HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আল্লাহ তা‘আলার হক বা প্রাপ্য

লেখকঃ সানাউল্লাহ নজির আহমদ

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
আল্লাহ তা‘আলার হক বা প্রাপ্য

সানাউল্লাহ নজির আহমদ

সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

সংক্ষিপ্ত বর্ণনা... .. .
‘আল্লাহ তা‘আলার হক বা প্রাপ্য [পর্ব-১]’ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ। এতে নিম্নবর্ণিত বিষয়াবলি নিয়ে রচনা করা হয়েছে: আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, ইখলাসপূর্ণ ইবাদত, ভালো কাজ করা ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকা, আল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শন, আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা, নি‘আমতের কৃতজ্ঞতা ও তাকদীদের ওপর বিশ্বাস।

আল্লাহ তা‘আলার হক বা প্রাপ্য [পর্ব-১]
আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় বান্দাদের জলে-স্থলে, শরীরে ও দিগন্ত জুড়ে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য নি‘আমতরাজি দ্বারা আবৃত করে রেখেছেন। তিনি বলেন,

﴿أَلَمۡ تَرَوۡاْ أَنَّ ٱللَّهَ سَخَّرَ لَكُم مَّا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِ وَأَسۡبَغَ عَلَيۡكُمۡ نِعَمَهُۥ ظَٰهِرَةٗ وَبَاطِنَةٗ﴾ [ لقمان : ٢٠ ]

“তোমরা কি দেখ না আল্লাহ তা‘আলা নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডলে যা কিছু আছে, সবই তোমাদের কাজে নিয়োজিত করে দিয়েছেন এবং তোমাদের প্রতি তার প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নি‘আমতসমূহ পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন ?” [সূরা লুকমান, আয়াত: ২০] অন্যত্র বলেন,

﴿وَءَاتَىٰكُم مِّن كُلِّ مَا سَأَلۡتُمُوهُۚ وَإِن تَعُدُّواْ نِعۡمَتَ ٱللَّهِ لَا تُحۡصُوهَآۗ إِنَّ ٱلۡإِنسَٰنَ لَظَلُومٞ كَفَّارٞ ٣٤﴾ [ ابراهيم : ٣٤ ]

“যে সকল বস্তু তোমরা চেয়েছ, তার প্রত্যেকটি-ই তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন। যদি আল্লাহর নি‘আমত গণনা কর, তবে গুণে শেষ করতে পারবে না। আফসোস! মানুষ সীমাহীন অন্যায়পরায়ণ, অকৃতজ্ঞ।” [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৩৪]

﴿وَإِن تَعُدُّواْ نِعۡمَةَ ٱللَّهِ لَا تُحۡصُوهَآۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَغَفُورٞ رَّحِيمٞ ١٨﴾ [ النحل : ١٨ ]

“যদি আল্লাহর নি‘আমত গণনা কর, তবে গুণে শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ১৮]

তবে বান্দার ওপর সবচেয়ে বড় নি‘আমত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করা, কিতাব অবতীর্ণ করা ও ইসলামের হিদায়াত দান করা। এ জন্য বান্দা হিসেবে আমাদের ওপর ওয়াজিব আল্লাহ তা‘আলার প্রাপ্য অধিকার বা হকসমূহ জানা। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আবশ্যকীয় ও বাধ্যতামূলক হকসমূহ আদায়ের প্রতি যত্নবান থাকা। নিম্নে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি হক তথা অধিকারের বিবরণ তুলে ধরা হলো:

প্রথম অধিকার: আল্লাহ তা‘আলার ওপর ঈমান আনা
আল্লাহ তা‘আলার ওপর ঈমান চারটি জিনিস অন্তর্ভুক্ত করে:

এক: আল্লাহ তা‘আলার অস্তিত্বের ঈমান বা বিশ্বাস: আল্লাহ তা‘আলার মাখলুকাত তথা সৃষ্টি জগত দেখে তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। যেহেতু স্রষ্টা ছাড়া কোনো সৃষ্টি নিজেকে নিজে সৃষ্টি করতে কিংবা অস্তিত্বে আনতে পারে না; কারণ, প্রত্যেক জিনিসই তার অস্তিত্বের পূর্বে বিলুপ্ত, অবিদ্যমান ও অস্তিত্বহীন থাকে, বিধায় সৃষ্টি করার প্রশ্নই আসে না। আবার কোনো জিনিস হঠাৎ বা আকস্মিকভাবে অস্তিত্বে বা দৃশ্যপটে চলে আসবে তাও সম্ভব নয়। কারণ, প্রতিটি ঘটমান বস্তু বা সম্পাদিত কাজের নেপথ্যে সংঘটক বা সম্পাদনকারী থাকা জরুরী।

অতএব, যখন আমরা জানতে পারলাম এ বিশ্বজগত নিজে-নিজেই দৃশ্যপটে চলে আসে নি, আবার অকস্মাৎ তৈরি হয়েও যায় নি, তাই আমাদের কাছে সুনির্দিষ্টভাবে পরিষ্কার হয়ে গেল, এর একজন স্রষ্টা রয়েছেন। আর তিনি হলেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন।

দুই: রুবুবিয়্যাতের ঈমান: আল্লাহ তা‘আলার রুবুবিয়্যাতের ওপর ঈমান রাখা; অর্থাৎ সৃষ্টি তার, মালিকানা তার, পরিচালনার দায়িত্ব তার, তিনি ছাড়া কেউ মালিক নয়, কেউ পরিচালনাকারী নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿أَلَا لَهُ ٱلۡخَلۡقُ وَٱلۡأَمۡرُۗ تَبَارَكَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ﴾ [ الاعراف : ٥٤ ]

“শুনে রেখ, তাঁরই কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ করা।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৫৪]

আরো বলেন,

﴿ذَٰلِكُمُ ٱللَّهُ رَبُّكُمۡ لَهُ ٱلۡمُلۡكُۚ وَٱلَّذِينَ تَدۡعُونَ مِن دُونِهِۦ مَا يَمۡلِكُونَ مِن قِطۡمِيرٍ﴾ [ فاطر : ١٣ ]

“তিনিই আল্লাহ! তোমাদের রব, সাম্রাজ্য তাঁরই। তাঁর পরিবর্তে তোমরা যাদেরকে ডাক, তারা তুচ্ছ খেজুর আঁটিরও অধিকারী নয়।” [সূরা ফাতির, আয়াত: ১৩]

দুনিয়ার ইতিহাসে এমন কাউকে পাওয়া যায় নি যে, অন্তরের সাক্ষ্য, প্রাকৃতিক বাস্তবতার প্রতি দৃষ্টিপাত করে আল্লাহ তা‘আলার রুবুবিয়্যাতকে অস্বীকার করেছে। তবে এমন অনেকেই আছে, যারা জেদ ধরে অহংকারবশত, নিজের কথায় আস্থা না থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ তা‘আলার রুবুবিয়্যাত অস্বীকার করেছে। যেমন, ফির‘আউন তার সম্প্রদায়কে বলেছিল:

﴿أَنَا۠ رَبُّكُمُ ٱلۡأَعۡلَىٰ﴾ [ النازعات : ٢٤ ]

“আমিই তোমাদের বড় রর।” [সূরা আন-নাযি‘আত, আয়াত: ২৪] অন্য জায়গায় বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلۡمَلَأُ مَا عَلِمۡتُ لَكُم مِّنۡ إِلَٰهٍ غَيۡرِي﴾ [ القصص : ٣٨ ]

“হে পরিষদবর্গ, আমি জানি না যে আমি ব্যতীত তোমাদের কোনো উপাস্য আছে কি-না।” [সূরা আল-কাসাস, আয়াত: ৩৮] ফির‘আউন নিজের ওপর আস্থা কিংবা বিশ্বাস রেখে এ কথা বলে নি। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,

﴿وَجَحَدُواْ بِهَا وَٱسۡتَيۡقَنَتۡهَآ أَنفُسُهُمۡ ظُلۡمٗا وَعُلُوّٗا﴾ [ النمل : ١٤ ]

“তারা অহংকার করে নিদর্শনাবলী প্রত্যাখ্যান করল, যদিও তাদের অন্তর এগুলোকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছিল।” [সূরা আন-নামল, আয়াত: ১৪] মূসা আলাইহিস সালাম ফির‘আউনকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন,

﴿لَقَدۡ عَلِمۡتَ مَآ أَنزَلَ هَٰٓؤُلَآءِ إِلَّا رَبُّ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ بَصَآئِرَ وَإِنِّي لَأَظُنُّكَ يَٰفِرۡعَوۡنُ مَثۡبُورٗا﴾ [ الاسراء : ١٠٢ ]

“তুমি অবশ্যই জান যে, আসমান ও জমিনের রবই এসব নিদর্শনাবলী প্রত্যক্ষ প্রমাণস্বরূপ নাযিল করেছেন। হে ফির‘আউন, আমার ধারণা তুমি ধ্বংস হতে চলেছ।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১০২]

এর দ্বারা প্রমাণিত হলো যে মুশরিকরা আল্লাহ তা‘আলার الألوهية ‘উলুহিয়্যাতে’ শরীক করেও الربوبية ‘রুবুবিয়্যাতে’-কে স্বীকার করতো। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿قُل لِّمَنِ ٱلۡأَرۡضُ وَمَن فِيهَآ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ٨٤ سَيَقُولُونَ لِلَّهِۚ قُلۡ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ ٨٥ قُلۡ مَن رَّبُّ ٱلسَّمَٰوَٰتِ ٱلسَّبۡعِ وَرَبُّ ٱلۡعَرۡشِ ٱلۡعَظِيمِ ٨٦ سَيَقُولُونَ لِلَّهِۚ قُلۡ أَفَلَا تَتَّقُونَ ٨٧ قُلۡ مَنۢ بِيَدِهِۦ مَلَكُوتُ كُلِّ شَيۡءٖ وَهُوَ يُجِيرُ وَلَا يُجَارُ عَلَيۡهِ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ٨٨ سَيَقُولُونَ لِلَّهِۚ قُلۡ فَأَنَّىٰ تُسۡحَرُونَ ٨٩﴾ [ المؤمنون : ٨٤، ٨٩ ]

“বলুন, পৃথিবী এবং পৃথিবীতে যারা আছে, তা কার? যদি তোমরা জান, তবে বল। এখন তারা বলবে: সবই আল্লাহর। বলুন, তবুও কি তোমরা চিন্তা করো না? বলুন: সপ্ত আকাশ ও মহা-আরশের মালিক কে? এখন তারা বলবে আল্লাহ। বলুন, তবুও কি তোমরা ভয় করবে না ? বলুন, তোমাদের জানা থাকলে বল, কার হাতে সব বস্তুর কর্তৃত্ব, যিনি রক্ষা করেন এবং যার কবল থেকে কেউ রক্ষা করতে পারে না। এখন তারা বলবে আল্লাহর। বলুন, তাহলে কোথা থেকে তোমাদেরকে জাদু করা হচ্ছে?” [সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ৭৯-৮৪] অন্যত্র বলা হচ্ছে:

﴿وَلَئِن سَأَلۡتَهُم مَّنۡ خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ لَيَقُولُنَّ خَلَقَهُنَّ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡعَلِيمُ ٩﴾ [ الزخرف : ٩ ]

“(হে নবী) আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন: কে নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডল সৃষ্টি করেছে? তারা অবশ্যই বলবে, এগুলো সৃষ্টি করেছেন পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহ।” [সূরা আয-যুখরূপ, আয়াত: ৯] আরো বলা হচ্ছে:

﴿وَلَئِن سَأَلۡتَهُم مَّنۡ خَلَقَهُمۡ لَيَقُولُنَّ ٱللَّهُۖ فَأَنَّىٰ يُؤۡفَكُونَ ٨٧﴾ [ الزخرف : ٨٧ ]

“আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, কে তাদেরকে সৃষ্টি করেছে ? তবে অবশ্যই তারা বলবে আল্লাহ।” [সূরা আয-যুখরুফ, আয়াত: ৮৭]

তিন: আল্লাহ তা‘আলার উলুহিয়্যাতের ওপর ঈমান: অর্থাৎ ‘আল্লাহ সুবহানাহু ও তা‘আলাই একমাত্র উপাস্য’ এ কথার ওপর ঈমান রাখা। যথা তিনি সত্যিকারার্থে প্রভূ। বিনয় ও মহব্বত সম্বলিত ইবাদতের উপযুক্ত। তিনি ছাড়া কেউ ইবাদতের উপযুক্ত নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَإِلَٰهُكُمۡ إِلَٰهٞ وَٰحِدٞۖ لَّآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلرَّحۡمَٰنُ ٱلرَّحِيمُ ١٦٣﴾ [ البقرة : ١٦٣ ]

“আর তোমাদের উপাস্য একমাত্র তিনিই। তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই, তিনিই কেবল পরম করুণাময় দয়ালু।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৬৩] আরো বলেন,

﴿ءَأَرۡبَابٞ مُّتَفَرِّقُونَ خَيۡرٌ أَمِ ٱللَّهُ ٱلۡوَٰحِدُ ٱلۡقَهَّارُ ٣٩ مَا تَعۡبُدُونَ مِن دُونِهِۦٓ إِلَّآ أَسۡمَآءٗ سَمَّيۡتُمُوهَآ أَنتُمۡ وَءَابَآؤُكُم مَّآ أَنزَلَ ٱللَّهُ بِهَا مِن سُلۡطَٰنٍۚ﴾ [ يوسف : ٣٩، ٤٠ ]

“ভিন্ন ভিন্ন অনেক রব ভালো, না পরাক্রমশালী এক আল্লাহ? তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে নিছক কতগুলো নামের ইবাদত কর, সেগুলো তোমরা এবং তোমাদের বাপ-দাদারা সাব্যস্ত করে নিয়েছ। আল্লাহ এদের ব্যাপারে কোনো প্রমাণ অবতীর্ণ করেন নি।” [সূরা ইউসূফ, আয়াত: ৩৯-৪০]

আল্লাহ তা‘আলা উল্লিখিত জিনিসগুলোর প্রভূত্ব কিছু যুক্তির মাধ্যমে খণ্ডন করেছেন:

১. মুশরিকরা যে সমস্ত বস্তুকে প্রভূ বানিয়েছিল, তাদের ভিতর প্রভূত্বের কোনো গুণ বিদ্যমান নেই। এগুলো সৃষ্টি করতে পারে না, কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না এবং তাদেরকে অনিষ্ট থেকে রক্ষা করতে পারে না। এরা তাদের জীবন-মৃত্যুর মালিক নয়। আসমান-যমীনের মাঝে কোনো জিনিসের মালিক নয় এবং এতে তাদের অংশীদারিত্বও নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَٱتَّخَذُواْ مِن دُونِهِۦٓ ءَالِهَةٗ لَّا يَخۡلُقُونَ شَيۡ‍ٔٗا وَهُمۡ يُخۡلَقُونَ وَلَا يَمۡلِكُونَ لِأَنفُسِهِمۡ ضَرّٗا وَلَا نَفۡعٗا وَلَا يَمۡلِكُونَ مَوۡتٗا وَلَا حَيَوٰةٗ وَلَا نُشُورٗا ٣﴾ [ الفرقان : ٣ ]

“তারা তার পরিবর্তে কত উপাস্য গ্রহণ করেছে, যারা কিছুই সৃষ্টি করে না এবং তারা নিজেরাই সৃষ্ট, নিজেদের ভালোও করতে পারে না, মন্দও করতে পারে না। জীবন, মরণ এবং পুনরুজ্জীবনেরও মালিক নয় তারা।” [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৩] তিনি আরো বলেন,

﴿أَيُشۡرِكُونَ مَا لَا يَخۡلُقُ شَيۡ‍ٔٗا وَهُمۡ يُخۡلَقُونَ ١٩١ وَلَا يَسۡتَطِيعُونَ لَهُمۡ نَصۡرٗا وَلَآ أَنفُسَهُمۡ يَنصُرُونَ ١٩٢﴾ [ الاعراف : ١٩١، ١٩٢ ]

“তারা কি এমন কাউকে শরীক সাব্যস্ত করে যে একটি বস্তুও সৃষ্টি করে নি বরং তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে? আর তারা না তাদের সাহায্য করতে পারে, না নিজের সাহায্য করতে পারে!” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৯১-১৯২]

তাদের বানানো প্রভূদের এমন অসহায়ত্ব ও দুরবস্থা প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে এগুলোকে প্রভূ বানানো নিরেট বোকামি, চরম বাতুলতা।

২. মুশরিকরা বিশ্বাস করতো -আল্লাহ তা‘আলাই প্রতিপালক, সৃষ্টিকর্তা, তার হাতেই সমস্ত জিনিসের মালিকানা, তিনি রক্ষা করেন, তার কবল থেকে কেউ রক্ষা করতে পারে না। আল-কুরআনে বলা হচ্ছে:

﴿وَلَئِن سَأَلۡتَهُم مَّنۡ خَلَقَهُمۡ لَيَقُولُنَّ ٱللَّهُۖ فَأَنَّىٰ يُؤۡفَكُونَ ٨٧﴾ [ الزخرف : ٨٧ ]

“আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন কে তাদেরকে সৃষ্টি করেছে? তাহলে অবশ্যই তারা বলবে, আল্লাহ।” [সূরা আয-যুখরুফ, আয়াত: ৮৭] আরো বলা হচ্ছে:

﴿قُلۡ مَن يَرۡزُقُكُم مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِ أَمَّن يَمۡلِكُ ٱلسَّمۡعَ وَٱلۡأَبۡصَٰرَ وَمَن يُخۡرِجُ ٱلۡحَيَّ مِنَ ٱلۡمَيِّتِ وَيُخۡرِجُ ٱلۡمَيِّتَ مِنَ ٱلۡحَيِّ وَمَن يُدَبِّرُ ٱلۡأَمۡرَۚ فَسَيَقُولُونَ ٱللَّهُۚ فَقُلۡ أَفَلَا تَتَّقُونَ ٣١﴾ [ يونس : ٣١ ]

“তুমি জিজ্ঞেস কর, কে রুজি দান করে তোমাদেরকে আসমান থেকে ও জমিন থেকে কিংবা কে তোমাদের কান ও চোখের মালিক? তাছাড়া কে জীবিতকে মৃতের ভেতর থেকে বের করেন? এবং কেইবা মৃতকে জীবিতের মধ্য থেকে বের করেন? কে করেন কর্ম-সম্পাদনের ব্যবস্থাপনা? তখন তারা বলে উঠবে, আল্লাহ! তুমি বল, তারপরেও তাকওয়া অবলম্বন করছ না?” [সূরা ইউনূস, আয়াত: ৩১]

তারা যখন নিজেরাই এর সাক্ষ্য প্রদান করল, যুক্তির ভিত্তিতে এখন তাদের অবশ্য কর্তব্য একমাত্র প্রভূ, একমাত্র প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করা। ধারণাপ্রসূত ঐ সমস্ত প্রভূদের নয় -যারা নিজেদের কোনো উপকার করতে পারে না। নিজেদের থেকে কোনো বিপদ হটাতে জানে না।

চার: আল্লাহ তা‘আলার নাম ও সিফাতের ওপর ঈমান: বান্দা হিসেবে আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান আনবে। যে সমস্ত নাম ও সিফাত (বিশেষ্য ও বিশেষণ) আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় কিতাব অথবা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় হাদীসে উল্লেখ করেছেন, সেগুলোকে আল্লাহ তা‘আলার নাম ও সিফাত হিসেবে আল্লাহ তা‘আলার শানের সাথে উপযুক্ত মতে বিশ্বাস করবে, একমাত্র তার জন্য প্রযোজ্য বলে জ্ঞান করবে। কোনো ধরনের অপব্যাখ্যা, নিষ্কর্মকরণ, আকৃতি প্রদান ও সামঞ্জস্য বিধান করবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلِلَّهِ ٱلۡأَسۡمَآءُ ٱلۡحُسۡنَىٰ فَٱدۡعُوهُ بِهَاۖ وَذَرُواْ ٱلَّذِينَ يُلۡحِدُونَ فِيٓ أَسۡمَٰٓئِهِۦۚ سَيُجۡزَوۡنَ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٨٠﴾ [ الاعراف : ١٨٠ ]

“আর আল্লাহর রয়েছে উত্তম নামসমূহ, কাজেই সে নাম ধরেই তাকে আহ্বান কর। আর তাদেরকে বর্জন কর, যারা তার নামের ব্যাপারে বাঁকা পথে চলে। তারা নিজেদের কৃতকর্মের ফল শীঘ্রই পাবে।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৮০] অন্যত্র বলেন,

﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ﴾ [ الشورا : ١١ ]

“কোনো কিছুই তার অনুরূপ নয়। তিনি সব শুনেন, দেখেন।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১১]

দ্বিতীয় অধিকার: পরিপূর্ণ ইখলাস ও আন্তরিকতাসহ একমাত্র আল্লাহর ইবাদত উৎসর্গ করা
এর পদ্ধতি হলো, বান্দা তার আমলের মাধ্যমে একমাত্র তা‘আলার সন্তুষ্টি কামনা করবে। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা এর প্রতি নির্দেশ দিয়ে বলেছেন:

﴿إِنَّآ أَنزَلۡنَآ إِلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ بِٱلۡحَقِّ فَٱعۡبُدِ ٱللَّهَ مُخۡلِصٗا لَّهُ ٱلدِّينَ ٢﴾ [ الزمر : ٢ ]

“আমি আপনার ওপর এ কিতাব যথার্থ-ই নাযিল করেছি। অতএব, আপনি নিষ্ঠার সাথে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করুন।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ২] আরো বলেন,

﴿قُلۡ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحۡيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ١٦٢ لَا شَرِيكَ لَهُۥۖ وَبِذَٰلِكَ أُمِرۡتُ وَأَنَا۠ أَوَّلُ ٱلۡمُسۡلِمِينَ ١٦٣﴾ [ الانعام : ١٦٢، ١٦٣ ]

“আপনি বলুন: আমার সালাত, আমার কুরবানি এবং আমার জীবন-মরণ বিশ্ব প্রতিপালকের জন্য। তার কোনো অংশীদার নেই। আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রথম আনুগত্য পোষণকারী।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৬২-১৬৩] সহীহ হাদীসে কুদসীতে আছে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

أنا أغنى الشركاء عن الشرك، من عمل عملا أشرك فيه غيري فهو للذي أشرك به وأنا منه برىء .

“আমি সমস্ত অংশীদারদের ভিতর বেশি অমুখাপেক্ষী, যে এমন আমল করল, যার ভিতর সে আমার সাথে অন্য কাউকে অংশীদার করেছে, সে আমল ঐ অংশীদারের জন্য, আমি তার থেকে মুক্ত।”

মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি একটি গাধার পিঠে রাসূলের সঙ্গী ছিলাম। যে উটকে ‘উফাইর’ বলা হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন:

«يا معاذ هل تدري حق الله على عباده، وما حق العباد على الله؟ قلت : الله ورسوله أعلم،قال : فإن حق الله على العباد أن يعبدوه ولا يشركوا به شيئا، وحق العباد على الله أن لايعذب من لايشرك به شيئا فقلت : يارسول الله، أفلا أبشر الناس؟ قال لاتبشرهم فيتكلوا» .

“হে মু‘আয, তুমি কি জান বান্দার ওপর আল্লাহ তা‘আলার কি কি হক রয়েছে? এবং আল্লাহ তা‘আলার ওপর বান্দার কী কী হক রয়েছে? আমি উত্তর দিলাম: আল্লাহ এবং তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভালো জানেন। তিনি বললেন, বান্দার ওপর আল্লাহ তা‘আলার হক হচ্ছে: তারা তাঁর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরীক করবে না। আল্লাহ তা‘আলার ওপর বান্দার হক হচ্ছে, যে তার সাথে কাউকে শরীক করবে না, তাকে তিনি শাস্তি দিবেন না। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমি কি সকলকে এর সুসংবাদ দেব না? তিনি বললেন তাদের সুসংবাদ দিও না, তাহলে তারা কর্মহীন হয়ে যাবে।” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,

«إن الله لا ينظر إلى أجسامكم، ولا إلى صوركم، ولكن ينظر إلى قلوبكم وأعمالكم، وقال : إذا جمع الله الناس يوم القيامة ليوم لا ريب فيه، نادى مناد من كان أشرك فى عمله لله أحدا فليطلب ثوابه من عند غير الله، فإن الله أغنى الشركاء عن الشرك» .

“আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের শরীর ও চেহারার দিকে তাকান না। তবে তিনি তোমাদের অন্তর ও আমলের দিকে তাকান। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন: কিয়ামতের দিবসে (যে দিবসের ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই) যখন আল্লাহ তা‘আলা সকল মানুষকে জমা করবেন, একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিবে, যে ব্যক্তি তার আমলের ভিতর অন্য কাউকে শরীক করেছে, সে যেন তার সাওয়াব আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া যাকে শরীক করেছে তার কাছ থেকে চেয়ে নেয়। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা সমস্ত শরীকদের থেকে অমুখাপেক্ষী।” [হাদীসটি ইমাম তিরমিযী রহ. বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন হাসান গরীব]

একজন বান্দা হিসেবে সকলের জন্য জরুরি -ইবাদত বিষয়ে আন্তরিকতার প্রতি গুরুত্বারোপ করা এবং সেভাবে আল্লাহ তা‘আলার প্রাপ্য আদায় করা, এর বিপরীত অর্থাৎ শির্ক থেকে বিরত থাকা।

আল্লাহ তা‘আলার হক বা প্রাপ্য [পর্ব-২] সংক্ষিপ্ত বর্ণনা... .. .
‘আল্লাহ তা‘আলার হক বা প্রাপ্য [পর্ব-২]’ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ। এতে নিম্নবর্ণিত বিষয়াবলি নিয়ে রচনা করা হয়েছে: আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, ইখলাসপূর্ণ ইবাদত, ভালো কাজ করা ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকা, আল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শন, আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা, নি‘আমতের কৃতজ্ঞতা ও তাকদীদের ওপর বিশ্বাস।

তৃতীয় অধিকার : আল্লাহর আদেশসমূহ পালন করা ও নিষোধাবলি পরিহার করা
বান্দার ওপর আল্লাহ তা‘আলার সবচেয়ে বড় হক হলো, তার আদেশ বাস্তবায়ন ও নিষেধ পরিহার করার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার অর্থবহ আনুগত্য করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَلَا تُبۡطِلُوٓاْ أَعۡمَٰلَكُمۡ ٣٣﴾ [ محمد : ٣٣ ]

“হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের আনুগত্য কর এবং নিজেদের কর্ম বিনষ্ট করো না।” [সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ৩৩] আল্লাহ আরো বলেন,

﴿وَٱتَّقُواْ ٱلنَّارَ ٱلَّتِيٓ أُعِدَّتۡ لِلۡكَٰفِرِينَ ١٣١ وَأَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَ لَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُونَ ١٣٢﴾ [ ال عمران : ١٣١، ١٣٢ ]

“এবং তোমরা সে আগুন থেকে বেঁচে থাক, যা কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। আর তোমরা আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর, যাতে তোমাদের ওপর রহমত নাযিল করা হয়।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩১-১৩২] তিনি আরো বলেন,

﴿قُلۡ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَۖ فَإِن تَوَلَّوۡاْ فَإِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ ٱلۡكَٰفِرِينَ ٣٢﴾ [ ال عمران : ٣٢ ]

“বলুন, আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের আনুগত্য কর। বস্তুত যদি তারা বিমুখতা অবলম্বন করে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদেরকে ভালোবাসেন না।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩২] অন্যত্র আরো বলেন,

﴿وَأَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَٱحۡذَرُواْۚ فَإِن تَوَلَّيۡتُمۡ فَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّمَا عَلَىٰ رَسُولِنَا ٱلۡبَلَٰغُ ٱلۡمُبِينُ ٩٢﴾ [ المائ‍دة : ٩٢ ]

“তোমরা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের অনুগত হও এবং আত্মরক্ষা কর। কিন্তু যদি তোমরা বিমুখ হও তবে জেনে রাখ, আমার রাসূলের দায়িত্ব প্রকাশ্য প্রচার বৈ নয়।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৯২] আল্লাহ আরো বলেন,

﴿وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ يُدۡخِلۡهُ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُۖ وَمَن يَتَوَلَّ يُعَذِّبۡهُ عَذَابًا أَلِيمٗا﴾ [ الفتح : ١٧ ]

“যে আল্লাহ তা‘আলা ও তার রাসূলের আনুগত্য করবে তাকে তিনি জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত হয়। পক্ষান্তরে যে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিবেন।” [সূরা আল-ফতাহ, আয়াত: ১৭] আল্লাহ আরো বলেন,

﴿وَمَا كَانَ لِمُؤۡمِنٖ وَلَا مُؤۡمِنَةٍ إِذَا قَضَى ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥٓ أَمۡرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ ٱلۡخِيَرَةُ مِنۡ أَمۡرِهِمۡۗ وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلَٰلٗا مُّبِينٗا ٣٦﴾ [ الاحزاب : ٣٦ ]

“আল্লাহ তা‘আলা ও তার রাসূল কোনো কাজের আদেশ করলে কোনো ঈমানদার পুরুষ ও নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা নেই। যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৬]

হে মুসলিম সম্প্রদায়, আমাদের সকলের জন্য একান্ত জরুরী আগ্রহভরে ও যত্নসহকারে আল্লাহ তা‘আলার এ সমস্ত হক আদায় করা। যাতে আমাদের ভিতর প্রকৃত মুমিনের গুণাবলী বদ্ধমূল হয়। যাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَقَالُواْ سَمِعۡنَا وَأَطَعۡنَاۖ غُفۡرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيۡكَ ٱلۡمَصِيرُ﴾ [ البقرة : ٢٨٥ ]

“তারা বলে, আমরা শুনেছি এবং কবুল করেছি। আমরা তোমার ক্ষমা চাই, হে আমাদের রব। তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৮৫]

চতুর্থ অধিকার: আল্লাহ তা‘আলাকে সম্মানপ্রদর্শন ও তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা
বান্দার পক্ষ থেকে আল্লাহ তা‘আলার অন্যতম প্রাপ্য অধিকার সম্মান, শ্রদ্ধা ও মর্যাদা, যা কয়েকভাবে প্রদান করা যায়।

১. আল্লাহ তা‘আলাকে দোষ-ত্রুটিমুক্ত বলে বিশ্বাস করা। মর্যাদাপূর্ণ ও পরিপূর্ণ গুণে গুণান্বিত মনে করা। যেভাবে তিনি নিজেকে কুরআনে গুণান্বিত করেছেন অথবা যেভাবে তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসে সম্বোধন করেছেন।

২. তার আদেশ ও নিষেধাবলীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। তার বর্ণিত সীমারেখার ভিতর স্বীয় জীবন পরিচালনা করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَن يُعَظِّمۡ حُرُمَٰتِ ٱللَّهِ فَهُوَ خَيۡرٞ لَّهُۥ عِندَ رَبِّهِۦ﴾ [ الحج : ٣٠ ]

“আর কেউ আল্লাহ তা‘আলার সম্মানযোগ্য বিধানাবলির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করল, রবের নিকট তা তার জন্যে উত্তম।” [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ৩০] আল্লাহ আরো বলেন,

﴿ذَٰلِكَۖ وَمَن يُعَظِّمۡ شَعَٰٓئِرَ ٱللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقۡوَى ٱلۡقُلُوبِ ٣٢﴾ [ الحج : ٣٢ ]

“আর যে আল্লাহ তা‘আলার নামযুক্ত বস্তুসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করল, তা তো তার হৃদয়ের আল্লাহভীতি প্রসূত।” [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ৩২]

আল্লাহ তা‘আলাকে সম্মান প্রদর্শন করা, তাঁর নিদর্শনাবলির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা এবং তার বর্ণিত সীমারেখার ভিতর জীবন পরিচালনা করাই অনুসরণীয় অগ্র-পথিক সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তাবে তাবেঈন এবং তাদের পরবর্তী নেককার লোকদের আদর্শ ছিল।

পঞ্চম অধিকার: আল্লাহ তা‘আলাকে মহব্বত করা, তাঁর নিকট আশা করা এবং তাকে ভয় করা
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদেরকে ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। আল-কুরআনে বর্ণিত হচ্ছে,

﴿وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ ٥٦ مَآ أُرِيدُ مِنۡهُم مِّن رِّزۡقٖ وَمَآ أُرِيدُ أَن يُطۡعِمُونِ ٥٧ إِنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلرَّزَّاقُ ذُو ٱلۡقُوَّةِ ٱلۡمَتِينُ ٥٨﴾ [ الذاريات : ٥٦، ٥٨ ]

“আমি জিন্ন এবং ইনসানকে সৃষ্টি করেছে একমাত্র আমার ইবাদত করার জন্যে। আমি তাদের কাছে জীবিকা চাই না এবং এও চাই না যে, তারা আমাকে আহার্য জোগাবে। আল্লাহ তা‘আলাই তো জীবিকা শক্তির আধার, পরাক্রান্ত।” [সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত: ৫৬-৫৮]

বর্ণিত তিনটি মূল ভিত্তির ওপর আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত নির্ভরশীল। অর্থাৎ মহব্বত, আশা ও ভয়।

১০
ষষ্ঠ অধিকার : নি‘আমতের মোকাবেলায় তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা
আল্লাহ তা‘আলার অগণিত ও অসংখ্য নি‘আমত নিরবচ্ছিন্নভাবে তার বান্দার ওপর বর্ষিত হচ্ছে; যেমন, সৃষ্টির নি‘আমত, ধন-সম্পদের নি‘আমত, ইসলামের নি‘আমত, পানির নি‘আমত, বাতাসের নি‘আমত, বিবেক, শরীর, স্ত্রী ও সন্তানদের সুস্থতার নি‘আমত। তাই বান্দাদের উচিৎ এ নি‘আমতের শুকরিয়া আদায় করা, যা তিনটি পদ্ধতি অনুসরণ করলে সুচারুরূপে আদায় করা যায়।

১. নি‘আমতের স্বীকারোক্তি প্রদানমূলক কৃতজ্ঞতাসহ তা গ্রহণ করা। অর্থাৎ বান্দা একনিষ্ঠ ও আন্তরিকভাবে স্বীকার করবে যে, আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় দয়া ও মেহেরবাণীতে এ নি‘আমত দান করেছেন। আল-কুরআনে বর্ণিত হচ্ছে,

﴿وَمَا بِكُم مِّن نِّعۡمَةٖ فَمِنَ ٱللَّهِۖ ثُمَّ إِذَا مَسَّكُمُ ٱلضُّرُّ فَإِلَيۡهِ تَجۡ‍َٔرُونَ ٥٣﴾ [ النحل : ٥٣ ]

“তোমাদের কাছে যে সমস্ত নি‘আমত আছে তা আল্লাহরই পক্ষ থেকে।” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৫৩]

সুতরাং স্বীয় প্রয়োজন, চাহিদা ও অভাববোধসহ আগ্রহভরে আল্লাহর নি‘আমত গ্রহণ করা এবং এর থেকে উপকৃত হওয়া।

২. দান-সদকা, পোশাক-আশাক ও বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার নি‘আমতের বহিঃপ্রকাশ করা এবং তাঁর প্রশংসা। অর্থাৎ বান্দা আল্লাহ তা‘আলার নি‘আমতের আলোচনা করবে। তার দয়ার প্রতিফলন এ নি‘আমতরাজি -সর্বদা মনে করবে। আল-কুরআনে বর্ণিত হচ্ছে,

﴿وَأَمَّا بِنِعۡمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّثۡ ١١﴾ [ الضحا : ١١ ]

“আর আপনার রবের নি‘আমতের কথা প্রকাশ করুন।” [সূরা আদ-দোহা, আয়াত: ১১]

আরো মনে-প্রাণে বিশ্বাস রাখবে আল্লাহ তা‘আলা দানশীল, অনুগ্রহকারী, রহমশীল ও দয়ালু।

৩. আল্লাহ তা‘আলার পছন্দনীয় জায়গায় নি‘আমত ব্যবহার করবে। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশিত জায়গায় নি‘আমতের ব্যবহার সুবর্ণ সুযোগ মনে করবে। শরী‘আত নিষিদ্ধ জায়গায় অপচয় করা থেকে বিরত থাকবে। কারণ, এটা নাফরমানী ও অকৃতজ্ঞতা, যা শরী‘আত কিংবা বিবেক দ্বারা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।

১১
সপ্তম অধিকার: তাকদীরকে মেনে নেওয়া এবং তার ওপর সন্তুষ্ট থাকা
আল্লাহ তা‘আলা কতিপয় বান্দাদের মুসীবতের মাধ্যমে অথবা নি‘আমতের মাধ্যমে কিংবা উভয়ের মাধ্যমে পরীক্ষা করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَنَبۡلُوَنَّكُمۡ حَتَّىٰ نَعۡلَمَ ٱلۡمُجَٰهِدِينَ مِنكُمۡ وَٱلصَّٰبِرِينَ وَنَبۡلُوَاْ أَخۡبَارَكُمۡ ٣١﴾ [ محمد : ٣١ ]

“আমরা অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব যে পর্যন্ত না ফুটিয়ে তুলি তোমাদের জিহাদকারীদের এবং সবরকারীদের এবং যতক্ষণ না আমরা তোমাদের অবস্থানসমূহ যাচাই করি।” [সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ৩১]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿وَلَنَبۡلُوَنَّكُم بِشَيۡءٖ مِّنَ ٱلۡخَوۡفِ وَٱلۡجُوعِ وَنَقۡصٖ مِّنَ ٱلۡأَمۡوَٰلِ وَٱلۡأَنفُسِ وَٱلثَّمَرَٰتِۗ وَبَشِّرِ ٱلصَّٰبِرِينَ ١٥٥﴾ [ البقرة : ١٥٥ ]

“এবং আমরা অবশ্যই তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি এবং ফসলাদি বিনষ্টের মাধ্যমে; তবে সুসংবাদ দাও ধৈর্য্য অবলম্বনকারীদের।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৫৫]

পরীক্ষামূলক এ সমস্ত মুসীবতের মোকাবেলায় বান্দার উচিৎ ধৈর্য্য ধারণ করা ও তাকদীরকে মেনে নেওয়া। যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা এ নির্দেশ-ই প্রদান করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱصۡبِرُواْ وَصَابِرُواْ وَرَابِطُواْ﴾ [ ال عمران : ٢٠٠ ]

“হে ইমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য্য ধারণ কর এবং মোকাবেলায় দৃঢ়তা অবলম্বন কর।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ২০০]

সমাপ্ত

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন