মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
সমকালীন প্রচলিত অসংখ্য বিদআত রয়েছে। তার কিছু নিম্নে তুলে ধরা হলঃ
প্রথমঃ মিলাদ মাহফিল
মিলাদ মাহফিল করা বিদআত। হিজরী চতুর্থ শতাব্দীতে উবায়দীরা এ বিদআতের প্রবর্তন করে। বর্তমান ও পুর্বেকার সকল উলামায়ে কেরাম একে বাতিল বলে আখ্যায়িত করেছেন। যারা এ ধরণের বিদআতের প্রবর্তন করেছে ও আমল করেছে, উলামায়ে কেরাম তাদের প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাই মিলাদ মাহফিল করা বৈধ নয়। কারণঃ
১ম কারণঃ যে সকল কুসংস্কারের ব্যাপারে শরীয়তে কোন প্রমাণ নেই; তার অন্যতম হল মিলাদ মাহফিল। কেননা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এ প্রসঙ্গে কোন বক্তব্য, আমল বা সমর্থন পাওয়া যায় না।
অর্থঃ অবশ্যই আল্লাহর রাসূলের জীবনের মাঝে রয়েছে উত্তম আদর্শ ঐ ব্যক্তির জন্য, যে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি ও কিয়ামত দিবসে (মুক্তির) আশা করে। আর অধিক পরিমাণে আল্লাহকে স্মরণ করে। [আহযাবঃ ২১]
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ . ( بخاري و مسلم )
অর্থঃ যে আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু প্রবর্তন করে যা এর অন্তর্ভূক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত। [বুখারী : ২৬৯৭ ও মুসলিম : ১৭১৮]
২য় কারণঃ খোলাফায়ে রাশেদীন এবং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অন্যান্য সাহাবীগণ মিলাদ মাহফিল করেননি। এমন কি তার দাওয়াতও দেননি, অথচ তারাই হচ্ছেন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পর সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত।
খুলাফায়ে রাশেদীনের মর্যাদা সম্পর্কে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
অর্থঃ তোমাদের জন্য আবশ্যক আমার ও আমার পরবর্তী হেদায়াত প্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাতকে এমনভাবে আঁকড়ে ধরা যেভাবে দাঁত দিয়ে কোন জিনিস দৃঢ়ভাবে কামড়ে ধরা হয়। আর শরীয়তে নিত্য নতুন জিনিস আবিস্কার করা হতে বেঁচে থাক। কেননা সকল নবসৃষ্ট বস্ত্তই বিদআত। আর প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহী। [আবু দাউদ:৪৬০৭]
৩য় কারণঃ মীলাদ মাহফিল করা বক্রতা সৃষ্টিকারী পথভ্রষ্টদের প্রথা। এ প্রথাকে সর্ব প্রথম ফাতেমী ও উবাইদী গোত্রের লোকেরা হিজরী চতুর্থ শতাব্দীতে প্রবর্তন করে। তারা নিজেদেরকে ফাতেমা (রা) এর সাথে সম্পৃক্ত করে, যা অন্যায়, অযেŠক্তিক ও অপবাদ ব্যতীত আর কিছুই নয়। মূলতঃ তারা ইহুদী। কেউ বলেন, তারা অগ্নিপুজক, আবার কেউ বলেন, তারা মুলহিদীন বা নাস্তিক। তাদের প্রথম ব্যক্তি হল, মুইজুদ্দীন ওবায়দী। সে পাশ্চাত্যের অধিবাসী। সেখান থেকে সে ৩৬১ হিজরীর শাওয়াল মাসে মিশরে আগমন করে এবং ৩৬২ হিজরী রমজান মাস পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে। [. বিদায়া ওয়ান নিহায়া-ইবনে কাসীর:১১/২৭২-৭৩]
এখন কোন বুদ্ধিমানের জন্য এটা কি উচিত হবে যে, সে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুন্নাত ছেড়ে একজন ইহুদীর অনুসরণ করবে? (আদৌ নয়)।
৪র্থ কারণঃ আল্লাহ্ তা‘আলা এ দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন।
অর্থঃ আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পরিপূর্ণ করে দিলাম ও আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম। [মায়েদা: ৩]
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরিপূর্ণভাবে দ্বীনের প্রচার করেছেন। জান্নাতে পৌঁছার সকল পথ ও জাহান্নাম হতে বাঁচার সকল উপায় উম্মতের সামনে বর্ণনা করে দিয়েছেন।
একথা সকলের জানা যে, আমাদের রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকল নবীগণের সর্দার এবং তিনি সর্বশেষ নবী, পরিপূর্ণভাবে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছিয়েছেন এবং আল্লাহর বান্দাদের কল্যাণ কামনা করেছেন। সুতরাং যদি মীলাদ মাহফিল দ্বীনের অংশ হতো আর আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের কারণ হতো, তাহলে অবশ্যই তিনি তা উম্মতের জন্য বর্ণনা করতেন বা তাঁর জীবনে একবার হলেও আমল করে দেখাতেন।
অর্থঃ আল্লাহ যত নবী প্রেরণ করেছেন তাদের সকলের উপর দায়িত্ব ছিল উম্মতকে ভাল কাজের দিক নির্দেশনা দেয়া ও অন্যায় কাজ হতে ভীতি প্রদর্শন করা। [মুসলিম:১৮৪৪]
৫ম কারণঃ মিলাদ মাহফিলের মত বিদআত আমলের আবিস্কারের মাধ্যমে এ কথা প্রতীয়মাণ হয় যে, আল্লাহ তা‘আলা দ্বীনকে এ উম্মতের জন্য পরিপূর্ণ করেননি, তাই দ্বীনের পরিপূরক কিছু আবিস্কারের প্রয়োজন হয়েছে। তেমনি একথাও বুঝা যায় যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মতের জন্য কল্যাণকর সকল বিষয়ের তাবলীগ বা প্রচার করেননি। যে কারণে পরবর্তীতে আল্লাহর অনুমোদন ব্যতিরেকে শরীয়তে নতুন কিছু আবিস্কারের প্রয়োজন দেখা দেয়। এর মাধ্যমে তারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে চায়। এটা চুড়ান্ত পর্যায়ের অন্যায় ও ভুল। এটা আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপর অভিযোগ। অথচ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর দ্বীনকে পরিপূর্ণ ও বান্দাদের জন্য সকল নিয়ামত সস্পূর্ণ করে দিয়েছেন।
৬ষ্ঠ কারণঃ এ উম্মতের বড় বড় আলেমগণ কুরআন ও হাদীসের ভিত্তিতে মীলাদ মাহফিলের প্রতি অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তারা বিদআত পরিহার করতে ও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অনুসরণ করতে বলেন এবং কথা, কাজ ও আমলে তাঁর বিরোধিতা করা হতে সতর্ক করেন।
৭ম কারণঃ মীলাদ মাহফিলের দ্বারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ভালবাসা অর্জিত হয় না বরং তাঁর অনুসরণ ও সুন্নাত অনুযায়ী আমলের দ্বারা তা অর্জিত হয়।
অর্থঃ )হে নবী( আপনি বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহর ভালবাসার দাবি কর, তাহলে আমার অনুসরণ কর। ফলে আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন এবং তোমাদের সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু। [আলে-ইমরান: ৩১]
৮ম কারণঃ মীলাদ মাহফিল, জসনে জুলুস ও ঈদে মিলাদুন্নবী ইহুদী ও খ্রীষ্টানদের উৎসবের সাদৃশ। আর ইহুদী ও খ্রীষ্টানদের সাদৃশ্য অবলম্বন করতে ও তাদের অনুসরণ করতে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন। [যাদুল মায়াদ-ইবনে কাইয়্যিম (র): ১/৫৯]
৯ম কারণঃ সারাদেশে মিলাদ মাহফিলে অধিক হারে লোক সমাগম দ্বারা জ্ঞানী লোকেরা কখনও প্রভাবিত হয় না। কেননা সঠিক ও সত্য হওয়াটা মানুষের আধিক্যতা দ্বারা বুঝা যায় না বরং শরীয়তের দলিলের মাধ্যমে বুঝা যায়।
অর্থঃ আমার বান্দাদের কম সংখ্যকই কৃতজ্ঞ। [সাবা: ১৩]
১০ম কারণঃ শরয়ী নীতিমালার যে সকল ব্যাপারে মানুষ বাক-বিতন্ডা ও ঝগড়া করে, সে সকল বিষয়ে কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাতে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুসরণ করা উচিৎ।
অর্থঃ হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের অনুগত হও এবং তোমাদের নেতৃবৃন্দের আনুগত্য কর। অতঃপর যদি তোমাদের মধ্যে কোন বিষয়ে মত বিরোধ দেখা দেয় তবে আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যাবর্তিত হও যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। এটাই কল্যাণকর ও শ্রেষ্ঠতর। [নিসা: ৫৯]
অর্থঃ তোমরা যে বিষয়েই মতভেদ কর না কেন ওর মীমাংসাতো আল্লাহরই নিকট। [আশ-শুরা: ১০]
নিঃসন্দেহে যে ব্যক্তি মীলাদ মাহফিলের ব্যাপারে আল্লাহ্ ও রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দিক নির্দেশনার প্রতি ধাবিত হবে, সে জানতে পারবে, আল্লাহ তাআলা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন।
অর্থঃ রাসূল তোমাদের কাছে যা নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ কর এবং যা হতে নিষেধ করেছেন তা হতে বিরত থাক। [হাশরঃ ৭]
আল্লাহ তাআলা দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ ও পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মীলাদ মাহফিলের জন্য কাউকে নির্দেশ দেননি, তিনি এবং তাঁর সাহাবীগণও তা কখনও করেননি। সুতরাং মীলাদ মাহফিল দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং তা নব্যসৃষ্ট বিদআত।
১১তম কারণঃ সোমবার সিয়াম পালন শরীয়ত সিদ্ধ। কেননা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সোমবারের সিয়াম সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেন, ذلِكَ يَوْمٍ وُلِدْتُ فِيْهِ، وَيَوْمَ بُعِثْتُ أَوْ أُنْزِلَ عَلي فِيْه . ( مسلم ) অর্থঃ এটা এমন দিন যে দিন আমি জন্ম গ্রহণ করেছি, আমি নবুওয়াত প্রাপ্ত হয়েছি অথবা আমার প্রতি সেদিন কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। [মুসলিম :]
সুতরাং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আদর্শ হল সোমবার সিয়াম পালন করা, তবে এ উপলক্ষে মীলাদ মাহফিল করা বৈধ নয়।
১২তম কারণঃ ঈদে মীলাদুন্নবী উদযাপন করা গর্হিত ও নিষিদ্ধ বিষয়াবলীর অন্যতম। আর তা বুঝা যায় এ ধরণের মাহফিলে উপস্থিত হওয়া দ্বারা। এ ধরণের গর্হিত কাজের কিছু উদাহরণ নিম্নে উল্লেখ করা হল।
১। মীলাদে অংশগ্রহণকারীদের রচিত অধিকাংশ কবিতা ও স্ত্ততিমূলক বাক্যগুলোতে শিরকী ও বাড়াবাড়িমূলক কথা পাওয়া যায়। অথচ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর প্রশংসা করার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করে বলেন,
অর্থঃ তোমরা আমার প্রশংসার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করো না, যেমন খ্রীষ্টানরা ইবনে মারইয়ামের প্রশংসার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করেছিল। নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর বান্দা। সুতরাং তোমরা বল আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। [বুখারী : ৩৪৪৫]
২। মীলাদ মাহফিলে অনেক ক্ষেত্রে হারাম কাজ হয়ে থাকে। যেমন নারী-পুরুষ মিলেমিশে বসা, গান-বাদ্য করা, মদ-গাজা সেবন ইত্যাদি। আর কখনও কখনও এতে শিরকে আকবরও সংঘটিত হয়। যেমন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে বা অন্য কোন অলীর কাছে সাহায্য চাওয়া, আল্লাহর কিতাবের অসম্মান করা, কুরআনের মজলিসে ধূমপান করা ইত্যাদি। মীলাদের দিনগুলোতে উচ্চস্বরে মসজিদে জিকির করা ও সুর করে শরীয়ত পরিপন্থী কবিতা আবৃত্তি করা। যা হক্কানী আলেমগণের ঐকমত্যে শরীয়ত সম্মত নয়।
৩। মীলাদ মাহফিলে আরো কিছু গর্হিত কাজ সংঘটিত হয়। যেমন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্মের ঘটনা আলোচনা কালে তাঁর সম্মানার্থে দাঁড়ান এই বিশ্বাস নিয়ে যে, তিনি এ মীলাদ মাহফিলে উপস্থিত হয়েছেন। তাই তাঁর অভ্যর্থনার জন্য দাঁড়িয়ে যায়। আর এ সবই চরম ভ্রান্তি ও মূর্খতা, যা নিন্দিত। কেননা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিয়ামতের পূর্বে কবর থেকে বের হবেন না। কোন লোকের সাথে সাক্ষাত করবেন না, কোন সম্মেলনে উপস্থিত হবেন না। বরং তিনি কিয়ামত পর্যন্ত নিজ কবরে অবস্থান করবেন। আর তাঁর রুহ ইল্লিয়্যিনের সর্বোচ্চ স্তরে তাঁর প্রভুর কাছে সম্মানিত স্থানে রয়েছে।
অর্থঃ আমি কিয়ামতের দিন আদম সন্তানের নেতা, সর্ব প্রথম কবর থেকে উত্থিত ব্যক্তি, সর্বপ্রথম সুপারিশকারী এবং সর্বপ্রথম আমার সুপারিশ গৃহিত হবে। [মুসলিম : ২২৭৮]
উক্ত আয়াত, হাদীস এবং এ জাতীয় আয়াত ও হাদীসসমূহ থেকে বুঝে আসে যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অন্যান্য মৃতদের ন্যায় মৃত। তিনি কিয়ামতের দিন কবর থেকে উত্থিত হবেন।
আব্দুল আযীয ইবনে আব্দুল্লাহ্ ইবনে বায বলেন, এ বিষয়ে সমস্ত আলেমের ঐকমত্য রয়েছে, এতে কারো মতবিরোধ নেই। [আত-তাহযীর মিনাল বিদআঃ ১৪]
দ্বিতীয়ঃ রজব মাসের প্রথম জুমার রাতে মীলাদ মাহফিল করা বিদআত
রজব মাসের প্রথম জুমার রাতে মাহফিল করা বিদআত ও গর্হিত কাজ। ইমাম আবু বকর তরতুশী উল্লেখ করেন, আবু মুহাম্মাদ আল মাকদেসী রহ. তাকে অবহিত করেছেন যে, রজব মাসে এ মীলাদ মাহফিল বায়তুল মুকাদ্দাসে ৪৮০ হিঃ সনে শুরু হয়। ইতিপূর্বে এ মাহফিল সম্পর্কে কিছু শুনিনি, দেখিওনি। [আল-হাওয়াদেস ওয়াল বিদআতঃ ২৬৭]
ইমাম আবু শামা রহ. বলেন, সালাতে রাগায়েব যা মানুষের মাঝে এখনও প্রসিদ্ধ হয়ে গেছে, তা রজব মাসের প্রথম জুমার রাতে মাগরিব ও ইশার সালাতের মধ্যবর্তী সময়ে পড়া হয়। [কিতাবুল বায়েস আলা ইনকারিল বিদয়ে ওয়াল হাওয়াদেস : ২৩৮]
ইবনে রজব রহ. বলেন, রজব মাসের সাথে নির্দিষ্ট করে কোন সালাত আদায় করা সঠিক নয়। রজব মাসের প্রথম জুমার রাতে সালাতে রাগায়েব সংক্রান্ত বর্ণিত সকল হাদীস মিথ্যা ও অশুদ্ধ। আর জমহুর আলেমের মতে এ সালাত বিদআত। [লাতায়েফুল মাআরিফ ফিমা লি মাওয়াসিমিল আম মিনাল ওযায়েফ :২২৮]
হাফেয ইবনে হাজার রহ. বলেন, রজব মাসের ফযীলত, তাতে সিয়াম পালন এবং এর বিশেষ কোন রাতে সালাত আদায় সম্পর্কে কোন বিশুদ্ধ হাদীস নেই। [তিবইয়ানুল উযব বিমা ওয়ারাদা ফী শাহ্রি রজব : ২৩]
অতঃপর তিনি বলেন, যে সকল হাদীসে রজব মাসের ফযীলত বা তাতে সিয়াম পালনের ফযীলত সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে, তা দু‘ প্রকার। ১. যয়ীফ ও ২. মওজু। [প্রাগুক্তঃ ২৩]
অতঃপর তিনি সালাতে রগায়েবের হাদীস উল্লেখ করেন। তাতে রয়েছে রজবের প্রথম বৃহস্পতিবার সিয়াম পালন, এরপর মাগরিব ও ইশার মাঝখানে বার রাকাত সালাত আদায়, প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহা ১বার, সূরা ক্বদর ৩ বার, ১২বার সূরা ইখলাছ পড়া এবং প্রত্যেক দু‘রাকাত পর পর সালাম ফিরানো। এরপর তিনি তাছবীহ, ইস্তেগফার, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রতি দরূদ পাঠ। অতঃপর তিনি উল্লেখ করেন, এ হাদীসটি মওজু এবং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর মিথ্যারোপ মাত্র। তিনি বলেন, লোকজনের নিকট এ ইবাদতকে বড় ফজিলতপূর্ণ করে দেখানো হয়, অথচ এ সালাতে সাধারণতঃ তারাই আগ্রহী হয়, যারা নিয়মিত সালাতের জামাতে উপস্থিত হয় না। [তিবইয়ানুল উযব বিমা ওয়ারাদা ফি শাহরে রজব : ৫৪পৃ:]
ইমাম ইবনে সালাহ রহ. সালাতে রাগায়েব সম্পর্কে বলেন, এ হাদীসটি মওজু। এটা হিজরী ১৪শ বছর পর নতুন করে আবিষ্কার করা হয়েছে। [কিতাবুল বায়েস আলা ইনকারিল বিদয়ে ওয়াল হাওয়াদেস : ১৪৫পৃ:]
ইমাম আল-ইজ্জ বিন আবদুস সালাম রহ. ৬৩৭ হিজরী সনে এক ফতোয়ায় লিখেন, সালাতে রাগায়েব বিদআত ও মুনকার এবং এ সংক্রান্ত হাদীস রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর মিথ্যারোপ ছাড়া কিছুই নয়। [কিতাবুল বায়েস আলা ইনকারিল বিদয়ে ওয়াল হাওয়াদেস : ১৪৯পৃ:] পরিশেষে তিনি ইমাম আবু শামার রহ. কথা সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরে সালাতে রাগায়েব বাতিল আখ্যায়িত করেন। তিনি উক্ত ইবাদতকে নেক আমল বিনষ্টকারী হিসেবে উল্লেখ করে নিম্মোক্ত বর্ণনা পেশ করেন।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, এ সালাত বিদআত। সর্বাধিক জ্ঞানী আলেম সমাজ এবং আইম্মাতুল মুসলিমীন যথাঃ সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন ও অন্যান্য আলেমগণ যারা দ্বীনের অনেক কিতাব লিপিবদ্ধ করেছেন এবং অতি উৎসাহের সাথে মানুষদের দ্বীনের বিধি-বিধান, ফরজ ও সুন্নাত শিক্ষা দিয়েছেন, তাদের কারো থেকে এ ধরনের কোন বর্ণনা পাওয়া যায়নি। এ সালাত সম্পর্কে কোন বর্ণনা তাদের কিতাবে লিপিবদ্ধ হয়নি এবং তারা কোন মজলিশে এধরনের বক্তব্য দেননি। এটা যদি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাত হত, তাহলে ওলামায়ে কেরামের নিকট তা অজ্ঞাত থাকত না।
এ সালাত তিনটি কারণে শরীয়ত পরিপন্থী।
প্রথম কারণঃ এ সালাত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসের পরিপন্থী। হাদীসটি হচ্ছেঃ
অর্থঃ তোমরা শুধু জুমার রাতকে ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট করো না এবং শুধু জুমার দিনকে সিয়ামের জন্য নির্দিষ্ট করো না। তবে হ্যাঁ; যদি কেউ ধারাবাহিক ভাবে সিয়াম পালন করতে থাকে তা স্বতন্ত্র কথা। [বুখারী : ১৯৮৫ ও মুসলিম : ১১৪৪]
সুতরাং এ হাদীসের ভিত্তিতে অন্যান্য রাতকে বাদ দিয়ে শুধু জুমার রাতকে সালাতের জন্য নির্দিষ্ট করা জায়েয নেই। [কিতাবুল বায়েস আলা ইনকারিল বিদয়ে ওয়াল হাওয়াদেস- ইমাম আবু শামা : ১৫৬পৃ:] এটা রজব মাসের প্রথম জুমার রাতের ব্যাপারেও প্রযোজ্য।
দ্বিতীয় কারণঃ রজব ও শাবান মাসে বিশেষ সালাত আদায় বিদআত। এ ব্যাপারে এমন সব কথা বলা হয়, যা হাদীসে নেই। তাই এর দ্বারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর মিথ্যারোপ করা হয়। তেমনি এ রাতে আমলের প্রতিদান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত বলার মাধ্যমে আল্লাহর উপরও মিথ্যারোপ করা হয়। অথচ এ ব্যাপারে তিনি কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি। পক্ষান্তরে যে সকল ব্যাপারে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপর মিথ্যারোপ করা হয়, তা মিথ্যাজ্ঞান করা, পরিহার করা, নিকৃষ্ট মনে করা এবং জনগণের মাঝে এ সম্পর্কে ঘৃণা ছড়ানো একান্ত জরুরী। কেননা এ সবের সাথে একাত্মতার কারণে অনেক বিশৃঃখলা সৃষ্টি হয়।
১ম বিশৃংখলাঃ এ সকল ইবাদতের ফযীলত এবং তা ছেড়ে দেয়ার ক্ষতি সম্পর্কে যা কিছু মানুষের কানে আসে তার উপর নির্ভর করা। ফলে অধিকাংশ মানুষ দু‘টি কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে।
১। ফরজসমূহের ব্যাপারে শিথিলতা।
২। পাপের মধ্যে লিপ্ত হয়ে পড়া।
মানুষ এ রাতের অপেক্ষায় থাকে ও এতে সালাত আদায় করে মনে করে যে, বিগত দিনে যা ছেড়ে দিয়েছে এসব আমল তার পরিপূরক হয়ে যাবে এবং যে পাপে তারা লিপ্ত ছিল তা মাফ হয়ে যাবে। সালাতে রাগায়েবের ব্যাপারে হাদীস রচনাকারীরা ধারণা করেছিল যে,‘‘মানুষ অধিক হারে সৎকাজে অনুগামী হবে’’। কিন্তু বাস্তবে মানুষ অধিক হারে পাপ ও নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েছে।
২য় বিশৃঃখলাঃ মানুষকে পথভ্রষ্ট করার জন্য-বিদআতপন্থীরা যে সকল বিদআত কাজের প্রচলন করে; যখন তারা দেখে তাতে মানুষ লিপ্ত হয়েছে ও সে বিদআতগুলো প্রচলিত হয়েছে, তখন তারা মানুষদেরকে এক বিদআত থেকে আরেক বিদআতের দিকে পথ দেখায়।
৩য় বিশৃংখলাঃ যখন কোন আলেম বিদআতী কাজ করে তখন সাধারণ মানুষ ধারণা করে, এটা সুন্নাত। এ ক্ষেত্রে ঐ আলেম স্বীয় কাজের মাধ্যমে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর মিথ্যারোপ করে। অধিকাংশ মানুষ এ কারণেই বিদআতে লিপ্ত হয়ে পড়ে।
তৃতীয় কারণঃ এ বিদআতী সালাত বিভিন্ন কারণে শরয়ী সালাতের বিপরীত হয়।
একঃ এ সালাতে সিজদার সংখ্যা, তাসবীহ্র সংখ্যা, প্রত্যেক রাকাআতে নির্দিষ্ট সংখ্যায় সূরা ক্বদর ও সূরা ইখলাছ পড়ার মাধ্যমে সালাতের সুন্নাত পদ্ধতির বিরোধিতা করা হয় ।
দুইঃ সালাতে অন্তর বিগলিত হওয়া, একাগ্রতার সাথে সালাত আদায় করা, আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় সালাতের জন্য অবসর হওয়া ও কুরআনের অর্থের দিকে লক্ষ্য করে সালাত আদায় করা সুন্নাত। এখানে তা পাওয়া যায় না।
তিনঃ নফল সালাত মসজিদে আদায় করার চেয়ে ঘরে এবং একাকী আদায় করা উত্তম। তবে রমজান মাসে তারাবীহ্র সালাত জামাতের সাথে মসজিদে আদায় করা উত্তম।
চারঃ এ সালাত শেষ করার পর অতিরিক্ত দু‘টি সিজদা আদায় করা, যার প্রকৃত কোন কারণ নেই।
উল্লিখিত দলিল-প্রমাণ, আলেমগণের বক্তব্য এবং ভ্রান্ত হওয়ার কারণ ও বিশৃংখলার প্রকার এ সব থেকে স্পষ্ট বুঝে আসে যে, সালাতে রাগায়েব বিদআত। [কিতাবুল বায়েস আলা ইনকারিল বিদয়ে ওয়াল হাওয়াদেস- ইমাম আবু শামা : ১৫৩-১৯৬পৃ:]
তৃতীয়ঃ ইসরা ও মিরাজের রাতে মীলাদ মাহফিল করা
ইসরা ও মিরাজ আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শনাবলীর অন্যতম। যা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সত্যতা, আল্লাহর কাছে তাঁর উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন হওয়া, আল্লাহর কুদরত এবং তার আরশে অবস্থানের প্রতি ইঙ্গিত বহন করে।
অর্থঃ পবিত্র ও মহিমাময় তিনি যিনি স্বীয় বান্দা (রাসূলুল্লাহ) কে রাতে মসজিদুল হারাম হতে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছিলেন তাকে নির্দশনাবলী দেখাবার জন্য। যার চারপাশ আমি বরকতময় করেছিলাম, তিনিই সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা। [ইসরা : ১]
হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসমানে ভ্রমণ করেছিলেন, তাঁর জন্য আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়েছিল। এ পর্যায়ে তিনি সাত আসমান ভ্রমণ করেন। প্রথমে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছিলেন। অতঃপর আল্লাহ্ তা‘আলার কাছে বারবার যেতে থাকলে ও সহজ করার প্রার্থনা করতে থাকলে আল্লাহ তাআলা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেন। তবে পাঁচ ওয়াক্তের বিনিময়ে পঞ্চাশ ওয়াক্তের সাওয়াব দিবেন। কেননা উম্মতে মুহাম্মাদীর প্রত্যেকটি নেক আমল দশ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। তাই আল্লাহ তাআলার অসংখ্য নিয়ামতের শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। [আত-তাহযীর মিনাল বিদআ : ১৬]
মিরাজের রাতে কোন মীলাদ মাহফিল, শরীয়ত অসমর্থিত কোন প্রকার ইবাদত না করা কয়েকটি কারণে জরুরী।
একঃ কোন রাতে মিরাজ সংঘটিত হয়েছে, তা নির্ধারণের ব্যাপারে কোন বিশুদ্ধ হাদীস নেই। কারো মতে নবুওয়াত প্রাপ্তির ১৫মাস পর, কারো মতে হিজরতের এক বছর পূর্বে রবিউস সানীর ২৭তম রাতে, কারো মতে নবুওয়াত প্রাপ্তির পাঁচ বছর পর, কারো মতে রবিউল আউয়ালের ২৭ তারিখ। [ইমাম নববীর শরহে মুসলিম : ২/২৬৭]
ইমাম আবু শামা রহ. বলেন, কতিপয় ঐতিহাসিকের মতে, ইসরা রজব মাসে হয়েছিল, যা বিজ্ঞজনদের মতে সঠিক নয়। [কিতাবুল হাওয়াদেস ওয়াল বিদআ : ২৩২পৃ:]
ইবনুল কাইয়্যিম রহ. বলেন, ইসরা কোন রাতে হয়েছিল তা সঠিক ভাবে জানা নেই। [যাদুল মা আদ :১/৫৮]
আল্লামা আব্দুল আযীয ইবনে বায রহ. বলেন, যে রাতে ইসরা ও মিরাজ সংঘটিত হয়েছিল তা রজব মাসে, না কি অন্য কোন মাসে, এটা নির্ধারণের জন্য কোন বিশুদ্ধ হাদীস নেই, আর তারিখ নির্ধারণের জন্য বর্ণিত সকল হাদীস মুহাদ্দিসগণের মতে বিশুদ্ধ নয়। মিরাজের তারিখ ভুলিয়ে দেয়ার মধ্যে আল্লাহর অনেক হিকমত নিহিত আছে। [আত তাহযীর মিনাল বিদআত : ১৭]
আর যদি তার জন্য নির্ধারিত কোন রাত প্রমাণিত হয়, তথাপি প্রমাণ ছাড়া তাতে বিশেষ কোন ইবাদত করা বৈধ হবে না।
দুইঃ কোন মুমিন বা আলেম থেকে এ কথা প্রমাণিত নেই যে, তারা মিরাজের রাতের বিশেষ কোন ফযীলত নির্ধারণ করেছেন। কেননা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীগণ এ রাতে কোন ধরনের মাহফিল করতেন না, এ রাতকে ইবাদতের জন্য খাছ করতেন না এবং এ বিষয়ে কোন আলোচনা করতেন না। যদি মাহ্ফিল করা শরীয়তে জায়েয হত তাহলে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অবশ্যই তা বর্ণনা করতেন অথবা আমল করে দেখাতেন। অবশ্যই তা প্রচার-প্রসার হত এবং তার সহীহ প্রমাণ পাওয়া যেত। [যাদুল মাআদ : ১/৫৮]
তিনঃ আল্লাহ তাআলা এ উম্মতের জন্য দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করে দিয়েছেন ও নি‘য়ামত পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন।
অর্থঃ আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম। তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম। [মায়েদা : ৩]
অর্থঃ তাদের কি কতগুলো দেবতা আছে যারা তাদের জন্য বিধান দিয়েছে? এমন দ্বীনের, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি। ফায়সালার ঘোষণা না থাকলে তাদের বিষয়ে তো সিদ্ধান্ত হয়েই যেতো। নিশ্চয়ই যালিমদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি। [শুরা: ২১]
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদআত সম্পর্কে সর্তক করে বলেছেন ‘‘প্রত্যেক বিদআত ভ্রষ্টতা তা প্রত্যাখ্যাত হবে তার প্রবর্তক ও আমলকারীসহ’’।
অর্থঃ যে এমন কোন আমল করে যাতে আমাদের কোন নির্দেশনা নেই তা প্রত্যাখ্যাত। [মুসলিম :১৭১৮]
ছলফে ছালেহীন বিদআত সম্পর্কে সর্তক করেছেন। কেননা তা দ্বীনের মধ্যে অতিরঞ্জন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুমতি ছাড়া কোন কিছু শরীয়তে অন্তর্ভুক্ত করা এবং ইহুদী-খ্রীষ্টানদের ন্যায় দ্বীনের মধ্যে অতিরঞ্জনের নামান্তর। [আত-তাহযীর মিনাল বিদআ-ইবনে বায (র) ১৯ পৃ]
চতুর্থঃ শাবানের ১৫তম রাতে মাহফিল করা
ইমাম মুহাম্মাদ বিন ওয়াদাহ আল কুরতুবী রহ. নিজ সনদে আবদুর রহমান বিন যায়েদ বিন আসলাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমাদের শায়খ ও ফকীহগণের কাউকে শাবানের ১৫তম রাতের প্রতি গুরুত্বের সাথে দৃষ্টিপাত করতে এবং এ প্রসংগে মাকহুল বর্ণিত হাদীস উল্লেখ করতে দেখিনি। তারা অন্যান্য রাতের উপর এ রাতকে প্রাধান্য দিতেন না।
ইমাম আবু বকর আত তুরতুশী রহ. বলেন, আমাকে আবু মুহাম্মাদ আল-মাকদেসী রহ. অবহিত করেছেন যে, আমাদের সময় বাইতুল মুকাদ্দাসে কখনও সালাতুর রাগায়েব পড়া হয়নি, যা বর্তমানে রজব ও শাবান মাসে পড়া হয়।
প্রথম এ বিদআত চালু হয় ৪৪৮ হিজরীতে। সে সময় নাবলুস এর অধিবাসী এক ব্যক্তি বাইতুল মুকাদ্দাসে আগমন করল। সে ইবনে আবি হামরা নামে পরিচিত ছিল। তার কুরআন তিলাওয়াত ছিল খুবই সুন্দর, সে শাবানের ১৫তম রাতে বাইতুল মুকাদ্দাসে সালাত শুরু করল। তার পিছনে অপর একজন এসে যোগ দিল, অতঃপর আরো তিন চার জন যোগ দিল। এভাবে সালাত শেষে দেখা গেল বিরাট এক জামাত হয়ে গেছে। পরবর্তী বছর আরো অনেকে এসে সালাত আদায় করল। এর পরবর্তী বছর আরো বহু সংখ্যক লোক সালাতে একত্রিত হল। এভাবে সমস্ত মসজিদ পূর্ণ হয়ে গেল। এক পর্যায়ে বাইতুল মুকাদ্দাসে শবে বরাতের সালাত বা শাবানের ১৫তম রাতের সালাতের ফযিলত প্রচলিত হয়। পরবর্তীতে মানুষের ঘরে ঘরে তা ছড়িয়ে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় তা বর্তমান অবস্থায় পৌঁছায়। [কিতাবুল হাওয়াদেস ওয়াল বিদআ-তুরতুশী: ২৬৬ পৃ]
ইমাম ইবনে ওয়াদাহ রহ. স্বীয় সনদের মাধ্যমে বর্ণনা করেন, ইবনে আবি মুলাইকা রহ. কে বলা হল, যিয়াদ আন নুমায়রি মনে করেন, শাবানের ১৫তম রাতের ফযিলত লাইলাতুল কদরের ফযিলতের মতো। তখন ইবনে আবি মুলাইকা রহ. বলেন, যদি তার থেকে আমি শুনতাম আর আমার হাতে লাঠি থাকত তাহলে আমি তা দ্বারা তাকে প্রহার করতাম। তখন যিয়াদ কাজী ছিলেন। [কিতাবুল হাওয়াদেস ওয়াল বিদআ-তুরতুশী : ২৬৩ পৃ]
ইমাম আবু শামা শাফেয়ী রহ. বলেন, শাবানের ১৫তম রাতের সালাতকে আলফিয়াহ বলা হয়। কারণ এ রাতে ১০০ রাকাত নফল সালাতে ১০০০ (এক হাজার) বার সূরা ইখলাস তিলাওয়াত করা হয়। প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহা ১ বার ও সূরা ইখলাস ১০ বার তিলাওয়াত করা হয়। এটা খুব লম্বা ও কষ্টকর সালাত; যার সমর্থনে কোন হাদীস কিংবা আছার (বর্ণনা) পাওয়া যায় না। তাই এটা সাধারণ মানুষের জন্য বড় ফেৎনার কারণ।
এ রাতে বিভিন্ন মসজিদে আলোকসজ্জা করা হয়, গুরুত্বের সাথে যেখানে সারা রাত জাগ্রত থেকে সালাত আদায় করা হয়। পাশাপাশি অনেক গুনাহের কাজও সংঘটিত হয়। যথা, নারী-পুরুষ একত্রিত হয়ে এ রাতের প্রশংসায় গান বাজনা পরিবেশন ইত্যাদি। অনেক সাধারণ মানুষের বদ্ধমূল ধারণা এগুলো ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। আর শয়তান তাদের এ সকল কর্মকান্ডকে আরো চাকচিক্যময় করে দিয়েছে এবং এটাকে মুসলমানদের নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত করে দিয়েছে। [কিতাবুল বায়েস আলা ইনকারিল বিদয়ে ওয়াল হাওয়াদেস- ইমাম আবু শামা : ১২৪ পৃ:]
হাফেয ইবনে রজব রহ. একটি মূল্যবান কথার পর বলেন, শাবানের ১৫তম রাতকে শাম দেশের তাবেয়ীগণ যথা খালেদ ইবনে মি‘দান রহ., মাকহুল রহ., লোকমান বিন আমের রহ. এবং অন্যান্যরা খুব সম্মানের দৃষ্টিতে দেখতেন এবং এ রাতে ইবাদত করতেন। তাদের দেখেই লোকেরা এ রাতের সম্মান করতে থাকে।
অবশ্য বলা হয় যে, এ মতটি তাদের নিকট ইসরাইলী রেওয়ায়াত থেকে পৌঁছেছে। অতঃপর যখন এ মতাদর্শ বিভিন্ন দেশে প্রসিদ্ধি লাভ করে তখন এ রাতের মর্যাদার ব্যাপারে মতানৈক্য শুরু হয়।
কেউ কেউ তাদের সাথে একমত হয়ে এ রাতে ইবাদত করতে থাকেন। এরা হচ্ছেন, বসরা ও অন্যান্য অঞ্চলের অধিবাসী।
হেজাজের অনেক ওলামা এটাকে অস্বীকার ও অপছন্দ করেছেন। তাদের মধ্যে প্রসিদ্ধ হচ্ছেন আতা বিন আবি রাবাহ রহ. ও ইবনে আবি মুলাইকা রহ. প্রমুখ। আবদুর রহমান বিন যায়েদ বিন আসলাম রহ. মদীনার ফকীহগণ থেকে বর্ণনা করেন, ইমাম মালেকের রহ. সাথীগণসহ অন্যান্য ওলামাগণেরও একই অভিমত। আর তা হচ্ছে এ সবই বিদআত।
এ রাতে (শাবানের ১৫তম রাতে) জাগ্রত থেকে ইবাদত করার ফযিলত নিয়ে সিরিয়ার আলেমগণের দু‘টি উক্তি রয়েছে।
একঃ এ রাতে জাগ্রত থেকে দলবদ্ধভাবে মসজিদে ইবাদত করা মুস্তাহাব। খালেদ ইবনে মি‘দান রহ., লুকমান বিন আমের রহ. সহ অন্যান্য ওলামাগণ এ রাতে উত্তম কাপড় পরিধান করতেন, আগর বাতি জ্বালিয়ে মসজিদ সুগন্ধময় করতেন, চোখে সুরমা লাগাতেন এবং সারা রাত সালাত ও অন্যান্য ইবাদতে দন্ডায়মান থাকতেন।
ইসহাক বিন রাহ্ওয়াই রহ. তাদের সাথে একমত পোষণ করেন। তিনি আরো বলেন, এ রাতে মসজিদে ইবাদতের জন্য দন্ডায়মান হওয়া বিদআতের অন্তর্ভুক্ত নয়। হরবুল কারমানী এ মাসআলায় তাকে অনুসরণ করেছেন।
দুইঃ এ রাতে মসজিদে সমবেত হয়ে (শবে বরাতের) সালাত আদায়, বিভিন্ন কাহিনী বর্ণনা করা ও দুআ করা মাকরুহ। অবশ্য একা একা সালাত আদায় করাতে কোন দোষ নেই। এটা ইমাম আওযাঈ রহ., সিরিয়ার তৎকালীন প্রসিদ্ধ ইমাম, ফকীহ এবং ওলামায়ে কেরামের অভিমত। আল্লাহ্ চাহেতো এটাই তুলনামূলক বিশুদ্ধ।
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ. থেকে শাবানের ১৫তারিখ রাত সম্পর্কে কোন উক্তি নেই। তবে রাত জেগে ইবাদত করা সম্পর্কে তার দু‘টি বর্ণনা রয়েছে। একটি হচ্ছে ঈদের রাতে ইবাদত করা। তবে কোন রেওয়ায়াতে এ রাতে সম্মিলিতভাবে ইবাদতকে মুস্তাহাব বলা হয়নি। কেননা এ সম্পর্কে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সাহাবায়ে কেরাম থেকে কোন উক্তি পাওয়া যায়নি। অন্য এক বর্ণনাতে ঈদের রাতের ইবাদতকে মুস্তাহাব বলা হয়েছে, এটা আবদুর রহমান বিন ইয়াজিদ বিন আসওয়াদ এর আমল অনুযায়ী। আর তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট তাবেয়ী। এমনই হল শাবান মাসের ১৫তারিখ রাতের অবস্থা। এ ব্যাপারে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সাহাবায়ে কেরাম থেকে কিছুই বর্ণিত হয়নি। তবে শাবানের ১৫তারিখ রাতের ইবাদত প্রতিষ্ঠা পেয়েছে কতিপয় তাবেয়ী এবং সিরিয়ার ফকীহগণের মাধ্যমে। [লাতায়েফুল মাআরেফ-ইবনে রজব: ২৬৩ পৃ]
আল্লামা আবদুল আযীয বিন বায রহ. বলেন, আল্লামা আওযায়ী রহ. ও ইবনে রজব রহ. কর্তৃক এ রাতে ব্যক্তিগত ইবাদতকে মুস্তাহাব বলাটাও অত্যন্ত দুর্বল উক্তি। কেননা এ প্রসংঙ্গে শরীয়তের কোন অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায় না। আর প্রমাণ ব্যতীত কোন আমল শরীয়তসিদ্ধ নয়। কেননা তা আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে বিদআত। চাই তা ব্যক্তিগত ইবাদত হোক কিংবা সম্মিলিত ইবাদত হোক। প্রকাশ্য হোক বা অপ্রকাশ্য হোক।
অর্থঃ যে ব্যক্তি এমন কিছু আমল করে যে ব্যাপারে আমাদের অনুমোদন নেই, তা প্রত্যাখ্যাত হবে। [মুসলিম :১৭১৮]
এমনি আরো অনেক হাদীসে বিদআত সম্পর্কে সর্তক করা হয়েছে। উল্লিখিত ইমাম ইবনে ওয়াদাহ রহ., ইমাম তারতুশি রহ., ইমাম আবু শামা রহ., আবদুর রহমান বিন ইসমাঈল রহ., হাফেজ ইবনে রজব রহ. এবং ঈমাম আব্দুল আযীয বিন বায রহ. প্রমূখের মতামত দ্বারা স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, শবে বরাতের ইবাদত, সালাত কিংবা অন্য কোন আমল যা শরীয়তসিদ্ধ নয় তা বিদআত। কুরআন ও হাদীসে এর কোন ভিত্তি নেই এবং কোন সাহাবায়ে কেরাম এ আমল করেননি।
পঞ্চমঃ আত -তাবাররুক
আত-তাবাররুক অর্থ বরকত চাওয়া বা শুভ কামনা করা। কোন জিনিস দ্বারা বরকত চাওয়ার অর্থ ঐ জিনিসের মাধ্যমে শুভ কামনা করা।
নিঃসন্দেহে যাবতীয় কল্যাণ ও বরকত আল্লাহ্ তা‘আলার হাতে। আল্লাহ্ তা‘আলা স্বীয় ইচ্ছা অনুযায়ী কিছু সৃষ্টির মধ্যে অনুগ্রহ ও বরকত রেখে দিয়েছেন।
বরকতের প্রকৃত অর্থ হচ্ছেঃ স্থায়ীত্ব ও প্রয়োজনীয়তা। আবার বৃদ্ধি এবং দুআ অর্থেও আসে। যেমন- বলা হয়ে থাকে برَك عليه অর্থঃ তার জন্য বরকতের দুআ করা হয়েছে। বলা হয় بَارَكَ الله ُالشَّيْءَ، بَارَكَ فِيْهِ أَوْ بَارَكَ عَلَيْه অর্থঃ আল্লাহ তা‘আলা ঐ জিনিসে বরকত প্রদান করেছেন। আর تبارك (বরকতময় হওয়া) শব্দটি শুধুমাত্র আল্লাহ্ তাআলার জন্য নির্দিষ্ট। এটা বলা যাবে না যে অমুক ব্যক্তি বরকতময়। কেননা বরকত শব্দের অর্থ বড় ও মহান। অতএব এ গুণ আল্লাহ্ তা’আলা ব্যতীত অন্য কারো জন্য হতে পারে না।
কুরআনুল কারীমে বরকত শব্দটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যথাঃ
১. চিরস্থায়ী কল্যাণ প্রতিষ্ঠিত হওয়া। ২. কল্যাণ অধিক হারে হওয়া ও ধারাবাহিকতা বজায় থাকা। ৩. তাবারাকা শব্দটি শুধুমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার জন্যই নির্দিষ্ট। তিনি ব্যতীত অন্য কারো জন্য এ শব্দ ব্যবহার করা যাবে না।
ইবনে কাইয়িম রহ. বলেন, আল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বরকতময়, তাঁর দান স্থায়ী, তাঁর দেয়া কল্যাণ অফুরন্ত, তাঁর মর্যাদা সুউচ্চ, তিনি অতি মহান, পূত-পবিত্র এবং যাবতীয় কল্যাণ একমাত্র তাঁর পক্ষ থেকেই আসে। তিনি তাঁর সৃষ্টির মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা কল্যাণ দান করেন এটাই হচেছ তাবারাকা এর প্রকৃত অর্থ যা কুরআনে রয়েছে।
বিভিন্ন শ্রেণীর কল্যাণকর বিষয়
১. কুরআনুল কারীম কল্যাণময়। এতে দুনিয়া ও আখিরাতের অনেক কল্যাণ নিহিত রয়েছে। আর এ বরকত বা কল্যাণ অর্জন করা যায় বিশুদ্ধভাবে তিলাওয়াত এবং কুরআনের বিধান অনুযায়ী আমল করার মধ্য দিয়ে। যা একমাত্র আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য হতে হবে।
২. মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কল্যাণময়। আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর মধ্যে অনেক কল্যাণ বা বরকত রেখেছেন।
এ বরকত দু‘প্রকারের।
(ক) পরোক্ষ বরকতঃ আর এটা অর্জিত হয় ইহকাল ও পরকালে তাঁর রেসালাতের বরকতের মধ্য দিয়ে। কেননা আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁকে জগৎবাসীর জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছেন। তিনি মানব জাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে এসেছেন।
মানুষের জন্য পবিত্র জিনিস হালাল করেছেন এবং অপবিত্র জিনিস হারাম করেছেন। তাঁকে দিয়ে নবুয়্যতের ইতি টানা হয়েছে এবং তাঁর আনীত দ্বীন হচ্ছে সহজ, সরল, মহানুভব এবং উদার।
(খ) প্রত্যক্ষ বরকত বা কল্যাণ দু’প্রকার
১. তাঁর কর্মের মধ্যে বরকত। তা হলো আল্লাহ তা’আলা তাঁকে উজ্জ্বল সুস্পষ্ট মুজিযা দিয়ে সত্যায়িত করেছেন।
২. তিনি সত্ত্বাগত ভাবেই বরকতময়। যা অনুভব করা যায়। এ জন্য সাহাবায়ে কেরাম তাঁর জীবদ্দশাতেই তাঁর থেকে বরকত হাসিল করেছেন ও তাঁর মৃত্যুর পর তার দেহে ব্যবহৃত অবশিষ্ট বস্ত্তর মাধ্যমে বরকত হাসিল করেছেন।
আল্লাহর নবীর জীবদ্দশাতে সাহাবায়ে কেরাম তাঁর থেকে বরকত হাসিল করেছেন, তাঁর উপর কিয়াস করে অন্য কারো থেকে এমন বরকত হাসিল করা যাবে না। এতে কোন সন্দেহ নেই যে আল্লাহ্ তাআলা সকল নবী (আ) এর মাঝে অফুরন্ত বরকত রেখেছেন। [আত-তাবাররুক ওয়া আনওয়াউহু, ওয়া আহকামুহু, ড. নাছির আলজাদী: ২১-৬৯ পৃ]
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা’আলা ফেরেশতাদের মাঝে এবং নেককার বান্দাদের মাঝেও বরকত রেখেছেন। কিন্তু তাদের ব্যাপারে কোন প্রমাণ না থাকায় তাদের থেকে বরকত হাসিল করা বৈধ নয়। অনুরূপভাবে এমন কিছু স্থান আছে যা বরকতময়। যথা ১. মসজিদে হারাম, ২. মসজিদে নববী ও ৩. মসজিদে আক্বছা। অতঃপর বিশ্বের সকল মসজিদ।
এভাবে তিনি অনেক সময়কেও বরকতময় করেছেন। যথা-রমযান মাস, লাইলাতুল ক্বদর, জিল হজ্জ্বের প্রথম ১০দিন, আশহুরে হুরুম বা সম্মানিত মাস সমূহ, সোমবার, বৃহস্পতিবার, শুক্রবার, প্রতি রাতের দুই তৃতীয়াংশে আল্লাহ তা‘আলার প্রথম আকাশে নেমে আসার মুহূর্ত ইত্যাদি। এ সময়গুলো বরকতময়।
কিন্তু দুঃখের বিষয় মুসলিমগণ এ থেকে বরকত হাসিল করে না। অথচ এ সময়গুলোতে শরীয়ত সমর্থিত নেক আমল দ্বারা কল্যাণ অর্জন করা উচিত।
আবার কিছু জিনিস রয়েছে যা বরকতময়। যথাঃ যমযমের পানি, বৃষ্টির পানি ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে বরকতের অর্থ হল, মানুষ পান করবে, গবাদি পশু পান করবে এবং তা দ্বারা জমিনে ফসল উৎপন্ন করবে। অনুরূপ ফল-মূল, যাইতুন, খেজুর, দুধ, ঘোড়া, ছাগল, উট ইত্যাদিও বরকতময়। মানুষ এগুলো দ্বারা অনেক কল্যাণ অর্জন করবে।
শরীয়তসম্মত যে সকল জিনিসের মাধ্যমে বরকত অর্জন করা যায় তার কিছু উদাহরণ নিম্নে পেশ করা হলঃ
আল্লাহ্র যিকির ও কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে বরকত হাসিল করা
আল্লাহ্র যিকির ও কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে বরকত হাসিল করা যায়, তবে শর্ত হল তা শরীয়ত সম্মত হতে হবে। মনে মনে জিকির করা, মুখে জিকির করা এবং কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী সৎকাজ করা। কেননা এ সকল বরকত দ্বারা আত্মা প্রশান্তি লাভ করে। সৎকাজের জন্য আত্মা শক্তি সঞ্চয় করে, বিপদ-আপদে মুক্তি পাওয়া যায়, দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ সাধিত হয়, গুণাহ মাফ হয় ও প্রশান্তি অবতীর্ণ হয়। কুরআন কিয়ামতের দিন তার জন্য সুপারিশ করবে। কুরআন ঘরে এবং গাড়িতে টানিয়ে বা ঝুলিয়ে রাখার মধ্যে কোন বরকত নেই, বরং বরকত হচ্ছে তা তিলাওয়াত করা ও সে অনুযায়ী আমল করার মাধ্যমে। [আত-তাবাররুক ওয়া আনওয়াউহু, ওয়া আহকামুহু, ড. নাছির আলজাদী: ২০১-২৪১ পৃ]
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জীবদ্দশায় তাঁর সত্ত্বা থেকে বরকত লাভ করা।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জীবদ্দশায় তাঁর সত্ত্বা থেকে বরকত লাভ করা শরীয়তসম্মত। কেননা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সত্ত্বাগতভাবে বরকতময় ছিলেন। এজন্য সাহাবায়ে কেরাম তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর থেকে অনেক বরকত অর্জন করেছেন।
আবু জুহাইফা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন দ্বি-প্রহরে এক সমতল ভূমিতে বের হলেন, অতঃপর অযু করে যোহরের দু‘রাকাত ও আসরের দু‘রাকাত সালাত আদায় করলেন। এর পর লোকজন এসে তাঁর হাত মুবারক স্পর্শ করে নিজ নিজ মুখ-মন্ডলে মাসেহ করে নিলেন।
আবু জুহাইফা (রা) বলেন, অতঃপর আমি তাঁর হাত ধরলাম এবং আমার মুখ মন্ডলেও মাসেহ করে নিলাম। তখন তা আমার নিকট বরফ থেকে শীতল এবং মিশকের ঘ্রাণ থেকেও সুগন্ধিময় অনুভূত হল। [বুখারী : ৩৫৫৩]
অর্থঃ আনাস (রা) থেকে বর্ণিত, (হজ্বের সময়) রাসূল মিনায় এলেন ও জামরায় এসে পাথর নিক্ষেপ করলেন। এরপর মিনায় এসে কুরবানী করলেন এবং নাপিতকে নিজের মাথার ডান ও বাম পাশের চুল কাটতে ইশারা করলেন। চুল কাটার পর কর্তিত চুল উপস্থিত সাহাবাগণের মাঝে বিলিয়ে দিলেন।
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, অতঃপর রাসূল আবু তালহা আল-আনছারীকে ডাকলেন এবং তাকে ডানপার্শ্বের চুলগুলো দিয়ে দিলেন। তারপর নাপিত বাম দিকের চুলগুলো কাটলে সে চুলগুলোও আবু তালহা (রাঃ) কে দিয়ে বললেন, এগুলো মানুষের মাঝে বন্টন করে দাও। [মুসলিম :১৩০৫]
সাহাবায়ে কেরাম (রা) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জামা, অযুর অতিরিক্ত পানি, যে স্থানে তাঁর হাতের আঙ্গুল থেকে পানি প্রবাহিত হয়েছে সে স্থান, তাঁর পানকৃত পানির অবশিষ্টাংশ ইত্যাদি থেকে বরকত হাসিল করতেন। যেমন, তাঁর ব্যবহৃত জামা, জুতা ইত্যাদি যা তাঁর শরীরের সাথে মিশে থাকত। [আত-তাবাররুক ওয়া আনওয়াউহু, ওয়া আহকামুহু, ড. নাছির আলজাদী: ২৪৮-২৫০ পৃ]
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে অন্য কাউকে তুলনা করা যাবে না। কেননা তিনি ব্যতীত কোন সাহাবী বা অন্য কারো থেকে বরকত হাসিল প্রসঙ্গে তাঁর কোন নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। সাহাবায়ে কেরাম থেকেও এমন কোন বর্ণনা পাওয়া যায়নি যে, তারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ব্যতীত অন্য কোন অলী বা সাহাবায়ে কেরামের জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর পর তার কোন কিছু দ্বারা বরকত হাসিল করেছেন। মুহাজির ও আনসার সাহাবীগণের কেউ এমনটি করেননি। খোলাফায়ে রাশেদীনের সাথেও কেউ এমন করেননি, দুনিয়াতে জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত ১০জন সাহাবীর সাথেও কেউ এমনটি করেননি। ইমাম শাতেবী রহ. বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ওফাতের পর তার অনুপস্থিতিতে এমন কাজে কোন সাহাবী লিপ্ত হননি। এমনকি তাঁর পরে আবু বকর (রা) কে তাঁর উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম বলে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। তাঁর দ্বারাও কেউ বরকত হাসিল করেননি। অথচ তিনি মুসলিমদের খলিফা ছিলেন। অনুরূপ উমর (রা) এর দ্বারাও কেউ বরকত হাসিল করেননি। অথচ তিনি আবু বকরের (রা) পর উম্মতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি ছিলেন। অনুরূপ উসমান (রা) এবং আলী (রা) দ্বারাও কেউ বরকত হাসিল করেননি। এভাবে অন্য কোন সাহাবী থেকেও বরকত হাসিল করা হয়নি। অথচ তাঁরা ছিলেন উম্মতের মধ্যে শ্রেষ্ঠতর মানুষ। কোন সহীহ বর্ণনাতে এ কথা নেই যে, এভাবে তারা একে অপর থেকে বরকত হাসিল করেছেন। [আত-তাবাররুক ওয়া আনওয়াউহু, ওয়া আহকামুহু, ড. নাছির আলজাদী: ২৬১-২৬৯ পৃ]
নিঃসন্দেহে আলেমদের ইলম, তাদের ওয়াজ-নসিহত শ্রবণ ও দুআ দ্বারা বরকত হাসিল করা যাবে। তাদের সাথে কোন জিকিরের মজলিসে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বরকত লাভ করা যাবে, তাতে কল্যাণ, বরকত ও উপকার রয়েছে। কিন্তু কোন ব্যক্তির সত্ত্বা দ্বারা কোন বরকত হাসিল করা যাবে না বরং তাদের বিশুদ্ধ ইলম অনুযায়ী আমল করা যাবে ও আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের অনুসরণ করা যাবে। [আত-তাবাররুক ওয়া আনওয়াউহু, ওয়া আহকামুহু, ড. নাছির আলজাদী: ২৬৯-২৭৮ পৃ]
৩. যমযমের পানি দ্বারা বরকত হাসিল করা।
যমযমের পানি দ্বারা বরকত হাসিল করা বৈধ। কেননা পৃথিবীতে এটাই সর্বোত্তম বরকতময় পানি, যা পান করলে পিপাসা দূর হয় এবং ক্ষুধা নিবারণ হয়। বিশুদ্ধ নিয়তে পান করলে যে কোন রোগের জন্য ঔষধ হিসেবে কাজ করে।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যমযম পানি সম্পর্কে বলেনঃ
অর্থঃ এ পানি অত্যন্ত বরকতময়, এ পানি হচ্ছে ক্ষুধার্তের খাদ্য এবং রোগীর চিকিৎসা। [মুসলিম :২৪৭৩]
জাবের (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
مَاءُ زَمْزَمَ لِمَا شُرِبَ لَهُ . ( ابن ماجة )
অর্থঃ যমযমের পানি যে নিয়তে পান করবে তা পূরণ হবে। [ইবনে মাজা :৩০৬২]
বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যমযমের পানি চিকিৎসা ও আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য লাভের জন্য ব্যবহার করতেন। তিনি তা রোগীর গায়ে ছিটিয়ে দিতেন এবং পান করাতেন। [তিরমিযী :৯৬৩]
৪. বৃষ্টির পানি দ্বারা বরকত হাসিল করা
বৃষ্টির পানি দ্বারা বরকত হাসিল করা যাবে। বৃষ্টির পানি বরকতময়, আল্লাহ তা‘আলা এতে অফুরন্ত বরকত রেখেছেন। মানুষ, পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গ এ পানি পান করে থাকে এবং উদ্ভিদ, গাছ-পালা, ফল-ফলাদি ইত্যাদি এ পানির মাধ্যমেই উৎপন্ন হয়ে থাকে। এর দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা সকল জিনিসকে জীবিত করে থাকেন।
আনাস (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ছিলাম। এমন সময় আমাদের বৃষ্টিতে পেয়ে গেল। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজ শরীরের কিয়দংশ উম্মুক্ত করে দিলে তা বৃষ্টিতে ভিজে গেল। তখন আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এমনটি করলেন কেন? উত্তরে তিনি বললেন, ‘‘এটা হচ্ছে তার রবের নতুন বরকত’’। [মুসলিম :৮৯৮]
ইমাম নববী রহ. বলেন, হাদীসে বর্ণিত শব্দের অর্থ হল, তার রবের পক্ষ থেকে নতুন নিয়ামত ও বরকত। অর্থাৎ এ বৃষ্টি আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে মানুষের জন্য অনুগ্রহ। মানুষ এর দ্বারা অনেক বরকত হাসিল করে থাকে। [শরহে মুসলিম - ইমাম নববী (র) :৬/৪৪৮]
যা দ্বারা বরকত হাসিল নিষিদ্ধ
(১) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ইন্তেকালের পর তাঁর দ্বারা বরকত লাভ করা
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ইন্তেকালের পর তাঁর দ্বারা দু’ভাবে বরকত হাসিল করা যাবে। অন্য কোন উপায়ে তাঁর থেকে বরকত হাসিল করা নিষিদ্ধ।
প্রথমঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর ঈমান আনা, তাঁর আনুগত্য এবং অনুসরণ করা। যে ব্যক্তি উক্ত কাজগুলো করবে সে অফুরন্ত কল্যাণ এবং দুনিয়া ও আখিরাতের সৌভাগ্য লাভ করবে।
দ্বিতীয়ঃ তাঁর ইন্তেকালের পর যে সকল জিনিস অবশিষ্ট রয়েছে তার থেকে বরকত হাসিল করা। যথা-তাঁর জামা অথবা চুল অথবা তাঁর ব্যবহৃত পানি ইত্যাদি।
এ ছাড়া অন্য কোন ভাবে তাঁর থেকে বরকত হাসিল করা শরীয়ত সম্মত নয়। তাঁর কবর দ্বারা বরকত হাসিল করা যাবে না। কেবল মাত্র তাঁর কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা যাবে না। বরং তিনটি মসজিদের যে কোন একটির উদ্দেশ্যে সফর করা যাবে ১. মসজিদে হারাম ২. মসজিদে নববী ও ৩. মসজিদে আক্বসা। এ ছাড়া সব সময় যে মদীনায় বসবাস করে আসছে তার জন্য নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবর যিয়ারত করা মুস্তাহাব। অথবা কেউ মসজিদে নববী যিয়ারতের উদ্দেশ্যে এলে তার জন্যও কবর যিয়ারত করা মুস্তাহাব।
মসজিদে নববীতে প্রবেশ করে প্রথমে দু‘রাকাত তাহিয়্যাতুল মাসজিদ সালাত আদায় করা। অতঃপর কবরের দিকে গিয়ে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে হুজরার দিকে মুখ করে ক্ষীণ আওয়াজে আদবের সাথে বলা ‘‘আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ’’। আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) এর চেয়ে অতিরিক্ত কিছু বলতেন না। কখনও অতিরিক্ত কিছু বলতে চাইলে বলতেনঃ
অর্থঃ হে আল্লাহর রাসূল। আপনার প্রতি সালাম, হে আল্লাহর সৃষ্টির সর্বোত্তম ব্যক্তি! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর সত্য নবী, নিশ্চয়ই আপনি আপনার রেসালাত পৌঁছে দিয়েছেন, আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নে আপনার সর্বশক্তি ব্যয় করেছেন এবং আপনি জাতিকে সত্যের উপদেশ দিয়েছেন। এগুলো বলতে কোন দোষ নেই। কেননা এগুলো তাঁর বৈশিষ্ট্যাবলী। [মাজমুয়ায়ে ফতোয়ায়ে ইবনে বায র.: ৫/২৮৯]
তাঁর কবরের কাছে এ ধারণা করে দুআ করা যাবে না যে, তাঁর কাছে দুআ করলে কবুল হয়, তাঁর কবরের কাছে গিয়ে তাঁর নিকট সুপারিশ প্রার্থনা করা যাবে না। (বরকততের জন্য) তাঁর কবর, কবরের ধূলো-বালি শরীরে মাসেহ করা বা তাঁর কবরে অথবা কবরের পার্শ্বের কোন জিনিস (ইট, পাথর, দেয়াল ইত্যাদি) চুমু দেয়া যাবে না। এছাড়া রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে যায়গায় বসেছেন, যেখানে সালাত আদায় করেছেন, যে পথ দিয়ে চলাচল করেছেন, যে স্থানে তার নিকট অহী এসেছে, যে স্থানে তিনি জন্ম গ্রহণ করেছেন, যে রাতে জন্ম গ্রহণ করেছেন, যে রাতে মিরাজ হয়েছে এবং তাঁর হিজরতের রাস্তা ইত্যাদি দ্বারা বরকত গ্রহণ করা যাবে না। এক কথায় যে সকল জিনিস দ্বারা বরকত গ্রহণ করা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনুমোদিত নয় তা দ্বারা বরকত হাসিল করা যাবে না। [আত-তাবাররুক ওয়া আনওয়াউহু, ওয়া আহকামুহু, ড. নাছির আল-জাদী: ৩১৫-৩৮০ পৃ]
২. কোন নেককার লোক দ্বারা বরকত হাসিল
কোন নেককার বা বুযুর্গের ব্যক্তিস্বত্ত্বা, তাদের কোন নিদর্শন, ইবাদতের স্থান থেকে, বাসস্থান এবং তাদের কবর দ্বারা বরকত হাসিল করা যাবে না। তাদের মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করাও যাবে না। তাদের কবরের পাশে সালাত আদায় করা যাবে না। তাদের কবরের কাছে গিয়ে নিজের প্রয়োজন পূরণের জন্য কিছু প্রার্থনা করা, কবর স্পর্শ করা ও কবরের পাশে ইতেকাফ করা যাবে না। তাদের জন্ম বার্ষিকী, ওরস ইত্যাদি পালন করা যাবে না। কেউ যদি এ বিশ্বাস নিয়ে বুযুর্গদের নৈকট্য লাভের জন্য উপরোক্ত কোন কাজ করে যে, বুযুর্গগণ তাদের উপকার করতে পারে বা তাদের ক্ষতি করতে পারে অথবা তাদের কোন জিনিস দিতে পারে বা কোন জিনিস থেকে বঞ্চিত করতে পারে, তাহলে সে আল্লাহর সাথে বড় ধরণের শিরক করল।
যে ব্যক্তি এ সকল বুযুর্গ দ্বারা বরকত হাসিলের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট থেকে বরকত হাসিল করতে চায় সে বিদআতে লিপ্ত হল এবং অত্যন্ত ঘৃণিত কাজে লিপ্ত হল। [আত-তাবাররুক ওয়া আনওয়াউহু, ওয়া আহকামুহু, ড. নাছির আলজাদী: ৩৮১-৪১৮ পৃ]
৩. পাহাড় বা কোন স্থান দ্বারা বরকত হাসিল করা
পাহাড় বা কোন স্থান দ্বারা বরকত হাসিল করা নিষিদ্ধ। কেননা এটা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর শরীয়ত পরিপন্থী। এগুলো দ্বারা বরকত হাসিলের মাধ্যমে এসবের সম্মান বাড়িয়ে দেয়া হয়।
এগুলোকে হাজরে আসওয়াদ ও বায়তুল্লাহর তাওয়াফের উপর কিয়াস করা বৈধ নয়। কেননা এ দু’টো আল্লাহর ইবাদত। হাজরে আসওয়াদ ও রোকনে ইয়ামানী ব্যতীত অন্য কোন পাথর স্পর্শ করা যাবে না। কেননা সকল আলেম ঐকমত্য হয়েছেন যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রোকনে ইয়ামানী ব্যতীত অন্য কোন রোকন স্পর্শ করেননি। [ইকতিযাউস সিরাতিল মুসতাকীম- ইবনে তাইমিয়্যাহ (র) :২/৭৯৯]
ইমাম ইবনুল কাইয়িম রহ. বলেন, দুনিয়াতে হাজরে আসওয়াদ ও রোকনে ইয়ামানী ব্যতীত এমন কোন পাথর বা স্থান নেই যা চুম্বন করা শরীয়ত সিদ্ধ এবং তা গুনাহ মার্জনাকারী। [যাদুল মায়াদ : ১/৪৮]
তিনি মক্কার বৈশিষ্ট বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, পৃথিবীতে মক্কা নগরী ব্যতীত অন্য কোন স্থান এমন নেই যেখানে তাওয়াফ বা সায়ী করা জায়েয। [যাদুল মায়াদ : ১/৪৮]
শায়খুল ইসলাম রহ. কাবা ব্যতীত অন্য কোন ঘরের তাওয়াফ সম্পর্কে লিখেন, এ ধরণের তাওয়াফ হারাম ও বিদআত। এ কাজটি দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করলে তাকে তওবা করতে বলা হবে নতুবা তাকে হত্যা করা হবে। [ফতোয়ায়ে ইবনে তাইমিয়াঃ ২৬/১২১]
এমনিভাবে মাকামে ইব্রাহীম, অন্য কোন পাথর, মসজিদে হারামের কোন দেয়াল বা হেরা গুহা বা জাবালে নূরকে চুমু দেয়া বা বরকতের জন্য স্পর্শ করা বৈধ নয়। এগুলো জিয়ারত করার উদ্দেশ্যে যাওয়া, তাতে চড়া, তাতে সালাত আদায় করা ঠিক নয়। সাওর পর্বতের দ্বারা বরকত হাসিল করা বা তা জিয়ারতের উদ্দেশ্যে যাওয়া শরীয়তসিদ্ধ নয়। অনুরূপভাবে জাবালে রহমত ও জাবালে আবি কুবাইস দ্বারাও বরকত গ্রহণ করা ঠিক নয়। এমনিভাবে দারুল আরকাম বা অন্য কোন ঘর দ্বারা বরকত হাসিল করা বৈধ নয়। জাবালে তূর জিয়ারত করা বা তা জিয়ারতের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করা বৈধ নয়। মোট কথা কোন পাথর বা গাছ দ্বারা বরকত হাসিল করা যাবে না। [আত-তাবাররুক ওয়া আনওয়াউহু, ওয়া আহকামুহু, ড. নাছির আলজাদী:৪১৯-৪৬৪ পৃ]
নিষিদ্ধ জিনিস থেকে বরকত হাসিলের কারণ
নিষিদ্ধ জিনিস থেকে বরকত হাসিলের অন্যতম কারণ হল, দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞতা, বুযুর্গদের ব্যাপারে অতিরঞ্জন, কাফিরদের সাদৃশ্যতা ও কোন ঐতিহাসিক স্থানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন। [আত-তাবাররুক ওয়া আনওয়াউহু, ওয়া আহকামুহু, ড. নাছির আল-জাদী: ৪১৯-৪৬৪ পৃ]
নিষিদ্ধ জিনিস থেকে বরকত হাসিলের প্রভাব বা প্রতিক্রিয়া অনেক
শিরকে আকবারঃ যদি বরকত হাসিল করার পদ্ধতি মৌলিকভাবেই শিরক হয়, তাহলে তার প্রতিক্রিয়া খুবই ভয়ংকর। আর যদি বরকত হাসিলের পদ্ধতি মেŠলিকভাবে শিরক না হয় বরং শিরক পর্যন্ত পৌঁছায়, তাহলে তা বড় শিরকের মাধ্যম রূপে গণ্য হবে।
নিষিদ্ধ বিষয় দ্বারা বরকত অর্জনের প্রভাব হলঃ দ্বীনের মধ্যে বিদআত প্রতিষ্ঠা, গুনাহ্র দিকে ধাবিত হওয়া, মিথ্যার গহবরে পতিত হওয়া, শরয়ী দলিল বিকৃতি, সুন্নাত বিনষ্টকরণ, মূর্খদের দ্বারা ধোকা খাওয়া, পরবর্তী প্রজন্ম ধ্বংস করণ। আর এসব কিছুই ঘটে হারাম ও ঘৃণিত জিনিস দ্বারা বরকত হাসিলের মাধ্যমে।
নিষিদ্ধ পন্থায় বরকত হাসিল প্রতিরোধের উপায়
ধর্মীয় জ্ঞানের প্রসার, কুরআন ও হাদীসের দাওয়াত, অতিরঞ্জন পরিহার ও বরকত হাসিলের দিকসমূহর স্পষ্ট বর্ণনা। মোট কথা এ সকল বিষয়ের চর্চার মাধ্যমে নিষিদ্ধ পন্থায় বরকত হাসিলের প্রতিরোধ সম্ভব। [আত-তাবাররুক ওয়া আনওয়াউহু, ওয়া আহকামুহু, ড. নাছির আল-জাদী: ৪৮৩-৫০৬ পৃ]
আল্লামা সা’দী রহ. কিতাবুত তাওহীদে গাছ, পাথর ইত্যাদি দ্বারা বরকত লাভ অধ্যায়ে উল্লেখ করেন যে, এসব শিরকের অন্তর্ভুক্ত এবং এগুলো মুশরিকদের কাজ। কেননা সকল আলেম ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, গাছ, পাথর ও স্থান ইত্যাদি দ্বারা বরকত হাসিল বৈধ নয়। এগুলো বরকতময় মনে করাও বৈধ নয়। এসবের কাছে দুআ করা, ইবাদত করা শিরকে আকবার বা বড় শির্ক। চাই তা মাকামে ইব্রাহিম, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হুজরা, বায়তুল মুকাদ্দাসের পাথর ইত্যাদি হোক না কেন।
তবে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ ও চুম্বন করা এবং রোকনে ইয়ামেনীতে চুম্বন করা ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। তাতে রবের বড়ত্বের পরিচয় পাওয়া যায়। আর এ দু‘টি স্থান ছাড়া অন্য সবগুলোতে মাখলুকের বড়ত্ত্ব ফুটে উঠে। প্রথমটিতে আল্লাহর তা‘জীম আর দ্বিতীয়টিতে মাখলুকের তা‘জীম। এতদুভয়ের মাঝে পার্থক্য হল, আল্লাহর কাছে দুআ করা একত্ববাদ। আর মাখলুকের কাছে দুআ করা শির্ক। [আল-কাউলুস সাদীদ: ৫১ পৃ]
প্রচলিত কয়েকটি বিদআত
এ ধরণের বিদআত সমাজে অনেক। তন্মধ্যে-
(১) জোরে নিয়ত বলাঃ কোন মুসলিম বলল, নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া, নাওয়াইতু আন আসুমা, নাওয়াইতু আন আতা ওয়াদ্দিআ, নাওযায়তু আন আগতাসিলা ইত্যাদি মুখে বলে নিয়ত করা বিদআত। কেননা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এ ধরণের কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না।
অর্থঃ (হে নবী) আপনি বলুন! তোমরা কি তোমাদের দ্বীন সম্পর্কে আল্লাহ্কে অবহিত করতে চাও? অথচ আল্লাহ্ আসমান ও যমীনের যাবতীয় কিছু জানেন। আল্লাহ্ সর্ব বিষয়ে সম্যক অবহিত। [হুজরাত: ১৬]
নিয়তের স্থান হল অন্তর। নিয়ত অন্তরের কাজ, মুখের কাজ নয়। হাফেয ইবনে রজব রহ. বলেন, নিয়ত হল অন্তরের ইচ্ছা। কোন ইবাদতের ক্ষেত্রে নিয়ত মুখে বলা ওয়াজিব নয়। [জামে‘উল উলুম ওয়াল হিকাম:১/৯২]
(২) ফরজ সালাতের পর সম্মিলিত দুআ
জামাতে সালাত আদায়ের পর প্রত্যেকের জন্যই ব্যক্তিগতভাবে শরীয়ত সম্মত দুআ ও তাসবীহ পাঠ করা বৈধ। যেমন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতের পর দুআ ও তাসবীহ পাঠ করতেন এবং সাহাবায়ে কেরামও এরূপ আমল করতেন। কেননা তারা রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুন্নাতকে যথাযথভাবে আমলে পরিণত করতেন। তাই জামাতে সালাত আদায়ের পর সম্মিলিতভাবে দুআ রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুন্নাত পরিপন্থী।
(৩) মৃত ব্যক্তির রূহের মাগফেরাত, মৃত ব্যক্তির জন্য দুআ করার পর কিংবা বিবাহের খোৎবার সময় সূরা ফাতিহা পাঠের জন্য লোকদের বলা।
এ সবই বিদআতের অন্তর্ভুক্ত। কেননা তা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত নেই এবং সাহাবায়ে কেরামও এ ধরণের আমল করেননি। অথচ তারাই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আমল সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত ছিলেন। এ থেকে প্রতীয়মাণ হল যে, এ ধরণের আমল নব আবিষ্কৃত ও বিদআত।
(৪) মৃত ব্যক্তির শোকে মাতম করা
মৃত ব্যক্তির শোকে মাতম করা, চল্লিশা ইত্যাদি খাওয়ানো, হাফেজ সাহেবদের এনে কুলখানী করানো এ ধারণায় যে, তা মৃত ব্যক্তির শান্তনা যোগাবে এবং মৃত ব্যক্তির উপকারে আসবে।
(৫) কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত তাসবীহ-তাহলীলের বাইরে বিভিন্ন সুফি বা পীরদের নানা ধরণের যিকির, যা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাতের পরিপন্থী। সুন্নাতের সাথে এ বৈপরীত্য শব্দগত হোক, গঠনগত কিংবা সময় সাপেক্ষ হোক, সুন্নাতের পরিপন্থী কোন যিকিরই গ্রহণযোগ্য নয়।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাণী,
مَاءُ زَمْزَمَ لِمَا شُرِبَ لَهُ . ( مسلم )
অর্থঃ যে ব্যক্তি এমন কোন নেক আমল করল (সাওয়াবের নিয়তে) যা আমাদের পক্ষ থেকে অনুমোদিত নয় তা প্রত্যাখ্যাত। [মুসলিম: ১৭১৮]
(৬) কবরের উপর মাজারের নামে ঘর তৈরী করা, কবরের পাশে মসজিদ তৈরী করে সেখানে সালাত আদায় করা, তাতে মৃতদের দাফন করা, প্রত্যহ সে কবর যিয়ারত করা, বরকত হাসিলের উদ্দেশ্যে কবরের পাশে গিয়ে সালাত আদায় করা, কবরে শায়ীত মৃত ব্যক্তির উসিলা দিয়ে আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট দুআ করা অথবা কবরের পাশে গিয়ে দুআ করা, কবরে লাইটিং বা আলোকসজ্জা করা এর প্রত্যেকটিই বিদআত এবং ঘৃণিত ও অপছন্দনীয় কাজ। [কিতাবুত তাওহীম- ডঃ সালেহ আলফাওজান: ৯৪]
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/287/15
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।