hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

তাওহীদ পরিচিতি

লেখকঃ ড. সালিহ ইবন ফাওযান আল-ফাওযান

২৬
তৃতীয়ত: যারা আল্লাহর নাম ও সিফাতকে অস্বীকার করে অথবা এর কিয়দংশ অস্বীকার করে তাদের কথার অপনোদন।
এ ধরনের লোক তিন ভাগে বিভক্ত:

[১] জাহমিয়া: তারা হচ্ছে জাহম ইবন সাফওয়ান-এর অনুসারী। এরা আল্লাহর সকল নাম এবং সিফাতকে অস্বীকার করে।

[২] মু‘তাযিলা: তারা ওয়াসিল ইবন ‘আতা-এর অনুসারী, যিনি হাসান আল-বাসরীর বৈঠক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন। এরা আল্লাহর নাম সাব্যস্ত করে এ বিশ্বাসের ভিত্তিতে যে, এগুলো যাবতীয় অর্থ থেকে মুক্ত শব্দমালা মাত্র। আর তারা আল্লাহর সকল গুণাবলীকে অস্বীকার করে।

[৩] আশা‘ইরাহ ও মাতুরিদিয়্যাহ এবং তাদের অনুসারীবৃন্দ: এরা আল্লাহর সকল নাম এবং কিছু সিফাতকে সাব্যস্ত করে আর বাকীগুলোকে অস্বীকার করে। যে সংশয়ের ওপর ভিত্তি করে তারা তাদের মতবাদকে দাঁড় করিয়েছে তা হচ্ছে, তাদের ধারণা অনুযায়ী এ সমস্ত সিফাত সাব্যস্ত করলে আল্লাহর সৃষ্টির সাথে আল্লাহর নিজেরই তুলনা হয়ে পড়ে। ফলে তা থেকে আমাদের সরে যাওয়া উচিত; কেননা মাখলুকের অনেককেই আল্লাহর সে সমস্ত নাম দ্বারাও নামকরণ করা হয় এবং আল্লাহর সে সমস্ত সিফাত বা গুণাবলী দ্বারাও তাদের গুণ বর্ণনা করা হয়। এর ফলে তাদের ধারণা অনুযায়ী নাম এবং সিফাতের শব্দ ও অর্থের মধ্যে উভয়ের একটি তুলনা ও অংশীদারিত্ব সৃষ্টি হওয়ার কারণে তাদের হাকীকত তথা মূল অর্থের মধ্যে তুলনা ও অংশীদারিত্ব অপরিহার্য্য হয়ে পড়ে। এতে তাদের দৃষ্টিতে খালেকের সাথে মাখলুকের তুলনাও অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। ফলে এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য তারা দু’টোর যে কোনো একটি পথ অবলম্বন করেছে-

এক: তারা এ সকল নাম ও গুণাবলীর ব্যাপারে কুরআন ও হাদিসের যে বক্তব্য রয়েছে, সেগুলোকে তাদের প্রকাশ্য অর্থ থেকে তা’বিল বা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে; যেমন তারা ওয়াজহ্ বা মুখমণ্ডলকে তা’বিল বা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে আল্লাহর জাত বা সত্ত্বা দ্বারা, ইয়াদকে তা’বিল করে নিয়ামত দ্বারা।

দুই: তারা নাম ও সিফাত সম্পর্কিত কুরআন ও হাদিসের বক্তব্যগুলোকে আল্লাহর প্রতি সমর্পণ করে এবং বলে যে, এগুলো দ্বারা কি উদ্দেশ্য আল্লাহই ভালো জানেন, আমাদের বোধগম্য নয়। আর এ আকীদা তারা পোষণ করে যে, এ নাম এবং গুণাবলী সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসের বক্তব্যসমূহ দ্বারা প্রকাশ্য অর্থ বুঝানো হয় নি। [পূর্বেই বলা হয়েছে যে, এটি সঠিক পদ্ধতি নয়, এটি ভুল বিশ্বাস। কারণ, আল্লাহ তা‘আলার কুরআন ও রাসূলের সুন্নাত কোনো ধাঁধাঁ গ্রন্থ নয় যে, এখানে এমন কিছু থাকবে যে, তার প্রকাশ্য অর্থ করা যাবে না, আর তার অর্থ বুঝা যাবে না। [সম্পাদক]]

আল্লাহর নাম এবং সিফাত যারা প্রথম অস্বীকার করেছে বলে জানা গেছে, তারা হচ্ছে আরবের কতিপয় মুশরিক। আল্লাহ যাদের ব্যাপারে এ বাণী নাযিল করেছিলেন,

﴿كَذَٰلِكَ أَرۡسَلۡنَٰكَ فِيٓ أُمَّةٖ قَدۡ خَلَتۡ مِن قَبۡلِهَآ أُمَمٞ لِّتَتۡلُوَاْ عَلَيۡهِمُ ٱلَّذِيٓ أَوۡحَيۡنَآ إِلَيۡكَ وَهُمۡ يَكۡفُرُونَ بِٱلرَّحۡمَٰنِۚ ﴾ [ الرعد : ٣٠ ]

“অনুরূপভাবে তোমাকে পাঠিয়েছি এমন এক জাতির মধ্যে যার পূর্বে আরো বহু জাতি অতিবাহিত হয়ে গেছে, যেন আমি তোমার কাছে যা ওহীরূপে প্রেরণ করেছি তা তুমি তাদের কাছে তিলাওয়াত কর। অথচ তারা রহমানের প্রতি কুফুরী ও অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে।” [সূরা আর-রা‘দ, আয়াত: ৩০]

এ আয়াতের শানে নযুল হচ্ছে, কুরাইশরা যখন শুনতে পেল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আর-রাহমান’ নামটি উল্লেখ করছেন তখন তারা তা অস্বীকার করল। আল্লাহ তখন তাদের ব্যাপারে নাযিল করলেন ﴿وَهُمۡ يَكۡفُرُونَ بِٱلرَّحۡمَٰنِۚ ﴾ “তারা রাহমানের প্রতি কুফুরী ও অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করছে”। ইবন জারির বলেন যে, এটি ছিল হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাদের মধ্যকার সন্ধির বিষয়ে লেখক লিখছিল, “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম”। তখন কুরাইশরা বলেছিল, ‘রাহমান’ নামটি তো আমাদের জানা নেই।

ইবন জারির ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে আরো বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাজদারত অবস্থায় দো‘আ করার সময় বলছিলেন, ইয়া রাহমান! ইয়া রাহীম! তখন মুশরিকরা বলল, এ ব্যক্তি ধারণা করে যে, সে এক সত্ত্বাকে আহ্বান করে অথচ সে তো দু’জনকে আহ্বান করছে। তখন নাযিল হলো,

﴿قُلِ ٱدۡعُواْ ٱللَّهَ أَوِ ٱدۡعُواْ ٱلرَّحۡمَٰنَۖ أَيّٗا مَّا تَدۡعُواْ فَلَهُ ٱلۡأَسۡمَآءُ ٱلۡحُسۡنَىٰۚ ﴾ [ الاسراء : ١١٠ ]

“আপনি বলুন যে, তোমরা আল্লাহকে আহ্বান করো বা রাহমানকে আহ্বান করো, যাকেই তোমরা আহ্বান করো না কেন তার তো রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১১০]

আল্লাহ তা‘আলা সূরা ফুরকানের মধ্যে বলেছেন,

﴿وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ ٱسۡجُدُواْۤ لِلرَّحۡمَٰنِ قَالُواْ وَمَا ٱلرَّحۡمَٰنُ ﴾ [ الفرقان : ٦٠ ]

“যখন তাদেরকে বলা হয় তোমরা রাহমানের উদ্দেশ্যে সাজদাহবনত হও তখন তারা বলে রাহমান কে?” [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৬০]

এ মুশরিক ব্যক্তিরাই হচ্ছে জাহমিয়া, মু‘তাযিলা, আশা‘ইরা এমন প্রত্যেক অস্বীকারকারীর পূর্বসুরী, যারা আল্লাহর সে সব নাম ও গুণাবলীকে অস্বীকার করে যে সব নাম তিনি নিজেই সাব্যস্ত করেছেন অথবা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জন্য সাব্যস্ত করেছেন।

আর তারা (মুশরিকরা) খারাপ উত্তরসুরীর জন্য কতই না খারাপ পূর্বসুরী।

আল্লাহর নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে এ ভ্রান্ত দলগুলোর বিরুদ্ধে কয়েকভাবে জওয়াব দেওয়া যেতে পারে।

প্রথম জওয়াব: আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাঁর নিজের জন্য অনেকগুলো নাম ও গুণাবলী সাব্যস্ত করেছেন এবং তাঁর জন্য তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও সেসব নাম ও গুণাবলী সাব্যস্ত করেছেন। সুতরাং সেগুলো বা তার কিয়দংশকে অস্বীকার করা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা সাব্যস্ত করেছেন তা অস্বীকার করারই শামিল। আর এ কাজটি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচারণ করারই নামান্তর।

দ্বিতীয় জবাব: মাখলুকের মধ্যে এ গুণাবলীর অস্তিত্ব থাকার কারণে কিংবা মাখলুকের কেউ কেউ এসব নামের কোনো কোনোটি দ্বারা নাম রাখার কারণে আল্লাহ ও তাঁর সৃষ্টির মধ্যে সাদৃশ্য হওয়া মোটেই অপরিহার্য হয় না। কেননা আল্লাহর রয়েছে এমন সব নাম ও গুণাবলী যা তাঁর জন্যই নির্দিষ্ট। আর মাখলুকেরও রয়েছে এমন নাম ও গুণাবলী যা তাদের জন্য নির্দিষ্ট। যেমন আল্লাহর এমন এক সত্ত্বা রয়েছে যা মাখলুকের সত্ত্বার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নয়। সুতরাং তাঁর যেসব নাম ও গুণাবলী রয়েছে তাও মাখলুকের নাম ও গুণাবলীর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নয়। নাম এবং সাধারণ অর্থের মধ্যে মিলিত হওয়ার দ্বারা এগুলোর মূল প্রকৃতিতে মিলিত হওয়াকে অপরিহার্য করে না। আল্লাহ নিজেই নিজের নাম দিয়েছেন ‘আল-‘আলীম’ ও ‘আল-হালীম’। অথচ তিনি তাঁর কোনো কোনো বান্দাকে ‘আলীম’ নামে অভিহিত করেছেন যেমন তিনি বলেছেন,

﴿وَبَشَّرُوهُ بِغُلَٰمٍ عَلِيمٖ ٢٨ ﴾ “আর তারা তাঁকে জ্ঞানী একটি সন্তানের সুসংবাদ দিল।” [সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত: ২৮]

এখানে জ্ঞানী সন্তান বলতে ইসহাক আলাইহিস সালামকে বুঝানো হয়েছে। অন্য আরেক বান্দাকে তিনি নাম দিয়েছেন ‘হালীম’। যেমন, তিনি বলেছেন, ﴿فَبَشَّرۡنَٰهُ بِغُلَٰمٍ حَلِيمٖ ١٠١ ﴾ “আর আমরা তাঁকে সুসংবাদ দিলাম একজন সহনশীল সন্তানের।” [সূরা আস-সাফফাত, আয়াত: ১০১] এখানে সহনশীল সন্তান বলতে ঈসমাইল আলাইহিস সালামকে বুঝানো হয়েছে। এখানে ‘আল-‘আলীম’ ও আলীম এক নয় যেমনিভাবে ‘আল-হালীম’ ও হালীম এক নয়।

আল্লাহ নিজেকে নাম দিয়েছেন ‘আস-সামি‘ই’ এবং ‘আল-বাছীর’ বলে। যেমন তিনি বলেছেন,

﴿إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ سَمِيعَۢا بَصِيرٗا ٥٨﴾ “নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৫৮]

তিনি তাঁর কিছু কিছু বান্দাকে সামি‘ই এবং বাছীর নামে অভিহিত করেছেন। যেমন তিনি বলেছেন,

﴿إِنَّا خَلَقۡنَا ٱلۡإِنسَٰنَ مِن نُّطۡفَةٍ أَمۡشَاجٖ نَّبۡتَلِيهِ فَجَعَلۡنَٰهُ سَمِيعَۢا بَصِيرًا ٢ ﴾ [ الانسان : ٢ ]

“অমরা তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিলিত শুক্রবিন্দু হতে, তাকে পরীক্ষা করার জন্য। এ জন্য আমরা তাকে করেছি শ্রবণশক্তি সম্পন্ন ও দৃষ্টিবান।” [সূরা আল-ইনসান, আয়াত: ২] এখানে উল্লিখিত সামীয়‘ বা ‘শ্রবণশক্তি সম্পন্ন’ আর ‘আস-সামিয়’ একরকম নয়। আবার ‘বাছীর’ বা দৃষ্টিবান ও ‘আল-বাছীর’ অনুরূপ নয়, উভয়ের মধ্যে পার্থক্য আছে।

আল্লাহ তা‘আলা নিজেকে নাম দিয়েছেন ‘আর-রাউফ’ এবং ‘আর-রাহীম’ বলে। তিনি বলেছেন,

﴿إِنَّ ٱللَّهَ بِٱلنَّاسِ لَرَءُوفٞ رَّحِيمٞ ٦٥ ﴾ “নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি দয়ালু ও করুণাময়।” [সূরা আল-হজ, আয়াত: ৬৫] অপরদিকে তিনি তাঁর কোনো কোনো বান্দাকে ‘রাউফ’ এবং ‘রাহীম’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন,

﴿لَقَدۡ جَآءَكُمۡ رَسُولٞ مِّنۡ أَنفُسِكُمۡ عَزِيزٌ عَلَيۡهِ مَا عَنِتُّمۡ حَرِيصٌ عَلَيۡكُم بِٱلۡمُؤۡمِنِينَ رَءُوفٞ رَّحِيمٞ ١٢٨ ﴾ [ التوبة : ١٢٨ ]

“নিশ্চয় তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকে একজন রাসূল। তোমাদেরকে যা বিপন্ন করে তা তাঁর কাছে কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১২৮]

এখানেও এ ‘রাউফ’ সে আর-রাউফের মত নয় যা আল্লাহর নাম এবং এ ‘রাহীম’ সে আর-রাহীমের মতোও নয় যা আল্লাহর নাম।

অনুরূপভাবে আল্লাহ নিজের অনেক গুণ বর্ণনা করেছেন এবং একইরূপ গুণের বর্ণনা তিনি তাঁর কোনো কোনো বান্দার ক্ষেত্রেও করেছেন। যেমন তিনি বলেছেন, ﴿وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيۡءٖ مِّنۡ عِلۡمِهِۦٓ﴾ “তারা তাঁর জ্ঞানের কোনো কিছুই পরিবেষ্টন করতে পারে না।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৫৫]

তিনি তাঁর নিজেকে জ্ঞানের গুণে গুণান্বিত করেছেন। আবার তিনি তাঁর বান্দাদেরও জ্ঞান আছে বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ﴿وَمَآ أُوتِيتُم مِّنَ ٱلۡعِلۡمِ إِلَّا قَلِيلٗا ٨٥ ﴾ “তোমাদেরকে খুব কম জ্ঞানই প্রদান করা হয়েছে।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৮৫] তিনি আরো বলেন, ﴿وَفَوۡقَ كُلِّ ذِي عِلۡمٍ عَلِيمٞ ٧٦ ﴾ “প্রত্যেক জ্ঞানীর ওপর রয়েছে এক মহা জ্ঞানী।” [সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৭৬] তিনি আরো বলেন, ﴿وَقَالَ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡعِلۡمَ ﴾ “যাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছিল তারা বলল।” [সূরা আল-কাসাস, আয়াত: ৮০] তিনি নিজের শক্তির গুণের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ ٤٠﴾ “নিশ্চয় আল্লাহ শক্তিশালী ও পরাক্রমশালী।” [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ৪০] তিনি আরো বলেন, ﴿إِنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلرَّزَّاقُ ذُو ٱلۡقُوَّةِ ٱلۡمَتِينُ ٥٨ ﴾ “নিশ্চয় আল্লাহ রিজিকদাতা, শক্তিমান পরাক্রমশালী।” [সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত: ৫৮] আবার তিনি তাঁর বান্দাদের ক্ষেত্রেও শক্তির কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন,

﴿۞ٱللَّهُ ٱلَّذِي خَلَقَكُم مِّن ضَعۡفٖ ثُمَّ جَعَلَ مِنۢ بَعۡدِ ضَعۡفٖ قُوَّةٗ ثُمَّ جَعَلَ مِنۢ بَعۡدِ قُوَّةٖ ضَعۡفٗا وَشَيۡبَةٗۚ ﴾ [ الروم : ٥٤ ]

“আল্লাহই তোমাদেরকে দূর্বল থেকে সৃষ্টি করেছেন তারপর দূর্বলতার পরেই শক্তি দিয়েছেন। তারপর শক্তি দেওয়ার পর আবারও দূর্বলতা ও বার্ধক্য দিয়েছেন।” [সূরা আর-রূম, আয়াত: ৫৪] এ রকম আরো অনেকগুলো আয়াত রয়েছে।

এ কথা সবার জানা যে, আল্লাহর নামসমূহ ও তাঁর গুণাবলী তাঁর সাথে নির্দিষ্ট এবং তাঁরই উপযোগী। আর সৃষ্টিজগতের নাম ও গুণাবলী তাদের সাথেই নির্দিষ্ট ও তাদের উপযোগী। অতএব, নাম এবং অর্থের মধ্যে একরকম হওয়ার দ্বারা তার হাক্বীকত ও মূলের মধ্যে একরকম হওয়া অপরিহার্য হয় না। কেননা দু’টো একই নাম বিশিষ্ট দুই ব্যক্তি এবং একই গুণ বিশিষ্ট দুই ব্যক্তি একরকম হওয়াটা অপরিহার্য নয় এটা স্পষ্ট।

তৃতীয় জবাব: যার কোনো পরিপূর্ণ গুণাবলী নেই সে ইলাহ হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। এজন্যই ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাঁর বাবাকে বলেছিলেন, ﴿لِمَ تَعۡبُدُ مَا لَا يَسۡمَعُ وَلَا يُبۡصِرُ ﴾ “আপনি কেন এমন বস্তুর ইবাদাত করছেন যা শুনেও না দেখেও না?” [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৪২] যারা গো-বাছুরের ইবাদাত করেছিল তাদের জবাব দিতে গিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ﴿أَلَمۡ يَرَوۡاْ أَنَّهُۥ لَا يُكَلِّمُهُمۡ وَلَا يَهۡدِيهِمۡ سَبِيلًاۘ ﴾ “তারা কি দেখে নি যে, এ গো-বাছুরটি তাদের সাথে কথা বলতে পারে না এবং তাদেরকে কোনো পথও দেখাতে পারে না?” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৪৮]

চতুর্থ জবাব: আল্লাহর জন্য গুণাবলী সাব্যস্ত করা তাঁর পরিপূর্ণতার পরিচায়ক। আর এ গুণাবলী তাঁর থেকে অস্বীকার করা তাঁর ক্ষেত্রে ত্রুটি সৃষ্টিকারী। কেননা যার কোনো গুণ নেই সে হয়ত অস্তিত্বহীন অথবা ত্রুটিপূর্ণ। আল্লাহ এসব কিছু থেকেই পবিত্র।

পঞ্চম জবাব: আল্লাহর গুণাবলীসমূহকে তার প্রকাশ্য ও স্পষ্ট অর্থ থেকে তাবিল করার কোনো দলীল নেই। তাই তাবিল করাটা বাতিল বলে গণ্য। আর বোধগম্য নয় এ যুক্তিতে এ গুণাবলীগুলোর অর্থ আল্লাহর কাছে সমর্পণ করা অর্থাৎ ‘আল্লাহই ভালো জানেন’ এ কথা বলার দ্বারা এটা অপরিহার্য হয় যে, আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে আমাদেরকে এমন বক্তব্য দ্বারা সম্বোধন করেছেন যার অর্থ আমরা বুঝি না। অথচ তিনি আমাদেরকে তাঁর নাম ধরে ডাকার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন। সুতরাং আমরা কিভাবে তাঁকে এমন কিছু দ্বারা ডাকবো যার অর্থ আমরা জানি না? আমাদেরকে পুরো কুরআন নিয়ে চিন্তা গবেষণা করার নির্দেশ দান করা হয়েছে। তিনি কিভাবে আমাদেরকে এমন কিছু নিয়ে চিন্তা-ভাবনার নির্দেশ প্রদান করেন যার অর্থ আমরা বুঝি না?

এসব কিছু থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, আল্লাহর নামসমূহ এবং তাঁর গুণাবলী অবশ্যই যেভাবে তাঁর জন্য উপযোগী হয় সেভাবে তাঁর জন্য সাব্যস্ত করাটা অত্যন্ত জরুরী। তবে পাশাপাশি মাখলুকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়াকে অস্বীকার করতে হবে। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١ ﴾ [ الشورى : ١١ ]

“কোন কিছুই তাঁর মতো নেই, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” [সূরা আশ-শুরা, আয়াত: ১১]

অতএব, তিনি কোনো কিছু তাঁর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়াকে অস্বীকার করেছেন এবং তাঁর নিজের জন্য শ্রুতিশক্তি ও দৃষ্টিশক্তিকে সাব্যস্ত করেছেন। এ দ্বারা বুঝা গেল যে, সিফাত সাব্যস্ত করার দ্বারা সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়া অপরিহার্য হয় না এবং এটাও বুঝা গেল যে, সাদৃশ্য অস্বীকার করেই সিফাতকে সাব্যস্ত করতে হবে। এটাই হচ্ছে আল্লাহর নামসমূহ ও গুণাবলীর ক্ষেত্রে অস্বীকার ও সাব্যস্ত করার ব্যাপারে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের নীতিকথার অর্থ অর্থাৎ কোনো সাদৃশ্য স্থাপন ছাড়াই তাঁর গুণাবলী সাব্যস্ত করতে হবে এবং বাতিল করা ছাড়াই তাঁর গুণাবলিকে পবিত্র রাখতে হবে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন