HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

কালেমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’

লেখকঃ শাইখ আবদুল আযীয ইবন আবদুল্লাহ ইবন বায

কালেমা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”-এর মর্মার্থ
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”-এই বাক্যটি ধর্মের মূলবাণী এবং ইসলামী মিল্লাতের ভিত্তি। এই কালেমার দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা মুসলিম ও কাফিরের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণ করেন। এরই বাস্তবায়নে সমস্ত নবী-রাসূলের আহ্বান ছিল কেন্দ্রীভূত। এরই বাস্তবায়নে নাযিল হয় পবিত্র গ্রন্থাবলী, সৃষ্টি হয় সমগ্র জিন্ন ও মানবকুল।

আমাদের পিতা আদম ‘আলাইহিস সালাম সর্বপ্রথম এই কালেমার প্রতি আহ্বান জানান তার সন্তান-সন্ততিদের। তিনি ও তার বংশধর নূহ ‘আলাইহিস সালাম পর্যন্ত এই কালেমার ওপরই প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। অতঃপর নূহ ‘আলাইহিস সালামের সম্প্রদায়ে ইবাদতের ক্ষেত্রে শির্ক দেখা দিলে আল্লাহ তা‘আলা নূহ ‘আলাইহিস সালামকে তাদের প্রতি প্রেরণ করেন। তিনি তাদেরকে আল্লাহর একত্ববাদের (তাওহীদ) প্রতি আহ্বান জানান এবং বলেন,

﴿يَٰقَوۡمِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنۡ إِلَٰهٍ غَيۡرُهُ﴾ [ المؤمنون : ٢٣ ]

“হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহরই ইবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের আর কোনো উপাস্য নেই।” [সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ২৩]

নূহ ‘আলাইহিস সালামের পর এভাবে হূদ, সালেহ, ইবরাহীম, লূত, শু‘আইব ও অন্যন্যা সকল রাসূলগণও তাদের স্ব স্ব জাতিকে এই কালেমা অর্থাৎ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”-এর প্রতি, আল্লাহর একত্ববাদের প্রতি এবং তিনি ভিন্ন অন্যের ইবাদত বাদ দিয়ে কেবল তাঁরই জন্য তা “খালেস” করার আহ্বান জানান।

সর্বশেষ এই কালেমার বার্তা নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেন সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল, আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি এসে প্রথমে তাঁর সম্প্রদায়কে তাওহীদের প্রতি আহ্বান করে বলেন,

«يَا أَيُّهَا النَّاسُ، قُولُوا : لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ تُفْلِحُوا»

“হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা বল- আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্য মা‘বূদ বা উপাস্য নেই, তোমরা সফলকাম হবে”।

তিনি তাদেরকে কেবল আল্লাহর জন্য ইবাদত খালেস করার আহ্বান জানান এবং তাদের বাপ-দাদা পূর্বপুরুষগণ পরম্পরায় আল্লাহর সাথে যে শির্ক, প্রতিমাপূজা, পাথর, বৃক্ষ ও অন্যান্য বস্তুর ইবাদত চলে আসছে, তা বর্জন করতে বলেন। মুশরিকরা তাঁর এই আহ্বান সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে বলে উঠলো:

﴿أَجَعَلَ ٱلۡأٓلِهَةَ إِلَٰهٗا وَٰحِدًاۖ إِنَّ هَٰذَا لَشَيۡءٌ عُجَابٞ ٥﴾ [ص: ٥ ]

“তিনি তো অনেক মা‘বূদের বদলে এক মা‘বূদ স্থির করে নিলেন। এটাতো অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয়”। [সূরা সদ, আয়াত: ৪]

কারণ, মুশরিকরা মূর্তি-প্রতিমা, অলী-দরবেশ, গাছ বৃক্ষ ইত্যাদির ইবাদতে অভ্যস্থ ছিল। তারা এই সবের নামে জবাই করত, মান্নত করতো এবং তাদের প্রতি আপন আপন প্রয়োজন পূরণ ও দুঃখ-কষ্ট দূর করার আবেদন জানাতো। ফলে, তারা এই তাওহীদী কালেমা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” প্রত্যাখ্যান করে। কারণ, এই কালেমা আল্লাহ ব্যতীত তাদের অন্য সব মা‘বুদ বা উপাস্যকে বাতিল প্রতিপন্ন করে। আল্লাহ তা‘আলা সূরা সাফ্‌ফাতের ৩৫ ও ৩৬ নং আয়াতে বলেন,

﴿إِنَّهُمۡ كَانُوٓاْ إِذَا قِيلَ لَهُمۡ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ يَسۡتَكۡبِرُونَ ٣٥ وَيَقُولُونَ أَئِنَّا لَتَارِكُوٓاْ ءَالِهَتِنَا لِشَاعِرٖ مَّجۡنُونِۢ ٣٦﴾ [ الصافات : ٣٥، ٣٦ ]

“তাদের নিকট ‘আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো সত্য মা‘বূদ নেই’ বললে তারা অহংকার করতো এবং বলত আমরা কি এক উন্মাদ কবির কথায় আমাদের মা‘বূদগণকে বর্জন করব”। [সূরা আস-সাফ্‌ফাত, আয়াত: ৩৫-৩৬]

মূলতঃ মুশরিকরা তাদের অজ্ঞতা, ভ্রান্তি ও একগুয়েমীবশতঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পাগল কবি বলে আখ্যায়িত করতো। যদিও তারা সম্যকভাবে জানত যে, তিনি তাদের মধ্যে সবচেয়ে সত্যবাদী, বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান ছিলেন। তিনি কোনো কবি ছিলেন না। বস্তুতঃ অজ্ঞতা, অত্যাচারী স্বভাব, আগ্রাসী চরিত্র এবং সমাজে ভ্রান্তি, মিথ্যা ও অবাস্তব তথ্য প্রচারের ঐকান্তিক আগ্রহই ছিল তাদের সত্য গ্রহণের পথে প্রধান অন্তরায়। সুতরাং যে ব্যক্তি এই কালেমার অর্থ অনুধাবন করবে না এবং কাজের মাধ্যমে নিজের জীবনে এর বাস্তবায়ন করবে না, সে মুসলিম হতে পারে না। মুসলিম সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহ তা‘আলার একত্ববাদে বিশ্বাস রাখে এবং যাবতীয় ইবাদত অন্য কারো পরিবর্তে একমাত্র আল্লাহর জন্যই খাস করে, তাঁরই জন্য সালাত (নামায) প্রতিষ্ঠা করে, সিয়াম (রোযা) পালন করে, তাঁকেই ডাকে, তাঁরই সাহায্য কামনা করে, তাঁরই উদ্দেশ্যে সে মান্নত করে, জবাই করে। এভাবে সকল প্রকার ইবাদত সে কেবল আল্লাহ তা‘আলার প্রতিই নিবেদন করে। একজন মুসলিম ব্যক্তির স্থির বিশ্বাস এই যে, আল্লাহ তা‘আলাই কেবল ইবাদতের যোগ্য। তিনি ব্যতিরেকে আর কেউ এর হকদার নয়। চাই সে হোক নবী, ফিরিশতা, অলী, প্রতিমা, বৃক্ষ, জিন্ন বা অন্য কিছু; এরা কেউ ইবাদতের যোগ্য হতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعۡبُدُوٓاْ إِلَّآ إِيَّاهُ﴾ [ الاسراء : ٢٣ ]

“তোমাদের রব নির্দেশ দিয়েছেন, তিনি ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত তোমরা করবে না”। [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ২৩]

এটাই হলো কালেমায়ে لا إله إلا الله এর মর্মার্থ। অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত সত্যিকার উপাস্য আর কেউ নেই। কালেমা এর মধ্যে অস্বীকারসূচক ও স্বীকৃতিসূচক উভয় দিক রয়েছে। এই কালেমায়, একদিকে যেমন আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উপাস্য হওয়ার ব্যাপারটি অস্বীকার করা হচ্ছে, তেমনি অপর দিকে কেবল আল্লাহ তা‘আলারই উপাস্য হওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। তাই আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে উপাস্যগুণে বিশেষিত করলে তা হবে বাতিল। কারণ, এই গুণ আল্লাহ তা‘আলারই প্রতিষ্ঠিত অধিকার। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ذَٰلِكَ بِأَنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلۡحَقُّ وَأَنَّ مَا يَدۡعُونَ مِن دُونِهِۦ هُوَ ٱلۡبَٰطِلُ﴾ [ الحج : ٦٢ ]

“তা এই জন্য যে, আল্লাহ তিনিই সত্য এবং ওরা তাঁর পরিবর্তে যাকে ডাকে তা বাতিল”। [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ৬২] সুতরাং ইবাদত একমাত্র আল্লাহরই প্রাপ্য, অন্য কারো নয়। কাফিররা যে এই ইবাদত অন্যের প্রতি নিবেদন করে, তা সম্পূর্ণ বাতিল কাজ এবং এটা অপাত্রে রাখার শামিল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ٱعۡبُدُواْ رَبَّكُمُ ٱلَّذِي خَلَقَكُمۡ وَٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ٢١﴾ [ البقرة : ٢١ ]

“হে মানুষ! তোমরা তোমাদের সেই রবের ইবাদত কর, যিনি তোমাদের ও তোমাদের পূর্ববর্তীদের সৃষ্টি করেছেন। যাতে, তোমরা মুত্তাকী হতে পার”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২১] কুরআন শরীফের সর্বশ্রেষ্ঠ সূরা ফাতিহার একটি আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿إِيَّاكَ نَعۡبُدُ وَإِيَّاكَ نَسۡتَعِينُ ٥﴾ [ الفاتحة : ٥ ]

“আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি এবং শুধু তোমারই সাহায্য কামনা করি”। [সূরা আল-ফাতিহা, আয়াত: ৫] আল্লাহ তা‘আলা মুমিনগণকে এভাবে বলতে নির্দেশ করেছেন: “হে আল্লাহ! আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং একমাত্র তোমারই নিকট সাহায্য কামনা করি। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿وَٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَلَا تُشۡرِكُواْ بِهِۦ شَيۡ‍ٔٗا﴾ [ النساء : ٣٦ ]

“তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং এতে তাঁর সাথে কোনো কিছু শরীক করো না”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৬]

আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,

﴿وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ﴾ [ البينة : ٥ ]

“তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধ চিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করতে”। [সূরা আল-বায়্যিনাহ, আয়াত: ৫]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿فَٱعۡبُدِ ٱللَّهَ مُخۡلِصٗا لَّهُ ٱلدِّينَ ٢ أَلَا لِلَّهِ ٱلدِّينُ ٱلۡخَالِصُ﴾ [ الزمر : ٢، ٣ ]

“আল্লাহর ইবাদত কর, তাঁর আনুগত্যে বিশুদ্ধ চিত্ত হয়ে। জেনে রাখ, খালেস আনুগত্য আল্লাহরই প্রাপ্য”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ২-৩]

এভাবে আরও অনেক আয়াত রয়েছে, যা এ কথাই প্রমাণ করে যে, ইবাদতের যোগ্য একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই। এতে সৃষ্টির কোনো অংশ নেই। এ-ই হচ্ছে কালেমা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”-এর মর্মার্থ। এর হাকীকত ও দাবী হলো, আপনি আল্লাহ তা‘আলার জন্যই সমূহ ইবাদত খাস ও খালেস করবেন এবং তিনি ব্যতীত অন্য সবার ক্ষেত্রে এর অস্বীকৃতি জানাবেন। জানা কথা, এই বিশ্বজগতে আল্লাহ ব্যতীত তাঁর অনেক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ইবাদত চলছে। অতীতেও আল্লাহকে বাদ দিয়ে মূর্তি-প্রতিমা, ফির‘আউন ও ফিরিশতাদের ইবাদত হয়েছে, আল্লাহকে ছেড়ে কোনো কোনো নবী-রাসূল ও নেক লোকদের ইবাদত করা হয়েছে। এসবই ঘটেছে। তবে তা হয়েছে বাতিল ও সত্যের পরিপন্থি। সত্যিকার মা‘বূদ তো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা। তিনিই তো হলেন ইবাদতের একমাত্র যোগ্য ও অধিকারী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ذَٰلِكَ بِأَنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلۡحَقُّ وَأَنَّ مَا يَدۡعُونَ مِن دُونِهِ ٱلۡبَٰطِلُ وَأَنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلۡعَلِيُّ ٱلۡكَبِيرُ ٣٠﴾ [ لقمان : ٣٠ ]

“তা এজন্য যে, আল্লাহই সত্য এবং ওরা তাঁর পরিবর্তে যাকে ডাকে তা মিথ্যা। আল্লাহ, তিনি তো সুউচ্চ-মহান”। [সূরা লুকমান, আয়াত: ৩০]

[এই হলো ইসলামের প্রথম ভিত্তি কালেমা তাইয়্যেবার প্রথম অংশ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”-এর সারকথা।]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন