hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

হাদীছের প্রামাণিকতা

লেখকঃ প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব

২১
হাদীছ পরিবর্তনে মাযহাবী আলেমগণ
( علماء المذاهب في تحريف الحديث )

(১) শাফা‘আত : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন شَفَاعَتِى لأَهْلِ الْكَبَائِرِ مِنْ أُمَّتِى ‘আমার শাফা‘আত হবে আমার উম্মতের কাবীরা গোনাহগারদের জন্য’।[1]

মু‘তাযিলা বিদ্বানগণের মতে কাবীরা গোনাহগারগণ চিরস্থায়ী জাহান্নামী। তারা শাফা‘আতের হকদার নয়। অতএব তারা এ হাদীছে ‘কাবায়ের’ অর্থ করেছে ‘ছালাওয়াত’ অর্থাৎ ‘ছালাতসমূহের অধিকারী মুমিনদের জন্যই আমার শাফা‘আত হবে’।

কেননা ‘ছালাত’ হ’ল বড় ইবাদত। যেমন আল্লাহ বলেন, وَإِنَّهَا لَكَبِيرَةٌ إِلاَّ عَلَى الْخَاشِعِينَ ‘ছালাত নিশ্চই বড় বিষয়, বিনত বান্দাগণের উপরে ব্যতীত’ (বাক্বারাহ ২/৪৫)।[2]

(২) বিতর : আয়েশা (রাঃ) বলেন, كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُوتِرُ بِثَلاَثٍ لاَ يَقْعُدُ إِلاَّ فِى آخِرِهِنَّ . ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তিন রাক‘আত বিতর পড়তেন এবং শেষ রাক‘আত ব্যতীত বসতেন না’।[3] কিন্তু জনৈক হিন্দুস্তানী হানাফী আলেম তাঁদের মুদ্রিত ‘মুস্তাদরাকে হাকেমে’ নিজেদের মাযহাবের অনুকূলে সেখানে لاَ يَقْعُدُ পাল্টিয়ে لاَ يُسَلِّمُ করেছেন। অর্থাৎ তিনি শেষের রাক‘আত ব্যতীত ‘সালাম ফিরাতেন না’। কেননা হানাফীগণ তিন রাক‘আত বিতরের দ্বিতীয় রাক‘আতে বৈঠক করে থাকেন। অথচ মুস্তাদরাকের উক্ত হাদীছের নীচে ইমাম যাহাবীর ‘তালখীছে’ ঠিকই لاَ يَقْعُدُ শব্দ রয়েছে।[4] বায়হাক্বীতেও উক্ত হাদীছে لاَ يَقْعُدُ শব্দ এসেছে (৩/২৮ পৃঃ)।

(৩) তারাবীহ : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে বিশ রাক‘আত তারাবীহর কোন হাদীছ নেই। অতএব ওমর ফারূক (রাঃ) থেকে বিশ রাক‘আত তারাবীহ প্রমাণের জন্য আবুদাঊদে বর্ণিত عِشْرِينَ لَيْلَةً -কে عِشْرِينَ رَكْعَةً করা হয়েছে হিন্দুস্তানে মুদ্রিত আবুদাঊদ গ্রন্থে।[5] অর্থাৎ ‘বিশ রাত্রি’কে ‘বিশ রাক‘আত’ বানানো হয়েছে। হাদীছটি হ’ল : হাসান বলেন যে, ওমর (রাঃ) উবাই বিন কা‘বের ইমামতিতে তারাবীহর ছালাতে সবাইকে একত্রিত করেন এবং তিনি তাদেরকে ২০ রাত্রি ছালাত আদায় করান’...।[6] উল্লেখ্য যে, আরব জগতের প্রখ্যাত আলেম মুহাম্মাদ আলী ছাবূনী স্বীয় ‘তারাবীহ’ সংক্রান্ত বইয়ের ৫৬ পৃষ্ঠায় মুগনী ইবনু কুদামাহর বরাতে عِشْرِيْنَ رَكْعَةً লিখেছেন। এর দ্বারা তিনি উদ্ধৃতিতে ‘তাহরীফ’ (পরিবর্তন) করেছেন। কেননা মুগনীতে عِشْرِيْنَ لَيْلَةً রয়েছে। আহলেহাদীছগণের বিরুদ্ধে মুহাম্মাদ আলী ছাবূনীর বিদ্বেষ বিদ্বানগণের নিকটে বহুল পরিচিত। আল্লাহর গুণাবলী সম্পর্কিত তাঁর আক্বীদা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের বিরোধী।[7]

(৪) বাংলাদেশের বিভিন্ন বঙ্গানুবাদ তাফসীর ও হাদীছসমূহের কিতাবে মাযহাবী সংর্কীণতার ভুরি ভুরি প্রমাণ সুধী জনের নিকটে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত। সর্বাধিক প্রসিদ্ধ বঙ্গানুবাদ ‘মেশকাত শরীফে’ মু‘তাযিলা ও মুর্জিয়াদের অনুকূলে এবং হানাফী মাযহাবের পক্ষে হাদীছের ভুল অনুবাদ ও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে শায়খুল হাদীছ আযীযুল হক-এর বঙ্গানুবাদ বুখারীকে তো সরাসরি ‘রাদ্দুল বুখারী’ বলাই উত্তম। নানা টীকা-টিপ্পনী দিয়ে বুখারীর ছহীহ হাদীছগুলি রদ করাই যেন তাঁর বঙ্গানুবাদের মূল উদ্দেশ্য। কেননা ছহীহ বুখারীতে হানাফী মাযহাবের অনুকূলে ছালাতে নাভির নীচে হাত বাঁধা, নীরবে আমীন বলা, রাফ‘উল ইয়াদায়েন না করা, জানাযার ছালাতে সূরা ফাতিহা না পড়া, বিশ রাক‘আত তারাবী পড়া ইত্যাদির কোন হাদীছ নাই। বরং এসবের বিপক্ষে হাদীছ রয়েছে। অতএব যে কোন মূল্যে সেগুলিকে রদ করার জন্য টিকাতে রীতিমত মাযহাবী কাঁচি চালানো হয়েছে।

(৫) উছূলে ফিক্বহ বা ‘ফিক্বহের মূলনীতিসমূহ’ নামে উছূলুশ শাশী, নূরুল আনওয়ার প্রভৃতি যেসব বই পরবর্তীকালে রচিত হয়েছে এবং যেগুলি উপমহাদেশের মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে পাঠ্যবই হিসাবে গৃহীত হয়েছে, সেগুলিতে নিজেদের রচিত মূলনীতি বিরোধী ছহীহ হাদীছসমূহকে ন্যাক্কারজনকভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। যেমন ‘নূরুল আনওয়ার’-এর ‘খাছ’ অধ্যায়ে বর্ণিত ছালাতে তা‘দীলে আরকান ফরয হওয়ার বিষয়ে বুখারী ও মুসলিম-এর ছহীহ হাদীছকে প্রত্যাখ্যান করাসহ অন্যান্য উদাহরণ সমূহ। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী (১১১৪-১১৭৬/১৭০৩-১৭৬২) বলেন,

وَأَمْثَالُ ذَلِكَ أُصُوْلٌ مُخَرَّجَةٌ عَلَى كَلاَمِ الْأَئِمَّةِ، وَأَنَّهُ لاَ تَصِحُّ بِهَا رِوَايَةٌ عَنْ أَبِيْ حَنِيْفَةَ وَصَاحِبَيْهِ -

‘অনুরূপ বিষয়গুলির সবই ইমামদের কথার উপরে ভিত্তি করে উছূল বের করা হয়েছে। অথচ এগুলির কোন একটিরও বর্ণনা আবু হানীফা ও তাঁর দুই শিষ্য থেকে বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত নয়’।[8] এ কারণেই ভুক্তভোগীগণ উছূলে ফিক্বহ-কে ‘হাদীছ কাটা কাঁচি’ বলে থাকেন। অর্থাৎ নিজেদের মাযহাব বিরোধী ছহীহ হাদীছ সমূহকে কর্তন করার উদ্দেশ্যেই ‘উছূলে ফিক্বহ’ নামে পৃথক শাস্ত্র তৈরী করা হয়েছে।

(৪) ছালাতে নাভীর নীচে হাত বাঁধা : এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে কোন ছহীহ হাদীছ নেই। তাই মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহতে বর্ণিত হাদীছে (১/৩৯০) تَحْتَ السُّرَّةِ (নাভীর নীচে) কথাটি যোগ করে হাদীছ পরিবর্তন (তাহরীফ) করা হয়েছে। আর একাজটি করেছে করাচীর ‘এদারাতুল কুরআন ওয়াল উলূমিল ইসলামিয়াহ’ নামক প্রকাশনা সংস্থা’। ভারতের আনোয়ার শাহ কাষ্মীরীর ন্যায় বিখ্যাত হানাফী আলেমগণ যার প্রতিবাদ করেছেন।

(৫) রুকূর আগে ও পরে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করা : হানাফী মাযহাবে এটা নাজায়েয। অথচ চার খলীফা ও আশারায়ে মুবাশশরাহ সহ অন্যূন ৫০ জন ছাহাবী থেকে এ বিষয়ে অন্যূন ৪০০ ছহীহ হাদীছ ও আছার বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু স্রেফ মাযহাবী গোঁড়ামীর কারণে ভারতের হায়দারাবাদ ছাপা মুসনাদে আবু ‘আওয়ানাতে বর্ণিত وَلاَ يَرْفَعُهَا থেকে واو বিলুপ্ত করে স্রে্ফ لاَ يَرْفَعُهَا করা হয়েছে। যাতে মূল অর্থ সম্পূর্ণরূপে উল্টে গিয়ে নিজেদের মাযহাবের পক্ষে অর্থ করা যায়। অর্থাৎ মূলে ছিল عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا افْتَتَحَ الصَّلاَةَ رَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِيَ بِهِمَا وَقَالَ بَعْضُهُمْ : حَذْوَ مَنْكِبَيْهِ، وَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَرْكَعَ وَبَعْدَ مَا يَرْفَعُ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوعِ- وَلاَ يَرْفَعُهُمَا، وَقَالَ بَعْضُهُمْ : وَلاَ يَرْفَعُ بَيْنَ السَّجْدَتَيْنِ، وَالْمَعْنَى وَاحِدٌ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে দেখেছি যখন তিনি ছালাত শুরু করেন তখন দুই হাত কাঁধ পর্যন্ত উঁচু করেন এবং যখন রুকূতে যাওয়ার এরাদা করেন ও রুকূ থেকে মাথা উঠান। আর তিনি দু’হাত উঁচু করেননি, কেউ বলেছেন উঁচু করেননি দুই সিজদার মাঝে। অবশ্য অর্থ একই।’ অত্র বাক্যে وَلاَ يَرْفَعُهُمَا -এর واو (আর) শব্দটি বিলুপ্ত করলে অর্থ হবে হানাফী মাযহাব মতে তিনি রুকূতে যাওয়া এবং ওঠার সময় দু’হাত উঠাননি। অথচ মূল হাদীছ তার বিপরীত।[9]

শুধু তাই নয় খোদ ইমাম বুখারীর উস্তাদ হুমায়দীর (মৃ. ২১৯হিঃ) বিখ্যাত গ্রন্থ মুসনাদুল হুমায়দীতেও শাব্দিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। যেমন হাবীবুর রহমান আ‘যামীর তাহকীককৃত ভারতীয় ছাপা (১৩৮৭ হিঃ/১৯৬৩ খৃঃ) মুসনাদুল হুমায়দী হা/৬১৪-তে ইবনু ওমর (রাঃ) বর্ণিত রাফ‘উল ইয়াদায়েন-এর বিখ্যাত হাদীছে وَلاَ يَرْفَعُ بَيْنَ السَّجْدَتَيْنِ -এর আগে فَلاَ يَرْفَعُ وَلاَ بَيْنَ السَّجْدَتَيْنِ করা হয়েছে। অর্থাৎ ‘রুকূতে যাওয়া ও রুকূ থেকে ওঠার সময় রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন না এবং দুই সিজদাতেও করতেন না।’[10]

(৬) ইমামের তাক্বলীদ এবং নিজেদের মাযহাব প্রমাণ করতে গিয়ে সূরা নিসা ৫৯ আয়াতের তাফসীরে শায়খ মাহমূদুল হাসান দেউবন্দী (মৃ. ১৩৩৯ হিঃ/১৯১৪খৃঃ) বৃদ্ধি করেছেন أَطِيعُوا اللهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللهِ وَالرَّسُولِ وَأُوْلِى الْأَمْرِ مِنْكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللهِ ‘তোমরা কোন বিষয়ে মতভেদ করলে সেটা ফিরিয়ে দাও আল্লাহ, রাসূল ও তোমাদের মধ্যেকার আদেশদানের অধিকারীদের নিকট’-অর্থাৎ ইমামদের নিকট।[11]

(৭) কুরআন সহজে মুখস্তযোগ্য হওয়ার পক্ষে প্রমাণ পেশ করতে গিয়ে وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْآنَ لِلذِّكْرِ ، فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ؟ (ক্বামার ১৭) -এর মর্ম পরিবর্তন করে শায়খুল হাদীছ মাওলানা যাকারিয়া (মৃ. ১৪০২ হিঃ/১৯৮২ খৃঃ) অনুবাদ করেছেন, ہم نے كلام پاك كو حفظ كرنے كے لئے سہل كر ركها ہے، كوئى ہے حفظ كرنے والا؟ ‘আমরা কুরআনকে হিফয করার জন্য সহজ করেছি। আছে কি কেউ হেফযকারী?[12] অথচ অন্যান্য সকল বিদ্বান উক্ত আয়াতের অনুবাদ করেছেন, ‘আমরা কুরআনকে সহজ করেছি উপদেশ লাভের জন্য। অতএব আছে কি কেউ উপদেশ প্রহণকারী?’

এমনিভাবে অন্যান্য মাসআলার ব্যাপারেও হাদীছের মতন (Text) পরিবর্তন করা হয়েছে স্রেফ মাযহাবী গোঁড়ামীর বশবর্তী হয়ে। এমনকি কুরআনের কোন কোন আয়াতের পরিবর্তন আনা হয়েছে দুঃসাহসিকভাবে। এছাড়াও রয়েছে হাদীছের একাংশ, যা নিজ মাযহাবের অনূকূলে, সেটুকু গ্রহণ করা ও বাকী অংশ যা স্বীয় মাযহাবের প্রতিকূলে তা বর্জন করার অসংখ্য প্রমাণ। এমনকি ছহীহ হাদীছের অর্থ নিজ মাযহাবের অনুকূলে বিকৃত করার নযীরের কোন অভাব নেই। অনুরূপভাবে স্বীয় ইমামের পক্ষে ও অন্য মাযহাবের ইমামের বিরুদ্ধে নোংরা মন্তব্য করে হাদীছ বানানোর বহু প্রমাণ পেশ করা যাবে। বলা বাহুল্য, এগুলি হাদীছ অস্বীকার করার চাইতে কোন অংশে কম নয়। বরং তার চাইতে মারাত্মক। এছাড়াও রয়েছে যঈফ ও মওযূ হাদীছে ভরা, সাথে সাথে কুরআন-হাদীছের অপব্যাখ্যায় ভরপুর কিতাবসমূহ। অথচ সেগুলির প্রচলন জনসাধারণের মধ্যে খুবই বেশী।

এদিকে ইঙ্গিত করেই খ্যাতনামা হানাফী বিদ্বান আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌবী (১৮৪৮-১৮৮৬ খৃঃ) হানাফী ও শাফেঈ মাযহাবের ‘হেদায়া’ ও ‘আল-ওয়াজীয’ প্রভৃতি বিশ্বস্ত ফিক্বহ গ্রন্থগুলির অমার্জনীয় হাদীছ বিরোধিতা সম্পর্কে বলেন যে, এগুলি مَمْلُوْءٌ مِنَ الْأَحَادِيْثِ الْمَوْضُوْعَةِ، لاَ سِيِّمَا الْفَتَاوَي ‘মওযূ’ যা জাল হাদীছ দ্বারা পরিপূর্ণ, বিশেষ করে ফৎওয়াসমূহের ক্ষেত্রে’।[13]

এ দেশের প্রেক্ষাপটে ইতিপূর্বে আলোচিত লেখকদের অধিকাংশ বই ছাড়াও ইমাম গায্যালীর ‘এহ্ইয়াউ উলূমিদ্দীন’ বইটিও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়াও রয়েছে কম ইল্ম ধর্মীয় লেখকদের এবং মা‘রেফতী ছূফীদের অসংখ্য ভ্রান্তিকর লেখনী, যা হর-হামেশা মানুষের ঈমান ও আমলকে ত্রুটিপূর্ণ করে দিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে উক্ত লেখনীসমূহ নাস্তিক্যবাদী ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী লেখকদের সহায়ক হিসাবে কাজ করছে। অতএব আমাদের চোখ-কান সর্বদা খোলা রাখতে হবে। সম্ভবতঃ একারণেই খ্যাতনামা তাবেঈ বিদ্বান মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন (৩৩-১১০ হিঃ) বলেছেন, إِنَّ هَذَا الْعِلْمَ دِيْنٌ، فَانْظُرُوْا عَمَّنْ تَأْخُذُوْنَ دِيْنَكُمْ ‘নিশ্চয় কুরআন-হাদীছের ইল্মটাই হ’ল দ্বীন। অতএব তোমরা দেখ, কার নিকট থেকে দ্বীন গ্রহণ করছ’।[14]

ইমাম শাফেঈ (রহঃ)-এর উস্তাদ ইমাম অকী‘ (রহঃ) বলেন, من طلب الحديث كما جاءه فهو صاحب سنة، ومن طلب الحديث ليةقوَّي هواه فهو صاحب بدعة - ‘যে ব্যক্তি হাদীছ অনুসন্ধান করে যেভাবে তা এসেছে সেভাবে, ঐ ব্যক্তি সুন্নাতের অনুসারী। আর যে ব্যক্তি হাদীছ অনুসন্ধান করে তার নিজের ধারণাকে শক্তিশালী করার জন্য, ঐ ব্যক্তি বিদ‘আতী।’ তিনি আরও বলেন, أهل السنة يرون ما لهم وما عليهم وأهل البدعة لا يرون إلا ما لهم - ‘সুন্নাতের অনুসারীগণ দৃষ্টি দেন যা তাদের পক্ষে এবং বিপক্ষে। পক্ষান্তরে বিদ‘আতীগণ দৃষ্টি দেন কেবল যা তাদের পক্ষে।’[15] অর্থাৎ প্রকৃত আহলে সুন্নাত বা আহলেহাদীছগণ সর্বদা নিজেদের রায়ের উপরে ছহীহ হাদীছকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। সেটা তার নিজের ইচ্ছার পক্ষে হৌক বা বিপক্ষে হৌক, নির্বিবাদে তা মেনে নেন।

অনেকের ধারণা, হাদীছের খেদমত করলেই তিনি হাদীছপন্থী হয়ে থাকেন। কিন্তু আসলে তা নয়। মাযহাবী গোঁড়ামী এবং বিদ‘আতী আক্বীদার কারণে হাদীছের নূর তার উপর কার্যকর হয় না। তার জাজ্জ্বল্যমান প্রমাণ উপরের শায়খুল হাদীছগণ এবং দেউবন্দী ও ব্রেলভী শীর্ষস্থানীয় আলেমদের বিকৃত আক্বীদা ও আমলসমূহের উপরে লিখিত বই-কিতাব সমূহ।

মূলতঃ এসব কারণেই উপমহাদেশে মুসলিম সমাজে অনুপ্রবিষ্ট হয়েছে ‘ওয়াহদাতুল উজূদ’ ও ‘হুলূল’ অর্থাৎ অদ্বৈতবাদী ও সর্বেশ্বরবাদী কুফরী দর্শন। প্রচারিত হয়েছে বাতিল আক্বীদাসমূহ। যেমন, আল্লাহ নিরাকার। তিনি সর্বত্র বিরাজমান। ‘আব্দ ও মা‘বূদে কোন পার্থক্য নেই। যত কল্লা তত আল্লাহ। মুহাম্মাদ (ছাঃ) নূরের তৈরী। তিনি সর্বত্র হাযির-নাযির। পীর-মাশায়েখগণ মরে গিয়েও কবরে বেঁচে থাকেন ও ভক্তদের আবেদন শুনেন ও তা পূরণ করেন’ ইত্যাদি শিরকী বিশ্বাস সমূহ। সেজন্যেই মানুষ ছালাত-ছিয়ামের চাইতে তথাকথিত মা‘রেফত হাছিল, মীলাদ-ক্বিয়াম ও কবরপূজার প্রতি বেশী গুরুত্ব দিচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে বললে তারা জোরের সাথে বলেন, اَلتَّفْرِيْقُ بَيْنَ الْعَبْدِ وَالْمَعْبُوْدِ هُوَ الشِّرْكُ بِعَيْنِهِ - ‘সৃষ্টি ও সৃষ্টিকর্তার মধ্যে পার্থক্য করাটাই হ’ল প্রকৃত শিরক।’ এজন্য তারা কুরআনের আয়াতের বিকৃত অর্থ করতেও দ্বিধা করেননি। যেমন আল্লাহ বলেন, قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لاَ تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللهِ ‘আপনি বলুন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপরে যুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না’ (যুমার ৩৯/৫৩)। এখানে عِبَادِيْ (আমার বান্দাগণ) অর্থ করা হয়েছে عِبَادُ الرَّسُولِ ‘রাসূলের বান্দাগণ’ (নাঊযুবিল্লাহ)।[16]

এছাড়াও রয়েছেন অতি সাম্প্রতিক ভারতীয় মুহাদ্দিছ শায়খ হাবীবুর রহমান আ‘যমী হানাফী (১৩১৯-১৪১৩হিঃ/১৯০০-১৯৯২খৃঃ), যিনি হাদীছের উপরে ৪০ খন্ডের বিশাল গ্রন্থরাজি সংকলন করেছেন এবং হাদীছের খেদমতে জীবনের ৬০ বছরের অধিক সময় ব্যয় করেছেন। কিন্তু তার মাযহাবী গোঁড়ামীতে কোনই পরিবর্তন আসেনি।[17] ফলে তার এই বিরাট খিদমত পন্ডশ্রম ব্যতীত কিছুই হয়নি। আল্লাহ আমাদেরকে রক্ষা করুন!

পরিশেষে বলব, হাদীছ হ’ল ইসলামী শরী‘আতের দ্বিতীয় মূল স্তম্ভ। কুরআন ও হাদীছ উভয়েরই হেফাযতের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ গ্রহণ করেছেন। অতএব, হাদীছের প্রামাণিকতায় অবিশ্বাস বা সন্দেহ পোষণ কোন অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহ আমাদের দ্বীন ও ঈমানকে হেফাযত করুন- আমীন!

[1]. আবুদাঊদ, তিরমিযী, প্রভৃতি, হাদীছ ছহীহ, মিশকাত হা/৫৫৯৮।

[2]. যাওয়াবে‘ পৃঃ ৩১৯।

[3]. যাওয়াবে‘ পৃঃ ৩২৫; মুস্তাদরাকে হাকেম।

[4]. মুস্তাদরাকে হাকেম (হায়দরাবাদ : ১৩৩৫ হিঃ/১৯১০খৃঃ) পৃঃ ১/৩০৪।

[5]. যাওয়াবে‘ পৃঃ ৩২৮।

[6]. আবুদাঊদ হা/১৪২৯; ঐ, মিশকাত হা/১২৯৩ ‘কুনূত’ অনুচ্ছেদ, হাদীছ যঈফ।

[7]. বিস্তারিত আলোচনা দ্রষ্টব্য : যাওয়াবে‘ পৃঃ ৩২৫-৩৩১।

[8]. হজ্জাতুল্লাহিল বালেগাহ ১/১৬০ পৃঃ।

[9]. যাওয়াবে‘ ৩৩৭ পৃঃ।

[10]. যাওয়াবে‘ ৩৪০ পৃঃ।

[11]. যাওয়াবে‘ ৩২১ পৃঃ (টীকা-২)।

[12]. ফাযায়েলে কুরআন মাজীদ পৃঃ ৫৫।

[13]. মুক্বাদ্দামা নাফে‘ কবীর পৃঃ ১৩।

[14]. মুক্বাদ্দামা মুসলিম; মিশকাত হা/২৭৩ ‘ইল্ম’ অধ্যায়।

[15]. যাওয়াবে‘ পৃঃ ৩৫৪।

[16]. সাইয়েদ তালেবুর রহমান, আদ-দেউবন্দীয়াহ (রাওয়ালপিন্ডি, তাবি) পৃঃ ১৮-১৯; গৃহীত : হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মাক্কী (মৃঃ ১২৭৬ হিঃ), শামায়েমে এমদাদিয়া (মাদানী কুতুবখানা, মুলতান, পাকিস্তান) পৃঃ ৩৭, ৭১, ৮১। ব্রেলভীদের আক্বীদা ও ইতিহাস সম্পর্কে দ্রষ্টব্য : ইহসান ইলাহী যহীর প্রণীত ‘আল-ব্রেলভিয়াহ : আক্বায়েদ ওয়া তারীখ’ (রিয়াদ : ১৪০৪/১৯৮৪)।

[17]. যাওয়াবে‘ পৃঃ ৩১৪।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন