hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সুন্নতের আলো ও বিদআতের আঁধার

লেখকঃ সাঈদ বিন আলী ইবনে ওহাফ আল-কাহতানী

১০
তৃতীয় পরিচ্ছেদ: দ্বীনের মধ্যে বিদআতের নিন্দা
বিদআতের নিন্দা বা তিরস্কার সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসে অনেক বর্ণনা এসেছে। সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণ বিদআত থেকে বিরত থাকার জন্য বিভিন্নভাবে সতর্কতা প্রদর্শন করেছেন। সংক্ষেপে তা আলোচনা করা হলঃ

প্রথমঃ কুরআনুল কারীম

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

هُوَ الَّذِيْ أَنزَلَ عَلَيْكَ الكِتَابَ مِنْهُ أياتٌ مُّحْكَمَاتُ هُنَّ أُمُّ الْكِتَابِ وَأُخَرُ مُتَشَابَهَاتُ فَأَمَّا الّذِّيْنَ فِى قُلُوبِهِمْ زَيْغُ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَاءَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَآءَ تَأْوِيْلِهِ وَمَا يَعْلُمُ تَأْوِيْلَهُ إِلاَّ اللهُ . ( آل عمران :7)

অর্থঃ তিনিই আপনার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, যাতে অকাট্য আয়াতসমূহ রয়েছে ওগুলো কিতাবের মূল। এ ছাড়া কতিপয় আয়াত অস্পষ্ট। অতএব যাদের অন্তরে বক্রতা রয়েছে, মূলতঃ তারাই অশান্তি সৃষ্টি ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের উদ্দেশ্যে অস্পষ্টের অনুসরণ করে। আর আল্লাহ্ ব্যতীত এর প্রকৃত অর্থ অন্য কেউ অবগত নয়। [আলে-ইমরানঃ ৭]

ইমাম শাতেবী রহ. এর সমর্থনে কিছু আসর (সাহাবীদের উক্তি) পেশ করেছেন। যদ্বারা বুঝা যায়, উক্ত আয়াতটি কুরআনের বক্তব্য নিয়ে যারা বিতর্ক করে তথা খারেজী বা তাদের সমগোত্রীয়দের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে।

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

وَأَنَّ هَذاَ صِِرَاطي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلاَ تَتَّبِعُواْ السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَن سَبِيْلِهِ ذَلكُمْ وَصّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ . ( الأنعام : 153)

অর্থঃ এ পথই আমার সরল পথ, সুতরাং তোমরা এরই অনুসরণ কর। এ পথ ছাড়া অন্য কোন পথের অনুসরণ করবে না। কারণ তা তোমাদেরকে হেদায়াতের পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। আল্লাহ তোমাদের এ নিদের্শ দিলেন যেন তোমরা সতর্ক হও। [আনআমঃ ১৫৩]

সুতরাং সিরাতে মুস্তাকীম হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত সহজ সরল ও সঠিক পথ। যে পথের দিকে উক্ত আয়াতে আহবান করা হয়েছে। এটাই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাত তথা জীবনাদর্শ। আর সুবুল বা বিভিন্ন রাস্তা হচ্ছে (দ্বীনের মধ্যে) মতানৈক্য ও বিদআত সৃষ্টিকারীদের পথ। উপরোক্ত আয়াতে সকল প্রকারের বিদআত সৃষ্টিকারীদের পথ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেনঃ

وَعَلَى اللهِ قَصْدُ السَّبِيلِ وَ مِنْهاَ جَآئِرٌ وَلَوْ شَآءَ لَهَداكُمْ َأجْمَعِيْنَ . ( النحل :9)

অর্থঃ সরল পথ আল্লাহর নিকট পেঁŠছার মাধ্যম, কিন্তু কিছু বক্র পথও রয়েছে; তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের সকলকে সৎপথে পরিচালিত করতেন। [নাহলঃ ৯]

কাস্দুস সাবিল

হচ্ছে সত্যের পথ, এর বাইরের সকল পথ সত্য হতে বিচ্যুত এবং তা বিদআতে পরিপূর্ণ ও ভ্রান্ত।

আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

إِنَّ الذِّيْنَ فَرَّقُواْ دِينَهُمْ وَكَانُواْ شِيَعًا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِى شَييء إِنَّمَآ أَمْرُهُمْ إِلَى اللهِ ثُمَّ يُنَبِّئُِِهُمْ بِمَا كَانوُاْ يَفْعَلُونَ . ( الأنعام :159)

অর্থঃ নিশ্চয়ই যারা নিজেদের দ্বীনে মতভেদ সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন দলে- উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়ে, তাদের সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই। তাদের বিষয়টি আল্লাহর দায়িত্বে রয়েছে। পরিশেষে তিনিই তাদেরকে নিজ কর্মকান্ড সম্পর্কে অবহিত করবেন। [আনআমঃ ১৫৯]

এরাই হচ্ছে প্রবৃত্তির অনুসারী, পথভ্রষ্ট এবং বিদআত সৃষ্টিকারী।

আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

وَلاَ تَكُونُواْ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ مِنَ الَّذِيْنَ فَرَّقُواْ دِينَهُمْ وَكَانُواْ شِيَعًا كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيهِمْ فَرِحُونَ . ( الروم :31-32)

অর্থঃ তোমরা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। যারা নিজেদের দ্বীনের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে তাদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উৎফুল্ল। [রূমঃ ৩১-৩২]

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

فَلْيَحْذَرِ الَّذِيْنَ يُخَالِفُوْنَ عَنْ أَمْرِه أَنْ تُصِيْبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيْبَهُمْ عَذَابٌ ألِيْمٌ . ( النور : 63)

অর্থঃ সুতরাং যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তাদের এ ভয় করা উচিত যে, তাদের উপর বিপর্যয় আপতিত হবে অথবা কঠিন শাস্তি তাদের গ্রাস করবে। [আন-নূরঃ ৬৩]

আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

قُلْ هُوَ الْقاَدِرُ عَلَى أن يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عَذَابًا مِّن فَوْقِكُمْ أَوْ مِن تَحتِ أَرْجُلِكُمْ أَوْ يَلْبِسَكُمْ شِيَعًا . ( الأنعام : 65)

অর্থঃ হে রাসূ !বলুন, আল্লাহ তোমাদের উর্ধ্বদেশ অথবা তলদেশ হতে শাস্তি প্রেরণ করতে এবং তোমাদের বিভিন্ন দলে উপদলে বিভিক্ত করতে যথেষ্ট ক্ষমতাবান। [আনআমঃ ৬৫]

আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

وَلاَ يَزَالُونَ مُخْتَلِفِينَ، إِلاَّ مَن رَّحِمَ رَبُّكَ . ( الهود : 118-119)

অর্থঃ আর তারা সদা-সর্বদা মতভেদ সৃষ্টি করতে থাকবে কিন্তু যার প্রতি আপনার রবের অনুগ্রহণ হয় (সে মতভেদ করবে না)। [হুদঃ ১১৮-১১৯]

দ্বিতীয়ঃ হাদীস

বিদআতের নিন্দা, তিরস্কার ও তা থেকে সতর্কতা প্রদর্শন করে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনেক হাদীস বর্ণনা করেছেন। নিম্নে কয়েকটি উল্লেখ করা হলঃ

আয়েশা (রা) বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলছেনঃ

مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ . وفي رواية مسلم مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ . ( بخاري ومسلم )

অর্থঃ যে আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু প্রবর্তন করল, যা এর অন্তর্ভুনয় তা প্রত্যাখ্যাত। মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় রয়েছেঃ যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করল যা আমাদের পক্ষ থেকে অনুমোদিত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত। [বুখারী : ২৬৯৭ ও মুসলিম : ১৭১৮]

জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় জুমআর খুতবায় বলেছেনঃ

فَإِنَّ خَيْرَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللَّهِ وَخَيْرُ الْهُدَى هُدَى مُحَمَّدٍ وَشَرُّ الْأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ . ( مسلم )

অর্থঃ উত্তম বাণী হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার বাণী। আর উত্তম পথনির্দেশনা হচ্ছে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পথনির্দেশনা। নিকৃষ্টতম বিষয় হচ্ছে (দ্বীনের মধ্যে) নতুন নতুন বিধান ইবাদতের নামে প্রবর্তন করা, প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা। [মুসলিম : ৮৬৭]

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুতবায় আল্লাহর প্রশংসা করার পর বলেনঃ

مَنْ يَهْدِهِ اللَّهُ فَلَا مُضِلَّ لَهُ وَمَنْ يُضْلِلْهُ فَلَا هَادِيَ لَهُ إِنَّ أَصْدَقَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللَّهِ وَأَحْسَنَ الْهَدْيِ هَدْيُ مُحَمَّدٍ وَشَرُّ الْأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلُّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ وَكُلُّ ضَلَالَةٍ فِي النَّارِ . ( مسلم ونسائي )

অর্থঃ আল্লাহ্ যাকে হেদায়াত দান করেন তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না। আর তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার জন্য কোন পথ প্রদর্শনকারী নেই। নিশ্চয়ই সর্বাধিক সত্যবাণী হচ্ছে আল্লাহ্ তা‘আলার কিতাবের বাণী। আর সর্বোত্তম পথ হলো মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক প্রদর্শিত পথ। আর মন্দ বিষয়গুলো হলো (দ্বীনের মধ্যে) নবসৃষ্ট আমল বা কাজ। প্রত্যেক নবসৃষ্ট আমলই বিদআত। প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতাই জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। [মুসলিম : ৮৬৭ ও নাসাঈ : ১৫৭৮]

আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنْ الْأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلَالَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنْ الْإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا . ( مسلم )

অর্থঃ যে ব্যক্তি (মানুষকে) হেদায়াতের দিকে আহবান করবে, সে হেদায়াতের পথ অনুসরণকারীর সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে। এতে কারো সাওয়াব কম হবে না। আর যে ব্যক্তি (মানুষকে) পথভ্রষ্টতার দিকে আহবান করবে সে ঐ ভ্রষ্টপথ অনুসরণকারীর সমপরিমাণ গুনাহগার হবে। এতে কারো গুনাহ কম হবে না। [মুসলিম : ২৬৭৪]

জারির ইবনে আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা) বলেনঃ

مَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً حَسَنَةً فَلَهُ أَجْرُهَا وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا بَعْدَهُ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْءٌ وَمَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً سَيِّئَةً كَانَ عَلَيْهِ وِزْرُهَا وَوِزْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ بَعْدِهِ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَيْءٌ . ( مسلم )

অর্থঃ যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোন ভাল কাজের প্রচলন করল তার জন্য সে কাজের প্রতিদান রয়েছে এবং পরবর্তীতে যারা ঐ ভাল কাজের উপর আমল করল তা থেকেও সে প্রতিদান পাবে, এতে কারো প্রতিদান কম করা হবে না। এমনিভাবে যে ব্যক্তি কোন মন্দ কাজের প্রচলন করল তার আমলনামায় সে মন্দ কাজের গুনাহ রয়েছে এবং পরবর্তীতে উক্ত গুনাহে লিপ্তদের গুনাহও লিখা হবে। এতে কারো গুনাহ কম হবে না। [মুসলিম : ১০১৭]

ইরবাজ বিন সারিয়া (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ

وَعَظَناَرَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَوْعِظَة وَجِلَتْ مِنْهَا الْقُلُوْبُ وَذَرَفَتْ مِنْهاَ الْعُيُوْنُ فَقُلْنَا : يَارَسُوْلَ اللهِ ! كَأَنَّـهَا مَوْعِظَةُ مُوْدِعُ فَأَوْصِناَ قَالَ : أُوصِيكُمْ بِتَقْوَى اللَّهِ وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ وَإِنْ تُأَمَّرُ عَلَيْكُمْ عَبْدُ، فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِي فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيرًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالٌ . ( أبوداود )

অর্থঃ একদা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মাঝে এমন ভাষণ দিলেন যাতে আমাদের অন্তর বিগলিত হল এবং চক্ষু হতে অশ্রু প্রবাহিত হল, তখন আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! মনে হচ্ছে এ আলোচনা যেন বিদায়ী উপদেশ। সুতরাং আমাদের আরো কিছু ওসিয়ত করুন। তখন তিনি বললেনঃ আল্লাহকে ভয় কর, আমীরের কথা শোন এবং তার আনুগত্য কর; যদিও সে কৃতদাস হয়। আর যে ব্যক্তি আমার পর বেঁচে থাকবে সে অনেক মতানৈক্য দেখতে পাবে, সে সময় তোমাদের উচিত হবে আমার এবং আমার খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরা যেমনি তোমরা কোন বস্ত্ত মাড়ির দাঁত দিয়ে মজবুত ভাবে আঁকড়ে ধর। বিদআত পরিহার কর। কেননা সকল প্রকার বিদআতই পথভ্রষ্টতা। [আবু দাউদ : ৪৭০৭ ও তিরমিযী : ২৬৭৬]

হুজাইফা (রা) হতে বর্ণিতঃ

كَانَ النَّاسُ يَسْأَلُونَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ الْخَيْرِ وَكُنْتُ أَسْأَلُهُ عَنْ الشَّرِّ مَخَافَةَ أَنْ يُدْرِكَنِي فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّا كُنَّا فِي جَاهِلِيَّةٍ وَشَرٍّ فَجَاءَنَا اللَّهُ بِهَذَا الْخَيْرِ فَهَلْ بَعْدَ هَذَا الْخَيْرِ مِنْ شَرٍّ قَالَ نَعَمْ قُلْتُ وَهَلْ بَعْدَ ذَلِكَ الشَّرِّ مِنْ خَيْرٍ قَالَ نَعَمْ وَفِيهِ دَخَنٌ قُلْتُ وَمَا دَخَنُهُ قَالَ قَوْمٌ يَهْدُونَ بِغَيْرِ هَدْيِي تَعْرِفُ مِنْهُمْ وَتُنْكِرُ قُلْتُ فَهَلْ بَعْدَ ذَلِكَ الْخَيْرِ مِنْ شَرٍّ قَالَ نَعَمْ دُعَاةٌ عَلَى أَبْوَابِ جَهَنَّمَ مَنْ أَجَابَهُمْ إِلَيْهَا قَذَفُوهُ فِيهَا قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ صِفْهُمْ لَنَا قَالَ هُمْ مِنْ جِلْدَتِنَا وَيَتَكَلَّمُونَ بِأَلْسِنَتِنَا قُلْتُ فَمَا تَأْمُرُنِي إِنْ أَدْرَكَنِي ذَلِكَ قَالَ تَلْزَمُ جَمَاعَةَ الْمُسْلِمِينَ وَإِمَامَهُمْ قُلْتُ فَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُمْ جَمَاعَةٌ وَلَا إِمَامٌ قَالَ فَاعْتَزِلْ تِلْكَ الْفِرَقَ كُلَّهَا وَلَوْ أَنْ تَعَضَّ بِأَصْلِ شَجَرَةٍ حَتَّى يُدْرِكَكَ الْمَوْتُ وَأَنْتَ عَلَى ذَلِكَ . ( متفق عليه )

অর্থঃ লোকজন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে কল্যাণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করত, আর আমি অকল্যাণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতাম যাতে তা থেকে বেঁচে থাকতে পারি। কোন এক সময় আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা জাহেলিয়াত ও কুসংস্কারের মাঝে নিমজ্জিত ছিলাম, অতঃপর আল্লাহ আমাদের কল্যাণের পথ দেখালেন, এ কল্যাণের পরে কি আবার অকল্যাণ আসবে? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ; অতঃপর আবার জিজ্ঞেস করলাম, এ অকল্যাণের পর কি আবার কল্যাণ আসবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ; কিন্তু তার মধ্যে ফ্যাসাদ থাকবে। আমি বললাম, তার মধ্যে ফ্যাসাদ কি? তিনি বললেন, এক দল লোক সুন্নাতের অনুসারী হবে বটে, তবে তা আমার সুন্নাত নয়। তারা আমার সুন্নাত ছেড়ে অন্য মতাদর্শ গ্রহণ করবে, তাদের মাঝে সৎকর্ম এবং অসৎকর্ম উভয়টিই পাওয়া যাবে। আমি বললাম, এ কল্যাণের পরও কি আবার অকল্যাণ আসবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ; একদল লোক মানুষকে জাহান্নামের দিকে আহবান করবে, যারা তাদের ডাকে সাড়া দেবে তারা জাহান্নামের স্বাদ গ্রহণ করবে। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! তাদের পরিচয় দিন। তিনি বললেন, তারা আমাদের স্ব-জাতি ও আমাদের ভাষাতেই কথা বলবে। আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! ঐ সময় যদি আমি বেঁচে থাকি তাহলে আমার জন্য আপনার পরামর্শ কি? তিনি বললেন, তুমি মুসলিম জামাআত ও তাদের ইমামের অনুসরণ করবে। আমি বললাম, যদি তাদের জামাআত ও ইমাম না থাকে? তিনি বললেন, তাহলে সকল জামাআতই পরিত্যাগ করবে। যদি প্রয়োজন হয় কোন গাছের শিকড় ধরে আমরণ এভাবে পড়ে থাকবে। [বুখারী : ৭০৮৪ ও মুসলিম :১৮৪৭]

এ হাদীসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইমাম নববী রহ. বলেন, هدي (হাদী) শব্দের অর্থ হল ত্বরীকা ও আদর্শ। আর জাহান্নামের দিকে আহবানকারী দল প্রসঙ্গে উলামায়ে কেরাম বলেন, তারা হল সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ যারা মানুষকে বিদআতের দিকে আহবান করে। যেমন-খারেজী, কারামতী ও বস্ত্তবাদী দল। [শরহে মুসলিম : ১২/৪৭৯]

যায়েদ বিন আরকাম (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

أَلَا أَيُّهَا النَّاسُ فَإِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ يُوشِكُ أَنْ يَأْتِيَ رَسُولُ رَبِّي فَأُجِيبَ وَأَنَا تَارِكٌ فِيكُمْ ثَقَلَيْنِ أَوَّلُهُمَا كِتَابُ اللَّهِ فِيهِ الْهُدَى وَالنُّورُ [ هوحبل الله المتين من أتبعه كان على الـهدى ومن تركه كان على الضلالة ] فَخُذُوا بِكِتَابِ اللَّهِ وَاسْتَمْسِكُوا بِهِ . ( مسلم )

অর্থঃ হে লোকসকল! নিশ্চয়ই আমি একজন মানুষ, যখনই আমার রবের পক্ষ থেকে মৃত্যুদূত আসবে তখনই আমি তার আহবানে সাড়া দেব। আর আমি তোমাদের জন্য দু‘টি বস্ত্ত রেখে যাচ্ছি। তার একটি হল আল্লাহ্র কিতাব (অপরটি আমার সুন্নাত), যাতে রয়েছে হেদায়াত ও নূর। এটা আল্লাহর সুদৃঢ় রশি। যারাই এ কিতাব মেনে চলবে তারাই হেদায়াত পাবে। আর যারা তা ছেড়ে দেবে তারা পথভ্রষ্ট হবে। তোমরা আল্লাহ্র কিতাব সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর। [মুসলিম : ২৪০৮]

এ হাদীসে আল্লাহর কিতাব মেনে চলার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে।

আবু হুরাইরা (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

يَكُونُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ يَأْتُونَكُمْ مِنْ الْأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوا أَنْتُمْ وَلَا آبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لَا يُضِلُّونَكُمْ وَلَا يَفْتِنُونَكُمْ . ( مسلم )

অর্থঃ শেষ জমানায় এমন কিছু মিথ্যাবাদী প্রতারকের আবির্ভাব ঘটবে, যারা তোমাদের কাছে এমনসব হাদীস বর্ণনা করবে; যা তোমরা ও তোমাদের পূর্ব পুরুষ কোন দিন শোননি। অতএব তোমরা তাদের হতে দূরে থাক যাতে তারা তোমাদের গোমরাহী ও ফিতনায় ফেলতে না পারে। [মুকাদ্দামায়ে মুসলিম : ৬ ও ৭]

তৃতীয়ঃ বিদআত সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরামদের মতামত

১. ইবনে সা’দ রহ. আবু বকর সিদ্দিক (রা) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেনঃ উপস্থিত জনতা! নিশ্চয়ই আমি সুন্নাতের অনুসারী বিদআতপন্থী নই। যদি আমি ভাল কাজ করি তাহলে আমাকে সাহায্য করবে, আর যদি ভুল করি তাহলে সংশোধন করে দিবে। [আত-তাবাকাতুল কুবরা : ৩/১৩৬]

২. ওমর ইবনে খাত্তাব (রা) বলেন, তোমরা তর্কবীদদের থেকে দূরে থাক। কেননা তারা সুন্নাতের দুশমন এবং হাদীস অনুযায়ী আমলে অক্ষম। তারা মনগড়া মতামত বা রায় দিয়ে নিজেরাও গোমরাহ হয় অন্যকেও গোমারাহ করে। [সুনানে দারেমী : ১২১]

৩. আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রা) বলেন, তোমরা সুন্নাতের অনুসরণ কর, বিদআতের অনুসরণ করবে না। এটাই তোমাদের জন্য যথেষ্ট। কেননা সকল প্রকার বিদআতই ভ্রষ্টতা। [আল মুজামুল কাবীর : ৮৭৭]

চতুর্থঃ বিদআত সম্পর্কে তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীগণের অভিমত

১. ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ রহ. এক ব্যক্তির নিকট চিঠি লিখেছিলেন, তিনি তাতে বলেছিলেন, আমি তোমাকে আল্লাহ্র ভয়, তাঁর হুকুমের ব্যাপারে মধ্যপন্থা অবলম্বন, তাঁর নবীর সুন্নাতের অনুসরণ করা এবং কোন ব্যাপারে সুন্নাত প্রমাণিত হওয়ার পর তা ছেড়ে বিদআত গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার উপদেশ দিচ্ছি। [আবু দাউদ : ৪৬১২]

২. হাসান বসরী রহ. বলেন, আমল ব্যতীত কোন কথা ছহীহ হবে না, নিয়ত ব্যতীত কোন কথা ও আমল ছহীহ হবে না এবং সুন্নাতের অনুসরণ ব্যতীত কোন নিয়ত, আমল ও কথা ছহীহ হবে না। [শরহে উসূলে ই‘তিকাদে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ : ১/৬৩ নং ১৮]

৩. ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেন, তর্কবীদদের ব্যাপারে আমার ফায়সালা হল খেজুরের ডাল দ্বারা তাদের প্রহার কর, উটের উপর আরোহন করাও, প্রতিটি গোত্রের মধ্যে প্রদক্ষিণ করার কালে একথা বলতে থাক যে, এরা কুরআন ও সুন্নাত ছেড়ে তর্কশাস্ত্র গ্রহণ করেছে। তাই এটাই এর উপযুক্ত বদলা। [আল হিলইয়াহ লেখক আবু নাইম : ৯/১১৬]

৪. ইমাম মালেক রহ. বলেন, যে ইসলামে উত্তম মনে করে কোন বিদআত প্রচলন করল, সে যেন এ ধারণা পোষণ করল যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর রেসালতের দায়িত্বে খিয়ানত করেছেন। পক্ষান্তরে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ . অর্থঃ আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম। [মায়িদাঃ ৩]

অতএব এ যুগান্তকারী ঘোষণা কালে যে আমল দ্বীন হিসাবে স্বীকৃত ছিল না, তা আজও দ্বীন হতে পারে না। [আল-ইতিসাম, লেখক শাতেবী (র) : ১/৬৫]

৫. ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ. বলেন, সুন্নাতের উসূল হল, রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীগণ যা করেছেন তা গ্রহণ করা, তাদের অনুকরণ করা ও বিদআত পরিত্যাগ করা। কেননা সকল বিদআতই ভ্রষ্টতা। তাই ঝগড়া-বিবাদ পরিহার করা, প্রবৃত্তির অনুসারীদের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা, লৌকিকতা পরিহার করা এবং দ্বীনের ব্যাপারে বিতর্কে না জড়ানো উচিত। [শরহে উসূলে ই‘তিকাদে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ : ১/১৭৬]

পঞ্চমঃ বিদআত অগ্রহণযোগ্য হওয়ার কারণ

হহহহহহহহহহহহহহহহহহ১. একথা সত্য যে, মানুষের জ্ঞান অহীর জ্ঞান ব্যতীত অসম্পূর্ণ। নিশ্চয়ই বিদআত অহীর পরিপন্থী।

২. শরীয়ত পূর্ণাঙ্গ রূপে এসেছে, তাতে কম-বেশি করার কোন অবকাশ নেই।

৩. বিদআতপন্থী শরীয়তের বিরুদ্ধাচরণকারী।

৪. বিদআতপন্থী প্রবৃত্তির অনুসারী। কেননা জ্ঞান-বুদ্ধি যদি শরীয়ত সম্মত না হয়, তাহলে তা প্রবৃত্তির অনুসরণেই হয়।

৫. বিদআতপন্থী নিজেকে শরীয়ত প্রবর্তকের (আল্লাহ তা‘আলার) স্থলাভিষিক্ত বানিয়ে নেয়। কেননা শরীয়ত প্রবর্তক তা প্রবর্তন করে সে অনুযায়ী আমল করা অত্যাবশ্যক করেছেন আর বিদআত প্রবর্তক শরীয়তে নতুন কিছু প্রবর্তন করে তাই করতে চাচ্ছে। [আল-ইতিসাম, লেখক শাতেবী (র) : ১/৬১-৭০]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন