ছাড়া কোনো আমল কাজে আসবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর আর রাসূলের আনুগত্য কর আর তোমাদের আমলগুলোকে নষ্ট করে দিও না”। [সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ৩৩]
১৯. আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের পথ অবলম্বন করুন। রাসূলের পথ বাদ দিয়ে শয়তানের পথে চলার পর অনুশোচনা, কোনো কাজে আসবে না। সুতরাং সময় থাকতে তাওবা করে কুরআন ও সহীহ হাদীসের দিকে আসুন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোনো হাদীস শুনতেন, তাতে তিনি কোনো কিছু বাড়াতেন না এবং তা থেকে কিছু কমাতেন না।” [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪। আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।]
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সোনার আংটি পরতেন। তখন লোকেরাও সোনার আংটি পড়তে লাগল। এরপর (একদিন) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আমি সোনার আংটি পরছিলাম -তারপর তিনি তা ছুঁড়ে ফেলে দিলেন এবং বললেন: আমি আর কোনো দিনই তা পরব না। ফলে লোকেরাও তাদের আংটিগুলো ছুঁড়ে ফেলল”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭২৯৮।]
উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি হাজরে আসওয়াদের কাছে এসে তা চুম্বন করে বললেন,
“আমি অবশ্যই জানি যে, তুমি একখানা পাথর মাত্র, তুমি কারোও কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে পার না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তোমায় চুম্বন করতে না দেখলে কখনো আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫৯৭।]
২১. হাদীস অমান্য কারীর সঙ্গে সম্পর্ক কিরূপ হওয়া চাই:
আবদুল্লাহ ইবন মুগাফ্ফাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
“একদা তার কাছে তার এক ভাতিজা বসা ছিল। সে তখন কঙ্কর নিক্ষেপ করছিল। তিনি তাকে তা থেকে নিষেধ করলেন এবং বললেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কাজ থেকে নিষেধ করছেন। তিনি আরও বললেন: এতে না শিকার করা হয়, আর না শত্রু পরাভূত হয়, বরং তা দাঁত ভেঙ্গে দেয় অথবা চক্ষু নষ্ট করে দেয়। বর্ণনাকারী বলেন, তার ভাইপো পুনরায় পাথর নিক্ষেপ করলে তিনি (ইবন মুগাফ্ফাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, আমি তোমাকে হাদীস শুনাচ্ছি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করতে নিষেধ করেছেন। অথচ এরপরও তুমি কঙ্কর নিক্ষেপ করছ? আমি তোমার সাথে আর কখনও কথা বলব না। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৫৪।]
“তোমরা আল্লাহর বান্দীদের (মহিলাদের) মসজিদে সালাত আদায় করতে মানা করো না। তখন ইবন উমারের এক পুত্র বললেন: আমরা অবশ্যই তাদের নিষেধ করব। বর্ণনাকারী বলেন, এতে তিনি (ইবন উমার) ভয়ানক রাগান্বিত হয়ে বললেন: আমি তোমার নিকট রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস বর্ণনা করছি, অথচ তুমি বলছ যে, আমরা অবশ্যই তাদের নিষেধ করব [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৬, হাদীসটি সহীহ।]?”
২২. হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন জরুরী। কারণ, মিথ্যা হাদীস বর্ণনাকারী জাহান্নামী। তাই সহীহ ও হাসান হাদীস ছাড়া জাল বা দ‘ঈফ হাদীস আমল করার জন্য বর্ণনা করা যাবে না। তবে বর্জন করার জন্য দ‘ঈফ ও জাল হাদীস জানা দরকার। দ‘ঈফ হাদীস রাসূলের সুন্নাহর ব্যাপারে কিছু অনুমান-ধারণার সৃষ্টি করে মাত্র। “হে মুমিনগণ! তোমরা অধিকাংশ অনুমান হতে দূরে থাক। কারণ, অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপ”। আর জাল বা মিথ্যা হাদীস যা স্পষ্ট রাসূলের কথা নয়। সুতরাং হাদীস যাচাই করতে হবে। তাক্বলীদ করা চলবে না (বিনা দলীল-প্রমাণে কারো কথা মেনে নেওয়া)।
“মুমনিগণ! যদি কোনো পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ আনয়ন করবে, তবে তোমরা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতি সাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হও”। [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ৬]
আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“আমি তো আপনাকে অমুক অমুকের মতো আল্লাহর রাসূলের হাদীস বর্ণনা করতে শুনি না। তিনি বললেন: জেনে রেখ! আমি তার (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে দূরে থাকি নি, কিন্তু আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, যে আমার ওপর মিথ্যারোপ করে সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১০৭।]
“এ কথাটি তোমাদের নিকট বহু হাদীস বর্ণনা করতে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায় যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ইচ্ছাকৃতভাবে আমার ওপর মিথ্যারোপ করে সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয় [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১০৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২।]।”
সালামাহ ইবন আকওয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি,
“তোমরা আল্লাহকে ভয় করবে আর শুনবে ও মানবে, যদিও তোমাদের নেতা হাবশী গোলাম হয়। আমার পরে অচিরেই তোমরা কঠিন মতবিরোধ দেখতে পাবে। তখন তোমাদের ওপর আমার সুন্নাত ও হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের আদর্শের ওপর অবিচল থাকা অপরিহার্য। তোমরা তা শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে থাকবে। সাবধান! তোমরা বিদ‘আত পরিহার করবে। কেননা প্রত্যেক বিদ‘আতই গোমরাহি-পথভ্রষ্ট।” [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪২।]
২৪. যুগে যুগে ইত্তেবা‘য়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা সুন্নাতের অনুসরণে যারা অগ্রবর্তী, যারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অনুসারী, যে জামা‘আত আঁকড়ে ধরার জন্য আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন, আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভূক্ত হবে। সুতরাং যারা কুরআন হাদীসের অনুসরণকে বাদ দিয়ে যুক্তির পিছনে ছুটে ঘুরে বেড়ায় তাদের পথ পরিহার করতে হবে। আমাদেরকে আহলুর রায় থেকে বের হয়ে আসতে হবে এবং কুরআন ও সহীহ হাদীসের অনুসারী হতে হবে।
আবু হুরাইর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“ইয়াহূদী জাতি ৭১ দলে বিভক্ত হয়েছিল। একদল জান্নাতী আর ৭০ দল জাহান্নামী। খ্রিস্টানরা ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল। ৭১ দল জাহান্নামী আর একদল জান্নাতী। সেই মহান সত্তার শপথ, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, অবশ্যই আমার উম্মাত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। একটি দল হবে জান্নাতী। আর ৭২টি দল হবে জাহান্নামী। বলা হলো, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কারা জান্নাতী? তিনি বললেন: আল-জামা‘আত (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীদের জামা‘আত)”। [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৯৯২।]
আনাস ইবন মালিক থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“বনী ইসরাঈল ৭১ দলে বিভক্ত হয়েছিল। আমার উম্মাত ৭২ দলে বিভক্ত হবে। একটি দল ব্যতীত সবাই হবে জাহান্নামী। আর তা হচ্ছে আল-জামা‘আত।” [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৯৯৩।]
আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“বনী ইসরাঈলের যে অবস্থা এসেছিল অবশ্যই আমার উম্মাতের মধ্যে অনুরূপ অবস্থা আসবে। এমনকি তাদের কেউ যদি প্রকাশ্যে তার মায়ের সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে থাকে তবে আমার উম্মাতেরও কেউ তাতে লিপ্ত হবে। বনী ইসরাঈল ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল। আমার উম্মাত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। একটি দল ব্যতীত সবাই হবে জাহান্নামী। বলা হলো একটি দল (যারা জান্নাতী) কারা? তিনি বললেন: আমি এবং আমার সাহাবীগণ আজকের দিনে যার ওপর (প্রতিষ্ঠিত)”। [তিরমিযি, হাদীস নং ২৬৪১]
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/233/9
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।