HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
সুন্নতের আলো ও বিদআতের আঁধার
লেখকঃ সাঈদ বিন আলী ইবনে ওহাফ আল-কাহতানী
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করি, তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি। তাঁর কাছে স্বীয় কু-রিপু ও অসৎ কর্মের অনিষ্ট হতে আশ্রয় চাই। তিনি যাকে হেদায়াত দেন তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন তাকে কেউ হেদায়াত দিতে পারে না।
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ছাড়া সত্যিকারের কোন মা‘বুদ নেই। তিনি এক, তাঁর কোন শরিক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বান্দা ও রাসূল। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক তাঁর, তাঁর পরিবারবর্গ, সাহাবায়ে কেরাম এবং কিয়ামত পর্যন্ত আগত তাঁর সকল অনুসারীর উপর।
‘‘নূরুস সুন্নাহ্ ওয়া জুলুমাতুল বিদআহ ’’ নামক এ সংক্ষিপ্ত গ্রন্থে আমি সুন্নাতের অর্থ ও আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামাতের পরিচয় বর্ণনা করেছি। সুন্নাত একটি বিশেষ নিয়ামত, তাই সুন্নাত ও সুন্নাতের অনুসারীদের পরিচয়, মর্যাদা ও আমল কবুলের শর্ত সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছি। পাশাপাশি বিদআত ও বিদআতপন্থীদের পরিচয়, বিদআতের প্রকারভেদ, কারণ, বিধান এবং এর ক্ষতিকর দিকসমূহ তুলে ধরেছি। প্রচলিত বিদআত, কবর কেন্দ্রিক বিদআত ও এর ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে আলোচনা করেছি। সাথে সাথে তা থেকে তাওবা করার প্রতি উৎসাহিত করেছি।
নিঃসন্দেহে সুন্নাত এমন আলোকবর্তিকা ও জীবনাদর্শ, যা বান্দাকে হেদায়াতের পথে পরিচালিত করে এবং সফলতার পথ প্রদর্শন করে।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
يَوْمَ تبْيَضُّ وُجُوْهٌ وَ تَسْوَدُّ وَجُوْهٌ . ( آل عمران : 106)
অর্থঃ যে দিন অনেক চেহারা উজ্জ্বল হবে ও অনেক চেহারা মলিন হবে। [. আলে ইমরানঃ ১০৬] ইবনে আববাস (রা) বলেনঃ
تَبْيَضّ وُجُوْهُ أَهْلِ السُّنَّةِ وَ الاِئْتِلافِ، وَتَسْوَدُّ وُجُوْهُ أَهْلِ الْبِدْعَةِ وَ التَّفَرُّقِ .
অর্থঃ ‘‘আহলুস্ সুন্নাহ তথা সুন্নাতের অনুসারীদের চেহারা উজ্জ্বল হবে ও বিদআতপন্থীদের চেহারা অন্ধকারের ন্যায় কালো হবে’’। [ইজতিমাউল জুয়ুশিল ইসলামিয়াহ আলা গাজওয়াল মুআত্তালা ওয়াল জাহমিয়া, লেখক ইবনে কাইয়্যিম (র): ২/৩৯]
অর্থাৎ সুন্নাতের অনুসারীদের অন্তর জিন্দা এবং তাদের আত্না আলোকিত। তারা প্রকাশ্যে ও গোপনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। পক্ষান্তরে বিদআতপন্থীদের অন্তর মৃত ও অন্ধকারাচ্ছন্ন। আল্লাহ্ যাকে চান তাকে এ অন্ধকার হতে মুক্তি দিয়ে সুন্নাতের আলোকিত পথে নিয়ে আসেন।
আমি আলোচ্য বিষয় দু’টি অধ্যায়ে ভাগ করেছি।
১ম অধ্যায়ঃ সুন্নাতের আলো
২য় অধ্যায়ঃ বিদআতের অন্ধকার
প্রথম অধ্যায়ে ৫টি পরিচ্ছেদ আর দ্বিতীয় অধ্যায়ে ১০টি পরিচ্ছেদ রয়েছে।
আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন এ কাজে বরকত দান করেন। এ আমলকে আমার জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পর কল্যাণময় আমল হিসেবে গ্রহণ করেন এবং পাঠকদের উপকৃত করেন। তিনিই সর্বোত্তম প্রার্থনা কবুলকারী ও আশার স্থল, তিনিই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং সর্বোত্তম তত্ত্বাবধায়ক। একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ ব্যতীত গুনাহ থেকে বাঁচার ও সৎকাজ করার শক্তি নেই। আল্লাহ্ তা‘আলা স্বীয় বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর রহমত, বরকত ও শান্তি বর্ষণ করুন। আরো রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন তাঁর পরিবার বর্গ, সাহাবায়ে কেরাম ও তাঁর সকল একনিষ্ঠ অনুসারীগণের উপর।
লিখক ডঃ সাঈদ ইবনে আলী ইবনে ওহাফ আল-কাহত্বানী।
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ছাড়া সত্যিকারের কোন মা‘বুদ নেই। তিনি এক, তাঁর কোন শরিক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বান্দা ও রাসূল। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক তাঁর, তাঁর পরিবারবর্গ, সাহাবায়ে কেরাম এবং কিয়ামত পর্যন্ত আগত তাঁর সকল অনুসারীর উপর।
‘‘নূরুস সুন্নাহ্ ওয়া জুলুমাতুল বিদআহ ’’ নামক এ সংক্ষিপ্ত গ্রন্থে আমি সুন্নাতের অর্থ ও আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামাতের পরিচয় বর্ণনা করেছি। সুন্নাত একটি বিশেষ নিয়ামত, তাই সুন্নাত ও সুন্নাতের অনুসারীদের পরিচয়, মর্যাদা ও আমল কবুলের শর্ত সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছি। পাশাপাশি বিদআত ও বিদআতপন্থীদের পরিচয়, বিদআতের প্রকারভেদ, কারণ, বিধান এবং এর ক্ষতিকর দিকসমূহ তুলে ধরেছি। প্রচলিত বিদআত, কবর কেন্দ্রিক বিদআত ও এর ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে আলোচনা করেছি। সাথে সাথে তা থেকে তাওবা করার প্রতি উৎসাহিত করেছি।
নিঃসন্দেহে সুন্নাত এমন আলোকবর্তিকা ও জীবনাদর্শ, যা বান্দাকে হেদায়াতের পথে পরিচালিত করে এবং সফলতার পথ প্রদর্শন করে।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
يَوْمَ تبْيَضُّ وُجُوْهٌ وَ تَسْوَدُّ وَجُوْهٌ . ( آل عمران : 106)
অর্থঃ যে দিন অনেক চেহারা উজ্জ্বল হবে ও অনেক চেহারা মলিন হবে। [. আলে ইমরানঃ ১০৬] ইবনে আববাস (রা) বলেনঃ
تَبْيَضّ وُجُوْهُ أَهْلِ السُّنَّةِ وَ الاِئْتِلافِ، وَتَسْوَدُّ وُجُوْهُ أَهْلِ الْبِدْعَةِ وَ التَّفَرُّقِ .
অর্থঃ ‘‘আহলুস্ সুন্নাহ তথা সুন্নাতের অনুসারীদের চেহারা উজ্জ্বল হবে ও বিদআতপন্থীদের চেহারা অন্ধকারের ন্যায় কালো হবে’’। [ইজতিমাউল জুয়ুশিল ইসলামিয়াহ আলা গাজওয়াল মুআত্তালা ওয়াল জাহমিয়া, লেখক ইবনে কাইয়্যিম (র): ২/৩৯]
অর্থাৎ সুন্নাতের অনুসারীদের অন্তর জিন্দা এবং তাদের আত্না আলোকিত। তারা প্রকাশ্যে ও গোপনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। পক্ষান্তরে বিদআতপন্থীদের অন্তর মৃত ও অন্ধকারাচ্ছন্ন। আল্লাহ্ যাকে চান তাকে এ অন্ধকার হতে মুক্তি দিয়ে সুন্নাতের আলোকিত পথে নিয়ে আসেন।
আমি আলোচ্য বিষয় দু’টি অধ্যায়ে ভাগ করেছি।
১ম অধ্যায়ঃ সুন্নাতের আলো
২য় অধ্যায়ঃ বিদআতের অন্ধকার
প্রথম অধ্যায়ে ৫টি পরিচ্ছেদ আর দ্বিতীয় অধ্যায়ে ১০টি পরিচ্ছেদ রয়েছে।
আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন এ কাজে বরকত দান করেন। এ আমলকে আমার জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পর কল্যাণময় আমল হিসেবে গ্রহণ করেন এবং পাঠকদের উপকৃত করেন। তিনিই সর্বোত্তম প্রার্থনা কবুলকারী ও আশার স্থল, তিনিই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং সর্বোত্তম তত্ত্বাবধায়ক। একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ ব্যতীত গুনাহ থেকে বাঁচার ও সৎকাজ করার শক্তি নেই। আল্লাহ্ তা‘আলা স্বীয় বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর রহমত, বরকত ও শান্তি বর্ষণ করুন। আরো রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন তাঁর পরিবার বর্গ, সাহাবায়ে কেরাম ও তাঁর সকল একনিষ্ঠ অনুসারীগণের উপর।
লিখক ডঃ সাঈদ ইবনে আলী ইবনে ওহাফ আল-কাহত্বানী।
সুন্নাতের কিছু অনুসারী আছে যারা জামাতবদ্ধ সুদৃঢ় আকীদা-বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত। যাদেরকে ‘আহ্লুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’ বলা হয়।
এখানে তিনটি বিষয় রয়েছেঃ ১. আকীদা, ২. আহ্লুস সুন্নাহ ও ৩. আল-জামাআহ। নিম্নে প্রত্যেকটির পরিচয় দেয়া হলোঃ
প্রথমঃ ‘আকীদা’ এর শাব্দিক অর্থ
বন্ধন, বাঁধন, দৃঢ়ভাবে বাঁধা।
পারিভাষিক অর্থ
আকীদা এমন সুদৃঢ় ও সঠিক ঈমানকে বলে, যার মধ্যে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।
সুতরাং যদি তার সে সুদৃঢ় বিশ্বাস বিশুদ্ধ ও সঠিক হয়, তাহলে আকীদাও বিশুদ্ধ এবং সঠিক হবে। যেমন, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকীদা। আর যদি তা ভ্রান্ত হয়, তাহলে আকীদাও ভ্রান্ত এবং বাতিল বলে গণ্য হবে। যেমন, বিভিন্ন ভ্রান্ত আকীদাপন্থী পথভ্রষ্ট সম্প্রদায়ের আকীদা ও বিশ্বাস। [মাবাহিসু আকীদাতি আহলিস্সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ - ড: নাসের আল-আকল : ৯-১০পৃ:]
দ্বিতীয়ঃ ‘আহ্লুস সুন্নাহ’ এর অর্থ
‘সুন্নাহ’ এর শাব্দিক অর্থ
পথ বা জীবনাদর্শ, তা উৎকৃষ্ট হোক বা নিকৃষ্ট।
ইসলামী আকীদাপন্থীদের পরিভাষায় সুন্নাহ অর্থ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীগণ যে জীবনাদর্শ অনুযায়ী জীবন যাপন করেছেন সে জীবনাদর্শকে সুন্নাহ বলা হয়।
এটা এমন এক আদর্শ, যা অনুসরণ করা ওয়াজিব। এ সুন্নাতের অনুসারীদের প্রশংসা করা হয়েছে। পক্ষান্তরে এর বিরোধীদের নিন্দা করা হয়েছে। এজন্যই বলা হয় অমুক ব্যক্তি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের অনুসারী। অর্থাৎ সে সুদৃঢ় ও প্রশংসিত আদর্শের অনুসারী। [মাবাহিসু আকীদাতি আহলিস্সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ - ড: নাসের আল-আকল : ১৩পৃ:]
হাফেয ইবনে রজব রহ. বলেন, সুন্নাত হলো প্রচলিত পদ্ধতি, যা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও খোলাফায়ে রাশেদীনের বিশ্বাস, আমল ও বক্তব্যসমূহ অন্তর্ভুক্ত করে। এটাই হলো প্রকৃত সুন্নাত। [জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম : ১/১২০]
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, সুন্নাত হল ঐ সকল আমল, যা পালনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুগত হওয়ার ব্যাপারে শরীয়তের দলিল রয়েছে। চাই তা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে পালন করেছেন বা তাঁর অনুমোদনে সে যুগে পালন করা হয়েছে অথবা চাহিদা না থাকায় কিংবা অসুবিধার কারণে সে যুগে পালিত হয়নি। এ সবই সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত। [মাজমুয়ায়ে ফতোয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া : ২১/৩১৭]
এখানে সুন্নাতের অর্থ হল
বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ সকল ক্ষেত্রে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীস, মুহাজির ও আনসার সাহাবীগণের আদর্শের অনুসরণ করা।
তৃতীয়ঃ ‘জামাআহ’ এর শাব্দিক অর্থ
দল, গোষ্ঠী, সম্প্রদায় ইত্যাদি।
ইবনে ফারেস রহ. বলেন, জীম, মীম ও আইন হরফ দ্বারা গঠিত শব্দ কোন বস্ত্ত একত্রিত করা বুঝায়।
ইসলামী আকীদার পরিভাষায়
জামাআত হল, উম্মতে মুহাম্মাদীর নেককার ব্যক্তিবর্গ। যেমন, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ী, তাবে-তাবেয়ী এবং কিয়ামত পর্যন্ত আগত নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুসারীগণ, যারা কিতাবুল্লাহ্ ও সুন্নাতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর ঐকমত্য পোষণকারী। [শরহু আকীদাতি আত-তহাবী : ৬৮পৃ:]
আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রা) বলেন, জামাআত ঐ বিষয়কে বলে, যা সত্যের অনুকূল হয়, যদিও তাতে তুমি একা হও।
নুয়াইম ইবনে হাম্মাদ রহ. বলেন, যখন জামাআত ভেঙ্গে যাবে তখন তোমার জন্য আবশ্যক হল, ভেঙ্গে যাওয়ার পূর্বে জামাআত যে উদ্দেশ্য ও আর্দশের উপর ছিল সে আর্দশের উপর অটল থাকা, যদিও তুমি একা হও। কেননা সে সময় তুমি একাই জামাআত হিসেবে গণ্য হবে। [ইগাসাতিল লাফহান, ইবনে তাইমিয়া : ১/৭০]
এখানে তিনটি বিষয় রয়েছেঃ ১. আকীদা, ২. আহ্লুস সুন্নাহ ও ৩. আল-জামাআহ। নিম্নে প্রত্যেকটির পরিচয় দেয়া হলোঃ
প্রথমঃ ‘আকীদা’ এর শাব্দিক অর্থ
বন্ধন, বাঁধন, দৃঢ়ভাবে বাঁধা।
পারিভাষিক অর্থ
আকীদা এমন সুদৃঢ় ও সঠিক ঈমানকে বলে, যার মধ্যে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।
সুতরাং যদি তার সে সুদৃঢ় বিশ্বাস বিশুদ্ধ ও সঠিক হয়, তাহলে আকীদাও বিশুদ্ধ এবং সঠিক হবে। যেমন, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকীদা। আর যদি তা ভ্রান্ত হয়, তাহলে আকীদাও ভ্রান্ত এবং বাতিল বলে গণ্য হবে। যেমন, বিভিন্ন ভ্রান্ত আকীদাপন্থী পথভ্রষ্ট সম্প্রদায়ের আকীদা ও বিশ্বাস। [মাবাহিসু আকীদাতি আহলিস্সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ - ড: নাসের আল-আকল : ৯-১০পৃ:]
দ্বিতীয়ঃ ‘আহ্লুস সুন্নাহ’ এর অর্থ
‘সুন্নাহ’ এর শাব্দিক অর্থ
পথ বা জীবনাদর্শ, তা উৎকৃষ্ট হোক বা নিকৃষ্ট।
ইসলামী আকীদাপন্থীদের পরিভাষায় সুন্নাহ অর্থ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীগণ যে জীবনাদর্শ অনুযায়ী জীবন যাপন করেছেন সে জীবনাদর্শকে সুন্নাহ বলা হয়।
এটা এমন এক আদর্শ, যা অনুসরণ করা ওয়াজিব। এ সুন্নাতের অনুসারীদের প্রশংসা করা হয়েছে। পক্ষান্তরে এর বিরোধীদের নিন্দা করা হয়েছে। এজন্যই বলা হয় অমুক ব্যক্তি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের অনুসারী। অর্থাৎ সে সুদৃঢ় ও প্রশংসিত আদর্শের অনুসারী। [মাবাহিসু আকীদাতি আহলিস্সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ - ড: নাসের আল-আকল : ১৩পৃ:]
হাফেয ইবনে রজব রহ. বলেন, সুন্নাত হলো প্রচলিত পদ্ধতি, যা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও খোলাফায়ে রাশেদীনের বিশ্বাস, আমল ও বক্তব্যসমূহ অন্তর্ভুক্ত করে। এটাই হলো প্রকৃত সুন্নাত। [জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম : ১/১২০]
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, সুন্নাত হল ঐ সকল আমল, যা পালনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুগত হওয়ার ব্যাপারে শরীয়তের দলিল রয়েছে। চাই তা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে পালন করেছেন বা তাঁর অনুমোদনে সে যুগে পালন করা হয়েছে অথবা চাহিদা না থাকায় কিংবা অসুবিধার কারণে সে যুগে পালিত হয়নি। এ সবই সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত। [মাজমুয়ায়ে ফতোয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া : ২১/৩১৭]
এখানে সুন্নাতের অর্থ হল
বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ সকল ক্ষেত্রে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীস, মুহাজির ও আনসার সাহাবীগণের আদর্শের অনুসরণ করা।
তৃতীয়ঃ ‘জামাআহ’ এর শাব্দিক অর্থ
দল, গোষ্ঠী, সম্প্রদায় ইত্যাদি।
ইবনে ফারেস রহ. বলেন, জীম, মীম ও আইন হরফ দ্বারা গঠিত শব্দ কোন বস্ত্ত একত্রিত করা বুঝায়।
ইসলামী আকীদার পরিভাষায়
জামাআত হল, উম্মতে মুহাম্মাদীর নেককার ব্যক্তিবর্গ। যেমন, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ী, তাবে-তাবেয়ী এবং কিয়ামত পর্যন্ত আগত নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুসারীগণ, যারা কিতাবুল্লাহ্ ও সুন্নাতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর ঐকমত্য পোষণকারী। [শরহু আকীদাতি আত-তহাবী : ৬৮পৃ:]
আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রা) বলেন, জামাআত ঐ বিষয়কে বলে, যা সত্যের অনুকূল হয়, যদিও তাতে তুমি একা হও।
নুয়াইম ইবনে হাম্মাদ রহ. বলেন, যখন জামাআত ভেঙ্গে যাবে তখন তোমার জন্য আবশ্যক হল, ভেঙ্গে যাওয়ার পূর্বে জামাআত যে উদ্দেশ্য ও আর্দশের উপর ছিল সে আর্দশের উপর অটল থাকা, যদিও তুমি একা হও। কেননা সে সময় তুমি একাই জামাআত হিসেবে গণ্য হবে। [ইগাসাতিল লাফহান, ইবনে তাইমিয়া : ১/৭০]
১. আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ
যারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামের আদ©র্শর অনুসারী এবং সুন্নাতকে সুদৃঢ়ভাবে ধারণকারী। যথা- তাবেয়ী, তাবে তাবেয়ী ও হেদায়াতপ্রাপ্ত ইমামগণ। তারা সুন্নাতের অনুসরণে সুদৃঢ় ও সর্বদা সকল প্রকার বিদআত থেকে দূরে থাকে। এরাই কিয়ামত পর্যন্ত সাহায্যপ্রাপ্ত জামাআত। [মাবাহিসু আকীদাতি আহলিস্সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ - ড: নাসের আল-আকল : ১৩-১৪পৃ:] রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাতের সাথে সম্পর্ক থাকার কারণে এবং বাহ্যিক, আন্তরিক, ও মৌখিক কার্যাবলীতে সুন্নাতকে সম্মিলিতভাবে আঁকড়ে ধরার কারণে এ নামে তাদের নামকরণ করা হয়েছে। [ফাতহু রবিবল বারিয়্যাতি বি তাখলীসিল হামুবিয়াতি - ইবনে উসাইমিন : ১০পৃ:]
এ প্রসঙ্গে আওফ বিন মালেক (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
افْتَرَقَتْ الْيَهُودُ عَلَى إِحْدَى وَسَبْعِينَ فِرْقَةً فَوَاحِدَةٌ فِي الْجَنَّةِ وَسَبْعُونَ فِي النَّارِ وَافْتَرَقَتْ النَّصَارَى عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً فَإِحْدَى وَسَبْعُونَ فِي النَّارِ وَوَاحِدَةٌ فِي الْجَنَّةِ وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَتَفْتَرِقَنَّ أُمَّتِي عَلَى ثَلَاثٍ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً وَاحِدَةٌ فِي الْجَنَّةِ وَثِنْتَانِ وَسَبْعُونَ فِي النَّارِ قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ هُمْ قَالَ الْجَمَاعَةُ . ( ترمذي )
অর্থঃ ইহুদীরা একাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছে, তন্মধ্যে একদল জান্নাতী এবং সত্তর দল জাহান্নামী। খ্রীষ্টানরা বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছে, তন্মধ্যে একাত্তর দল জাহান্নামী ও একদল জান্নাতী। ঐ সত্ত্বার শপথ! যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন, নিশ্চয়ই আমার উম্মত তেহাত্তর দলে বিভক্ত হবে, তাদের একদল জান্নাতী এবং বাহাত্তর দল জাহান্নামী। জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! তারা কারা? তিনি বললেন, তারা হল (সুন্নাতের অনুসারী) দল। [ইবনে মাজা : ২/৩২১]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিত, সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! তারা কারা ? উত্তরে তিনি বললেন, مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي অর্থঃ যারা আমি এবং আমার সাহাবায়ে কেরামের অনুসারী। [তিরমিযী : ২৬৪১]
২. মুক্তিপ্রাপ্ত দল
জাহান্নাম থেকে মুক্তি প্রাপ্ত দল হল, আহ্লুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ। কেননা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মতের বিভক্ত দলসমূহের আলোচনার প্রাক্কালে তাদেরকে পৃথকভাবে উল্লেখ করেছেন।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
كُلُّهَا فِيْ النَّارِ إِلَّا وَاحِدَةٌ .
অর্থঃ তারা সকলেই জাহান্নামী হবে একটি দল ব্যতীত। [উসূলু আহলিস্ সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ - সালেহ ইবনে ফাওযান : ১১ পৃ]
৩. সাহায্য প্রাপ্ত দল
‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’ আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে সর্বদা সাহায্য প্রাপ্ত একটি দল।
মুআবিয়া (রা) সূত্রে বর্ণিত হাদীসে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
لَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي قَائِمَةٌ بِأَمْرِ اللهِ لَا يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ أَوْ خَالَفَهُمْ حَتَّى يَأْتِيَ أَمْرُ اللَّهِ وَهُمْ ظَاهِرُوْنَ عَلى النَّاسِ . ( متفق عليه )
অর্থঃ আমার উম্মতের একটি দল সর্বদা আল্লাহর নির্দেশের উপর অটল থাকবে। বিরোধীদের বিরোধিতা ও অপমানকারীদের অপমান তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ্র ফয়সালা (কিয়ামত) আসার পূর্ব পর্যন্ত তারা সর্বদা মানুষের উপর বিজয়ী থাকবে। [বুখারী : ৩৬৪১ ও মুসলিম : ১০৩৭]
মুগীরা ইবনে শুবা (রা) থেকে অন্য রেওয়ায়াতে এ ধরণের হাদীস বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
لَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي ظَاهِرِينَ عَلَى الْحَقِّ لَا يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ حَتَّى يَأْتِيَ أَمْرُ اللَّهِ وَهُمْ كَذَلِكَ . ( مسلم )
‘সর্বদা আমার উম্মতের একটি জামাআত সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে আল্লাহ্র ফয়সালা (কিয়ামত) আসার পূর্ব পর্যন্ত অপমানকারীদের অপমান তাদের কোন ক্ষতি করবে না।’ [মুসলিম : ১৯২০]
জাবের (রা) থেকেও মুসলিমের অন্য রেওয়ায়াতে এ ধরণের হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
৪. কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাতের অনুসারী
তারা কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সুদৃঢ়ভাবে ধারণকারী হবে। যে আর্দশের উপর আনসার ও মুহাজির সাহাবায়ে কেরামগণ ছিলেন, তারাও সে আদর্শের অনুসারী হবে। এ জন্যই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তারা আমি এবং আমার সাহাবায়ে কেরামের আর্দশের অনুসারী হবে।
৫. সৎ নেতৃবর্গ
যারা সত্যের পথপ্রদর্শক এবং সে অনুযায়ী আমলকারী। আইয়ূব সখতিয়ানী রহ. বলেন, ‘ঐ যুবক সৌভাগ্যবান, যাকে আল্লাহ্ তা‘আলা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের কোন একজন দ্বীনদার আলিমের সাহচর্য লাভের তাওফিক দিয়েছেন।’ [শরহে উসূলে ইতিকাদে আহলুস্ সুন্নাহ্ ওয়াল জামাআহ : ১/৬৬]
ফুযাইল ইবনে আয়ায রহ. বলেন, আল্লাহ তা‘আলার এমন কিছু বান্দা আছে, যাদের মাধ্যমে আল্লাহ অনেক দেশকে জীবন্ত করেছেন তথা হেদায়াত দান করেছেন, তারাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ। [শরহে উসূলে ইতিকাদে আহলুস্ সুন্নাহ্ ওয়াল জামাআহ : ১/৭২]
৬. বিদআত থেকে বাধাদানকারী
যারা বিদআতপন্থীদের সকল প্রকার বিদআত ও কুসংস্কার থেকে নিরুৎসাহিত করে এবং সুন্নাতের অনুসরণ করতে উৎসাহিত করে, তারাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ ও সর্বোত্তম মানুষ।
আবু বকর ইবনে আইয়াশকে জিজ্ঞেস করা হল, সুন্নী কারা? উত্তরে তিনি বললেন, যাদের সামনে প্রবৃত্তি নিয়ে আলোচনা করা হলে তারা সেদিকে মনোযোগ দেয় না। [শরহে উসূলে ইতিকাদে আহলুস্ সুন্নাহ্ ওয়াল জামাআহ : ১/৭২]
ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ হচ্ছে সর্বোত্তম উম্মত, তারা সহজ, সরল ও সঠিক পথের অনুসারী। [ফতোয়া ইবনে তাইমিয়া : ৩/৩৬৮]
৭. সৌভাগ্যবান দল
যারা এ উম্মতের মধ্যে শত প্রতিকূলতার পরও সত্যের ধারক-বাহক হিসেবে পরিচিত।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
بَدَأَ الْإِسْلَامُ غَرِيبًا وَسَيَعُودُ كَمَا بَدَأَ غَرِيبًا فَطُوبَى لِلْغُرَبَاءِ . ( مسلم )
অর্থঃ ইসলাম অচেনা ক্ষুদ্র পরিসরে আত্মপ্রকাশ করেছে এবং অতিসত্তর তা পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবে। সুতরাং সুসংবাদ অচেনাদলের জন্য। [মুসলিম : ১৪৫]
আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. বর্ণনা করেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করা হল, গুরাবা তথা অচেনা দূর্বল দল কারা? তিনি বললেন, ঐ সকল লোক, যারা আল্লাহর জন্য পরিবার পরিজন ও স্বজাতি থেকে দূরে রয়েছে। [নেহায়া লেখক ইবনে আসীর : ৫/৪১]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আ‘স (রা) থেকে ইমাম আহমদ রহ. অন্যত্র বর্ণনা করেছেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! অচেনা ক্ষুদ্র দল কারা? তিনি বললেন, অধিকাংশ পাপীদের মধ্যে কিছু সৎকর্ম পরায়ণ লোক। [মুসনাদে ইমাম আহমদ : ২/১৭৭]
অন্য সূত্রে বর্ণিত এক হাদীসে রয়েছে, যখন মানুষ বিশৃংখল হয়ে পড়ে, তখন তারা সংশোধন করে দেয় এবং নিজেরা সঠিক পথে চলে। [আহমদ : ৪/১৭৩]
সুতরাং আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ হল, বিদআতপন্থী ও প্রবৃত্তির অনুসারী দলসমূহের বিপরীত একটি সঠিক দল।
৮. জ্ঞানের ধারক -বাহক
আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ অহীলব্ধ জ্ঞানের অনুসারী এবং তারা উক্ত জ্ঞানের ধারক-বাহক। তারা সীমালংঘনকারীদের সীমালংঘন, ভ্রান্তপন্থীদের ভ্রান্তমত এবং মূর্খদের অপব্যাখ্যা থেকে দূরে থাকে।
এ জন্যই ইবনে সিরীন রহ. বলেন, তারা হাদীসের সনদ সম্পর্কে প্রশ্ন করে না। যখন সনদে কোন সমস্যা সৃষ্টি হয় তখন তারা বলে, আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনাকারীদের পরিচয় দাও। অতঃপর আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের অনুসারীগণ বর্ণনাকারীদের জ্ঞানের গভীরতার প্রতি লক্ষ্য করে তাদের হাদীস গ্রহণ করেন। পক্ষান্তরে বিদআতপন্থীদের অবস্থার প্রতি লক্ষ্য করে তাদের হাদীস গ্রহণ করেন না। [মুকাদ্দামায়ে মুসলিম : ১/১৫]
৯. আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের কোন একজনের ইন্তেকাল সকলকে ব্যথিত করে
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ এমন সব বৈশিষ্ট্যের অধিকারী যা কুরআন ও হাদীসের সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গির অনুকূল। তারা খাঁটি মুমিনদের নিকট প্রিয় মানুষ ও দ্বীনের সঠিক রাহবার।
আইউব সাখতিয়ানী রহ. বলেন, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের কোন এক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর শুনলে মনে হয় যেন আমি আমার একটি অঙ্গ হারিয়ে ফেলেছি। [শরহুে উসূলে ইতিকাদে আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ : ১/৬৬]
তিনি আরো বলেন, যারা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মৃত্যু কামনা করে, তারা নিজেদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নূর তথা দ্বীনের আলো নিভিয়ে ফেলতে চায়। অথচ আল্লাহ স্বীয় নূর তথা দ্বীনের আলো পূর্ণাঙ্গ করবেন, যদিও তা কাফিরদের অপছন্দ হয়। [শরহে উসূলে ইতিকাদে আহ&&লস্ সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ : ১/৬৮]
যারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামের আদ©র্শর অনুসারী এবং সুন্নাতকে সুদৃঢ়ভাবে ধারণকারী। যথা- তাবেয়ী, তাবে তাবেয়ী ও হেদায়াতপ্রাপ্ত ইমামগণ। তারা সুন্নাতের অনুসরণে সুদৃঢ় ও সর্বদা সকল প্রকার বিদআত থেকে দূরে থাকে। এরাই কিয়ামত পর্যন্ত সাহায্যপ্রাপ্ত জামাআত। [মাবাহিসু আকীদাতি আহলিস্সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ - ড: নাসের আল-আকল : ১৩-১৪পৃ:] রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাতের সাথে সম্পর্ক থাকার কারণে এবং বাহ্যিক, আন্তরিক, ও মৌখিক কার্যাবলীতে সুন্নাতকে সম্মিলিতভাবে আঁকড়ে ধরার কারণে এ নামে তাদের নামকরণ করা হয়েছে। [ফাতহু রবিবল বারিয়্যাতি বি তাখলীসিল হামুবিয়াতি - ইবনে উসাইমিন : ১০পৃ:]
এ প্রসঙ্গে আওফ বিন মালেক (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
افْتَرَقَتْ الْيَهُودُ عَلَى إِحْدَى وَسَبْعِينَ فِرْقَةً فَوَاحِدَةٌ فِي الْجَنَّةِ وَسَبْعُونَ فِي النَّارِ وَافْتَرَقَتْ النَّصَارَى عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً فَإِحْدَى وَسَبْعُونَ فِي النَّارِ وَوَاحِدَةٌ فِي الْجَنَّةِ وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَتَفْتَرِقَنَّ أُمَّتِي عَلَى ثَلَاثٍ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً وَاحِدَةٌ فِي الْجَنَّةِ وَثِنْتَانِ وَسَبْعُونَ فِي النَّارِ قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ هُمْ قَالَ الْجَمَاعَةُ . ( ترمذي )
অর্থঃ ইহুদীরা একাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছে, তন্মধ্যে একদল জান্নাতী এবং সত্তর দল জাহান্নামী। খ্রীষ্টানরা বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছে, তন্মধ্যে একাত্তর দল জাহান্নামী ও একদল জান্নাতী। ঐ সত্ত্বার শপথ! যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন, নিশ্চয়ই আমার উম্মত তেহাত্তর দলে বিভক্ত হবে, তাদের একদল জান্নাতী এবং বাহাত্তর দল জাহান্নামী। জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! তারা কারা? তিনি বললেন, তারা হল (সুন্নাতের অনুসারী) দল। [ইবনে মাজা : ২/৩২১]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিত, সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! তারা কারা ? উত্তরে তিনি বললেন, مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي অর্থঃ যারা আমি এবং আমার সাহাবায়ে কেরামের অনুসারী। [তিরমিযী : ২৬৪১]
২. মুক্তিপ্রাপ্ত দল
জাহান্নাম থেকে মুক্তি প্রাপ্ত দল হল, আহ্লুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ। কেননা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মতের বিভক্ত দলসমূহের আলোচনার প্রাক্কালে তাদেরকে পৃথকভাবে উল্লেখ করেছেন।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
كُلُّهَا فِيْ النَّارِ إِلَّا وَاحِدَةٌ .
অর্থঃ তারা সকলেই জাহান্নামী হবে একটি দল ব্যতীত। [উসূলু আহলিস্ সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ - সালেহ ইবনে ফাওযান : ১১ পৃ]
৩. সাহায্য প্রাপ্ত দল
‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’ আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে সর্বদা সাহায্য প্রাপ্ত একটি দল।
মুআবিয়া (রা) সূত্রে বর্ণিত হাদীসে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
لَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي قَائِمَةٌ بِأَمْرِ اللهِ لَا يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ أَوْ خَالَفَهُمْ حَتَّى يَأْتِيَ أَمْرُ اللَّهِ وَهُمْ ظَاهِرُوْنَ عَلى النَّاسِ . ( متفق عليه )
অর্থঃ আমার উম্মতের একটি দল সর্বদা আল্লাহর নির্দেশের উপর অটল থাকবে। বিরোধীদের বিরোধিতা ও অপমানকারীদের অপমান তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ্র ফয়সালা (কিয়ামত) আসার পূর্ব পর্যন্ত তারা সর্বদা মানুষের উপর বিজয়ী থাকবে। [বুখারী : ৩৬৪১ ও মুসলিম : ১০৩৭]
মুগীরা ইবনে শুবা (রা) থেকে অন্য রেওয়ায়াতে এ ধরণের হাদীস বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
لَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي ظَاهِرِينَ عَلَى الْحَقِّ لَا يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ حَتَّى يَأْتِيَ أَمْرُ اللَّهِ وَهُمْ كَذَلِكَ . ( مسلم )
‘সর্বদা আমার উম্মতের একটি জামাআত সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে আল্লাহ্র ফয়সালা (কিয়ামত) আসার পূর্ব পর্যন্ত অপমানকারীদের অপমান তাদের কোন ক্ষতি করবে না।’ [মুসলিম : ১৯২০]
জাবের (রা) থেকেও মুসলিমের অন্য রেওয়ায়াতে এ ধরণের হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
৪. কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাতের অনুসারী
তারা কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সুদৃঢ়ভাবে ধারণকারী হবে। যে আর্দশের উপর আনসার ও মুহাজির সাহাবায়ে কেরামগণ ছিলেন, তারাও সে আদর্শের অনুসারী হবে। এ জন্যই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তারা আমি এবং আমার সাহাবায়ে কেরামের আর্দশের অনুসারী হবে।
৫. সৎ নেতৃবর্গ
যারা সত্যের পথপ্রদর্শক এবং সে অনুযায়ী আমলকারী। আইয়ূব সখতিয়ানী রহ. বলেন, ‘ঐ যুবক সৌভাগ্যবান, যাকে আল্লাহ্ তা‘আলা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের কোন একজন দ্বীনদার আলিমের সাহচর্য লাভের তাওফিক দিয়েছেন।’ [শরহে উসূলে ইতিকাদে আহলুস্ সুন্নাহ্ ওয়াল জামাআহ : ১/৬৬]
ফুযাইল ইবনে আয়ায রহ. বলেন, আল্লাহ তা‘আলার এমন কিছু বান্দা আছে, যাদের মাধ্যমে আল্লাহ অনেক দেশকে জীবন্ত করেছেন তথা হেদায়াত দান করেছেন, তারাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ। [শরহে উসূলে ইতিকাদে আহলুস্ সুন্নাহ্ ওয়াল জামাআহ : ১/৭২]
৬. বিদআত থেকে বাধাদানকারী
যারা বিদআতপন্থীদের সকল প্রকার বিদআত ও কুসংস্কার থেকে নিরুৎসাহিত করে এবং সুন্নাতের অনুসরণ করতে উৎসাহিত করে, তারাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ ও সর্বোত্তম মানুষ।
আবু বকর ইবনে আইয়াশকে জিজ্ঞেস করা হল, সুন্নী কারা? উত্তরে তিনি বললেন, যাদের সামনে প্রবৃত্তি নিয়ে আলোচনা করা হলে তারা সেদিকে মনোযোগ দেয় না। [শরহে উসূলে ইতিকাদে আহলুস্ সুন্নাহ্ ওয়াল জামাআহ : ১/৭২]
ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ হচ্ছে সর্বোত্তম উম্মত, তারা সহজ, সরল ও সঠিক পথের অনুসারী। [ফতোয়া ইবনে তাইমিয়া : ৩/৩৬৮]
৭. সৌভাগ্যবান দল
যারা এ উম্মতের মধ্যে শত প্রতিকূলতার পরও সত্যের ধারক-বাহক হিসেবে পরিচিত।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
بَدَأَ الْإِسْلَامُ غَرِيبًا وَسَيَعُودُ كَمَا بَدَأَ غَرِيبًا فَطُوبَى لِلْغُرَبَاءِ . ( مسلم )
অর্থঃ ইসলাম অচেনা ক্ষুদ্র পরিসরে আত্মপ্রকাশ করেছে এবং অতিসত্তর তা পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবে। সুতরাং সুসংবাদ অচেনাদলের জন্য। [মুসলিম : ১৪৫]
আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. বর্ণনা করেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করা হল, গুরাবা তথা অচেনা দূর্বল দল কারা? তিনি বললেন, ঐ সকল লোক, যারা আল্লাহর জন্য পরিবার পরিজন ও স্বজাতি থেকে দূরে রয়েছে। [নেহায়া লেখক ইবনে আসীর : ৫/৪১]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আ‘স (রা) থেকে ইমাম আহমদ রহ. অন্যত্র বর্ণনা করেছেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! অচেনা ক্ষুদ্র দল কারা? তিনি বললেন, অধিকাংশ পাপীদের মধ্যে কিছু সৎকর্ম পরায়ণ লোক। [মুসনাদে ইমাম আহমদ : ২/১৭৭]
অন্য সূত্রে বর্ণিত এক হাদীসে রয়েছে, যখন মানুষ বিশৃংখল হয়ে পড়ে, তখন তারা সংশোধন করে দেয় এবং নিজেরা সঠিক পথে চলে। [আহমদ : ৪/১৭৩]
সুতরাং আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ হল, বিদআতপন্থী ও প্রবৃত্তির অনুসারী দলসমূহের বিপরীত একটি সঠিক দল।
৮. জ্ঞানের ধারক -বাহক
আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ অহীলব্ধ জ্ঞানের অনুসারী এবং তারা উক্ত জ্ঞানের ধারক-বাহক। তারা সীমালংঘনকারীদের সীমালংঘন, ভ্রান্তপন্থীদের ভ্রান্তমত এবং মূর্খদের অপব্যাখ্যা থেকে দূরে থাকে।
এ জন্যই ইবনে সিরীন রহ. বলেন, তারা হাদীসের সনদ সম্পর্কে প্রশ্ন করে না। যখন সনদে কোন সমস্যা সৃষ্টি হয় তখন তারা বলে, আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনাকারীদের পরিচয় দাও। অতঃপর আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের অনুসারীগণ বর্ণনাকারীদের জ্ঞানের গভীরতার প্রতি লক্ষ্য করে তাদের হাদীস গ্রহণ করেন। পক্ষান্তরে বিদআতপন্থীদের অবস্থার প্রতি লক্ষ্য করে তাদের হাদীস গ্রহণ করেন না। [মুকাদ্দামায়ে মুসলিম : ১/১৫]
৯. আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের কোন একজনের ইন্তেকাল সকলকে ব্যথিত করে
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ এমন সব বৈশিষ্ট্যের অধিকারী যা কুরআন ও হাদীসের সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গির অনুকূল। তারা খাঁটি মুমিনদের নিকট প্রিয় মানুষ ও দ্বীনের সঠিক রাহবার।
আইউব সাখতিয়ানী রহ. বলেন, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের কোন এক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর শুনলে মনে হয় যেন আমি আমার একটি অঙ্গ হারিয়ে ফেলেছি। [শরহুে উসূলে ইতিকাদে আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ : ১/৬৬]
তিনি আরো বলেন, যারা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মৃত্যু কামনা করে, তারা নিজেদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নূর তথা দ্বীনের আলো নিভিয়ে ফেলতে চায়। অথচ আল্লাহ স্বীয় নূর তথা দ্বীনের আলো পূর্ণাঙ্গ করবেন, যদিও তা কাফিরদের অপছন্দ হয়। [শরহে উসূলে ইতিকাদে আহ&&লস্ সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ : ১/৬৮]
নিয়ামত দু‘ প্রকারঃ
১. সাধারণ নিয়ামত ও ২. শর্তযুক্ত নিয়ামত
সাধারণ নিয়ামত
যা স্থায়ী সৌভাগ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট। সে নিয়ামত হল ইসলাম ও সুন্নাতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। কেননা ইসলাম ও সুন্নাহ আল্লাহ প্রদত্ত সবচেয়ে বড় নিয়ামত।
ইহকালীন ও পরকালীন সৌভাগ্য তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর নির্ভরশীল- (ক) ইসলাম (খ) সুন্নাহ ও (গ) দুনিয়া ও আখেরাতে সুস্থতা। ইসলাম ও সুন্নাত এমন এক নিয়ামত যার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারি। আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন যেন আমরা তাঁর নিকট সালাতের মাধ্যমে প্রার্থনা করি এবং এ পথের অনুসারীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করি, যাদের তিনি সর্বোত্তম বন্ধুর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَ مَنْ يُطِعِ اللهَ والرَّسُولَ فَأُوْلَئٍٍِكَ مَعَ الَّذِيْنَ أَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِمْ مِّنَ النًبِيَيْنَ وَالصِّدِّيْقِينَ وَالشُّهدَآءِِ وَالصَالٍِحِيْنَ وَحَسُنَ أُوْلَئِكَ رَفِيْقًا . ( النساء : 69)
অর্থঃ যারা আল্লাহ ও রাসূলের অনুগত তারা ঐ ব্যক্তিদের সঙ্গী হবে, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেনঅ। তারা হলেন, নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীলগণ এবং এরাই সর্বোত্তম সঙ্গী। [নিসাঃ ৬৯]
কুরআনে বর্ণিত এ চার প্রকারের লোকই সাধারণ নিয়ামতের অধিকারী। যাদের উদ্দেশ্য করে আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
اَلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكَمْ نَعْمَتِيْ وَ رَضِيْتُ لَكُمْ الإِسْلامَ دِيْنًا ( المائدة :3)
আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম। তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম। [মায়েদা : ৩]
এ আয়াতে দ্বীন ইসলাম নামক নিয়ামতকে পূর্ণাঙ্গ ও পরিপূর্ণ করে দেয়ার ঘোষণা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ওমর ইবনে আব্দুল আযীয রহ. এর বক্তব্য উল্লেখ্য। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই ঈমানের নির্ধারিত সীমা (ফরজ, সুন্নাত ও আইন কানুন) রয়েছে। যে তা পরিপূর্ণ করল সে ঈমান পরিপূর্ণ করল। [বুখারী - কিতাবুল ঈমান :১/৯]
দ্বীন হল আল্লাহ প্রদত্ত শরীয়ত, যা তাঁর আদেশ-নিষেধ ও ভালবাসার সমন্বয়কে বুঝায়। যে নিয়ামত দ্বারা মুমিনদের বিশেষিত করা হয়েছে, তা হল ইসলাম ও সুন্নাতের নিয়ামত। এটা এমন নিয়ামত যা অর্জিত হলে প্রকৃত সন্তুষ্ট ও খুশি হওয়া উচিত। আর আল্লাহ্র নিয়ামতের উপর খুশি হলে আল্লাহ খুশি হন।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ
قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْمَتِِهِ فَبِذلِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُوْنَ . ( يونس :58)
আপনি বলে দিন, আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতের উপর সকলেরই আনন্দিত হওয়া উচিত। এটা ঐ সম্পদ হতে বহুগুণ উত্তম যা তারা সঞ্চয় করছে। [ইউনুসঃ ৫৮]
সালফে সালেহীনের মতে, আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ হল, ইসলাম ও সুন্নাহ। ঊভয়ের মাধ্যমে প্রশান্তি লাভ করার নামই হল অন্তরের সজীবতা। যখনই মানুষের মাঝে উভয়টা সুদৃঢ় হবে, তখনই হৃদয় অত্যধিক আনন্দিত হবে এবং সুন্নাতের সংস্পর্শে ধন্য হবে। [ইজতিমাউল জুয়ুশিল ইসলামিয়াহ আলা গাজওয়াল মুআত্তালা ওয়াল জাহমিয়া- ইবনে কাইয়্যিম (র): ২/৩৩-৩৬]
শর্তযুক্ত নিয়ামত
যেমন, শারীরিক সুস্থতা, সম্মান বৃদ্ধি পাওয়া, অধিক সন্তান হওয়া ও পূণ্যবতী স্ত্রী লাভ করা ইত্যাদি।
আর এ জাতীয় নিয়ামত পাপী, পূণ্যবান, মুমিন, কাফির সকলেই পেয়ে থাকে। যখন এ কথা বলা হয় যে, কাফিরকে আল্লাহ তাআলা এ নিয়ামত দান করেছেন, তখন তা সত্য বলে গণ্য হবে। আর শর্তযুক্ত নিয়ামত কাফির ও পাপীকে আস্তে আস্তে দেয়া হয়। [ইজতিমাউল জুয়ুশিল ইসলামিয়াহ আলা গাজওয়াল মুআত্তালা ওয়াল জাহমিয়া - ইবনে কাইয়্যিম (র): ২/৩৬]
১. সাধারণ নিয়ামত ও ২. শর্তযুক্ত নিয়ামত
সাধারণ নিয়ামত
যা স্থায়ী সৌভাগ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট। সে নিয়ামত হল ইসলাম ও সুন্নাতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। কেননা ইসলাম ও সুন্নাহ আল্লাহ প্রদত্ত সবচেয়ে বড় নিয়ামত।
ইহকালীন ও পরকালীন সৌভাগ্য তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর নির্ভরশীল- (ক) ইসলাম (খ) সুন্নাহ ও (গ) দুনিয়া ও আখেরাতে সুস্থতা। ইসলাম ও সুন্নাত এমন এক নিয়ামত যার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারি। আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন যেন আমরা তাঁর নিকট সালাতের মাধ্যমে প্রার্থনা করি এবং এ পথের অনুসারীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করি, যাদের তিনি সর্বোত্তম বন্ধুর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَ مَنْ يُطِعِ اللهَ والرَّسُولَ فَأُوْلَئٍٍِكَ مَعَ الَّذِيْنَ أَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِمْ مِّنَ النًبِيَيْنَ وَالصِّدِّيْقِينَ وَالشُّهدَآءِِ وَالصَالٍِحِيْنَ وَحَسُنَ أُوْلَئِكَ رَفِيْقًا . ( النساء : 69)
অর্থঃ যারা আল্লাহ ও রাসূলের অনুগত তারা ঐ ব্যক্তিদের সঙ্গী হবে, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেনঅ। তারা হলেন, নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীলগণ এবং এরাই সর্বোত্তম সঙ্গী। [নিসাঃ ৬৯]
কুরআনে বর্ণিত এ চার প্রকারের লোকই সাধারণ নিয়ামতের অধিকারী। যাদের উদ্দেশ্য করে আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
اَلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكَمْ نَعْمَتِيْ وَ رَضِيْتُ لَكُمْ الإِسْلامَ دِيْنًا ( المائدة :3)
আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম। তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম। [মায়েদা : ৩]
এ আয়াতে দ্বীন ইসলাম নামক নিয়ামতকে পূর্ণাঙ্গ ও পরিপূর্ণ করে দেয়ার ঘোষণা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ওমর ইবনে আব্দুল আযীয রহ. এর বক্তব্য উল্লেখ্য। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই ঈমানের নির্ধারিত সীমা (ফরজ, সুন্নাত ও আইন কানুন) রয়েছে। যে তা পরিপূর্ণ করল সে ঈমান পরিপূর্ণ করল। [বুখারী - কিতাবুল ঈমান :১/৯]
দ্বীন হল আল্লাহ প্রদত্ত শরীয়ত, যা তাঁর আদেশ-নিষেধ ও ভালবাসার সমন্বয়কে বুঝায়। যে নিয়ামত দ্বারা মুমিনদের বিশেষিত করা হয়েছে, তা হল ইসলাম ও সুন্নাতের নিয়ামত। এটা এমন নিয়ামত যা অর্জিত হলে প্রকৃত সন্তুষ্ট ও খুশি হওয়া উচিত। আর আল্লাহ্র নিয়ামতের উপর খুশি হলে আল্লাহ খুশি হন।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ
قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْمَتِِهِ فَبِذلِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُوْنَ . ( يونس :58)
আপনি বলে দিন, আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতের উপর সকলেরই আনন্দিত হওয়া উচিত। এটা ঐ সম্পদ হতে বহুগুণ উত্তম যা তারা সঞ্চয় করছে। [ইউনুসঃ ৫৮]
সালফে সালেহীনের মতে, আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ হল, ইসলাম ও সুন্নাহ। ঊভয়ের মাধ্যমে প্রশান্তি লাভ করার নামই হল অন্তরের সজীবতা। যখনই মানুষের মাঝে উভয়টা সুদৃঢ় হবে, তখনই হৃদয় অত্যধিক আনন্দিত হবে এবং সুন্নাতের সংস্পর্শে ধন্য হবে। [ইজতিমাউল জুয়ুশিল ইসলামিয়াহ আলা গাজওয়াল মুআত্তালা ওয়াল জাহমিয়া- ইবনে কাইয়্যিম (র): ২/৩৩-৩৬]
শর্তযুক্ত নিয়ামত
যেমন, শারীরিক সুস্থতা, সম্মান বৃদ্ধি পাওয়া, অধিক সন্তান হওয়া ও পূণ্যবতী স্ত্রী লাভ করা ইত্যাদি।
আর এ জাতীয় নিয়ামত পাপী, পূণ্যবান, মুমিন, কাফির সকলেই পেয়ে থাকে। যখন এ কথা বলা হয় যে, কাফিরকে আল্লাহ তাআলা এ নিয়ামত দান করেছেন, তখন তা সত্য বলে গণ্য হবে। আর শর্তযুক্ত নিয়ামত কাফির ও পাপীকে আস্তে আস্তে দেয়া হয়। [ইজতিমাউল জুয়ুশিল ইসলামিয়াহ আলা গাজওয়াল মুআত্তালা ওয়াল জাহমিয়া - ইবনে কাইয়্যিম (র): ২/৩৬]
সুন্নত
আল্লাহ তা‘আলার সুরক্ষিত বেষ্টনী এবং তা প্রবেশকারীর জন্য নিরাপদ স্থান। এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এতে প্রবেশকারী গন্তব্যে পৌঁছে যাবে। সুন্নাত প্রাত্যহিক জীবনে আমলের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা পায়। সুন্নাত অনুযায়ী আমলের ক্ষেত্রে দুর্বলতার কারণে সুন্নাতের নূর হ্রাস পায়। মুনাফিক ও বিদআতপন্থীদের সুন্নাতের নূরও দূর হয়ে যায়। তাইতো কিয়ামতের দিন সুন্নাতের অনুসারীদের চেহারা উজ্জ্বল হবে। পক্ষান্তরে কাফির ও বিদআতপন্থীদর চেহারা কৃষ্ণবর্ণ ও মলিন হবে।
আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেনঃ
يَوْمَ تَبْيَضُّ وُجُوْهٌ وَ تَسْوَدُّ وَ ( آل عمران : 106)
অর্থঃ সেদিন কিছু চেহারা শ্বেতবর্ণ উজ্জ্বল আর কিছু চেহারা কৃষ্ণবর্ণ মলিন হবে। [আলে-ইমরানঃ ১০৬]
ইবনে আববাস (রা) বলেন, সুন্নাতের অনুসারীদের চেহারা শ্বেতবর্ণ ও উজ্জ্বল হবে। পক্ষান্তরে বিদআতপন্থী ও মুসলিমদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টিকারীদের চেহারা কৃষ্ণবর্ণ বা মলিন হবে। [ইজতিমাউল জুয়ুশিল ইসলামিয়াহ আলা গাজওয়াল মুআত্তালা ওয়াল জাহমিয়া- ইবনে কাইয়্যিম (র): ২/৩৯]
সুন্নাত হলো জীবন ও নূর যা বান্দার সৌভাগ্য, হেদায়াত ও বিজয় নিয়ে আসে।
আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেনঃ
أومَنْ كَانَ مَيْتًا فَأَحْيَيْنَاهُ وَجَعَلْنَا لَهُ نُورًا يَمْشِى بهِ فِى النَّاسِ كَمَن مَّثَلُهُ
( الأنعام :122)
অর্থঃ এমন ব্যক্তি যে ছিল প্রাণহীন। অতঃপর তাকে আমি জীবন দান করি এবং তার জন্য এমন আলোর (ব্যবস্থা) করে দেই যার সাহায্যে সে মানুষের মাঝে চলা-ফেরা করতে থাকে। সে কি এমন লোকের মতো হতে পারে যে (ডুবে) আছে অন্ধকার পুঞ্জের মধ্যে? তা হতে বের হওয়ার পথ পাচ্ছে না। এরূপেই কাফিরদের জন্য তাদের কার্যকলাপ মনোরম বানিয়ে দেয়া হয়েছে। [আনআম : ১২২]
আল্লাহ তা‘আলার সুরক্ষিত বেষ্টনী এবং তা প্রবেশকারীর জন্য নিরাপদ স্থান। এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এতে প্রবেশকারী গন্তব্যে পৌঁছে যাবে। সুন্নাত প্রাত্যহিক জীবনে আমলের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা পায়। সুন্নাত অনুযায়ী আমলের ক্ষেত্রে দুর্বলতার কারণে সুন্নাতের নূর হ্রাস পায়। মুনাফিক ও বিদআতপন্থীদের সুন্নাতের নূরও দূর হয়ে যায়। তাইতো কিয়ামতের দিন সুন্নাতের অনুসারীদের চেহারা উজ্জ্বল হবে। পক্ষান্তরে কাফির ও বিদআতপন্থীদর চেহারা কৃষ্ণবর্ণ ও মলিন হবে।
আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেনঃ
يَوْمَ تَبْيَضُّ وُجُوْهٌ وَ تَسْوَدُّ وَ ( آل عمران : 106)
অর্থঃ সেদিন কিছু চেহারা শ্বেতবর্ণ উজ্জ্বল আর কিছু চেহারা কৃষ্ণবর্ণ মলিন হবে। [আলে-ইমরানঃ ১০৬]
ইবনে আববাস (রা) বলেন, সুন্নাতের অনুসারীদের চেহারা শ্বেতবর্ণ ও উজ্জ্বল হবে। পক্ষান্তরে বিদআতপন্থী ও মুসলিমদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টিকারীদের চেহারা কৃষ্ণবর্ণ বা মলিন হবে। [ইজতিমাউল জুয়ুশিল ইসলামিয়াহ আলা গাজওয়াল মুআত্তালা ওয়াল জাহমিয়া- ইবনে কাইয়্যিম (র): ২/৩৯]
সুন্নাত হলো জীবন ও নূর যা বান্দার সৌভাগ্য, হেদায়াত ও বিজয় নিয়ে আসে।
আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেনঃ
أومَنْ كَانَ مَيْتًا فَأَحْيَيْنَاهُ وَجَعَلْنَا لَهُ نُورًا يَمْشِى بهِ فِى النَّاسِ كَمَن مَّثَلُهُ
( الأنعام :122)
অর্থঃ এমন ব্যক্তি যে ছিল প্রাণহীন। অতঃপর তাকে আমি জীবন দান করি এবং তার জন্য এমন আলোর (ব্যবস্থা) করে দেই যার সাহায্যে সে মানুষের মাঝে চলা-ফেরা করতে থাকে। সে কি এমন লোকের মতো হতে পারে যে (ডুবে) আছে অন্ধকার পুঞ্জের মধ্যে? তা হতে বের হওয়ার পথ পাচ্ছে না। এরূপেই কাফিরদের জন্য তাদের কার্যকলাপ মনোরম বানিয়ে দেয়া হয়েছে। [আনআম : ১২২]
সুন্নাতের অনুসারীর মর্যাদা
প্রকৃত সুন্নাতের অনুসারী ব্যক্তি সজিব, সতেজ ও আলোকিত হৃদয়ের অধিকারী হয়। যা আল্লাহ্ তা‘আলা কুরআনের বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করেছেন। এটা ঈমানদারদের একটি গুণ বা বৈশিষ্ট্য। কেননা সজিব ও আলোকিত হৃদয়ের অধিকারী ব্যক্তি আল্লাহ্র পক্ষ থেকে জ্ঞান, বুদ্ধি ও হেদায়াত প্রাপ্ত। তারা তাওহীদে বিশ্বাসী ও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রকৃত অনুসারী হওয়ার তাওফিক লাভ করে থাকে।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্ তা’আলার নিকট প্রার্থনা করে বলতেন, আল্লাহ্ যেন তাঁর অন্তরে, কানে, চোখে, জিহবায়, উপরে-নিচে, ডানে-বামে, সামনে-পিছনে নূর বা আলো দান করেন। তাঁর ব্যক্তি সত্ত্বাকেও যেন নূরের দ্বারা আলোকিত করেন। তাঁর গোস্ত, হাঁড় ও রক্তের মধ্যেও যেন নূর দান করেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এভাবে তাঁর নিজ সত্ত্বা, সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ অনুভূতি এবং ষষ্ঠ দিকের জন্য আল্লাহ্র নিকট নূর প্রার্থনা করেছেন।
প্রত্যেক মুমিনের ভিতর-বাহির, কথা-কাজ ইত্যাদি সবই সমুজ্জ্বল। আর এ আলো মুমিন ব্যক্তির জন্য কিয়ামতের দিন তার ঈমানী শক্তির দৃঢ়তা ও দুর্বলতার উপর ভিত্তি করে প্রকাশিত হবে। এ আলো তার সামনে পিছনে চলতে থাকবে। সেদিন কারো কারো নূরের জ্যোতি হবে সূর্যের জ্যোতির ন্যায়, আবার কারো চন্দ্রের জ্যোতির ন্যায়, আবার কারো কারো জ্যোতি হবে লম্বা খেজুর গাছের ন্যায়, কারো জ্যোতি হবে দন্ডায়মান মানুষের ন্যায়, এমনকি মুমিনদের কাউকে তার পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলের মাথায় নূর দেয়া হবে। তা একবার জ্বলবে আবার নিভে যাবে। মোট কথা দুনিয়াতে যে যতটুকু ঈমানের শক্তিতে বলিয়ান ছিল কিয়ামতের দিন তাকে ততটুকু ঈমানের জ্যোতি দেয়া হবে। [ইজতিমাউল জুয়ুশিল ইসলামিয়াহ আলা গাজওয়াল মুআত্তালা ওয়াল জাহমিয়া - ইবনে কাইয়্যিম (র): ২/৩৮]
সুন্নাতের অনুসারীদের বৈশিষ্ট্য
সুন্নাতের অনুসারীদের কতিপয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে
১. কুরআন ও হাদীস এমন ভাবে আঁকড়ে ধরা যেমন ভাবে মাড়ির দাঁত দিয়ে কোন কিছু আঁকড়ে ধরা হয়, যা সহজে ছুটে না।
২. দ্বীনের মৌলিক বিধানাবলী ও তার শাখা-প্রশাখার ব্যাপারে কুরআন ও হাদীস অনুসরণ করা।
৩. সুন্নাতের অনুসারীদের ভালবাসা ও বিদআতের অনুসারীদের ঘৃণা করা।
৪. সুন্নাতের অনুসারীরা সংখ্যায় কম হলেও নিজেকে একাকী না ভাবা। কেননা সততা মুমিনের হারানো সম্পদ। সে সত্যকে গ্রহণ করে যদিও মানুষ তার বিরোধিতা করে।
৫. কুরআন ও হাদীসের আদর্শ বাস্তবায়নের নিমিত্তে কথা ও কাজে সত্যাশ্রয়ী হওয়া।
৬. রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কেই একমাত্র আদর্শের মাপকাঠি হিসেবে মেনে নেয়া। কারণ তার চরিত্রই হচ্ছে আল-কুরআনের প্রতিচ্ছবি। [আকীদাতুস সালফ ও আসহাবুল হাদীস- ইমাম আবু উসমান ইসমাঈল ইবনে আব্দুর রহমান : ২৬৪পৃ:]
বিদআতের অনুসারীদের অবস্থান
বিদআতের অনুসারীরা মৃত ও অন্ধকারাচ্ছন্ন হৃদয়ের অধিকারী। আল্লাহ্ তা‘আলা অবিশ্বাসীকে মৃত ও অন্ধকারে নিমজ্জিত ব্যক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। মৃত ও অন্ধকার হৃদয় সম্পন্ন ব্যক্তি আল্লাহ ও দ্বীনের পরিচয় সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে অজ্ঞ। আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের অবস্থা বর্ণনায় বলেনঃ এরা জীবিত নয়, বরং মৃত এবং এরা অন্ধকারে এমনভাবে নিমজ্জিত যা থেকে বের হতে পারবে না।
বিদআতের অন্ধকার তাদের গোটা জীবনকে আচ্ছন্ন করে রাখার কারণে তাদের অন্তর হক বা সত্যকে বাতিল হিসেবে আর বাতিলকে হক হিসেবে গণ্য করে। তাদের যাবতীয় কথা, কাজ এমনকি তাদের গোটা জীবনটাই অন্ধকারাচ্ছন্ন। পরিশেষে তাদের কবরও হবে অন্ধকারময়।
যখন কিয়ামতের দিন পুলসিরাত পার হওয়ার জন্য মানুষের মাঝে নূর বন্টন করা হবে, তখনও তাদের অন্ধকারের মধ্যেই রাখা হবে। এ নূর তারা পাবে না। তাদের আবাসস্থল হবে জাহান্নাম।
আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় বান্দাদের মধ্য থেকে যার কল্যাণ কামনা করেন, তাকে অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখান। আর যার কল্যাণ কামনা করেন না। তাকে অন্ধকারের মধ্যেই রেখে দেন। [ইজতিমাউল জুয়ুশিল ইসলামিয়াহ আলা গাজওয়াল মুআত্তালা ওয়াল জাহমিয়া - ইবনে কাইয়্যিম (র): ২/৩৮-৪১]
প্রকৃত সুন্নাতের অনুসারী ব্যক্তি সজিব, সতেজ ও আলোকিত হৃদয়ের অধিকারী হয়। যা আল্লাহ্ তা‘আলা কুরআনের বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করেছেন। এটা ঈমানদারদের একটি গুণ বা বৈশিষ্ট্য। কেননা সজিব ও আলোকিত হৃদয়ের অধিকারী ব্যক্তি আল্লাহ্র পক্ষ থেকে জ্ঞান, বুদ্ধি ও হেদায়াত প্রাপ্ত। তারা তাওহীদে বিশ্বাসী ও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রকৃত অনুসারী হওয়ার তাওফিক লাভ করে থাকে।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্ তা’আলার নিকট প্রার্থনা করে বলতেন, আল্লাহ্ যেন তাঁর অন্তরে, কানে, চোখে, জিহবায়, উপরে-নিচে, ডানে-বামে, সামনে-পিছনে নূর বা আলো দান করেন। তাঁর ব্যক্তি সত্ত্বাকেও যেন নূরের দ্বারা আলোকিত করেন। তাঁর গোস্ত, হাঁড় ও রক্তের মধ্যেও যেন নূর দান করেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এভাবে তাঁর নিজ সত্ত্বা, সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ অনুভূতি এবং ষষ্ঠ দিকের জন্য আল্লাহ্র নিকট নূর প্রার্থনা করেছেন।
প্রত্যেক মুমিনের ভিতর-বাহির, কথা-কাজ ইত্যাদি সবই সমুজ্জ্বল। আর এ আলো মুমিন ব্যক্তির জন্য কিয়ামতের দিন তার ঈমানী শক্তির দৃঢ়তা ও দুর্বলতার উপর ভিত্তি করে প্রকাশিত হবে। এ আলো তার সামনে পিছনে চলতে থাকবে। সেদিন কারো কারো নূরের জ্যোতি হবে সূর্যের জ্যোতির ন্যায়, আবার কারো চন্দ্রের জ্যোতির ন্যায়, আবার কারো কারো জ্যোতি হবে লম্বা খেজুর গাছের ন্যায়, কারো জ্যোতি হবে দন্ডায়মান মানুষের ন্যায়, এমনকি মুমিনদের কাউকে তার পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলের মাথায় নূর দেয়া হবে। তা একবার জ্বলবে আবার নিভে যাবে। মোট কথা দুনিয়াতে যে যতটুকু ঈমানের শক্তিতে বলিয়ান ছিল কিয়ামতের দিন তাকে ততটুকু ঈমানের জ্যোতি দেয়া হবে। [ইজতিমাউল জুয়ুশিল ইসলামিয়াহ আলা গাজওয়াল মুআত্তালা ওয়াল জাহমিয়া - ইবনে কাইয়্যিম (র): ২/৩৮]
সুন্নাতের অনুসারীদের বৈশিষ্ট্য
সুন্নাতের অনুসারীদের কতিপয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে
১. কুরআন ও হাদীস এমন ভাবে আঁকড়ে ধরা যেমন ভাবে মাড়ির দাঁত দিয়ে কোন কিছু আঁকড়ে ধরা হয়, যা সহজে ছুটে না।
২. দ্বীনের মৌলিক বিধানাবলী ও তার শাখা-প্রশাখার ব্যাপারে কুরআন ও হাদীস অনুসরণ করা।
৩. সুন্নাতের অনুসারীদের ভালবাসা ও বিদআতের অনুসারীদের ঘৃণা করা।
৪. সুন্নাতের অনুসারীরা সংখ্যায় কম হলেও নিজেকে একাকী না ভাবা। কেননা সততা মুমিনের হারানো সম্পদ। সে সত্যকে গ্রহণ করে যদিও মানুষ তার বিরোধিতা করে।
৫. কুরআন ও হাদীসের আদর্শ বাস্তবায়নের নিমিত্তে কথা ও কাজে সত্যাশ্রয়ী হওয়া।
৬. রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কেই একমাত্র আদর্শের মাপকাঠি হিসেবে মেনে নেয়া। কারণ তার চরিত্রই হচ্ছে আল-কুরআনের প্রতিচ্ছবি। [আকীদাতুস সালফ ও আসহাবুল হাদীস- ইমাম আবু উসমান ইসমাঈল ইবনে আব্দুর রহমান : ২৬৪পৃ:]
বিদআতের অনুসারীদের অবস্থান
বিদআতের অনুসারীরা মৃত ও অন্ধকারাচ্ছন্ন হৃদয়ের অধিকারী। আল্লাহ্ তা‘আলা অবিশ্বাসীকে মৃত ও অন্ধকারে নিমজ্জিত ব্যক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। মৃত ও অন্ধকার হৃদয় সম্পন্ন ব্যক্তি আল্লাহ ও দ্বীনের পরিচয় সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে অজ্ঞ। আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের অবস্থা বর্ণনায় বলেনঃ এরা জীবিত নয়, বরং মৃত এবং এরা অন্ধকারে এমনভাবে নিমজ্জিত যা থেকে বের হতে পারবে না।
বিদআতের অন্ধকার তাদের গোটা জীবনকে আচ্ছন্ন করে রাখার কারণে তাদের অন্তর হক বা সত্যকে বাতিল হিসেবে আর বাতিলকে হক হিসেবে গণ্য করে। তাদের যাবতীয় কথা, কাজ এমনকি তাদের গোটা জীবনটাই অন্ধকারাচ্ছন্ন। পরিশেষে তাদের কবরও হবে অন্ধকারময়।
যখন কিয়ামতের দিন পুলসিরাত পার হওয়ার জন্য মানুষের মাঝে নূর বন্টন করা হবে, তখনও তাদের অন্ধকারের মধ্যেই রাখা হবে। এ নূর তারা পাবে না। তাদের আবাসস্থল হবে জাহান্নাম।
আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় বান্দাদের মধ্য থেকে যার কল্যাণ কামনা করেন, তাকে অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখান। আর যার কল্যাণ কামনা করেন না। তাকে অন্ধকারের মধ্যেই রেখে দেন। [ইজতিমাউল জুয়ুশিল ইসলামিয়াহ আলা গাজওয়াল মুআত্তালা ওয়াল জাহমিয়া - ইবনে কাইয়্যিম (র): ২/৩৮-৪১]
বিদআতের শাব্দিক অর্থ
দ্বীন পরিপূর্ণ হওয়ার পর তাতে নতুন কিছু প্রবর্তিত হওয়া, অথবা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ইনতিকালের পর দ্বীনের মধ্যে ইবাদতের নামে মনগড়া কিছু রসম-রেওয়াজ চালু করা। বিদআত শব্দের মূল ধাতু হল ‘‘ بدع ’’ এর অর্থ কোন উপমা ছাড়াই নতুন কিছু সৃষ্টি করা। [আল-ইতিসাম - শাতেবী (র) : ১/৪৯]
যেমন- কুরআনে এসেছে, بَدِيْعُ السََّمَوتِ وَ اْلأَرْضِ
অর্থঃ আসমান ও জমিন সৃষ্টিকারী। [আনআমঃ ১০১]
পারিভাষিক অর্থ
ওলামায়ে কেরাম বিদআতের বিভিন্ন সংজ্ঞা বর্ণনা করেছেন, যা একটি অপরটির পরিপূরক।
১. শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেনঃ দ্বীনের মধ্যে বিদআত হচ্ছে এমন আমল, যা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইসলামে প্রবর্তন করেননি এবং মুস্তাহাব বা ওয়াজিব হিসেবেও এর কোন অনুমোদন দেননি। [ফতোয়া ইবনে তাইমিয়া : ৪/১০৭]
বিদআত সাধারণত দু’ প্রকার
ক. কথা ও বিশ্বাসের মধ্যে বিদআত ও খ. ইবাদাত ও কাজের মধ্যে বিদআত।
এখানে প্রথম প্রকার দ্বিতীয় প্রকারের অন্তর্ভুক্ত। ইমাম আহমদ রহ. ও অন্যান্য আলিমগণ স্বীয় মাযহাবে ঘোষণা দিয়েছেন যে, স্বভাব ও ইবাদতের সমষ্টির নাম আমল।
ইবাদত হচ্ছে
একমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকে যা কিছু এসেছে সে অনুযায়ী বিনীত হয়ে আমল করা।
স্বভাবের মূল হচেছ
আল্লাহ যা নিষিদ্ধ করেছেন একমাত্র তাই ক্ষতিকর মনে করা। [ফতোয়া ইবনে তাইমিয়া :৪/১৯৬]
আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেনঃ বিদআত হচ্ছে, ইবাদত এবং বিশ্বাসে কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমায়ে উম্মতের পরিপন্থী কাজ করা। যথা-খারেজী, রাফেজী, কাদরিয়া ও জাহমিয়াদের কার্যক্রম অথবা যারা মসজিদে জিকির আজকারের নামে নাচ-গানের অনুষ্ঠান করে তাদের অনুকরণ করা অথবা কুরআন ও হাদীস বিরোধী জীবন-যাপন করা। [ফতোয়া ইবনে তাইমিয়া : ১৮/৩৪৬]
২. আল্লামা শাতবী রহ. বলেনঃ বিদআত হচ্ছে, দ্বীনের মধ্যে নব আবিস্কৃত বিষয়াবলী যা ইবাদতের সাদৃশ কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তা ইবাদত নয়। এর দ্বারা আল্লাহ্র ইবাদত বেশি পরিমাণে করা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। [আল-ইতিসাম - শাতেবী (র) : ১/৫৩]
যারা স্বভাবগত কাজকে বিদআতের অন্তর্ভুক্ত মনে করে না এ সংজ্ঞা তাদের মতামত অনুযায়ী । তারা শুধুমাত্র শরীয়ত বহির্ভূত কাজকেই ইবাদত হিসেবে পালন করাকে বিদআত বলে। যারা স্বভাবগত কাজকে বিদআতের অন্তর্ভুক্ত করে; তারা বলেনঃ বিদআত হল, দ্বীনের মাঝে নব আবিস্কৃত বিষয় যা শরীয়তের কার্যক্রমের সাদৃশ এবং বিদআতি কার্যকলাপকে সাওয়াবের কাজ মনে করা। [আল-ইতিসাম, লেখক শাতেবী (র) : ১/৫০-৫৬]
অতঃপর তিনি আরও একটি সংজ্ঞা বর্ণনা করেনঃ স্বভাবগত কাজকে অভ্যাস হিসেবে আমল করলে তা বিদআত হবে না কিন্তু তা যদি ইবাদত হিসেবে করা হয় কিংবা ইবাদত হিসেবে নামকরণ করা হয় তাহলে বিদআত হবে। এখানে তিনি দু’টি সংজ্ঞাকে একত্রে এনেছেন। স্বভাবগত বিষয় যা করা ইবাদত। যেমন, ক্রয়-বিক্রয়, বিবাহ-তালাক ও ভাড়া দেয়া ইত্যাদি। কেননা এগুলোতে কিছু শর্ত ও নিয়মাবলী রয়েছে যে সম্পর্কে মানুষকে কোন স্বাধীনতা দেয়া হয়নি। [আল-ইতিসাম, লেখক শাতেবী (র) :২/৫৬৮]
৩. হাফেয ইবনে রজব রহ. বলেনঃ বিদআত হচ্ছে, দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু বিষয় প্রচলন করা শরীয়তে যার কোন ভিত্তি নেই। শরীয়তে যার ভিত্তি আছে তা বিদআত হবে না। [জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম : ২/১২৭]
এমন প্রত্যেক বস্ত্ত যা দ্বীনের অংশ হিসেবে চালিয়ে দেয়া হয় অথচ ইসলামে এর কোন ভিত্তি নেই, তা স্পষ্ট ভ্রষ্টতা। দ্বীন ইসলাম এ সকল ভ্রষ্টতা থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র।
চাই সেটা বিশ্বাসগত হোক বা বক্তব্যধর্মী অথবা কর্মমূলক। মোট কথা দ্বীন নব আবিস্কৃত বিদআত থেকে মুক্ত ও পবিত্র।
সালফে সালেহীনের উক্তি মতে কতিপয় নব আবিস্কৃত বিষয়কে উত্তম বলা হয়েছে। এর দ্বারা আভিধানিক বিদআত বুঝানো হয়েছে, শরীয়তে নিষিদ্ধ বিদআত বুঝানো হয়নি।
যেমন- ক. উমর (রা) এর যুগে যখন রমযান মাসে লোকজন মসজিদে একজন ইমামের পিছনে তারাবীহর সালাত পড়ার জন্য একত্রিত হল, তখন তিনি বের হলেন এবং লোকজনকে এ অবস্থায় দেখে বললেন, এটা কতই না উৎকৃষ্ট বিদআত! [বুখারী : ২০১০]
উমর (রা) এর এ কথার উদ্দেশ্য হচ্ছে, ইতিপূর্বে এ ধরণের কাজ আর কখনো সংঘটিত হয়নি, অথচ এটা শরীয়তের অন্তর্ভুক্ত।
খ. রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমযান মাসে কিয়ামুল-লাইলের জন্য উৎসাহ প্রদান করেছেন। তাঁর জীবদ্দশায় লোকজন মসজিদে এসে কেউ জামাতে, কেউ একা কিয়ামুল লাইল তথা নফল সালাত আদায় করতেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সাহাবীদের নিয়ে মাঝে মাঝে জামাতে সালাত আদায় করতেন। তিনি ভবিষ্যত উম্মতের অক্ষমতার বিষয় ও পরে তা ফরজ করে দেয়ার আশংকায় তা আদায় করতে নিষেধ করেছিলেন। [বুখারী : ২০১২]
গ. অনুরূপ রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মতকে খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাতের অনুসরণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আর কিয়ামুল লাইল খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাত। [জামেউল উলূম ওয়াল হিকাম : ২/১২৯]
বিদআত সাধারণত দু‘ধরণেরঃ
১। কুফরীঃ যার মাধ্যমে উক্ত বিদআতপন্থী ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে।
২। ফাসেকীঃ যার মাধ্যমে উক্ত বিদআতপন্থী ইসলাম থেকে বের হবে না কিন্তু গুনাহগার হবে। [আল-ইতিসাম, লেখক শাতেবী (র) : ২/৫১৬]
দ্বীন পরিপূর্ণ হওয়ার পর তাতে নতুন কিছু প্রবর্তিত হওয়া, অথবা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ইনতিকালের পর দ্বীনের মধ্যে ইবাদতের নামে মনগড়া কিছু রসম-রেওয়াজ চালু করা। বিদআত শব্দের মূল ধাতু হল ‘‘ بدع ’’ এর অর্থ কোন উপমা ছাড়াই নতুন কিছু সৃষ্টি করা। [আল-ইতিসাম - শাতেবী (র) : ১/৪৯]
যেমন- কুরআনে এসেছে, بَدِيْعُ السََّمَوتِ وَ اْلأَرْضِ
অর্থঃ আসমান ও জমিন সৃষ্টিকারী। [আনআমঃ ১০১]
পারিভাষিক অর্থ
ওলামায়ে কেরাম বিদআতের বিভিন্ন সংজ্ঞা বর্ণনা করেছেন, যা একটি অপরটির পরিপূরক।
১. শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেনঃ দ্বীনের মধ্যে বিদআত হচ্ছে এমন আমল, যা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইসলামে প্রবর্তন করেননি এবং মুস্তাহাব বা ওয়াজিব হিসেবেও এর কোন অনুমোদন দেননি। [ফতোয়া ইবনে তাইমিয়া : ৪/১০৭]
বিদআত সাধারণত দু’ প্রকার
ক. কথা ও বিশ্বাসের মধ্যে বিদআত ও খ. ইবাদাত ও কাজের মধ্যে বিদআত।
এখানে প্রথম প্রকার দ্বিতীয় প্রকারের অন্তর্ভুক্ত। ইমাম আহমদ রহ. ও অন্যান্য আলিমগণ স্বীয় মাযহাবে ঘোষণা দিয়েছেন যে, স্বভাব ও ইবাদতের সমষ্টির নাম আমল।
ইবাদত হচ্ছে
একমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকে যা কিছু এসেছে সে অনুযায়ী বিনীত হয়ে আমল করা।
স্বভাবের মূল হচেছ
আল্লাহ যা নিষিদ্ধ করেছেন একমাত্র তাই ক্ষতিকর মনে করা। [ফতোয়া ইবনে তাইমিয়া :৪/১৯৬]
আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেনঃ বিদআত হচ্ছে, ইবাদত এবং বিশ্বাসে কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমায়ে উম্মতের পরিপন্থী কাজ করা। যথা-খারেজী, রাফেজী, কাদরিয়া ও জাহমিয়াদের কার্যক্রম অথবা যারা মসজিদে জিকির আজকারের নামে নাচ-গানের অনুষ্ঠান করে তাদের অনুকরণ করা অথবা কুরআন ও হাদীস বিরোধী জীবন-যাপন করা। [ফতোয়া ইবনে তাইমিয়া : ১৮/৩৪৬]
২. আল্লামা শাতবী রহ. বলেনঃ বিদআত হচ্ছে, দ্বীনের মধ্যে নব আবিস্কৃত বিষয়াবলী যা ইবাদতের সাদৃশ কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তা ইবাদত নয়। এর দ্বারা আল্লাহ্র ইবাদত বেশি পরিমাণে করা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। [আল-ইতিসাম - শাতেবী (র) : ১/৫৩]
যারা স্বভাবগত কাজকে বিদআতের অন্তর্ভুক্ত মনে করে না এ সংজ্ঞা তাদের মতামত অনুযায়ী । তারা শুধুমাত্র শরীয়ত বহির্ভূত কাজকেই ইবাদত হিসেবে পালন করাকে বিদআত বলে। যারা স্বভাবগত কাজকে বিদআতের অন্তর্ভুক্ত করে; তারা বলেনঃ বিদআত হল, দ্বীনের মাঝে নব আবিস্কৃত বিষয় যা শরীয়তের কার্যক্রমের সাদৃশ এবং বিদআতি কার্যকলাপকে সাওয়াবের কাজ মনে করা। [আল-ইতিসাম, লেখক শাতেবী (র) : ১/৫০-৫৬]
অতঃপর তিনি আরও একটি সংজ্ঞা বর্ণনা করেনঃ স্বভাবগত কাজকে অভ্যাস হিসেবে আমল করলে তা বিদআত হবে না কিন্তু তা যদি ইবাদত হিসেবে করা হয় কিংবা ইবাদত হিসেবে নামকরণ করা হয় তাহলে বিদআত হবে। এখানে তিনি দু’টি সংজ্ঞাকে একত্রে এনেছেন। স্বভাবগত বিষয় যা করা ইবাদত। যেমন, ক্রয়-বিক্রয়, বিবাহ-তালাক ও ভাড়া দেয়া ইত্যাদি। কেননা এগুলোতে কিছু শর্ত ও নিয়মাবলী রয়েছে যে সম্পর্কে মানুষকে কোন স্বাধীনতা দেয়া হয়নি। [আল-ইতিসাম, লেখক শাতেবী (র) :২/৫৬৮]
৩. হাফেয ইবনে রজব রহ. বলেনঃ বিদআত হচ্ছে, দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু বিষয় প্রচলন করা শরীয়তে যার কোন ভিত্তি নেই। শরীয়তে যার ভিত্তি আছে তা বিদআত হবে না। [জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম : ২/১২৭]
এমন প্রত্যেক বস্ত্ত যা দ্বীনের অংশ হিসেবে চালিয়ে দেয়া হয় অথচ ইসলামে এর কোন ভিত্তি নেই, তা স্পষ্ট ভ্রষ্টতা। দ্বীন ইসলাম এ সকল ভ্রষ্টতা থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র।
চাই সেটা বিশ্বাসগত হোক বা বক্তব্যধর্মী অথবা কর্মমূলক। মোট কথা দ্বীন নব আবিস্কৃত বিদআত থেকে মুক্ত ও পবিত্র।
সালফে সালেহীনের উক্তি মতে কতিপয় নব আবিস্কৃত বিষয়কে উত্তম বলা হয়েছে। এর দ্বারা আভিধানিক বিদআত বুঝানো হয়েছে, শরীয়তে নিষিদ্ধ বিদআত বুঝানো হয়নি।
যেমন- ক. উমর (রা) এর যুগে যখন রমযান মাসে লোকজন মসজিদে একজন ইমামের পিছনে তারাবীহর সালাত পড়ার জন্য একত্রিত হল, তখন তিনি বের হলেন এবং লোকজনকে এ অবস্থায় দেখে বললেন, এটা কতই না উৎকৃষ্ট বিদআত! [বুখারী : ২০১০]
উমর (রা) এর এ কথার উদ্দেশ্য হচ্ছে, ইতিপূর্বে এ ধরণের কাজ আর কখনো সংঘটিত হয়নি, অথচ এটা শরীয়তের অন্তর্ভুক্ত।
খ. রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমযান মাসে কিয়ামুল-লাইলের জন্য উৎসাহ প্রদান করেছেন। তাঁর জীবদ্দশায় লোকজন মসজিদে এসে কেউ জামাতে, কেউ একা কিয়ামুল লাইল তথা নফল সালাত আদায় করতেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সাহাবীদের নিয়ে মাঝে মাঝে জামাতে সালাত আদায় করতেন। তিনি ভবিষ্যত উম্মতের অক্ষমতার বিষয় ও পরে তা ফরজ করে দেয়ার আশংকায় তা আদায় করতে নিষেধ করেছিলেন। [বুখারী : ২০১২]
গ. অনুরূপ রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মতকে খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাতের অনুসরণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আর কিয়ামুল লাইল খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাত। [জামেউল উলূম ওয়াল হিকাম : ২/১২৯]
বিদআত সাধারণত দু‘ধরণেরঃ
১। কুফরীঃ যার মাধ্যমে উক্ত বিদআতপন্থী ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে।
২। ফাসেকীঃ যার মাধ্যমে উক্ত বিদআতপন্থী ইসলাম থেকে বের হবে না কিন্তু গুনাহগার হবে। [আল-ইতিসাম, লেখক শাতেবী (র) : ২/৫১৬]
কোন আমলই আল্লাহ তাআলার নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তাতে দু‘টি শর্ত পাওয়া না যাবে।
এক. ইখলাছের সাথে ইবাদত করা, অর্থাৎ আমল বা ইবাদত একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য করা।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى . ( متفق عليه )
অর্থঃ প্রত্যেক কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল। মানুষ যে নিয়ত করবে তাই পাবে। [বুখারী :১ ও মুসলিম : ১৯০৭]
দুই. সুন্নাতের অনুসরণ অর্থাৎ ইবাদতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাতের পূর্ণ অনুসরণ।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ . ( مسلم )
অর্থঃ যে ব্যক্তি আমাদের পক্ষ থেকে স্বীকৃত নয় এমন কোন আমল করল, তা প্রত্যাখ্যাত হবে। [মুসলিম : ১৭১৮]
সুতরাং যার ঈমান ও আমল একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য এবং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাত মোতাবেক হবে, তার সে আমল আল্লাহ্ তা’আলার নিকট গ্রহণযোগ্য হবে। আর যদি এ দু‘টি শর্ত বা কোন একটি পাওয়া না যায়, তাহলে তা প্রত্যাখ্যাত হবে।
আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
( الفرقان :২৩) وَ قَدِمْنآَ إِلى مَاعَمِلُوا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَآءً مُّنْثُوْرًا
অর্থঃ আমি তাদের কর্মগুলোর প্রতি মনোনিবেশ করব, অতঃপর তা বিক্ষিপ্ত ধুলিকণায় পরিণত করে দেব। [ফুরকানঃ ২৩]
এ দু‘টো বিষয়ই আল্লাহ্ তা‘আলার নিম্নোক্ত বাণীতে সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে।
وَمَنْ أَحْسَنُ دِيْنًا مِّمَّنْ أَسْلَمَ وَجْهَهُ لِلّهِ و هُوَ مَحْسِنٌ . ( النساء : 125)
অর্থঃ যে আল্লাহর উদ্দেশ্যে আত্মসমর্পণ করে ও সৎ কর্ম করে, তার অপেক্ষা কার ধর্ম উৎকৃষ্ট? [নিসাঃ ১২৫]
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র ইরশাদ করেনঃ
بَلَى مَنْ أَسْلَمَ وَجْهَهُ لِلَّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَلَهُ أَجْرُهُ عِنْدَ رَبِّهِ وَلاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُونَ . ( البقرة : 112)
অর্থঃ অবশ্য যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করেছে এবং সৎ কর্মশীল হয়েছে, তার জন্য স্বীয় রবের নিকট প্রতিদান রয়েছে এবং তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিত হবে না। [বাকারাঃ ১১২]
উমর (রা) বর্ণিত إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ অর্থঃ ‘‘প্রতিটি কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল’’ হাদীসটি আন্তরিক আমল বা কার্যাবলীর মানদন্ড। আর উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা) বর্ণিত, مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ অর্থঃ ‘‘যে ব্যক্তি আমাদের পক্ষ থেকে স্বীকৃত নয় এমন কোন আমলের প্রচলন করল, তা প্রত্যাখ্যাত হবে’’। হাদীসটি বাহ্যিক আমল বা কার্যাবলীর মানদন্ড।
এ দু’টি হাদীসের মধ্যে দ্বীনের সকল বিষয় তথা মেŠলিক ও শাখা-প্রশাখা বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ সকল কথা বা কাজ সম্পর্কে দিক নির্দেশনা রয়েছে।
ইমাম নববী রহ. আয়েশা (রা) এর হাদীসের উপর একটি মূল্যবান কথা বলেছেন। তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাণীঃ
مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ অর্থঃ ‘‘যে ব্যক্তি আমাদের পক্ষ থেকে স্বীকৃত নয় এমন কোন আমলের প্রচলন করল, তা প্রত্যাখ্যাত হবে’’। দ্বিতীয় বর্ণনায় এসেছে, مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ অর্থঃ ‘‘যে ব্যক্তি আমাদের পক্ষ থেকে স্বীকৃত নয় এমন কোন আমল করল, তা প্রত্যাখ্যাত হবে’’। হাদীসদ্বয়ে উল্লেখিত শব্দ সম্পর্কে আরবগণ বলেনঃ الرد শব্দটা এখানে مردود তথা প্রত্যাখ্যাত অর্থে। যার প্রকৃত অর্থ হচ্ছেঃ যে আমল রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পক্ষ থেকে অনুমোদিত নয় তা বাতিল, প্রত্যাখ্যাত ও অগ্রহণযোগ্য। এ হাদীসটি ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি উসূল বা মূলনীতি। এর মাধ্যমে সকল প্রকারের বিদআত, নব আবিস্কৃত ও বানোয়াট বিষয়াবলীর মূলোৎপাটন করা হয়েছে।
তবে আয়েশার (রা) বর্ণনা দু’টির প্রথমটিতে من أحدث ও দ্বিতীয়টিতে من عمل শব্দ এসেছে। এ হাদীসদ্বয়ের মাধ্যমে সকল প্রকার বিদআতকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যেমন, কেউ পূর্ব প্রবর্তিত বিদআত অনুযায়ী আমল করল কিন্তু সে নিজে এর প্রবর্তক নয়, তাহলে তাকে দ্বিতীয় হাদীসের আওতাভুক্ত বলা হবে। মোট কথা সকল প্রকার বিদআত চাই সেটা আমল করা হোক বা প্রবর্তন করা হোক, সবই পথভ্রষ্টতার শামিল ও প্রত্যাখ্যাত। [ইমাম নববীর শরহে মুসলিম : ১৪/২৫৭]
এক. ইখলাছের সাথে ইবাদত করা, অর্থাৎ আমল বা ইবাদত একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য করা।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى . ( متفق عليه )
অর্থঃ প্রত্যেক কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল। মানুষ যে নিয়ত করবে তাই পাবে। [বুখারী :১ ও মুসলিম : ১৯০৭]
দুই. সুন্নাতের অনুসরণ অর্থাৎ ইবাদতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাতের পূর্ণ অনুসরণ।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ . ( مسلم )
অর্থঃ যে ব্যক্তি আমাদের পক্ষ থেকে স্বীকৃত নয় এমন কোন আমল করল, তা প্রত্যাখ্যাত হবে। [মুসলিম : ১৭১৮]
সুতরাং যার ঈমান ও আমল একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য এবং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাত মোতাবেক হবে, তার সে আমল আল্লাহ্ তা’আলার নিকট গ্রহণযোগ্য হবে। আর যদি এ দু‘টি শর্ত বা কোন একটি পাওয়া না যায়, তাহলে তা প্রত্যাখ্যাত হবে।
আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
( الفرقان :২৩) وَ قَدِمْنآَ إِلى مَاعَمِلُوا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَآءً مُّنْثُوْرًا
অর্থঃ আমি তাদের কর্মগুলোর প্রতি মনোনিবেশ করব, অতঃপর তা বিক্ষিপ্ত ধুলিকণায় পরিণত করে দেব। [ফুরকানঃ ২৩]
এ দু‘টো বিষয়ই আল্লাহ্ তা‘আলার নিম্নোক্ত বাণীতে সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে।
وَمَنْ أَحْسَنُ دِيْنًا مِّمَّنْ أَسْلَمَ وَجْهَهُ لِلّهِ و هُوَ مَحْسِنٌ . ( النساء : 125)
অর্থঃ যে আল্লাহর উদ্দেশ্যে আত্মসমর্পণ করে ও সৎ কর্ম করে, তার অপেক্ষা কার ধর্ম উৎকৃষ্ট? [নিসাঃ ১২৫]
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র ইরশাদ করেনঃ
بَلَى مَنْ أَسْلَمَ وَجْهَهُ لِلَّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَلَهُ أَجْرُهُ عِنْدَ رَبِّهِ وَلاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُونَ . ( البقرة : 112)
অর্থঃ অবশ্য যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করেছে এবং সৎ কর্মশীল হয়েছে, তার জন্য স্বীয় রবের নিকট প্রতিদান রয়েছে এবং তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিত হবে না। [বাকারাঃ ১১২]
উমর (রা) বর্ণিত إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ অর্থঃ ‘‘প্রতিটি কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল’’ হাদীসটি আন্তরিক আমল বা কার্যাবলীর মানদন্ড। আর উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা) বর্ণিত, مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ অর্থঃ ‘‘যে ব্যক্তি আমাদের পক্ষ থেকে স্বীকৃত নয় এমন কোন আমলের প্রচলন করল, তা প্রত্যাখ্যাত হবে’’। হাদীসটি বাহ্যিক আমল বা কার্যাবলীর মানদন্ড।
এ দু’টি হাদীসের মধ্যে দ্বীনের সকল বিষয় তথা মেŠলিক ও শাখা-প্রশাখা বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ সকল কথা বা কাজ সম্পর্কে দিক নির্দেশনা রয়েছে।
ইমাম নববী রহ. আয়েশা (রা) এর হাদীসের উপর একটি মূল্যবান কথা বলেছেন। তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাণীঃ
مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ অর্থঃ ‘‘যে ব্যক্তি আমাদের পক্ষ থেকে স্বীকৃত নয় এমন কোন আমলের প্রচলন করল, তা প্রত্যাখ্যাত হবে’’। দ্বিতীয় বর্ণনায় এসেছে, مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ অর্থঃ ‘‘যে ব্যক্তি আমাদের পক্ষ থেকে স্বীকৃত নয় এমন কোন আমল করল, তা প্রত্যাখ্যাত হবে’’। হাদীসদ্বয়ে উল্লেখিত শব্দ সম্পর্কে আরবগণ বলেনঃ الرد শব্দটা এখানে مردود তথা প্রত্যাখ্যাত অর্থে। যার প্রকৃত অর্থ হচ্ছেঃ যে আমল রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পক্ষ থেকে অনুমোদিত নয় তা বাতিল, প্রত্যাখ্যাত ও অগ্রহণযোগ্য। এ হাদীসটি ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি উসূল বা মূলনীতি। এর মাধ্যমে সকল প্রকারের বিদআত, নব আবিস্কৃত ও বানোয়াট বিষয়াবলীর মূলোৎপাটন করা হয়েছে।
তবে আয়েশার (রা) বর্ণনা দু’টির প্রথমটিতে من أحدث ও দ্বিতীয়টিতে من عمل শব্দ এসেছে। এ হাদীসদ্বয়ের মাধ্যমে সকল প্রকার বিদআতকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যেমন, কেউ পূর্ব প্রবর্তিত বিদআত অনুযায়ী আমল করল কিন্তু সে নিজে এর প্রবর্তক নয়, তাহলে তাকে দ্বিতীয় হাদীসের আওতাভুক্ত বলা হবে। মোট কথা সকল প্রকার বিদআত চাই সেটা আমল করা হোক বা প্রবর্তন করা হোক, সবই পথভ্রষ্টতার শামিল ও প্রত্যাখ্যাত। [ইমাম নববীর শরহে মুসলিম : ১৪/২৫৭]
বিদআতের নিন্দা বা তিরস্কার সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসে অনেক বর্ণনা এসেছে। সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণ বিদআত থেকে বিরত থাকার জন্য বিভিন্নভাবে সতর্কতা প্রদর্শন করেছেন। সংক্ষেপে তা আলোচনা করা হলঃ
প্রথমঃ কুরআনুল কারীম
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
هُوَ الَّذِيْ أَنزَلَ عَلَيْكَ الكِتَابَ مِنْهُ أياتٌ مُّحْكَمَاتُ هُنَّ أُمُّ الْكِتَابِ وَأُخَرُ مُتَشَابَهَاتُ فَأَمَّا الّذِّيْنَ فِى قُلُوبِهِمْ زَيْغُ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَاءَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَآءَ تَأْوِيْلِهِ وَمَا يَعْلُمُ تَأْوِيْلَهُ إِلاَّ اللهُ . ( آل عمران :7)
অর্থঃ তিনিই আপনার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, যাতে অকাট্য আয়াতসমূহ রয়েছে ওগুলো কিতাবের মূল। এ ছাড়া কতিপয় আয়াত অস্পষ্ট। অতএব যাদের অন্তরে বক্রতা রয়েছে, মূলতঃ তারাই অশান্তি সৃষ্টি ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের উদ্দেশ্যে অস্পষ্টের অনুসরণ করে। আর আল্লাহ্ ব্যতীত এর প্রকৃত অর্থ অন্য কেউ অবগত নয়। [আলে-ইমরানঃ ৭]
ইমাম শাতেবী রহ. এর সমর্থনে কিছু আসর (সাহাবীদের উক্তি) পেশ করেছেন। যদ্বারা বুঝা যায়, উক্ত আয়াতটি কুরআনের বক্তব্য নিয়ে যারা বিতর্ক করে তথা খারেজী বা তাদের সমগোত্রীয়দের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَأَنَّ هَذاَ صِِرَاطي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلاَ تَتَّبِعُواْ السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَن سَبِيْلِهِ ذَلكُمْ وَصّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ . ( الأنعام : 153)
অর্থঃ এ পথই আমার সরল পথ, সুতরাং তোমরা এরই অনুসরণ কর। এ পথ ছাড়া অন্য কোন পথের অনুসরণ করবে না। কারণ তা তোমাদেরকে হেদায়াতের পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। আল্লাহ তোমাদের এ নিদের্শ দিলেন যেন তোমরা সতর্ক হও। [আনআমঃ ১৫৩]
সুতরাং সিরাতে মুস্তাকীম হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত সহজ সরল ও সঠিক পথ। যে পথের দিকে উক্ত আয়াতে আহবান করা হয়েছে। এটাই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাত তথা জীবনাদর্শ। আর সুবুল বা বিভিন্ন রাস্তা হচ্ছে (দ্বীনের মধ্যে) মতানৈক্য ও বিদআত সৃষ্টিকারীদের পথ। উপরোক্ত আয়াতে সকল প্রকারের বিদআত সৃষ্টিকারীদের পথ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেনঃ
وَعَلَى اللهِ قَصْدُ السَّبِيلِ وَ مِنْهاَ جَآئِرٌ وَلَوْ شَآءَ لَهَداكُمْ َأجْمَعِيْنَ . ( النحل :9)
অর্থঃ সরল পথ আল্লাহর নিকট পেঁŠছার মাধ্যম, কিন্তু কিছু বক্র পথও রয়েছে; তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের সকলকে সৎপথে পরিচালিত করতেন। [নাহলঃ ৯]
কাস্দুস সাবিল
হচ্ছে সত্যের পথ, এর বাইরের সকল পথ সত্য হতে বিচ্যুত এবং তা বিদআতে পরিপূর্ণ ও ভ্রান্ত।
আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
إِنَّ الذِّيْنَ فَرَّقُواْ دِينَهُمْ وَكَانُواْ شِيَعًا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِى شَييء إِنَّمَآ أَمْرُهُمْ إِلَى اللهِ ثُمَّ يُنَبِّئُِِهُمْ بِمَا كَانوُاْ يَفْعَلُونَ . ( الأنعام :159)
অর্থঃ নিশ্চয়ই যারা নিজেদের দ্বীনে মতভেদ সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন দলে- উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়ে, তাদের সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই। তাদের বিষয়টি আল্লাহর দায়িত্বে রয়েছে। পরিশেষে তিনিই তাদেরকে নিজ কর্মকান্ড সম্পর্কে অবহিত করবেন। [আনআমঃ ১৫৯]
এরাই হচ্ছে প্রবৃত্তির অনুসারী, পথভ্রষ্ট এবং বিদআত সৃষ্টিকারী।
আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَلاَ تَكُونُواْ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ مِنَ الَّذِيْنَ فَرَّقُواْ دِينَهُمْ وَكَانُواْ شِيَعًا كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيهِمْ فَرِحُونَ . ( الروم :31-32)
অর্থঃ তোমরা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। যারা নিজেদের দ্বীনের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে তাদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উৎফুল্ল। [রূমঃ ৩১-৩২]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
فَلْيَحْذَرِ الَّذِيْنَ يُخَالِفُوْنَ عَنْ أَمْرِه أَنْ تُصِيْبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيْبَهُمْ عَذَابٌ ألِيْمٌ . ( النور : 63)
অর্থঃ সুতরাং যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তাদের এ ভয় করা উচিত যে, তাদের উপর বিপর্যয় আপতিত হবে অথবা কঠিন শাস্তি তাদের গ্রাস করবে। [আন-নূরঃ ৬৩]
আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
قُلْ هُوَ الْقاَدِرُ عَلَى أن يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عَذَابًا مِّن فَوْقِكُمْ أَوْ مِن تَحتِ أَرْجُلِكُمْ أَوْ يَلْبِسَكُمْ شِيَعًا . ( الأنعام : 65)
অর্থঃ হে রাসূ !বলুন, আল্লাহ তোমাদের উর্ধ্বদেশ অথবা তলদেশ হতে শাস্তি প্রেরণ করতে এবং তোমাদের বিভিন্ন দলে উপদলে বিভিক্ত করতে যথেষ্ট ক্ষমতাবান। [আনআমঃ ৬৫]
আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَلاَ يَزَالُونَ مُخْتَلِفِينَ، إِلاَّ مَن رَّحِمَ رَبُّكَ . ( الهود : 118-119)
অর্থঃ আর তারা সদা-সর্বদা মতভেদ সৃষ্টি করতে থাকবে কিন্তু যার প্রতি আপনার রবের অনুগ্রহণ হয় (সে মতভেদ করবে না)। [হুদঃ ১১৮-১১৯]
দ্বিতীয়ঃ হাদীস
বিদআতের নিন্দা, তিরস্কার ও তা থেকে সতর্কতা প্রদর্শন করে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনেক হাদীস বর্ণনা করেছেন। নিম্নে কয়েকটি উল্লেখ করা হলঃ
আয়েশা (রা) বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলছেনঃ
مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ . وفي رواية مسلم مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ . ( بخاري ومسلم )
অর্থঃ যে আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু প্রবর্তন করল, যা এর অন্তর্ভুনয় তা প্রত্যাখ্যাত। মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় রয়েছেঃ যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করল যা আমাদের পক্ষ থেকে অনুমোদিত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত। [বুখারী : ২৬৯৭ ও মুসলিম : ১৭১৮]
জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় জুমআর খুতবায় বলেছেনঃ
فَإِنَّ خَيْرَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللَّهِ وَخَيْرُ الْهُدَى هُدَى مُحَمَّدٍ وَشَرُّ الْأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ . ( مسلم )
অর্থঃ উত্তম বাণী হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার বাণী। আর উত্তম পথনির্দেশনা হচ্ছে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পথনির্দেশনা। নিকৃষ্টতম বিষয় হচ্ছে (দ্বীনের মধ্যে) নতুন নতুন বিধান ইবাদতের নামে প্রবর্তন করা, প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা। [মুসলিম : ৮৬৭]
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুতবায় আল্লাহর প্রশংসা করার পর বলেনঃ
مَنْ يَهْدِهِ اللَّهُ فَلَا مُضِلَّ لَهُ وَمَنْ يُضْلِلْهُ فَلَا هَادِيَ لَهُ إِنَّ أَصْدَقَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللَّهِ وَأَحْسَنَ الْهَدْيِ هَدْيُ مُحَمَّدٍ وَشَرُّ الْأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلُّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ وَكُلُّ ضَلَالَةٍ فِي النَّارِ . ( مسلم ونسائي )
অর্থঃ আল্লাহ্ যাকে হেদায়াত দান করেন তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না। আর তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার জন্য কোন পথ প্রদর্শনকারী নেই। নিশ্চয়ই সর্বাধিক সত্যবাণী হচ্ছে আল্লাহ্ তা‘আলার কিতাবের বাণী। আর সর্বোত্তম পথ হলো মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক প্রদর্শিত পথ। আর মন্দ বিষয়গুলো হলো (দ্বীনের মধ্যে) নবসৃষ্ট আমল বা কাজ। প্রত্যেক নবসৃষ্ট আমলই বিদআত। প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতাই জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। [মুসলিম : ৮৬৭ ও নাসাঈ : ১৫৭৮]
আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنْ الْأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلَالَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنْ الْإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا . ( مسلم )
অর্থঃ যে ব্যক্তি (মানুষকে) হেদায়াতের দিকে আহবান করবে, সে হেদায়াতের পথ অনুসরণকারীর সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে। এতে কারো সাওয়াব কম হবে না। আর যে ব্যক্তি (মানুষকে) পথভ্রষ্টতার দিকে আহবান করবে সে ঐ ভ্রষ্টপথ অনুসরণকারীর সমপরিমাণ গুনাহগার হবে। এতে কারো গুনাহ কম হবে না। [মুসলিম : ২৬৭৪]
জারির ইবনে আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা) বলেনঃ
مَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً حَسَنَةً فَلَهُ أَجْرُهَا وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا بَعْدَهُ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْءٌ وَمَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً سَيِّئَةً كَانَ عَلَيْهِ وِزْرُهَا وَوِزْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ بَعْدِهِ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَيْءٌ . ( مسلم )
অর্থঃ যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোন ভাল কাজের প্রচলন করল তার জন্য সে কাজের প্রতিদান রয়েছে এবং পরবর্তীতে যারা ঐ ভাল কাজের উপর আমল করল তা থেকেও সে প্রতিদান পাবে, এতে কারো প্রতিদান কম করা হবে না। এমনিভাবে যে ব্যক্তি কোন মন্দ কাজের প্রচলন করল তার আমলনামায় সে মন্দ কাজের গুনাহ রয়েছে এবং পরবর্তীতে উক্ত গুনাহে লিপ্তদের গুনাহও লিখা হবে। এতে কারো গুনাহ কম হবে না। [মুসলিম : ১০১৭]
ইরবাজ বিন সারিয়া (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ
وَعَظَناَرَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَوْعِظَة وَجِلَتْ مِنْهَا الْقُلُوْبُ وَذَرَفَتْ مِنْهاَ الْعُيُوْنُ فَقُلْنَا : يَارَسُوْلَ اللهِ ! كَأَنَّـهَا مَوْعِظَةُ مُوْدِعُ فَأَوْصِناَ قَالَ : أُوصِيكُمْ بِتَقْوَى اللَّهِ وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ وَإِنْ تُأَمَّرُ عَلَيْكُمْ عَبْدُ، فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِي فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيرًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالٌ . ( أبوداود )
অর্থঃ একদা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মাঝে এমন ভাষণ দিলেন যাতে আমাদের অন্তর বিগলিত হল এবং চক্ষু হতে অশ্রু প্রবাহিত হল, তখন আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! মনে হচ্ছে এ আলোচনা যেন বিদায়ী উপদেশ। সুতরাং আমাদের আরো কিছু ওসিয়ত করুন। তখন তিনি বললেনঃ আল্লাহকে ভয় কর, আমীরের কথা শোন এবং তার আনুগত্য কর; যদিও সে কৃতদাস হয়। আর যে ব্যক্তি আমার পর বেঁচে থাকবে সে অনেক মতানৈক্য দেখতে পাবে, সে সময় তোমাদের উচিত হবে আমার এবং আমার খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরা যেমনি তোমরা কোন বস্ত্ত মাড়ির দাঁত দিয়ে মজবুত ভাবে আঁকড়ে ধর। বিদআত পরিহার কর। কেননা সকল প্রকার বিদআতই পথভ্রষ্টতা। [আবু দাউদ : ৪৭০৭ ও তিরমিযী : ২৬৭৬]
হুজাইফা (রা) হতে বর্ণিতঃ
كَانَ النَّاسُ يَسْأَلُونَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ الْخَيْرِ وَكُنْتُ أَسْأَلُهُ عَنْ الشَّرِّ مَخَافَةَ أَنْ يُدْرِكَنِي فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّا كُنَّا فِي جَاهِلِيَّةٍ وَشَرٍّ فَجَاءَنَا اللَّهُ بِهَذَا الْخَيْرِ فَهَلْ بَعْدَ هَذَا الْخَيْرِ مِنْ شَرٍّ قَالَ نَعَمْ قُلْتُ وَهَلْ بَعْدَ ذَلِكَ الشَّرِّ مِنْ خَيْرٍ قَالَ نَعَمْ وَفِيهِ دَخَنٌ قُلْتُ وَمَا دَخَنُهُ قَالَ قَوْمٌ يَهْدُونَ بِغَيْرِ هَدْيِي تَعْرِفُ مِنْهُمْ وَتُنْكِرُ قُلْتُ فَهَلْ بَعْدَ ذَلِكَ الْخَيْرِ مِنْ شَرٍّ قَالَ نَعَمْ دُعَاةٌ عَلَى أَبْوَابِ جَهَنَّمَ مَنْ أَجَابَهُمْ إِلَيْهَا قَذَفُوهُ فِيهَا قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ صِفْهُمْ لَنَا قَالَ هُمْ مِنْ جِلْدَتِنَا وَيَتَكَلَّمُونَ بِأَلْسِنَتِنَا قُلْتُ فَمَا تَأْمُرُنِي إِنْ أَدْرَكَنِي ذَلِكَ قَالَ تَلْزَمُ جَمَاعَةَ الْمُسْلِمِينَ وَإِمَامَهُمْ قُلْتُ فَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُمْ جَمَاعَةٌ وَلَا إِمَامٌ قَالَ فَاعْتَزِلْ تِلْكَ الْفِرَقَ كُلَّهَا وَلَوْ أَنْ تَعَضَّ بِأَصْلِ شَجَرَةٍ حَتَّى يُدْرِكَكَ الْمَوْتُ وَأَنْتَ عَلَى ذَلِكَ . ( متفق عليه )
অর্থঃ লোকজন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে কল্যাণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করত, আর আমি অকল্যাণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতাম যাতে তা থেকে বেঁচে থাকতে পারি। কোন এক সময় আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা জাহেলিয়াত ও কুসংস্কারের মাঝে নিমজ্জিত ছিলাম, অতঃপর আল্লাহ আমাদের কল্যাণের পথ দেখালেন, এ কল্যাণের পরে কি আবার অকল্যাণ আসবে? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ; অতঃপর আবার জিজ্ঞেস করলাম, এ অকল্যাণের পর কি আবার কল্যাণ আসবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ; কিন্তু তার মধ্যে ফ্যাসাদ থাকবে। আমি বললাম, তার মধ্যে ফ্যাসাদ কি? তিনি বললেন, এক দল লোক সুন্নাতের অনুসারী হবে বটে, তবে তা আমার সুন্নাত নয়। তারা আমার সুন্নাত ছেড়ে অন্য মতাদর্শ গ্রহণ করবে, তাদের মাঝে সৎকর্ম এবং অসৎকর্ম উভয়টিই পাওয়া যাবে। আমি বললাম, এ কল্যাণের পরও কি আবার অকল্যাণ আসবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ; একদল লোক মানুষকে জাহান্নামের দিকে আহবান করবে, যারা তাদের ডাকে সাড়া দেবে তারা জাহান্নামের স্বাদ গ্রহণ করবে। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! তাদের পরিচয় দিন। তিনি বললেন, তারা আমাদের স্ব-জাতি ও আমাদের ভাষাতেই কথা বলবে। আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! ঐ সময় যদি আমি বেঁচে থাকি তাহলে আমার জন্য আপনার পরামর্শ কি? তিনি বললেন, তুমি মুসলিম জামাআত ও তাদের ইমামের অনুসরণ করবে। আমি বললাম, যদি তাদের জামাআত ও ইমাম না থাকে? তিনি বললেন, তাহলে সকল জামাআতই পরিত্যাগ করবে। যদি প্রয়োজন হয় কোন গাছের শিকড় ধরে আমরণ এভাবে পড়ে থাকবে। [বুখারী : ৭০৮৪ ও মুসলিম :১৮৪৭]
এ হাদীসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইমাম নববী রহ. বলেন, هدي (হাদী) শব্দের অর্থ হল ত্বরীকা ও আদর্শ। আর জাহান্নামের দিকে আহবানকারী দল প্রসঙ্গে উলামায়ে কেরাম বলেন, তারা হল সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ যারা মানুষকে বিদআতের দিকে আহবান করে। যেমন-খারেজী, কারামতী ও বস্ত্তবাদী দল। [শরহে মুসলিম : ১২/৪৭৯]
যায়েদ বিন আরকাম (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
أَلَا أَيُّهَا النَّاسُ فَإِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ يُوشِكُ أَنْ يَأْتِيَ رَسُولُ رَبِّي فَأُجِيبَ وَأَنَا تَارِكٌ فِيكُمْ ثَقَلَيْنِ أَوَّلُهُمَا كِتَابُ اللَّهِ فِيهِ الْهُدَى وَالنُّورُ [ هوحبل الله المتين من أتبعه كان على الـهدى ومن تركه كان على الضلالة ] فَخُذُوا بِكِتَابِ اللَّهِ وَاسْتَمْسِكُوا بِهِ . ( مسلم )
অর্থঃ হে লোকসকল! নিশ্চয়ই আমি একজন মানুষ, যখনই আমার রবের পক্ষ থেকে মৃত্যুদূত আসবে তখনই আমি তার আহবানে সাড়া দেব। আর আমি তোমাদের জন্য দু‘টি বস্ত্ত রেখে যাচ্ছি। তার একটি হল আল্লাহ্র কিতাব (অপরটি আমার সুন্নাত), যাতে রয়েছে হেদায়াত ও নূর। এটা আল্লাহর সুদৃঢ় রশি। যারাই এ কিতাব মেনে চলবে তারাই হেদায়াত পাবে। আর যারা তা ছেড়ে দেবে তারা পথভ্রষ্ট হবে। তোমরা আল্লাহ্র কিতাব সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর। [মুসলিম : ২৪০৮]
এ হাদীসে আল্লাহর কিতাব মেনে চলার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে।
আবু হুরাইরা (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
يَكُونُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ يَأْتُونَكُمْ مِنْ الْأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوا أَنْتُمْ وَلَا آبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لَا يُضِلُّونَكُمْ وَلَا يَفْتِنُونَكُمْ . ( مسلم )
অর্থঃ শেষ জমানায় এমন কিছু মিথ্যাবাদী প্রতারকের আবির্ভাব ঘটবে, যারা তোমাদের কাছে এমনসব হাদীস বর্ণনা করবে; যা তোমরা ও তোমাদের পূর্ব পুরুষ কোন দিন শোননি। অতএব তোমরা তাদের হতে দূরে থাক যাতে তারা তোমাদের গোমরাহী ও ফিতনায় ফেলতে না পারে। [মুকাদ্দামায়ে মুসলিম : ৬ ও ৭]
তৃতীয়ঃ বিদআত সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরামদের মতামত
১. ইবনে সা’দ রহ. আবু বকর সিদ্দিক (রা) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেনঃ উপস্থিত জনতা! নিশ্চয়ই আমি সুন্নাতের অনুসারী বিদআতপন্থী নই। যদি আমি ভাল কাজ করি তাহলে আমাকে সাহায্য করবে, আর যদি ভুল করি তাহলে সংশোধন করে দিবে। [আত-তাবাকাতুল কুবরা : ৩/১৩৬]
২. ওমর ইবনে খাত্তাব (রা) বলেন, তোমরা তর্কবীদদের থেকে দূরে থাক। কেননা তারা সুন্নাতের দুশমন এবং হাদীস অনুযায়ী আমলে অক্ষম। তারা মনগড়া মতামত বা রায় দিয়ে নিজেরাও গোমরাহ হয় অন্যকেও গোমারাহ করে। [সুনানে দারেমী : ১২১]
৩. আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রা) বলেন, তোমরা সুন্নাতের অনুসরণ কর, বিদআতের অনুসরণ করবে না। এটাই তোমাদের জন্য যথেষ্ট। কেননা সকল প্রকার বিদআতই ভ্রষ্টতা। [আল মুজামুল কাবীর : ৮৭৭]
চতুর্থঃ বিদআত সম্পর্কে তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীগণের অভিমত
১. ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ রহ. এক ব্যক্তির নিকট চিঠি লিখেছিলেন, তিনি তাতে বলেছিলেন, আমি তোমাকে আল্লাহ্র ভয়, তাঁর হুকুমের ব্যাপারে মধ্যপন্থা অবলম্বন, তাঁর নবীর সুন্নাতের অনুসরণ করা এবং কোন ব্যাপারে সুন্নাত প্রমাণিত হওয়ার পর তা ছেড়ে বিদআত গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার উপদেশ দিচ্ছি। [আবু দাউদ : ৪৬১২]
২. হাসান বসরী রহ. বলেন, আমল ব্যতীত কোন কথা ছহীহ হবে না, নিয়ত ব্যতীত কোন কথা ও আমল ছহীহ হবে না এবং সুন্নাতের অনুসরণ ব্যতীত কোন নিয়ত, আমল ও কথা ছহীহ হবে না। [শরহে উসূলে ই‘তিকাদে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ : ১/৬৩ নং ১৮]
৩. ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেন, তর্কবীদদের ব্যাপারে আমার ফায়সালা হল খেজুরের ডাল দ্বারা তাদের প্রহার কর, উটের উপর আরোহন করাও, প্রতিটি গোত্রের মধ্যে প্রদক্ষিণ করার কালে একথা বলতে থাক যে, এরা কুরআন ও সুন্নাত ছেড়ে তর্কশাস্ত্র গ্রহণ করেছে। তাই এটাই এর উপযুক্ত বদলা। [আল হিলইয়াহ লেখক আবু নাইম : ৯/১১৬]
৪. ইমাম মালেক রহ. বলেন, যে ইসলামে উত্তম মনে করে কোন বিদআত প্রচলন করল, সে যেন এ ধারণা পোষণ করল যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর রেসালতের দায়িত্বে খিয়ানত করেছেন। পক্ষান্তরে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ . অর্থঃ আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম। [মায়িদাঃ ৩]
অতএব এ যুগান্তকারী ঘোষণা কালে যে আমল দ্বীন হিসাবে স্বীকৃত ছিল না, তা আজও দ্বীন হতে পারে না। [আল-ইতিসাম, লেখক শাতেবী (র) : ১/৬৫]
৫. ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ. বলেন, সুন্নাতের উসূল হল, রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীগণ যা করেছেন তা গ্রহণ করা, তাদের অনুকরণ করা ও বিদআত পরিত্যাগ করা। কেননা সকল বিদআতই ভ্রষ্টতা। তাই ঝগড়া-বিবাদ পরিহার করা, প্রবৃত্তির অনুসারীদের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা, লৌকিকতা পরিহার করা এবং দ্বীনের ব্যাপারে বিতর্কে না জড়ানো উচিত। [শরহে উসূলে ই‘তিকাদে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ : ১/১৭৬]
পঞ্চমঃ বিদআত অগ্রহণযোগ্য হওয়ার কারণ
হহহহহহহহহহহহহহহহহহ১. একথা সত্য যে, মানুষের জ্ঞান অহীর জ্ঞান ব্যতীত অসম্পূর্ণ। নিশ্চয়ই বিদআত অহীর পরিপন্থী।
২. শরীয়ত পূর্ণাঙ্গ রূপে এসেছে, তাতে কম-বেশি করার কোন অবকাশ নেই।
৩. বিদআতপন্থী শরীয়তের বিরুদ্ধাচরণকারী।
৪. বিদআতপন্থী প্রবৃত্তির অনুসারী। কেননা জ্ঞান-বুদ্ধি যদি শরীয়ত সম্মত না হয়, তাহলে তা প্রবৃত্তির অনুসরণেই হয়।
৫. বিদআতপন্থী নিজেকে শরীয়ত প্রবর্তকের (আল্লাহ তা‘আলার) স্থলাভিষিক্ত বানিয়ে নেয়। কেননা শরীয়ত প্রবর্তক তা প্রবর্তন করে সে অনুযায়ী আমল করা অত্যাবশ্যক করেছেন আর বিদআত প্রবর্তক শরীয়তে নতুন কিছু প্রবর্তন করে তাই করতে চাচ্ছে। [আল-ইতিসাম, লেখক শাতেবী (র) : ১/৬১-৭০]
প্রথমঃ কুরআনুল কারীম
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
هُوَ الَّذِيْ أَنزَلَ عَلَيْكَ الكِتَابَ مِنْهُ أياتٌ مُّحْكَمَاتُ هُنَّ أُمُّ الْكِتَابِ وَأُخَرُ مُتَشَابَهَاتُ فَأَمَّا الّذِّيْنَ فِى قُلُوبِهِمْ زَيْغُ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَاءَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَآءَ تَأْوِيْلِهِ وَمَا يَعْلُمُ تَأْوِيْلَهُ إِلاَّ اللهُ . ( آل عمران :7)
অর্থঃ তিনিই আপনার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, যাতে অকাট্য আয়াতসমূহ রয়েছে ওগুলো কিতাবের মূল। এ ছাড়া কতিপয় আয়াত অস্পষ্ট। অতএব যাদের অন্তরে বক্রতা রয়েছে, মূলতঃ তারাই অশান্তি সৃষ্টি ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের উদ্দেশ্যে অস্পষ্টের অনুসরণ করে। আর আল্লাহ্ ব্যতীত এর প্রকৃত অর্থ অন্য কেউ অবগত নয়। [আলে-ইমরানঃ ৭]
ইমাম শাতেবী রহ. এর সমর্থনে কিছু আসর (সাহাবীদের উক্তি) পেশ করেছেন। যদ্বারা বুঝা যায়, উক্ত আয়াতটি কুরআনের বক্তব্য নিয়ে যারা বিতর্ক করে তথা খারেজী বা তাদের সমগোত্রীয়দের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَأَنَّ هَذاَ صِِرَاطي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلاَ تَتَّبِعُواْ السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَن سَبِيْلِهِ ذَلكُمْ وَصّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ . ( الأنعام : 153)
অর্থঃ এ পথই আমার সরল পথ, সুতরাং তোমরা এরই অনুসরণ কর। এ পথ ছাড়া অন্য কোন পথের অনুসরণ করবে না। কারণ তা তোমাদেরকে হেদায়াতের পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। আল্লাহ তোমাদের এ নিদের্শ দিলেন যেন তোমরা সতর্ক হও। [আনআমঃ ১৫৩]
সুতরাং সিরাতে মুস্তাকীম হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত সহজ সরল ও সঠিক পথ। যে পথের দিকে উক্ত আয়াতে আহবান করা হয়েছে। এটাই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাত তথা জীবনাদর্শ। আর সুবুল বা বিভিন্ন রাস্তা হচ্ছে (দ্বীনের মধ্যে) মতানৈক্য ও বিদআত সৃষ্টিকারীদের পথ। উপরোক্ত আয়াতে সকল প্রকারের বিদআত সৃষ্টিকারীদের পথ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেনঃ
وَعَلَى اللهِ قَصْدُ السَّبِيلِ وَ مِنْهاَ جَآئِرٌ وَلَوْ شَآءَ لَهَداكُمْ َأجْمَعِيْنَ . ( النحل :9)
অর্থঃ সরল পথ আল্লাহর নিকট পেঁŠছার মাধ্যম, কিন্তু কিছু বক্র পথও রয়েছে; তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের সকলকে সৎপথে পরিচালিত করতেন। [নাহলঃ ৯]
কাস্দুস সাবিল
হচ্ছে সত্যের পথ, এর বাইরের সকল পথ সত্য হতে বিচ্যুত এবং তা বিদআতে পরিপূর্ণ ও ভ্রান্ত।
আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
إِنَّ الذِّيْنَ فَرَّقُواْ دِينَهُمْ وَكَانُواْ شِيَعًا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِى شَييء إِنَّمَآ أَمْرُهُمْ إِلَى اللهِ ثُمَّ يُنَبِّئُِِهُمْ بِمَا كَانوُاْ يَفْعَلُونَ . ( الأنعام :159)
অর্থঃ নিশ্চয়ই যারা নিজেদের দ্বীনে মতভেদ সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন দলে- উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়ে, তাদের সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই। তাদের বিষয়টি আল্লাহর দায়িত্বে রয়েছে। পরিশেষে তিনিই তাদেরকে নিজ কর্মকান্ড সম্পর্কে অবহিত করবেন। [আনআমঃ ১৫৯]
এরাই হচ্ছে প্রবৃত্তির অনুসারী, পথভ্রষ্ট এবং বিদআত সৃষ্টিকারী।
আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَلاَ تَكُونُواْ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ مِنَ الَّذِيْنَ فَرَّقُواْ دِينَهُمْ وَكَانُواْ شِيَعًا كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيهِمْ فَرِحُونَ . ( الروم :31-32)
অর্থঃ তোমরা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। যারা নিজেদের দ্বীনের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে তাদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উৎফুল্ল। [রূমঃ ৩১-৩২]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
فَلْيَحْذَرِ الَّذِيْنَ يُخَالِفُوْنَ عَنْ أَمْرِه أَنْ تُصِيْبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيْبَهُمْ عَذَابٌ ألِيْمٌ . ( النور : 63)
অর্থঃ সুতরাং যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তাদের এ ভয় করা উচিত যে, তাদের উপর বিপর্যয় আপতিত হবে অথবা কঠিন শাস্তি তাদের গ্রাস করবে। [আন-নূরঃ ৬৩]
আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
قُلْ هُوَ الْقاَدِرُ عَلَى أن يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عَذَابًا مِّن فَوْقِكُمْ أَوْ مِن تَحتِ أَرْجُلِكُمْ أَوْ يَلْبِسَكُمْ شِيَعًا . ( الأنعام : 65)
অর্থঃ হে রাসূ !বলুন, আল্লাহ তোমাদের উর্ধ্বদেশ অথবা তলদেশ হতে শাস্তি প্রেরণ করতে এবং তোমাদের বিভিন্ন দলে উপদলে বিভিক্ত করতে যথেষ্ট ক্ষমতাবান। [আনআমঃ ৬৫]
আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَلاَ يَزَالُونَ مُخْتَلِفِينَ، إِلاَّ مَن رَّحِمَ رَبُّكَ . ( الهود : 118-119)
অর্থঃ আর তারা সদা-সর্বদা মতভেদ সৃষ্টি করতে থাকবে কিন্তু যার প্রতি আপনার রবের অনুগ্রহণ হয় (সে মতভেদ করবে না)। [হুদঃ ১১৮-১১৯]
দ্বিতীয়ঃ হাদীস
বিদআতের নিন্দা, তিরস্কার ও তা থেকে সতর্কতা প্রদর্শন করে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনেক হাদীস বর্ণনা করেছেন। নিম্নে কয়েকটি উল্লেখ করা হলঃ
আয়েশা (রা) বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলছেনঃ
مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ . وفي رواية مسلم مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ . ( بخاري ومسلم )
অর্থঃ যে আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু প্রবর্তন করল, যা এর অন্তর্ভুনয় তা প্রত্যাখ্যাত। মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় রয়েছেঃ যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করল যা আমাদের পক্ষ থেকে অনুমোদিত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত। [বুখারী : ২৬৯৭ ও মুসলিম : ১৭১৮]
জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় জুমআর খুতবায় বলেছেনঃ
فَإِنَّ خَيْرَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللَّهِ وَخَيْرُ الْهُدَى هُدَى مُحَمَّدٍ وَشَرُّ الْأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ . ( مسلم )
অর্থঃ উত্তম বাণী হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার বাণী। আর উত্তম পথনির্দেশনা হচ্ছে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পথনির্দেশনা। নিকৃষ্টতম বিষয় হচ্ছে (দ্বীনের মধ্যে) নতুন নতুন বিধান ইবাদতের নামে প্রবর্তন করা, প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা। [মুসলিম : ৮৬৭]
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুতবায় আল্লাহর প্রশংসা করার পর বলেনঃ
مَنْ يَهْدِهِ اللَّهُ فَلَا مُضِلَّ لَهُ وَمَنْ يُضْلِلْهُ فَلَا هَادِيَ لَهُ إِنَّ أَصْدَقَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللَّهِ وَأَحْسَنَ الْهَدْيِ هَدْيُ مُحَمَّدٍ وَشَرُّ الْأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلُّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ وَكُلُّ ضَلَالَةٍ فِي النَّارِ . ( مسلم ونسائي )
অর্থঃ আল্লাহ্ যাকে হেদায়াত দান করেন তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না। আর তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার জন্য কোন পথ প্রদর্শনকারী নেই। নিশ্চয়ই সর্বাধিক সত্যবাণী হচ্ছে আল্লাহ্ তা‘আলার কিতাবের বাণী। আর সর্বোত্তম পথ হলো মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক প্রদর্শিত পথ। আর মন্দ বিষয়গুলো হলো (দ্বীনের মধ্যে) নবসৃষ্ট আমল বা কাজ। প্রত্যেক নবসৃষ্ট আমলই বিদআত। প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতাই জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। [মুসলিম : ৮৬৭ ও নাসাঈ : ১৫৭৮]
আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنْ الْأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلَالَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنْ الْإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا . ( مسلم )
অর্থঃ যে ব্যক্তি (মানুষকে) হেদায়াতের দিকে আহবান করবে, সে হেদায়াতের পথ অনুসরণকারীর সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে। এতে কারো সাওয়াব কম হবে না। আর যে ব্যক্তি (মানুষকে) পথভ্রষ্টতার দিকে আহবান করবে সে ঐ ভ্রষ্টপথ অনুসরণকারীর সমপরিমাণ গুনাহগার হবে। এতে কারো গুনাহ কম হবে না। [মুসলিম : ২৬৭৪]
জারির ইবনে আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা) বলেনঃ
مَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً حَسَنَةً فَلَهُ أَجْرُهَا وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا بَعْدَهُ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْءٌ وَمَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً سَيِّئَةً كَانَ عَلَيْهِ وِزْرُهَا وَوِزْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ بَعْدِهِ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَيْءٌ . ( مسلم )
অর্থঃ যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোন ভাল কাজের প্রচলন করল তার জন্য সে কাজের প্রতিদান রয়েছে এবং পরবর্তীতে যারা ঐ ভাল কাজের উপর আমল করল তা থেকেও সে প্রতিদান পাবে, এতে কারো প্রতিদান কম করা হবে না। এমনিভাবে যে ব্যক্তি কোন মন্দ কাজের প্রচলন করল তার আমলনামায় সে মন্দ কাজের গুনাহ রয়েছে এবং পরবর্তীতে উক্ত গুনাহে লিপ্তদের গুনাহও লিখা হবে। এতে কারো গুনাহ কম হবে না। [মুসলিম : ১০১৭]
ইরবাজ বিন সারিয়া (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ
وَعَظَناَرَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَوْعِظَة وَجِلَتْ مِنْهَا الْقُلُوْبُ وَذَرَفَتْ مِنْهاَ الْعُيُوْنُ فَقُلْنَا : يَارَسُوْلَ اللهِ ! كَأَنَّـهَا مَوْعِظَةُ مُوْدِعُ فَأَوْصِناَ قَالَ : أُوصِيكُمْ بِتَقْوَى اللَّهِ وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ وَإِنْ تُأَمَّرُ عَلَيْكُمْ عَبْدُ، فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِي فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيرًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالٌ . ( أبوداود )
অর্থঃ একদা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মাঝে এমন ভাষণ দিলেন যাতে আমাদের অন্তর বিগলিত হল এবং চক্ষু হতে অশ্রু প্রবাহিত হল, তখন আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! মনে হচ্ছে এ আলোচনা যেন বিদায়ী উপদেশ। সুতরাং আমাদের আরো কিছু ওসিয়ত করুন। তখন তিনি বললেনঃ আল্লাহকে ভয় কর, আমীরের কথা শোন এবং তার আনুগত্য কর; যদিও সে কৃতদাস হয়। আর যে ব্যক্তি আমার পর বেঁচে থাকবে সে অনেক মতানৈক্য দেখতে পাবে, সে সময় তোমাদের উচিত হবে আমার এবং আমার খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরা যেমনি তোমরা কোন বস্ত্ত মাড়ির দাঁত দিয়ে মজবুত ভাবে আঁকড়ে ধর। বিদআত পরিহার কর। কেননা সকল প্রকার বিদআতই পথভ্রষ্টতা। [আবু দাউদ : ৪৭০৭ ও তিরমিযী : ২৬৭৬]
হুজাইফা (রা) হতে বর্ণিতঃ
كَانَ النَّاسُ يَسْأَلُونَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ الْخَيْرِ وَكُنْتُ أَسْأَلُهُ عَنْ الشَّرِّ مَخَافَةَ أَنْ يُدْرِكَنِي فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّا كُنَّا فِي جَاهِلِيَّةٍ وَشَرٍّ فَجَاءَنَا اللَّهُ بِهَذَا الْخَيْرِ فَهَلْ بَعْدَ هَذَا الْخَيْرِ مِنْ شَرٍّ قَالَ نَعَمْ قُلْتُ وَهَلْ بَعْدَ ذَلِكَ الشَّرِّ مِنْ خَيْرٍ قَالَ نَعَمْ وَفِيهِ دَخَنٌ قُلْتُ وَمَا دَخَنُهُ قَالَ قَوْمٌ يَهْدُونَ بِغَيْرِ هَدْيِي تَعْرِفُ مِنْهُمْ وَتُنْكِرُ قُلْتُ فَهَلْ بَعْدَ ذَلِكَ الْخَيْرِ مِنْ شَرٍّ قَالَ نَعَمْ دُعَاةٌ عَلَى أَبْوَابِ جَهَنَّمَ مَنْ أَجَابَهُمْ إِلَيْهَا قَذَفُوهُ فِيهَا قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ صِفْهُمْ لَنَا قَالَ هُمْ مِنْ جِلْدَتِنَا وَيَتَكَلَّمُونَ بِأَلْسِنَتِنَا قُلْتُ فَمَا تَأْمُرُنِي إِنْ أَدْرَكَنِي ذَلِكَ قَالَ تَلْزَمُ جَمَاعَةَ الْمُسْلِمِينَ وَإِمَامَهُمْ قُلْتُ فَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُمْ جَمَاعَةٌ وَلَا إِمَامٌ قَالَ فَاعْتَزِلْ تِلْكَ الْفِرَقَ كُلَّهَا وَلَوْ أَنْ تَعَضَّ بِأَصْلِ شَجَرَةٍ حَتَّى يُدْرِكَكَ الْمَوْتُ وَأَنْتَ عَلَى ذَلِكَ . ( متفق عليه )
অর্থঃ লোকজন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে কল্যাণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করত, আর আমি অকল্যাণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতাম যাতে তা থেকে বেঁচে থাকতে পারি। কোন এক সময় আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা জাহেলিয়াত ও কুসংস্কারের মাঝে নিমজ্জিত ছিলাম, অতঃপর আল্লাহ আমাদের কল্যাণের পথ দেখালেন, এ কল্যাণের পরে কি আবার অকল্যাণ আসবে? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ; অতঃপর আবার জিজ্ঞেস করলাম, এ অকল্যাণের পর কি আবার কল্যাণ আসবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ; কিন্তু তার মধ্যে ফ্যাসাদ থাকবে। আমি বললাম, তার মধ্যে ফ্যাসাদ কি? তিনি বললেন, এক দল লোক সুন্নাতের অনুসারী হবে বটে, তবে তা আমার সুন্নাত নয়। তারা আমার সুন্নাত ছেড়ে অন্য মতাদর্শ গ্রহণ করবে, তাদের মাঝে সৎকর্ম এবং অসৎকর্ম উভয়টিই পাওয়া যাবে। আমি বললাম, এ কল্যাণের পরও কি আবার অকল্যাণ আসবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ; একদল লোক মানুষকে জাহান্নামের দিকে আহবান করবে, যারা তাদের ডাকে সাড়া দেবে তারা জাহান্নামের স্বাদ গ্রহণ করবে। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! তাদের পরিচয় দিন। তিনি বললেন, তারা আমাদের স্ব-জাতি ও আমাদের ভাষাতেই কথা বলবে। আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! ঐ সময় যদি আমি বেঁচে থাকি তাহলে আমার জন্য আপনার পরামর্শ কি? তিনি বললেন, তুমি মুসলিম জামাআত ও তাদের ইমামের অনুসরণ করবে। আমি বললাম, যদি তাদের জামাআত ও ইমাম না থাকে? তিনি বললেন, তাহলে সকল জামাআতই পরিত্যাগ করবে। যদি প্রয়োজন হয় কোন গাছের শিকড় ধরে আমরণ এভাবে পড়ে থাকবে। [বুখারী : ৭০৮৪ ও মুসলিম :১৮৪৭]
এ হাদীসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইমাম নববী রহ. বলেন, هدي (হাদী) শব্দের অর্থ হল ত্বরীকা ও আদর্শ। আর জাহান্নামের দিকে আহবানকারী দল প্রসঙ্গে উলামায়ে কেরাম বলেন, তারা হল সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ যারা মানুষকে বিদআতের দিকে আহবান করে। যেমন-খারেজী, কারামতী ও বস্ত্তবাদী দল। [শরহে মুসলিম : ১২/৪৭৯]
যায়েদ বিন আরকাম (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
أَلَا أَيُّهَا النَّاسُ فَإِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ يُوشِكُ أَنْ يَأْتِيَ رَسُولُ رَبِّي فَأُجِيبَ وَأَنَا تَارِكٌ فِيكُمْ ثَقَلَيْنِ أَوَّلُهُمَا كِتَابُ اللَّهِ فِيهِ الْهُدَى وَالنُّورُ [ هوحبل الله المتين من أتبعه كان على الـهدى ومن تركه كان على الضلالة ] فَخُذُوا بِكِتَابِ اللَّهِ وَاسْتَمْسِكُوا بِهِ . ( مسلم )
অর্থঃ হে লোকসকল! নিশ্চয়ই আমি একজন মানুষ, যখনই আমার রবের পক্ষ থেকে মৃত্যুদূত আসবে তখনই আমি তার আহবানে সাড়া দেব। আর আমি তোমাদের জন্য দু‘টি বস্ত্ত রেখে যাচ্ছি। তার একটি হল আল্লাহ্র কিতাব (অপরটি আমার সুন্নাত), যাতে রয়েছে হেদায়াত ও নূর। এটা আল্লাহর সুদৃঢ় রশি। যারাই এ কিতাব মেনে চলবে তারাই হেদায়াত পাবে। আর যারা তা ছেড়ে দেবে তারা পথভ্রষ্ট হবে। তোমরা আল্লাহ্র কিতাব সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর। [মুসলিম : ২৪০৮]
এ হাদীসে আল্লাহর কিতাব মেনে চলার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে।
আবু হুরাইরা (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
يَكُونُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ يَأْتُونَكُمْ مِنْ الْأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوا أَنْتُمْ وَلَا آبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لَا يُضِلُّونَكُمْ وَلَا يَفْتِنُونَكُمْ . ( مسلم )
অর্থঃ শেষ জমানায় এমন কিছু মিথ্যাবাদী প্রতারকের আবির্ভাব ঘটবে, যারা তোমাদের কাছে এমনসব হাদীস বর্ণনা করবে; যা তোমরা ও তোমাদের পূর্ব পুরুষ কোন দিন শোননি। অতএব তোমরা তাদের হতে দূরে থাক যাতে তারা তোমাদের গোমরাহী ও ফিতনায় ফেলতে না পারে। [মুকাদ্দামায়ে মুসলিম : ৬ ও ৭]
তৃতীয়ঃ বিদআত সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরামদের মতামত
১. ইবনে সা’দ রহ. আবু বকর সিদ্দিক (রা) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেনঃ উপস্থিত জনতা! নিশ্চয়ই আমি সুন্নাতের অনুসারী বিদআতপন্থী নই। যদি আমি ভাল কাজ করি তাহলে আমাকে সাহায্য করবে, আর যদি ভুল করি তাহলে সংশোধন করে দিবে। [আত-তাবাকাতুল কুবরা : ৩/১৩৬]
২. ওমর ইবনে খাত্তাব (রা) বলেন, তোমরা তর্কবীদদের থেকে দূরে থাক। কেননা তারা সুন্নাতের দুশমন এবং হাদীস অনুযায়ী আমলে অক্ষম। তারা মনগড়া মতামত বা রায় দিয়ে নিজেরাও গোমরাহ হয় অন্যকেও গোমারাহ করে। [সুনানে দারেমী : ১২১]
৩. আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রা) বলেন, তোমরা সুন্নাতের অনুসরণ কর, বিদআতের অনুসরণ করবে না। এটাই তোমাদের জন্য যথেষ্ট। কেননা সকল প্রকার বিদআতই ভ্রষ্টতা। [আল মুজামুল কাবীর : ৮৭৭]
চতুর্থঃ বিদআত সম্পর্কে তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীগণের অভিমত
১. ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ রহ. এক ব্যক্তির নিকট চিঠি লিখেছিলেন, তিনি তাতে বলেছিলেন, আমি তোমাকে আল্লাহ্র ভয়, তাঁর হুকুমের ব্যাপারে মধ্যপন্থা অবলম্বন, তাঁর নবীর সুন্নাতের অনুসরণ করা এবং কোন ব্যাপারে সুন্নাত প্রমাণিত হওয়ার পর তা ছেড়ে বিদআত গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার উপদেশ দিচ্ছি। [আবু দাউদ : ৪৬১২]
২. হাসান বসরী রহ. বলেন, আমল ব্যতীত কোন কথা ছহীহ হবে না, নিয়ত ব্যতীত কোন কথা ও আমল ছহীহ হবে না এবং সুন্নাতের অনুসরণ ব্যতীত কোন নিয়ত, আমল ও কথা ছহীহ হবে না। [শরহে উসূলে ই‘তিকাদে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ : ১/৬৩ নং ১৮]
৩. ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেন, তর্কবীদদের ব্যাপারে আমার ফায়সালা হল খেজুরের ডাল দ্বারা তাদের প্রহার কর, উটের উপর আরোহন করাও, প্রতিটি গোত্রের মধ্যে প্রদক্ষিণ করার কালে একথা বলতে থাক যে, এরা কুরআন ও সুন্নাত ছেড়ে তর্কশাস্ত্র গ্রহণ করেছে। তাই এটাই এর উপযুক্ত বদলা। [আল হিলইয়াহ লেখক আবু নাইম : ৯/১১৬]
৪. ইমাম মালেক রহ. বলেন, যে ইসলামে উত্তম মনে করে কোন বিদআত প্রচলন করল, সে যেন এ ধারণা পোষণ করল যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর রেসালতের দায়িত্বে খিয়ানত করেছেন। পক্ষান্তরে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ . অর্থঃ আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম। [মায়িদাঃ ৩]
অতএব এ যুগান্তকারী ঘোষণা কালে যে আমল দ্বীন হিসাবে স্বীকৃত ছিল না, তা আজও দ্বীন হতে পারে না। [আল-ইতিসাম, লেখক শাতেবী (র) : ১/৬৫]
৫. ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ. বলেন, সুন্নাতের উসূল হল, রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীগণ যা করেছেন তা গ্রহণ করা, তাদের অনুকরণ করা ও বিদআত পরিত্যাগ করা। কেননা সকল বিদআতই ভ্রষ্টতা। তাই ঝগড়া-বিবাদ পরিহার করা, প্রবৃত্তির অনুসারীদের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা, লৌকিকতা পরিহার করা এবং দ্বীনের ব্যাপারে বিতর্কে না জড়ানো উচিত। [শরহে উসূলে ই‘তিকাদে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ : ১/১৭৬]
পঞ্চমঃ বিদআত অগ্রহণযোগ্য হওয়ার কারণ
হহহহহহহহহহহহহহহহহহ১. একথা সত্য যে, মানুষের জ্ঞান অহীর জ্ঞান ব্যতীত অসম্পূর্ণ। নিশ্চয়ই বিদআত অহীর পরিপন্থী।
২. শরীয়ত পূর্ণাঙ্গ রূপে এসেছে, তাতে কম-বেশি করার কোন অবকাশ নেই।
৩. বিদআতপন্থী শরীয়তের বিরুদ্ধাচরণকারী।
৪. বিদআতপন্থী প্রবৃত্তির অনুসারী। কেননা জ্ঞান-বুদ্ধি যদি শরীয়ত সম্মত না হয়, তাহলে তা প্রবৃত্তির অনুসরণেই হয়।
৫. বিদআতপন্থী নিজেকে শরীয়ত প্রবর্তকের (আল্লাহ তা‘আলার) স্থলাভিষিক্ত বানিয়ে নেয়। কেননা শরীয়ত প্রবর্তক তা প্রবর্তন করে সে অনুযায়ী আমল করা অত্যাবশ্যক করেছেন আর বিদআত প্রবর্তক শরীয়তে নতুন কিছু প্রবর্তন করে তাই করতে চাচ্ছে। [আল-ইতিসাম, লেখক শাতেবী (র) : ১/৬১-৭০]
বিদআত সৃষ্টির অনেকগুলো কারণ রয়েছে। যেমন-
(১) অজ্ঞতা
আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَلاَ تَقفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفؤَاد كُلُّ أُؤُلَئِكَ كَانَ عَنهُ مَسْئُولاً . ( الإسراء : 36)
অর্থঃ যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই কর্ণ, চক্ষু, হৃদয় এর প্রত্যেকটির ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে। [ইসরাঃ ৩৬]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنهاَ وَ مَا بَطَنَ وَاْلإِثْمَ وَ الْبَغْيَ بَغَيْرِالْحَقِّ وَأَن تُشْرِكُواْ بِاللّهِ مَالَمْ يُنَزِّلُ بِهِ سٌلْطَانًا وَ اَنْ تَقٌولُواْ عَلَى اللهِ مَا لاَ تَعْلَمُونَ . ( الأعراف : 33)
অর্থঃ আপনি বলে দিন, প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা, পাপ, অসংগত বিরোধিতা এবং কোন কিছুকে আল্লাহর সাথে শরিক করা, যার স্বপক্ষে আল্লাহ কোন দলিল অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলা যে ব্যাপারে তোমাদের কোন জ্ঞান নেই, এ সবই আমার রব নিষিদ্ধ করেছেন। [আ‘রাফঃ ৩৩]
আব্দুল্লাহ্ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ
إِنَّ اللهَ لَا يَنْتَزِعُ الْعِلْمَ مِنَ النَّاسِ اِنْتِزَاعًا، وَلكِنْ يَقْبَضُ الْعُلَماَءَ فَيُرْفَعُ الْعِلْمُ مَعَهُمْ، وَيُبْقي فِيْ النَّاسِ رُؤُوْسًا جُهّالاً يَفْتُوْنَ بِغَيْرِ عِلْمٍ فَيَضَِلُّوْنَ وَ يُضِِلُّوْنَ . ( متفق عليه )
অর্থঃ আল্লাহ মানুষ থেকে (দ্বীনি) জ্ঞান ছিনিয়ে নেবেন না বরং আলেমগণকে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নিবেন, তাদের সাথে ইল্মও উঠে যাবে। দুনিয়াতে মুর্খ নেতারা বেঁচে থাকবে তারা (কুরআন-হাদীসের) ইল্ম ব্যতীত ফতোয়া দিবে। ফলে নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে, অন্যদেরও পথভ্রষ্ট করবে। [বুখারী : ৭৩০৭ ও মুসলিম : ২৬৭৩]
(২) প্রবৃত্তির অনুকরণ
প্রবৃত্তির অনুকরণ অত্যন্ত ভয়ঙ্কর যা মানুষকে বিদআত সৃষ্টিকারী ও আত্মপুজারী বানিয়ে দেয়।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
يَادَاودُ إِنّا جَعَلْنَاكَ خَلِيفَةً فِى الاَرْضِ فَاحْكٍََُِِِمِِِْْْ بَيْنَ النَّاسِ بِالْحَقِّ وَ لاَ تَتَّبِعِ الْهَوَى فَيُضِِِلَّكَ عَن سَبِيلِ اللهِ إِنَّ الَّذِينَ يَِضلُّوْنَ عَنْ سَبِيلِ اللهِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيدُ بِماَ نَسُواْ يَوْمَ الْحِساَبِ . (ص: 26)
অর্থঃ হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি। অতএব তুমি মানুষের মাঝে সুবিচার কর এবং প্রবৃত্তির (খেয়াল খুশির) অনুসরণ কর না। কেননা এটা তোমাকে আল্লাহ্র পথ হতে বিচ্যুত করবে। যারা আল্লাহ্র পথ পরিত্যাগ করে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। কেননা তারা বিচার দিবসকে ভুলে গেছে। [ছোয়াদঃ ২৬]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ عَنْ ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطًا . ( الكهف : 28)
অর্থঃ আপনি তার অনুসরণ করবেন না যার অন্তরকে আমি আমার স্মরণ থেকে অমনোযোগী করে দিয়েছি। সে আপন প্রবৃত্তির অনুসরণ করে ও তার কার্যকলাপ সীমা অতিক্রম করে। [কাহাফঃ ২৮]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
أَفَرَءَيتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَهَهُ هَوَاهُ وَأَضَلَّهُ اللهُ عَلَى عِلْمٍ وَخَتَمَ عَلَى سَمْعِهِ وَ قَلْبَهِ و جَعَلَ عَلَى بَصَرَهِ غِشوَةً فَمَن يَهْدِيهِ مِنْ بَعْدِ اللهِ أَفَلاَ تَذَكَّرُونَ . ( الجاثية : 23)
অর্থঃ আপনি কি ঐ ব্যক্তির দিকে লক্ষ্য করেছেন, যে প্রবৃত্তিকে নিজের ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে। আল্লাহ যথার্থই তাকে বিভ্রান্ত করেছেন, তার কর্ণ ও হৃদয়ে মোহর লাগিয়ে দিয়েছেন এবং তার চোখের উপরে রেখেছেন আবরণ। অতঃপর আল্লাহর পর কে তাকে পথ নির্দেশ করবে? তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? [জাছিয়াঃ ২৩]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَمَنْ أَضَلُّّّ مِمَّنِ اتَّبَع هَوَاهُ بِغَيْرِ هُدًى مِّّنَ اللهِ . ( القصص : 50)
অর্থঃ আল্লাহর পক্ষ হতে হেদায়াত ব্যতীত যে আত্মপুজারী হয়, তার চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে হতে পারে? [কাছাছঃ ৫০]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
إِن يَتَّبعُونَ إِلاَّ الظَنَّ وَمَا تَهْوَى اْلأَنْفُسُ وَلَقَدْ جَآءَهُمْ مِّن رَّبِّهُمْ الْـهُدى . ( النجم : 23)
অর্থঃ তারা তো অনুমান এবং নিজেদের প্রবৃত্তিরই অনুসরণ করে, অথচ তাদের নিকট আপন রবের পথ নির্দেশ এসেছে। [নাজমঃ ২৩]
(৩) সন্দিহান হওয়া
বিদআতপন্থী সন্দেহের বশবর্তী হয়ে বিদআতে জড়িয়ে পড়ে।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
هُوَ الَّذِي أَنْزَلَ عَلَيْكَ الْكِتاَبَ مِنْهُ أياتٌ مُّحْكَماتٌ هُنَّ أُمُّ الْكِتَاب وَأَخَرُ مُتَشَابِهاتٌ فَأَمّا الَّذِينَ فِى قُلُوبِهِمْ زَيَغٌ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَآءَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَآءَ تَأْوِيْلِهِ، وَ مَايَعْلَمُ تَأْوِيلَهُ إِلاَّ اللهُ وَالرَّاسِخُونَ فِى الْعِلْمِ يَقٌولٌوْنَ أمَنَّا بِهِ كُلٌّ مِّنْ عِند رَبّنَا وَمَا يَذَّكَّرُ إِلآَّ أُولُواْ الأَلْبَابِ . ( آل عمران : 7)
অর্থঃ তিনিই আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন যাতে সুস্পষ্ট ও অ^কাট্য আয়াতসমূহ রয়েছে। ওগুলো কিতাবের মূল আর কিছু আয়াত অস্পষ্ট। অতএব যাদের অন্তরে বক্রতা রয়েছে তারাই অশান্তি সৃষ্টি ও (ইচ্ছামত) ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের উদ্দেশ্যে অস্পষ্টের অনুসরণ করে। অথচ আল্লাহ ব্যতীত এর অর্থ কেউই জানে না। যারা জ্ঞানী তারা বলে, আমরা এতে বিশ্বাস করি। সবই আমাদের রবের নিকট হতে আগত। জ্ঞানীরা ব্যতীত কেউই উপদেশ গ্রহণ করে না। [আলে-ইমরানঃ ৭]
(৪) যুক্তির উপর নির্ভর করা
যে ব্যক্তি আকল বা যুক্তির উপর নির্ভর করে এবং কুরআন ও সুন্নাহ ছেড়ে দেয় অথবা কোন একটি ছেড়ে দেয়, সে পথভ্রষ্ট হয়ে যায়।
আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَ مَآ أتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوهُ وَمَا نَـهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُواْ وَاتَّقُواْ اللهَ إنَّ اللهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ . ( الحشر : 7)
অর্থঃ রাসূল তোমাদের জন্য যা কিছু নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ কর এবং যা হতে নিষেধ করেছেন তা হতে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর। [আল-হাশরঃ ৭]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِن وَ لاَ مُؤمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللهُ وَ رَسوُلُه أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمْ الْخيَرَةُ مِنْ أَمْرِِهِمْ وَمَن يَعْصِ اللهَ ورَسَولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلاَلاً مُّبِينًا . ( الأحزاب : 36)
অর্থঃ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল যদি কোন ব্যাপারে ফায়সালা করেন তখন কোন মুমিন পুরুষ বা নারীর জন্য নিজেদের ব্যাপারে (অন্য কোন) সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার থাকবে না। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তাঁর হুকুমের অবাধ্য হল সে সুস্পষ্ট পথভ্রষ্ট হয়ে গেল। [আহযাবঃ ৩৬]
(৫) অন্ধ অনুকরণ ও গোঁড়ামী
অধিকাংশ বিদআতপন্থী তাদের পূর্ব পুরুষ ও পীর-মাশায়েখদের তাকলীদ তথা অন্ধ অনুকরণ এবং নিজ মাজহাবের ব্যাপারে গোঁড়ামী করে থাকে।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ اتَّبِعُواْ مَآ أَنزَلَ اللهُ قاَلُواْ بَلْ نَتَّبِعُ مَآ أَلْفَيْنَا عَلَيهِ آبَاءَنَا . ( البقرة : 170)
অর্থঃ যখন তাদের বলা হয়, তোমরা আল্লাহর কিতাবের অনুসরণ কর; তখন তারা বলে, বরং আমরা তারই অনুসরণ করব যার উপর আমাদের পিতৃপুরুষদের পেয়েছি। [আল-বাকারাঃ ১৭০]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
بَلْ قاَلُوآْإِنّاوَجَدْنَآ آبَاءَنَا عَلَى أُمّـةٍ وَ اِنَّا عَلَى آثَارهِمْ مُّهْتَدُونَ . ( الزخرف : 22)
অর্থঃ বরং আমরা পূর্বপুরুষদের একটি মতাদর্শের উপর পেয়েছি এবং তাদের পথ ধরেই আমরা হেদায়াত প্রাপ্ত হব। [যুখরুফঃ ২২]
বিদআতপন্থীদের নিকট তাদের বিদআতী কর্মকান্ড আকর্ষণীয় করে দেয়া হয়।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
أَفَمَن زُيِّنَ لَهُ سُوءُ عَمَلِهِ فَرَءَاهُ حَسَنًا فَإِنَّ اللهَ يُضِلُّ مَن يَشَآء وَ يَهْديْ مَنْ يَّشَاءُ فَلاَ تَذْهَبْ نَفْسُكَ عَلَيْهِمْ حَسَرَاتٍ إِنَّ اللهَ عَلِيمٌ بِمَا يَصْنَعُونَ . ( الفاطر : 8)
অর্থঃ কাউকে যদি তার মন্দ কর্ম সুন্দর করে দেখানো হয় তখন সে ওটাকে উত্তম মনে করে। আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা গোমরাহ করেন এবং যাকে ইচ্ছা হেদায়াত দান করেন। অতএব আপনি তাদের জন্য আক্ষেপ করে নিজ প্রাণকে ধ্বংস করবেন না। তারা যা করে আল্লাহ্ সে সম্পর্কে সম্মক জ্ঞাত। [ফাতিরঃ ৮]
বিদআতপন্থীর পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
يَوْمَ تُقَلَّبُ وَجُوهُهُمْ فِىالنَّارِ يَقُولُونَ يَالَيْتَنَآ أَطَعْنَا اللهَ وأَطَعْنَا الرَّسُولا . وَقَالُواْ رَبَّنَا إنَّآ أَطَعْنَا سَادَتنَا وَكَبُرَاءَنَا فَأَضَلُّونَا السّبِيلا . رَبَّنَآ ءَاتِهِمْ ضِعْفَيْنِ مِنَ الْعَذاَبِ وَالْعَنْهُمْ لَعْنًا كَبِيْرًا . ( الأحزاب :66-68)
অর্থঃ যে দিন তাদের মুখমন্ডল অগ্নিতে উলট পালট করা হবে সে দিন তারা বলবে, হায়! আমরা যদি আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করতাম! তারা আরো বলবে, হে আমাদের রব! আমরা নিজ নেতা ও বড়দের আনুগত্য করেছিলাম এবং তারা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিল। হে আমাদের রব! তাদের দ্বিগুণ শাস্তি প্রদান করুন ও তাদের উপর লানত বর্ষণ করুন। [আহযাবঃ ৬৬-৬৮]
(৬) বিদআতপন্থীদের সংশ্রব ও তাদের সাথে উঠা বসা করা
বিদআতপন্থীদের সঙ্গ দেয়া ও তাদের সাথে উঠা বসা করার দ্বারাও সমাজে বিদআত প্রচার-প্রসার লাভ করে। আল্লাহ তা‘আলা বিদআতের অনুসারীদের সংশ্রবকে নিন্দনীয় বলে আখ্যায়িত করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَيَوْمَ يَعضُّ الظَّالِم عَلَى يَدَيْهِ يَقُولُ يَالَيْتَنِيْ اتّّخَذْتُ مَعَ الرَّسُولِِ سَبِيلاً . يَاوَيْلَتَي لَيْتَنِي لَمْ أَتَّخِذْ فُلَانًا خَلِيلاً . لَّقَدْ أَضَلّنِى عَنِ الذِّكْرِ بَعْدَ إِذْ جَآءَنِى وَكَان الشَّيْطَانُ لِلإِنْساَنِ خَذُولاً . ( الفرقان : 27-29)
অর্থঃ যালিমরা সে দিন নিজ হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে হায়! আমি যদি রাসূলের সাথে সৎপথ অবলম্বন করতাম। হায়! দুর্ভোগ আমার, আমি যদি অমুককে বন্ধু রূপে গ্রহণ না করতাম। আমার নিকট উপদেশ পৌঁছার পর সে আমাকে বিভ্রান্ত করেছিল । শয়তান তো মানুষের জন্য মহাপ্রতারক। [ফুরকানঃ ২৭-২৯]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَإِذَا رَأْيَتَ الذِّيْنَ يَخُوضُونَ فِي ءَايَاتِنَا فَأَعْرَضَ عَنْهُمْ حَتَّى يَخُوَضُواْ فِى حَدِيثٍ غَيْرِهِ وَإِمَّا يُنسِيَنَّكَ الشِّيْطَانُ فَلاَ تَقْعُدْ بَعْدَ الذِّكْرى مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ . ( الأنعام : 68)
অর্থঃ যখন আপনি দেখবেন লোকজন আমার আয়াতসমূহে দোষ-ক্রটি অনুসন্ধান করছে। তখন আপনি তাদের হতে দূরে সরে যাবেন, যতক্ষণ না তারা অন্য কোন প্রসঙ্গে নিমগ্ন হয়। শয়তান যদি এটা আপনাকে ভুলিয়ে দেয় তবে স্মরণ হওয়ার পর আর এ যালিমদের সাথে বসবেন না। [আনআমঃ ৬৮]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَقَدْ نَزَّل عَلَيْكُمْ فِى الْكِتَاب أَنْ إِذَا سَمِعْتُمْ ءَاياتِ اللهِِ يُكْفَرُبِهَا وَ يُسْتَهْزَأُ بِهَا فَلاَ تَقْعُدُواْ مَعَهُمْ حتَّى يَخُوضُوْا فِى حَديْث غَيْرِهِ إِنَّكُمْ إِذًا مِثْلَهُمْ إنَّّّ اللهَ جَامِعُ الْمُناَفِقِيْنَ وَالْكَافِرِيْنَ فِيْ جَهَنَّمَ جَمِيْعًا . ( النساء : 140)
অর্থঃ নিশ্চয়ই তিনি তোমাদের নির্দেশ করছেন যে, যখন তোমরা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতি কারো অবিশবাস ও উপহাস করার কথা শুনবে, তখন তাদের সাথে বসবে না যে পর্যন্ত না তারা অন্য কথায় লিপ্ত হয়। অন্যথায় তোমরাও তাদের সাদৃশ হয়ে যাবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মুনাফিক ও কাফিরদের জাহান্নামে একত্রিত করবেন। [নিসাঃ ১৪০]
রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
إِنَّمَا مَثَلُ الْجَلِيسِ الصَّالِحِ وَالْجَلِيسِ السَّوْءِ كَحَامِلِ الْمِسْكِ وَنَافِخِ الْكِيرِ فَحَامِلُ الْمِسْكِ إِمَّا أَنْ يُحْذِيَكَ وَإِمَّا أَنْ تَبْتَاعَ مِنْهُ وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ مِنْهُ رِيحًا طَيِّبَةً وَنَافِخُ الْكِيرِ إِمَّا أَنْ يُحْرِقَ ثِيَابَكَ وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ رِيحًا خَبِيثَةً . ( بخاري ومسلم )
অর্থঃ নিশ্চয়ই সৎসঙ্গ ও অসৎসঙ্গের দৃষ্টান্ত হল মিশ্ক আম্বর বহনকারী ও কামারের ন্যায়। অতঃপর মিশ্ক বহনকারী হয়ত তোমাকে কিছু দেবে অথবা তুমি তার থেকে কিছু কিনবে। আর তা না হলে কমপক্ষে তার থেকে সুঘ্রাণযুক্ত বাতাস পাবে। আর কামার হাপরে ফুৎকারের মাধ্যমে হয়ত তোমার কাপড় জ্বালিয়ে দেবে অথবা তার থেকে তুমি দূর্গন্ধময় বাতাস পাবে। [বুখারী : ৫৫৩৪ ও মুসলিম : ২৬২৮]
(৭) আলেমদের নিশ্চুপ থাকা ও সঠিক ইল্ম গোপন করা
এটা লোক সমাজে বিদআত ও ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টির অন্যতম কারণ।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُون مَآ أَنزَلْنَا منَ الْبَيّنَاتِ وَالْهُدى مِن بَعْدِ مَابَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِىالْكِتَابِ أُولئِكَ يَلْعَنُهُمُ الله ويلعنهم اللاَّعِنُونَ إِلاَّ الَّذِينَ تَابُواْ وَأَصْلَحُواْ و بَيَّنُواْ فَأُوْلئِكَ أَتُوبُ عَلَيْهِمْ وَأنَا التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ . ( البقرة : 159-160)
অর্থঃ আমি যে সকল ষ্পষ্ট নিদর্শন ও পথ-নির্দেশ অবতীর্ণ করেছি, তা মানুষের নিকট প্রকাশ করার পরও যারা ঐ সকল বিষয় গোপন করে, আল্লাহ তাদের উপর লানত করেন এবং অভিসম্পাতকারীগণও লানত করে থাকেন। কিন্তু তারাই লানত থেকে মুক্ত যারা তাওবা করেছে, নিজেদের সংশোধন করেছে ও সঠিক বিষয় প্রকাশ করেছে। আমি তাদের তাওবা কবুল করি। আমিই তওবা গ্রহণকারী ও দয়ালু। [বাকারাঃ ১৫৯-১৬০]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَآ أَنزَلَ اللهُ مِنَ الْكِتَابِ وَ يَشْتَرُونَ بَهِ ثَمَنًا قَلِيلاً أولئك مَا يَأْكُلُونَ فِى بُطُونِهِمْ إِلاَّ النَّارَ وَلاَ يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلاَ يُزَكِيهِمْ وَلَهُمْ عَذاَبٌ أَلِيْمُ . ( البقرة -174)
অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ যা কিতাবে অবতীর্ণ করেছেন তা যারা গোপন করে ও সামান্য মূল্যে বিক্রি করে, তারা স্ব-স্ব উদরে অগ্নি ছাড়া আর কিছুই ভক্ষণ করে না। কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদের পবিত্র করবেন না এবং এদের জন্যই রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। [বাকারাঃ ১৭৪]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَاِذْ أَخَذَ اللهُ مِيثَاقَ الَّذِينَ أُوتُواْ الْكِتَابَ لَتُبَيِنُنَّهُ لِلنَّاسِ وَلاَ تَكْتُمُونَهُ فَنَبَذُوْهُ وَرَآءَ ظُهُورِهِمْ وَاشْتَرَوْا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلاً فَبِئْسَ مَا يَشْتَرُونَ . ( آل عمران - 187)
অর্থঃ স্মরণ করুন, যখন আহলে কিতাবদের থেকে আল্লাহ্ অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন যে, তোমরা নিশ্চয়ই এটা মানুষের কাছে প্রকাশ করবে, গোপন করবে না। এরপরও তারা তা অগ্রাহ্য করে স্বল্প মূল্যে বিক্রি করলো। অতএব তারা যা ক্রয় করে তা কতই না নিকৃষ্ট। [আলে-ইমরানঃ ১৮৭]
আল্লাহ তা‘আলা এ উম্মতের একটি দলের উপর দাওয়াত ইলাল্লাহ, সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করা ওয়াজিব করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَلْتَكُنْ مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَ يَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُوْلئِكَ هُمُ المُفْلِحُـونَ . ( آل عمران : 104)
অর্থঃ তোমাদের মধ্যে এরূপ একটি দল থাকা উচিত যারা কল্যাণের দিকে আহবান করবে এবং সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করবে। এরাই সফলকাম। [আলে-ইমরানঃ ১০৪]
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أَضْعَفُ الْإِيمَانِ . ( مسلم )
অর্থঃ তোমাদের যে কেউ গর্হিত কাজ হতে দেখে, সে যেন তা হাত দ্বারা বাধা করে। যদি এ শক্তি না থাকে তাহলে যেন মুখ দ্বারা বাধা প্রদান করে, তাও যদি সম্ভব না হয় তাহলে যেন অন্তরে ঘৃণা করে। এটা ঈমানের নিম্নতম স্তর। [মুসলিম : ৪৯]
এ হাদীস দ্বারা একথাই প্রমাণিত হয় যে, প্রত্যেক মুসলিমের উপর নিজের ক্ষমতা ও শক্তি অনুযায়ী সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করা ওয়াজিব।
এছাড়াও আব্দুল্লাহ ইব্নে মাসউদ (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
مَا مِنْ نَبِيٍّ بَعَثَهُ اللَّهُ فِي أُمَّةٍ قَبْلِي إِلَّا كَانَ لَهُ مِنْ أُمَّتِهِ حَوَارِيُّونَ وَأَصْحَابٌ يَأْخُذُونَ بِسُنَّتِهِ وَيَقْتَدُونَ بِأَمْرِهِ ثُمَّ إِنَّهَا تَخْلُفُ مِنْ بَعْدِهِمْ خُلُوفٌ يَقُولُونَ مَا لَا يَفْعَلُونَ وَيَفْعَلُونَ مَا لَا يُؤْمَرُونَ فَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِيَدِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِلِسَانِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِقَلْبِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلَيْسَ وَرَاءَ ذَلِكَ مِنْ الْإِيمَانِ حَبَّةُ خَرْدَلٍ . ( مسلم )
অর্থঃ আমার পূর্বে যত নবী এসেছেন তাদের প্রত্যেকেরই স্বীয় উম্মতের মধ্য থেকে কিছু সাথী এবং ঘনিষ্ঠ লোক ছিল। যারা তাঁর সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরত এবং তাঁর হুকুম মেনে চলত। পরবর্তীতে এমন এক প্রজন্ম এল, যারা যা বলত তা করত না এবং তারা এমন কাজ করত যার নির্দেশ ছিল না। যে ব্যক্তি সর্বশক্তি দিয়ে তাদের প্রতিরোধ করবে সে মুমিন, যে মৌখিকভাবে প্রতিবাদ করবে সে মুমিন এবং যে অন্তরে ঘৃণা করবে সেও মুমিন। এর বাইরে কারো অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান নেই। [মুসলিম : ৫০]
আবু হুরাইরা (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ مَنْ سُئِلَ عَنْ عِلْمٍ عَلِمَهُ ثُمَّ كَتَمَهُ أُلْجِمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِلِجَامٍ مِنْ نَارٍ ( ترمذي , أبو داود و ابن ماجة )
অর্থঃ যদি কাউকে এমন বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয় যা সে জানে অতঃপর সে তা গোপন করে, তাহলে তাকে কিয়ামতের দিন আগুনের লাগাম পরানো হবে। [তিরমিযী :২৬৪৯ ও আবু দাউদ : ৩৬৫৮ ইবনে মাজাহ: ২৬৬]
(৮) কাফেরদের সাদৃশ অবলম্বন ও তাদের অনুসরণ করা
এটা মুসলিমদের মাঝে বিদআত ছড়ানোর বড় কারণ। এ বিষয়টি আবু ওয়াকেদ লাইছি রহ. বর্ণিত হাদীস দ্বারা বুঝা যায়। তিনি বলেন, আমরা রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে হুনাইনের দিকে রওয়ানা হলাম। আমরা বিগত দিনের কর্মকান্ড (কুফুরী) নিয়ে আলোচনা করছিলাম। কেননা তারা মক্কা বিজয়ের দিন মুসলমান হয়েছিলেন। তিনি বললেন, একটি গাছের সামনে দিয়ে অতিক্রম করতে গিয়ে আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের জন্য একটি ‘‘জাতে আনওয়াত’’ (এক প্রকার গাছ মুশরিকরা যার পূজা করত) এর ব্যবস্থা করে দিন যেমনটি তাদের অর্থাৎ কাফেরদের জন্য রয়েছে। তাদের একটি বরই গাছ ছিল যার পার্শ্বে তারা নীরবে বসে উপাসনা করত এবং তাতে তাদের যুদ্ধের অস্ত্র ঝুলিয়ে রাখত। তারা এটাকে ‘‘জাতু আনওয়াত’’ বলত। যখন আমরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে একথা বললাম, তখন তিনি বললেন, আল্লাহু আকবার! তোমরা এমন কথা বলছ, যেমন বণী ইসরাইলের লোকেরা মূসা (আ) কে বলেছিল।
اجْعَل لَّنا إِلـهًاكَمَا لَهُمْ ءَالِهَةٌ قَالَ إِنَّكُمْ قَوْمٌ تَجْهَلُونَ . ( الأعراف : 138)
‘‘আপনি আমাদের জন্য মাবুদ নির্বাচন করুন, যেমন তাদের জন্য অনেক মা‘বুদ রয়েছে। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই তোমরা তো মূর্খ জাতি।’’ [আ‘রাফ : ১৩৮]
তোমরা অবশ্যই পূর্ববর্তী লোকদের পথ অবলম্বন করবে। [তিরমিযী : ২১৮০]
এ হাদীস থেকে সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায়, যেমনি কাফিরদের সাদৃশ বনী ইসরাইলদের উপরোক্ত অসংগত প্রার্থনা করতে উৎসাহিত করেছিল তেমনি সাহাবীদেরকেও রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে আল্লাহ ছাড়া অন্যের দ্বারা বরকত হাসিলের উদ্দেশ্যে এমন একটি গাছের প্রার্থনা করতে উৎসাহিত করেছিল। এভাবেই অধিকাংশ মানুষ কাফিরদের অনুসরণ বা সাদৃশ অবলম্বন করতে গিয়ে বিদআত ও শিরকে লিপ্ত হয়। যথা- মিলাদ মাহফিল, জানাযা সংক্রান্ত বিদআত, কবরের উপর বিল্ডিং নির্মাণ ইত্যাদি। নিঃসন্দেহে এ সকল বিষয় বা পূর্ববর্তীদের অনুসরণ প্রবৃত্তি পূজা ও বিদআতেরই অন্তর্ভুক্ত।
এ বিষয়টি আবু সাঈদ খুদরী (রা) বর্ণিত হাদীস দ্বারা আরো স্পষ্ট হয়। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
لَتَتْبَعُنَّ سَنَنَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ شِبْرًا شِبْرًا وَذِرَاعًا بِذِرَاعٍ حَتَّى لَوْ دَخَلُوا جُحْرَ ضَبٍّ تَبِعْتُمُوهُمْ قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى قَالَ فَمَنْ؟ ( متفق عليه )
অর্থঃ নিশ্চয়ই তোমরা পূর্ববর্তী লোকদের রীতিনীতির পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুকরণ করবে। এমনকি তারা যদি গুইসাপের গর্তে প্রবেশ করে থাকে, তাহলে তোমরাও তা করবে। আমরা বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! ইহুদী-খৃষ্টানদের? তিনি বলেন, তাদের ব্যতীত আর কাদের? [বুখারী : ৭৩২০ ও মুসলিম : ২৬৬৯]
ইমাম নববী রহ. বলেন, ‘‘ السَنَنُ ’’ অর্থ রাস্তা। হাদীসের শব্দ شبر، ذراع و جحر الضب তথা বিঘত, হাত ও গুইসাপের গর্তে প্রবেশ দ্বারা এ উম্মতের পুর্বেকার লোকদের সাথে শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপ ও অন্যায়ের মাঝে হুবহু মিল থাকার উপমা দেয়া হয়েছে, কুফরীতে মিল থাকার উপমা নয়। এ হাদীসের মাধ্যমে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মু‘জিযা বাস্তবায়িত হল। কেননা তিনি যে সংবাদ দিয়ে গেছেন, তা আজ সংঘটিত হচ্ছে।
প্রকাশ থাকে যে, বিঘত, হাত, রাস্তা ও গর্তে প্রবেশ এ সবই শরীয়ত কর্তৃক নিষিদ্ধ ও নিন্দিত বিষয়ে তাদের (কাফেরদের) অনুসরণ-অনুকরণ করার কারণে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপমা হিসেবে তুলে ধরেছেন, অথচ তিনি অমুসলিমদের সাদৃশ অবলম্বন করতে কঠোর ভাবে নিষেধ করেছেন।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
بُعٍثْتُ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ بِالسَّيْفِ حَتّى يَعْبُدَ اللهَ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه، وَجَعَلَ رِزْقِيْ تَحْتَ ظِلِّ رَمْحِيْ وَجَعَلَ الذِلُّ وَالصِّغَارَ عَلى مَنْ خَالَفَ أَمْرِيْ، وَمَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ .
( أحمد )
অর্থঃআমি কিয়ামতের পূর্বে তরবারীসহ প্রেরিত হয়েছি যাতে (মানুষ) এক আল্লাহর ইবাদত করে যার কোন অংশিদার নেই। আর তিনি আমার জীবিকাকে বর্শার ছাঁয়ার নিচে রেখেছেন। যারা আমার দ্বীনের পরিপন্থী কাজ করবে তাদের জন্য রেখেছেন অপমান ও লাঞ্ছনা। আর যারা কোন জাতির সাদৃশ অবলম্বন করবে তারা তাদেরই অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে। [আহমদ : ২/৫০]
(৯) দুর্বল ও বানোয়াট হাদীসের উপর নির্ভর করা
এ ধরণের হাদীসের উপর নির্ভর করার ফলে অধিকাংশ বিদআত সৃষ্টি হয় ও তার প্রচার-প্রসার ঘটে। অধিকাংশ বিদআতপন্থীই অনির্ভরযোগ্য, দুর্বল ও মিথ্যা হাদীসের উপর নির্ভর করে। তারা এমন হাদীসের উপর নির্ভরশীল যা হাদীস বিশারদগণের নিকট অগ্রহণযোগ্য। তারা সহীহ হাদীস পরিত্যাগ করে। যার ফলে অনিবার্য ক্ষতি, ধ্বংস ও বিপদে পতিত হয়। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া সৎকর্ম সম্পাদন ও অসৎকর্ম পরিত্যাগ সম্ভব নয়। [ফতোয়া ইবনে তাইমিয়াঃ ২২নং খন্ড; ৩৬১-৩৬৩, ইতিসামঃ আল্লামা শাতেবী ১মঃ ২৮৭-২৯৪]
(১০) বাড়াবাড়ি ও সীমালংঘন
এটাও বিদআত প্রসারের অন্যতম কারণ এবং শিরকে লিপ্ত হওয়ারও কারণ। কেননা আদম (আ) এর পরবর্তী ১০ যুগ পর্যন্ত লোকজন তাওহীদ ও আল্লাহ তা‘আলার একত্ববাদে বিশ্বাসী ছিল। তারপর থেকে লোকজন তৎকালীন নেক্কার ব্যক্তিবর্গের দিকে ঝুঁকে গিয়ে তাদের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি ও সীমালংঘন করতে করতে এক পর্যায়ে আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদের ইবাদত শুরু করে দেয়। এরপর আল্লাহ তা‘আলা তাওহীদের দিকে আহবান কল্পে নূহ (আ) কে প্রেরণ করেন, এরই সূত্র ধরে তাওহীদের বানী নিয়ে নবী-রাসূল (আ) প্রেরণের ধারাবাহিকতা শুরু হয়।
সীমালংঘন ব্যক্তি পর্যায়েও হতে পারে। যথা-ইমাম ও অলীদের নিষ্পাপ মনে করা এবং তাদেরকে প্রাপ্য মর্যাদার চেয়ে উঁচু মর্যাদায় আসীন করা। এ ধরণের বাড়াবাড়ির এক পর্যায়ে তাদের ইবাদতও করা হয়।
সীমালংঘন দ্বীনের মাঝেও হতে পারে। যথা-আল্লাহর দেয়া বিধানে অতিরঞ্জন অথবা কোন বিষয়ে কঠোরতা কিংবা অন্যায়ভাবে কাউকে কাফির বলে আখ্যায়িত করা।
সীমালংঘন বলতে বুঝায়ঃ বিশ্বাস ও আমলের ক্ষেত্রে সীমা অতিক্রম করা। এটা কারো প্রশংসা বা দূর্নাম বর্ণনার ক্ষেত্রে অত্যধিক বাড়াবাড়ির ফলে হয়ে থাকে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা এ সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন করতে গিয়ে আহলে কিতাবদের উদ্দেশ্য করে বলেনঃ
يَااَهْلَ الكِتَابِ لاَ تَغْلُوأ فِى دِينِكُمْ . ( النساء : 171)
অর্থঃ হে আহলে কিতাবরা! তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করো না। [নিসাঃ ১৭১]
তেমনি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও দ্বীনের ব্যাপারে সীমালংঘন করতে নিষেধ করেছেন।
ইবনে আববাস (রা) বর্ণনা করেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
وَإِيَّاكُمْ وَالْغُلُوَّ فِي الدِّينِ فَإِنَّمَا أَهْلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ الْغُلُوُّ فِِِي الدِّينِ . ( نسائي )
অর্থঃ তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে সীমালংঘন থেকে বিরত থাক, কেননা তোমাদের পূর্ববতী লোকেরা দ্বীনের ব্যাপারে সীমালংঘন করার ফলে ধ্বংস হয়েছে। [নাসাঈ : ৫/২৬৮]
এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, দ্বীনের মধ্যে সীমালংঘনই শিরক ও বিদআত সৃষ্টি এবং কুপ্রবৃত্তির অনুসরণের অন্যতম কারণ।
দ্বীনের মধ্যে সীমালংঘনের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সতর্কবাণী উচ্চারণ করতঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
لَا تُطْرُونِي كَمَا أَطْرَتْ النَّصَارَى ابْنَ مَرْيَمَ فَإِنَّمَا أَنَا عَبْدُهُ فَقُولُوا عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ . ( بخاري )
অর্থঃ তোমরা আমাকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না যেমনিভাবে খ্রীষ্টানরা ঈসা ইবনে মারিয়াম (আ) কে নিয়ে বাড়াবাড়ি করেছিল। আমি আল্লাহর বান্দা, তাই আমাকে আল্লাহর বান্দা ও রাসূল বলবে। [বুখারী : ৩৪৪৫]
(১) অজ্ঞতা
আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَلاَ تَقفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفؤَاد كُلُّ أُؤُلَئِكَ كَانَ عَنهُ مَسْئُولاً . ( الإسراء : 36)
অর্থঃ যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই কর্ণ, চক্ষু, হৃদয় এর প্রত্যেকটির ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে। [ইসরাঃ ৩৬]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنهاَ وَ مَا بَطَنَ وَاْلإِثْمَ وَ الْبَغْيَ بَغَيْرِالْحَقِّ وَأَن تُشْرِكُواْ بِاللّهِ مَالَمْ يُنَزِّلُ بِهِ سٌلْطَانًا وَ اَنْ تَقٌولُواْ عَلَى اللهِ مَا لاَ تَعْلَمُونَ . ( الأعراف : 33)
অর্থঃ আপনি বলে দিন, প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা, পাপ, অসংগত বিরোধিতা এবং কোন কিছুকে আল্লাহর সাথে শরিক করা, যার স্বপক্ষে আল্লাহ কোন দলিল অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলা যে ব্যাপারে তোমাদের কোন জ্ঞান নেই, এ সবই আমার রব নিষিদ্ধ করেছেন। [আ‘রাফঃ ৩৩]
আব্দুল্লাহ্ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ
إِنَّ اللهَ لَا يَنْتَزِعُ الْعِلْمَ مِنَ النَّاسِ اِنْتِزَاعًا، وَلكِنْ يَقْبَضُ الْعُلَماَءَ فَيُرْفَعُ الْعِلْمُ مَعَهُمْ، وَيُبْقي فِيْ النَّاسِ رُؤُوْسًا جُهّالاً يَفْتُوْنَ بِغَيْرِ عِلْمٍ فَيَضَِلُّوْنَ وَ يُضِِلُّوْنَ . ( متفق عليه )
অর্থঃ আল্লাহ মানুষ থেকে (দ্বীনি) জ্ঞান ছিনিয়ে নেবেন না বরং আলেমগণকে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নিবেন, তাদের সাথে ইল্মও উঠে যাবে। দুনিয়াতে মুর্খ নেতারা বেঁচে থাকবে তারা (কুরআন-হাদীসের) ইল্ম ব্যতীত ফতোয়া দিবে। ফলে নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে, অন্যদেরও পথভ্রষ্ট করবে। [বুখারী : ৭৩০৭ ও মুসলিম : ২৬৭৩]
(২) প্রবৃত্তির অনুকরণ
প্রবৃত্তির অনুকরণ অত্যন্ত ভয়ঙ্কর যা মানুষকে বিদআত সৃষ্টিকারী ও আত্মপুজারী বানিয়ে দেয়।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
يَادَاودُ إِنّا جَعَلْنَاكَ خَلِيفَةً فِى الاَرْضِ فَاحْكٍََُِِِمِِِْْْ بَيْنَ النَّاسِ بِالْحَقِّ وَ لاَ تَتَّبِعِ الْهَوَى فَيُضِِِلَّكَ عَن سَبِيلِ اللهِ إِنَّ الَّذِينَ يَِضلُّوْنَ عَنْ سَبِيلِ اللهِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيدُ بِماَ نَسُواْ يَوْمَ الْحِساَبِ . (ص: 26)
অর্থঃ হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি। অতএব তুমি মানুষের মাঝে সুবিচার কর এবং প্রবৃত্তির (খেয়াল খুশির) অনুসরণ কর না। কেননা এটা তোমাকে আল্লাহ্র পথ হতে বিচ্যুত করবে। যারা আল্লাহ্র পথ পরিত্যাগ করে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। কেননা তারা বিচার দিবসকে ভুলে গেছে। [ছোয়াদঃ ২৬]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ عَنْ ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطًا . ( الكهف : 28)
অর্থঃ আপনি তার অনুসরণ করবেন না যার অন্তরকে আমি আমার স্মরণ থেকে অমনোযোগী করে দিয়েছি। সে আপন প্রবৃত্তির অনুসরণ করে ও তার কার্যকলাপ সীমা অতিক্রম করে। [কাহাফঃ ২৮]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
أَفَرَءَيتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَهَهُ هَوَاهُ وَأَضَلَّهُ اللهُ عَلَى عِلْمٍ وَخَتَمَ عَلَى سَمْعِهِ وَ قَلْبَهِ و جَعَلَ عَلَى بَصَرَهِ غِشوَةً فَمَن يَهْدِيهِ مِنْ بَعْدِ اللهِ أَفَلاَ تَذَكَّرُونَ . ( الجاثية : 23)
অর্থঃ আপনি কি ঐ ব্যক্তির দিকে লক্ষ্য করেছেন, যে প্রবৃত্তিকে নিজের ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে। আল্লাহ যথার্থই তাকে বিভ্রান্ত করেছেন, তার কর্ণ ও হৃদয়ে মোহর লাগিয়ে দিয়েছেন এবং তার চোখের উপরে রেখেছেন আবরণ। অতঃপর আল্লাহর পর কে তাকে পথ নির্দেশ করবে? তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? [জাছিয়াঃ ২৩]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَمَنْ أَضَلُّّّ مِمَّنِ اتَّبَع هَوَاهُ بِغَيْرِ هُدًى مِّّنَ اللهِ . ( القصص : 50)
অর্থঃ আল্লাহর পক্ষ হতে হেদায়াত ব্যতীত যে আত্মপুজারী হয়, তার চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে হতে পারে? [কাছাছঃ ৫০]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
إِن يَتَّبعُونَ إِلاَّ الظَنَّ وَمَا تَهْوَى اْلأَنْفُسُ وَلَقَدْ جَآءَهُمْ مِّن رَّبِّهُمْ الْـهُدى . ( النجم : 23)
অর্থঃ তারা তো অনুমান এবং নিজেদের প্রবৃত্তিরই অনুসরণ করে, অথচ তাদের নিকট আপন রবের পথ নির্দেশ এসেছে। [নাজমঃ ২৩]
(৩) সন্দিহান হওয়া
বিদআতপন্থী সন্দেহের বশবর্তী হয়ে বিদআতে জড়িয়ে পড়ে।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
هُوَ الَّذِي أَنْزَلَ عَلَيْكَ الْكِتاَبَ مِنْهُ أياتٌ مُّحْكَماتٌ هُنَّ أُمُّ الْكِتَاب وَأَخَرُ مُتَشَابِهاتٌ فَأَمّا الَّذِينَ فِى قُلُوبِهِمْ زَيَغٌ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَآءَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَآءَ تَأْوِيْلِهِ، وَ مَايَعْلَمُ تَأْوِيلَهُ إِلاَّ اللهُ وَالرَّاسِخُونَ فِى الْعِلْمِ يَقٌولٌوْنَ أمَنَّا بِهِ كُلٌّ مِّنْ عِند رَبّنَا وَمَا يَذَّكَّرُ إِلآَّ أُولُواْ الأَلْبَابِ . ( آل عمران : 7)
অর্থঃ তিনিই আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন যাতে সুস্পষ্ট ও অ^কাট্য আয়াতসমূহ রয়েছে। ওগুলো কিতাবের মূল আর কিছু আয়াত অস্পষ্ট। অতএব যাদের অন্তরে বক্রতা রয়েছে তারাই অশান্তি সৃষ্টি ও (ইচ্ছামত) ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের উদ্দেশ্যে অস্পষ্টের অনুসরণ করে। অথচ আল্লাহ ব্যতীত এর অর্থ কেউই জানে না। যারা জ্ঞানী তারা বলে, আমরা এতে বিশ্বাস করি। সবই আমাদের রবের নিকট হতে আগত। জ্ঞানীরা ব্যতীত কেউই উপদেশ গ্রহণ করে না। [আলে-ইমরানঃ ৭]
(৪) যুক্তির উপর নির্ভর করা
যে ব্যক্তি আকল বা যুক্তির উপর নির্ভর করে এবং কুরআন ও সুন্নাহ ছেড়ে দেয় অথবা কোন একটি ছেড়ে দেয়, সে পথভ্রষ্ট হয়ে যায়।
আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَ مَآ أتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوهُ وَمَا نَـهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُواْ وَاتَّقُواْ اللهَ إنَّ اللهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ . ( الحشر : 7)
অর্থঃ রাসূল তোমাদের জন্য যা কিছু নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ কর এবং যা হতে নিষেধ করেছেন তা হতে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর। [আল-হাশরঃ ৭]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِن وَ لاَ مُؤمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللهُ وَ رَسوُلُه أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمْ الْخيَرَةُ مِنْ أَمْرِِهِمْ وَمَن يَعْصِ اللهَ ورَسَولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلاَلاً مُّبِينًا . ( الأحزاب : 36)
অর্থঃ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল যদি কোন ব্যাপারে ফায়সালা করেন তখন কোন মুমিন পুরুষ বা নারীর জন্য নিজেদের ব্যাপারে (অন্য কোন) সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার থাকবে না। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তাঁর হুকুমের অবাধ্য হল সে সুস্পষ্ট পথভ্রষ্ট হয়ে গেল। [আহযাবঃ ৩৬]
(৫) অন্ধ অনুকরণ ও গোঁড়ামী
অধিকাংশ বিদআতপন্থী তাদের পূর্ব পুরুষ ও পীর-মাশায়েখদের তাকলীদ তথা অন্ধ অনুকরণ এবং নিজ মাজহাবের ব্যাপারে গোঁড়ামী করে থাকে।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ اتَّبِعُواْ مَآ أَنزَلَ اللهُ قاَلُواْ بَلْ نَتَّبِعُ مَآ أَلْفَيْنَا عَلَيهِ آبَاءَنَا . ( البقرة : 170)
অর্থঃ যখন তাদের বলা হয়, তোমরা আল্লাহর কিতাবের অনুসরণ কর; তখন তারা বলে, বরং আমরা তারই অনুসরণ করব যার উপর আমাদের পিতৃপুরুষদের পেয়েছি। [আল-বাকারাঃ ১৭০]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
بَلْ قاَلُوآْإِنّاوَجَدْنَآ آبَاءَنَا عَلَى أُمّـةٍ وَ اِنَّا عَلَى آثَارهِمْ مُّهْتَدُونَ . ( الزخرف : 22)
অর্থঃ বরং আমরা পূর্বপুরুষদের একটি মতাদর্শের উপর পেয়েছি এবং তাদের পথ ধরেই আমরা হেদায়াত প্রাপ্ত হব। [যুখরুফঃ ২২]
বিদআতপন্থীদের নিকট তাদের বিদআতী কর্মকান্ড আকর্ষণীয় করে দেয়া হয়।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
أَفَمَن زُيِّنَ لَهُ سُوءُ عَمَلِهِ فَرَءَاهُ حَسَنًا فَإِنَّ اللهَ يُضِلُّ مَن يَشَآء وَ يَهْديْ مَنْ يَّشَاءُ فَلاَ تَذْهَبْ نَفْسُكَ عَلَيْهِمْ حَسَرَاتٍ إِنَّ اللهَ عَلِيمٌ بِمَا يَصْنَعُونَ . ( الفاطر : 8)
অর্থঃ কাউকে যদি তার মন্দ কর্ম সুন্দর করে দেখানো হয় তখন সে ওটাকে উত্তম মনে করে। আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা গোমরাহ করেন এবং যাকে ইচ্ছা হেদায়াত দান করেন। অতএব আপনি তাদের জন্য আক্ষেপ করে নিজ প্রাণকে ধ্বংস করবেন না। তারা যা করে আল্লাহ্ সে সম্পর্কে সম্মক জ্ঞাত। [ফাতিরঃ ৮]
বিদআতপন্থীর পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
يَوْمَ تُقَلَّبُ وَجُوهُهُمْ فِىالنَّارِ يَقُولُونَ يَالَيْتَنَآ أَطَعْنَا اللهَ وأَطَعْنَا الرَّسُولا . وَقَالُواْ رَبَّنَا إنَّآ أَطَعْنَا سَادَتنَا وَكَبُرَاءَنَا فَأَضَلُّونَا السّبِيلا . رَبَّنَآ ءَاتِهِمْ ضِعْفَيْنِ مِنَ الْعَذاَبِ وَالْعَنْهُمْ لَعْنًا كَبِيْرًا . ( الأحزاب :66-68)
অর্থঃ যে দিন তাদের মুখমন্ডল অগ্নিতে উলট পালট করা হবে সে দিন তারা বলবে, হায়! আমরা যদি আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করতাম! তারা আরো বলবে, হে আমাদের রব! আমরা নিজ নেতা ও বড়দের আনুগত্য করেছিলাম এবং তারা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিল। হে আমাদের রব! তাদের দ্বিগুণ শাস্তি প্রদান করুন ও তাদের উপর লানত বর্ষণ করুন। [আহযাবঃ ৬৬-৬৮]
(৬) বিদআতপন্থীদের সংশ্রব ও তাদের সাথে উঠা বসা করা
বিদআতপন্থীদের সঙ্গ দেয়া ও তাদের সাথে উঠা বসা করার দ্বারাও সমাজে বিদআত প্রচার-প্রসার লাভ করে। আল্লাহ তা‘আলা বিদআতের অনুসারীদের সংশ্রবকে নিন্দনীয় বলে আখ্যায়িত করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَيَوْمَ يَعضُّ الظَّالِم عَلَى يَدَيْهِ يَقُولُ يَالَيْتَنِيْ اتّّخَذْتُ مَعَ الرَّسُولِِ سَبِيلاً . يَاوَيْلَتَي لَيْتَنِي لَمْ أَتَّخِذْ فُلَانًا خَلِيلاً . لَّقَدْ أَضَلّنِى عَنِ الذِّكْرِ بَعْدَ إِذْ جَآءَنِى وَكَان الشَّيْطَانُ لِلإِنْساَنِ خَذُولاً . ( الفرقان : 27-29)
অর্থঃ যালিমরা সে দিন নিজ হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে হায়! আমি যদি রাসূলের সাথে সৎপথ অবলম্বন করতাম। হায়! দুর্ভোগ আমার, আমি যদি অমুককে বন্ধু রূপে গ্রহণ না করতাম। আমার নিকট উপদেশ পৌঁছার পর সে আমাকে বিভ্রান্ত করেছিল । শয়তান তো মানুষের জন্য মহাপ্রতারক। [ফুরকানঃ ২৭-২৯]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَإِذَا رَأْيَتَ الذِّيْنَ يَخُوضُونَ فِي ءَايَاتِنَا فَأَعْرَضَ عَنْهُمْ حَتَّى يَخُوَضُواْ فِى حَدِيثٍ غَيْرِهِ وَإِمَّا يُنسِيَنَّكَ الشِّيْطَانُ فَلاَ تَقْعُدْ بَعْدَ الذِّكْرى مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ . ( الأنعام : 68)
অর্থঃ যখন আপনি দেখবেন লোকজন আমার আয়াতসমূহে দোষ-ক্রটি অনুসন্ধান করছে। তখন আপনি তাদের হতে দূরে সরে যাবেন, যতক্ষণ না তারা অন্য কোন প্রসঙ্গে নিমগ্ন হয়। শয়তান যদি এটা আপনাকে ভুলিয়ে দেয় তবে স্মরণ হওয়ার পর আর এ যালিমদের সাথে বসবেন না। [আনআমঃ ৬৮]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَقَدْ نَزَّل عَلَيْكُمْ فِى الْكِتَاب أَنْ إِذَا سَمِعْتُمْ ءَاياتِ اللهِِ يُكْفَرُبِهَا وَ يُسْتَهْزَأُ بِهَا فَلاَ تَقْعُدُواْ مَعَهُمْ حتَّى يَخُوضُوْا فِى حَديْث غَيْرِهِ إِنَّكُمْ إِذًا مِثْلَهُمْ إنَّّّ اللهَ جَامِعُ الْمُناَفِقِيْنَ وَالْكَافِرِيْنَ فِيْ جَهَنَّمَ جَمِيْعًا . ( النساء : 140)
অর্থঃ নিশ্চয়ই তিনি তোমাদের নির্দেশ করছেন যে, যখন তোমরা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতি কারো অবিশবাস ও উপহাস করার কথা শুনবে, তখন তাদের সাথে বসবে না যে পর্যন্ত না তারা অন্য কথায় লিপ্ত হয়। অন্যথায় তোমরাও তাদের সাদৃশ হয়ে যাবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মুনাফিক ও কাফিরদের জাহান্নামে একত্রিত করবেন। [নিসাঃ ১৪০]
রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
إِنَّمَا مَثَلُ الْجَلِيسِ الصَّالِحِ وَالْجَلِيسِ السَّوْءِ كَحَامِلِ الْمِسْكِ وَنَافِخِ الْكِيرِ فَحَامِلُ الْمِسْكِ إِمَّا أَنْ يُحْذِيَكَ وَإِمَّا أَنْ تَبْتَاعَ مِنْهُ وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ مِنْهُ رِيحًا طَيِّبَةً وَنَافِخُ الْكِيرِ إِمَّا أَنْ يُحْرِقَ ثِيَابَكَ وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ رِيحًا خَبِيثَةً . ( بخاري ومسلم )
অর্থঃ নিশ্চয়ই সৎসঙ্গ ও অসৎসঙ্গের দৃষ্টান্ত হল মিশ্ক আম্বর বহনকারী ও কামারের ন্যায়। অতঃপর মিশ্ক বহনকারী হয়ত তোমাকে কিছু দেবে অথবা তুমি তার থেকে কিছু কিনবে। আর তা না হলে কমপক্ষে তার থেকে সুঘ্রাণযুক্ত বাতাস পাবে। আর কামার হাপরে ফুৎকারের মাধ্যমে হয়ত তোমার কাপড় জ্বালিয়ে দেবে অথবা তার থেকে তুমি দূর্গন্ধময় বাতাস পাবে। [বুখারী : ৫৫৩৪ ও মুসলিম : ২৬২৮]
(৭) আলেমদের নিশ্চুপ থাকা ও সঠিক ইল্ম গোপন করা
এটা লোক সমাজে বিদআত ও ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টির অন্যতম কারণ।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُون مَآ أَنزَلْنَا منَ الْبَيّنَاتِ وَالْهُدى مِن بَعْدِ مَابَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِىالْكِتَابِ أُولئِكَ يَلْعَنُهُمُ الله ويلعنهم اللاَّعِنُونَ إِلاَّ الَّذِينَ تَابُواْ وَأَصْلَحُواْ و بَيَّنُواْ فَأُوْلئِكَ أَتُوبُ عَلَيْهِمْ وَأنَا التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ . ( البقرة : 159-160)
অর্থঃ আমি যে সকল ষ্পষ্ট নিদর্শন ও পথ-নির্দেশ অবতীর্ণ করেছি, তা মানুষের নিকট প্রকাশ করার পরও যারা ঐ সকল বিষয় গোপন করে, আল্লাহ তাদের উপর লানত করেন এবং অভিসম্পাতকারীগণও লানত করে থাকেন। কিন্তু তারাই লানত থেকে মুক্ত যারা তাওবা করেছে, নিজেদের সংশোধন করেছে ও সঠিক বিষয় প্রকাশ করেছে। আমি তাদের তাওবা কবুল করি। আমিই তওবা গ্রহণকারী ও দয়ালু। [বাকারাঃ ১৫৯-১৬০]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَآ أَنزَلَ اللهُ مِنَ الْكِتَابِ وَ يَشْتَرُونَ بَهِ ثَمَنًا قَلِيلاً أولئك مَا يَأْكُلُونَ فِى بُطُونِهِمْ إِلاَّ النَّارَ وَلاَ يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلاَ يُزَكِيهِمْ وَلَهُمْ عَذاَبٌ أَلِيْمُ . ( البقرة -174)
অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ যা কিতাবে অবতীর্ণ করেছেন তা যারা গোপন করে ও সামান্য মূল্যে বিক্রি করে, তারা স্ব-স্ব উদরে অগ্নি ছাড়া আর কিছুই ভক্ষণ করে না। কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদের পবিত্র করবেন না এবং এদের জন্যই রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। [বাকারাঃ ১৭৪]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَاِذْ أَخَذَ اللهُ مِيثَاقَ الَّذِينَ أُوتُواْ الْكِتَابَ لَتُبَيِنُنَّهُ لِلنَّاسِ وَلاَ تَكْتُمُونَهُ فَنَبَذُوْهُ وَرَآءَ ظُهُورِهِمْ وَاشْتَرَوْا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلاً فَبِئْسَ مَا يَشْتَرُونَ . ( آل عمران - 187)
অর্থঃ স্মরণ করুন, যখন আহলে কিতাবদের থেকে আল্লাহ্ অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন যে, তোমরা নিশ্চয়ই এটা মানুষের কাছে প্রকাশ করবে, গোপন করবে না। এরপরও তারা তা অগ্রাহ্য করে স্বল্প মূল্যে বিক্রি করলো। অতএব তারা যা ক্রয় করে তা কতই না নিকৃষ্ট। [আলে-ইমরানঃ ১৮৭]
আল্লাহ তা‘আলা এ উম্মতের একটি দলের উপর দাওয়াত ইলাল্লাহ, সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করা ওয়াজিব করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَلْتَكُنْ مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَ يَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُوْلئِكَ هُمُ المُفْلِحُـونَ . ( آل عمران : 104)
অর্থঃ তোমাদের মধ্যে এরূপ একটি দল থাকা উচিত যারা কল্যাণের দিকে আহবান করবে এবং সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করবে। এরাই সফলকাম। [আলে-ইমরানঃ ১০৪]
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أَضْعَفُ الْإِيمَانِ . ( مسلم )
অর্থঃ তোমাদের যে কেউ গর্হিত কাজ হতে দেখে, সে যেন তা হাত দ্বারা বাধা করে। যদি এ শক্তি না থাকে তাহলে যেন মুখ দ্বারা বাধা প্রদান করে, তাও যদি সম্ভব না হয় তাহলে যেন অন্তরে ঘৃণা করে। এটা ঈমানের নিম্নতম স্তর। [মুসলিম : ৪৯]
এ হাদীস দ্বারা একথাই প্রমাণিত হয় যে, প্রত্যেক মুসলিমের উপর নিজের ক্ষমতা ও শক্তি অনুযায়ী সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করা ওয়াজিব।
এছাড়াও আব্দুল্লাহ ইব্নে মাসউদ (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
مَا مِنْ نَبِيٍّ بَعَثَهُ اللَّهُ فِي أُمَّةٍ قَبْلِي إِلَّا كَانَ لَهُ مِنْ أُمَّتِهِ حَوَارِيُّونَ وَأَصْحَابٌ يَأْخُذُونَ بِسُنَّتِهِ وَيَقْتَدُونَ بِأَمْرِهِ ثُمَّ إِنَّهَا تَخْلُفُ مِنْ بَعْدِهِمْ خُلُوفٌ يَقُولُونَ مَا لَا يَفْعَلُونَ وَيَفْعَلُونَ مَا لَا يُؤْمَرُونَ فَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِيَدِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِلِسَانِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِقَلْبِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلَيْسَ وَرَاءَ ذَلِكَ مِنْ الْإِيمَانِ حَبَّةُ خَرْدَلٍ . ( مسلم )
অর্থঃ আমার পূর্বে যত নবী এসেছেন তাদের প্রত্যেকেরই স্বীয় উম্মতের মধ্য থেকে কিছু সাথী এবং ঘনিষ্ঠ লোক ছিল। যারা তাঁর সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরত এবং তাঁর হুকুম মেনে চলত। পরবর্তীতে এমন এক প্রজন্ম এল, যারা যা বলত তা করত না এবং তারা এমন কাজ করত যার নির্দেশ ছিল না। যে ব্যক্তি সর্বশক্তি দিয়ে তাদের প্রতিরোধ করবে সে মুমিন, যে মৌখিকভাবে প্রতিবাদ করবে সে মুমিন এবং যে অন্তরে ঘৃণা করবে সেও মুমিন। এর বাইরে কারো অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান নেই। [মুসলিম : ৫০]
আবু হুরাইরা (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ مَنْ سُئِلَ عَنْ عِلْمٍ عَلِمَهُ ثُمَّ كَتَمَهُ أُلْجِمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِلِجَامٍ مِنْ نَارٍ ( ترمذي , أبو داود و ابن ماجة )
অর্থঃ যদি কাউকে এমন বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয় যা সে জানে অতঃপর সে তা গোপন করে, তাহলে তাকে কিয়ামতের দিন আগুনের লাগাম পরানো হবে। [তিরমিযী :২৬৪৯ ও আবু দাউদ : ৩৬৫৮ ইবনে মাজাহ: ২৬৬]
(৮) কাফেরদের সাদৃশ অবলম্বন ও তাদের অনুসরণ করা
এটা মুসলিমদের মাঝে বিদআত ছড়ানোর বড় কারণ। এ বিষয়টি আবু ওয়াকেদ লাইছি রহ. বর্ণিত হাদীস দ্বারা বুঝা যায়। তিনি বলেন, আমরা রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে হুনাইনের দিকে রওয়ানা হলাম। আমরা বিগত দিনের কর্মকান্ড (কুফুরী) নিয়ে আলোচনা করছিলাম। কেননা তারা মক্কা বিজয়ের দিন মুসলমান হয়েছিলেন। তিনি বললেন, একটি গাছের সামনে দিয়ে অতিক্রম করতে গিয়ে আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের জন্য একটি ‘‘জাতে আনওয়াত’’ (এক প্রকার গাছ মুশরিকরা যার পূজা করত) এর ব্যবস্থা করে দিন যেমনটি তাদের অর্থাৎ কাফেরদের জন্য রয়েছে। তাদের একটি বরই গাছ ছিল যার পার্শ্বে তারা নীরবে বসে উপাসনা করত এবং তাতে তাদের যুদ্ধের অস্ত্র ঝুলিয়ে রাখত। তারা এটাকে ‘‘জাতু আনওয়াত’’ বলত। যখন আমরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে একথা বললাম, তখন তিনি বললেন, আল্লাহু আকবার! তোমরা এমন কথা বলছ, যেমন বণী ইসরাইলের লোকেরা মূসা (আ) কে বলেছিল।
اجْعَل لَّنا إِلـهًاكَمَا لَهُمْ ءَالِهَةٌ قَالَ إِنَّكُمْ قَوْمٌ تَجْهَلُونَ . ( الأعراف : 138)
‘‘আপনি আমাদের জন্য মাবুদ নির্বাচন করুন, যেমন তাদের জন্য অনেক মা‘বুদ রয়েছে। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই তোমরা তো মূর্খ জাতি।’’ [আ‘রাফ : ১৩৮]
তোমরা অবশ্যই পূর্ববর্তী লোকদের পথ অবলম্বন করবে। [তিরমিযী : ২১৮০]
এ হাদীস থেকে সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায়, যেমনি কাফিরদের সাদৃশ বনী ইসরাইলদের উপরোক্ত অসংগত প্রার্থনা করতে উৎসাহিত করেছিল তেমনি সাহাবীদেরকেও রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে আল্লাহ ছাড়া অন্যের দ্বারা বরকত হাসিলের উদ্দেশ্যে এমন একটি গাছের প্রার্থনা করতে উৎসাহিত করেছিল। এভাবেই অধিকাংশ মানুষ কাফিরদের অনুসরণ বা সাদৃশ অবলম্বন করতে গিয়ে বিদআত ও শিরকে লিপ্ত হয়। যথা- মিলাদ মাহফিল, জানাযা সংক্রান্ত বিদআত, কবরের উপর বিল্ডিং নির্মাণ ইত্যাদি। নিঃসন্দেহে এ সকল বিষয় বা পূর্ববর্তীদের অনুসরণ প্রবৃত্তি পূজা ও বিদআতেরই অন্তর্ভুক্ত।
এ বিষয়টি আবু সাঈদ খুদরী (রা) বর্ণিত হাদীস দ্বারা আরো স্পষ্ট হয়। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
لَتَتْبَعُنَّ سَنَنَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ شِبْرًا شِبْرًا وَذِرَاعًا بِذِرَاعٍ حَتَّى لَوْ دَخَلُوا جُحْرَ ضَبٍّ تَبِعْتُمُوهُمْ قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى قَالَ فَمَنْ؟ ( متفق عليه )
অর্থঃ নিশ্চয়ই তোমরা পূর্ববর্তী লোকদের রীতিনীতির পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুকরণ করবে। এমনকি তারা যদি গুইসাপের গর্তে প্রবেশ করে থাকে, তাহলে তোমরাও তা করবে। আমরা বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! ইহুদী-খৃষ্টানদের? তিনি বলেন, তাদের ব্যতীত আর কাদের? [বুখারী : ৭৩২০ ও মুসলিম : ২৬৬৯]
ইমাম নববী রহ. বলেন, ‘‘ السَنَنُ ’’ অর্থ রাস্তা। হাদীসের শব্দ شبر، ذراع و جحر الضب তথা বিঘত, হাত ও গুইসাপের গর্তে প্রবেশ দ্বারা এ উম্মতের পুর্বেকার লোকদের সাথে শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপ ও অন্যায়ের মাঝে হুবহু মিল থাকার উপমা দেয়া হয়েছে, কুফরীতে মিল থাকার উপমা নয়। এ হাদীসের মাধ্যমে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মু‘জিযা বাস্তবায়িত হল। কেননা তিনি যে সংবাদ দিয়ে গেছেন, তা আজ সংঘটিত হচ্ছে।
প্রকাশ থাকে যে, বিঘত, হাত, রাস্তা ও গর্তে প্রবেশ এ সবই শরীয়ত কর্তৃক নিষিদ্ধ ও নিন্দিত বিষয়ে তাদের (কাফেরদের) অনুসরণ-অনুকরণ করার কারণে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপমা হিসেবে তুলে ধরেছেন, অথচ তিনি অমুসলিমদের সাদৃশ অবলম্বন করতে কঠোর ভাবে নিষেধ করেছেন।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
بُعٍثْتُ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ بِالسَّيْفِ حَتّى يَعْبُدَ اللهَ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه، وَجَعَلَ رِزْقِيْ تَحْتَ ظِلِّ رَمْحِيْ وَجَعَلَ الذِلُّ وَالصِّغَارَ عَلى مَنْ خَالَفَ أَمْرِيْ، وَمَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ .
( أحمد )
অর্থঃআমি কিয়ামতের পূর্বে তরবারীসহ প্রেরিত হয়েছি যাতে (মানুষ) এক আল্লাহর ইবাদত করে যার কোন অংশিদার নেই। আর তিনি আমার জীবিকাকে বর্শার ছাঁয়ার নিচে রেখেছেন। যারা আমার দ্বীনের পরিপন্থী কাজ করবে তাদের জন্য রেখেছেন অপমান ও লাঞ্ছনা। আর যারা কোন জাতির সাদৃশ অবলম্বন করবে তারা তাদেরই অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে। [আহমদ : ২/৫০]
(৯) দুর্বল ও বানোয়াট হাদীসের উপর নির্ভর করা
এ ধরণের হাদীসের উপর নির্ভর করার ফলে অধিকাংশ বিদআত সৃষ্টি হয় ও তার প্রচার-প্রসার ঘটে। অধিকাংশ বিদআতপন্থীই অনির্ভরযোগ্য, দুর্বল ও মিথ্যা হাদীসের উপর নির্ভর করে। তারা এমন হাদীসের উপর নির্ভরশীল যা হাদীস বিশারদগণের নিকট অগ্রহণযোগ্য। তারা সহীহ হাদীস পরিত্যাগ করে। যার ফলে অনিবার্য ক্ষতি, ধ্বংস ও বিপদে পতিত হয়। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া সৎকর্ম সম্পাদন ও অসৎকর্ম পরিত্যাগ সম্ভব নয়। [ফতোয়া ইবনে তাইমিয়াঃ ২২নং খন্ড; ৩৬১-৩৬৩, ইতিসামঃ আল্লামা শাতেবী ১মঃ ২৮৭-২৯৪]
(১০) বাড়াবাড়ি ও সীমালংঘন
এটাও বিদআত প্রসারের অন্যতম কারণ এবং শিরকে লিপ্ত হওয়ারও কারণ। কেননা আদম (আ) এর পরবর্তী ১০ যুগ পর্যন্ত লোকজন তাওহীদ ও আল্লাহ তা‘আলার একত্ববাদে বিশ্বাসী ছিল। তারপর থেকে লোকজন তৎকালীন নেক্কার ব্যক্তিবর্গের দিকে ঝুঁকে গিয়ে তাদের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি ও সীমালংঘন করতে করতে এক পর্যায়ে আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদের ইবাদত শুরু করে দেয়। এরপর আল্লাহ তা‘আলা তাওহীদের দিকে আহবান কল্পে নূহ (আ) কে প্রেরণ করেন, এরই সূত্র ধরে তাওহীদের বানী নিয়ে নবী-রাসূল (আ) প্রেরণের ধারাবাহিকতা শুরু হয়।
সীমালংঘন ব্যক্তি পর্যায়েও হতে পারে। যথা-ইমাম ও অলীদের নিষ্পাপ মনে করা এবং তাদেরকে প্রাপ্য মর্যাদার চেয়ে উঁচু মর্যাদায় আসীন করা। এ ধরণের বাড়াবাড়ির এক পর্যায়ে তাদের ইবাদতও করা হয়।
সীমালংঘন দ্বীনের মাঝেও হতে পারে। যথা-আল্লাহর দেয়া বিধানে অতিরঞ্জন অথবা কোন বিষয়ে কঠোরতা কিংবা অন্যায়ভাবে কাউকে কাফির বলে আখ্যায়িত করা।
সীমালংঘন বলতে বুঝায়ঃ বিশ্বাস ও আমলের ক্ষেত্রে সীমা অতিক্রম করা। এটা কারো প্রশংসা বা দূর্নাম বর্ণনার ক্ষেত্রে অত্যধিক বাড়াবাড়ির ফলে হয়ে থাকে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা এ সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন করতে গিয়ে আহলে কিতাবদের উদ্দেশ্য করে বলেনঃ
يَااَهْلَ الكِتَابِ لاَ تَغْلُوأ فِى دِينِكُمْ . ( النساء : 171)
অর্থঃ হে আহলে কিতাবরা! তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করো না। [নিসাঃ ১৭১]
তেমনি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও দ্বীনের ব্যাপারে সীমালংঘন করতে নিষেধ করেছেন।
ইবনে আববাস (রা) বর্ণনা করেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
وَإِيَّاكُمْ وَالْغُلُوَّ فِي الدِّينِ فَإِنَّمَا أَهْلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ الْغُلُوُّ فِِِي الدِّينِ . ( نسائي )
অর্থঃ তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে সীমালংঘন থেকে বিরত থাক, কেননা তোমাদের পূর্ববতী লোকেরা দ্বীনের ব্যাপারে সীমালংঘন করার ফলে ধ্বংস হয়েছে। [নাসাঈ : ৫/২৬৮]
এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, দ্বীনের মধ্যে সীমালংঘনই শিরক ও বিদআত সৃষ্টি এবং কুপ্রবৃত্তির অনুসরণের অন্যতম কারণ।
দ্বীনের মধ্যে সীমালংঘনের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সতর্কবাণী উচ্চারণ করতঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
لَا تُطْرُونِي كَمَا أَطْرَتْ النَّصَارَى ابْنَ مَرْيَمَ فَإِنَّمَا أَنَا عَبْدُهُ فَقُولُوا عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ . ( بخاري )
অর্থঃ তোমরা আমাকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না যেমনিভাবে খ্রীষ্টানরা ঈসা ইবনে মারিয়াম (আ) কে নিয়ে বাড়াবাড়ি করেছিল। আমি আল্লাহর বান্দা, তাই আমাকে আল্লাহর বান্দা ও রাসূল বলবে। [বুখারী : ৩৪৪৫]
বিভিন্ন দিক বিবেচনায় বিদআত কয়েক প্রকার। সংক্ষেপে তা নিম্নে তুলে ধরা হল
প্রথম প্রকারঃ হাকীকী বিদআত ও আপেক্ষিক বিদআত।
হাকীকী বা প্রকৃত বিদআত
তা হলো দ্বীনের মধ্যে এমন কাজ সংযোজন যার উপর কুরআন, হাদীস, ইজমা ও বিজ্ঞ আলেম-উলামাদের নিকট সংক্ষিপ্ত বা বিস্তারিত কোন দলিল-প্রমাণ নেই। বিদআতকে এজন্যই বিদআত বলা হয়, কেননা তা দ্বীনের মাঝে নব আবিষ্কার। [আল-ইতিসাম, লেখক শাতেবী (র) : ১/৩৬৭]
উদাহরণঃ বৈরাগ্যবাদের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য কামনা করা। অর্থাৎ মানব সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পাহাড়-পর্বত, বন-জঙ্গলে অবস্থান, আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে দুনিয়া ও দুনিয়ার নিয়ামত ত্যাগ করা ইত্যাদি। যারা এমন করে তারা মনগড়া ইবাদত করে এবং তা নিজের উপর বাধ্য করে নেয়। যেমন-আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় হালাল বস্ত্তকে হারাম করে নেয়া ইত্যাদি। [আল-ইতিসাম, লেখক শাতেবী (র) : ১/৪১৭]
আপেক্ষিক বিদআত
আপেক্ষিক বিদআতের দু‘টি দিক বা শাখা রয়েছে।
একঃ এ ধরণের বিদআতের ক্ষেত্রে প্রমাণাদি থাকে, এ বিবেচনায় এটা বিদআত হবে না।
দুইঃ এর সাথে বিদআতের সংশ্লিষ্টতা নেই বরং তাতে প্রকৃত বিদআতের সাথে সামঞ্জস্য রয়েছে। অর্থাৎ এক দিক বিবেচনায় প্রমাণাদির সাথে সংশ্লিষ্টতা থাকার কারণে এটা সুন্নাত হিসেবে গণ্য হবে। পক্ষান্তরে অন্য দিক বিবেচনায় প্রমাণাদির সাথে সংশ্লিষ্টতা না থাকার কারণে বিদআত হিসেবে গণ্য হবে। কারণ এর মাঝে সন্দেহ ও সংশয় রয়েছে, গ্রহণযোগ্য কোন প্রমাণ নেই।
অর্থের দিক থেকেও উভয়ের মাঝে পার্থক্য রয়েছে। মৌলিকত্বের দিক থেকে প্রমাণাদি আছে। আর অবস্থার, পরিস্থিতির অথবা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের দিক থেকে প্রমাণাদি নেই। কেননা তা ইবাদতের মধ্যে সংযোজিত হলে বিদআত হবে, শুধু অভ্যাস গত হলে বিদআত হবে না। যেমন-সালাতের পর সম্মিলিতভাবে সমস্বরে যিকির করা কিংবা সালাতের পর ইমাম কর্তৃক সম্মিলিত দু‘আ জরুরী মনে করা।
যিকির করা শরীয়ত সিদ্ধ। কিন্তু বিশেষ পদ্ধতি বা ভংগিতে তা আদায় করা শরীয়ত সম্মত নয়। তা বিদআত ও সুন্নাত পরিপন্থী। [আল-ইতিসাম, লেখক শাতেবী (র) : ১/৪৫২]
এমনিভাবে শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে ইবাদত ও তৎপরবর্তী দিনকে সিয়ামের জন্য নির্ধারিত করা। রজব মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে সালাতে রাগায়েব (উৎসাহমূলক সালাত) আদায় করা। এটা কুসংস্কার ও আপেক্ষিক বিদআত। কেননা সালাত, সিয়াম এগুলো মৌলিকভাবে শরীয়ত সম্মত। কিন্তু এটা সময়, স্থান বা অবস্থার সাথে নির্দিষ্ট করার কারণে বিদআত হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। কারণ কুরআন ও হাদীসে তা এভাবে বর্ণিত হয় নি।
মূল কথা হলঃ এসব আমল মৌলিক দিক বিবেচনায় শরীয়ত সম্মত, তবে প্রাসঙ্গিক কিছু বিষয় সংশ্লিষ্ট হওয়ার কারণে বিদআত।
দ্বিতীয় প্রকারঃ কর্মমূলক ও বর্জনমূলক বিদআত।
কর্মমূলক বিদআতঃ যা বিদআতের সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত। এটা দ্বীনের মধ্যে নব আবিস্কৃত ও শরীয়তের সাথে সামঞ্জস্যশীল। এর দ্বারা ইবাদতে আধিক্য উদ্দেশ্য থাকে। যেমন, শরীয়ত বহির্ভূত বিষয় শরীয়তে সংযোজন করা। যেমন, সালাতে রাকাত বৃদ্ধি করা, দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু প্রবিষ্ট করা যা দ্বীনের মধ্যে নেই, সুন্নাহ্র বিপরীত পদ্ধতিতে ইবাদত করা, শরীয়ত সম্মত ইবাদতের জন্য এমন সময় নির্ধারণ করা যা শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত নয়। যেমন শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে ইবাদত করা ও পরবর্তী দিনকে সিয়ামের জন্য নির্ধারণ করা। [কিতাবুত তাওহীদ লেখক ড.সালেহ ফাওযান : ৮২পৃ:]
২. বর্জনমূলক বিদআতঃ যা বিদআতের সংজ্ঞার ব্যাপকতার অন্তর্ভুক্ত। তা হল দ্বীনের মধ্যে নব আবিস্কৃত পন্থা, যা বিদআত। সুতরাং বিদআত কখনও কোন কিছু পরিহার করার মাধ্যমে হয়, চাই তা নিজের উপর হারাম করা হোক বা না হোক। যেমন-শরীয়ত কর্তৃক হালাল বিষয়কে নিজের উপর হারাম করা, অথবা ইচ্ছাপূর্বক কোন বস্ত্ত বর্জন করা। এ বর্জন শরীয়ত অনুমোদিত বা অনুমোদনহীন হতে পারে। অতএব যদি তা শরীয়ত অনুমোদিত কোন বিষয়ে হয় তাহলে তাতে কোন ক্ষতি নেই। কেননা সে শরীয়ত কর্তৃক বৈধ বিষয় পরিহার করেছে। যেমন কেউ শরীর অথবা মেধা অথবা দ্বীন অথবা এ জাতীয় কোন কিছুর জন্য ক্ষতিকর হওয়ার কারণে নির্দিষ্ট খাদ্য থেকে নিজেকে বিরত রাখল। এক্ষেত্রে খাদ্য বর্জন করায় কোন দোষ নেই।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
يَا مَعْشَرَالشَّبَابِ مَنْ اسْتَطَاعَ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ . ( بخاري ومسلم )
অর্থঃ হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যার সামর্থ আছে সে যেন বিবাহ করে। কেননা তা দৃষ্টি অবনমিতকারীও লজ্জাস্থান হিফাযতকারী। আর যে বিবাহের সামর্থ রাখে না, সে যেন সিয়াম পালন করে। কেননা তা উত্তেজনা দমনকারী। [বুখারী : ১৯০৫ ও মুসলিম : ১৪০০]
এমনিভাবে ক্ষতিকর বিষয় থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে এমন বিষয় বর্জন করা যাতে ক্ষতি নেই। যেমন-হারাম বা নিষিদ্ধ বিষয়াবলীতে পতিত হওয়া থেকে বাঁচার জন্য সন্দেহযুক্ত বস্ত্ত বর্জন করা যা সম্মান ও দ্বীনের পবিত্রতার উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে।
এ ছাড়া অন্য কোন কারণে যদি বর্জন করা হয়, তাহলে তা দ্বীন মনে করে বর্জন করা হবে অথবা অন্য কোন কারণে। সুতরাং যদি তা দ্বীন মনে করে না হয়, তাহলে বর্জনকারী উক্ত কাজটি নিজের উপর অহেতুক নিষিদ্ধকারী অথবা স্বেচ্ছায় পরিহারকারী। এটাকে বিদআত নামে অভিহিত করা যায় না। কেননা তা বিদআতের সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না। তবে উল্লিখিত দ্বিতীয় সংজ্ঞা অনুযায়ী অভ্যাসগত বিদআতের অন্তর্ভুক্ত হয় কিন্তু প্রথম সংজ্ঞা অনুযায়ী অন্তর্ভুক্ত হয় না। তবে বর্জনকারী তা পরিহার করার কারণে বা আল্লাহ তা‘আলা যা হালাল করেছেন তা হারাম মনে করার কারণে (আল্লাহর বিধানের) বিরুদ্ধাচারণকারী গণ্য হবে। বর্জিত বস্ত্তর মর্যাদার ভিন্নতার কারণে শরীয়তের বিরুদ্ধাচরণের পাপও বিভিন্ন রকম হয়। যেমন-ওয়াজিব, মুবাহ।
যদি দ্বীন মনে করে কোন কিছু বর্জন করা হয়, তাহলে তা বিদআত বলে গণ্য হবে। চাই সে বর্জিত বিষয় বৈধ হোক কিংবা আদিষ্ট, চাই তা ইবাদতের অর্ন্তভুক্ত হোক বা লেন-দেনের অন্তর্ভুক্ত কিংবা অভ্যাসের অন্তর্ভুক্ত। চাই তা কথা, কাজ বা বিশ্বাসগত বিষয়ের মাধ্যমে হোক। সুতরাং যখন পরিহার করাকে আল্লাহর ইবাদত মনে করা হবে, তখন সে বিদআতের অনুসারী হিসাবে পরিগণিত হবে। [আল-ইতিসাম, লেখক শাতেবী (র) : ১/৫৮]
প্রমাণাদির মাধ্যমে জানা যায়, এ জাতীয় বিষয় বর্জন করা বিদআত। যেমন - جَاءَ ثَلَاثَةُ رَهْطٍ إِلَى بُيُوتِ أَزْوَاجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْأَلُونَ عَنْ عِبَادَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا أُخْبِرُوا كَأَنَّهُمْ تَقَالُّوهَا فَقَالُوا وَأَيْنَ نَحْنُ مِنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأَخَّرَ قَالَ أَحَدُهُمْ أَمَّا أَنَا فَإِنِّي أُصَلِّي اللَّيْلَ أَبَدًا وَقَالَ آخَرُ أَنَا أَصُومُ الدَّهْرَ وَلَا أُفْطِرُ وَقَالَ آخَرُ أَنَا أَعْتَزِلُ النِّسَاءَ فَلَا أَتَزَوَّجُ أَبَدًا فَجَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْهِمْ فَقَالَ أَنْتُمْ الَّذِينَ قُلْتُمْ كَذَا وَكَذَا أَمَا وَاللَّهِ إِنِّي لَأَخْشَاكُمْ لِلَّهِ وَأَتْقَاكُمْ لَهُ لَكِنِّي أَصُومُ وَأُفْطِرُ وَأُصَلِّي وَأَرْقُدُ وَأَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي . ( متفق عليه )
অর্থঃ তিন ব্যক্তির ঘটনা, যারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রীগণের ঘরে এসে তাঁর ইবাদত সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তাদের তাঁর ইবাদত সম্পর্কে অবহিত করা হল, তখন তারা নিজেদের আমল কম মনে করল। তারা বলল, আমরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে কোথায় পড়ে আছি। অথচ তার অগ্র-পশ্চাতের সকল গুনাহ আল্লাহ্ ক্ষমা করে দিয়েছেন। অতঃপর তাদের একজন বলল, আমি রাত ভর সালাত আদায় করব। দ্বিতীয় জন বলল, আমি সারা বছর সিয়াম পালন করব, পরিত্যাগ করব না। তৃতীয় জন বলল, আমি নারীদের থেকে বিচ্ছিন্ন থাকব কখনও বিবাহ করব না। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা কি এমন এমন বলেছ? শুনে রাখ! আল্লাহ্র কসম! আমি তোমাদের চেয়ে আল্লাহ্কে অধিক ভয় করি এবং তোমাদের চেয়ে অধিক মুত্তাকী। তবে আমি সিয়াম পালন করি আবার ছেড়েও দেই। রাত জেগে সালাত আদায় করি আবার নিদ্রা যাই তেমনি নারীদের বিবাহ করেছি। সুতরাং যে আমার সুন্নাতের প্রতি অনিহা প্রকাশ করে সে আমার দলভুক্ত নয়। [বুখারী : ৫০৬৩ ও মুসলিম : ১৪০১]
এখানে সুন্নাত বলে পথ বা আদর্শ বুঝানো হয়েছে। ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নাত বুঝানো হয়নি। আর কোন জিনিসের প্রতি অনিহা থাকার অর্থ তা থেকে বিমুখ হয়ে অন্য কিছুর প্রতি আগ্রহী হওয়া। তাহলে হাদীসের অর্থ হল, যে ব্যক্তি আমার আদর্শ থেকে বিমুখ হয়ে অন্য কোন আদর্শ গ্রহণ করল, সে আমার দলভুক্ত হবে না। [ফাতহুল বারী : ৯/১০৫]
ইতিপূর্বে স্পষ্ট হয়েছে যে, বিদআত দু‘প্রকারঃ (ক) কর্মমূলক বিদআত ও
(খ) বর্জনমূলক বিদআত। যেমনিভাবে স্পষ্ট হয়েছে যে, সুন্নাত দু‘প্রকার করণীয় সুন্নাত ও বর্জনীয় সুন্নাত।
সুতরাং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাত, কখনও কোন কাজ করার মাধ্যমে হতে পারে। আবার কোন কিছু বর্জন করার মাধ্যমেও হতে পারে।
যেমনিভাবে আল্লাহ তাআলা আমাদের উপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ঐ সকল কাজের অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক করেছেন, যার মাধ্যমে আল্লাহ্র নৈকট্য অর্জন করা যায়। তবে শর্ত হলো সে ইবাদতটি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য নির্দিষ্ট না হওয়া।
তেমনিভাবে আল্লাহ্ তাআলা আমাদের কাছে কামনা করেন যে, আমরা যেন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা বর্জন করেছেন তা বর্জন করার মাধ্যমে তাঁর আনুগত্য করি। সুতরাং তখন বর্জন করাটাই সুন্নাত। আবার তিনি যা করেছেন তা পালন করাটাই সুন্নাত।
তাই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা করেছেন তা বর্জন করার মাধ্যমে আমরা আল্লাহ্র নৈকট্য অর্জন করতে পারব না। তেমনি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা বর্জন করেছেন সে গুলো পালন করার মাধ্যমেও আমরা আল্লাহ্র নৈকট্য অর্জন করতে পারব না। সুতরাং বর্জিত বিষয়াবলী কর্মে পরিণতকারী কৃত বিষয়াবলী পরিহারকারীর ন্যায়। উভয়ের মাঝে কোন পার্থক্য নাই। [আল-ইতিসাম, লেখক শাতেবী (র) : ১/৫৭-৬০]
তৃতীয় প্রকারঃ বিশ্বাসগত, বক্তব্যধর্মী ও কর্মমূলক বিদআত
১। বিশ্বাসগত ও বক্তব্যধর্মী বিদআত
যেমন জাহমিয়্যাহ, মু‘তাজিলা, শিয়া, রাফেজি ও সকল পথভ্রষ্টদলগুলোর বক্তব্য ও তাদের বিশ্বাস। তাদের মাঝে ঐ সকল জামাআতও অন্তর্ভুক্ত হবে, যারা নতুন আত্মপ্রকাশ করেছে। যেমন কাদিয়ানী, বাহাই। এছাড়াও সকল বাতেনী জামাত। যেমন ইসমাঈলী নাছিরিয়্যাহ, দরওয়াজ ও রাফেজা।
২। কর্মমূলক বিদআত যা কয়েক প্রকার
প্রথম প্রকারঃ মূল ইবাদতের মধ্যে বিদআত। নতুন কোন ইবাদত প্রবর্তন করা শরীয়তে যার কোন ভিত্তি নেই। যেমন শরীয়তের অনুমোদন বিহীন সালাত প্রবর্তন করা, শরীয়তের অনুমোদন বিহীন সিয়াম প্রবর্তন করা বা এমন ঈদ পালন করা যা শরীয়তে নেই। যেমন ঈদে মিলাদুন্নবী পালন ইত্যাদি।
দ্বিতীয় প্রকারঃ শরীয়ত সমর্থিত ইবাদতে কিছু সংযোজন। যেমনঃ জোহর অথবা আছর সালাতের রাকাত বৃদ্ধি করে পাঁচ রাকাত পড়া।
তৃতীয় প্রকারঃ শরীয়ত সমর্থিত ইবাদত আদায়ের পদ্ধতিতে বিদআত অর্থাৎ বৈধ ইবাদতকে অবৈধ পন্থায় আদায় করা। এমনিভাবে শরীয়ত সম্মত জিকির দলবদ্ধভাবে সমস্ব^রে আদায় করা এবং ইবাদত করার ক্ষেত্রে নিজ জীবনের উপর কঠোরতা করা যা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত নেই।
চতুর্থ প্রকারঃ শরীয়ত সম্মত ইবাদতের জন্য এমন এক সময় নির্ধারণ করা যা শরীয়ত নির্ধারণ করেনি। যেমন-শাবান মাসের ১৫তম দিন সিয়াম পালন ও ১৪তম দিবাগত রাত সালাত আদায়ের জন্য নির্ধারণ করা। কেননা সিয়াম ও সালাত শরীয়ত সম্মত, তবে তা কোন বিশেষ সময়ে আদায়ের জন্য নির্ধারণের জন্য প্রমাণের প্রয়োজন, যা এ ক্ষেত্রে নেই। [মাজমুয়ায়ে ফতোয়ায়ে শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া : ১৮/৩৪৬]
প্রথম প্রকারঃ হাকীকী বিদআত ও আপেক্ষিক বিদআত।
হাকীকী বা প্রকৃত বিদআত
তা হলো দ্বীনের মধ্যে এমন কাজ সংযোজন যার উপর কুরআন, হাদীস, ইজমা ও বিজ্ঞ আলেম-উলামাদের নিকট সংক্ষিপ্ত বা বিস্তারিত কোন দলিল-প্রমাণ নেই। বিদআতকে এজন্যই বিদআত বলা হয়, কেননা তা দ্বীনের মাঝে নব আবিষ্কার। [আল-ইতিসাম, লেখক শাতেবী (র) : ১/৩৬৭]
উদাহরণঃ বৈরাগ্যবাদের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য কামনা করা। অর্থাৎ মানব সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পাহাড়-পর্বত, বন-জঙ্গলে অবস্থান, আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে দুনিয়া ও দুনিয়ার নিয়ামত ত্যাগ করা ইত্যাদি। যারা এমন করে তারা মনগড়া ইবাদত করে এবং তা নিজের উপর বাধ্য করে নেয়। যেমন-আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় হালাল বস্ত্তকে হারাম করে নেয়া ইত্যাদি। [আল-ইতিসাম, লেখক শাতেবী (র) : ১/৪১৭]
আপেক্ষিক বিদআত
আপেক্ষিক বিদআতের দু‘টি দিক বা শাখা রয়েছে।
একঃ এ ধরণের বিদআতের ক্ষেত্রে প্রমাণাদি থাকে, এ বিবেচনায় এটা বিদআত হবে না।
দুইঃ এর সাথে বিদআতের সংশ্লিষ্টতা নেই বরং তাতে প্রকৃত বিদআতের সাথে সামঞ্জস্য রয়েছে। অর্থাৎ এক দিক বিবেচনায় প্রমাণাদির সাথে সংশ্লিষ্টতা থাকার কারণে এটা সুন্নাত হিসেবে গণ্য হবে। পক্ষান্তরে অন্য দিক বিবেচনায় প্রমাণাদির সাথে সংশ্লিষ্টতা না থাকার কারণে বিদআত হিসেবে গণ্য হবে। কারণ এর মাঝে সন্দেহ ও সংশয় রয়েছে, গ্রহণযোগ্য কোন প্রমাণ নেই।
অর্থের দিক থেকেও উভয়ের মাঝে পার্থক্য রয়েছে। মৌলিকত্বের দিক থেকে প্রমাণাদি আছে। আর অবস্থার, পরিস্থিতির অথবা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের দিক থেকে প্রমাণাদি নেই। কেননা তা ইবাদতের মধ্যে সংযোজিত হলে বিদআত হবে, শুধু অভ্যাস গত হলে বিদআত হবে না। যেমন-সালাতের পর সম্মিলিতভাবে সমস্বরে যিকির করা কিংবা সালাতের পর ইমাম কর্তৃক সম্মিলিত দু‘আ জরুরী মনে করা।
যিকির করা শরীয়ত সিদ্ধ। কিন্তু বিশেষ পদ্ধতি বা ভংগিতে তা আদায় করা শরীয়ত সম্মত নয়। তা বিদআত ও সুন্নাত পরিপন্থী। [আল-ইতিসাম, লেখক শাতেবী (র) : ১/৪৫২]
এমনিভাবে শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে ইবাদত ও তৎপরবর্তী দিনকে সিয়ামের জন্য নির্ধারিত করা। রজব মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে সালাতে রাগায়েব (উৎসাহমূলক সালাত) আদায় করা। এটা কুসংস্কার ও আপেক্ষিক বিদআত। কেননা সালাত, সিয়াম এগুলো মৌলিকভাবে শরীয়ত সম্মত। কিন্তু এটা সময়, স্থান বা অবস্থার সাথে নির্দিষ্ট করার কারণে বিদআত হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। কারণ কুরআন ও হাদীসে তা এভাবে বর্ণিত হয় নি।
মূল কথা হলঃ এসব আমল মৌলিক দিক বিবেচনায় শরীয়ত সম্মত, তবে প্রাসঙ্গিক কিছু বিষয় সংশ্লিষ্ট হওয়ার কারণে বিদআত।
দ্বিতীয় প্রকারঃ কর্মমূলক ও বর্জনমূলক বিদআত।
কর্মমূলক বিদআতঃ যা বিদআতের সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত। এটা দ্বীনের মধ্যে নব আবিস্কৃত ও শরীয়তের সাথে সামঞ্জস্যশীল। এর দ্বারা ইবাদতে আধিক্য উদ্দেশ্য থাকে। যেমন, শরীয়ত বহির্ভূত বিষয় শরীয়তে সংযোজন করা। যেমন, সালাতে রাকাত বৃদ্ধি করা, দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু প্রবিষ্ট করা যা দ্বীনের মধ্যে নেই, সুন্নাহ্র বিপরীত পদ্ধতিতে ইবাদত করা, শরীয়ত সম্মত ইবাদতের জন্য এমন সময় নির্ধারণ করা যা শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত নয়। যেমন শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে ইবাদত করা ও পরবর্তী দিনকে সিয়ামের জন্য নির্ধারণ করা। [কিতাবুত তাওহীদ লেখক ড.সালেহ ফাওযান : ৮২পৃ:]
২. বর্জনমূলক বিদআতঃ যা বিদআতের সংজ্ঞার ব্যাপকতার অন্তর্ভুক্ত। তা হল দ্বীনের মধ্যে নব আবিস্কৃত পন্থা, যা বিদআত। সুতরাং বিদআত কখনও কোন কিছু পরিহার করার মাধ্যমে হয়, চাই তা নিজের উপর হারাম করা হোক বা না হোক। যেমন-শরীয়ত কর্তৃক হালাল বিষয়কে নিজের উপর হারাম করা, অথবা ইচ্ছাপূর্বক কোন বস্ত্ত বর্জন করা। এ বর্জন শরীয়ত অনুমোদিত বা অনুমোদনহীন হতে পারে। অতএব যদি তা শরীয়ত অনুমোদিত কোন বিষয়ে হয় তাহলে তাতে কোন ক্ষতি নেই। কেননা সে শরীয়ত কর্তৃক বৈধ বিষয় পরিহার করেছে। যেমন কেউ শরীর অথবা মেধা অথবা দ্বীন অথবা এ জাতীয় কোন কিছুর জন্য ক্ষতিকর হওয়ার কারণে নির্দিষ্ট খাদ্য থেকে নিজেকে বিরত রাখল। এক্ষেত্রে খাদ্য বর্জন করায় কোন দোষ নেই।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
يَا مَعْشَرَالشَّبَابِ مَنْ اسْتَطَاعَ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ . ( بخاري ومسلم )
অর্থঃ হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যার সামর্থ আছে সে যেন বিবাহ করে। কেননা তা দৃষ্টি অবনমিতকারীও লজ্জাস্থান হিফাযতকারী। আর যে বিবাহের সামর্থ রাখে না, সে যেন সিয়াম পালন করে। কেননা তা উত্তেজনা দমনকারী। [বুখারী : ১৯০৫ ও মুসলিম : ১৪০০]
এমনিভাবে ক্ষতিকর বিষয় থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে এমন বিষয় বর্জন করা যাতে ক্ষতি নেই। যেমন-হারাম বা নিষিদ্ধ বিষয়াবলীতে পতিত হওয়া থেকে বাঁচার জন্য সন্দেহযুক্ত বস্ত্ত বর্জন করা যা সম্মান ও দ্বীনের পবিত্রতার উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে।
এ ছাড়া অন্য কোন কারণে যদি বর্জন করা হয়, তাহলে তা দ্বীন মনে করে বর্জন করা হবে অথবা অন্য কোন কারণে। সুতরাং যদি তা দ্বীন মনে করে না হয়, তাহলে বর্জনকারী উক্ত কাজটি নিজের উপর অহেতুক নিষিদ্ধকারী অথবা স্বেচ্ছায় পরিহারকারী। এটাকে বিদআত নামে অভিহিত করা যায় না। কেননা তা বিদআতের সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না। তবে উল্লিখিত দ্বিতীয় সংজ্ঞা অনুযায়ী অভ্যাসগত বিদআতের অন্তর্ভুক্ত হয় কিন্তু প্রথম সংজ্ঞা অনুযায়ী অন্তর্ভুক্ত হয় না। তবে বর্জনকারী তা পরিহার করার কারণে বা আল্লাহ তা‘আলা যা হালাল করেছেন তা হারাম মনে করার কারণে (আল্লাহর বিধানের) বিরুদ্ধাচারণকারী গণ্য হবে। বর্জিত বস্ত্তর মর্যাদার ভিন্নতার কারণে শরীয়তের বিরুদ্ধাচরণের পাপও বিভিন্ন রকম হয়। যেমন-ওয়াজিব, মুবাহ।
যদি দ্বীন মনে করে কোন কিছু বর্জন করা হয়, তাহলে তা বিদআত বলে গণ্য হবে। চাই সে বর্জিত বিষয় বৈধ হোক কিংবা আদিষ্ট, চাই তা ইবাদতের অর্ন্তভুক্ত হোক বা লেন-দেনের অন্তর্ভুক্ত কিংবা অভ্যাসের অন্তর্ভুক্ত। চাই তা কথা, কাজ বা বিশ্বাসগত বিষয়ের মাধ্যমে হোক। সুতরাং যখন পরিহার করাকে আল্লাহর ইবাদত মনে করা হবে, তখন সে বিদআতের অনুসারী হিসাবে পরিগণিত হবে। [আল-ইতিসাম, লেখক শাতেবী (র) : ১/৫৮]
প্রমাণাদির মাধ্যমে জানা যায়, এ জাতীয় বিষয় বর্জন করা বিদআত। যেমন - جَاءَ ثَلَاثَةُ رَهْطٍ إِلَى بُيُوتِ أَزْوَاجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْأَلُونَ عَنْ عِبَادَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا أُخْبِرُوا كَأَنَّهُمْ تَقَالُّوهَا فَقَالُوا وَأَيْنَ نَحْنُ مِنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأَخَّرَ قَالَ أَحَدُهُمْ أَمَّا أَنَا فَإِنِّي أُصَلِّي اللَّيْلَ أَبَدًا وَقَالَ آخَرُ أَنَا أَصُومُ الدَّهْرَ وَلَا أُفْطِرُ وَقَالَ آخَرُ أَنَا أَعْتَزِلُ النِّسَاءَ فَلَا أَتَزَوَّجُ أَبَدًا فَجَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْهِمْ فَقَالَ أَنْتُمْ الَّذِينَ قُلْتُمْ كَذَا وَكَذَا أَمَا وَاللَّهِ إِنِّي لَأَخْشَاكُمْ لِلَّهِ وَأَتْقَاكُمْ لَهُ لَكِنِّي أَصُومُ وَأُفْطِرُ وَأُصَلِّي وَأَرْقُدُ وَأَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي . ( متفق عليه )
অর্থঃ তিন ব্যক্তির ঘটনা, যারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রীগণের ঘরে এসে তাঁর ইবাদত সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তাদের তাঁর ইবাদত সম্পর্কে অবহিত করা হল, তখন তারা নিজেদের আমল কম মনে করল। তারা বলল, আমরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে কোথায় পড়ে আছি। অথচ তার অগ্র-পশ্চাতের সকল গুনাহ আল্লাহ্ ক্ষমা করে দিয়েছেন। অতঃপর তাদের একজন বলল, আমি রাত ভর সালাত আদায় করব। দ্বিতীয় জন বলল, আমি সারা বছর সিয়াম পালন করব, পরিত্যাগ করব না। তৃতীয় জন বলল, আমি নারীদের থেকে বিচ্ছিন্ন থাকব কখনও বিবাহ করব না। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা কি এমন এমন বলেছ? শুনে রাখ! আল্লাহ্র কসম! আমি তোমাদের চেয়ে আল্লাহ্কে অধিক ভয় করি এবং তোমাদের চেয়ে অধিক মুত্তাকী। তবে আমি সিয়াম পালন করি আবার ছেড়েও দেই। রাত জেগে সালাত আদায় করি আবার নিদ্রা যাই তেমনি নারীদের বিবাহ করেছি। সুতরাং যে আমার সুন্নাতের প্রতি অনিহা প্রকাশ করে সে আমার দলভুক্ত নয়। [বুখারী : ৫০৬৩ ও মুসলিম : ১৪০১]
এখানে সুন্নাত বলে পথ বা আদর্শ বুঝানো হয়েছে। ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নাত বুঝানো হয়নি। আর কোন জিনিসের প্রতি অনিহা থাকার অর্থ তা থেকে বিমুখ হয়ে অন্য কিছুর প্রতি আগ্রহী হওয়া। তাহলে হাদীসের অর্থ হল, যে ব্যক্তি আমার আদর্শ থেকে বিমুখ হয়ে অন্য কোন আদর্শ গ্রহণ করল, সে আমার দলভুক্ত হবে না। [ফাতহুল বারী : ৯/১০৫]
ইতিপূর্বে স্পষ্ট হয়েছে যে, বিদআত দু‘প্রকারঃ (ক) কর্মমূলক বিদআত ও
(খ) বর্জনমূলক বিদআত। যেমনিভাবে স্পষ্ট হয়েছে যে, সুন্নাত দু‘প্রকার করণীয় সুন্নাত ও বর্জনীয় সুন্নাত।
সুতরাং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাত, কখনও কোন কাজ করার মাধ্যমে হতে পারে। আবার কোন কিছু বর্জন করার মাধ্যমেও হতে পারে।
যেমনিভাবে আল্লাহ তাআলা আমাদের উপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ঐ সকল কাজের অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক করেছেন, যার মাধ্যমে আল্লাহ্র নৈকট্য অর্জন করা যায়। তবে শর্ত হলো সে ইবাদতটি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য নির্দিষ্ট না হওয়া।
তেমনিভাবে আল্লাহ্ তাআলা আমাদের কাছে কামনা করেন যে, আমরা যেন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা বর্জন করেছেন তা বর্জন করার মাধ্যমে তাঁর আনুগত্য করি। সুতরাং তখন বর্জন করাটাই সুন্নাত। আবার তিনি যা করেছেন তা পালন করাটাই সুন্নাত।
তাই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা করেছেন তা বর্জন করার মাধ্যমে আমরা আল্লাহ্র নৈকট্য অর্জন করতে পারব না। তেমনি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা বর্জন করেছেন সে গুলো পালন করার মাধ্যমেও আমরা আল্লাহ্র নৈকট্য অর্জন করতে পারব না। সুতরাং বর্জিত বিষয়াবলী কর্মে পরিণতকারী কৃত বিষয়াবলী পরিহারকারীর ন্যায়। উভয়ের মাঝে কোন পার্থক্য নাই। [আল-ইতিসাম, লেখক শাতেবী (র) : ১/৫৭-৬০]
তৃতীয় প্রকারঃ বিশ্বাসগত, বক্তব্যধর্মী ও কর্মমূলক বিদআত
১। বিশ্বাসগত ও বক্তব্যধর্মী বিদআত
যেমন জাহমিয়্যাহ, মু‘তাজিলা, শিয়া, রাফেজি ও সকল পথভ্রষ্টদলগুলোর বক্তব্য ও তাদের বিশ্বাস। তাদের মাঝে ঐ সকল জামাআতও অন্তর্ভুক্ত হবে, যারা নতুন আত্মপ্রকাশ করেছে। যেমন কাদিয়ানী, বাহাই। এছাড়াও সকল বাতেনী জামাত। যেমন ইসমাঈলী নাছিরিয়্যাহ, দরওয়াজ ও রাফেজা।
২। কর্মমূলক বিদআত যা কয়েক প্রকার
প্রথম প্রকারঃ মূল ইবাদতের মধ্যে বিদআত। নতুন কোন ইবাদত প্রবর্তন করা শরীয়তে যার কোন ভিত্তি নেই। যেমন শরীয়তের অনুমোদন বিহীন সালাত প্রবর্তন করা, শরীয়তের অনুমোদন বিহীন সিয়াম প্রবর্তন করা বা এমন ঈদ পালন করা যা শরীয়তে নেই। যেমন ঈদে মিলাদুন্নবী পালন ইত্যাদি।
দ্বিতীয় প্রকারঃ শরীয়ত সমর্থিত ইবাদতে কিছু সংযোজন। যেমনঃ জোহর অথবা আছর সালাতের রাকাত বৃদ্ধি করে পাঁচ রাকাত পড়া।
তৃতীয় প্রকারঃ শরীয়ত সমর্থিত ইবাদত আদায়ের পদ্ধতিতে বিদআত অর্থাৎ বৈধ ইবাদতকে অবৈধ পন্থায় আদায় করা। এমনিভাবে শরীয়ত সম্মত জিকির দলবদ্ধভাবে সমস্ব^রে আদায় করা এবং ইবাদত করার ক্ষেত্রে নিজ জীবনের উপর কঠোরতা করা যা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত নেই।
চতুর্থ প্রকারঃ শরীয়ত সম্মত ইবাদতের জন্য এমন এক সময় নির্ধারণ করা যা শরীয়ত নির্ধারণ করেনি। যেমন-শাবান মাসের ১৫তম দিন সিয়াম পালন ও ১৪তম দিবাগত রাত সালাত আদায়ের জন্য নির্ধারণ করা। কেননা সিয়াম ও সালাত শরীয়ত সম্মত, তবে তা কোন বিশেষ সময়ে আদায়ের জন্য নির্ধারণের জন্য প্রমাণের প্রয়োজন, যা এ ক্ষেত্রে নেই। [মাজমুয়ায়ে ফতোয়ায়ে শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া : ১৮/৩৪৬]
নিশ্চয়ই শরীয়তে সকল প্রকার বিদআত হারাম ও পথভ্রষ্টতা
এ প্রসঙ্গে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ . ( أبو داود و ترمذي )
অর্থঃ তোমরা নব্য সৃষ্ট বিষয় হতে বেঁচে থাক। কেননা সকল নবসৃষ্ট বস্ত্ত বিদআত ও সকল বিদআত পথভ্রষ্টতা। [আবু দাউদ : ৪৬০৭ ও তিরমিজি : ২৬৭৬]
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ . ( بخاري و مسلم )
অর্থঃ যে আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু প্রবর্তন করে যা এর অন্তর্ভূক্ত নয় তা প্রত্যাখ্যাত। [বুখারী : ২৬৯৭ ও মুসলিম : ১৭১৮]
অন্য বর্ণনায় রয়েছেঃ
مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ . ( مسلم )
অর্থঃ যে ব্যক্তি (ইবাদতের) নামে এমন কোন আমল করে যা আমাদের পক্ষ থেকে অনুমোদিত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত। [মুসলিম : ১৭১৮]
উভয় হাদীসে এ কথাই প্রমাণিত হয় যে, দ্বীনের মাঝে নবসৃষ্ট সকল বিষয় বিদআত এবং সকল বিদআতই ভ্রষ্টতা ও প্রত্যাখ্যাত। অতএব ইবাদতে বিদআত হারাম। তবে বিদআতের বিভিন্নতার কারণে এ হারাম বিভিন্ন রকম হয় ।
(১) কুফরীঃ যেমন-কবর বাসীর সম্মানে কবর তাওয়াফ করা, তার নামে মান্নত করা, জবেহ করা, তার কাছে দুআ করা ও আশ্রয় চাওয়া। যেমন- জাহমিয়া, মুতাজিলা ও শিয়া সম্প্রদায় করে থাকে।
(২) শিরকঃ যেমন-কবরের উপর গম্বুজ নির্মাণ ও কবরের পাশে সালাত আদায় ও দুআ করা।
(৩) গোনাহের কাজঃ যেমন-বিবাহ না করে বৈরাগ্য অবলম্বন করা, রোদে দাঁড়িয়ে সিয়াম পালন করা ও কামশক্তি নির্মূলের জন্য হিজরা হওয়া ইত্যাদি। [কিতাবুত তাওহীদ -ড.সালেহ ফাওযান : ৮২পৃ:]
ইমাম শাতেবী রহ. বলেন, বিদআতপন্থীর গুনাহ একটির মধ্যে সীমিত থাকে না। বরং বিভিন্ন দিকে শাখা বিস্তার করে। যেমন-
১। বিদআতী ব্যক্তি ইজতিহাদের দাবীদার হয় বা কারো তাকলীদ করে।
২। বিদআতপন্থী হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার মানসে বিদআত প্রবর্তন করে। যথা মান-সম্মান, ধন-দৌলত, ধর্ম, বুদ্ধি অথবা অন্য কোন স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে।
৩। বিদআতপন্থী স্বীয় কর্মকান্ড প্রকাশ্যে অথবা গোপনে করে।
৪। স্বীয় বিদআতের দিকে মানুষকে আহবান করে আবার কখনও করে না।
৫। সে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের বহির্ভূত গণ্য হবে বা হবে না।
৬। সেটা মৌলিক বিদআত অথবা আপেক্ষিক বিদআত হবে।
৭। বিদআতটি স্পস্ট হবে অথবা অস্পস্ট হবে।
৮। বিদআতটি কুফরী হবে বা হবে না।
৯। বিদআতটি একাধিকবার করা হবে বা হবে না।
তিনি (ইমাম শাতেবী) বলেন, এ সকল দিক তথা কারণগুলোর ভিন্নতার ফলে গুনাহও বিভিন্ন ধরণের হয়। [আল-ইতিসাম- শাতেবী (র) : ১/২১৬-২২৪পৃ:] তিনি আরো বলেন, এ সকল কারণে কোন কোন বিদআত হারাম আবার কোনটি মাকরূহ। তবে পথভ্রষ্ট করার ক্ষেত্রে সবগুলো একই পর্যায়ের।
গুনাহের দিকে লক্ষ্য করে বিদআত তিন ভাগে বিভক্ত।
১মঃ সুষ্পষ্ট কুফরী,
২য়ঃ কবীরা গুনাহ,
৩য়ঃ সগীরা গুনাহ। [আল-ইতিসাম- শাতেবী (র) : ২/৫১৬-৫১৭পৃ:]
যে সকল বিদআত সগীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত তার জন্য কয়েকটি শর্ত আছে।
১। এটা সর্বদা করা যাবে না। কেননা সর্বদা করার ফলে তা কবীরা গুনাহ হয়ে যাবে।
২। বিদআতের দিকে মানুষকে আহবান না করা। কেননা এর ফলে উক্ত বিদআতী কাজ বৃদ্ধি পেয়ে কবীরা গুনাহ হয়ে যাবে।
৩। মানুষ জমায়েতের স্থানে এবং যেখানে সুন্নাত আমল আদায় করা হয় সেখানে বিদআতটি পালন না করা।
৪। বিদআতকে ছোট ও তুচ্ছ মনে না করা। কেননা এর ফলে গুনাহকে ছোট করে দেখা হয়। আর গুনাহকে ছোট করে দেখাও কবিরা গুনাহ।
এ তিন প্রকারের সব গুলোকেই গোমরাহী বলা হয়েছে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকল বিদআতকে গোমরাহী বা পথভ্রষ্টতা বলে আখ্যায়িত করেছেন। ফলে এ হাদীস কুফর ও পাপাচারমূলক সকল বিদআতকেই অন্তর্ভুক্ত করবে, চাই তা ছোট হোক বা বড়।
কিছু সংখ্যক উলামায়ে কেরাম শরীয়তের আহকামের দিকে লক্ষ্য করে বিদআতকেও পাঁচ ভাগে বিভক্ত করেন। যথাঃ
১. ওয়াজিব, ২. হারাম, ৩. মানদুব, ৪. মাকরূহ ও ৫. মুবাহ।
কিন্তু বিদআতের এ প্রকারভেদ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বানীঃ فَإنَّ كُلَّ مُحْدَثَة بدْعَةٌ وَ كُلَّ بدْعَة ضَلالَة . ( أبوداود ) এর পরিপন্থী। [. আবু দাউদ-৪৬০৭]
ইমাম শাতেবী রহ. প্রকারভেদগুলো বর্ণনা করার পর তা খন্ডন করে বলেন, এ প্রকারভেদও নবসৃষ্ট, কারণ শরীয়তে এর কোন দলিল নেই।
বিদআতের মেŠলিকত্ব হল, তার পক্ষে শরয়ী কোন দলিল, বর্ণনা ও নীতিমালা না থাকা। যদি শরীয়তে তা ওয়াজিব, সুন্নাত, মুবাহ হওয়ার কোন দলিল থাকে তাহলে তা বিদআত হবে না। বরং তা শরীয়ত কর্তৃক আদিষ্ট বা অনুমোদিত আমলের অন্তর্ভুক্ত হবে। অতএব বিদআত ও শরীয়তের দলিল সম্পন্ন আমল এক হতে পারে না। আর যা মাকরুহ ও হারাম তা পুরোপুরিই বিদআত। [. আল-ইতিসাম- শাতেবী ১/২৪৬]
এ প্রসঙ্গে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ . ( أبو داود و ترمذي )
অর্থঃ তোমরা নব্য সৃষ্ট বিষয় হতে বেঁচে থাক। কেননা সকল নবসৃষ্ট বস্ত্ত বিদআত ও সকল বিদআত পথভ্রষ্টতা। [আবু দাউদ : ৪৬০৭ ও তিরমিজি : ২৬৭৬]
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ . ( بخاري و مسلم )
অর্থঃ যে আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু প্রবর্তন করে যা এর অন্তর্ভূক্ত নয় তা প্রত্যাখ্যাত। [বুখারী : ২৬৯৭ ও মুসলিম : ১৭১৮]
অন্য বর্ণনায় রয়েছেঃ
مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ . ( مسلم )
অর্থঃ যে ব্যক্তি (ইবাদতের) নামে এমন কোন আমল করে যা আমাদের পক্ষ থেকে অনুমোদিত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত। [মুসলিম : ১৭১৮]
উভয় হাদীসে এ কথাই প্রমাণিত হয় যে, দ্বীনের মাঝে নবসৃষ্ট সকল বিষয় বিদআত এবং সকল বিদআতই ভ্রষ্টতা ও প্রত্যাখ্যাত। অতএব ইবাদতে বিদআত হারাম। তবে বিদআতের বিভিন্নতার কারণে এ হারাম বিভিন্ন রকম হয় ।
(১) কুফরীঃ যেমন-কবর বাসীর সম্মানে কবর তাওয়াফ করা, তার নামে মান্নত করা, জবেহ করা, তার কাছে দুআ করা ও আশ্রয় চাওয়া। যেমন- জাহমিয়া, মুতাজিলা ও শিয়া সম্প্রদায় করে থাকে।
(২) শিরকঃ যেমন-কবরের উপর গম্বুজ নির্মাণ ও কবরের পাশে সালাত আদায় ও দুআ করা।
(৩) গোনাহের কাজঃ যেমন-বিবাহ না করে বৈরাগ্য অবলম্বন করা, রোদে দাঁড়িয়ে সিয়াম পালন করা ও কামশক্তি নির্মূলের জন্য হিজরা হওয়া ইত্যাদি। [কিতাবুত তাওহীদ -ড.সালেহ ফাওযান : ৮২পৃ:]
ইমাম শাতেবী রহ. বলেন, বিদআতপন্থীর গুনাহ একটির মধ্যে সীমিত থাকে না। বরং বিভিন্ন দিকে শাখা বিস্তার করে। যেমন-
১। বিদআতী ব্যক্তি ইজতিহাদের দাবীদার হয় বা কারো তাকলীদ করে।
২। বিদআতপন্থী হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার মানসে বিদআত প্রবর্তন করে। যথা মান-সম্মান, ধন-দৌলত, ধর্ম, বুদ্ধি অথবা অন্য কোন স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে।
৩। বিদআতপন্থী স্বীয় কর্মকান্ড প্রকাশ্যে অথবা গোপনে করে।
৪। স্বীয় বিদআতের দিকে মানুষকে আহবান করে আবার কখনও করে না।
৫। সে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের বহির্ভূত গণ্য হবে বা হবে না।
৬। সেটা মৌলিক বিদআত অথবা আপেক্ষিক বিদআত হবে।
৭। বিদআতটি স্পস্ট হবে অথবা অস্পস্ট হবে।
৮। বিদআতটি কুফরী হবে বা হবে না।
৯। বিদআতটি একাধিকবার করা হবে বা হবে না।
তিনি (ইমাম শাতেবী) বলেন, এ সকল দিক তথা কারণগুলোর ভিন্নতার ফলে গুনাহও বিভিন্ন ধরণের হয়। [আল-ইতিসাম- শাতেবী (র) : ১/২১৬-২২৪পৃ:] তিনি আরো বলেন, এ সকল কারণে কোন কোন বিদআত হারাম আবার কোনটি মাকরূহ। তবে পথভ্রষ্ট করার ক্ষেত্রে সবগুলো একই পর্যায়ের।
গুনাহের দিকে লক্ষ্য করে বিদআত তিন ভাগে বিভক্ত।
১মঃ সুষ্পষ্ট কুফরী,
২য়ঃ কবীরা গুনাহ,
৩য়ঃ সগীরা গুনাহ। [আল-ইতিসাম- শাতেবী (র) : ২/৫১৬-৫১৭পৃ:]
যে সকল বিদআত সগীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত তার জন্য কয়েকটি শর্ত আছে।
১। এটা সর্বদা করা যাবে না। কেননা সর্বদা করার ফলে তা কবীরা গুনাহ হয়ে যাবে।
২। বিদআতের দিকে মানুষকে আহবান না করা। কেননা এর ফলে উক্ত বিদআতী কাজ বৃদ্ধি পেয়ে কবীরা গুনাহ হয়ে যাবে।
৩। মানুষ জমায়েতের স্থানে এবং যেখানে সুন্নাত আমল আদায় করা হয় সেখানে বিদআতটি পালন না করা।
৪। বিদআতকে ছোট ও তুচ্ছ মনে না করা। কেননা এর ফলে গুনাহকে ছোট করে দেখা হয়। আর গুনাহকে ছোট করে দেখাও কবিরা গুনাহ।
এ তিন প্রকারের সব গুলোকেই গোমরাহী বলা হয়েছে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকল বিদআতকে গোমরাহী বা পথভ্রষ্টতা বলে আখ্যায়িত করেছেন। ফলে এ হাদীস কুফর ও পাপাচারমূলক সকল বিদআতকেই অন্তর্ভুক্ত করবে, চাই তা ছোট হোক বা বড়।
কিছু সংখ্যক উলামায়ে কেরাম শরীয়তের আহকামের দিকে লক্ষ্য করে বিদআতকেও পাঁচ ভাগে বিভক্ত করেন। যথাঃ
১. ওয়াজিব, ২. হারাম, ৩. মানদুব, ৪. মাকরূহ ও ৫. মুবাহ।
কিন্তু বিদআতের এ প্রকারভেদ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বানীঃ فَإنَّ كُلَّ مُحْدَثَة بدْعَةٌ وَ كُلَّ بدْعَة ضَلالَة . ( أبوداود ) এর পরিপন্থী। [. আবু দাউদ-৪৬০৭]
ইমাম শাতেবী রহ. প্রকারভেদগুলো বর্ণনা করার পর তা খন্ডন করে বলেন, এ প্রকারভেদও নবসৃষ্ট, কারণ শরীয়তে এর কোন দলিল নেই।
বিদআতের মেŠলিকত্ব হল, তার পক্ষে শরয়ী কোন দলিল, বর্ণনা ও নীতিমালা না থাকা। যদি শরীয়তে তা ওয়াজিব, সুন্নাত, মুবাহ হওয়ার কোন দলিল থাকে তাহলে তা বিদআত হবে না। বরং তা শরীয়ত কর্তৃক আদিষ্ট বা অনুমোদিত আমলের অন্তর্ভুক্ত হবে। অতএব বিদআত ও শরীয়তের দলিল সম্পন্ন আমল এক হতে পারে না। আর যা মাকরুহ ও হারাম তা পুরোপুরিই বিদআত। [. আল-ইতিসাম- শাতেবী ১/২৪৬]
১। মৃত ব্যক্তির নিকট নিজের প্রয়োজনীয় বস্ত্ত চাওয়া। এ প্রকার বিদআত মূর্তি পুজার অন্তর্ভুক্ত।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ
قٌلْ ادْعُواْ الَّذِينَ زَعَمْتُم مِّن دُونِهِ فَلاَ يَمْلِكُونَ كَشْفَ الضُّرِّ عَنكُمْ وَلاَ تَحْوِيلاً . أُوْلِئِكَ الَّذِيْنَ يَدْعُونَ يَبْتَغُونَ إِلَى ربِهِمُ الوَسِيلَةَ أَيُّهُمُ أَقَْربُ وَيَرْجُونَ رَحْمَتَهُ وَيَخَافُونَ عَذَابَهُ إِنَّ عَذابَ ربِّكَ كَانَ مَحْذُورًا ( الإسراء : 56-57)
অর্থঃ বলুন, তোমরা আল্লাহ্ ছাড়া যাদেরকে মা‘বুদ মনে করে আহবান কর; তারা তোমাদের দুঃখ-দুর্দশা দূর করার অথবা পরিবর্তন করার শক্তি রাখে না। তারা যাদের আহবান করে তারাই তো নিজ রবের নৈকট্য লাভের উপায় সন্ধান করে যে, তাদের কে কত নিকটতম হতে পারে, তাঁর দয়া প্রত্যাশা করে ও তাঁর শাস্তিকে ভয় করে। তোমার রবের শাস্তি ভয়াবহ। [ইসরাঃ ৫৬-৫৭]
অতএব যারাই নবী, অলী, নেককার বুজুর্গদের ডাকে করে এবং তাদের এক প্রকার মা‘বুদ বানায়; এ আয়াত তাদের সকলকে অন্তর্ভুক্ত করে। কেননা এ আয়াত ঐ সকল লোকদের ব্যপারে যারা আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যকে মা‘বুদ হিসেবে ডাকে। অথচ সকল মা‘বুদই আল্লাহ্র নৈকট্য লাভের উসিলা তালাশ করে, তাঁর রহমত কামনা করে এবং তাঁর আযাবকে ভয় করে।
অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত মৃত অথবা অদৃশ্য কোন পীর, অলী বা নবীর কাছে কোন কিছু প্রার্থনা করল, সে বড় শিরক করল, যা আল্লাহ কখনও ক্ষমা করবেন না। এমনিভাবে যে ব্যক্তি কোন নবী বা অলীর ব্যাপারে অতিরঞ্জন করল এবং গায়রুল্লাহকে এভাবে সম্বোধন করল যে, হে বাবা! আমাকে সাহায্য কর, আমাকে মদদ কর, আমার ফরিয়াদ কবুল কর, আমাকে রিযিক দাও, আমাকে সন্তান দাও ইত্যাদি। এটাও বড় শিরক। এ ধরণের ব্যক্তিকে তওবা করতে হবে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা নবী-রাসূলগণকে একমাত্র তাঁর ইবাদত করার এবং তাঁর সাথে কোন প্রকার শিরক না করার বিধান দিয়ে প্রেরণ করেছেন।
২। মৃত ব্যক্তির ওয়াসিলায় আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা। এটা বিদআতের অর্ন্তভুক্ত। তবে শিরকে আকবার হবে না।
কোন কোন লোক নবী এবং অলীগণের ওসিলায় দুআ করেন। যেমন- হে আল্লাহ! তোমার নবীগণের, ফেরেশতাগণের, ওলীগণের, অমুক শায়খের, অমুকের সম্মানে এবং লৌহ কলমের ওসিলায় আমার দুআ কবুল কর ইত্যাদি শব্দে দুআ করে থাকে। এগুলো সব নিকৃষ্টতম বিদআতের অন্তর্ভুক্ত।
তবে হ্যাঁ; ওসিলা সম্পর্কে হাদীসে যা পাওয়া যায় তা হল, আল্লাহর নাম, তাঁর গুণাবলী ও নিজ নেক আমলের ওসিলা করে দুআ করা জায়েয। যেমন- বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত (গুহায় আটকে পড়া) তিন ব্যক্তির ঘটনা দ্বারা জানা যায়। তবে জীবিত ব্যক্তির দুআর ওসিলায় অপর মুসলিম ভাইয়ের জন্য দুআর প্রমাণ পাওয়া যায়।
৩। কবরের পাশে দুআ করলে কবুল হয় অথবা কবরের পাশে দুআ করাকে মসজিদে দুআ করার চেয়ে উত্তম মনে করা এবং এ উদ্দেশ্যে কবরের পাশে যাওয়া ইত্যাদি সকলের ঐকমত্যে হারাম।
এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন অনুমোদন দেননি। এমন কি সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন ও ইমামগণের কেউ এমন আমল করেননি। সাহাবীগণ অনেক বিপদ-আপদে পড়েছেন, তথাপি কোন দিন কোন সাহাবী রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবরে আসেননি। বরং উমর (রা) রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চাচা আববাস (রা) কে নিয়ে বের হয়েছিলেন এবং বৃষ্টির জন্য তাঁর ওসিলায় দুআ করেছিলেন। ছলফে ছালেহীনগণ কবরের পাশে দুআ করতে নিষেধ করেছেন।
আলী ইবনে হোসাইন (রা) জনৈক ব্যক্তিকে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবরের পাশে সুরঙ্গে প্রবেশ করতে দেখে; তাকে ডেকে বললেন, আমি কি আপনাকে আমার নানার একটি হাদীস শুনাব না? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছিলেনঃ
لَاتَجْعَلُوْا قَبْرِيْ عِيْداً وَلَا تَجْعَلُوْا بُيُوْتَكُمْ قبُوُرْاً . وَصَلُّوْا عَلَيَّ وَ سَلِّمُوْا حَيْثُمَا كُنْتُمْ فَسَيُبَلِّغُنِيْ سَلَامَكُمْ وَصَلَاتَكُمْ . ( فضل الصلاة على النبي صلى الله عليه وسلم )
অর্থঃ তোমরা আমার কবরকে ঈদ বা আনন্দ উৎসবের জায়গা বানিও না, তোমাদের ঘরকে কবর বানিও না। তোমরা আমার উপর সালাত ও সালাম পাঠ কর। তোমরা যেখানেই তা পাঠ কর না কেন তোমাদের সালাম ও সালাত আমার কাছে পেঁŠছে দেয়া হয়। [ফজুলস সালাত আলান নবী (সঃ):৩৪ পৃ]
যেখানে ভূখন্ডের সর্বশ্রেষ্ঠ কবর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কবর, সেখানেই ঈদ বা ওরস করতে নিষেধ করা হয়েছে। তাহলে দুনিয়ার অন্যান্য কবরের কথা বলার অপেক্ষাই রাখে না।
আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
لَا تَجْعَلُوْا بُيُوْتَكُمْ قَبُوْراً وَلَا تَجْعَلُوْا قَبْرِيَ عِيْدًا وَصَلُّوْا عَليََّ فَأِنَّ صَلَاتَكُمْ تَبْلُغُنِيْ حَيْثُ كُنْتُمْ . ( أبو داود )
অর্থঃ তোমরা নিজেদের ঘরকে কবর বানিও না, আমার কবরকে ঈদ বা উৎসবস্থল বানিও না। আমার উপর দরুদ পাঠ কর, তোমরা যেখানেই থাক না কেন, তোমাদের দরূদ ও সালাম আমার কাছে পেঁ Šছে দেয়া হয়। [আবু দাউদ : ২০৪২]
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ
قٌلْ ادْعُواْ الَّذِينَ زَعَمْتُم مِّن دُونِهِ فَلاَ يَمْلِكُونَ كَشْفَ الضُّرِّ عَنكُمْ وَلاَ تَحْوِيلاً . أُوْلِئِكَ الَّذِيْنَ يَدْعُونَ يَبْتَغُونَ إِلَى ربِهِمُ الوَسِيلَةَ أَيُّهُمُ أَقَْربُ وَيَرْجُونَ رَحْمَتَهُ وَيَخَافُونَ عَذَابَهُ إِنَّ عَذابَ ربِّكَ كَانَ مَحْذُورًا ( الإسراء : 56-57)
অর্থঃ বলুন, তোমরা আল্লাহ্ ছাড়া যাদেরকে মা‘বুদ মনে করে আহবান কর; তারা তোমাদের দুঃখ-দুর্দশা দূর করার অথবা পরিবর্তন করার শক্তি রাখে না। তারা যাদের আহবান করে তারাই তো নিজ রবের নৈকট্য লাভের উপায় সন্ধান করে যে, তাদের কে কত নিকটতম হতে পারে, তাঁর দয়া প্রত্যাশা করে ও তাঁর শাস্তিকে ভয় করে। তোমার রবের শাস্তি ভয়াবহ। [ইসরাঃ ৫৬-৫৭]
অতএব যারাই নবী, অলী, নেককার বুজুর্গদের ডাকে করে এবং তাদের এক প্রকার মা‘বুদ বানায়; এ আয়াত তাদের সকলকে অন্তর্ভুক্ত করে। কেননা এ আয়াত ঐ সকল লোকদের ব্যপারে যারা আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যকে মা‘বুদ হিসেবে ডাকে। অথচ সকল মা‘বুদই আল্লাহ্র নৈকট্য লাভের উসিলা তালাশ করে, তাঁর রহমত কামনা করে এবং তাঁর আযাবকে ভয় করে।
অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত মৃত অথবা অদৃশ্য কোন পীর, অলী বা নবীর কাছে কোন কিছু প্রার্থনা করল, সে বড় শিরক করল, যা আল্লাহ কখনও ক্ষমা করবেন না। এমনিভাবে যে ব্যক্তি কোন নবী বা অলীর ব্যাপারে অতিরঞ্জন করল এবং গায়রুল্লাহকে এভাবে সম্বোধন করল যে, হে বাবা! আমাকে সাহায্য কর, আমাকে মদদ কর, আমার ফরিয়াদ কবুল কর, আমাকে রিযিক দাও, আমাকে সন্তান দাও ইত্যাদি। এটাও বড় শিরক। এ ধরণের ব্যক্তিকে তওবা করতে হবে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা নবী-রাসূলগণকে একমাত্র তাঁর ইবাদত করার এবং তাঁর সাথে কোন প্রকার শিরক না করার বিধান দিয়ে প্রেরণ করেছেন।
২। মৃত ব্যক্তির ওয়াসিলায় আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা। এটা বিদআতের অর্ন্তভুক্ত। তবে শিরকে আকবার হবে না।
কোন কোন লোক নবী এবং অলীগণের ওসিলায় দুআ করেন। যেমন- হে আল্লাহ! তোমার নবীগণের, ফেরেশতাগণের, ওলীগণের, অমুক শায়খের, অমুকের সম্মানে এবং লৌহ কলমের ওসিলায় আমার দুআ কবুল কর ইত্যাদি শব্দে দুআ করে থাকে। এগুলো সব নিকৃষ্টতম বিদআতের অন্তর্ভুক্ত।
তবে হ্যাঁ; ওসিলা সম্পর্কে হাদীসে যা পাওয়া যায় তা হল, আল্লাহর নাম, তাঁর গুণাবলী ও নিজ নেক আমলের ওসিলা করে দুআ করা জায়েয। যেমন- বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত (গুহায় আটকে পড়া) তিন ব্যক্তির ঘটনা দ্বারা জানা যায়। তবে জীবিত ব্যক্তির দুআর ওসিলায় অপর মুসলিম ভাইয়ের জন্য দুআর প্রমাণ পাওয়া যায়।
৩। কবরের পাশে দুআ করলে কবুল হয় অথবা কবরের পাশে দুআ করাকে মসজিদে দুআ করার চেয়ে উত্তম মনে করা এবং এ উদ্দেশ্যে কবরের পাশে যাওয়া ইত্যাদি সকলের ঐকমত্যে হারাম।
এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন অনুমোদন দেননি। এমন কি সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন ও ইমামগণের কেউ এমন আমল করেননি। সাহাবীগণ অনেক বিপদ-আপদে পড়েছেন, তথাপি কোন দিন কোন সাহাবী রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবরে আসেননি। বরং উমর (রা) রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চাচা আববাস (রা) কে নিয়ে বের হয়েছিলেন এবং বৃষ্টির জন্য তাঁর ওসিলায় দুআ করেছিলেন। ছলফে ছালেহীনগণ কবরের পাশে দুআ করতে নিষেধ করেছেন।
আলী ইবনে হোসাইন (রা) জনৈক ব্যক্তিকে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবরের পাশে সুরঙ্গে প্রবেশ করতে দেখে; তাকে ডেকে বললেন, আমি কি আপনাকে আমার নানার একটি হাদীস শুনাব না? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছিলেনঃ
لَاتَجْعَلُوْا قَبْرِيْ عِيْداً وَلَا تَجْعَلُوْا بُيُوْتَكُمْ قبُوُرْاً . وَصَلُّوْا عَلَيَّ وَ سَلِّمُوْا حَيْثُمَا كُنْتُمْ فَسَيُبَلِّغُنِيْ سَلَامَكُمْ وَصَلَاتَكُمْ . ( فضل الصلاة على النبي صلى الله عليه وسلم )
অর্থঃ তোমরা আমার কবরকে ঈদ বা আনন্দ উৎসবের জায়গা বানিও না, তোমাদের ঘরকে কবর বানিও না। তোমরা আমার উপর সালাত ও সালাম পাঠ কর। তোমরা যেখানেই তা পাঠ কর না কেন তোমাদের সালাম ও সালাত আমার কাছে পেঁŠছে দেয়া হয়। [ফজুলস সালাত আলান নবী (সঃ):৩৪ পৃ]
যেখানে ভূখন্ডের সর্বশ্রেষ্ঠ কবর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কবর, সেখানেই ঈদ বা ওরস করতে নিষেধ করা হয়েছে। তাহলে দুনিয়ার অন্যান্য কবরের কথা বলার অপেক্ষাই রাখে না।
আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
لَا تَجْعَلُوْا بُيُوْتَكُمْ قَبُوْراً وَلَا تَجْعَلُوْا قَبْرِيَ عِيْدًا وَصَلُّوْا عَليََّ فَأِنَّ صَلَاتَكُمْ تَبْلُغُنِيْ حَيْثُ كُنْتُمْ . ( أبو داود )
অর্থঃ তোমরা নিজেদের ঘরকে কবর বানিও না, আমার কবরকে ঈদ বা উৎসবস্থল বানিও না। আমার উপর দরুদ পাঠ কর, তোমরা যেখানেই থাক না কেন, তোমাদের দরূদ ও সালাম আমার কাছে পেঁ Šছে দেয়া হয়। [আবু দাউদ : ২০৪২]
সমকালীন প্রচলিত অসংখ্য বিদআত রয়েছে। তার কিছু নিম্নে তুলে ধরা হলঃ
প্রথমঃ মিলাদ মাহফিল
মিলাদ মাহফিল করা বিদআত। হিজরী চতুর্থ শতাব্দীতে উবায়দীরা এ বিদআতের প্রবর্তন করে। বর্তমান ও পুর্বেকার সকল উলামায়ে কেরাম একে বাতিল বলে আখ্যায়িত করেছেন। যারা এ ধরণের বিদআতের প্রবর্তন করেছে ও আমল করেছে, উলামায়ে কেরাম তাদের প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাই মিলাদ মাহফিল করা বৈধ নয়। কারণঃ
১ম কারণঃ যে সকল কুসংস্কারের ব্যাপারে শরীয়তে কোন প্রমাণ নেই; তার অন্যতম হল মিলাদ মাহফিল। কেননা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এ প্রসঙ্গে কোন বক্তব্য, আমল বা সমর্থন পাওয়া যায় না।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَمَآ ءأتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا . ( الحشر : 7)
অর্থঃ রাসূল যা কিছু নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাক। [হাশর : ৭]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرجُواللهَ وَالْيَومَ اْلاخِرَ وَ ذَكَرَ اللهَ كَثِيْرًا . ( الأحزاب : 21)
অর্থঃ অবশ্যই আল্লাহর রাসূলের জীবনের মাঝে রয়েছে উত্তম আদর্শ ঐ ব্যক্তির জন্য, যে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি ও কিয়ামত দিবসে (মুক্তির) আশা করে। আর অধিক পরিমাণে আল্লাহকে স্মরণ করে। [আহযাবঃ ২১]
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ . ( بخاري و مسلم )
অর্থঃ যে আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু প্রবর্তন করে যা এর অন্তর্ভূক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত। [বুখারী : ২৬৯৭ ও মুসলিম : ১৭১৮]
২য় কারণঃ খোলাফায়ে রাশেদীন এবং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অন্যান্য সাহাবীগণ মিলাদ মাহফিল করেননি। এমন কি তার দাওয়াতও দেননি, অথচ তারাই হচ্ছেন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পর সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত।
খুলাফায়ে রাশেদীনের মর্যাদা সম্পর্কে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ . ( أبو داود )
অর্থঃ তোমাদের জন্য আবশ্যক আমার ও আমার পরবর্তী হেদায়াত প্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাতকে এমনভাবে আঁকড়ে ধরা যেভাবে দাঁত দিয়ে কোন জিনিস দৃঢ়ভাবে কামড়ে ধরা হয়। আর শরীয়তে নিত্য নতুন জিনিস আবিস্কার করা হতে বেঁচে থাক। কেননা সকল নবসৃষ্ট বস্ত্তই বিদআত। আর প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহী। [আবু দাউদ:৪৬০৭]
৩য় কারণঃ মীলাদ মাহফিল করা বক্রতা সৃষ্টিকারী পথভ্রষ্টদের প্রথা। এ প্রথাকে সর্ব প্রথম ফাতেমী ও উবাইদী গোত্রের লোকেরা হিজরী চতুর্থ শতাব্দীতে প্রবর্তন করে। তারা নিজেদেরকে ফাতেমা (রা) এর সাথে সম্পৃক্ত করে, যা অন্যায়, অযেŠক্তিক ও অপবাদ ব্যতীত আর কিছুই নয়। মূলতঃ তারা ইহুদী। কেউ বলেন, তারা অগ্নিপুজক, আবার কেউ বলেন, তারা মুলহিদীন বা নাস্তিক। তাদের প্রথম ব্যক্তি হল, মুইজুদ্দীন ওবায়দী। সে পাশ্চাত্যের অধিবাসী। সেখান থেকে সে ৩৬১ হিজরীর শাওয়াল মাসে মিশরে আগমন করে এবং ৩৬২ হিজরী রমজান মাস পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে। [. বিদায়া ওয়ান নিহায়া-ইবনে কাসীর:১১/২৭২-৭৩]
এখন কোন বুদ্ধিমানের জন্য এটা কি উচিত হবে যে, সে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুন্নাত ছেড়ে একজন ইহুদীর অনুসরণ করবে? (আদৌ নয়)।
৪র্থ কারণঃ আল্লাহ্ তা‘আলা এ দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
اَلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكَمْ نعْمَتِيْ وَ رَضِيْتُ لَكُم الإِسْلامَ دِيْنًا .( المائدة : 3)
অর্থঃ আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পরিপূর্ণ করে দিলাম ও আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম। [মায়েদা: ৩]
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরিপূর্ণভাবে দ্বীনের প্রচার করেছেন। জান্নাতে পৌঁছার সকল পথ ও জাহান্নাম হতে বাঁচার সকল উপায় উম্মতের সামনে বর্ণনা করে দিয়েছেন।
একথা সকলের জানা যে, আমাদের রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকল নবীগণের সর্দার এবং তিনি সর্বশেষ নবী, পরিপূর্ণভাবে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছিয়েছেন এবং আল্লাহর বান্দাদের কল্যাণ কামনা করেছেন। সুতরাং যদি মীলাদ মাহফিল দ্বীনের অংশ হতো আর আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের কারণ হতো, তাহলে অবশ্যই তিনি তা উম্মতের জন্য বর্ণনা করতেন বা তাঁর জীবনে একবার হলেও আমল করে দেখাতেন।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
مَا بَعَثَ اللهُ مِنْ نَّبِيِّ إِلَّا كَانَ حَقًا عَلَيْهِ أَنْ يَّدُلَّ أُمَّتَهُ عَلَى خَيْرِ مَايَعْلَمُهُ لَهُمْ، وَيُنْذِرَهُمْ شَرَّ مَا يَعْلَمُهُ لَهُمْ . ( مسلم )
অর্থঃ আল্লাহ যত নবী প্রেরণ করেছেন তাদের সকলের উপর দায়িত্ব ছিল উম্মতকে ভাল কাজের দিক নির্দেশনা দেয়া ও অন্যায় কাজ হতে ভীতি প্রদর্শন করা। [মুসলিম:১৮৪৪]
৫ম কারণঃ মিলাদ মাহফিলের মত বিদআত আমলের আবিস্কারের মাধ্যমে এ কথা প্রতীয়মাণ হয় যে, আল্লাহ তা‘আলা দ্বীনকে এ উম্মতের জন্য পরিপূর্ণ করেননি, তাই দ্বীনের পরিপূরক কিছু আবিস্কারের প্রয়োজন হয়েছে। তেমনি একথাও বুঝা যায় যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মতের জন্য কল্যাণকর সকল বিষয়ের তাবলীগ বা প্রচার করেননি। যে কারণে পরবর্তীতে আল্লাহর অনুমোদন ব্যতিরেকে শরীয়তে নতুন কিছু আবিস্কারের প্রয়োজন দেখা দেয়। এর মাধ্যমে তারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে চায়। এটা চুড়ান্ত পর্যায়ের অন্যায় ও ভুল। এটা আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপর অভিযোগ। অথচ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর দ্বীনকে পরিপূর্ণ ও বান্দাদের জন্য সকল নিয়ামত সস্পূর্ণ করে দিয়েছেন।
৬ষ্ঠ কারণঃ এ উম্মতের বড় বড় আলেমগণ কুরআন ও হাদীসের ভিত্তিতে মীলাদ মাহফিলের প্রতি অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তারা বিদআত পরিহার করতে ও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অনুসরণ করতে বলেন এবং কথা, কাজ ও আমলে তাঁর বিরোধিতা করা হতে সতর্ক করেন।
৭ম কারণঃ মীলাদ মাহফিলের দ্বারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ভালবাসা অর্জিত হয় না বরং তাঁর অনুসরণ ও সুন্নাত অনুযায়ী আমলের দ্বারা তা অর্জিত হয়।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
قُلْ إِن كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللهَ فَاتَّبِعونِي يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَ يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللهُ غَفُورُ رَّحِيْمٌ . ( آل عمران : 31)
অর্থঃ )হে নবী( আপনি বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহর ভালবাসার দাবি কর, তাহলে আমার অনুসরণ কর। ফলে আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন এবং তোমাদের সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু। [আলে-ইমরান: ৩১]
৮ম কারণঃ মীলাদ মাহফিল, জসনে জুলুস ও ঈদে মিলাদুন্নবী ইহুদী ও খ্রীষ্টানদের উৎসবের সাদৃশ। আর ইহুদী ও খ্রীষ্টানদের সাদৃশ্য অবলম্বন করতে ও তাদের অনুসরণ করতে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন। [যাদুল মায়াদ-ইবনে কাইয়্যিম (র): ১/৫৯]
৯ম কারণঃ সারাদেশে মিলাদ মাহফিলে অধিক হারে লোক সমাগম দ্বারা জ্ঞানী লোকেরা কখনও প্রভাবিত হয় না। কেননা সঠিক ও সত্য হওয়াটা মানুষের আধিক্যতা দ্বারা বুঝা যায় না বরং শরীয়তের দলিলের মাধ্যমে বুঝা যায়।
আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَإِن تُطِعْ أكْثَرَ مَن فِى اْلأَرْضِ يُضِّلُوكَ عَن سَبِيلِ اللهِ . ( الأنعام : 116)
অর্থঃ যদি আপনি দুনিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকদের অনুকরণ করেন, তাহলে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করে দেবে। [আনআম: ১১৬]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَمَآأكْثَرُ النَّاسِ وَلَوْ حَرَصْتَ بمؤمنين . ( يوسف : 103)
অর্থঃ যদিও আপনি মনে প্রাণে চান তবুও অধিকাংশ লোক ঈমানদার নয়। [ইউসুফ: ১০৩]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَ قَلِيلٌ مِّنْ عِباَدِيَ الشَّكُور . ( السبا : 13)
অর্থঃ আমার বান্দাদের কম সংখ্যকই কৃতজ্ঞ। [সাবা: ১৩]
১০ম কারণঃ শরয়ী নীতিমালার যে সকল ব্যাপারে মানুষ বাক-বিতন্ডা ও ঝগড়া করে, সে সকল বিষয়ে কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাতে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুসরণ করা উচিৎ।
আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
يَا أَيُّها الّذِينَ ءَامَنُوا اَطِيعُوا اللهَ وَاَطِيعُوا الرَّسُولَ وأًولِى الأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِى شَىْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَي اللهِ وَ الرَّسٌولِ إِن كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الأَخِر ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأوِيلاً . ( النساء : 59)
অর্থঃ হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের অনুগত হও এবং তোমাদের নেতৃবৃন্দের আনুগত্য কর। অতঃপর যদি তোমাদের মধ্যে কোন বিষয়ে মত বিরোধ দেখা দেয় তবে আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যাবর্তিত হও যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। এটাই কল্যাণকর ও শ্রেষ্ঠতর। [নিসা: ৫৯]
আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَمَا اخْتَلَفْتُمْ فِيهِ مِن شَيءِ فَحُكْمُهُ إِلَى اللهِ . ( الشورى : 10)
অর্থঃ তোমরা যে বিষয়েই মতভেদ কর না কেন ওর মীমাংসাতো আল্লাহরই নিকট। [আশ-শুরা: ১০]
নিঃসন্দেহে যে ব্যক্তি মীলাদ মাহফিলের ব্যাপারে আল্লাহ্ ও রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দিক নির্দেশনার প্রতি ধাবিত হবে, সে জানতে পারবে, আল্লাহ তাআলা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ
وَمَآ ءأتَاكمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَـكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا . ( الحشر : 7)
অর্থঃ রাসূল তোমাদের কাছে যা নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ কর এবং যা হতে নিষেধ করেছেন তা হতে বিরত থাক। [হাশরঃ ৭]
আল্লাহ তাআলা দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ ও পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মীলাদ মাহফিলের জন্য কাউকে নির্দেশ দেননি, তিনি এবং তাঁর সাহাবীগণও তা কখনও করেননি। সুতরাং মীলাদ মাহফিল দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং তা নব্যসৃষ্ট বিদআত।
১১তম কারণঃ সোমবার সিয়াম পালন শরীয়ত সিদ্ধ। কেননা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সোমবারের সিয়াম সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেন, ذلِكَ يَوْمٍ وُلِدْتُ فِيْهِ، وَيَوْمَ بُعِثْتُ أَوْ أُنْزِلَ عَلي فِيْه . ( مسلم ) অর্থঃ এটা এমন দিন যে দিন আমি জন্ম গ্রহণ করেছি, আমি নবুওয়াত প্রাপ্ত হয়েছি অথবা আমার প্রতি সেদিন কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। [মুসলিম :]
সুতরাং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আদর্শ হল সোমবার সিয়াম পালন করা, তবে এ উপলক্ষে মীলাদ মাহফিল করা বৈধ নয়।
১২তম কারণঃ ঈদে মীলাদুন্নবী উদযাপন করা গর্হিত ও নিষিদ্ধ বিষয়াবলীর অন্যতম। আর তা বুঝা যায় এ ধরণের মাহফিলে উপস্থিত হওয়া দ্বারা। এ ধরণের গর্হিত কাজের কিছু উদাহরণ নিম্নে উল্লেখ করা হল।
১। মীলাদে অংশগ্রহণকারীদের রচিত অধিকাংশ কবিতা ও স্ত্ততিমূলক বাক্যগুলোতে শিরকী ও বাড়াবাড়িমূলক কথা পাওয়া যায়। অথচ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর প্রশংসা করার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করে বলেন,
لَا تُطْرُونِي كَمَا أَطْرَتْ النَّصَارَى ابْنَ مَرْيَمَ فَإِنَّمَا أَنَا عَبْدُهُ فَقُولُوا عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُه .
( بخاري )
অর্থঃ তোমরা আমার প্রশংসার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করো না, যেমন খ্রীষ্টানরা ইবনে মারইয়ামের প্রশংসার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করেছিল। নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর বান্দা। সুতরাং তোমরা বল আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। [বুখারী : ৩৪৪৫]
২। মীলাদ মাহফিলে অনেক ক্ষেত্রে হারাম কাজ হয়ে থাকে। যেমন নারী-পুরুষ মিলেমিশে বসা, গান-বাদ্য করা, মদ-গাজা সেবন ইত্যাদি। আর কখনও কখনও এতে শিরকে আকবরও সংঘটিত হয়। যেমন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে বা অন্য কোন অলীর কাছে সাহায্য চাওয়া, আল্লাহর কিতাবের অসম্মান করা, কুরআনের মজলিসে ধূমপান করা ইত্যাদি। মীলাদের দিনগুলোতে উচ্চস্বরে মসজিদে জিকির করা ও সুর করে শরীয়ত পরিপন্থী কবিতা আবৃত্তি করা। যা হক্কানী আলেমগণের ঐকমত্যে শরীয়ত সম্মত নয়।
৩। মীলাদ মাহফিলে আরো কিছু গর্হিত কাজ সংঘটিত হয়। যেমন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্মের ঘটনা আলোচনা কালে তাঁর সম্মানার্থে দাঁড়ান এই বিশ্বাস নিয়ে যে, তিনি এ মীলাদ মাহফিলে উপস্থিত হয়েছেন। তাই তাঁর অভ্যর্থনার জন্য দাঁড়িয়ে যায়। আর এ সবই চরম ভ্রান্তি ও মূর্খতা, যা নিন্দিত। কেননা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিয়ামতের পূর্বে কবর থেকে বের হবেন না। কোন লোকের সাথে সাক্ষাত করবেন না, কোন সম্মেলনে উপস্থিত হবেন না। বরং তিনি কিয়ামত পর্যন্ত নিজ কবরে অবস্থান করবেন। আর তাঁর রুহ ইল্লিয়্যিনের সর্বোচ্চ স্তরে তাঁর প্রভুর কাছে সম্মানিত স্থানে রয়েছে।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ
ثُمَّ إِنَّكم بَعْدَ ذَلِكَ لَمَيِّتُون، ثُمَّ إِنَّكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ تُبْعَثُونَ . ( المؤمنون :15-16)
অর্থঃ এরপর তোমরা অবশ্যই মৃত্যুবরণ করবে। অতঃপর কিয়ামতের দিন তোমাদের পুনরুত্থিত করা হবে। [মুমিনুনঃ ১৫-১৬]
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
أَنَا سَيِّدُ وَلَدِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَأَوَّلُ مَنْ يَنْشَقُّ عَنْهُ الْقَبْرُ وَأَوَّلُ شَافِعٍ وَأَوَّلُ مُشَفَّعٍ .
( مسلم )
অর্থঃ আমি কিয়ামতের দিন আদম সন্তানের নেতা, সর্ব প্রথম কবর থেকে উত্থিত ব্যক্তি, সর্বপ্রথম সুপারিশকারী এবং সর্বপ্রথম আমার সুপারিশ গৃহিত হবে। [মুসলিম : ২২৭৮]
উক্ত আয়াত, হাদীস এবং এ জাতীয় আয়াত ও হাদীসসমূহ থেকে বুঝে আসে যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অন্যান্য মৃতদের ন্যায় মৃত। তিনি কিয়ামতের দিন কবর থেকে উত্থিত হবেন।
আব্দুল আযীয ইবনে আব্দুল্লাহ্ ইবনে বায বলেন, এ বিষয়ে সমস্ত আলেমের ঐকমত্য রয়েছে, এতে কারো মতবিরোধ নেই। [আত-তাহযীর মিনাল বিদআঃ ১৪]
দ্বিতীয়ঃ রজব মাসের প্রথম জুমার রাতে মীলাদ মাহফিল করা বিদআত
রজব মাসের প্রথম জুমার রাতে মাহফিল করা বিদআত ও গর্হিত কাজ। ইমাম আবু বকর তরতুশী উল্লেখ করেন, আবু মুহাম্মাদ আল মাকদেসী রহ. তাকে অবহিত করেছেন যে, রজব মাসে এ মীলাদ মাহফিল বায়তুল মুকাদ্দাসে ৪৮০ হিঃ সনে শুরু হয়। ইতিপূর্বে এ মাহফিল সম্পর্কে কিছু শুনিনি, দেখিওনি। [আল-হাওয়াদেস ওয়াল বিদআতঃ ২৬৭]
ইমাম আবু শামা রহ. বলেন, সালাতে রাগায়েব যা মানুষের মাঝে এখনও প্রসিদ্ধ হয়ে গেছে, তা রজব মাসের প্রথম জুমার রাতে মাগরিব ও ইশার সালাতের মধ্যবর্তী সময়ে পড়া হয়। [কিতাবুল বায়েস আলা ইনকারিল বিদয়ে ওয়াল হাওয়াদেস : ২৩৮]
ইবনে রজব রহ. বলেন, রজব মাসের সাথে নির্দিষ্ট করে কোন সালাত আদায় করা সঠিক নয়। রজব মাসের প্রথম জুমার রাতে সালাতে রাগায়েব সংক্রান্ত বর্ণিত সকল হাদীস মিথ্যা ও অশুদ্ধ। আর জমহুর আলেমের মতে এ সালাত বিদআত। [লাতায়েফুল মাআরিফ ফিমা লি মাওয়াসিমিল আম মিনাল ওযায়েফ :২২৮]
হাফেয ইবনে হাজার রহ. বলেন, রজব মাসের ফযীলত, তাতে সিয়াম পালন এবং এর বিশেষ কোন রাতে সালাত আদায় সম্পর্কে কোন বিশুদ্ধ হাদীস নেই। [তিবইয়ানুল উযব বিমা ওয়ারাদা ফী শাহ্রি রজব : ২৩]
অতঃপর তিনি বলেন, যে সকল হাদীসে রজব মাসের ফযীলত বা তাতে সিয়াম পালনের ফযীলত সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে, তা দু‘ প্রকার। ১. যয়ীফ ও ২. মওজু। [প্রাগুক্তঃ ২৩]
অতঃপর তিনি সালাতে রগায়েবের হাদীস উল্লেখ করেন। তাতে রয়েছে রজবের প্রথম বৃহস্পতিবার সিয়াম পালন, এরপর মাগরিব ও ইশার মাঝখানে বার রাকাত সালাত আদায়, প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহা ১বার, সূরা ক্বদর ৩ বার, ১২বার সূরা ইখলাছ পড়া এবং প্রত্যেক দু‘রাকাত পর পর সালাম ফিরানো। এরপর তিনি তাছবীহ, ইস্তেগফার, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রতি দরূদ পাঠ। অতঃপর তিনি উল্লেখ করেন, এ হাদীসটি মওজু এবং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর মিথ্যারোপ মাত্র। তিনি বলেন, লোকজনের নিকট এ ইবাদতকে বড় ফজিলতপূর্ণ করে দেখানো হয়, অথচ এ সালাতে সাধারণতঃ তারাই আগ্রহী হয়, যারা নিয়মিত সালাতের জামাতে উপস্থিত হয় না। [তিবইয়ানুল উযব বিমা ওয়ারাদা ফি শাহরে রজব : ৫৪পৃ:]
ইমাম ইবনে সালাহ রহ. সালাতে রাগায়েব সম্পর্কে বলেন, এ হাদীসটি মওজু। এটা হিজরী ১৪শ বছর পর নতুন করে আবিষ্কার করা হয়েছে। [কিতাবুল বায়েস আলা ইনকারিল বিদয়ে ওয়াল হাওয়াদেস : ১৪৫পৃ:]
ইমাম আল-ইজ্জ বিন আবদুস সালাম রহ. ৬৩৭ হিজরী সনে এক ফতোয়ায় লিখেন, সালাতে রাগায়েব বিদআত ও মুনকার এবং এ সংক্রান্ত হাদীস রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর মিথ্যারোপ ছাড়া কিছুই নয়। [কিতাবুল বায়েস আলা ইনকারিল বিদয়ে ওয়াল হাওয়াদেস : ১৪৯পৃ:] পরিশেষে তিনি ইমাম আবু শামার রহ. কথা সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরে সালাতে রাগায়েব বাতিল আখ্যায়িত করেন। তিনি উক্ত ইবাদতকে নেক আমল বিনষ্টকারী হিসেবে উল্লেখ করে নিম্মোক্ত বর্ণনা পেশ করেন।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, এ সালাত বিদআত। সর্বাধিক জ্ঞানী আলেম সমাজ এবং আইম্মাতুল মুসলিমীন যথাঃ সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন ও অন্যান্য আলেমগণ যারা দ্বীনের অনেক কিতাব লিপিবদ্ধ করেছেন এবং অতি উৎসাহের সাথে মানুষদের দ্বীনের বিধি-বিধান, ফরজ ও সুন্নাত শিক্ষা দিয়েছেন, তাদের কারো থেকে এ ধরনের কোন বর্ণনা পাওয়া যায়নি। এ সালাত সম্পর্কে কোন বর্ণনা তাদের কিতাবে লিপিবদ্ধ হয়নি এবং তারা কোন মজলিশে এধরনের বক্তব্য দেননি। এটা যদি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাত হত, তাহলে ওলামায়ে কেরামের নিকট তা অজ্ঞাত থাকত না।
এ সালাত তিনটি কারণে শরীয়ত পরিপন্থী।
প্রথম কারণঃ এ সালাত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসের পরিপন্থী। হাদীসটি হচ্ছেঃ
لَا تَخْتَصُّوا لَيْلَةَ الْجُمُعَةِ بِقِيَامٍ مِنْ بَيْنِ اللَّيَالِي وَلَا تَخُصُّوا يَوْمَ الْجُمُعَةِ بِصِيَامٍ مِنْ بَيْنِ الْأَيَّامِ إِلَّا أَنْ يَكُونَ فِي صَوْمٍ يَصُومُهُ أَحَدُكُمْ . ( متفق عليه )
অর্থঃ তোমরা শুধু জুমার রাতকে ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট করো না এবং শুধু জুমার দিনকে সিয়ামের জন্য নির্দিষ্ট করো না। তবে হ্যাঁ; যদি কেউ ধারাবাহিক ভাবে সিয়াম পালন করতে থাকে তা স্বতন্ত্র কথা। [বুখারী : ১৯৮৫ ও মুসলিম : ১১৪৪]
সুতরাং এ হাদীসের ভিত্তিতে অন্যান্য রাতকে বাদ দিয়ে শুধু জুমার রাতকে সালাতের জন্য নির্দিষ্ট করা জায়েয নেই। [কিতাবুল বায়েস আলা ইনকারিল বিদয়ে ওয়াল হাওয়াদেস- ইমাম আবু শামা : ১৫৬পৃ:] এটা রজব মাসের প্রথম জুমার রাতের ব্যাপারেও প্রযোজ্য।
দ্বিতীয় কারণঃ রজব ও শাবান মাসে বিশেষ সালাত আদায় বিদআত। এ ব্যাপারে এমন সব কথা বলা হয়, যা হাদীসে নেই। তাই এর দ্বারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর মিথ্যারোপ করা হয়। তেমনি এ রাতে আমলের প্রতিদান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত বলার মাধ্যমে আল্লাহর উপরও মিথ্যারোপ করা হয়। অথচ এ ব্যাপারে তিনি কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি। পক্ষান্তরে যে সকল ব্যাপারে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপর মিথ্যারোপ করা হয়, তা মিথ্যাজ্ঞান করা, পরিহার করা, নিকৃষ্ট মনে করা এবং জনগণের মাঝে এ সম্পর্কে ঘৃণা ছড়ানো একান্ত জরুরী। কেননা এ সবের সাথে একাত্মতার কারণে অনেক বিশৃঃখলা সৃষ্টি হয়।
১ম বিশৃংখলাঃ এ সকল ইবাদতের ফযীলত এবং তা ছেড়ে দেয়ার ক্ষতি সম্পর্কে যা কিছু মানুষের কানে আসে তার উপর নির্ভর করা। ফলে অধিকাংশ মানুষ দু‘টি কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে।
১। ফরজসমূহের ব্যাপারে শিথিলতা।
২। পাপের মধ্যে লিপ্ত হয়ে পড়া।
মানুষ এ রাতের অপেক্ষায় থাকে ও এতে সালাত আদায় করে মনে করে যে, বিগত দিনে যা ছেড়ে দিয়েছে এসব আমল তার পরিপূরক হয়ে যাবে এবং যে পাপে তারা লিপ্ত ছিল তা মাফ হয়ে যাবে। সালাতে রাগায়েবের ব্যাপারে হাদীস রচনাকারীরা ধারণা করেছিল যে,‘‘মানুষ অধিক হারে সৎকাজে অনুগামী হবে’’। কিন্তু বাস্তবে মানুষ অধিক হারে পাপ ও নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েছে।
২য় বিশৃঃখলাঃ মানুষকে পথভ্রষ্ট করার জন্য-বিদআতপন্থীরা যে সকল বিদআত কাজের প্রচলন করে; যখন তারা দেখে তাতে মানুষ লিপ্ত হয়েছে ও সে বিদআতগুলো প্রচলিত হয়েছে, তখন তারা মানুষদেরকে এক বিদআত থেকে আরেক বিদআতের দিকে পথ দেখায়।
৩য় বিশৃংখলাঃ যখন কোন আলেম বিদআতী কাজ করে তখন সাধারণ মানুষ ধারণা করে, এটা সুন্নাত। এ ক্ষেত্রে ঐ আলেম স্বীয় কাজের মাধ্যমে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর মিথ্যারোপ করে। অধিকাংশ মানুষ এ কারণেই বিদআতে লিপ্ত হয়ে পড়ে।
তৃতীয় কারণঃ এ বিদআতী সালাত বিভিন্ন কারণে শরয়ী সালাতের বিপরীত হয়।
একঃ এ সালাতে সিজদার সংখ্যা, তাসবীহ্র সংখ্যা, প্রত্যেক রাকাআতে নির্দিষ্ট সংখ্যায় সূরা ক্বদর ও সূরা ইখলাছ পড়ার মাধ্যমে সালাতের সুন্নাত পদ্ধতির বিরোধিতা করা হয় ।
দুইঃ সালাতে অন্তর বিগলিত হওয়া, একাগ্রতার সাথে সালাত আদায় করা, আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় সালাতের জন্য অবসর হওয়া ও কুরআনের অর্থের দিকে লক্ষ্য করে সালাত আদায় করা সুন্নাত। এখানে তা পাওয়া যায় না।
তিনঃ নফল সালাত মসজিদে আদায় করার চেয়ে ঘরে এবং একাকী আদায় করা উত্তম। তবে রমজান মাসে তারাবীহ্র সালাত জামাতের সাথে মসজিদে আদায় করা উত্তম।
চারঃ এ সালাত শেষ করার পর অতিরিক্ত দু‘টি সিজদা আদায় করা, যার প্রকৃত কোন কারণ নেই।
উল্লিখিত দলিল-প্রমাণ, আলেমগণের বক্তব্য এবং ভ্রান্ত হওয়ার কারণ ও বিশৃংখলার প্রকার এ সব থেকে স্পষ্ট বুঝে আসে যে, সালাতে রাগায়েব বিদআত। [কিতাবুল বায়েস আলা ইনকারিল বিদয়ে ওয়াল হাওয়াদেস- ইমাম আবু শামা : ১৫৩-১৯৬পৃ:]
তৃতীয়ঃ ইসরা ও মিরাজের রাতে মীলাদ মাহফিল করা
ইসরা ও মিরাজ আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শনাবলীর অন্যতম। যা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সত্যতা, আল্লাহর কাছে তাঁর উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন হওয়া, আল্লাহর কুদরত এবং তার আরশে অবস্থানের প্রতি ইঙ্গিত বহন করে।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ
سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بَعَبْدِهِ لَيْلاً مِّنَ المَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الاَقَصَا الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ ءَايَاتِنَا إِنَّهُ هُوَ الَّسّمِيعُ الْبِصِيْرُ . ( الإسراء : 1)
অর্থঃ পবিত্র ও মহিমাময় তিনি যিনি স্বীয় বান্দা (রাসূলুল্লাহ) কে রাতে মসজিদুল হারাম হতে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছিলেন তাকে নির্দশনাবলী দেখাবার জন্য। যার চারপাশ আমি বরকতময় করেছিলাম, তিনিই সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা। [ইসরা : ১]
হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসমানে ভ্রমণ করেছিলেন, তাঁর জন্য আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়েছিল। এ পর্যায়ে তিনি সাত আসমান ভ্রমণ করেন। প্রথমে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছিলেন। অতঃপর আল্লাহ্ তা‘আলার কাছে বারবার যেতে থাকলে ও সহজ করার প্রার্থনা করতে থাকলে আল্লাহ তাআলা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেন। তবে পাঁচ ওয়াক্তের বিনিময়ে পঞ্চাশ ওয়াক্তের সাওয়াব দিবেন। কেননা উম্মতে মুহাম্মাদীর প্রত্যেকটি নেক আমল দশ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। তাই আল্লাহ তাআলার অসংখ্য নিয়ামতের শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। [আত-তাহযীর মিনাল বিদআ : ১৬]
মিরাজের রাতে কোন মীলাদ মাহফিল, শরীয়ত অসমর্থিত কোন প্রকার ইবাদত না করা কয়েকটি কারণে জরুরী।
একঃ কোন রাতে মিরাজ সংঘটিত হয়েছে, তা নির্ধারণের ব্যাপারে কোন বিশুদ্ধ হাদীস নেই। কারো মতে নবুওয়াত প্রাপ্তির ১৫মাস পর, কারো মতে হিজরতের এক বছর পূর্বে রবিউস সানীর ২৭তম রাতে, কারো মতে নবুওয়াত প্রাপ্তির পাঁচ বছর পর, কারো মতে রবিউল আউয়ালের ২৭ তারিখ। [ইমাম নববীর শরহে মুসলিম : ২/২৬৭]
ইমাম আবু শামা রহ. বলেন, কতিপয় ঐতিহাসিকের মতে, ইসরা রজব মাসে হয়েছিল, যা বিজ্ঞজনদের মতে সঠিক নয়। [কিতাবুল হাওয়াদেস ওয়াল বিদআ : ২৩২পৃ:]
ইবনুল কাইয়্যিম রহ. বলেন, ইসরা কোন রাতে হয়েছিল তা সঠিক ভাবে জানা নেই। [যাদুল মা আদ :১/৫৮]
আল্লামা আব্দুল আযীয ইবনে বায রহ. বলেন, যে রাতে ইসরা ও মিরাজ সংঘটিত হয়েছিল তা রজব মাসে, না কি অন্য কোন মাসে, এটা নির্ধারণের জন্য কোন বিশুদ্ধ হাদীস নেই, আর তারিখ নির্ধারণের জন্য বর্ণিত সকল হাদীস মুহাদ্দিসগণের মতে বিশুদ্ধ নয়। মিরাজের তারিখ ভুলিয়ে দেয়ার মধ্যে আল্লাহর অনেক হিকমত নিহিত আছে। [আত তাহযীর মিনাল বিদআত : ১৭]
আর যদি তার জন্য নির্ধারিত কোন রাত প্রমাণিত হয়, তথাপি প্রমাণ ছাড়া তাতে বিশেষ কোন ইবাদত করা বৈধ হবে না।
দুইঃ কোন মুমিন বা আলেম থেকে এ কথা প্রমাণিত নেই যে, তারা মিরাজের রাতের বিশেষ কোন ফযীলত নির্ধারণ করেছেন। কেননা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীগণ এ রাতে কোন ধরনের মাহফিল করতেন না, এ রাতকে ইবাদতের জন্য খাছ করতেন না এবং এ বিষয়ে কোন আলোচনা করতেন না। যদি মাহ্ফিল করা শরীয়তে জায়েয হত তাহলে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অবশ্যই তা বর্ণনা করতেন অথবা আমল করে দেখাতেন। অবশ্যই তা প্রচার-প্রসার হত এবং তার সহীহ প্রমাণ পাওয়া যেত। [যাদুল মাআদ : ১/৫৮]
তিনঃ আল্লাহ তাআলা এ উম্মতের জন্য দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করে দিয়েছেন ও নি‘য়ামত পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ
اَلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكَمْ نعْمَتِيْ وَ رَضِيْتُ لَكُم الإِسْلامَ دِيْنًا .( المائدة : 3)
অর্থঃ আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম। তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম। [মায়েদা : ৩]
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ
اَمْ لَهُمْ شُرَكَؤُا شَرَعُوْا لَهُمْ مِنَ الدِّيْنِ مَالَمْ يَأْذَنْ بِهِ اللهِ وَلَوْ لا كَلِمَةُ الْفَصْلِ لَقُضِيَ بَيْنَهُمْ وَاِنَّ الظّالِمِيْنَ لَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ . ( الشورى : 21)
অর্থঃ তাদের কি কতগুলো দেবতা আছে যারা তাদের জন্য বিধান দিয়েছে? এমন দ্বীনের, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি। ফায়সালার ঘোষণা না থাকলে তাদের বিষয়ে তো সিদ্ধান্ত হয়েই যেতো। নিশ্চয়ই যালিমদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি। [শুরা: ২১]
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদআত সম্পর্কে সর্তক করে বলেছেন ‘‘প্রত্যেক বিদআত ভ্রষ্টতা তা প্রত্যাখ্যাত হবে তার প্রবর্তক ও আমলকারীসহ’’।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ . ( متفق عليه )
অর্থঃ যে ব্যক্তি আমাদের এ দ্বীনে এমন কিছু নতুন আবিস্কার করেছে যা দ্বীনের অর্ন্তভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত। [বুখারী: ২৬৯৭ ও মুসলিম: ১৭১৮]
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ . ( مسلم )
অর্থঃ যে এমন কোন আমল করে যাতে আমাদের কোন নির্দেশনা নেই তা প্রত্যাখ্যাত। [মুসলিম :১৭১৮]
ছলফে ছালেহীন বিদআত সম্পর্কে সর্তক করেছেন। কেননা তা দ্বীনের মধ্যে অতিরঞ্জন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুমতি ছাড়া কোন কিছু শরীয়তে অন্তর্ভুক্ত করা এবং ইহুদী-খ্রীষ্টানদের ন্যায় দ্বীনের মধ্যে অতিরঞ্জনের নামান্তর। [আত-তাহযীর মিনাল বিদআ-ইবনে বায (র) ১৯ পৃ]
চতুর্থঃ শাবানের ১৫তম রাতে মাহফিল করা
ইমাম মুহাম্মাদ বিন ওয়াদাহ আল কুরতুবী রহ. নিজ সনদে আবদুর রহমান বিন যায়েদ বিন আসলাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমাদের শায়খ ও ফকীহগণের কাউকে শাবানের ১৫তম রাতের প্রতি গুরুত্বের সাথে দৃষ্টিপাত করতে এবং এ প্রসংগে মাকহুল বর্ণিত হাদীস উল্লেখ করতে দেখিনি। তারা অন্যান্য রাতের উপর এ রাতকে প্রাধান্য দিতেন না।
ইমাম আবু বকর আত তুরতুশী রহ. বলেন, আমাকে আবু মুহাম্মাদ আল-মাকদেসী রহ. অবহিত করেছেন যে, আমাদের সময় বাইতুল মুকাদ্দাসে কখনও সালাতুর রাগায়েব পড়া হয়নি, যা বর্তমানে রজব ও শাবান মাসে পড়া হয়।
প্রথম এ বিদআত চালু হয় ৪৪৮ হিজরীতে। সে সময় নাবলুস এর অধিবাসী এক ব্যক্তি বাইতুল মুকাদ্দাসে আগমন করল। সে ইবনে আবি হামরা নামে পরিচিত ছিল। তার কুরআন তিলাওয়াত ছিল খুবই সুন্দর, সে শাবানের ১৫তম রাতে বাইতুল মুকাদ্দাসে সালাত শুরু করল। তার পিছনে অপর একজন এসে যোগ দিল, অতঃপর আরো তিন চার জন যোগ দিল। এভাবে সালাত শেষে দেখা গেল বিরাট এক জামাত হয়ে গেছে। পরবর্তী বছর আরো অনেকে এসে সালাত আদায় করল। এর পরবর্তী বছর আরো বহু সংখ্যক লোক সালাতে একত্রিত হল। এভাবে সমস্ত মসজিদ পূর্ণ হয়ে গেল। এক পর্যায়ে বাইতুল মুকাদ্দাসে শবে বরাতের সালাত বা শাবানের ১৫তম রাতের সালাতের ফযিলত প্রচলিত হয়। পরবর্তীতে মানুষের ঘরে ঘরে তা ছড়িয়ে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় তা বর্তমান অবস্থায় পৌঁছায়। [কিতাবুল হাওয়াদেস ওয়াল বিদআ-তুরতুশী: ২৬৬ পৃ]
ইমাম ইবনে ওয়াদাহ রহ. স্বীয় সনদের মাধ্যমে বর্ণনা করেন, ইবনে আবি মুলাইকা রহ. কে বলা হল, যিয়াদ আন নুমায়রি মনে করেন, শাবানের ১৫তম রাতের ফযিলত লাইলাতুল কদরের ফযিলতের মতো। তখন ইবনে আবি মুলাইকা রহ. বলেন, যদি তার থেকে আমি শুনতাম আর আমার হাতে লাঠি থাকত তাহলে আমি তা দ্বারা তাকে প্রহার করতাম। তখন যিয়াদ কাজী ছিলেন। [কিতাবুল হাওয়াদেস ওয়াল বিদআ-তুরতুশী : ২৬৩ পৃ]
ইমাম আবু শামা শাফেয়ী রহ. বলেন, শাবানের ১৫তম রাতের সালাতকে আলফিয়াহ বলা হয়। কারণ এ রাতে ১০০ রাকাত নফল সালাতে ১০০০ (এক হাজার) বার সূরা ইখলাস তিলাওয়াত করা হয়। প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহা ১ বার ও সূরা ইখলাস ১০ বার তিলাওয়াত করা হয়। এটা খুব লম্বা ও কষ্টকর সালাত; যার সমর্থনে কোন হাদীস কিংবা আছার (বর্ণনা) পাওয়া যায় না। তাই এটা সাধারণ মানুষের জন্য বড় ফেৎনার কারণ।
এ রাতে বিভিন্ন মসজিদে আলোকসজ্জা করা হয়, গুরুত্বের সাথে যেখানে সারা রাত জাগ্রত থেকে সালাত আদায় করা হয়। পাশাপাশি অনেক গুনাহের কাজও সংঘটিত হয়। যথা, নারী-পুরুষ একত্রিত হয়ে এ রাতের প্রশংসায় গান বাজনা পরিবেশন ইত্যাদি। অনেক সাধারণ মানুষের বদ্ধমূল ধারণা এগুলো ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। আর শয়তান তাদের এ সকল কর্মকান্ডকে আরো চাকচিক্যময় করে দিয়েছে এবং এটাকে মুসলমানদের নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত করে দিয়েছে। [কিতাবুল বায়েস আলা ইনকারিল বিদয়ে ওয়াল হাওয়াদেস- ইমাম আবু শামা : ১২৪ পৃ:]
হাফেয ইবনে রজব রহ. একটি মূল্যবান কথার পর বলেন, শাবানের ১৫তম রাতকে শাম দেশের তাবেয়ীগণ যথা খালেদ ইবনে মি‘দান রহ., মাকহুল রহ., লোকমান বিন আমের রহ. এবং অন্যান্যরা খুব সম্মানের দৃষ্টিতে দেখতেন এবং এ রাতে ইবাদত করতেন। তাদের দেখেই লোকেরা এ রাতের সম্মান করতে থাকে।
অবশ্য বলা হয় যে, এ মতটি তাদের নিকট ইসরাইলী রেওয়ায়াত থেকে পৌঁছেছে। অতঃপর যখন এ মতাদর্শ বিভিন্ন দেশে প্রসিদ্ধি লাভ করে তখন এ রাতের মর্যাদার ব্যাপারে মতানৈক্য শুরু হয়।
কেউ কেউ তাদের সাথে একমত হয়ে এ রাতে ইবাদত করতে থাকেন। এরা হচ্ছেন, বসরা ও অন্যান্য অঞ্চলের অধিবাসী।
হেজাজের অনেক ওলামা এটাকে অস্বীকার ও অপছন্দ করেছেন। তাদের মধ্যে প্রসিদ্ধ হচ্ছেন আতা বিন আবি রাবাহ রহ. ও ইবনে আবি মুলাইকা রহ. প্রমুখ। আবদুর রহমান বিন যায়েদ বিন আসলাম রহ. মদীনার ফকীহগণ থেকে বর্ণনা করেন, ইমাম মালেকের রহ. সাথীগণসহ অন্যান্য ওলামাগণেরও একই অভিমত। আর তা হচ্ছে এ সবই বিদআত।
এ রাতে (শাবানের ১৫তম রাতে) জাগ্রত থেকে ইবাদত করার ফযিলত নিয়ে সিরিয়ার আলেমগণের দু‘টি উক্তি রয়েছে।
একঃ এ রাতে জাগ্রত থেকে দলবদ্ধভাবে মসজিদে ইবাদত করা মুস্তাহাব। খালেদ ইবনে মি‘দান রহ., লুকমান বিন আমের রহ. সহ অন্যান্য ওলামাগণ এ রাতে উত্তম কাপড় পরিধান করতেন, আগর বাতি জ্বালিয়ে মসজিদ সুগন্ধময় করতেন, চোখে সুরমা লাগাতেন এবং সারা রাত সালাত ও অন্যান্য ইবাদতে দন্ডায়মান থাকতেন।
ইসহাক বিন রাহ্ওয়াই রহ. তাদের সাথে একমত পোষণ করেন। তিনি আরো বলেন, এ রাতে মসজিদে ইবাদতের জন্য দন্ডায়মান হওয়া বিদআতের অন্তর্ভুক্ত নয়। হরবুল কারমানী এ মাসআলায় তাকে অনুসরণ করেছেন।
দুইঃ এ রাতে মসজিদে সমবেত হয়ে (শবে বরাতের) সালাত আদায়, বিভিন্ন কাহিনী বর্ণনা করা ও দুআ করা মাকরুহ। অবশ্য একা একা সালাত আদায় করাতে কোন দোষ নেই। এটা ইমাম আওযাঈ রহ., সিরিয়ার তৎকালীন প্রসিদ্ধ ইমাম, ফকীহ এবং ওলামায়ে কেরামের অভিমত। আল্লাহ্ চাহেতো এটাই তুলনামূলক বিশুদ্ধ।
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ. থেকে শাবানের ১৫তারিখ রাত সম্পর্কে কোন উক্তি নেই। তবে রাত জেগে ইবাদত করা সম্পর্কে তার দু‘টি বর্ণনা রয়েছে। একটি হচ্ছে ঈদের রাতে ইবাদত করা। তবে কোন রেওয়ায়াতে এ রাতে সম্মিলিতভাবে ইবাদতকে মুস্তাহাব বলা হয়নি। কেননা এ সম্পর্কে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সাহাবায়ে কেরাম থেকে কোন উক্তি পাওয়া যায়নি। অন্য এক বর্ণনাতে ঈদের রাতের ইবাদতকে মুস্তাহাব বলা হয়েছে, এটা আবদুর রহমান বিন ইয়াজিদ বিন আসওয়াদ এর আমল অনুযায়ী। আর তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট তাবেয়ী। এমনই হল শাবান মাসের ১৫তারিখ রাতের অবস্থা। এ ব্যাপারে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সাহাবায়ে কেরাম থেকে কিছুই বর্ণিত হয়নি। তবে শাবানের ১৫তারিখ রাতের ইবাদত প্রতিষ্ঠা পেয়েছে কতিপয় তাবেয়ী এবং সিরিয়ার ফকীহগণের মাধ্যমে। [লাতায়েফুল মাআরেফ-ইবনে রজব: ২৬৩ পৃ]
আল্লামা আবদুল আযীয বিন বায রহ. বলেন, আল্লামা আওযায়ী রহ. ও ইবনে রজব রহ. কর্তৃক এ রাতে ব্যক্তিগত ইবাদতকে মুস্তাহাব বলাটাও অত্যন্ত দুর্বল উক্তি। কেননা এ প্রসংঙ্গে শরীয়তের কোন অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায় না। আর প্রমাণ ব্যতীত কোন আমল শরীয়তসিদ্ধ নয়। কেননা তা আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে বিদআত। চাই তা ব্যক্তিগত ইবাদত হোক কিংবা সম্মিলিত ইবাদত হোক। প্রকাশ্য হোক বা অপ্রকাশ্য হোক।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ . ( مسلم )
অর্থঃ যে ব্যক্তি এমন কিছু আমল করে যে ব্যাপারে আমাদের অনুমোদন নেই, তা প্রত্যাখ্যাত হবে। [মুসলিম :১৭১৮]
এমনি আরো অনেক হাদীসে বিদআত সম্পর্কে সর্তক করা হয়েছে। উল্লিখিত ইমাম ইবনে ওয়াদাহ রহ., ইমাম তারতুশি রহ., ইমাম আবু শামা রহ., আবদুর রহমান বিন ইসমাঈল রহ., হাফেজ ইবনে রজব রহ. এবং ঈমাম আব্দুল আযীয বিন বায রহ. প্রমূখের মতামত দ্বারা স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, শবে বরাতের ইবাদত, সালাত কিংবা অন্য কোন আমল যা শরীয়তসিদ্ধ নয় তা বিদআত। কুরআন ও হাদীসে এর কোন ভিত্তি নেই এবং কোন সাহাবায়ে কেরাম এ আমল করেননি।
পঞ্চমঃ আত -তাবাররুক
আত-তাবাররুক অর্থ বরকত চাওয়া বা শুভ কামনা করা। কোন জিনিস দ্বারা বরকত চাওয়ার অর্থ ঐ জিনিসের মাধ্যমে শুভ কামনা করা।
নিঃসন্দেহে যাবতীয় কল্যাণ ও বরকত আল্লাহ্ তা‘আলার হাতে। আল্লাহ্ তা‘আলা স্বীয় ইচ্ছা অনুযায়ী কিছু সৃষ্টির মধ্যে অনুগ্রহ ও বরকত রেখে দিয়েছেন।
বরকতের প্রকৃত অর্থ হচ্ছেঃ স্থায়ীত্ব ও প্রয়োজনীয়তা। আবার বৃদ্ধি এবং দুআ অর্থেও আসে। যেমন- বলা হয়ে থাকে برَك عليه অর্থঃ তার জন্য বরকতের দুআ করা হয়েছে। বলা হয় بَارَكَ الله ُالشَّيْءَ، بَارَكَ فِيْهِ أَوْ بَارَكَ عَلَيْه অর্থঃ আল্লাহ তা‘আলা ঐ জিনিসে বরকত প্রদান করেছেন। আর تبارك (বরকতময় হওয়া) শব্দটি শুধুমাত্র আল্লাহ্ তাআলার জন্য নির্দিষ্ট। এটা বলা যাবে না যে অমুক ব্যক্তি বরকতময়। কেননা বরকত শব্দের অর্থ বড় ও মহান। অতএব এ গুণ আল্লাহ্ তা’আলা ব্যতীত অন্য কারো জন্য হতে পারে না।
কুরআনুল কারীমে বরকত শব্দটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যথাঃ
১. চিরস্থায়ী কল্যাণ প্রতিষ্ঠিত হওয়া। ২. কল্যাণ অধিক হারে হওয়া ও ধারাবাহিকতা বজায় থাকা। ৩. তাবারাকা শব্দটি শুধুমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার জন্যই নির্দিষ্ট। তিনি ব্যতীত অন্য কারো জন্য এ শব্দ ব্যবহার করা যাবে না।
ইবনে কাইয়িম রহ. বলেন, আল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বরকতময়, তাঁর দান স্থায়ী, তাঁর দেয়া কল্যাণ অফুরন্ত, তাঁর মর্যাদা সুউচ্চ, তিনি অতি মহান, পূত-পবিত্র এবং যাবতীয় কল্যাণ একমাত্র তাঁর পক্ষ থেকেই আসে। তিনি তাঁর সৃষ্টির মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা কল্যাণ দান করেন এটাই হচেছ তাবারাকা এর প্রকৃত অর্থ যা কুরআনে রয়েছে।
বিভিন্ন শ্রেণীর কল্যাণকর বিষয়
১. কুরআনুল কারীম কল্যাণময়। এতে দুনিয়া ও আখিরাতের অনেক কল্যাণ নিহিত রয়েছে। আর এ বরকত বা কল্যাণ অর্জন করা যায় বিশুদ্ধভাবে তিলাওয়াত এবং কুরআনের বিধান অনুযায়ী আমল করার মধ্য দিয়ে। যা একমাত্র আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য হতে হবে।
২. মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কল্যাণময়। আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর মধ্যে অনেক কল্যাণ বা বরকত রেখেছেন।
এ বরকত দু‘প্রকারের।
(ক) পরোক্ষ বরকতঃ আর এটা অর্জিত হয় ইহকাল ও পরকালে তাঁর রেসালাতের বরকতের মধ্য দিয়ে। কেননা আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁকে জগৎবাসীর জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছেন। তিনি মানব জাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে এসেছেন।
মানুষের জন্য পবিত্র জিনিস হালাল করেছেন এবং অপবিত্র জিনিস হারাম করেছেন। তাঁকে দিয়ে নবুয়্যতের ইতি টানা হয়েছে এবং তাঁর আনীত দ্বীন হচ্ছে সহজ, সরল, মহানুভব এবং উদার।
(খ) প্রত্যক্ষ বরকত বা কল্যাণ দু’প্রকার
১. তাঁর কর্মের মধ্যে বরকত। তা হলো আল্লাহ তা’আলা তাঁকে উজ্জ্বল সুস্পষ্ট মুজিযা দিয়ে সত্যায়িত করেছেন।
২. তিনি সত্ত্বাগত ভাবেই বরকতময়। যা অনুভব করা যায়। এ জন্য সাহাবায়ে কেরাম তাঁর জীবদ্দশাতেই তাঁর থেকে বরকত হাসিল করেছেন ও তাঁর মৃত্যুর পর তার দেহে ব্যবহৃত অবশিষ্ট বস্ত্তর মাধ্যমে বরকত হাসিল করেছেন।
আল্লাহর নবীর জীবদ্দশাতে সাহাবায়ে কেরাম তাঁর থেকে বরকত হাসিল করেছেন, তাঁর উপর কিয়াস করে অন্য কারো থেকে এমন বরকত হাসিল করা যাবে না। এতে কোন সন্দেহ নেই যে আল্লাহ্ তাআলা সকল নবী (আ) এর মাঝে অফুরন্ত বরকত রেখেছেন। [আত-তাবাররুক ওয়া আনওয়াউহু, ওয়া আহকামুহু, ড. নাছির আলজাদী: ২১-৬৯ পৃ]
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা’আলা ফেরেশতাদের মাঝে এবং নেককার বান্দাদের মাঝেও বরকত রেখেছেন। কিন্তু তাদের ব্যাপারে কোন প্রমাণ না থাকায় তাদের থেকে বরকত হাসিল করা বৈধ নয়। অনুরূপভাবে এমন কিছু স্থান আছে যা বরকতময়। যথা ১. মসজিদে হারাম, ২. মসজিদে নববী ও ৩. মসজিদে আক্বছা। অতঃপর বিশ্বের সকল মসজিদ।
এভাবে তিনি অনেক সময়কেও বরকতময় করেছেন। যথা-রমযান মাস, লাইলাতুল ক্বদর, জিল হজ্জ্বের প্রথম ১০দিন, আশহুরে হুরুম বা সম্মানিত মাস সমূহ, সোমবার, বৃহস্পতিবার, শুক্রবার, প্রতি রাতের দুই তৃতীয়াংশে আল্লাহ তা‘আলার প্রথম আকাশে নেমে আসার মুহূর্ত ইত্যাদি। এ সময়গুলো বরকতময়।
কিন্তু দুঃখের বিষয় মুসলিমগণ এ থেকে বরকত হাসিল করে না। অথচ এ সময়গুলোতে শরীয়ত সমর্থিত নেক আমল দ্বারা কল্যাণ অর্জন করা উচিত।
আবার কিছু জিনিস রয়েছে যা বরকতময়। যথাঃ যমযমের পানি, বৃষ্টির পানি ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে বরকতের অর্থ হল, মানুষ পান করবে, গবাদি পশু পান করবে এবং তা দ্বারা জমিনে ফসল উৎপন্ন করবে। অনুরূপ ফল-মূল, যাইতুন, খেজুর, দুধ, ঘোড়া, ছাগল, উট ইত্যাদিও বরকতময়। মানুষ এগুলো দ্বারা অনেক কল্যাণ অর্জন করবে।
শরীয়তসম্মত যে সকল জিনিসের মাধ্যমে বরকত অর্জন করা যায় তার কিছু উদাহরণ নিম্নে পেশ করা হলঃ
আল্লাহ্র যিকির ও কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে বরকত হাসিল করা
আল্লাহ্র যিকির ও কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে বরকত হাসিল করা যায়, তবে শর্ত হল তা শরীয়ত সম্মত হতে হবে। মনে মনে জিকির করা, মুখে জিকির করা এবং কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী সৎকাজ করা। কেননা এ সকল বরকত দ্বারা আত্মা প্রশান্তি লাভ করে। সৎকাজের জন্য আত্মা শক্তি সঞ্চয় করে, বিপদ-আপদে মুক্তি পাওয়া যায়, দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ সাধিত হয়, গুণাহ মাফ হয় ও প্রশান্তি অবতীর্ণ হয়। কুরআন কিয়ামতের দিন তার জন্য সুপারিশ করবে। কুরআন ঘরে এবং গাড়িতে টানিয়ে বা ঝুলিয়ে রাখার মধ্যে কোন বরকত নেই, বরং বরকত হচ্ছে তা তিলাওয়াত করা ও সে অনুযায়ী আমল করার মাধ্যমে। [আত-তাবাররুক ওয়া আনওয়াউহু, ওয়া আহকামুহু, ড. নাছির আলজাদী: ২০১-২৪১ পৃ]
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জীবদ্দশায় তাঁর সত্ত্বা থেকে বরকত লাভ করা।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জীবদ্দশায় তাঁর সত্ত্বা থেকে বরকত লাভ করা শরীয়তসম্মত। কেননা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সত্ত্বাগতভাবে বরকতময় ছিলেন। এজন্য সাহাবায়ে কেরাম তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর থেকে অনেক বরকত অর্জন করেছেন।
আবু জুহাইফা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন দ্বি-প্রহরে এক সমতল ভূমিতে বের হলেন, অতঃপর অযু করে যোহরের দু‘রাকাত ও আসরের দু‘রাকাত সালাত আদায় করলেন। এর পর লোকজন এসে তাঁর হাত মুবারক স্পর্শ করে নিজ নিজ মুখ-মন্ডলে মাসেহ করে নিলেন।
আবু জুহাইফা (রা) বলেন, অতঃপর আমি তাঁর হাত ধরলাম এবং আমার মুখ মন্ডলেও মাসেহ করে নিলাম। তখন তা আমার নিকট বরফ থেকে শীতল এবং মিশকের ঘ্রাণ থেকেও সুগন্ধিময় অনুভূত হল। [বুখারী : ৩৫৫৩]
হাদীসে রয়েছেঃ
وَعن أنس رضي الله عنه أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَتَى مِنًى فَأَتَى الْجَمْرَةَ فَرَمَاهَا ثُمَّ أَتَى مَنْزِلَهُ بِمِنًى وَنَحَرَ ثُمَّ قَالَ لِلْحَلَّاقِ خُذْ وَأَشَارَ إِلَى جَانِبِهِ الْأَيْمَنِ ثُمَّ الْأَيْسَرِ ثُمَّ جَعَلَ يُعْطِيهِ النَّاسَ، وفي رواية : ثُمَّ دَعَا أَبَا طَلْحَةَ الْأَنْصَارِيَّ فَأَعْطَاهُ إِيَّاهُ ثُمَّ نَاوَلَهُ الشِّقَّ الْأَيْسَرَ فَقَالَ احْلِقْ فَحَلَقَهُ فَأَعْطَاهُ أَبَا طَلْحَةَ فَقَالَ اقْسِمْهُ بَيْنَ النَّاسِ . ( مسلم )
অর্থঃ আনাস (রা) থেকে বর্ণিত, (হজ্বের সময়) রাসূল মিনায় এলেন ও জামরায় এসে পাথর নিক্ষেপ করলেন। এরপর মিনায় এসে কুরবানী করলেন এবং নাপিতকে নিজের মাথার ডান ও বাম পাশের চুল কাটতে ইশারা করলেন। চুল কাটার পর কর্তিত চুল উপস্থিত সাহাবাগণের মাঝে বিলিয়ে দিলেন।
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, অতঃপর রাসূল আবু তালহা আল-আনছারীকে ডাকলেন এবং তাকে ডানপার্শ্বের চুলগুলো দিয়ে দিলেন। তারপর নাপিত বাম দিকের চুলগুলো কাটলে সে চুলগুলোও আবু তালহা (রাঃ) কে দিয়ে বললেন, এগুলো মানুষের মাঝে বন্টন করে দাও। [মুসলিম :১৩০৫]
সাহাবায়ে কেরাম (রা) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জামা, অযুর অতিরিক্ত পানি, যে স্থানে তাঁর হাতের আঙ্গুল থেকে পানি প্রবাহিত হয়েছে সে স্থান, তাঁর পানকৃত পানির অবশিষ্টাংশ ইত্যাদি থেকে বরকত হাসিল করতেন। যেমন, তাঁর ব্যবহৃত জামা, জুতা ইত্যাদি যা তাঁর শরীরের সাথে মিশে থাকত। [আত-তাবাররুক ওয়া আনওয়াউহু, ওয়া আহকামুহু, ড. নাছির আলজাদী: ২৪৮-২৫০ পৃ]
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে অন্য কাউকে তুলনা করা যাবে না। কেননা তিনি ব্যতীত কোন সাহাবী বা অন্য কারো থেকে বরকত হাসিল প্রসঙ্গে তাঁর কোন নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। সাহাবায়ে কেরাম থেকেও এমন কোন বর্ণনা পাওয়া যায়নি যে, তারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ব্যতীত অন্য কোন অলী বা সাহাবায়ে কেরামের জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর পর তার কোন কিছু দ্বারা বরকত হাসিল করেছেন। মুহাজির ও আনসার সাহাবীগণের কেউ এমনটি করেননি। খোলাফায়ে রাশেদীনের সাথেও কেউ এমন করেননি, দুনিয়াতে জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত ১০জন সাহাবীর সাথেও কেউ এমনটি করেননি। ইমাম শাতেবী রহ. বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ওফাতের পর তার অনুপস্থিতিতে এমন কাজে কোন সাহাবী লিপ্ত হননি। এমনকি তাঁর পরে আবু বকর (রা) কে তাঁর উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম বলে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। তাঁর দ্বারাও কেউ বরকত হাসিল করেননি। অথচ তিনি মুসলিমদের খলিফা ছিলেন। অনুরূপ উমর (রা) এর দ্বারাও কেউ বরকত হাসিল করেননি। অথচ তিনি আবু বকরের (রা) পর উম্মতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি ছিলেন। অনুরূপ উসমান (রা) এবং আলী (রা) দ্বারাও কেউ বরকত হাসিল করেননি। এভাবে অন্য কোন সাহাবী থেকেও বরকত হাসিল করা হয়নি। অথচ তাঁরা ছিলেন উম্মতের মধ্যে শ্রেষ্ঠতর মানুষ। কোন সহীহ বর্ণনাতে এ কথা নেই যে, এভাবে তারা একে অপর থেকে বরকত হাসিল করেছেন। [আত-তাবাররুক ওয়া আনওয়াউহু, ওয়া আহকামুহু, ড. নাছির আলজাদী: ২৬১-২৬৯ পৃ]
নিঃসন্দেহে আলেমদের ইলম, তাদের ওয়াজ-নসিহত শ্রবণ ও দুআ দ্বারা বরকত হাসিল করা যাবে। তাদের সাথে কোন জিকিরের মজলিসে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বরকত লাভ করা যাবে, তাতে কল্যাণ, বরকত ও উপকার রয়েছে। কিন্তু কোন ব্যক্তির সত্ত্বা দ্বারা কোন বরকত হাসিল করা যাবে না বরং তাদের বিশুদ্ধ ইলম অনুযায়ী আমল করা যাবে ও আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের অনুসরণ করা যাবে। [আত-তাবাররুক ওয়া আনওয়াউহু, ওয়া আহকামুহু, ড. নাছির আলজাদী: ২৬৯-২৭৮ পৃ]
৩. যমযমের পানি দ্বারা বরকত হাসিল করা।
যমযমের পানি দ্বারা বরকত হাসিল করা বৈধ। কেননা পৃথিবীতে এটাই সর্বোত্তম বরকতময় পানি, যা পান করলে পিপাসা দূর হয় এবং ক্ষুধা নিবারণ হয়। বিশুদ্ধ নিয়তে পান করলে যে কোন রোগের জন্য ঔষধ হিসেবে কাজ করে।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যমযম পানি সম্পর্কে বলেনঃ
قَالَ إِنَّهَا مُبَارَكَةٌ إِنَّهَا طَعَامُ طُعْمٍ وَ شِفَاءُ سَقِيْمٍ . ( مسلم )
অর্থঃ এ পানি অত্যন্ত বরকতময়, এ পানি হচ্ছে ক্ষুধার্তের খাদ্য এবং রোগীর চিকিৎসা। [মুসলিম :২৪৭৩]
জাবের (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
مَاءُ زَمْزَمَ لِمَا شُرِبَ لَهُ . ( ابن ماجة )
অর্থঃ যমযমের পানি যে নিয়তে পান করবে তা পূরণ হবে। [ইবনে মাজা :৩০৬২]
বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যমযমের পানি চিকিৎসা ও আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য লাভের জন্য ব্যবহার করতেন। তিনি তা রোগীর গায়ে ছিটিয়ে দিতেন এবং পান করাতেন। [তিরমিযী :৯৬৩]
৪. বৃষ্টির পানি দ্বারা বরকত হাসিল করা
বৃষ্টির পানি দ্বারা বরকত হাসিল করা যাবে। বৃষ্টির পানি বরকতময়, আল্লাহ তা‘আলা এতে অফুরন্ত বরকত রেখেছেন। মানুষ, পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গ এ পানি পান করে থাকে এবং উদ্ভিদ, গাছ-পালা, ফল-ফলাদি ইত্যাদি এ পানির মাধ্যমেই উৎপন্ন হয়ে থাকে। এর দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা সকল জিনিসকে জীবিত করে থাকেন।
আনাস (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ছিলাম। এমন সময় আমাদের বৃষ্টিতে পেয়ে গেল। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজ শরীরের কিয়দংশ উম্মুক্ত করে দিলে তা বৃষ্টিতে ভিজে গেল। তখন আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এমনটি করলেন কেন? উত্তরে তিনি বললেন, ‘‘এটা হচ্ছে তার রবের নতুন বরকত’’। [মুসলিম :৮৯৮]
ইমাম নববী রহ. বলেন, হাদীসে বর্ণিত শব্দের অর্থ হল, তার রবের পক্ষ থেকে নতুন নিয়ামত ও বরকত। অর্থাৎ এ বৃষ্টি আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে মানুষের জন্য অনুগ্রহ। মানুষ এর দ্বারা অনেক বরকত হাসিল করে থাকে। [শরহে মুসলিম - ইমাম নববী (র) :৬/৪৪৮]
যা দ্বারা বরকত হাসিল নিষিদ্ধ
(১) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ইন্তেকালের পর তাঁর দ্বারা বরকত লাভ করা
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ইন্তেকালের পর তাঁর দ্বারা দু’ভাবে বরকত হাসিল করা যাবে। অন্য কোন উপায়ে তাঁর থেকে বরকত হাসিল করা নিষিদ্ধ।
প্রথমঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর ঈমান আনা, তাঁর আনুগত্য এবং অনুসরণ করা। যে ব্যক্তি উক্ত কাজগুলো করবে সে অফুরন্ত কল্যাণ এবং দুনিয়া ও আখিরাতের সৌভাগ্য লাভ করবে।
দ্বিতীয়ঃ তাঁর ইন্তেকালের পর যে সকল জিনিস অবশিষ্ট রয়েছে তার থেকে বরকত হাসিল করা। যথা-তাঁর জামা অথবা চুল অথবা তাঁর ব্যবহৃত পানি ইত্যাদি।
এ ছাড়া অন্য কোন ভাবে তাঁর থেকে বরকত হাসিল করা শরীয়ত সম্মত নয়। তাঁর কবর দ্বারা বরকত হাসিল করা যাবে না। কেবল মাত্র তাঁর কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা যাবে না। বরং তিনটি মসজিদের যে কোন একটির উদ্দেশ্যে সফর করা যাবে ১. মসজিদে হারাম ২. মসজিদে নববী ও ৩. মসজিদে আক্বসা। এ ছাড়া সব সময় যে মদীনায় বসবাস করে আসছে তার জন্য নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবর যিয়ারত করা মুস্তাহাব। অথবা কেউ মসজিদে নববী যিয়ারতের উদ্দেশ্যে এলে তার জন্যও কবর যিয়ারত করা মুস্তাহাব।
রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবর যিয়ারতের নিয়ম
মসজিদে নববীতে প্রবেশ করে প্রথমে দু‘রাকাত তাহিয়্যাতুল মাসজিদ সালাত আদায় করা। অতঃপর কবরের দিকে গিয়ে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে হুজরার দিকে মুখ করে ক্ষীণ আওয়াজে আদবের সাথে বলা ‘‘আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ’’। আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) এর চেয়ে অতিরিক্ত কিছু বলতেন না। কখনও অতিরিক্ত কিছু বলতে চাইলে বলতেনঃ
اَلسَّلامُ عَلَيْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ، يَا خَيْرَةَ اللهِ مِنْ خَلْقِهِ، أَشْهَدُ أَنَّكَ رَسُوْلُ اللهِ حَقًا، وَ أَنَّكَ قَدْ بَلَّغْتَ الرِّسَالَةَ، وَ أَدَّيْتَ الأَمَانَةَ، وَ جَاهَدْتَ فِي اللهِ حَقَّ جِهَادِه، وَ نَصَحْتَ الأُمَّةَ . ( فتاوىابن باز في الحج و العمرة )
অর্থঃ হে আল্লাহর রাসূল। আপনার প্রতি সালাম, হে আল্লাহর সৃষ্টির সর্বোত্তম ব্যক্তি! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর সত্য নবী, নিশ্চয়ই আপনি আপনার রেসালাত পৌঁছে দিয়েছেন, আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নে আপনার সর্বশক্তি ব্যয় করেছেন এবং আপনি জাতিকে সত্যের উপদেশ দিয়েছেন। এগুলো বলতে কোন দোষ নেই। কেননা এগুলো তাঁর বৈশিষ্ট্যাবলী। [মাজমুয়ায়ে ফতোয়ায়ে ইবনে বায র.: ৫/২৮৯]
তাঁর কবরের কাছে এ ধারণা করে দুআ করা যাবে না যে, তাঁর কাছে দুআ করলে কবুল হয়, তাঁর কবরের কাছে গিয়ে তাঁর নিকট সুপারিশ প্রার্থনা করা যাবে না। (বরকততের জন্য) তাঁর কবর, কবরের ধূলো-বালি শরীরে মাসেহ করা বা তাঁর কবরে অথবা কবরের পার্শ্বের কোন জিনিস (ইট, পাথর, দেয়াল ইত্যাদি) চুমু দেয়া যাবে না। এছাড়া রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে যায়গায় বসেছেন, যেখানে সালাত আদায় করেছেন, যে পথ দিয়ে চলাচল করেছেন, যে স্থানে তার নিকট অহী এসেছে, যে স্থানে তিনি জন্ম গ্রহণ করেছেন, যে রাতে জন্ম গ্রহণ করেছেন, যে রাতে মিরাজ হয়েছে এবং তাঁর হিজরতের রাস্তা ইত্যাদি দ্বারা বরকত গ্রহণ করা যাবে না। এক কথায় যে সকল জিনিস দ্বারা বরকত গ্রহণ করা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনুমোদিত নয় তা দ্বারা বরকত হাসিল করা যাবে না। [আত-তাবাররুক ওয়া আনওয়াউহু, ওয়া আহকামুহু, ড. নাছির আল-জাদী: ৩১৫-৩৮০ পৃ]
২. কোন নেককার লোক দ্বারা বরকত হাসিল
কোন নেককার বা বুযুর্গের ব্যক্তিস্বত্ত্বা, তাদের কোন নিদর্শন, ইবাদতের স্থান থেকে, বাসস্থান এবং তাদের কবর দ্বারা বরকত হাসিল করা যাবে না। তাদের মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করাও যাবে না। তাদের কবরের পাশে সালাত আদায় করা যাবে না। তাদের কবরের কাছে গিয়ে নিজের প্রয়োজন পূরণের জন্য কিছু প্রার্থনা করা, কবর স্পর্শ করা ও কবরের পাশে ইতেকাফ করা যাবে না। তাদের জন্ম বার্ষিকী, ওরস ইত্যাদি পালন করা যাবে না। কেউ যদি এ বিশ্বাস নিয়ে বুযুর্গদের নৈকট্য লাভের জন্য উপরোক্ত কোন কাজ করে যে, বুযুর্গগণ তাদের উপকার করতে পারে বা তাদের ক্ষতি করতে পারে অথবা তাদের কোন জিনিস দিতে পারে বা কোন জিনিস থেকে বঞ্চিত করতে পারে, তাহলে সে আল্লাহর সাথে বড় ধরণের শিরক করল।
যে ব্যক্তি এ সকল বুযুর্গ দ্বারা বরকত হাসিলের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট থেকে বরকত হাসিল করতে চায় সে বিদআতে লিপ্ত হল এবং অত্যন্ত ঘৃণিত কাজে লিপ্ত হল। [আত-তাবাররুক ওয়া আনওয়াউহু, ওয়া আহকামুহু, ড. নাছির আলজাদী: ৩৮১-৪১৮ পৃ]
৩. পাহাড় বা কোন স্থান দ্বারা বরকত হাসিল করা
পাহাড় বা কোন স্থান দ্বারা বরকত হাসিল করা নিষিদ্ধ। কেননা এটা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর শরীয়ত পরিপন্থী। এগুলো দ্বারা বরকত হাসিলের মাধ্যমে এসবের সম্মান বাড়িয়ে দেয়া হয়।
এগুলোকে হাজরে আসওয়াদ ও বায়তুল্লাহর তাওয়াফের উপর কিয়াস করা বৈধ নয়। কেননা এ দু’টো আল্লাহর ইবাদত। হাজরে আসওয়াদ ও রোকনে ইয়ামানী ব্যতীত অন্য কোন পাথর স্পর্শ করা যাবে না। কেননা সকল আলেম ঐকমত্য হয়েছেন যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রোকনে ইয়ামানী ব্যতীত অন্য কোন রোকন স্পর্শ করেননি। [ইকতিযাউস সিরাতিল মুসতাকীম- ইবনে তাইমিয়্যাহ (র) :২/৭৯৯]
ইমাম ইবনুল কাইয়িম রহ. বলেন, দুনিয়াতে হাজরে আসওয়াদ ও রোকনে ইয়ামানী ব্যতীত এমন কোন পাথর বা স্থান নেই যা চুম্বন করা শরীয়ত সিদ্ধ এবং তা গুনাহ মার্জনাকারী। [যাদুল মায়াদ : ১/৪৮]
তিনি মক্কার বৈশিষ্ট বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, পৃথিবীতে মক্কা নগরী ব্যতীত অন্য কোন স্থান এমন নেই যেখানে তাওয়াফ বা সায়ী করা জায়েয। [যাদুল মায়াদ : ১/৪৮]
শায়খুল ইসলাম রহ. কাবা ব্যতীত অন্য কোন ঘরের তাওয়াফ সম্পর্কে লিখেন, এ ধরণের তাওয়াফ হারাম ও বিদআত। এ কাজটি দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করলে তাকে তওবা করতে বলা হবে নতুবা তাকে হত্যা করা হবে। [ফতোয়ায়ে ইবনে তাইমিয়াঃ ২৬/১২১]
এমনিভাবে মাকামে ইব্রাহীম, অন্য কোন পাথর, মসজিদে হারামের কোন দেয়াল বা হেরা গুহা বা জাবালে নূরকে চুমু দেয়া বা বরকতের জন্য স্পর্শ করা বৈধ নয়। এগুলো জিয়ারত করার উদ্দেশ্যে যাওয়া, তাতে চড়া, তাতে সালাত আদায় করা ঠিক নয়। সাওর পর্বতের দ্বারা বরকত হাসিল করা বা তা জিয়ারতের উদ্দেশ্যে যাওয়া শরীয়তসিদ্ধ নয়। অনুরূপভাবে জাবালে রহমত ও জাবালে আবি কুবাইস দ্বারাও বরকত গ্রহণ করা ঠিক নয়। এমনিভাবে দারুল আরকাম বা অন্য কোন ঘর দ্বারা বরকত হাসিল করা বৈধ নয়। জাবালে তূর জিয়ারত করা বা তা জিয়ারতের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করা বৈধ নয়। মোট কথা কোন পাথর বা গাছ দ্বারা বরকত হাসিল করা যাবে না। [আত-তাবাররুক ওয়া আনওয়াউহু, ওয়া আহকামুহু, ড. নাছির আলজাদী:৪১৯-৪৬৪ পৃ]
নিষিদ্ধ জিনিস থেকে বরকত হাসিলের কারণ
নিষিদ্ধ জিনিস থেকে বরকত হাসিলের অন্যতম কারণ হল, দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞতা, বুযুর্গদের ব্যাপারে অতিরঞ্জন, কাফিরদের সাদৃশ্যতা ও কোন ঐতিহাসিক স্থানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন। [আত-তাবাররুক ওয়া আনওয়াউহু, ওয়া আহকামুহু, ড. নাছির আল-জাদী: ৪১৯-৪৬৪ পৃ]
নিষিদ্ধ জিনিস থেকে বরকত হাসিলের প্রভাব বা প্রতিক্রিয়া অনেক
শিরকে আকবারঃ যদি বরকত হাসিল করার পদ্ধতি মৌলিকভাবেই শিরক হয়, তাহলে তার প্রতিক্রিয়া খুবই ভয়ংকর। আর যদি বরকত হাসিলের পদ্ধতি মেŠলিকভাবে শিরক না হয় বরং শিরক পর্যন্ত পৌঁছায়, তাহলে তা বড় শিরকের মাধ্যম রূপে গণ্য হবে।
নিষিদ্ধ বিষয় দ্বারা বরকত অর্জনের প্রভাব হলঃ দ্বীনের মধ্যে বিদআত প্রতিষ্ঠা, গুনাহ্র দিকে ধাবিত হওয়া, মিথ্যার গহবরে পতিত হওয়া, শরয়ী দলিল বিকৃতি, সুন্নাত বিনষ্টকরণ, মূর্খদের দ্বারা ধোকা খাওয়া, পরবর্তী প্রজন্ম ধ্বংস করণ। আর এসব কিছুই ঘটে হারাম ও ঘৃণিত জিনিস দ্বারা বরকত হাসিলের মাধ্যমে।
নিষিদ্ধ পন্থায় বরকত হাসিল প্রতিরোধের উপায়
ধর্মীয় জ্ঞানের প্রসার, কুরআন ও হাদীসের দাওয়াত, অতিরঞ্জন পরিহার ও বরকত হাসিলের দিকসমূহর স্পষ্ট বর্ণনা। মোট কথা এ সকল বিষয়ের চর্চার মাধ্যমে নিষিদ্ধ পন্থায় বরকত হাসিলের প্রতিরোধ সম্ভব। [আত-তাবাররুক ওয়া আনওয়াউহু, ওয়া আহকামুহু, ড. নাছির আল-জাদী: ৪৮৩-৫০৬ পৃ]
আল্লামা সা’দী রহ. কিতাবুত তাওহীদে গাছ, পাথর ইত্যাদি দ্বারা বরকত লাভ অধ্যায়ে উল্লেখ করেন যে, এসব শিরকের অন্তর্ভুক্ত এবং এগুলো মুশরিকদের কাজ। কেননা সকল আলেম ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, গাছ, পাথর ও স্থান ইত্যাদি দ্বারা বরকত হাসিল বৈধ নয়। এগুলো বরকতময় মনে করাও বৈধ নয়। এসবের কাছে দুআ করা, ইবাদত করা শিরকে আকবার বা বড় শির্ক। চাই তা মাকামে ইব্রাহিম, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হুজরা, বায়তুল মুকাদ্দাসের পাথর ইত্যাদি হোক না কেন।
তবে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ ও চুম্বন করা এবং রোকনে ইয়ামেনীতে চুম্বন করা ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। তাতে রবের বড়ত্বের পরিচয় পাওয়া যায়। আর এ দু‘টি স্থান ছাড়া অন্য সবগুলোতে মাখলুকের বড়ত্ত্ব ফুটে উঠে। প্রথমটিতে আল্লাহর তা‘জীম আর দ্বিতীয়টিতে মাখলুকের তা‘জীম। এতদুভয়ের মাঝে পার্থক্য হল, আল্লাহর কাছে দুআ করা একত্ববাদ। আর মাখলুকের কাছে দুআ করা শির্ক। [আল-কাউলুস সাদীদ: ৫১ পৃ]
প্রচলিত কয়েকটি বিদআত
এ ধরণের বিদআত সমাজে অনেক। তন্মধ্যে-
(১) জোরে নিয়ত বলাঃ কোন মুসলিম বলল, নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া, নাওয়াইতু আন আসুমা, নাওয়াইতু আন আতা ওয়াদ্দিআ, নাওযায়তু আন আগতাসিলা ইত্যাদি মুখে বলে নিয়ত করা বিদআত। কেননা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এ ধরণের কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না।
আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
قُلْ أَتُعَلِّمُونَ اللهَ بِدِيْنِكُمْ وَاللهُ يَعْلَمُ مَا فِى السَّمَاوَات وَمَا فِى الأَرْضِ وَاللهُ بِكُلِّ شَيٍْء عَلِيمٌ . ( الحجرات - 16)
অর্থঃ (হে নবী) আপনি বলুন! তোমরা কি তোমাদের দ্বীন সম্পর্কে আল্লাহ্কে অবহিত করতে চাও? অথচ আল্লাহ্ আসমান ও যমীনের যাবতীয় কিছু জানেন। আল্লাহ্ সর্ব বিষয়ে সম্যক অবহিত। [হুজরাত: ১৬]
নিয়তের স্থান হল অন্তর। নিয়ত অন্তরের কাজ, মুখের কাজ নয়। হাফেয ইবনে রজব রহ. বলেন, নিয়ত হল অন্তরের ইচ্ছা। কোন ইবাদতের ক্ষেত্রে নিয়ত মুখে বলা ওয়াজিব নয়। [জামে‘উল উলুম ওয়াল হিকাম:১/৯২]
(২) ফরজ সালাতের পর সম্মিলিত দুআ
জামাতে সালাত আদায়ের পর প্রত্যেকের জন্যই ব্যক্তিগতভাবে শরীয়ত সম্মত দুআ ও তাসবীহ পাঠ করা বৈধ। যেমন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতের পর দুআ ও তাসবীহ পাঠ করতেন এবং সাহাবায়ে কেরামও এরূপ আমল করতেন। কেননা তারা রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুন্নাতকে যথাযথভাবে আমলে পরিণত করতেন। তাই জামাতে সালাত আদায়ের পর সম্মিলিতভাবে দুআ রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুন্নাত পরিপন্থী।
(৩) মৃত ব্যক্তির রূহের মাগফেরাত, মৃত ব্যক্তির জন্য দুআ করার পর কিংবা বিবাহের খোৎবার সময় সূরা ফাতিহা পাঠের জন্য লোকদের বলা।
এ সবই বিদআতের অন্তর্ভুক্ত। কেননা তা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত নেই এবং সাহাবায়ে কেরামও এ ধরণের আমল করেননি। অথচ তারাই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আমল সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত ছিলেন। এ থেকে প্রতীয়মাণ হল যে, এ ধরণের আমল নব আবিষ্কৃত ও বিদআত।
(৪) মৃত ব্যক্তির শোকে মাতম করা
মৃত ব্যক্তির শোকে মাতম করা, চল্লিশা ইত্যাদি খাওয়ানো, হাফেজ সাহেবদের এনে কুলখানী করানো এ ধারণায় যে, তা মৃত ব্যক্তির শান্তনা যোগাবে এবং মৃত ব্যক্তির উপকারে আসবে।
(৫) কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত তাসবীহ-তাহলীলের বাইরে বিভিন্ন সুফি বা পীরদের নানা ধরণের যিকির, যা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাতের পরিপন্থী। সুন্নাতের সাথে এ বৈপরীত্য শব্দগত হোক, গঠনগত কিংবা সময় সাপেক্ষ হোক, সুন্নাতের পরিপন্থী কোন যিকিরই গ্রহণযোগ্য নয়।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাণী,
مَاءُ زَمْزَمَ لِمَا شُرِبَ لَهُ . ( مسلم )
অর্থঃ যে ব্যক্তি এমন কোন নেক আমল করল (সাওয়াবের নিয়তে) যা আমাদের পক্ষ থেকে অনুমোদিত নয় তা প্রত্যাখ্যাত। [মুসলিম: ১৭১৮]
(৬) কবরের উপর মাজারের নামে ঘর তৈরী করা, কবরের পাশে মসজিদ তৈরী করে সেখানে সালাত আদায় করা, তাতে মৃতদের দাফন করা, প্রত্যহ সে কবর যিয়ারত করা, বরকত হাসিলের উদ্দেশ্যে কবরের পাশে গিয়ে সালাত আদায় করা, কবরে শায়ীত মৃত ব্যক্তির উসিলা দিয়ে আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট দুআ করা অথবা কবরের পাশে গিয়ে দুআ করা, কবরে লাইটিং বা আলোকসজ্জা করা এর প্রত্যেকটিই বিদআত এবং ঘৃণিত ও অপছন্দনীয় কাজ। [কিতাবুত তাওহীম- ডঃ সালেহ আলফাওজান: ৯৪]
প্রথমঃ মিলাদ মাহফিল
মিলাদ মাহফিল করা বিদআত। হিজরী চতুর্থ শতাব্দীতে উবায়দীরা এ বিদআতের প্রবর্তন করে। বর্তমান ও পুর্বেকার সকল উলামায়ে কেরাম একে বাতিল বলে আখ্যায়িত করেছেন। যারা এ ধরণের বিদআতের প্রবর্তন করেছে ও আমল করেছে, উলামায়ে কেরাম তাদের প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাই মিলাদ মাহফিল করা বৈধ নয়। কারণঃ
১ম কারণঃ যে সকল কুসংস্কারের ব্যাপারে শরীয়তে কোন প্রমাণ নেই; তার অন্যতম হল মিলাদ মাহফিল। কেননা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এ প্রসঙ্গে কোন বক্তব্য, আমল বা সমর্থন পাওয়া যায় না।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَمَآ ءأتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا . ( الحشر : 7)
অর্থঃ রাসূল যা কিছু নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাক। [হাশর : ৭]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرجُواللهَ وَالْيَومَ اْلاخِرَ وَ ذَكَرَ اللهَ كَثِيْرًا . ( الأحزاب : 21)
অর্থঃ অবশ্যই আল্লাহর রাসূলের জীবনের মাঝে রয়েছে উত্তম আদর্শ ঐ ব্যক্তির জন্য, যে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি ও কিয়ামত দিবসে (মুক্তির) আশা করে। আর অধিক পরিমাণে আল্লাহকে স্মরণ করে। [আহযাবঃ ২১]
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ . ( بخاري و مسلم )
অর্থঃ যে আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু প্রবর্তন করে যা এর অন্তর্ভূক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত। [বুখারী : ২৬৯৭ ও মুসলিম : ১৭১৮]
২য় কারণঃ খোলাফায়ে রাশেদীন এবং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অন্যান্য সাহাবীগণ মিলাদ মাহফিল করেননি। এমন কি তার দাওয়াতও দেননি, অথচ তারাই হচ্ছেন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পর সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত।
খুলাফায়ে রাশেদীনের মর্যাদা সম্পর্কে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ . ( أبو داود )
অর্থঃ তোমাদের জন্য আবশ্যক আমার ও আমার পরবর্তী হেদায়াত প্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাতকে এমনভাবে আঁকড়ে ধরা যেভাবে দাঁত দিয়ে কোন জিনিস দৃঢ়ভাবে কামড়ে ধরা হয়। আর শরীয়তে নিত্য নতুন জিনিস আবিস্কার করা হতে বেঁচে থাক। কেননা সকল নবসৃষ্ট বস্ত্তই বিদআত। আর প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহী। [আবু দাউদ:৪৬০৭]
৩য় কারণঃ মীলাদ মাহফিল করা বক্রতা সৃষ্টিকারী পথভ্রষ্টদের প্রথা। এ প্রথাকে সর্ব প্রথম ফাতেমী ও উবাইদী গোত্রের লোকেরা হিজরী চতুর্থ শতাব্দীতে প্রবর্তন করে। তারা নিজেদেরকে ফাতেমা (রা) এর সাথে সম্পৃক্ত করে, যা অন্যায়, অযেŠক্তিক ও অপবাদ ব্যতীত আর কিছুই নয়। মূলতঃ তারা ইহুদী। কেউ বলেন, তারা অগ্নিপুজক, আবার কেউ বলেন, তারা মুলহিদীন বা নাস্তিক। তাদের প্রথম ব্যক্তি হল, মুইজুদ্দীন ওবায়দী। সে পাশ্চাত্যের অধিবাসী। সেখান থেকে সে ৩৬১ হিজরীর শাওয়াল মাসে মিশরে আগমন করে এবং ৩৬২ হিজরী রমজান মাস পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে। [. বিদায়া ওয়ান নিহায়া-ইবনে কাসীর:১১/২৭২-৭৩]
এখন কোন বুদ্ধিমানের জন্য এটা কি উচিত হবে যে, সে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুন্নাত ছেড়ে একজন ইহুদীর অনুসরণ করবে? (আদৌ নয়)।
৪র্থ কারণঃ আল্লাহ্ তা‘আলা এ দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
اَلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكَمْ نعْمَتِيْ وَ رَضِيْتُ لَكُم الإِسْلامَ دِيْنًا .( المائدة : 3)
অর্থঃ আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পরিপূর্ণ করে দিলাম ও আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম। [মায়েদা: ৩]
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরিপূর্ণভাবে দ্বীনের প্রচার করেছেন। জান্নাতে পৌঁছার সকল পথ ও জাহান্নাম হতে বাঁচার সকল উপায় উম্মতের সামনে বর্ণনা করে দিয়েছেন।
একথা সকলের জানা যে, আমাদের রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকল নবীগণের সর্দার এবং তিনি সর্বশেষ নবী, পরিপূর্ণভাবে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছিয়েছেন এবং আল্লাহর বান্দাদের কল্যাণ কামনা করেছেন। সুতরাং যদি মীলাদ মাহফিল দ্বীনের অংশ হতো আর আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের কারণ হতো, তাহলে অবশ্যই তিনি তা উম্মতের জন্য বর্ণনা করতেন বা তাঁর জীবনে একবার হলেও আমল করে দেখাতেন।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
مَا بَعَثَ اللهُ مِنْ نَّبِيِّ إِلَّا كَانَ حَقًا عَلَيْهِ أَنْ يَّدُلَّ أُمَّتَهُ عَلَى خَيْرِ مَايَعْلَمُهُ لَهُمْ، وَيُنْذِرَهُمْ شَرَّ مَا يَعْلَمُهُ لَهُمْ . ( مسلم )
অর্থঃ আল্লাহ যত নবী প্রেরণ করেছেন তাদের সকলের উপর দায়িত্ব ছিল উম্মতকে ভাল কাজের দিক নির্দেশনা দেয়া ও অন্যায় কাজ হতে ভীতি প্রদর্শন করা। [মুসলিম:১৮৪৪]
৫ম কারণঃ মিলাদ মাহফিলের মত বিদআত আমলের আবিস্কারের মাধ্যমে এ কথা প্রতীয়মাণ হয় যে, আল্লাহ তা‘আলা দ্বীনকে এ উম্মতের জন্য পরিপূর্ণ করেননি, তাই দ্বীনের পরিপূরক কিছু আবিস্কারের প্রয়োজন হয়েছে। তেমনি একথাও বুঝা যায় যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মতের জন্য কল্যাণকর সকল বিষয়ের তাবলীগ বা প্রচার করেননি। যে কারণে পরবর্তীতে আল্লাহর অনুমোদন ব্যতিরেকে শরীয়তে নতুন কিছু আবিস্কারের প্রয়োজন দেখা দেয়। এর মাধ্যমে তারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে চায়। এটা চুড়ান্ত পর্যায়ের অন্যায় ও ভুল। এটা আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপর অভিযোগ। অথচ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর দ্বীনকে পরিপূর্ণ ও বান্দাদের জন্য সকল নিয়ামত সস্পূর্ণ করে দিয়েছেন।
৬ষ্ঠ কারণঃ এ উম্মতের বড় বড় আলেমগণ কুরআন ও হাদীসের ভিত্তিতে মীলাদ মাহফিলের প্রতি অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তারা বিদআত পরিহার করতে ও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অনুসরণ করতে বলেন এবং কথা, কাজ ও আমলে তাঁর বিরোধিতা করা হতে সতর্ক করেন।
৭ম কারণঃ মীলাদ মাহফিলের দ্বারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ভালবাসা অর্জিত হয় না বরং তাঁর অনুসরণ ও সুন্নাত অনুযায়ী আমলের দ্বারা তা অর্জিত হয়।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
قُلْ إِن كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللهَ فَاتَّبِعونِي يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَ يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللهُ غَفُورُ رَّحِيْمٌ . ( آل عمران : 31)
অর্থঃ )হে নবী( আপনি বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহর ভালবাসার দাবি কর, তাহলে আমার অনুসরণ কর। ফলে আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন এবং তোমাদের সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু। [আলে-ইমরান: ৩১]
৮ম কারণঃ মীলাদ মাহফিল, জসনে জুলুস ও ঈদে মিলাদুন্নবী ইহুদী ও খ্রীষ্টানদের উৎসবের সাদৃশ। আর ইহুদী ও খ্রীষ্টানদের সাদৃশ্য অবলম্বন করতে ও তাদের অনুসরণ করতে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন। [যাদুল মায়াদ-ইবনে কাইয়্যিম (র): ১/৫৯]
৯ম কারণঃ সারাদেশে মিলাদ মাহফিলে অধিক হারে লোক সমাগম দ্বারা জ্ঞানী লোকেরা কখনও প্রভাবিত হয় না। কেননা সঠিক ও সত্য হওয়াটা মানুষের আধিক্যতা দ্বারা বুঝা যায় না বরং শরীয়তের দলিলের মাধ্যমে বুঝা যায়।
আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَإِن تُطِعْ أكْثَرَ مَن فِى اْلأَرْضِ يُضِّلُوكَ عَن سَبِيلِ اللهِ . ( الأنعام : 116)
অর্থঃ যদি আপনি দুনিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকদের অনুকরণ করেন, তাহলে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করে দেবে। [আনআম: ১১৬]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَمَآأكْثَرُ النَّاسِ وَلَوْ حَرَصْتَ بمؤمنين . ( يوسف : 103)
অর্থঃ যদিও আপনি মনে প্রাণে চান তবুও অধিকাংশ লোক ঈমানদার নয়। [ইউসুফ: ১০৩]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَ قَلِيلٌ مِّنْ عِباَدِيَ الشَّكُور . ( السبا : 13)
অর্থঃ আমার বান্দাদের কম সংখ্যকই কৃতজ্ঞ। [সাবা: ১৩]
১০ম কারণঃ শরয়ী নীতিমালার যে সকল ব্যাপারে মানুষ বাক-বিতন্ডা ও ঝগড়া করে, সে সকল বিষয়ে কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাতে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুসরণ করা উচিৎ।
আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
يَا أَيُّها الّذِينَ ءَامَنُوا اَطِيعُوا اللهَ وَاَطِيعُوا الرَّسُولَ وأًولِى الأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِى شَىْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَي اللهِ وَ الرَّسٌولِ إِن كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الأَخِر ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأوِيلاً . ( النساء : 59)
অর্থঃ হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের অনুগত হও এবং তোমাদের নেতৃবৃন্দের আনুগত্য কর। অতঃপর যদি তোমাদের মধ্যে কোন বিষয়ে মত বিরোধ দেখা দেয় তবে আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যাবর্তিত হও যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। এটাই কল্যাণকর ও শ্রেষ্ঠতর। [নিসা: ৫৯]
আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَمَا اخْتَلَفْتُمْ فِيهِ مِن شَيءِ فَحُكْمُهُ إِلَى اللهِ . ( الشورى : 10)
অর্থঃ তোমরা যে বিষয়েই মতভেদ কর না কেন ওর মীমাংসাতো আল্লাহরই নিকট। [আশ-শুরা: ১০]
নিঃসন্দেহে যে ব্যক্তি মীলাদ মাহফিলের ব্যাপারে আল্লাহ্ ও রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দিক নির্দেশনার প্রতি ধাবিত হবে, সে জানতে পারবে, আল্লাহ তাআলা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ
وَمَآ ءأتَاكمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَـكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا . ( الحشر : 7)
অর্থঃ রাসূল তোমাদের কাছে যা নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ কর এবং যা হতে নিষেধ করেছেন তা হতে বিরত থাক। [হাশরঃ ৭]
আল্লাহ তাআলা দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ ও পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মীলাদ মাহফিলের জন্য কাউকে নির্দেশ দেননি, তিনি এবং তাঁর সাহাবীগণও তা কখনও করেননি। সুতরাং মীলাদ মাহফিল দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং তা নব্যসৃষ্ট বিদআত।
১১তম কারণঃ সোমবার সিয়াম পালন শরীয়ত সিদ্ধ। কেননা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সোমবারের সিয়াম সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেন, ذلِكَ يَوْمٍ وُلِدْتُ فِيْهِ، وَيَوْمَ بُعِثْتُ أَوْ أُنْزِلَ عَلي فِيْه . ( مسلم ) অর্থঃ এটা এমন দিন যে দিন আমি জন্ম গ্রহণ করেছি, আমি নবুওয়াত প্রাপ্ত হয়েছি অথবা আমার প্রতি সেদিন কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। [মুসলিম :]
সুতরাং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আদর্শ হল সোমবার সিয়াম পালন করা, তবে এ উপলক্ষে মীলাদ মাহফিল করা বৈধ নয়।
১২তম কারণঃ ঈদে মীলাদুন্নবী উদযাপন করা গর্হিত ও নিষিদ্ধ বিষয়াবলীর অন্যতম। আর তা বুঝা যায় এ ধরণের মাহফিলে উপস্থিত হওয়া দ্বারা। এ ধরণের গর্হিত কাজের কিছু উদাহরণ নিম্নে উল্লেখ করা হল।
১। মীলাদে অংশগ্রহণকারীদের রচিত অধিকাংশ কবিতা ও স্ত্ততিমূলক বাক্যগুলোতে শিরকী ও বাড়াবাড়িমূলক কথা পাওয়া যায়। অথচ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর প্রশংসা করার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করে বলেন,
لَا تُطْرُونِي كَمَا أَطْرَتْ النَّصَارَى ابْنَ مَرْيَمَ فَإِنَّمَا أَنَا عَبْدُهُ فَقُولُوا عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُه .
( بخاري )
অর্থঃ তোমরা আমার প্রশংসার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করো না, যেমন খ্রীষ্টানরা ইবনে মারইয়ামের প্রশংসার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করেছিল। নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর বান্দা। সুতরাং তোমরা বল আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। [বুখারী : ৩৪৪৫]
২। মীলাদ মাহফিলে অনেক ক্ষেত্রে হারাম কাজ হয়ে থাকে। যেমন নারী-পুরুষ মিলেমিশে বসা, গান-বাদ্য করা, মদ-গাজা সেবন ইত্যাদি। আর কখনও কখনও এতে শিরকে আকবরও সংঘটিত হয়। যেমন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে বা অন্য কোন অলীর কাছে সাহায্য চাওয়া, আল্লাহর কিতাবের অসম্মান করা, কুরআনের মজলিসে ধূমপান করা ইত্যাদি। মীলাদের দিনগুলোতে উচ্চস্বরে মসজিদে জিকির করা ও সুর করে শরীয়ত পরিপন্থী কবিতা আবৃত্তি করা। যা হক্কানী আলেমগণের ঐকমত্যে শরীয়ত সম্মত নয়।
৩। মীলাদ মাহফিলে আরো কিছু গর্হিত কাজ সংঘটিত হয়। যেমন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্মের ঘটনা আলোচনা কালে তাঁর সম্মানার্থে দাঁড়ান এই বিশ্বাস নিয়ে যে, তিনি এ মীলাদ মাহফিলে উপস্থিত হয়েছেন। তাই তাঁর অভ্যর্থনার জন্য দাঁড়িয়ে যায়। আর এ সবই চরম ভ্রান্তি ও মূর্খতা, যা নিন্দিত। কেননা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিয়ামতের পূর্বে কবর থেকে বের হবেন না। কোন লোকের সাথে সাক্ষাত করবেন না, কোন সম্মেলনে উপস্থিত হবেন না। বরং তিনি কিয়ামত পর্যন্ত নিজ কবরে অবস্থান করবেন। আর তাঁর রুহ ইল্লিয়্যিনের সর্বোচ্চ স্তরে তাঁর প্রভুর কাছে সম্মানিত স্থানে রয়েছে।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ
ثُمَّ إِنَّكم بَعْدَ ذَلِكَ لَمَيِّتُون، ثُمَّ إِنَّكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ تُبْعَثُونَ . ( المؤمنون :15-16)
অর্থঃ এরপর তোমরা অবশ্যই মৃত্যুবরণ করবে। অতঃপর কিয়ামতের দিন তোমাদের পুনরুত্থিত করা হবে। [মুমিনুনঃ ১৫-১৬]
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
أَنَا سَيِّدُ وَلَدِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَأَوَّلُ مَنْ يَنْشَقُّ عَنْهُ الْقَبْرُ وَأَوَّلُ شَافِعٍ وَأَوَّلُ مُشَفَّعٍ .
( مسلم )
অর্থঃ আমি কিয়ামতের দিন আদম সন্তানের নেতা, সর্ব প্রথম কবর থেকে উত্থিত ব্যক্তি, সর্বপ্রথম সুপারিশকারী এবং সর্বপ্রথম আমার সুপারিশ গৃহিত হবে। [মুসলিম : ২২৭৮]
উক্ত আয়াত, হাদীস এবং এ জাতীয় আয়াত ও হাদীসসমূহ থেকে বুঝে আসে যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অন্যান্য মৃতদের ন্যায় মৃত। তিনি কিয়ামতের দিন কবর থেকে উত্থিত হবেন।
আব্দুল আযীয ইবনে আব্দুল্লাহ্ ইবনে বায বলেন, এ বিষয়ে সমস্ত আলেমের ঐকমত্য রয়েছে, এতে কারো মতবিরোধ নেই। [আত-তাহযীর মিনাল বিদআঃ ১৪]
দ্বিতীয়ঃ রজব মাসের প্রথম জুমার রাতে মীলাদ মাহফিল করা বিদআত
রজব মাসের প্রথম জুমার রাতে মাহফিল করা বিদআত ও গর্হিত কাজ। ইমাম আবু বকর তরতুশী উল্লেখ করেন, আবু মুহাম্মাদ আল মাকদেসী রহ. তাকে অবহিত করেছেন যে, রজব মাসে এ মীলাদ মাহফিল বায়তুল মুকাদ্দাসে ৪৮০ হিঃ সনে শুরু হয়। ইতিপূর্বে এ মাহফিল সম্পর্কে কিছু শুনিনি, দেখিওনি। [আল-হাওয়াদেস ওয়াল বিদআতঃ ২৬৭]
ইমাম আবু শামা রহ. বলেন, সালাতে রাগায়েব যা মানুষের মাঝে এখনও প্রসিদ্ধ হয়ে গেছে, তা রজব মাসের প্রথম জুমার রাতে মাগরিব ও ইশার সালাতের মধ্যবর্তী সময়ে পড়া হয়। [কিতাবুল বায়েস আলা ইনকারিল বিদয়ে ওয়াল হাওয়াদেস : ২৩৮]
ইবনে রজব রহ. বলেন, রজব মাসের সাথে নির্দিষ্ট করে কোন সালাত আদায় করা সঠিক নয়। রজব মাসের প্রথম জুমার রাতে সালাতে রাগায়েব সংক্রান্ত বর্ণিত সকল হাদীস মিথ্যা ও অশুদ্ধ। আর জমহুর আলেমের মতে এ সালাত বিদআত। [লাতায়েফুল মাআরিফ ফিমা লি মাওয়াসিমিল আম মিনাল ওযায়েফ :২২৮]
হাফেয ইবনে হাজার রহ. বলেন, রজব মাসের ফযীলত, তাতে সিয়াম পালন এবং এর বিশেষ কোন রাতে সালাত আদায় সম্পর্কে কোন বিশুদ্ধ হাদীস নেই। [তিবইয়ানুল উযব বিমা ওয়ারাদা ফী শাহ্রি রজব : ২৩]
অতঃপর তিনি বলেন, যে সকল হাদীসে রজব মাসের ফযীলত বা তাতে সিয়াম পালনের ফযীলত সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে, তা দু‘ প্রকার। ১. যয়ীফ ও ২. মওজু। [প্রাগুক্তঃ ২৩]
অতঃপর তিনি সালাতে রগায়েবের হাদীস উল্লেখ করেন। তাতে রয়েছে রজবের প্রথম বৃহস্পতিবার সিয়াম পালন, এরপর মাগরিব ও ইশার মাঝখানে বার রাকাত সালাত আদায়, প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহা ১বার, সূরা ক্বদর ৩ বার, ১২বার সূরা ইখলাছ পড়া এবং প্রত্যেক দু‘রাকাত পর পর সালাম ফিরানো। এরপর তিনি তাছবীহ, ইস্তেগফার, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রতি দরূদ পাঠ। অতঃপর তিনি উল্লেখ করেন, এ হাদীসটি মওজু এবং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর মিথ্যারোপ মাত্র। তিনি বলেন, লোকজনের নিকট এ ইবাদতকে বড় ফজিলতপূর্ণ করে দেখানো হয়, অথচ এ সালাতে সাধারণতঃ তারাই আগ্রহী হয়, যারা নিয়মিত সালাতের জামাতে উপস্থিত হয় না। [তিবইয়ানুল উযব বিমা ওয়ারাদা ফি শাহরে রজব : ৫৪পৃ:]
ইমাম ইবনে সালাহ রহ. সালাতে রাগায়েব সম্পর্কে বলেন, এ হাদীসটি মওজু। এটা হিজরী ১৪শ বছর পর নতুন করে আবিষ্কার করা হয়েছে। [কিতাবুল বায়েস আলা ইনকারিল বিদয়ে ওয়াল হাওয়াদেস : ১৪৫পৃ:]
ইমাম আল-ইজ্জ বিন আবদুস সালাম রহ. ৬৩৭ হিজরী সনে এক ফতোয়ায় লিখেন, সালাতে রাগায়েব বিদআত ও মুনকার এবং এ সংক্রান্ত হাদীস রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর মিথ্যারোপ ছাড়া কিছুই নয়। [কিতাবুল বায়েস আলা ইনকারিল বিদয়ে ওয়াল হাওয়াদেস : ১৪৯পৃ:] পরিশেষে তিনি ইমাম আবু শামার রহ. কথা সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরে সালাতে রাগায়েব বাতিল আখ্যায়িত করেন। তিনি উক্ত ইবাদতকে নেক আমল বিনষ্টকারী হিসেবে উল্লেখ করে নিম্মোক্ত বর্ণনা পেশ করেন।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, এ সালাত বিদআত। সর্বাধিক জ্ঞানী আলেম সমাজ এবং আইম্মাতুল মুসলিমীন যথাঃ সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন ও অন্যান্য আলেমগণ যারা দ্বীনের অনেক কিতাব লিপিবদ্ধ করেছেন এবং অতি উৎসাহের সাথে মানুষদের দ্বীনের বিধি-বিধান, ফরজ ও সুন্নাত শিক্ষা দিয়েছেন, তাদের কারো থেকে এ ধরনের কোন বর্ণনা পাওয়া যায়নি। এ সালাত সম্পর্কে কোন বর্ণনা তাদের কিতাবে লিপিবদ্ধ হয়নি এবং তারা কোন মজলিশে এধরনের বক্তব্য দেননি। এটা যদি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাত হত, তাহলে ওলামায়ে কেরামের নিকট তা অজ্ঞাত থাকত না।
এ সালাত তিনটি কারণে শরীয়ত পরিপন্থী।
প্রথম কারণঃ এ সালাত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসের পরিপন্থী। হাদীসটি হচ্ছেঃ
لَا تَخْتَصُّوا لَيْلَةَ الْجُمُعَةِ بِقِيَامٍ مِنْ بَيْنِ اللَّيَالِي وَلَا تَخُصُّوا يَوْمَ الْجُمُعَةِ بِصِيَامٍ مِنْ بَيْنِ الْأَيَّامِ إِلَّا أَنْ يَكُونَ فِي صَوْمٍ يَصُومُهُ أَحَدُكُمْ . ( متفق عليه )
অর্থঃ তোমরা শুধু জুমার রাতকে ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট করো না এবং শুধু জুমার দিনকে সিয়ামের জন্য নির্দিষ্ট করো না। তবে হ্যাঁ; যদি কেউ ধারাবাহিক ভাবে সিয়াম পালন করতে থাকে তা স্বতন্ত্র কথা। [বুখারী : ১৯৮৫ ও মুসলিম : ১১৪৪]
সুতরাং এ হাদীসের ভিত্তিতে অন্যান্য রাতকে বাদ দিয়ে শুধু জুমার রাতকে সালাতের জন্য নির্দিষ্ট করা জায়েয নেই। [কিতাবুল বায়েস আলা ইনকারিল বিদয়ে ওয়াল হাওয়াদেস- ইমাম আবু শামা : ১৫৬পৃ:] এটা রজব মাসের প্রথম জুমার রাতের ব্যাপারেও প্রযোজ্য।
দ্বিতীয় কারণঃ রজব ও শাবান মাসে বিশেষ সালাত আদায় বিদআত। এ ব্যাপারে এমন সব কথা বলা হয়, যা হাদীসে নেই। তাই এর দ্বারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর মিথ্যারোপ করা হয়। তেমনি এ রাতে আমলের প্রতিদান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত বলার মাধ্যমে আল্লাহর উপরও মিথ্যারোপ করা হয়। অথচ এ ব্যাপারে তিনি কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি। পক্ষান্তরে যে সকল ব্যাপারে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপর মিথ্যারোপ করা হয়, তা মিথ্যাজ্ঞান করা, পরিহার করা, নিকৃষ্ট মনে করা এবং জনগণের মাঝে এ সম্পর্কে ঘৃণা ছড়ানো একান্ত জরুরী। কেননা এ সবের সাথে একাত্মতার কারণে অনেক বিশৃঃখলা সৃষ্টি হয়।
১ম বিশৃংখলাঃ এ সকল ইবাদতের ফযীলত এবং তা ছেড়ে দেয়ার ক্ষতি সম্পর্কে যা কিছু মানুষের কানে আসে তার উপর নির্ভর করা। ফলে অধিকাংশ মানুষ দু‘টি কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে।
১। ফরজসমূহের ব্যাপারে শিথিলতা।
২। পাপের মধ্যে লিপ্ত হয়ে পড়া।
মানুষ এ রাতের অপেক্ষায় থাকে ও এতে সালাত আদায় করে মনে করে যে, বিগত দিনে যা ছেড়ে দিয়েছে এসব আমল তার পরিপূরক হয়ে যাবে এবং যে পাপে তারা লিপ্ত ছিল তা মাফ হয়ে যাবে। সালাতে রাগায়েবের ব্যাপারে হাদীস রচনাকারীরা ধারণা করেছিল যে,‘‘মানুষ অধিক হারে সৎকাজে অনুগামী হবে’’। কিন্তু বাস্তবে মানুষ অধিক হারে পাপ ও নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েছে।
২য় বিশৃঃখলাঃ মানুষকে পথভ্রষ্ট করার জন্য-বিদআতপন্থীরা যে সকল বিদআত কাজের প্রচলন করে; যখন তারা দেখে তাতে মানুষ লিপ্ত হয়েছে ও সে বিদআতগুলো প্রচলিত হয়েছে, তখন তারা মানুষদেরকে এক বিদআত থেকে আরেক বিদআতের দিকে পথ দেখায়।
৩য় বিশৃংখলাঃ যখন কোন আলেম বিদআতী কাজ করে তখন সাধারণ মানুষ ধারণা করে, এটা সুন্নাত। এ ক্ষেত্রে ঐ আলেম স্বীয় কাজের মাধ্যমে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর মিথ্যারোপ করে। অধিকাংশ মানুষ এ কারণেই বিদআতে লিপ্ত হয়ে পড়ে।
তৃতীয় কারণঃ এ বিদআতী সালাত বিভিন্ন কারণে শরয়ী সালাতের বিপরীত হয়।
একঃ এ সালাতে সিজদার সংখ্যা, তাসবীহ্র সংখ্যা, প্রত্যেক রাকাআতে নির্দিষ্ট সংখ্যায় সূরা ক্বদর ও সূরা ইখলাছ পড়ার মাধ্যমে সালাতের সুন্নাত পদ্ধতির বিরোধিতা করা হয় ।
দুইঃ সালাতে অন্তর বিগলিত হওয়া, একাগ্রতার সাথে সালাত আদায় করা, আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় সালাতের জন্য অবসর হওয়া ও কুরআনের অর্থের দিকে লক্ষ্য করে সালাত আদায় করা সুন্নাত। এখানে তা পাওয়া যায় না।
তিনঃ নফল সালাত মসজিদে আদায় করার চেয়ে ঘরে এবং একাকী আদায় করা উত্তম। তবে রমজান মাসে তারাবীহ্র সালাত জামাতের সাথে মসজিদে আদায় করা উত্তম।
চারঃ এ সালাত শেষ করার পর অতিরিক্ত দু‘টি সিজদা আদায় করা, যার প্রকৃত কোন কারণ নেই।
উল্লিখিত দলিল-প্রমাণ, আলেমগণের বক্তব্য এবং ভ্রান্ত হওয়ার কারণ ও বিশৃংখলার প্রকার এ সব থেকে স্পষ্ট বুঝে আসে যে, সালাতে রাগায়েব বিদআত। [কিতাবুল বায়েস আলা ইনকারিল বিদয়ে ওয়াল হাওয়াদেস- ইমাম আবু শামা : ১৫৩-১৯৬পৃ:]
তৃতীয়ঃ ইসরা ও মিরাজের রাতে মীলাদ মাহফিল করা
ইসরা ও মিরাজ আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শনাবলীর অন্যতম। যা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সত্যতা, আল্লাহর কাছে তাঁর উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন হওয়া, আল্লাহর কুদরত এবং তার আরশে অবস্থানের প্রতি ইঙ্গিত বহন করে।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ
سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بَعَبْدِهِ لَيْلاً مِّنَ المَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الاَقَصَا الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ ءَايَاتِنَا إِنَّهُ هُوَ الَّسّمِيعُ الْبِصِيْرُ . ( الإسراء : 1)
অর্থঃ পবিত্র ও মহিমাময় তিনি যিনি স্বীয় বান্দা (রাসূলুল্লাহ) কে রাতে মসজিদুল হারাম হতে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছিলেন তাকে নির্দশনাবলী দেখাবার জন্য। যার চারপাশ আমি বরকতময় করেছিলাম, তিনিই সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা। [ইসরা : ১]
হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসমানে ভ্রমণ করেছিলেন, তাঁর জন্য আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়েছিল। এ পর্যায়ে তিনি সাত আসমান ভ্রমণ করেন। প্রথমে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছিলেন। অতঃপর আল্লাহ্ তা‘আলার কাছে বারবার যেতে থাকলে ও সহজ করার প্রার্থনা করতে থাকলে আল্লাহ তাআলা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেন। তবে পাঁচ ওয়াক্তের বিনিময়ে পঞ্চাশ ওয়াক্তের সাওয়াব দিবেন। কেননা উম্মতে মুহাম্মাদীর প্রত্যেকটি নেক আমল দশ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। তাই আল্লাহ তাআলার অসংখ্য নিয়ামতের শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। [আত-তাহযীর মিনাল বিদআ : ১৬]
মিরাজের রাতে কোন মীলাদ মাহফিল, শরীয়ত অসমর্থিত কোন প্রকার ইবাদত না করা কয়েকটি কারণে জরুরী।
একঃ কোন রাতে মিরাজ সংঘটিত হয়েছে, তা নির্ধারণের ব্যাপারে কোন বিশুদ্ধ হাদীস নেই। কারো মতে নবুওয়াত প্রাপ্তির ১৫মাস পর, কারো মতে হিজরতের এক বছর পূর্বে রবিউস সানীর ২৭তম রাতে, কারো মতে নবুওয়াত প্রাপ্তির পাঁচ বছর পর, কারো মতে রবিউল আউয়ালের ২৭ তারিখ। [ইমাম নববীর শরহে মুসলিম : ২/২৬৭]
ইমাম আবু শামা রহ. বলেন, কতিপয় ঐতিহাসিকের মতে, ইসরা রজব মাসে হয়েছিল, যা বিজ্ঞজনদের মতে সঠিক নয়। [কিতাবুল হাওয়াদেস ওয়াল বিদআ : ২৩২পৃ:]
ইবনুল কাইয়্যিম রহ. বলেন, ইসরা কোন রাতে হয়েছিল তা সঠিক ভাবে জানা নেই। [যাদুল মা আদ :১/৫৮]
আল্লামা আব্দুল আযীয ইবনে বায রহ. বলেন, যে রাতে ইসরা ও মিরাজ সংঘটিত হয়েছিল তা রজব মাসে, না কি অন্য কোন মাসে, এটা নির্ধারণের জন্য কোন বিশুদ্ধ হাদীস নেই, আর তারিখ নির্ধারণের জন্য বর্ণিত সকল হাদীস মুহাদ্দিসগণের মতে বিশুদ্ধ নয়। মিরাজের তারিখ ভুলিয়ে দেয়ার মধ্যে আল্লাহর অনেক হিকমত নিহিত আছে। [আত তাহযীর মিনাল বিদআত : ১৭]
আর যদি তার জন্য নির্ধারিত কোন রাত প্রমাণিত হয়, তথাপি প্রমাণ ছাড়া তাতে বিশেষ কোন ইবাদত করা বৈধ হবে না।
দুইঃ কোন মুমিন বা আলেম থেকে এ কথা প্রমাণিত নেই যে, তারা মিরাজের রাতের বিশেষ কোন ফযীলত নির্ধারণ করেছেন। কেননা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীগণ এ রাতে কোন ধরনের মাহফিল করতেন না, এ রাতকে ইবাদতের জন্য খাছ করতেন না এবং এ বিষয়ে কোন আলোচনা করতেন না। যদি মাহ্ফিল করা শরীয়তে জায়েয হত তাহলে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অবশ্যই তা বর্ণনা করতেন অথবা আমল করে দেখাতেন। অবশ্যই তা প্রচার-প্রসার হত এবং তার সহীহ প্রমাণ পাওয়া যেত। [যাদুল মাআদ : ১/৫৮]
তিনঃ আল্লাহ তাআলা এ উম্মতের জন্য দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করে দিয়েছেন ও নি‘য়ামত পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ
اَلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكَمْ نعْمَتِيْ وَ رَضِيْتُ لَكُم الإِسْلامَ دِيْنًا .( المائدة : 3)
অর্থঃ আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম। তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম। [মায়েদা : ৩]
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ
اَمْ لَهُمْ شُرَكَؤُا شَرَعُوْا لَهُمْ مِنَ الدِّيْنِ مَالَمْ يَأْذَنْ بِهِ اللهِ وَلَوْ لا كَلِمَةُ الْفَصْلِ لَقُضِيَ بَيْنَهُمْ وَاِنَّ الظّالِمِيْنَ لَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ . ( الشورى : 21)
অর্থঃ তাদের কি কতগুলো দেবতা আছে যারা তাদের জন্য বিধান দিয়েছে? এমন দ্বীনের, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি। ফায়সালার ঘোষণা না থাকলে তাদের বিষয়ে তো সিদ্ধান্ত হয়েই যেতো। নিশ্চয়ই যালিমদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি। [শুরা: ২১]
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদআত সম্পর্কে সর্তক করে বলেছেন ‘‘প্রত্যেক বিদআত ভ্রষ্টতা তা প্রত্যাখ্যাত হবে তার প্রবর্তক ও আমলকারীসহ’’।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ . ( متفق عليه )
অর্থঃ যে ব্যক্তি আমাদের এ দ্বীনে এমন কিছু নতুন আবিস্কার করেছে যা দ্বীনের অর্ন্তভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত। [বুখারী: ২৬৯৭ ও মুসলিম: ১৭১৮]
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ . ( مسلم )
অর্থঃ যে এমন কোন আমল করে যাতে আমাদের কোন নির্দেশনা নেই তা প্রত্যাখ্যাত। [মুসলিম :১৭১৮]
ছলফে ছালেহীন বিদআত সম্পর্কে সর্তক করেছেন। কেননা তা দ্বীনের মধ্যে অতিরঞ্জন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুমতি ছাড়া কোন কিছু শরীয়তে অন্তর্ভুক্ত করা এবং ইহুদী-খ্রীষ্টানদের ন্যায় দ্বীনের মধ্যে অতিরঞ্জনের নামান্তর। [আত-তাহযীর মিনাল বিদআ-ইবনে বায (র) ১৯ পৃ]
চতুর্থঃ শাবানের ১৫তম রাতে মাহফিল করা
ইমাম মুহাম্মাদ বিন ওয়াদাহ আল কুরতুবী রহ. নিজ সনদে আবদুর রহমান বিন যায়েদ বিন আসলাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমাদের শায়খ ও ফকীহগণের কাউকে শাবানের ১৫তম রাতের প্রতি গুরুত্বের সাথে দৃষ্টিপাত করতে এবং এ প্রসংগে মাকহুল বর্ণিত হাদীস উল্লেখ করতে দেখিনি। তারা অন্যান্য রাতের উপর এ রাতকে প্রাধান্য দিতেন না।
ইমাম আবু বকর আত তুরতুশী রহ. বলেন, আমাকে আবু মুহাম্মাদ আল-মাকদেসী রহ. অবহিত করেছেন যে, আমাদের সময় বাইতুল মুকাদ্দাসে কখনও সালাতুর রাগায়েব পড়া হয়নি, যা বর্তমানে রজব ও শাবান মাসে পড়া হয়।
প্রথম এ বিদআত চালু হয় ৪৪৮ হিজরীতে। সে সময় নাবলুস এর অধিবাসী এক ব্যক্তি বাইতুল মুকাদ্দাসে আগমন করল। সে ইবনে আবি হামরা নামে পরিচিত ছিল। তার কুরআন তিলাওয়াত ছিল খুবই সুন্দর, সে শাবানের ১৫তম রাতে বাইতুল মুকাদ্দাসে সালাত শুরু করল। তার পিছনে অপর একজন এসে যোগ দিল, অতঃপর আরো তিন চার জন যোগ দিল। এভাবে সালাত শেষে দেখা গেল বিরাট এক জামাত হয়ে গেছে। পরবর্তী বছর আরো অনেকে এসে সালাত আদায় করল। এর পরবর্তী বছর আরো বহু সংখ্যক লোক সালাতে একত্রিত হল। এভাবে সমস্ত মসজিদ পূর্ণ হয়ে গেল। এক পর্যায়ে বাইতুল মুকাদ্দাসে শবে বরাতের সালাত বা শাবানের ১৫তম রাতের সালাতের ফযিলত প্রচলিত হয়। পরবর্তীতে মানুষের ঘরে ঘরে তা ছড়িয়ে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় তা বর্তমান অবস্থায় পৌঁছায়। [কিতাবুল হাওয়াদেস ওয়াল বিদআ-তুরতুশী: ২৬৬ পৃ]
ইমাম ইবনে ওয়াদাহ রহ. স্বীয় সনদের মাধ্যমে বর্ণনা করেন, ইবনে আবি মুলাইকা রহ. কে বলা হল, যিয়াদ আন নুমায়রি মনে করেন, শাবানের ১৫তম রাতের ফযিলত লাইলাতুল কদরের ফযিলতের মতো। তখন ইবনে আবি মুলাইকা রহ. বলেন, যদি তার থেকে আমি শুনতাম আর আমার হাতে লাঠি থাকত তাহলে আমি তা দ্বারা তাকে প্রহার করতাম। তখন যিয়াদ কাজী ছিলেন। [কিতাবুল হাওয়াদেস ওয়াল বিদআ-তুরতুশী : ২৬৩ পৃ]
ইমাম আবু শামা শাফেয়ী রহ. বলেন, শাবানের ১৫তম রাতের সালাতকে আলফিয়াহ বলা হয়। কারণ এ রাতে ১০০ রাকাত নফল সালাতে ১০০০ (এক হাজার) বার সূরা ইখলাস তিলাওয়াত করা হয়। প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহা ১ বার ও সূরা ইখলাস ১০ বার তিলাওয়াত করা হয়। এটা খুব লম্বা ও কষ্টকর সালাত; যার সমর্থনে কোন হাদীস কিংবা আছার (বর্ণনা) পাওয়া যায় না। তাই এটা সাধারণ মানুষের জন্য বড় ফেৎনার কারণ।
এ রাতে বিভিন্ন মসজিদে আলোকসজ্জা করা হয়, গুরুত্বের সাথে যেখানে সারা রাত জাগ্রত থেকে সালাত আদায় করা হয়। পাশাপাশি অনেক গুনাহের কাজও সংঘটিত হয়। যথা, নারী-পুরুষ একত্রিত হয়ে এ রাতের প্রশংসায় গান বাজনা পরিবেশন ইত্যাদি। অনেক সাধারণ মানুষের বদ্ধমূল ধারণা এগুলো ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। আর শয়তান তাদের এ সকল কর্মকান্ডকে আরো চাকচিক্যময় করে দিয়েছে এবং এটাকে মুসলমানদের নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত করে দিয়েছে। [কিতাবুল বায়েস আলা ইনকারিল বিদয়ে ওয়াল হাওয়াদেস- ইমাম আবু শামা : ১২৪ পৃ:]
হাফেয ইবনে রজব রহ. একটি মূল্যবান কথার পর বলেন, শাবানের ১৫তম রাতকে শাম দেশের তাবেয়ীগণ যথা খালেদ ইবনে মি‘দান রহ., মাকহুল রহ., লোকমান বিন আমের রহ. এবং অন্যান্যরা খুব সম্মানের দৃষ্টিতে দেখতেন এবং এ রাতে ইবাদত করতেন। তাদের দেখেই লোকেরা এ রাতের সম্মান করতে থাকে।
অবশ্য বলা হয় যে, এ মতটি তাদের নিকট ইসরাইলী রেওয়ায়াত থেকে পৌঁছেছে। অতঃপর যখন এ মতাদর্শ বিভিন্ন দেশে প্রসিদ্ধি লাভ করে তখন এ রাতের মর্যাদার ব্যাপারে মতানৈক্য শুরু হয়।
কেউ কেউ তাদের সাথে একমত হয়ে এ রাতে ইবাদত করতে থাকেন। এরা হচ্ছেন, বসরা ও অন্যান্য অঞ্চলের অধিবাসী।
হেজাজের অনেক ওলামা এটাকে অস্বীকার ও অপছন্দ করেছেন। তাদের মধ্যে প্রসিদ্ধ হচ্ছেন আতা বিন আবি রাবাহ রহ. ও ইবনে আবি মুলাইকা রহ. প্রমুখ। আবদুর রহমান বিন যায়েদ বিন আসলাম রহ. মদীনার ফকীহগণ থেকে বর্ণনা করেন, ইমাম মালেকের রহ. সাথীগণসহ অন্যান্য ওলামাগণেরও একই অভিমত। আর তা হচ্ছে এ সবই বিদআত।
এ রাতে (শাবানের ১৫তম রাতে) জাগ্রত থেকে ইবাদত করার ফযিলত নিয়ে সিরিয়ার আলেমগণের দু‘টি উক্তি রয়েছে।
একঃ এ রাতে জাগ্রত থেকে দলবদ্ধভাবে মসজিদে ইবাদত করা মুস্তাহাব। খালেদ ইবনে মি‘দান রহ., লুকমান বিন আমের রহ. সহ অন্যান্য ওলামাগণ এ রাতে উত্তম কাপড় পরিধান করতেন, আগর বাতি জ্বালিয়ে মসজিদ সুগন্ধময় করতেন, চোখে সুরমা লাগাতেন এবং সারা রাত সালাত ও অন্যান্য ইবাদতে দন্ডায়মান থাকতেন।
ইসহাক বিন রাহ্ওয়াই রহ. তাদের সাথে একমত পোষণ করেন। তিনি আরো বলেন, এ রাতে মসজিদে ইবাদতের জন্য দন্ডায়মান হওয়া বিদআতের অন্তর্ভুক্ত নয়। হরবুল কারমানী এ মাসআলায় তাকে অনুসরণ করেছেন।
দুইঃ এ রাতে মসজিদে সমবেত হয়ে (শবে বরাতের) সালাত আদায়, বিভিন্ন কাহিনী বর্ণনা করা ও দুআ করা মাকরুহ। অবশ্য একা একা সালাত আদায় করাতে কোন দোষ নেই। এটা ইমাম আওযাঈ রহ., সিরিয়ার তৎকালীন প্রসিদ্ধ ইমাম, ফকীহ এবং ওলামায়ে কেরামের অভিমত। আল্লাহ্ চাহেতো এটাই তুলনামূলক বিশুদ্ধ।
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ. থেকে শাবানের ১৫তারিখ রাত সম্পর্কে কোন উক্তি নেই। তবে রাত জেগে ইবাদত করা সম্পর্কে তার দু‘টি বর্ণনা রয়েছে। একটি হচ্ছে ঈদের রাতে ইবাদত করা। তবে কোন রেওয়ায়াতে এ রাতে সম্মিলিতভাবে ইবাদতকে মুস্তাহাব বলা হয়নি। কেননা এ সম্পর্কে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সাহাবায়ে কেরাম থেকে কোন উক্তি পাওয়া যায়নি। অন্য এক বর্ণনাতে ঈদের রাতের ইবাদতকে মুস্তাহাব বলা হয়েছে, এটা আবদুর রহমান বিন ইয়াজিদ বিন আসওয়াদ এর আমল অনুযায়ী। আর তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট তাবেয়ী। এমনই হল শাবান মাসের ১৫তারিখ রাতের অবস্থা। এ ব্যাপারে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সাহাবায়ে কেরাম থেকে কিছুই বর্ণিত হয়নি। তবে শাবানের ১৫তারিখ রাতের ইবাদত প্রতিষ্ঠা পেয়েছে কতিপয় তাবেয়ী এবং সিরিয়ার ফকীহগণের মাধ্যমে। [লাতায়েফুল মাআরেফ-ইবনে রজব: ২৬৩ পৃ]
আল্লামা আবদুল আযীয বিন বায রহ. বলেন, আল্লামা আওযায়ী রহ. ও ইবনে রজব রহ. কর্তৃক এ রাতে ব্যক্তিগত ইবাদতকে মুস্তাহাব বলাটাও অত্যন্ত দুর্বল উক্তি। কেননা এ প্রসংঙ্গে শরীয়তের কোন অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায় না। আর প্রমাণ ব্যতীত কোন আমল শরীয়তসিদ্ধ নয়। কেননা তা আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে বিদআত। চাই তা ব্যক্তিগত ইবাদত হোক কিংবা সম্মিলিত ইবাদত হোক। প্রকাশ্য হোক বা অপ্রকাশ্য হোক।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ . ( مسلم )
অর্থঃ যে ব্যক্তি এমন কিছু আমল করে যে ব্যাপারে আমাদের অনুমোদন নেই, তা প্রত্যাখ্যাত হবে। [মুসলিম :১৭১৮]
এমনি আরো অনেক হাদীসে বিদআত সম্পর্কে সর্তক করা হয়েছে। উল্লিখিত ইমাম ইবনে ওয়াদাহ রহ., ইমাম তারতুশি রহ., ইমাম আবু শামা রহ., আবদুর রহমান বিন ইসমাঈল রহ., হাফেজ ইবনে রজব রহ. এবং ঈমাম আব্দুল আযীয বিন বায রহ. প্রমূখের মতামত দ্বারা স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, শবে বরাতের ইবাদত, সালাত কিংবা অন্য কোন আমল যা শরীয়তসিদ্ধ নয় তা বিদআত। কুরআন ও হাদীসে এর কোন ভিত্তি নেই এবং কোন সাহাবায়ে কেরাম এ আমল করেননি।
পঞ্চমঃ আত -তাবাররুক
আত-তাবাররুক অর্থ বরকত চাওয়া বা শুভ কামনা করা। কোন জিনিস দ্বারা বরকত চাওয়ার অর্থ ঐ জিনিসের মাধ্যমে শুভ কামনা করা।
নিঃসন্দেহে যাবতীয় কল্যাণ ও বরকত আল্লাহ্ তা‘আলার হাতে। আল্লাহ্ তা‘আলা স্বীয় ইচ্ছা অনুযায়ী কিছু সৃষ্টির মধ্যে অনুগ্রহ ও বরকত রেখে দিয়েছেন।
বরকতের প্রকৃত অর্থ হচ্ছেঃ স্থায়ীত্ব ও প্রয়োজনীয়তা। আবার বৃদ্ধি এবং দুআ অর্থেও আসে। যেমন- বলা হয়ে থাকে برَك عليه অর্থঃ তার জন্য বরকতের দুআ করা হয়েছে। বলা হয় بَارَكَ الله ُالشَّيْءَ، بَارَكَ فِيْهِ أَوْ بَارَكَ عَلَيْه অর্থঃ আল্লাহ তা‘আলা ঐ জিনিসে বরকত প্রদান করেছেন। আর تبارك (বরকতময় হওয়া) শব্দটি শুধুমাত্র আল্লাহ্ তাআলার জন্য নির্দিষ্ট। এটা বলা যাবে না যে অমুক ব্যক্তি বরকতময়। কেননা বরকত শব্দের অর্থ বড় ও মহান। অতএব এ গুণ আল্লাহ্ তা’আলা ব্যতীত অন্য কারো জন্য হতে পারে না।
কুরআনুল কারীমে বরকত শব্দটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যথাঃ
১. চিরস্থায়ী কল্যাণ প্রতিষ্ঠিত হওয়া। ২. কল্যাণ অধিক হারে হওয়া ও ধারাবাহিকতা বজায় থাকা। ৩. তাবারাকা শব্দটি শুধুমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার জন্যই নির্দিষ্ট। তিনি ব্যতীত অন্য কারো জন্য এ শব্দ ব্যবহার করা যাবে না।
ইবনে কাইয়িম রহ. বলেন, আল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বরকতময়, তাঁর দান স্থায়ী, তাঁর দেয়া কল্যাণ অফুরন্ত, তাঁর মর্যাদা সুউচ্চ, তিনি অতি মহান, পূত-পবিত্র এবং যাবতীয় কল্যাণ একমাত্র তাঁর পক্ষ থেকেই আসে। তিনি তাঁর সৃষ্টির মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা কল্যাণ দান করেন এটাই হচেছ তাবারাকা এর প্রকৃত অর্থ যা কুরআনে রয়েছে।
বিভিন্ন শ্রেণীর কল্যাণকর বিষয়
১. কুরআনুল কারীম কল্যাণময়। এতে দুনিয়া ও আখিরাতের অনেক কল্যাণ নিহিত রয়েছে। আর এ বরকত বা কল্যাণ অর্জন করা যায় বিশুদ্ধভাবে তিলাওয়াত এবং কুরআনের বিধান অনুযায়ী আমল করার মধ্য দিয়ে। যা একমাত্র আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য হতে হবে।
২. মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কল্যাণময়। আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর মধ্যে অনেক কল্যাণ বা বরকত রেখেছেন।
এ বরকত দু‘প্রকারের।
(ক) পরোক্ষ বরকতঃ আর এটা অর্জিত হয় ইহকাল ও পরকালে তাঁর রেসালাতের বরকতের মধ্য দিয়ে। কেননা আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁকে জগৎবাসীর জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছেন। তিনি মানব জাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে এসেছেন।
মানুষের জন্য পবিত্র জিনিস হালাল করেছেন এবং অপবিত্র জিনিস হারাম করেছেন। তাঁকে দিয়ে নবুয়্যতের ইতি টানা হয়েছে এবং তাঁর আনীত দ্বীন হচ্ছে সহজ, সরল, মহানুভব এবং উদার।
(খ) প্রত্যক্ষ বরকত বা কল্যাণ দু’প্রকার
১. তাঁর কর্মের মধ্যে বরকত। তা হলো আল্লাহ তা’আলা তাঁকে উজ্জ্বল সুস্পষ্ট মুজিযা দিয়ে সত্যায়িত করেছেন।
২. তিনি সত্ত্বাগত ভাবেই বরকতময়। যা অনুভব করা যায়। এ জন্য সাহাবায়ে কেরাম তাঁর জীবদ্দশাতেই তাঁর থেকে বরকত হাসিল করেছেন ও তাঁর মৃত্যুর পর তার দেহে ব্যবহৃত অবশিষ্ট বস্ত্তর মাধ্যমে বরকত হাসিল করেছেন।
আল্লাহর নবীর জীবদ্দশাতে সাহাবায়ে কেরাম তাঁর থেকে বরকত হাসিল করেছেন, তাঁর উপর কিয়াস করে অন্য কারো থেকে এমন বরকত হাসিল করা যাবে না। এতে কোন সন্দেহ নেই যে আল্লাহ্ তাআলা সকল নবী (আ) এর মাঝে অফুরন্ত বরকত রেখেছেন। [আত-তাবাররুক ওয়া আনওয়াউহু, ওয়া আহকামুহু, ড. নাছির আলজাদী: ২১-৬৯ পৃ]
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা’আলা ফেরেশতাদের মাঝে এবং নেককার বান্দাদের মাঝেও বরকত রেখেছেন। কিন্তু তাদের ব্যাপারে কোন প্রমাণ না থাকায় তাদের থেকে বরকত হাসিল করা বৈধ নয়। অনুরূপভাবে এমন কিছু স্থান আছে যা বরকতময়। যথা ১. মসজিদে হারাম, ২. মসজিদে নববী ও ৩. মসজিদে আক্বছা। অতঃপর বিশ্বের সকল মসজিদ।
এভাবে তিনি অনেক সময়কেও বরকতময় করেছেন। যথা-রমযান মাস, লাইলাতুল ক্বদর, জিল হজ্জ্বের প্রথম ১০দিন, আশহুরে হুরুম বা সম্মানিত মাস সমূহ, সোমবার, বৃহস্পতিবার, শুক্রবার, প্রতি রাতের দুই তৃতীয়াংশে আল্লাহ তা‘আলার প্রথম আকাশে নেমে আসার মুহূর্ত ইত্যাদি। এ সময়গুলো বরকতময়।
কিন্তু দুঃখের বিষয় মুসলিমগণ এ থেকে বরকত হাসিল করে না। অথচ এ সময়গুলোতে শরীয়ত সমর্থিত নেক আমল দ্বারা কল্যাণ অর্জন করা উচিত।
আবার কিছু জিনিস রয়েছে যা বরকতময়। যথাঃ যমযমের পানি, বৃষ্টির পানি ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে বরকতের অর্থ হল, মানুষ পান করবে, গবাদি পশু পান করবে এবং তা দ্বারা জমিনে ফসল উৎপন্ন করবে। অনুরূপ ফল-মূল, যাইতুন, খেজুর, দুধ, ঘোড়া, ছাগল, উট ইত্যাদিও বরকতময়। মানুষ এগুলো দ্বারা অনেক কল্যাণ অর্জন করবে।
শরীয়তসম্মত যে সকল জিনিসের মাধ্যমে বরকত অর্জন করা যায় তার কিছু উদাহরণ নিম্নে পেশ করা হলঃ
আল্লাহ্র যিকির ও কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে বরকত হাসিল করা
আল্লাহ্র যিকির ও কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে বরকত হাসিল করা যায়, তবে শর্ত হল তা শরীয়ত সম্মত হতে হবে। মনে মনে জিকির করা, মুখে জিকির করা এবং কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী সৎকাজ করা। কেননা এ সকল বরকত দ্বারা আত্মা প্রশান্তি লাভ করে। সৎকাজের জন্য আত্মা শক্তি সঞ্চয় করে, বিপদ-আপদে মুক্তি পাওয়া যায়, দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ সাধিত হয়, গুণাহ মাফ হয় ও প্রশান্তি অবতীর্ণ হয়। কুরআন কিয়ামতের দিন তার জন্য সুপারিশ করবে। কুরআন ঘরে এবং গাড়িতে টানিয়ে বা ঝুলিয়ে রাখার মধ্যে কোন বরকত নেই, বরং বরকত হচ্ছে তা তিলাওয়াত করা ও সে অনুযায়ী আমল করার মাধ্যমে। [আত-তাবাররুক ওয়া আনওয়াউহু, ওয়া আহকামুহু, ড. নাছির আলজাদী: ২০১-২৪১ পৃ]
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জীবদ্দশায় তাঁর সত্ত্বা থেকে বরকত লাভ করা।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জীবদ্দশায় তাঁর সত্ত্বা থেকে বরকত লাভ করা শরীয়তসম্মত। কেননা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সত্ত্বাগতভাবে বরকতময় ছিলেন। এজন্য সাহাবায়ে কেরাম তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর থেকে অনেক বরকত অর্জন করেছেন।
আবু জুহাইফা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন দ্বি-প্রহরে এক সমতল ভূমিতে বের হলেন, অতঃপর অযু করে যোহরের দু‘রাকাত ও আসরের দু‘রাকাত সালাত আদায় করলেন। এর পর লোকজন এসে তাঁর হাত মুবারক স্পর্শ করে নিজ নিজ মুখ-মন্ডলে মাসেহ করে নিলেন।
আবু জুহাইফা (রা) বলেন, অতঃপর আমি তাঁর হাত ধরলাম এবং আমার মুখ মন্ডলেও মাসেহ করে নিলাম। তখন তা আমার নিকট বরফ থেকে শীতল এবং মিশকের ঘ্রাণ থেকেও সুগন্ধিময় অনুভূত হল। [বুখারী : ৩৫৫৩]
হাদীসে রয়েছেঃ
وَعن أنس رضي الله عنه أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَتَى مِنًى فَأَتَى الْجَمْرَةَ فَرَمَاهَا ثُمَّ أَتَى مَنْزِلَهُ بِمِنًى وَنَحَرَ ثُمَّ قَالَ لِلْحَلَّاقِ خُذْ وَأَشَارَ إِلَى جَانِبِهِ الْأَيْمَنِ ثُمَّ الْأَيْسَرِ ثُمَّ جَعَلَ يُعْطِيهِ النَّاسَ، وفي رواية : ثُمَّ دَعَا أَبَا طَلْحَةَ الْأَنْصَارِيَّ فَأَعْطَاهُ إِيَّاهُ ثُمَّ نَاوَلَهُ الشِّقَّ الْأَيْسَرَ فَقَالَ احْلِقْ فَحَلَقَهُ فَأَعْطَاهُ أَبَا طَلْحَةَ فَقَالَ اقْسِمْهُ بَيْنَ النَّاسِ . ( مسلم )
অর্থঃ আনাস (রা) থেকে বর্ণিত, (হজ্বের সময়) রাসূল মিনায় এলেন ও জামরায় এসে পাথর নিক্ষেপ করলেন। এরপর মিনায় এসে কুরবানী করলেন এবং নাপিতকে নিজের মাথার ডান ও বাম পাশের চুল কাটতে ইশারা করলেন। চুল কাটার পর কর্তিত চুল উপস্থিত সাহাবাগণের মাঝে বিলিয়ে দিলেন।
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, অতঃপর রাসূল আবু তালহা আল-আনছারীকে ডাকলেন এবং তাকে ডানপার্শ্বের চুলগুলো দিয়ে দিলেন। তারপর নাপিত বাম দিকের চুলগুলো কাটলে সে চুলগুলোও আবু তালহা (রাঃ) কে দিয়ে বললেন, এগুলো মানুষের মাঝে বন্টন করে দাও। [মুসলিম :১৩০৫]
সাহাবায়ে কেরাম (রা) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জামা, অযুর অতিরিক্ত পানি, যে স্থানে তাঁর হাতের আঙ্গুল থেকে পানি প্রবাহিত হয়েছে সে স্থান, তাঁর পানকৃত পানির অবশিষ্টাংশ ইত্যাদি থেকে বরকত হাসিল করতেন। যেমন, তাঁর ব্যবহৃত জামা, জুতা ইত্যাদি যা তাঁর শরীরের সাথে মিশে থাকত। [আত-তাবাররুক ওয়া আনওয়াউহু, ওয়া আহকামুহু, ড. নাছির আলজাদী: ২৪৮-২৫০ পৃ]
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে অন্য কাউকে তুলনা করা যাবে না। কেননা তিনি ব্যতীত কোন সাহাবী বা অন্য কারো থেকে বরকত হাসিল প্রসঙ্গে তাঁর কোন নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। সাহাবায়ে কেরাম থেকেও এমন কোন বর্ণনা পাওয়া যায়নি যে, তারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ব্যতীত অন্য কোন অলী বা সাহাবায়ে কেরামের জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর পর তার কোন কিছু দ্বারা বরকত হাসিল করেছেন। মুহাজির ও আনসার সাহাবীগণের কেউ এমনটি করেননি। খোলাফায়ে রাশেদীনের সাথেও কেউ এমন করেননি, দুনিয়াতে জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত ১০জন সাহাবীর সাথেও কেউ এমনটি করেননি। ইমাম শাতেবী রহ. বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ওফাতের পর তার অনুপস্থিতিতে এমন কাজে কোন সাহাবী লিপ্ত হননি। এমনকি তাঁর পরে আবু বকর (রা) কে তাঁর উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম বলে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। তাঁর দ্বারাও কেউ বরকত হাসিল করেননি। অথচ তিনি মুসলিমদের খলিফা ছিলেন। অনুরূপ উমর (রা) এর দ্বারাও কেউ বরকত হাসিল করেননি। অথচ তিনি আবু বকরের (রা) পর উম্মতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি ছিলেন। অনুরূপ উসমান (রা) এবং আলী (রা) দ্বারাও কেউ বরকত হাসিল করেননি। এভাবে অন্য কোন সাহাবী থেকেও বরকত হাসিল করা হয়নি। অথচ তাঁরা ছিলেন উম্মতের মধ্যে শ্রেষ্ঠতর মানুষ। কোন সহীহ বর্ণনাতে এ কথা নেই যে, এভাবে তারা একে অপর থেকে বরকত হাসিল করেছেন। [আত-তাবাররুক ওয়া আনওয়াউহু, ওয়া আহকামুহু, ড. নাছির আলজাদী: ২৬১-২৬৯ পৃ]
নিঃসন্দেহে আলেমদের ইলম, তাদের ওয়াজ-নসিহত শ্রবণ ও দুআ দ্বারা বরকত হাসিল করা যাবে। তাদের সাথে কোন জিকিরের মজলিসে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বরকত লাভ করা যাবে, তাতে কল্যাণ, বরকত ও উপকার রয়েছে। কিন্তু কোন ব্যক্তির সত্ত্বা দ্বারা কোন বরকত হাসিল করা যাবে না বরং তাদের বিশুদ্ধ ইলম অনুযায়ী আমল করা যাবে ও আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের অনুসরণ করা যাবে। [আত-তাবাররুক ওয়া আনওয়াউহু, ওয়া আহকামুহু, ড. নাছির আলজাদী: ২৬৯-২৭৮ পৃ]
৩. যমযমের পানি দ্বারা বরকত হাসিল করা।
যমযমের পানি দ্বারা বরকত হাসিল করা বৈধ। কেননা পৃথিবীতে এটাই সর্বোত্তম বরকতময় পানি, যা পান করলে পিপাসা দূর হয় এবং ক্ষুধা নিবারণ হয়। বিশুদ্ধ নিয়তে পান করলে যে কোন রোগের জন্য ঔষধ হিসেবে কাজ করে।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যমযম পানি সম্পর্কে বলেনঃ
قَالَ إِنَّهَا مُبَارَكَةٌ إِنَّهَا طَعَامُ طُعْمٍ وَ شِفَاءُ سَقِيْمٍ . ( مسلم )
অর্থঃ এ পানি অত্যন্ত বরকতময়, এ পানি হচ্ছে ক্ষুধার্তের খাদ্য এবং রোগীর চিকিৎসা। [মুসলিম :২৪৭৩]
জাবের (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
مَاءُ زَمْزَمَ لِمَا شُرِبَ لَهُ . ( ابن ماجة )
অর্থঃ যমযমের পানি যে নিয়তে পান করবে তা পূরণ হবে। [ইবনে মাজা :৩০৬২]
বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যমযমের পানি চিকিৎসা ও আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য লাভের জন্য ব্যবহার করতেন। তিনি তা রোগীর গায়ে ছিটিয়ে দিতেন এবং পান করাতেন। [তিরমিযী :৯৬৩]
৪. বৃষ্টির পানি দ্বারা বরকত হাসিল করা
বৃষ্টির পানি দ্বারা বরকত হাসিল করা যাবে। বৃষ্টির পানি বরকতময়, আল্লাহ তা‘আলা এতে অফুরন্ত বরকত রেখেছেন। মানুষ, পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গ এ পানি পান করে থাকে এবং উদ্ভিদ, গাছ-পালা, ফল-ফলাদি ইত্যাদি এ পানির মাধ্যমেই উৎপন্ন হয়ে থাকে। এর দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা সকল জিনিসকে জীবিত করে থাকেন।
আনাস (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ছিলাম। এমন সময় আমাদের বৃষ্টিতে পেয়ে গেল। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজ শরীরের কিয়দংশ উম্মুক্ত করে দিলে তা বৃষ্টিতে ভিজে গেল। তখন আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এমনটি করলেন কেন? উত্তরে তিনি বললেন, ‘‘এটা হচ্ছে তার রবের নতুন বরকত’’। [মুসলিম :৮৯৮]
ইমাম নববী রহ. বলেন, হাদীসে বর্ণিত শব্দের অর্থ হল, তার রবের পক্ষ থেকে নতুন নিয়ামত ও বরকত। অর্থাৎ এ বৃষ্টি আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে মানুষের জন্য অনুগ্রহ। মানুষ এর দ্বারা অনেক বরকত হাসিল করে থাকে। [শরহে মুসলিম - ইমাম নববী (র) :৬/৪৪৮]
যা দ্বারা বরকত হাসিল নিষিদ্ধ
(১) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ইন্তেকালের পর তাঁর দ্বারা বরকত লাভ করা
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ইন্তেকালের পর তাঁর দ্বারা দু’ভাবে বরকত হাসিল করা যাবে। অন্য কোন উপায়ে তাঁর থেকে বরকত হাসিল করা নিষিদ্ধ।
প্রথমঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর ঈমান আনা, তাঁর আনুগত্য এবং অনুসরণ করা। যে ব্যক্তি উক্ত কাজগুলো করবে সে অফুরন্ত কল্যাণ এবং দুনিয়া ও আখিরাতের সৌভাগ্য লাভ করবে।
দ্বিতীয়ঃ তাঁর ইন্তেকালের পর যে সকল জিনিস অবশিষ্ট রয়েছে তার থেকে বরকত হাসিল করা। যথা-তাঁর জামা অথবা চুল অথবা তাঁর ব্যবহৃত পানি ইত্যাদি।
এ ছাড়া অন্য কোন ভাবে তাঁর থেকে বরকত হাসিল করা শরীয়ত সম্মত নয়। তাঁর কবর দ্বারা বরকত হাসিল করা যাবে না। কেবল মাত্র তাঁর কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা যাবে না। বরং তিনটি মসজিদের যে কোন একটির উদ্দেশ্যে সফর করা যাবে ১. মসজিদে হারাম ২. মসজিদে নববী ও ৩. মসজিদে আক্বসা। এ ছাড়া সব সময় যে মদীনায় বসবাস করে আসছে তার জন্য নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবর যিয়ারত করা মুস্তাহাব। অথবা কেউ মসজিদে নববী যিয়ারতের উদ্দেশ্যে এলে তার জন্যও কবর যিয়ারত করা মুস্তাহাব।
রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবর যিয়ারতের নিয়ম
মসজিদে নববীতে প্রবেশ করে প্রথমে দু‘রাকাত তাহিয়্যাতুল মাসজিদ সালাত আদায় করা। অতঃপর কবরের দিকে গিয়ে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে হুজরার দিকে মুখ করে ক্ষীণ আওয়াজে আদবের সাথে বলা ‘‘আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ’’। আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) এর চেয়ে অতিরিক্ত কিছু বলতেন না। কখনও অতিরিক্ত কিছু বলতে চাইলে বলতেনঃ
اَلسَّلامُ عَلَيْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ، يَا خَيْرَةَ اللهِ مِنْ خَلْقِهِ، أَشْهَدُ أَنَّكَ رَسُوْلُ اللهِ حَقًا، وَ أَنَّكَ قَدْ بَلَّغْتَ الرِّسَالَةَ، وَ أَدَّيْتَ الأَمَانَةَ، وَ جَاهَدْتَ فِي اللهِ حَقَّ جِهَادِه، وَ نَصَحْتَ الأُمَّةَ . ( فتاوىابن باز في الحج و العمرة )
অর্থঃ হে আল্লাহর রাসূল। আপনার প্রতি সালাম, হে আল্লাহর সৃষ্টির সর্বোত্তম ব্যক্তি! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর সত্য নবী, নিশ্চয়ই আপনি আপনার রেসালাত পৌঁছে দিয়েছেন, আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নে আপনার সর্বশক্তি ব্যয় করেছেন এবং আপনি জাতিকে সত্যের উপদেশ দিয়েছেন। এগুলো বলতে কোন দোষ নেই। কেননা এগুলো তাঁর বৈশিষ্ট্যাবলী। [মাজমুয়ায়ে ফতোয়ায়ে ইবনে বায র.: ৫/২৮৯]
তাঁর কবরের কাছে এ ধারণা করে দুআ করা যাবে না যে, তাঁর কাছে দুআ করলে কবুল হয়, তাঁর কবরের কাছে গিয়ে তাঁর নিকট সুপারিশ প্রার্থনা করা যাবে না। (বরকততের জন্য) তাঁর কবর, কবরের ধূলো-বালি শরীরে মাসেহ করা বা তাঁর কবরে অথবা কবরের পার্শ্বের কোন জিনিস (ইট, পাথর, দেয়াল ইত্যাদি) চুমু দেয়া যাবে না। এছাড়া রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে যায়গায় বসেছেন, যেখানে সালাত আদায় করেছেন, যে পথ দিয়ে চলাচল করেছেন, যে স্থানে তার নিকট অহী এসেছে, যে স্থানে তিনি জন্ম গ্রহণ করেছেন, যে রাতে জন্ম গ্রহণ করেছেন, যে রাতে মিরাজ হয়েছে এবং তাঁর হিজরতের রাস্তা ইত্যাদি দ্বারা বরকত গ্রহণ করা যাবে না। এক কথায় যে সকল জিনিস দ্বারা বরকত গ্রহণ করা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনুমোদিত নয় তা দ্বারা বরকত হাসিল করা যাবে না। [আত-তাবাররুক ওয়া আনওয়াউহু, ওয়া আহকামুহু, ড. নাছির আল-জাদী: ৩১৫-৩৮০ পৃ]
২. কোন নেককার লোক দ্বারা বরকত হাসিল
কোন নেককার বা বুযুর্গের ব্যক্তিস্বত্ত্বা, তাদের কোন নিদর্শন, ইবাদতের স্থান থেকে, বাসস্থান এবং তাদের কবর দ্বারা বরকত হাসিল করা যাবে না। তাদের মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করাও যাবে না। তাদের কবরের পাশে সালাত আদায় করা যাবে না। তাদের কবরের কাছে গিয়ে নিজের প্রয়োজন পূরণের জন্য কিছু প্রার্থনা করা, কবর স্পর্শ করা ও কবরের পাশে ইতেকাফ করা যাবে না। তাদের জন্ম বার্ষিকী, ওরস ইত্যাদি পালন করা যাবে না। কেউ যদি এ বিশ্বাস নিয়ে বুযুর্গদের নৈকট্য লাভের জন্য উপরোক্ত কোন কাজ করে যে, বুযুর্গগণ তাদের উপকার করতে পারে বা তাদের ক্ষতি করতে পারে অথবা তাদের কোন জিনিস দিতে পারে বা কোন জিনিস থেকে বঞ্চিত করতে পারে, তাহলে সে আল্লাহর সাথে বড় ধরণের শিরক করল।
যে ব্যক্তি এ সকল বুযুর্গ দ্বারা বরকত হাসিলের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট থেকে বরকত হাসিল করতে চায় সে বিদআতে লিপ্ত হল এবং অত্যন্ত ঘৃণিত কাজে লিপ্ত হল। [আত-তাবাররুক ওয়া আনওয়াউহু, ওয়া আহকামুহু, ড. নাছির আলজাদী: ৩৮১-৪১৮ পৃ]
৩. পাহাড় বা কোন স্থান দ্বারা বরকত হাসিল করা
পাহাড় বা কোন স্থান দ্বারা বরকত হাসিল করা নিষিদ্ধ। কেননা এটা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর শরীয়ত পরিপন্থী। এগুলো দ্বারা বরকত হাসিলের মাধ্যমে এসবের সম্মান বাড়িয়ে দেয়া হয়।
এগুলোকে হাজরে আসওয়াদ ও বায়তুল্লাহর তাওয়াফের উপর কিয়াস করা বৈধ নয়। কেননা এ দু’টো আল্লাহর ইবাদত। হাজরে আসওয়াদ ও রোকনে ইয়ামানী ব্যতীত অন্য কোন পাথর স্পর্শ করা যাবে না। কেননা সকল আলেম ঐকমত্য হয়েছেন যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রোকনে ইয়ামানী ব্যতীত অন্য কোন রোকন স্পর্শ করেননি। [ইকতিযাউস সিরাতিল মুসতাকীম- ইবনে তাইমিয়্যাহ (র) :২/৭৯৯]
ইমাম ইবনুল কাইয়িম রহ. বলেন, দুনিয়াতে হাজরে আসওয়াদ ও রোকনে ইয়ামানী ব্যতীত এমন কোন পাথর বা স্থান নেই যা চুম্বন করা শরীয়ত সিদ্ধ এবং তা গুনাহ মার্জনাকারী। [যাদুল মায়াদ : ১/৪৮]
তিনি মক্কার বৈশিষ্ট বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, পৃথিবীতে মক্কা নগরী ব্যতীত অন্য কোন স্থান এমন নেই যেখানে তাওয়াফ বা সায়ী করা জায়েয। [যাদুল মায়াদ : ১/৪৮]
শায়খুল ইসলাম রহ. কাবা ব্যতীত অন্য কোন ঘরের তাওয়াফ সম্পর্কে লিখেন, এ ধরণের তাওয়াফ হারাম ও বিদআত। এ কাজটি দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করলে তাকে তওবা করতে বলা হবে নতুবা তাকে হত্যা করা হবে। [ফতোয়ায়ে ইবনে তাইমিয়াঃ ২৬/১২১]
এমনিভাবে মাকামে ইব্রাহীম, অন্য কোন পাথর, মসজিদে হারামের কোন দেয়াল বা হেরা গুহা বা জাবালে নূরকে চুমু দেয়া বা বরকতের জন্য স্পর্শ করা বৈধ নয়। এগুলো জিয়ারত করার উদ্দেশ্যে যাওয়া, তাতে চড়া, তাতে সালাত আদায় করা ঠিক নয়। সাওর পর্বতের দ্বারা বরকত হাসিল করা বা তা জিয়ারতের উদ্দেশ্যে যাওয়া শরীয়তসিদ্ধ নয়। অনুরূপভাবে জাবালে রহমত ও জাবালে আবি কুবাইস দ্বারাও বরকত গ্রহণ করা ঠিক নয়। এমনিভাবে দারুল আরকাম বা অন্য কোন ঘর দ্বারা বরকত হাসিল করা বৈধ নয়। জাবালে তূর জিয়ারত করা বা তা জিয়ারতের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করা বৈধ নয়। মোট কথা কোন পাথর বা গাছ দ্বারা বরকত হাসিল করা যাবে না। [আত-তাবাররুক ওয়া আনওয়াউহু, ওয়া আহকামুহু, ড. নাছির আলজাদী:৪১৯-৪৬৪ পৃ]
নিষিদ্ধ জিনিস থেকে বরকত হাসিলের কারণ
নিষিদ্ধ জিনিস থেকে বরকত হাসিলের অন্যতম কারণ হল, দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞতা, বুযুর্গদের ব্যাপারে অতিরঞ্জন, কাফিরদের সাদৃশ্যতা ও কোন ঐতিহাসিক স্থানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন। [আত-তাবাররুক ওয়া আনওয়াউহু, ওয়া আহকামুহু, ড. নাছির আল-জাদী: ৪১৯-৪৬৪ পৃ]
নিষিদ্ধ জিনিস থেকে বরকত হাসিলের প্রভাব বা প্রতিক্রিয়া অনেক
শিরকে আকবারঃ যদি বরকত হাসিল করার পদ্ধতি মৌলিকভাবেই শিরক হয়, তাহলে তার প্রতিক্রিয়া খুবই ভয়ংকর। আর যদি বরকত হাসিলের পদ্ধতি মেŠলিকভাবে শিরক না হয় বরং শিরক পর্যন্ত পৌঁছায়, তাহলে তা বড় শিরকের মাধ্যম রূপে গণ্য হবে।
নিষিদ্ধ বিষয় দ্বারা বরকত অর্জনের প্রভাব হলঃ দ্বীনের মধ্যে বিদআত প্রতিষ্ঠা, গুনাহ্র দিকে ধাবিত হওয়া, মিথ্যার গহবরে পতিত হওয়া, শরয়ী দলিল বিকৃতি, সুন্নাত বিনষ্টকরণ, মূর্খদের দ্বারা ধোকা খাওয়া, পরবর্তী প্রজন্ম ধ্বংস করণ। আর এসব কিছুই ঘটে হারাম ও ঘৃণিত জিনিস দ্বারা বরকত হাসিলের মাধ্যমে।
নিষিদ্ধ পন্থায় বরকত হাসিল প্রতিরোধের উপায়
ধর্মীয় জ্ঞানের প্রসার, কুরআন ও হাদীসের দাওয়াত, অতিরঞ্জন পরিহার ও বরকত হাসিলের দিকসমূহর স্পষ্ট বর্ণনা। মোট কথা এ সকল বিষয়ের চর্চার মাধ্যমে নিষিদ্ধ পন্থায় বরকত হাসিলের প্রতিরোধ সম্ভব। [আত-তাবাররুক ওয়া আনওয়াউহু, ওয়া আহকামুহু, ড. নাছির আল-জাদী: ৪৮৩-৫০৬ পৃ]
আল্লামা সা’দী রহ. কিতাবুত তাওহীদে গাছ, পাথর ইত্যাদি দ্বারা বরকত লাভ অধ্যায়ে উল্লেখ করেন যে, এসব শিরকের অন্তর্ভুক্ত এবং এগুলো মুশরিকদের কাজ। কেননা সকল আলেম ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, গাছ, পাথর ও স্থান ইত্যাদি দ্বারা বরকত হাসিল বৈধ নয়। এগুলো বরকতময় মনে করাও বৈধ নয়। এসবের কাছে দুআ করা, ইবাদত করা শিরকে আকবার বা বড় শির্ক। চাই তা মাকামে ইব্রাহিম, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হুজরা, বায়তুল মুকাদ্দাসের পাথর ইত্যাদি হোক না কেন।
তবে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ ও চুম্বন করা এবং রোকনে ইয়ামেনীতে চুম্বন করা ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। তাতে রবের বড়ত্বের পরিচয় পাওয়া যায়। আর এ দু‘টি স্থান ছাড়া অন্য সবগুলোতে মাখলুকের বড়ত্ত্ব ফুটে উঠে। প্রথমটিতে আল্লাহর তা‘জীম আর দ্বিতীয়টিতে মাখলুকের তা‘জীম। এতদুভয়ের মাঝে পার্থক্য হল, আল্লাহর কাছে দুআ করা একত্ববাদ। আর মাখলুকের কাছে দুআ করা শির্ক। [আল-কাউলুস সাদীদ: ৫১ পৃ]
প্রচলিত কয়েকটি বিদআত
এ ধরণের বিদআত সমাজে অনেক। তন্মধ্যে-
(১) জোরে নিয়ত বলাঃ কোন মুসলিম বলল, নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া, নাওয়াইতু আন আসুমা, নাওয়াইতু আন আতা ওয়াদ্দিআ, নাওযায়তু আন আগতাসিলা ইত্যাদি মুখে বলে নিয়ত করা বিদআত। কেননা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এ ধরণের কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না।
আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
قُلْ أَتُعَلِّمُونَ اللهَ بِدِيْنِكُمْ وَاللهُ يَعْلَمُ مَا فِى السَّمَاوَات وَمَا فِى الأَرْضِ وَاللهُ بِكُلِّ شَيٍْء عَلِيمٌ . ( الحجرات - 16)
অর্থঃ (হে নবী) আপনি বলুন! তোমরা কি তোমাদের দ্বীন সম্পর্কে আল্লাহ্কে অবহিত করতে চাও? অথচ আল্লাহ্ আসমান ও যমীনের যাবতীয় কিছু জানেন। আল্লাহ্ সর্ব বিষয়ে সম্যক অবহিত। [হুজরাত: ১৬]
নিয়তের স্থান হল অন্তর। নিয়ত অন্তরের কাজ, মুখের কাজ নয়। হাফেয ইবনে রজব রহ. বলেন, নিয়ত হল অন্তরের ইচ্ছা। কোন ইবাদতের ক্ষেত্রে নিয়ত মুখে বলা ওয়াজিব নয়। [জামে‘উল উলুম ওয়াল হিকাম:১/৯২]
(২) ফরজ সালাতের পর সম্মিলিত দুআ
জামাতে সালাত আদায়ের পর প্রত্যেকের জন্যই ব্যক্তিগতভাবে শরীয়ত সম্মত দুআ ও তাসবীহ পাঠ করা বৈধ। যেমন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতের পর দুআ ও তাসবীহ পাঠ করতেন এবং সাহাবায়ে কেরামও এরূপ আমল করতেন। কেননা তারা রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুন্নাতকে যথাযথভাবে আমলে পরিণত করতেন। তাই জামাতে সালাত আদায়ের পর সম্মিলিতভাবে দুআ রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুন্নাত পরিপন্থী।
(৩) মৃত ব্যক্তির রূহের মাগফেরাত, মৃত ব্যক্তির জন্য দুআ করার পর কিংবা বিবাহের খোৎবার সময় সূরা ফাতিহা পাঠের জন্য লোকদের বলা।
এ সবই বিদআতের অন্তর্ভুক্ত। কেননা তা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত নেই এবং সাহাবায়ে কেরামও এ ধরণের আমল করেননি। অথচ তারাই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আমল সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত ছিলেন। এ থেকে প্রতীয়মাণ হল যে, এ ধরণের আমল নব আবিষ্কৃত ও বিদআত।
(৪) মৃত ব্যক্তির শোকে মাতম করা
মৃত ব্যক্তির শোকে মাতম করা, চল্লিশা ইত্যাদি খাওয়ানো, হাফেজ সাহেবদের এনে কুলখানী করানো এ ধারণায় যে, তা মৃত ব্যক্তির শান্তনা যোগাবে এবং মৃত ব্যক্তির উপকারে আসবে।
(৫) কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত তাসবীহ-তাহলীলের বাইরে বিভিন্ন সুফি বা পীরদের নানা ধরণের যিকির, যা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাতের পরিপন্থী। সুন্নাতের সাথে এ বৈপরীত্য শব্দগত হোক, গঠনগত কিংবা সময় সাপেক্ষ হোক, সুন্নাতের পরিপন্থী কোন যিকিরই গ্রহণযোগ্য নয়।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাণী,
مَاءُ زَمْزَمَ لِمَا شُرِبَ لَهُ . ( مسلم )
অর্থঃ যে ব্যক্তি এমন কোন নেক আমল করল (সাওয়াবের নিয়তে) যা আমাদের পক্ষ থেকে অনুমোদিত নয় তা প্রত্যাখ্যাত। [মুসলিম: ১৭১৮]
(৬) কবরের উপর মাজারের নামে ঘর তৈরী করা, কবরের পাশে মসজিদ তৈরী করে সেখানে সালাত আদায় করা, তাতে মৃতদের দাফন করা, প্রত্যহ সে কবর যিয়ারত করা, বরকত হাসিলের উদ্দেশ্যে কবরের পাশে গিয়ে সালাত আদায় করা, কবরে শায়ীত মৃত ব্যক্তির উসিলা দিয়ে আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট দুআ করা অথবা কবরের পাশে গিয়ে দুআ করা, কবরে লাইটিং বা আলোকসজ্জা করা এর প্রত্যেকটিই বিদআত এবং ঘৃণিত ও অপছন্দনীয় কাজ। [কিতাবুত তাওহীম- ডঃ সালেহ আলফাওজান: ৯৪]
নিঃসন্দেহে বিদআত সর্বাধিক ভয়ঙ্কর গুনাহ্। মানুষ যখন সদা-সর্বদা বিভিন্ন ধরণের গুনাহ্র কাজ করতে থাকে, তখন এক পর্যায়ে এ গুনাহ্ তাকে ধ্বংস করে দেয়। ঐ সকল ধ্বংসকারী গুনাহ্র মধ্যে বিদআত হচ্ছে সবচেয়ে কঠিন। সুফিয়ান সাওরী রহ. বলেন, সমস্ত গুনাহর মধ্যে ইবলীসের নিকট সর্বাধিক পছন্দনীয় গুনাহ্ হচ্ছে বিদআত। কেননা বান্দা গুনাহ করলে তাওবা করে, কিন্তু বিদআতপন্থী বিদআতী আমল সাওয়াবের কাজ ভেবে সম্পাদন করে, ফলে তা থেকে তাওবা করে না। [শরহুস সুন্নাহ -আল-বাগভী (র): ১/২২৬]
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, বিদআতের গুনাহ থেকে তাওবা করা হয় না। এর অর্থ হচেছ- বিদআত সৃষ্টিকারী এমন কিছু ধর্মীয় রীতি-নীতি প্রবর্তন করে যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে প্রবর্তিত নয়। শয়তান সে সব বিদআতী আমলগুলো আরো চাকচিক্যময় করে তার সামনে উপস্থাপন করে। তখন সে এগুলোকে সৎকাজ বিবেচনা করে। ফলে এ থেকে সে তাওবা করার প্রয়োজন মনে করে না। কেননা তাওবার প্রথম পর্যায় হলো, সে কৃত কাজগুলো মন্দ হিসেবে জানবে, যাতে সে তাওবা করতে পারে।
কিন্তু তার দৃষ্টিতে এ বিদআত কাজটি যেহেতু সৎকাজ হিসাবে পরিগণিত। তাই সে মনে করে, যদি সে এ কাজ ছেড়ে দেয় তাহলে একটা সৎকাজ ছেড়ে দিল। এ ভাবে সে ঐ বিদআত কাজ ছাড়তেও পারে না এবং তা থেকে তাওবা করার সুযোগ হয়ে ওঠে না। [মাজমুয়ায়ে ফতোয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া (র) : ১০/৯]
এরপর ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেনঃ হ্যাঁ, তাওবা তখন সম্ভব যখন আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে সঠিক পথের সন্ধান দান করেন এবং তাওবা করার তাওফিক দান করেন। যেমনিভাবে আল্লাহ্ তা‘আলা অনেক কাফের, মুশরিক, মুনাফিক ও বিদআতের অনুসারীদের হেদায়াত দান করেছেন। [মাজমুয়ায়ে ফতোয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া (র) : ১০/৯]
তিনি আরো বলেনঃ যে ব্যক্তি বলে, আল্লাহ্ তা‘আলা বিদআতপন্থীদের তাওবা কবুল করবেন না সে মারাত্মক ভুল করল। [মাজমুয়ায়ে ফতোয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া (র) : ১০/৯]
ইবনে তাইমিয়া রহ. বিদআত সৃষ্টিকারীর তাওবা আল্লাহ্র নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না সংক্রান্ত হাদীসটির ব্যাখ্যা করেছেন। হাদীসটি হচ্ছেঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
إِنَّ اللهَ حَجَبَ التَّوْبَةَ عَنْ صَاحِبِ كُلَّ بِدْعَةٍ . ( الطبراني )
অর্থঃ আল্লাহ কোন বিদআত সৃষ্টিকারীর তাওবা গ্রহণ করবেন না। [আল-মুজামুল আওসাত-তিবরানী (র) : ৪৭১৩]
ইবনে তাইমিয়া রহ. কর্তৃক এ হাদীসের ব্যাখ্যা ইতিপূর্বে স্পষ্ট ভাবে বর্ণিত হয়েছে। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, কুরআনের এক আয়াত অন্য আয়াতের তাফসীর বা ব্যাখ্যা। আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় বান্দাকে লক্ষ্য করে বলেন, বান্দা যখন গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকে, কৃত কর্মের জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হয়, দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হয় যে, সে অনুরূপ গুনাহে আর লিপ্ত হবে না এবং প্রাপকদের হক যথাযথ ভাবে আদায় করবে, তাহলে আল্লাহর ওয়াদা হচ্ছে, তাওবার পর আল্লাহ্ তাকেও ক্ষমা করে দিবেন যদিও সে মুশরিক, হত্যাকারী বা ব্যাভিচারী হয়।
আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
إِلاَّ مَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ عَمَلاً صَالِحًا فَأُولَئِكَ يُبَدِّلُ اللهً سَيئِاتِهِمْ حَسَنَاتٍ وَكَانَ اللهُ غَفُورًا رَّحِيمًا . ( الفرقان : 70)
অর্থঃ কিন্তু যারা তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎ কাজ করে আল্লাহ তাদের যাবতীয় পাপ নেক দ্বারা পরিবর্তন করে দিবেন। আর আল্লাহ্ হলেন অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও করুণাময়। [ফুরকান : ৭০]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَإِنِّة لَغَفَّارٌ لِمَن تَابَ وَءَِامَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا ثُمَّ اهْتَدَى . ( طه : 82)
অর্থঃ নিশ্চয়ই আমি ক্ষমাশীল ঐ ব্যক্তির জন্য যে তাওবা করে, ঈমান আনে, সৎকাজ করে এবং এর উপর অবিচল থাকে। [ত্বাহা : ৮২]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
قُلْ يَاعِباِدِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُواْ عَلَى أنفُسِهِمْ لاَ تَقْنًطُواْ مِن رَّحْمِةِ الله إِنَّ اللهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّـهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ . ( الزمر : 53)
অর্থঃ বলুন, হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের উপর যুলুম বা অবিচার করেছ, তোমরা আল্লাহর করুণা হতে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের পাপ মোচন করে দিবেন। নিশ্চয়ই তিনি অতীব ক্ষমাশীল অসীম করুণাময়। [যুমার : ৫৩]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَمَن يَعَمَلْ سُوءًا أَوْ يظْلِمْ نَفْسَهُ ثُمَّ يَسْتَغْفِراللهّ يَجِدِ اللهَ غَفٌورًا رَّحِيمًا . ( النساء : 110)
অর্থঃ আর যে ব্যক্তি কোন মন্দ আমল করে অথবা নিজের উপর অবিচার করে। অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে। তাহলে সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল ও করুণাময় হিসেবেই পাবে। [নিসা : ১১০]
এ তাওবা ব্যাপক, যা সকল নাস্তিক, কাফির, মুশরিক, বিদআত সৃষ্টিকারী এবং সকল গুনাহ্গারদের জন্য। যদি সে তাওবার শর্তগুলো পূর্ণ করে।
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, বিদআতের গুনাহ থেকে তাওবা করা হয় না। এর অর্থ হচেছ- বিদআত সৃষ্টিকারী এমন কিছু ধর্মীয় রীতি-নীতি প্রবর্তন করে যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে প্রবর্তিত নয়। শয়তান সে সব বিদআতী আমলগুলো আরো চাকচিক্যময় করে তার সামনে উপস্থাপন করে। তখন সে এগুলোকে সৎকাজ বিবেচনা করে। ফলে এ থেকে সে তাওবা করার প্রয়োজন মনে করে না। কেননা তাওবার প্রথম পর্যায় হলো, সে কৃত কাজগুলো মন্দ হিসেবে জানবে, যাতে সে তাওবা করতে পারে।
কিন্তু তার দৃষ্টিতে এ বিদআত কাজটি যেহেতু সৎকাজ হিসাবে পরিগণিত। তাই সে মনে করে, যদি সে এ কাজ ছেড়ে দেয় তাহলে একটা সৎকাজ ছেড়ে দিল। এ ভাবে সে ঐ বিদআত কাজ ছাড়তেও পারে না এবং তা থেকে তাওবা করার সুযোগ হয়ে ওঠে না। [মাজমুয়ায়ে ফতোয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া (র) : ১০/৯]
এরপর ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেনঃ হ্যাঁ, তাওবা তখন সম্ভব যখন আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে সঠিক পথের সন্ধান দান করেন এবং তাওবা করার তাওফিক দান করেন। যেমনিভাবে আল্লাহ্ তা‘আলা অনেক কাফের, মুশরিক, মুনাফিক ও বিদআতের অনুসারীদের হেদায়াত দান করেছেন। [মাজমুয়ায়ে ফতোয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া (র) : ১০/৯]
তিনি আরো বলেনঃ যে ব্যক্তি বলে, আল্লাহ্ তা‘আলা বিদআতপন্থীদের তাওবা কবুল করবেন না সে মারাত্মক ভুল করল। [মাজমুয়ায়ে ফতোয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া (র) : ১০/৯]
ইবনে তাইমিয়া রহ. বিদআত সৃষ্টিকারীর তাওবা আল্লাহ্র নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না সংক্রান্ত হাদীসটির ব্যাখ্যা করেছেন। হাদীসটি হচ্ছেঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
إِنَّ اللهَ حَجَبَ التَّوْبَةَ عَنْ صَاحِبِ كُلَّ بِدْعَةٍ . ( الطبراني )
অর্থঃ আল্লাহ কোন বিদআত সৃষ্টিকারীর তাওবা গ্রহণ করবেন না। [আল-মুজামুল আওসাত-তিবরানী (র) : ৪৭১৩]
ইবনে তাইমিয়া রহ. কর্তৃক এ হাদীসের ব্যাখ্যা ইতিপূর্বে স্পষ্ট ভাবে বর্ণিত হয়েছে। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, কুরআনের এক আয়াত অন্য আয়াতের তাফসীর বা ব্যাখ্যা। আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় বান্দাকে লক্ষ্য করে বলেন, বান্দা যখন গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকে, কৃত কর্মের জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হয়, দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হয় যে, সে অনুরূপ গুনাহে আর লিপ্ত হবে না এবং প্রাপকদের হক যথাযথ ভাবে আদায় করবে, তাহলে আল্লাহর ওয়াদা হচ্ছে, তাওবার পর আল্লাহ্ তাকেও ক্ষমা করে দিবেন যদিও সে মুশরিক, হত্যাকারী বা ব্যাভিচারী হয়।
আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
إِلاَّ مَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ عَمَلاً صَالِحًا فَأُولَئِكَ يُبَدِّلُ اللهً سَيئِاتِهِمْ حَسَنَاتٍ وَكَانَ اللهُ غَفُورًا رَّحِيمًا . ( الفرقان : 70)
অর্থঃ কিন্তু যারা তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎ কাজ করে আল্লাহ তাদের যাবতীয় পাপ নেক দ্বারা পরিবর্তন করে দিবেন। আর আল্লাহ্ হলেন অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও করুণাময়। [ফুরকান : ৭০]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَإِنِّة لَغَفَّارٌ لِمَن تَابَ وَءَِامَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا ثُمَّ اهْتَدَى . ( طه : 82)
অর্থঃ নিশ্চয়ই আমি ক্ষমাশীল ঐ ব্যক্তির জন্য যে তাওবা করে, ঈমান আনে, সৎকাজ করে এবং এর উপর অবিচল থাকে। [ত্বাহা : ৮২]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
قُلْ يَاعِباِدِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُواْ عَلَى أنفُسِهِمْ لاَ تَقْنًطُواْ مِن رَّحْمِةِ الله إِنَّ اللهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّـهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ . ( الزمر : 53)
অর্থঃ বলুন, হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের উপর যুলুম বা অবিচার করেছ, তোমরা আল্লাহর করুণা হতে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের পাপ মোচন করে দিবেন। নিশ্চয়ই তিনি অতীব ক্ষমাশীল অসীম করুণাময়। [যুমার : ৫৩]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَمَن يَعَمَلْ سُوءًا أَوْ يظْلِمْ نَفْسَهُ ثُمَّ يَسْتَغْفِراللهّ يَجِدِ اللهَ غَفٌورًا رَّحِيمًا . ( النساء : 110)
অর্থঃ আর যে ব্যক্তি কোন মন্দ আমল করে অথবা নিজের উপর অবিচার করে। অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে। তাহলে সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল ও করুণাময় হিসেবেই পাবে। [নিসা : ১১০]
এ তাওবা ব্যাপক, যা সকল নাস্তিক, কাফির, মুশরিক, বিদআত সৃষ্টিকারী এবং সকল গুনাহ্গারদের জন্য। যদি সে তাওবার শর্তগুলো পূর্ণ করে।
বিদআতের কতিপয় ভয়ঙ্কর ও ধ্বংসাত্মক প্রভাব রয়েছে; তার মধ্য থেকে নিম্নে কিছু তুলে ধরা হল।
১. যা কুফর পর্যন্ত পেঁŠছে দেয়
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَأْخُذَ أُمَّتِي بِأَخْذِ الْقُرُونِ قَبْلَهَا شِبْرًا بِشِبْرٍ وَذِرَاعًا بِذِرَاعٍ فَقِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ كَفَارِسَ وَالرُّومِ فَقَالَ وَمَنْ النَّاسُ إِلَّا أُولَئِكَ . ( بخاري )
অর্থঃ ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ আমার উম্মত পূর্ববর্তী যামানার লোকদের হুবহু পদাঙ্ক অনুসরণ না করবে। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! রোম এবং পারস্যের মতো? উত্তরে তিনি বললেন, মানুষের মধ্যে একমাত্র তারাই। [বুখারী : ৭৩১৯]
আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
لَتَتْبَعُنَّ سَنَنَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ شِبْرًا شِبْرًا وَذِرَاعًا بِذِرَاعٍ حَتَّى لَوْ دَخَلُوا جُحْرَ ضَبٍّ تَبِعْتُمُوهُمْ قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى قَالَ فَمَنْ؟ ( متفق عليه )
অর্থঃ তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী যামানার লোকদের হুবহু পদাঙ্ক অনুসরণ করবে। এমনকি তারা যদি গুইসাপের গর্তের ভিতর প্রবেশ করে থাকে তাহলে তোমরাও তাদের অনুসরণে সেখানে প্রবেশ করবে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! ইয়াহূদী এবং নাসারাগণ? তিনি বললেন, আর কারা? [বুখারী : ৭৩২০ ও মুসলিম : ২৬৬৯]
২. অজ্ঞতা বশতঃ আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করা
বিদআতের অন্যতম কুফল হল, অজ্ঞতা বশতঃ আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করা। কেননা কোন পর্যবেক্ষক বিদআতপন্থীর চরিত্র পর্যবেক্ষণ করলে দেখতে পাবে, তাদের অনেকে আল্লাহ ও রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামে মিথ্যা বলছে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা এ ধরনের মিথ্যারোপ করতে নিষেধ করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَلَوْ تَقَوَّلَ عَلَيْنَا بَعْضَ الأَقَاوِيلِ َلَأخَذْنَا مِنْهُ بالْيَمِينِ ثُمَّ لَقَطَعْنَا مِنْهُ الْوَتِينَ . ( الحاقة : 44-46)
অর্থঃ যদি সে নিজের পক্ষ থেকে কোন কথা বানিয়ে আমার কথা বলে চালিয়ে দিত, তবে অবশ্যই আমি তার ডান হাত ধরে ফেলতাম এবং কেটে দিতাম তার জীবন ধমনী (শাহরগ)। [আল-হাক্কাহ : ৪৪-৪৬]
এমনিভাবে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও মিথ্যারোপ করতে নিষেধ করেছেন এবং এর জন্য কঠিন আযাবের হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
مَنْ تَعَمَّدَ عَلَيَّ كَذِباً فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنْ النَّارِ . ( متفق عليه )
অর্থঃ যে আমার উপর মিথ্যারোপ করার ইচ্ছা পোষণ করল, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে ফেলল। [বুখারী : ১০৮ ও মুসলিম : ২]
(৩) বিদআতপন্থীরা সুন্নাত ও তার অনুসারীদের দুশমন
বিদআতের সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক হল, বিদআতপন্থীরা সুন্নাত ও তার অনুসারীদের দুশমন হয়ে থাকে। ইমাম ইসমাইল বিন আঃ রহমান ছাবুনী রহ. বলেন, বিদআতপন্থীদের যে নিদর্শন সুষ্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়, তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য নিদর্শন হল, তারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীসের ধারক-বাহকগণকে দুশমন মনে করে ও তাদের হেয় প্রতিপন্ন করে।
(৪) বিদআতপন্থীর আমল গ্রহণযোগ্য নয়
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ . ( متفق عليه )
অর্থঃ যে ব্যক্তি এমন কোন আমলের প্রবর্তন করল যা আমাদের পক্ষ থেকে অনুমোদিত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত। [বুখারী : ২৬৯৭ ও মুসলিম : ১৭১৮]
অপর বর্ণনায় এসেছেঃ
مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ . ( مسلم )
অর্থঃ যে ব্যক্তি এমন আমল করবে যাতে আমার সমর্থন নেই, তা গ্রহণযোগ্য নয়। [মুসলিম : ১৭১৮]
(৫) বিদআতপন্থীর পরিণাম ভয়াবহ
শয়তান কয়েকটি প্রতারণার জালের যে কোনটির মাধ্যমে মানুষকে পথভ্রষ্ট করতে চায়। প্রথমতঃ আল্লাহ্র সাথে শিরক করা। যদি মানুষ এ ধোকা হতে মুক্তি পায়, তাহলে তার সামনে শয়তান বিদআতকে পেশ করে। এ কথার দ্বারা বুঝা যায়, বিদআত অন্যান্য গুনাহের চেয়েও ভয়ানক। [মাদারিজুস্ সালিকীন-ইবনে কাইয়্যিম : ১/২২২] তাই সুফিয়ান সাওরী রহ. বলেন, বিদআত শয়তানের নিকট অন্যান্য গুনাহের চেয়েও প্রিয়। কেননা গুনাহ্ হতে তাওবা করার সুযোগ হলেও বিদআত থেকে তাওবা করার সুযোগ হয় না। [শারহুস্ সুন্নাহ- বাগভী (র) : ১/২১৬]
কেননা একে হক মনে করা হয়, আল্লাহ্ আমাদেরকে সরল সঠিক পথে পরিচালিত করুন।
(৬) বিদআতীরা উল্টো বোঝে
সে নেক কাজকে গুনাহ মনে করে এবং গুনাহকে নেক কাজ মনে করে, সুন্নাতকে বিদআত মনে করে ও বিদআতকে সুন্নাত মনে করে।
হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান (রা) বলেন, আল্লাহর কসম! বিদআত এমন ভাবে প্রচার প্রসার লাভ করবে যে, যদি একটি বিদআত ছেড়ে দেয়া হয়, লোকেরা মনে করবে একটি সুন্নাত ছেড়ে দেয়া হয়েছে। [কিতাবু মা জাআ ফিল বিদই : ১২৪পৃ: ১৬২নং]
(৭) বিদআতীর সাক্ষ্য ও বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয়
সকল মুহাদ্দিস ও ফকীহগণের ঐকমত্য হল, যে বিদআতী স্বীয় বিদআতমূলক কার্যক্রমে কুফরী করে। তার রেওয়ায়েত (বর্ণনা) গ্রহণযোগ্য নয়। আর যে বিদআতী স্বীয় বিদআতমূলক কার্যক্রমে কুফরী করে না, তার রেওয়ায়াত (বর্ণনা) গ্রহণযোগ্য হওয়ার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। ইমাম নববী রহ. বলেন, যদি সে তার বিদআতের প্রতি মানুষকে আহবানকারী না হয়, তাহলে তার রেওয়ায়াত গ্রহণযোগ্য হবে। আর যদি আহবান করে তাহলে গ্রহণযোগ্য হবে না। [শরহে মুসলিম-নববী (র) : ১/১৭৬]
(৮) বিদআতীরা অধিকাংশই ফেতনায় পতিত হয়
আল্লাহ্ তা‘আলা বান্দাদেরকে ফেতনায় পতিত হওয়ার ব্যাপারে সর্তক করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَاتَّقُواْ فِتنَةً لاَّ تُصِيبَنَّ الَّذِينَ ظَلَمُوْا مِنكُم خَآصَّةً وَاعْلَمُوْا أَنَّ اللهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ . ( الأنفال : 25)
অর্থঃ তোমরা সেই ফিতনাকে ভয় কর যা তোমাদের মধ্যকার জালিম ও পাপিষ্ঠদেরকেই বিশেষভাবে ক্লিষ্ট করবে না, বরং সবার উপরই আসবে। তোমরা জেনে রেখ! আল্লাহ্ শাস্তি দানে খুব কঠোর। [আনফাল : ২৫]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَن تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوِ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ . ( النور : 63)
অর্থঃ অতএব, যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে। তারা যেন সতর্ক হয় ঐ বিষয় থেকে, যা তাদের উপর আপতিত হবে অথবা আপতিত হবে তাদের উপর কঠিন শাস্তি। [নূরঃ ৬৩]
রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিরোধিতা বা নাফরমানীর চেয়ে আর কোন ফিতনা বড় হতে পারে কি? অথচ তিনি ফিতনায় পতিত হওয়ার পূর্বেই সৎকর্ম করার উৎসাহ প্রদান করেছেন।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
بَادِرُوا بِالْأَعْمَالِ فِتَنًا كَقِطَعِ اللَّيْلِ الْمُظْلِمِ يُصْبِحُ الرَّجُلُ مُؤْمِنًا وَيُمْسِي كَافِرًا أَوْ يُمْسِي مُؤْمِنًا وَيُصْبِحُ كَافِرًا يَبِيعُ دِينَهُ بِعَرَضٍ مِنْ الدُّنْيَا . ( مسلم )
অর্থঃ অন্ধকার রাতের ন্যায় ফিতনা আসার আগেই অধিকহারে সৎকাজ কর। তখন কোন ব্যক্তি সকালে মুমিন হবে আবার বিকালে সে কাফের, আবার সন্ধ্যাকালে মুমিন থাকবে আবার সকালে কাফের হয়ে যাবে। [মুসলিম : ১১৮]
(৯) বিদআতপন্থী শরীয়ত সংস্কারের দাবীদার
বিদআতপন্থী স্বীয় বিদআতের মাধ্যমে একথা বুঝাতে চায় যে, দ্বীন অসম্পূর্ণ ছিল। সে দ্বীনকে পরিপূর্ণ করেছে। পক্ষান্তরে আল্লাহ্ তা‘আলা দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন।
আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
اَلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكَمْ نَعْمَتِيْ وَ رَضِيْتُ لَكُمْ الإِسْلامَ دِيْنًا . ( المائدة : 3)
অর্থঃ আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, আমার নিয়ামতকে সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম। [মায়েদা : ৩]
আল্লাহ্ তা‘আলা দ্বীনসহ সকল বিষয় কুরআনে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتاَبَ تِبْيَانًا لِّكُلِّ شَئْْ وَهُدًى وَرَحْمَةً وَبُشْرَى لِلْمُسْلِمِينَ . ( النحل : 89)
অর্থঃ আমি আপনার উপর কুরআন নাযিল করেছি। যাতে সকল কিছুর বর্ণনা রয়েছে এবং তা হেদায়াত, রহমত ও সুসংবাদ মুসলমানদের জন্য। [নাহল : ৮৯]
(১০) বিদআতপন্থীর নিকট হক ও বাতিল মিশ্রিত হয়ে যায়
বিদআতপন্থীর নিকটে হক ও বাতিল উভয়টা মিশ্রিত হয়ে যায়। সে এতদুভয়ের মাঝে কোন পার্থক্য করতে পারে না। হক ও বাতেলের মাঝে পার্থক্য করার ইল্ম আল্লাহ্ প্রদত্ত একটি নূর, তা তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে দান করেন। এছাড়াও বিদআতপন্থী তাকওয়া বঞ্চিত হয়, যা মানুষকে হকের দিকে পৌঁছে দেয়।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
ياَاَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُواْ إِن تَتَّقُواْ اللهَ يَجْعَل لَّكُمْ فُرْقَانًا ويُكَفِرْعَنْكُم سَيِئاَتِكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللهُ ذُو الْفَضْلِ الَظِيمِ . ( الأنفال : 29)
অর্থঃ হে মুমিনগণ! তোমরা যদি আল্লাহ্কে ভয় কর তবে তিনি তোমাদেরকে ন্যায়-অন্যায় পার্থক্য করার একটি মানদন্ড ও শক্তিদান করবেন আর তোমাদের দোষক্রটি তোমাদের হতে দূর করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ্ বড় অনুগ্রহশীল ও মঙ্গলময়। [আনফাল : ২৯]
(১১) বিদআত প্রবর্তক নিজ গুনাহ্ ও অনুসারীদের গুনাহ বহন করে
আবু হুরাইরা (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنْ الْأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلَالَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنْ الْإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا . ( مسلم )
অর্থঃ যে ব্যক্তি কোন হেদায়াতের দিকে আহবান করবে তাকে তার অনুসারীদের সাওয়াব না কমিয়ে তাদের সমান সাওয়াব দেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি কোন গোমরাহী বা অন্যায়ের দিকে আহবান করবে তাকে তার অনুসারীদের গুনাহ না কমিয়ে তাদের সমান গুনাহ দেয়া হবে। [মুসলিম :২৬৭৪]
(১২) বিদআতপন্থী লানত প্রাপ্ত
আনাস (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় বিদআত প্রচারকারীর ব্যাপারে বলেনঃ
مَنْ أَحْدَثَ فِيهَا حَدَثًا فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللَّهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ لَا يَقْبَلُ اللَّهُ مِنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَرْفًا وَلَا عَدْلًا . ( متفق عليه )
অর্থঃ যে ব্যক্তি কোথাও কোন বিদআতের প্রচলন করবে অথবা কোন বিদআতপন্থীকে আশ্রয় দেবে তার উপর আল্লাহর, ফিরিশতাগণের ও সকল মানুষের লানত। আল্লাহ তার কোন নফল বা ফরজ আমল গ্রহণ করবেন না। [বুখারী : ৭৩০৬ ও মুসলিম : ১৩৬৬]
ইমাম শাতেবী রহ. বলেন, এ হাদীস ব্যাপকভাবে সকল প্রকার শরীয়ত বিরোধী কাজ ও বিদআতকে অন্তর্ভুক্ত করে। [আল-ইতিসাম- শাতেবী : ১/২৪৬]
(১৩) বিদআতপন্থী কিয়ামতের দিন হাউজে কাউসারের পানি পাবে না
সাহ্ল ইবনে সা’দ (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
أَناَ فَرْطُكُمْ عَلَى الحَْوْضِ مَنْ وَرَدَ شَرِبَ وَ مَنْ شَرِبَ لَمْ يَظْمَأْ أَبَدًا وَلَيَرُدَّنَّ عَليَّ أَقْوَامُ أَعْرِفُهُمْ وَيَعْرِفُوْنِيْ، ثُمَّ يُحَالُ بَيْنِيْ وَ بَيْنَهُمْ . ( متفق عليه )
অর্থঃ আমি তোমাদের আগেই হাউজে কাউসারে থাকব। যে পানি পান করতে চাইবে আমি তাকে পান করাব, আর যে পান করবে সে কখনো পিপাসিত হবে না। আমার সামনে এক জামাতকে আনা হবে তারা আমাকে চিনবে আমিও তাদের চিনব কিন্তু পরক্ষণেই তাদের মাঝে ও আমার মাঝে অন্তরায় সৃষ্টি হয়ে যাবে। [বুখারী : ৭/২৬৪ ও মুসলিম : ২২৯০]
অন্য রেওয়ায়াতে আছে, অতঃপর আমি বলব তারা আমার দলের। বলা হবে আপনি জানেন না, তারা আপনার অবর্তমানে কি বিদআত সৃষ্টি করেছে। তখন আমি বলব, দূর হও, দূর হও, যারা আমার পর দ্বীনের মাঝে বিদআত সৃষ্টি করেছ। [বুখারী : ৬৫৮৩]
আব্দুল্লাহ্ (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বলবেনঃ
يَارَبَِّّ أَصْحَابِيْ أَصْحَابِيْ فَيُقَالُ : إِنَّكَ لا تَدْرِيْ مَا أَحْدَثُوْا بَعْدَكَ . ( متفق عليه )
অর্থঃ হে রব! তারা আমার দল, তারা আমার দল! জবাব দেয়া হবে, আপনি জানেন না তারা আপনার পর কি নতুন জিনিস সৃষ্টি করেছে। [বুখারী : ৬৫৮৫ ও মুসলিম : ২২৯৫]
আসমা বিনতে আবি বকর (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
إِنِّي عَلَى الْحَوْضِ حَتَّى أَنْظُرَ مَنْ يَرِدُ عَلَيَّ مِنْكُمْ وَسَيُؤْخَذُ نَاسٌ دُونِي فَأَقُولُ يَا رَبِّ مِنِّي وَمِنْ أُمَّتِي فَيُقَالُ هَلْ شَعَرْتَ مَا عَمِلُوا بَعْدَكَ وَاللَّهِ مَا بَرِحُوا يَرْجِعُونَ عَلَى أَعْقَابِهِمْ فَكَانَ ابْنُ أَبِي مُلَيْكَةَ يَقُولُ اللَّهُمَّ إِنَّا نَعُوذُ بِكَ أَنْ نَرْجِعَ عَلَى أَعْقَابِنَا أَوْ نُفْتَنَ عَنْ دِينِنَا . ( متفق عليه )
অর্থঃ আমি হাউজে কাউছারের পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখব তোমাদের থেকে কারা কারা আসছে। কিন্তু একদল লোককে আমার কাছে আসতে দেয়া হচ্ছে না, তখন আমি বলবঃ হে রব! তারা আমার দলের, তারা আমার উম্মত। তখন বলা হবেঃ আপনি কি জানেন তারা আপনার পর কোন নতুন জিনিস এর উপর আমল করেছে? আল্লাহর কসম! তারা আপনার দ্বীনকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এজন্যে ইবনু আবি মুলাইকা রহ. দুআ করতেন, হে আল্লাহ! পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাওয়া ও দ্বীনের মাঝে ফিতনা সৃষ্টি করা থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। [বুখারী : ৬৫৯৩ ও মুসলিম : ২২৯৩]
(১৪) বিদআতপন্থী আল্লাহর জিকির হতে দূরে থাকে
বিদআতপন্থী আল্লাহর জিকির হতে দূরে থাকে। কেননা আল্লাহ্ তা‘আলা স্বীয় কিতাবে ও রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদীসে আমাদের অনেক জিকির ও দুআ শিক্ষা দিয়েছেন। কিছু দুআ বা জিকির নির্ধারিত আছে যেমন ফরজ সালাতের পর দুআ, সকাল-সন্ধ্যার তাসবীহ, ঘুমানোর সময়কার দুআ ও ঘুম হতে জাগ্রত হওয়ার পরের দুআ ইত্যাদি। আবার কিছু জিকির বা দুআ এমন আছে যার কোন নির্ধারিত সময় বা স্থান নেই।
আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
يَا أيُّها الَّذِينَ ءَامَنُوا اذكُرُوا اللهَ ذِكْرًا كَثِيْرًا وَسَبِحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلاً .( الأحزاب : 41-42)
অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! তোমরা অধিক পরিমাণে আল্লাহ্র জিকির কর এবং সকাল সন্ধ্যায় আল্লাহ্র পবিত্রতা বর্ণনা কর। [আহযাব : ৪১-৪২]
(১৫) বিদআতপন্থী সত্যকে নিজের ও অনুসারীদের মাঝে গোপন রাখে
বিদআতপন্থী সত্য থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখে ও অনুসারীদের কাছেও তা গোপন রাখে। আল্লাহ্ তা‘আলা এ ধরনের লোকদের প্রতি লা’নত করেছেন।
আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنْزَلْنَا مِنَ الْبَيَّناَتِ وَالْهُدَى مِنْ بَعْدِ مَا بَيَّنَاهُ لِلنَّاسِ فِى الْكَتَابِ أُولَئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللهُ وَيَلْعَنُمُمُ اللّعِنُونَ . ( البقرة : 159)
অর্থঃ আমি যেসব উজ্জ্বল নিদর্শন ও পথ নির্দেশ অবতীর্ণ করেছি, আমি ঐ গুলোকে সর্ব সাধারণের নিকট প্রকাশ করার পরও যারা ঐ সব বিষয়কে গোপন করে, আল্লাহ তাদের লা’নত করেন এবং লা’নতকারীগণও তাদেরকে লা’নত করেন। [বাকারা : ১৫৯]
(১৬) ইসলামে বিদআতপন্থীর আমল ঘৃণিত
যখন বিদআতপন্থী কোন বিদআতী আমল করে তখন ইসলামের দুশমনদের কাছে ইসলাম ঠাট্টার বস্ত্ত হয়ে দাঁড়ায়। অথচ ইসলাম এ সকল বিদআত হতে পবিত্র।
(১৭) বিদআতপন্থী উম্মতকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে
বিদআতপন্থী ব্যক্তি উম্মতকে বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত করে। কেননা বিদআতপন্থী নিজ বিদআত দ্বারা একটি দল তৈরী করে, যা মূল দল থেকে আলাদা হয়ে যায়। এ ভাবে উম্মতে মুসলিমার মাঝে অনেক দলের সৃষ্টি হয়।
আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
إِنَّ الَّذِين فَرَّقُواْ دِينَهُمْ وَكَانُواْ شِيَعًا لَّسْتَ مِنُهُمْ فِى شَيء إِنَّمَآ أَمْرُهُمْ إِلَى اللهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُمْ بِمَا كَانُوأ يَفْعَلُوَن . ( الأنعام : 159)
অর্থঃ নিশ্চয়ই যারা নিজেদের দ্বীনের মধ্যে নানা মতভেদ সৃষ্টি করে তাকে খন্ড-বিখন্ড করেছে এবং বিভিন্ন দলে, উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, তাদের সাথে কোন ব্যাপারে তোমার কোন সম্পর্ক নেই। তাদের বিষয়টি নিশ্চয়ই আল্লাহর তত্ত্বাবধানে রয়েছে, পরিশেষে তিনিই তাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে তাদের অবহিত করবেন। [আনআম : ১৫৯]
(১৮) উম্মতে মুসলিমাকে বিদআত হতে বাঁচানোর লক্ষ্যে প্রকাশ্য বিদআতপন্থীর (গীবত) সমালোচনা করা বৈধ
প্রকাশ্য ফাসেকের চেয়ে প্রকাশ্য বিদআতী অধিক ভয়ানক। কুরআন ও হাদীসের বর্ণনা মতে গীবত করা হারাম। কিন্তু ছয় কারণে শরীয়তে গীবতকে বৈধ করা হয়েছে। [শরহে মুসলিম-নববী (র) : ১৬/১৪২]
(ক) অত্যাচারীত হলে, (খ) গর্হিত কাজ দূরীকরণে সাহায্য প্রার্থনা কালে, (গ) ফতোয়া প্রার্থনার ক্ষেত্রে, (ঘ) মুসলিমদেরকে অনিষ্ট হতে বাঁচাতে, (ঙ) সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ও (চ) প্রকাশ্য বিদআতপন্থীর বেদআতের বর্ণনা দিতে গিয়ে। [ফতহুল বারী : ১০/৪৭১]
(১৯) বিদআতপন্থী প্রবৃত্তির অনুসারী ও শরীয়ত অস্বীকারকারী হয় [আল-ইতিসাম- শাতেবী : ১/৬১]
(২০) বিদআতপন্থী নিজেকে শরীয়ত প্রবর্তকের সমকক্ষ বা সাদৃশ বানিয়ে নেয়
বিদআতপন্থী নিজেকে শরীয়ত প্রবর্তকের সমকক্ষ বা সাদৃশ বানিয়ে নেয়। কেননা আল্লাহ্ তা‘আলা শরীয়তকে নিজেই বানিয়েছেন এবং বান্দাদেরকে তা অনুসরণ করে চলার আদেশ করেছেন। ঠিক তদ্রূপ বিদআত প্রবর্তক নিজে কোন আমল নতুন ভাবে উদ্ভাবন করে তদানুযায়ী মানুষকে আমল করতে উৎসাহিত করে। [আল-ইতিসাম- শাতেবী : ১/৬১-৭০]
আল্লাহ্ তা‘আলা আমাকে ও সকল মুসলিম ভাইকে দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষমা ও সুস্থতা দান করুন ও বিদআত থেকে বাঁচিয়ে রাখুন। শান্তি, রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হোক আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), তাঁর পরিবার-পরিজন, সকল সাহাবায়ে কেরাম ও কিয়ামত পযর্ন্ত আগত তাঁর সকল একনিষ্ঠ অনুসারীগণের উপর।
আমিন
১. যা কুফর পর্যন্ত পেঁŠছে দেয়
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَأْخُذَ أُمَّتِي بِأَخْذِ الْقُرُونِ قَبْلَهَا شِبْرًا بِشِبْرٍ وَذِرَاعًا بِذِرَاعٍ فَقِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ كَفَارِسَ وَالرُّومِ فَقَالَ وَمَنْ النَّاسُ إِلَّا أُولَئِكَ . ( بخاري )
অর্থঃ ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ আমার উম্মত পূর্ববর্তী যামানার লোকদের হুবহু পদাঙ্ক অনুসরণ না করবে। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! রোম এবং পারস্যের মতো? উত্তরে তিনি বললেন, মানুষের মধ্যে একমাত্র তারাই। [বুখারী : ৭৩১৯]
আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
لَتَتْبَعُنَّ سَنَنَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ شِبْرًا شِبْرًا وَذِرَاعًا بِذِرَاعٍ حَتَّى لَوْ دَخَلُوا جُحْرَ ضَبٍّ تَبِعْتُمُوهُمْ قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى قَالَ فَمَنْ؟ ( متفق عليه )
অর্থঃ তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী যামানার লোকদের হুবহু পদাঙ্ক অনুসরণ করবে। এমনকি তারা যদি গুইসাপের গর্তের ভিতর প্রবেশ করে থাকে তাহলে তোমরাও তাদের অনুসরণে সেখানে প্রবেশ করবে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! ইয়াহূদী এবং নাসারাগণ? তিনি বললেন, আর কারা? [বুখারী : ৭৩২০ ও মুসলিম : ২৬৬৯]
২. অজ্ঞতা বশতঃ আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করা
বিদআতের অন্যতম কুফল হল, অজ্ঞতা বশতঃ আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করা। কেননা কোন পর্যবেক্ষক বিদআতপন্থীর চরিত্র পর্যবেক্ষণ করলে দেখতে পাবে, তাদের অনেকে আল্লাহ ও রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামে মিথ্যা বলছে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা এ ধরনের মিথ্যারোপ করতে নিষেধ করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَلَوْ تَقَوَّلَ عَلَيْنَا بَعْضَ الأَقَاوِيلِ َلَأخَذْنَا مِنْهُ بالْيَمِينِ ثُمَّ لَقَطَعْنَا مِنْهُ الْوَتِينَ . ( الحاقة : 44-46)
অর্থঃ যদি সে নিজের পক্ষ থেকে কোন কথা বানিয়ে আমার কথা বলে চালিয়ে দিত, তবে অবশ্যই আমি তার ডান হাত ধরে ফেলতাম এবং কেটে দিতাম তার জীবন ধমনী (শাহরগ)। [আল-হাক্কাহ : ৪৪-৪৬]
এমনিভাবে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও মিথ্যারোপ করতে নিষেধ করেছেন এবং এর জন্য কঠিন আযাবের হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
مَنْ تَعَمَّدَ عَلَيَّ كَذِباً فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنْ النَّارِ . ( متفق عليه )
অর্থঃ যে আমার উপর মিথ্যারোপ করার ইচ্ছা পোষণ করল, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে ফেলল। [বুখারী : ১০৮ ও মুসলিম : ২]
(৩) বিদআতপন্থীরা সুন্নাত ও তার অনুসারীদের দুশমন
বিদআতের সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক হল, বিদআতপন্থীরা সুন্নাত ও তার অনুসারীদের দুশমন হয়ে থাকে। ইমাম ইসমাইল বিন আঃ রহমান ছাবুনী রহ. বলেন, বিদআতপন্থীদের যে নিদর্শন সুষ্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়, তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য নিদর্শন হল, তারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীসের ধারক-বাহকগণকে দুশমন মনে করে ও তাদের হেয় প্রতিপন্ন করে।
(৪) বিদআতপন্থীর আমল গ্রহণযোগ্য নয়
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ . ( متفق عليه )
অর্থঃ যে ব্যক্তি এমন কোন আমলের প্রবর্তন করল যা আমাদের পক্ষ থেকে অনুমোদিত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত। [বুখারী : ২৬৯৭ ও মুসলিম : ১৭১৮]
অপর বর্ণনায় এসেছেঃ
مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ . ( مسلم )
অর্থঃ যে ব্যক্তি এমন আমল করবে যাতে আমার সমর্থন নেই, তা গ্রহণযোগ্য নয়। [মুসলিম : ১৭১৮]
(৫) বিদআতপন্থীর পরিণাম ভয়াবহ
শয়তান কয়েকটি প্রতারণার জালের যে কোনটির মাধ্যমে মানুষকে পথভ্রষ্ট করতে চায়। প্রথমতঃ আল্লাহ্র সাথে শিরক করা। যদি মানুষ এ ধোকা হতে মুক্তি পায়, তাহলে তার সামনে শয়তান বিদআতকে পেশ করে। এ কথার দ্বারা বুঝা যায়, বিদআত অন্যান্য গুনাহের চেয়েও ভয়ানক। [মাদারিজুস্ সালিকীন-ইবনে কাইয়্যিম : ১/২২২] তাই সুফিয়ান সাওরী রহ. বলেন, বিদআত শয়তানের নিকট অন্যান্য গুনাহের চেয়েও প্রিয়। কেননা গুনাহ্ হতে তাওবা করার সুযোগ হলেও বিদআত থেকে তাওবা করার সুযোগ হয় না। [শারহুস্ সুন্নাহ- বাগভী (র) : ১/২১৬]
কেননা একে হক মনে করা হয়, আল্লাহ্ আমাদেরকে সরল সঠিক পথে পরিচালিত করুন।
(৬) বিদআতীরা উল্টো বোঝে
সে নেক কাজকে গুনাহ মনে করে এবং গুনাহকে নেক কাজ মনে করে, সুন্নাতকে বিদআত মনে করে ও বিদআতকে সুন্নাত মনে করে।
হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান (রা) বলেন, আল্লাহর কসম! বিদআত এমন ভাবে প্রচার প্রসার লাভ করবে যে, যদি একটি বিদআত ছেড়ে দেয়া হয়, লোকেরা মনে করবে একটি সুন্নাত ছেড়ে দেয়া হয়েছে। [কিতাবু মা জাআ ফিল বিদই : ১২৪পৃ: ১৬২নং]
(৭) বিদআতীর সাক্ষ্য ও বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয়
সকল মুহাদ্দিস ও ফকীহগণের ঐকমত্য হল, যে বিদআতী স্বীয় বিদআতমূলক কার্যক্রমে কুফরী করে। তার রেওয়ায়েত (বর্ণনা) গ্রহণযোগ্য নয়। আর যে বিদআতী স্বীয় বিদআতমূলক কার্যক্রমে কুফরী করে না, তার রেওয়ায়াত (বর্ণনা) গ্রহণযোগ্য হওয়ার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। ইমাম নববী রহ. বলেন, যদি সে তার বিদআতের প্রতি মানুষকে আহবানকারী না হয়, তাহলে তার রেওয়ায়াত গ্রহণযোগ্য হবে। আর যদি আহবান করে তাহলে গ্রহণযোগ্য হবে না। [শরহে মুসলিম-নববী (র) : ১/১৭৬]
(৮) বিদআতীরা অধিকাংশই ফেতনায় পতিত হয়
আল্লাহ্ তা‘আলা বান্দাদেরকে ফেতনায় পতিত হওয়ার ব্যাপারে সর্তক করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَاتَّقُواْ فِتنَةً لاَّ تُصِيبَنَّ الَّذِينَ ظَلَمُوْا مِنكُم خَآصَّةً وَاعْلَمُوْا أَنَّ اللهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ . ( الأنفال : 25)
অর্থঃ তোমরা সেই ফিতনাকে ভয় কর যা তোমাদের মধ্যকার জালিম ও পাপিষ্ঠদেরকেই বিশেষভাবে ক্লিষ্ট করবে না, বরং সবার উপরই আসবে। তোমরা জেনে রেখ! আল্লাহ্ শাস্তি দানে খুব কঠোর। [আনফাল : ২৫]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَن تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوِ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ . ( النور : 63)
অর্থঃ অতএব, যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে। তারা যেন সতর্ক হয় ঐ বিষয় থেকে, যা তাদের উপর আপতিত হবে অথবা আপতিত হবে তাদের উপর কঠিন শাস্তি। [নূরঃ ৬৩]
রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিরোধিতা বা নাফরমানীর চেয়ে আর কোন ফিতনা বড় হতে পারে কি? অথচ তিনি ফিতনায় পতিত হওয়ার পূর্বেই সৎকর্ম করার উৎসাহ প্রদান করেছেন।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
بَادِرُوا بِالْأَعْمَالِ فِتَنًا كَقِطَعِ اللَّيْلِ الْمُظْلِمِ يُصْبِحُ الرَّجُلُ مُؤْمِنًا وَيُمْسِي كَافِرًا أَوْ يُمْسِي مُؤْمِنًا وَيُصْبِحُ كَافِرًا يَبِيعُ دِينَهُ بِعَرَضٍ مِنْ الدُّنْيَا . ( مسلم )
অর্থঃ অন্ধকার রাতের ন্যায় ফিতনা আসার আগেই অধিকহারে সৎকাজ কর। তখন কোন ব্যক্তি সকালে মুমিন হবে আবার বিকালে সে কাফের, আবার সন্ধ্যাকালে মুমিন থাকবে আবার সকালে কাফের হয়ে যাবে। [মুসলিম : ১১৮]
(৯) বিদআতপন্থী শরীয়ত সংস্কারের দাবীদার
বিদআতপন্থী স্বীয় বিদআতের মাধ্যমে একথা বুঝাতে চায় যে, দ্বীন অসম্পূর্ণ ছিল। সে দ্বীনকে পরিপূর্ণ করেছে। পক্ষান্তরে আল্লাহ্ তা‘আলা দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন।
আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
اَلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكَمْ نَعْمَتِيْ وَ رَضِيْتُ لَكُمْ الإِسْلامَ دِيْنًا . ( المائدة : 3)
অর্থঃ আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, আমার নিয়ামতকে সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম। [মায়েদা : ৩]
আল্লাহ্ তা‘আলা দ্বীনসহ সকল বিষয় কুরআনে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتاَبَ تِبْيَانًا لِّكُلِّ شَئْْ وَهُدًى وَرَحْمَةً وَبُشْرَى لِلْمُسْلِمِينَ . ( النحل : 89)
অর্থঃ আমি আপনার উপর কুরআন নাযিল করেছি। যাতে সকল কিছুর বর্ণনা রয়েছে এবং তা হেদায়াত, রহমত ও সুসংবাদ মুসলমানদের জন্য। [নাহল : ৮৯]
(১০) বিদআতপন্থীর নিকট হক ও বাতিল মিশ্রিত হয়ে যায়
বিদআতপন্থীর নিকটে হক ও বাতিল উভয়টা মিশ্রিত হয়ে যায়। সে এতদুভয়ের মাঝে কোন পার্থক্য করতে পারে না। হক ও বাতেলের মাঝে পার্থক্য করার ইল্ম আল্লাহ্ প্রদত্ত একটি নূর, তা তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে দান করেন। এছাড়াও বিদআতপন্থী তাকওয়া বঞ্চিত হয়, যা মানুষকে হকের দিকে পৌঁছে দেয়।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
ياَاَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُواْ إِن تَتَّقُواْ اللهَ يَجْعَل لَّكُمْ فُرْقَانًا ويُكَفِرْعَنْكُم سَيِئاَتِكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللهُ ذُو الْفَضْلِ الَظِيمِ . ( الأنفال : 29)
অর্থঃ হে মুমিনগণ! তোমরা যদি আল্লাহ্কে ভয় কর তবে তিনি তোমাদেরকে ন্যায়-অন্যায় পার্থক্য করার একটি মানদন্ড ও শক্তিদান করবেন আর তোমাদের দোষক্রটি তোমাদের হতে দূর করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ্ বড় অনুগ্রহশীল ও মঙ্গলময়। [আনফাল : ২৯]
(১১) বিদআত প্রবর্তক নিজ গুনাহ্ ও অনুসারীদের গুনাহ বহন করে
আবু হুরাইরা (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنْ الْأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلَالَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنْ الْإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا . ( مسلم )
অর্থঃ যে ব্যক্তি কোন হেদায়াতের দিকে আহবান করবে তাকে তার অনুসারীদের সাওয়াব না কমিয়ে তাদের সমান সাওয়াব দেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি কোন গোমরাহী বা অন্যায়ের দিকে আহবান করবে তাকে তার অনুসারীদের গুনাহ না কমিয়ে তাদের সমান গুনাহ দেয়া হবে। [মুসলিম :২৬৭৪]
(১২) বিদআতপন্থী লানত প্রাপ্ত
আনাস (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় বিদআত প্রচারকারীর ব্যাপারে বলেনঃ
مَنْ أَحْدَثَ فِيهَا حَدَثًا فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللَّهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ لَا يَقْبَلُ اللَّهُ مِنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَرْفًا وَلَا عَدْلًا . ( متفق عليه )
অর্থঃ যে ব্যক্তি কোথাও কোন বিদআতের প্রচলন করবে অথবা কোন বিদআতপন্থীকে আশ্রয় দেবে তার উপর আল্লাহর, ফিরিশতাগণের ও সকল মানুষের লানত। আল্লাহ তার কোন নফল বা ফরজ আমল গ্রহণ করবেন না। [বুখারী : ৭৩০৬ ও মুসলিম : ১৩৬৬]
ইমাম শাতেবী রহ. বলেন, এ হাদীস ব্যাপকভাবে সকল প্রকার শরীয়ত বিরোধী কাজ ও বিদআতকে অন্তর্ভুক্ত করে। [আল-ইতিসাম- শাতেবী : ১/২৪৬]
(১৩) বিদআতপন্থী কিয়ামতের দিন হাউজে কাউসারের পানি পাবে না
সাহ্ল ইবনে সা’দ (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
أَناَ فَرْطُكُمْ عَلَى الحَْوْضِ مَنْ وَرَدَ شَرِبَ وَ مَنْ شَرِبَ لَمْ يَظْمَأْ أَبَدًا وَلَيَرُدَّنَّ عَليَّ أَقْوَامُ أَعْرِفُهُمْ وَيَعْرِفُوْنِيْ، ثُمَّ يُحَالُ بَيْنِيْ وَ بَيْنَهُمْ . ( متفق عليه )
অর্থঃ আমি তোমাদের আগেই হাউজে কাউসারে থাকব। যে পানি পান করতে চাইবে আমি তাকে পান করাব, আর যে পান করবে সে কখনো পিপাসিত হবে না। আমার সামনে এক জামাতকে আনা হবে তারা আমাকে চিনবে আমিও তাদের চিনব কিন্তু পরক্ষণেই তাদের মাঝে ও আমার মাঝে অন্তরায় সৃষ্টি হয়ে যাবে। [বুখারী : ৭/২৬৪ ও মুসলিম : ২২৯০]
অন্য রেওয়ায়াতে আছে, অতঃপর আমি বলব তারা আমার দলের। বলা হবে আপনি জানেন না, তারা আপনার অবর্তমানে কি বিদআত সৃষ্টি করেছে। তখন আমি বলব, দূর হও, দূর হও, যারা আমার পর দ্বীনের মাঝে বিদআত সৃষ্টি করেছ। [বুখারী : ৬৫৮৩]
আব্দুল্লাহ্ (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বলবেনঃ
يَارَبَِّّ أَصْحَابِيْ أَصْحَابِيْ فَيُقَالُ : إِنَّكَ لا تَدْرِيْ مَا أَحْدَثُوْا بَعْدَكَ . ( متفق عليه )
অর্থঃ হে রব! তারা আমার দল, তারা আমার দল! জবাব দেয়া হবে, আপনি জানেন না তারা আপনার পর কি নতুন জিনিস সৃষ্টি করেছে। [বুখারী : ৬৫৮৫ ও মুসলিম : ২২৯৫]
আসমা বিনতে আবি বকর (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
إِنِّي عَلَى الْحَوْضِ حَتَّى أَنْظُرَ مَنْ يَرِدُ عَلَيَّ مِنْكُمْ وَسَيُؤْخَذُ نَاسٌ دُونِي فَأَقُولُ يَا رَبِّ مِنِّي وَمِنْ أُمَّتِي فَيُقَالُ هَلْ شَعَرْتَ مَا عَمِلُوا بَعْدَكَ وَاللَّهِ مَا بَرِحُوا يَرْجِعُونَ عَلَى أَعْقَابِهِمْ فَكَانَ ابْنُ أَبِي مُلَيْكَةَ يَقُولُ اللَّهُمَّ إِنَّا نَعُوذُ بِكَ أَنْ نَرْجِعَ عَلَى أَعْقَابِنَا أَوْ نُفْتَنَ عَنْ دِينِنَا . ( متفق عليه )
অর্থঃ আমি হাউজে কাউছারের পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখব তোমাদের থেকে কারা কারা আসছে। কিন্তু একদল লোককে আমার কাছে আসতে দেয়া হচ্ছে না, তখন আমি বলবঃ হে রব! তারা আমার দলের, তারা আমার উম্মত। তখন বলা হবেঃ আপনি কি জানেন তারা আপনার পর কোন নতুন জিনিস এর উপর আমল করেছে? আল্লাহর কসম! তারা আপনার দ্বীনকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এজন্যে ইবনু আবি মুলাইকা রহ. দুআ করতেন, হে আল্লাহ! পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাওয়া ও দ্বীনের মাঝে ফিতনা সৃষ্টি করা থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। [বুখারী : ৬৫৯৩ ও মুসলিম : ২২৯৩]
(১৪) বিদআতপন্থী আল্লাহর জিকির হতে দূরে থাকে
বিদআতপন্থী আল্লাহর জিকির হতে দূরে থাকে। কেননা আল্লাহ্ তা‘আলা স্বীয় কিতাবে ও রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদীসে আমাদের অনেক জিকির ও দুআ শিক্ষা দিয়েছেন। কিছু দুআ বা জিকির নির্ধারিত আছে যেমন ফরজ সালাতের পর দুআ, সকাল-সন্ধ্যার তাসবীহ, ঘুমানোর সময়কার দুআ ও ঘুম হতে জাগ্রত হওয়ার পরের দুআ ইত্যাদি। আবার কিছু জিকির বা দুআ এমন আছে যার কোন নির্ধারিত সময় বা স্থান নেই।
আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
يَا أيُّها الَّذِينَ ءَامَنُوا اذكُرُوا اللهَ ذِكْرًا كَثِيْرًا وَسَبِحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلاً .( الأحزاب : 41-42)
অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! তোমরা অধিক পরিমাণে আল্লাহ্র জিকির কর এবং সকাল সন্ধ্যায় আল্লাহ্র পবিত্রতা বর্ণনা কর। [আহযাব : ৪১-৪২]
(১৫) বিদআতপন্থী সত্যকে নিজের ও অনুসারীদের মাঝে গোপন রাখে
বিদআতপন্থী সত্য থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখে ও অনুসারীদের কাছেও তা গোপন রাখে। আল্লাহ্ তা‘আলা এ ধরনের লোকদের প্রতি লা’নত করেছেন।
আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنْزَلْنَا مِنَ الْبَيَّناَتِ وَالْهُدَى مِنْ بَعْدِ مَا بَيَّنَاهُ لِلنَّاسِ فِى الْكَتَابِ أُولَئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللهُ وَيَلْعَنُمُمُ اللّعِنُونَ . ( البقرة : 159)
অর্থঃ আমি যেসব উজ্জ্বল নিদর্শন ও পথ নির্দেশ অবতীর্ণ করেছি, আমি ঐ গুলোকে সর্ব সাধারণের নিকট প্রকাশ করার পরও যারা ঐ সব বিষয়কে গোপন করে, আল্লাহ তাদের লা’নত করেন এবং লা’নতকারীগণও তাদেরকে লা’নত করেন। [বাকারা : ১৫৯]
(১৬) ইসলামে বিদআতপন্থীর আমল ঘৃণিত
যখন বিদআতপন্থী কোন বিদআতী আমল করে তখন ইসলামের দুশমনদের কাছে ইসলাম ঠাট্টার বস্ত্ত হয়ে দাঁড়ায়। অথচ ইসলাম এ সকল বিদআত হতে পবিত্র।
(১৭) বিদআতপন্থী উম্মতকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে
বিদআতপন্থী ব্যক্তি উম্মতকে বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত করে। কেননা বিদআতপন্থী নিজ বিদআত দ্বারা একটি দল তৈরী করে, যা মূল দল থেকে আলাদা হয়ে যায়। এ ভাবে উম্মতে মুসলিমার মাঝে অনেক দলের সৃষ্টি হয়।
আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
إِنَّ الَّذِين فَرَّقُواْ دِينَهُمْ وَكَانُواْ شِيَعًا لَّسْتَ مِنُهُمْ فِى شَيء إِنَّمَآ أَمْرُهُمْ إِلَى اللهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُمْ بِمَا كَانُوأ يَفْعَلُوَن . ( الأنعام : 159)
অর্থঃ নিশ্চয়ই যারা নিজেদের দ্বীনের মধ্যে নানা মতভেদ সৃষ্টি করে তাকে খন্ড-বিখন্ড করেছে এবং বিভিন্ন দলে, উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, তাদের সাথে কোন ব্যাপারে তোমার কোন সম্পর্ক নেই। তাদের বিষয়টি নিশ্চয়ই আল্লাহর তত্ত্বাবধানে রয়েছে, পরিশেষে তিনিই তাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে তাদের অবহিত করবেন। [আনআম : ১৫৯]
(১৮) উম্মতে মুসলিমাকে বিদআত হতে বাঁচানোর লক্ষ্যে প্রকাশ্য বিদআতপন্থীর (গীবত) সমালোচনা করা বৈধ
প্রকাশ্য ফাসেকের চেয়ে প্রকাশ্য বিদআতী অধিক ভয়ানক। কুরআন ও হাদীসের বর্ণনা মতে গীবত করা হারাম। কিন্তু ছয় কারণে শরীয়তে গীবতকে বৈধ করা হয়েছে। [শরহে মুসলিম-নববী (র) : ১৬/১৪২]
(ক) অত্যাচারীত হলে, (খ) গর্হিত কাজ দূরীকরণে সাহায্য প্রার্থনা কালে, (গ) ফতোয়া প্রার্থনার ক্ষেত্রে, (ঘ) মুসলিমদেরকে অনিষ্ট হতে বাঁচাতে, (ঙ) সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ও (চ) প্রকাশ্য বিদআতপন্থীর বেদআতের বর্ণনা দিতে গিয়ে। [ফতহুল বারী : ১০/৪৭১]
(১৯) বিদআতপন্থী প্রবৃত্তির অনুসারী ও শরীয়ত অস্বীকারকারী হয় [আল-ইতিসাম- শাতেবী : ১/৬১]
(২০) বিদআতপন্থী নিজেকে শরীয়ত প্রবর্তকের সমকক্ষ বা সাদৃশ বানিয়ে নেয়
বিদআতপন্থী নিজেকে শরীয়ত প্রবর্তকের সমকক্ষ বা সাদৃশ বানিয়ে নেয়। কেননা আল্লাহ্ তা‘আলা শরীয়তকে নিজেই বানিয়েছেন এবং বান্দাদেরকে তা অনুসরণ করে চলার আদেশ করেছেন। ঠিক তদ্রূপ বিদআত প্রবর্তক নিজে কোন আমল নতুন ভাবে উদ্ভাবন করে তদানুযায়ী মানুষকে আমল করতে উৎসাহিত করে। [আল-ইতিসাম- শাতেবী : ১/৬১-৭০]
আল্লাহ্ তা‘আলা আমাকে ও সকল মুসলিম ভাইকে দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষমা ও সুস্থতা দান করুন ও বিদআত থেকে বাঁচিয়ে রাখুন। শান্তি, রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হোক আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), তাঁর পরিবার-পরিজন, সকল সাহাবায়ে কেরাম ও কিয়ামত পযর্ন্ত আগত তাঁর সকল একনিষ্ঠ অনুসারীগণের উপর।
আমিন
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন