মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরা এবং বিদ‘আত থেকে সতর্ক থাকা ওয়াজিব
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/252/2
প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি আমাদের জন্য দ্বীনকে পরিপূর্ণ করেছেন, আমাদের উপর নেয়ামতকে সম্পূর্ণ করেছেন এবং ইসলামকে দ্বীন হিসাবে আমাদের জন্য মনোনীত করেছেন। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক তার সেই বান্দা ও রাসূলের উপর যাকে প্রেরণ করা হয়েছে তাঁর রবের আনুগত্যের দিকে আহ্বানকারী এবং বাড়াবাড়ি, বিদ‘আত ও পাপ থেকে সতর্ককারী হিসেবে। আল্লাহ তাঁর উপর, তাঁর পরিবার পরিজন, সকল সাথীবর্গ এবং কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর পথের অনুসারী ও তাঁর সুন্নাতের অনুসারীদের উপর রহমত বর্ষণ করুন।
অতঃপর,
সাপ্তাহিক উর্দু পত্রিকা (ইদারাত) এ প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ দেখতে পেলাম যা ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি শিল্প এলাকা কানপুর থেকে প্রকাশিত হয়। এর প্রথম পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু ছিল: ‘‘সৌদী আরব ও এর আকীদা আঁকড়ে ধরা এবং বিদ‘আত প্রতিরোধের সংগ্রাম করার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন’’। সালাফী আকীদার উপর এ অপবাদ দেওয়া দ্বারা লেখকের উদ্দেশ্য হলো আহলে সুন্নাতের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করা এবং বিদ‘আত ও কুসংস্কারের উপর উৎসাহ দেওয়া ।
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, এটি একটি খারাপ উদ্দেশ্য এবং ভয়ঙ্কর পদক্ষেপ, যার উদ্দেশ্য হলো দ্বীন ইসলামের ক্ষতি করা এবং বিদ‘আত ও ভ্রষ্টতা প্রচার করা। তারপর এ প্রবন্ধটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের জন্ম দিবস পালনের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে এবং একে কেন্দ্র করেই সৌদী আরবের আকীদা বাস্তবায়ন সম্পর্কে কথা বলেছে। কাজেই এ বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়াটাই ভালো মনে করছি। সুতরাং আমি বলব:
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং অন্য যে কারো জন্ম দিবস পালন করা জায়েয নেই বরং তা নিষেধ করা ওয়াজিব, কারণ তা দ্বীনের মধ্যে একটি নব আবিষ্কৃত বিদ‘আত যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো করেননি, তিনি তাঁর নিজের জন্য বা তাঁর পূর্বে মৃত্যুবরণকারী কোনো নবী, তাঁর মেয়েগণ বা স্ত্রীগণ বা তাঁর কোনো আত্মীয়-স্বজন অথবা কোনো সাহাবীর জন্ম দিবস পালন করার নির্দেশ দেননি। এমনকি তাঁর কোনো খালীফায়ে রাশেদ বা সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম অথবা কোনো তাবে‘ঈ এবং স্বর্ণযুগে সুন্নাতে মুহাম্মাদিয়ার কোনো আলেম তা করেননি। অথচ তারাই সুন্নাত সম্পর্কে সকলের চেয়ে বেশী অবগত এবং রাসূলের মহব্বতের ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে এবং তাদের পরবর্তী লোকদের চেয়ে তাঁর বেশী অনুসরণকারী। যদি তা পালন করা ভালো হতো, তাহলে অবশ্যই তারা আমাদের চেয়ে আগে পালন করতেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন এবং বিদ‘আত সৃষ্টি করা থেকে নিষেধ করেছেন। কারণ ইসলাম একটি পরিপূর্ণ দ্বীন, আল্লাহ তা‘আলা এবং তার রাসূল যা শরীয়ত হিসাবে দিয়েছেন এবং যা আহলে সুন্নাত ও জামা‘আত তথা সাহাবা ও তাবে‘ঈগণ গ্রহণ করেছেন তা-ই স্বয়ংসম্পূর্ণ।
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণ রয়েছে যে, তিনি বলেছেন,
«من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه فهو رد» متفق على صحته
“যে ব্যক্তি আমার এ দ্বীনের মধ্যে নতুন কোনো জিনিস আবিষ্কার করবে যা এর অন্তর্ভুক্ত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।” [বুখারী হাদীস নং ২৬৯৭ ও মুসলিম হাদীস নং ১৭১৮।]
অন্য বর্ণনায় এসেছে:
«من عمل عملا ليس عليه أمرنا فهو رد»
“যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করবে যা আমার শরীয়ত সমর্থিত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।”
তিনি অন্য হাদীসে আরও বলেন:
«عليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين من بعدي تمسكوا بها وعضوا عليها بالنواجذ وإياكم ومحدثات الأمور فإن كل محدثة بدعة وكل بدعة ضلالة»
“তোমাদের উপর ওয়াজিব হলো: তোমরা আমার সুন্নাতকে আঁকড়ে ধর এবং আমার পর সুপথ প্রাপ্ত খলীফাদের সুন্নাতকে আঁকড়ে ধর এবং তা দন্ত দ্বারা দৃঢ়তার সাথে ধারণ কর আর (দ্বীনে) নব রচিত কর্মসমূহ হতে সাবধান থাক! কেননা প্রতিটি নব রচিত কর্ম হচ্ছে বিদ‘আত এবং সকল বিদ‘আত হচ্ছে ভ্রষ্টতা।” [আহমাদ ১৬৬৯৫, আবু দাউদ ৪৬০৭, তিরমিযী ২৬৭৬ এবং ইবনে মাজাহ ৪২]
এবং তিনি জুম‘আর দিন তাঁর খুৎবায় বলেন:
«أما بعد فإن خير الحديث كتاب الله وخير الهدي هدي محمد صلى الله عليه وسلم وشر الأمور محدثاتها وكل بدعة ضلالة»
“অতঃপর সর্বোত্তম বাণী হলো আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম হেদায়েত হলো মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হেদায়েত আর নিকৃষ্টতর কাজ হলো দ্বীনে নব আবিষ্কৃত কাজ এবং প্রতিটি বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা।” [মুসলিম শরীফ, জুময়া অধ্যায়: খুৎবা ও নামায হালকাকরণ অনুচ্ছেদ, হাদীস নং ৮৬৭।]
উপরোল্লেখিত হাদীসগুলোতে বিদ‘আত সৃষ্টি করা থেকে সতর্ক করা হয়েছে যে, তা একটি ভ্রষ্টতা, এবং এর ভয়াবহতা থেকে সকল উম্মতকে সতর্ক করা হয়েছে এবং এর নিকটবর্তী হওয়া ও এর উপর আমল করা থেকে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। এ অর্থে আরো বহু হাদীস রয়েছে ।
“অতএব, যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা এ বিষয়ে সতর্ক হোক যে, তাদেরকে বিপর্যয় স্পর্শ করবে অথবা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে।” [সূরা নূর, ৬৩]
“তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনে রয়েছে উত্তম আদর্শ।” [সূরা আহযাব/২১]
“আর যারা সর্বপ্রথম হিজরতকারী, আনসার এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ সে সকল লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন সেই জান্নাত যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নদীসমূহ। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এটাই হলো মহা কৃতকার্যতা।” [সূরা তাওবা/১০০]
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম, তোমাদের উপর আমার নেয়ামতকে সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে দ্বীন হিসাবে তোমাদের জন্য মনোনীত করলাম। [সূরা মায়েদা/৩]
এ সকল আয়াত স্পষ্ট প্রমাণ করে যে, আল্লাহ তা‘আলা এ উম্মতের জন্য দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন এবং তার নেয়ামতকে তাদের উপর সম্পন্ন করেছেন। তিনি তার নবীকে মৃত্যুদান করেননি যতক্ষণ না তিনি স্পষ্টভাবে উম্মতের নিকট তা পৌঁছিয়েছেন এবং আল্লাহ যা শরীয়ত করেছেন তা তাদের জন্য বর্ণনা করেছেন, চাই তা কথা হোক বা কাজ হোক এবং এও স্পষ্ট বলে দিয়েছেন যে, তাঁর মৃত্যুর পরে যারা নতুন কিছু আবিষ্কার করে দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত করবে তা কথা হোক বা কাজ হোক এ সবই বিদ‘আত বলে গণ্য হবে এবং তা এর আবিষ্কারকের উপর ফিরিয়ে দেওয়া হবে যদিও তার উদ্দেশ্য ভালো থাকে।
তাছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সকল সাহাবী এবং তাদের পরবর্তী সালাফদের নিকট থেকে বিদ‘আত থেকে সতর্কতা এবং ভীতি প্রদর্শন সাব্যস্ত রয়েছে। তা কেবল দ্বীনের মধ্যে অতিরিক্ত হওয়ার কারণেই হয়েছে এবং সে শরিয়ত প্রবর্তনের কারণে যার অনুমতি আল্লাহ দেননি এবং আল্লাহদ্রোহী ইয়াহূদী ও খৃষ্টানদের সামঞ্জস্য বিধানের কারণে; কারণ তারা তাদের দ্বীনের মধ্যে অতিরিক্ত করেছে এবং যা আল্লাহ বলেননি তা দ্বীনের মধ্যে আবিষ্কার করেছে। আর এতে (এভাবে বিদ‘আত চালু করলে) দ্বীনের সংকীর্ণতা এবং অপরিপূর্ণতার অপবাদ আসে অথচ সকলেরই জানা যে, এটি করা হলে মহা ফেৎনার সৃষ্টি করবে এবং অত্যন্ত খারাপ কাজ বলে বিবেচিত হবে, সাথে সাথে তা আল্লাহর সে বাণীর বিরোধী হবে যেখানে তিনি বলেছেন, الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ “আজকের দিনে তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম।” অনুরূপভাবে রাসূলের সেই হাদীসগুলোরও বিরোধী হবে যাতে তিনি বিদ‘আত থেকে তিনি সতর্ক করেছেন ও বিরত থাকতে বলেছেন।
তদ্রূপ, এ সকল জন্মোৎসব ও অন্যান্য উৎসবের আবিষ্কার করায় প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ তা‘আলা এ উম্মতের জন্য দ্বীনকে পরিপূর্ণ করেননি এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমল করার মত রিসালত তার জাতির জন্য যথাযথভাবে পৌঁছাননি, পরবর্তীতে এ বিদ‘আতরে প্রর্বতক লোকগুলো এসে আল্লাহর শরিয়তে এমন কিছু বিধান আবিষ্কার করল যার অনুমতি আল্লাহ দেননি, তারা মনে করেছে তা হয়তো তাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দিবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, এতে মহাবিপদ রয়েছে এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের উপর মারাত্মক অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। অথচ আল্লাহ তার বান্দার জন্য দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন এবং তার নেয়ামতকে সম্পন্ন করেছেন। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্টভাবে পৌঁছে দিয়েছেন। এমন কোনো পথ, যা জান্নাতের দিকে নিয়ে যাবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে তিনি তা উম্মাতের জন্য স্পষ্ট করে বর্ণনা করতে পিছপা হন নি। যেমন সহীহ মুসলিমে আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবন ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে এসেছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“আল্লাহ ইতোপূর্বে যে কোনো নবীই প্রেরণ করেছেন তার দায়িত্ব ছিল, তিনি তার উম্মতের জন্য যা ভালো মনে করেন তার দিক নির্দেশনা দেওয়া এবং তাদের জন্য যা ক্ষতি মনে করেন তা থেকে তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করা।” [মুসলিম, হাদীস নং ১৮৪৪।]
প্রকাশ থাকে যে, আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বোত্তম ও সর্বশেষ নবী এবং প্রচার ও নসিহতের দিক দিয়ে পরিপূর্ণ, কাজেই যদি জন্মোৎসব পালন করা আল্লাহর মনোনীত দ্বীনের অংশ হত তাহলে অবশ্যই রাসূল তা তাঁর উম্মতের জন্য বর্ণনা করতেন অথবা তাঁর সাহাবীগণ তা পালন করতেন। যেহেতু এর কোনোটিই সাব্যস্ত নেই, বিধায় বুঝতে হবে যে, তা ইসলামের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং তা নব আবিষ্কৃত জিনিস যা থেকে রাসূল তাঁর উম্মতকে সতর্ক করেছেন। যেমন পূর্বে উল্লেখিত হাদীসগুলোতে বর্ণনা করা হয়েছে।
উল্লেখিত প্রমাণপঞ্জির উপর আমল করতে গিয়ে আলেমগণের বড় একটি জামায়াত জন্মোৎসব পালনের প্রকাশ্য অস্বীকৃতি জানিয়েছেন এবং এ থেকে সতর্ক করে দিয়েছেন। শরীয়তের নীতি হচ্ছে: হালাল হারাম এবং মানুষের ঝগড়া বিবাদের ক্ষেত্রে প্রত্যাবর্তনস্থল হলো: আল্লাহর কিতাব এবং রাসূলের সুন্নাত তথা কুরআন ও হাদীস। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
“হে যারা ঈমান এনেছ, তোমরা আল্লাহর নির্দেশ পালন কর, নির্দেশ পালন কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা ক্ষমতার অধিকারী তাদের। অতঃপর তোমরা যদি কোনো বিষয়ে বিবাদে লিপ্ত হয়ে পড় তাহলে তা আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর; যদি তোমরা আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসের প্রতি ঈমানদার হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিকে দিয়ে উত্তম।” [সূরা নিসা/৫৯]
“আর তোমরা যে ব্যাপারে মতভেদ করছ তার ফয়সালা তো আল্লাহর নিকট।” [সূরা শূরা/১০]
এখন যদি আমরা এ ( জন্মোৎসব পালন ) বিষয়টি আল্লাহর কিতাবের দিকে প্রত্যাবর্তন করি তাহলে দেখতে পাব যে, রাসূল যা নিয়ে এসেছেন শুধু সে ব্যাপারে তিনি আমাদেরকে তাঁর অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তিনি যা করতে নিষেধ করেছেন তা থেকে আমাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছেন, সেই সাথে আমাদেরকে বলে দিয়েছেন যে আল্লাহ তা‘আলা এ উম্মাতের জন্য দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। আর এ জন্মোৎসব পালন তার অন্তর্ভুক্ত নয় যা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়ে এসেছেন, কাজেই তা সে দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয় যে দ্বীন আল্লাহ আমাদের জন্য পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন এবং যে দ্বীনের ব্যাপারে রাসূলের অনুসরণের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
আর যদি এ (জন্মোৎসব পালন) বিষয়টি নিয়ে রাসূলের সুন্নাতের দিকেও প্রত্যাবর্তন করি তাহলে দেখতে পাব যে, তিনি তা কখনো করেননি, তা করার নির্দেশও দেননি এবং তাঁর কোনো সাহাবাও করেননি, বিধায় বুঝতে হবে তা দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয় বরং তা নব আবিষ্কৃত বিদ‘আত এবং উৎসব পালনের ক্ষেত্রে ইয়াহূদী ও খৃষ্টানদের সাথে অন্ধ অনুসরণের নামান্তর। এর দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, যাদের সামান্যমাত্র জ্ঞান এবং হক্ব তালাশের ইনসাফ ও আগ্রহ রয়েছে তারা বুঝতে পারবেন, জন্মোৎসব পালন করা ইসলামের কোনো অংশ নয় বরং তা নব আবিষ্কৃত বিদ‘আত; যা পরিত্যাগ করার জন্য এবং তা থেকে সতর্ক থাকার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন।
বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় অধিকাংশ লোক তা পালন করার কারণে জ্ঞানীদের জন্য ধোঁকায় পড়া উচিৎ নয়, কেননা অধিকাংশ লোক করলেই তা হক্ব বুঝা যায় না বরং তা জানা যায় কেবল শর‘ঈ দলীলের মাধ্যমেই। যেমন আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহূদী ও খৃষ্টানদের ব্যাপারে বলেছেন,
“এবং তারা বলে ইয়াহূদী ও খৃষ্টান ব্যতীত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না, এটা তাদের মনের আকাঙ্খা মাত্র। হে নবী, আপনি তাদের বলে দিন, তোমরা যদি সত্যবাদী হয়ে থাক তাহলে তোমাদের প্রমাণ পেশ কর। [সূরা বাকারা/১১১]
“আর যদি আপনি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের অনুকরণ করেন তবে তারা আপনাকে আল্লাহর রাস্তা হতে বিপথগামী করে ফেলবে।” [সূরা আল-আন‘আম/১১৬]
তাছাড়া এ সকল উৎসব বিদ‘আত হওয়ার সাথে সাথে অধিকাংশ সময় এবং কোনো কোন এলাকায় কিছু কিছু জঘন্য কাজ হয়ে থাকে যেমন: নারী-পুরুষের একসাথে অবাধে চলাফেরা, গান বাজনা, মদ গাঁজা এবং মাদকদ্রব্য সেবন ইত্যাদি খারাপ কাজ হয়ে থাকে।
কখনো কখনো এর চেয়েও মারাত্মক শির্কের মত কাজ কর্ম হয়ে থাকে, আর তা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা অলি আওলিয়ার ব্যাপারে অধিক বাড়াবাড়ির মাধ্যমে বা তাদের নিকট কোনো কিছু চাওয়া অথবা তাদের ক্ষমতাতীত কোনো ব্যাপারে সহযোগিতা চাওয়ার মাধ্যমে এবং এ ধারণা করা যে রাসূল গায়েবী এবং এ রকম আরো অনেক কিছুই জানেন, যে ধারণা করলে মানুষ কাফের হয়ে যায়।
অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ সনদে এসেছে, তিনি বলেছেন,
«إياكم والغلو في الدين فإنما أهلك من كان قبلكم الغلو في الدين»
“তোমরা দ্বীনের মধ্যে অধিক বাড়াবাড়ি করা থেকে বেঁচে থাক, কেননা দ্বীনের মধ্যে অধিক বাড়াবাড়িই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকজনকে ধ্বংস করেছে।” [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ৩২৩৮, নাসায়ী মানাসেকে হাজ্জ অধ্যায়, কংকর সংগ্রহ অনুচ্ছেদ, হাদীস নং ৩০৫৭, ইবনে মাজাহ মানাসেক অধ্যায়, কংকর নিক্ষেপের পরিমাণ অনুচ্ছেদ, হাদীস নং ৩০২৯।]
তিনি আরও বলেন:
«لا تطروني كما أطرت النصارى ابن مريم، إنما أنا عبد فقولوا عبد الله ورسوله» أخرجه البخاري في صحيحه
“তোমরা আমার প্রশংসায় সীমালঙ্ঘন করো না যেমন খৃষ্টানরা ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর ব্যাপারে করেছে, বরং আমি কেবল একজন বান্দা, কাজেই তোমরা বলো যে, আমি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল।” [বুখারী শরীফ হাদীস নং ৩৪৪৫]
আরও যে সকল জিনিস অদ্ভুত ও আশ্চর্য্য মনে হয় তা হলো: বহু লোক এ নিয়ে ব্যস্ত থাকে এবং চেষ্টা করে এ সকল বিদ‘আতী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার জন্য এবং এর বিরোধীদেরকে প্রতিহত করার জন্য। পক্ষান্তরে জুম‘আ ও জামায়াতে সালাত আদায়ের মত যে সকল জিনিস আল্লাহ তার উপর ওয়াজিব করেছেন তা থেকে বিরত থাকে, এ নিয়ে কোনো কথা বলেনা এবং এটি অন্যায়ও মনে করে না। কোনো সন্দেহ নেই যে, এটি হচ্ছে একবারে দুর্বলতম ঈমান, জ্ঞানের স্বল্পতা এবং অন্তরে পাপ ও অন্যায়ের প্রভাব বিস্তার। আল্লাহর নিকট আমাদের এবং সকল মুসলিমের জন্য সুস্থতা কামনা করি।
এর চেয়েও অধিক আশ্চর্য্যের ব্যাপার হলো: তাদের কিছু লোক ধারণা করে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মোৎসবে উপস্থিত হন, এ জন্য তারা সালাম দিয়ে তাঁর সম্মানে দাঁড়িয়ে যায়, আর এটি সবচেয়ে ভ্রান্ত ধারণা এবং চরম মুর্খতা। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিয়ামতের পূর্বে তাঁর কবর থেকে বের হবেন না, কোনো মানুষের সাথে সম্পর্ক রাখবেন না এবং তাদের কোনো অনুষ্ঠানেও উপস্থিত হবেন না। বরং কিয়ামত পর্যন্ত তিনি তাঁর কবরেই অবস্থান করবেন এবং তাঁর রূহ মোবারক আল্লাহর নিকট সম্মানিত ঘরে ইল্লিয়্যিনের সর্বোচ্চে রয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
“অতঃপর অবশ্যই তোমারা কিয়ামতের দিন উত্তোলিত হবে। [সূরা মুমিনূন/১৬]
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«أنا أول من ينشق القبر يوم القيامة وأنا أول شافع وأول مشفّع»
“আমিই সর্বপ্রথম কিয়ামতের দিন কবর থেকে উঠব এবং আমিই প্রথম সুপারিশকারী আর আমার সুপারিশই সর্বপ্রথম গ্রহণ করা হবে।” [আহমাদ, হাদীস নং ১০৬০৪, ইবনে মাজাহ, যুহদ অধ্যায়, শাফায়াত উল্লেখ অনুচ্ছেদ, হাদীস নং ৪৩০৮।]
এ সকল আয়াত ও হাদীস এবং এ অর্থে আরো যে সকল আয়াত ও হাদীস রয়েছে তা প্রমাণ করে যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সকল মৃত ব্যক্তিই কিয়ামতের দিন তারা তাদের কবর থেকে উঠবে, আর তাতে সকল মুসলিম আলেমের ঐকমত্য রয়েছে, এর মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই। কাজেই প্রতিটি মুসলিমের উচিৎ হলো এসব ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা এবং মুর্খ ও জাহেলগণ যে বিদ‘আত ও কুসংস্কার আবিষ্কার করছে যার কোনো প্রমানপঞ্জি আল্লাহ অবতীর্ণ করেননি তা থেকে বিরত থাকা।
তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর সালাত ও সালাম পাঠ করা নৈকট্য লাভের উত্তম মাধ্যম এবং তা সৎকর্মসমূহের অন্তর্ভুক্ত। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেস্তামণ্ডলী নবীর উপর সালাত পাঠ করে. কাজেই হে যারা ঈমান এনেছ, তোমরা তার উপর সালাত পাঠকর এবং যথাযথ সালাম দাও।” [সূরা আল-আহযাব/৫৬]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
» من صلى علي واحدة صلى الله عليه بها عشراً»
“যে ব্যক্তি আমার উপর একবার সালাত পাঠ করবে আল্লাহ তার উপর দশবার সালাত পাঠ করবেন।” [দারেমী, আস-সুনান, হাদীস নং ৪৯৭।]
আর তা সকল সময়েই পাঠ করা যাবে, বিশেষ করে ফরয সালাতের শেষ দিকে পড়ার তাকিদ রয়েছে বরং প্রতি সালাতের শেষ তাশাহহুদে পড়া বহু আলেমের নিকট ওয়াজিব এবং বিভিন্ন জায়গায় যেমন, আযানের পর, তাঁর নাম উল্লেখ করার পর এবং জুম‘আর রাত্রি ও জুম‘আর দিনে তা পাঠ করা মুস্তাহাব। বহু হাদীস তা প্রমাণ করে।
এ মাসআলার ব্যাপারে এ সতর্কতাই দিতে চেয়েছি, যাকে আল্লাহ সঠিক বিবেক দিয়েছেন এবং হেদায়েত করেছেন তার জন্য এতটুকুই ইনশাআল্লাহ যথেষ্ট ।
অতীব দুঃখের বিষয় হলো, এ সকল বিদ‘আতী অনুষ্ঠান পালন করা হয় মুসলিমদের দ্বারাই, তারা তাদের নিজস্ব মতবাদে বিশ্বাসী হয়ে রাসূলের মহব্বতে তা করছে। যারা এরকম বলছে তাদেরকে বলব, আপনি যদি সুন্নী হন এবং রাসূলের পুরোপুরি অনুসরণ করেন তাহলে কি রাসূল তা কখনো করেছেন? বা তাঁর কোনো সাহাবী অথবা কোনো তাবে‘ঈ করেছেন? নাকি তা ইসলামের শত্রু ইয়াহূদী ও খৃষ্টান এবং তাদের মত আরও যারা আছে তাদের অন্ধ অনুকরণ-অনুসরণ?
রাসূলের মহব্বত শুধু তাঁর জন্মোৎসব পালনের মাধ্যমে প্রকাশ হয় না বরং তিনি যে নির্দেশ দিয়েছেন তার অনুসরণ অনুকরণের মাধ্যমে, তাঁর দেওয়া সংবাদ বিশ্বাসের মাধ্যমে, তাঁর নিষেধাবলী থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে এবং তার শিখানো পদ্ধতিতে আল্লাহর দেওয়া শর‘ঈ বিধানের মাধ্যমে ইবাদত করার দ্বারাই তা প্রকাশ পায়। এমনিভাবে তাঁর নাম উল্লেখ হওয়ার পর, সালাতের মধ্যে এবং প্রত্যেক সময়ে ও সর্বক্ষেত্রে তাঁর উপর দুরুদ পাঠ করা তাঁর মহব্বতের বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু এ সকল বিদ‘আতী কাজের নিন্দা করা ওয়াহাবী নয় যেমনটি পত্রিকার লেখক বলেছেন। বরং ওয়াহাবী বলে যাদের বলা হচ্ছে, তাদের আকীদা-বিশ্বাস হলো: আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাতকে পুরোপুরি আঁকড়ে ধরা, তাঁর দিক নির্দেশনার উপর চলা, খোলাফায়ে রাশেদীন এবং তাবে‘ঈদের পথে চলা, সালফে সালেহীন ও ইমামগণ যে পথে চলেছেন সে পথে চলা, আল্লাহকে জানার ব্যাপারে, তার সিফাত বা গুণাগুণের ক্ষেত্রে ও তার প্রশংসার ক্ষেত্রে কুরআন এবং হাদীস যেভাবে সাব্যস্ত করেছে এবং সাহাবীগণ যেভাবে তা গ্রহণ করেছে সেভাবে সাব্যস্তের ক্ষেত্রে মুফতি ও ফকিহদের পথে চলা। এগুলো যেভাবে এসেছে তারা তা সেভাবেই সাব্যস্ত করে এবং বিশ্বাস করে, কোনো ধরনের পরিবর্তন পরিবর্ধন, রহিতকরণ এবং বিনা উদাহরণে তা সাব্যস্ত করে। তাবে‘ঈ, জ্ঞানী, পরহেযগার, ঈমানদার এবং তাবে তাবে‘ঈসহ এ উম্মাতের সালাফ ও ইমামগণ যার উপর চলেছেন তা-ই তারা আঁকড়ে ধরে আছে।
তারা এ বিশ্বাস করে যে, ঈমানের ভিত্তি ও নীতি হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার একত্ববাদ ও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার রাসূল হিসাবে সাক্ষ্য দেওয়া, আর এটিই এক আল্লাহর প্রতি ঈমানের মূল ভিত্তি এবং তা ঈমানের শাখার মধ্যে সর্বোত্তম শাখা। তারা এও জানে যে, এ ভিত্তির জন্য সকল মুসলিমের ঐক্যমতে ঈমান, আমল ও মুখের স্বীকৃতির প্রয়োজন হয়, তা প্রমাণ করে যে এক আল্লাহর ইবাদত করা ও তার সাথে কাউকে অংশিদার না করা এবং তিনি ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করা থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেকের উপর ওয়াজিব। আর এটিই জ্বীন ও মানব সৃষ্টি, নবী রাসূল প্রেরণ এবং কিতাব অবতীর্ণ করার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। তা এক আল্লাহর জন্য পরিপূর্ণ বশ্যতা ও ভালোবাসার স্বীকৃতি, এমনিভাবে পরিপূর্ণ অনুকরণ ও সম্মানের অন্তর্ভুক্ত। এটি সেই দ্বীন যা ব্যতীত অন্য কোনো দ্বীন আল্লাহ গ্রহণ করবেন না, না পূর্ববর্তীদের নিকট থেকে আর না পরবর্তীদের থেকে। কারণ সকল নবীই ইসলামের উপর থেকে এর দাওয়াত নিয়ে এসেছেন এবং যা আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণের অন্তর্ভুক্ত তার দাওয়াত নিয়ে এসেছেন। কাজেই যে ব্যক্তি তাঁর নিকট আত্মসমর্পনের সাথে সাথে অন্যের নিকটও আত্মসমর্পণ করবে ও তাকে এবং অন্যকে ডাকবে সে মুশরিকদের মধ্যে গণ্য হবে, আর যে ব্যক্তি তার নিকট আত্মসমর্পণ করবে না সে তার ইবাদত থেকে অহংকারী বলে গণ্য হবে।
“অবশ্যই আমরা প্রত্যেক জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি এ প্রত্যাদেশ দিয়ে যে তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুতকে পরিহার কর। [সূরা নাহল/৩৬]
তাদের আক্বীদা হলো: মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল হওয়ার উপর সাক্ষ্য প্রদান করা এবং বিদ‘আত, কুসংস্কার ও রাসূলের আনীত শরীয়তের পরিপন্থী প্রতিটি বিষয় ত্যাগ করা। আর এটাই শাইখ মুহাম্মদ ইবন আব্দুল ওয়াহহাব রাহিমাহুল্লাহ এর আক্বীদা। এ আক্বীদার দ্বারাই তিনি আল্লাহর দ্বীন পালন করেন এবং এর দিকে তিনি মানুষকে আহ্বান করেন। আর যে ব্যক্তি এ আক্বীদার পরিপন্থী কোনো মাস্আলা মাসায়েল বা মতবাদ তার দিকে সম্পর্কযুক্ত করবে তা হবে ডাহা মিথ্যা, প্রাকশ্য অপবাদ এবং বিনা জ্ঞানে কথা বলা। এ সকল অপবাদীদেরকে আল্লাহ তার অঙ্গিকারানুযায়ী বদলা দিবেন। ইখলাস ও তাওহীদ, আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য দেওয়া এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কারো ইবাদতের বিষয়টি রহিত করে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য তা পরিপূর্ণভাবে সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে কুরআন, হাদীস ও ইজমা যা প্রমাণ করে তার উপর তিনি তার মূল্যবান প্রতিবেদন, গবেষণা এবং গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থাদি প্রকাশ করেছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থাদি, প্রসিদ্ধ দাওয়াত ও কাজকর্ম এবং তার বড় বড় জ্ঞানী সহচরবৃন্দ ও ছাত্রদের মতামত সম্পর্কে যে ব্যক্তি জানতে পারবে সে বুঝতে পারবে যে এক আল্লাহর ইবাদত করার সাথে সাথে বিদ‘আত ও কুসংস্কার রহিতের ক্ষেত্রে তিনি সালাফ তথা উম্মতের উত্তম পূর্বসূরী ও সম্মানিত ইমামদের তরিকায় আছেন। আর এর উপরই সৌদী হুকুমত বা শাসন রয়েছে এবং সৌদী আলেমগণও এর উপরই চলেছেন। সৌদী হুকুমত ও আলেমগণ যাবতীয় বিদ‘আত, কুসংস্কার এবং সকল প্রকার বাড়াবাড়ি, যা থেকে রাসূল নিষেধ করেছেন, তার বিরুদ্ধে জোরালো ভূমিকা রাখছেন।
সৌদী মুসলিম জনগণ এবং সরকার প্রতিটি মুসলিমকে যথাযথ সম্মান করে থাকে এবং সে যে কোনো জায়গার বা যে কোনো দিকেরই হোক না কেন তাদেরকে ভালোবাসা এবং সম্মানের দৃষ্টিতে দেখে। আর যারা বিদ‘আত, কুসংস্কার, বিদ‘আতী উৎসব পালনের মত ভ্রান্ত মতবাদ নিয়ে আছে, যার অনুমতি আল্লাহ ও রাসূল দেননি, তাদেরকে তারা ঘৃণা করেন এবং তা করতে নিষেধ করেন, কারণ তা নব আবিষ্কৃত জিনিস, আর প্রতিটি নব আবিষ্কৃত জিনিসই বিদ‘আত। বস্তুত মুসলিমগণকে রাসূলের অনুসরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কোনো বিদ‘আত সৃষ্টির জন্য নয়, কারণ ইসলাম একটি পরিপূর্ণ দ্বীন, আল্লাহ এবং রাসূল যা শরীয়ত হিসাবে দিয়েছেন এবং সম্মানিত সাহাবী ও তাবে‘ঈগণ যা গ্রহণ করেছেন এবং যারা তাদের অনুসরণ করেন তা-ই যথেষ্ট।
রাসূলের জন্মোৎসবের বিদ‘আতী অনুষ্ঠান পালন এবং এতে যে সকল বাড়াবাড়ি বা শির্ক ইত্যাদি হয়, তার বাধা প্রদান করা অনৈসলামিক কাজ নয় বা রাসূলের অসম্মান নয়, বরং এটাই রাসূলের অনুসরণ-অনুকরণ এবং তাঁর নির্দেশ বাস্তবায়ন। যেমন তিনি বলেছেন,
«إياكم والغلو في الدين فإنما أهلك من كان قبلكم الغلو في الدين»
“তোমরা দ্বীনের মধ্যে অধিক বাড়াবাড়ি করা থেকে বেঁচে থাক, কেননা দ্বীনের মধ্যে অধিক বাড়াবাড়িই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকজনকে ধ্বংস করেছে।”
তিনি আরও বলেন:
«لا تطروني كما أطرت النصارى ابن مريم، إنما أنا عبد فقولوا عبد الله ورسوله» أخرجه البخاري في صحيحه
“তোমরা আমার প্রশংসায় সীমালঙ্ঘন করো না যেমন খৃষ্টানগণ ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর ব্যাপারে করেছে, বরং আমি কেবল একজন বান্দা, কাজেই তোমরা বল যে আমি আল্লাহর বান্দা ও তার রাসূল।”
উল্লেখিত প্রবন্ধ সম্পর্কে এ সতর্কতাই দিতে চেয়েছি। আল্লাহ আমাদের এবং সকল মুসলিমকে যেন দ্বীন সম্পর্কে বুঝার ও এর উপর দৃঢ় থাকার তাওফীক দান করেন এবং সুন্নাতকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরা ও বিদ‘আত থেকে বেচে থাকার উপর অনুগ্রহ করেন। নিশ্চয়ই তিনি অনুগ্রহশীল করুনাময়।
وصلى الله وسلم على نبينا محمد وآله وصحبه .
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/252/2
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।